এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • জীবন যেমন

    Anamika Sil লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৯ জুন ২০১৪ | ১১৫৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিকি | 131.241.127.1 | ০৯ জুন ২০১৪ ১৫:০২642614
  • কেমন?
  • Anamika Sil | ০৯ জুন ২০১৪ ১৫:৩১642625
  • পুবের আকাশে আলো ফুটতে না ফুটতে চোখ খুলে যায় হরিদাসীর। বিছানায় আর শুয়ে থাকতে পারে না। উঠে বসে। ইষ্টদেবের নাম জপ করে।

    তারপর উঠে পরে। খাটিয়াটাকে ঘরের এক কোণে দাঁড় করিয়ে বাইরের দাওয়ায় এসে দাঁড়ায়। পুব আকাশে তখন নরম রঙের খেলা। ফুলের খোলা পাপড়ির মত গোটা আকাশটা যেন নিজেকে মেলে ধরেছে প্রকৃতির কোলে।

    এসময় নিজেকে খুব সুখী মনে হয় হরিদাসীর। কিছুক্ষণ সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে দাওয়ায়। রঙের খেলা দেখে। দিন চড়তে থাকে। পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে সকাল। উঠে পড়ে সে। সারাদিনে এইটুকুই তার আয়েস করার সময়।

    খেজুরঝাঁটাটা দিয়ে উঠোনটা ঝাঁট দেয়। গুচ্ছের শুকনো পাতা। ফেলে না সে। উঠোনের একধারে জড় করে রাখে। উনুন ধরাতে কাজে লাগবে।

    বালতিতে করে জল এনে ছড়িয়ে দেয় উঠোনে, সদরে, দাওয়ায়। উনুনের ছাই কাড়ে। হাতে একদলা ছাই ফেলে পিষে নেয়। দাঁত মাজতে মাজতে বড়তলার পুকুরের পথে পা বাড়ায়।

    বড়তলার পুকুরঘাটে তখন চাঁদের হাট। বড় পুঁটি, ছোট বুড়ি, কেলে বুঁচি, ঢাপের মা। হরিদাসীর সাথী। সারাটাদিনের বেশিরভাগটাই এদের সাথে কাটে। একসাথে বাড়ি থেকে বেড়োনো, নাওয়া-খাওয়া, বাড়ি ফেরা সবটাই। এরা তার প্রাণের মিতা।

    আসো আসো হরিদাসী। আজ যে একটুক্ষণ বেলা হই গেলো যে বড়?

    আর কোয়ো না ঢাপের মা। হেই সক্কালডা হলে আমার যেন প্রাণে বাতাস লাগে। হৈ আকাশপানের রঙের খেলা দেখতে যে কি ভালো লাগে কি কই। সময় বয়ে জায় আমার খেয়াল পড়ে না।

    কমদিন তো তোমারে সিনি না। এ হইলো বড়মানসের রোগ। তোমার কেমনে লাগলো হেইডা কিসুতেই আমার মাথায় আসে না।

    কেলি বুঁচি ছোটবেলায় পাড়ার স্কুলে কপাতা পড়েছিল বলে নিজেকে এদের থেকে একটু আলাদাই ভাবে। কতকটা করুণা করে। একটু বাঁকা হেসে বলে তা পিসি তুমি কি আবার প্রেমে পড়লে নাকি?

    চিড়বিড়িয়ে ওঠে বড় বুড়ি। খানকি মাগীর কথা শোন। ওরে ভাতারখাগী তোর পেটে যে সারাক্ষণ পিরিতীর জাবর কাটে সেকি আমরা যানি না। বলি মা -মাসির সাথে কি করে কতা কইতে হয় তা যানিস না।

    কোমড়ে ভিজে কাপড়টা জড়িয়ে নেয় কেলি বুঁচি। তার বোঁচা নাক রাগের চোটে ফুলে ওঠে। আমার পেটে পিরিতী জাবর কাটে তো কার বাপের কি রে? সোয়ামী খেয়েছি বলে কি গতরে আগুনটারেও খাতি হবে? তোদের কি আর বাকি আসে রে সব তো পড়তির দিকে। লোকে চেয়েও তাকায় না। আমার শরীরে যৌবন আসে তাই তোরা জলেপুড়ে মরিস।

    বালতিতে ঘাট থেকে জল তুলে নিয়ে সে চলে যায়।

    আইজকালকার মাঈয়াগুলানের সাথে কেন লাগস বড় বুড়ি? ওদের মুখে যে কিসু আটকান নাই। বেহায়া সব মাঈয়া। শরীর দেখাইয়া চলে। বুকের কাপড় খুলে পুরুষগুলানরে দেখায়। এই মাঈয়াটা না আমোগো মুখ পোড়ায়। বলে হরিদাসী।

    বড় পুঁটি শান্তশিষ্ট মানুষ। সাতসক্কাল বেলা এরম মুখ কালাকালি তার ভালো লাগে না। নিজে কারও সাতেও থাকে না পাঁচেও না। মধ্যস্থতা করতে সে এগিয়ে আসে। বেলা কত হল সে খেয়াল কি তোদের আসে? সক্কাল থেকে খালি চাড্ডি বাজে কত। কোথাও হরির নাম নিবি তা না। সার দেখিনি কাজকর্ম। আবার ঠিকঠাক সময় না বেড়োতে পারলে টেরেনটা ধরতে পারবি নে। দিনটা মাটি হোয়ে জাবে।

    কেলি বুঁচি আটটায় পেলাটফরমে চলে আসিস। চেঁচিয়ে বলে কোমর দুলিয়ে চলে যাওয়া বুচির দিকে তাকিয়ে।

    (ক্রমশ)
  • Anamika Sil | ১০ জুন ২০১৪ ১৪:৪১642636
  • পর্ব - ২

    **********

    বেলা চড়তে থাকে চড়চড় করে। স্নান সেরে বালতিটায় জল ভরে হরিদাসী ঘরে ফেরে। ভিজে কাপড়গুলো উঠোনের দড়িতে ঝুলিয়ে দেয়। একটু টেরিয়ে দেখে ওপাশের ঘরে আগল তখনো খোলেনি। গা জ্বলে যায়। যেন নতুন বৌ।

    সাকুল্যে এ বাড়িতে দুটো শোবার ঘর। একটা ঘুপচি ঠাকুর ঘর আর রান্নাঘর একখানি।। পশ্চিম দিকে তার ঘর আর পুব দিকে ছেলে কমল ও তার বৌ ভামিনীর ঘর।

    বড় সাধ করে ছেলের বে দিয়েছিলুম যে ছেলের বউ আসি আমারে সেবা করবে। মরণ আমার। সে আবাগীর বেটির তো পোয়াবারো। ওমন একটা ডবকা পোলাটারে পুরো ভেড়া বানায় ফেল্ল। বৌএর কথায় ওঠে বৌএর কথায় বসে। বলি তর বাপটাতো এমন আছিল না। পুরুষ যারে কয় এক্কেরে তাই ছেলো। মাগের একটা ক্থা কানে তুলত? আর তার পোলা হয়ে তুই কিনা বৌ-এর গোলামী করিস। কখনও জোরে কখনো বিড়বিড় করে বকে চলে হরিদাসী।

    পুবের ঘরের দরজা খুলে যায়। ভামিনী বেড়িয়ে আসে। মুখটা থমথমে। হরিদাসী ভামিনীর মুন্ডপাত স্থগিত রেখে হরিনাম করতে থাকে ভামিনীর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে। মনটা প্রফুল্ল হয়ে যায়। আজ নিশ্চয় সোয়ামী-ইসত্রীতে একটা কিসু হয়েছে হরিনাম করতে করতে স্বগোতোক্তি করে নীচু গলায়।

    কমল কমল রে উঠছিস বাপ?

    কিছু কইবা?

    না কি আর কব। কিসু না।

    কিছু যখন কবা না তকন যা করছিলা তাই কর। আমারে এক্তু শান্তিতে ঘুমাত দাও দিনি। রোজ একটেরে এক কতা। কানে পোকা পড়ে গেল।

    চুপ করে যায় হরিদাসী। সময় নাই। আটটার ট্রেনটা ধরতে না পারলে দিনটাই বরবাদ।

    পুকুরঘাট থেকে ঘুরে এসে ভামিনী ঘর ঝাড় দিয়ে মুছে দেয়। হরিদাসী ঠাকুরঘর থেকে ঘটিতে করে গঙ্গাজল এনে ছড়িয়ে দেয়। ইষ্টদেবতাকে জল -মিষ্টি দিয়ে নিজের নাকে-গলায়, কপালে রসকলি কাটে। জাতে তারা নীচু তলার বৈষ্ণব। পেশা তাদের মাধুকরী। যুগ যুগ ধরে তাই চলে আসছে। আজকাল আর এতে পেট চলে না। তবু বিধবা হবার পর থেকে এই করেই তো ছেলে বড় করেছে।

    রান্নাঘরে পান্তা রাখা থাকে। ভামিনী রাতে ভাত বেশি করে বানিয়ে রাখে। এই পান্তাই সবার সকালের খাবার।

    হরিদাসী পান্তা খায় না সকালে। ফিরে খায়। সক্কাল সক্কাল ভাত খেতে তার যেন কেমন লাগে। চাপাতা থাকলে শুকনো পাতার আগুনে ফুটিয়ে নেয়। আজকাল চা তেমন আসে না। বড় দাম বেড়েছে। স্টেশনের দোকানে গেলে দুটাকার চা দেয় বটে তবে খেয়ে যেন মন ভরে না। আজও ঘরে চা নাই। কটা মেরি বিস্কুট ছিলো একটা জারে। তার থেকে একটা তুলে জলে ভিজিয়ে খায়। দাঁতগুলোয় আর তেমন জোর পায় না।

    ঘরের দেওয়ালে রাখা থলেটা নামায়। থলের ভিতরের জিনিসগুলো এক এক করে নামায়। একটা টেরাব্যাকা জলের শিশি, খয়েরে লাল হয়ে থাকা কৌটা, একটা চুনের শিশি আর একটা প্ল্যাস্টিকের পোঁটলায় গুঁড়ো সুপারি আর একটাতে পান। পান না হলে হরিদাসীর চলে না। একটা পানে একটু পচন ধরেছিল। পাশ থেকে কেটে কেটে পানটা সেজে মুখে পোড়ে। ভামিনী কখন খালি বোতলটা নিয়ে গিয়ে জল ভরে এনেছে টের পায়নি সে। সাথে একটা ছোট থলেতে শুকনো মুড়ি। একটু মায়া হয় মেয়েটার প্রতি। থলেতে সে সব পুরে নেয়। এবার সারাদিনের জন্য বেড়িয়ে পড়া।

    আসি রে বউ। একটু ইতস্তত করে বলে হরিদাসী। উত্তর আসে না। হরিদাসী বেড়িয়ে যায়।

    (ক্রমশ)।
  • সিকি | 131.241.127.1 | ১১ জুন ২০১৪ ১৬:২৫642647
  • ভালো লাগছে। পরের কিস্তি কবে আসবে?
  • Anamika Sil | ১২ জুন ২০১৪ ১৪:১৭642658
  • তিন পর্ব

    ********

    সকাল আটটা কে বলবে? মাথার ওপর সূর্যের তেজ সাংঘাতিক। স্টেশনে পৌঁছে একটু জিরিয়ে নেয় হরিদাসী। কম দুর নয় তার বাড়ি থেকে স্টেশন। এতটা রাস্তা হেঁটে আসতে হয়। ভ্যানভাড়া ১০ টাকা।

    কাপড়ের আঁচলে মুখ-ঘাড়ের ঘাম মুছে নেয়। সিগন্যাল হয়ে গেছে। দ্রুত পায়ে সামনের লেডিসটায় উঠে যায়। ভালো ভিড় হয় এখান থেকে। নানান বয়সীর ভিড়। কেউ বা কলেজ কেউ বা স্কুল তবে বেশিরভাগ চলেছে কলকাতায় কাজে। তাদের মত একঝাঁক পৌঢ়া চলেছে মাধুকরী করতে। সেও তো একটা পেশা।

    পিছনের দিকে সিট রাখা। আটজনের সিটে চেপেচুপে নজন আর রোগা-পটকা হলে দশজন ধরে যায়। রোজ একসাথে যাতায়াত। মুখ চেনাজানা হয়ে গেছে। মাঝেসাঝে কথাবার্তা, ভাবের আদান-প্রদান-নিন্দে-মন্দ সবই হয়। এখানে অর্থের কৌলিন্য চলে না। আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে।

    গালে এক খিলি পান পুড়তে পুড়তে বড় বুড়ি বলে বুঁচির গোঁসা হয়েচে বুঝলি হরি। ঐ সাইডে ব্সছে। আমাগো দিকে তাকাচ্ছেও না।

    ঠোঁট উল্টে একটু হাসে হরিদাসী। বুঁচি বেশিক্ষণ কথা না বলে থাকতে পারে না। মুখে সর্বদাই খই ফুটছে। অর রাগের পরোয়া তোরে করতে হবে না। ঠিক কথা কইবে। না কয়ে থাকবা কেমনে? বলে হরিদাসী।

    আজ আসার সময় কি খালি বুড়ি?

    তদের না দিয়া আমি একা কোনকালে খাইতাম? কাল রাতে রুটি করসিলাম সেই গুড় দে নিয়া আইসি। সবাই মিলা খাইবো।

    বড় বুড়ি ভাগ করে প্ল্যাস্টিকে রুটি আর গুড় ভরে হরিদাসীর, পুঁটির হাতে দেয়।

    বুঁচি ধর।

    না আমি খাবো না।

    খাবি নাতো? ঠিক কইছিস ত? তর জন্য আমরা বুড়ি কয়ডা না খাইয়া থাকি এইডা তুই চাস তো?

    কিছু বলে না বুঁচি। হাত বাড়িয়ে নিজের ভাগটা নেয়।

    হরিদাসী হাসে। বুড়ি সুড়সুড়িটা ভালো দিয়েছে।

    মুখের থেকে পানের ছিবড়েটা ফেলে দেয় হরিদাসী। কমদামী পাতা। মুখটা কেমন যেন তেতো হয়ে আছে। সাথের ঝোলাটা থেকে জলের বোতলটা বার করে মুখটা কুলকুচো করে জলটা দরজায় গিয়ে ফেলে দিয়ে আসে।

    বুড়ি মুখের পানটা ফেলে না। একদিকে রেখে দেয়। রুটি কতকাল পর খাসসি। গুড় দে রুটি দিলা আমার আর তরকারি লাগে না। বলে বুড়ি।

    তুই খাওয়ালি বলে খাওয়া হইল, নাইলে রুটির সোয়াদ তো ভুলতি বসেচিলাম তৃপ্তির সাথে বলে হরিদাসী।

    আর একখান আসে নিবি নাকি হরি?

    না না তুই খা।

    হাসে বুড়ি। কমদিন তোরে চিনি না হরি। আমার চোকে ফাঁকি দেওস না। তর খেতে ইস্সে আসে আমি বেস বুঝছি।

    গালভাঙ্গা মুখে একটা ধরা পড়া লাজুক হাসি খেলে যায়। তাইলে ওটারে চারভাগ কর। সবাই সমান খাই।

    সম্মত হয় বড় বুড়ি। চার টুকরো রুটি চারজনে ভাগ করে খায়। তারপর হাত মুখ ধুয়ে চারজনেই এক খিলি করে হরিদাসীর সাজা পান মুখে দেয়।

    শরীরটা যূত লাগসে বুঝলি বুড়ি। বলে পুঁটি একটা হাই তোলে। কাল রাতে জল খেয়ে শুয়েসি। ঘরে কিসু ছিলো না। যে কটা টাকা এনেছিলাম ভিক্ষে করে সব কেড়ে নিয়ে গেল হারানের বাপ।

    কাল হারানের বাপ আইসিলো? তা এতদিন পর যে আইলো বড়? টাকা নিতেই আইসিলো। তুমি কিচু কইলা না পুঁটিদিদি? রাগত স্বরে জানতে চায় বুঁচি। পুরুষ জাতটাকে সে খুব ভালো চেনে।

    কি কইব ক? কতকাল পরে মানুষডারে দ্যাখলাম। শরীরডা একদম হাড্ডিসার হয়ে গেসে। খেতে দেয় না মনে হয় সতীনডা। বড় মায়া হল। কিস্সু কইলাম না। একডা রাত কি আর আমার কাটবো না? কত রাত তো না খাই কাটাইসি।

    দুচোখে যেন অতীত ভেসে ওঠে পুঁটির। সেথায় যেন হারিয়ে যায় সে।

    (ক্রমশ)
  • Anamika Sil | ১৭ জুন ২০১৪ ১৪:৫২642669
  • খাওয়াটা একটু যেন বেশি হয়ে গেছে। দুটো চোখ আটার মত লেগে আসতে চায় হরিদাসীর। বুড়ি অন্যমনস্কভাবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। পুঁটি কখন যেন ঘুমিয়ে রীতিমত হেলে পড়ে হরিদাসীর গায়ে।

    ঘুমালি নাকি ?

    না একটা হাই তুলে বলে সে। কিন্তু মুখের কথার সাথে চোখ কিছুতেই সাথ দেয় না। আবার আটার মত জুড়ে যায়। একটু পরেই আবার তার কাঁধে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে পুঁটি।

    আর ডাকে না হরিদাসী। কেমন একটা মায়া জাগে। মানুষটা বড্ড ভালো। কিন্তু কপালটা মন্দ। অবশ্য তাদের সমাজে কপাল ভালো এমনটা এই তিনকাল বয়সে খুব একটা চোখে পড়েনি।

    পিসি ঘুমালে নাকি? জাংসন ঢুকতাসে যে টেরেন।

    না ঘুমাই না। চোখখান বন্ধ করে বসতে বড় আরাম লাগে। বলে বটে কিন্তু কখন যেন নিজেই ঘুমিয়ে পড়েছিল টেরটিও পায়নি। স্থলিত ঠোঁটের কস বেয়ে পানের রস গড়িয়ে পড়েছিল। নিজেকে একটু গুছিয়ে নেয় হরিদাসী। মলিন কাপড়ের খোঁটে মুখটা মুছে নেয়।

    পস্ট দেকলাম ঘুমাচ্ছো বললেই হবে। আলতো হাসি ছুঁড়ে দেয় বুঁচি। ঐ দেকো বুড়ি পিসি, পুঁটি পিসি সবাই কেমন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

    খাটুনির শরীর মা। আর বয়স তো হসসে রে। তোর মত কি আর জোয়ান আসে আমাগো শরীর। হেসে বলে হরিদাসী।

    খোঁচা লাগে বুঁচির। যেন তার সকালের কথাটা মনে করেই পিসি কথাটা বলল।

    রাগ করেসো পিসি আমার কতায়? গলা জড়িয়ে ধরে বুঁচি। জাংশনে ঢুকে ট্রেনটা অনেকক্ষণ দাঁড়ায়। ট্রেনটা একটু হাল্কা হয়। বেশিরভাগ নেমে যায়। যে সিটে বসার জন্য মারামারি চলে সেই সিট যেন মাছি তাড়ায়।

    না রাগ ক্যান করবো। তবে কিনা স্থান-অস্থান দেখে বয়স - অবয়স দেকে কতা কইতে হয়।

    আর কি জানিস তা হেইডা তো প্রেম করনেরই বয়স রে।থাকত আমার এক-দুখান নাতি তাইলে আমিও প্রেম করতাম। এমন মাঈয়া ঘরে আনলাম বিয়োতে নারে। কি যে দোষ কিসু বুঝি না। কত দেব-দিজ-বদ্যি-দাক্ডার করলাম, মন্দির-উপোস-ব্রত কিসুই তো কাজে লাগলো না। কপালডাই মন্দ রে।

    এত কিসু ভাবি আমি কই নাই গো। এক্তু মজা করনের লাগি কথাটা কইচিলাম। কিঞ্চিত বোধ করে বুঁচি। জীবনে কত কথাই তো আছে ভেবে বলা হয় না। অথচ সেই সব কথা কখন যে কার গায়ে কিভাবে লাগে সে যদি সে বুঝতো।

    বুড়ি পিসিও তো আমায় ছেড়ে কতা কইলে না। খানকিগিরির কি দেকলে সে। আরে খানকীগিরি করলে কি আর তোমাগো সাতে ভিক্ষা করতে আসাতাম? আমারটাই খাওনের লোক পাতা না। বিষন্ন হয়ে ওঠে বুঁচি।

    হরিদাসী উত্তর দেয় না। কিছু কিছু সময় চুপ করে থাকাই ভালো। কালোর ওপর বুঁচিটাকে দেখতে মন্দ নয়। ছোটো কপালে কুচো কুচো চুল ঘামে লেপ্টে আছে। কুঁচি দিয়ে পরা টেরিলিনের সস্তার শাড়িতে সুন্দর করে শরীরটাকে জড়িয়েছে। আঁচলটা সরু করে নেওয়াতে উন্নত বুক যেন স্ফীত হয়ে চোখে লাগে। বয়সটা তো এমন কিছু না। সবে আঠারো। শহরে আসে। এখানকার মেয়েদের দেখে। তাদের মত সাজগোজ করে। বোঝে না এসব শহুরে কেতা শহরেই মানায়। গ্রামে না।

    একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে। এই বয়সের মেয়ে - বউরা মাধুকরী করতে বেড়োয় না তাদের সমাজে। কিন্তু বুঁচির কোন উপায় নেই। নিজের পায়ে নিজেই কুড়োল মেরেছে।

    (ক্রমশ)
  • nina | 78.37.233.36 | ১৮ জুন ২০১৪ ০৩:২৫642679
  • সুন্দর এগোচ্ছে---সঙ্গে আছি
  • Anamika Sil | ১৮ জুন ২০১৪ ১৬:০৭642680
  • পর্ব - ৫
    ************

    সর্পিল গতিতে ট্রেনটা স্টেশনে ঢুকছে। এক খিলি পান মুখে পুরে দেয় হরিদাসী। হাত বাড়ায় বাকিরাও। পান না হলে কারও চলে না। খাক না খাক পানের খোরাক তাদের সবার আছে।

    পানের পিকে ঠোঁট রাঙিয়ে নেয় বুঁচি। যখনই পান খায় ঠোঁটটাকে বারবার মুড়ে মুখের ভিতর ঢুকিয়ে রাঙিয়ে নিতে ভোলে না।

    চোখ এড়ায় না বড় বুড়ির। স্বগোতোক্তি করে ছেনাল। বুঁচির কানে যায় কিন্তু এড়িয়ে যায়। গাটা জ্বালা করে কিন্তু এখন ঝগড়া করার সময় নেই। নেমে যায় সবাই স্টেশনে। এরপর ছড়িয়ে পড়বে এরা নানান দিকে।

    শহরের টালা থেকে টালিগজ্ঞের গলিঘুঁজি সবটাই হরিদাসীদের নখদর্পণে। রোজ এক স্টেশনে এরা নামে না। কোনদিন বড়বাজার তো কোনদিন শিয়ালদা আবার কোনদিন শোভাবাজার বা বাগবাজার। ট্রেনের টিকিট বা মান্থিলি কোনটাই এরা কাটে না। মাঝে সাঝে ধরা পড়লেও এদের চেকাররা ছেড়ে দেয়। জানে জরিমানা দেবার মত সংস্থান এদের নেই। তবে এই নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে এরা যায়ওনা। সব পেশার মত এই পেশাতেও কিছু নিয়মকানুন আছে। আছে সীমাবদ্ধতাও। সবাই এক এলাকায় গেলে যে কেউই হালে পাণি পাবে না বিলক্ষণ জানে এরা।

    আজ শুক্রবার। অফিস পাড়ায় মাধুকরী করার দিন। নিজেদের মধ্যেই ভাগ-বাটোয়ারা ও বোঝাপড়া আছে। এক একটা গলিতে তারা কয়েকজন করে একাকী যায়, দলবেঁধে এলেও।। একজন অন্যজনের এলাকায় পা দেয় না। সংখ্যা তাদের কম নয়। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এইসব মানুষের রুজি-রোজগার এই অফিস আর দোকানগুলো। গৃহস্থ বাড়িতে আজকাল আর তেমন ভিক্ষে মেলে না।

    হরিদাসী, বুঁচি, বুড়ি, পুঁটি যে যার মত নিজেদের থলে বা ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। পথে হয়তো কারও সাথে কারও দেখা হয়ে যাবে কিম্বা হবে না। আবার সেই ফেরার সময় একসাথে হবে তারা।

    কলকাতা শহরটাকে আজব মনে হয় হরিদাসীর। শুধু ইঁট-কাঠ-সিমেন্ট-বালি-কাঁকরের খাঁচা যেন। এতদিন হয়ে গেল তবু শহরটাকে আজও সে ভালোবাসতে পারলো না। প্রাণহীণ নকল জীবনে সবাই ছুটে চলেছে। কারও সময় নেই দুটো সুখ-দুখের কথা বলে। কারও সময় নেই রাস্তায় কেউ পড়ে গেলে তুলে ধরে, শুশ্রষা করে।

    ছুটে চলে সে। এক দোকান থেকে আর এক দোকান। একটা সময় সে খঞ্জনী নিয়ে বেরোতো। বাবার কাছে শোনা কিছু পদাবলীর পদ সুর করে গাইতে চেষ্টা করত। কিন্তু শ্রোতা কোথায়? সবাই ব্যস্ত। ভিক্ষে দিয়ে হাটাতে পারলেই নিশিন্তি। তাই জয় নিতাই জয় গৌড় বলে দোকান বা অফিসের সামনে দাঁড়তে পারলেই হয়। আটাআনা বাঁধধরা পায় সব দোকান থেকেই। কচিৎ কখনো জুটেও যায় একটাকা কোনো সহৃদয় ব্যক্তির কাছ থেকে। খুচরো জমে গেলে কোন কোন দোকানী টাকা দিয়ে খুচরোগুলো নিয়ে নেয়। খুচরো যে মহার্ঘ্য। তবে বিনিময়ে ন্যনতম বাটা সময় সময় পায় না যে তাও না।

    অনেকগুলো দোকান ঘুরে ফেলেছে হরিদাসী। চটিজোড়া পাতলা হয়ে গেছে। রোদের তেজে ভুমি তেতে আগুন। চটি ভেদ করে যেন ভুমির তাত পাজোড়াকে পুড়িয়ে দিতে চায়। একটু বসলে হয়। পেটের ভেতর চুঁইচুঁই। থলেতে মুড়ি আছে। নেড়েচেড়ে রেখে দেয় সে। বিকালে ট্রেনে যেতে গেলে লাগবে। কিছু কিনতে গেলেও পাঁচটি টাকা খরচা। এক খিলি পান গড়ে মুখে দিয়ে একটু জিরিয়ে নেয় একটা রকে বসে। শরীরটা ঝিমিয়ে পড়তে চায়। আর কতদিন এভাবে আসতে পারবে কে জানে?
  • de | 190.149.51.69 | ১৮ জুন ২০১৪ ১৬:৩২642681
  • ভালো হচ্ছে - পড়ছি!
  • Anamika Sil | ১৯ জুন ২০১৪ ১৩:১০642615
  • পর্ব - ৬

    ************

    আকাশে এক ফোঁটা মেঘের দেখা নেই। সূর্যটা যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে। পুড়িয়ে খাক করে দিচ্ছে চারিদিক। আর চলতে মন চায় না। আরও গোটা দশেক দোকান আছে। গেলে কম করে পাঁচ-ছটাকা রোজগার হত, কিন্তু গতর যে আর নড়তে চায় না। পা আর চলতে চায় না। হনুমান মন্দিরের সামনের চাতালটায় বসে হরিদাসী। থলেটা নামিয়ে রাখে পাশে। জলের বোতলখানা বের করে দেখে জলটা গরম হয়ে গেছে। এক ঢোঁক জল খায় কিন্তু গরম জলে তৃষ্ণা মেটে না। চারটে কি বেজেছে? চারটে বাজলে রাস্তা কলে জল আসবে।

    বাবা কয়টা বাজে? সামনে দিয়ে চলে যাওয়া এক মুটিয়ার কাছে জানতে চায় সে।

    সাড়ে তিন মাঈ।

    এখনও আধ ঘন্টা। শুকনো শরীরটা ঘামে জবজব করছে। কাপড়ের খোঁটে ঘাম মুছতে মুছতে ভিজে গেছে, তাও আবারও মুখটা চেপে মুছে নেয়।

    হনুমান মন্দিরটা এখন শুনশান। বুধবার বুধবার এখানে এসে তারা ভিড় জমায়। শুধু যে তাদের লাইন থেকেই আসে তা না, মেন লাইন, হাওড়া লাইন থেকেও অনেকে আসে। সেদিন আর ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতে হয় না। পূজো দিয়ে বেরিয়ে মাড়োয়ারী, গুজরাটি, উত্তরপ্রদেশীয় ব্রাক্ষ্মন, সিন্ধি ও অন্যান্যরা দান দেয়। বিয়ে-থা বা ছেলে-পুলে হলে তো দানও ভালো জোটে। এই পেশায় হাত পাকাতে গিয়ে হরিদাসীরা জানে কোথায়, কখন, কোনদিন গেলে কি পাওয়া যাবে? না জানলেও স্বজাতরাই খবর দেয়। দলবেঁধে তারা চলে যায় সেখানে। আবার তারাও খবর দেয় অন্যদের।

    থলে থেকে খুচরো পয়সাগুলো বের করে জোরে জোরে গুনতে থাকে। সাকুল্যে দশখান এক টাকার কয়েন, আধুলি ছয়ডা, দুটাকার কয়েন আটখান এই মোট হইলো গিয়া বলে কর গুনতে থাকে কিন্তু হিসাব মেলাতে পারে না। শরীরটা ঝিম ধরে আসে। ঢুলে পড়ে।

    পয়সাগুলো থলেতে তুলে ছোট্ট শরীরটাকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে বসে সে। চোখদুটো যেন জড়িয়ে আসে। কিন্তু এখন ঘুমোলে চলবে না। কলে জল এলেই জলটা ধরে সে পাড়ি জমাবে স্টেশনে। ক্লান্ত শরীর তবু ঢলে পড়ে। ঝিমুনি খায়।

    এ মাজি ক্যা কর রহি হো ইঁহা পে? আভি তো মন্দির বন্ধ হ্যায়। ইঁহাপে বৈঠো মত। চলো যাও।

    ঝিমুনি টুটে যায়। মন্দিরের সেবায়েত। এখুনি চলে যাবো বাবা। বড্ড গরম লেগেচে তো তাই একটুখন বসেছি।

    মাত বৈঠো। আগর শেঠলোগ দেখ লেগা তো তুমকো ডাঁট পড়ে গা। ফির ভিখ নেহি মিলেগা। সমঝা ক্যা?

    মাথা নাড়ে হরিদাসী। বুঝেছে সে। কলকাতায় আসতে আসতে হিন্দিটা ভালো বোঝে সে। বলতে যদিও পারে না। তুলে নেয় থলে আর জলের বোতল। রাস্তায় যেতে যেতে অনেক কল পাবে। কলকাতা শহরে এই একটা জিনিস এখনো মুফতে মেলে।

    আর কোথাও বসে না সে। হাঁটতে থাকে। স্টেশন অনেকখানি রাস্তা। ঠিক সময় না পৌঁছতে পারলে ট্রেনটা পাবে না। পরের ট্রেন সেই তিনঘন্টা পর। বরং হাতে যখন সময় আছে একটু ধীরে সুস্থেই সে হাঁটতে থাকে।

    রাস্তাকলে জল আসতে না আসতে ভিড় জমে যায়। বড় পাইপ লাগিয়ে জল নিচ্ছিল একটি ছেলে।

    এক বোতল জল দেবা বাপ?

    ছেলেটির বালতি ভরে গেছিল। ইশারায় জল নিতে বলে বালতি রাখতে গেল কোথাও। হরিদাসী বোতল ভরে জল খেয়ে আর এক বোতল জল ভরে থলেতে পুরে আবার চলতে শুরু করল।

    (ক্রমশ)
  • | ১৯ জুন ২০১৪ ২২:৪৫642616
  • ভাল্লাগছে বেশ
  • kumu | 52.104.24.178 | ১৯ জুন ২০১৪ ২২:৪৮642617
  • ভালো লাগছে।খুব জীবন্ত লেখা।
  • nina | 78.37.233.36 | ২০ জুন ২০১৪ ০৫:১৭642618
  • পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম---সুন্দর এগোচ্ছে
  • Anamika Sil | ২১ জুন ২০১৪ ১৫:২০642619
  • পর্ব- ৭

    ******

    সব লাইনেই ট্রেন লেটে চলছে। স্টেশনে থিকথিকে ভিড়। হরিদাসী ভ্রুক্ষেপ করে না। নিত্যদিনের এই যন্ত্রণার সাথেই আসা- যাওয়া। যখন ট্রেন ছাড়বে তখন যাবে। এমনটা তো নয় যে বাড়িতে পঞ্চব্যঞ্জন সাজিয়ে কেউ অধীর অপেক্ষা করবে। আর ছোট ছোট বাচ্চাও নেই যে টান থাকবে। এসব গাসওয়া। সে কোন প্ল্যাটফর্মে তাদের লাইনের ট্রেন দিয়েছে জিঞ্জাসা করে এগিয়ে যায় নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের দিকে।

    আসার ট্রেনে সিট পাওয়া যায় কিন্তু ফেরার ট্রেনে সিট পাওয়া মুশকিল। অবশ্য ফেরার ট্রেনে সিট পেলেও হরিদাসীরা বসে না। কামরার মেঝেতেই চটিজোড়া পেতে বসে। আজ সে আগে এসেছে। এখনো অন্যরা কেউ আসেনি। হরিদাসী জায়গা রেখে বসে। চারজনে বসে যাবে।

    পিসি আইসা পড়স। শুনসি টেরেন লেটে চলসে। বুঁচি কথা বলতে বলতেই ট্রেনে উঠে চটিজোড়া পেতে বসে পড়ে।

    আমিও তাই সুনলাম। খিদে পাস্সে। মুড়ি আসে। খাবি?

    অরা আসুক তারপর নয় খাবো। তুমি খাইতে থাকো।

    পেটখান টেনে ধরতাসে। আমি তাইলে একমুঠ খাই। তারপর অরা আইলে খাবো।

    ঘাড় নেড়ে সন্মতি দেয় বুঁচি।

    দুমুঠো মুড়ি খেয়ে আর খায় না। এত মুড়ি না যে এখন খেলে আবার পরে যথেষ্ট হবে।

    অদের আজ বেশ দেরী হস্সে না? কয়টা বাজল?

    বেশি বাজে নাগো পিসি। আইয়া পড়ব। আজ তুমি আগে আসছ তাই মনে হতাসে অগো দেরি হস্সে।

    আজ দশখান দোকান বাদ দিসি। পা আর চলতাসিলো না।

    গরমডার কথা কও। এট্টু চললেই শরীরডা কাহিল হয়ে পড়সে। কি করবা। পরের দিন যাইও।

    পাঁচ-সয়টাকা কি কম রে? গাটা করকর করতাসে।

    বুঝসি। মৃদু হেসে বলে বুঁচি। দুখ্যু কইরো না।

    দিনের আলো চড়া হয়ে ওঠে। প্রদীপের সলতে নিভে যাবার আগে যেমন জ্বলে ওঠে দিন ঢলে যাবার আগে ঠিক তেমনি চারিদিকে সূর্যের আলোটা চড়া হয়ে ওঠে।

    আরে তোরা আইস্যা গেসিস। বলতে বলতে পুঁটি আর বুড়ি ঢোকে।

    তোগো আজ দেরি হইসে না?

    হইসে তো। এক কাইষ্টার পাল্লায় পড়লাম দুজনেই। খাড়া করে রাখসে তো রাখসে। পয়সা দেওয়নের আর নাম নাই। শাইলা সব বেজন্মার জন্ম। দিবি তো আটানা, তার লগে খাড়া কইরে রাখলো আইধ ঘন্টা। গাটা রাগে জ্বইলা যাইছিলো। তারপর আরও আইতে আইতে সোনলাম টেরেন লেট। তাই আর দৌরাই নাই। বলে বুড়ি।

    পায়ের চটিজোড়া পেতে দুজনেই বসে। পরনের কাপড়খানা দিয়ে মুখ মুছে নেয়। বিকাল ঢলে পড়ছে তাও গরম কমে না।

    তোগো তাও সবকটা জায়গায় যাইছস। আমি তো গরমে যাইতেই পাইলাম না। পাঁচ-সয়টাকা কম হইলো আজ । গলা দিয়ে আফশোষ ঝরে পড়ে হরিদাসীর।

    পরদিন যাস। খিদা লাগসে। মুড়ি আনছস কেউ?

    আমি আনসি। তোদের লগে বসেসিলাম। নে কোঁচর পার।

    সবাই কোঁচর পারে। হরিদাসী প্ল্যাস্টিক থেকে ঢেলে দেয় মুড়ি অল্প অল্প করে। খেতে থাকে সবাই। কারও তো সেই সকালের পর আর খাওয়া হয়নি। শুকনো মুড়ি যেন অমৃতের স্বাদ বয়ে আনে তাদের কাছে।

    ট্রেন চলতে শুরু করে। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে আসা-যাওয়া চলে চুলের ক্লিপ থেকে কটকটি বিক্রেতাদের। লেডিস কামড়ায় ওদের বিক্রি বেশি। তাই অনেক লেডিসের বক্রোক্তি শুনেও ওরা কথা বলে না।

    পুঁটিদিদি কটকটি খাবা? দু পিসিতো খাতি পারবা না।

    দাঁতে লাগে বড্ড। তুই খা।

    না থাক। অন্য কিসু কিনব।

    আজ মনে হয় ভালো রোজগার হয়েসে তর?
    খাওয়াতেই চাইছস। জিঞ্জাসা করে বুড়ি। কন্ঠে স্পষ্ট শ্লেষ।

    শ্লেষ গায়ে মাখে না বুঁচি। জানে মুখিয়ে আছে বুড়ি তার সাথে লাগবে বলে। মনটা আজ বেশ ভালো আছে সেটাকে নষ্ট করতে চায় না। রোজ তোমরা খাওয়ায়। আজ আমি কিসু খাওয়াই।

    হয়ত আরও অপ্রিয় কিছু প্রসঙ্গ উঠত তার আগেই পুঁটি উৎসাহ ভরে বলে পাঁপড় উঠলে পাঁপড় খাওয়াস বুঁচি।

    (ক্রমশ)
  • Anamika Sil | ২১ জুন ২০১৪ ১৫:২৫642620
  • ধন্যবাদ

    সিকি, দে, নিনা, কুমু, দ।

    অনুপ্ররণা পেয়ে ভালো লাগছে।
  • | ২২ জুন ২০১৪ ০৯:৫৮642621
  • আবার বলি ভাল লাগছে।

    ইয়ে "দিবি তো আটানা, তার লগে খাড়া কইরে রাখলো আইধ ঘন্টা।" -- এইখানে বোধহয় 'লগে' নয় 'লাইগ্যা' হবে। লগে মানে সঙ্গে, যথা 'লগে লগে ঘুরস ক্যারে?'। লাইগ্যা মানে জন্য। যথা 'দুই ট্যাহার লাইগ্যা অতটি সময় খাড়ানি পুষায় না।'
  • Anamika Sil | ২৩ জুন ২০১৪ ১২:১৪642622
  • ধন্যবাদ দ লইগ্যা - ই হবে , আসলে আমাদের নিত্যদিনের ভাষা তো নয়, তাই অল্পবিস্তর ভুল হয়ে যাচ্ছে। আপনারা আছেন বলেই সাহস করে পোস্ট করতে পারছি।
  • Anamika Sil | ২৩ জুন ২০১৪ ১২:১৬642623

  • আর এরম ভুল পেলে বলবেন প্লিজ এবং অব্শ্যই সঠিক শব্দটিও লিখে দেবেন যেমনটি এবারটি দিলেন। এটা অনুরোধ আপনি ও আপনাদের মত পাঠকদের কাছে।
  • Anamika Sil | ২৩ জুন ২০১৪ ১৪:৫৩642624
  • পর্ব - ৮

    *******

    দেরীতে ট্রেন ছেড়ে ও পথে আরও কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে ট্রেন যখন প্ল্যটফর্মে ঢুকছে তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে গেছে রাতের দিকে। গরমের সাথে পাল্লা দেওয়া ঘামে, ক্লান্তিতে, পরিশ্রমে শরীর অবসন্ন।

    নেমে পড়ে ওরা সকলে। বাড়িতে ফেরার এক তীব্র টান এইবার অনুভব করে হরিদাসী। এই প্ল্যাটফর্মে এসে ট্রেন দাঁড়ালেই যে কেন এই অনুভুতিটা হয় সে বুঝতে পারে না। ঐ ছোট্ট টিনের ছাওয়া বাড়ি, সামনের দাওয়া, কমল এসবই তখন বড় বেশি করে টানতে থাকে তাকে বাড়ির দিকে। আর টানতে থাকে গরম ধোঁয়াওঠা ভাতের সুগন্ধ। এত দেরী হলে গতরাতের জল দেওয়া ভাত আর তাকে খেতে দেয় না ভামিনী। ভামিনীর জন্যও কি মনটা টানে না?

    কিছুটা পথ তারা একসাথে এসে যে যার সে তার পথে বেঁকে যায়। বিশেষ কোন কথা হয় না। অন্ধকার রাস্তায় ভুতগ্রস্থ মানুষের মত হরিদাসীরা হেঁটে যায়।

    স্বাধীনতার অনেক বছর হয়ে গেছে। তবু এখনও অনেক গ্রামে সববাড়িতে আলো যায়নি। গ্রামের তফাতে তফাতে কিছু আলোর পোস্ট যাতে চল্লিশ বা ষাট পাওয়ারের বাল্বের আলোয় অন্ধকার দূরীভুত যত না হয় বরং ভৌতিকতাকে আরও বেশি বাড়িয়ে তোলে। নেই পানীয় জলের যথেষ্ট ব্যবস্থা। দু-একটা নলকূপ যাও আছে তাও ব্যবহারের অনুপোযুক্ত। আর্সেনিক দুষনের মাত্রা নিয়ে এইসব গ্রাম প্রায় পেজ সিক্সে ধরা দেয় নাগরিকদের কাছে সংবাদ হয়ে এই পর্যন্ত। দু-একটা সম্পন্ন বাড়িতে আধুনিক শৌচালয় থাকলেও আদিম ও অকৃত্রিম পদ্ধতিতেই শৌচ ব্যবস্থা পড়ে আছে। এমন একটা নেই গ্রামেই থাকে হরিদাসীরা।

    হনহন করে হেঁটে যায় হরিদাসী। ধোঁয়াওঠা ভাতের গন্ধ যেন নাকে এসে লাগে। চলার গতি বেড়ে যায়। পেটের মধ্যে যেন রাক্ষুসে খিদে।

    বউ?

    ঘর থেকে বেরিয়ে আসে ভামিনী। থলেটা তার হাতে দিয়ে হরিদাসী দাওয়ার একপ্রান্তে রাখা বালতির জল মগে কর গায়ে-মাথায় ঢেলে ভালো করে স্নান করে। শরীর যেন শীতল হয়ে যায়। সারাদিনের পরিশ্রমের ক্লান্তি জলের ফোঁটা ফোঁটা বিন্দুতে মিশে বয়ে যেতে থকে।

    ভিজে কাপড়খানা পড়েই ঘরে চলে যায়। অন্ধ্কার দাওয়ায় একটাই কুপি জ্বলছে। তার থেকে যেটুকু আলো আসছে তাতেই শুকনো কাপড়খানা পড়ে নেয় হরিদাসী। ভিজে কাপড়খানা ঘরের একপাশে লম্বা করে টাঙিয়ে দেয়। রাতে কত দেবতা-অপদেবতা আসা-যাওয়া করে তাদের চলার পথে বাঁধা দিতে নেই।

    কাল রাইতের ভাতগুলান একদম নষ্ট হইয়া গেসিল। গরমভাত বসাইছি। একটুক্ষণ সবুর করতে হইব। ভামিনী বলে।

    বড় খিদা লাগসে। আর কত দেরী হইব?

    আর একখান ফুট দিলেই নামায়ে দেব।

    ভাতের সাথে আর কি করসিস?

    ঘরে তো তেমন কিসু সেল না। আলু কয়খান সেদ্ধ দিসি। কাঁচা লঙ্কা দিয়া মাখব।

    সরষের তেল আসে তো?

    না।

    ভাববাচ্যেই প্রায় তাদের কথাবার্তা হয়। একটু রাত করেই ভাত বসায় ভামিনী যাতে পরদিন ভাতটা ভালো থাকে। জানে হরিদাসী। দাওয়ায় গিয়ে বসে। হরির নাম নেয়।

    একটুও হাওয়া নেই। গাছের পাতাগুলো নড়ছে না। আঁচল দিয়েই হাওয়া খায়। উঠে গিয়ে আর হাতপাখা নিতে ইচ্ছে করে না। চুল থেকে টপটপ করে জল পড়ে পিঠ ভিজে যায়। আরাম লাগে হরিদাসীর। গুন গুন করে গান ধরে
    হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হল পার কর আমারে/
    হরি আমার একা যেতে ভয় করে /
    চলো যায় ভাই হরি দুজনাতে

    তোমার আবার হরিরে ডাকার কি প্রোয়োজন হরি। তুমি যে সাক্ষাত হরিদাসী গো।

    আসো আসো ঢাপের মা। গান থামিয়ে ডাকে হরিদাসী।

    হেলতে দুলতে আসে ঢাপের মা। আজ এক্টু ঢেঁকি শাক রেন্ধেছিলাম তাই রাকসিলাম। একন নেয়ে এলাম। রাতে ভাত দে খাইয়ো।

    হরিদাসীর চোখের কোনে বাষ্প জমা হয়।

    (ক্রমশ)
  • chan | 132.162.188.168 | ২৩ জুন ২০১৪ ১৬:১০642626
  • emotion টা ভালই ধরেছ। ছোট খাট উচ্চারন বাদে, বেশ লাগছে।
  • kumu | 52.104.26.18 | ২৩ জুন ২০১৪ ১৬:২৯642627
  • অনামিকা ,হরিদাসীকে দেখেছেন?এত ডিঅটেল এত মমতা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা!!)একমুঠো মুড়ি,একটু গরম ভাত কত মহার্ঘ।
    প্রাণ ভরে লিখুন।
  • kumu | 52.104.26.18 | ২৩ জুন ২০১৪ ১৬:৩৬642628
  • ডিটেল
  • Anamika Sil | ২৩ জুন ২০১৪ ১৬:৪৩642629
  • কুমু

    আপনাদের কি দেখাতে পারছি হরিদাসীকে?

    যদি পারি তবে বুঝবো নিজের দেখা আর কল্পনার রঙে মেশানো সার্থক।
  • Anamika Sil | ২৩ জুন ২০১৪ ১৬:৫০642630
  • ধন্যবাদ অমিতদা। চেষ্টা করছি ধরার সব অনুভুতিগুলোকে।

    আর যে অনচলের ভাষা যেমন তেমনটাই রাখার চেষ্টা করছি।
  • nina | 22.149.39.84 | ২৩ জুন ২০১৪ ২২:৩৯642631
  • বড় ভাল লাগছে----ক্ষিদা লাগসে পরের পব্বটির লইগ্যা--:-D
  • | ২৩ জুন ২০১৪ ২২:৪৪642632
  • অনামিকা,

    'লগে' আর 'লাইগ্যা'য় (লাগিয়া থেকে বর্ণবিপর্যয়ে লাইগ্যা) অর্থের তফাত হয়ে যাচ্ছে দেখে বললাম।
    নাহলে আপনি লিখে যান বিন্দাস।
    পড়ছি
  • kumu | 52.104.27.225 | ২৩ জুন ২০১৪ ২৩:২৩642633
  • অনামিকা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি হরিদাসীকে।
  • | 60.82.180.165 | ২৩ জুন ২০১৪ ২৩:৪৮642634
  • অনামিকা, পড়তে দিব্যি লাগছে। লিখে চলুন

    'রেন্ধেছিলাম' কে রানসিলাম দিয়েও রিপ্লেস করতে পারেন। কথ্য বাঙালে কি রানসো উত্তরে অমুক রানসি/ রানসিলাম খুবই প্রচলিত।
  • Anamika Sil | ২৪ জুন ২০১৪ ১২:১১642635
  • একটু বলে রাখি আমি বাঙাল বা কথ্য বাঙাল কোন ভাষাই জানি না। তবে আমি যাদের কথা বলছি এরা যে ভাষাটা ব্যবহার করে সেটাকে কিছুটা শুনে লেখা।

    হ্যা` রান্সিলাম শব্দটা আমিও শুনেছি ম।

    কুমু শব্দে ছবি আঁকা তাহলে কিছুটা পেরেছি।

    ধন্যবাদ কুমু, দ, ম ও অন্যান্যদের। পড়তে থাকুন, সঙ্গে থাকুন।
  • Anamika Sil | ২৪ জুন ২০১৪ ১৭:০১642637
  • পর্ব - ৯

    ***********

    ভালোবাসা কি পরিমাপ করা যায়? না কি বিনিময়যোগ্য? রাতের নিকষ কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এমন ভাবনাই মাথায় আসে হরিদাসীর।

    রাত কত কে জানে? কিন্তু হরিদাসীর চোখে ঘুম নেই। ঘরে গুমোট গরম। বাইরেও হাওয়া নেই। তবু ঘরে যেন আবদ্ধ লাগে। বাইরের দাওয়ায় শুয়ে থাকতে থাকতে কত হাবি-জাবি কথা যে মাথায় আসে।

    এই যে ঢাপের মা তাকে কত ভালোবাসে। সে কি কোনদিন সেই ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারবে? এটা ওটা রান্না করে দিয়ে যাওয়া, কমলের অসুখ করলে ডাক্তার-বদ্যি করা, এসবই তো তার ভালোবসার দান। বিনিময়ে সে কোনদিনই তেমন কিছু করতে পারে না। ইচ্ছে থাকলেও সঙ্গতি হয় না।

    অথচ তার কমলটা মন্দ রোজগার করে না। টাউনে রিক্সা চালায়। একবেলাতেই যা রোজগার তাতেই তাদের তিনজনের ভালোভাবে চলে যায়। কিন্তু ছেলেটা একদিন কাজে বেরোয় তো দুদিন বেড়োয় না। আর যা রোজগার করে তার একটা পয়সাও সংসারে দেয় না। নেশা-ভাঙ করে উড়িয়ে দেয়।

    বয়সের সন্তান কমল। হবে না হবে না করে শেষ বয়সে হয়েছিল কমল। বাপটা বেশিদিন ছেলের সুখভোগ করেনি। স্বামী চলে যাবার পর একাহাতে বিড়ি বেঁধে, জন খেটে মানুষ করেছে।

    না মানুষটা করতে পারি নাই। নিজের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাসের সাথে কথাটা বিড় বিড় করে গলা দিয়ে বেরিয়ে আসে।

    বয়সের সন্তান বলেই বোধহয় চোখের সামনে ছেলেকে বখে যেতে দেখেও তেমন শক্ত হতে পারেনি সে। ভেবেছিল বিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। কিছুদিন যে হয়নি তা না। ভামিনী আসার পর থেকে সারাক্ষণ বাড়িতেই থাকত। নতুন বউএর জন্য আজ এটা কাল ওটা কিনে আনত। নিয়ম করে রিক্সা টানত। রাগ হত খুব তার। মা এত কষ্ট করে, গায়ে-গতরে খেটে তাকে বড় করল আর সে কিনা পরের মেয়ের জন্য মরে যায়। কি ভালোবাসা বাপরে।

    আজ বোঝে মানুষ বড় অবুঝ। কোনকিছুতেই সন্তুষ্ট হয় না। সেও তো ভালো ছিল। নিজের পরিবারের জন্য আনত। মোনা-মুনি দুটোতে থাকত। না হয় তার জন্য কিছু নাই করল। কিন্তু একদিন সেই ভালোবাসাতেও ভাটার টান এল। প্রায় দিন ঝগড়া, আবার সেই অনিয়মিত কাজে বেরোনো। একটু একটু যে আনন্দ হয়নি তা নয়। যেন বুকে বাতাস লেগেছিল। আবারও একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে।

    কমলটা আজ বাড়ি ফেরেনি। অনেকদিন পর আবার বাড়ি ফিরল না। ঢাপের মা চলে যাবার পর ভামিনী ভাত বেড়ে দিয়েছিল। গরম ভাত, আলু সেদ্ধ আর ঢেঁকি শাক দিয়ে তৃপ্তি করে খেয়ে ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল ।

    রাতের দিকে ভামিনী এসে ডেকে জানিয়েছিল যে কমল ফেরেনি তখনও। রাত যে আগেও করেনি তা নয় কিন্তু শেষ অবধি ফিরবেই না এমনটা ভাবেনি হরিদাসী।

    সেই তখন থেকেই জেগে আছে সে। বসে থাকতে থাকতে দাওয়ায় শুয়ে পড়েছে। ভামিনীকে খেয়ে নিতে বলেছে। সে কি ঘুমিয়েছে ঘরে? এমনটা আগেও করেছে কমল তাই অবাক হয়নি সে। কিন্তু বউটা আগে দেখেনি। কাঁদছে না তো বউটা? কান পেতে কোন শব্দ পায় না হরিদাসী।

    সন্তানের প্রতি ভালোবাসার প্রতিদান। কর্তব্য পালনের প্রতিদান। হয়ত ঠিকঠাক পালন করতে না পারার প্রতিদানও হতে পারে।

    ছেলেটা যেন ঠিকঠাক ফিরে আসে। সকাল হতে আর কত দেরী? সময় যেন কাটতেই চায় না।

    (ক্রমশ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন