এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সম্পাদকীয়-- অর্থনৈতিক সংকটের স্বরূপ

    দেশকাল ভাবনা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৭৪৪ বার পঠিত
  • মোদীর সিংহগর্জন আর অর্থনৈতিক সংকটের তীব্রতাকে চাপা দিয়ে রাখতে পারছে না। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে ভারতের অর্থনীতি সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। সংকট কতটা গভীর সেটা তার স্বীকারোক্তিতে ধরা পড়েনি। ধরা পড়েনি এই নির্মম সত্যটি যে শ্রীনগরের লালচকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী হরিয়ানার উছৃঙ্খল যুববাহিনীর উদ্দাম নৃত্যের ব্যবস্থা করে কিংবা গোবলয়ে মুসলিম পিটিয়ে অথবা দলিতনারীকে ধর্ষণ করার ঢালাও ব্যবস্থা করে এই সংকট এড়ানো যাবে না। বিষয়টা আরও গভীর। কোনো ফ্যাসিস্ট শাসকই এ থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পারবে না। অর্থনৈতিক সংকট রূপান্তরিত হবে সামাজিক সংকটে কেননা ফ্যাসিস্ট শাসক এই সংকটের সমাধান খুঁজবে নয়া উদারবাদী পথে, যে নয়া উদারবাদই বিশ্ব জুড়ে নিয়ে আসছে এই সংকট।
    বিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মন্দার লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে। ব্যপ্তি ও গভীরতায় এই মন্দা ২০০৮-এর বিশ্বমন্দাকে ছাড়িয়ে যাবে, এই অনুমানের যথেষ্ট কারণ আছে। ওয়াল স্ট্রীটের প্রধান সূচকগুলিতে গত সপ্তাহে ১.৫ শতাংশ পতন ঘটেছে, অনিশ্চিত বাজারে বিনিয়োগ করার ঝুঁকি এড়াতে স্বল্প মেয়াদি বিনিয়োগের ঝোঁক বাড়ছে, দু'বছরের মেয়াদি মার্কিন ট্রেজারী নোটের (বন্ড) ওপর আয়ের হার এখন দশ বছর মেয়াদি ট্রেজারি নোটের আয়ের হারের চেয়ে বেশি। অর্থের বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে দামি ধাতু (সোনা, রুপা)-তে তা বিনিয়োগ করার প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এসবই হ’ল আসন্ন মন্দার লক্ষণ, যেটা প্রথম দেখা মিলেছে ইউরোপের (জার্মানি সহ) অর্থনীতিতে। ভারতের অর্থনীতি আছে কী অবস্থায় ? আয় অর্থাৎ জিডিপি । বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। গাড়ি শিল্পে ৩ লক্ষ কর্মহানি হয়েছে সম্প্রতি। সিএমআইই-র তথ্য বলছে, শুধু অটোমোবাইল নয়, ভোগস্বল্পতার লক্ষণ, চাহিদা না থাকার লক্ষণ। এমনকি বিস্কুটের বাজারেও দেখা দিয়েছে। চাহিদা যে নেই, পাইকারি মূল্য সূচকে পতনেও তার প্রমাণ আছে। পাইকারি মূল্য সূচকে ম্যানুফ্যাকচারড পণ্যের গুরুত্ব ৬৪.৩ শতাংশ অর্থাৎ ঐ ক্ষেত্রটিই প্রধান। ম্যানুফ্যাকচারড পণ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার (জুলাই, ২০১৯) ০.৬৪ শতাংশ। যাঁরা ঐ বাজারে পণ্য বিক্রি করেন। তাদের হাত থেকে দাম নির্ধারণের ক্ষমতাই চলে যাচ্ছে। লক্ষণ ভালো নয়। কেনার লোক বাড়ছে না।
    গাড়ি শিল্পে জিএসটি কমিয়ে (২৮ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে), পুরোনো গাড়িকে বাতিল করিয়ে (ডেপ্রিসিয়েশন হার বাড়িয়ে) আর দূষণমাত্রা নীচে নামিয়ে আগের ক্রেতাদের আবার গাড়ি কিনতে বাধ্য করে চাহিদাহীনতার সমস্যাটা মেটাবার দাবি তুলেছে অটোমোবাইল লবি। তাতে সমস্যা মিটবে না।
    কেননা পুরোনো ক্রেতাদের অনেকের আর গাড়ি কেনার ক্ষমতা নেই। সর্বত্র যা হচ্ছে, অটোমোবাইলেও তাই হবে। ক্রেতার অভাবে বিক্রি মার খাবে- অর্থনীতি মন্দায় পড়লে যা হয়ে থাকে সচরাচর।
    এই অবস্থায় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রেপো রেট আরও কমাবে। সুদের হার আরও কমবে। নূতন প্রকল্পের জন্য যারা টাকা ধার করবেন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক থেকে, তাদের প্রকল্প-ব্যয় কমবে, গাড়ি-বাড়ির ইএমআই আরও কমবে, ব্যাঙ্ক নয় এমন প্রতিষ্ঠানে। নগদের যোগান আরও বাড়বে। নয়া উদারবাদী প্রেসক্রিপশন অনুসারে সেটাই দাওয়াই বাজার চাঙ্গা করার। এই দাওয়াই-এ কাজ যে হচ্ছে না সেটা প্রমাণিত। ব্যাঙ্কে অনাদায়ী ঋণ ক্রমশঃ বাড়ছে, নগদ পড়ে থাকছে উপযুক্ত অধমর্ণের অভাবে তার পর তিনবার রেপো রেট বা কমিয়ে এই প্রবণতা রোধ করা যাচ্ছে না। উদ্যোগপতি বুঝছেন, টাকা ধার করে নূতন প্রকল্প গড়া বৃথা, আগের বিনিয়োগেই লাভ উঠছে না বিক্রিতে মন্দা থাকায়। নূতন ব্যয়ের বোঝা বইতে সে রাজী নয়। ধার করে গাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার নূতন লোকও নেই, ধার শোধের সঙ্গতিসম্পন্ন ক্রেতা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে এই বাজারে। লাভের মধ্যে এটা ঘটছে যে ব্যাঙ্কের টাকা মূলতঃ যেখান থেকে আসে সেই গার্হস্থ্য সঞ্চয়ে সুদের হার কমছে। আসল কথা, সংকটের দায় পুঁজি নেবে না, পুঁজি তার মুনাফার হার কমাবে না। যেখান থেকে টাকা এনে পুঁজি তৈরি করা হয় তার বড় উৎস গার্হস্থ্য সঞ্চয়। সংকটের দায় ঠেলা হচ্ছে সেখানে। তাতেও যদি বাজার চাঙ্গা হত, তাহলে গার্হস্থ্য সঞ্চয়ের ওপর সুদ কমানোর একটা যুক্তি থাকতো। বাজার এ পথে চাঙ্গা হবে না। চাঙ্গা করতে হ’লে নয়া উদারবাদী অর্থনীতির মূলে আঘাত করে আনতে হবে নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি, যাতে আয়ের পুনর্বণ্টন হয়ে শ্রমজীবী ও কৃষিজীবীর হাতে টাকা আসে, যে টাকায় বাড়বে জনভোগ্য পণ্যের চাহিদা, বাজার চাঙ্গা হতে পারে যার মধ্য দিয়ে।
    মোদী এপথে হাঁটবেন না। শ্রমজীবীর পক্ষে সম্পদ বা আয়ের পুনর্বণ্টন তার শাস্ত্রে নিষেধ, সেটা মনে রেখেই তিনি এনেছেন নতুন লেবার কোড, যে কোড অনুসারে শ্রমজীবীর মজুরি আরও ছাঁটাই হবে। কৃষি-ভর্তুকি উঠিয়ে দেবার কথা উঠছে। আসলে লাঠি হাতে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া এই অর্থনীতির গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। পরিস্থিতি সম্ভবতঃ সেদিকেই যাচ্ছে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৭৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন