এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • অভিবাসন, রিফিউজি ও ইউরোপিয়ান ফুটবল

    রোবু
    অন্যান্য | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | ২১১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ঊমেশ | 118.171.128.168 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:৪৮684998
  • চারিদিকে একটা হাওয়া ইউরোপের উচিত সমস্ত শরনার্থী দের অবশ্য-ই জায়্গা দেবার।

    কিন্তু অবাক লাগে এরই মধ্যে অনেককে অন্য জায়্গাতে অন্য রুপে দেখেছি।
    যখন বাংলাদেশী ভারতে আসার কথা উঠে এই মানুষ গুলো বদলে যায়। অনেককে তো গুলী করে মেরে ফেলার উপদেশ দিতেও দেখেছি।
  • রোবু | 233.29.204.2 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১২:১৬684999
  • বুরুন্ডি
    ----------
    আফ্রিকার লেক অঞ্চলের একটি দেশ বুরুন্ডি। তাঞ্জানিয়া, কঙ্গো, রুয়ান্ডার প্রতিবেশী। ১৯৯৩ থেকে ২০০৫ এই দীর্ঘ বারো বছর গৃহযুদ্ধে দীর্ণ হয় দেশটি। ১৯৬২ অবধি বেলজিয়ামের কলোনি ছিল। তারপর প্রায় পঁচিশ বছর তুতসি-দের মিলিটারি ছিল ক্ষমতায়। কিন্তু তুতসিরা ছিল মাইনরিটি।
    হুতু অরগ্যানাইজেশন UBU ১৯৭২-এ সমস্ত তুতসিদের মেরে ফেলার শপথ নেয় এবং অনেক চোরাগোপ্তা খুন করে। মিলিটারি তুতসি-রা বদলা নেয়, এক লাখের বেশী লোক মেরে। বহু হুতু পালিয়ে যায় তাঞ্জানিয়া আর রুয়ান্ডায়।
    কিন্তু খুন-খারাপি, বদলা, তার বদলা - বন্ধ হয় না। ১৯৮৭ তে মসনদে বসেন পিয়ের বোয়া, কিছু রিফর্ম-ও করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। আগুন জ্বলতে থাকে।
    এর মাঝেই ১৯৯৩ এর ২৭ জানুয়ারী সাধারণ নির্বাচন হয়, মেল্কিওর এন্দাদায়ে ক্ষমতায় আসেন। একজন হুতু।
    অক্টোবর ২১, ১৯৯৩। তুতসী উগ্রপন্থীদের হাতে খুন হন মেল্কিওর। শুরু হয় এক যুগ ব্যাপী গৃহযুদ্ধ। শুধু প্রথম বছরেই খুন হন প্রায় এক লাখ মানুষ।
    এন্দাদায়ের পর ক্ষমতায় আসেন সিপ্রিয়েন এন্তারিয়ামিরা। কিন্তু তিনি নিহত হন প্লেন ক্র্যাশে।
    ১৯৯৪। আফ্রিকার সাম্প্রতিক ইতিহাসে এই প্লেন ক্র্যাশ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই প্লেন ক্র্যাশে নিহত হবেন জুভেনাল হাবিয়ারিমানা। রুয়ান্ডার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট। এই ঘটনার জেরেই শুরু হবে রুয়ান্ডা জেনোসাইড। ১০০ দিনের এই জেনোসাইডে মৃত্যু হবে পাঁচ থেকে দশ লক্ষ মানুষের। রুয়ান্ডার ৭০% তুতসী এই ১০০ দিনে খুন হবেন। দেশটার জনসংখ্যা কমে যাবে ২০ শতাংশ।
    রুয়ান্ডা থেকে বুরুন্ডিতে পালিয়ে আসতে থাকবেন প্রচুর মানুষ। আরও আরও অশান্ত হয়ে উঠতে থাকবে বুরুন্ডি। হবে আরও অসংখ্য খুন।
    বুরুন্ডি থেকে ২০০৩ এ ইংল্যান্ডে পালিয়ে আসবেন লিলিয়ান বেরাহিনো। একজন প্যাসনেট আর্সেনাল ফ্যান।
  • PM | 11.187.167.32 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৩:০২685000
  • একটু থিতু হলেই শরিয়তি আইন চালু করার দাবী উঠবে
  • রোবু | 233.29.204.2 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৬:০৯685001
  • ইন্টারভিউ
    -----------------------------
    “আফ্রিকায় আমরা ছোটরা কখনো বাবা-মা কে প্রশ্ন করতাম না, যেরকম এখানে বাচ্চারা করে। বাবা-মা যা বলবে সেটাই শুনে চলতে হবে। আমরা তাই প্রশ্ন করিনি দেশ ছেড়ে আসার সময়।
    “আমরা চলে এলাম। হয়তঃ ঐ যুদ্ধের জন্যই। হয়তঃ মা আমাদের জন্য সুস্থ ভবিষ্যৎ চেয়েছিলেন, তাই।
    “যাই হোক, যেভাবে হোক, মা ইংল্যান্ডে চলে এলেন। কিন্তু আমি যখন এদেশে পৌঁছলাম, তখনো আমি জানি না মা কোথায়। আমাকে একটা চাইল্ড কেয়ার হোমে নিয়ে যাওয়া হল। “
    -এটা ২০০৩ এর কথা। বক্তার বয়েস তখন দশ।
    “জানতে পারলাম, আমার মাকে খুঁজে পাওয়া গ্যাছে। কিন্তু বেশ কিছুদিন আমি মায়ের সাথে দেখা করতে পারলাম না। ইমিগ্রেশন জানালো ডিএনএ টেস্ট করে দেখতে হবে আদৌ আমি ওঁরই ছেলে কী না।
    “লন্ডনের এক অফিসে মা-কে আমি দেখতে পেলাম। একটা দুটো কথা হল। কিন্তু ওরা আমাকে মা-এর সাথে থাকতে দিল না। ডিএনএ টেস্টের রেসাল্ট তখনো আসেনি। আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল। মা কান্নাকাটি করছিলেন। শেষে যখন রেসাল্ট এল, আমি মা-র কাছে যেতে পারলাম, বার্মিংহ্যামে। আমার জীবনের শুরু হল সেদিনই।“
    সাইডো কখনো লিলিয়ানকে জিগ্যেস করেননি কীভাবে তাদের বাবা মারা ১৯৯৭ এর বুরুন্ডি গৃহযুদ্ধে। “এসমস্ত প্রসঙ্গ তুললেই যে স্মৃতি ফিরে আসে সেগুলো আমি মুছে ফেলতে চাই। কিন্তু ফুটবল মাঠে আমি যা করি, তা বাবার কথা মনে রেখেই। আমি জানি স্বর্গ থেকে উনি আমার খেলা দেখছেন। খুশি হচ্ছেন। ঈশ্বর আমায় পথ দেখাচ্ছেন। আর বাবা যেন একজন দেবদূত, যিনি হাসছেন।
  • রোবু | 233.29.204.2 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:২৯685002
  • “আমার জীবনে ধর্মের একটা বড় ভূমিকা আছে। শুধু ফুটবলার বলে নয়, আজকের দিনে ধর্মবিশ্বাসী হওয়া সহজ নয়। আমাদের সমাজ এমনভাবে চলছে যে সাচ্চা ক্রিশ্চান জীবনযাপন করা অসম্ভব। আপনাকে শুধু একজন ভালো মানুষ হতে হবে। বাইবেলে যেরকম বলা আছে, ‘ঈশ্বরের সেবক’, সেরকম। আপনাকে শুধু বাইবেল মেনে চলতে হবে। আমি বাইবেল পড়ি। আমার মা ধর্মপ্রাণা। উনিও আমাকে শেখান। “
    ২০১০ এর অনূর্ধ্ব সতেরো বিশ্বকাপ হয় লিখটেনস্টাইনে। বিজয়ী ইংল্যান্ড দলের সদস্য ছিলেন সাইডো বেরাহিনো।
    ২০১২ তে এস্টোনিয়ায় আয়োজিত অনূর্ধ্ব উনিশ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড দলের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি।
    ২০১৩। অনূর্ধ্ব ২১ ইউরো-র কোয়ালিফায়ারে ফিনল্যান্ডের সাথে দুই গোল। প্রথম গোলের পর মৃত বাবার স্মৃতিতে জার্সি খুলে গেঞ্জিতে লেখা মেসেজ দেখানোর জন্য ইয়েলো কার্ড দেখানো হয় বেরাহিনোকে।
    ২০১৪ এ ফ্যানেদের ভোটে বেরাহিনো ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ২১ প্লেয়ার অব দা ইয়ার হন। মাথায় রাখতে হবে, দ্বিতীয় হয়েছিলেন হ্যারি কেন। এই পর্যায়ে ১৩ টি ম্যাচে দশ গোল রয়েছে তাঁর।
    ক্লাব পর্যায়ে ওয়েস্ট ব্রমউইচ অ্যালবিয়নের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলেন বেরাহিনো। গত বছরে কুড়িটি গোল রয়েছে তাঁর। রয়েছে প্রিমিয়ার লিগে ম্যাঞ্চেস্টার উইনাইটেড বা চেলসির মত টিমের বিরুদ্ধে গোল। ২০১৪-১৫ তে ক্লাবের হয়ে প্লেয়ার অব দা ইয়ার নির্বাচিত হন বেরাহিনো।
  • রোবু | 233.29.204.2 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:৫২685003
  • কোম্পানি অ্যান্ড কোং
    ----------
    ইউরোপের এখন প্রথম সারির লিগ-গুলোতে ইউরোপের যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশী খেলোয়াড় সাপ্লাই দিচ্ছে, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম তাদের মধ্যে অন্যতম। এদের মধ্যে জার্মানি দীর্ঘ দিনের ফুটবল এলিট। ফ্রান্স ও স্পেনও গত দুই দশকে ওয়ার্ল্ড কাপ এবং ইউরো জিতে জাতীয় দল হিসেবে ফুটবল সুপারপাওয়ার দের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে, যদিও স্পেন বা ফ্রান্সের ঘরোয়া লিগ অনেকদিন আগের থেকেই যথেষ্ট ঐতিহ্যপূর্ণ।
    বেলজিয়ান ফুটবলে এর আগে কিছু কিছু ব্যক্তিগত নৈপুণ্য দেখা গেলেও দলগত ভাবে বেলজিয়াম সেভাবে সফল নয়। কিন্তু ২০১৩ তে বেলজিয়ামের দলটি ফিফা র্যািঙ্কিং-এ ফিফথ পজিশনে চলে আসে। মনে রাখতে হবে, ২০০৬ তেই তারা ছিল ৭১ তম স্থানে। বেলজিয়ামের বর্তমান দলটিকে নতুন গোল্ডেন জেনারেশন বলা হয়। ২০১৪ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও পৌঁছয় তারা।
    এই দলের এবং ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার সিটির ক্যাপ্টেন ভিনসেন্ট কোম্পানি। কোম্পানির বাবা জাইরে থেকে পালিয়ে এসে রিফিউজি হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন বেলজিয়ামে।
    এই দলেরই অন্যতম সদস্য বর্তমানে এভারটনের খেলোয়াড় রোমেল লুকাকু-র বাবা রজার তো জাইরে দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলও খেলেছেন। তবে তারপর তাঁরা চলে আসেন বেলজিয়ামে। অভিবাসী।
    অভিবাসী হিসেবে বেলজিয়ামে এসে জীবন খুঁজে নিয়েছিলেন মৌসা ডেম্বেলে-র বাবাও, যিনি আদতে মালিয়ান। তেমনই ডিভক অরিগি। পিতৃসূত্রে কেনিয়ান। অ্যাক্সেল উইটজেল এর বাবা ফ্রেঞ্চ ক্যারিবিয়ানের মারটিনিক থেকে চলে আসেন বেলজিয়ামে।
    বেলজিয়াম এবং টটেনহ্যাম হটস্পার দলের উইঙ্গার নেসার চাডলি বেলজিয়াম এবং মরক্কো দুই দেশেরই নাগরিক। ২০১০ এ মরক্কোর হয়ে নর্দার্ন আয়ারল্যাণ্ডের বিরুদ্ধে ফুটবল ম্যাচে ম্যান অব দা ম্যাচ হয়েছিলেন তিনি। ২০১১ তে তিনি বেলজিয়ামের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলা আরম্ভ করেন।
    ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে খেলেন মারাওন ফেল্লাইনি। বেলজিয়ান দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ফেল্লাইনির বাবা আব্দেললাতিফ। আব্দেললাতিফ খেলতেন মরোক্কান ক্লাব রাজা কাসাব্ল্যাঙ্কা (প্রসঙ্গতঃ রাজা কাসাব্ল্যাঙ্কা মরক্কো-র কাসাব্ল্যাঙ্কা শহরের একটি ক্লাব ১৯৪৯ এ এর পত্তন হয়, ফরাসী ঔপনিবেশিকদের বিরুদ্ধে জাতিয়তাবাদী প্রতীক হিসেবে) এবং পরে হাসানিয়া আগাদির হয়ে। বেলজিয়ামে এসে একটি বেলজিয়ান ক্লাবে খেলার সুযোগ পান তিনি, কিন্তু মরোক্কান ক্লাবগুলি তাকে ছাড়পত্র না দেওয়ায়ে খেলতে পারেননা। বেলজিয়ামে বাস ড্রাইভার হয়ে রয়ে যান আব্দেললাতিফ। মাত্র আট বছর বয়সে আন্ডারলেখটের হয়ে এজ গ্রুপ ফুটবল খেলতে শুরু করেন মারাওন ফেল্লাইনি। আব্দেললতিফের স্বপ্ন কি পুত্রের মাধ্যমে সফল হয়ে ওঠে?
    বেলজিয়ামের কথা অবশ্য শেষ হয় না আদনান জানুজাই এর কথা না বললে। জানুজাই এর জন্য এই লেখায় অন্য একটি অধ্যায় ভবিষ্যতে লেখা হবে। তাঁর আগে আমরা একটু জেনে নেব জেসিকা হুয়ারা-হোমুর কথা। হিজাবের কথা।
  • robu | 113.10.210.165 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৯:৩৯685004
  • জেসিকা
    --------
    কিউবেক এ ২০০৭ এ অটোয়ার আসমাহান মানসুর হিজাব পড়ে মাঠে নামেন। রেফারী খেলতে দেননি তাকে। প্রতিবাদ করেন কোচ, সহখেলোয়াড়েরা। প্রতিবাদ আসে অন্যান্য টিমদের থেকেও। কানাডিয়ান ফুটবল ফেডারেশন ব্যাপারটা নিয়ে ফিফা-র কাছে যায়। ফিফা হিজাব পরে ফুটবল খেলা ব্যান করে।
    তাই ২০১১ এ ইরানের ফুটবল দল অলিম্পিক কোয়ালিফায়ার খেলতে পারে না। জর্ডনের আলি বিন আল হুসেন ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের অন্দরে এই নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যান। শেষ অবধি কিছু নিয়মকানুন রেখে হিজাবকে ফুটবল মাঠে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ঠিক তার পরেই ফ্রেঞ্চ ফুটবল ফেডারেশন আলাদা করে হিজাব ব্যান করে। এই মুহূর্তে ফরাসী দলই একমাত্র যার খেলোয়াড়রা আইএফএবি স্বীকৃত হিজাব পরেও মাঠে নামতে পারবেন না। যদিও জাতীয় দলের কোনও খেলোয়াড় এখনো হিজাব পড়ে খেলতে চাননি, কিন্তু উল্লেখ্য হল বর্তমান দলটিতে ছ’জন খেলোয়াড়ের পরিবার উত্তর-আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলি থেকে ফ্রান্সে এসে থিতু হয়েছেন। লুইসা নেকিব তাঁদের একজন, যিনি বিশ্বফুটবলের অন্যতম তারকা।
    আর একজন জেসিকা। এই দলের সম্পদ। সম্প্রতি সারফেস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তাঁর একটি পোরট্রেট আলোড়ন ফেলে দেয়। স্পনসর নাইকের একটি হুডিকে হিজাবের মতন মাথার চারপাশে জড়িয়ে নিয়েছেন তিনি। আর মুখের অর্ধেক ঢেকে রেখেছেন গোলের জালের মতন একটি স্বচ্ছ আবরণ দিয়ে।
    প্রশ্ন উঠতে থাকে। জেসিকা কি সামাজিক প্রশ্নগুলোকে খেলার মাঠে নিয়ে আসছেন? তিনি কি হিজাবকে মান্যতা দিতে চান? নাকি তিনি শুধু মনে করিয়ে দিতে চান হিজাব ও ফুটবল একসাথে চলতে পারে না, এই ভুল ধারণাটা সরিয়ে রাখবার সময় এসেছে? সময় এসেছে আত্মীকরণের, প্রান্তিককে জানার চেষ্টা করার, মূলস্রোতে নিয়ে আসার?
    ফুটবলের চেয়ে বলশালী আর কটা সোশ্যাল মিডিয়ামই বা আছে?
  • I | 192.66.79.181 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২০:২৯685005
  • ইনিই তো ?
  • robu | 122.79.38.230 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২০:৩৯685006
  • একদম ঃ-)
  • de | 24.97.60.90 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২১:৩৮685008
  • বাঃ রোবু! কি ভালো টপিক! খুব ভালো হচ্ছে - আরো লেখা আসুক!

    এই অভিবাসী আর শরণার্থী নিয়ে কয়েকদিন ধরেই ভাবছি। তৃতীয় বিশ্ব থেকে অনেকেই তো বিভিন্ন জীবিকা নিয়ে ইউরোপ বা আমেরিকায় থিতু হওয়ার প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালায়, এই শরণার্থী ইস্যুতে তাঁদেরই অনেককে ইন্সেসিটিভলি বিহেভ করতে দেখি - এই কনট্রাস্টটা ঠিক ধরতে পারি না!

    যে লোকটা সফটোয়ার কোম্পানিতে চাগ্রী নিয়ে বা পোস্ট ডক/পি এইচডি করতে বাইরে গিয়ে সারাজীবন অন্য দেশে কাটিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করে, একটু বেটার লাইফের আশায়, তার চাইতে এই শরণার্থীদের আশ্রয় পাওয়ার প্রয়োজন অনেক বেশী নয় কি?
  • aranya | 83.197.98.233 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:১৭685009
  • কি ভাল যে হচ্ছে
  • sosen | 78.105.152.253 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৭:১৮685010
  • রোবু, ভালো লাগছে, পড়ছি।
  • byaang | 132.172.162.39 | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৭:৪৪685011
  • রোবুর লেখাটা খুব ভালো হচ্ছে, মন দিয়ে পড়ছি। কিন্তু ব্যাটা এত কম লেখে! খুব অপেক্ষা করায়।
  • PP | 174.67.157.115 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০৯685012
  • de ,
    যারা সফটোয়ার কোম্পানিতে চাগ্রী নিয়ে বা পোস্ট ডক/পি এইচডি করতে বাইরে যায় তাদের ইউরোপ বা আমেরিকায় থিতু হওয়ার রাস্তা টা একেবারেই সহজ নয়। অনেকেই বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন। শরণার্থীদের সে তুলনায় চাপ কম। শুধু পৌছোতে পারলেই হল। আর শরণার্থীদের মধ্যে যারা ইউরোপ বা আমেরিকায় যান তারা মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবার থেকেই আসেন। তারা ইউরোপ না গিয়ে Gulf country গুলোতে গেলেই তো পারেন।

    এরা থিতু হোয়েই আবার শরিয়তি আইন চাইবে। যাদের তারা খেয়ে পলিয়েছিলো তাদের হোয়ে গলা ফাটাবে। Britain কিছুটা হোলেও বুঝ্ছে
  • Mmu | 102.90.26.58 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৮685013
  • CORRECT .---------:)) :)) :))
  • ... | 117.193.242.2 | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৫:০৬685014
  • আহা কেনো মিছে রসভঙ্গ করেন। বেশ সুন্দর একটা ফ্যন্টাসি রচিত হচ্ছিল, এভাবে জল ঢেলে দেবর দরকার কি।
  • রোবু | 113.10.210.158 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২০:২২685015
  • অভিবাসীর অভিবাসন
    ---------
    সুরিনাম একসময় ডাচ উপনিবেশ ছিল। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে। বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তি এই দেশটির দখল নেবার প্রতিযোগিতায় থাকলেও ডাচরা শেষ অবধি সফল হয়। উর্বর দেশটিতে অর্থকরী ফসলের কোনো অভাবই ছিল না, আখ, কফি, কোকো, তুলো। তাই প্ল্যান্টাররাও আসতে থাকে ইউরোপ থেকে, আফ্রিকার দাস-দের নিয়ে।
    এই দাসরা বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফ্যালে দেশটির রেনফরেস্টে বসবাসকারী আদি আমেরিকান বাসিন্দাদের সাথে, এবং প্ল্যান্টেশন-মালিকদের অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে নিজেরাও আশ্রয় নেয় রেনফরেস্টে। গড়ে ওঠে এক অদ্ভুত মেরুন কালচার। আমরা অবশ্য এখানে এই নিয়ে বিস্তার করব না। শুধু এটুকুই বলার, এই মেরুনদের বিভিন্ন উপজাতির চাপে দাসপ্রথা রদ করতে বাধ্য হয় ডাচ প্রভুরা।
    ১৮৭৩ এ সুরিনাম থেকে দাসপ্রথা উঠে যায়। কিন্তু প্ল্যান্টেশন এর কাজে প্রচুর শ্রমিক দরকার। শুধু ইন্দোনেশিয়া (আরেক ডাচ উপনিবেশ) থেকে শ্রমিক এনেও চাহিদা মিটছিল না। মালিকের প্রয়োজনে মালিক এগিয়ে আসবে না, এ হয় নাকি? তাই শত্রুতা ভুলে ব্রিটিশদের সাথে চুক্তি হয়। ভারতের বিভিন্ন অংশ, মূলতঃ উত্তরপ্রদেশ বিহার আর নেপাল সীমান্ত থেকে পাঠানো হতে থাকে শ্রমিকদের। নামটি দেওয়া হয় খাসা। ইন্ডেঞ্চারড লেবার।
    স্বাভাবিকভাবেই এদের আর ভারতে ফিরে আসা হয় না। সুরিনামের পাঁচ লক্ষ অধিবাসীর ২৭ শতাংশ আজ এই ভারতীয় ইন্ডেঞ্চারড লেবারদের বংশোদ্ভূতরা।
  • রোবু | 113.10.210.158 | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ২১:১০685016
  • নরসিংহ
    --------
    ডাচ ফুটবল টিমের অবস্থা এই মুহূর্তে খুব একটা সুবিধের নয়। ২০১৬ ইউরোতে কোয়ালিফাই করার সম্ভাবনা বেশ কম। ’১৪ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে পৌঁছন দলের এই অবস্থার কারণ বোধ হয় দলের গড় বয়েস অনেকটা বেড়ে যাওয়া। আর এখানেই চলে আসছে পিএসভি-র নরসিং-এর কথা। তাঁর আগের ক্লাব হীরেনভীনের কোচ রন ইয়ান্স এর মতে লুসিয়ানো নরসিং হল্যান্ডের দ্রূততম ফুটবলারদের একজন। গোল করবার এবং করাবার – দুটিরই দক্ষতা সমান তাঁর।
    ২০১৫ এর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে পিএসভি আইন্দহোভেনের হয়ে গোল করেছেন এই ডাচ প্লেয়ার। তাঁর পূর্বপুরুষরা প্রায় দেড়শ বছর আগে ব্রিটিশ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে সুরিনামে এসে কোকো কফি চাষে শ্রম দেন। সুরিনাম ১৯৭৫ এ স্বাধীন হওয়ার পর আরো অনেকের মতই তাঁর পরিবার চলে আসেন হল্যান্ডে। তিনি ও তাঁর ভাই ফুরদিয়েল খেলা শুরু করেন আয়াক্স এর ইউথ অ্যাকাডেমির হয়ে। এর পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি লুসিয়ানোকে। মাঝে কিছুদিন চোটের কারণে ২০১৪ বিশ্বকাপ খেলা না হলেও এই তরুণের মধ্যে ভবিষ্যতের রবেনকে দেখছেন অনেকেই।
    ভারতের পূর্ব-উপকূল থেকে লাতিন আমেরিকা হয়ে হল্যান্ডে থিতু হওয়া নরসিং পরিবারের এই যাত্রার ইতিহাস নিশ্চয়ই রসদ যোগাবে লুসিয়ানোর চলার পথে।
  • b | 135.20.82.164 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৪:৩৩685017
  • বিকাশ ধোরাসু-র গপ্প হবে না?
  • robu | 122.79.38.184 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৭:০৭685019
  • হবে, কিন্তু সিনেমাটা পাচ্ছি না ঃ-(
  • b | 24.139.196.6 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৯:৩১685020
  • ডেইলিমোশনে আছে।
  • robu | 113.10.210.222 | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১০:৫১685021
  • কিন্তু ফ্রেন্চ-এ।
  • s | 60.153.155.31 | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:০০685022
  • এখানে একটা কথা বলা দরকার। যারা ইউরোপে মুসলিম শরণার্থীদের আগমনে চিন্তিত, তাদের প্রশ্ন যে এই ইউরোপীয় দেশগুলো তো এতদিন বিভিন্ন দেশে নিজেদের কলোনি বানিয়েছে, নেটিভদের উপর অত্যাচার আর ওই দেশের সম্পদ নিজেদের দেশে পাচার করেছে। আজকে ইতিহাসের চাকা অল্প হলেও উল্টোদিকে ঘুরলেই গেল গেল আওয়াজ তোলা একচোখাপানা নয় কি?
  • robu | 113.10.210.133 | ০৩ অক্টোবর ২০১৫ ১৮:১০685023
  • সুরিনাম
    -------
    সুরিনামের কথাই যখন এল, তখন আরও বেশ কয়েকজন সফল ফুটবলারের কথা বলতেই হয়।
    বর্তমান ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড কোচ লুই ভ্যান হাল এঁদের একজনের নাম দিয়েছিলেন দ্য পিটবুল। এডগার দ্য পিটবুল ডেভিডস। মাঠের বাকী খেলোয়াড়দের থেকে তাঁকে আলাদা করে দেয় চুলের লক আর গগলস। গ্লুকোমার জন্য প্রোটেক্টিভ গগলস পড়ে মাঠে নামতে হত তাঁকে। অ্যাফ্রো সুরিনামিজ এডগার খুবই ছোটবেলায় পরিবারের সাথে হল্যান্ডে চলে আসেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্লাবে আর ডাচ দলের হয়ে চুটিয়ে খেলা পিটবুল তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। তাঁর খেলায় রয়েছে ডাচ ঘরানার ফিনেস, ট্যাক্টিকাল এবিলিটি আর আফ্রিকার ডাইরেক্ট স্টাইল, নাছোড় মনোভাব এবং পাওয়ার।
    আরেকজন? চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম সফল খেলোয়াড়। তিনটি দেশের তিনটি আলাদা ক্লাবের হয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব কম্পিটিশন জিতেছেন তিনি, যে রেকর্ড এখনো অবধি আর কারুর নেই। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডের যে কোনো দায়িত্বে পারদর্শী ইনি, ক্ল্যারেন্স সীডর্ফ, রক্ষণ এবং আক্রমণ, দুক্ষেত্রেই সমান দক্ষ। আজাক্স, রিয়েল এবং এসিমিলানের হয়ে মোট চারবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন, ডাচ দলের হয়ে খেলেছেন ৮৭ টি ম্যাচ। সীডর্ফ-এর যখন দুবছর বয়স, সুরিনামের পারামারিবো থেকে হল্যান্ডে চলে আসেন তাঁর পরিবার।
    প্যাট্রিক ক্লুইভার্ট – জন্মস্থান ক্যালকাটা, সুরিনাম। হ্যাঁ, সুরিনামেও ক্যালকাটা বলে একটি শহর আছে বৈকি। ৭৯ ম্যাচে ৪০ গোল করা এই স্ট্রাইকার সীডর্ফ ও ডেভিডস এর সমসাময়িক। আরও দুই সুরিনামিজ, রাইট ব্যাক মাইকেল রিজিগার আর ডিফেন্ডার উইন্সটন বোগার্ডে সমেত ক্লুইভার্ট, ডেভিডস, সীডর্ফ – এই পঞ্চপান্ডবের বন্ধুত্বের ডাকনাম হয়ে যাবে দে কাবেল – (the cable)। দে কাবেল-দের সঙ্গে বোয়ের টুইন্স, ড্যানি ব্লিন্ডদের বৈরিতার সম্পর্ক, কোচ গাস হিডিঙ্কের সঙ্গে ডেভিডসের ঝামেলা, শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়দের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, আজাক্স টিমে সমান গুরুত্বের দাবী – অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠবে ডাচ ফুটবল। এবং নিঃশব্দে ঘটে যাবে একটি বিপ্লব। দা কাবেল মাতিয়ে দেবেন ইউরোপিয়ান ফুটবল, দেশের হয়ে, নিজেদের ক্লাবের হয়ে। অ্যাফ্রো-সুরিনামিজ প্লেয়াররা হয়ে যাবেন ডাচ ফুটবল মেন্সট্রিমের অঙ্গ। ডাচ ফুটবল লেখক স্যান্ডার আইতস্মা লিখবেন “হল্যান্ডের জাতীয় দল সন্দেহাতীত ভাবে সুরিনামের কাছে ঋণী। ১৯৯৮ এর সেমিফাইনালে ব্রাজিলের সাথে খেলা দলটিকে দেখুন। তিনজন সুরিনামের অভিবাসী প্রথম এগারোতে ছিলেন। রিজিগার, ডেভিডস, ক্লুইভার্ট। আরো চারজন বেঞ্চে। হ্যাসেলব্যাঙ্ক, সীডর্ফ, আরন উইন্টার আর বোগার্ডে। “
    এঁদের দেখে উঠে আসবেন আরো অনেক কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়। নরসিং, ডে-জং মেম্ফিস ডিপেদের (বাবা ঘানাইয়ান) চামড়ার রঙ নিয়ে আর আলাদা করে কেউ ভাববেন না। "I think that these are the most important feelings that immigrants need in this society." – গুল।

    তবে এঁরাই প্রথম নন, এঁদেরও আগে ছিলেন রাইকার্ড, গুলিট। ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের বাবা সুরিনামিজ, মা ডাচ। বার্সেলোনার অন্যতম সফল খেলোয়াড় ও পরবর্তীতে কোচ।
    আর রুড গুলিট। ১৯৮৮ র ডাচ ইউরো জয়ী টিমের ক্যাপ্টেন। একসময়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার। ব্যালন ডি-অর জয়ী, জিতেছেন ওয়ার্ল্ড সকার প্লেয়ার অব দা ইয়ার-ও, দুবার। এসি মিলান ও ডাচ টিমের লেজেন্ড ছিলেন গুলিট রাইকার্ড ভ্যান-বাস্তেন ট্রায়ো।

    অভিবাসী এই বিভিন্ন খেলোয়াড়দের খেলার স্টাইল, স্ট্যামিনা, পাওয়ার ক্রমশঃ প্রতিদিন নতুন ঘরানার জন্ম দিয়ে চলেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে। এঁদেরই দৌলতে চিরকালের মত পাল্টে যাচ্ছে ফুটবলের স্টাইল, বিভিন্ন ধ্যান ধারণা। এবং এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ গত এক দশকের জার্মান ফুটবল।
    কিন্তু এবার আমরা আলোচনা করব বল্ক্যান ক্রাইসিস নিয়ে।
  • রোবু | 113.10.210.169 | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ১৮:৫২685024
  • অটোমান সাম্রাজ্যের পতন
    উত্তর পশ্চিম আনাতোলিয়াতে ১২৯৯ সনে ওঘুজ তুর্কীরা অটোমান সাম্রাজ্যের পত্তন করে। চতুর্দশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মুরাদ বল্কান অঞ্চল অবধি ক্ষমতা বিস্তার করেন। ১৪৫৩ তে মেহমেদ নড়বড়ে বাইজ্যানটাইনদের পতন ঘটিয়ে দখল নেন অধুনা ইস্তাম্বুল, ইতিহাসপ্রসিদ্ধ কন্সট্যান্টিনোপল।
    ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে অটোমান সাম্রাজ্য দক্ষিণ পূর্ব ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর পূর্ব আফ্রিকার বহু অংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। সমগ্র অটোমান সাম্রাজ্যে বসবাসকারীদের মধ্যে প্রায় পঁচিশটি প্রধান ভাষা প্রচলিত ছিল, এছাড়াও অসংখ্য উপভাষা ও ডায়ালেক্ট।
    অটোমানদের ক্ষমতা হ্রাস পেতে শুরু করে শিল্প বিপ্লবের পর পর ইউরোপীয় শক্তিগুলির প্রভাববৃদ্ধির সমানুপাতে। ১৯১২-র বল্কান যুদ্ধ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমানদের অক্ষশক্তির সঙ্গে হাত মেলানো এবং হার, অতঃপর মুস্তাফা কেমাল ‘আতাতুর্ক’ এর উত্থানের মাধ্যমে অবসান ঘটে সুদীর্ঘ এই সাম্রাজ্যের।
    আনাতোলিয়া অঞ্চলে অটোমান সাম্রাজ্য যেন ছিল একটি মহীরুহসম। বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু জাতির মিলনস্থল ছিল অটোমান সাম্রাজ্যের একেকটি নগর। দূরপ্রাচ্য-র সঙ্গে ইউরোপের যোগাযোগ ও ব্যাবসা-বাণিজ্যের বড় মাধ্যম ছিল অটোমান নগরগুলি। এহেন সাম্রাজ্যের ক্ষমতাহ্রাস এবং ক্রমাবসানের সময় তাই যুদ্ধ হানাহানিও কিছু কম হয়নি। আর্মেনিয়ান জেনোসাইড বহুনিন্দিত। প্রায় দেড় মিলিয়ন আর্মেনিয়ান ক্রিশ্চানকে মেরে ফেলা হয়, মারা হয় গ্রীক অর্থোডক্স ক্রিশ্চানদেরও। যদিও বল্কান অঞ্চলে অটোমান মুসলিমদের এথনিক ক্লিন্সিং এর কথা অতোটা শোনা যায়না। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে শুরু হওয়া এই হত্যালীলায় ১৮২১ থেকে ১৯২২ এর মধ্যে দুই থেকে পাঁচ মিলিয়ন অটোমান মুসলিম, মূলতঃ তুর্কীদের হত্যা করা হয় বল্কানের বিভিন্ন অঞ্চলে। অটোমানের ক্ষমতা হ্রাস, বল্কান জাতীয়তাবাদ এবং জাতিরাষ্ট্র ধারণার উৎপত্তিতে বল্কানের প্রতিটি দেশেই সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিতাড়িত হতে হয় সার্ব ক্রোট স্লাভ বুলগেরিয়ান ও অন্যান্য জাতিদের অত্যাচারে। অসংখ্য হত্যার পাশাপাশি ধ্বংস করা হতে থাকে অটোমান সংস্কৃতি এবং স্থাপত্য। অটোমান সাম্রাজ্যের সুদিনে যে বেলগ্রেড এবং সোফিয়াতে একশো-র ও বেশী মসজিদ ছিল, সেখানে এই দুটি শহরে মাত্র একটি করে মসজিদ টিকে থাকে। ইতিহাস তো ফিরে ফিরেই আসে।
  • রোবু | 113.10.210.169 | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ২০:১৩685025
  • টিটোর যুগোস্লাভিয়া
    ----------------------------
    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে, যখন ইউরোপের ম্যাপ নতুন করে আঁকা হতে থাকে, তখন বিভিন্ন বল্কান জাতিগুলি সোশ্যালিস্ট ফেডেরাল রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়া-র ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরেই সার্ব ক্রোট ও স্লোভেনদের নিয়ে যুগোস্লাভিয়া রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ছটি সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক (স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া হারজেগোভেনিয়া, সার্বিয়া এবং মন্টেনেগ্রো) এবং আরো পরে দুটি স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল (কসোভো এবং ভোয়ভদিনা) নিয়ে এসএফআরআই গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী এবং একমেবাদ্বিতীয়ম নেতা হয়ে ওঠেন জোসিপ টিটো। প্রথম প্রথম সোভিয়েত রাশিয়া ও স্তালিনের সাথে সুসম্পর্ক থাকলেও পরবর্তীতে রাশিয়ার দাদাগিরিতে বিরক্ত হয়ে টিটো সোভিয়েতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে থাকেন এবং নন অ্যালাইন্ড মুভমেন্ট এর সূচনা করেন। তাঁর সাথে ছিলেন নেহরু, সুকার্নো, গামাল আব্দেল নাসের ও ক্বামে এঙ্ক্রুমাহ।
    এসএফআরআই ইউরোপীয় ফুটবলে খুবই শক্তিধর ছিল। যাই হোক, এ আলোচনার পরিসরে তা আসে না।
    বরঞ্চ যেটা আসে তা হল, টিটোর আমলে সমগ্র যুগোস্লাভিয়াতেই জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলি তেমন মাথাচাড়া দিতে পারেনি। টিটো সার্বিয়ার ক্ষমতা হ্রাস করে কসোভো এবং ভোয়ভদিনা গঠন করেন। আলবানিয়ান সেপারেটিস্টরাও খুব একটা সুবিধে করতে পারে না, অন্ততঃ সেই সময়ে।
  • রোবু | 113.10.210.169 | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ২১:৫১685026
  • কসোভো ক্রাইসিস
    -------------------
    টিটোর মৃত্যু হয় ১৯৮০ তে। যুগোস্লোভিয়ায় শুরু হয়য় রাজনৈতিক অস্থিরতা। কসোভো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে আলবানিয়ান এবং সার্বদের সংঘর্ষে। সেই সংঘর্ষ দমন করতে এমারজেন্সি ঘোষণা হয়, রায়ট পুলিশ পাঠানো হয় কসোভোতে। হাজার হাজার কসোভার চাকরি হারাতে থাকেন, কলেজ ইউনিভারসিটি থেকে তাড়ানো হয় ছাত্রদের।
    ১৯৮৭ নাগাদ সমগ্র যুগোস্লোভিয়াতেই এথনিক টেনশন বাড়তে থাকে। কসোভোতে আলবানিয়ান জাতীয়তাবাদী সংস্থাগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। যুগোস্লোভিয়াতে এককভাবে সংখ্যাগুরু সার্বরা কসোভোতে আলবানিয়ানদের দমন করার চেষ্টা করে তাঁদের নেতা স্লোবোদান মিলোসেভিচকে সামনে রেখে। ডেভিড বাইন্ডার নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখেন “Mr. Milosevic and his supporters appear to be staking their careers on a strategy of confrontation with the Kosovo ethnic Albanians”।
    উল্লিখিত বাক্যবন্ধের বিশেষ্যগুলিকে ইতিহাস এবং ভূগোল পরিবর্তন করে কত বিভিন্নভাবে লেখা যায় তা আমরা জানি, তাই না?
  • রোবু | 113.10.210.169 | ১১ অক্টোবর ২০১৫ ২২:৩৯685027
  • ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া
    ------------------------------
    ডায়নামো জাগ্রেব এবং রেডস্টার বেলগ্রেড এর একটি ফুটবল ম্যাচ থেকে ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল, একথা বললে অত্যুক্তি হয়না। ক্রোয়েশিয়ার অবিসংবাদিত ফুটবল হিরো, পরে এসি মিলানের ক্যাপ্টেন এবং অন্যতম খেলোয়াড় যভোনিমির বোবান-এর মাঠের মধ্যে একটি ‘লাথি’ (ফুটবলে নয়, সার্বিয়ান পুলিশকে) এই যুদ্ধকে ‘কিকস্টার্ট’ করেছিল। ভাঙতে থাকে যুগোস্লাভিয়া। রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম ও যুদ্ধের মাধ্যমে যুগোস্লাভ ফেডারেশন থেকে একে একে বেরিয়ে এসে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করে ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া ও বসনিয়া।
    কিন্তু ইব্রাহিম রুগোভা-র প্যাসিভ রেসিস্ট্যান্স পলিসি-র জন্য যুদ্ধগুলির সময়, অর্থাৎ নব্বই দশকের প্রথম ভাগে কসোভো মোটামুটি শান্ত থাকে। “গান্ধী অব দা বল্কানস” আমেরিকা এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে কসোভোর সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন, স্বাধীন কসোভোর পক্ষে দাবী জোরালো করতে সফল হন।
    কিন্তু তা সত্বেও স্বাধীনতা আসেনা। গঠিত হয় সশস্ত্র কসোভো লিবারেশন আর্মি (KLA) ।
    এরই মধ্যে স্বাধীন দেশ আলবানিয়ায় ঘটে যায় কিছু অদ্ভুত ঘটনা। এনভার খোজার মৃত্যুর পর ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠিত হয়, কিন্তু সেই সরকার দেশের এক তৃতীয় অর্থনীতিকে পঞ্জি স্কিমের আওতায় ফেলে দেয়। ফলে সেখানে শুরু হয়য় প্রথমে শান্তিপূর্ণ এবং পরে সহিংস বিক্ষোভ। প্রেসিডেন্ট সালি বেরিসা-র পদত্যাগের পর পুলিশ ও সেনাবাহিনী অস্ত্রভান্ডার খুলে দিয়ে পালিয়ে যায়। সেই অস্ত্র গোপনে পৌঁছতে থাকে কসোভার আলবানিয়ানদের কাছে, KLA –র কাছে। যুগোস্লাভ গভর্নমেন্ট এদের টেররিস্ট আখ্যা দেয়। আর কসোভার আলবানিয়ানদের কাছে এরাই স্বাধীনতা সংগ্রামী। শুরু হয়ে যায় পুরোদস্তুর যুদ্ধ।
    ১৯৯৮। ন্যাটো যুদ্ধে অংশ নেয়। এয়ার সাপোর্ট দিতে থাকে কেএলএ কে। এবং খুবই আশ্চর্যজনক ভাবে প্রথমে কেএলএ কে সন্ত্রাসবাদী দল হিসেবে চিহ্নিত করা ইউএসএ-র বিদেশপ্রতিনিধি রিচার্ড হলব্রোক কেএলএ –র নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন, ছবি তোলেন এবং যুগোস্লাভিয়ার মিলোসভিচকে হুমকি দেন রুগোভা-র সাথে আলোচনার টেবিলে বসবার জন্য, "what's left of your country will implode" (otherwise)।
  • + | 175.246.93.79 | ২৯ অক্টোবর ২০১৫ ১১:৪৮685028
  • রোবুদা,

    তুলে দিয়ে গেলাম
  • | ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:৫২685030
  • তুলে দিলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন