এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • Reading Lolita in Tehran

    I
    বইপত্তর | ১৭ আগস্ট ২০১৪ | ২৩৩৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • d | 116.77.198.217 | ১৭ আগস্ট ২০১৪ ১৮:০৩649519
  • লেখ লেখ। অসলাম থাপু হয়ে
  • I | 24.96.56.3 | ১৭ আগস্ট ২০১৪ ১৯:৪৫649530
  • শুরুতে কিঞ্চিৎ ব্লা ব্লা। কেননা আমি অল্প কথায় কিছু বলতে শিখিনি। কাজেই আমাকে আপনাদের সহ্য করে যেতে হবে, আগেও যেমন করেছেন। আগের থেকে এখন বরং আরো বেশী, কেননা বহুকাল কিছু লিখিনি, তাই - টইদিদি'র থেকে ধার নিয়ে বলি - "টেখা" এখন আরো বেশী অগোছালো।

    ইদানিং আবার পড়াশুনোর অভ্যেস ফিরে আসছে। গোগ্রাসে (মানে আমার পক্ষে যতটা গরু হওয়া সম্ভব আর কি) পড়ে ফেলছি বেশ কিছু নন-ফিকশন। সর্বশেষ বই এই "রিডিং লোলিটা..." । বইটা এখনো শেষ করিনি। এর থেকেও একটা আন্দাজ করতে পারেন, কতখানি তাড়াহুড়োয় এই বইয়ের পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখতে বসা। তাছাড়া, ভেবেওছিলাম এখন থেকে পুরো শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো টেখা বের করবো না। কিন্তু বইটা নিয়ে লেখার একটা অদম্য চাপ মনের মধ্যে কাজ করছে। হয়তো ইন জেনারেল, টেখা-র মধ্যে ফিরে আসার একটা ইচ্ছে। তাছাড়া পুরো একখানা লেখার প্ল্যান করে লিখতে বসলে সে আর কবে সম্ভবিবে, ভগায় জানেন। আদৌ হয়ে উঠবে কিনা তাই সন্দেহ। (এই লেখাটা লেখার মধ্যেই একবার উঠে গিয়ে ছেলের ক্যারাটের ফি'জ দিয়ে আসতে হল। এতদ্বারা অবশ্য এমন প্রমাণ করতে চাইনা যে আমি বাড়ির কাজ খুব করে থাকি। বরং উল্টো। তবে বাইরের কাজ ইদানিং সত্যি বড্ড বেড়েছে। আর মেয়েদের মতই, ছেলেদের লেখালিখির জন্যও একটি Room of one's own বড্ড জরুরী, সে ভার্জিনিয়া উলফ যতই রাগ করুন না কেন। আমার ক্ষেত্রে অন্ততঃ লিটার‌্যালি না হলেও মেটাফোরিক্যালি কথাটা খুব সত্যি। কেননা সামান্যতম অশান্তি-উপদ্রবে আমি টিখতে পারি না। এটাও একটা বড় কারণ বড় কোনো টেখা আজকাল না লেখার পেছনে। এখন কেবল ফেসবুকের স্ট্যাটাস আপডেট লিখি। জীবন আমায় যখন যেটুকু সুযোগ দেয়; একজন তাঁতের কাজ-না-জানা মদন তাঁতিকে।)

    কিন্তু এই বইয়ের ব্যাপারটা একটু হলেও আলাদা। নবারুণ ভট্টাচার্য-র একটি লেখায় বইটির উল্লেখ পেয়েছিলাম। এবং পড়াশোনার ব্যাপারে নবারুণকে কিঞ্চিৎ সমীহ করে চলি। তখন থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম, বইটা সুযোগ করে পড়ে ফেলবো।আর ফ্লিপকার্ট ইদানিং বহুত খচ্চর হয়ে উঠলেও, তার পাছায় লাথি কষানোর একাধিক কারণ থাকা সত্বেও সে ছাড়া আর কে ই-বা ক্যাশ অন ডেলিভারিতে রিডিং লোলিটা বাড়ির দোরগোড়ায় এসে দিয়ে যাচ্ছে ! (ফ্লিপকার্টের পেজোমিঃ বইয়ের পাতা ছেঁড়া - Emperor of Maladies, প্রথম পঞ্চাশ পাতা উল্টেপাল্টে সাজানো, একটি আদর্শ পোস্ট মডার্ন বই যেমন হওয়া উচি ৎ- Reading Lolita, বই একেবারেই না পাঠানো - My Lobotomy ইত্যাদি; এসবকে আপনি তেতো হাসি সহ তেতো অ্যালিগরি-র মত নিতে পারেন, কালো কফি খেতে খেতে; কেননা স্টোয়িক না হলে অথবা তেতো হাসি হাসতে না শিখলে বাঙালী তো কবেই মরে ফৌত হয়ে যেত - যেমন ধরুন ম্যালাডিজ-এর প্রথম কিছু পাতাকে কুরে কুরে খেয়ে গেছে একটি টেন্যাশাস কাঁকড়া, যার নাম ক্যান্সার, এতদ্বারা সে তার দাঁড়ার ছাপ অথবা শীলমোহর রেখে গেছে। অথবা লোবোটমির পরে আর কী-ই বা হাতের মুঠোয় পড়ে থাকে, অনর্গল শূন্য ছাড়া! তবে গোল হচ্ছে এই যে হাজার ইয়ে সত্বেও রিডিং লোলিটা-কে একটি পোস্টমর্ডার্ন ইয়ে বলে ধরে নেওয়া শক্ত, এই আর কি ! তখন ফ্লিপকার্টের পাছায় কষে একটি লাথি মারতে ইচ্ছে করে, পাশের বাড়ির প্যাসিফিস্ট স্টোয়িসিজম এসে সোনাটা-মনাটা বলেও বাঙালের রাগ কমাতে পারে না।)
    কাজেই বইটা যোগাড় হয়ে যায়। দুটো ছোট ছোট বই শেষ করে শুরুও করে দিই পড়া। আর তেমন সহজপাঠ্য না হলেও আমার রিডিং স্প্রি-র গতিজাড্যের ঠেলায় বই নিজেই গড়গড়িয়ে নিজেকে পড়তে শুরু করে দেয়। মনে হয় বইটি সবাইকে পড়ানো জরুরি। কেননা সময় ক্রমেই ইতর হয়ে আসছে ও সম্ভবতঃ আরো হবে। এবং বটমহীন এই ইতরের দিকে যত চেয়ে থাকবেন, সেও তত আপনার দিকে চেয়ে থাকবে, (নীটশে, ক্ষমা করবেন!) কাজেই সে প্রস্তুতিটি থাকা দরকার। সেই কারণেই এই বই পড়া জরুরি, একটি দম বন্ধ করা টোট্যালিটেরিয়ান রেজিমের ঘেমো মুঠো আর নখের তলায় চাপা পড়ে থাকতে থাকতে আপনি কিভাবে নিজের ফুসফুসের সমস্ত হাওয়া দিয়ে হেসে অথবা চীৎকার করে উঠবেন সেকথা জানার জন্য জরুরি। দৈত্যর সঙ্গে লড়তে লড়তে আপনি নিজে দৈত্য হয়ে উঠবেন কি উঠবেন না, সিদ্ধান্ত আপনার; কিন্তু সেই সম্ভাবনা, সেই যে আপনার নিজেরও দৈত্য হয়ে উঠবার সম্ভাবনার কথা, সেটি জানবার জন্য বইটি পড়া জরুরি। এ কোনো জেন্ডার স্টাডিসংক্রান্ত বই নয়, মানবীবিদ্যার ছাপমারা বই নয় (মানে মারতেই পারেন, আমি তো ভালো জানি না!), আমার কাছে এই বইটি রিপ্রেসিভ রেজিমের প্রান্তে ঘুরেফিরে বেড়ানো প্রান্তিক মানুষজনেদের বই - সে মেয়ে হোক, অথবা ছেলে। তবে স্বীকার করে নেওয়া ভালো, প্রান্তিক বলতে আর্থিক অর্থে প্রান্তিক যদি বোঝেন তা হলে হবে না - এই বইয়ের ঘোরাফেরা একজন মধ্য-উচ্চমধ্য ইন্টেলেকচুয়াল নারীর পায়ে পায়ে সেই সমাজের মধ্যে ঘোরা, আমাদের গণতন্ত্রের অর্থে যাদের আমরা প্রান্তিক বলবো না এখনো। কিন্তু ইসলামিক বিপ্লব-পরবর্তী ইরানের কথা আলাদা।

    লিখতে বসবার আগে অনেক মনে হয়েছে, এই বইটা নিয়ে লেখা আমার পক্ষে উচিৎ হবে না, কেননা আমি তো, যাকে বলে - don't know any better; আমি নবোকভ পড়িনি, হেনরি জেমস পড়িনি, গ্রেট গ্যাটসবি পড়িনি, ইন ফ্যাক্ট ফিটজেরাল্ড কিছুই পড়িনি, জেন অস্টেন পর্যন্ত না - আমি কি করে এই বই নিয়ে লিখবো। এর পাতায় পাতায় সেই সব মৃত লেখকরা গরম গরম শ্বাস ফেলছেন, ঘাড়ের ওপর ঝুঁকে রয়েছেন যখন আমি পাতা ওল্টাচ্ছি। আর এখন আমার এঁদের পড়বার এমনকি ইচ্ছে অবধি নেই, জীবিত চেনা মানুষজনকে বাদ দিয়ে কেন আর দুশো বছর আগেকার লেখা পড়বো! না, কোনো আদর্শগত আপত্তি নেই (কিম্বা হয়তো আছে, আমি জানি না), কিন্তু সময় অল্প, বইয়ের সমুদ্র অনন্ত।

    আদর্শের কথাটা সেই উঠেই পড়ল যখন। বইটা একারণেও একবার পড়ে ফেলা জরুরি। কেননা এ আপনার হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলাবে না, আপনি যদি বামপন্থী হন; হার্ডলাইনার হলে তো কথাই নেই। অনেকবার লেখকের সঙ্গে ঝগড়া করে তবে আপনাকে এগোতে হবে।এই ঝগড়াটা করবার জন্যেও পড়ুন; অনেক কমপ্লাসেন্ট নিজের রংয়ে রং মেলানো বইয়ের চেয়ে একে বেশী প্রেফারেন্স দিন। তক্কো করুন, তক্কো করা প্র্যাকটিস করুন; যেটা আমার একদম হয়ে ওঠে না। (আপনারা অবশ্য করেই থাকেন নিয়মিত। সাধে কি গুরুতে কম আসি !)

    বিঃ দ্র ঃ এই পোস্টটাকে স্বচ্ছন্দে ইগনোর করতে পারেন। নিজেকে নিয়ে ভ্যানতারা ছাড়া এর আর দু-পয়সাও দাম নেই। চাইলেই এর পরের আসল পোস্টে ঢুকে পড়তে পারেন। আর হ্যাঁ, বেশ অনিয়মিত হবে কিন্তু টেখাটা। যখন যেমন সময়-সুযোগ ও মুড হবে, টিখবো। কেননা, এই লাইন লেখা অবধি এমন কোনো খবর পাইনি যে গুরুর কেউ আমার দুঃখ বুঝে আমাকে প্রতিপালনের ভার নিয়েছেন।
  • অরিন্দম | 69.93.241.180 | ১৭ আগস্ট ২০১৪ ২০:৫৪649541
  • এ লেখা(টেখা নয়) স্ক্রোল করে যাওয়ার শক্তি নেই। "সব চরিত্র কাল্পনিক" সিনেমা না দেখে শুধু চিত্র সমালোচনা পড়ে যেরকম মুগ্ধ হয়েছিলাম এবারও বইটি না পড়ে শুধু পুস্তক সমালোচনা পড়েই সেরকম মুগ্ধ হব। অনুমান সত্যি হবে।
    লেখো I, আরও লেখো...
  • kumu | 52.104.34.150 | ১৭ আগস্ট ২০১৪ ২২:১৯649552
  • কেবল ইন্দোকে পালন কর্লেই হবে?
  • de | 125.118.212.106 | ১৭ আগস্ট ২০১৪ ২২:৪৫649563
  • চলুক, চলুক! সিদিন ক্রসওয়ার্ডে কিনতে গিয়েও কিনিনি - এবার কিনে ফেলে পড়বো।
  • nina | 78.37.233.36 | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ০৮:৩৬649574
  • আহা ! মাঝে মাঝে তব দেখা পাই---------
  • শিবাংশু | ১৮ আগস্ট ২০১৪ ১০:৪০649577
  • শান্ত হও হরিশাল,

    শুরুর আগেই এতো অস্থিরতা কেন ? :-)
  • h | 213.99.211.133 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ১২:৩২649578
  • কি রে, লেখ?
  • I | 24.99.60.143 | ২১ আগস্ট ২০১৪ ২০:১৬649579
  • বইটির লেখক আজার নাফিসি'র জন্ম ১৯৫৫ সালে, ইরানের এক সম্ভ্রান্ত উচ্চ(?মধ্য)বিত্ত পরিবারে। সাংস্কৃতিক অর্থে সম্ভ্রান্ত, নাফিসি বোঝাতে চান। তাঁর (অথবা তাঁর মায়ের) ভাষায়-আটশো বছর অর্থাৎ চোদ্দ জেনারেশন ধরে নাফিসিরা সাহিত্য আর বিজ্ঞানচর্চার জন্য বিখ্যাত। নাফিসি-পুরুষদের বলা হত হাকিম (পারসীতে পণ্ডিত)। বিশ শতকে নাফিসি মেয়েরা ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ে দাপিয়ে পড়িয়ে বেড়িয়েছেন, যখন ইরানে মেয়েরা বাইরে বেরোতে ভয় পেত। লেখকের এক কাকা সঈদ নাফিসি ইরানের বিখ্যাত গদ্যকার ও কবি; আজার অবশ্য তাঁর নাম উল্লেখ করেন নি, বরং অন্যত্র তাঁর এইসব ইলাস্ট্রিয়াস আত্মীয়দের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার আকাঙ্খার কথা জানিয়েছেন। বলেছেন রাজনীতির সঙ্গে তাঁদের পরিবারের ক্ষীণ সম্পর্কের কথা। তাঁর বাবা যখন তেহরানের মেয়র হন (অরাজনীতির মানুষ, বিদ্যাচর্চার মানুষ কীভাবে মেয়র হলেন, সেকথা জানান নি), তাঁরা কতখানি লজ্জিত হয়েছিলেন, সেকথা বলতে ভোলেন নি। তাঁর কাকারা তখন ইউনিভার্সিটির ছাত্র, তাঁরা তাঁদের মেয়র দাদার পরিচয় অবধি দিতে চাইতেন না। পরে যখন বাবা জেলে যান (কেন গেলেন, সে কি শাহ-জমানার বিরোধিতার জন্য, নাকি ইরানের বিপ্লবের বিরোধিতার কারণে সে কথাও বলেন নি আজার), তখন বরং - আজার বলছেন - তাঁরা তাঁদের বাবার জন্য গর্ব বোধ করতেন অনেক বেশী।
    প্রাথমিক পড়াশোনা ইরানে সাঙ্গ করার পর তেরো বছর বয়সে আজারকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যুক্তরাজ্যে; সেখান থেকে সুইট্জারল্যান্ড ও অবশেষে আমেরিকা। ২৪ বছর বয়সে আজার নাফিসি দেশে ফিরে আসেন। তখন সদ্য ইরানের বিপ্লবের পালা শেষ হয়েছে; শাহ গদিচ্যুত, পলাতক। কিন্তু নতুন ইরান তৈরী হয়ে উঠতে তখনো বাকি রয়েছে। আয়াতোল্লা খোমেইনি প্রবল প্রতাপাণ্বিত, কিন্তু একচ্ছত্র নন; বিভিন্ন রংয়ের বামপন্থীরা রয়েছেন, লিবারেল মধ্যপন্থীরা রয়েছেন, তাঁদের নিত্য সংঘাতের মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে চেহারা নিচ্ছে ইরান। সুস্থিতি আর শান্তি দূর অস্ত। এমন এক টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে আজার নাফিসি তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে যোগ দেন। খুব বেশীদিন অবশ্য সেখানে তিনি পড়াতে পারেন নি। খোমেইনির জমানা শিগগিরই ইরানে জাঁকিয়ে বসবে; তাদের প্রথম লক্ষ্য যদি হয় রাজতন্ত্রীরা, দ্বিতীয় লক্ষ্য অবশ্যই মেয়েরা। নিত্যনতুন ইসলামিক বিধিনিষেধ চাপিয়ে মেয়েদের স্বাধীনতা হরণ করা চলতে থাকবে। বোরখা পরা বাধ্যতামূলক করা হলে নাফিসি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোরখা পরে আসতে অস্বীকার করেন, ফলতঃ তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। বোরখা পরে কোনোদিনই শিক্ষাঙ্গনে ঢুকবেন না বলে তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন; সে প্রতিজ্ঞা তিনি অবশ্য রাখতে পারেন নি। এক প্রভাবশালী বিদুষী ও বুদ্ধিমতী মহিলার (মিসেস রেজভান-নাম সম্ভবতঃ পরিবর্তিত) পিড়াপিড়িতে নিমরাজী আজার ১৯৮১ সালে আলামে তাবাতবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগে যোগ দেন। বোরখা পরেই ক্লাস নিতে যেতেন (" আপনি কি বাড়ির বাইরে অন্যত্র - দোকানে, রেস্তোরাঁয় - বোরখা পরে চলাফেরা করেন না? তবে পড়াতে আসবেন না কেন? এসে দেখুন, অবস্থা পাল্টাচ্ছে; এই ছেলেমেয়েগুলোর মাথায় কিছু নেই, এদের মাথায় ঠিকঠাক জিনিষ ঢোকানো দরকার, আপনাকে দরকার " - মিসেস রেজভানের যুক্তি; আজারকে টলিয়ে দেয়।)

    কিন্তু সেখানেও টেনেটুনে ছ'বছর। অবস্থা আরো ঘোরালো হয়ে উঠলে ১৯৮৭ সালে আজার পদত্যাগ করেন। যদিও পড়ানোর ভুত তাঁকে কখনোই ছেড়ে যাবে না। ১৯৯৫ সালে নিজের বাড়িতে তিনি একটি বুক ক্লাবের আয়োজন করেন সম্পূর্ণ মহিলাদের জন্য, তাঁর সাতজন প্রাক্তন ছাত্রীকে নিয়ে। দু বছর পরে ১৯৯৭ সালে আজার নাফিসি পাকাপাকিভাবে আমেরিকা চলে গেলে বুক ক্লাবটি উঠে যায়।

    এই বই সেইসব পড়াশোনার কথা, বিপ্লবের মধ্য দিয়ে চলা একটি দেশের ভাঙা ও গড়ার কথা, চূড়ান্ত পুরুষতন্ত্রী মৌলবাদী দেশের মেয়েদের কথা, ইরাক-ইরান যুদ্ধের ধ্বংস আর প্রতিদিন গোলাবারুদের শব্দে জেগে ওঠার কথা নিয়ে লেখা। বিপ্লব কেমন করে নিজের সন্তানকে চিবিয়ে খায়, কেমন করে বশ মানতে না চাওয়া মেয়েদের বস্তার মধ্যে পুরে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হয়, তারই মধ্যে কেমন করে যে যার নিজের প্রতিবাদ রেখে যায়, ব্যক্তিগত ও সংঘমূলক - তার কথা বলে এই বই। সাহিত্যপাঠের কথা বলে, সাহিত্য পড়াই ইরানের মেয়েদের একরকম প্রতিবাদ; মেয়েদের আনন্দ করা'র কথা বলে, আনন্দ করা মেয়েদের সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের ভাষা ইরানে, কেননা সেই মৃত্যু উপত্যকা শাসন করে যে গোমড়ামুখো রাজা, আনন্দ-হাসি-উচ্ছলতায় তার অঙ্গ জ্বলে ও গলে যায়, শিশুদের কার্টুনের মত।
  • I | 24.99.221.222 | ২২ আগস্ট ২০১৪ ০০:০৩649520
  • বইটি চারটি অংশে ভাগ করা-লোলিটা, গ্যাটসবি, জেমস এবং অস্টেন। এই অংশগুলি সময়ক্রম অনুযায়ী সাজানো নয় এবং এদের প্রত্যেকের নামকরণের পেছনে আজারের নিজস্ব ভাবনা কাজ করেছে। ক্রোনোলজিক্যালি "গ্যাটসবি" অংশটি শুরুতে আসার কথা, যখন আমেরিকা-ফেরত তরুণী আজার বিপ্লব-পরবর্তী ইরানে ফিরে আসেন। গ্যাটসবি'র আমেরিকান ড্রিমের মতই এই অংশে আজার এবং তাঁর অজস্র সহনাগরিকের ইরানিয়ান ড্রিমের কথা লেখা হয়েছে; ইরানীয় স্বপ্নের নির্মাণ ও তার চৌচির হয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার কথা।

    গ্যাটসবি'র পরেই আসে "জেমস'',মার্কিন সাহিত্যিক হেনরি জেমসের প্রসঙ্গ এখানে ঘুরেফিরে আসবে। জেমস অংশটি জেগে ওঠে ইরাক-ইরান যুদ্ধের খবর নিয়ে। হঠাৎ করে চাপিয়ে দেওয়া এই যুদ্ধ, ১৯৮০ সালের ২৩শে নভেম্বর ঘোষিত হয়। আজার সপরিবারে ক্যাস্পিয়ান সাগরতীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন, গাড়িতে ফেরার পথে রেডিওতে যুদ্ধের খবর পান। শুরু হয় অজস্র নিদ্রাহীন রাত, দুঃস্বপ্নের রাত, এয়ার রেইড, রেইড অ্যালার্ম, গোলাগুলি আর ঘরবাড়ি ধ্বসে পড়বার আওয়াজ; আর জীবন কিভাবে এর মধ্যেও চলতে থাকে, এমন কি অভ্যস্ত হয়ে ওঠে তার কথা বলেন আজার। বলেন হেনরি জেমসের কথা, একজন আপাদমস্তক "রাজনীতিহীন'' মানুষ কিভাবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বীভৎসতার মধ্যে যুদ্ধবিরোধী রাজনীতিতেই তাঁর রেফিউজ খুঁজে পান, তার কথা।

    সময়ক্রম মানলে এর পরে আসে লোলিটা অংশটি, বই শুরু হচ্ছে যে অংশটি দিয়ে। আজার যেন এই সময়ক্রম গুলিয়ে দিয়ে কিঞ্চিৎ মজা পান, পাঠকের পরীক্ষা নেন, বেছে নেন তাঁর বাঞ্ছিত পাঠককে, যে এইসব নানাবিধ ছড়ানো ছিটোনো বাধা পেরিয়ে বইটি পড়বে, এই একটি বই পড়তে গেলে যাকে পড়তে হবে নবোক্ভ (অন্ততপক্ষে লোলিটা), জেন অস্টেন, হেনরি জেমস ও ফিটজেরাল্ড। এই অংশটি ১৯৮৭-র পরবর্তী সময়ের কথা, ইন ফ্যাক্ট ১৯৯৫-পরবর্তী সময়ের মেমোয়ার; আজার তাবাতবাই ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দেন '৮৭তে এবং মেয়েদের নিয়ে বুক ক্লাব শুরু করেন ৯৫-তে। এর মূল থিম অপ্রেশন; লোলিটা উপন্যাসের মাঝবয়সী প্রফেসর হাম্বার্ট হাম্বার্ট যেভাবে কিশোরী লোলিটাকে দখলে রাখেন , তার সঙ্গে লেখক মিল খোঁজেন ইসলামিক বিপ্লব পরবর্তী ইরানের। হাম্বার্টের মতই মৌলবাদী রাষ্ট্র তার নিজস্ব স্বপ্নকে চাপিয়ে দেয় ইরানের সাধারণ মানুষজনের ওপর, বেশী করে ইরানের মেয়েদের ওপর; প্রত্যেক নাগরিকের জীবন যেন লোল রাষ্ট্রের মৌলবাদী কল্পনা আর বাসনা দিয়ে তৈরী।

    বইয়ের চতুর্থ তথা শেষ অংশটি "অস্টেন"; সময়ের হিসেবেও এটি সর্বশেষ অধ্যায়। এবার বুক ক্লাব শেষ হয়ে আসছে, আজার সিরিয়াসলি আমেরিকা যাবার কথা ভাবছেন। বুক ক্লাবে মেয়েরা বিয়ে, যৌনতা, নারী-পুরুষ সম্পর্কের কথা বলে, পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলে, জেন অস্টেনের প্রাইড অ্যাণ্ড প্রেজুডিসের চরিত্ররা যেন। আজার ও তাঁর মেয়েদের মনে পড়ে যায়, একটা সময় তাঁরা "ডিয়ার জেন সোসাইটি" খোলবার কথা ভেবেছিলেন। ভাবনা অবশ্য ভাবনার স্তরেই থেকে গিয়েছিল। কিন্তু আজারের আমেরিকা যাবার ভাবনা সত্যি হয়; বুক ক্লাবের কিছু মেয়েও আমেরিকা-কানাডা-অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। তাঁদের শেষ সাক্ষাৎ হয় একটি কাফেটেরিয়াতে। টার্কিশ কফি শেষ হলে বুক ক্লাবের মন্না আজারের কাপ হাতে নিয়ে ভবিষ্যদবাণী করে (কফি -ফরচুন টেলিং) ঃ "আমি একটা মুরগীর মত বড়সড় পাখী দেখতে পাচ্ছি; তার মানে সুখবর... কিন্তু আপনি নিজে খুব উত্তেজিত। একটা রাস্তা, উজ্জ্বল রাস্তা। আপনি প্রথম পা রাখছেন। একই সঙ্গে একশোটা জিনিষ নিয়ে ভাবছেন। একটা রাস্তা অন্ধকার, বন্ধ। অন্যটা খোলা, আলোয় ভরা। যে কোনো রাস্তাতেই যেতে পারেন, আপনার পছন্দ। একটা চাবি দেখছি; একটা সমস্যার সমাধান হবে। পয়সাকড়ি দেখতে পাচ্ছি না। একটা ছোট জাহাজ দেখছি, এখনো বন্দরে রয়েছে।
    এখনো সমুদ্রে ভাসে নি।"
  • I | 24.96.231.252 | ২৪ আগস্ট ২০১৪ ০০:৫২649521
  • ইরানের বিপ্লব একটি অসম্ভব গোলমেলে ব্যাপার। অজস্র বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক /ধর্মীয় দল/সম্প্রদায় একটি সিঙ্গল অ্যাজেণ্ডা নিয়ে কিভাবে এক প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়াতে পারে, সেটা দেখতে হলে ইরানের বিপ্লবকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে। একদিকে বামপন্থী তুদে পার্টি(এরা গণ আন্দোলনে বিশ্বাসী) , অতি বাম ফিদায়েঁ গেরিলা কিম্বা মার্ক্সিস্ট ইসলামিস্ট মুজাহিদিন গেরিলা, অন্যদিকে আয়াতোল্লা খোমেইনি'র নেতৃত্বে মৌলবাদী শিয়াইট ক্লারিক, মাঝখানে কিছু লিবার‌্যাল সেকুলার গণতন্ত্রী ( ন্যাশনাল ফ্রন্ট কিম্বা ফ্রিডম মুভমেন্ট অফ ইরান); এরই মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে "মার্কসবাদ" , "থার্ড ওয়ার্ল্ডিজম", ইসলামের বিভিন্ন অনুপাতের ককটেল-আলি শরিয়তি'র লিবারেশন থিওলজি(রেড শিয়াইজম), আয়াতোল্লা তালেগানি'র বামপন্থার গোলমরিচ ছড়ানো ইসলাম-একটি অদ্ভুত রামধনু টেরেইন যাকে বলে, তার একপ্রান্ত গাঢ় লাল যদি হয় তো অন্যপ্রান্ত শিয়াইট কৃষ্ণবর্ণ। এই বহুবর্ণ যোদ্ধৃসমাবেশের একটিই সাধারণ শত্রু - সে হল রেজা শাহ পহ্ল্ভী'র সরকার ও তার পৃষ্ঠপোষক মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ।

    বিপ্লবের শুরুতে আন্দোলনের অভিমুখ কিছুটা হলেও ঝুঁকে ছিল বামপন্থীদের দিকেই। সেখানে থেকে কেমন করে ধূর্ত খোমেইনি বিপ্লবকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেলেন, সেটা বিস্ময়ের। সম্ভবতঃ বামপন্থীরা চেয়েছিলেন, শাহ জমানার বিরুদ্ধে আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ, হয়তো তাঁরা খোমেইনিকে আন্ডার এস্টিমেটই করেছিলেন, খোমেইনির গণমোহিনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বিপ্লব সফল করে তারপর ক্ষমতার রাশ নিজেদের হাতে ধরে রাখা যাবে, এমনটা ভেবেছিলেন; কেননা মোল্লারা দেশশাসনের কী-ই বা বুঝবে,তারা থাকবে তাদের মসজিদে-মহল্লায়। অথবা লিবারেশন থিওলজির মায়া তাঁদের (অন্ততঃ কারো কারো) চোখে ঘোর লাগিয়ে থাকবে; সময়টা ১৯৭৯, আমেরিকা কিছুকাল আগেই ভিয়েতনাম যুদ্ধে মুখ পুড়িয়েছে (সায়গনের পতন মাত্র ৪ বছর আগেকার ঘটনা), তাকে আর ততটা পরাক্রমশালী, অপরাজেয় লাগছে না এবং সবচেয়ে বড় কথা বামপন্থীদের কাছে সাম্রাজ্যবাদের চেয়ে বড় শত্রু তখন আর কেউ নেই। এমন কি ইসলামিক মৌলবাদের বিপদও না।(নাফিসি'র বইয়ের ৯৭ পাতা থেকে একটু উদ্ধৃত করি ঃ On a mild day in October , I tried to make my way through a crowd that had gathered in front of our building around a well-known leftist professor ........She was telling the crowd that for the sake of independence, she was willing to wear the veil. She would wear the veil to fight US imperialists, to show them.... To show them what?"

    খোমেইনি অবশ্য সময়কে চিনতে ভুল করেন নি; ধূর্ত রাজনীতিবিদের মত সব দল-মতের বিরোধীদের নিজের ছাতার তলায় টেনে এনেছিলেন ( নাস্তিক মার্ক্সবাদীরা বাদে), শুরুতেই আস্তিনের তলায় লুকিয়ে রাখা মৌলবাদী তাস বের করে ফেলেন নি, ন্যুনতম সাধারণ দাবীদাওয়া ( শাহ জমানার পতন, আর্থিক অসাম্যের বিনাশ, দুর্নীতির অবসান এবং দেশের বিকাশ, ডেভেলপমেন্ট ! চেনা-চেনা লাগছে?) নিয়ে এগিয়ে গেছেন। তারপর ক্ষমতা হাতে পাওয়ার পর "ধর্মীয় নেতা-তাই-ক্ষমতা ছুঁই না"- এহেন শুচিবায়ুগ্রস্ততা একবারের জন্যও না দেখিয়ে পেছন থেকে রাষ্ট্রের রাশ ধরে রেখেছেন নিজের কড়া হাতে। এখন শুরু হবে একে একে বাকি সব শত্রুনিধন-প্রথমে রাজতন্ত্রীরা, তারপর কমিউনিস্ট/বামপন্থীরা, সেকুলার লিবারেলরা,বুদ্ধিজীবীরা, প্রতিবাদী মেয়েরা....লিস্ট শেষ হবার নয়।
  • I | 24.96.78.34 | ২৪ আগস্ট ২০১৪ ০১:৩৩649522
  • নাম -ওমিদ ঘারিব
    লিঙ্গ-পুরুষ
    গ্রেপ্তারের তারিখ-৯জুন, ১৯৮০
    গ্রেপ্তার স্থান-তেহরান
    কয়েদখানার অবস্থান- কসর কারাগার, তেহরান

    অপরাধ-পশ্চিমায়ন, পশ্চিমায়িত পরিবারে বেড়ে ওঠা;পড়াশোনার উদ্দেশ্যে ইউরোপে বড্ড বেশী দিন থাকা;উইনস্ট্ন সিগারেট খাওয়া; বামপন্থী মনোভাব

    দণ্ড-তিন বছরের জেল, মৃত্যু

    বিচার-সংক্রান্ত তথ্য-অভিযুক্তকে বন্ধ ঘরে বিচার করা হয়। ফ্রান্সে বন্ধুর কাছে পাঠানো অভিযুক্ত'র একটি চিঠি হস্তগত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হয়।১৯৮০ সালে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ১৯৮২-র ২রা ফেব্রুয়ারী তার বাবা-মা জানতে পারেন যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক তথ্য তার বাবা-মা'কে জানানো হয় নি ।
    (সূত্র - অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল)

    ----

    এই সেই সময় , যখন তেহরানে প্রতিদিন ছাত্ররা মিছিল করছে কারো না কারো মৃত্যুর দাবীতে। "আমেরিকাতে আমরা"-আজার বলছেন-" মিছিলে শ্লোগান দিতাম নিপাত যাক অমুক , নিপাত যাক তমুক-সেইসব মৃত্যুকামনা ছিল একান্তই প্রতীকী, বিমূর্ত; যেন আমাদের দাবীর অবাস্তবতা আমাদের চাগিয়ে দিত, আরো জোরে জোরে শ্লোগান দিতাম।কিন্তু এই ১৯৭৯-র তেহরানে এইসব মৃত্যুদাবী কত বাস্তব, কী ভয়ংকর প্রিসিশনের সঙ্গে এদের সত্যি করে তোলা হচ্ছে!"

    প্রতিদিন টিভি খুললেই, প্রত্যেক সকালে খবরের কাগজ খুললেই পুরনো কমরেডদের মুখ ভেসে ওঠে; কেউ নিহত, কেউ ক্ষমাপ্রার্থী-ইসলামের শত্রুতা করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী, বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাস রাখার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

    এই সেই সময় , যখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলির প্রতিবাদের উত্তরে আয়াতোল্লা খোমেইনি বলবেন-"ক্রিমিনালদের আবার বিচার কী? ক্রিমিনালদের বিচার মানবাধিকারের পরিপন্থী। মানবাধিকার বরং বলে, ওরা ক্রিমিনাল , (সেকথা) জানতে পারার সঙ্গে সঙ্গে ওদের খুন করে ফেলা উচিৎ ছিল।"
  • | ২৭ আগস্ট ২০১৪ ২২:৪৪649523
  • 'ক্রিমিনালদের আবার বিচার কী?' -
    এ তো আজকাল পথেঘাটে, ক্যাফেতে, গুরুতেও শুনি।

    লেখ না, থামলি কেন?
  • de | 69.185.236.53 | ২৮ আগস্ট ২০১৪ ১৬:৫৩649524
  • পড়ছি!
  • I | 24.96.102.106 | ৩০ আগস্ট ২০১৪ ২৩:২৭649525
  • ৪ঠা নভেম্বর , ১৯৭৯ সালে তেহরানের আমেরিকান দূতাবাস দখল করা হয়। দখলদার একদল ইরানী ছাত্র, যারা নিজেদের পরিচয় দেবে "মুসলিম স্টুডেন্ট ফলোয়ার্স অফ দ্য ইমাম'স লাইন" বলে। ৫২ জন মার্কিন কূটনীতিক ও সাধারণ নাগরিককে পণবন্দী করা হয়, আমেরিকায় আশ্রয় নেওয়া রেজা শাহ পহ্‌লভী ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের ইরানে ফেরত দেওয়ার দাবীতে। শুরু হয় সেই কুখ্যাত কূটনৈতিক সঙ্কট, যা চলবে লম্বা ৪৪৪ দিন। আজো ইরান-মার্কিন সম্পর্কের তিক্ততার ওপর যার কালো ছায়া ঘনিয়ে আছে বলে বিশ্বাস করা হয়। পণবন্দীদের মুক্ত করার সমস্তরকম মার্কিন সামরিক অভিযান ব্যর্থ হয়।যার জেরে একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট (জিমি কার্টার) আসন্ন নির্বাচনে পর্যুদস্ত হবেন। এবং ১৯৮০ সালে ইরাক-ইরান যুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুল্লামখুল্লা ইরাককে সমস্তরকম সহায়তা যুগিয়ে যাবে, কতকটা কাটা ঘায়ে জিভ চাটবার আহত উল্লাসে।

    সেই সব সময়ের কথা নাফিসি ডকুমেন্ট করে রেখেছেন তাঁর বইতে। মনে করিয়ে দিয়েছেন, মুসলিম সংগঠনগুলির মতই বামপন্থী মুজাহিদিন ও ফিদায়েঁ গেরিলারাও ঘটনাটিকে একবাক্যে সমর্থন করেন। মার্কিন দূতাবাসের নতুন নামকরণ হয় "নেস্ট অফ স্পাইজ"; নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরাও এই নামে শিগগির অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। ("ট্যাক্সি ড্রাইভাররা জিজ্ঞেস করলে আমরাও বলতাম-নেস্ট অফ স্পাইজ-এর কাছে নিয়ে চলুন"।) বাস ভর্তি করে প্রত্যন্ত সব গ্রাম থেকে মানুষজনকে নিয়ে আসা হচ্ছে মার্কিন দূতাবাসে। তাঁদের টাকাপয়সা-খাবারদাবার দেওয়া হবে, বিনিময়ে দিনভর চিৎকার করে যেতে হবে -"মার্গ বার আম্রিকা (আমেরিকা নিপাত যাক)"। এঁদের অনেকেই জানেন না আমেরিকা কোথায় , আমেরিকা কী; অনেকেই বিশ্বাস করতেন তাঁদের সত্যিকারের আমেরিকাতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। লাউডস্পিকারে গমগম করছে -Neither East nor West , we want Islamic Republic( ইস্ট অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন,ধর্মদ্রোহী নাস্তিকের দেশ, খোমেইনি যাকে বলতেন Lesser Satan।)

    জীবনের একটা লম্বা সময় আমেরিকায় কাটিয়ে আসা নাফিসি'র পক্ষে এইসব ঘটনাপ্রবাহ হজম করা খুব সহজ হয় নি। তাঁর চেনা আমেরিকা, প্রিয় আমেরিকা যেন খুব দ্রুত মুছে যাচ্ছে জীবন থেকে। আর অচেনা আমেরিকা, রহস্যময় আমেরিকার ছায়া ক্রমেই দীর্ঘ হয়ে উঠছে ইরানের ওপরে; আমেরিকার মিথ গিলে নিচ্ছে ইরানের দ্রোহী ও একইকালে নিষিদ্ধফলউৎসুক মানুষজনকে; হ্যাঁ, আমেরিকার কট্টর বিরোধীদেরকেও। কেননা, নীৎসে'র সেই বিখ্যাত উক্তি,নাফিসি অন্য এক সময় সম্পূর্ণ উল্টো প্রসঙ্গে যা স্মরণ করবেন-when you gaze long into an abyss the abyss also gazes into you.
  • নী_পা | 113.10.116.246 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ০০:৫৮649526
  • অপেক্ষা করি , I-এর লেখা পড়ার জন্য্ ....

    ------- I পাত্তা দিলে আরও পড়তে পারব ,
    পাত্তা না দিলে , আরও পড়তে পারব না.....

    এ'টুকুুই জানাবার I-কে
  • I | 24.96.184.82 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ০১:৪৯649527
  • এই উলটপুরাণের সময়ে তেহরানের বুকের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছাত্রছাত্রীদের দ্য গ্রেট গ্যাটসবি'র মত একটি আপাদমস্তক আমেরিকান নভেল পড়িয়ে যাওয়া যে ততটা নির্ঝঞ্ঝাট ব্যাপার নয়, সেটা নাফিসি শিগগির টের পান।ইসলামিক ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে জনৈক মিঃ নিয়াজি উপন্যাসটি পড়ানো নিয়ে আপত্তি তোলেন। আজারের মাথায় পোকা নড়ে ওঠে-তিনি প্রস্তাব দেন, ছাত্রছাত্রীরা বরং একটি বিচারসভার আয়োজন করুক, তাতে উপন্যাসটির বিচার হোক; গোটা ইরান জুড়ে তো এখন বিচাররাজ, প্রতিদিন শত শত মানুষের বিচার হচ্ছে, এবার বরং একটি বইকে কাঠগড়ায় তোলা যাক। মিঃ নিয়াজি হন অভিযোগকারী উকিল, ছাত্রদের মধ্যে থেকে একজন বিচারক স্থির করা হয়, জারিননাম্নী এক ছাত্রী অভিযুক্ত বইটির পক্ষে সওয়াল করতে রাজী হন। অভিযুক্ত বইয়ের প্রতিনিধি হিসাবে কেউ দাঁড়াতে রাজী না হওয়ায় প্রোফেসর নাফিসিকেই গ্যাটসবি'র প্রতিনিধি হতে হয়। বাদবাকী ছাত্রছাত্রীরা জুরি'র রোল প্লে করবেন, ঠিক হয়।

    প্রত্যাশিতভাবেই মিঃ নিয়াজি বইটির বিরুদ্ধে অবক্ষয়ী মার্কিন/পশ্চিমি মূল্যবোধের বদগন্ধ ছড়ানোর অভিযোগ করেন। যে উপন্যাসের প্রোটাগোনিস্ট একজন জোচ্চোর,মিথ্যাবাদী, অসৎ উপায়ে ধন অর্জন করে, পরের স্ত্রী-র সঙ্গে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় , সেই উপন্যাস শয়তানের প্রচারপত্র ছাড়া আর কী হতে পারে! এই বই সেই আগ্রাসী সংস্কৃতির প্রতিনিধি , যা," আমাদের পবিত্র ইমাম" বলেছেন, আজ "আমাদের" সংস্কৃতিকে ধর্ষণ করতে উদ্যত।

    আজারকে যেন কিছুটা পক্ষপাতী লাগে এখানে, মিঃ নিয়াজিকে কিছুটা মন্দ আলোয় দেখান তিনি। মিঃ নিয়াজি উচ্চকিত, মিঃ নিয়াজি একঘেয়ে ও ক্লান্তিকর, একজায়গায়- একভাবে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর বিরক্তিকর বক্তৃতা পেশ করেন। বিপরীতে জারিন তাঁর মেধার দীপ্তিতে ঝলমল করেন, পেশাদার উকিলের মত খর, টানটান তাঁর সওয়াল, জুরিকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন তিনি। বিচারকের সাজানো ডায়াস ঘিরে তাঁর দৃপ্ত চলাফেরা, মিঃ নিয়াজি'র চারপাশে ঘুরে যুক্তিতে-প্রতিযুক্তিতে তাঁকে ফালাফালা করে দেন তিনি। তখনো, মনে রাখতে হবে, বোরখা ব্যতিক্রমহীন কঠোরভাবে ইরানী মেয়েদের মাথায় চেপে বসে নি।

    জারিন শুরু করেন এইভাবে- Our dear Prosecutor has committed the falacy of getting too close to the amusement park-ফিটজেরাল্ডকেই উদ্ধৃত করেন তিনি-He can no longer distinguish fiction from reality. একে একে উঠে আসতে থাকে সাহিত্যপাঠের , লিটারারি ক্রিটিসিজমের সবচেয়ে জরুরী সব প্রশ্ন। যে, একটি বইকে কী অর্থে ভালো বলবো আমরা? সে ভালো ভালো আদর্শের কথা বলে বলে? তার চরিত্রেরা সাধুসন্ত বলে? যে সাহিত্য সৌন্দর্যের কথা বলে, সে কি অবক্ষয়ী? বিপ্লবকালে কি প্রেমের কথা বলা নিষিদ্ধ?

    "মনে রাখবেন"- জারিন বলেন- "মাদাম বোভারি, ইউলিসিস, লেডী চ্যাটার্লি'জ লাভার, লোলিটা ঃ এদের সকলকেই কাঠগড়ায় উঠতে হয়েছিল। আর প্রত্যেকবারই জিতেছিল বই।"

    আর আমাদের মনে পড়ে যায় কাঙাল মালসাট বইটির শুরুতে লেখক কর্তৃক উদ্ধৃত মিখাইল বুলগাকভ " পাণ্ডুলিপিরা পুড়ে যায় না।" মনে পড়ে নবারুণ ভট্টাচার্য'রই লেখা অ্যাকোয়ারিয়াম বইটির একটি উদ্ধৃতি-" সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির মহা থিওরেটিসিয়ান মিখাইল সুসলভ Life and Fate উপন্যাসটির পাণ্ডুলিপি পড়ে লেখক ভ্যাসিলি গ্রসম্যানকে বলেছিলেন যে লেখাটা আগামী ২০০ বছরে ছাপা হবে না।... এরপর কী ঘটেছে তা সকলেই জানে। Life and Fate-ই জিতেছে। বরং কে মিখাইল সুসলভ সেটা জানতে হলে লুপ্ত প্রাণীবিষয়ক এনসাইক্লোপিডিয়া ঘাঁটতে হবে।" মনে পড়ে সমর সেন ও সরোজ দত্তের বাকযুদ্ধ, যার অন্তে কিছুটা আশ্চর্যজনক ভাবেই সমর সেন পিছু হটেন। মনে আসে, সাহিত্যপাঠের মান নিয়ে রবীন্দ্রনাথের সুবিধাবাদী অবস্থানের কথা। ঘরে বাইরে যখন দফায় দফায় প্রকাশিত হচ্ছে , তখন জনৈক পাঠিকার অভিযোগের উত্তরে ( বিমলা চরিত্রটি সনাতন ভারতীয় নারীত্বের অপমান ইত্যাদি) রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের সত্যের কথা মনে করিয়ে দেওয়া-সাহিত্য কতখানি সাহিত্য হিসেবে উৎরেছে, তার মানদণ্ডেই সাহিত্যের বিচার সম্ভব, তার চরিত্ররা কী বলে বা করে, তার ভিত্তিতে নয়। আবার সেই একই রবীন্দ্রনাথ আধুনিকদের বিচার করতে গিয়ে (মুখ্য অভিযোগ যদ্দুর মনে পড়ছে এলিয়টের বিরুদ্ধে) বলেন, স্বদেশের ফুলবাগান মথিত করে নিজের সাহিত্যিক আগাছার চাষ না-ই বা করলেম ( এই জাতীয় কিছু, সঠিক উদ্ধৃতি দেওয়া গেল না- হাতের কাছে রচনাবলী নেই)। মনে পড়ে দস্তয়েভস্কি নিয়ে বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসকদের বিপত্তি। প্রথমে ঠিক হয় তাঁকে পড়তে হবে প্রতিক্রিয়াশীল বুর্জোয়া মনোভাবের চিহ্ন হিসেবে, পরবর্তীতে (স্তালিনের মৃত্যুর পরে, বিস্তালিনিকরণ তখনো শুরু হয় নি) "সামাজিক সংকটকালে শিল্পীমনের দ্বন্দ্বময় অনুভুতির প্রকাশ" হিসেবে (কিন্তু সীজারকে তার প্রাপ্য দিতে হলে বলতেই হবে, ফুটনোট যা-ই থাকুক, কমিউনিস্ট রাশায় দস্তয়েভস্কি-পাঠ কখনোই নিষিদ্ধ অন্ততঃ হয় নি।)।
  • I | 24.99.204.9 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ০৯:০৩649528
  • একই শ্বাসে জারিনকে তুলে আনতে হয় সাহিত্যের মর‌্যালিটির প্রশ্ন ও তার উত্তর ( যদিও এই প্রশ্নটাই ইমমর‌্যাল লাগে আমার কাছে, কিন্তু যস্মিন দেশে যদাচার; বিপ্লবোত্তর ইরানের দমবন্ধ বাস্তবতার বাধ্যতা আমি মেনে নিই), অর্থাৎ খেলতে নামতে হয় ইসলামিক রিপাবলিকের ঠিক করে দেওয়া নিয়ম মেনে, তাদেরই খেলার ময়দানে। দিদেরোকে উদ্ধৃত করে জারিন বলেন ঃ To me the freedom of (the author's ) style is almost the guarantee of the purity of his morals. বলেন, সাহিত্যকে চেনা সামাজিক মর‌্যালিটি দিয়ে মাপতে যাওয়া ভুল। একটি উপন্যাস তখনই মর‌্যাল , যখন সে আমাদের স্থিতিজাড্যের গোড়া ধরে টান মারে, আমাদের দাঁড় করিয়ে দেয় বহুদিনের লালিত বিশ্বাসের স্থিরতার বিরুদ্ধে। গ্যাটসবি উপন্যাসের চরিত্রেরা অর্থগৃধ্নু, উপন্যাসটি জুড়ে লেখক অবক্ষয়ী ধনীদের জয় গেয়েছেন-এর উত্তরে জারিন বলেন, হ্যাঁ, এই উপন্যাস ধনীদের কথা বলে। কিন্তু কিভাবে? সে বলে তাদের "পরোয়া করি না" মনোভাবের কথা, মানুষের প্রতি তাদের সহানুভূতির অভাবের কথা। উপন্যাসটিকে নিজের বক্তব্য পেশ করতে বলা হলে নাফিসি (গ্যাটসবি'র প্রতিনিধি) উঠে বলেন-সহানুভূতির এই অভাব একটি পরিচিত থিম, এই থিম ঘুরেফিরে আসে অনেক মহৎ সাহিত্যে; ভালো সাহিত্যের বাস্তবতা সাদা-কালো'র বাস্তবতা নয়, সে বহুবর্ণ, ধূসর শেডগুলিকে সে সযত্নে বাঁচিয়ে রাখে। এক অর্থে সে গণতান্ত্রিক-গণতন্ত্র প্রচার করে বলে নয়, জন্মগতভাবেই সে গণতান্ত্রিক, তার ভেতরে বহুস্বর কথা বলে, সকলেরই নিঃশ্বাস নেবার পরিসর রয়েছে সেখানে।
    যে কথাগুলো আজার সেদিন বলেন নি, তার কিছু তিনি বলেন পরবর্তী কোনো এক ক্লাসে- যে, উপন্যাসটির মূল বিষয় ব্যাভিচার নয়, অর্থলোভ নয়-এটি আসলে একটি স্বপ্নে -পাওয়া মানুষ আর তার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার গল্প। সম্পদ অর্জন গ্যাটসবি'র লক্ষ্য নয়, সেটি তার পথের পাথেয় মাত্র। তার একমাত্র উদ্দেশ্য তার স্বপ্নকে ছোঁয়া (ডেইজি'র মন পাওয়া)। কিন্তু সেই স্বপ্নের মধ্যে বসবাস তার পাওনা কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয়, গ্যাটসবি'র কল্পনা আর বাস্তবকে সে ঘুলিয়ে দেয়, যে "ইতর ধুলো" দিয়ে গ্যাটসবি তার পরিরাণীর দেশ গড়বে ভেবেছিল, তা তার মাথায় চেপে বসে, একসময় ছেয়ে দেয় নশ্বর মানুষের সর্বাঙ্গ। উপন্যাসটি স্বপ্নভঙ্গের বেদনার কথা বলে, স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হওয়ামাত্র কিভাবে দিনের কড়া রোদ্দুরে ভোরের শিশিরের মত শুকিয়ে যায় তার কথা বলে। এইখানেই ইরানের বাস্তবতার সঙ্গে ফিটজেরাল্ডের মিল-একটি স্বপ্ন এই বিপ্লবতাড়িত দেশেরও অবসেশন, তাকে সার্থক করবার জন্য কোনো অন্যায়ই যথেষ্ট অন্যায় নয়, কোনো মৃত্যুই নয় যথেষ্ট পরিমাণ মৃত্যু, এই এক ভয়ঙ্কর সুন্দর স্বপ্ন, যা কোনোদিনই বাস্তব হয়ে উঠবে না। থেকে যাবে কেবল শুকনো রক্তের দাগ।

    আর যে কথা আজার সেদিন বলে উঠতে পারেন নি, কখনোই বলতে পারবেন না ইসলামিক বিপ্লববদ্ধ দেশের ছাত্রছাত্রীদের- তা এক সৌন্দর্যের কথা, এক আহত সৌন্দর্য, স্বপ্নেরা ভেঙ্গে গেলে তাদের ভাঙা টুকরোরা, সেইসব স্বপ্নকণিকারা বিকেল অথবা সন্ধ্যার আকাশ রাঙিয়ে তোলে যে অপরূপ আলোয়; সত্যিমিথ্যায় তখন বড় একটা কিছু এসে যায় না, যতক্ষণ সেই যাদুআলো মেরুজ্যোতির মত জ্বালিয়ে রাখে আকাশ। সাহিত্যপাঠের একমাত্র মাপকাঠি, একটিই পুরস্কার-এই সৌন্দর্য। কিন্তু সৌন্দর্যের কথা বলা তখন পাপ। দেশে আদালত চলছে। ইসলামিক কোর্ট।
  • I | 24.99.204.9 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ০৯:১৭649529
  • (বাপ রে ! অনেক লিখে ফেলেছি।)
  • b | 24.139.196.6 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ০৯:১৯649531
  • আরো ল্যাখেন। নইলে বাড়ির সামনের রাস্তা দুর্দিনের বন্ধুর নামে করে দিয়ে আসবো।
  • I | 24.99.84.212 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ১৮:৩১649532
  • ছাত্রছাত্রীরা আজারকে আরেক তরুণ প্রফেসরের কথা বলে। ইনি একজন নামী ও বিতর্কিত ফিল্ম ও থিয়েটার ক্রিটিক এবং ছোট গল্প লেখক। এই কিছুদিন আগেও পড়িয়ে গেছেন তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াতেন ফ্যাকাল্টি অফ ফাইন আর্টসে- বিষয় ছিল নাটক ও ফিল্ম--গ্রীক থিয়েটার, শেক্সপীয়র, ইবসেন, টম স্টপার্ড। তাঁর ক্লাসের কোনো বাঁধাধরা সময়সীমা ছিল না, এক একটা ক্লাস পাঁচ-ছ ঘন্টা অবধিও চলত। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ছেলেমেয়েরা তাঁর ক্লাশ করতে আসত; বিশেষ করে ফিল্ম স্টাডিজে উৎসাহী লোকজন। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হত না, বাইরের লোকে পাঁচিল টপকে, নানান উপায়ে গার্ডকে ফাঁকি দিয়ে ক্লাসে আসত। প্রোফেসর আর-এর (এই নামেই শুরুতে তাঁকে ডেকেছেন আজার) ক্লাশ মানেই গিজগিজে ভীড়; ছেলেমেয়েরা অনেকেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লাস করে।

    এহেন মানুষ চল্লিশ পেরোনোর আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান। নিজেই চলে আসেন, কর্তৃপক্ষ তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়ার আগেই। ফ্যাকাল্টির নাটক বিভাগের বামপন্থী ছাত্র ও শিক্ষকেরা সেইসব উল্টোপাল্টা দিনে একটি কনভেনশন ডেকেছিল। তাঁদের মনে হচ্ছিল কোর্সের কিছু অংশ অতি-বুর্জোয়া, এদেরকে বাদ দিয়ে ঢোকাতে হবে বিপ্লবী চেতনা সম্পন্ন নাটক ও সাহিত্য। তুমুল তর্কবিতর্কের মধ্যে দাবী পেশ হল- শেক্সপীয়র, এস্কাইলাস, রেসিন বাদ দেওয়া হোক; ঢোকানো হোক ব্রেখট ও গোর্কি, ঢোকানো হোক মার্ক্স- এংগেলস।ফ্যাকাল্টির সকলেই কনভেনশন হলের প্ল্যাটফর্মে বসে, বাদে একজন। তিনি সেই তরুণ শিক্ষক, দাঁড়িয়ে আছেন দরজায় ঠেস দিয়ে।
    গণতন্ত্রকে সম্মান জানিয়ে সভাকে জিজ্ঞাসা করা হল-কেউ এই দাবীর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন কিনা। দরজার কাছ থেকে একটি শান্ত স্বর ভেসে এল-আমি করি। হলঘর জুড়ে থমথমে নীরবতা। তরুণ অধ্যাপক বললেন-তিনি যদ্দুর জানেন ও বোঝেন, কোনো রাজনৈতিক নেতা , কোনো বিপ্লবী হিরো রেসিনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নন। তিনি যা পড়াতে জানেন, তা হল রেসিন। ছাত্ররা যদি রেসিন পড়তে না চায়, তাঁর কিছু বলার নেই। যেদিন তাদের মনে হবে ইউনিভার্সিটি ঠিকঠাক ভাবে চালানো যাক, রেসিন ফিরিয়ে আনা যাক, সেদিন তিনিও ফিরে আসবেন। আপাততঃ, গণতন্ত্রকে সম্মান জানিয়ে, গুডবাই।

    সেদিনের পর থেকে আর কখনো তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান নি।

    এর বেশ কিছুকাল পরে আজার তাঁর সঙ্গে গিয়ে আলাপ করবেন; তাঁদের মধ্যে সাহিত্য-সমাজ-রাজনীতি নিয়ে মতবিনিময় চলতে থাকবে, জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আজার তাঁর শরণাপন্ন হবেন। বন্ধুত্বের সম্পর্ক, যার মধ্যে মিশে আছে কিছুটা গুরু-শিষ্য ভাব। আজার তাঁকে বাকি বইতে "মাই ম্যাজিশিয়ান'' বলে সম্বোধন করবেন।
  • কল্লোল | 111.63.218.186 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ২০:২১649533
  • মুগ্ধ হয়ে আছি। কাল দেখবো বইটা পাওয়া যায় কিন।
  • I | 24.96.103.190 | ৩১ আগস্ট ২০১৪ ২৩:০৪649534
  • ১৯৮০-র বসন্ত এল বিপদের গন্ধ নিয়ে। বিপ্লবের প্রথম বছর কেটেছে প্রাক্তন রাজকর্মচারীদের শাস্তি দিয়ে, বিরোধী দলগুলির গলা টিপে, বামপন্থী পত্রপত্রিকা নিষিদ্ধ করে; ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের (বিশেষ করে কুর্দদের) কুকুরতাড়া করে। এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পালা। শুরু হচ্ছে সাংস্কৃতিক বিপ্লব, ইরানীয় মডেল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে পশ্চিমী অবক্ষয়ী সংস্কৃতির হাত থেকে মুক্ত করতে হবে, তার জন্য কমিটি গঠন করা হল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হবে, শুরু হবে পার্জিং- অবাঞ্ছিত স্টাফ, ফ্যাকাল্টি , ছাত্রদের এবার বহিষ্কার করা হবে।

    কিন্তু অধিকাংশ ছাত্র-শিক্ষক তখনো তে-এঁটে, তারা ডিকট্যাট মানতে শেখেনি; মানুষ প্রবল প্রতিবাদ করে,এখানে-ওখানে সভা-সমাবেশ করে বেড়ায়, মিছিলে হাঁটে। আজার সেইসব মিছিলে পা মেলান-সভায় যান, কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট দল-মতের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করেন না। তাঁর মনে হয় , বামপন্থীরা ক্ষমতায় এলে তারাও এই একই কাজ করত।

    আন্দোলন ক্রমে রক্তক্ষয়ী, নিপীড়ণ উত্তরোত্তর হিংস্র হয়ে উঠতে থাকে। মিছিলগুলি শুরু হয় শহরের মাঝখান থেকে, সাধারনতঃ তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে। মিছিল যত এগোতে থাকে, মানুষের ভীড় তত বাড়ে। শহরের গরীব মহল্লায়-গলিগলতায় মিছিল এসে পৌঁছোলে "ওদের" দেখতে পাওয়া যায়, ওদের হাতে ছোরা- ছুরি-ডাণ্ডা, হিংস্রভাবে ওরা মিছিলের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়, আবার অন্য কোনো বিন্দুতে এসে জড়ো হয়। আবার শুরু হয় পথ-হাঁটা, আবার নতুন কোনো গলির মোড়ে ওরা তাড়া করে আসে। এইভাবে সারাদিন কেটে যায় ইঁদুর-বেড়াল খেলায়।

    একটি দিনের কথা বিশেষ করে আজারের মনে থেকে যায়।ইউনিভার্সিটির কিছুটা আগেই একদল তরুণ বিক্ষোভকারীর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় তাঁর। তাদের হাতে পোস্টার, তারা ক্যাম্পাসের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। এই ভীড়ের মধ্যে আজার দেখতে পান নাসরিনকে, তার হাতে একগোছা লিফলেট, সে হেঁটে যাচ্ছে সামনের সারিতে। না, নাসরিন তাঁর সরাসরি ছাত্রী নয়। মাহতাব নাসরিনকে নিয়ে আসে আজারের কাছে , গ্যাটসবি ট্রায়ালের দিন। নাসরিনের হয়ে সে অনুমতি চায় আজারের ক্লাশ অ্যাটেন্ড করবার। নাসরিন মাহতাবের প্রতিবেশী। নাসরিন সুন্দরী, নাসরিন লাজুক; প্রথম দর্শনে তাকে বারো-তেরো বছরের একটি কিশোরী মনে হয়। মাহতাব জানায় , নাসরিনের ইংরেজী এই ক্লাশের অনেকের চেয়ে ভালো; গ্যাটসবি ট্রায়াল হচ্ছে শুনে সে এতই উত্তেজিত যে বইটা কিনে পুরো পড়ে ফেলেছে। সেইদিনের পর থেকে নাসরিন নিয়মিত আজারের ক্লাশ করতে চায়। আজার তাকে অনুমতি দেন শর্তসাপেক্ষে-কোর্স শেষ হওয়ার পর তাকে গ্যাটসবি'র ওপর একটি পনেরো পাতা'র পেপার লিখে জমা দিতে হবে। বামপন্থী মাহতাব আজারকে জানায়, নাসরিন একটি মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু খুব "ইন্টারেস্টিং"। মাহতাব তাকে ঠিকঠাক করে তুলবে।

    সেই নাসরিন। এতদিনে সে মাহতাবের দলে এসে ভিড়েছে তাহলে! একটা গলির মুখে সে আর আরেকটি মেয়ে গলির ভেতরে ঢুকে যায়। আজারের মনে পড়ে যায়, নাসরিন তার কথা রাখেনি, গ্যাটসবির ওপর পেপার লিখে সে তাঁকে জমা দেয় নি। তাঁর জীবনে নাসরিন যেমন হঠাৎ এসেছিল, তেমনি হঠাৎ করেই মিলিয়ে গেল বুঝি। আর কোনোদিন তার সঙ্গে দেখা হবে কিনা, কে জানে !

    কিছুক্ষণ পরেই আজার দেখেন , তিনি ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় দলের সঙ্গে মিছিলে হাঁটতে শুরু করেছেন। ম্যাজিকের মত এরা কোথা থেকে এসে যেন জড়ো হয়েছে। হঠাৎ গুলির শব্দ শোনা যায়, কিন্তু কোত্থেকে গুলি চলছে বোঝা যায় না। সবাই দৌড়তে শুরু করে, আজারও। দোকানপাটগুলি ঝপাঝপ শাটার নামিয়ে বন্ধ হয়ে যায়, এরই মধ্যে একটা আধখোলা দোকানে আজার শেল্টার নেন। কাছেই একজন ক্যাসেট-বিক্রেতা তার ক্যাসেটের ঝাঁপি ফেলে রেখে পালিয়েছে; তার টেপ ডেক তখনো বাজছে-গায়ক বিষণ্ণ গলায় গাইছে তার বঁধুয়ার বিশ্বাসহননের গান।

    গোটা দিন একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মধ্যে কেটে যায়; স্থান-কাল গুলিয়ে যায় মাথার ভেতর। দফায় দফায় ডেমনস্ট্রেশন আর সিট -ইন; দফায় দফায় গুলি আর সরকারের ভাড়াটে গুণ্ডাদের ছুরি-ব্যাটন নিয়ে আক্রমণ। ইরানের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসের সবচেয়ে রক্তাক্ত দিনের সাক্ষী থাকেন আজার। এরই মধ্যে তাঁর দেখা হয়ে যায় পুরনো দিনের এক বন্ধুর সঙ্গে, গুলিগোলা-বোমা আর শ্লোগানের আওয়াজের মধ্যেই তাঁরা পুরনো দিনের গল্প জুড়ে দেন, দীর্ঘ দু দশক তাঁদের দেখা হয় নি। বন্ধুটি বলেন, সবাই এখন ইউনিভার্সিটির কাছের হাসপাতালের দিকে ছুটছে; সেখানেই মৃত ও আহত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

    কিভাবে সেই হাসপাতালের কাছে এসে পৌঁছন, আজারের মনে পড়ে না। শুধু মনে আসে, স্বপ্নের মধ্যে যেন তিনি হাঁটছেন, ঘোরের মধ্যে; আর স্বপ্নে যেমন হয়, কিছুতেই তিনি মূল বিল্ডিংয়ে পৌঁছে উঠতে পারছেন না। আশেপাশে মানুষের স্রোত বয়ে যাচ্ছে, কেউ তাঁর দিকে হাঁটছে, কেউ উল্টোদিকে। কিন্তু সবারই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে, গন্তব্য আছে,কেবল তাঁর নিজের ছাড়া। অকস্মাৎ একটি চেনা মুখ দেখতে পান তিনি ঃ মাহতাব।

    মাহতাব হাঁটছে, বিপদের মধ্যে বুদ্ধিবিনষ্ট, নিরূপায় জন্তুর মত তার হাঁটা। একটি সরলরেখা বরাবর সে হাঁটছে যান্ত্রিকভাবে, ডানদিক-বাঁদিকে করছে না একবারও, প্রবল শকে কি তার মাথা গুলিয়ে গেছে? মাহতাব তাঁর দিকেই হেঁটে আসছে। মাঝখানে দুটি মেয়ে এসে গেল, ক্ষণেকের জন্য মাহতাব হারিয়ে গেল। ঐ, আবার সে হেঁটে আসছে, একটি ঢোলা বেইজ টি-শার্ট আর জীনস্‌ পরা। দুজনের চোখাচোখি হল, তারপর মাহতাব তার চোখ সরিয়ে নিল। মাহতাব তাঁকে পেরিয়ে যাচ্ছে।

    না, মাহতাব সেকেন্ডের এক ভগ্নাংশের জন্য থামল; একটা ইনফর্মেশন শুধু দেওয়ার জন্য তার এই বিরতি। সে জানাল- "ওরা" বডিগুলোকে হসপিটাল মর্গ থেকে হাইজ্যাক করে নিয়েছে, তারপর লোকচক্ষুর অন্তরালে কোথায় কোন গোপনে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

    আবার হাঁটতে শুরু করেছে সে, তার সেই সরলরৈখিক যান্ত্রিক হাঁটা। শিগগিরই সে আজারের দৃষ্টিপথ থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে। দীর্ঘ সাত বছর তার আর কোনো সাক্ষাৎ পাবেন না তিনি।
  • kiki | 122.79.38.84 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০২649535
  • আহ! সময় নিয়ে পড়তে হবে।ঃ)
  • I | 24.99.110.165 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৩649536
  • সাত ব্ছর! সাত বছর পর আজার নিজেকে দেখতে পান আলামে তাবাতবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের ক্লাসে, দেখতে পান চল্লিশটি উৎসুক মুখ তাঁর দিকে চেয়ে আছে; আর সেই মুখের সারির ওপর চোখ ঘুরতে ঘুরতে তাঁর দৃষ্টি আটকে যায় মেয়েদের তিন নম্বর সারিতে-সেখানে একটি চেনা মুখ । নাসরিন !

    সেই নাসরিন ! যাকে শেষবারের জন্য দেখেছিলেন লিফলেটের গোছা হাতে, প্রতিবাদে উজ্জ্বল সেই ছোট্টখাট্টো মেয়েটি বসন্তের এক রৌদ্রময় দিনে তেহরানের কোন এক রাস্তার মুখে হঠাৎ করে হারিয়ে গেছিল তাঁর জীবন থেকে। আজ আবার সে ফিরে এল, ঐ তো সে বসে আছে, এখন তার মাথা থেকে পা অবধি ঢাকা একটি কালো চাদরে। চাদরের অন্তরালে তাকে দেখাচ্ছে আরো ছোট্ট। তার সেই হরিণীক্ষিপ্রতা আর নেই, সে বসে আছে অলসভঙ্গিমায়, তার লেখার গতি শ্লথ।

    ক্লাসের শেষে আজার তাকে পাকড়াও করেন। কী খবর তোমার? কোথায় ছিলে এতদিন? তোমার মনে আছে, তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে গ্যাটসবি'র ওপর একটা পেপার জমা দেবে?

    নাসরিন মৃদু হাসে। বলে, ভাববেন না। আমার একটা এক্সকিউজ আছে। এই দেশে, আর যাই হোক, এক্সকিউজের কোনো অভাব নেই।

    সংক্ষেপে সে তার হারানো সাতটি বছরের বিবরণ দেয়। সেদিন রাজপথে লিফলেট বিলি করবার সময় পুলিশ তাকে ও তার আরো কিছু কমরেডকে গ্রেপ্তার করে। "আপনি তো জানেন, "-নাসরিন বলে-"মুজাহিদিনদের পেছনে ওরা কিরকম ক্ষ্যাপা কুকুরের মত লেগে ছিল ! অনেককে ওরা খতম করে দেয়। আমার কপাল ভালো; আমাকে শুধু দশ বছর দিয়েছিল। মোল্লাদের মধ্যে আমার বাবার কিছু প্রতিপত্তি ছিল!'

    দশ বছরের জেল আর তুমি বলছো কপাল ভালো !

    "উম্‌ম, হ্যাঁ! আপনার মনে আছে সেই বারো বছর বয়সী মেয়েটার কথা? জেলখানায় চীৎকার করে দৌড়ে দৌড়ে মাকে খুঁজছিল বলে যাকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়? আমি ওখানেই ছিলাম। ওরই মত চীৎকার করে আমারও মা'কে ডাকতে ইচ্ছে করছিল। কত টীন এজার খুন হয়ে গেল; আমিও তাদের একজন হতে পারতাম। বাবা'র জন্য ওরা আমাকে ছেড়ে দিল। পরে দশবছর কমিয়ে তিন বছর করে দিয়েছিল। তারপরেও বহুদিন আমাকে পড়াশুনো করতে দেয় নি। এখনো আমি প্রোবেশনে আছি।"

    নাসরিন। সেই শান্ত মেয়েটি।
  • aranya | 154.160.98.31 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:০৭649537
  • ওঃফ, ইন্দো কি লিখছে, মাইন্ড ব্লোয়িং
  • Atoz | 161.141.84.164 | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ২২:১৫649538
  • বড়াই, বড়াই, ললিতা লিখবে না আজ?
  • I | 24.96.39.141 | ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১৪:০৭649539
  • কিছু না। এই স্রেফ ভাসিয়ে রাখা। ভেসে থাকার চেষ্টা। নাকটা যাতে ডুবে না যায়।
  • I | 24.96.191.29 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২৪649540
  • ১৯৮০ থেকে ৮৩ সাংস্কৃতিক বিপ্লব বন্ধ রাখবে ইরানের সব বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাজগতের ইসলামীকরণ সম্পূর্ণ হলে পর তবেই খোলা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। ঝেঁটিয়ে বিদায় করা হবে হাজার হাজার ছাত্র, অজস্র শিক্ষককে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে কত ছাত্র মারা যাবেন, তার সঠিক সংখ্যা কখনোই জানা যাবে না। খোমেইনির এক একটি ইঙ্গিতে উৎসাহী হেজবোল্লা গুণ্ডার দল ঝাঁপিয়ে পড়বে টীচার্স ট্রেনিং কলেজে, বামপন্থী ছাত্রদলের অফিসে, বিশ্ববিদ্যালয়ে-বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রযুক্তিবিদ্যা থেকে হিউম্যানিটিজ-প্রতিটি বিষয়ের ইসলামীকরণ হবে। সঙ্গীত-এর মত বেশ কিছু বিষয়কে শিক্ষাক্রম থেকে বাদ দেওয়া হবে। "পশ্চিমী অবক্ষয়" আর "নাস্তিক কমুনিজম" শুধু নয়, সেন্সরড হবেন হাফেজ-ফেরদৌসি'র মত ইরানের সুফী কবিরাও। ইরানের বিপুল বৈভবময় সাহিত্য আর সংস্কৃতির ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে থাকবে। ফেরদৌসি-রুমি-খৈয়াম-হাফেজ-নিজামি'র ইরান ধীরে ধীরে একটি আরব রাষ্ট্রের চাপা-ঢাকা আঙরাখা পরে নেবে।

    মেয়েদের সর্বাঙ্গ-ঢাকা পোষাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হবে প্রকাশ্য স্থানে। আইন ভাঙলে জরিমানা/জেল অথবা বেত্রাঘাত ( ৭৬ ঘা অবধি)। রাস্তায় রাস্তায় নীতি-পুলিশ ঘুরে বেড়াবে; সাদা টয়োটা প্যাট্রলে চারজন সশস্ত্র পুরুষ ও মহিলা।

    আজার একটি বিশাল বড়সড় কালো জোব্বা কিনে নেবেন; তার হাতাগুলি কিমোনোর মত।মাঝেমধ্যেই হাতগুলোকে হাতার মধ্যে ঢুকিয়ে নেবার অভ্যেস তৈরী হবে তাঁর; যেন হাতগুলো নেই, তারা কখনোই ছিল না। তাঁর গোটা শরীরটাই যেন কখনো কখনো অদৃশ্য হয়ে যায়, বাহুদুটি, স্তন, পেট , পা -সবাই গলে যায়, মিশে যায় শুন্যে। পড়ে থাকে শুধু একটি কালো জোব্বা, একটি মেয়ের চেহারার মাপের, অদৃশ্য কোন শক্তি জোব্বাটিকে নিয়ে হেঁটে-চলে বেড়াচ্ছে। এ এক মজার খেলা।

    উচ্চশিক্ষামন্ত্রকে যেতে গিয়ে একদিন এই খেলাটা প্রথম শুরু করেন আজার। সিকিউরিটি মেয়েদের আপাদমস্তক চেক করে, এবং আজারের মনে হয়-.. of the many sexual molestations I have had to suffer in my life, this was among the worst. মহিলা সিকিউরিটি গার্ডটি বলে -মনে হচ্ছে আপনি জোব্বার নিচে কিছুই পরেন নি। আজার বলেন, তিনি জোব্বার নিচে কি পরেছেন না পরেছেন, সেসব তাদের না দেখলেও চলবে। মেয়েটি একটি টিস্যু নিয়ে বলে-ঘষে দেখান, আপনি কোনো মেক আপ লাগিয়েছেন কিনা। বলে সে নিজেই ঘষতে থাকে। মেক আপ উঠে আসে না, হায়, কেননা আজার কোনো মেক আপ করেন নি। মেয়েটি অতএব, জোরে, আরো জোরে ঘষতে থাকে। আজারের গাল জ্বলতে থাকে, মনে হয় চামড়া উঠে আসবে। মনে হয়, তাঁর সারা শরীরটা নোংরা হয়ে গেছে, একটা নোংরা ঘেমো টি-শার্টের মত, একে এক্ষুনি ছেড়ে ফেলা দরকার। তখনই এই খেলার আইডিয়া তাঁর মাথায় আসে। এ খেলার কায়দা হচ্ছে ইচ্ছেমত নিজের শরীরকে অদৃশ্য করে ফেলতে পারা। শরীরকে হাল্কা করে ফেলতে পারা, মাংসহীন, মজ্জাহীন, অস্থিহীন, পাখির পালকের মত হালকা, হাওয়ার মত হালকা। তারপর আবার ইচ্ছেমত ফিরে আসতে পারা, ইচ্ছেমত শরীরের এক একটি অংশকে দৃশ্যমান করে তুলতে পারা; যেমন শাসনের সামনে অবাধ্য একগুছি চুল, অথরিটির চোখে একদৃষ্টে থাকিয়ে থাকা দুটো অবাধ্য চোখ।

    নতুন ইরানে আজারের নিজেকে মনে হয় সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, আরো অনেকের মতই। এখন আর তিনি শিক্ষক নন, লেখক নন, নিজের ইচ্ছেমত পোষাক পরতে পারেন না, নিজের পছন্দের রাস্তা দিয়ে নিজের শরীরের ছন্দে হাঁটতে পারেন না, চীৎকার করে উঠতে পারেন না, মুহূর্তের উল্লাসে কোনো পুরুষ সহকর্মীর পিঠে চাপড় মেরে হেসে উঠতে পারেন না। যেন তিনি ছিলেন একসময়, এখন আর নেই, এক বিরাট ইরেজার এসে একটি স্ট্রোকে তাঁকে সম্পূর্ণ মুছে দিয়েছে। আমেরিকান বন্ধুকে চিঠি লেখেন- জানতে চাও, অপ্রাসঙ্গিক হলে কেমন লাগে? নিজেকে একটা সদ্য দেহমুক্ত প্রেতের মত ভাবো, তার অনেক ইচ্ছে-কাজ-বাসনা অসমাপ্ত থেকে গেছে; সে ঘুরঘুর করে ঘুরে বেড়ায় তার পুরনো বাড়িতে। বাড়ির কাঠামোটা একই, কিন্তু ভেতরটা কত বদলে গেছে। সামনের কাঠের দরজাটা মেটালের হয়ে গেছে,দেয়ালে একটা কটকটে গোলাপী রং লাগানো হয়েছে, তোমার সাধের ইজি চেয়ারটা নেই। তোমার অফিস-ঘরটা এখন ড্রয়িং রুম, তোমার প্রিয় বুককেসটা বিদায় নিয়েছে, তার জায়গায় একটা আনকোরা টিভি সেট। এটা তোমার বাড়ি, কিন্তু আসলে তোমার নয়।তুমি আর এই বাড়িতে বিরাজ করো না, এর দেয়ালে-দরজায় তুমি নেই; তুমি একটি নিরালম্ব বায়ুভুক এখন।

    আর যারা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে , তারা কী করে? তাদের কেউ কেউ পালিয়ে যায়, ফিজিক্যালি পালায়। কেউ ফিরে আসতে চায়, নতুন জমানায় নতুন রাজার বুলি আত্মস্থ করে, বিজয়ীর উলকি অঙ্গে ধারণ করে। আর বাকিরা পালানোর জন্য ভেতরের রাস্তায় হাঁটে, পরিত্রাণ খোঁজে নিজের ছোট কোণটিতে, সেই তাদের অভয়ারণ্য। তাদের বাদবাকি জীবনটা সেই মাটির তলাতেই কাটে।
  • pi | 116.218.132.47 | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪০649542
  • শুরু করলাম। জমিয়ে জমিয়ে পড়তে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন