এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে(৪)

    dam
    অন্যান্য | ২১ নভেম্বর ২০০৬ | ৪১১৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dam | 202.54.214.198 | ২১ নভেম্বর ২০০৬ ১৯:২১693865
  • এটা সামরানের জন্য খুলে দিয়ে গেলাম। :-)
  • Prantik | 213.68.11.198 | ২১ নভেম্বর ২০০৬ ২২:৫৮693876
  • পায়ের তলায় সর্ষে কি একা সামরানের নাকি রে ভাই? তবে সর্ষে-ইলিশ হলে আলাদা কতা :-)
  • Samik | 61.95.167.91 | ২২ নভেম্বর ২০০৬ ১১:৩৮693887
  • এখেনে আমি লিখব। আমার জয়পুর বেই বেই করার গপ্পো।
  • Samik | 61.95.167.91 | ২২ নভেম্বর ২০০৬ ১৫:১০693898
  • জয়পুর বেশি দূরে নয়, দিল্লি থেকে ২৫০ কিলোমিটার। রাস্তা নাকি খুব ভালো। এন এইচ এইট। লোকে নিজের গাড়ি নিয়ে যায়। তো আমরাও তাই গেলাম। আউটলুক ট্র্যাভেলার্স আর অলরেডি ঘুরে আসা জনতার মুখে আইডিয়া নিয়ে শনিবার সকালে যাত্রা শুরু করলাম। ফিরে আসার পরে বুঝলাম, বইতে অনেক কিছুই লেখা থাকে না। তাই ভাবলাম ডকুমেন্ট করে রাখি।

    ড্রাইভার নিয়েছিলাম। পুরো রাস্তা নিজে চালাবার মত কনফি ছিল না। একে নতুন ড্রাইভিং শিখেছি, তায় ভূতোকে সারা রাস্তা একা ট্যাক্‌ল করা স্বর্ণালীর কাজ নয়। এটাও পরে বুঝেছিলাম, খুব বুদ্ধিমানের ডিসিশন। ড্রাইভার বেশ ভাল ছিল, সে আগে জয়পুরেই গাড়ি চালাত, রিসেন্টলি দিল্লি এসেছে, জয়পুর শহরটা চেনে।

    সকাল সাতটায় বেরোলাম। গুড়গাঁও হয়ে যেতে হয়, তাই ছটায় বেরোবার প্ল্যান ছিল। জ্যামে একবার ফেঁসে গেলে চিত্তির হয়ে যেত। তো যাই হোক, ড্রাইভার লেটে এল বলে সাতটায় শুরু করলাম।

    গুড়গাঁবা অবধি তো চেনা রাস্তা, তাপ্পরে আর নতুন করে চেনার কিছু নেই। চওড়া ন্যাশনাল হাইওয়ে সো-জা চলে গেছে জয়পুরের দিকে। মাঝে দু জায়গায় NHAIকে টোল ট্যাক্স দিতে হল, টোটাল ৯০ টাকা। এটা কোথাও লেখা ছিল না:-)।

    কেউ বলেছিল, এ নাকি ভারতের সেকেন্ড বেস্ট হাইওয়ে। বোম্বে পুণা এক্সপ্রেসওয়ের পরেই। তা, তত হাইফাই কিছু লাগল না, তবে রাস্তা অবশ্যই খুব খুব ভলো, জায়গায় জায়গায় সৌন্দর্য উপচে পড়েছে পথের দুধারে। রাজস্থানে ঢোকার মুখেই রাজস্থানি ট্র্যাডিশনাল ড্রেস পরা একদল স্থানীয় মহিলা আর একপাল উট দেখে বেশ লাগল। এমনিতে উট দেখার জন্য রাজস্থান যাবার কিছু নেই। প্রপার দিল্লি শহরেই পোচুর উটে টানা গাড়ি ঘুরে বেড়ায়।

    যাহা হউক, জয়পুরে ঢুকলাম বেলা একটা নাগাদ। ড্রাইভারই খুঁজে খুঁজে রাজস্থান বিদ্যুৎ বিতরণ নিগম না কী যেন; তার গেস্টহাউস খুঁজে দিল। ফিরিতে থাকা।

    গেস্টহাউস দেখে ভক্তি উবে গেল। তবে বেড়াতে এসেছি, হোটেলে বেশি না থাকাই উচুৎ, থাকব তো কেবল রাতে। তাই চোখ কান বন্ধ করে ঢুকে গেলাম।

    অনেকটা জার্নির শুরুতে ভুতো অঘোরে ঘুমোলেও শেষদিকে বেশ ঘ্যানঘ্যান করছিল। তাই গেস্টহাউসের খাবারের ভরসায় না থেকে বাইরে খেতে বেরোলাম। বেরিয়ে দেখি খাবার রেস্টুর‌্যান্ট প্রায় নেই! সবই নাকি কোন এক এম আই রোডে। অনেক খুঁজে পেতে একটা ভেজি রেস্তোরাঁ পেলাম। নন ভেজ বোধ হয় জয়পুরে চলে না। খেয়ে দেয়ে বেরোলাম বেড়াতে।
  • d | 202.54.214.198 | ২২ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:০১693909
  • ভাটুরেগণ, সামরানকে প্রেশার দাও। ব্যপক বেড়িএ এসেছে, কিন্তু লিখছে না। নাকি ভীষণ মজার সব ব্যপার হয়েছে .... তাও বলছে না।
  • samran | 59.93.243.49 | ২২ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:০৭693920
  • d ,
    লিখছি তো ও ও ও ও ...
  • d | 202.54.214.198 | ২২ নভেম্বর ২০০৬ ১৭:১১693931
  • অকে।
  • samran | 59.93.212.51 | ২৩ নভেম্বর ২০০৬ ১০:০৮693942
  • এক হপ্তা আপিস ফাঁকি দিয়ে কলকাতার এমাথা ওমাথা ঘুরে ঘুরে সিনেমা দেখে দেখে তিনি এক্কেরে হা কেলান্ত। বিকেলে ভাতঘুম সেরে খিচড়ানো মেজাজ নিয়ে উঠেছেন, মুখে গান; ভালো ও ও ও ও লাগে না আ আ আ আ ...
    কিছু ভালো ও ও ও ও লাগে না আ আ আ আ ...

    নিজের গান গাওয়া শেষ হলে হুকুম হল, গান শোনাও!
    :কি গান?
    :'আকাশে ছড়ানো মেঘের কাছাকাছি'।
    তো খুঁজে পেতে ক্যাসেট বের করে গান শোনানো হল তারপর আবার নিজের গলায় শুরু হল; ভালো ও ও ও ও লাগে না আ আ আ আ ...
    কিছু ভালো ও ও ও ও লাগে না আ আ আ আ ...

    :আর কি কত্তে পারি, কি কল্লে ভালো লাগবে? জিগাইলাম; কোথাও যাবে? একদিনের জন্যে? সকালে গিয়ে বিকেলে ফিরে আসব।
    তো ত্বরিৎ জবাব, চলো।
    :কোথায় যাব?
    :সে দেখা যাবে!
    খানিক পরেই আবার; এখন বেরিয়ে গেলে হয় না?
    :এখন? এই রাত ৯টায়?
    :হ্যাঁ! হাওড়া ষ্টেশন চলো, ওখান থেকে ট্রেনে করে কোথাও একটা যাওয়া যাবে! পুরুলিয়া কিংবা অন্য কোথাও!
    একটু ঘাবড়েই গেলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ট্রেনে কি বসে যাবে না শোয়ার ব্যবস্থা হবে?
    :বসে যাবে!
    শুনে আরেকটু ঘাবড়ালাম। ছেলের জন্মদিন ছিল, সারাদিনই প্রায় রান্নাঘরে কেটেছে, এখন আমি আমার নক্সিকাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাবো তা না লোকাল ট্রেনে করে অজানার উদ্দেশ্যে বেরনো? অতটা সাহস করে উঠতে না পেরে বলাম, কাল ভোরে বেরই। তো বলল, ওকে! একটা ব্যাগ একদিনের মত গুছিয়ে নাও, পরশু ফিরব।

    মোবাইল ফোনে ভোর সাড়ে চারটের এলার্ম সেট করে ঘুমাতে গেলাম যখন রাত তখন প্রায় একটা। এলার্ম যখন বাজতে শুরু করলো তখন ভাবলাম, থাগ্গে! বাজুক ওটা, আমি বরং আরেট্টু ঘুমাই! কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার লোভে ঘুমানো গেল না। উঠেই পড়লাম আমার নক্সি কাঁথা সরিয়ে রেখে। এখানে ভোর সাড়ে ছ'টার আগে বাস পাবো না তাই হন্টন শুরু বিদ্যাসাগর সেতুর টোলপ্লাজার উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে বাসে করে ধর্মতলার বাস গুমটিতে। এবার প্রশ্ন হল যাব কোথায়? টিকিটঘরের দেওয়ালে সব নাম লেখা আছে, এখান থেকে কোথায় কোথায় বাস যাবে। জায়গার নাম দেখে নিয়ে সে আমারে জিগাইলো, ফেজারগঞ্জ যাবে?
    :সেটা কোথায়? সেখানে কি আছে?
    :চলো না। তোমার ভাল লাগবে।
    :চলো তাইলে!
    কাউন্টারে জিজ্ঞেস করে জেনে নেওয়া হল , এই বাস যাবে 'নামখানা' অব্দি, তিন ঘন্টা মত লাগবে, ফেজারগঞ্জ যেতে হলে নদী পেরিয়ে আবার বাস, ঘন্টা খানেকের রাস্তা। মনে মনে হিসেব করে নিলাম, ক'টা নাগাদ পৌঁছুব, কতক্ষণ সময় থাকবে হাতে বেড়ানোর জন্যে ( এর আগে একবার ঐ কাউন্টারের বুড়ো দাদুর কথা শুনে জব্বর ফেঁসেছিলাম কাজেই আর রিস্ক নিতে রাজী নই )।

    কাউন্টার থেকে দেওয়া টিকিটের সময় মেনে ঠিক পৌনে সাতটায় বাস ছাড়ল। যেখানে বসলাম তার সামনে একটিমাত্র সিট, যাতে কন্ডাক্টর এর বসার কথা। তার ঠিক পেছনে জানালার পাশের আসনে আমি বসে বুঝতে পারলাম, আটকে গেছি! বাঁদিকে জানালা, ডানদিকে তিনি আর সামনের ঐ সিটে আমার হাঁটু ঠেকে আছে যাতে করে আমার নট নড়ন চড়ন অবস্থা! কিন্তু সেগুলোকে মোটেও আমল না দিয়ে টুকটুক কথা বলছি আর জানালা দিয়ে বাইরে দেখছি। বাসে উঠে বসার খানিক পরেই তিনি আমারে জিগাইলেন, তোমার কাছে ঐ গানটা আছে 'কি ঘর বানাইলাম আমি শূণ্যেরও মাঝার' ?
    :বোধ নেই। কম্প্যুটারে আছে কীনা খুঁজে দেখতে হবে।
    : ফিরে এসে খুঁজে দেখো না, আছে নিশ্চয়ই! আর না থাকলে অক্ষ'কে বলো, ও ঠিক পাঠিয়ে দেবে!
    বাস কলকাতা শহর ছাড়িয়ে এগুচ্ছে ডায়মন্ড হারবারের দিকে। তিনি আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছেন; এদিকে রায়চক। সামনেই ডায়মন্ড হারবার, আমরা নদীর পাশ ধরে এগিয়ে যাবো।

    আমি বাইরে তাকিয়ে বুঝতে পারছিলাম না আমি কি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কোথাও যাচ্ছি নাকি ভারতবর্ষের? দুপাশের দৃশ্যাবলী যে খুব চেনা! যেন বেনাপোল বর্ডার পেরিয়ে বাস এগোচ্ছে ঢাকার দিকে! রাস্তার পাশের ফলকে নামগুলো শুধু অন্য নইলে সেই এক পরিচিত দৃশ্য। ছোট ছোট গঞ্জের মত সব জায়গা পেরিয়ে বাস চলছে। কখনও গ্রামের ভেতর দিয়ে তো কখনও বা দু'পাশে ফসলের মাঠ। কোথাও খানিকটা জল জমে আছে তো সেখানে , ঐটুকু জলে বিছিয়ে আছে শাপলার পাতারা। ছোট্ট ছোট্ট পুকুর গাছের ফাঁক দিয়ে চোখে পড়ে আর সেইসব পুকুরেও অজস্র শাপলা। আমি বারে বারেই যেন অনেকটা করে পথ পিছিয়ে গিয়ে চলে যাচ্ছিলাম ছেলেবেলায়। শাপলা বিলে। কিন্তু এখানে কোন বিলে নয়, হাঁটু অব্দি জমা জলেই যেন বিছিয়ে আছে শাপলা। এখনও সেভাবে ফোটেনি, কোথাও বা কলি মেলছে তো কোথাও আধফোটা।

    বাসগুমটির কাউন্টারের কাকুর কথামত ঠিক তিন ঘন্টাতেই বাস এসে পৌঁছালো নামখানায়। একটা গঞ্জ মত জায়গা, নদীর পারের গঞ্জ। অনেকটা মেঘনাপারের ভৈরববাজারের মত। এই নদীটির নাম হাতানিয়া দোয়ানিয়া। দেখে আশ্চর্য হলাম, নদীতে সেতু নেই। কলকাতার এত কাছে এই রকম একটা জায়গা আছে, যার এপার-ওপার দুপারেই বাস চলে কিন্তু নদী পেরুতে হয় নৌকায় করে! ভাবতে পারিনি সত্যিই। আমার পতি গল্প শোনাল রাজনৈতীক ডামাডোলে সরকার বাহাদুর হার মেনে এখানে নৌকোর ব্যবস্থা করে দিয়ে দায় সেরেছেন। পঁচিশ পয়সা করে টোল দাও আর তারপর নৌকোয় চড়ে ওপারে চলে যাও। এর মাঝেই মাঝি এসে বলে, প্রাইভেটে যাবেন বাবু? রিজার্ভ? সেটা কি সিস্টেম জিগিয়ে জানা গেল, ১০টাকা নেবে মাঝি, সেই নৌকোয় আর কাওকে তুলবে না, নদী পার করে দেবে। আর ঐ টোলের নৌকোয় গেলে একটা নৌকোতে ৪৫জন লোক হবে তবে নৌকো ছাড়বে আর ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। দেখে শুনে প্রাইভেট যাওয়াই সাব্যস্ত হল আর আমরা বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে ( আমি অন্তত ) ওপারে পৌঁছে গেলাম দেখতেই দেখতে। ও হ্যাঁ। বলতে ভুলে গেছি বাস থেকে নেমেই সুলভ শৌচাগার থেকে প্রাকৃতিক কাজ-কম্ম সেরে পাশের রেষ্টুরেন্ট থেকে ছেঁড়া পরোটা আলু মটরের তরকারি সহযোগে ভরপেট জলযোগ সেরে নিয়েছি, শেষপাতে জিলিপি! আর অবশ্যই চা। চা আমি একাই খেলাম, ভোরের বাসীমুখের এক কাপ চায়ের পরে আমার কত্তা আর চা খান না।

  • I | 59.93.162.245 | ২৩ নভেম্বর ২০০৬ ১১:৫২693945
  • সি কি ! হাতানিয়া- দোয়ানিয়াতে আগে যে বার্জ ছিল !

    যাগ্গে লেখো, তোমার লেখা পড়ে আমারো বকখালি-ফ্রেজারগঞ্জ বেড়াতে যাওয়ার কথা মনে পরে যাচ্ছে।
  • m | 67.173.95.163 | ২৩ নভেম্বর ২০০৬ ১৩:০৯693866
  • সামরান দি,
    তারপর কি হলো? হাতানিয়া-দোয়ানিয়া কেন যে নদী বুঝি না,ওকে তো খাল বলা উচিত।তবে নৌকোয় ছাগল-সাইকেল-মুরগী-মানুষ-ঝুড়ির অপূর্ব সহাবস্থান,তুমি সেই টা মিস করলে:) আর আমি স্পেশাল নৌকা টা:)
  • samran | 59.93.242.71 | ২৩ নভেম্বর ২০০৬ ১৪:৫৭693867
  • বার্জ তো দেখলাম না শুধু বিশাল পেটমোটা সব নৌকো। তাতে কাঠের পাটাতন পাতা।

    হাতানিয়া দোয়ানিয়াকে আমার তো নদী বলেই মনে হল মিঠু। এই নভেম্বরেও সে বেশ যৌবনবতী ।
  • d | 202.54.214.198 | ২৩ নভেম্বর ২০০৬ ১৮:০৭693868
  • বা: বা:। তাপ্পর?
  • Sh | 141.213.240.90 | ২৩ নভেম্বর ২০০৬ ২২:৩৮693869
  • দারুন লেখা! তারপর?
  • a x | 207.69.137.205 | ২৪ নভেম্বর ২০০৬ ০০:০৩693870
  • থামল কেন? লেখো লেখো।

    লোকে বলে বলেরে ঘর বাড়ি ভালা না আমার/কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যেরই মাঝার... এই ভাবিয়া হাসন রাজা.... :-) এক্ষুণি খুঁজে পাচ্ছিনা - তবে এখান থেকে শুনতে পারো -
    http://www.ethikana.com/music/bangla_folk.htm
    চার নম্বর গান।
  • samran | 59.93.197.21 | ২৬ নভেম্বর ২০০৬ ১১:১৪693871
  • যে বাসটিতে উঠে বসলাম সেটি যাবে বকখালি। আমাদের যাত্রাপথের শেষে বকখালি পড়বে তা আমার জানা ছিল না। আমরা তো যাচ্ছি ফ্রেজারগঞ্জ! জিজ্ঞেস করে জেনে নিলাম, বাস আমাদের নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে বকখালি। সকালবেলায় যখন বাসের টিকিট কাটা হচ্ছিল তখন দীঘার বাসের কাউন্টারও চোখে পড়েছিল, আমার মন ওদিকেই টানছিল কিন্তু একদিনের জন্যে গিয়ে পোষাবে না ভেবে কিছু বলিনি। তো সামনে বকখালি আছে জেনে মন আরও খানিকটা ফুরফুরে হয়ে গেল। ফ্রেজারগঞ্জে কি আছে সকালে জিজ্ঞেস করে জবাব পেয়েছিলাম, চল না ভাল লাগবে! বাসে আরেকবার জিজ্ঞেস করে জেনেছি ওখানে মোহনা। ভাল লাগবে শুনে নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম, এখন আরেকটু উৎফুল্ল হলাম।

    যে বাসটিতে উঠেছি সেটা এক মজার বাস। বাস ষ্ট্যান্ডে আসামাত্রই চোখে পড়েছে একটি সাদা অ্যাম্বাসেডর দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের দেখেই তার চালক এগিয়ে এসেছিলেন, যাবেন দাদা, বকখালি , চলুন। তো সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বাসের কাছে এগোতে দেখা গেল বাসে শুধু দাঁড়ানোর জায়গা বাকি আছে, কন্ডাক্টর তাও বলছে, উঠে পড়ুন, সামনেই খালি হয়ে যাবে! আমি দাঁড়িয়ে যেতে কিছুতেই রাজী নই তাই সে বাসটি ছেড়ে দিয়ে পরের বাসে এসে উঠে জুত করে বসেছি। বসেই স্বস্তি বোধ করলাম, যে এই বাসে অন্তত সিটের পেছনটা এতখানি উঁচু যাতে মাথা রেখে আরাম করা যাবে! এতক্ষণ যে বাসে এসেছি তাতে এই সুবিধেটুকু ছিল না ফলে ঠায় ঘাড় সোজা করে বসে থাকতে হয়েছে। বাসখানি 'কাডইল্যা বোঝাই' ( কাঁঠালে বোঝাই ) না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে আর তারপর হেলতে দুলতে শুরু করেছে চলা। সে এক মজার চলা। প্রতি দু মিনিট অন্তর সে থামে, লোক নামে ধীরে সুস্থে, কোন তাড়া নেই একেবারেই নামার কিংবা ওঠার! বাড়ির উঠোন থেকে লোকে হাত দেখায়, বাস থামে, রাস্তা পেরিয়ে তাঁরা এসে ওঠেন বাসে! স্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ার পর চালক পাঁচ মিনিট অন্তর থেমে থেমে তিন জায়গা থেকে তিনবারে তিনখানি টিফিন ক্যারিয়ার সংগ্রহ করলেন আর তারপর মন দিলেন গাড়ি চালানোয়, গজগামিনী চালে! মাঝে মাঝে হাঁক দিলেন, এই তোমরা ওঠা নামার জন্যে এত চিন্তাভাবনা করলে পড়ে যাবে যে!

    যেখানে বাস আমাদের নামিয়ে দিল সেটি এক ধুঁ ধুঁ রাস্তা। আমি ভেবেছিলাম ছোটখাট কোন গঞ্জে নিশ্চয়ই যাচ্ছি। কিন্তু যেখানে নামলাম সেখানে রাস্তার পাশে শুধু একটা নামফলক ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না। রোদ বেশ চড়া, ঘাম না হলেও রোদ খুব একটা সহনীয় নয় আর এমন একটা জায়গায় নেমেছি যেখানে দোকানপাট, বাড়ি ঘর তো দূরের কথা দূর দূর অব্দি কোন মানুষ পর্যন্ত চোখে পড়ছে না। রাস্তার বাঁদিকে কিছু কুড়েঘর চোখে পড়ল আর ডানদিকে দূরে দুটি পাকাবাড়ি। সেদিকেই এগোতে চোখে পড়ল সেগুলো আসলে হোটেল। দুটি বাড়ির মাঝে এক বিশাল ফাঁকা মাঠ যাতে গরু চরছে। দুটোর মধ্যে একটি বেছে নিয়ে সেখানে নিশ্চিন্তে ঢুকে গেলাম ঘর পাওয়া যাবেই ধরে নিয়ে! এখানে যে লোকে ভুল করেও আসে না আমার সেই ধারণা বদ্ধমূল ততক্ষণে। কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই ভুলটা ভেঙে গেল, প্রায় প্রতিটি ঘরেই লোক আছে দেখা গেল, কোন রুমের দরজা খোলা তো কোন রুম থেকে আসছে টিভির আওয়াজ! ঘর পাওয়া গেল, দোতলায়। সে দোতলার ঘরই চেয়েছিল, পাওয়া গেল। বেশ বড় ঘর, পাশাপাশি দুটো দরজা দেখে এগিয়ে গিয়ে একটা খুলে দেখা গেল ছোট্ট একফালি বারান্দা, যার ওপাশে সেই খোলা মাঠ, যাতে গরু চরছে। মাঠের ওপাশে আরেকটা পাকা বাড়ি, সেটিও একটি হোটেল। দ্বিতীয় দরজাটি খুলতে দেখা গেল ওটি বাথরুম, বেশ ঝকঝকে, পরিস্কার। ডানদিকের দেওয়াল জোড়া আয়না, মাঝঘরে এক খাট, মাথাটা দেওয়ালে ঠেকানো। ঘরে ঢোকার দরজার বাঁ পাশের দেওয়াল ঘেঁষে রাখা আছে এক আলমীরা আর এক টেবিল, যার মাথায় এক ছোট্ট রঙীন টিভি। কাঁধের ব্যাগ ফেলেই হুকুম হল ঝটপট স্নান সেরে নাও নদী দেখতে বেরোব। খাব কোথায় ভাবছিলাম তখন বেয়ারা এসে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি খাবেন বাবু? যদি খান তাহলে রেঁধে দেওয়া হবে! ফ্রীজে পমফ্রেট আর পার্শে মাছ আছে। তিনি আমার দিকে তাকালেন, রেঁধে দেবে মনে তো দু ঘন্টার গল্প! দিনের আধবেলা তো পার পৌঁছুতেই। বেয়ারা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেওয়া হল, খানিক এগিয়ে গেলেই একটা খাওয়ার হোটেল চোখে পড়বে আর তা নইলে যেতে হবে বকখালি!

    খাওয়ার ভাবনা আপাতত বাদ দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম নদীর উদ্দেশ্যে। কোথাও কোন মানুষ নেই, অদ্ভুত এক নীরবতা চারিদিকে! ভীষণ ভালো লাগায় ভরে গেল মন। হোটেল থেকে খানিকটা এগিয়েই পিচ রাস্তা ছেড়ে ডানদিকে একটা ইটের রাস্তা ধরে এগোতেই চোখে পড়ল ডাঁনদিকে একটা ছোট্ট জলা। যে হোটেলে আমরা উঠেছি এটা হোটেলের ঠিক পেছনে। রাস্তার পাশেই জলা আর তাতে বসে আছে অজস্র বক! ছোট, বড় সব রকমের বক। এদিক ওদিকে দেখতে গিয়ে দেখলাম ঠিক রাস্তার পাশেই যেখানে জলাটা শুরু হয়েছে সেখানে বসে আছে দুটো বালিহাঁস! এখানে বোধ হয় কেউ পাখিদের বিরক্ত করে না তাই তারা মানুষকে ভয় পায় না। নিশ্চিন্ত মনে বালিহাসদুটো বসে আছে পাশাপাশি। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম সেখানেই। আরও দূরে দেখলাম এরকম বেশ কিছু হাঁস বসে আছে জোড়ায় জোড়ায়। এই জলাতেও আছে শাপলা, কিছু ফুটে আছে কিছু শুধু লম্বা ডাঁটি উপর দিকে উঠছে। পাখি দেখে নিয়ে আবার এগোলাম। আমার খুব দু:খ হচ্ছিল আমি ক্যামেরা সাথে নিয়ে যাইনি বলে! রাস্তার একদিকে কিছু মাটির বাড়ি, খড়ের চালের। আর একদিকে জলা, দুপাশেই আছে প্রচুর ফনিমনসা।

    খানিক এগিয়ে যেখানে পৌঁছুলাম সেটা এক জেলেপাড়া। শুকনো মাছের ঝাঁঝালো গন্ধ চারপাশে। দূরে সমুদ্র চোখে পড়ছে এখান থেকেই। জেলেপাড়াটা খুব বড় নয়, অল্প কয়েকঘর লোকের বাস। ডাঙায় ভাঙা নৌকো চোখে পড়ছে আর দেখলাম প্রচুর শুটকি। বালির উপরে মাছ জাষ্ট বিছিয়ে শুকানো হচ্ছে। চিংড়ি আর লটেই প্রধানত, অন্য মাছও আছে তবে খুব কম। দু একটা চায়ের দোকানও চোখে পড়ল যাতে ছোট্ট কাঁচের শোকেসে কিছু চিপসের প্যাকেট কিছু বিস্কুটের প্যাকেট আর নিচে রাখা আছে কিছু ঠান্ডা পানীয়ের বোতল। প্রতিটি দোকানেই আছে কাঁচা মাছ, ঝাঁকায় রাখা। সকালেই হয়ত সমুদ্র থেকে ধরে আনা হয়েছিল, বিক্রীর পরে যা রয়ে গেছে। অপেক্ষা, যদি এগুলো ও বিক্রী হয়ে যায়। একান্তই যা পড়ে থাকে সেগুলো শুকিয়ে শুটকি করা হবে। যে মাছগুলো ঝাঁকায় আছে সেগুলো দেখলেই বোঝা যায়, মাছগুলো খুব একটা তাজা নেই আর, হয়ত আগের দিন রাতের মাছ। ব্যপারী তার পছন্দের মাছ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এগুলো পড়ে আছে। পাশেই প্লাষ্টিকের লাল, নীল বক্স দেখতে পেলাম, যাতে করে বরফ দিয়ে মাছ রাখা হয়। এখন মাছে বরফ দেওয়া নেই। হলদে তপসে লাল চিংড়ি, রুপোলী পার্শেরা সব মিইয়ে পড়ে আছে ঝাঁকায়, খদ্দেরের আসার আশায়। কোথাও কোথাও মহিলারা বসে মাছ বাছছেন, আলাদা করছেন একটু ভাল মাছগুলো, হয়তো বা রান্নার জন্যে, বাদবাকি সব শুকিয়ে ফেলা হবে। একটাই ঘরের সামনের দিকটায় দোকান আর ভেতরের দিকটায় তাঁর গেরস্থালী। একমনে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন সব। বাইরের লোক সম্পর্কে এঁদের আগ্রহ খুব কম মনে হল, সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত, কে এলো কে গেলো তাকানোর ফুরসত কিংবা ইচ্ছা দেখলাম না কারোরই। শুটকি কেনার প্রবল বাসনা মনেই চেপে রেখে আপাতত আমি সামনে তাকাই।

    পেছনে ঐ জেলেপাড়া পেরিয়ে আসার সময় চোখে পড়েছে ইয়া উঁচু থামের উপর বিশাল বিশাল তিন ব্লেডের ফ্যান! উঁচু টাওয়ারের মত দেখতে, কিন্তু টাওয়ার নয় ওগুলো। সে জানাল, ওগুলো বাতাসিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্প! বাতাস এলেই ওগুলো ঘুরতে আরম্ভ করে, পাশেই ছোট ঘর আছে, মেশিন ঘর। সাধারণ বিদুৎএর খুটি যেমন পাশাপাশি পরপর থাকে, এও ঠিক তেমনি আছে। পাশাপাশি, একের পর এক। অবাক হয়ে ভাবছিলাম, আমার দেখার আর জানার জগৎ কত ছোট! আমি যেদিকেই তাকাই, যা দেখি তাই যেন ভাল লাগে। এক আশ্চর্য ভাল লাগায় ভরে আছে মন।

    জেলেপাড়ার ডানদিকে এক পুরনো ভাঙা বাড়ি। ছাল-চামড়া ছাড়ানো ইটের দেওয়াল-ছাদই শুধু আছে অবশিষ্ট, দরজা-জানালা কিছুই নেই। চারপাশে বেশ বড় বড় ঝাউগাছ, অনেকটা যেন ঘিরে রেখেছে বাড়িটাকে। সে জানাল, এখানে ওরা শ্যুটিং করতে এসেছিল, ঐ বাড়িটাতে। আরও জানাল, এটা ফ্রেজার সাহেবের বাড়ি, যার নামে এই জায়গার নাম ফ্রেজারগঞ্জ। এই বাড়িতেই নাকি সাহেব থাকত, নারায়ণীকে নিয়ে। নারায়ণী জেলেদের মেয়ে, বছর পনেরর এক কিশোরী। সাগরতীরে ঝাঁকা থেকে তুলে তুলে মাছ শুকোতে দিচ্ছিল একদিন তখন সাহেব তাকে দেখতে পায়, জাহাজ থেকে। সাগরপথে সাহেব যাচ্ছিল কলকাতার দিকে। নারায়ণীকে দেখে থমকে যায় সাহেব। অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ে, মাছ শুকোতে দিচ্ছে বালিতে, যেন এক মৎসকন্যা। সাহেবের ছোট্ট জাহাজ তীরের দিকে এগোতেই নারায়ণী দেখতে পায় আর ত্বরিৎএ উঠে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় ওখান থেকে, মাঝের ঝাঁকা, মাছ ফেলে দিয়েই। সাহেব এসে বসে মাছের কাছে, নারায়ণীর অসমাপ্ত কাজ সাহেব শেষ করে, একটা একটা করে মাছ শুকোতে দেয় বালিতে। তারপর অপেক্ষা করতে থাকে নারায়ণীর, কখন ফিরবে নারায়ণী।

    নারায়ণী ফেরে না। বেলা বয়ে যায়, মাছ নিয়ে কি করবে ভেবে না পেয়ে সাহবে তার লোক লস্করকে হুকুম করে, ঐ জেলেনীকে খুঁজে আন! মাছগুলো যে সব নষ্ট হয়ে যাবে! সাহেবের কথা কিছু বুঝে কিছু না বুঝে তার লস্কর ছোটে নারায়ণীকে ধরে আনতে। খুঁজতে খুঁজতে গ্রামে গিয়ে হাজির হয়, এবাড়ি ওবাড়ি খুঁজে ঠিক তারা নারায়ণীকেও খুঁজে বের করে। নারায়ণীকে তারা বলে, চলো, সাহেব তোমাকে চেয়েছে! নারায়ণীর বাড়িতে ততক্ষণে জড় হয়েছে গ্রামের সব লোক। মাতব্বরে এসে জিজ্ঞেস করে, কে সাহেব? তোমরাই বা কে? তারা জবাব দেয়, ঐ গোর সাহেব, এই মেয়েটাকে চেয়েছে, আমাদের বলেছে, ওকে নিয়ে যেতে! ততক্ষণে গ্রামের লোকেদের হাতে উঠে এসেছে লাঠি-সড়কি। তারা আক্রমণ করে সাহবের লস্করকে, আচমকা আক্রমণে ভড়কে যায় সাহেবের লস্কর, প্রতিরোধের চেষ্টাও করে না তারা, নিজেদের বাঁচানোর জন্যে পালিয়ে যায় এদিক ওদিক। গ্রামের লোক এবার এগোয় সাগরের দিকে, সাহেবের খোঁজে। তখন সন্ধ্যে ঘনিয়েছে, নারায়ণীর জন্যে অপেক্ষা করে করে সাহেব অবশেষে নিজেই শুকোতে দেওয়া মাছ আবার ঝাঁকায় তুলে রাখে, রাতে হিম পড়লে মাছ খারাপ হয়ে যাবে বলে। গ্রামের লোক এসে সাহেবকে আক্রমণ করে, মেরে অজ্ঞান করে দেয় সাহেবকে। মরে গেছে ধরে নিয়ে গ্রামের লোক চলে গেলে সাহেব পড়ে থাকে ওখানেই, অচেতন। চারপাশে ছড়িয়ে থাকে নারায়ণীর মাছ। প্রাণ বাঁচাতে লস্করেরাও ভেসে পড়েছে সমুদ্রে।

    নারায়ণী মাছের খোঁজে সাগরতীরে এলে দেখতে পায় ছড়ানো ছিটানো আধশুকনো সব মাছের মাঝখানে সাহেব পড়ে আছে, অজ্ঞান। নারায়ণী সাহেবকে টেনে নিয়ে আসে গ্রামের বাইরের এক কুড়েঘরে। সেবায় শুশ্রুষায় ধীরে ধীরে সেরে ওঠে সাহেব। দুজনের মধ্যে জন্ম নেয় এক গভীর ভালবাসা, সে এক মস্ত গল্প। নারায়ণী সাহেবের কাছেই থেকে যায় সাগরতীরের ঐ কুড়েতে। সাহেব সেখানে এক বাড়ি বানায়। ইটের বাড়ি। চারপাশে ঝাউবন মাঝে মাঝেই ফনিমনসার ঝোপ। সামনে বিস্তৃত বালুরাশির ওপারে খোলা সমুদ্র। সাহেব আর নারায়ণী দুজনে থাকে সাগরতীরের ঐ ছোট্ট একতলা বাড়িতে। ফ্রেজার সাহেব শুরু করেন মাছের ব্যবসা। আরও সব পাকা বাড়ি হয়, সংসার হয় এইভাবে একসময় তৈরি হয়ে যায় ফ্রেজারগঞ্জ।

    আমি বাড়ির দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম, সমুদ্রের দিকে। সামনে বিস্তৃত বালুরাশি। ভাটার টানে সমুদ্র অনেকটা দূরে, তার এমনকি গর্জনও শোনা যায় না অথচ আমি দাঁড়িয়ে আছি সমুদ্রেরই সামনে! এত শান্ত সমুদ্র! কথাটা বলতেই সে বলল, এ ঠিক সমুদ্র নয়তো, মোহনা। একটু ডাঁনদিকে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবে নদী! আমি সেদিকে কান না দিয়ে এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে। কি অসম্ভব নীরব চারদিক, বাতাসও নেই যে শব্দ হবে। পেছনের ঐ জেলেপাড়ায় এমনকি একটা রেডিও ও চালায় না কেউ! বিচে আমরা ছাড়া আর কোন মানুষ নেই। ধু ধু বালুরাশিতে পা ডুবে যায়। মৃদু একটা আওয়াজ এতক্ষণে কানে এল। জলের শব্দ।

  • samran | 61.246.151.139 | ২৬ নভেম্বর ২০০৬ ১১:১৫693872
  • যে বাসটিতে উঠে বসলাম সেটি যাবে বকখালি। আমাদের যাত্রাপথের শেষে বকখালি পড়বে তা আমার জানা ছিল না। আমরা তো যাচ্ছি ফ্রেজারগঞ্জ! জিজ্ঞেস করে জেনে নিলাম, বাস আমাদের নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে বকখালি। সকালবেলায় যখন বাসের টিকিট কাটা হচ্ছিল তখন দীঘার বাসের কাউন্টারও চোখে পড়েছিল, আমার মন ওদিকেই টানছিল কিন্তু একদিনের জন্যে গিয়ে পোষাবে না ভেবে কিছু বলিনি। তো সামনে বকখালি আছে জেনে মন আরও খানিকটা ফুরফুরে হয়ে গেল। ফ্রেজারগঞ্জে কি আছে সকালে জিজ্ঞেস করে জবাব পেয়েছিলাম, চল না ভাল লাগবে! বাসে আরেকবার জিজ্ঞেস করে জেনেছি ওখানে মোহনা। ভাল লাগবে শুনে নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম, এখন আরেকটু উৎফুল্ল হলাম।

    যে বাসটিতে উঠেছি সেটা এক মজার বাস। বাস ষ্ট্যান্ডে আসামাত্রই চোখে পড়েছে একটি সাদা অ্যাম্বাসেডর দাঁড়িয়ে আছে, আমাদের দেখেই তার চালক এগিয়ে এসেছিলেন, যাবেন দাদা, বকখালি , চলুন। তো সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বাসের কাছে এগোতে দেখা গেল বাসে শুধু দাঁড়ানোর জায়গা বাকি আছে, কন্ডাক্টর তাও বলছে, উঠে পড়ুন, সামনেই খালি হয়ে যাবে! আমি দাঁড়িয়ে যেতে কিছুতেই রাজী নই তাই সে বাসটি ছেড়ে দিয়ে পরের বাসে এসে উঠে জুত করে বসেছি। বসেই স্বস্তি বোধ করলাম, যে এই বাসে অন্তত সিটের পেছনটা এতখানি উঁচু যাতে মাথা রেখে আরাম করা যাবে! এতক্ষণ যে বাসে এসেছি তাতে এই সুবিধেটুকু ছিল না ফলে ঠায় ঘাড় সোজা করে বসে থাকতে হয়েছে। বাসখানি 'কাডইল্যা বোঝাই' ( কাঁঠালে বোঝাই ) না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে আর তারপর হেলতে দুলতে শুরু করেছে চলা। সে এক মজার চলা। প্রতি দু মিনিট অন্তর সে থামে, লোক নামে ধীরে সুস্থে, কোন তাড়া নেই একেবারেই নামার কিংবা ওঠার! বাড়ির উঠোন থেকে লোকে হাত দেখায়, বাস থামে, রাস্তা পেরিয়ে তাঁরা এসে ওঠেন বাসে! স্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ার পর চালক পাঁচ মিনিট অন্তর থেমে থেমে তিন জায়গা থেকে তিনবারে তিনখানি টিফিন ক্যারিয়ার সংগ্রহ করলেন আর তারপর মন দিলেন গাড়ি চালানোয়, গজগামিনী চালে! মাঝে মাঝে হাঁক দিলেন, এই তোমরা ওঠা নামার জন্যে এত চিন্তাভাবনা করলে পড়ে যাবে যে!

    যেখানে বাস আমাদের নামিয়ে দিল সেটি এক ধুঁ ধুঁ রাস্তা। আমি ভেবেছিলাম ছোটখাট কোন গঞ্জে নিশ্চয়ই যাচ্ছি। কিন্তু যেখানে নামলাম সেখানে রাস্তার পাশে শুধু একটা নামফলক ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ল না। রোদ বেশ চড়া, ঘাম না হলেও রোদ খুব একটা সহনীয় নয় আর এমন একটা জায়গায় নেমেছি যেখানে দোকানপাট, বাড়ি ঘর তো দূরের কথা দূর দূর অব্দি কোন মানুষ পর্যন্ত চোখে পড়ছে না। রাস্তার বাঁদিকে কিছু কুড়েঘর চোখে পড়ল আর ডানদিকে দূরে দুটি পাকাবাড়ি। সেদিকেই এগোতে চোখে পড়ল সেগুলো আসলে হোটেল। দুটি বাড়ির মাঝে এক বিশাল ফাঁকা মাঠ যাতে গরু চরছে। দুটোর মধ্যে একটি বেছে নিয়ে সেখানে নিশ্চিন্তে ঢুকে গেলাম ঘর পাওয়া যাবেই ধরে নিয়ে! এখানে যে লোকে ভুল করেও আসে না আমার সেই ধারণা বদ্ধমূল ততক্ষণে। কিন্তু ভেতরে ঢুকতেই ভুলটা ভেঙে গেল, প্রায় প্রতিটি ঘরেই লোক আছে দেখা গেল, কোন রুমের দরজা খোলা তো কোন রুম থেকে আসছে টিভির আওয়াজ! ঘর পাওয়া গেল, দোতলায়। সে দোতলার ঘরই চেয়েছিল, পাওয়া গেল। বেশ বড় ঘর, পাশাপাশি দুটো দরজা দেখে এগিয়ে গিয়ে একটা খুলে দেখা গেল ছোট্ট একফালি বারান্দা, যার ওপাশে সেই খোলা মাঠ, যাতে গরু চরছে। মাঠের ওপাশে আরেকটা পাকা বাড়ি, সেটিও একটি হোটেল। দ্বিতীয় দরজাটি খুলতে দেখা গেল ওটি বাথরুম, বেশ ঝকঝকে, পরিস্কার। ডানদিকের দেওয়াল জোড়া আয়না, মাঝঘরে এক খাট, মাথাটা দেওয়ালে ঠেকানো। ঘরে ঢোকার দরজার বাঁ পাশের দেওয়াল ঘেঁষে রাখা আছে এক আলমীরা আর এক টেবিল, যার মাথায় এক ছোট্ট রঙীন টিভি। কাঁধের ব্যাগ ফেলেই হুকুম হল ঝটপট স্নান সেরে নাও নদী দেখতে বেরোব। খাব কোথায় ভাবছিলাম তখন বেয়ারা এসে জিজ্ঞেস করল, আপনারা কি খাবেন বাবু? যদি খান তাহলে রেঁধে দেওয়া হবে! ফ্রীজে পমফ্রেট আর পার্শে মাছ আছে। তিনি আমার দিকে তাকালেন, রেঁধে দেবে মনে তো দু ঘন্টার গল্প! দিনের আধবেলা তো পার পৌঁছুতেই। বেয়ারা ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে জেনে নেওয়া হল, খানিক এগিয়ে গেলেই একটা খাওয়ার হোটেল চোখে পড়বে আর তা নইলে যেতে হবে বকখালি!

    খাওয়ার ভাবনা আপাতত বাদ দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম নদীর উদ্দেশ্যে। কোথাও কোন মানুষ নেই, অদ্ভুত এক নীরবতা চারিদিকে! ভীষণ ভালো লাগায় ভরে গেল মন। হোটেল থেকে খানিকটা এগিয়েই পিচ রাস্তা ছেড়ে ডানদিকে একটা ইটের রাস্তা ধরে এগোতেই চোখে পড়ল ডাঁনদিকে একটা ছোট্ট জলা। যে হোটেলে আমরা উঠেছি এটা হোটেলের ঠিক পেছনে। রাস্তার পাশেই জলা আর তাতে বসে আছে অজস্র বক! ছোট, বড় সব রকমের বক। এদিক ওদিকে দেখতে গিয়ে দেখলাম ঠিক রাস্তার পাশেই যেখানে জলাটা শুরু হয়েছে সেখানে বসে আছে দুটো বালিহাঁস! এখানে বোধ হয় কেউ পাখিদের বিরক্ত করে না তাই তারা মানুষকে ভয় পায় না। নিশ্চিন্ত মনে বালিহাসদুটো বসে আছে পাশাপাশি। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম সেখানেই। আরও দূরে দেখলাম এরকম বেশ কিছু হাঁস বসে আছে জোড়ায় জোড়ায়। এই জলাতেও আছে শাপলা, কিছু ফুটে আছে কিছু শুধু লম্বা ডাঁটি উপর দিকে উঠছে। পাখি দেখে নিয়ে আবার এগোলাম। আমার খুব দু:খ হচ্ছিল আমি ক্যামেরা সাথে নিয়ে যাইনি বলে! রাস্তার একদিকে কিছু মাটির বাড়ি, খড়ের চালের। আর একদিকে জলা, দুপাশেই আছে প্রচুর ফনিমনসা।

    খানিক এগিয়ে যেখানে পৌঁছুলাম সেটা এক জেলেপাড়া। শুকনো মাছের ঝাঁঝালো গন্ধ চারপাশে। দূরে সমুদ্র চোখে পড়ছে এখান থেকেই। জেলেপাড়াটা খুব বড় নয়, অল্প কয়েকঘর লোকের বাস। ডাঙায় ভাঙা নৌকো চোখে পড়ছে আর দেখলাম প্রচুর শুটকি। বালির উপরে মাছ জাষ্ট বিছিয়ে শুকানো হচ্ছে। চিংড়ি আর লটেই প্রধানত, অন্য মাছও আছে তবে খুব কম। দু একটা চায়ের দোকানও চোখে পড়ল যাতে ছোট্ট কাঁচের শোকেসে কিছু চিপসের প্যাকেট কিছু বিস্কুটের প্যাকেট আর নিচে রাখা আছে কিছু ঠান্ডা পানীয়ের বোতল। প্রতিটি দোকানেই আছে কাঁচা মাছ, ঝাঁকায় রাখা। সকালেই হয়ত সমুদ্র থেকে ধরে আনা হয়েছিল, বিক্রীর পরে যা রয়ে গেছে। অপেক্ষা, যদি এগুলো ও বিক্রী হয়ে যায়। একান্তই যা পড়ে থাকে সেগুলো শুকিয়ে শুটকি করা হবে। যে মাছগুলো ঝাঁকায় আছে সেগুলো দেখলেই বোঝা যায়, মাছগুলো খুব একটা তাজা নেই আর, হয়ত আগের দিন রাতের মাছ। ব্যপারী তার পছন্দের মাছ তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এগুলো পড়ে আছে। পাশেই প্লাষ্টিকের লাল, নীল বক্স দেখতে পেলাম, যাতে করে বরফ দিয়ে মাছ রাখা হয়। এখন মাছে বরফ দেওয়া নেই। হলদে তপসে লাল চিংড়ি, রুপোলী পার্শেরা সব মিইয়ে পড়ে আছে ঝাঁকায়, খদ্দেরের আসার আশায়। কোথাও কোথাও মহিলারা বসে মাছ বাছছেন, আলাদা করছেন একটু ভাল মাছগুলো, হয়তো বা রান্নার জন্যে, বাদবাকি সব শুকিয়ে ফেলা হবে। একটাই ঘরের সামনের দিকটায় দোকান আর ভেতরের দিকটায় তাঁর গেরস্থালী। একমনে নিজের কাজ করে যাচ্ছেন সব। বাইরের লোক সম্পর্কে এঁদের আগ্রহ খুব কম মনে হল, সবাই নিজের নিজের কাজে ব্যস্ত, কে এলো কে গেলো তাকানোর ফুরসত কিংবা ইচ্ছা দেখলাম না কারোরই। শুটকি কেনার প্রবল বাসনা মনেই চেপে রেখে আপাতত আমি সামনে তাকাই।

    পেছনে ঐ জেলেপাড়া পেরিয়ে আসার সময় চোখে পড়েছে ইয়া উঁচু থামের উপর বিশাল বিশাল তিন ব্লেডের ফ্যান! উঁচু টাওয়ারের মত দেখতে, কিন্তু টাওয়ার নয় ওগুলো। সে জানাল, ওগুলো বাতাসিয়া বিদ্যুৎ প্রকল্প! বাতাস এলেই ওগুলো ঘুরতে আরম্ভ করে, পাশেই ছোট ঘর আছে, মেশিন ঘর। সাধারণ বিদুৎএর খুটি যেমন পাশাপাশি পরপর থাকে, এও ঠিক তেমনি আছে। পাশাপাশি, একের পর এক। অবাক হয়ে ভাবছিলাম, আমার দেখার আর জানার জগৎ কত ছোট! আমি যেদিকেই তাকাই, যা দেখি তাই যেন ভাল লাগে। এক আশ্চর্য ভাল লাগায় ভরে আছে মন।

    জেলেপাড়ার ডানদিকে এক পুরনো ভাঙা বাড়ি। ছাল-চামড়া ছাড়ানো ইটের দেওয়াল-ছাদই শুধু আছে অবশিষ্ট, দরজা-জানালা কিছুই নেই। চারপাশে বেশ বড় বড় ঝাউগাছ, অনেকটা যেন ঘিরে রেখেছে বাড়িটাকে। সে জানাল, এখানে ওরা শ্যুটিং করতে এসেছিল, ঐ বাড়িটাতে। আরও জানাল, এটা ফ্রেজার সাহেবের বাড়ি, যার নামে এই জায়গার নাম ফ্রেজারগঞ্জ। এই বাড়িতেই নাকি সাহেব থাকত, নারায়ণীকে নিয়ে। নারায়ণী জেলেদের মেয়ে, বছর পনেরর এক কিশোরী। সাগরতীরে ঝাঁকা থেকে তুলে তুলে মাছ শুকোতে দিচ্ছিল একদিন তখন সাহেব তাকে দেখতে পায়, জাহাজ থেকে। সাগরপথে সাহেব যাচ্ছিল কলকাতার দিকে। নারায়ণীকে দেখে থমকে যায় সাহেব। অপরূপ সুন্দরী এক মেয়ে, মাছ শুকোতে দিচ্ছে বালিতে, যেন এক মৎসকন্যা। সাহেবের ছোট্ট জাহাজ তীরের দিকে এগোতেই নারায়ণী দেখতে পায় আর ত্বরিৎএ উঠে দৌঁড়ে পালিয়ে যায় ওখান থেকে, মাঝের ঝাঁকা, মাছ ফেলে দিয়েই। সাহেব এসে বসে মাছের কাছে, নারায়ণীর অসমাপ্ত কাজ সাহেব শেষ করে, একটা একটা করে মাছ শুকোতে দেয় বালিতে। তারপর অপেক্ষা করতে থাকে নারায়ণীর, কখন ফিরবে নারায়ণী।

    নারায়ণী ফেরে না। বেলা বয়ে যায়, মাছ নিয়ে কি করবে ভেবে না পেয়ে সাহবে তার লোক লস্করকে হুকুম করে, ঐ জেলেনীকে খুঁজে আন! মাছগুলো যে সব নষ্ট হয়ে যাবে! সাহেবের কথা কিছু বুঝে কিছু না বুঝে তার লস্কর ছোটে নারায়ণীকে ধরে আনতে। খুঁজতে খুঁজতে গ্রামে গিয়ে হাজির হয়, এবাড়ি ওবাড়ি খুঁজে ঠিক তারা নারায়ণীকেও খুঁজে বের করে। নারায়ণীকে তারা বলে, চলো, সাহেব তোমাকে চেয়েছে! নারায়ণীর বাড়িতে ততক্ষণে জড় হয়েছে গ্রামের সব লোক। মাতব্বরে এসে জিজ্ঞেস করে, কে সাহেব? তোমরাই বা কে? তারা জবাব দেয়, ঐ গোর সাহেব, এই মেয়েটাকে চেয়েছে, আমাদের বলেছে, ওকে নিয়ে যেতে! ততক্ষণে গ্রামের লোকেদের হাতে উঠে এসেছে লাঠি-সড়কি। তারা আক্রমণ করে সাহবের লস্করকে, আচমকা আক্রমণে ভড়কে যায় সাহেবের লস্কর, প্রতিরোধের চেষ্টাও করে না তারা, নিজেদের বাঁচানোর জন্যে পালিয়ে যায় এদিক ওদিক। গ্রামের লোক এবার এগোয় সাগরের দিকে, সাহেবের খোঁজে। তখন সন্ধ্যে ঘনিয়েছে, নারায়ণীর জন্যে অপেক্ষা করে করে সাহেব অবশেষে নিজেই শুকোতে দেওয়া মাছ আবার ঝাঁকায় তুলে রাখে, রাতে হিম পড়লে মাছ খারাপ হয়ে যাবে বলে। গ্রামের লোক এসে সাহেবকে আক্রমণ করে, মেরে অজ্ঞান করে দেয় সাহেবকে। মরে গেছে ধরে নিয়ে গ্রামের লোক চলে গেলে সাহেব পড়ে থাকে ওখানেই, অচেতন। চারপাশে ছড়িয়ে থাকে নারায়ণীর মাছ। প্রাণ বাঁচাতে লস্করেরাও ভেসে পড়েছে সমুদ্রে।

    নারায়ণী মাছের খোঁজে সাগরতীরে এলে দেখতে পায় ছড়ানো ছিটানো আধশুকনো সব মাছের মাঝখানে সাহেব পড়ে আছে, অজ্ঞান। নারায়ণী সাহেবকে টেনে নিয়ে আসে গ্রামের বাইরের এক কুড়েঘরে। সেবায় শুশ্রুষায় ধীরে ধীরে সেরে ওঠে সাহেব। দুজনের মধ্যে জন্ম নেয় এক গভীর ভালবাসা, সে এক মস্ত গল্প। নারায়ণী সাহেবের কাছেই থেকে যায় সাগরতীরের ঐ কুড়েতে। সাহেব সেখানে এক বাড়ি বানায়। ইটের বাড়ি। চারপাশে ঝাউবন মাঝে মাঝেই ফনিমনসার ঝোপ। সামনে বিস্তৃত বালুরাশির ওপারে খোলা সমুদ্র। সাহেব আর নারায়ণী দুজনে থাকে সাগরতীরের ঐ ছোট্ট একতলা বাড়িতে। ফ্রেজার সাহেব শুরু করেন মাছের ব্যবসা। আরও সব পাকা বাড়ি হয়, সংসার হয় এইভাবে একসময় তৈরি হয়ে যায় ফ্রেজারগঞ্জ।

    আমি বাড়ির দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালাম, সমুদ্রের দিকে। সামনে বিস্তৃত বালুরাশি। ভাটার টানে সমুদ্র অনেকটা দূরে, তার এমনকি গর্জনও শোনা যায় না অথচ আমি দাঁড়িয়ে আছি সমুদ্রেরই সামনে! এত শান্ত সমুদ্র! কথাটা বলতেই সে বলল, এ ঠিক সমুদ্র নয়তো, মোহনা। একটু ডাঁনদিকে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবে নদী! আমি সেদিকে কান না দিয়ে এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে। কি অসম্ভব নীরব চারদিক, বাতাসও নেই যে শব্দ হবে। পেছনের ঐ জেলেপাড়ায় এমনকি একটা রেডিও ও চালায় না কেউ! বিচে আমরা ছাড়া আর কোন মানুষ নেই। ধু ধু বালুরাশিতে পা ডুবে যায়। মৃদু একটা আওয়াজ এতক্ষণে কানে এল। জলের শব্দ।
  • m | 67.173.95.163 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১০:৫৬693873
  • একি!!!!! একই লেখা দুবার:(((((((((((((
  • kd | 59.93.212.110 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৫:৩৩693874
  • ক্ষতি কী? ভালো জিনিস দুবার কেন, পাঁচবারও পড়তে রাজি আচি। আরও আরও, সামরান।
  • kd | 59.93.212.110 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৫:৩৬693875
  • পড়তে পড়তে বারবার বিভূতিবাবুর 'দুয়ার হতে অদূরে' মনে পড়ে যাচ্ছে - একেবারে তার মডার্ন ভার্‌শান।
  • Santanu | 80.122.170.93 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ১৬:৩৯693877
  • সত্যি মডার্ন
  • d | 61.246.24.107 | ২৭ নভেম্বর ২০০৬ ২২:১৭693878
  • তারপর??
  • I | 59.93.205.110 | ২৮ নভেম্বর ২০০৬ ২০:০০693879
  • ফ্রেজারগঞ্জোর বীচে শাখা-সিঁদুর পরা দুইটি হোঁৎকা হোমো বধূ দেখেছিলাম। সঙ্গে তাদের রেসপেক্টিভ বরেরা। শুঁটকির দর কচ্ছিল।
  • Riju | 203.197.96.50 | ৩০ নভেম্বর ২০০৬ ১১:১৩693880
  • (সময় কম তাই আরো লেখার ইচ্ছে থাকলেও ....)

    ওপর থেকে তিব্বত দেখার সৌভাগ্য হয় নি তবে হিমালয়ের কিছু অংশ ওপর থেকে দেখেছি। সহজ উপায় দিল্লী থেকে ইন্ডিয়ান বা জেটের লেহ গামী প্লেন ধরুন অথবা চন্ডীগড় বা শ্রীনগর থেকেও ধরতে পারেন।সবুজ পাহাড় পেরিয়ে সাদা বরফের মুকুট ওপর থেকেই দেখুন আর মাঝে মাঝে নীলচে নদী আর সবুজ লেক। তারপরেই প্লেন টপকে গেলো হিমালয় আর শুরু হল কারাকোরাম লাদাখ রেঞ্জ।কি অদ্ভুত সোনালী হলুদ রঙের পাহাড়।কারন একটাও গাছ নেই পর্বতের মাথায় দু ছটাক বরফ লেগে আছে তাতে সুজ্জিমামার লালচে আলোর ছোঁয়া। তার মাঝে নীলচে লেক আর সবজে নদী কিন্তু হারায় নি।

    তবে আমি বলব একবার অন্তত কষ্ট করে কাশ্মীর থেকে জোজিলা পাশ পেরিয়ে লাদাখে অথবা মানালী থেকে রোটাং টপকে লাদাখে যান বাই রোড - দেখবেন প্রকৃতির রূপ পরিবর্তন - সবুজ থেকে সোনালীর রূপান্তর।
    আমি শুরু করেছিলুম মানালী থেকে ।যাত্রার বন্নোনা টুকুই দি -
    ভোরবেলা মানালী থেকে যাত্রা ,প্রথমে পাবেন সবুজ হিমালয় ,সবুজ গাছ ।মাঝে সরু বিয়াস নদী।এবার উপরে ওঠা - রোটাং টপকে গেলুম - শুরু হল লাহুল ভ্যালি; না স্পিতি বেশ দূরে ডান্দিকে , ওদিকটা পরে।এখন লাহুল পেরোবেন।চারদিকে সাদা চূড়ার মাঝে সবুজ পাহাড়ী গাঁও।এবার পাশ দিয়ে চলেছে চন্দ্রভাগা নদী।লাহুল পেরিয়ে যান পাশে পড়বে সুরজ তাল -টলটলে নীল জল।এবার আরো উঁচুতে ওঠা - বরলাচালা পাস (উচ্চতায় বিশ্বের পঞ্চম উচ্চতম মোটোরেবল রোড)। অক্সিজেনের অভাব ফিল করবেন। হাই অল্টিচিউড সিকনেস স্বাভাবিক।চারপাশের দৃশ্য আসতে আসতে বদলাচ্ছে। বড় বড় গাছ গুলো সব হাওয়া।পাহাড়ের রং ও সবুজ থেকে ধূসর হচ্ছে। আরো এগিয়ে যান ।পেরিয়ে গেলেন হিমালয় রেঞ্জ ।এবার শুরু হবে কারাকোরাম পর্বতশ্রেণী।হিমাচল আর J&K বর্ডারে সারচু তে রাত্রীবাস। রাতে পোচোন্ডো মাথা যন্ত্রনা,মাথাঘোরা, বমি হতেই পারে ,ঘাবরাবেন না।হাই অল্টিচিউড সিকনেস।অ্যাক্লেমাটাইস হয়ে গেলেই মুক্তি।যাইহোক
    সেই রাতে ঘুম তো হবে না। পরদিন উষাকালে উঠে পড়ুন।দেখুন আপনার তাঁবুর চারপাশে গোল হয়ে ঘিরে থাকা সোনালী হলুদ পাহাড়চূড়া সুজ্জিমামার প্রথম আলোয় রাঙা হছে। দেখুন আর অনুভব করুন। মাথা যন্ত্রনা ভুলে যাবেন। অত:পর আবার যাত্রা । এবার 'হুইস্কি পয়েন্ট' (নামের কারন এখানে যাত্রা করলে নাকি হুইস্কি পানের এফেক্ট হয়)- পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ীটা ২২ পাকে ঘুরে ১৪৫০০ ফীট থেকে সো-ও-জা তুলবে ১৬০০০ ফীটে। আরেকটু উঠেই লাচুংলা পাস (বিশ্বের চতুর্থ উচ্চতম মোটোরেবল রোড) এবার সামনে বিশাল সমতল অঞ্চল - বিস্তীর্ণা প্রান্তর পাঙ,না সবুজ ঘাস কোত্থাও নেই। সোনালী হলুদ লাল রঙের পাথরের রঙে রাঙা। দেখা মিলতে পারে স্থানীয় বুনো পাহাড়ী চেঙ্গিয়াল (গাধা জাতীয় পশু)বা ভোঁদর জাতীয় অদ্ভুত অদেখা প্রাণীর।দেখতে পাবেন সিন্ধুর উপনদী জান্‌কস্কারের -নীল স্ফটিক জল।
    দাঁড়ান পালাচ্ছেন কোথায় ?এখন পাহাড় চড়া শেষ হয় নি। এবার ১৬৭০০ ফীট থেকে উঁচুতে চড়বে গাড়ী ।আসবে তাংলাংলা পাস (১৭৫৮০ ফীট -বিশ্বের 2nd highest )। এবার নামা -এসে পড়লেন লাদাখ। দেখা পাবেন সবুজ সিন্ধু নদের ।নদীর তীরে সবুজ গ্রাম আর একটু দূরেই সোনালী পাহাড়।উপসী,রনধীরপুরা,থিকসে পেরিয়ে বিকেল বেলায় লেহ।

    (ভাবছেন বিশ্বের প্রথম এবং তৃতীয় উচ্চতম পাসে গাড়ী চালানো বাদ গেল ? না তারা এই লাদাখেই আছে, অন্য প্রান্তে। সে গল্প পড়ে)
  • shrabani | 220.227.146.21 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৬ ১২:৫৮693881
  • এবছর ঘোর বর্ষায় কত্তাকে যেতে হল ভগবানের আপন দেশে কর্মসুত্রে। সঙ্গী আরেকজন যিনি চললেন গিন্নী সহ। মুলত তাদের উৎসাহে আমিও সঙ্গ নিলাম। কাজের ফাঁকে বেশী ঘোরার সময় ছিলোনা, দিনও কম, তার ওপরে বিরামহীন বৃষ্টি।
    সর্বসম্মতি ক্রমে ফেরার দুদিন আগে সকাল বারোটায় আলেপ্পির বোট পয়েন্টে বামাল শুদ্ধ হাজির সকলে, চড়ে বসলাম বেনীর বোটে। এর আগে দুর থেকেই দেখেছি হাউসবোট। ভেতরে গিয়ে ব্যাপার দেখেশুনে চক্ষু প্রায় চড়কগাছ! এত সব একটা বোটের মধ্যে, এও সম্ভব নাকি? সামনের দিকে চালকের পরেই অনেকটা খোলা জায়গায় অত্যাধুনিক ড্রয়িং কাম ডাইনিং। সোফা চেয়ার টেবিল দিয়ে সাজানো তিনদিক খোলা। এরপরে বাঁ দিকে সরু প্যাসেজ চলে গেছে বোটের শেষ অবধি আর ডান দিকে পর পর তিনটি আধুনিক এসি বেডরুম বাথ সহ। সব শেষে আধুনিক রসুই, কর্মচারীদের থাকার ব্যাবস্থা, জেনসেট, হ্যান্ডপাম্প। পাটাতনের নীচে মজুত বিপুল খাদ্যসম্ভার।
    যাত্রা হল শুরু। বৃষ্টি হচ্ছিলনা, হাল্কা রোদের মত কিছু যেন দেখা যাচ্ছিল। আমরা আলেপ্পির সীমা ছাড়াতে না ছাড়াতেই হাতে হাতে টাটকা ডাবের জল চলে এল। আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আরাম করে সোফায় বসলাম, মালপত্র চলে গেছে যার যার রুমে। সামনে সেন্টার টেবিলে স্তুপাকারে রাখা আছে রকমারী কলা আঙ্গুর টাটকা ফল।
    আমাদের বোটে চালক ও কুক নিয়ে মোট চারজন কর্মচারী। এসে খোঁজ করে গেল আমরা মাছ খাব না চিকেন। সকালে মাছই হোক, জানা গেল এখুনি তোলা হয়েছে সকালের বাজার থেকে।
    জলপথ ক্রমশ চওড়া হতে থাকল। দুধারে খেত, নারকেল খেজুরের সারির ফাঁকে ফাঁকে গ্রাম। সবাই ব্যস্ত নিত্য কাজে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি আমাদের মতই আরো অনেকে ভেসেছে। তবে এটা যেহেতু এদেশের সীজন নয়, বেশীর ভাগ টুরিস্ট ই বিদেশী। মাঝপথে একটা বোটেল দেখলাম দোতলা।
    বোটস্টপে স্কুলের ছেলে মেয়েরা ব্যাগ কাঁধে বোটের অপেক্ষায়, কোথাও বা বয়স্ক লোকেদের আড্ডা।
    একটা অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে ভেসে চলেছি, মনে পড়ছে, পুর্ববঙ্গের বর্ননা যেখানে যা পড়েছি। সে দেশ হয়ত এরকমই ছিল!
    জলের ধারে বাড়ির নিজস্ব ঘাট, ঘাটে বাঁধা তাল ডোঙ্গার মত ফেরী বোট। কেউ কেউ আবার এপার থেকে দোকান করে নিয়ে ওপারে যাচ্ছে।
  • S | 61.95.167.91 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৪:২৫693882
  • সর্বাণী, খরচাপাতি কেমন। আর ভগমানেদ্দেশে যাবার প্রকৃষ্ট সময় কী হতে পারে?
  • shrabani | 220.227.146.21 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৫:২৩693883
  • এইভাবে যেতে যেতে আস্তে আস্তে জল বাড়তে থাকল আর চারিদিকের লোকালয় দুরে যেতে থাকল, শুধু জল, আর খেত, শেষ মেষ শুধু জল। মাঝখানে আমরা। কখন যে সেই হাল্কা রোদ পিছনে ফেলে এসেছি টের ও পাইনি। মনে হচ্ছে কোথায় এসে গেছি, অজানা কোন দেশে! মাঝে মাঝে দুরে দু একটা ফেরী বোট চলে যাচ্ছে। হঠাৎ দুরে তাকিয়ে দেখি একটা কালো গোলার মত কি যেন। চালক তার ইঞ্জিন বন্ধ করল। আমি অন্যদের দেখাতে গিয়ে দেখি গোলাটা যেন আমাদের দিকেই আসছে। কুক ছাড়া বাকী তিনজন দৌড়ে এসে খোলা দিকগুলো গোটানো প্লাস্টিক টেনে ঢাকতে শুরু করল। আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই, বৃষ্টি শনশন হাওয়া সমেত। চেয়ার টেয়ার গুলো সব একদিকে সরিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফাঁকফোকর দিয়ে জলের ওপর অবিরাম জলের ধারা দেখতে থাকলাম মুগ্‌ধ হয়ে আমরা সবাই।
    স্বচ্ছ জলের ফোঁটা মনে হচ্ছিল যেন ক্রিস্টলের দানা রুপোর পাত্রের ওপর পড়ছে।
    কত নাম না জানা জলের পাখিরা আশ্রয় নিয়েছে পদ্ম পাতে।
    ধীরে ধীরে হাওয়াটা কমে এল, চারিদিক খুলে দেওয়া হল, আমরা আবার আরাম করে বসে কফি খেতে খেতে বৃষ্টি উপভোগ করতে থাকলাম। ঐ পরিবেশে সবারই কিরকম কথা বন্ধ হয়ে গেছিল। শুধু প্রকৃতির থেকে যতটা পাওয়া যায় অঞ্জলি ভরে নিচ্ছিলাম সবাই।
    আমরা সমুদ্রের খুব কাছে আছি, আমাদের বোটচালক জানাল আর রান্নার ছেলেটি সলজ্জ হেসে বলে গেল খাবারও রেডি। তাই শুনে সবারই খিদে পেয়ে গেল, অবশ্য রান্নার গন্ধ ও দারুন পাওয়া যাচ্ছিল।ওরা বোট আবার চালু করল আর আমরা যে যার রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে এলাম।
    এক জায়গায় বোটটা থামাল একটু ধার ঘেঁষে। জলের মাঝখানে একটু জমি , একটা ছোট কুঁড়ে, মাটি দেখা যায়না এত নারকেল গাছ সারি সারি। আমরা বোট থেকে হাত বাড়িয়ে গাছের ডাব ছুঁতে পারছিলাম। ডাইনিং টেবিলে বসতেই একের পর এক ধোঁয়া ওঠা পদ হাজির হল, থোরন, তিয়েল, ডাল, পাঁপর, আভিয়েল,মীন কারি আর মসলা মাখানো মাছ ভাজা। শেষ পাতে সুন্দর করে কাটা মিষ্টি আনারস, আনারসের খোলার প্লেটে।
  • shrabani | 220.227.146.21 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৫:৩৭693884
  • খুব গরমে না যাওয়াই ভালো। আগে লোকে বৃষ্টিতেও বারন করত তবে আজকাল ওরা বরষাতে ট্যুরিজম প্রোমোট করছে। ওদেশে বরষা শেষ হয় অগষ্টের মাঝথেকে আর শুরু মে থেকে। তখোন থেকে পুজো অবধি যাওয়া যায়। তারপরে ওখানে রিটার্ন মনসুন শুরু হয়, চলে প্রায় ডিসেম্বর অবধি। তারপর যাওয়া যায় মার্চ পর্যন্ত।

    আমরা বর্ষা বলে হাউসবোট প্রায় জলের দরে পেয়েছিলাম। সীজনে একদিনের জন্য দুই বেডরুমের প্রায় দশ থেকে বারো নেয়। এছাড়া শেয়ার করে যাওয়া যায় বা অল্প দুরত্বের জন্য অনেক কম লাগে। আলেপ্পি থেকে কুইলন ট্রিপ বোধহয় আট ঘন্টার। প্যাকেজ টুরে শুনেছি আলেপ্পি থেকে কুমারোক্কম নিয়ে যায়, রাত্রিবাস সেখানে।
  • shrabani | 220.227.146.21 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৭:০২693885
  • এত খাওদাওয়ার পর যখন আবার বোটের সামনে গিয়ে বসলাম, তখন সবারই চোখে মোটামুটি ঘুমের আবেশ। এই বৃষ্টি ধোয়া দুপুর আর চারিদিকের নিশ:ব্দতা মাঝে মাঝে শুধু পানকৌড়ির টুপ টুপ ডুব দেওয়ার শব্দ।

    আমি ঘরের ভেতরে গিয়ে শুলাম। জলের দিকে পাশাপাশি দুই কাঁচের জানালা, খাটের সমান উচ্চতায়। তার মধ্যে দিয়ে বাইরেটা দেখতে দারুন লাগছিল। ইতিমধ্যে বোট আবার চলতে শুরু করেছে। সেই দোলানিতে কখোন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতেই পারিনি।

    আধঘন্টা পরে উঠলাম যখন একেবারে ফ্রেশ। মুখ হাত ধুয়ে বাইরে গিয়ে দেখি সঙ্গীরা আগেই হাজির। চারপাশের চিত্রটা ও একটু বদলে গেছে। আমরা আবার লোকালয়ে। আশপাশে বেশ কিছু অন্যান্য বোট ও দেখা যাচ্ছে। তারমধ্যে অনেকগুলি ফেরী আছে, স্কুল কলেজ ছুটির সময়। সাদা নীল জামা পরে ছুটির খুশীতে বাচ্চারা হাত নাড়াতে নাড়াতে আমাদের পেরিয়ে যাচ্ছে। বোটের গতিও বেশ ঢিমেতাল। প্রতি ঘাটেই স্নানরত লোক জন দেখা যাচ্ছে। আমি জানতাম যে ওদের ওটাই স্নানের সময়।
    এই পরিবেশও অন্য রকম ভালো লাগল,মনে হল যেন কতকাল পরে আবার এইসব দেখছি অথচ চব্বিশ ঘন্টাও হয়নি।
    ইতিমধ্যে চা এসে গেছে, আর সঙ্গে গরম গরম পকোড়া, কলার চিপ্স। এই পকোড়া কিন্তু উত্তর ভারতের পকোড়া নয় বরং আমাদের ঝাল ঝাল পেঁয়াজীর মত, কারি পাতাটা বাদ দিলে।
    কিছুক্ষনের মধ্যে আমরা এক জায়গায় পৌঁছলাম যেখানে জলপথ বেশ বিস্তৃত, চার দিকে এক দুই করে আরো কিছু বোট নোঙর করা হয়েছে। সন্ধ্যে প্রায় হয় হয়। শুনলাম রাতে সেইখানেই থাকা। আগে নাকি রাত্রেও বোট চলত কিন্তু সুরক্ষার জন্য আজকাল নিয়ম হয়েছে যে সব বোট এসে এই নির্দিষ্ট স্থানে নোঙর করবে। আশপাশ দেখে মনে হল জায়গাটি বেশ সমৃদ্ধ মফ:স্বল। মন্দির, চার্চ দেখা গেল। আমরা যেখানে বোট বাঁধলাম, সেই খানেই একটি আয়ুর্বেদী স্পা আমাদের ডাকাডাকি করতে লাগল। আমরা সেখানে না গেলেও হাত পা ছড়ানোর জন্য ডাঙায় নামলাম। এক মহিলা মাছ ধরছিলেন আমাদের দেশের মত ছিপ নিয়ে। আমরা চাইতেই একগাল হেসে আমাদের হাতে ছিপ তুলে দিলেন আর আনাড়ীদের রকম সকম দেখে খোলা হাসি হাসতে থাকলেন। ভালো লাগল দেখে যে কোথাও কোনো জড়তা নেই, একগলা ঘোমটা নেই।
    সামনেই একটি মন্দির। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা উঠনের মাঝখানে ছোট্ট মন্দির। এক বৃদ্ধা জল থেকে কাচা কাপড়ে উঠে প্রদীপ জ্বালাতে গেলেন, দেখে মন্দির কম বাড়ীর তুলসী মঞ্চ বেশী মনে পড়ে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, আমরা আবার বোটে।

  • shrabani | 220.227.146.21 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৭:৩০693886
  • তাকিয়ে দেখি কখোন ঝুপ করে অন্ধকার নেমে গেছে। যদিও ইলেকট্রিক সাপ্লাই আছে তবু তা মোটেই যথেষ্ট নয় এই গভীর অন্ধকার কে আলোকিত করতে। টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে জেন সেটের টিম টিম আলো (ফ্রিজ এসি সবইতো ঐ ভরসায়)। কিছুক্ষন অন্তাক্ষরী , তাস ইত্যাদি চলল। অন্যান্য বোট গুলো দুরে দুরে তাই জলের মাঝে মাঝে জোনাকীর আলোর আভাস। টিভিতে গঙ্গা দেখেছিলাম, খুব ভালো মনে নেই তবে এরকম একটা দৃশ্য ছিলো মনে হয় রাত্রে নৌকা নোঙর করা।
    কিছুক্ষণ পরে ডিনার সার্ভ করল। দুরন্ত চিকেন কারী, নরম রুটি, এছাড়া ভাত ও অনেক তরকারী। সুইট ডিশ পায়সম।
    খেয়ে দেয়ে আবার চলল গল্পের আসর। মনে হচ্ছিল এই রাতের জন্য ভ্রমনে বন্ধু থাকাটা জরুরী ছিল। কতরকমের পোকার শব্দ, ঝিঁঝিঁর ডাক ব্যাঙের কটরকটর সব মিলিয়ে এক অনবদ্য সন্ধ্যা রাত হল। অনেক রাতে যখন ঘুমোতে গেলাম ঘড়ি দেখার প্রয়োজন বোধ করিনি।
  • I | 59.93.243.222 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৬ ২১:৫৫693888
  • শ্রাবণী কে?(না বেথে, সর্বাণী নয়) নতুন বন্দুক? সে এত ভাল লেখে কেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন