এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • শিশুবিদ্যাপীঠ গার্লস হাই স্কুল

    ranjan roy
    অন্যান্য | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৩৭৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • ranjan roy | 24.99.84.216 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:২৪690106
  • শিশুবিদ্যাপীঠ গার্লস হাই স্কুল
    ==================
    কাশীরামদাসী বিশালবপু মহাভারত। হলদে বাঁধানো মলাট, শিরদাঁড়ার দিকটায় মলিন লালচে কাপড়। কেলাস থ্রিতে পড়ি। দ্রুত বানান ধরে বাংলা পড়তে পারায় দুপুরবেলায় এই পারিবারিক সম্পত্তিটির গায়ে মাথায় হাত বোলানোর অধিকার পেয়েছি। দিয়েছেন স্বয়ং অবিভক্ত হিন্দু পরিবারের কর্তা আমার দাদু সতীশচন্দ্র। আমি তাঁর পেয়ারের নাতি।
    দাদুর তক্তপোষে বসে ভর দুপুরে দুলে দুলে পড়তে থাকি।
    " দেখ দ্বিজ মনসিজ জিনিয়া মূরতি,
    পদ্মপত্র যুগ্মনেত্র পরশয়ে শ্রুতি।
    অনুপম তনু শ্যাম নীলোৎপল আভা,
    মুখরুচি কত শুচি করিয়াছে শোভা।
    সিংহগ্রীব বন্ধুজীব অধর রাতুল,
    খগরাজ পায় লাজ, নাসিকা অতুল।"
    উঃ, কী কঠিন কঠিন খটোমটো শব্দ!
    --দাদু, ও দাদু! মনসিজ মানে কী? আর শ্রুতি? ও, আচ্ছা, কিন্তু অনুপম? আর সিংহগ্রীব? অতুল ও রাতুলের মানেডাও কইয়া দাও।
    দাদুর নাসিকাধ্বনি বন্ধ হয়। উঠে বসে চোখ কচলে বুঝিয়ে দেন স্বয়ংবর সভায় ব্রাহ্মণবেশী অর্জুনের রূপ বর্ণনা। পেয়ারের নাতির বেয়াড়া প্রশ্নে এতটুকু বিরক্ত হন না।
    তারপর আবার ভাতঘুমে ঢলে পড়েন।
    আমি পাতা উল্টে ছবি দেখি। সাদাকালোয় সম্বরণ ও সূর্যকন্যা তপতী। নলদময়ন্তী। জয়দ্রথবধ। চক্রব্যুহে অভিমন্যু। শমীবৃক্ষ থেকে বৃহন্নলাবেশী অর্জুনের অস্ত্র পেড়ে আনা। একলব্যের আঙুল কেটে গুরুদক্ষিনা। সমুদ্রমন্থনের সময় বিষ্ণুর মোহিনীরূপ।
    রঙীন আর্টপ্লেটে পারিজাত হরণের সময় বজ্রপাণি ইন্দ্র। রাজসূয় যজ্ঞের সময় শিশুপাল বধ। সুভদ্রাহরণ। অর্জুনের স্বয়ম্বর সভায় লক্ষ্যভেদ। অম্বার তপস্যা ও প্রাণত্যাগ।
    চোখে লাগে পুরুষদের কানে কুন্ডল ও গলায় হার! দীর্ঘকেশ, কেমন মেয়েলি মেয়েলি, বিশেষ করে কৃষ্ণ। আমার চেনা কোন পুরুষের চেহারার সঙ্গে খাপ খায় না।
    আর মেয়েরা সবাই গুরুস্তনী ও নিতম্বিনী। এমন মহিলাও কোলকাতার পার্কসার্কাস পাড়ায় কদাচিৎ চোখে পড়ত।
    মহিলা? হ্যাঁ, আমার চোখে তখন নারী মাত্রই হয় বালিকা ,নয় মহিলা।

    তখন কি ছাই কেরলের রাজা রবিবর্মার নাম শুনেছি, না ময়মনসিংহের হেমেন মজুমদারের স্নান করে ঘরে ফেরা সিক্তবসনাদের ছবি দেখেছি?
    কিন্তু ভাবিয়ে তুলল অর্জুনের বৃহন্নলা রূপ ধারণ।
    -- ও দাদু, বৃহন্নলা বেশ কি?
    --- পুরুষে যখন মাইয়ামানুষের মতন বেশভুষা করে, হাবভাব দেখায় তখন তারে বৃহন্নলা কয়। হেইডা অর্জুনের ছদ্মবেশ আছিল। ডিজগাইজ।
    --- অন্যরাও তো কানে দুল পরছে, লম্বা চুল বান্ধছে, অরাও কি বৃহন্নলা?
    --- ধূর ব্যাডা প্যাটব্যাক্কল! অর্জুন যে রাজকুমারীর নাচতে গাইতে শিখাইতো?
    --- আচ্ছা, সামনের হোটেলের পাঁইয়াজী? তাইন কি বৃহন্নলা? এই লম্বা চুলে কাংঘি করে যে!
    --- অর ত গোঁফদাড়িও আছে। হেইডা দ্যাখ।
    ---- তাইলে সামনের বাড়ির ফুরকুনদিরে সইন্ধ্যার সময় যে গান শিখাইতে আসে? গানের মাস্টারমশায়-- হে হইল বৃহন্নলা?
    ---- খামাখা আজাইরা প্যাচাল! দিল ঘুমডার বারোটা বাজাইয়া। কাইল থেইক্যা এই বই ধরবি না।

    আমি ভয় পেয়ে খাটের অন্য দিকে সরে যাই। দাদুর নাসিকাধ্বনি ক্রমশঃ গর্জনের রূপ ধরে। কিন্তু আমি অস্থির হয়ে পড়েছি।
    পুরুষ হয়ে মেয়েদের মত আচরণ?
    আমি যে শিশুবিদ্যাপীঠ গার্লস স্কুলে পড়ি। আমাকে যে সেলাইয়ের ক্লাসে বসতে হয়। গতবছর ছোট একটা চটের টুকরোয় সবাইকে ক্রস স্টিচ শিখতে হয়েছিল। এ বছর তো একটা সবুজ কাপড়ের বড় টুকরোয় রান, হেমস্টিচ ও একটা সাদা কার্পেট মত কাপড়ে ছুঁচে ডাবল সুতো পরিয়ে চেনস্টিচ করতে হচ্ছে। আমি কি আস্তে আস্তে মেয়ে হয়ে যাব? নইলে বৃহন্নলা? কক্ষণো না। আমি সেলাই ক্লাসে ফেল করব। ইচ্ছে করে। তাহলে নিশ্চয় আমাকে অন্য স্কুলে মানে বয়েজ স্কুলে দেবে।
    হ্যাঁ, কাছাকাছি একটা স্কুল আছে বটে। মডার্ন বয়েজ স্কুল। পার্ক স্ট্রীটের একমাথায়। পার্ক শো হাউস বলে একটা সিনেমা হলের কাছে।ওখানে আমার পিসতুতো দাদা পড়ে। এক কাকা আগে পড়েছে।
    আর এই শিশুবিদ্যাপীঠ? এতে আমার ছোটপিসি, দিদিভাই সবাই পড়েছে। স্কুলে যাবার পথে পাড়া থেকে যারা বয়েজ স্কুলে পড়ে তারা আমাদের খেপায়, মেয়েলি সুর বের করে নাকিসুরে কথা বলে।
    কিন্তু আমাদের স্কুলের পড়াশুনোর নাকি বেশ নাম?
    তাই ক্লাস থ্রি এর জয়শ্রী আমাকে শিখিয়ে দেয় আর আমিও সেইমত ওই ছেলেদের দেখলে ছড়া কাটি।
    " মর্ডান পাঠশালা,
    বিদ্যে শেখায় কাঁচকলা।
    বেঞ্চিগুলো সরু সরু,
    মাস্টারগুলো আস্ত গরু।"
    ওরা থতমত খেয়ে কেটে পড়ে। ধমকে যায় , বিকেলে দেখে নেবে।
    আমাকে ঘিরে ধরে অজানা ভয়। মাস্টারমশাইরা গুরুজন, ওঁদের 'আস্ত গরু' বল্লাম? সরস্বতীঠাকুর পাপ দেবেন নাতো?
    (চলবে)
  • ranjan roy | 24.99.46.50 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:৫৬690117
  • (২)
    কোন এক জানুয়ারী মাসের সকালবেলায় সরস্বতী পূজোর পরের দিন আমাকে দিদিভাই নিয়ে গিয়েছিল ইশকুলে। সেই স্কুলে মর্নিং সেকশনে কেলাস ফোর পর্য্যন্ত, আর দুপুরে ফাইভ থেকে টেন। তখন বলত স্কুল ফাইনাল। ব্যস ,তারপরে কলেজে গিয়ে আইকম বাইকম পড়তে থাক।
    মর্নিংয়ে সব টিচারকে মাসিমা বলতে হয় আর ডে-সেকশনে সবাই দিদি।
    তা ভর্তির জন্যে মাসিমাটি আমাকে দুটো কবতে জিগ্যেস করে এক থেকে দশ পর্য্যন্ত মুখস্থ শুনে ভর্তি করে নিলেন। দিদি স্কুলের স্টেশনারি থেকে একটা খাতা আর উড পেনসিল কিনে দিয়ে চলে গেল। বলল--তিন ঘন্টা পরে নিতে আসব।
    মাসিমার হাত ধরে পাঁচবছুরে আমি চল্লেম দরোজা জানলা নীল পর্দায় ঢাকা ক্লাস রুমে। ক্লাসে ঢুকে উনি আমাকে সোপর্দ করলেন এক বয়্স্ক একট উ ঝুঁকে পড়া মহিলার কাছে।
    --শতদলদি, নতুন ছেলে। শোন খোকা , ইনি তোমার শতদলমাসিমা--- ইনফ্যান্ট ক্লাসের টিচার।লক্ষ্মী হয়ে থাক। ওনার কথা শুনে ভাল করে পড়াশুনো কর।
    উনি চলে গেলেন। শতদলমাসিমা আস্তে আস্তে বললেন-- কী নাম তোমার খোকা?
    -- হরিদাস পাল।
    -- শোন , এভাবে নয়। বলবে - শ্রীমান হরিদাস পাল। বাবার নাম?
    -- ত্রিভুবন পাল।
    -- না, না। বলতে হয় শ্রীযুক্ত ত্রিভুবন পাল মহাশয়, বুঝলে? যাও, সেকন্ড বেঞ্চির কোনায় বীণার পাশে গিয়ে বস।
    দেখলাম সবার সামনে একটি রঙিন বইয়ের পাতা খোলা। উনি অ্যাকশন করে বাংলা বর্ণমালা শেখাতে লাগলেন। আর বাচ্চারা সরু মোটা সুরে আউড়ে চলল।
    -- থ--থামগুলো সব ভারি ভারি,
    দ----দালান কোঠা সারি সারি।
    ক্লাস শেষ হতেই পেছন ত্থেকে কেউ চিমটি কাটল। পেছন ফিরে তাকাতেই একজন জোরে জোরে কিছু বলল আর সবাই হেসে উঠল।
    --- চিমটি কাটলে কেন?
    ---- না তো, তোর কালো চামড়ায় কেমন হলুদ হলুদ লেগে আছে। সেটা দেখছিলুম।
    ---- হি হি হি। দেখনা, ছেলেটার গায়ে সরস্বতী পূজোর দিনের হলুদ লেগে আছে।
    আমি আমতা করে কৈফিয়ৎ দিই-- আমাদের বাড়িতে সরস্বতী পূজোর সময় মা-কাকিমারা সব বাচ্চার গায়ে বাটা-হলুদ লাগিয়ে ছিরি তোলে। তারপর চান করায়। এতে হাসছ কেন?আমার
    -- ওরে আমার কেলোভূত রে! হলুদ মেখে যা ছিরি হয়েছে!
    --- না, না। কালোমানিক বল।
    হাতাহাতি জাপ্টাজাপ্টি-- একেবারে কন্ঠ পাকড়ি ধরিল আঁকড়ি দুইজনা দুইজনে।
    -- অ্যাই, এসব কী হচ্ছে ক্লাসের মধ্যে?
    এবার একটা ভারী গলা।
    কোনরকমে উঠে দেখি এক দশাসই মহিলা, আস্তে আস্তে দুলে দুলে ক্লাসে ঢুকছেন।
    --- দেখুন না মাসিমা! এই নতুন ছেলেটা খাতাবই কিছু নেই, পড়তে এসেছে আর প্রথম দিনেই মারামারি করছে।
    --আমাকে---- আমাকে ও কেলোভূত কালোমানিক এইসব বলেছে।
    মাসিমার বড় বড় চোখ, বিশাল হাতের থাবা। কিন্তু উনি পরম মমতায় আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে কুঁচকে যাওয়া শার্টের কলার টেনে টুনে ঠিক করে দিয়ে বললেন-- যাও খোকন, ঝগড়া কর না। এরা সব তোমার বন্ধু। দেখবে কাল থেকে সবার সঙ্গে ভাব হয়ে যাবে।
    পাশে বসা মেয়েটিকে ফিসফিস করে জিগ্যেস করি --উনি কে?
    ও তেমনি ফিসফিস করে বলে-- জগদম্বা মাসিমা। ড্রইং শেখান।
    আমি আনন্দে ভরে উঠি। ছবি আঁকতে বড় ভালো লাগে যে!
    আর উনি দ্রুত হাতে একটি চকখড়ির সাহায্যে ব্ল্যাকবোর্ডে ফুটিয়ে তোলেন-- একটি নদী, পাড়ে একটি গাছে নৌকো বাঁধা।
    তারপর একগাল হেসে গোটা ক্লাসকে জিগ্যেস করেন--কি, ভালো লেগেছে?
    সবাই আকাশবাণীর শিশুমহলের মত একসুরে বলে ওঠে--হ্যাঁ-অ্যা অ্যা--।
    -- আচ্ছা, তোমরা খালি একটা গাছ আঁকো, যে কোন গাছ, যার যেমন ইচ্ছে।
    এর পরের ক্লাস শোভামাসিমার। উনি গান শেখান। হারমোনিয়ামে ঝড়ের মত হাত খেলিয়ে একটা সুর তুলে তারপর ক্লাসের দিকে তাকিয়ে ধমকের সুরে বললেন-- আগের দিন যেটা শেখানো হয়েছিল?
    ব্যস, সবাই কোরাস ধরলঃ
    ইন্ডি, মিন্ডি , সিন্ডি তিনোজনে,
    গাছের আড়াল থেকে উঁকি মারে।
    একদিন শনিবারে কে যেন গাইছিল গান,
    তাই শুনে ইন্ডিমিন্ডির উড়ে গেল প্রাণ।

    -- অ্যাই খোকা, চুপ করে আছ কেন? বোবাকালা নাকি?
    -- আমি-- আমি আজ নতুন ভর্তি হয়েছি।
    ---- গানের আবার নতুন পুরনো কী? এসব চলবে না।
    এরপর দ্বিতীয় গান শুরু হল।
    - লালরঙা ঘুড়ি! আয় না উড়ি।
    - সবজে ঘুড়ি, আয় না লড়ি।
    --আয় না উড়ি, নীল আকশে।
    --- আয় না লড়ি, জোর বাতাসে।
    আজকের মতন ইস্কুল শেষ। সবার মত আমিও অফিসের পাশে দাঁড়িয়ে থাকি। একে একে সব বাচ্চারা বড়রা চলে যাচ্ছে। বাচ্চাদের বাবা-মা বা দাদাদিদি আসলে নাম জিগ্যেস করে ওদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। একটু বড় ছেলেমেয়েরা নিজেরাই চলে যাচ্ছে। আমার বাড়ি থেকেও দিদিভাই আসবে, নিয়ে যাবে।
    একে একে স্কুল বাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল। প্রায় সবাই চলে গেছে। কিন্তু দিদিভাই কই? এবার আমি কী করি? অনেকক্ষণ ধরে গলার ভেতর চেপে থাকা কান্না আর আটকানো গেল না।
    অফিসের ক্লার্ক মণিবাবু চমকে উঠে চশমার ফাঁক দিয়ে দেখলেন। তারপর আমার হাত ধরে স্টাফরুমে নিয়ে গেলেন।
    সেই মাসিমা, যিনি ভর্তি করেছিলেন।
    --কোথায় থাক?
    -- ধাঙড়বাজারের সামনে। সার্কাস হোটেলের সামনে।
    তারপর খাতাটা দেখাই।দিদিভাই গোটাগোটা অক্ষরে প্রথম পাতাতেই নাম ঠিকানা লিখে দিয়েছে।
    উনি একপলক দেখে জোরে ডাকলেন--লক্ষ্মী-ই-ই!
    সাদা সেমিজ ও সাদা থান পরা একজন আয়ামাসি এগিয়ে এল। দেখলাম মাসি খালিপায়ে।
    --শোন, এর বাড়ি থেকে কেউ আসেনি। ওদিকের পাড়ার কোন বাচ্চা আছে? একটু বড়মত?
    --আছে, ক্লাস ফোরের কাবেরী সান্যাল। কিন্তু হে ত নিজে নিজেই বাড়ি যায়। এক্ষণই রওনা দিব।
    -- বাজে বোকো না। তুমি আর কাবেরী একসঙ্গে একে নিয়ে যাও। প্রথম দিন তো। বাড়িতে পৌঁছিয়ে তবে এসো।
    চশমাচোখে হাসিখুশি ফুটফুটে এক দিদি আমার হাত ধরে । আর ব্যাজার মুখে আয়ামাসি।
    সাবধানে রাস্তা পেরনো হয়। বাড়ির একটু কাছে আসতেই লক্ষ্মীমাসি বলে--কাবেরী , অরে তুমি সাবধানে বাড়ি অব্দি ছাইড়্যা আইসো। আমার একটু তাড়াতাড়ি আছে।
    তারপর চটপট রাস্তা পেরিয়ে উল্টোদিকে চলে যায়।
    আমি হাঁফ ছাড়ি।
    কাবেরীদি আমাকে হাসিমুখে গল্প শোনাতে শোনাতে বাড়ির দরজায় নিয়ে আসলে বলি-- এই তো দোতলায়। এবার আমি নিজেই পারব। তুমি যাও।
    তারপর এক ঝটক্বেয়ে আয় হাত ছাড়িয়ে সোজা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকি।
    একটু পরে আমার বাঙাল পরিবার বাচ্চাছেলেকে আরেকটি বাচ্চামেয়ের দায়িত্বে ঘরে পাঠানোর অপরাধে স্কুলে গিয়ে ঝগড়া করবার জন্যে কোমর বাঁধে।

    সে উৎসাহে একঘটি জল ঢেলে দিয়ে আমি বলে উঠি-- যদি তুমরা কেউ স্কুলে গিয়া আমারে লইয়া কাইজ্যা কর, তবে আমি কাইল থেইক্যা স্কুলে যাইতাম না।
    শ্বেতপতাকা পতপত করে ওড়ে। পিকাসোর পায়রা অলিন্দে বকবকম করে।
    (চলবে)
  • potke | 126.203.16.154 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:১৪690128
  • আরে, অন্যটা শেষ করুন!
  • সে | 198.155.168.109 | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:২৬690139
  • ভাল হচ্ছে
  • I | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:৩৯690150
  • দিব্য হইতাসে। চালায়া যান।
  • dd | ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ ২২:৪২690155
  • হ্যাঁ, গুড হচ্ছে। কিন্তু রঞ্জন খুব কম লেখাই শেষ করে। মাইন্ড ইট।
  • ranjan roy | 24.99.121.58 | ০১ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:১৪690156
  • ৩)
    ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে মা ডেকে তুলেছে। ঘড়ি বলছে শীতের ভোর পাঁচটা। কিন্তু বাইরে কিছু দেখা যাচ্ছে না। এমন সময় বৃষ্টি নামল। অকালবর্ষণ। হু-হু হাওয়ার ঠেলায় মুখ দিয়ে হি-হি বেরোচ্ছে। মা পরিপাটি করে চুল আঁচড়ে সাদা জামাপ্যান্ট পরিয়ে পূজোর বাসী প্রসাদী ফুল মাথায় ঠেকিয়ে দিল। এবার স্কুল যেতে হবে। এমনসময় কড়কড় করে বাজ পড়ল।
    দাদুর মুখ ব্যাজার।
    --এই রকম দিনে কি না গেলেই নয়? ঠাডা পরতাছে যে!
    ঘোমটার ভেতর থেকে মার নম্র কিন্তু দৃঢ় কন্ঠস্বর।
    --- বার্ষিক পরীক্ষা যে, বাবা! না গেলেই নয়। রাম রিকশা ডাইক্যা আনতাছে।
    আমি বুকপকেটে রাখা অ্যাডমিট কার্ডটাকে একবার বের করে ভয়ে ভয়ে আবার যথাস্থানে চালান করি। একটুকরো সাদা কর্ডবোর্ডের টুকরো, তাতে পেন দিয়ে আমার নাম ও রোল নম্বর লেখা। অমন একটি নিরীহ চিট যে কী পরিমাণ আতংকের উৎস হতে পারে বোঝা মুশকিল। তখন বুঝিনি যে সেই একটুকরো কাগজ কখনো প্রেমপত্র, কখনো মেমো, কখনো শোকজ বা চার্জশিট হয়ে আমাকে আজীবন তাড়া করে বেড়াবে।
    পরীক্ষার পরে একদিন শতদল মাসিমা হাতে ধরিয়ে দিলেন হলুদ রঙা এক কার্ড। সেটা পড়ে বাড়িতে কাকাপিসির দল আহ্লাদে ডগোমগো। আমি নাকি "বেবি বা ইনফ্যান্ট" কেলাসে সেকন্ড হইয়া বংশের মুখ উজ্বল করিয়াছি।
    দাদুর গর্বিত ঘোষণা -- আমি আগেই কইসিলাম, এ ছেলে---!
    এখন বুঝি আমি নিশ্চয়ই মুখে প্রথম বুলি ফুটলে বাবা-মা না বলে গুংগা বলে চেঁচিয়েছিলাম।
    হাতে এল কার্সিভ রাইটিং অভ্যাসের বই! পাঁচবছুরের জন্যে কী কঠিন! এর ফলে আজও কোন কিছু লিখতে গায়ে জ্বর আসে। কিন্তু ছোটকা এনে দিল ন্যাশনাল বুক এজেন্সির বই "পাতাবাহার"। কী বই! কভার এঁকেছেন সত্যজিৎ রায়। ইলাস্ট্রেশন -- পুর্ণেন্দু পত্রী, খালেদ চৌধুরী। গল্প লিখেছেন লীলা মজুমদার, সমরেশ বসু, মানিক বন্দ্যো, সৌরীন্দ্রমোহন, চিন্মোহন সেহানবীশ, ননী ভৌমিক।
    প্রবন্ধ রয়েছে "বেদে আছে", "মানুষ! মানুষ!" ও হরপ্পা মহেন্জোদাড়ো নিয়ে।
    ( এর পরবর্তী সংস্করণ বেরোল দুবছর আগে বইমেলায়, প্রায় ৫৮ বছর পরে!!)
    তা আমি একটা উডপেন্সিল নিয়ে বইয়ে আঁকা মহেন্জোদারো হরপার পাশে গোদা গোদা করে লিখলাম 'এমেরিকা'! সেটা দেখে দাদু আমার জন্মগত মেধার বিষয়ে সন্দিহান হলেন।

    কিন্তু পরের বছরে বাবা ইন্ডিয়ান আর্মির থেকে বেরিয়ে বর্তমান ঝাড়খন্ডের হাজারীবাগ জেলায় গোমোর কাছে বোকারো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যোগ দিয়ে লেবার ইউনিয়নের সেক্রেটারি হয়ে আমাদের ছোট্ট পাহাড়ের কোলে মহুয়া-পলাশের জঙ্গলে নতুন গড়ে ওঠা টাউনে নিয়ে গেলেন। সেখানে ছাতা খুললে লাফিয়ে পড়ত কেউটের বাচ্চা। রাত্তিরে শোয়ার সময় কানে আসত হায়েনার হাসি। আর বসন্তের দিনে পলাশে পলাশে আকাশে আগুন ধরিয়ে দিত।
    কিন্তু ওখানে স্কুল নেই। শিশুবিদ্যাপীঠ ছেড়ে ঘরে বসে একবছর সহজ পাঠ, ধারাপাত --কড়াকিয়া, গন্ডাকিয়া, শতকিয়া আর আর্যা মুখস্থ করতে হল।
    "কাঠায় কাঠায় ধূল পরিমাণ,
    বিশগন্ডা হয় কাঠার সমান"।
    ইংরেজির জন্যে ওয়ার্ড বুক পড়াতো মা।
    " ব্রিন্জল বার্তাকু, কুকুম্বার শসা,
    পামকিন লাউকুমড়ো প্লোম্যান চাষা"।
  • ranjan roy | 24.99.100.151 | ০২ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:৪৭690157
  • ৪)
    আবার শিশু বিদ্যাপীঠ। বেকবাগানের মিঠাইয়ের দোকানের পাশ দিয়ে একটু এগিয়ে বাঁয়ে মুড়লে কর্নেল বিশ্বাস রোড। পাঁচ-ছটা বাড়ি ছাড়াতেই রাস্তা মিশে গেল পারপেন্ডিকুলার তারক দত্ত রোডে। ব্যস্‌, ওইখানেই দাঁড়িয়ে ছিল মেটে রঙের দোতলা পাকাবাড়িটি। অধিকাংশ স্কুল বাড়ির মতই ইংরেজি ইউ অক্ষরের আকারে। সামনে ছোট্ট একটু বাগানের মত। একটি কুঁকড়ে বেঁকে যাওয়া বেঁটে টগর গাছ। তাতে সাদা ফুল ফোটে, একটি শিউলি গাছ তার সঙ্গী। এই জায়গাটায় প্রেয়ার হয়। বেশ সুরেলা গলায় কোন মেয়ে লিড করে। মর্নিংয়ে হৈমন্তী; ডে-সেশনে মানসীদি, ক্লাস টেনের।
    জোড় হাত, বোঁজা চোখ--" তুমি আমাদের পিতা, তোমায় পিতা বলে যেন জানি; তোমায় নত হয়ে যেন মানি। তুমি কোর না, কোর না রোষ"।
    হ্যাঁ, মেয়েরা শুরু থেকেই পাঠ নিচ্ছে, নত হয়ে মানতে হবে, সারাজীবন।
    এই গানের সুরে একটা বিষণ্ণ বিপন্ন গন্ধ টের পাই। অন্যমনস্ক হয়ে যাই। কিন্তু মনটা বলে --পোষাবে না। চল, অন্য কোথাও যাই।
    আচ্ছা, প্রার্থনা গাওয়ার সময় মেয়েদের অমন সুন্দর দেখায় কেন?

    ইউ অক্ষরের শেষ বিন্দুতে আমার ক্লাস রুম--ক্লাস-টু। লম্বা বেঞ্চের মধ্যে টিনের ছোট ছোট দোয়াত পোঁতা। তাতে স্কুলের অফিস থেকে দ্প্তরী শ্যামভাই এসে কালি ভরে দিয়ে যায়। আমরা বাড়ি থেকে নিব-কলম নিয়ে আসি। ঘরেও সুলেখা কোম্পানির তৈরি ছোট ছোট কালির বড়ি জলে গুলে কালি বানিয়ে লেখা অভ্যেস করি ও বড়দের ঝর্নাকলম জুল জুল করে দেখি।
    কোনটা ভাল কলম তা নিয়ে বাড়িতে বড়দের তুমুল তর্কবিতর্ক চলে--শেফার্স না পার্কার?
    আমরা শিশু সাহিত্য সংসদের "ছড়ার ছবি" সিরিজ থেকে কোরাসে পড়ি--
    " বেড়াল জাতির মাঝে সুবিশাল বাঘ যে,
    লালচে শরীরে তার কালো ডোরা দাগ যে।
    এশিয়ার সুগহন বিশাল অরণ্য,
    সেইখানে বাস করে অতিশয় বন্য।"
    না, একবছর পরে ফিরে এসে আমার বছর নষ্ট হয় নি। মর্নিং সেকশনের হেডমিস্ট্রেস হাসি মাসিমা আমাকে পুরনো বন্ধুদের ব্যাচেই অ্যাডমিশন দিয়েছেন। ক্লাস-২, সেকশন-- বি।
    আমার ইংরেজ জমানার উকিল দাদু এই অবিচারে বিস্মিত,আহত ও ক্রুদ্ধ।
    -- বি সেকশন ক্যারে? এ সেকশনে না? তুই কি ক্লাসে পড়া কইর‌্যা যাস না?
    আমি হতভম্ব। ওঁর জমানার হিসেবে এ, বি, সি হল মেরিটের ভিত্তিতে গ্রেডেশন।
    উনি বললেন-- বৌমা, এত কম সময় পড়লে হইব না।ভাল কইর‌্যা মুখস্থ করাও। জাইন্যা রাখ--"আবৃত্তি সর্বশাস্ত্রাণাং মেধাদপি গরিয়সী"। মুখস্থ না করলে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট হয় না। যখন কইল্কাতায় রিপন কলেজে ল' পড়তাম, তখন সকালে হস্টেল থেইক্যা পায়ে হাঁইট্যা গঙ্গাস্নান করতে যাওয়ার সময় বন্ধুরা একে অন্যেরে সিভিল প্রসিডিওর কোডের সেকশনগুলা মুখস্থ শুনাইতাম।
    আগামী সপ্তাহে আমি অর স্কুলে গিয়া কথা কইয়াম। আমার নাতি বি-সেকশনে? হইতে পারে না।
  • ranjan roy | 24.99.235.67 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৪২690158
  • ৫)
    দাদু দরবার করতে গেলেন স্কুলে। টিচাররা ধৈর্য ধরে বোঝালেন যে সেসব দিন গেছে। এখন আর সেকশনগুলো ছাত্রদের পারফরমান্স হিসেবে হয় না, হয় কে কবে ভর্তি হয়েছে তা নিয়ে। আগামী হাফইয়ারলিতে সি সেকশনের ছাত্রকে ফার্স্ট হতে দেখলে আশ্চর্য হবেন না।
    দাদু ময়মনসিং জেলার বাজিতপুর আদালতের ওকালতি অভিজ্ঞ্তার ভিত্তিতে এর মধ্যে কোন ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেয়ে সন্দিগ্ধ মনে বাড়ি ফিরলেন ও নাতির হাফইয়ারলি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিয়ে শ্যেনদৃষ্টিতে দেখাশুনো করতে লাগলেন। কিন্তু দাদুর শালগ্রাম শিলা বোধহয় কিঞ্চিৎ কুপিত হয়েছিলেন।
    হাফ ইয়ারলি পরীক্ষার ক'দিন আগে বিশ্বকর্মা পূজো। পার্কসার্কাসের আকাশে রঙবেরংএর ঘুড়ির মেলা। পেটকাট্টি, মোমবাত্তি, চাঁদিয়াল, চৌরঙ্গী।দাম দু'পয়সা থেকে এক আনা দু'আনা করে চার আনা পর্য্যন্ত, সাইজ অনুসারে। মাঞ্জাও হয় চিঁড়ের নয় গঁদের । একটা টেনে খেলার, অন্যটা ঢিলে খেলার জন্যে।
    ভিজে ছাদে কদিন খালি পায়ে ঘুরে পাশের ফ্ল্যাটের সমবয়সীদের সঙ্গে দৌড়ে কেটে আসা ঘুড়িগুলো ধরতে ধরতে বাবু হরিদাস ঘুড়িশাস্ত্রে বিদ্যাদিগগজ মহাধনুর্ধর হয়ে উঠলেন। পরিশ্রমের ফল হাতে হাতে পাওয়া গেল। হরিদাস লুটলেন একটি মোমবাত্তি ঘুড়ি সম্ভবতঃ এক আনার আর তার সঙ্গে লেজে লেগে থাকা অনেকখানি মাঞ্জাসুতো। ফাউ হিসেবে জুটলো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর।
  • ranjan roy | 24.96.97.71 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৭:৩৫690107
  • জ্বরো গায়ে অংক পরীক্ষা দিয়ে হাতে রইল ৩৬ নম্বর -- শিশুবিদ্যাপীঠের নিয়মে ফেল। প্রাপ্তিযোগ সাদা রঙের মার্কশীট।
    ব্যস্‌, উকিল সতীশচন্দ্রের মনে হল যেন তাঁর বিপক্ষ ডকুমেন্ট জাল করেছে! এবার উনি কোন মুখে নাতির সেকশন বদলের জন্যে পিটিশন দেবেন?
    হরিদাসের ছোটভাই নাচতে নাচতে হলুদ কার্ড নিয়ে ঘরে ঢুকল।হলুদ রং? মানে ৮০% এর ওপরে? সতীশচন্দ্র গর্জে উঠলেন-- হইছে! বড়ভাই ফেইল মারছে আর ছোটভাই আনন্দে নাচে! কুন আক্কল নাই!
    উনি হরিদাসের সাধের মোমবাত্তি ঘুড়িটি জানলা গলিয়ে নীচে ফেলে দিলেন।
    আস্তে আস্তে পাক খেতে খেতে ভিজে মাটিতে পড়ে ক্রমশঃ অস্তিত্বহীন হতে থাকা ঘুড়িটির দিকে ও জলভরা চোখে তাকিয়ে রইল, যতক্ষণ পারে।

    একটা গলি পরে থাকে হিরন্ময় সাহা।ডাক নাম শিবু।ওর বাবা ঢাকার শাঁখারিটোলা থেকে এসে এখানে জমি কিনে ছোট একতলা বাড়ি বানিয়ে নিজের ব্যবসাপত্তরে ব্যস্ত। ও হরিদাসের সঙ্গে একই স্কুলে পড়ে। কিন্তু ওর একটা মস্ত দোষ। ও পড়ে সি সেকশনে। দাদু নাতিকে পই পই করে মানা করেন-- সি সেকশনের ছেলের লগে কোন বন্ধুত্ব করবি না।
    কিন্তু হরিদাসের মন মানে না। শিবু যে ওকে চায়! অনায়াসে এসে বলে আইজ আমার বাড়ির উঠানে জলসা করুম। তর বাড়ি থেইক্যা-- একটা চাঁদোয়া আছে কইছিলি না-- হেইডা লইয়া আয়।
    জলসা ! সেটা কী জিনিস? হরিদাসের মনে হয় শিবু যেন এক জাদুকর। ও চুপচাপ ঠাকুমার ট্রাংক খুলে ফুলকাটা চাঁদোয়া নিয়ে আসে।শিবু ঠিক করে কে কে গান করবে আর হরিদাস ওদের পাঠ্যবইয়ের দশম পাঠের রুইদাস চাষীর অভিনয় করবে। কিন্তু জলসা শুরু হতে পারল না। কোথা থেকে টের পেয়ে দাদু এসে নাতির কান ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে এলেন। ওই একশ কদম পর্য্যন্ত নাতির কান ওঁর হাতছাড়া হয় নি। হরিদাসের কানে বাজছিল শিবুর ঠাকুমার অনুরোধ-- মাইরেন না গো! ছাওয়ালডারে মাইরেন না!
    বাড়ি ফিরে সতীশচন্দ্র হিসহিস করে বললেন-- সি সেকশনের ছেলের সঙ্গে মিইশ্যা অধঃপাতে গেছস। স্কুল থেইক্যা বাড়ি না ফিরা বন্ধুর বাড়িতে আড্ডা! আরেকবার যদি--!
    কানে আড়াই পাক খেয়েও হরিদাসের বোধবুদ্ধি হল না। ম্যাজিশিয়ান শিবু হটাৎ হাজির হল এক নতুন অ্যাকশন প্রোগ্রাম নিয়ে। সরস্বতী পূজো করা!
    সত্যি সত্যি সরস্বতী পূজো? আমরা করব? কী করে? প্রতিমার দাম, ফলফুলের খরচ, পুরুতমশায়ের দক্ষিণা--এসব আসবে কেং করে?
    ম্যাজিশিয়ান শিব্যা তৈরিই ছিল। কেন , চাঁদা তুলে। বড়রা যেমন করে করে। ওরা তো রসিদ দেয়। তাতে কি, আমরাও দেব। এই দ্যাখ -- আমি বানিয়ে এনেছি। ওমা, কী সুন্দর!
    পার্কসার্কাস বালক সংঘ! অমুকের থেকে অত টাকা অত নয়া পয়সা "ধন্যবাদের সহিত গৃহীত হইল"। হোক না হাতে লেখা, কিন্তু ঠিক বড়দের রসিদ বইয়ের মত। পূজো কোথায় হবে? কেন, আমাদের আঙিনায়। সব ঠিক করা আছে, শুধু পাড়ার দোকানে দোকানে গিয়ে চাঁদাটা তোলা। কাল থেকে শুরু।
    হরিদাসের মনটা খুঁত খুঁত করে। সরস্বতী বানানটা ভুল! কেউ যদি কিছু বলে।
    না, কোন দোকানিই বানান নিয়ে কিছু বলল না। শুধু হাতে লেখা রসিদ বলে অনেকেই মানা করল। যারা দিল তারাও চার আনা, আট আনার বেশি উপুড় করল না।
    একটি বড় দোকানে এক পয়সা দেব না বলায় শিবু বলল-- অত বড় দোকান! তাও ছোটছেলেদের পূজায় একটা গোটা টাকা দিতে পোঁদটা চুলচুল করে?
    ওরা তাড়া করল। চাঁদাতোলার সেখানেই ইতি। সব মিলিয়ে উঠেছিল ন'টাকা ষাট পয়সা। এত কমে পূজো হল না। তবে শিবুদের পারিবারিক পুরুতমশায় বল্লেন --এভাবে ছেড়ে দিলে সরস্বতী রুষ্ট হবেন, বাচ্চাদের পড়াশোনায় বাধা পড়বে। তাই আরো কিছু জুড়ে কুড়িটা টাকা দিন-- আমি কালীঘাটে ওদের নামে পূজো দিয়ে প্রসাদ এনে দেব।
    এক ক্লান্ত বর্ষার মন কেমনকরা বিকেলে শিবু বা শিব্যা এসে গেল হরিদাসদের ভাড়াবাড়ির ছাদে। হরিদাস নিজের ছোটভাই ও পাশের ফ্ল্যাটের জনাদুই সঙ্গীসাথী জুটিয়ে ঘুড়ি লাটাই নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু মাঝে মধ্যেই টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। ঘুড়ি উড়বে কেমন করে?
    শিবু বলল-- আয়, আমি একটা মন্তর জানি। ঠাম্মা শিখাইছে। ওই ছাদের জলের ট্যাংকের উপরে উইঠ্যা আমরা তিনজন যদি দশবার জোরে জোরে মন্তরটা কই তো রইদ উঠবো।
    আমরা মহাউৎসাহে গঙ্গাজলের খালি ট্যাংকের উপরে উঠে দাঁড়ালাম। বাঃ, এখান থেকে পার্কসার্কাসের ধাঙড়বাজারের পাড়া কেমন যেন অপার্থিব ও মজার দেখায়। আর নিজেদের বেশ শক্তিশালী মনে হয়। ওই তো সার্কাস হোটেল। বারান্দায় গনগনে উনুনে সেঁকা হচ্ছে গরুর মাংসের কাবাব। ওপাশে বুবুলদের বাড়ির তালগাছে তাল পাকছে, শিবুদের সাদা বাড়িটা কি ছোট। চোখে পড়ছে বালু হক্কাক লেনের গলিটাও।
    শুরু হল জোরে জোরে সমস্বরে মন্তর পড়াঃ
    "আলতা পালতা চুকার ঝোল, আদা দিমু ছেঁইচা,
    রইদ ওঠ ফাইট্যা! রইদ ওঠ ফাইট্যা!"
    বার চারেক বলার পরই দেখতে পেলাম ম্যাজিকটা। নীচের রাস্তা থেকে ভেসে এল তুমুল গর্জন। লক্ষ্য আমরা। আসলে অত নীচের এলিভেশন থেকে মনে হচ্ছে যে তিনটে বাচ্চা পাঁচিলের গায়ে লাগা জলের ট্যাংকের ওপর ওঠে তা-তা থৈয়া করছে, একটু এদিক ওদিক হলেই অত উঁচু থেকে শানবাঁধানো গলিতে আছড়ে পড়বে। কাজেই বাড়ির লোকজন যেন শীগ্গির ছাদে উঠে ওদের সাবধানে নামিয়ে আনে।
    বাড়ির আতংকিত ক্রুদ্ধ ভদ্রজনের থেকে আমাদের কপালে জুটল কর্ণমর্দন আর শিবু বা শিব্যা চোখা চোখা বাক্যবাণের জ্বালায় ঢিল খাওয়া নেড়িকুকুরের মত দৌঁড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে পালাল।
    আসলে ছাদের পাঁচিল ও জলের ট্যাংকের মধ্যে অন্ততঃ চারফুট নিরাপদ দুরত্ব ছিল। কিন্তু অত তত্বকথা বড়রা কোনদিন বোঝে?
    সি-সেকশনের ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্বের সেই শেষ।
  • sosen | 184.64.4.97 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০৮:২০690108
  • খুব ভালো লাগছে এটা
  • ranjan roy | 24.99.189.53 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:২১690109
  • ৬)
    ক্লাস থ্রি। এবার সেকশন এ বটেক। নতুন সব বই। মা সুন্দর করে মলাট লাগিয়ে ছোট্ট স্লিপে নাম লিখে দিয়েছে। শ্রীকুমার ব্যানার্জির ইংরেজি প্রাইমারটিতে আমি পাতা উল্টে বানান করে গোটা সেন্টেন্স পড়তে শুরু করেছি দেখে খুল্লতাতরা যারপরনাই খুশি।
    - হ্যাঁ, শিশুবিদ্যাপীঠ মাইয়ালোকের স্কুল হইলেও লেখাপড়া শিখাইতাছে।
    ন'কাকা দিলেন একটা বল-পয়েন্ট পেন। আমি হতবাক। দোয়াতে ডোবাতে হবে না, বা ঝর্নাকলমের মত বারবার কালি ভরতে হবে না!
    আর ছিল "সাধারণ জ্ঞান"। ইউরোপের দেশগুলোর রাজধানীর নাম জেনে সেগুলো অ্যাটলাসে খুঁজে বের করতে কি মজা!
    কিন্তু the কোথায় কোথায় লাগায়?
    ইংরেজির ক্লাসে সব নামের আগায় লাগিয়ে দিলাম। লিখলাম--The Sita is wife of the Rama".
    প্রেম-মাসিমা গোল গোল চোখ করে আমায় দেখলেন। তারপর শুধরে দিলেন।
    একমাসের মাথায় দুই ভাই বোন ভর্তি হল--অর্পণ ও অর্পিতা। অর্পণ সেকশন সি, অর্পিতা আমার সেকশনে। প্রথম দিনেই মেয়েটির কাঁচের গুলির মত চকচকে চোখ আর দুষ্টু দুষ্টু হাসি আমার ভাল লেগে গেল। আমার সঙ্গে গল্প করতে করতে কখন দিদিমণি ক্লাসে ঢুকে পড়েছেন ও খেয়াল করে নি। তাই বকুনি খেয়ে জায়গায় ফিরে গেল। আমি অপরাধবোধে আক্রান্ত। ইস্‌ নতুন মেয়েটা আমার দোষে--।
    তবে টিফিনের সময় লোকসান পুষিয়ে দিয়ে মেয়েটা আমাকে একটা মজার প্যারডি গান শিখিয়ে দিল।
    শ্যামল মিত্রের সুপারহিট " চিনি আমি চিনি, ওগো নন্দিনী,
    তুমি যে মায়াসঞ্চারিণী"র জায়গায়ঃ
    " গুনি আমি গুনি, সেই দিন গুনি,
    কবে হবে মোর সহধর্মিণী"।
    আমার ঝকাস লাগল।
    বাড়ি ফিরে স্কুলের শার্টপ্যান্ট বদলাতে বদলাতে অন্তরাটি গাইতে লাগলামঃ
    "দেখেছি তোমায় আমি দুপুরবেলায়,
    কলেজের ফাঁকে আর সিনেমাতলায়;
    জেনেছি তুমি মোর অনুরাগিণী"।
    কাকিমারা প্রথমে চোখ বড় বড় করে তারপর মুচকি হেসে বললেন --হইসে, এইবার থাম।
    আমি তখন বার খেয়ে ক্ষুদিরাম।
    --না, আরও আসে। এইখানটা হুইন্যা লও।
    " তোমার বাবাকে তুমি বুঝিয়ে বল,
    বেকার হলেও আমি ছেলেটি ভাল;
    প্রেম করে আমি তো গো কেটে পড়িনি"।

    ঘরের মধ্যে যেন বাজ পড়ল। ছোটকা চন্ড-মুন্ড-প্রচন্ড হয়ে ঘরে ঢুকে আমার কলার চেপে ধরল।
    --আরেক বার যদি ঘরের মধ্যে এইসব অসইব্য গান শুনি তো তরই একদিন কি আমারই। কে শিখাইছে?
    --স্কুলে; নতুন মাইয়া --অর্পিতা।
    --কাইল থেইক্যা ইস্কুলে যাওয়া বন্ধ।
    এক কাকিমা জিগাইলেন-তবে যে হুনছিলাম স্কুলডা ভালা?
    -- এর নাম ভালা? ভালা না পাদের ছালা!
  • dd | ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:৫২690110
  • জমছে !!
  • ranjan roy | 24.99.189.53 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:১৯690111
  • তখন কি আর জানতুম যে বঙ্গসমাজ একদিন "কাদের কুলের বৌ গো তুমি"র গায়েও অশ্লীল লেবেল সেঁটে দিয়ে্ছিল! এটাও জানতাম না যে বঙ্গীয় কমিউনিস্টরা আসলে বিংশশতাব্দীর নববিধান ব্রাহ্মসমাজ।
    বছর নয় পরে একদিন ডবল ডেকার নয়্নম্বর বাসের দোতলায় বসে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টোচ্ছি দেখি উল্টোদিকের সিটে অর্পণ ও অর্পিতা। অর্পণ চিনতে পেরে বলল যে বোনের কোন কলেজে অ্যাডমিশন টেস্ট ছিল, এখন বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। অর্পিতা সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে রইল। হরিদাসের সাহস হল না ওই নবযুবতীকে বলার যে সেই প্যারডি গানটা আজও মনে পড়ে।
    ক্লাস থ্রি থেকে এক নতুন আপদ জুটল। ক্লাসের মনিটর। সে খালি নাম লেখে আর দিদিমণিদের দেখায়। কেবল ওর মুখের কথায় আমরা যখন তখন ভিলেন হয়ে যাই। বেঞ্চিতে উঠে দাঁড়াই বা ক্লাসের বাইরে যাই। আমি অবাক হয়ে মনিটরকেই জিগ্যেস করলাম-- এই কথাটার মানে কী? সে বলতে পারল না আর রিপোর্ট করল যে আমি বকবক করে ক্লাসের পড়াশুনোয় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলাম।
    অধিকাংশ সময় আমাদের মনিটর ছিল বিনীতা দাস। ওরা ক্রিশ্চান। ক্লাস টিচার প্রেমমাসীমাও ক্রিশ্চান। ও যা বলে সব মেনে নেওয়া হয়। আমরা-ওরার ছবি যেন তখন থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম।
    প্রৌঢ় বয়সে দিল্লিতে এক আড্ডায় পার্কসার্কাসের বন্ধু অঞ্জন জিগ্যেস করল -- হ্যাঁরে, সেই সময় কড়েয়া রোডের কাছে একটি ক্রিশ্চান পরিবার থাকত। সাতটি বোন , সাতজনেই চোখে পড়ার মত। বিশেষ করে প্রথম জন। ওদের সবাই বলত-সা-রে-গা-পা-ধা-নি।
    --কেন চিনব না? ওই" নি", যার নাম বিনীতা, আমাদের মনিটর ছিল।
    স্কুলের অ্যানুয়াল ফাংশান হবে। পার্ক শো হাউস না কোথায় যেন বুক করা হয়েছে।
    আমি জানলায় উঠে উঠে রিহার্সাল দেখি।
    নাটক হচ্ছে "স্বার্থপর দৈত্য"।
    আবার নাচ হচ্ছে শিব-পার্বতী।
    একটি বড় মেয়ে ক্যালেন্ডারের শিবের মত মুদ্রায় পোজ নিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আর তার বক্ষলগ্না আর একটি মিষ্টিমত মেয়ে বলছে-- ভোর হয়েছে, পাখিরা ডাকাডকি করছে। প্রভু জাগো। প্রভু জাগো।
    প্রভু অনেক সাধ্যসাধনায় জাগলেন। তারপর দুর্গাকে নৃত্য শেখাতে লাগলেন। কিন্তু কিছুতেই দুর্গার মন ভরে না। শেষে উনি শুরু করলেন তান্ডব নৃত্য। সেই দেখে দুর্গা "সম্বর সম্বর প্রভু! তোমার এই রূপ সহ্য হচ্ছে না" বলে ভির্মি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন।
    আমি মুগ্ধ। হাততালি দিতে লাগলাম। ফল হল আমার জন্যে রিহার্সাল দেখা বন্ধ।
    একবার স্কুল থেকে শিশু চলচিত্র উৎসবে আমাদের ধর্মতলায় জ্যোতি সিনেমা হলে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি বালচিত্র দেখাতে নিয়ে যাওয়া হল।
    সেই প্রথম দেখছি ছবির নড়াচড়া। ছবি কথা বলে। সেই বিস্ময়ের ঘোর আজও কাটেনি।
  • Manish | 127.200.91.144 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১২:৩৯690112
  • পড়ছি।
  • ranjan roy | 24.99.200.101 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১৬:৫০690113
  • ৭)
    ক্লাস থ্রি তে হাফ ইয়ারলি পরীক্ষায় নীল কার্ড পেলাম। মানে ৬০% থেকে ৮০% এর মধ্যে। মেজকাকা খুশি। এই দ্যাখ, তুই সেকন্ড হইছস।
    দাদু খুশি হলেন না। --এই নীচু ক্লাসে ৮০% না পাইলে চলে? দূর! দূর!
    সত্যি তো, ফার্স্ট হয়েছে বিমল, তার তো হলুদ কার্ড। আমার সঙ্গে তার দুস্তর ব্যবধান। সে কোন রেশনের চাল খায়?
    বন্ধুরা বলল-- অ্যাতো ভাবনার কিছু নেই। ওর মাসি পূরবীদি আমাদের স্কুলের টিচার। উনি সব টিচারের থেকে কোশচেন জেনে নিয়ে ওকে মুখস্থ করিয়ে দেন।
    আমি মানতে রাজি নই। তাই বাইরের ঘরের দেয়ালে পেনসিল দিয়ে বাহরিনে তেলের কোম্পানিতে চাকরিরত বাবার উদ্দেশে চিঠি লিখলাম বাবা, আমি সেকন্ড হয়েছি।
    কিন্তু গানের ক্লাসে শোভামাসিমা বিমলকে সামান্য ছুতোয় যা তা করে বকলেন। আর বললেন --আমার ক্লাসে বাঁদরামো করলে চড়িয়ে দাঁত ফেলে দেব। ওরকম ফার্স্টবয় আমার ঢের দেখা আছে।
    শোভামাসিমার সোনার বালা পর চওড়া কব্জি আর নিমপাতা মুখ দেখে গোটা ক্লাস একেবারে স্পিকটি নট।
    আমরা শিখছি নতুন গানঃ
    "আমার বাড়ি এস ভ্রমর বসতে দেব পিঁড়ে,
    জলপান করিতে দেব শালিধানের চিঁড়ে গো ,
    শালিধানের চিঁড়ে।
    উড়কি ধানের মুড়কি দেব, নতুন ধানের খই,
    বাড়ির গাছের পাকাকলা গামছাবাঁধা দই গো,
    গামছাবাঁধা দই।
    আমকাঁঠালের বনের ধারে শুয়ো আঁচল পাতি,
    গাছের শাখা দুলিয়ে বাতাস করব সারারাতি গো,
    করব সারা রাতি।"
    গানের মধ্যে কেমন একটা গোঙানো সুর, কান্না কান্না ভাব। অন্য একটা গান তখন রেডিওতে বাজে। শচীনকর্তার নস্যি নেওয়া গানেও সেই আকুলতা , সেই আর্তি!
    "জ্বালাইয়া চান্দের বাতি, জেগে রব সারারাতি গো,
    তুমি নীরব চরণে সেথা যাইয়ো রে ভোমরা,
    নিশীথে যাইয়ো ফুলবনে।"
    কেন ভ্রমরকে এত খাতির তোয়াজ? ওকে নিয়ে আসার জন্যে এত সাধ্যসাধনা? বুঝি না। অদৃশ্য ভ্রমরকে বড় মেজাজি স্বার্থপর মানুষের মত লাগে।
    হটাৎ গান বন্ধ হয়ে যায়।
    --- মাসিমা, মিতা আপনাকে খানকি বলল!
    টিচারের হারমোনিয়ামের বেলো করা হাত থেমে গেল।
    -- কে মিতা?
    উনি লাস্ট বেঞ্চের দিকে সোয়েটার পরা একটি মেয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন। আতংকিত মেয়েটি দাঁড়িয়ে পড়েছে। না, আমি কিচ্ছু বলিনি।
    --বলেছে। ও বলল শোভামাসিমা খানকি।
    -- না, আমি বলেছি উনি খান কী? মানে রোজ কী খান?
    শোভাম্যাডাম মিতার দু'কাঁধ ধরে ঠেলতে ঠেলতে দেয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
    আমি পাশের মেয়েটিকে জিগ্যেস করলাম--এই, খানকি মানে কী রে?
    --চুপ কর! ওসব বলতে নেই। ওটা খারাপ কথা।
  • সে | 198.155.168.109 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ১৭:০১690114
  • অসম্ভব। এ বিশ্বাস হচ্ছে না রঞ্জনদা। এতো আমার ছোটোবেলার ঘটনা! বিশ্বাস না হয় জিগ্যেস করে দেখুন।
    তুমি আমাদের পিতা, তারপরে শান্তির বেটি অর্থাৎ খানকির বেটি, আরো কতকিছু... এ কীকরে হয়?
  • ranjan roy | 24.99.25.191 | ০৫ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:৪৭690115
  • একদিন বীণা বলল--চল তোদের বাড়ি যাব।
    তখন বাড়ি ভর্তি লোক। সবাই অবাক হয়ে বীণা নামক মেয়েটিকে দেখতে লাগল, ও যে নেপালী!
    বললাম-- ও আমার বন্ধু, পাশের ডেস্কে বসে। সবার মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে বীণা একটু অসহজ পড়ল। তারপর হেসে দিল। ব্যস্‌, এর পরে আমরাও হাসলাম। কাকিমা একটা চায়ের ডিশে করে ওকে দুটো রসগোল্লা আর একগ্লাস জল দিল।
    সবাই ওর সঙ্গে ভালভাবে গল্প করতে লাগল। এবার ও ফিরে যাবে। কড়েয়া রোড নাকি লোয়ার রেঞ্জ এর দিকে থাকে।
    -- হরিদাস, ওকে এগিয়ে দিয়ে আয়।
    কিছুদুর যাওয়ার পর বীণা বলল-- আয়, আমাদের বাড়িটাও দেখে যা। মাত্তর আর দু'পা।
    ওদের বাড়িতে একটা বাড়ির ভেতর দিয়ে যেতে হল। ওর মা ঘাঘরা আর ফুলহাতা ব্লাউজ পরেন। দুইবেণী।ওর মার কোলে একটি বাচ্চা আর পাশে হামা দিচ্ছে দুজন। উনি অবাক হয়ে আমাকে দেখে বীণাকে কিছু বললেন। বীণা দৌড়ে গিয়ে একটা ভাইকে কোলে নিয়ে খুব আদর করতে লাগল। তারপর আমাকে একগ্লাস জল এনে দিল। আমি খেয়ে বেরিয়ে এলেম। চোখে পড়ল ওদের বাড়ির মেজে মাটির। আমাদের ঘরের মত সাধারণ সিমেন্টও নেই।
    বকুল আমার ইতিহাস আর স্বাস্থ্য বইদুটো নিয়ে গেছে। বলছে ওর কেনা হয় নি। ওর মা হাতে কপি করে দেবে। তারপর ফেরত দেবে, মাত্তর দু'দিন লাগবে।
    মাত্তর দু'দিন সাতদিন হয়ে গেল। তারপর দশদিন। বকুল বলল-- মা ঘরের কাজকম্ম সেরে রাত্তিরে কপি করে। গোটা বইটা করতে আরও সময় লাগবে। এদিকে পরীক্ষা এসে গেছে। আমি যতই তাগাদা দিই কোন লাভ হয় না।
    শেষে একদিন বলল--খুঁজে পাচ্ছে না।
    শুনে আমিতো প্রায় ভ্যাঁ!
    বাড়ি এসে বললাম এই অবস্থা। ছোটপিসি বললেন--তুই একটা প্যাটব্যাক্কল, একটা আউয়াখানা! হেই ছেড়ি কই থাকে? কড়েয়া থানার পাশে? চল দেখি, অর বাড়ি চল।
    বাড়ির নম্বর জানি না। কিন্তু ছোটপিসি তখন মুরলীধর কলেজের স্টুডেন্ট ফেডরেশনের সেক্রেটারি। সিপিআইয়ের অ্যাকটিভিস্ট। থানার কাছের মুদিদোকান-পানদোকানে জিগ্যেস করে বাড়িটি খুঁজে বার করলেন। কিছু পাকাবাড়ির পেছনে একটা আঙিনা পেরিয়ে ওদের কাঁচা উঠোন। সেখানে বকুলের মা অনেকগুলো থালা ও কুলোয় করে বড়ি ও আচারের মশলা শুকোচ্ছিলেন। বিভিন্ন দোকানে সাপ্লাই দিতেন।
    পিসি বকুলের গার্জেনদের, হুগলির ঘটিদের ভাষায় বলতে গেলে --- ঝেড়ে কাপড় পরিয়ে দিল। হারানো বইটা বেরিয়ে এল। আমরাও রওনা দিলাম। কিন্তু বকুলের মার অপমানিত মুখের চাউনি অনেকদিন ভুলতে পারিনি।
    বকুলের সঙ্গে কথা বন্ধ হয়ে গেল। আমার ক্ষতি।
    ও আমায় শিখিয়ে ছিলঃ
    বল--কাঁচের গ্লাস!
    বল্লাম। জবাব এল-- তোর বউ ফাসক্লাস।
    --পাথরবাটি?
    --তোর বউকে নিয়ে সাঁতার কাটি।
    --পিত্তলের দোয়ানি?
    --শ্যাকব্যাটা তোর সোয়ামি।
    --দুই দিকে দুই কলাগাছ,
    মধ্যিখানে মহারাজ।
    --দুই দিকে দুই বাঁদর,
    মধ্যিখানে মেথর।

    বাঃ, তোর বুদ্ধি আছে। তাড়াতাড়ি শিখে নিলি?
    এবার বল--কে? জোরে বলবি।
    আমি অন্য ছেলেমেয়েদের চোখ-টেপাটেপি দেখতে পেলাম না।
    --কে?
    --নাককাটা জগন্নাথ দে,
    ভস্‌ করে পেদে দিলি দশ্‌ টাকা দে!
    আমি স্কুলের ব্যাগ মাটিতে ফেলে ওকে তাড়া করলাম।
  • সে | 198.155.168.109 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০৬690116
  • যাচ্ছেতাই রকমের ভালো হচ্ছে।
  • ranjan roy | 24.99.221.253 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৫:৪২690118
  • ৮)
    আমাদের বাড়িতে একটা লোক্যাল সেট রেডিও এসেছে। দুপুরে স্কুলের হোমটাস্ক করতে করতে গান শুনি। বিশেষ করে অনুরোধের আসর। সলিল চৌধুরির কথা ও সুরে লতা মঙ্গেশকর।
    "কাজল নদীর জলে, ভরা ঢেউ ছলছলে" , আকাশ প্রদীপ জ্বলে দূরের তারার পানে চেয়ে"। হেমন্তের গলায় "দূরন্ত ঘুর্ণি, এই লেগেছে পাক, দুনিয়া ঘোরে বন বন", সতীনাথের " সোনার হাতে সোনার কাঁকন" বা "আকাশপ্রদীপ তারা জ্বেলো না, জ্বেলো না", মান্না দের" নীল ভাঙা ঢেউ আর নীড়ভাঙা ঘর" মুগ্ধ হয়ে শুনি। ক্লাসের বন্ধুরা সুবীর, শ্যামল, শিবপ্রসাদ, শংকু ও প্রদীপ --এরা ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে রিপিট করে।
    একদিন সুবীর এসে একটা অদ্ভূত গান শোনালো।
    "মেটিরিয়া মেডিকার কাব্য"--জনৈক মানবেন্দ্র গেয়েছেন মায়ামৃগ সিনেমায় উত্তমকুমারের লিপে। ওই শব্দদুটোর মানে কী কেউ জানে না। চারদিকে মাইকে বাজছে মেটিরিয়া মেডিকার কাব্য। বাজছে পার্ক ইউনিয়ন এবং পার্ক ইউনাইটেড বলে দুটো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাবের পূজোয়। বাজছে ঘাসিরামের গমভাঙানো কলের দোকানে ছটপূজোর দিনে, বাজছে বিয়েবাড়িতে।
    এর রেশ কাটতে না কাটতেই এলো কিশোরকুমারের "লুকোচুরি"র 'শিং নেই তবু নাম তার সিংহ, ডিম নেই তবু অশ্বডিম্ব'।
    আবার সুবীর ও টুটু বিশ্বাস শোনাল "দেড়শো খোকার কান্ড" বলে একটা ছোটদের সিনেমা এসেছে, তার গান--
    " জটাব্যাটা, জটাব্যাটা,
    ঘোড়ামুখো নাদাপেটা,
    মাথায় গান্ধীটুপি,
    ঘরে ঢুকে চুপি চুপি
    চুরি করে এটা সেটা"।
    আরে, বইটা তো আমি পড়েছি। ঘরে এসে বায়না ধরলাম--ক্লাসের সবাই এই সিনেমাটা দেখেছে, ভালো বই।মেয়েরাও দেখেছে। আমাকেও নিয়ে চল।
    কিন্তু আমাদের বাঙালবাড়ির সিনেমাবিষয়ক কুসংস্কারের অচলায়তনের দেয়ালে একটি আঁচড়ও পড়ল না।
    এদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বলে কোন এক অজানা দেশের থেকে কিছু আশ্চর্য লোকজন ক্রিকেট খেলতে ভারতে এল। এই খেলাটার নাম কোনদিন শুনিনি। কিন্তু বড়রা রেডিও চালিয়ে কান লাগিয়ে শুনছে।
    স্টেটসম্যান, আনন্দবাজার, যুগান্তর ও দেশ পত্রিকায় দেখছি ওদের ছবিশুদ্ধু সংক্ষিপ্ত জীবনী।
    গিলক্রিস্ট, হল, সোনি রামাধীন, ল্যান্স গিব্স--এদের বল নিয়ে ভেলকি। ব্যাটে সোবার্স, কান্হাই, হোল্ট, হান্ট এবং কোলি স্মিথ। আর ক্যাপ্টেন ও উইকেটকিপার আলেকজেন্ডার।
    কিন্তু ভারতের কেমন যেন কাছাখোলা হাল। কখনও ব্যতিক্রম হিসেবে পঙ্কজ রায়, পলি উম্রিগর, মঞ্জরেকর ও ভিন্নু মানকড় খবর হয়ে যান।
    এক রোববারে স্কুলের বন্ধু সুবীর একটা ছোট ব্যাট ও রবারের বল নিয়ে এল আমাদের বাড়ি। ছাদে ইঁটপেতে ক্রিকেট খেলা শেখাবে। কখন রান নিতে হয় আর কখন রান আউট হতে হয় --সেটা বুঝতেই একবেলা কাবার।
    একবার ওর হাত থেকে বল ফসকাতেই আমি দৌড় লাগালাম। বেশ খুশি, পেরেছি।
    কিন্তু ও চেঁচাতে লাগল-- দেইখ্যা রান দিমু না, দেইখ্যা রান দিমু না!
    রান নিতে হলে নাকি হিট করার পরই দৌড়তে হয়! সেটাই নাকি নিয়ম।
    বাড়িতে কাকাদের কাছে বলায় এসে গেল দুটো বই-- "মজার খেলা ক্রিকেট" আর "খেলার রাজা ক্রিকেট"; অজয় বসুর লেখা। ও দুটো ও আরও কিছু পড়ে আমি বাঁশবনে শেয়াল রাজা হলাম, পাড়ার ফুটপাথে বা গলি ক্রিকেটে বাচ্চাদের ম্যাচে সর্বজনমান্য আম্পায়ার।
    সবচেয়ে ভাল লাগত "হাউজ দ্যাট"? কল শুনে নট আউট না বলে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে পেছন নাড়ানো বা ফিল্ডিং সাইডকে 'পোঁদ দেখানো'।
  • ranjan roy | 24.96.74.157 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:১৫690119
  • দাদুর কেমন সন্দেহ হল যে গার্লস স্কুলে আমি বখে যাচ্ছি। বেশিক্ষণ বই নিয়ে বসি না। আধঘন্টা হল কি হল না, উঠে পড়ে বলি--হয়ে গেছে। সন্ধ্যেয় বলি দুপুরেই হোমটাস্ক করে নিয়েছি। বিশ্বাস না হয় পড়া ধরে দেখ। খাতা দেখে দাদু সন্দিহান--এত কম হোমটাস্ক দেয়- এ কেমনধারার স্কুল!
    সন্ধ্যে বেলা দাদু আকাশবাণীর কৃষিকথার অনুষ্ঠান মন দিয়ে শোনে। প্রবাদপ্রতিম সুধীর সরকারের মোড়ল, সঙ্গে কাশীনাথ ও গোবিন্দর ঠ্যাং টানাটানি ও মাঝে মাঝে শ্রুতিনাটক--বেশ মন দিয়ে শোনে। আম্মো বসে যাই। বেস্পতিবারে আকাশবাণীর নিজস্ব নাটকগুলি হয়। প্রযোজনায় বাণীকুমার বা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।
    এই ভাবেই শুনেছি মাধবীকংকণ, তটিনীর বিচার, তৃপ্তি মিত্র-শম্ভু মিত্রের ছেঁড়াতার।
    কিন্তু হরিদাস লতার "বাঁশী কেন গায়, আমারে কাঁদায়" বা "প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে" কেন গুন গুন করে? সেটা জিগ্যেস করায় উত্তরে একটা বাঙাল পল্লীগীতির লাইন শুনিয়ে দিলঃ
    ও গুণের নাইয়া রে, ও গুণের মাঝি রে, কি গান শুনাইয়া গেলি গুন গুন গুন!
    নাঃ, ছেলেটা মেয়েলি হয়ে যাচ্ছে। আজকাল আবার শুরু হয়েছে--মধুমালতী ডাকে আয়! এর জন্যে ভাল হোম টিউটর লাগাতে হবে।
    দাদু খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন। আর নিজে নেসফিল্ড খুলে জেন্ডার পড়াতে লাগলেন। শুরুই হল গ্যান্ডার আর গুজ দিয়ে!
    বিকেলে খেলতে যাই জয়ন্তী মণিমেলায়। সেখানে শিশুবিদ্যাপীঠের কিছু সহপাঠী ছাড়াও ওদের কারও কারও দাদা দিদিরাও আসে।
    ব্রতচারীর সঙ্গে শিখি পোল ড্যান্স, লেজিম ড্যান্স, মাস ড্রিল ইত্যাদি। আমাদের মণিবন্ধু, মণিকাঞ্চন, মণিপ্রিয় ইত্যাদি ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে তাদের মধ্যে কম্পিটিশন করানো হত। মণিমেলার নিজস্ব লাইব্রেরি ছিল , পার্কসার্কাসের ঝাউতলা রোডে কমিউনিস্ট পার্টির অফিসের পাশে শঙ্খনিধি পরিবারের বাড়ির একটি ঘরে।
  • ranjan roy | 24.99.13.11 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১৬:৫৯690120
  • ---সবিতা মাসিমা, আপনি আজকে স্কুল ছুটির পরে আমাদের বাড়ি হয়ে একটু ---? মানে, দাদু বলেছে, যদি-- খুব ভাল হয়।
    --ক্যারে? বুইড়ার আবার আমারে কী দরকার পড়ল?
    -- মানে যদি আপনি আমাদের দু'ভাইকে একটু দেখিয়ে দিতে--।
    এভাবেই শুরু হল আমাদের দু'ভাইয়ের হোম টিউশন। শিশুবিদ্যাপীঠের সবিতা মাসিমা ক্লাস ফোরের ক্লাসটিচার। উনি আবার ময়মনসিংহের বাজিতপুরের আমাদের প্রতিবেশী সম্পন্ন তালুকদার শ্যামাচরণ চক্রবর্তী মশায়ের ভাইঝি। সময়ের ফেরে এই বিধবা মহিলাটি কোলকাতায় একা হয়ে গেছেন। ঠনঠনের কালীবাড়ির কাছে কোথাও ভাড়াবাড়িতে থাকেন। প্রতিদিন ট্রামে করে সেখান থেকে এসপ্ল্যানেড হয়ে পার্কসার্কাসের এই স্কুলে মর্নিং সেকশনে পড়াতে আসেন এবং তারপরে একটা দুটো টিউশনি করে নিজের আস্তানায় ফিরে যান। বার্ষিক পরীক্ষায় অংক নিয়ে ভয় পাচ্ছিলাম, কিন্তু ভাল ভাবে উতরে গেল। আমার ভাই খেয়াল করল যে পরীক্ষার দিনদুই আগে উনি আমাদের একটা মক টেস্ট দিয়েছিলেন, তার অধিকাংশই পরীক্ষায় এসে গেছে।
    আমার সেদিন সবিতা মাসিমার জন্যে বড্ড মন খারাপ হয়ে গেল।

    কিন্তু এর পরেই টিউশন বন্ধ হল। কারণ, বাবা আমাদের ভিলাইয়ে নিয়ে যেতে চায়। ওখানের স্কুলে ভর্তি করবে।
    সেই সময় ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টের টাউনশিপ মাত্র গড়ে উঠছে। গ্রাম উচ্ছেদ করে বসত।রুক্ষ শ্রীহীন। লালচে পাথুরে মাটি। রাস্তায় তখনও পিচ পড়েনি।
    ইংরেজি মিডিয়ম স্কুল অনেক দূর --সেক্টর টেন। ঘরের কাছে হিন্দি মিডিয়ম স্কুল। সেখানে মাস্টারমশাইরা থানার দারোগার মত।
    কোন ছাত্র অন্যরকম বানান লিখলে বা উত্তর লিখে আনলে প্রশ্ন করা হয়ঃ
    -- ইয়ে কৌন শিখায়া? কিসনে?
    -- মেরা বাপনে।
    --তেরা বাপ তো বুদ্ধু হ্যায়।

    একদিন চোখে পড়ল ঃ
    ইংলিশ মিডিয়ম স্কুলের কিছু বাচ্চা স্কুলবাস থেকে নামছে আর হিন্দি মিডিয়ম স্কুলের বাচ্চারা পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে। দুদলের পোষাকে- আষাকে বডি ল্যাংগোয়েজে ব্যবধান চোখে পড়ার মত।
    কুলীনের দল অন্ত্যজদের উদ্দেশে গায়ে পড়ে বাক্যবাণ নিক্ষেপ করলঃ
    হিন্দি-মিডিয়াম চায় গরম,
    বাজার কা কুত্তা, বেশরম।

    আমরা প্রায় ভুখ হরতাল করলাম-- এ স্কুলে পড়ব না। দাও ফিরে সে কোলকাতা, লহ এ হিন্দি মিডিয়াম স্কুল।
    ব্যস্‌, কাজ হল। ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষার ঠিক আগে আবার ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। গুটিগুটি শিশুবিদ্যাপীঠের ক্লাস ফোরের রুমে ঢুকলাম।
    ক্লাস টিচার সেই সবিতা মাসিমা।
    ঠোঁট বেঁকিয়ে কেটে কেটে বললেন-- কী রে, তোদের ওখানে নিল না? বেয়ারিং চিঠির মত ফেরৎ পাঠিয়ে দিল? যা ওই কোণার দিকে বোস গিয়ে।
    সন্ধ্যেবেলা দাদুকে জানিয়ে দিলামঃ আমি আর কারো কাছে টিউশন পড়ব না। মা একটু দেখিয়ে দিলেই যথেষ্ট, বাকিটা নিজেই দেখে নেব।
    পরের দিন রেণুমাসিমা নিচ্ছিলেন ধাঁধার ক্লাস।
    সবাইকে একটা করে ধাঁধা বলতে হবে।
    কেউ বলছেঃ
    একটুখানি জলে , মাছ কিলবিল করে?
    --ভাত।
    আরেকজনঃ
    এই আছে এই নাই, তারা বনে বাঘ নাই?
    -- বিদ্যুৎ।
    অথবাঃ
    সাদা মশারির ভেতরে ,
    হলুদ খোকা আহারে।
    -- ডিমের কুসুম।
    কিন্তু গোল বাঁধলো দুজনের ক্যালোর ব্যালোরে।
    শিবপ্রসাদ বললঃ
    পিঁ-পিঁ-পিঁ,
    লেজ দিয়া তেল খায় তার নাম কী?
    গোটা ক্লাস হেসে গড়াগড়ি। রেণু মাসিমা বললেন--এটা আবার কী?
    --প্রদীপের সলতে, মাসিমা।
    না, না; ওইসব পিঁ-পিঁ-পিঁ চলবে না। আরেকটা বল।
    শিবপ্রসাদ মাথা চুলকোচ্ছে দেখে পেছন থেকে নারান প্রম্ট করলঃ বল, কোন বাচ্চা কাঁদে না?
    শিবপ্রসাদ বেশ কনফিডেন্টলি আউড়ে দিল।
    --বেশ, এবার উত্তরটা বল।
    আবার প্রম্প্ট এবং শিবপ্রসাদ বেশ জোরে আউড়ে দিল--নুনুবাচ্চা।
    গোটাক্লাসে একেবারে কেলেংকারিয়াস প্যান্ডেমনিয়ম।
    --- বেরিয়ে যাও, ক্লাসের বাইরে! আউট!
    --মাসিমা, আমার দোষ নেই। নারাণ পেচন থেকে ওইরকমই বলেছে।
    মাসিমা দুজনকেই ক্লাসের বাইরে কান ধরে দাঁড়াতে হুকুম দিলেন। এবার নজর পড়ল আমার দিকে।
    --এই যে, শ্রীমান! এতদিন ক্লাসে আসনি কেন?
    আমি বেগুনি হয়ে গেলাম। মেয়েরা তাকিয়ে দেখছে। আমতা আমতা করে ভিলাইয়ের পড়াশুনোর অবস্থা নিয়ে একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ নামাতে যাচ্ছি , উনি মহাবিরক্ত হয়ে বললেন --আচ্ছা,আচ্ছা! ওসব মহাভারত শোনার সময় নেই। একটা ধাঁধা বল ,চটপট।
    এই রে! খেয়েসে। আমি ওসব একদম পারি নে।
    --কী হল, বল।
    হটাৎ টিউবলাইট জ্বলে উঠল। কালকেই রাত্তিরে পড়েছি গল্পটা।
    টেনে টেনে বললামঃ
    "পায়ে ধরে সাধা,
    রা নাহি দেয় রাধা।
    শেষে দিল রা,
    পাগোল ছাড়ো পা।"
    --ধারাগোল। একটি গ্রামের নাম।
    টুটু, প্রদীপ, বিজন, সুবীর হৈ-হৈ করে উঠল।
    --মাসিমা, ও যা তা বানিয়ে বলছে। কোন গ্রামের এরকম নাম হয় নাকি? মেড়োর দেশ থেকে এসে চালাকি করছে। ম্যাপ খুলে দেখাক--কোন জেলায় ধারাগোল গ্রাম।
    রেণুমাসিমা আস্তে আস্তে বললেন-- না, ম্যাপে নেই। কিন্তু সাহিত্যে আছে। ও ঠিকই বলেছে।
  • de | 69.185.236.51 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১৭:১১690121
  • খুব ভালো হচ্ছে -
  • সে | 198.155.168.109 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১৮:২৯690122
  • আমরা জানতাম চৌবাচ্চা কাঁদে না, লাইফবয় ছোটে না, সানসাইট জ্বলে না, ইত্যাদি।
  • ranjan roy | 24.99.13.11 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ১৯:০৩690123
  • সে,
    একদম ঠিক। আমরাও তাই। কিন্তু মাঝে মাঝে কোন বাচ্চা ভুল করে পলিটিক্যালি ইনকরেক্ট কথা বলে ফেলে আর কি!ঃ))
  • ranjan roy | 24.99.13.11 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:২৮690124
  • ৯)
    ক্লাস ফোরে আমাদের আরও কিছু উন্নতি হল। ভোক্যাবুলারি বাড়ল। ইংরেজি বাংলা তো বটেই, বিশেষ করে প্রাকৃত শব্দের ভান্ডারে। এতদিন আগের ভান্ড অনেক সীমিত ছিল, যার উৎস ছিল পার্কসার্কাস পাড়ার ও বাজারের বড়দের কিছু আর্ষপ্রয়োগ।
    যেমন একটি বাচ্চা মেয়ে তার মায়ের সঙ্গে আমাদের বারোয়ারি ফ্ল্যাটের সিঁড়ি বেয়ে উঠত। তার নাম ছিল সুলতানি। সম্ভবতঃ ওরা ছিল বিহারি মুসলমান। কারণ, বাংলা বলত না। ওর মা পাশের কোন একটি ফ্ল্যাটে কাজের মাসি ছিলেন। আমরা বাচ্চাটিকে একা পেলেই দুহাত ছড়িয়ে রাস্তা আটকে দাঁড়াতাম। ও হাতের ফাঁক গলে যেতে না পারলে চ্যাঁ-ভ্যাঁ করে উঠত। সেটা ওর মায়ের কানে গেলেই ও তাড়াতাড়ি এসে মেয়েকে উদ্ধার করার সঙ্গে সঙ্গে গাল পেড়ে আমাদের চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করত। কিনতু সেগুলো মা্ছ-মাংস গোছের নয়। বড়জোর পোল্ট্রির ডিমের মত। আর আমরা তাতেই বেজায় আমোদ পেতাম। সবচেয়ে চড়া সুরেরটি ছিল--- হারামী কা পানা, শুয়ার কা বাচ্চা!
    কিন্তু, স্কুলে এবং মণিমেলার মাঠে এল প্রাকৃত শব্দের জোয়ার। ব-জাত যে চার-পাঁচটা প্রচলিত এবং নারীপুরুষের অ্যানাটমি-ফিজিওলজি সম্পর্কিত যতগুলি।
    কিন্তু আমার একেবারে শব্দকল্পদ্রুম হয়ে গেল। আজও যেমন ণ-ত্ব/ষ-ত্ব বিধান গুলিয়ে যায়, সেদিনও কোথায় চন্দ্রবিন্দু লাগবে কোথায় লাগবে না-- এটা ভুল হয়ে যেত। এমনকি কোন শব্দবিশেষ শরীরের কোন অঙ্গবিশেষের বিশেষ্য, তাও গুলিয়ে ফেলে সঙ্গীসাথীদের মধ্যে ক্যালানে উপাধি জুটল।
    কিন্তু সবচেয়ে ধাঁধায় ফেলল মানুষের জন্মরহস্য। আমরা সব নারীর যোনিপথে নির্গত মানবক? না, না। এ মেনে নেওয়া যায় না। নিশ্চয়ই কোথাও কোন ভুল হচ্ছে।
    ইচ্ছে হত সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মাকেই জিগ্যেস করি--এমন কেন করলেন? কী উদ্দেশ্য?
    শেষে এক জ্ঞানবৃদ্ধ মাথাটাথা চুলকে বলল-- কর্পোরেশনের মেথর দের দেখেছিস? কেমন একটা বড় বাঁশের মত ঝাড়ু ঢুকিয়ে বদ্ধ নালীর মধ্যে গোঁত্তা মারে? তারপর জ্যাম সরে গিয়ে হড়হড় করে জল বেরিয়ে আসে?
    পুরুষেরা হল মেথরের মতন।যোনিদ্বারে গুঁতো মেরে বাচ্চাটার বেরনোর পথ খুলে দেয়, এই আর কি!
    মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আমি কক্ষণো মেথর বা ঝাড়ুদার হব না। যদিও কিশলয়ে তখন সত্যেন্দ্র নাথ দত্তের মেথর কবিতাটা পড়ানো হচ্ছে--- কে বলে তোমারে বন্ধু অস্পৃশ্য অশুচি? শুচিতা ফিরিছে সদা তোমারি পিছনে।
    আসলে কবিতাটা পড়ে আমি আরও কনভিন্স্ড হয়েছিলাম যে মেথর অবশ্যই অস্পৃশ্য ও অশুচি।
  • সে | 204.230.159.90 | ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:১৪690125
  • দেজাভু হচ্ছে। কেউ বিশ্বাস করবে না।
  • paps | 140.88.12.130 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:২১690126
  • রঞ্জন বাবুর লেখা বরাবরই ভালো লাগে। এই লেখাটা বেশ Anecdote সমৃদ্ধ.।ছোট বেলার নিষ্পাপ দুষ্টুমি গুলোর সঙ্গে বেশ identify করতে পারলাম নিজেকে। ।বোধ হয় আমাদের সবাকার ছোটবেলা কম বেশি একইরকম।
  • TB | 118.171.130.188 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৭690127
  • এইজন্যেই আমাদের সবাকার বড়বেলাও কমবেশি একইরকম। লেখাটা পড়তে পড়তে এটাই বুঝতে পারছি।
  • ranjan roy | 24.96.180.219 | ০৭ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:১১690129
  • ধীরে ধীরে আমাদের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে লিঙ্গবোধ। না, যৌনচেতনা নয়। দুটোকে গুলিয়ে ফেলা ভুল। ছেলে মেয়ে প্রভেদ আমাদের চোখে স্পষ্ট হচ্ছে। আর মনে হচ্ছে পাড়ার অন্য ছেলেদের চেয়ে শিশুবিদ্যাপীঠের ছেলেরা কেন আলাদা হবে? মেয়েদের স্কুলে পড়ে বলে?
    না, আমরা আমরা; ওরা ওরা। আমরা কিছুতেই ওদের মত হব না। নিজেদের আইডেনটিটি বজায় রাখব।
    এইক্লাসে সেলাই ক্লাসে উলবোনা শেখানো শুরু হল। আমরাও পটাপট শিখে ফেললাম-- সোজা ঘর উল্টো ঘর তোলা; এককাঁটা সোজা এককাঁটা উল্টো বোনা; আবার দরকার মত ঘর ছেড়ে দেওয়া বা ফেলে দেওয়া।
    কিন্তু এর বেশি শিখবো না। ছোট বাচ্চার মোজা ও টুপি বোনা শিখবো না। সেগুলো বাড়ি থেকে মা-কাকিমা-মাসিপিসিদের দিয়ে করিয়ে আনবো। আমাদের টিচাররা এই বিদ্রোহ হাসিমুখে মেনে নিলেন। মেয়েদের সঙ্গে এক্কাদোক্কা, নাম -পাতাপাতি (আয় তো রে আমার টিয়েপাখি, বা কানের দুল!) এসব খেলবো না। বরং ওই ছোট্ট উঠানের মধ্যে লাট্টু, হাত লেত্তি, ইয়ো-ইয়ো, আর মার্বেল নিয়ে গাইপার, সাইপার এইসব খেলবো।
    প্রেমমাসিমার ব্রতচারীর নেচে নেচে গান, (যেমন 'হল মাটিতে চাঁদের উদয়, কে দেখবি আয়। এমন যুগল চাঁদ কেউ দেখিস নাই, দেখসে নদীয়ায়।) চলবে না। কিন্তু 'আমরা বাঙালী সবাই বাঙলা মার সন্তান' চলবে।
    আমরা এখন থেকে এক বেঞ্চে পাশাপাশি বসব না। ছেলের দল একসারি বেঞ্চে টিচারের মুখোমুখি বসবে। মেয়েরা ওদের দিকে পারপেন্ডিকুলার পংক্তি বানিয়ে আলাদা সারিতে।
    গোল বাঁধল গানের ক্লাসে।
    একটা ন্যাকা ন্যাকা গান হচ্ছিল।
    "ধীরে ধীরে বায়ু বহিতেছে,
    অঙ্গে ভঙ্গে তরঙ্গ নাচিতেছে।
    কুন্ঠিত সুললিত ভোমরা ফুলে,
    সুন্দর মধুকর আইল রে।
    তাল্লা-লা-লা, তাল্লা-লা-লা, তাল্লা-লা-লা, লা-লা-লা।"
    ধ্যেৎ, কি সব আজে বাজে গান। আমি শিখব না।
    শোভা মাসিমার সামনে এই বেয়াদপি! ওঁর হাতের চড় লিঙ্গভেদ জানে না।
    কিন্তু উনি মারলেন না। বড় বড় চোখ করে বেশ শান্ত গলায় বললেন-- তুমি কি একটু বড়দের মত গান শিখতে চাও? এরমধ্যেই গানের বেসিক শেখা হয়ে গেছে? বেশ।
    আমি অবোধ বোদা মুখে চুপ করে রইলাম।
    উনি সে বছর শেখালেন-- তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার, ওরে ভীরু!
    শেষে একটি নজরুলগীতি--
    "আজি প্রভাতী তারা পূর্বাচলে,
    আশাপ্রদীপ আমি নিশির শীষমহলে।
    রাতের কপোলে আমি ছলছল অশ্রুর জল,
    আমি ধরণীতে হিমকণা নবদূর্বাদলে।"

    বেশ চলছিল। কিন্তু এত সুখ কপালে সইবে কেন? আমাদের হেডমিস্ট্রেস হাসিমাসিমা, শান্ত সৌম্য স্নেহপ্রবণ মহিলা, রিটায়ার হলেন। ওঁর জায়গায় এলেন অমিয়ামাসিমা। ভারিক্কী গম্ভীর, নো ননসেন্স অ্যাটিচুড। অনেকটা অপর্ণা সেনের " ৩৬ চৌরঙ্গী লেন" সিনেমার নতুন হেডমিস্ট্রেস মিসেস স্বামীনাথনের মত দেখতে। উনি জয়েন করার প্রথম সপ্তাহের মাথায় আমাকে ডেকে পাঠালেন।
    আমার বাড়িতে চিঠি যাবে। আমি নাকি এত বখে গেছি যে মেয়েদের পোশাকের ছবি আঁকি, এই বয়সেই!
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন