এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • রুপচর্চা

    জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণ্য লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ এপ্রিল ২০১৯ | ৯৬০ বার পঠিত
  • প্রোফাইল পিক আপডেট দেয়ার কিছুক্ষণ পর‌ই এক নামকরা বিউটিশিয়ান ফেসবুক ফ্রেন্ড আপু আমাকে নক দিলেন,

    -হ্যালো! একটা কথা জানতে পারি?

    আমি রিপ্লাই দিলাম, শিওর আপু,বলেন।

    আপু-কি ক্রিম ইউজ করো

    আমি একটা চশমাপরা ইমোজি দিয়ে রিপ্লাই দিলাম, ফেয়ার এন্ড লাভলী।

    আপু মেসেজ সিন করে সেদিন আর কোনো রিপ্লাই দিলেন না। পরদিন আবার নক দিলেন,

    -স্কিন কেয়ারের জন্য কি করো?

    আমি: ঐযে আপু বললাম,ফেয়ার এন্ড লাভলী ইউজ করি। সকালে একবার,বিকালে একবার,রাতে একবার, মাঝরাতে একবার।

    আপু-ও আচ্ছা! ইয়ে মানে, তোমার তো বয়স কম! বয়সের একটা সৌন্দর্য আছে। তুমি এখন থেকে ন্যাচারাল কিছু জিনিস ব্যবহার করবা। আমলকি,মেথি,চন্দন। ব্লাক মাস্ক ইউজ করবা। আর আমি কিছু ক্রিমের নাম বলছি.......

    আপুর কথা শুনে আমি কাজে লেগে পড়লাম। আপু যা যা বললেন সব কিনে ফেললাম। কিন্তু আপু বলে দেননি কোনটা কিভাবে ব্যবহার করতে হয়।

    আমি আমার বিখ্যাত বুদ্ধি খাটালাম।

    পরদিন আপু কল দিলেন,কি খবর? সব ঠিকঠাক ইউজ করছো?

    আমি খুশীখুশী গলায় জবাব দিলাম, জ্বী আপু, আমলকি আর মেথি গুঁড়া করে গুলিয়ে মুখে মেখে ফেলেছি। দারুন উপকার পেয়েছি,স্কিন একদম সফট হয়ে গেছে।

    আপু হাউহাউ করে চিৎকার করে উঠলেন, আরে আরে! কি বলো তুমি? ওগুলা মাথায় মাখতে হয়! মুখে মেখে বলছো উপকার পেয়েছো! পাগল হয়ে গেলে নাকি?

    আমি অভিমানী গলায় বললাম,আপনি তো বলেননি মুখে মাখতে হবে না মাথায়! কি করে জানবো!

    পরদিন আরেক কীর্তি করলাম। ব্লাক মাস্ক নিয়ে মাথায় মেখে ফেললাম।‌ খানিকক্ষণের মধ্যেই সেটা মাথায় এঁটে বসে চুল জট পাকিয়ে গেল।

    আমি আপুকে ফোন দিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, আপু! ব্লাক মাস্কটা কি ডেটওভার‌ ছিল কি না বুঝতে পারছি না। আমার সব চুল পড়ে যাচ্ছে!

    আপু রাগী গলায় বললেন, তোমাকে সাজেশন দেয়াই আমার ভুল হয়েছে, ফেয়ার এন্ড লাভলী মাখতে ঐটাই ভালো ছিলো। ক্ষ্যাত মাইয়া একটা! ব্লাক মাস্ক মুখে মাখতে হয়,মাথায় না।

    আমি এবার একটু রেগে গেলাম। আমাকে ক্ষ্যাত বলা? আমাকে?

    সোজা চলে গেলাম পার্লারে। পার্লারের মহিলাকে বললাম, আমার ট্রিটমেন্ট করেন।

    পার্লারের মহিলা রিসিট লিখতে লিখতে বললেন, কি কি করবা?

    আমি বললাম,আমি কিছু জানি না। যা যা করা যায় সব করেন।

    সে একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো। বললো, ফেসিয়াল,হেয়ার ট্রিটমেন্ট এইগুলা করবা?

    আমি বিরক্ত গলায় জবাব দিলাম, আমি জানি না,যা যা করা যায় সব করে দেন। আমি এইসব কিছু বুঝি না।

    এতক্ষনে পার্লারের আন্টি নড়েচড়ে বসলেন। আগ্রহের সাথে বললেন,প্যাকেজ?

    আমি কিছু না বুঝেই মাথা নাড়লাম।

    তিনি হাসিমুখে আমাকে চেয়ার টেনে দিলেন। আমি বসলাম।

    -গোল্ড ফেসিয়াল করে দিই?

    :দেন।

    :হেয়ার স্পা করে দেবো? দামী একটা? চুল একদম শাইন করবে!

    :হু করে দেন।

    -একবারে রিবন্ডিং করে ফেলো না! তোমার চুল হালকা কোঁকড়ানো। ভলিউম স্ট্রেট করলে সুন্দর লাগবে।

    : সুন্দর লাগলে করে দেন।

    -সেইসাথে একটা স্টেপ লেয়ার দিয়ে দেই? এইসব তো রোজ রোজ করা যায় না!

    -হাত-পা এত ময়লা কেন? ম্যানিকিওর-পেডিকিওর করে দেই?

    -একবারে বডি ফেসিয়াল করে দিই?

    -চুল কালার করবা? সুন্দর একটা কালার আছে আমার কাছে, ফ্রান্স থেকে আনিয়েছি।

    -হাত-পা ফর্সা করা লোশন আছে। গতমাসে আমি পাকিস্তান গিয়েছিলাম নিয়ে আসছি।

    -স্কিন এত রাফ কেন তোমার। ম্যাসাজ করা দরকার।

    পার্লারে সাড়ে চার ঘন্টা সময় ব্যয় করে ভদ্রমহিলা আমার আগাগোড়া চেঞ্জ করে দিলেন। আয়নায় নিজেকে দেখে আমি যতটা মুগ্ধ হলাম তারচেয়ে বেশী মুগ্ধ হলাম বিল দেখে। হৃদয়ে পাথর রেখে টাকা বের করলাম।

    রাস্তা দিয়ে আসছি। অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। দুইটা মেয়ে কানাকানিও করলো‌।

    তাড়াতাড়ি বাসায় আসলাম। ড্রেসিং টেবিলের বড় আয়নায় ভালো করে দেখলাম। হঠাৎ করে গোল্ড ফেসিয়াল করে অদ্ভুত এক‌ রংয়ের অধিকারী হয়েছি। স্বাভাবিকভাবে মানুষের রং দুইটা। সাদা আর কালো। কিন্তু আমার রং এখন হলুদ। সেইসাথে পশম টশম তুলে আমাকে অনেকটা জবাইয়ের পর চামড়া ছিলা মুরগীর মতো লাগছে।‌ বাসার সবাইও আমাকে দেখে আঁতকে উঠেছে। আব্বু রাগী গলায় টাকাগুলো নষ্ট করা নিয়ে চিল্লাচিল্লি করছেন। এরচেয়ে টাকাগুলো বুড়িগঙ্গার পানিতে ভাসিয়ে দেয়া ভালো ছিলো সেটাও জানলাম। সেইসাথে বললেন, আল্লাহর দেয়া চেহারা নিয়ে যে সন্তুষ্ট না সে একটা অমানুষ। নিজেই নিজের চেহারা পরিবর্তন করতে যাওয়ার ফলে আল্লাহ গজব দিছেন।

    একমাস আমি নিজেকে ঘরে বন্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই একমাসে নিশ্চয়ই মুখের হলুদ রং বদলাবে,পশম গজাবে।

    অনেক কষ্টে ওল্ড কনভার্সেশন স্ক্রল করে করে সেই বিউটিশিয়ানকে খুঁজে বের করে মেসেজ দিলাম,

    আমি- বদমায়েশ মহিলা! একটা চড়ে আমি তোমার বত্রিশ পাটি দাঁত উড়িয়ে দেবো।

    বিউটিশিয়ান- what! Why?

    আমি- এত চেহারা দিয়ে কি করবি? যাবি তো জাহান্নামে! ব্যাভিচারী নারী!

    সে- মুখ সামলে কথা বলো!

    আমি- তোর বর তোকে ছেড়ে চলে যাবে। নাহলে পরকীয়া করে বেড়াবে আমি অভিশাপ দিলাম।ব্যাদ্দপ বেলাজ মহিলা।

    -you can't reply to this conversation!

    তাতে আমার কিছু যায় আসে না। একমাস ঘরে বসে থাকব। একমাস পর মার্কেটে গিয়ে এক কার্টুন ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনে আনব।

    East or West...fair and lovely is the best...

    লেখা- জান্নাতুল ফেরদৌস লাবণ্য
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ এপ্রিল ২০১৯ | ৯৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন