এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • জীবন যেমন

    Anamika Sil লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০৯ জুন ২০১৪ | ১১৫৫২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • nina | 78.37.233.36 | ২৫ জুন ২০১৪ ০৩:২৮642638
  • অনামিকা---তারপর?
  • Anamika Sil | ২৫ জুন ২০১৪ ১৬:০২642639
  • পর্ব-১০

    **********

    আকাশটা সকাল থেকে ভার ভার হরিদাসীর মনের মতই। সবার আগে ঘাটে এসে বসে আছে সে জলের দিকে তাকিয়ে। মাঝে মাঝে মনে হয় মরণ হলেই বাঁচে।

    ছেলেটা রাতে ফেরেনি সেতো তার দোষ নয়। ভামিনীর জন্য যে মনটা খারপ হয়নি তাও না। সারারাতটাই অপেক্ষা করেছে কখন ভোর হবে। তবু বউটা ভোর হতে না হতেই চাট্টি কথা শোনালো। সেও যে সারারাত দু চোখের পাতা এক করেনি তার লাল চোখ দেখেই বুঝেছিল। অন্ধকার কাটতে না কাটতে পুবের ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছিল ভামিনী।

    তারপর কোনরকম ভুমিকা ছাড়াই বলল সারারাইত যে তোমার পোলাটা ফিরল না তোমার কোন ভাবনাই নাই। রাইত পোহাতে না পোহাতেই আড্ডা দিতে চললা?

    সবে বালতিটা হাতে নিয়েছে কি নেয়নি হরিদাসী। শুনে থ হয়ে গেল। আড্ডা কি কস দুইখান সুখ-দুখের কথা বই তো কিসু না। নরম স্বরে বলে হরিদাসী।

    রাইত থাকতে আমি অপেইক্ষা করসি কহন ভোর হইব আর তারে খুঁজতে যাইব। আর তুমি কিনা ঘাটে নাইতে যাও। প্রানে কি এক্টু মায়া নাই পোলার তরে?

    কি কস তুই? আমার পোলা আর তার তরে আমার মায়া থাকব না? শোন অত অধৈজ হোস না। বেলা যাইলে দেখবি ঠিক বাড়ি চইলা আসব।

    কি করে জানলা? তোমারে কয়ে গেসে তাইলে? ব্যঙ্গ ঝরে পড়ে কন্ঠ থেকে ভামিনীর।

    আহত হয় হরিদাসী। না আমারে কোন কতাই সে কয় না সেতো তুই ভালো জানস। ধীরে ধীরে কেটে কেটে বলে হরিদাসী।

    তাইলে জানলা কি করে যে বেলা হইলেই সে বাড়ি ফিরা আইব? আগেও তার মানে এমনডা সে করসে। তুমি চেপে গেস।

    চুপ করে থাকে হরিদাসী। অল্প বয়স থেকেই ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছিল। মদ-গাঁজা -মেয়েমানুষ কোনটাই বাদ ছিল না। কিন্তু এসব কথা সে কেমন করে জানায় ভামিনীকে। হাজার হোক নিজের পেটের সন্তান। তার দোষ-ত্রুটি তো তাকেই আড়াল করতে হবে।

    উত্তর দিসো না যে বড়? অন্যের মাঈয়ার জেবন নষ্ট করতে তোমার বাঁধে না একটুও? আগে কইলে বাবা এহানে আমার বিয়াই দিত না।

    শোন বউ সে সব অনেক আগের কতা। বিয়ের পর তো ছাওয়ালডা অনেক পাল্টে গেসে। কাল হয়তো

    কথা শেষ হয়না ভামিনী বলে কাল হয়ত কোন পুরোন রেন্ডির ঘরে ঠাঁই নিয়েসে তোমার সুপুত্তর। গলায় যেন শীতল শ্লেষ।

    আর দাঁড়ায়নি হরিদাসী। বালতিটা তুলে বড়তলার ঘাটে এসে বসেছে। কিছু যেন ভালো লাগছে না।

    হরি আজ যে বড় আগে আইছিস? ঢাপের মা'ই সবার আগে রোজ ঘাটে আসে। তাই হরিদাসীকে দেখে অবাক হয়।

    অনেকক্ষণ থেকেই মনের মধ্যে মেঘ ঘনাচ্ছিল। ঢাপের মা সামনে আসতেই মেঘ আর জল ধরে রাখতে না পেরে দুচোখ উপচে পড়ল।

    আ আ কান্দস ক্যান? কি হইল? ও হরি ক না কি হইসে? কমলের কিসু হইল? উৎক্ন্ঠিত হয় ঢাপের মা।

    বয়সের দোষ বোধহয় একবার কান্না এলে আর থামতে চায় না। খানিকটা কেঁদে নিজেকে সামলে নেয় হরিদাসী।

    কাইল রাইতে ফেরে নাই কমল?

    কি কস? আবার সেই আগের মত শুরু করল নাকি?

    যানি না ঢাপের মা। কপালে আমার সুক নাই। বউডা তার ওপর ম্যালা কতা শোনালে। আমার মরণ কবে হবে কইতে পার ?

    মরণ সেকি চাইলেই পাওয়াডা যায় নাকি রে? মাঈয়া মানসের জেবনে শুধু জলন আসে সুক কই? তাই তো বেধাতা আমাগো কই মাসের জান দিছে। জলো আর জলতেই থাকো।

    আর যে সয় না। কত কষ্ট করে পোলাডারে বড় কইলাম সেতো তোমারা জানসো। জন্মইলো কমল অর বাপডা চোক বুজলো। থই পাই না। জন খাটসি, বিরি বান্ধসি। বিড়ি বাইন্ধা চোকখান নষ্ট হইয়া যাইতে ভিক্ষা করতে শহরে যাইলাম কার তরে? অর জন্য তো? লজ্জা-ঘেইন্না সব থুইয়া। আর সে একবারও আমার দিকে তাকাইল না পর্জন্ত। আজ তার বউডাও আমারে কতা শোনায়। সব তো অর জন্য। আজ ভাবি এর সেয়ে না হইত তাও ভালো ছেল গো। কান্না ঠেলে আসে। বিলাপ করতে থাকে হরিদাসী।

    সব জানে ঢাপের মা। সব। সেই যেদিন বিয়ে হয়ে এ গ্রামে এসেছিল সেদিন থেকে তাদের বন্ধুত্ব। চোখের ওপর সব ভাসে।

    (ক্রমশ)
  • de | 69.185.236.53 | ২৫ জুন ২০১৪ ১৬:৪০642640
  • বড় মায়া দিয়ে লিখছেন অনামিকা - ভালো লাগছে!
  • nina | 78.37.233.36 | ২৬ জুন ২০১৪ ০৪:০৭642641
  • ঝপ করে শেষ হয়ে গেল ---বড় ভাল লিখছ অনামিকা।
  • chan | 132.162.207.200 | ২৬ জুন ২০১৪ ১২:৫৫642642
  • অনামিকা দেবী, খুব ভাল লাগছে গল্পটা, এক্জন লেখিকাকে জানি, নাম জল (বা-লাতে লেখেন), উনি আপনার মতনই লেখেন, কিন্তু, আপনার লেখার standard অনেক better।
  • Anamika Sil | ২৭ জুন ২০১৪ ১৬:৫৮642643
  • পর্ব-১১

    *********

    দিন কারও জন্য থেমে থাকে না। বেলা গড়ায়। কমল ফেরে না। হরিদাসী রোজকার নিত্যকর্ম স্নান করে ভিজে কাপড় মেলে দাওয়ায় বসে থাকে। গোপালকে আজ আর জল-বাতাসা দেবার কথা মনেও পড়ে না। পুবের ঘরের দরজায় কিছুক্ষন অন্তর বিলাপ করে ভামিনী, সাথে শাশুড়ীর মুন্ডপাত।

    হরিদাসী বসে থাকে স্থবিরের মত। কোথায় যাইল পোলাটা? এতটা বেলা তো করে না কখনই। নিজের মনে মনেই বলে। মনের ভিতর উৎকন্ঠা বাড়ছে মুখে নিজেকে যতই অবিচল রাখুক না কেন। মনের মধ্যে কু ডাকে। কিছু খারাপ হলো না ছেলেটার। তার একমাত্র যষ্ঠি।

    পিসি?

    বুঁচি আয়।

    বুঁচির সাথে সকালে দেখা হয়নি। শনিবার করে মাধুকরী করতে যাওয়ার থাকে না বলে একটু বেলায় সে ঘাটে যায়। শনিবার অর্ধেক আফিস, অফিস পাড়ায় বন্ধ থাকে, যেগুলো খোলা থাকে সেগুলো-ও তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। উপরন্তু থাকে তাগাদার দিন। তাই এই দিনটাতে বেড়িয়ে কোন লাভ হয় না। অফিস বাবুদের মত তাই শনিবার-রবিবার দুটো দিনই তাদের ছুটি। সারা সপ্তাহ বাড়ি থাকে না বলে বুঁচির একার সংসারে কাজকর্ম তো কিছু কম না। ভদ্র সমাজে যায়, পরণের কাপড়খানি পরিস্কার না হলে যে বাবুরাও অপছন্দ করে সে তার দেখা। তাই শনিবার সে কাচা-ধোয়া সব করে। সুগন্ধী সাবান দিয়ে নিজেকে একটু চকচকে করে। একটা সাবান কে বেশ কিছুদিন ব্যবহার করতে হয়। হরবখত কেনার তো পয়সাও চাই।

    সোনলাম মামির মুখে যে কাল কমলদা ফেরে নাই রাইতে?

    ঠিকই সুনছস। কাল সে ফেরে নাই।

    বইসে থাকলে তো হবে না গো পিসি। খোজ তো নিতি হবে। চলো চেনা জায়গায় খোজ নি।

    কোথায় খোজ নিবি বুঁচি? সেকি আমায় কয়ে গেছে না আমি যানি কোতায় কোতায় তার ডেরা? আইজকাল সেকি আমার সাথে কথা কয় দরকার সারা? অর বৌরে জিগা সে যদি জানে তবে তাকে নিয়া তুই খোজ করতে যা।

    ভামিনীকে একটু মেপেই চলে বুঁচি। এ মেয়ে তাদের মত সহজ-সরল না। এতদিন বিয়ে হয়ে এসেছে অথচ কারও সাথেই তেমন একটা সখ্য হয়নি। নিজের ঘরেই থাকে। কাজকর্ম করে। অবসরে বিড়ি বাঁধে। পাড়াঘরে নিমন্ত্রণ থাকলে যায় বটে তবে সবসময় কেমন যেন নিজেকে সরিয়ে রাখে।

    তাইলে আর কি আমি চলি। ফিরলে একখান খবর দিও পিসি। বলেই চলে যায় বুঁচি।

    ভামিনী কিছু বলে না। বাস্তবে সেও তো জানে না যে কমল কোথায় যায় কি করে। ইদানীং নেশা-ভাঙটা যে বেড়েছিল সে লক্ষ্য করেছে। কিছু জিঞ্জাসা করে উত্তর পাইনি। ঝগড়া করেও লাভ হয়নি। এমন সময়গুলোতে একটা পেটের সন্তানের বড় অভাব অনুভব করে সে। একটা সন্তান থাকলে হয়ত তার স্বামীটা এমনধারা কান্ড করত না।কত মানত, উপোস, বার-ব্রত করেছে। কিছুই তো হলো না। একটা কান্না আবার উথলে আসে।

    সকালে গড়িয়ে দুপুর হয়। তাদের বাড়িতে উনুনে আগুন পড়ে না। ধৈর্যের বাঁধ ক্রমশ ভাঙতে থাকে। একবার কি টাউনে কাউকে পাঠিয়ে খবর নেবে? ভাবে হরিদাসী। কিন্তু বড় ভয় হয়। যদি খারাপ কিছু খবর আসে? কিম্বা সেই আগের মত কোন খারাপ মেয়েমানুষের কাছে যাই নি তো?

    পায়ে পায়ে বেড়িয়ে পড়ে খানিকটা দুরের পুঁটির বাড়ির উদ্ধেশ্যে

    হরি কমল ফিরেসে?

    না ফেরে নাই।

    তদের খাওয়া হইল?

    না হয় নাই। হারানটা এখনও ফেরে নাই কাম থিকা। ফিরলে খাব। তোগো তো রান্না হয় নাই। দুটি ভাত বেড়ে একখান থালায় দি বাড়ি নিয়ে গিয়ে দুজনে খা।

    না না পুঁটি। খেতে ইস্সা নাই। আমি আসচিলাম হারানের তরে। ও যদি ফিরে থাকে তাইলে ওরে পাঠায় খবর নিতাম।

    ও তো টাউনেই গেসে আজ কাজে। ফিরলে আমি তোরে জানাবো।

    আমি তাইলে বাড়ি যাই।

    এই রোদে আইলি। এখনি চলি যাবি। একটু বস না।

    নারে বউটা বাড়িতে একা। যাই আমি।

    না ফিরলে থানায় যাইতে হইব।

    কি কস পুঁটি ? থানা ক্যান? বিহ্বল স্বরে জানতে চায় হরিদাসী।

    দুইদিন হতি আসল একখান মানষের খোজ না পাইলি থানাতেই তো যাতি হবে হরি।

    হরিদাসী চোখে অন্ধকার দেখে।

    (ক্রমশ)
  • chan | 132.162.207.200 | ০১ জুলাই ২০১৪ ১৬:০০642644
  • গল্পটা কি শেষ হবার মুখে?,,,,,,,,
  • | ০১ জুলাই ২০১৪ ১৬:৪২642645
  • তিনদিন হয়ে গেল তো। আর লেখা হয় নি?
  • nina | 78.37.233.36 | ০২ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৪642646
  • আমিও খুঁজছি হরিদাসী কে--গেল কই---
  • Anamika Sil | ০২ জুলাই ২০১৪ ১৬:০৫642648
  • পর্ব - ১২

    ************

    থানা-পুলিশ কিছুই করতে হয় না। কমল সন্ধ্যা নামার আগেই ফিরে আসে। গতপরশু কিছু টাকা বেশি রোজগার হয়েছিল তাই টাউনের গোলাপীর ডেরাটেই রাতটা কাটিয়েছে। নেশা এতটাই ছিল যে সকালেও সে নেশা কাটেনি। নেশা টুটার পর নিজেকে রাস্তায় পেয়েছিল। হারানের সাথে দেখা হয় ঐ রাস্তাতেই। হারানের সাথেই বাড়ি ফিরেছিল।

    হরিদাসী-ভামিনীর সাথে কথা কাটাকাটি রাগারাগী অল্পবিস্তর হলেও পরে সব শান্ত হয়ে যায়। কিন্তু ভবিষ্যতেও যে এমনটা হবে সে বেশ বুঝতে পারে হরিদাসী। মেয়েদের ভাগ্য। বিধাতা মেয়েদের ভাগ্যেই এত দুখ্খ কেন দিয়েছে সেটাই ভাবে সে। বিধাতা নাকি সে নিজেই ভামিনীর কপালে এই দুখখটা এঁকে দিয়েছে? জানত তো কমলটা বিগড়ে গেছে তবু নিজের ছেলের ভালো করতে গিয়ে কি আর একজনের কপাল পোড়ালো না?

    রাতের অন্ধকার ফিকে হয়ে আসে। দাওয়ায় শুয়ে শুয়ে এসব ভাবতে ভাবতেই উঠে পড়ে হরিদাসী। দিনের আলো বেড়োলেই সকাল সকাল র‌্যাশনে যেতে হবে। সারা সপ্তাহের খোরপোষের বন্দোবস্ত করতে হবে। নিজেদের কার্ডে আর কত হয়। এবাড়ি - ও বাড়ি থেকে কার্ড জোগাড় করা আছে। তাতেই চলে যায় সপ্তাহভোর ভাতের জোগান। গম পারতপক্ষে কেনেই না। কারণ গম কিনে, ভাঙিয়ে রুটি বানানো ওসব তাদের মত লোকেদের কাছে বড়লোকী। রুটির সাথে তরকারীর জোগান দরকার। তার চেয়ে ভাত অনেক ভালো। দুটো ফুটিয়ে নিতে পারলেই হল। কিছু না থাক নুন দিয়েও ভাত খাওয়া যায়। ফ্যানটাও মরিয়ে নেওয়া যায় ভাতের সাথে। চাল কম লাগে।

    সাবানে চোবানো কাপড়জোড়া পুকুরঘাটে কেচে নিয়ে নেয়েধুয়ে এসে হরিদাসী গোপালকে জল-মিস্টি দিয়ে রান্নাঘরে যায় চা পাতার জন্য। গত পরশু ঢাপের মাকে ভামিনী চা করে খাইয়েছিল। হয়ত কোন একসময় গিয়ে কিনে এনেছে। বউটার চায়ের নেশা আছে। এইসব ছুটখাট নেশা না থাকলে তাদের পক্ষে চলা মুশকিল। খাবার হোক না হোক এক খিলি পান বা এক পেয়ালা চা বা তামাক তাদের নিত্য প্রয়োজন। খিদেকে জব্দ করার জন্য।

    নিজে চা করে চা'টা ছেঁকে নিজের কাপে নেয় আর ভামিনীর কাপে ঢেলে দেয়। বিস্কুটের কৌটো থেকে গোটা দুই মেরী বিস্কুট নিয়ে দাওয়ায় এসে বসে। পুবের ঘরে কমল তখনও ওঠেনি ঘুম থেকে। ছেলেটা একটু একটু করে দুরে সরে যাচ্ছে। মায়া যত কাটে ততই ভালো। হরির সংসারে কেই বা কার।

    বেড়িয়ে পড়ে হরিদাসী হাতে একটা থলে নিয়ে র‌্যাশনের দোকানের উদ্দেশ্যে। বেশ খানিকটা পথ। বেশ লম্বা লাইন। বু`চি , পুঁটি, বুড়ি সবাই লাইন দিয়েছে। হরিদাসী বেশ একটু পেছনে লাইন দেয়। তারপর পাড়ার হাঁড়ির খবর নিয়ে গল্পে মেতে ওঠে।

    যে যার মত র‌্যাশন নিয়ে চলে যায়। হরিদাসীও ভারী থলেটা বয়ে আনতে আনতে বেশ কবার রাখে। বাড়ি পৌঁছে আবার চাল ঝেড়ে-বেছে দিতে হবে। কাঁকড় তো সাদা চোখেই পড়ে, তাছাড়াও কত যে ইঁদুর, আরশোলার নাদি, ঝাড় দেওয়া নোংরা মিশে থাকে তার ইয়ত্তা নেই। তাদের কি আর কেউ মানুষ বলে মনে করে? গর্ত বোজানো নিয়ে কথা।

    ভোটের সময় আসে নেতারা। তাদের কথা মত চলতে হয়। নিজেরা মাথা ঘামায় না। যে তাদের স্বার্থ রাখে তাদের হয়েই তারা ভোটটা দিয়ে আসে। গেল কয়বার কিছু টাকা দিয়েছিল তাই দিয়ে হরিদাসী ঘরটা ধীরে ধীরে টিনের করে নিয়েছে। নাহলে তাদের আর সাধ্য কি। বাড়িতে চলে আসে হরিদাসী।
    হাঁপিয়ে গেছে সে এতটা পথ ভারী বয়ে এনে।

    ভামিনী ধরে নেয় থলেটা হাত থেকে। ঘরের দাওয়ায় গিয়ে বসে হরিদাসী। একে গরম তায় জৈষ্ঠ্যমাস, এক ফোঁটা বাতাস নেই।

    ভামিনী একটা বাটিতে জলমুড়ি রেখে যায়। হরিদাসী বাটিটা তুলে চুমুক দেয়। দুটো কথা কইতে মন চায়। কি রান্না হচ্ছে জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বউটার সাথে কথা কয়ে সুখ হয় না। আর্ধেক কথার উত্তর দেয় না, যাও বা দেয় ঠেকায় পড়ে তাতে মিষ্টতা থাকে কম, হুল থাকে বেশি।

    মুড়ির বাটিটা খেয়ে নামিয়ে রাখে। কাজ কিছু নেই। ভামিনীর পছন্দ হয় না তার কাজ। সে ঢাপেদের বাড়ি যাচ্ছি বলে বেড়িয়ে যায়।

    হরিদাসীদের সমাজে মাধুকরী নিন্দিত নয় বলেই ঢাপের মায়ের মত সম্পন্ন মানুষের সাথেও হরিদাসীদের সখ্যতা বজায় থাকে। যদিও সামাজিক শ্রেণীবিভাগ নেই এমনটা নয়।

    (ক্রমশ)
  • Anamika Sil | ০২ জুলাই ২০১৪ ১৬:১০642649
  • বিসর্গ কি করে দেয় কেউ একটু বলে দিলে ভালো হয়।

    কদিন হাতে সময় পাই নি তাই দিতে পারিনি লেখাটা।
  • | ০২ জুলাই ২০১৪ ১৬:১৮642650
  • বিসর্গ - : মানে গুরুচন্ডা৯ লেআউটে কোলন চিহ্ন
  • kumu | 52.104.27.124 | ০২ জুলাই ২০১৪ ১৬:২০642651
  • যেভাবে কোলন ঃদেয় সেভাবেই বিসর্গ দিন।
  • Anamika Sil | ০২ জুলাই ২০১৪ ১৬:৩৭642652
  • ধন্যবাদ দ এবং কুমু।
  • chan | 132.162.43.240 | ০৩ জুলাই ২০১৪ ১৪:৩৪642653
  • চিন্তায় ছিলাম, শেষ হয় গেল বুঝি, যাক, আপাতত হচ্ছে না।
  • Anamika Sil | ০৩ জুলাই ২০১৪ ১৫:৩৯642654
  • নাহ শেষ হয়নি তবে হবার মুখে চন। ধন্যবাদ।
  • Nina | 78.37.233.36 | ০৪ জুলাই ২০১৪ ০৬:৫৮642655
  • অপেক্ষায় ছিলাম--ভাল লাগছে খুব
  • Anamika Sil | ০৫ জুলাই ২০১৪ ১৪:৪৫642656
  • পর্ব - ১৩

    *************

    ভুতনাথ মন্দির। সোমবার সোমবার ভুতনাথ মন্দিরে চলে আসে হরিদাসী। তার সঙ্গীরা কেউ আসে না এখানে। সাথে আসে। শোভাবাজারের আশে - পাশে মাধুকরী করে বেলাবেলি ফিরে যায়। কিন্তু হরিদাসী ফেরে না। নিমতলা ঘাটের শ্মশান তাকে টানে।

    ভুতনাথ মন্দিরে বেশিরভাগ স্থানীয়দের ভিড়, সেখানে হরিদাসীদের মত মাধুকাররা যায় না। ধর্মে তারা বৈষ্ণব, ভিক্ষান্ন সংগ্রহ করা তাদের জীবিকা তাই কোন একস্থানে ভিখারীর মত ভিক্ষাপাত্র পেড়ে ভিক্ষাগ্রহণ তাদের কাছে শ্লাঘার। তাই এখনো তারা যখনই কোথাও ভিক্ষা চাইতে যায় জয় গৌড় জয় নিতাই নয়ত জয় গোবিন্দ কিছু একটা বলে দাঁড়ায়। সে গৃহস্থের বাড়ি হোক কি অফিসপাড়াই হোক। কীর্তন করে ভিক্ষান্ন জোগাড় করাই ছিল তাদের প্রধান কাজ। সময়ের সাথে সাথে দ্রুততা বেড়েছে। কীর্তন আজকাল তার নিজের স্থান হারিয়েছে । তাই কীর্তন করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে আর অন্ন সংগৃহীত হয় না। তাই আজ শহরের পথে ভিক্ষা করে।

    এই মন্দিরে সারাদিন সোমবার করে আসে অবাঙালী বিশেষত মারোয়ারী, উত্তরপ্রদেশীয়রা। পূজো দিয়ে বাইরে বসে থাকা ভিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্থ বিতরণ করে। কখনও কখনও বস্ত্রও। হরিদাসীরও ভাগে পড়ে কিছু। ডেকেই দিয়ে যায় অনেকে। করজোড়ে সেও শুভাকামনা জানায় তাদের। হাতের লক্ষী পায়ে ঠেলতে নেই।

    সে বসে থাকে সংলগ্ন শ্মশানে। শবের পর শব এসেই চলে। বিরতিহীন। পুণ্যস্থান। জীবনের শেষতম যাত্রার সাক্ষী হয় সে। নানান বয়সী, নানান সামাজিক অব্স্থানের মানুষ এখানে আসে শব হয়ে। একটাই পরিচয় শব। কোনো সামাজিক ভেদাভেদ নেই। বৈদ্যুতিন চুল্লী বা কাঠের চুল্লীতে পরপর দাহ হয় একটা একটা করে দেহ। বেঁচে থাকতে কত উপচার কত যতন আর শব হবার পর জড় পদার্থ। পঞ্চভুতে বিলীন হয়ে যায় সবকিছু।

    জীবনের প্রতি বিরাগ জাগে। কিছুই তো নেই জীবনে। সংসার সেও যে এক পরম মায়া। সন্তান-স্বামী সবই তো মায়া। কিসের জন্য এত হানাহানি কিসের জন্য এত ঝগড়া, মানুষ বড় ক্ষুদ্র। মন উদাস হয়ে যায়। কাঠের আগুনের হল্কার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মোহবিষ্ট হয়ে পড়ে সে।

    আগুনের ফুলকির ভিতর দিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখে জল আসে। অদূরে তখন সংশ্লিষ্ট শবদেহের আত্মীয়দের বিলাপ। বিলাপে তার চোখে জল আসে না। অথচ কেন আসে সে বোঝে না। সময় পেরিয়ে যায়। হরিদাসী বসে থাকে।

    মাঈজী। তাকিয়ে দেখে একজন মারোয়ারী বাবু। প্রতি সপ্তাহে আসে এখানে। শিব আর শব দুই দর্শন করে। মুখচেনা হয়ে গেছে। হরিদাসীকে ডেকে পয়সা দিয়ে যায়। কোনো কোনোদিন খাবার। প্রসাদ ও দেয় এক একদিন।

    লো মাঈজী।

    হাত পারে হরিদাসী। দশটাকার একটা নোট দেয়। অভ্যাসমত কপাতে হাত ঠেকিয়ে হরিদাসী বলে গোবিন্দ তোমার মঙ্গল করুন বাবু।

    চলে যায় লোকটি। বসে থাকে হরিদাসী। শ্মশানের লোকেদের কথায় সম্বিত ফেরে বাড়ির পথ ধরে। প্রায়ই এমনটা হয়। স্টেশনে এসে দাঁড়ায়। একটা ঘোর ঘিরে থাকে। সেই ঘোরের মধ্যেই চলে। খিদে-তৃষ্ণা বোধ হয় না। মন পুরো চিন্তাশূণ্য, মাথা খালি।হরিদাসী স্টেশনে বসে অপেক্ষা করে কখন আসবে তার ট্রেন।

    (ক্রমশ)
  • AS | 24.99.78.125 | ০৬ জুলাই ২০১৪ ১৯:১০642657
  • খুব ভালো লাগছে
  • chan | 132.162.123.232 | ০৮ জুলাই ২০১৪ ১১:১৬642659
  • খুব ই ভাল চলছে। কিছু বলার নেই।
  • Anamika Sil | ০৮ জুলাই ২০১৪ ১২:২৬642660
  • পর্ব - ১৪

    ************

    জীবনের ওপারের সেই চরম শূণ্যতাকে যেন প্রত্যক্ষ করে হরিদাসী। আজ একা ফেরা। পথের সাথী কেউ নেই। কেউ তো সত্যি করেই থাকে না। একা একাই তো পথ চলতে হয়। ঝুম হয়ে ট্রেনের একপাশে চটিজোড়া পেতে বসে থাকে হরিদাসী। মন-মাথা শূণ্য।

    একের পর এক স্টেশন পেরিয়ে যায় ট্রেন। ওঠানামা করে যাত্রী। সওদা নিয়ে ওঠে মশলা মুড়ি, ছোলা, দিলখুশ। চেনা মুখ দেখে কেউ কেউ কথা বলে। হরিদাসী শোনে কি শোনে না। প্রত্যুত্তর দেয় অভ্যাসবশে। গন্তব্যে পৌঁছে ট্রেন থেকে নেমে যায়।

    নিঝুম অন্ধকার। রাস্তার বাল্বের আলোগুলো জ্বলে না। এসব সহনীয় হরিদাসীদের জীবনে। অন্ধকারে পেঁচার মত চোখ ফেলে চলে যেতে পারে। কোথাও একটু খসখস আওয়াজ হলেই দাঁড়িয়ে পড়ে ওরা। বিষহরি রাস্তা পেরোচ্ছে। ওকে আঘাত না করলে ও কাউকে আঘাত করে না।

    আজও মাঠ-ঘাট পেরিয়ে পাড়ায় ঢোকার মুখে বাড়ির কাছে টিমটিমে বাতি দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। ঘোর কেটে যায়। কারও কিছু হল নাকি? মানুষের মন তো, আগেই তাই কুচিন্তা জাগে। কেরোসিনের যা দাম বেড়েছে তাতে দরজার সামনে লম্ফ জ্বালিয়ে রাখাটা তাদের কাছে বিলাসিতা। অন্ধকারে তারা পথ চিনে চলতে অভ্যস্ত। একটু আগেই সে চিন্তা করছিল কে স্বামী কে সন্তান সবই মায়ার বন্ধন। অথচ এখন যেন এইটুকু পথ উড়ে যেতে ইচ্ছে করছে। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ। পা চালিয়ে তাড়াতাড়ি পথটা পেড়োতে চায় কিন্তু পা চলতে চায় না।

    কি হয়েসে? ভীত কন্ঠে বলে হরিদাসী।

    হরি আসছস। আয় ভিতরে আয়।

    বাড়ির ভিতরে পা দিতে শরীর কাঁপে হরিদাসীর। পুঁটি, বুড়ি এরা এখন তার বাড়িতে কেন?

    কি হয়েসে? আবারও সে কাঁপাকাঁপা গলায় জানতে চায়।

    ভিতরে তো আয়। বলে পুঁটি। কন্ঠে উদ্বেগ চাপা থাকলেও স্পষ্ট ধরা পড়ে হরিদাসীর কাছে। স্থলিত পায়ে সে বাড়ির ভিতর ঢোকে।

    বস। মুখ থমথম করে পুঁটি, বুড়ির। বসে না সে। চোখেমুখে জিঞ্জাসা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

    কমলের বউটা বিস খেয়েসে। বলে পুঁটি।

    বিস!!!!

    ঠিক যেন মাথায় ঢোকে না কথাটা। ভামিনী কেন বিষ খাবে ? হতভম্ব হয়ে যায়। আর বিষ পেলেই বা কোথা থেকে?

    দাওয়ায় ধরে বসায় তাকে সবাই। তারপর সবাই বলে ঘটনা কি ঘটেছে। কমলের না ফেরা নিয়ে দু-চার কথা বললেও ভামিনী রাগে বা ক্ষোভে ফেটে পড়েনি অথচ সেটাই ছিল অবশ্যম্ভাবী। সকালে উঠে নিত্যদিনের কাজকর্ম করেছে। তারপর এক ফাঁকে বেরিয়ে খানিকটা কীটনাশক জোগাড় করে প্রতিবেশীর ঘর থেকে। সেটাই সে সন্ধের মুখে খেয়ে নেয়। দুপুরে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে কিনা কেউ জানে না। কমলকে বাড়িতে এসে কেউ দেখে নি। পুঁটি আজ সন্ধেবেলা শাকবাটা করেছিল। তাই দিতে এসে ডেকেও যখন পাইনি, তখন ঘরে উঁকি দিয়ে দেখে বউটাকে কাতরাতে। লোকজন ডেকে নিয়ে আসে। কমলকে কোথাও খুঁজে পায়নি কেউ, বস্তুত সে চেষ্টাও কেউ করেনি। বউটাকে টাউনের হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ কেস হয়েছে।

    হরিদাসী স্তব্ধ হয়ে যায়। বাঁচবো তো বউডা?

    যানি না। সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয় বুড়ি।

    উঠে দাঁড়ায় হরিদাসী। আমার সাথে যাবা কেউ?

    এতরাইতে যাতি হবে না। কাইল সকালে যাস। আর তুই গিয়া তো কিসু করতা পারবি না। ওরা তো আসে। ওরা যা করার করব।

    কে কে গেসে?

    হারান গেসে, ঢাপের মেয়ের জামাই ওগো কিসু বন্ধু লইয়া, তগো পতিবেশি যার ঘর থাইকা বিস আনসিল তাদের পোলাটাও গেসে সাথে।

    অসহায় লাগে হরিদাসীর। এমনটা হবে কিছুতেই বুঝতে পারেনি সে।

    পুলিশ কি কমলরে ধরব?

    দোসি পেলে তো ধরবই। রাত তো হল একন তো সে ফিরল না। বলে পুঁটি

    এই প্রথমবার বউটার জন্য বড় ভাবনা হয়। মনে মনে প্রার্থনা করে বউটারে বাচায়ে দাও। নাকি ছেলেটার জন্য ? বউটার কিছু হয়ে গেলে ছেলেটাকে ছেড়ে দেবে? কি কুক্ষণে যে সে জন্ম দিয়েছিল ঐ ছেলের তা নাহলে এমনটা হবে কেন? চোখদুটো জ্বালা করে।

    যাদের বাড়ি থেকে কীটনাশক এনে খেয়েছে তাদের বাড়ির এক গিন্নী এসে দুটো কথা শুনিয়ে যায় দুঃখ করার ছলে। তারা সাতে থাকে না পাঁচে থাকে না। তারা জানেও না ভামিনী এমন একখানা কীর্তি করবে। ইঁদুর মারবে বলে নিয়ে এসে তাদের ঘাড়ে অপরাধের বোঝা চাপনো কেন ? একটা কিছু হলে পুলিশ কি তাদের ছেড়ে কথা বলবে?

    হরিদাসী চুপ করে শোনে। তাল পায় না কোনকিছুর। আকাশের দিকে তাকিয়ে নীরব প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতি আর কত আর কত কষ্ট আছে তার কপালে?

    (ক্রমশ)
  • chan | 132.162.123.232 | ০৮ জুলাই ২০১৪ ১২:৫৫642661
  • বাহ
  • Anamika Sil | ১০ জুলাই ২০১৪ ১৩:৫৭642662
  • পর্ব - ১৫

    ***********

    সপ্তাহখানেক কেটে গেছে কমল বাড়ি ফেরেনি। টাউনে গিয়ে খোঁজ নিয়েছে হারান। রিক্সা স্ট্যান্ডে কেউ খবর দিতে পারেনি। গোলাপীর ঠেকেও যায়নি। রাতারাতি যেন ভোজবাজির মত উবে গেল ছেলেটা।

    এদিকে ভামিনীও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। হরিদাসী নিজে প্রতিদিন দেখতে যেত যতদিন সে হাসপাতালে থেকেছে। শীর্ণ দেহ যেন এই কদিনে আরও শীর্ণ হয়ে গেছে। কি হয়েছিল সেদিন দুপুরে? বার বার জানতে চেয়েও উত্তর পায়নি, কেন সে এমন আত্মহত্যা করতে গেল। পুলিশে কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগও করেনি সে। হরিদাসী হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। যতই হোক কমল তো তার নারী কাটা ধন। যেখানেই থাক ভালো থাক। মেয়েটাকে আজও বুঝতে পারল না হরিদাসী।

    সকাল থেকে উঠে রাজ্যের কাজ তার। সংসারের সব দায়-দায়িত্ব হরিদাসী ভামিনীর ওপর ছেড়ে দিয়ে একপ্রকার ঝাড়া হাত-পা হয়ে গেছিল। তখন কি আর জানত এই সংসার আবার তাকে পাকে পাকে বাঁধবে।

    ভামিনী দুর্বল বলে হরিদাসী তাকে কিচ্ছুটি করতে দেয় না। সংসারের এমন অবস্থা নয় যে দুটো ভালোমন্দ করে খেতে দেয় বউটাকে। তার ওপর রোজগার বলতে এখন কিছুই নেই। হরিদাসী সপ্তাহখানেক ধরে শহরে যায় না। এই শরীরে বেশিক্ষণ পারে না ভামিনী বসে বসে বিড়ি বাঁধতে। তাই বিড়ি বাঁধাও বন্ধ।কমল নেই যে কিছু টাকা পয়সা তার কাছ থেকে আদায় করবে হরিদাসী।

    ভামিনীর কাছে জমানো যৎসামান্য সেও খরচ হয়ে গেছে। হাসপাতালে ধরে করে ডাক্তারদের কাছ থেকে ওষুধ সংগ্রহ করেছে হরিদাসী। কিন্তু শুধু ওষুধ খেলেই তো হবে না চাই পথ্যিও। প্রতিবেশীরাই ভরসা। ঢাপের মা যেদিন যেমনটি পারছে রেঁধে দিয়ে যাচ্ছে। পুঁটি, বড় বুড়ি প্রায় আসে দেখে যায়। তাদের তো তেমন অবস্থা নয় যে দেবে সবসময়। তাও দেয়। ভামিনী যেন মরমে মরে থাকে টের পায় হরিদাসী।

    যাদের বাড়ি থেকে কীটনাশক এনে খেয়েছিল ভামিনী তারাও এসে দেখে গেছে। দুটো কথা শুনিয়েও গেছে। বেশ করেছে ভাবে হরিদাসী। কিন্তু বুঁচি একদিনও এলো না দেখতে এতদিন হয়ে গেল। ঘাটেও চোখে পড়ে না। এখন অবশ্য ঘাটে বেশিক্ষণ থাকা হয় না তার। স্নান করতে যতক্ষণ। এ কদিন ব্যস্ত থাকায় মনেই ছিল না বুঁচির কথা। দুপুরবেলা দাওয়ায় আঁচলটা মাথায় দিয়ে শুয়ে থাকতে থাকতে ভাবে হরিদাসী।

    হরি।

    কে? ও বুড়ি আয় আয়। উঠে বসে বুড়িকে ডাকে। ঝোলা নিয়ে বাড়িতে ঢোকে বুড়ি।

    নে ধর কয়খান বিস্কুট আসে এই পেকেটটায়। একটা প্লাস্টিকের মোড়া প্যাকেট ধরায় সে হরিদাসীর হাতে।

    তর লাগব তো।

    আমি কয়খান রাখসি আমার লইগ্যা। বলে দাওয়ায় উঠে বসে বুড়ি।

    একধারে রেখে দেয় প্যাকেটটা হরিদাসী। কৌটোতে ঢেলে না রাখলেই নেতিয়ে যাবে। একটু পরেই উঠবে যখন, তখন ঢেলে রাখবে। বেরোচ্ছে না বলে দিনক্ষণের তাল পায় না।আজ বৃহস্পতিবার। শিয়ালদার দিকের দোকানগুলোতে যায় ওরা। ওরা পয়সা দেয় না বিস্কুট দেয়। সব দোকানেই রাখা থাকে বিস্কুটের প্যাকেট। এখানে দল বেঁধে ওরা যায়। আগে পয়সা দিত। কিন্তু বেশ ক'বছর ধরে বিস্কুট দেবার চল হয়েছে। মাথাপিছু একটা করে বিস্কুট। সবচেয়ে সস্তা অনামী কোম্পানীর ততোধিক চকচকে প্যাকেট থেকে একটা করে বিস্কুট বের করে দেয়। সব কটা দোকান থেকে সংগ্রহ করতে করতে অনেক বিস্কুট জমে যায়। সারা সপ্তাহ ঐ বিস্কুটেই চলে যায় হরিদাসীদের। বাচ্চাকাচ্চা যাদের আছে তারা অনেকেই বাবু আর একখান দেও বলে কাকুতি-মিনতি করে। কেউ ভাগিয়ে দেয় কেউ বা দেয়।

    আজ বেলাবেলি ফিরছস। পুঁটি যায় নাই?

    গেসিল। একসাথেই তো ফিরসি। ও বাড়ি চইল্যা গেল। আমি তর লাইগ্যা এগুলান দিতে আইলাম। একটু জল খাওয়া হরি। তেষ্টা লাগসে।

    হরিদাসী উঠে গিয়ে রান্নাঘরে কৌটোতে বিস্কুটগুলো ঢেলে জল নিয়ে আসে আর সাথে গোটা চারেক গুঁড়িগুঁড়ি নকুলদানা। বাড়িতে গোপালের সেবা করতে হয়। তাই নকুলদানা রাখতেই লাগে। বেশ দাম বেড়েছে ইদানীং।

    ধর।

    বুড়ি নকুলদানাগুলো মুখে ফেলে ঢকঢক করে জলটা খেয়ে নেয়। মুখটা কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুছে উঠে পড়ে।

    আমি সলি রে। খিদা লাগসে।

    আয় তবে।

    বুড়ি বেরিয়ে যাবার মুখে হরিদাসীর বুঁচির কথা মনে পড়ে। বুড়িকে পিছন থেকে ডাকে।

    শোন বুড়ি। বুঁচিটার কি খবর? দেকি না ম্যালা দিন হইল। একবারও বৌটারে দেকতে আইলো না। ঘাটেও দেকি না। কিছু জানস ওর খবর।

    বুড়ি অনেকদিন বাদে মনের মত বিষয় পায়। ফিরে আসে পায় পায়।

    ওগো খবর আমারে জিগাস না। ঐ খানকি মাগী দেক কোতায় কার মাতা খাসসে। কারে বস করসে। আমার ত মনে হয় কারও লগে পলাইয়া গেসে। কোন খোঁজ নাই। ঐ যেদিন তর কমলের বউডা বিস খাইলো ঐ দিন থাইক্যা ওরেও তো খুঁজে পাওয়া যায় নাই অহন পর্জন্ত। কে জানে কমলডারে হাত কইরল কিনা। আমি একন যাই গিয়া রে হরি। পেটের মইধ্যে ইন্দুরে নেত্য করতাসে। বলে চলে যায় বুড়ি।

    স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে হরিদাসী। যেদিন ভামিনী বিষ খেল সেদিন থেকে বুঁচির খোঁজ নেই, কমলেরও খোঁজ নেই। তাহলে কি বুড়ি যেটা বলে গেল সেটাই সত্যি।

    (ক্রমশ)
  • CHAN | 132.162.37.243 | ১০ জুলাই ২০১৪ ১৬:৪৭642663
  • Suspence?????
  • nina | 78.37.233.36 | ১২ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৬642664
  • তারপর????
  • Anamika Sil | ১২ জুলাই ২০১৪ ১৫:০৬642665
  • শেষ পর্ব

    *******************

    খিদে বড় বালাই। সাময়িকভাবে খিদে-তৃষ্ণা না লাগলেও তারা ঠিক আছে, থাকে, সময় মত জানান দেয় নিজেদের অস্তিত্বের। হরিদাসীর তাই আর ঘরে থাকা হয় না। ভামিনী অনেকটা সুস্থ হওয়ায় হাতে হাতে ঘরের কাজ করে। বিড়ি বাঁধাও শুরু করেছে। জীবনের প্রতিদিনের ছন্দ ফিরে এসেছে জীবনে। সকালে উঠে উঠোন ঝাড় দিয়ে পুকুরে নেয়েধুয়ে গোপালকে ভোগ দিয়ে হরিদাসী ছোটে ট্রেন ধরতে। তারপর মিশে যায় শহর কলকাতার জনস্রোতে।

    সারাদিন খেটেখুটে বাড়ি ফেরে কখনো মেঠো কখনো শক্ত কংক্রিটের রাস্তা পেরিয়ে আলো-আঁধারিতে। ফেরার পথে ভাতের গন্ধ মনকে চঞ্চল করে। পেটের মধ্যে নড়াচড়া করে শয়ে শয়ে ইঁদুর চনমনে খিদে নিয়ে।

    সব কিছুই তো আগের মত,শুধু কমল হারিয়ে গেছে দুজনের জীবন থেকে। সেই যে গেছে, আর ফেরেনি। নয় নয় করে কেটে গেছে অনেকগুলো মাস। একটা সময় আশা করেছে চারজোড়া চোখ ঐ বুঝি, ঐ বুঝি ফিরে এলো সে। কিন্তু প্রতিবার নিরাশ হয়েছে চোখের দৃষ্টি। তারপর একসময় আশা ছেড়েছে, যদিও মনের কোণে এখনও ক্ষীণ আশা, চোখের কোণে খুঁজে ফেরার সুপ্ত বাসনা আজও ধিকিধিকি করে জ্বলছে।

    হরিদাসীদের দলটা ছোট হয়ে গেছে। বুঁচি নেই দলে। অনেকদিন পর্যন্ত খোঁজ ছিলো না বুঁচির। যেন ভোজবাজির মতই উবে গেছিল সে। কমলের সাথেই কোন একটা অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলেই সবাই মনে করেছিল। আর তার জেরেই যে ভামিনী বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করতে গেছিল এমন একটা বদ্ধমূল ধারণা গড়ে উঠেছিল। ভামিনী আজও বলেনি কেন সে আত্মহত্যা করতে গেছিল। ভামিনীর নীরবতা ঐ সমস্ত ধারনাকে ইন্ধন জুগিয়েছিল। পুকুরঘাটে, বাড়ির উঠোনে যা ঘটেছিল তাকে ছাড়িয়ে এই নিয়ে রটনা আসল ঘটনাকেও লজ্জা দিয়ে বেশ কিছুকাল রসালো আলোচনা চলেছিল। তারপর ধীরে ধীরে তাতে সময়ের পলি পড়ে। অন্য ঘটনার রটনা আবার অন্য আলোচনার পথ উন্মুক্ত করে।

    কিন্তু বুঁচি হারিয়ে যায়নি। ভিক্ষে করতে গিয়ে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেছিল হরিদাসীর সাথে বুঁচির। সেদিনও হরিদাসী ছিল একা। সোমবার ছিলো না। কিন্তু কি যেন এক কারণে সেদিন বেরোতে দেরী হয়েছিল হরিদাসীর। তাই পরের ট্রেনে দেরীতে এসে আর অফিসপাড়ার দিকে যায় নি সে। স্টেশনের কাছাকাছি গৃহস্থ বাড়িগুলোতে যাবে মনস্থির করেছিল। সে অনুযায়ী একটা ঘুপচি বাড়িতে সেদিন জয় রাধে জয় নিতাই বলে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেখানেই দেখা হয়েছিল বুঁচির সাথে।

    পিসি?

    পরিচিত ডাকে তাকিয়ে দেখে বুঁচি। পরনে সুন্দর একখানি শাড়ি, একহাত কাঁচের চুড়ি। এতখানি অবাক হয়েছিল হরিদাসী যে কিছুক্ষণ বাক্যস্ফুর্তি হয় নি।

    গলা শুনেই বুঝেছি তুমি আইছো। আসো আসো ঘরে চলো।

    ঘর? কার ঘর?

    আমার ঘর গো পিসি। ভিতরে আইসা বসো দিনি। গরমে তো নেয়ে গেসো। বলে প্রায় হাত ধরেই টেনে নিয়ে গেছিল বুঁচি। এক কামরার একটা ঘর মাঝ সিঁড়ির ওপরে। সোজা দাঁড়াতে গেলে মাথায় লেগে যায়। কিন্তু বেশ সুন্দর পরিপাটি। ঘরে গোটা কয় শাড়ী দড়িতে ঝোলানো। পাশে গোটা দুই শার্ট। সন্দেহ হয়েছিল হরিদাসীর। তাহলে কি কমল আর বুঁচি সংসার পেতেছে। কিন্তু জিঞ্জাসা করতে পারেনি সোজাসুজি। ঘুরিয়ে জানতে চেয়েছিল। শার্ট কার ?

    কইসি। দুটা ভাত বসাইসি। খাইয়া যাইও।

    না ভাত খাইব না। সংসার পাতছস তো দেইখ্যা বুঝসি। তা কার লইগ্যা সেটা ক?

    লছমণ যাদবের লইগ্যা গো পিসি।

    সেডা কে? বুক থেকে একটা ভারী পাথর নামাতে নামাতে জানতে চায় হরিদাসী।

    লছমণ কোলে মার্কেটে মোট বয় গো পিসি। আমারে খুব যতন করে। বিয়া করতে চাইসিলো আমি রাজি হই নাই। দুবার তো বিয়া করে দেকলাম, আমার কপালে সোয়ামীসুখ নাই। তার চেয়ে একসাথে থাকি। নিজের কপালের জন্য আর একজনরে কেন কষ্ট দি কও?

    আর যনটা কে?

    দেশে লছমণের একখান বিয়া করা বউ আসে গো। তা লছমণরে বিয়া করলে আমার কপালে যদি আবার না টেঁকে তাইলে তো তারেও বিধবা করা হইব না। তাই আর বিয়া করলাম না।

    একযন বিয়া করা লোকের লইগ্যা থাকছস। সি সি বুঁচি।

    সি সি কইরো না পিসি। এই কটা দিনে বেশ বুঝসি মেয়েমানষ হইয় জন্মানোটা কত্ত বড় পাপ। আর একখান অভিবাভকহীন মেয়েরে গোটা সমাজখান একাকি বাচতে দেবো না। বুড়ি পিসির কথা ভাবো দিনি, সারাক্ষণ কইসে আমি নাকি খানকী মাগী। রাইতে ঘরে পাড়ার ছোড়াগুলান উঁকি দেয়। যাগো জন্মাতে দেকলাম তারা আমার ঘরে উঁকি দেয়। কুপ্রস্ত্বাব পাড়ে। বললি কি তোমরা বিসাস করতা আমাকে, করতা না। কারণ আমি যে বুক দেখায়া সলি। বুক দেকাইতে হয় না গো পিসি। জন্ম থাইকাই আমরা এমন কপাল কইরাই জন্মাইসি। অফিস পাড়ায় ঐ মুটিয়া, অফিসের কাজ করে যারা তারাও তো কইসে এমন নধর শরীর থাকতি ভিক্ষা করা কেন? কেউ কেউ তো আমারে এক রাতের জন্যি চেয়েসে দাম দিবে বলে। লছমণ তো আমারে বিয়া করতা চায়াসিল। এই ভালো, বেশ আসি।

    হরিদাসী ভাত খায়নি বুঁচির ঘরে। ঘৃনায় নয় গ্লানিতে। সেও তো আর সকলের মত একটা সুস্থ জীবনের স্বপ্ন না দেখিয়ে বুঁচিকে এমন একটা জীবনে ঠেলে দিয়েছে। পালিয়ে বাঁচতে চেয়েছে সে। কাউকে বলেনি সে বুঁচির কথা। ভালো থাক বুঁচি যেখানেই থাকুক, যেভাবেই থাকুক।

    শুধু একটাই স্বান্তনা যে কমলটা বুঁচির সাথে ঘর বাঁধে নি।মনে মনে চেয়েছেন ভালো থাক সেও। যেখানেই থাক। কিন্তু কোনদিন যেন তার সাথে দেখা না হয়ে যায়। যদিও সেও একটা এমনই সংসারে পাতে, তা সহ্য হবে না হরিদাসীর।

    এমন করেই জীবন কাটছে হরিদাসীর/ হরিদাসীদের।

    (সমাপ্ত)
  • kumu | 132.161.142.161 | ১২ জুলাই ২০১৪ ১৫:২৭642666
  • মুগ্ধ হলাম।
    আরো লিখুন।
  • nina | 78.37.233.36 | ১৪ জুলাই ২০১৪ ০০:৫০642667
  • বড় ভাল লিখেছেন---আরো লেখার আশায় রইলাম
  • সিকি | 131.241.127.1 | ১৪ জুলাই ২০১৪ ০৯:৩০642668
  • বড় ভালো লাগল। মন ছুঁয়ে গেল।

    শেষটা একটু তাড়াহুড়ো লাগল। আরেকটু এগোলে ভালো লাগত।
  • | ১৪ জুলাই ২০১৪ ১০:১৬642671
  • *জীবন
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন