এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • হিমালয়ের কন্দরে

    লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ | ১১৯১৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ১৯:৩৪674724
  • সেটা ১৮৭৯ সাল, উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ততদিনে ব্রিটিশ মানচিত্রে উঠে এসেছে, অগম্য, অনাবিষ্কৃত বলতে প্রায় আর কিছুই নেই৷ তিব্বত তখনও বিদেশীদের জন্য কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, হিমালয়ের আড়ালে রহস্যের দেশ৷ সে রহস্য যেমন তার অধিবাসীদের আচার ব্যবহার, পোশাক ইত্যাদি নিয়ে, তেমনি তার বিচিত্র দুর্গম ভূপ্রকৃতি নিয়েও বটে৷ বিদেশী নিষিদ্ধ হলেও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও ভিক্ষুকদের জন্য গিরিপথের প্রহরা ছিল শিথিল, পাহাড়ী জনজাতি অধ্যুষিত গ্রামগুলিতে রাতে আশ্রয়লাভ ছিল সহজ৷ উনিশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে ব্রিটিশ সরকার এই তথ্যটি ব্যবহার করে লামার ছ্দ্মবেশে গুপ্তচর পাঠাতে শুরু করে তিব্বতে৷ তাদের নাম দেওয়া হয় 'পন্ডিত'৷ পাহাড়ী মানুষদের মধ্য থেকেই বেছে নেওয়া হত পন্ডিতদের৷ এদের কাজ ছিল তিব্বতের ভূপ্রকৃতির পুঙ্খানুপুঙ্খ জরিপ ও জনজীবন সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ৷ এজন্য সার্ভে বিভাগ থেকে তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হত৷ সন্ন্যাসীর ভেকের মধ্যে লুকানো থাকত জরিপের সরঞ্জাম, লাঠির আগায় কম্পাস, প্রার্থনাদন্ডের ভেতরে কাগজ পেনসিল, জপমালায় ১০৮টির বদলে ১০০টি পুঁতি৷ চলার পথে পদক্ষেপ গুণে জপমালায় হিসেব রাখত তারা৷ অনেকসময় ধরা পড়ার ভয়ে কাগজ পেনসিলও দেওয়া হত না, জরিপের খুঁটিনাটি তথ্য ছন্দে গেঁথে বৌদ্ধ মন্ত্রের মত করে আউড়ে চলত এই পন্ডিতরা৷ এইভাবে গুপ্তচরদের নোট আর জবানবন্দী থেকে একটু একটু করে ভরে উঠছিল মানচিত্রের সেই অজানা সাদা অঞ্চলটি৷ ধন্দ ছিল কেবল একটি নদী নিয়ে৷ পশ্চিম তিব্বতের সাং প্রদেশে ২৪০০০ ফুট উঁচুতে উত্সারিত হয়েছে সাংপো নদ, এরপর পূর্ববাহিনী হয়ে চলেছে হিমালয়ের একটি ভাঁজ বরাবর৷ মানচিত্রে হিমালয়ের যে ভাঁজগুলোকে দেখে মনে হয় যেন গিলে করা কাপড়ের মত, আসলে সেগুলো পনেরো বিশ হাজার ফুট গভীরতার এক একটি উপত্যকা৷ তারই ভেতর দিয়ে প্রায় একহাজার মাইল প্রবাহিত হওয়ার পর সাংপো ঢুকে পড়েছে এক অগম্য উপত্যকায়, হারিয়ে যাচ্ছে দুর্গম গিরিশিরার জটে, দুশো মাইলেরও কম দূরত্বে নেমে আসছে ন'হাজার ফুট৷ আচমকা দক্ষিণে বাঁক নিয়ে প্রবেশ করছে ভারতের সমতলে৷ তখন তার নাম ব্রহ্মপুত্র৷ গোটা হিমালয়ে তো বটেই, সারা বিশ্বেই এমন আর একটিও নদী নেই যেটি এইরকম খাড়া ঢাল বেয়ে এই পরিমাণ জলরাশি নিয়ে আছড়ে নেমেছে সমতলে৷

    ন'হাজার ফুট উঁচু তিব্বতের উপত্যকা থেকে মাত্র দুশো মাইলের মধ্যে আসামের সমতলে নেমে আসছে এই নদী, ব্রহ্মপুত্র নাকি সাংপো, কী করে সম্ভব এটা? তবে কি মাঝখানে একটি জলপ্রপাত আছে, যা নায়াগ্রা বা ভিক্টোরিয়া ফলসের থেকেও প্রকান্ড ও বিপুল? নাকি একের পর এক ঝর্ণা, যা নামিয়ে এনেছে নদীকে সমতলে? সাংপোই ব্রহ্মপুত্র কিনা সেই নিয়ে ধন্দ বহুকালের৷ কোনো ভুগোলবিদ মনে করতেন পূর্ববাহিনী সাংপো বর্মায় প্রবেশ করে ইয়ারডি হয়েছে, কেউ কেউ আবার মনে করতেন ব্রহ্মপুত্র আর ইয়ারডিকে যুক্ত করেছে সুবনসিঁড়ি৷ এই অঞ্চলের আরও দুটি প্রধান নদী দিবাং আর লোহিত বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে৷ ১৭৬৫ সালে ভারতের প্রথম সার্ভেয়ার জেনারেল জেমস রেনেল ব্রহ্মপুত্রের খাত বরাবর জরিপ করার পর লিখেছিলেন ব্রহ্মপুত্রই যে সাংপো সেটি অনুমান করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ কিন্তু রেনেলের অনুমানের পর একশো বছরেরও বেশী পার হয়ে গেলেও সেটিকে প্রমাণ করা সম্ভব হয় নি৷ উজানপথে ব্রহ্মপুত্রের উৎস খোঁজার চেষ্টা হয় বেশ কয়েকবারই, কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়৷ এতে দুটি জিনিষ প্রমাণ হয়৷
    ১) ওপথে প্রমাণ করা সম্ভব নয়৷ আর
    ২) এটি কোনও শ্বেতাঙ্গর পক্ষে সম্ভব নয়৷

    রেনেলের অনুমানকে প্রথম প্রামান্য করে তোলেন যে লোকটি, বুড়ো ইতিহাস তার নামটা ভুলেছে এক্কেবারে৷ দার্জিলিঙের দর্জি সেই কিন্টুপ-এর গল্পই শোনাবো এবারে৷
  • পাঠক | 132.172.104.169 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ২০:২১674735
  • পড়ছি। লিখতে থাকো।
  • ... | 117.193.242.2 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ২০:৪৩674746
  • গুচ্ছের আজে বাজে টই এর মাঝে এই টই টা একঝলক টাটকা বাতাস।
  • | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ২২:২০674757
  • কিন্টুপ, বছর তিরিশ বয়সের, ছোটখাট খুব সাদামাটা চেহারার এক স্থানীয় মানুষ, সদ্য নগরপত্তনের খবর পেয়ে নেপাল সিকিম থেকে ভাগ্যের চাকা ফেরানোর খোঁজে দার্জিলিঙে আসা অনেকের মধ্যে একজন৷ গুন্ডরি বাজারে (পরে যা ছকবাজার নামে বিখ্যাত হয়) এক দর্জির দোকানে সেলাইয়ের কাজ করত কিন্টুপ৷ নিমা শেরিং ওরফে নেম পন্ডিত্ নামে এক গুপ্তচরের সহকারী হয়ে গোপনে একবার তিব্বত ঘুরে এসেছে সে, ফলে এই ধরণের অভিযানের আবশ্যিক যোগ্যতা অর্থাত্ বুদ্ধি, কষ্টসহিষ্ণুতা আর বিশ্বস্ততার প্রমাণও দিয়েছে৷ সাংপো-ব্রহ্মপুত্র রহস্য অনুসন্ধানে সার্ভে অব ইন্ডিয়ার দার্জিলিং শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট হেনরি হার্মান বেছে নিলেন কিন্টুপকেই৷ জরিপের যন্ত্রপাতির ব্যবহার শিখেছে সে নেম সিং এর সহকারী হয়েই, আর আছে তার এক আশ্চর্য্য স্মৃতিশক্তি৷ দুর্গম পাহাড়, অরণ্যের ভেতর গিয়ে সেখানকার টোপোগ্রাফী রিলিফ ম্যাপের মত মাথার ভেতর খোদাই করে নিতে পারত সে, মূলত: তার এই গুণটির জন্যই হার্মান সাহেব কিন্টুপকে বেছে নিয়েছিলেন৷ অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় তালিম চলার সময় দার্জিলিং আসে এক চীনা লামা৷ তিব্বত যাওয়ার ছাড়পত্র ছিল তার কাছে, লেখাপড়াও কিছু জানত এই লামা৷ ফলে ঠিক হয় কিন্টুপ যাবে এই লামার ভৃত্য হিসেবে, ছাড়পত্রের বলে তিব্বতের যে কোনও অংশে গিয়ে জরিপ চালাতে পারবে কিন্টুপ আর নিরক্ষর কিন্টুপকে জরিপের তথ্যাদি লিপিবদ্ধ করতে সাহায্য করবে লামা৷ সেপ্টেম্বরের এক কুয়াশাঢাকা দিনে দার্জিলিং থেকে তিব্বতের পথে যাত্রা শুরু হল পন্ডিত কিন্টুপের৷ কার্ট রোডের নীচে বুচারবস্তিতে তার ছোট্ট কাঠের বাসায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অপেক্ষায় রইল তার স্ত্রী, দুই পুত্র ও সদ্যোজাত কন্যা, গুপ্তচরবিধির নিয়ম মেনে তারা কেউ জানল না কোথায় যাচ্ছে কিন্টুপ, কবেই বা ফিরবে৷ জানল না জীবদ্দশায় তার স্ত্রীর সাথে কিন্টুপের আর দেখা হবে না কোনওদিনই৷
  • Abhyu | 85.137.13.237 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ২২:৫৮674768
  • লীলা মজুমদারের দাদুর একটা বই ছিল ...
  • | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:০০674779
  • 'বনের খবর' তো? সেটা সাংপো-ব্রহ্মপুত্র অঞ্চলের নয়।
  • Abhyu | 85.137.13.237 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:০৩674790
  • বনের খবর বইটা লীলা মজুমদারের বাবার লেখা না? ওঁর দাদুর বইটা কৈলাস মানস নিয়ে।
  • Abhyu | 85.137.13.237 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:০৫674795
  • বইটার নাম হিমারণ্য। এখন আউট অফ প্রিন্ট বোধহয়।
  • Ekak | 24.96.121.23 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:০৫674794
  • এটা নিয়ে প্রচলিত কাহিনী আছে।শুনেছি । ব্রিটিশ এক্সপ্লোরেশন থ্রু পান্ডিট নিয়ে গাবদা বই ও আছে ।কিন্তু পড়ে দেখি নি । দ জমিয়ে লিখুন ,পড়ব ।
  • T | 24.139.128.15 | ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:০৮674725
  • ইন্টারেস্টিং, খুবই ইন্টারেস্টিং। বসে আছি।
  • achintyarup | 24.99.61.46 | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ১৪:২১674726
  • আরে, এ তো আমার খুব প্রিয় বিষয়! এই নিয়ে বাংলা বই যে হয়েছে জানতামই না। থ্যাঙ্কু দমু। পড়ছি মন দিয়ে।

    অভ্যু, হিমারণ্য বই এখনও পাওয়া যায়। খুব খারাপ ভাবে হেলাফেলায় প্রকাশিত। যদ্দূর মনে পড়ে দে'জ থেকে কিনেছিলুম। তবে রামানন্দ স্বামী ছিলেন প্রপার সন্ন্যাসী, গুপ্ত সার্ভেয়ার না। সে রকম একজন বাঙালি ছিলেন, পণ্ডিত শরৎ চন্দ্র দাস। তাঁর গপ্পোও খুবই রোমাঞ্চকর।
  • sosen | 212.142.69.185 | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২০:৪৭674727
  • এরা কতো কিছু পড়ে---
    পড়ছি, দমুদি।
  • | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২১:১৯674728
  • 'হিমারণ্য'র নাম শুনেছিলাম তো। ভুলে গেছিলাম তাহলে হিমারণ্য যোগাড় করতে হবে। অভ্যু আর অচিন্তি'কে থিঙ্কুসস।

    অচিন্টি, বাংলা বইয়ের নামটা লিখে দেবো পুরো ডিটেইলস। আর কিন্টুপ হলে তারপর শরৎ চন্দ্র দাস-এর কথাও বলব।
  • | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২১:২১674729
  • আজ আর পারব না, কাল লিখব আবার
  • Blank | 24.99.102.237 | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২২:০৮674730
  • হিমারন্য মিত্র ঘোষের বই। দম দির এই টই টা ব্যপক হচ্ছে।
  • Abhyu | 85.137.13.237 | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২২:১৭674731
  • এইখানে বলা ছিল


  • | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২২:৪৪674732
  • :-) ইনি অন্য রুটে গেছেন।

    কিন্টুপ, শরত দাস বা বেইলি সায়েব গেছে আসাম উপত্যকা থেকে উজানে।
  • Ishan | 183.17.193.253 | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:১২674733
  • একদম এই বিষয় নিয়েই বাংলা বই আছে তো। শাংগ্রিলার খোঁজে। পরিমল ভট্টাচার্যের। তাতে অবশ্য একটা সমস্যা আছে। কতটা ফিকশন আর কতটা ঐতিহাসিক বাস্তবতা, স্পষ্ট এবং আলাদা করে সব জায়গায় বলা নেই।
  • | ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:২৩674734
  • হুঁ আপাতত পরিমলবাবুর বই থেকেই লিখছি। পরে একসাথে সব নামগুলো দিয়ে দেব।
    আলাদা করে না বললেও বুঝতে খুব একটা সমস্যা হয় নি তো।
  • Ishan | 214.54.36.245 | ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ২০:৫৬674736
  • অ্যাকচুয়ালি মোটাদাগের ইতিহাসগুলো ঠিকই আছে। কিন্তু কিছু জায়গায় কিছু সূক্ষ তথ্য আছে, যা ভেরিফায়েবল কিনা সন্দেহ আছে। মানে, থাকতেও পারে, কিন্তু আমি ভেরিফিকেশন খুঁজে পাইনি।

    কিন্তু সেটা এখন বলে দিলে এই টইটা মাঠে মারা যাবে। চলুক, শেষে স্পেসিফিকালি ওই বইটায় আমার সন্দেহগুলো নিয়ে লিখব।
  • ranjan roy | 24.99.162.251 | ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ২১:৩১674737
  • চলুক! চলুক! সাগ্রহে পড়ছি।
  • Nina | 83.193.157.237 | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩১674738
  • টাটকা বাতাস নো পলিউশন ওয়ালা টই
  • sch | 113.44.172.119 | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৮:০৮674739
  • পরিমল শর্মার বইটা নেটে কোথাও পেলাম না অনলাইন কেনার জন্যে - কোন উপায় আছে কি কেনার?
  • sch | 113.44.172.119 | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৮:০৯674740
  • *পরিমল ভট্টাচার্য্য
  • | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৮:৪২674741
  • বইটা অবভাস-এর। ওদের ওখানে ফোন করে দেখতে পারেন, কলকাতার মধ্যে ডেলিভারী করে বোধহয়। ফোন নাম্বার অবভাস-এর সাইটে আছে মনে হচ্ছে। ফেসবুক গ্রুপও আছে।
  • I | 120.224.202.100 | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ২১:০৩674742
  • লিখতে থাকো। সাংগ্রিলা বেড়াতে যাওয়ার আগে শুরু করেছিলাম। এবার পড়ে ফেলবো, বোনের কাছ থেকে ধার নিয়ে।
  • দ্রি | 47.130.227.133 | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:০৪674743
  • আইয়ে চলে হিমালয় কা কন্দরমে দমুদিদি কে সাথ।
  • | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:৪৬674744
  • কিন্টুপের অভিযানের জন্য সময় ধরা হয়েছিল আনুমানিক চার মাস। সেইমত ব্রিটিশ সরকার তার পরিবারের জন্য এককালীন কিছু অর্থ বরাদ্দ করে। ওদের রাহাখরচ হিসেবে সঙ্গে দেওয়া হয় একশ টাকা, কিছু বিনিময়যোগ্য রূপার মুদ্রা আর সার্ভের সরঞ্জাম। রুট ঠিক হয় তিব্বতে পোরবেশ করে চেতাং দুত্গম গতিপথ ধরে সাংপোর গতিপথ অনুসরণ করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার দিকে যতদূর সম্ভব যাবার চেষ্টা করবে। কিন্তু মুশকিল হল চীন লামাকে নিয়ে। এর না ছিল এই দুর্গম পথে যাবার মত শারিরীক সামর্থ্য, না ইচ্ছে বা বিশ্বস্ততা। লামা এই সফরকে নেহাৎই ইংরেজ সরকারের বদান্যতায় পাওয়া খেয়াল খুশীতে প্রমোদসফর বলে মনে করেছিল। ফলে ইংরেজ শাসনের সীমানা পেরিয়ে তিব্বতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে লামার আসল রূপ বেরিয়ে পড়ে। কিন্টুপের সাথে সে প্রকৃতই ভৃত্যের মত ব্যবহার শুরু করে, টাকা ওড়াতে শুরু করে নেশা ও বিলাসব্যসনে। চেতাং উপত্যকা পেরিয়ে লোপা উপজাতি অধ্যুষিত এক গ্রামের মোড়লপত্নীর সাথে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়ে কাটিয়ে দিল বেশ কয়েক মাস। সেই গিরিখাত তখনও অনেক দূরে।

    যদিবা রওনা হল তারা, সাংপোর পাড় ধরে এগিয়ে যেতে যেতে পথ ক্রমশঃ দুর্গম হয়ে উঠতে লাগল, দুধারের খাড়া পাহাড় ক্রমশ খাদের দুইদিক দিয়ে ঠেসে ঘেঁষে আসতে লাগল আর ঘন দূর্ভেদ্য হয়ে উঠতে লাগল জঙ্গল। এদিকে পাথেয়ও ততদিনে প্রায় শেষ। সাংপোর খাড়া পাড়ে থঙ্কিয়ুক নামে এক বসতিতে গাঁওবুড়োর বাড়ীতে কিন্টুপকে বলে লামা, লোপা গ্রামের মোড়লপত্নীর জন্য বড়ই ব্যকুল হয়ে পড়েছে সে, দুটি রাত সেখানে কাটিয়েই আবার ফিরে অভিযানে যোগ দেবে সে। চলে যায় লামা, সঙ্গে টাকাকড়ি না থাকায় কিন্টুপের স্থান হয় যবক্ষেতের ধারে ঘাসপাতায় ভেড়ার খোঁয়াড়ে, দুবেলা দুমুঠো আহারের বদলে নদী থেকে জল টেনে আনতে হয়, জঙ্গল থেকে কেটে আনতে হয় বোঝা বোঝা কাঠ। পাহাড়ের ঢালে থাকে থাকে বসতি, তার ওপরে ঘন ফার ও রডোডেনড্রনের বন, তার ওপর থেকে উঁকি দেয় ধবধবে সাদা বরফের চুড়া। অনেক নীচে দিয়ে ইয়ারলুং সাংপো নুড়ি পাথরে ধাক্কা খেয়ে কলস্বরে বয়ে চলার সময় যেন অবিরাম ডেকে যায় কিন্টুপকে। অস্থির হয়ে ওঠে কিন্টুপ। গাঁওবুড়োর কাছে গিয়ে বলে আমার প্রভু কবে ফিরবেন তা তো জানি না, তবে আমাকে এবার সামনে এগিয়ে যেতেই হবে। সেকথা শুনে উচ্চৈঃস্বরে হেসে ওঠে গাঁওবুড়ো, হাসতে হাসতেই জানায় কিন্টুপ কোথাও যেতে পারবে না, গাঁওবুড়োর কাছে কিন্টুপকে পঞ্চাশ টাকায় বিক্রী করে লামা ফিরে গেছে তার আপন দেশে। কিন্টুপ এখন এই গাঁওবুড়োর ক্রীতদাস। বুড়ো ইতিহাস আপনমনে পাতা উল্টায় দিনরাতের, কেটে যায় এক .. দুই ... তিন ... চার ... পাঁচ মাস।
  • | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ২৩:৫১674745
  • * রুট ঠিক হয় তিব্বতে প্রবেশ করে চেতাং থেকে দুর্গম গিরিখাত ধরে সাংপোর গতিপথ অনুসরণ করে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার দিকে যতদূর সম্ভব যাবার চেষ্টা করবে।
    **চীনা লামা
  • sch | 233.223.131.253 | ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৮:০০674747
  • শাংগ্রিলার খোঁজে পাওয়া গেছে - চমৎকার বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন