এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে(৪)

    dam
    অন্যান্য | ২১ নভেম্বর ২০০৬ | ৪১১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • s | 141.80.168.31 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৬ ০২:১৭693889
  • এইটা ইঁদুর কত্তা আর ইন্দুরাণীর জন্য -

    চীজ তো আমারও না পসন্দ তা বলে প্যারিসকে হ্যাক থু:!!!! নাহ কস্মিনকালেও তা পারব না। প্যারিসের সাথে কোথায় যেন দেশের একটা মিল পাই। অপরিষ্কার রাস্তা ঘাট, স্টেশন, মলিন দেওয়াল দরজা জানলা, ঝুল বারান্দা অলা ঘর বাড়ি... কেমন সব চেনা চেনা ঠেকে। খালি মনে হয় আগেও যেন দেখেছি। আর ভালো লাগে নদীর ধার বরাবর এলোমেলো হাঁটা। সাথে থাকুক ডিল্যুজ পাউডারের মত মিহি বৃষ্টি, থেকে থেকে দমকা হাওয়া। মনে হয় না দুনিয়ায় কোন চিন্তা ভাবনা আছে। শ্যেনের ধারে বসে লোক দেখেই দিব্যি ঘন্টাখানেক কাটিয়ে দেওয়া যায়।
    আজ অবধি এত জায়গা ঘুরলাম, কোথাও একবারের বেশি দুবার যেতে মন টানে নি এক্সেপ্ট ভেনিস আর প্যারিস। আবারো ভেনিস যাওয়া না মুমকিন কারণ গাঁটে অত কড়ি নাই আর প্যারিস.... হুইইইইই, প্যারিসের সাথে কিছু প্যাথো জড়িয়ে আছে তাই যাব না। ইটস দ্যাট সিম্পল।

    তো যা বলছিলাম। এলোমেলো ছন্নছাড়া রোমিংএর জন্য আরেকটা জায়গাও খুব ভালো - রোম মশাই রোম। আমার নিজের কিন্তু রোম তেমন খুব একটা ভাল লাগে নি (এইশুনে লোকে আমায় নিশ্চয়ই দুয়ো দেবে কিন্তু সত্যি রোম তেমন দাগ কাটে নি মনে)। চারদিকে এত বোটু, এত লোক গিজগিজ, পা ফেলার জায়গা নেই মনে হয়। তারচেয়ে ঢের ভাল সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত ঢলুক তখন এগারো নাম্বার গাড়ি চড়ে সারা শহর টইটই। রাতের রোম মিস করবেন না ইঁদুরবাবু, হাঁফিয়ে গেলে কোন একটা পিয়াজ্জায় দুদণ্ড দম নিয়ে নেবেন। লোকজন হেবি রসিক। তাছাড়া রাত্রিকালে নিশিকুটুম্বের ঝামেলা বিশেষ থাকে না।
    ডুওমো যদি দেখতেই হয় তো মিলান না, সোজা ফ্লোরেন্স চলে যান। সবাই এত কিছু বলল কিন্তু পিসার নামটা কেউ আর করল না। যদিও হরবখত লোক গিজগিজ আমার কিন্তু এতদসঙ্কেÄও পিসা খুব ভাল লেগেছিল। সব চাইতে ভাল লেগেছিল ঐ কম্পাউণ্ডে যে সিমেট্রি আছে সেইটা।

    তা আপনার তো ডিসেম্বর এণ্ডের পরিকল্পনা হয়েই গেছে। বাকী রইল ছটা সপ্তাহান্ত। মুশকিলটা এই যে ইউরোপ শীতকালে তেমন দর্শনীয় না। উপরন্তু বেশির ভাগ জায়গাতেই শীতকালে দ্রষ্টব্য সব কিছুর দরজা বন্ধ থাকে । স্কি প্রান্তর গুলো ই যা খোলা থাকে। পাশেই তো সুইস, একদিন ওটা মেরে দিন। গরম কাল হলে বলতাম অবশ্যই জার্মানীর Berchtesgaden অথবা Garmische-Partenkirchen যান, বাভারিয়ান আল্পসের অনবদ্য শোভা উপভোগ করুন সাথে Kehlsteinএ হিটলারের Eagle's Nest এ চড়ুন আর উপরি পাওনা হিসেবে ঘুরে আসুন নিউসোয়াইনস্টাইন ক্যাসল। এক সপ্তাহান্তে টুক করে ঘুরে আসতে পারেন, এখন ওখানে ব্যাপক স্কিইং চলছে - রাজপ্রাসাদও খোলা।
    আরেক উইকএণ্ডে চলে যান প্রাগ - দর্শনীয় শহর বটে প্লাস চেক বিয়ারের আহ্বান। যেতে পারেন ভিয়েনাতেও তবে আমি বলব যান ইনসব্রুকে সাথে পার্শবর্তী সালজক্যামারগুট। একটু উষ্ণতার জন্য যেতে পারেন বার্সেলোনা, পাল্লিনের ঘুরে আসা অবধি যদি পারেন একটু অপেক্ষা করুন। হাতে গরম সমাচার পেয়ে যাবেন। ইবিজা কিম্বা মালোর্কাও ভাল, চীপ ফ্লাইট প্রচুর। আর যদি গাঁটের কড়ি আর একটু খসাতে পারেন সাথে উইকডেস থেকে দুটো এক্সট্রা দিন ম্যানেজ তাহলে হেলসিঙ্কি হয়ে সোজা রোভানিয়েমি, সান্টার আপন দেশে। দিব্ব রেইনডিয়ার কিম্বা কুত্তা টানা স্লেজ গাড়িতে চড়ে ঘুরতে পারেন।
    আর যদি এসব কিছু না স্রেফ মস্তি আর পাট্টি করার ইচ্ছে হয় তো কাছেই আছে তো ব্রাসেল কিম্বা আমস্টারডাম।
    নতুবা ক্যাসাব্লাঙ্কা।

    উউউফ, আমারই ঘোরা হয়ে গেল।

  • RATssss | 82.120.15.203 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৬ ০৩:২২693890
  • Yorkshire Dale -এর মাঝে ৪ দিন প্রচণ্ড ঠাণ্ডা-য় Burn house-এ
    থাকতে হয়েছিলো, তার-ই গল্প বলি। পেথ্‌থমবার UK তে এসেছি। নতুন মালিক।
    সকাল-বিকাল-সন্ধে-রাত্রি কোডাচ্ছি আর তিনি বাড়িতে আমার চরিত্রসুদ্ধি
    করাচ্ছেন। time পেলে-ই তেনাকে তেলাচ্ছি - কিছু একটা করো। তা finally তিনি
    X-Mas-এর ছুটি তে ৪ দিন বেড়ানো-র প্লান ছকলেন। আমদানি-র থেকে রফতানি-তে যে
    তিনি এত্তো বেশি দর তা বিগত ৬ বচ্ছরে-ও বোঝা হয়নি - সে টা বোঝা গেলো। ২৪শে
    রওনা, ২৩শে কি আর থাকার কিছু মেলে? ফুর্তি-তে আছি ৪ দিন লণ্ডন-ই দেখবো ভেবে। ও
    তারা.. ২৩শে বাড়ি ফিরে দেখি তিনি packing সেরে ফেলেছেন। থাকার জায়গ পাওয়া
    গেছে। Marchet নামক গন্ডগ্রামে মাঠের মাঝে যেখানে চাষের শষ্য থাকে তেমন
    একটা বাড়িতে। দৈনিক ভাড়া মাত্তর ৮ টাকা। অন্তত ৪ জন থাকতে হবে। (max 40জন)
    ত বাকি দুজনকে পাবো কোথা? ডাবল ভাড়া দিয়ে থাকতে হবে। ষষ্ঠ বাৎসরিক
    মধুচন্দ্রিমা-র স্বার্থে তাও মেনে নেওয়া গেল। পরের বিস্বয়: নিজেদের বিছানা পত্র
    নাকি নিজেদের নিয়ে যেতে হবে। রাত্রি ৪ টের সময় রওনা দেওয়া গেল। জীবনের প্রথমবার
    মাঝরাতে গাড়ি চালানো। ফুর্তি-তে তিনি গান গাইছেন আর আমি চান্স পেলে-ই
    ঝিমোচ্চি। তিনি আবার গাড়ি চালাবেন না। তাতে নাকি এনজয় করতে অসুবিধা হয়। ২-৪
    তে stop মেরে ২৫০ মাইলে-র যাত্রা শেষ হল অবশেষে। first point - Malham Walk
    মানে ৪ ঘন্টা গারি চালিয়ে এবার পাহাড়-এ হন্টন। চুনাপাথরের দেশ। যত্র তত্র
    মাটি ফুরে নদী বেড়োচ্ছে, যত্র তত্র আবার মাটিতে হারিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপার-টা
    বেশ interesting। মনের সুখ-এ প্রেম করে তো সন্ধে নামানো গেল। এবার Marchet খুজি কি
    কোরে? তিনি burn মালকিন কে ফোনালেন। শুধু direction নিতে-ই আধা ঘন্টা। ঘন্টা
    দুই তেনার নির্দেশ মতোন ডেরাইভ করে বোঝা গেলো কাছাকাছি একটা অন্য জায়গায়
    পৌছেছি। আবার আধা ঘন্টা ফোনালেন। এ পাহাড় ও পাহাড় বেয়ে, সরোবর পেরিয়ে
    finally পৌছোনো গেলো রাত্রি ১০ টা নাগদ। মাঠের মাঝে বাড়ি। গারি জথারিতি
    মাতির উপর দিয়ে জাবে না। মালকিন এলেন ট্রাক্টর করে মাল পত্র পৌছে দিলে। গুরু
    electricity নেই। বার ১৫ চেষ্টা করে আলো জ্বললো। GAS এর আলো। কাঠের fire place
    - এটাতে আগুন জ্বালানো যে এতো কঠিন কাজ তা আগে জানতুম না। এদিক সেদিক করে জ্বালানো
    তো গেল, মালটা সারারাত জ্বলবে কি করে তার ফাণ্ডাটা clear হলো না এযাত্রায়।
    তবে Burn বাড়িতে থাকার বড় সুবিধে - সবাই পরবর্তিদের জন্য কিছু জমিয়ে রেখে
    যায়। এতে বাড়তে বাড়তে এতোটাই stock বেড়েছে যে আমাদের ৪ দিনের ডিনার ব্রেকফাস্ট
    ফ্রী তে হয়ে গেল। হাভাতে-দের যে দিক দিয়ে save হয় সেই দিকেই নজর ।
    তবে খুব ভাল quality-র sleeping bag ছাড়া এক রাত্রিও বেঁচে থাকার
    সম্ভাবনা কম। রেক্সিনে মোরা লাইন খাটে নয়তো চতুর্দিক থেকে ঠাণ্ডা ঢুকবে। তবে
    একটা সুবিধা, ঠাণ্ডার চোটে সক্কাল সক্কাল ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে একটা তুরিয় আমেজ। বাইরে
    পুরোটাই সাদা। স্নো নয় পুরোটাই আইস্‌। মালকিন বল্লে শীতকালে মাঝেমধ্যেই নাকি
    স্নো-র জ্বালায় সব বন্ধ হয়ে যায়।
    মার্শেট গ্রাম কে বেস করে ইয়র্কশায়ারের প্রায় পুরোটাই আরামে ঘোরা যায়।
    লাইমস্টোন-এর গুহা অন্যতম। পাহারের ভেতর গুহা তো নয়, একটা আস্ত নদী। তার উপরে
    ছোট বেলার বই তে পড়া জিনিস-পত্র। বিস্বয়-এ হতবাক হয়ে যেতে হবে। অনেক গুহা আছে,
    পছন্দ করে ২-৩ টে দেখাটা মাস্ট।
    মলহম ওয়াক একদিনের ট্রেকিং-এর আদর্শ।
    ফাউন্টেন abey-র জন্য একবেলা অবশ্যই। সিনিক রুটের রাস্তা ধরে witby-র জন্যও একদিন
    রাখা উচিত। ছোট্ট সুন্দর ইয়র্ক শহরও একটা গোটা দিনের দাবি রাখে।
    finally ত্যানার ইচ্ছা হল Burn এর মালকিন বেট্টি-র গরু-র খামার দেখতে। অসাধারন দুর্গন্ধযুক্ত জায়গাটা how beautiful বলে তিনি এমন গ্যাস খাওয়ালেন যে থাকার ভাড়াটাই আর্ধেক। ফেরার পথে ত্যানার তুরিয় মেজাজ আর কেতা দ্যাখে কে???

  • RATssss | 82.120.119.72 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৬ ০৪:২৫693892
  • অরিজিত,
    মানতে হবে অম্মো ছবি না আটকে হেব্বী ভালো কাজ করেছি। নয়তো প্রায় পুরো সেট টা ডুপলি হয়ে যেত।
  • shrabani | 59.94.96.4 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৬ ১০:৪৬693893
  • I
    আমি নতুন ও নই, পুরোনো ও নই তবে লেখার চেয়ে পড়তেই বেশী পছন্দ করি।
  • sisu | 82.120.119.72 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৬:১০693894
  • সব্বু, এবার থেকে লিখবেন প্লিজ। এই সুতোয় আপনার লেখাটাই হিট্‌ যাচ্ছে। অন্তত আমার কত্তারটার কমপো তে আপনার টা বিভুতিবাবু হয়েছে। যদি ত্যানারটা কষ্ট করে হলুদ মলাট-এর স্ট্যাণ্ডার্ডও বলতে পারতুম।
  • samran | 59.93.205.159 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৬ ২২:০৯693895
  • আরে বাহ...
    কি সব দারুন দারুন গপ্পো নাবছে:-))

    কিন্তু এই টইয়ের কি হল? ঘেঁটে ঘন্ট হয়ে আছে যে!
  • Paramita | 143.127.3.10 | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ০৫:৫৮693896
  • সামরানের গপ্পো শেষ করার জন্য সুতোটা খুঁজে দিলাম।
  • tania | 151.151.21.105 | ১৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ২৩:৫৩693897
  • হাওয়াই-এর উদ্দেশ্যে উড়ছি আজ। ফিরে এসে সর্ষের পাঁচ নম্বর সুতো খুলব :-)
  • samran | 59.93.213.53 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৬ ১১:১৪693899
  • ফ্রেজারগঞ্জ বিচ থেকে হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তায় আসতেই চোখে পড়ল একটা বাস আসছে, যাচ্ছে বকখালি। পেটে যদিও ক্ষিদে নেই, সকালের ঐ ছেঁড়া পরোটা আর আলু মটরের তরকারিতে পেট তখন অব্দি ঠান্ডাই আছে তবুও আগে বকখালি গিয়ে কিছু খেয়ে নেওয়াই সাব্যস্ত হল। ফ্রেজারগঞ্জে খাওয়ার জায়গা নেই সে তো দেখাই যাচ্ছে আর একটিমাত্র খাবার দোকানের কথা যা শুনলাম সেখানেও নাকি বসিয়ে রেখেই রান্না করে দেবে। বসে থাকাটা বাঞ্ছনীয় নয় মোটেই, চল রে মন বকখালি! তো আমরা হাত দেখানোর আগেই বাস থেমে পড়ল ঠিক সামনেটায় এসে! দুজনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বাসে উঠে পড়লাম। বেশ মিষ্টি একটা আবহাওয়া। না গরম না ঠান্ডা। ফুরফুরে মনে চারপাশ দেখতে দেখতেই বাসের কন্ডাক্টর ভাই হাঁক দিলেন, বকখালি! ওমা! এত কাছে বকখালি! নেমে ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে চোখে পড়ল রাস্তার দুপাশে বেশ কিছু হোটেল শুধু। ও হ্যাঁ। বাসে থাকতেই চোখে পড়েছে, খানিক দূরে দূরে একটি করে হোটেল। বকখালি সম্পর্কে শোনা সব কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। জোর করেই মনটাকে অন্য দিকে সরিয়ে দিলাম।

    কয়েক পা এগোতেই চোখে পড়ল ২-৪টে ভ্যান রিকশা এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর তাদের চালকেরা এক জায়গায় জটলা করছে কেউ দাঁড়িয়ে তো কেউ বালিতে বসে। আমাদের দেখেই এগিয়ে এলো, বাবু, সাইট সিইংএ যাবেন? চলুন না বাবু। এখানে কি দেখার আছে আর ওরা কোথায় কোথায় নিয়ে যাবে সেগুলো শুনে নিয়ে ঘুরে আসছি বলে সামনের দিকে এগোলাম খাওয়ার দোকানের সন্ধানে। বকখালিতে খাওয়ার ভালো জায়গা আছে হোটেল থেকেই শুনে এসেছিলাম কিন্তু আমি শুধু কিছু ঝাঁপতোলা দোকান ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলাম না। কোন দোকানে ঝুলছে ঝিনুক দিয়ে তৈরি নানা জিনিসপত্র আর কোনো দোকানের সামনে বোর্ড দাঁড়িয়ে আছে কাঠের ঠ্যাঙে ভর করে,কয়েকপরত মরচের নীচে যাতে ভাত ডাল মাছ সব্জির নাম লেখা। তেমনই এক দোকানে ঢুকে রাস্তার দিকে মুখ করে দুজনে বসে খাবারের অর্ডার দিলাম। ভাত ডাল আর সব্জিটা কমন, মাছের অপশন আছে, পমফ্রেট কিংবা ভেটকি। আমি পমফ্রেট বললাম। সবজির ভেতর আরেকটা জিনিস কমন, চিংড়িমাছ, সে পালংএর ঝোলই হোক বা লাউ-এর তরকারি, তখনও জানিনা এর দুটো ই আসবে আর সাথে একদম স্টাইলিশ ক্যাটারারের হাতফেরতা আলুর ঝুরি ভাজা।

    যে দোকানটিতে ঢুকে বসেছি তাতে চারখানা লাল, নীল প্লাষ্টিকের টেবল আর টেবলের একপাশে কাঠের একখানা করে বেঞ্চ অন্যপাশে দুখানা করে বাদামী রঙের প্লাষ্টিকের চেয়ার। দেওয়ালে দেখলাম কালো বোর্ডে সাদা খড়ি দিয়ে পুরো খাবারের লিষ্টি লেখা আছে সেখানে পাশে মূল্যতালিকা। যিনি খাবারের অর্ডার নিয়েছিলেন তিনি ভেতরে গিয়ে বলে এলেন আর তারপরে দোকানের মাঝখানে রাখা একটি টেবলের পাশের একমাত্র চেয়ারটিতে বসে গপ্প জুড়লেন অন্যপাশে বসে আহারে রত চারজনের এক দলের সাথে। ততক্ষণে আমাদেরও খাবার এসে গেছে। যিনি খাবার সার্ভ করলেন তিনি এই দোকানের মালকীন। ক্ষয়াটে চেহারা। কপালে লাল টিপ আর সিঁথিতে মোটা করে পরা সিঁদুর। ছাপা শাড়ি কুচিয়ে পরা গোড়ালির উপর থেকে। হাতে শাঁখা পলা লোহা ছাড়াও কয়েকগাছা করে কাঁচের চুড়ি। মুখে একটা হাসি লেগেই আছে যাতে করে তাঁকে দোকানমালিক কম বাড়ির গিন্নিই বেশি মনে হয়। পর্দার ওপাশে যে ঘরের আভাস পাচ্ছি ওখানে তাঁর গেরস্থালী। খাবারে মন দিলাম। মাঝারি আকারের একখানা পমফ্রেটকে দু টুকরো রান্না করেছেন ঐ গিন্নিটি। যে প্লেটে করে মাছ দিয়েছেন তাতে ঐ পমফ্রেট বেশ ভালমতন সাঁতার কাটছে। দেখে একেবারেই পছন্দ হয়নি বলাই বাহুল্য কিন্তু মাছের কোণা ভেঙে মুখে দেওয়া মাত্রই মত পাল্টাতে বাধ্য হলাম। রান্না ভাল কি মন্দ সে প্রশ্ন অবান্তর মনে হল। একদম তাজ মাছ, সকালেই সমুদ্র থেকে ধরা হয়েছে। এত সুস্বাদু পমফ্রেট আগে কখনও খাইনি সে ব্যপারে আমরা দুজনেই একমত হলাম।

    কথা বলছি, খাচ্ছি। মাঝে মাঝেই কান চলে যাচ্ছে ওদিকের কথা বার্তায়। এরই মধ্যে গিন্নিটি ভেতর থেকে নিয়ে এলেন একটি বোল, বেশ বড় সাইজের আর আমি একটু চোখ টেরিয়ে দেখতে পেলাম তাতে কাঁকড়া! খাওয়ায় ব্যস্ত তাঁকে দেখালাম ইশারায়, ঐ দ্যাখো, কাঁকড়া! সাথে সাথেই দোকানমালিকের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন গেল, ও দাদা, কাঁকড়া হবে নাকী! দাদাটি চটজলদি উত্তর দিলেন, নাগো দাদা, এতো অর্ডারি রান্না! শহর থেকে এঁরা সব বন্ধুরা এসেছে, এঁদের জন্যে স্পেশালি আনা হয়েছিল আজ, আর তো হবে না! ওদিকের টেবল থেকে তখন কাঁকড়ার স্বাদ সম্পর্কে আলোচনা কানে আসছে। মন:ক্ষুন্ন তিনি পমফ্রেটেই মন দিলেন আবার! দোকানি ভাইটি বললেন, রাতে যদি আপনারা আসবেন বলে যান, তবে বিকেলে দেখব কাঁকড়ার ব্যবস্থা করতে পারি কীনা! আর আপনারা যদি কোন মাছ খেতে চান তো কিনে এনে দিলে আমরা রেঁধেও দিতে পারি। এই সাথেই শোনালেন, ওপাশে যাঁরা বসে আছেন তাঁরা গতকাল সব মিলিয়ে সাড়ে চার কিলো মাছ কিনে এনেছিলেন আর চারজনে মিলে সেটা এক বসাতেই শেষ করেছেন! যাঁদের সম্পর্কে বলা হল তাঁদেরই একজন বললেন, ঐ ফ্রেজারগঞ্জ বন্দর থেকে কিনে এনেছিলাম, আপনারা যাবেন তো ওদিকে? মাছ নিয়ে আসতে পারেন, বৌদি রান্না করে দেবে! তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে দোকানি ভাইকে বলা হল, রাতে কাঁকড়া যদি হয় তো খুব ভাল হয়, রাতে আমরা আপনার এখানেই খাব! ও পাশ থেকে কাঁকড়া শেষ করার পর হুকুম উড়ে আসছে ভেটকি আর প্রমপ্লেটের, যা বাকি মাছ ছিল তা সব তাদের দিয়ে দোকানি ঝাঁপ বন্ধ করতে উদ্যোগী হলেন।

    ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গেছি, খেতে বসেই আমার মনে হল, ফ্রেজারগঞ্জ বিচে শুটকি দেখে এলাম আর এখানেও দোকানে ঝিনুকের জিনিসপত্রের সাথেই প্যাকেটে রাখা লটে শুটকি চোখে পড়েছে তার মানে এঁরা শুটকি নিশ্চয়ই রান্না করেন! জানতে চাইলাম দোকানমালকীনের কাছে, এখানে শুটকি রান্না হয় বৌদি? তো বৌদি জানালেন, মাঝে সাঝে হয়। সকলে খায় না বলে রোজ হয় না আর খেতে চাইলে রাতে ইনি করে রাখবেন। কিন্তু রাতে শুটকি খাওয়া আমার পোষাবে না বলে আমি আর খাওয়ার বায়না করলাম না! খাবো না বলেই শুটকি আলোচনা থেমে থাকলো না, কচু এল, কাঁঠালের বিচি এল আরো কত্তসব এখন আর সব মনে নেই।

    খাওয়া সেরে বেরিয়ে আবার মন দিলাম চারপাশ দেখাতে। এত নীরব কেন এ জায়গাটা? এখানটায় বেশ দোকানপাট আছে দেখতে পাচ্ছি, রাস্তার দুধারে সারি সারি সব দোকান। যাঁরা আছেন তারা সবই দোকানি! কেনার মানুষ নেই একটিও! আরও একটা জিনিস খেয়াল হল, প্রতিটি দোকানেরই পেছনদিকে বসতবাড়ি। দোকানের ভেতর দিয়েই ভেতরবাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা। প্রায় সব দোকানেই কর্তা গিন্নি দুজনেই আছেন। একটু খেয়াল করলে আশে পাশে ছানাদেরও দেখা যায়। কিন্তু এখানে লোক নেই কেন? লোকে বেড়াতে আসে না? চিন্তাটা সজোরেই করছিলাম তো জবাব পেলাম, দিনের বেলা কে আর বেরোয়? সবাই হোটেলের ভেতরে আছে! বিকেলে বিচে ভিড় হবে, বেশিরভাগই তো হোটেলেই সময় কাটাতে আসে! আবারও অস্বস্তিটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে লাগল।

    এক নীরব শুনশান রাস্তা দিয়ে আমরা দুজনে হেঁটে এগোতে লাগলাম সাগরের দিকে। পিচের রাস্তা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে একটা মাঠমত জায়গা। বালির মাঠ। গোড়ালি অব্দি ডুবে যায় বালিতে। বেশ গরম লাগতে শুরু করেছে ততক্ষণে। সুর্য একদম মাথার উপরে। আমি একটু ক্লান্ত বোধ করছি, একটু গড়াতে পারলে ভাল হয়। কিন্তু মাত্র একদিনের জন্যে এসেছি আর কত কী দেখার আছে বলে সমানে হেঁকে গেছে ঐ ভ্যান রিকশা চালকেরা যার কিছুই এখনও অব্দি দেখা হয়নি। ঘরবন্দী হয়ে একটুও সময় নষ্ট করবো না বলে ক্লান্তির কথা একবারটিও না বলে সামনে এগোলাম। বালির উপর দিয়ে পা টেনে টেনে হেঁটে এই মাঠ পেরিয়ে দেখি আবার একটা পিচরাস্তা শুরু। যার দুপাশে আবার সব দোকান। তবে এখানে দোকানের সংখ্যা বেশি নয়। ঐ তো সামনেই এই রাস্তা ঢালু হয়ে নেমে যাচ্ছে বিচে। এই রাস্তা গিয়ে শেষ হয়েছে একটা বাধানো চাতাল মত জায়গায়। যার ডানদিকে বেশ উঁচু করে বাঁধানো এক ফুটপাথ। হ্যাঁ। আমার এটাকে ফুটপাথই মনে হয়েছে। অনেকদূর চলে গেছে এই ফুটপাথ। যদ্দূর চোখ যায় শেষ দেখতে পাচ্ছি না। ফুটপাথে খানিক দূরে দূরে একটা করে লোহার বেঞ্চ। এই ফুটপাথের ডানধারে ঝাউবন আর বাঁদিকে বিস্তৃত বালুরাশির ওধারে সমুদ্র। ভাটার সমুদ্র এখন বহুদূরে। জলের শব্দ নেই। বাতাসের শনশনানি নেই। নিস্তব্ধ এক রোদেলা দুপুর।

    আমি মুগ্‌ধ চোখে তাকিয়ে দেখছি এদিক ওদিক। যেদিকেই তাকাই , চোখ ফেরাতে পারি না। ফুটপাথে উপর দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি বিচের দিকে। বাঁধানো চাতালের আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা আছে বেশ কিছু রঙিন চেয়ার। কোথাও বা ছোট্ট নাগরদোলা, রঙিন। অনেকটা যেন মেলার মত। কিন্তু জনশূণ্য, রঙিন কাঠের ঘোড়ারা সার বেঁধে যেন জল খেতে নেমে আসছে সাগরে। চাতাল যেখানে শুরু হয়েছে সেখানে এক বোর্ডে দেখলাম বড় বড় হরফে ইংরেজী ও বাংলায় লেখা আছে, বিচে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ। ঠিক এই জায়গাটায় বেশ কিছু চায়ের দোকান দেখলাম। প্রতিটা দোকানের সামনেই বেশ কিছু চেয়ার পাতা। সবই লাল রঙের। এই দুপুরে কোন দোকানেই কোন খদ্দের নেই। মনে মনে আমি চায়ের দোকানই খুঁজছিলাম, খাওয়ার পরে চা না খেলে আমার চলে না ! একটি দোকানের দিকে এগিয়ে গিয়ে দোকানি মহিলাকে জিজ্ঞেস করলাম, দিদি , এখন কি চা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ হবে, আপনি বসুন। বছর পনের-ষোলর একটি ছেলে দোকানের ভেতর ঢুকে চা করতে গেল। আমি চেয়ারে বসে তাকালাম বিচের দিকে। বারে বারে একটা কথাই শুধু মনে হচ্ছে, এত সুন্দর মায়াময় বিচ অথচ কি ভীষণ নীরব! হোক না দুপুর, তাই বলে এত নীরব? দূরে ফ্রেজারগঞ্জ বিচের সেই তিন ব্লেডের বিশালাকার পাখা এখানে থেকেও আবছা নজরে আসছে।

  • S | 61.95.167.91 | ২২ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৭:১৬693900
  • মোটামুটি ট্র্যাভেল গাইডের মত মুখ্য পয়েন্টগুলো জানিয়ে দিচ্ছি ঝিলপিপির জন্য। বেড়াবার ডিটেইল বর্ণনা দেব না।

    বিষয়: জয়পুর।

    ১। দিল্লি থেকে দূরত্ব মোটামুটি ২৫০ কিলোমিটার। গুড়গাঁও হয়ে যেতে হবে, আর সেখানে মারাত্মক জ্যাম হয়, তাই সকাল ছটায় স্টার্ট করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এগারোটায় হেসেখেলে পৌঁছে যাবে। নিজে গাড়ি চালাবার চেষ্টা না করাই ভালো, ড্রাইভার ভাড়া পাওয়া যায় খুব খুব শস্তায়। দৈনিক ২৫০ টাকা, নাইট চার্জ ১০০ টাকা।

    ২। রাস্তায় দু বার টোল ট্যাক্স বুথ পড়বে। দেড়শো টাকা খুচরো রাখবে।

    ৩। দিল্লি থেকে বেরোবার আগে ট্যাঙ্ক ফুল করে নেবে। দিল্লি ছাড়া বাকি ভারতে পেট্রলের দাম খুব বেশি।

    ৪। জয়পুর মুখ্যত দুটো কারণে যাবার আছে। এক ঐতিহাসিক ইমারত কেল্লা টেল্লা দেখার জন্য। দুই শপিংয়ের জন্য। দ্বিতীয়টা আমাদের জানা ছিল না। তৈরি হয়ে যেতে পারি নি।

    ৫। জয়পুর পুরনো অংশ গোলাপি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা, আর ওয়াল্‌ড সিটি পুরোটা গোলাপি, সমস্ত দোকানের নাম এক হরফে একভাবে লেখা। বাকি জয়পুরে গোলাপির নামোনিশান নেই।

    ৬। জয়পুর সিটিতে দেখার আছে: অ্যালবার্ট হল, কী যেন একটা বাগান, হাওয়া মহল, সিটি প্যালেস, জন্তর মন্তর। জয়পুরের বাইরে হল নাহারগড় কেল্লা, আর আমের কেল্লা (এখানেই সোনার কেল্লার শুটিং হয়েছিল, ডক্টর হাজরাকে যেখানে ভ্যানিশ করে দেয় দুষ্টু লোকটা)।

    ৭। জয়পুরের সমস্ত কটা ট্যুরিস্ট স্পট প্রচন্ড নোংরা আর ইল-মেইনটেইন্‌ড। আমরা যারা দিল্লির ট্যুরিস্ট স্পট দেখে অভ্যস্ত, তারা প্রচন্ড হতাশ হয়েছি। জয়পুরের জন্তর মন্তর সবার শেষে বানানো, আর সবচেয়ে নিখুঁত। অবশ্যই গাইড নেবে (১০০ টাকা)।

    ৮। জয়পুরের সমস্ত স্পটেই তোমার টিকিট আর স্টিল ক্যামেরার টিকিট আর মোভি ক্যামেরার টিকিট আলাদা কিনতে হবে। সিটি প্যালেসে তোমার টিকিট কুড়ি টাকা, ক্যামেরা স্টিল পঞ্চাশ টাকা আর হ্যান্ডিক্যাম বোধ হয় দুশো টাকা।

    ৯। জয়পুর যদি দুপুরে পৌঁছও, খেয়ে নিয়েই হাওয়া মহল আর অ্যালবার্ট প্যালেস দেখে নিও। শীতের বিকেল, তাড়াতাড়ি অন্ধকার হয়ে যাবে, সেদিন আর জন্তর মন্তরের দিকে যেও না। সুর্যের আলো না থাকলে কিছুই বুঝবে না।

    ১০। পরদিন সকাল সকাল সিটি প্যালেস আর জন্তর মন্তর দেখে মজাসে শপিং করো সারাটা দিন। ওয়াল্‌ড সিতির ভেতর সিটি প্যালেস আর হাওয়া মহলকে অকে ঘিরে কেবল বাজার আর বাজার। চৌরি বাজার, ত্রিপোলিয়া বাজার। জামাকাপড়, জুয়েলারি, পাথরের কাঠের কাজ, উটের চামড়ার নাগরা আর জ্যাকেট, আর রাজস্থানী পুতুল আর দরজায় ঝোলাবার স্ট্রিং। পেট ভরে শপিং কোরো।
  • S | 61.95.167.91 | ২২ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৭:৩০693901
  • ১১। তৃতীয় দিন একটা গাইড নেবে। গাড়ি নিয়ে সোজা হাওয়া মহলের মোড়ে চলে গেলেই গাইড পেয়ে যাবে। পঞ্চাশ থেকে শুরু হবে, আলটিমেটলি তিরিশ টাকায় গাইড পেয়ে যাবে সারাদিনের জন্য। তাকে নিয়ে যাবে নাহারগড় আর আমের ফোর্ট।

    ১২। গাইড পথে অবশ্যই তোমাকে রাজস্থান কটেজ ইন্ডাস্ট্রির দোকানে ঢোকাবে, কিংবা ত্রিপোলিয়া বাজারে মহারানীর ফ্যাক্টরিতে ঢোকাবে। ওখানে প্রচুর ভ্যারাইটি দেখবে, কিন্তু কিনবে না। ওখানে বার্গেনিং হয় না, দাম অনেক বাড়ানো থাকে। প্লাস, তোমার দেওয়া পয়সা থেকে বড় অংশ গাইড কমিশন পাবে। ইচ্ছে হলেও চেপে রেখো। একই জিনিস বাইরের বাজারে কম দামে পেয়ে যাবে।

    ১৩। গাইড কেবল রাস্তা গাইড করার জন্য। আমের আর নাহারগড়ের ভেতরে আলাদা গাইড লাগবে। ভেতরে টিকিট কাউন্টারের সামনে থেকে গাইড নিলে ১০০ টাকা লাগবে। বাইরে থেকে নিজে আলাদা গাইড নিয়ে নিও। তোমাকে খুঁজতে হবে না, গাইডেরা তোমায় খুঁজে নেবে। কম পড়বে। ৫০ টাকা।

    ১৪। প্রচন্ড নোংরা, জায়গায় জায়গায় অখিলেশ + গীতা আই লাভ ইউ টাইপের খোদাইতে ভর্তি। তার মধ্যে থেকে রস নিতে হবে। সেটা তোমার প্রতিভার ওপর নির্ভর করছে।

    ১৫। যদি আর শপিং না করার থাকে, তো আমের পাহাড় থেকে নেমে সোজা দিল্লির রাস্তা দ্যাখো, নয় তো জয়পুরে ফিরে এসে আরও শপিং কোরো।

    ১৬। জয়পুরে নন ভেজ রেস্তোরাঁ পাওয়া খুব কঠিন। গেলেও সেগুলো পাব সমেত, এবং সেখানে মহিলা নিয়ে ঢোকাটা বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমার মনে হয় নি।

    ১৭। সন্ধ্যেবেলা অবশ্য চোখিধানি যাবে। জয়্‌পুর থেকে টঙ্ক রোডে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে। ওখানে না গেলে জয়পুর এনজয়মেন্ট বৃথা।
  • pipi | 141.80.168.75 | ২২ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৮:০৯693902
  • অ শমীক অ,
    চোখিধানি কি? সেখানে কি আছে দেখার?
    জয়পুরের দেখার জায়গা মায়গা সবই তো বলছ নোংরা। তালে তো ভারী মুশকিল। ব্যাপারটা পষ্ট করেই কই। আমার এক ভীষণ প্রিয় জার্মান বন্ধু তার গার্লিকে নিয়ে ইণ্ডিয়া যাবে আসছে বছর। অ্যাকচুয়ালী যাবে তাইপে কিন্তু তার আগে ইণ্ডিয়ায় দিন দশেক কাটাবে। প্রথমবার ভারতদর্শন তাই এক্সাইটেড হয়ে আছে বেচারা। কিন্তু কোথায় কাটাবে দিন দশেক কিছু ঠিক করতে না পেরে আমার উপর ভার দিয়ে দিয়েছে ট্রাভেল প্ল্যান বানাবার। যাবে সেপ্টেম্বর অক্টোবর নাগাদ (এখনো পুরোপুরি ঠিক নয়)। তার ইচ্ছে মুম্বাই কি দিল্লী এইরকম কোন বড় জায়গা থেকে আশপাশে ঘোরা। তা মুম্বাই আর তার আশপাশ সম্বন্ধে আমার ধারনা সীমিত। ঐ এলিফ্যান্টা কেভস আর গোয়া ছাড়া। পঞ্চগণি কি মাথেরান এসবের নাম শুনেছি কিন্তু ওসময় তো সেখানে ঘোর বর্ষা মনে হয়। সাহেবের ইণ্ডিয়ান মনসুন কেমন লাগবে কি জানি তায় ও সব জায়গায় বিদেশী ট্যুরিস্ট উপযোগী পরিষেবা বা নিরাপত্তা কতটা এসব জানি না বলে রেকমেণ্ড করার সাহস হয় নি। তা ভাবলুম দিল্লীই ভাল। পাশে আগ্রা আছে, উত্তরাঞ্চল কিম্বা হিমাচলে যেতে চাইলে সে সুবিধাও আছে কিবা জয়পুর যেতে পারে। আর জয়পুর ভাল লাগলে চাইকি এগিয়ে চিতোর, যোধপুর কি উদয়পুর যেতে পারে। তা জয়পুর যা নোংরা বলছ তাতে তো আমার রেকমেণ্ড করার সাহস হচ্ছে না। কোন আইডিয়া দিতে পার এই সাহেব দম্পতি মোটামুটি কোথায় যেতে পারে?
  • d | 202.54.214.198 | ২২ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৮:১৬693903
  • নো পোবলেম পিপি, একটু হাত খালি হলেই আমি প্ল্যান বানিয়ে দেব। এই ধর জানুয়ারীর ১৫ নাগাদ। চলবে তো?
  • pipi | 141.80.168.75 | ২২ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৮:২১693904
  • চলবে চলবে খুব চলবে। ২০০৭ এর অক্টো এখনো ঢের ঢের দেরী। হেসে খেলে নেচে কুঁদে গড়িয়ে তার মধ্যে পেল্যান বানালেই চলবে।
  • kd | 59.93.193.63 | ২২ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৮:৫৪693905
  • আমি সময় পেলেই এই সাইটে যাই - অনেকটা এখানে যেমনি 'ঘোড়ার মুখের'খবর পাওয়া যায়, তেমনি। খুব ভাল লাগে পড়তে। তোমরা already জানো হয়তো।
    http://www.travelblog.org/Asia/India/
  • K | 59.93.204.180 | ২৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ১৫:৪৩693906
  • আজ সকালে এখান থেকে ২০ কিমি দূরে আমার landlord-এর গ্রামের বাড়িতে গেছিলাম। টিপিক্যাল হরিয়ানা-র গ্রাম। চারিদিক সবুজে সবুজ। খেতের মধ্যে মধ্যে পাম্প হাউস, তার কাছে গাছের ছায়ায় খাটিয়া পেতে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। ক্ষেত থেকে তোলা শশা, মুলো, গাজর খেলাম। আর কাঁচা ছোলা। লাঞ্চ-এ খেলাম বাজরার রুটি, দলা দলা মাখন, সর্ষের শাক, অড়হর ডাল, আর দই। সঙ্গে সর্ষের পুর দেওয়া কাঁচা লংকা ভাজা আর আচার। জল-এর বদলে লস্যি। খেয়ে দেয়ে বেজায় ঘুম পেল, ঐ খাটিয়াতেই টেনে এক ঘুম! আর সেই ঘুমের মধ্যে কতো ফুরফুরে স্বপ্ন...

    আহা! এতো ভালো লাঞ্চ আর এতো ভালো স্বপ্নওয়ালা ঘুম....

    আবার যাব।

    কৌশিক
  • d | 61.246.148.154 | ২৫ ডিসেম্বর ২০০৬ ২০:৫৪693907
  • নিমরানা ফোর্ট:

    দিল্লী আর জয়পুরের মাঝামাঝি। পৃথ্বীরাজ চৌহানের বংশধরের দূর্গ ছিল। এখন সেটাকে একটা ফাইভ স্টার হোটেল বানিয়ে ফেলেছে। তবে ২০০ টাকা এϾট্র ফী দিলে ঘুরে দেখতে দেয়। এই ২০০টাকায় কিন্তু খাওয়াদাওয়া কিছু নেই। আর ঐ ফাইভ স্টারে খাবারদাবারের বেজায় দাম। তবে নিজেরা খাবার নিয়ে গিয়ে, বেশী হাঁকডাক না করে, চুপচাপ খেয়ে নিলে, আপত্তি করে না।

    জায়গাটা বেশ সুন্দর। দুপুর বারোটা নাগাদ পৌঁছে যখন টিকিট কাটতে যাব, ভেতর থেকে জনা চারেক সর্দারনী বেরিয়ে প্রবল ঝগড়া শুরু করলেন। ওঁরা ভেবেছিলেন খাওয়াটা ধরেই ২০০টাকা। না হওয়াতে টিকিট ফেরৎ দিতে চান। এবং তাঁরা কিছুতেই আমাদের টিকিট কাটতে দেবেন না, আমাদের নাকি ওঁদের থেকে টিকিট নিতে হবে। ওঁদেরকে যখন জানানো হল, টিকিট রিসেল করা যা না বা ফেরত দেওয়া যায় না, তখনই ওঁরা প্রচন্ড চেঁচামেচি শুরু করলেন। বাপস! সে কি ঝামেলা!! যাই হোক ভেতরে ঢুকে ঘুরেফিরে দেখা হল। অনেকটা জয়পুরের অম্বর ফোর্ট ধরণেরই লাগল। একটি রাজস্থানী নৃত্যগীতের অনুষ্ঠানও দেখলাম।

    একদিনের আউটিঙের পক্ষে ভালই।
  • samran | 59.93.240.50 | ২৭ ডিসেম্বর ২০০৬ ২৩:৩৮693908
  • ফ্রেজারগঞ্জে বেনফিশের মৎস বন্দর দেখব বলে এগোলাম ভ্যানরিক্সার দিকে। এখান থেকে যেতে হলে ভ্যান ছাড়া গতি নেই। ভ্যানরিক্সার চালকেরা এক জায়গায় জটলা করছিল কেউ বসে কেউ বা দাঁড়িয়ে। দু-তিনজন এগিয়ে এল আমাদের দিকে। সাইটসিইং এ তারা কোথায় কোথায় নিয়ে যাবে সে শুনিয়ে রেখেছিল আগেই। দর দস্তুর করে একজনকে ঠিক করা হল। সাইটসিইং এর জন্যে নয়, সে শুধু আমাদের ঐ মৎসবন্দরে নিয়ে যাবে আর তারপর আবার এখানেই ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। ভ্যানচালক মশায় বহু ভ্যানতারা করছিলেন, কি কি দেখার আছে এখানে, যা না দেখলে এই বকখালি আসার কোন মানেই হয় না কিন্তু আমার কত্তা তাঁর কোন কথাতেই কান দিলেন না, হুকুম দিলেন, তুমি আমাদের ঐ বন্দরে নিয়ে চল আর কিছু দেখাতে হবে না! অগত্যা ভ্যানচালক মন দিলেন ভ্যান চালানোতে। আমরা দুজনেই দেখতে শুনতে মাশ আল্লাহ তো ভ্যানচালকের পরামর্শ অনুযায়ী ভ্যানের দু মাথায় দুজনে বসলাম। তিনি সামনের দিকে মুখ করে আর আমি পেছনের দিকে। আমি দেখছি ফেলে আসা রাস্তা তো তিনি দেখছেন সামনের রাস্তা, বেশ রোমান্টিক যাত্রা। নীরব শুনশান রাজপথ। দুপাশে কোথাও বিস্তৃত ফসলের মাঠ তো কোথাও দূরে গ্রাম। জনপ্রাণী নেই কোথাও। পড়ন্ত দুপুরের নিÖপ্রাণ রোদ। কারও মুখে কথা নেই এমনকি ভ্যানচালকেরও নয়। ভ্যানরিক্সার চলার শব্দ শুধু।

    সাইটসিইংএর যে গল্পটা ওরা করছিল তাতে তাতে একটা খেজুরগাছের গল্প ছিল। চৌদ্দ না ষোল মাথার এক খেজুর গাছ নাকি আছে এখানে, যা দেখতে ট্যুরিষ্টেরা খুব ভিড় করে! তো আমি রিক্সাচালককে জানিয়ে রাখলাম ফেরার পথে ঐ খেজুরগাছ যেন দেখিয়ে দেয় আমাদের। রিক্সাচালক সম্মত হয়ে মন দিল রাস্তার দিকে। বড় রাস্তা ছেড়ে রিক্সা পড়ল এক সরু রাস্তায়। বড় ফলকে দেখলাম লেখা আছে 'বেনফিশ মৎস বন্দর'। ভ্যান থামল এক ইটপাতা এবড়ো খেবড়ো রাস্তার মুখে। এই পর্যন্তই ছিল ভ্যানের যাত্রা। সামনেই নদীর পাড়। ওটুকু হেঁটে যেতে হবে। ভ্যান চালক এখানেই অপেক্ষা করবে আমাদের জন্যে। আমরা ফিরলে বকখালি পৌঁছে দিয়ে তবে তার ছুটি। এখানে এক পেট্রল পাম্প দেখলাম যার তৈলাধার মাটির উপরে। বিশাল পেটমোটা ডিম্বাকৃতি এক তৈলাধার যার দুটি মাথাই কাটা। এই প্রথম এক পেট্রল পাম্প দেখলাম যার তৈলাধার মাটির উপরে। জিজ্ঞেস করে জানলাম, ইঞ্জিনের নৌকোরা সব এখান থেকেই তেল নিয়ে যায় আর যে সমস্ত যানবাহন আসে এখান থেকে মাছ নিয়ে যেতে তাদেরও তেলের যোগান এখান থেকেই যায়। উঁচু বাঁধানো পার ধরে আমরা এগোলাম নদীর দিকে। প্রথমেই যা চোখে পড়ল, সার সার রং বেরঙের নৌকো দাঁড়িয়ে আছে মাটিতে। ভাটার নদী সরে গেছে বহুদূরে। সরু এক ফিতের মতো পড়ে আছে সামনে। আর বালুমাটিতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নৌকোরা সব। জোয়ারের অপেক্ষায়।

    একথাক বাঁধানো সিড়ি বেয়ে নেমে গেলাম এক লম্বা সিমেন্টের চাতালে। নদীর পারে খানিকটা জায়গা বাঁধিয়ে তৈরী হয়েছে এই বন্দর। বেনফিশের মৎস বন্দর। শেষ রাতের অন্ধকারে নৌকোরা সব এখান থেকে বেরিয়ে যায় সমুদ্রে । মাছ নিয়ে আবার এখানেই ফেরে দুপুরের শেষভাগে। তিনটে বাজতেই ফেরা শুরু হয় নৌকোদের। একে একে নৌকোরা সব ফেরে। সবই ইঞ্জিনের নৌকো। যেখানটাই 'ছই' থাকার কথা সেখানে এই নৌকোগুলোতে আছে এক কাঠের কেবিন। কোন কোন নৌকোর কেবিন আবার দোতলা। রঙ্‌বাহারি সব কেবিন। প্রায় সব নৌকোরই কেবিনের উপর সরু দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা আছে সারসার লটে মাছ, শুকিয়ে শুটকি করা হচ্ছে। নৌকোরা যেসময় ফিরতে শুরু করে , সেই সময় ধরে ওখানে হাজির হয় মাছের খরিদ্দারেরা। দু চারজন বেড়াতে আসা মানুষ ছাড়া আর যারা এখানে আছে সবাই মাছের সাথেই যুক্ত। কেউ কিনতে আসে তো কেউ সমুদ্র থেকে মাছ ধরে বিক্রি করতে। খদ্দেরও মিশ্র, কিছু স্থানীয় মানুষও আসে একটু কম দামে ভাল মাছ কিনতে আর আসে সব পাইকার, এখান থেকে সস্তায় কিনে নিয়ে একটু বেশি দামে বাজারে বিক্রী করতে। এই বাঁধানো চাতাল থেকে একটু দূরে ঐ তৈলধারের পাশেই বসে এক নিলামের বাজার। নৌকো থেকে মাছ নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ঐ মাঠে। নিলাম হয় সব মাছ আর তারপরেই সব লাল, নীল, হলুদ আর সবুজ প্লাষ্টিকের প্যাকিং বাক্সে উপরে নিচে বরফ বিছিয়ে দিয়ে বাক্সবন্দী হয় সব মাছে। অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ছোট বড় মাঝারি সব ট্রাক আর লরী। মাছের বাক্স পিঠে চাপিয়ে এখুনি সব ছুটবে গঞ্জ-শহরের উদ্দেশ্যে।

    নদীর পারে বানানো এই চাতাল নদী থেকে প্রায় দু মানুষ সমান উঁচু। এই চাতাল ঠিক নদীর পারে নয় বলা চলে নদীর উপরেই বানানো হয়েছে। ভাটার নদী সরে যেখানে এসে দাঁড়ায় সেখানে এই বাঁধানো চাতাল। আমার বড় ইচ্ছে হচ্ছিল জোয়ারের নদী দেখার, জোয়ারে এই বন্দর কেমন দেখায় তা দেখার কিন্তু সে উপায় নেই। এখুনি ফিরতে হবে আর জোয়ার আসতে আসতে সেই সন্ধ্যে পার! চাতালের ডানপাশে নদীর শান্ত জল আর বাঁপাশে জল সরে যওঅয়া নদীতট। যেখানে ইতস্তত: দাঁড়িয়ে রং-বেরঙের সব নৌকো। আচ্ছা এই নৌকোগুলো কি জোয়ার এলে জালে ভাসে রোজ? কাকে জিজ্ঞেস করি? থাক! কি হবে জেনে... নদীর ওপার কালচে সবুজে ছাওয়া। দৃষ্টি চলে না ঐ সবুজের ভেতর দিয়ে। যতদূর চোখ যায় এক কালচে গাঢ় সবুজ বিস্তৃত নদীতীর ধরে। ওখানে কি কোন গ্রাম আছে? আছে জনবসতি? আছে নিশ্চয়ই! কিন্তু এখান থেকে এই মৎসবন্দরে দাঁড়িয়ে তার আভাসটুকুও পাওয়া গেল না। চোখ গেল পশ্চিমে, যেখানে সূর্য ঢলে পড়েছে নদীর বুকে। নদীর জলে আরেকটা সূর্য দেখতে পেলাম। সূর্যের দিকে বেশ অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকেও চোখে লাগল না। এতটা নিÖপ্রাণ সূর্য! সরু রোগাভোগা নিস্তরঙ্গ নদীর বুকে এক নিÖপ্রাণ সূর্য ঢলে পড়েছে। এক মরা আলো শুধু চিকচিক করছে জলের ভেতর!

    দুপুরে খেতে বসে মাছের গল্প শুনে আর এখানে এসে এই নৌকো থেকে মাছ নামানো দেখে মনে হল, কিছু মাছ কিনে নিলে কেমন হয়! রান্না তো সেই দোকানি বৌদি করে দেবেই বলেছে। তো যেই ভাবা সেই কাজ। মাছ কেনার উদ্দেশ্যে এবার শুরু হল এই নৌকো ঐ নৌকোতে চোখ দিয়ে খোঁজার পালা। কোন নৌকো থেকে কি মাছ নামছে সে দেখে নিয়ে সেইমত কেনা হবে। দেখলাম আরও বেশ কিছু বেড়াতে আসা মানুষও এভাবেই মাছ কেনার জন্যেই দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যেই একটি নৌকো থেকে একজন জিগ্যেস করল, আপনারা কি জম্বুদ্বীপে যাবেন? চলুন না। বেড়িয়ে আসবেন! আমার তো নৌকোয় করে সাগরের উপর দিয়ে দ্বীপে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে ষোল আনা কিন্তু সময়! সময় কোথায়? এখন দ্বীপ দেখতে গেলে ফিরতেই তো সন্ধ্যে পার! তাহলে আর বকখালি বিচে বসা হবে না বিকেলে! দ্বীপে বেড়াতে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিলাম। একদিনে আর কতটুকুই বা দেখা যায়! একটি নৌকো এসে বন্দরে ভিড়ছে দেখে ওদিকে তাকালাম, ভেতরে লোকজন বসে আছে দেখে বুঝলাম, এই নৌকোটি সেই জম্বুদ্বীপ থেকে ফিরল! চাতালের ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়েছিলাম বলে চোখে পড়ল, ভেতরে একজন মহিলা বসে আছেন। সাথে আরও কিছু লোকজন চোখে পড়ল কিন্তু সেদিকে মন গেল না। আবারও চোখ ফেরালাম মাছের নৌকোর দিকে।

    একটা কোলাহল কানে আসতে আবার চোখ গেল ঐ বেড়িয়ে ফেরা নৌকোটিতে, এক ভদ্রলোক চেঁচামেচি করছেন। কথা শুনে বোঝা গেল, তিনি বসে থাকা ভদ্রমহিলাটির স্বামী আর চেঁচামেচি করছেন নৌকোর ভেতরে বসে থাকা পাঁচ-ছটি ছেলের উদ্দেশ্যে। একটি ছেলে তার স্ত্রীর সাথে অসভ্যতা করার চেষ্টা করেছিল নৌকোর ভেতর। নৌকোটি জলে থাকা অবস্থায় তিনি কিছুই বলেননি, তীরে ভেড়া মাত্রই কান ধরে হিড়হিড় করে ছেলেটিকে টেনে নামিয়েছেন আর মুখে বলছেন ' কি করবি এবার কর, নৌকোতে বসে কি করতে চাইছিলি আমার বৌকে, এবার কর, এখানে কর'। ছেলেটি প্রতিবাদ করতে চাইছিল, সে কিছুই করেনি বলে আর তার সাথীরাও সেকথাই বলছিল, কিন্তু ততক্ষণে তার কানের দফারফা আর চড় চাপড়ও পড়ছিল মুষলধারে। আকাশনীল স্কার্ট আর ম্যাজেন্টা রঙের কুর্তি পরা তার সুন্দরী স্ত্রী বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে, সবাই একবার তাঁর দিকে তাকায় তো পরবর্তী মুহুর্তেই আবার তাকায় তার স্বামীর দিকে। যিনি একহাতে ছেলেটির কান ধরে রেখে সমানে মেরে যাচ্ছেন অন্যহাতে। দাঁড়িয়ে তামাশা দেখা লোকেরা এবার এগিয়ে গেল ছাড়ানোর চেষ্টায়, বেগতিক দেখে মার খেতে থাকা ছেলেটির বন্ধুরা এগিয়ে এসে এবার ক্ষমা চাইতে লাগল বন্ধুর হয়ে কিন্তু যার স্ত্রীর সাথে অশালীন ব্যবহার করা হয়েছে তিনি ছাড়তে নারাজ। শেষমেষ ছাড়তে রাজী হলেন কিন্তু ছেলেটিকে তাঁর স্ত্রীর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে হবে এই শর্তে। এবং শুধু বেয়াদবী করা ছেলেটিই নয়, তার বন্ধুদেরও ক্ষমা চাইতে হবে ঐ একই ভাবে, কারণ তারা এই অসভ্য ছেলেটির বন্ধু এবং তার সাথে আছে। ছেলেটি মুক্তির রাস্তা পেয়ে সাথে সাথেই ভদ্রমহিলার পায়ের কাছে বসে পড়ে ক্ষমা চাইল এবং জীবনে আর কারও সাথে এরকম করবে না সেই অঙ্গীকারও করল। তার সাথীদের একজন ক্ষমা চাইতে রাজী ছিল না যেহেতু সে অপরাধ করেনি তখন মার খাওয়া ছেলেটি তাকে বলল শিগগীর ক্ষমা চেয়ে নে আর এখান থেকে চল! একে একে ৬জনের দলটি ভদ্রমহিলার পায়ের কাছে বসে ক্ষমা চাইল আর ঝটপট এগিয়ে গেল ফেরার পথে! একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লোক এতক্ষণে সামনে এগিয়ে এল যার হাতে এই বেড়াতে আসা দম্পতির জলের ক্যান, রুকস্যাক। এগিয়ে এসে বলল, বাবু, গাড়িতে যাই এবার? বাবু বললেন, যা, বস গিয়ে, আসছি। স্বামী স্ত্রী ধীরপায়ে এগোলেন ফেরার পথে, ভদ্রলোক তখনও গজগজ করে যাচ্ছেন আর তাঁর স্ত্রী তখনও চুপ, চেহারায় বিরক্তির ছাপ। আমার তিনি তখন বন্দরের আরেক কোণে দাঁড়িয়ে আছেন ফোন কানে, এই কোলাহল থেকে দূরে।

    একভাবে নদীর বুকের এই বন্দরে জলের ধার ঘেঁষে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎ মাথা ঘুরে উঠল! একেবারে যাকে বলে উপর থেকে নিচে আর নিচে থেকে উপরে ২-৩বার যেন পাক খেয়ে উঠল। রেলিং ধরে দাঁড়িয়েছিলাম বলে সামলে নিলাম কিন্তু আর দাঁড়াতে সাহস না পেয়ে জলের ধার ছেড়ে চাতালের অন্যদিকে এসে বসে পড়লাম একটু সিঁড়িমত জায়গায়। পেছনে শুকনো নদী আর সামনে মাছের বন্দর যেখানে এখন নৌক থেকে মাছ তুলে বেছে আলাদা করা হচ্ছে। এক একটি নৌকো থেকে এক এক রকমের মাছ। কোন নৌকো থেকে শুধুই পার্শে তো কোনটি থেকে পাঁচমেশালী। লটে দেখা গেল প্রায় সব নৌকো থেকেই নামছে। দেখলাম চকচকে রুপোলী ছুরি মাছ, সোনালী তোপসেরা সব শুয়ে আছে একের পরে এক ঢিবি হয়ে। হঠৎ চোখে পড়ল এক হাঁসের উপর! হাঁস! এখানে কোত্থেকে এল! বেশ বড় একটি বুনোহাঁস। মাছ নিয়ে ফেরা একটি নৌকো একে তুলে এনেছে জম্বুদ্বীপ থেকে। হাঁসটি উড়তে পারছে না, ডানায় নাকী বাত ভর করেছে, ফুলে আছে ডানা! আমি প্রথমে ভাবলাম এ বোধ হয় বিক্রী করার জন্যে ধরে এনেছে কিন্তু দেখলাম না, তা নয়। পাখিটাকে শুশ্রুষা করবে বলেই জেলেরা এটিকে ধরে নিয়ে এসেছে সাথে করে। কিছু কুচো মাছ রাখা আছে পাখিটার সামনে, কিন্তু তার খাওয়ার কোন ইচ্ছে দেখা যাচ্ছে না। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে হয়ত, কোথায় এল! আগ্রহী মানুষদের আগ্রহ মিইয়ে গেল খানিক পরেই এই পাখিটিকে নিয়ে, সবাই সরে গেল যার যার জায়গায়, কাজে। ফাঁকা দেখে পাখিটা ধীর পায়ে, প্রায় গড়িয়ে গড়িয়ে জলের ধারে গিয়ে ঝাঁপ দিল জলে। খুব ধীরে অসুস্থ ডানায় সাঁতার কেটে এগোতে লাগল অন্যপারের দিকে, সেবা করতে চাওয়া মানুষগুলোকে ছেড়ে, এই বন্দরকে ছেড়ে সে এগিয়ে যেতে লাগল তার নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

    সামরান
  • Du | 67.111.229.98 | ২৮ ডিসেম্বর ২০০৬ ০০:১০693910
  • সামরান, বা: । দারুন !
  • S | 125.23.115.152 | ২৮ ডিসেম্বর ২০০৬ ১০:৩৫693911
  • সাম্রান,

    একঘর। যা-তা। অসা। আর ইয়ে, কী বলে, FC
  • samran | 59.93.197.226 | ২৮ ডিসেম্বর ২০০৬ ১১:৫১693912
  • ধন্যযোগ শমীক :-))

    অনেক ধন্যবাদ 'দু'।
  • ® | 203.197.96.50 | ০৯ জানুয়ারি ২০০৭ ১৮:০২693913
  • চোখিধানী হল জয়পুর থেকে সামান্য দূরে একটা জায়গা যেখানে অথেন্টিক রাজস্থানী ডিশ খাওয়া যায় আর সন্ধ্যের রাজস্থানী নাচ গানের আসর টা উপরি পাওনা।
    দিল্লী - আগ্রা -জয়পুর সার্কেলে সবচেয়ে বেশী বিদেশী পর্যটক আসে, রেকমেন্ড করতে পারো।(জয়পুর শহর নোংরা ঠিক কথা কিন্তু চন্ডীগড় ছাড়া ভারতের আর কোন শহর ঝকঝকে?)
    অসাধারন প্রাসাদ গুলোর গায়ে অমুক তমুক কে ভালোবাসে লেখা দেখে মেজাজ খিঁচড়ে যায়। অবশ্য কাকে বলব ? বিদেশীরাও নিজেদের নাম খোদাই করেন আজকাল।আরো কষ্ট হয় এই দেখে যে নাহারগড়ের প্রাসাদে রাজাদের শৌচালয় খুঁজে পেয়ে জনতা সেখানে অপকীর্তি করে আসে।সত্যি ই "আমরা সবাই রাজা" :-))
    পিপি,
    ওদের লাদাখ রেকমেন্ড করতে পারো।দিল্লী থেকে সাহারা,ইন্ডিয়ান বা জেটে সোজা লেহ ।তারপর নুব্রা- কারগিল- শ্রীনগর হয়ে ব্যাক।অথবা সিমলা-কিন্নৌর- স্পিতি(ইন্দোটিবেটান রোড ধরে) - লাহুল-মানালী সার্কিট টাও খুব সুন্দর ।

  • S | 125.23.114.144 | ০৯ জানুয়ারি ২০০৭ ২২:৫৬693914
  • ঠিক। এটা ঋজু ভালো ইনফো দিয়েছে।

    চন্ডীগড়ের মত না হলেও দিল্লি বেশ ঝকঝকে।
  • pipi | 141.80.168.31 | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ০০:০৬693916
  • উফ্‌, দমদি টা যাতা রকমের ভালো ও ও ও:-))
  • B | 59.93.219.60 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ১৩:০৩693917
  • জয়পুর
    -------
    জয়পুরে আমের(উচ্চারণে, তবে ইংরিজি বানান আলাদা) ফোর্টে মানসিংহের বেশ কিছু স্মৃতি দেখতে পাওয়া যায়। স্থাপত্যে দুই ধর্মীয় কলার সহাবস্থানও দেখবার মত। এককালে এতে জীপে বা হাতীতে চড়ে ওঠা যেত, পায়ে হেঁটেও। এখান থেকে শহরের বিরাট এক অংশ অনেক উপর থেকে দেখা যায়, আগে নাকি প্রায় পুরো জয়পুরই দেখা যেত। এখানেই এককালে টিভি সিরিয়ালে দেখানো সেই তখনকার সরকারের দ্বারা হাফ নিষিদ্ধ (সঞ্জয় খান নির্মিত) "সোর্ড ওফ টিপু সুলতান"-এর প্রচুর দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল।

    এখানেই টঙের কাছেই(যতদুর মনে পড়ছে) অথবা কাছাকাছি কোন মন্দিরে বাংলার বারো ভুইঞার অন্যতম প্রতাপাদিত্যের বিখ্যাত যশোরেশ্বরীকে নিয়ে গিয়ে মানসিংহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্থানীয় লোকেরা খুব মানে সে মন্দিরকে।

    আমের ফোর্ট যাওয়ার পথেই রাস্তার ডানদিকে প্রথমে জল মহল আর তারপরে আরও একটি কেল্লা ধরণের স্থাপত্যের দেখা পাওয়া যায়। জল মহল চারিদিকে জল ঘেরা আর এক স্থাপত্য যা বিকেল বিকেল দেখে নেওয়া ভালো, সন্ধে হলে ঢোকা যেত না বছর পনেরো আগে আর এর বেশ কিছুটা জল গ্রাস করেছিল। আজ কি অবস্থায় জানা নেই। পরেরটির নাম মনে নেই, তবে এর ভেতরের স্থাপত্যও অসামান্য। বহু বহু হিন্দি সিনেমার বেশ কিছু নাচগানের দৃশ্যের কথা মনে পড়তে পারে। এখানেই একদম মাটির মানুষ স্থানীয় নীলু ভোপা তার ঘর থেকে বার করে বেহালা জাতীয় যন্ত্রে নানা লোকসুর শোনাবে একদমই বিনে পয়সায়, শুধুমাত্র একটু ভালোভাবে মিশে ঔৎসুক্য, বিস্ময় নিয়ে কথা বললেই। সেরকম হলে নিজের পাগড়িটা খুলে বাচ্চাদের মাথায় পরিয়ে দিয়ে ছবি তোলাবে আর সপরিবারে হেসে কুটিপাটি হয়ে উপভোগও করবে।

    জয়পুরে মানসিংহের আমলে তৈরী মানমন্দিরটিও অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন আর দর্শনীয়। খুবই জঞ্জালের মত করে রক্ষণাবেক্ষণ করলেও কলকাতার বহু জায়গার থেকে পরিষ্কার। এর সূর্যঘড়িটিও দেখবার মতই।

    হাওয়া মহল, সময় জানি না, বছরে একবার কোন মাসে আপাদমস্তক গোলাপী রঙে রাঙানো হয়। সেসময় পুরোনো জয়পুর শহরের প্রায় অধিকাংশ পুরোনো বাড়ীগুলোকেও একইভাবে রঙ করা হোত বা হয়তো আজও হয়। সেই সময় সত্যিই একে পিঙ্ক সিটি-ই মনে হবে।

    এ ছাড়াও রানীর প্রাসাদ, বাগান, আর কারুর একজনের স্থাপিত মন্দির(নামটা কি নওলাখা মন্দির? মনে নেই)-এর পাশাপাশি বিধানসভা ভবন, ইত্যাদি জায়গাগুলো স্থানীয় লোকে দেখিয়ে দেবে হয়তো।

    এখানে একটা কথা খুব একটা প্রাসঙ্গিক কিনা জানিনা তবু বলা দরকার যে, প্রতাপাদিত্যের কাকা বসন্তরায় কৃষ্ণনগরকে টেক্কা দেবার জন্য নানা শৈল্পিক সাজে সাজিয়ে যশোহরকে গড়ে তুলেছিলেন আর তখনকার মত সময়ে, প্রতিষ্ঠিত এক রাজার শহরের সমস্ত যশ এই শহর হরণ করেছিল বলে এর যশোহর নামকরণ হয়েছিল বলে কথিত। ঘুর্নায়মান ইতিহাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বসন্তরায়ের ভাইপো প্রতাপাদিত্যের আমলে বাংলার যশোরেশ্বরীর মূর্ত্তি নিয়ে গিয়ে, তারপর তাকে হারিয়েছিলেন মানসিংহ। যশ সেক্ষেত্রে কতটা হরণ হয়েছিল কে জানে, তবে এখানকার রাজবংশের সাথে জড়িত ঘটনায় বাংলার যশ কিছুটা বেড়েও থাকতে পারে। আর তা জয়পুরের রানীর হাত ধরেই। রানী গায়ত্রীকে পৃথিবীর প্রথম পাঁচজন সুন্দরীর মধ্যেই নাকি ফেলে লোকে(কে যেন বলছিলো ক্লিওপেট্রার মত-শাকচুন্নির মত নয়- আমি জানি না)। এই রানী গায়ত্রী দেবী বাংলার কোচবিহারের রাজবংশের মেয়ে। ইনি আজও, সম্ভবত: এখন ছিয়শি বছর বয়স, পশ্চিম বাংলায় আসেন বছর দু বছর অন্তর আর চমৎকার বাংলায়ই কথা বলেন। এখন জয়পুরের রাজপরিবারের রাজপুরোহিতও সম্ভবত: বাঙালীই, যদি তিনিই থাকেন যিনি সেসময় ছিলেন।

    রানীর বাড়িঘরও এরা দেখতে দিতে পারে, তবে স্থানীয় লোক চেনা থাকলে সুবিধে হবে। এর পাশাপাশি জয়পুর বিধানসভা বা স্টেডিয়াম, বা অন্য অনেক কিছু দেখতে দেখতে মনে হতে পরে যে জয়পুর শহরে একটা সামঞ্জস্য রাখার চেষ্টা হয়েছে প্রতিটি স্থাপত্যেই।

    কেউ ইচ্ছে করলে বা সময় থাকলে জয়পুরের চিড়িয়াখানায়ও যেতে পারেন। একেবারে খোলামেলা সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মত করে তৈরী এটি। বাঘের জায়গাটি কলকাতার চিড়িয়াখানার থেকে অনেক ভালো হলেও দেখার মত কুমীরের জায়গা আর সংখ্যা। এককালে এই সংখ্যা সম্ভবত: সবচেয়ে বেশী ছিলো সারা ভারতে। অত খোলামেলা জায়গায় তাদের দেখার অভিজ্ঞতা বেশ, রোম কিনা জানি না, হর্ষক তো বটেই। (প্রাণী, থুড়ি, পশুপ্রেমীরা দু:খ পেলে, দু:খিত)।

    চো কি ধানি নিয়ে আলোচনা হয়েছে দেখলাম। চো কি ধানি মূলত: বিশাল জায়গা জুড়ে তৈরী রাজস্থানের গ্রামের আদলে তৈরী একটি কৃত্রিম গ্রাম। দুপুরের পরে বিকেলের একটু আগে গিয়ে রাত অবধি কাটানোর মজা অনেক। এখানে সম্পূর্ণ মাটির মানুষদের হাতে নানাবিধ জিনিষ তৈরী হওয়া দেখতে পাওয়া যাবে। কেউ মৃৎশিল্পী, কেউ তন্তুবায়, কেউ কুম্ভকার, ইত্যাদি। এক একটি কুঁড়েঘরে এক একটি সম্প্রদায়ের মানুষের বানানো জিনিষগুলোর কাঁচা মাল থেকে বাজারী চেহারায় রূপান্তর দেখার মত। দেখতে দেখতে কিনতে চাইলেও কেনা যেতে পারে, আর তার দাম তখন অত বেশী কিছু ছিলো না। এ ছাড়া বিভিন্ন লোকগান আর লোকনৃত্যের আর বিভিন্ন পুরোনো খেলা(অনেকটা মাদারীর খেল-এর মতই কি?) দেখানোর জায়গাও আছে। ধানের মরাই, খামার বা তার পাহারার জন্য উঁচু উঁচু মাচাও রয়েছে একদম আসল গ্রামের মতই। সেখানে ঢুকতেও দেয় আর উঠতেও দেয়। লক্ষ্ণৌএর ভুলভুলাইয়ার মত করে একটা কৃত্রিম ভুলভুলাইয়াও বানানো আছে এখানে, যদিও আয়তনে অনেক ছোট। এসব দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়ে জিরিয়ে নিয়ে এক্কেবারে রাজস্থানী ঘরানার খাওয়াদাওয়ার বন্দোবস্ত টিকিটের দামের মধ্যেই পড়ে। মাটিতে আসন পেড়ে জলচৌকির উপর ঐতিহ্য বজায় রাখা থালা বাসনে খাবার পরিবেশন করবেন রাজস্থানী গ্রামের মানুষ গ্রামীন পোষকে। সে খাওয়া এক এলাহি খানা আর তাতে টিকিটের দাম কমই মনে হয়েছিলো। চো কি ধানি জয়পুরের নিজস্ব চিন্তাপ্রসূত ভারতে প্রথম কৃত্রিম গ্রাম আর আজ তারই আদলে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে অনেক ধানি-ই।

    জয়পুরের একেবারে সম্পূর্ণ নিজস্ব বস্তু হলো বাঁধ্‌নি প্রিণ্টের কাপড় চোপড় যা আজ ভারতের সমস্ত জায়গায়ই পাওয়া গেলেও কিছু অভিনবত্ব আর মৌলিকত্ব এখানকার জিনিষে দেখতে পাওয়া যেতে পারে। বিশেষত: বিয়ের জন্য বর-কনের পোষাকসামগ্রী বলতে এরা যা যা দিতো সেসময় আজ তা পশ্চিমী বিয়ের আঙিনা পেরিয়ে সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ছে। রাজস্থানী হস্তশিল্পের বড় বাজার হাওয়া মহলের সামনেই বা কাছেই। জায়গাটার নামও বোধহয় বড়া বাজার। হস্তশিল্পের এরকম সম্ভার অনেক জায়গায়ই পাওয়া যায়, তবে খোঁচাখুঁচি করে মৌলিক জিনিষ বার করানোর দায় পর্যটকের। বাঁধনি প্রিণ্টের জিনিষ একটু ভেতরে। শুধু পোষক আষাক নয়, ঘর সাজানোর জন্য (যা আজ এক প্রথাই হয়ে দাঁড়িয়েছে) হস্তশিল্পের অনেক ধরণের জিনিষ এখানে বেশ কম দামেই পাবেন। দরদাম করলে আজও খুব একটা ঠকতে হবে না বলেই মনে হয়।

    থাকার জায়গা অনেক আছে, বাল্যবন্ধুর বা নিকট কারুর বাড়ি না থাকলে আইটিডিসির কিছু হোটেল আছে মোটামুটি ঠিক দামে। মাঝারি পয়সার এরকমই হোটেল ছিলো বোধহয় "হোটেল গঙ্গৌর"(Hotel Gangaur"), যেখানে রাজস্থানী নানা জিনিষের(একটু বেশী দামে) প্রদর্শনীর পাশাপাশি এক বেশ বড় বইয়ের দোকানও ছিলো। কলকাতার বড় সাংস্কৃতিক দলেরা এখানেই উঠতো তখন।

    তবে হ্যাঁ, একটা কথা বলা ভালো যে রাস্তায় অজস্র হাতী চলতে দেখা যেতে পারে আজও অথবা "ল্যাগব্যাগ" করা উট-চালিত গাড়ি। তাদের জন্যে সুলভ কিছুর ব্যবস্থা নেই বলে রসিক পর্যটকেরা রাস্তাঘাটের প্রাকৃতিক সুবাসিত সৌন্দর্য্য উপভোগ করতেই পারেন। তা অন্তত: আমাদের শহুরে দূষনকে পিছনে ফেলবে না কোনদিনই।

    আর ওই হাওয়া মহলের সামনের বাজারে তো বটেই শহরের অনেক জায়গায়ই ঢ্যাঙা ঢ্যাঙা, শক্তপোক্ত চেহারার, মাথায় বিশাল উষ্ণীষ বাঁধা লোকজনকে দেখতে পাওয়া যাবে সেই কোন সিনেমায় দেখা রামদেওরা স্টেশনে ঘুরঘুর করা অজস্র "ডেকইট্‌স্‌"দের অন্যতম ভবানন্দের চেলার চেহারার। এ বেচারারা কিন্তু মাটির মানুষ- সর্বানীর লেখা জলছবির ওই সনাতন মৌলি-দের মতই। এদের কাউকে ভুল করে জিগাবেন "রাজস্থানকে ডাকু হ্যায় কেয়া?", আর তারা আপনার জিনিষ বা আপনাকে "দুষ্টু লোক" সন্দেহে "ভ্যানিশ" না করে দিলে শহুরে মজা পেলেন না বলে দোষ দেবেন না।

    তার চেয়ে বরং বেড়ানোর শেষ দিনের বিকেলে চো কি ধানি-তে যান আর কপালে থাকলে ওখানে রাজস্থানের অনবদ্য লোকসুরের বাজনা আর বাদকদের প্রাণ ভরে দেখুন আর উপভোগ করুন। কি-ই, "সোনার কেল্লা'র সেই "রামদেওরা" স্টেশনের অনবদ্য ফোক টিউন আর তার বাজনদার গায়েনকে মনে পড়লো?

    পড়বে, পড়বে, জয়পুর গিয়ে "অপূর্ব বন্দোপাধ্যায়"-এর চোখ আর মন দিয়ে সব কিছু দেখলে হয়তো এ লেখার কথাও মনে পড়বে।
  • kd | 59.93.245.109 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ১৬:৩০693918
  • আমের ফোর্ট কি অম্বর প্যালেস/ফোর্ট? মানে মানসিংহ তো অম্বররাজ ছিলেন। অবিশ্যি ওটা জয়পুরে নয়, পাশের শহর অম্বরে। আর জয়পুরে তো আর একটা ফোর্ট দেখেচি - ঠিক নামটা মনে নেই, 'নড়বড়ে' টাইপের কি একটা:-))
  • S | 125.23.123.253 | ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ২৩:৩৭693919
  • হ্যাঁ কাব্লিদা,

    আমের আর অম্বর একই। আরেকটা হল নাহারগড় ফোর্ট।

    B জাস্ট ফাটাফাটি দিয়েছে বর্ণনা। কিছু সংযোজন।

    জলমহল ঐ পথচলতিই দেখে নিতে হয়। যাওয়া যায় না সেখানে আর। জলমহলের ছাদে কয়েকখানা নিমগাছ লাগানো আছে, ফুল সাইজ, তারা নাকি সারা বছর একই উচ্চতায় থাকে, বাড়েও না, কমেও না, এটা নাকি খুব আশ্চর্যের (আমার কিছু আশ্চর্য লাগে নি অবশ্য, প্রাপ্তবয়স্ক নিমগাছ বাড়বে কমবে কেন?) তবে ছদের ওপরে অত বড় নিমগাছ ব্যাপারটা আশ্চর্যের বটে।

    আর চো কি ধানি নয়, চোখি-ধানি। চোখি ইয়ানি আচ্ছা, ধানি ইয়ানি গাঁও। ওখানকার লোকের মুখ থেকে শোনা। এর আরেকটা কাউন্টারপার্ট আছে মুম্বাইতে। ওয়েবসাইট http://www.chokhidhani.com
  • pipi | 141.80.168.31 | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ ০০:০৩693921
  • আরে সকাল থেকে এই সূতোটা চোখে পড়ে নি কেন? B তো ফাটিয়ে লিখেছে। ব্রেশ ব্রেশ। বে-থে, সাইটটা চমৎকার। দেখে শুনে আমারই জয়পুর যেতে ইচ্ছে করছে। জয়পুরের জন্য না। ঐ চোখিধানির জন্য। আচ্ছা ওখানে কোন থাকার জায়গা নেই?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন