এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • ফেকলু রাজাঃ একটি ছত্তিশগড়ি রূপকথা

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ২০ জুলাই ২০১৪ | ৬৭৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Ranjan Roy | ২০ জুলাই ২০১৪ ২১:০০646955
  • ফেকলু রাজাঃ একটি ছত্তিশগড়ি রূপকথা
    -----------------------------------------
    ১)
    " দয়া কর মা কোসগাই, আমরা সবাই খেটে খাই"

    সে অনেক দিন আগের কথা।ছত্তিশগড়ের কোসগাই পাহাড়ের মাথায় কোসগাই দেবীর মন্দির। পাশ দিয়ে বয়ে যেত এক নদী। নদীর নাম হসদেও । আর সেই নদীর পাশে এক ঘন বন। বনের নাম অজগরবাহার । সেই বনের পাশে এক গ্রাম। গ্রামের নাম ছুরিকলাঁ বা ছোটকি ছুরি।
    সেই গ্রামে ছিল কয়েকঘর কাঠুরের বাস। তাদের একজন গোবিনরাম। গোবিনরাম বড় পরিশ্রমী। রোজ ভোর হতেই "বাসি" (ছত্তিশগড়ি পান্তাভাত) খেয়ে বেরিয়ে যায় কাঠ কাটতে। সারদিন কাঠ কেটে ফিরে আসে সূয্যি ডোবার আগে। তারপর কূয়োর জলে হাত-পা ধুয়ে খেয়ে দেয়ে বিড়ি ধরিয়ে বৌয়ের কাছে সেদিনের বিক্রিবাটার খোঁজ নেয়। এরপর গ্রাম্যদেবতা ঠাকুরদেবের কাছে স্বামী-স্ত্রী প্রার্থনা করে-- "হে ঠাকুর! সবাইকে ভাল রেখো। তোমার দয়ায় বনের কাঠ যেন কখনো না ফুরোয় আর আমাদের কুয়োর জল যেন কখনো শুকিয়ে না যায়।
    ''আর ঠাকুর, আমাদের একটিই ছেলে ফেকলুরাম। কিন্তু কি বলব ঠাকুর, ছেলেটা বড্ড আলসে। খালি খেয়ে গড়িয়ে ইয়ার বন্ধুদের সঙ্গে তাসপাশা খেলে দিন কাটায়। কতবার বলি-- জোয়ান হচ্ছিস , আমার সঙ্গে জঙ্গলে চল। কোন কাঠ কাটতে হয়, কোন গাছটা ছেড়ে দিতে হয়, বনের কোন দিকে যেতে মানা-- সব হাতেনাতে শিখে নে।কী আর বলব ঠাকুর, ঠিক করে কুড়ুলের কোপ দিতে শেখেনি। আমাদের মত ঘরে কি এমন রাজার জামাইয়ের মত চালচলন মানায়? আসলে মায়ের আদরে ছেলেটা দিন দিন মহা ফেকলু হয়ে যাচ্ছে।"
    তারপর ক্লান্ত হয়ে ফুঁক মেরে টেমি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।
    কথাটা মিথ্যে নয়। কাঠুরে মহল্লার অন্য ছেলেগুলো বেশ খাটিয়ে। কিন্তু এ ছেলে একেবারে অন্যরকম। ওর মা বুধবারিন বাঈ ভরসা হারায় না। ঠাকুরদেবের আশীর্বাদে সব ঠিক হয়ে যাবে।
  • Ranjan Roy | ০৩ আগস্ট ২০১৪ ১৯:৪৮646966
  • এইভাবেই দিন কাটছিল।
    গোবিনরাম ছেলের চালচলনে হতাশ। ভাবল আরও খেটে কিছু পয়সা জমিয়ে অল্পস্বল্প চাষের জমি কিনবে। এদিকে জঙ্গলের পূবদিকে কাঠ ফুরিয়ে আসছে। ও ভাবল যদি জ্বালানি কাঠ ছাড়াও কিছু শাল-সেগুন কাঠ কেটে ছুতোরপাড়ায় বিক্রি করা যায় তবে ভাল দাম পাওয়া যাবে।
    তবে তার জন্যে যেতে হবে আরও ঘন জঙ্গলে। পশ্চিমদিকে।
    কিন্তু ওদিকপানে যাওয়া! সে তো বাপ-পিতামোর সময় থেকে মানা। ওদিকের ঘন জঙ্গলে নাকি এক রাক্ষস পরিবারের বাস! যারা গেছে কেউ ফেরেনি।
    গোবিনরাম নিজের মনকে বোঝাল-- ও সব গল্পকথা, যত আলসে-কুঁড়ে আর ভিতুর দলের কাজ। আচ্ছা, না হয় বেশি দূর যাব না। কিছুটা গিয়ে সূয্যিডোবার আগে ফিরে আসব।
    যেমন ভাবা তেমন কাজ।
    গোবিন গেল পশ্চিমপাড়ের জঙ্গলে। বুধবারিন বাঈ পই পই করে মানা করেছিল। শেষে হার মেনে মাথার দিব্যি দিয়ে বলল-- ফেকলু কে দদা! সূরজ ডুবনে কে পহিলে ঘর আ যাইহো গ'।
    হ্যাঁ, বৌয়ের কথা রেখেছে গোবিনরাম। আলো থাকতেই ঘরে ফিরেছে আর হাসিমুখে বলেছে দারুণ সব গাছ আর কাঠের কথা। যত কাঠ কেটেছে সব কি বাঁকে ঝুলিয়ে আনা যায়? বাকিটা দিনের বেলায় কাঁওড় ঝুলিয়ে আনতে হবে। একা পারবে না। যেতে হবে গোটা পরিবারকে, মাঈ-পিলা সব্বোঝন!
    কিন্তু ফেকলুরামের কোন উৎসাহ নেই।শেষে বাপের বকুনির চোটে উঠে কুয়োর জলে হাতমুখ ধুয়ে একথালা বাসি খেয়ে গেল বটে, কিন্তু মুখের ভাব যেন নিমপাতা চিবুচ্ছে।
    এভাবে ক'দিন চলল। রোজগার বেশ হচ্ছে। গোবিনরাম কোষ্টা মানে তাঁতিপাড়ায় পুকুরপাড়ে কিছু জমিও দেখেছে। একটা বেশ মনে ধরেছে। কিন্তু তাঁতিব্যাটা বড্ড বেশি দাম হাঁকছে।
    গোবিনরামের মন মানছে না। নেবে তো ওই জমিটাই! আদ্দেকদাম এখন, আদ্দেক ছ'মাস পরে।
    তা বেশ, গাঁয়ের পাঁচজন কর্তাব্যক্তি-মোড়ল-মোকরদম সবার সামনে কথাবার্তা পাকা হল আর গোবিন মনের আনন্দে সবাইকে বোগরা-ভাত, মানে পাঁঠার মাংসভাত, খাইয়ে দিল।
    কিন্তু ও হচ্ছে সেইজাতের লোক যাদের স্বভাব হল-- প্রাণ জায়ে পর বচন ন জায়ে!
    ও ধার শোধ করতে উদয়াস্ত খাটতে লাগল।
  • Ranjan Roy | ০৩ আগস্ট ২০১৪ ২০:০৪646977
  • এসে গেল হেমন্তের দিন। আর একমাস বাদে পূর্ণ হবে ছ'মাস। টাকা প্রায় শোধ হয়ে এসেছে। ব্যস্‌ আর ক'টা দিন। ট্যাঁকে আসুক বাকি ক'টা টাকা। পুকুরপাড়ে তাঁতির সেই সোনাফলানো জমিটি হবে কাঠুরে মহল্লার গোবিনরামের। আনন্দে ভাল করে ঘুমোতে পারেনা ওরা ।
    দিনটা ছিল শনিবারের বিকেল। কাঠের সন্ধানে গোবিনরাম আজ এসে পড়েছে বনের গহনে। কখন যে রোদ্দূর মিইয়ে গেছে , ওর খেয়াল নেই।
    এবার যে ফিরতে হয়।
    কিন্তু ফিরতে চাইলেই কি ফেরা যায়? ঝুপ করে নেমে এল অন্ধকার।ডেকে উঠল কোলিহার দল-- হাজার শেয়াল! এমন অন্ধকার যে হাতের তেলো দেখা যায় না, পথ কোথায়? এবার গোবিনরাম ভয় পেল। প্রাণপণে ঝোপঝাড়ে কুড়ুল চালিয়েও ভয় কাটে না। কখনও হোঁচট খাচ্ছে কাটা গাছের গুঁড়িতে, কখনো কাঁটাঝোপে আটকে যাচ্ছে হেটো ধুতি বা পাঁচহাত্তি। কোথা থেকে একটা আঁশটে গন্ধ ওর নাকে আসছে, পচা মাছের গন্ধ! কিন্তু এখানে নদী কোথায়? একটা ডোবাও নেই। ওর গলা শুকিয়ে আসছে।
    পশ্চিমের জঙ্গল থেকে গোবিনরামের ফেরা হল না।
    গাঁয়ের লোকে বলল-- গোঁয়ারের মরণ!
    তাঁতি খুশি, বায়নার টাকা অব বুড় গইসে!
    জমিন ও রইল, আদ্দেক টাকাও পকেটে।

    শুধু চোখের জল শুকোয় না বুধবারিন বাঈয়ের। ডাকাবুকো মানুষটা ওকে বড্ড ভালবাসত যে!
    (চলবে)
  • s | 176.147.72.156 | ০৫ আগস্ট ২০১৪ ০৭:১০646988
  • তুলে দিলাম।
  • Ranjan Roy | ০৬ আগস্ট ২০১৪ ০০:৪৫646999
  • (২)
    হাঁউ মাউ খাঁউ! মানুষের গন্ধ পাঁউ!
    ----------------------------------
    বুধবারিন বাঈ এর স্বপ্ন গেছে ভেঙে।
    দশটা নয় পাঁচটা নয়, একটি মাত্র ছেলে, সে ও এমন আলসে! এক ব্যঞ্জন, তা্ও নুনে কাটা! বাপকে হারিয়েও ওর কোন হেলদোল নেই।সেই কাঁথামুড়ি দিয়ে বেলা অব্দি শুয়ে থাকা। তারপর একথালা বাসি (পান্তাভাত) খেয়ে সেই যে টো টো করতে বেরিয়ে যায় তার টিকি ছোঁয় কার সাধ্যি!হয়ত কামারপাড়ায় বন্ধুদের সঙ্গে বিড়ি টেনে তাসপাশা খেলে সন্ধ্যে পেরিয়ে বাড়ি ফেরে, নয়তো কোন কোন রাত্তিরে ফেরেই না।
    পেটের জ্বালা বড় জ্বালা! বুধবারিন বাঈ একবেলা লোকের বাড়ি ঠিকে কাজ ধরেছে, আরেক বেলা অন্য কাঠুরেদের কেটে আনা কাঠের বোঝা মাথায় করে বিক্ৰি করে দুটো পয়সা আনছে। মায়ের এই হাড়ভাঙা পরিশ্রম দেখে যদি ছেলের মন গলে!
    বর্ষাকালে বূষ্টিতে ভিজে বুধবারিন জ্বরে পড়ল।সাতদিনের মাথায় জ্বর ছাড়ল বটে, কিন্তু গায়েগতরে ব্যথা। খাটিয়া ছেড়ে ওঠার শক্তি নেই, ঘরে হাঁড়ি চড়বে কি করে? অগত্যা ছেলে ফেকলুরাম বাপের কুড়ুল কাঁধে তুলে ব্যাজার মুখে জঙ্গলমুখো হল।
    বর্ষাকাল। বনের রং মায়াবী সবুজ।জংলি ঘাস এখন বুকসমান উঁচু। আম জাম শাল পিয়াল অশত্থ বয়রার ঘন পাতার ছাঁকনি দিয়ে রোদ ঢোকে লজ্জা লজ্জা পায়ে।বনইমলির গা বেয়ে তরতরিয়ে উঠে য়ায় কাঠবেড়ালি। পায়ের পাশ দিয়ে সরসরিয়ে চলে যায় সাপ। আচমকা ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি।
    জলে ভেজা ঘাসে পা ফেলে ছপছপিয়ে এগুতে থাকে ফেকলুরাম।
    জঙ্গল যে এত সুন্দর তা এই প্রথম দেখল ফেকলু। ভুলে গেল কাঠ কাঠতে হবে, আঁটি বাঁধতে হবে।কাঁধের কুড়ুল রইল কাঁধে, ফেকলু সেঁধিয়ে গেল গহন বনের গভীরে। যখন চৈতন্য হল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এবার ওর ক্ষিদে পেল, মুচড়ে উঠছে পেট। কুল কুল বয়ে চলা এক জলধারার আঁজলা ভরে জল খেয়ে শরীর খানিকটা জুড়োল।
    কাজ হয়নি বিশেষ, কিন্তু এবার গাঁয়ে ফিরতে হবে। কখন যে নেমে এল অন্ধকার। দল বেঁধে ঘরে ফিরল পাখির ঝাঁক। ফেকলু জোরে পা চালায়। কিন্তু বেশ খানিকক্ষণ কেটে গেছে, জঙ্গল পাতলা হচ্ছে না তো! তবে কি ওকে ভুলোয় পেয়েছে? সারারাত্তির গোলকধাঁধায় ঘুরে মরবে? হটাৎ বড্ড শীত করছে, মনে পড়ছে বিছানায় পড়ে থাকা রোগাভোগা মায়ের কথা। আর বাবা? গাঁয়ের সিয়ানের দল(মাতব্বর, মুরুব্বি) যে বলেছিল জঙ্গলের পছিম দিকে না যেতে! ওখানে নাকি একজোড়া রাক্ষস রাক্ষসী থাকে। বাবা শুনল না; সেই যে গেল আর ফিরে্ও এল না। ও ভুল করবে না। পছিম দিকে যাবে না। কিন্তু এই ঘোর আঁধারে কিবা পূব, কিবা পশ্চিম!
    চাঁদ ডুবে গেছে। জ্বলছে নিভছে অগুণতি জোনাকি। দুরে কোথাও ফেউ ডাকছে।ক্লান্ত শ্রান্ত ফেকলু একটা বটগাছের নিচে মোটাসোটা গুঁড়িতে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল, কিন্তু ঘুমটা গেছে ভেঙে।
    নাকে ঝাপটা মারছে একটা আঁশটে পচা গন্ধ। ওর গা গুলিয়ে ওঠে। হাওয়া বইছে না। ফেউয়ের ডাক থেমে গেছে। দুর থেকে একটা শব্দ এগিয়ে আসছে।পাতার ওপর মচমচ পা ফেলার শব্দ। একজোড়া পা। আসছে এদিকেই। ফেকলু ভয় পেয়েছে, ভীষণ ভয়। ও নিঃশ্বাস বন্ধ করে গাছের গুঁড়ির সঙ্গে সেঁটে যায়; তারপর হুড়মুড়িয়ে উঠে যায় বটগাছের মগডালে।
    পায়ের শব্দ কয়েক হাত দূরে থেমেছে। কেউ যেন জোরে শ্বাস টানছে।
    ঃ হাঁউ মাউ খাঁউ! মানুষের গন্ধ পাঁউ!
    কেউ যেন খলখল করে হেসে উঠল। তারপর এক অদ্ভূত নাকি সুরে বলে উঠলঃ ওরে আমার নোলা সপসপ গিন্নি রে! স্বপ্ন দেখছিস নাকি?এই তো সেদিন একটা কাঠুরে কে খেলি, মাত্তর মাসখানেক আগে! এর মধ্যে আবার মানুষ? কত বছর পরে বোকাটা সেদিন আমাদের এলাকায় ঢুকেছিল, নিঘঘাৎ পথ হারিয়ে।
    ঃ আমি কখখনো স্বপ্ন দেখিনা, বুঝলে মূলোদাঁতি কত্তা! আমার নাক ভুল করেনি কো। গন্ধটা খুব কাছে।
    সড়াৎ করে জিভের ঝোলটানার আর নাকটানার শব্দ।
    ঃ বুঝেছি, বুঝেছি! গন্ধ বটগাছের মাথায়। এই কে রে তুই? নাম, নেমে আয় বলচি।
    এবার একটা ফ্যাঁসফেঁসে আওয়াজ কথা বলে।
    ঃ শোন রে ভালমানুষের পো! রাক্ষসরাণীর কথা শুনে নেমে আয়। ওর দয়ার শরীর। চটপট নেমে এলে তোর মুন্ডু একটানে ধড় থেকে ছিঁড়ে ফেলা হবে; বেশি কষ্ট পাবি নে। আর কথা না শুনলে তোকে জ্যান্ত রেখে দুদিন ধরে আমরা দুজন একটু একটু করে খাব; ধর আজ তোর পাছার মাংস খুবলে নিলাম। কাল তোর তলপেট। তিনদিনে ছটফট করে মরবি! তাই বলচি নেমে আয়।
    ঃ নাম শিগ্গির! নইলে আমি ওপরে উঠে আসব, তখন বুঝবি ঠ্যালা!
    গাছের মগডাল থেকে ফেকলু প্রায় পড়ে যায় আর কি! এরাই তাহলে আমার বাবাকে খেয়েছে! ওপর থেকে ও দেখল একজোড়া বিচিত্র জীব, ঠিক যেন মানুষের মত নয়। মাথায় জটা, গায়ে বড়বড় লোম, হাতেপায়ে বড় বড় তীক্ষ্ণ নখ। আর গায়ে একটা সূতো নেই, তবে কোমরে হাড়ের মালা। ওদের একজনের চুল বেশ লম্বা, সেই বোধহয় রাক্ষসী। আর তার পায়ে রয়েছে একজোড়া মল, তা ঠিকরে বেরোচ্ছে একরকম আলো। তাতে চারপাশটা বেশ দেখা যাচ্ছে।
    ও বুঝল, উপায় নেই। নামতেই হবে। ও মরবে, তবে মেরে মরবে। বাবাকে মারার বদলা নেবে। এটা ভাবতেই ওর ভয় চলে গেল, ঠিক জ্বর ছেড়ে যাওয়ার মত।
  • Ranjan Roy | ০৬ আগস্ট ২০১৪ ১১:০৪647001
  • ভারী কুড়ুলখানা? আরে সে তো নিচেই রয়ে গেছে। ভয়ের চোটে হাঁচোড়পাঁচোড় করে মগডালে চড়তে গিয়ে ওটার কথা মনে ছিল না। এখন উপায়? খালি হাতে রাক্ষস রাক্ষসীর মুখোমুখি হওয়া? সে তো আত্মহত্যার শামিল। বেশি ভাবার সময় নেই। মনে হয় রাক্ষসীটা ওপরে ওঠার পাঁয়তাড়া কষছে।
    যা থাকে কপালে! ঠাকুরদেবের নাম নিয়ে সড়াৎ করে নিচে নামল ফেকলু আর চোখে পড়ল গাছের গুঁড়িতে ঠেকানো কুড়ুল। খলখল করে হেসে ওর দিকে থাবা বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে,পেছনে রাক্ষস; ভাঁটার মত জ্বলছে দুজোড়া চোখ। ফেকলু ভয়ে চোখ বোজে। রাক্ষসী ঝাঁপ দিতেই ও হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে আর প্রাণপণে ঘোরাতে থাকে শক্ত মুঠোয় চেপে ধরা কুড়ুলটি। একটা গরম কিছু ছিটকে লাগে ওর গায়ে। একটা আর্ত চিৎকার! ও এবার চোখ খোলে।
    অবাক কান্ড! কুড়ুলের ঘায়ে উড়ে গেছে রাক্ষসীর একটি পা। বুড়ো রাক্ষসের হাত ধরে এক পায়ে ন্যাংচাতে ন্যাংচাতে যাচ্ছে রাক্ষসী, কাটা পা ফেলে পালাচ্ছে। ফেকলু জ্ঞান হারালো।
    কতক্ষণ ওভাবে পড়ে ছিল বলা মুশকিল। যখন চেতনা ফিরল তখন চারদিক নিঃস্তব্ধ, শুনশান, গাঢ় অন্ধকার। কিন্তু বটগাছের গোড়ায় এত আলো? উঠে পড়ল ফেকলু। কাছে গিয়ে দেখে রাক্ষসীর ফেলে যাওয়া কাটা পায়ের মল থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে দ্যুতি। ফেকলু আবার কুড়ুল তোলে, বের করে নেয় সেই জাদুকরী মল। হাতে তোলে যেন সাঁঝবেলার প্রদীপ । তারপর আস্তে আস্তে সেই আলোয় পথ চলে। বনের মধ্যে জেগে ওঠে রাস্তা। জঙ্গল ফুরোয়। গাঁয়ের সীমানা দেখা যায়।
    ফেকলু যখন ঘরে পৌঁছল তখন আকাশে শুকতারা মিলিয়ে যাচ্ছে।
    ঃ ফেকলু! কোথায় ছিলি বাপ? একি চেহারা হয়েছে তোর?
    ঃ ঠাকুরদেবের বর পেয়েছি মা। এই দেখ তোর জন্যে কী এনেছি!
    এই বলে হতভম্ব মার হাতে রাক্ষসীর মল গছিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে ফেকলু। কাঁথা টেনে নেয় আর অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে।
    (চলবে)
  • Ranjan Roy | ০৬ আগস্ট ২০১৪ ২৩:৩৭647002
  • (৩)
    ৹রাজকন্যের চোখে জল,
    চাই যে সেই দৈবী মল।
    রাজা হাঁকেন, কে সুজন,
    আনবে খুঁজে, মরণপণ?
    তা সেই রাক্ষসীর এক পায়ের মল ফেকলুর বাড়িতে ভেলকি দেখিয়ে ছাড়ল। সকালে বুধবারিন বাঈ ওই মল একপায়ে পরে যেই কূয়ো থেকে জল তুলতে গেছে, অমনি জল উঠে এল কূয়োর পাড়ের কাছে । বুধবারিনের ঘড়া বেশি নিচে নামাতে হল না।ও তো অবাক! তবে কি ঠাকুরদেব এ্যাদ্দিনে মুখ তুলে চাইলেন?
    ফেকলুরামের ও বলিহারি! একদিনের ঘটনায় ছেলেটা যেন বদলে গেছে।ও কাঠুরের বূত্তি ছেড়ে একটা মুদি দোকান খুলেছে, ধানচালের ব্যবসা শুরু করেছে। ও যেটায় হাত লাগায় তাই সোনা ফলায়।গাঁয়ের মাতব্বররা জানতে চান ব্যবসার পুঁজি কোথায় পেল? ও দুহাত কপালে ঠেকিয়ে বলে ঠাকুরদেবের কিরপা!
    দেখতে দেখতে ওর বাড়ির ভোল বদলে গেল। আগের কূয়ো হয়ে গেছে শান বাঁধানো মিষ্টি জলের পাতকূয়ো। মাটির দেয়ালের জায়গা নিয়েছে ইঁটের গাঁথনি। বয়স কম হলে কি হবে, এখন গাঁয়ের কোন ব্যাপারের ফয়সালা ফেকলুরামকে বাদ দিয়ে হয় না।ও এখন একজন কেউকেটা! বুধবারিনের বুক গর্বে ফুলে ওঠে। এই ছেলের জন্যে আগে কম কথা শুনতে হয়েছে? আজ ও সুযোগ পেলেই পাড়াপড়শীদের শুনিয়ে দেয় যে ও তো বরাবর বলে এসেছে, কিন্তু ছেলের বাপ বিশ্বাস করেনি। আহা, আজ যদি ও থাকত!
    সব তো ভালই ছিল, কিন্তু বিধাতাপুরুষ আড়ালে মুচকি মুচকি হাসছিলেন।
    হল কি, রাজ্যের রাজকুমারীর চোখে পড়ল সেই আশ্চর্য মল। কেমন করে? অতশত জানিনে বাপু! গাঁয়ের বুড়োদের মুখে যা শুনেছি তাই বলছি। বিশ্বাস করলে করো, নইলে রাত্তিরে দুটো রুটি বেশি খেয়ে নিও!
  • s | 182.0.249.87 | ০৭ আগস্ট ২০১৪ ০৪:৪৮647003
  • দারুন। দারুন। খুব ভালো লাগছে।
  • Ranjan Roy | ০৭ আগস্ট ২০১৪ ১২:৩৯647004
  • এ রাজ্যের রাজার একটিই মেয়ে--- বাপসোহাগী, আদরখাকী এবং দেমাকী। হবেই তো, রাজা যে তাকে চোখে হারান।

    বসন্তকাল। ছত্তিশগড়ে দিনের বেলায় রোদ্দূরের তাপ টের পাওয়া যায়। কিন্তু সূজ্যি ঢলতেই হাওয়ায় বিদায়ী শীতের মিঠে আমেজ, গুলাবী জাড়া। বসন্তপঞ্চমী পেরিয়ে গেছে। এসেছে দেবউঠনী একাদশী। এই সময় সূর্যদেব শীতের ঘুম থেকে জেগে ওঠেন। টিকিওলা পন্ডিতেরা পুঁথি ঘেঁটে বলবেন-- এ হল সূর্যের উত্তরায়ণ।
    আমরা তো পন্ডিত নই, আমরা শুধু জানি যে এই দিনে গন্না বা আখ কেটে তার পূজো করতে হয়। চাষীরা এই দিন স্থানীয় হাট-বাজারে বছরের প্রথম গন্না বিক্কিরির জন্যে নিয়ে যায়। আর বিক্রিবাটা ভাল হলে বাজার নিয়ে ঘরে ফেরার আগে ইয়ারদোস্তদের সঙ্গে এক আধ বোতল মহুয়ার রস দিয়ে একটু আচমন করে নেয়।
    তা আমাদের ফেকলুও আজ ছুরি গাঁয়ের হাটে গণেশরামের ঠেকে জমিয়ে বসেছে।
    এদিকে রাজকুমারীর পালকি চলেছে , আগে পিছে ঘোড়সওয়ার, পাইক-বরকন্দাজ। লোকজন ভয়ে রাস্তা ছেড়ে দেয়।
    কোথা থেকে আসছেন রাজকুমারী? কোসগাই পাহাড়ে দেবীর মন্দির থেকে।
    কেন?
    কেন কি আবার! পূজো দিতে।
    যাবেন কোথায় ?
    আবার বোকার মত কথা! কাজ ফুরোলে রাজা-রাজড়ার ঘরের লোকজন কোথায় যায়?
    রাজপ্রাসাদে ফেরে।
  • Ranjan Roy | ০৭ আগস্ট ২০১৪ ১৪:০০646956
  • কিন্তু পালকি যে দাঁড়িয়ে পড়লো! বেহারাগুলো ঘাম মু্ছছে।
    রাজকুমারীকে দেখতে পেয়েছ?
    ওঁদের কি কখনো দেখ যায়?
    ওই তো! চিকের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসেছে পানপাতার মত মুখ।
    দূর বোকা! ও তো রাজকুমারীর সখি, থুড়ি সহচরী। দেখ না, ঘোড়সওয়ারকে ইশারায় ডেকে নিয়ে কি সব বলছে।

    এবার রাজকুমারীজি কী সওয়ারি আবার চলতে শুরু করেছে,
    জয় রাম জী কি!
    কিন্তু মাঝের রাস্তা ছেড়ে কাঠুরেদের পাড়ার দিকে ঘুরে গেল যেন!
    বুঝেছি, রাজকুমারীর তেষ্টা পেয়েছে। আর এই গাঁয়ে ফেকলুরামের পাতকূয়োর মত মিষ্টিজল আর কোথায় আছে!
    তাই তো দেখছি।

    রাজকুমারী পালকি থেকে নেমে সাঁঝবেলায় কূয়োর পাড়ে দাঁড়ালেন। সঙ্গে পঞ্চসখী।
    বুধবারিন বাঈয়ের বুকে ঢেঁকির পাড় পড়ছে।
    হে বাবা ঠাকুরদেব! হেই গো বাররাজা, বাররাণী! অপরাধ নিও না গো। তোমাদের থানে প্রত্যেক একাদশীতে দশটি করে পিদিম জ্বালবো।
    আজ যেন রাজকুমারীর সামনে আমাদের মান রক্ষা হয়। কোন খ্যানত না হয়। উনি রুষ্ট হলে ধনে-প্রাণে যাব।

    ডানপায়ে রাক্ষসী-মল পরে বুধবারিন জল ঢেলে দিল রাজকুমারীকে; আঁজলা আঁজলা।
    এমন জল তো কোনদিন রাজপ্রাসাদেও পায় নি! এবার রাজকুমারী ভাল করে দেখল বুধবারিনকে।
    ওর পায়ে ঝকমক করছে মল। আর তার থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে অবাক করা আলো।
    জিজ্ঞেস করায় সসংকোচে জানাল যে ছেলে পেয়েছে এই আশ্চর্য মল -- ঠাকুরদেবের কিরপায়। তারপর থেকে ওদের দুঃখ ঘুচে গেছে।

    ফিরে এলেন রাজকুমারী । সপ্তাহ গড়িয়ে গেল -- চোখে ঘুম নেই।
    রাজা ব্যাকুল হয়ে জানতে চাইলেন-- চোখের কোণে কালি কেন?
    -- দেখেছি এক অদ্ভূত পায়ের মল।
    -- স্যাকরার নাম বল না! দশজোড়া গড়িয়ে দেব।
    --না, না। স্যাকরা নয়; মন্ত্রপূত মল। কোসগাই পাহাড়ের কাছে অজগরবাহার বনের ধারে হসদেও নদীর পারে আছে এক গাঁ। নাম ছুরিকলাঁ। সেখানে এক কাঠুরের ঘরে দেখেছি জ্বলছ্বে এক মাণিক। সেটা আমার চাই।

    এই কথা!
    পরের দিন সাতসকালে মোরগ ডাকার আগে ছুরিগাঁয়ের লোক জেগে উঠল ঘোড়ার খুরের শব্দে। ঢাল-তলোয়ার-বল্লমধারী দশজন সেপাই ঘুম থেকে তুলেছে ফেকলুরামকে। ওদের সঙ্গে এসেছেন একজন বুড়ো মুন্সীজি। উনি হাসিমুখে একটি পত্র ধরিয়ে দিয়ে বললেন -- রাজামহাশয়ের বিনীত অনুরোধ যদি শ্রীমান ফেকলু লকড়হারা (কাঠুরে) ওনার মায়ের পায়ের আশ্চর্য মলটি রাজাকে দেবার জন্যে এদের হাতে পাঠিয়ে দেন। এমন মল কাঠুরেবাড়ির থেকে রাজকুমারীর পায়ে মানাবে ভালো।
    ওর মায়ের মুখে কথা সরে না। ফেকলু রেগে কাঁই। মামাবাড়ির আবদার! এ'জিনিস আমাদের দৈব আদেশে পাওয়া। চাইলেই দেওয়া যায় নাকি!
    মুন্সীজির ভুরু কোঁচকাল, কিন্তু হাসিটি আরও চওড়া হল।
    -- শ্রীমানজি,আপনি বোধহয় গোটা পত্রটি মন দিয়ে পড়েন নি। শুনুন, আমাদের রাজা অত্যন্ত উদার ও ন্যায়শীল। উনি প্রজারঞ্জক, পীড়ক নন। মিনিমাগনা কিছু নেন না। এই মলের বদলে উনি আপনাকে একশ স্বর্ণমুদ্রা আর দুটি গ্রাম দিতে রাজি।
    ফেকলু একটু অবাক হল। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভাঙলেও মচকাল না।
    -- রাজামহাশয়ের অসীম কিরপা। হ্যাঁ, আমি পড়তে জানিনা। পাঠশালে যাই নি। আপনাদের ফিরিয়ে দিতে আমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু হাতজোড় করে বলছি এই দেবতার কিরপায় পাওয়া মল আমি বিক্কিরি করব না। মাপ করবেন।
    -- এই তবে তোমার শেষকথা?
    --হ্যাঁ!
    --ভেবে দেখ, ভাল করছ কি না!
    --নতুন করে ভাবার কিছু নেই।

    রাজা অবাক! এক ব্যাটা জংলী গাঁয়ের লকড়হারা! সে কিনা?
    মন্ত্রী বললেন-- বেঁধে আনি ব্যাটাকে!
    কোতোয়াল বললেন-- মুন্ডুটা ঘাড় থেকে নামিয়ে দিই!
    রাজা হাত তুলে থামালেন।
    -- না, ওসব আমি পছন্দ করি নে। বরং ভেবে দেখ আর একটা নকল মল বানিয়ে দিলে আমার মেয়ে মেনে নেবে কি না!

    রাজস্যাকরার ডাক পড়ল। তাকে নিয়ে আবার পাইক-বরকন্দাজের দল গেল ছুরি গাঁয়ে আমাদের ফেকলুর বাড়িতে। সেই গয়না দেখে স্যাকরা মাথা নাড়ল।
    না, অমন গয়নার জোড়া ও বানিয়ে দিতে পারবে বটে, কিন্তু অমন আলো ঠিকরে পরা?
    না, সেটা সম্ভব নয়। তাই রাজকুমারী ধরে ফেলবেন আসল-নকল।
    রাজা হার মানলেন, মেয়ে শয্যা নিল। খায় না, দায় না। কেটে গেল পক্ষকাল।সোনার বরণ শুকিয়ে কালি।
    এলেন রাজবৈদ্য। নাড়ি ধরে গম্ভীর মুখে বললেন ব্যামোর নাম হাড়মড়মড়ি-- শয্যাকন্টকি! এ অসুখ হয় মনের রোগ থেকে। অতৃপ্ত ইচ্ছার পূরণ ছাড়া এর কোন চিকিৎসা নেই।
  • দেবলীনা | 130.59.54.2 | ০৮ আগস্ট ২০১৪ ১২:৫০646957
  • খুব ভালো হয়েছে রঞ্জন কাকু
  • Ranjan Roy | ০৮ আগস্ট ২০১৪ ১৪:৫৫646958
  • এস ও দেবলীনাকে ধন্যবাদ।
    এই সপ্তাহে শেষ করার চেষ্টা করবো।
  • Ranjan Roy | ০৯ আগস্ট ২০১৪ ০০:৫০646959
  • ৪)
    "রাজার বাড়ির ঘর-জামাই,
    খাই-দাই আর বগল বাজাই।"

    খবর গেল গাঁয়ে গাঁয়ে, খবর ছড়িয়ে পড়ল গ্রামে-গঞ্জে হাটে-বাজারে;-- রাজা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন ।
    কী পুরস্স্কার?
    না, যে ব্যক্তি রাজকুমারীর অসুখ সারিয়ে তার মুখে হাসি ফোটাতে পারবে তাঁকে রাজা ঘরজামাই করবেন। কিন্তু তাকে নিয়ে আসতে হবে এমন এক মল যার থেকে আলো ঠিকরে পড়ে।
    অপুত্রক রাজা।
    তাতে তোর কী?
    আমার অনেক কিছু। রাজামশাই গত হলে সিংহাসনে বসবে কে?
    কেন, রাণীমা!
    দূর বোকা ! বসবে রাজার সন্তান-সন্ততি! অর্থাৎ রাজকুমারী।
    তাই! আর যদি রাজকুমারীর বিয়ে হয়?
    তাতে কী? রাজকুমারী নিশ্চয়ই তাঁর পতিদেবকে গদিতে বসতে দেবেন। হিন্দুনারী বলে কতা!
    বেশ বলেছ, তবে তো ঘরজামাই হলে দারুণ মজা! ওই হাল্লারাজার বা শুন্ডিরাজার গল্পের মত।
    আর যদি হীরকরাজার মত হয়?
    কুকথা বলিস নে! আমি যাব।
    ফের বোকার মত কথা। তোর গিন্নির পায়ে অমন আলো-ঠিকরে পড়া মল আছে? নেই তো! চেপে বোস্‌।

    কিন্তু সবাই তো আর তোর-আমার মত নয়। ছুরিকলাঁ গাঁয়ের ফেকলুরামকে তার ইয়ারদোস্ত বোঝালো যে ঢের হয়েছে। এবার নিয়ে চল তোর মায়ের পায়ের ঝিকিমিকি মল। পাবি আদ্দেক নয়, গোটা রাজত্ব আর রাজকন্যে!
    ফেকলু ইতস্ততঃ করছিল। মাকে কি বলে বোঝাবে?
    দোস্তলোগ বললো-- আরে ইয়ার! তোর মা বিয়ের পর তোর সঙ্গে রাজপ্রাসাদে থাকবে; এই হাড়ভাঙা খাটনি থেকে মুক্তি পাবে। পায়ের ওপর পা তুলে দাসদাসীকে হুকুম করবে। আর মলটা তো তুই জঙ্গলে গিয়ে পেয়েছিস। এটা তো তোর বাবা মাকে গড়িয়ে দেয় নি।
    সেয়ানা বটে ফেকলুরাম, যেমন ভাবা তেমন কাম!
    ঝিকিমিকি মল দেখে রাজকন্যের মুখে হাসি ফুটল। সব অসুখ সেরে গেল।
    রাজামশাই বললেন-- আমার শর্ত ভুলিনি। তোমার সঙ্গে বিয়ে দেব আমার বুকের ধন লীলাকুমারীর আর তুমি হবে রাজবাড়ির ঘর জামাই ; এ'রাজ্যের জামাইরাজা! তবে তোমার কোন চাহিদা থাকলে বল।
    --- আমার দুটো শর্ত।
    এক,আপকী সমধিন্‌, মানে আমার মা থাকবে আপনার প্রাসাদে, কিন্তু আলাদা মহলে।
    দুই, আমার ছোটবেলার বন্ধুবান্ধব, ইয়ারদোস্ত, বেশি নয় -জনাকুড়ি। ওরাও এই প্রসাদের বারমহলে থাকবে। ওদের থাকাখাওয়ার খরচা রাজকোষ থেকে দিতে হবে।
    রাজা বললেন-- তথাস্তু! দিনক্ষণ দেখে বিয়ের আয়োজন শুরু হোক।

    এই ফাঁকে আমরা ইতরজন হুঁকোয় দুটো টান দিয়ে নিই।
  • Ranjan Roy | ১০ আগস্ট ২০১৪ ১৯:০২646960
  • মিটে গেল বিয়ে। উৎসব চলেছিল একমাস। দশগাঁয়ের লোক কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে ধন্য ধন্য করল। মুখে মুখে ছড়িয়ে গেল রাজকুমারী লীলা ও জামাইরাজা ফেকলুরামের গল্প। রাজা জামাই পেয়েছেন বটে! ঘরজামাই।
    রাজা কথা রেখেছেন।
    ফেকলু ও তার মায়ের স্থান হয়েছে রাজপ্রাসাদে। আর ফেকলুর জনাবিশেক ইয়ারদোস্ত? তারাও জায়গা পেয়েছে বারবাড়িতে।
    ফেকলু ও অকৃতজ্ঞ নয়। রাক্ষসীর সেই মল এখন শোভা পায় ওর বৌ লীলাকুমারীর পায়ে। অন্দরমহল ঝকমক ঝকমক। আর বারমহলে গেলেই ইয়ারদোস্তের সঙ্গে ফেকলু আগের মতনই সহজ ব্যবহার করে। ঠিক যেন ছুরিকলাঁ গাঁয়ের কাঠুরে ফেকলুরাম।
    রাজা ভাবতে থাকেন বয়স হয়েছে। রাণী অনেক আগেই গত হয়েছেন। এবার যদি জামাইবাবাজী রাজকাজ একটু একটু করে বুঝে নেয় তাহলে একদিন মেয়ে-জামাইকে রাজপাটে বসিয়ে বাণপ্রস্থে গেলে হয়।
    দেখা গেল ফেকলুরাম বেশ বুদ্ধি ধরে। অল্পদিনেই রাজ্যের আমদানি ও খরচের হিসেব ও ভালই শিখে নিল।
    রাজা ওকে রাজ্যের একটি অংশের দায়িত্বভার দিয়ে নিশ্চিন্ত হলেন। বছর গড়িয়ে গেল। একদিন রাজা বিশ্বস্ত চরের থেকে খবর পেলেন ফেকলুকে লোকে ওই অঞ্চলের রাজা বা রাজা ফোকলওয়া বলে ডাকে। রাজার কপালে ভাঁজ পড়ল। কিন্তু ভাবলেন-- আজ নয় তো কাল ও গোটা রাজ্যের রাজা হবেই, একটু তাড়াহুড়ো করছে আর কি!
    কিন্তু কিছুদিন বাদে এমন সব ঘটনা ঘটতে লাগল যে রাজার রাত্তিরে ঘুম গায়েব।
  • s | 182.0.249.87 | ১০ আগস্ট ২০১৪ ২২:৫৯646961
  • আহা। কি ভালই লাগছে। বাংলা রূপকথাগুলোর সংগে অদ্ভুত মিল। মনে হচ্ছে ঠাকুরমার ঝুলি পড়ছি।
    মেয়েকে ইংরেজি ট্রান্সলেট করে শোনাচ্ছি।
  • Ranjan Roy | ১১ আগস্ট ২০১৪ ১২:৩৬646962
  • s,
    আমি একটু সেন্টি খেলাম। চেষ্টা করব আপনাদের এই ভালোলাগাকে ধরে রাখার।ঃ)))
  • সামান্য লোক | 172.136.192.1 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ০১:১২646963
  • nina | 78.37.233.36 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৩৬646964
  • রঞ্জনভাউ -- দারুণ ভাল লাগছে----কাল আবার আসব পড়তে----
  • kumu | 52.104.32.227 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৪৩646965
  • দেখো কান্ড!!!!সামান্য এক মলের জন্যে এত্ত কিছু!!!
  • Ranjan Roy | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৬:৩৪646967
  • দিনটা ছিল শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার।
    আগের দিন গেছে "আঁওলা একাদশী" বা আমলইক-একাদশীর পরব। সেদিন ছত্তিশগড়ের গাঁয়ের মেয়েরা দলবেঁধে আমলকি গাছের নীচে সবাই মিলে রান্না করে গাছের পূজো দিয়ে ভাত-ডাল-ভাজা-শাক-আচার আর ঘরে তৈরি মিষ্টি খায়। একরকম বনভোজন। এতে ঘরের পুরুষেরা বাদ পড়ে।
    লীলাকুমারীও সখী-দাসদাসীদের নিয়ে রাজপরিবারের নিজস্ব বনোদ্যানে গিয়ে বনভোজন করে এসেছে। জামাই-রাজা শুদুমুদু ঘরে বসে থাকবে তা কি হয়, ফেকলুরাম সে বান্দাই নয়। ও গেছল ইয়ারদোস্তদের সঙ্গে আখেট বা মৃগয়া করতে।
    এবছর বিষ্টি-বাদলা ভালই হয়েছে। ক্ষেতে ধানের চারা লকলকিয়ে বেড়ে উঠছে। মেয়েদের ক্ষেতের কাজকম্ম প্রায় শেষ। এখন পালা-পার্বণের সময়।চারদিকে বেশ একটা উৎসব উৎসব ভাব।
    আবার শাওন-সোমবার উৎসবে মেয়েরা সবুজ শাড়ি সবুজ কাঁচের চুড়ি পরে দোলনায় দোলে।
    তাই রাজদরবারেও কারো কাজে মন নেই। বেশ একটা ছুটি ছুটি ভাব। দরবারে লোকগায়কের দল সুর তুলেছে --"রিমির ঝিমির বরষে পানি"। সভাসদেরা ভাবছে আজ মহারাজ তাড়াতাড়ি দরবার থেকে উঠে অন্দরমহলে গেলে ওরা ঘরে ফিরে পাশা-চৌরসের ঘুঁটি সাজিয়ে বসবে।
    এমন সময় দরবারের বাইরে একটা হট্টগোল।
    দরজার বাইরে দুই দ্বারী আটকানোর চেষ্টা করছে একজন শণচুলো বুড়িকে।
    -- কী ব্যাপার?
    -- ও একটা পাগলি হুজুর!
    কিন্তু এলোমেলো চেঁচামেচির মধ্যে রাজার কানে পৌঁছে গেল একটা কাকুতিমিনতির স্বর।
    -- আমাকে একবারটি ভেতরে যেতে দাও বাবারা! আমি হুজুরের পায়ে পড়ব। উনি আমার নাতনিকে ফিরিয়ে দেবেন। আমার নাতনি চাই।
  • Ranjan Roy | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৭:০৫646968
  • --- আসতে দাও ওকে! কেউ আটকাবে না! আমি শুনব বুড়িমা কী বলতে চায়!
    --- অপরাধ নিও না, মহারাজ! তঁয় হমর দাঈ-দদা, তঁয় মোর ভগবান , হমন গরীবকে মাঈবাপ! হমন ডরাওথন। মাফি দেব, সরকার।
    -- কোন ভয় নেই, যা বলার নির্ভয়ে বলতে পার। কী হয়েছে?
    -- আমার কেউ নেই, শুধু ওই একটা নাতনি। সবে এগারোয় পা দিয়েছিল। জঙ্গলের শুকনো কাঠ কুড়িয়ে তাই বেচে দুজনের পেট চালাই। দুদিন ধরে গায়ে জ্বর। কাল ও একাই কাঠ কুড়োতে গিয়েছিল, বিকেলে ফেরেনি। লোকে বলছে বনের পথে রাজার সেপাইরা ওকে ধরে নিয়ে গেছে। মহারাজ গো, ওকে ছেড়ে দাও!
    রাজার মুখ রক্তবর্ণ। সভায় মৃদু গুঞ্জন।
    --- শোন বুড়িমা, তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমার সেপাইরা এমন কাজ করতে পারে না। লোকে হয়ত না বুঝে কিছু কিছু উল্টো পাল্টা মনগড়ন্ত গল্প বানিয়েছে। তোমার নাতনি সখীদের সঙ্গে ভিনগাঁয়ে বেড়াতে যায় নি তো? মনে করে দেখ। তুমি হয়তো ভুলে গেছ।
    -- নাহি মহারাজ। মোলা মাফি দেব। ওদের সঙ্গে অন্য যে মেয়েরা ছিল তারাই দেখেছে। ছয় জন ঘোড়সওয়ার, তাদের ঘোড়ার মাথায় পালক। নাতনি কাঁদছিল। ওর মুখ চেপে তুলে নিয়ে গেছে। অন্য মেয়েরা পালিয়ে এসেছে।
    রাজার মুখ গম্ভীর। কোতোয়াল কী বল?
    -- না হুজুর! আমার অধীন কোন চৌকিতে এমন ঘটনা ঘটেনি। হলে আমি জানতে পারতাম।
    --- শুনলে তো বুড়িমা! যাকগে, কাল কোথাও নালিশ কর নি? কোন চৌকিতে?
    --- মহারাজ, ওই হুজুরের লোকজনই আমাকে ভাগিয়ে দিয়েছে। নালিশ নেয় নি।
    --- কে ভাগিয়ে দিয়েছে? নাম বল।
    --- হুজুর! করমন সিং।
    মহারাজ এবার উত্তেজিত। কোতোয়ালের দিকে কড়া চোখে তাকালেন।
    --- তোমার লোকজন এই বুড়িমাকে তাড়িয়ে দিল? নালিশ নিল না? কেন, জানতে পারি কি?
    ---- মহারাজ, ওই জঙ্গল এলাকার শান্তিরক্ষার দায়িত্ব আমার এক্তিয়ারের বাইরে।
    --- তবে কার এলাকা ওটা?
    ---- জামাই রাজার।
  • Ranjan Roy | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৭:২৩646969
  • গোটা দরবার নিঃস্তব্ধ।
    --- বুড়িমা, তুমি তোমার গাঁয়ের পাশের চৌকি ছেড়ে এতদূরে রাজধানীর কাছের চৌকিতে নালিশ লেখাতে কেন এসেছিলে? কেন আমার জামাইরাজার কাছে যাও নি?
    থরথর করে কেঁপে ওঠে বুড়ি। হেঁচকি তুলে কাঁদে। বারবার হাত জোড় করে কপালে কোন অদৃশ্য দেবতার উদ্দেশে ঠেকায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে--- মোলা মাফি দেব সরকার। নারাজ ঝন্‌ হবে। আমার ভুল হয়ে গেছে।
    তারপর বাঁকাচোরা লাঠিটা তুলে নিয়ে ঠুক ঠুক করে দরবার থেকে বেরিয়ে যায়।
    রাজা অবাক। দরবারে গুনগুনানি থেমে গেছে। উৎসবের পরিবেশ কেটে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে চাপা ভয়।

    রাজা এবার মহামন্ত্রীর দিকে ফেরেন।
    -- কিছু একটা বুঝতে পেরেও পারছি না। যেন চোখের ওপর কালো পট্টি বাঁধা আছে। আপনি যা জিগ্যেস করছি নির্ভয়ে স্পষ্ট করে বলুন।
    -- এই ঘটনা যে ঘটেছে, আপনারা সবাই জানতেন?
    মহামন্ত্রী নিরুত্তর!
    --- বুড়ির নাতনি কে কারা তুলে নিয়ে গেছে আপনি জানেন?
    মহামন্ত্রী নতমুখ।
    --- মেয়েটি বেঁচে আছে?
    মহামন্ত্রী উসখুস করতে লাগলেন।
    --- অপরাধীর নাম?
    মহামন্ত্রী অসহায় ভাবে সেনাপতির দিকে তাকালেন।
    --- বুঝলাম; আপনারা সবাই সব জানেন, কিন্তু বলবেন না। ভয়। কাকে? আমাকে নয়, আর কাউকে! কে সে?

    দরবারের মেঝেতে পিঁপড়ে চলার শব্দ শোনা যায় বুঝি!
    গর্জে ওঠেন মহারাজ।
    -- কে সে? কে সে যে এই রাজ্যে আমার চেয়েও শক্তিধর অমিতবিক্রম? রাজাদেশের চেয়েও যার ইশারার দাম বেশি!

    বিদুষকের দন্তরুচিকৌমুদী বেরিয়ে পড়ে-- রাজা ফোকলোয়া! জামাই রাজা!
  • de | 190.149.51.67 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১৭:২৯646970
  • তারপর? দারুণ হচ্ছে!
  • Ranjan Roy | ২২ আগস্ট ২০১৪ ১৯:৪৮646971
  • ৫)

    সেদিনের দরবারের ঘটনাটি বিদুষক নিজের বৌয়ের কাছে ফলাও করে বলছিল আর এমনই কপালের ফের-- আম্মো সেখানে হাজির ছিলাম।
    আসলে রোজ সন্ধ্যেবেলা বিদুষকের বাড়িতে আমাকে যেতে হয়, আমি যে ওর মিতান!
    কবে থেকে? সেই ছোটবেলায় পাঠশালায় পড়ার দিন থেকে।
    ও ছিল আমাদের নাটের গুরু আর আমি ছিলাম ওর কেলে হাঁড়ি, মানে ওর চেলা আর কি! ওর বুদ্ধিতে কতবার গুরুজির বেত খেতে খেতে বেঁচে গিয়েছি।
    আজ আমি নরসুন্দর। গোটা গাঁয়ের ক্ষৌরি করি আর পাঁচবিঘে জমি চষি। ও কিন্তু দরবারের বিদুষক, মহারাজের বয়স্য!
    এক নম্বরের ফাজিল। বিটলে বামুন কোথাকার! যে কথা অনেকে মুখে আনতে সাহস করে না তা ওর জিভের আগায়। আমাদের ভাগ্যি যে মহারাজ ওকে পছন্দ করেন, বেশ লাই দেন।
    কিন্তু ওর ঘরের হাল ফেরেনি।
    সেই খাপরার চাল, মাটির দেওয়াল আর বাগানে পাতকো'!
    ওর বামনী, মানে আমার ভৌজি কপাল চাপড়ায় ।
    --- দেবরজি, আপনার বন্ধুর নাকি খুব বুদ্ধি? হোলির দিনে মহারাজ খুব দানধ্যান করেছিলেন। কেউ খালি হাতে ফেরেনি। ওনাকেও জিগ্যেস করেছিলেন-- ঘরের সব ভালো তো?
    উনিও যেমন, ইশারা বুঝেও বোঝেন না। বললেন-সব ভালো।
    আরে এই দেখুন, দু'বচর ধরে চালের খাপরাগুলো বদলানো হয় নি। এবার বর্ষায় অনেকগুলো জায়গা দিয়ে জল পড়েছে। হাঁড়িকুড়ি সরা ধরে ধরে ধরে লাগাতে হয়েছে।
    --- আরে দুকালুর মা! ভগবান তোমার কষ্ট দেখে ঘরে জল পৌঁছে দিলেন --সেটা বুঝলে না? বুঝলে মিতান, ভরা গরমে পাতকো গেছে শুকিয়ে। তা উনি রোজ দুটো কলসী, একটা মাথায় আর একটা কাঁখে, নিয়ে সেই নদী থেকে জল ভরে আনতেন। তাই দেখে কানহাইয়ালালের হল বড় কষ্ট। এই বর্ষায় সোজা ছাত ফুটো করে ঘরে হাঁড়িকুড়ি জালা-মটকা সব ভরে দিয়েছেন।
    -- দেখ পন্ডিতজি! তোমার এ সব ফক্কুড়ি ওই রাজদরবারে শুনিয়ে এস। তাও যদি ঘরে দুটো পয়সা আসতো! প্রত্যেকবার তীজ-পরবের সময় ভাই এসে বাপের বাড়ি নিয়ে যায়। আমার অন্য দু'বোনও আসে। তাদের সঙ্গে আসে জামাকাপড়, মিষ্টি আর পিঠেপুলির হাঁড়ি! আর আমার কপাল!
    -- দেখ, তোমার বড়দি, মানে আমার দেড়শাউড়িকে আমি ভাল করে চিনি। তোমার জামাইবাবু হল গাঁয়ের বৈগা! বোকা চাষীদের ঝাড়ফুঁক-তন্ত্রমন্ত্র করে পয়সা কামায়। ওসব আমার কম্ম নয়, যত লোকঠকানো ব্যবসা!
    -- দেখিয়ে দেবরজি! আমার বাপের বাড়ির সবাই ঠগ! উনি একা ধর্মরাজ! আরে দরবারে যাও, চাইলেই কলাটা, মূলোটা পোঁটলা বেঁধে দেবে। না, এসব নাকি উৎকোচ! কোন এক শাস্তরে লেখা আছে। আর উৎকোচ মানে নাকি পাপ! আরে যে শাস্তর পড়লে ঘরে খাবার জোটে না, তেমন সব পুঁথি পড়াই কেন বাপু?
  • Ranjan Roy | ২৩ আগস্ট ২০১৪ ০০:২৬646972
  • আমি বিপদ বুঝে কথা ঘোরাই।
    --হ্যাঁরে! আজ দরবারে কিছু হয়েছে নাকি? জব্বর কিছু?
    --- কে বলল?
    -- আর কে বলবে? বাজারে গুজগুজ, ফুসফুস! কী হয়েছে বলবি তো!
    -- মিনি মাগনা কিছু হবে না। আগে ভাঙ ঘোঁট, শরবত বানিয়ে দে! নানকি দাউয়ের মা (খোকার মা) যখন এত কথা শোনাল তখন আমিও ছাড়ছি নে! আজ থেকে ঘুষ খাব। বিনা উপঢৌকন নিয়ে যদি কারো আর্জি শুনি তবে আমি আর রাজদরবারের বিদুষক নই। নে শ্যালক! ভাঙের শরবত তরিবত করে দু'গেলাস নিয়ে আয়। তারপর শোনাব আজকের দরবারের কিস্‌সা আর তাতে এই শর্মার বিশেষ ভূমিকা।

    আমার হাতের ভাঙের শরবতের তারই আলাদা। মহাশিবরাত্তির বা হোলিখেলার দিন বন্ধুবান্ধবের উপরোধে আমিই বানাই। এই বিটলে বামন বলে যে ধান্যক্ষেত্রে গবাদি পশু,হরিণ এবং বিভিন্ন পক্ষীদের তাড়াতে কৃষকেরা যে মাটির হাঁড়ি মাথায় কুশপুত্তলিকা দাঁড় করিয়ে রাখে, তার ঠোঁটেও এই শরবত খানিকটা ঢেলে দিলে সে ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়ে ফিকফিক করে হাসবে।
    সে যাকগে! মোদ্দা কথা হল বিদুষক মশাই ডেকে নিলেন গিন্নিকে। তারপর দু'গ্লাস সিদ্ধির শরবত খেয়ে গোঁফের ফাঁকে মুচকি হেসে আজকের দরবারের ঘটনাটা রসিয়ে রসিয়ে আমাদের শোনালেন।
    আমাদের তো চোখ গোল গোল, গায়ে কাঁটা! বিদুষক বলে কি!
    জামাই রাজা? রাজা ফোকলোয়া! ফেকলু রাজা! তার নামে মহারাজের কাছে নালিশ?
    --হ্যাঁ রে! বললে পেত্যয় যাবি নে। বুড়ির সাহস আছে। আর আমি যখন টুক করে অপরাধীর নামটা ভরা দরবারে বলে দিলাম তখন মহারাজের প্রায় দমবন্ধ অবস্থা। আর মহামন্ত্রীর যেন সাঁপ সুঁঘ গয়ে। আর কোতোয়ালের তো 'পু সরিক গইস্‌!'
    --- কে বলেছিল মুখ খুলতে তোমায়, নানকি দাউয়ের দদা! (খোকার বাপ)! সবাই চেপে ছিল, তুমিও না হয়--!
    ভৌজির কথা শেষ হয় না জোড় হাত কপালে ঠেকে।
    ---শেষে কি হল বলবি তো? না হেসেই মলি!
    হবে আর কি! মহারাজ বললেন-- জামাই রাজাকে এত্তেলা দাও। বল দরবারে আসতে।
    শান্ত্রী ফিরে এসে বলল-- উনি প্রাসাদে নেই। মৃগয়া থেকে ফেরেন নি। যুবরাণীজি বললেন যে আজ রাতে ফিরলে কাল অবশ্যই দরবারে পাঠিয়ে দেবেন।
    --কি হল, হাসছিস কেন?
    -- হাসছি না তো! আসলে একটা ব্যাপার আছে, আমি জানি আর যুবরাণীজি জানেন। আর কেউ জানেনা। তাই আমি কাউকে বলবো না। আমি না খুব দুষ্টু!
    আচ্ছা ফ্যাসাদ! সিদ্ধি বোধহয় বিটলে বামুনের ব্রহ্মতালুতে গিয়ে পৌঁছেচে।
    --- আচ্ছা, আমি শুধু দুকালু'র মাকে বলব। কানে কানে বলব। নইলে আমার মিতানব্যাটা শুনে ফেলবে। ও শুনলে গোটা বাজারের লোক জেনে যাবে। তাহলে গোটা রাজদরবার জেনে যাবে। তাহলে মহারাজের কানে উঠবে। তারপর আমার মুন্ডু ঘ্যাচাং!
    --- আচ্ছা আচ্ছা, দুকালুর বাপ! বলো। আমাকেই বলো আর তাড়াতাড়ি বলে ঘুমিয়ে পড়।
    --- বলছি কি জামাই রাজাও খুব দুষ্টু। ও না কাল রাত্তিরেই ফিরে এসেছে। যুবরাণীর মহলে মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। চোখ বেশ লাল। বোধ্হয় ফেকলুরামও সিদ্ধি খেয়েছে।
  • Ranjan Roy | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৫৫646973
  • মাইরি! আজ রাত্তিরে শেষ করব। গত কাল ছত্তিশগড়ে এসেছি। একটা বীভৎস বিস্ফোরণে একটি ডিনামাইটের ফিউজ বানানোর কারখানার বিল্ডিং মাটিতে মিশে গেছে। রায়পুর থেকে ৩৫ কিমি দূরে। পাঁচজন শ্রমিক মারা গেছে। দিন ৩১ জুলাই, ২০১৪ রাত দুটোয়।
    মালিক নীনা সিং বিজেপির মান্যগণ্য পরিবার। কেউ অ্যারেস্ট হয় নি। ফ্যাক্টরি আপাততঃ বন্ধ। ৩১ তারিখে অভনপুরে রাজমার্গে চাক্কাজামের ডাক শ্রমিক ইউনিয়নের। আপাততঃ ধর্ণা চলছে।

    কাল দুপুরে গেছলাম ফ্যাক্টরি সরেজমিনে দেখতে। জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে ইউনিয়ন নেতাদের কথাবার্তার সময় হাজির ছিলাম। আর দুজন নিহতের পরিবারের বাড়িতে গেছ্লাম। মানসিক ভাবে ক্লান্ত। বুঝতে পারলাম--বুড়ো হয়ে গেছি।
    আজকে রূপকথা লিখব, একটি টই খুলে ওই ফ্যাক্টরির গল্পটাও।
  • de | 69.185.236.51 | ২৫ আগস্ট ২০১৪ ১০:৫২646974
  • খুব খারাপ খবর রঞ্জন -দা -

    লেখাটা ভালো হচ্ছে -
  • Ranjan Roy | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০০:৪৯646975
  • ৬)
    মহারাজের এককথা। হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না! যখন দরবারে প্রজার পক্ষ থেকে নালিশ হয়েছে তখন রাজা দু'পক্ষের কথা শুনবেন। তারপর খালাস অথবা শাস্তি!
    গোটা রাজ্যে এই নিয়ে হৈচৈ। কেন?
    আরে নালিশ যে খোদ জামাইরাজার নামে!
    দেখবি, কিস্যু হবে না।
    জামাইরাজাকে কেউ দেখেনি বুড়ির নাতনিকে অপহরণ করতে।
    তবে?
    সখীর দল তো দেখেছে।
    কী দেখেছে? ঘোড়ায় চড়ে ধেয়ে আসা ছয় ছয়্টা গবরু জোয়ান এসে ওদের সঙ্গী কাঠকুড়ুনি মেয়েটাকে জোর করে তুলে নিয়ে গেল এই তো!
    তা ওরা যদি ভরা দরবারে ছোকরাগুলোকে চিনে ফেলে?
    বললেই হল! ওদের প্রাণের ভয় নেই?
    আর ওরা বলতে চাইলেও বাপ-মা বলবে -- মরার শখ হয়েছে! বলবি কাউকে চিনতে পারিস নি।
    আরে রাজা দরবারে ওদের কাউকে ডাকলে তো!
    একমাত্তর মেয়ের একটি বর। মেয়ের কথা রাখবে না বাপ! শুনেছি মেয়ে বিস্তর কান্নাকাটি করছে। বলছে তুমি কেমন বাপ? রাজদরবারে দশটা ইতর লোকের সামনে তোমার জামাইকে আসামী সাজিয়ে দাঁড় করাবে? কার কথায়? না একটা হাঘরে ন্যাতাকানি পড়া বুড়ির কথায়? এতে তোমার আর তোমার মেয়ের মান-ইজ্জত বজায় থাকবে? তার চেয়েও বড় কথা-- আজ নয় কাল তোমার জামাই এই সিংহাসনেই বসবে, তখন? লোকে মানবে তাকে? ভেবে দেখ বাবা!
    তা মেয়ে কী করতে বলছে?
    বলছে ঘরের মধ্যেই দু-চারটে চড়-চাপড় লাগিয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে নাও। দরবারে বলবে -- ও অসুস্থ; জ্বর বুক ধড়ফড় , এইসব। বলবে ও মাপ চাইছে।
    রাজা কী বলছেন?
    কী আর বলবে! বেচারা! দেখবি বলবে -- বুড়িমা, তোমার ভুল হয়েছে। শুরুতে তো অমন একটা বাক্যি বলেইছে।
    যা বলেছিস্‌। গরীবের কথা কে শুনবে?
    কথায় আছে না-- গরীব কে লুগাই, জগৎ ভৌজাই!
    (গরীবের বৌ হল সবার বৌদি!)
    একটি তেতো মুচকি হাসি দিয়ে সবাই হাটের থেকে থলে নিয়ে বাড়ি ফিরল।
  • Ranjan Roy | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ০১:২৭646976
  • কিন্তু সেদিন সূয্যি পশ্চিমে উঠেছিল।
    ভরা দরবারে রাজার জামাই করজোড়ে দাঁড়িয়ে বলল-- আমি জনি না। আমার এলাকায় কোন মেয়ে চুরির খবর নেই। আর আমি সেদিন আমলা একাদশীর উৎসবে দূরের বনে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে শিকারে ব্যস্ত ছিলাম। তবু বুড়িমার ক্ষতি দেখে আমি আমার কোষ থেকে পাঁচ স্বর্ণমুদ্রা দেব বলে সর্বসমক্ষে কথা দিচ্ছি।
    রাজা বললেন-- কিন্তু সেই কিশোরী মেয়েটি? সে কোথায়? দুই দিবস অতিক্রান্ত। তাহাকে কেন উদ্ধার করা গেল না? সেনাপতি? আগামী কাল মেয়েটিকে খুঁজে পেতে দরবারে হাজির কর। আমি তার মুখ থেকে শুনব কে বা কারা তাকে অপহরণ করেছিল। তারপরে রায় দেব।
    কিন্তু কর্তব্যে অবহেলার জন্যে জামাইরাজার থেকে উক্ত ক্ষেত্রের শান্তিরক্ষার ভার বর্তমান সেনাপতি কুঁয়র বিক্রমজিৎ কে দেওয়া হল। মনে হয় জামাইরাজার আরও শিক্ষানবিসীর প্রয়োজন।

    পরের দিন যা ঘটল তার জন্যে রাজ্যবাসী প্রস্তুত ছিল না।
    দরবারে সেনাপতি এনে হাজির করলেন অপহৃত কিশোরীর নিষ্প্রাণ দেহখানি। পিঠের দিকটা যেন কোন অরণ্যচারী পশু খামচে দিয়েছে।
    কিন্তু মেয়েটি প্রাণহীন শরীর পাওয়া গেছে কোন জঙ্গলে নয়, ফেকলুরাজার চ্যালাদের শিবিরের পেছনে মাটিতে পোঁতা।
    রাজার বিশেষ গুপ্তচর বাহিনী পাকা খবর এনেছিল। প্রধান সেনাপতি রাতেই হানা দিয়ে কাজ সেরে ফেলেছিলেন।

    আর মৃত কিশোরীর দুজন সখী শনাক্ত করল চারজন অপহরণকারীকে, দেখা গেল ওরা সবাই ছুরিকলাঁ গ্রাম থেকে আসা জামাইরাজার স্যাঙাৎ। সেই লোকগুলো আবার দরবারে সর্বসমক্ষে কবুল করল যে ওরা যা করেছে তা জামাই রাজার হুকুমেই করেছে।
    দরবারে একটা মৃদু গুঞ্জন উঠে মিলিয়ে গেল।
    একদিন পরে রাজা ঘোষণ করলেন যে অভিযুক্ত চারজনের প্রাণদন্ড হবে। হেঁটোয় কন্টক, উপরে কন্টক।
    আর ফেকলুরাজাকে নির্বাসন। ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রধান সেনাপতি বিক্রমজিৎ সিংহের দায়িত্ব দশজন অশ্বারোহী সঙ্গে নিয়ে ফেকলুরাজাকে সূর্যডোবার আগে রাজ্যের সীমানা পার করে দিয়ে ফিরে এসে খবর দিতে হবে।
    তারপর যদি ফেকলুরাজাকে এ রাজ্যের ত্রিসীমানায় কোথাও দেখা যায় তবে তারও মৃত্যুদন্ড হবে।
    রাজকন্যে লীলাকুমারী কাঁদলেন না। জামাইরাজার যাত্রার জন্যে সিন্দুক-তোরঙ্গ গুছিয়ে দিতে লাগলেন।
    নিকষকালো কৃষ্ণপক্ষের রাত।
    দীপ জ্বলছে লীলাকুমারীর কক্ষে। আজ যে ওদের এই প্রাসাদে শেষ রাত। রাজা এইটুকু দয়া করেছেন। কিন্তু কক্ষের বাইরে পাহারা বসেছে।
    দীপ জ্বলছে সেনাপতি বিক্রমজিতের কক্ষে।
    অপরাধী ছয়জনের মধ্যে চারজন ধরা পড়েছে। ওদের মৃত্যুদন্ড হবে।
    কিন্তু বাকি দুজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওরা কোথায় গা ঢাকা দিয়ে আছে?
    রাজার কড়া হুকুম। নির্বাসিত ব্যক্তিকে সীমানার ওপারে খেদিয়ে দিয়ে সেনাপতি দ্রুত ফিরে আসুন আর বাকি দুই অপরাধীকে খুঁজে বার করুন।
  • de | 69.185.236.54 | ২৬ আগস্ট ২০১৪ ১৬:৩৬646978
  • তারপর?
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন