এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অন্য কোথা অন্য কোনখানে

    কল্লোল লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৮ মার্চ ২০১৬ | ২০৮৯ বার পঠিত
  • অন্য কোথা অন্য কোনখানে
    চলছিলো তো অনেক কিছুই। রোহিত ভেমূলা, কানহাইয়া কুমার, উমর খালে্দ, আজাদী, কাশ্মীর, উত্তরপূর্ব, ঋণখেলাপী বিজয় মালিয়া, নারদ স্টিং এ কাহিল তৃণমূল, নানান বাদ-প্রতিবাদ ইত্যাকার বহুকিছু। এসবের মধ্যেই সুযোগ এলো উত্তর কর্ণাটকের আদিবাসী গ্রামে যাবার। এরা অবশ্য আদিবাসী বলে না, বলে বনবাসী। এই ঘুরতে যাবার একটা নামও দিয়েছে এরা বনযাত্রা। এরা হলো অখিল ভারতীয় বনবাসী কল্যান আশ্রম। উইকি বলছে এরা সঙ্ঘ পরিবারের সদস্য। ধর্মান্তর নিয়ে এদের নানান মাথাব্যথা। আমার সাথে এদের যোগাযোগের সেতু হলো রমেশ, রমেশ ভাট। পেশায় কোম্পানি সেক্রেটারী। নিজের ফার্ম আছে। আমাদের নানা কাজে বহু সাহায্য করে। কথাবার্তায় একটু বিজেপি ঘেঁষা। অসম্ভব মৃদুভাষী ও নিপাট ভদ্রলোক।
    ও অনেকদিন থেকেই বলছে, ওরা উত্তর কর্ণাটকের আদিবাসী এলাকায় একটা স্কুল চালায়। সেখানে হোস্টেলে রেখে প্রায় পঞ্চাশজন আদিবাসী ছেলেকে বিনা খরচে পড়ায়, সেটা দেখতে যেতে। কোনবারই যাওয়া হয়ে ওঠে না। এবার তাই মনে হলো ঘুরেই আসি।
    উত্তর কর্ণাটক জেলার মুন্দগোদ তালুকে দুটো গ্রামে যাওয়া হবে চিপাগেরি আর বাইনহাল্লী। সারারাতের বাসযাত্রা। ব্যাঙ্গালোর থেকে সিরসি। সিরসি তালুকের প্রধান শহর সিরসি হলো একটা ছোট্ট শহর। সহযাত্রীরা সকলেই ব্যাঙ্গালোরের, আমি ও আর দু-চারজন ছাড়া সকলেই কোম্পানি সেক্রেটারী বিরাদরির। আমি ও আর একটি দিল্লীর ছেলে বাদে সকলেই কান্নাডিগা। পাঁচজন মহিলা সহ আমরা প্রায় পনেরো-ষোলো জন। বাসটি আমাদের ভাড়া করা।

    সিরসির পিডব্লিউডি বাংলোতে স্নান সেরে একটা ছোট রেস্তরাঁতে ইডলি-বড়ার প্রাতঃরাশ। এখানকার সম্বরের স্বাদ ব্যাঙ্গালোরের চেয়ে আলাদা। নারকেলের চাটনীটি কোন এক অজানা মশলায় সামান্য লালচে ও স্বাদে একটা ঝাল ভাব আছে। প্রচুর তিব্বতী মানুষ খেতে এসেছেন কাছের এক তিব্বতী উদ্বাস্তু কলোনী থেকে।
    সিরসি থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ত্রিপালজী। উনি এখানকার বরিষ্ঠ সঙ্ঘ প্রচারক। খেতে খেতে আলাপ হল। অকৃতাদার, একহারা চেহারা, মৃদুভাষী ও ভীষন বিনয়ী। বয়স চল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে। পরনে সাদা ধুতি-কুর্তা, কাঁধে ঝোলা, কাঁচা-পাকা চুল, পরিষ্কার কামানো মুখমন্ডলে একধরনের শান্ত অথচ প্রত্যয়ীভাব।

    প্রাতঃরাশ সেরে বাস চললো কাছের এক গ্রামের ইস্কুলে। এটি সরকারী ইস্কুল। সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করা যায় এখানে। এটি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। এখানকার আদিবাসীরা গৌলি। এরা মূলতঃ গোয়া আর মহারাষ্ট্র থেকে আসা। চাষবাস আর গোপালন এদের জীবিকা। তাবে একটা মজার ব্যাপার এরা শুধু দেশী গরু পোষেন। সংকর জাতের গরুতে এদের তীব্র আপত্তি। সেসব গরুর দুধকে এরা দুধ বলে মানেন না। দুপুরের খাওয়ার ঠিক আগে আমরা পৌঁছেছি। একটা শ্রেণীকক্ষে আমাদের বসানো হলো। বাচ্চারা আমাদের গান শোনালো। ভাষা বুঝি না, তাই সঙ্গীদের একজন মোটামুটি অনুবাদ করে দিচ্ছিলেন। ভারতমাতার গান, দেবতাদের নিয়ে গান। চারটি ছেলে ও দুটি মেয়ে আলাদা করে গাইলো। বেশ সুরে গলা। মেয়েরা আর ছেলেরা নাচও দেখালো। ছেলেদের নাচটি বৈশিষ্টহীন। গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচ, গানের সাথে। মেয়েদের নাচটি বেশ সুন্দর। চারটি মেয়ে উবু হয়ে বসে মাটিতে দুহাতের পাতা বুলাতে বুলাতে হঠাৎ বসা অবস্থাতেই শূণ্যে পা ছুঁড়ে গোল হয়ে ঘুরতে লাগলো। অনেকটা রাশিয়ান ছবিতে দেখা কসাকদের নাচের মতো। এরপর ত্রিপালজীর অনুরোধে তারা গীতার বেশ কিছু শ্লোক শোনালো।
    ত্রিপালজী কিছু বললেন। অনুবাদে বুঝলাম, মূলতঃ নিজেদের ঐতিহ্য ও পরম্পরা বজায় রখাতে অনুরোধ করলেন।
    দুপুরে বাচ্চাদের খেতে দেওয়া হলো, মশলা দেওয়া ভাতের মধ্যে ছোলা সেদ্ধ।
    তিনজন শিক্ষক। একজন পুরুষ, অন্য দুজন মহিলা। মহিলারা খুব সুন্দর করে শাড়ি পরেছেন। বেশ পরিপাটি।
    ইস্কুলের বাইরে কিছু মানুষের সাথে কথা হচ্ছিলো। মূলতঃ ধান চাষ ও গোপালন করেন। দুধ বেচার চেয়েও বেশীটা নিজেরাই খান। চাষের মরশুম শেষ হলে জন খাটতে যান গোয়ায়। ওখানে দিনে তিনশো টাকা মজুরী পাওয়া যায়। খাইখরচ মিটিয়ে হাতে এক/দেড়শো টাকা থাকে।
    এরা মারাঠীভাষী। কানাড়া ভাষাটিও রপ্ত। ইস্কুলে কানাড়া ভাষায় পড়ানো হয়। সে কারনে বাচ্চাদের ইস্কুলে পাঠাতে অভিবাবকদের অনিহা আছে।
    ওদের নিজেদের উৎসব হয় এপ্রিল মাসে। সে উৎসব ওদের আদিবাসী উৎসব। তবে ওরা হোলীও খেলেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে হোলী খেলা হয়।

    ফিরে এলাম সিরসিতে। ওই পিডব্লিউডি বাংলোতেই দুপুরের খাওয়া। উত্তর কর্ণাটকী রান্না। দুটো সব্জী, ভাত আর সম্বর। শেষপাতে দই।

    এবার আমাদের সাথে যোগ দিলেন দুই মহিলা ও একটি কিশোর। এরাও সঙ্ঘ প্রচারক। খাওয়ার পর প্রায় ঘন্টাখানেক কথা হলো। ওরাই বললেন, অন্যেরা শুনলো। ধর্মান্তকরনের সমস্যা নিয়ে বলছিলেন। আদিবাসীদের দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে এদের খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষিত করা হচ্ছে – এই রকম সব। ওরা তাদের “re-convert” করছেন বলে দাবী করলেন। আমার জিজ্ঞাস্য ছিলো, ওরা কি এই আদিবাসী খ্রীস্টানদের হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করছেন? জবাবটা বেশ চমকে দেওয়ার মতো – না, আমরা ওদের আদিবাসী ধর্ম ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে বলছি।

    রওনা হলাম বায়ানাল্লী গ্রামের দিকে। এটি মুন্দগোদ তালুকে। আমাদের গোটা যাত্রাটাই বিশাল জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যার মাঝে মাঝে বিন্দুর মতো জেগে রয়েছে এই আদিবাসী গ্রামগুলো। ছোটনাগপুর মালভূমির জঙ্গলের মতোই পর্ণমোচী গাছের বন। এখন বেশীরভাগ গাছেই পাতা নেই। কিছু কিছু গাছে সবে পাতা আসছে। পাতা ছাড়া গাছ দেখে চেনার মতো বৃক্ষবিশারদ নই, তাই আন্দাজে মনে হলো বেশীটাই শালবন। বেশ কিছু বুনো কাজু গাছ দেখেছি গ্রামগুলোর চারপাশে। এখানকার মাটি কালো। কাপাসের চাষ হয়। জিজ্ঞাসা করে জানলাম বীজহীন তুলো এখানে ব্যবহার হয় না।
    পথ অনেকটা। তাই পৌঁছাতে বেলা পড়ে এলো। অবশ্য এখানে এখন সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত কাজ চালানোর মতো আলো থাকে। বায়ানাল্লী গ্রামে পঞ্চাশ/ষাঠ ঘর আদিবাসী থাকেন । বেশ সম্পন্ন গ্রাম। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও ডিশ টিভি আছে। নেটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ৫৬% মানুষ সাক্ষর এই গ্রামে। আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসছিলেন এই গ্রামেরই দুই যুবক। তাদের একজনেদের বাসার দাওয়ায় বসা হলো। চা চানাচুর সহযোগে বৈকালিক স্বল্পাহারও হালো। এটি পাকা বাড়ি। সদর দরোজার দুপাশে রীতি মেনে লাল সিমেন্টের রোয়াক। তাতে প্লাস্টিকের মাদুর পেতে বসা। অনেকটা যায়গা নিয়ে বাড়ি। বসতবাড়ি, শষ্যগোলা, গোয়াল, আনাজের বাগান, সব মিলিয়ে বেশ অবস্থাপন্ন ছবি। ত্রিপালজী ও অন্য প্রচারকেরা এখানে, ভালোই পরিচিত। নিয়মিত আসা যাওয়া আছে। বাচ্চারা ত্রিপালজীর কোলে চড়ে চানাচুরে ভাগ বসাচ্ছে।
    আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো গ্রামের ইস্কুলটিতে। আগের ইস্কুলটির তুলনায় খুব ছোট। একটাই ঘর। বিজলী বাতি আছে, তবে হুকিং করে। এটি চালান অখিল ভারতীয় বনবাসী কল্যান আশ্রম। সেখানে বাচ্চারা ভারতমাতার আরতি করতে করতে গান গাইলো। এবং আবারও ত্রিপালজীর অনুরোধে গীতা আর বেদ থেকে পাঠ হলো।
    সন্ধ্যা নামলো বহুক্ষণ ধরে। পাতাহীন বৃক্ষরাজির ফাঁকে অস্তমিত লাল সূর্য অনেকক্ষন বিরাজ করলেন। শুনলাম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
    গ্রামের শেষে বনের গা ঘেঁসে একটি চালাঘর। বেঞ্চিও পাতা আছে তাতে। হয়তো পঞ্চায়েতের সভা হয়। অন্য সময়ে আড্ডাঘর হিসাবে ব্যবহারও হয় হয়তো। সেই চালাঘরের সামনেটাই মঞ্চ হলো দুটো ব্যাটারী আলো দিয়ে। পিছনটা সাজঘর।
    একটা নাচ দিয়ে শুরু হলো, ছেলেদের নাচ। তিনটি ছেলে সাদা পোষাকে। অনেকটা গুজরাটি পোশাকের মতো ছোট কুর্তার সাথে গোড়ালি পর্যন্ত লহঙ্গার মতো। সাথে মাদলের মতো তাল যন্ত্র ও ঝাঝ (বড় করতাল) । এর পর নাটক। বিষয়বস্তু বেশ হাড়হিমকর। অভাবের তাড়নায় সন্তানকে বেচে দেওয়া। অবশ্য শেষটায়, টাকা ফেরৎ দিয়ে সন্তানকে ফিরিয়ে আনা। নাটকের মাঝে মাঝে প্রাচুর হাস্যরসও এসেছে, সেটা সমবেত দর্শকদের হাসির হররা দেখে বোঝা গেল। গ্রামেরই একটি ছেলে লিখেছে, সেই নির্দেশক। মেয়েদের নাচ এলো তারপর। গোল হয়ে ঘুরে ঘুরে অনেকটা সাঁওতালি মেয়েদের নাচের মতো। বৈশিষ্টটি অন্য বিষয়ে। নাচতে নাচতে মেয়েরা যখন মাথা ঝুঁকিয়ে এক পা থেকে অন্য পায়ে যাচ্ছে, তখন খুব জোরে শ্বাসের আওয়াজই তালের কাজ করছে। লয় ক্রমশঃ বাড়তে বাড়তে দ্রুত হচ্ছে। শেষের দিকে প্রায় – আরডির পিয়া তু অব তো আজা–র পরে যে - আহা আহ আহা আছে অনেকটা তার মতো শোনাচ্ছিলো। দুটি মেয়ের গান দিয়ে শেষ হলো।
    এরপর ত্রিপালজী কিছু বললেন। অনুবাদে যা বুঝলাম, তা বেশ রোমাঞ্চকর। জঙ্গলের অধিকার বনবাসীদের। সেটা তাদের আদায় করতে হবে। বনবাসীদের সম্মতি ছাড়া জঙ্গল কাটা চলবে না।

    ওখান থেকে আসা হলো হোস্টেলে। লেখার শুরুতে যে হোস্টেলের কথা বলেছিলাম, সেই হোস্টেলে। পঞ্চাশজন ছেলে থাকে এখানে। এখান থেকে বেশ দূরে অন্য জায়গায় মেয়েদের হোস্টেলও আছে। সকলেই আদিবাসী। একটি সিদ্দী ছেলেও আছে। সে কথায় পরে আসছি। হোস্টেলের পাশেই ইস্কুল। হোস্টেলে ছেলেদের দেখাশোনা করেন এক যুবক, মঞ্জুনাথ। ইনিও সঙ্ঘের সর্বক্ষণের কর্মী। এছাড়া এক মহিলা আছেন রান্নার জন্য। মঞ্জুনাথ বেশ কড়া গোছের স্বল্পবাক মানুষ। হাফহাতা শার্ট আর খাঁকি হাফ প্যান্ট। খালি পায়ে থাকেন। কখনোই চটি বা জুতো ব্যবহার করেন না। ছেলেদের খাওয়া শেষ হলে আমরা খেলাম। ভাত, সব্জি, সম্বর ও দই। খাবার শুরুতে কষায়া দেওয়া হলো। দুধের সাথে কি সব জড়িবুটি দেওয়া। খেতে খারাপ না।
    খাওয়ার পর হোস্টেলের সামনে উঠোনে জমায়েৎ। ছেলেদের জন্য আনা নানান খেলার সরঞ্জাম, ভলিবল, নেট, ব্যাট-বল-উইকেট, বল ও সাইকেলের চাকা পাম্প করার সরঞ্জাম এমনি নানান জিনিস ওদের হাতে তুলে দেওয়া হলো। সব শেষে আবারও ত্রিপালজী কিছু বললেন। অনুবাদে আবারও রোমাঞ্চকর ঠেকলো। পড়াশোনা, খেলাধূলা, ভারতীয় ঐতিহ্য এসবের সাথে বললেন – তোমাদের বেদ পাঠ করতে হবে। কোন একটা শিক্ষাকেন্দ্র খোলা হয়েছে, সম্ভবতঃ প্রতি রাজ্যে একটি, যেখানে শুধু অব্রাহ্মণদের বেদ পড়ানো হবে। বললেন – বেদে কোথাও লেখা নেই যে অব্রাহ্মণ বেদ পড়তে পারবে না। আরও বললেন – আদিবাসীরা ভারতের জনসংখ্যার দশ শতাংশ। খনি, বাঁধ এসবের কারনে সবচেয়ে বেশী তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। তাই তাদের আত্মিক বলে বলিয়ান হয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

    সকালে চা খেয়ে যাওয়া হলো একটি সিদ্দী বসতিতে। একটি সিদ্দী পরিবার এখানে বসত গড়েছেন প্রায় তিরিশ বছর আগে। এখন সে পরিবার বেড়ে চোদ্দটি ঘর। এরা কলা আর সুপারী চাষের সাথে গোপালন করেন।
    সিদ্দীরা দক্ষিন পূর্ব আফ্রিকা থেকে আসা মানুষ। কেউ বলে মুঘল-পাঠান আমলে এদেরই হাবশী বলা হতো। কারুর মতে সিদ্দীরা বান্টু জাতির মানুষ। হাবশীরা ইথিওপিয়া আবেসিনিয়ার মানুষ। সে তর্কে না গিয়েও এদের চেহারাতে, পুরু ঠোঁট, কোঁকড়ানো চুলে, আফ্রিকার ছাপ স্পষ্ট।
    আলাপ হলো রমণ সিদ্দীর সাথে। উনিই এদের মধ্যে বয়ঃজেষ্ঠ। উনিই ওনার পরিবার নিয়ে এখানে আসেন তিরিশ বছর আগে। তার আগে ওনারা অন্য কোথাও থাকতেন। ওনার বাবা অভাবের তাড়নায় জমি বাড়ি সব বেচে দেওয়ায় ওনারা সে জয়গা ছাড়তে বাধ্য হন। জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে এ জায়গাটি ভালো লাগায় এখানেই ঘর বাঁধেন। বনদপ্তর মৌখিক অনুমতি দিয়েছে মাত্র। ফলে বনদপ্তর এদের দিয়ে বিনিপয়সায় কাজ করায়। কলাটা দুধটা আদায় করে।
    এদের দেবস্থান দেখলাম। সেটা রমণের ঘরের ভিতরেই। একটা ছোট গাছের কান্ডের মতো, মাটি দিয়ে লেপা। এটি কি দেবতা জিজ্ঞাসা করে যে উত্তর এলো তাতে অনুবাদকও বেশ কিন্তু কিন্তু করে বললে – সাপ। সেও নিশ্চিত নয়। ওখানে অদ্ভুত একটা ফল খেলাম। এরা বললে কাজু। আমি তো জানতাম কাজু ফল খাওয়া যায় না। খেলে মুখে প্রচন্ড চুলকানী হয়। এ ফলটি দেখতে জামরুলের মতো, কিন্তু খুব নরম আর রসে ভরা। নুন দিয়ে খেতে হয়। একবারে পুরোটা মুখে পুরে চিবালে মুখ ভরে যায় রসে। মিষ্টি রস।

    ওখান থেকে হোস্টেলে ফিরে ইডলী দিয়ে প্রাতঃরাশ সেরে সিরসি। সেখানে দুপুরের খাওয়া সেরে ত্রিপালজী ও অন্য প্রচারকদের থেকে বিদায় নিয়ে বাস চললো ব্যাঙ্গালোর।

    সারা পথ নানান ভাবনা এলো। বার বার কেন যেন মনে আসছিলো মাওবাদীদের কথা। ওরা যে সব বিষয়কে ধরে আদিবাসীদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, সেই একই বিষয় নিয়ে এরাও আদিবাসীদের মধ্যে প্রভাব তৈরী করছে। সেই জঙ্গলের অধিকার, সেই খনি, বাঁধ বিরোধী অবস্থান, সেই উচ্ছিন্ন না হওয়ার দাবী......। মাওবাদীদের মতোই এরাও এইসব এলাকায় লেগে পড়ে আছে সর্বক্ষণ।
    এরা ইস্কুল চালাচ্ছে, হোস্টেলে রেখে পড়াচ্ছে, সবটাই বিনিপয়সায়। তার সাথে এদের সাংষ্কৃতিক বৈশিষ্টকে রক্ষা করা এবং তারই সাথে গীতা-বেদ শিক্ষা – অব্রাহ্মণদের, আদিবাসীদের। তফাৎ, মাওবাদীদের মতো রাষ্ট্রবিরোধী কর্মসূচী না থাকায়, রাষ্ট্রের তাড়া খাওয়া নেই।

    সামনে হয়তো কঠিনতর দিন আসছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৮ মার্চ ২০১৬ | ২০৮৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • dd | 116.51.225.209 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৪:৫০56937
  • কল্লোলের লেখাটা ভাল্লগলো,যদিও "সামনে হয়তো কঠিনতর দিন আসছে" - এই কনক্লুসনটা বুঝলাম না।

    যদি ধর্ম শিক্ষা দেয়, বেদ ফেদ পড়িয়ে - তো ক্ষতি কই? লাখো মাদ্রাসায় আর কেরেস্তান স্কুলগুলিতে ধর্ম শিক্ষা দেয়। অসুবিধে কোথায়? আমার মে'রা চিরকাল খ্রীষ্টান স্কুলে,কালেজে পড়ে এলো। হুলিয়ে খ্রীষ্টান ধর্ম শিক্ষা পেয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে ক্রীষ্টান মতে অনুষ্ঠান হয়েছে। কেউই কনভার্টেড হয় নি।

    হ্যাঁ। এর সাথে জোরদার সাম্প্রদায়িকতা হিংসা এইসব শেখালে অন্য কথা। কিন্তু সে কথা তো কও নি। তাহলে?

    আর বাইগটরি তো সব সম্প্রদায়েই আছে - বিশেষতঃ খাওয়া দাওয়ার ট্যাবু নিয়ে। সে সব আমারো অপছন্দের কিন্তু সামনে কঠিনতর দিনের ভয় কোথায় পেলে?
  • hu | 108.228.61.183 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৫:৩০56938
  • খুবই ইন্টারেস্টিং। শিক্ষার কি কোন জাতধর্ম হয়? তাহলে ভয় কিসের? আর হিন্দুধর্মও যদি এভাবে কিছুটা রিফর্মড হয় - তাহলেই বা কিসের আপত্তি? হতে পারে এভাবে শিক্ষিত প্রথম প্রজন্ম ব্রেইনওয়াশড হবে। কিন্তু পরের প্রজন্ম হয়তো সেটা হবে না। আর খেয়েপড়ে বাঁচার মূল্য যেকোন সংস্কৃতি রক্ষার চেয়েই বেশি মনে হয়। ধর্ম জিনিসটাকে মানুষ এত ভালোবাসে - ওটাকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে মনে হয় মানুষের কাছে পৌঁছানো যাবে না।
  • রৌহিন | 113.42.126.227 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৬:২৮56939
  • আসলে আমার মনে হয় না নিরেট ভালো বা খারাপ, সাদা বা কালোয় এসবের বিচার করা যাবে। সব ধর্মই, যখন নিজেকে লোকায়তের মধ্যে আনে, তখন তার একটা সৌম্য, কল্যাণকর রূপ দেখতে পাই। আবার সেই ধর্মই ক্রমশঃ প্রাতিষ্ঠানিকতার দিকে ঘেঁষে, আর তার নখদন্ত বেরিয়ে আসতে থাকে। আর এস এস ভারতের বহু অংশে লোকশিক্ষা, দলিতদের অধিকার, অরণ্যের অধিকার এসবের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মের বিস্তারের কর্মসূচী পালন করে থাকে - তার মধ্যে অনেকেই সেটা আন্তরিক বিশ্বাসের সাথেও করে থাকেন। সে এমনিতে মন্দ কিছু নয়। কিন্তু ওই যে কল্লোলদা যেটা বললেন, রাষ্ট্র বা সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেবার একটা সুক্ষ্ম শিক্ষাও সেই সংগে চলতেই থাকে - এটাই মাওবাদীদের সংগে আর এস এসের মূল তফাৎ। এবং এটা দু এক প্রজন্মের পরে ফিকে হয়ে আসবে না বলেই আমার আশঙ্কা - বরং আরো বেশী করে মনের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা চারিয়ে যাবে যে এইটাই, একমাত্র এইটাই আমাদের ঐতিহ্য। "কঠিনতর দিন আসছে" - এটা সম্পূর্ণ সমর্থন করলাম।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৬:৩৯56927
  • মাওবাদীরা কি ইস্কুল বা হোস্টেল চালাতে পারবে? সেখানে কিন্তু আরেসেস এর জিত।
    টই বেলাইন করব না, কিন্তু কাজু ফল আমিও খেয়েছি। কোনার্কে। হুবহু কল্লোলদা-র এক্সপিরিয়েন্স।
  • b | 24.139.196.6 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৬:৪৩56940
  • "আমার মে'রা চিরকাল খ্রীষ্টান স্কুলে,কালেজে পড়ে এলো। হুলিয়ে খ্রীষ্টান ধর্ম শিক্ষা পেয়েছে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে ক্রীষ্টান মতে অনুষ্ঠান হয়েছে। কেউই কনভার্টেড হয় নি।"
    এই উক্তির লেখকের আর ঐ উত্তর কর্ণাটকের গরীব সব হারানো আদিবাসীর ছেলে মেয়ে, ফার্স্ট টাইম লার্নার হয়তোঃ পারিবারিক/বৌদ্ধিক/অর্থনৈতিক পরিমন্ডল এই দুটো এক তো?
    (অন্য পয়েন্টগুলোতে একমত কিম্বা কোনো মত নেই)।
  • pi | 174.100.1.222 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৭:০৭56928
  • কল্লোলদা, ভাল লাগলো লেখাটা। এগুলো সত্যিই ভাবায়।
    অনেক জায়গাতেই কাজ করতে গিয়ে দেখেছি বা যা শুনেছি তাতে মনে হয়েছে, বাঃ, ভাল কাজ, এগুলো তো এভাবেই দরকার ছিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কামড়ে পড়ে থেকে কাজ। পরে আর এস এস জেনে চমকে উঠেছি। মানে, প্রথমদিকে চমকাতাম।

    তবে, আরেকটা পার্থক্যও আছে।রাষ্ট্রবিরোধী কর্মসূচী না থাকা ছাড়াও। সাম্প্রদায়িকতার চাষবাসও হতে দেখেছি। মাইল্ডার ফর্মে হলেও।

    আর আরেকটা কথা বল, রাষ্ট্রবিরোধী না হয়ে নাহয় হয়ে গেল, কিন্তু এই জল, জঙ্গলের অধিকার নিয়ে সমর্থন বা এই সূত্রে প্রতিবাদ করতে গেলে তো সরকারের বিরোধিতা করতে হবে। সেটা করতে দেখেছো ?
  • কল্লোল | 111.63.222.83 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৭:৩৭56929
  • বি। সেটাই তো। মাওবাদীদের থেকে আরেসএসের সুবিধা।

    পাই। খোলাখুলিভাবে সাম্প্রদায়িকতার চাষ দেখিনি। কিন্তু ছোটদের মাথায় গীতা আর বেদই ভারতের ঐতিহ্য বলে ঢুকিয়ে দিলেই তো যথেষ্ট। অন্যদিকে আদিবাসীদের ধর্মকে, সংষ্কৃতিকে মান্যতা, দেওয়ার পাশে অব্রাহ্মণদের বেদ পড়ার অধিকারের কথা বলে আদিবাসীদের - অব্রাহ্মণদের মধ্যে, অর্থাৎ "বৃহত্তর হিন্দু সমাজ"এর মধ্যে কৌশলে ঢুকিয়ে নেওয়া। আর কি চাই?

    না, সরকার বিরোধীতা খোলাখুলি দেখিনি। সরকার নিয়ে কোন আহামরি ভাবও দেখিনি। ত্রিপালজীর ভাষণে কোথাও মোদী নেই। বরং সরকারের অংশ বনবিভাগের বিরোধীতা সোচ্চারে হয়েছে।
    সঙ্ঘ পরিবারও তো একরঙ্গা নয়। ওদের অনেকেই রাষ্ট্রের বেঁধে দেওয়া উন্নয়ন-এর সংজ্ঞা মানে না। বিজেপির শ্রমিক বিরোধী ও পুঁজিপতি তোষণ নীতি নিয়ে সরব।
    বিষয় আদৌ সরলরৈখিক নয়।
  • Debabrata Chakrabarty | 212.142.124.7 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৮:০৩56930
  • বাঃ কল্লোল দা অনেকদিন পরে আপনার লেখা পড়লাম , প্রায় জার্নালিস্টিক স্টাইল । আমি দু এক জন সঙ্ঘ প্রচারক কে জানি ,ছোট ব্যবসাদার কিন্তু সপ্তাহে দু দিন নদীয়া /বাংলাদেশ সীমান্তে ফুল টাইম প্রচারক । একটা মিশনারি উদ্যোগ কাজ করে । খবরে পড়লাম আর.এস.এস নাকি ৬০০০ শাখা বিস্তার করেছে এর মধ্যে ।
  • de | 69.185.236.52 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৮:১৫56931
  • ভালোই তো লাগলো - সংঘ পরিবারের মধ্যে থেকে এইরকম ভাবে কাজ করে যদি আদিবাসীদের শিক্ষিত করা যায়, তাতে ক্ষতি নেই তো! শিক্ষা এলে ভালোমন্দ বুঝে নেবার ক্ষমতা বাড়ে। সাম্প্রদায়িকতার ব্রেনোয়াশিং করা শক্ত হয় -
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৯:১৪56932
  • দারুণ তো। এভাবে কাজ করলে তো ভালই, খারাপ নয় তো!
  • কল্লোল | 111.63.71.158 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৯:৫৮56933
  • দে। শিক্ষা এলে কি কি হয় জানি না। তবে আমার সহযাত্রীরা (কোম্পানী সেক্রেটারী সমূহ) প্রচলিত অর্থে শিক্ষিতই। এদের একজন, ঘ্টনাচক্রে মহিলা, আমিষাশী বলে, তাকে যেমন বিরোধীতা সইতে হলো, সেটা বেশ উদ্ভট লাগলো। দোষের মধ্যে সে অন্ততঃ একটা খাওয়ায় আমিষ চেয়েছিলো। তাও খুবই কিন্তু কিন্তু করে। তাকে বলা হলো - তুমি যে কাজ দেবতার সামনে করতে পারো না, সে কাজ করা উচিৎ নয়। আমি না থাকতে পেরে বলি - আমাদের দেবতাদের পূজায় নিরামীষ উৎসর্গ করা হয়। তাতে তারা চুপ করলো বটে, তবে সেটা নেহাৎ আমার বয়সের কারনে ভদ্রতায়।
    সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যারা লাগায়, তারা কেউই বোধহয় "অশিক্ষিত" নয়।
  • কল্লোল | 111.63.71.158 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ১০:০৪56934
  • এঃ ছড়িয়েছি।
    আমাদের দেবতাদের পূজায় আমিষ উৎসর্গ করা হয়।
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ১০:০৫56935
  • "আমাদের দেবতাদের পূজায় আমীষ উৎসর্গ করা হয়। " তাইত?
  • sch | 132.160.114.140 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ১০:১১56936
  • কল্লোল-দা সেভাবে কখনোই "শিক্ষা" নিশ্চিত করা সম্ভব না। যুক্তিবাদী মুক্তমনা কিছু মালও আমার দেখা আছে যারা ব্যক্তি জীবনে নারী স্বাধীনতা বলতে কি বোঝেন। তথা কথিত অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি আমাদের নিরপেক্ষ হতে শেখায়?

    তবে এদের এই প্রচেষ্টা তো উড়িয়ে দেবার মতো না। এই আদিবাসীরা না খেতে পেয়ে বঞ্চিত হতে হতে সন্ত্রাশের রাস্তায় চলে যেত - তার চেয়ে কিছু অন্য রকম তো হচ্ছে। বেদ পড়তে পড়তে মনে অন্য প্রশ্নও তো আসতে পারে। সেই সমাজের বাঁধন ছেঁড়া নিমাই পণ্ডিতও প্রথম জীবনে বেদ গীতা পড়ে কাটিয়েছে।
  • hu | 108.228.61.183 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৬ ১০:৫৪56941
  • ঐতিহ্যের একটা একমাত্রিক বর্ণনা সব প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থাতেই থাকে। যদি সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত নাও হয় তাহলেও পারিপার্শ্বিক সমাজ সেই একমাত্রিকতা তৈরী করে দিতে পারে। সেকুলার শিক্ষা পেয়েও বহুমানুষই তার বাইরে যেতে পারেন না। আবার কেউ কেউ পারেন। লেখাপড়া কিছুটা শিখে গেলে আরো কয়েকটা বাইরের বই পড়ে নিজের চিন্তাভাবনার পরিধি বাড়ানোর সুযোগ হয়। নইলে কোন সিস্টেমে আর রাষ্ট্রবিরোধিতা শেখানো হয়!

    আরেকটা প্রশ্ন মনে জাগে কনভার্সান নিয়ে এত চিন্তা কিসের? এক ধর্ম থেকে আরেক ধর্মেই তো যাচ্ছে। চ্যালে'ণ্জটা হওয়া উচিত ধর্মহীন সমাজের। গরু যদি খু'ন্টেই বা'ধা রইল তাহলে কার খু'ন্টি তাতে অল্পই যায় আসে।
  • নির্মোহ | 229.64.72.253 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৬ ০১:২৪56942
  • dd বলেই দিয়েছেন প্রশ্ন টা । dd কে ক । গুরুর জনতার ছেলে মেয়েই তো এমন অনেক মিশনারী স্কুলে পড়ে যেখানে যিশুর মহিমা কীর্তন হয় , এতেও বিন্দুমাত্র অসুবিধা নেই , অনেকেই RKM স্টুডেন্ট , তাতে তাদের বড় হয়ে নাস্তিক হওয়া ও বামপন্থী হওয়া আটকে নেই । বনবাসী কল্যাণ আশ্রম বহু বছর ধরেই নীরবে কাজ করে ,আপনারা জানতেন না সেটাই আশ্চর্যের । যদি আদিবাসী বাচ্চা দের নিয়ে স্কুল চালায় , আদিবাসী সংস্কৃতি চর্চায় উত্সাহ দেয় ,খেতে দেয় আর তাতে ধর্মশিক্ষা ও দেয় তাতে ক্ষতি কি ?মারপিট করতে না উস্কালেই হলো । বনের অধিকার বনবাসীর , আদিবাসী ধর্ম কন্টিনিউ কর , বেদ পড়ার অধিকার অব্রাহ্মানের ও আছে - এটা যদি ছোটবেলা থেকে শেখানো হয় ভালো ই তো । বহু বিষয়ে সরকারের তীব্র বিরোধিতা করে -জঙ্গলের অধিকার , গাছ কাটা , পরিবেশ দূষণ , জেনেটিকালি মডিফাইড সীড । জমি বিল নিয়ে মোদী সরকার কেও তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে খোদ ঘরের ভিতরেই । বুঝি লেফ্টিস্ট দের হোলিয়ার দ্যান দাউ attitude ধাক্কা খাচ্ছে কিন্তু "কঠিনতর দিন" কেন ? "ভারত" রাষ্ট্র বিরোধী নয় বলে ? না কি মাওবাদী রা পেরে উঠবে না বলে ?
  • কল্লোল | 125.185.156.44 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৬ ০৩:৫৫56943
  • মিশনারী স্কুলে বা রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ে কারা সেকুলার বা বামপন্থী হয় সেটা এড়িয়ে গেলে ঠিক হবে না।
    আমাদের ঘরের ছেলে-মেয়েরা স্কুলের বাইরেও বহু কিছু শেখে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, নানান সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান ইঃ ইঃ। সেগুলোর প্রভাব অস্বীকার করলে ব্যাপারটা একপেশে হয়ে যাবে।
    আমি যাদের কথা লিখলাম, তাদের কাছে ইস্কুলের শিক্ষাটাই প্রধান। তারা যে সিনেমা দেখতে পায় (ডিশ টিভিতে, বিদ্যুত থাকলে) তাতেও প্রায় একই লাইনে গান গাওয়া হয় - ভারতীয় সংষ্কৃতি = হিন্দু সংষ্কৃতি। বেদ বা গীতা পড়ানোতে আমার কোন আপত্তি নাই। কিন্তু দুটো ব্যাপার মাথায় রাখুন - ১) বেদ বা গীতা হিন্দু ধর্মের গ্রন্থ বলে পড়ানো হচ্ছে না, ভারতীয় ঐতিহ্য বলে পড়ানো হচ্ছে। ২) আদৌ গীতা বা বেদ "পড়ানো" হচ্ছে না। শুধু মুখস্থ করানো হচ্ছে। কারন ইস্কুলে সংষ্কৃত পড়ানো হয় না।
    এমনকি তারা, যারা কোনকালেই হিন্দু নয়, তাদের অব্রাহ্মণ বর্গে ঢুকিয়ে বৃহত্তর হিন্দু সমাজের অংশ করে নেওয়ার চালাকিটিও ফেলনা নয়।
    ফলে খুব ধীর গতিতে নীরবে এই মেরুকরণ শুরু হয়েছে। সেটাই আমার কাছে সামনের কঠিনতর দিন বলে মনে হয়েছে।
  • de | 24.97.54.107 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৬ ০৫:১৭56944
  • বেদ বা গীতা ভারতীয় ঐতিহ্য বলে পড়ানো হলে ঠিকই আছে - ধর্মগ্রন্থের গাইডলাইন ব্যাপারটা থাকে না তাতে। সঙ্গে কোরান, ত্রিপিটক এইসবও পড়ানো হোক। আপনারই তো বন্ধুলোক কল্লোলদা, চেষ্টা করে দেখতে পারেন!

    সত্যি কথা বলতে, আরেসেস এরকম কাজ করে শুনে আমার কিন্তু ভালোই লাগলো - সারা জেবন ওই খাকি হাপ্প্যান্টদের অন্যচোখেই দেখেছি!

    আর আমিষাশী, নিরামিষাশীতে সেক্যুলার - নন-সেক্যুলার ভেদাভেদ নেই! ওই ব্যাপারে বামপন্থী নিরামিষাশীদেরও টেবিল ছেড়ে উঠে যেতে দেখেছি!
  • কল্লোল | 111.59.29.86 (*) | ১৯ মার্চ ২০১৬ ১০:৫৫56945
  • দে। আমার বলা না বলাতে কিছু এসে যাবে বলে মনে হয় না। কোরান বা ত্রিপিটক ভারতীয় ঐতিহ্য বলে মনে করলে সেসব পড়ানো হতো।
  • pi | 192.66.36.191 (*) | ২০ মার্চ ২০১৬ ০৫:১৫56949
  • অনির্বাণ মাইতির এই পোস্টটা এখানেও দিতে ইচ্ছে হল।

    'হাই দিস ইজ লাবন্য, আই নিড টু টক টু ইউ ।
    এরকম একটা মেসেজ কারো মোবাইলের পর্দায় ভেসে উঠলে কোন পুরুষ মাইনষের ক্ষমতায় কুলায় সেটা কে ইগনোর করে? একদম ঠিক ধরেছেন আমিও করি নি। প্রত্যুত্তরে হেলো লিখে ছেড়ে দিলাম। আশা করেছিলাম মহিলা যখন খুব কাঁচা খিস্তি দেবেনা হয়তো। ও হ্যাঁ ঐ শিবারাত্রির পরের ঘটনাই বলছি। যাই হোক এরপর আবার মেসেজ এলো, ঘটনার সারসংক্ষেপে যাই, মেয়েটি হায়দ্রাবাদে থাকে একটি চাকরি করে, বাবা নেই, মাকে নিয়েই থাকে । এবং এও জানালো সে আর এস এস এর একজন সক্রিয় সদস্য। এটা শোনার পর আমি হাতা গোটাতে শুরু করেই দিয়েছিলাম। কিন্তু বাধ সাধল মেয়েটির পরের মেসেজটি। ও লিখল সারাদিন উপোষ করে তোমার পোস্টটা দেখে আমি কষ্ট পেয়েছি , আমি ভাবতে পারি না একজন মানুষ এত অবিশ্বাসী হয় কি করে ? আমি একটু ঝটকা খেলাম। সত্যিই তো নিজেকে ওর জায়গায় বসিয়ে যদি ভাবা যায় তবে তো খারাপ লাগার ই কথা। আমি বললাম
    "আমরা বাঙালিরা একটু উদারমনস্ক হই। আমরা স্বভাব নাস্তিক, যারা পুজো আর্চা করেন তারাও বিশেষ গোঁড়া নন। এবং সর্বোপরি বাঙালির রসবোধ সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত। তুমি একটি গোঁড়া ব্রাহ্মন পরিবারের মেয়ে আমি বুঝছি এটা তোমার পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। তাই তোমার খারাপ লেগে থাকলে আমারো সেটা খারাপ লেগেছে। তুমি কিছু মনে রেখো না, আমি চেষ্টা করব এমন কোন পোস্ট না করতে, যাতে তোমায় এরকম কষ্ট পেতে হয়। "
    এতটা শুনে মেয়েটি শান্ত হল। তারপর এও জানালো যে আমায় ও ভেবেছিলো একজন মনস্টার। আমায় দুটো কথা শোনানোর লোভ ও সামলাতে পারছিল না, শুনিয়েই ও আমায় ব্লক করে দিত। কিন্তু কথা বলার পর ওর মনে হচ্ছে আমি কোন ভালো মনস্টার grin emoticon যে খারাপ পথে চলে গেছি। আচ্ছা মা চল তাই সই। আমি ভালো মনস্টার। তো ভালো মনস্টার হলেও আমার উদ্দেশ্য নেহাত ভালো না। তাই কথা এগোলাম রাজনীতির কথা খুব শ্লথ গতিতে ঢুকতে থাকল। ও আমার কাছে জানতে চাইল মার্কসবাদের মত এক ইউটোপিয়ায় কেন আমি বিশ্বাস করি? আমি আমার মত করে ওকে বোঝালাম। সে শুনে আমাকে উড়িয়ে দিলো। কিভাবে মোদী ভারত কে পালটাতে পারেন সে সম্বন্ধে আমাকে অনেক্ষন বোঝালো। আমিও কাউন্টার করলাম এসব নিয়ে প্রথম রাতটা বেশ হৃদ্যতার সাথেই শেষ হল।
    দ্বিতীয় দিন ঘুম ভেঙেই আমি বেশ চমকে গেলাম। একটা ছোট্ট মেসেজ এসছে "আমি ম্যাক্সিম গোর্কির মা পড়তে চাই।"এই আমার ই মেইল আইডি এখানে পাঠিও" । চুপিচুপি মনে মনে একটু হেসে নিলাম। আমার কাছে ইস্পাত এর প্রথম খন্ডটাও ছিলো ওটাও পাঠিয়ে দিলাম। তারপর আবার রাতে আমায় ধরল। জিজ্ঞেস করল আমি কোনদিন ইস্তেহার বিলি করেছি কিনা। সেই ইস্তেহারে কি লেখা থাকে ? দেশের বিরুদ্ধে কিছু লেখা থাকে কিনা ? আমি বললাম "যে ইস্তেহারে মানুষের পক্ষের কথা লেখা থাকে। সেটা দেশের বিরুদ্ধে কি কখনো হতে পারে লাবন্য ? " একটা ছোট্ট উত্তর এলো "না" আমিও তাই বলছি। তারপর আবার দুদিন চুপ। আমিও ঘাঁটাই নি পড়ছে পড়ুক। দুদিন পর সকালে আবার চমক । যার জন্য এই স্টেটাসটা লিখতে বসতেই হল।
    "মনস্টার আমার কিছু ব্যাক্তিগত কথা ছিলো শেয়ার করতে পারি ?"
    "বল"
    "তুমি তো জানই আমি গোঁড়া ব্রাহ্মন পরিবারের মেয়ে, অন্য জাতে বিয়ে আমাদের সমাজে হয় না। আমার এক দাদা একটি নীচু জাতের মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। আমি এই প্রথমবার পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে দাদার পক্ষে দাঁড়াতে চাই। "
    সত্যি বলছি আমার গায়ে কাঁটা দিলো পড়ে। জিজ্ঞেস করলাম
    "সে দাঁড়াতেই পারো । কিন্তু তুমি এগুলো আমায় কেন বলছ লাবন্য ? আমার কাছে কি কোন সাহায্য চাও ? আমি তো এত দূর থেকে কিছুই করতে পারব না। "
    বলল "না, আসলে কাকে বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাত মনে পড়ল তোমার কথা। তুমি তো মার্কসিস্ট। আমি শুনেছি তোমরা এসব মানো না, তাই মনে হল তোমাকে বললে যদি তুমি আমায় সাহস দিতে পারো। আমার সমাজে এটা অপরাধ। আর এর বিরুদ্ধে যাওয়া মানে আমি একা হয়ে যাব "
    আমার চোখে জল এসে গিয়েছিলো। লিখলাম
    "তুমি ঠিক শুনেছো লাবন্য, আমরা কোন জাতপাত মানি না, আমরা একটা জাতপাত, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেনীবিহীন সমাজের কথা বলি। আমার খুব গর্ব হচ্ছে তোমায় নিয়ে । তুমি আমার বন্ধু। আমি জানি এই লড়াইটা কঠিন, লড়াইটা জিতবে কি হারবে তা আমি জানি না। কিন্তু অনেকদুর থেকে তোমার এই বন্ধু তোমার জন্য গর্বিত হবে । তোমায় নিয়ে লিখবে যে তুমি একটা লড়াই করেছিলে "
    আজ সকালে ব্রহ্ম মূহুর্তে ওর দাদার বিয়ে হয়েছে একটি আদিবাসী মেয়ের সাথে। লাবন্য নিজে দাঁড়িয়ে থেকে বিয়ে শুধু দেয় নি, ওর পরিবারকে রাজিও করিয়েছে সেই বিয়েতে উপস্থিত থাকতে। সবাই থাকে নি, ওর অনেক আত্মীয় ওকে শাপশাপান্ত করেছে। ওকে একঘরে করার কথাও বলেছে ও তবু হেরে যায় নি। ওর মা নিজে উপস্থিত না থাকলেও মেয়েকে আশীর্বাদ করেছেন। আমাকে সেসব ছবি পাঠালো ও।
    ছবি গুলো দেখে আমি ওকে লিখলাম "প্রাউড অফ ইউ"
    উত্তর এলো "আমি এখনো একজন আর এস এস কর্মী, তুমি ভেবো না তুমি আমার ব্রেন ওয়াশ করতে পেরেছো"
    আমি কে তোমার ব্রেন ওয়াশ করার ? তোমার লড়াইটা অনেক কঠিন ছিলো লাবন্য। আমার পাশে অনেক লোক আছে তোমার পাশে শুধু তোমার ছায়া। তবু তুমি পেরেছো। আমার প্রাপ্তি শুধু একটাই যতই গালি দাও সমাজ বদলের কথা উঠলে , যে কোন বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উঠলেই যাদের কথা মাথায় আসে তারা মার্কসিস্ট। ভালো থেকো লাবন্য । সামনে আরো কঠিন লড়াই তোমার দাদার , তোমার বৌদির আর তোমার। আমার সমর্থন রইলো এক লড়াকু সঙ্ঘীর প্রতি । পালটে দাও এদেশের খোলনলচে। তারপর বল তুমি দেশপ্রেমিক ছিলে নাকি দেশদ্রোহী?
    *** এটা গল্প না বাস্তব। মেয়েটি চায় না তার কথা সবাই জানুক। কারণ এখন অনেকদিন ওকে কঠিন যুদ্ধ করতে হবে গোটা সমাজের সাথে। তবু ও পালটাতে চায় এই অন্ধকার সমাজ ব্যবস্থাকে। ওর পাশে দাঁড়াতেই ওর নাম প্রকাশ করলাম না। যেদিন ও চাইবে সেদিনই ওর নাম সামনে আনব।'
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ২০ মার্চ ২০১৬ ০৮:২৭56946
  • তাহলে শৈশবের শিক্ষায়, বাড়ীর শিক্ষায়ও কিছু এসে যায়!
  • san | 113.245.14.101 (*) | ২০ মার্চ ২০১৬ ০৯:২৩56947
  • ভাল লাগল লেখাটা।
  • কল্লোল | 125.242.131.253 (*) | ২১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪০56950
  • অনির্বানের পোস্টটা আমারও খুব ভলো লেগেছে।
    লোকে কেন কোন সংগঠনের সাথে জড়ায়, তার নানা কারন থাকতে পরে। এটা জরুরী নয় যে সেই সংগঠনের আদর্শ ভালোবেসে কেউ তাতে যোগ দিচ্ছে। ঐ সংগঠনের ঐ অঞ্চলের কাউকে ভলো লেগে সেই সংগঠনে যোগ দিতেই পারে কেউ। বা ঐ অঞ্চলে সেই সংগঠনের কাজের ভিত্তিতেও যোগ দিতে পারে কেউ।লাবন্যের ক্থা পড়ে কেউ আরএসএসে যোগ দিতে চাইতেই পারে। যোগ দেয় অনেকেই অনেক কারনে, পরে অনেকে ছেড়েও দেয় নানা কারনে। সদস্যদের জায়গা থেকে কোন সংগঠনই খুব একরঙ্গা নয়।

    অনির্বানের পোস্টটার অরেকটা মজার দিক হলো - লাবন্য আর অনির্বান দুজনেই শিখেছে আরএসএস বা নাস্তিক মানেই "মনস্টার" নয়। দুজনেই শিখছে - এতোসব সত্ত্বেও বন্ধু হওয়া যায়।
    সহিষ্ণুতা।
  • aranya | 154.160.130.93 (*) | ২১ মার্চ ২০১৬ ০৭:০৭56951
  • বড় ভাল লাগল, অনির্বাণের পোস্ট।

    যতই কঠিন হোক, আলোচনার দরজা খোলা থাকাটা খুবই দরকার
  • শিবাংশু | 127.201.151.119 (*) | ২১ মার্চ ২০১৬ ০৮:৫৬56952
  • লেখাটা আজ পড়লুম।

    অস্তি নাস্তির প্রশ্নটি বড্ডো আপেক্ষিক। মানুষ গোষ্ঠীর আবহে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। অনেকটা বিগ্রহপূজার মতো ব্যাপার। আকার বা নিরাকার, বিগ্রহের বাইরে তো কাউকে যেতে দেখিনা। কাঠ-পাথর বা দিগন্তরের কল্পনা, সবই বিগ্রহ হতে পারে। বেদপুরাণ বা বাইবেল বা বিনয়পিটক, সবই বিগ্রহ। এমন কি মার্ক্স-লেনিন।
    -------------
    আমার যে পরিমাণ উত্তরভারতের গ্রামগঞ্জ দেখা আছে, সব জায়গাতেই অস্তির প্রতি আনুগত্য দেখেছি। কারণ ওটাই ঘটনা, ব্যতিক্রম নয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বিহারে গঙ্গার উত্তরে বেগুসরাই-বরৌনি বেল্ট বা পলামুর লাতেহার- চাতরা-হান্টারগঞ্জ, অথবা আমাদের দক্ষিণ সিংভূম, এসবই 'দাগী' লালঝান্ডার দেশ। পুরোনো পাথরের তৈরি গির্জা, সঙ্গে ইশকুল অথবা দেওয়ালে রাণাপ্রতাপ, শিবাজিমহারাজের ছবি আঁকা সরস্বতী শিশুমন্দির চারদিকেই চোখে পড়ে। আদিবাসিদের এসবে বিশেষ হেরফের দেখিনা। তাদের 'সংস্কৃতি'র স্বরূপটা আলাদা। শহরের লোকের ফ্যাসিজমের ধারণা, তাদের সঙ্গে বিশেষ মেলেনা। সেটা সরস্বতী শিশু মন্দিরের খাদি ধুতিকুর্তাপরা, কপালে তিলক শিক্ষকরা বা মাঝে মাঝে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে দু'য়েকজনকে 'গুপ্তচর' সন্দেহে কোতল করা, ক্বচিৎ পুলিশ নয় ভোটপার্টিকে অ্যাম্বুশ করা বন্দুকধারী দঙ্গল, তাদের কেউই কিছু 'বোঝাতে' পারেনা।
    ---------------------------
    'ধর্মান্তর' করানোর যে সব অভিযোগ আমরা শুনি সেগুলি কিন্তু মূলত আসে সেবাব্রতী সাধুসন্ন্যাসিদের থেকে। দারা সিং বা বজরঙ্গী জাতীয় প্রাণীরা মাধ্যমমাত্র। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানি এদেশে ফাঁকিটা কোথায়? 'বেদপুরাণ' বা অন্য পুথিপত্র ক'জন গেরুয়াপার্টি আদৌ পড়েছে। যারা দাবি করে 'পড়েছি', তারা অধিকাংশই অগভীর, মূর্খ, রক্ষণশীল, দিশাহারা মানুষ। নিজেদের উদ্দেশ্যসাধনের জন্য খামচা খামচা এদিকওদিক থেকে কোটেশন মুখস্থ করে মানুষ খ্যাপায়। আমাদের যাবতীয় স্ক্রিপচার হাজার হাজার বছর ধরে নানা আর্থসামাজিক পরিবেশে, ইতিহাসের নানা চোরাস্রোতে ডুবেভেসে, হাজার হাজার মানুষ নিজের মতো ইচ্ছে মতো লিখে রেখে গেছে। সেখানে 'দৈবী পবিত্রতা'র প্রত্যাশাটিই হাস্যকর। কিন্তু এই মূহুর্তে এই লোকগুলি রাজশক্তির মুখপাত্র। তারা মানুষের বাস্তব ইতিহাসে বিশ্বাস করেনা। কল্পনার দৈবী ইতিহাসে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আদিবাসী, বনবাসী বা নগরবাসী, মানুষ যাই হোক না কেন, শুধু বেদপুরাণ মুখস্থ করে 'পবিত্র' হতে পারেনা। কিন্তু রাজনীতিকদের জন্য এদেশে এর থেকে প্রকৃষ্ট মেড-ইজি আর নেই।
    --------------------------
    বিপদটা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মান্তরে নেই, আছে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতান্তরে । সবাই জানে রাজা উলঙ্গ। কিন্তু সবাই বলে শাবাস, শাবাস...
  • de | 24.139.119.173 (*) | ২১ মার্চ ২০১৬ ০৯:৫৬56953
  • অনির্বাণের পোস্টটা কি ভালো!
  • কল্লোল | 111.63.92.79 (*) | ২২ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৮56954
  • গতকাল রমেশের কাছে গেছিলাম অন্য কাজে। কথায় কথায় ওকে পরামর্শ দিয়ে এলুম ত্রিপিট্ক পড়াতে। ঐ এলাকায় তিব্বতী বৌদ্ধদের বসতি আছে, দরকার হলে ওরা সাহায্য করতে পরে, তাও বলে এলাম। ঐ সূত্রেই কথ হলো ভারতের সুফী ঐতিহ্য নিয়ে। উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ ও আলি আকবর খাঁএর সরস্বতী পূজো নিয়ে, বড়ে গুলাম আলির আয়ে না বালম নিয়ে, য়েশুদাসের ভজন নিয়ে।
    দেখা যাক।
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ২২ মার্চ ২০১৬ ০৪:৪০56955
  • ধর্মান্তর করাবার জন্য তো আমার এখানে প্রায় রোজ বিরক্ত করে। গতকাল দুপুরেই এসেছিল। বিধর্মী পদবী দেখলেই বেল বাজায়। ওরা সব স্বেচ্ছাসেবী এবং ইংরিজি বলতে পারে এবং টোটাল ব্রেইন ওয়াশড। দেখলে দুঃখ লাগে। রাস্তায় ধরলে এড়িয়ে যাওয়া সহজ, কিন্তু বেল বাজিয়ে বাড়ীতে ঢুকে পড়লে তাড়িয়ে দিতে খারাপ লাগে, কিন্তু না তাড়ালে কিছুতেই বেরোবে না। খুব কষ্ট করে করে লোক খুঁজে খুঁজে ধর্মান্তরিত করবার চেষ্টা করে চলেছে। এদিকে শহরের দিকগুলোয় লোকেরা প্রতিনিয়ত ধর্মত্যাগ করে চলেছে আর্থিক কারণে। ধর্ম মানেই একগাদা অতিরিক্ত ট্যাক্স কেটে নেওয়া।
  • সে | 198.155.168.109 (*) | ২২ মার্চ ২০১৬ ০৪:৪৪56956
  • "আমার প্রাপ্তি শুধু একটাই যতই গালি দাও সমাজ বদলের কথা উঠলে , যে কোন বৈপ্লবিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উঠলেই যাদের কথা মাথায় আসে তারা মার্কসিস্ট।" - এই জায়গাটা পছন্দ হলো না।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন