এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সুগার, সুগার - তোমা বিহনে কেউ কি ক্ল্যাসিক্যাল ?

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ জুলাই ২০১৫ | ২৯০৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে এবং সেখানকার ছোট, বড় ও ধাবা টাইপের রেষ্টুরাণ্ট, কফি শপ, প্যাটিসারী ইত্যাদি জায়গায় খেয়ে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে ভারতবর্ষে আমরা অনেক জটিল খাবার দাবার (যেমন কাঙালী ভোজনের খিচুরী, বিধবা ঠাকুমা-পিসিমাদের হাতে রান্না শুক্ত ইত্যাদি) আবিষ্কার করলেও আপাত সহজ দুটি জিনিস একেবারেই আমরা বানাতে পারি না - চীজ্‌ ও রুটি। আজ্ঞে না, চীজ্‌ ও পনীর এক জিনিস নয়। চীজ্‌কে পনীর বলা, একজন চীনাকে জাপানী বলে সনাক্ত করার মতনি ভ্রান্তিকর প্রায়। চীজ্‌ তৈরীর ইতিহাসে যে তিনটি দেশের নাম সর্বপ্রথম মনে আসে সেগুলি হল ফ্রান্স, হ্ল্যাণ্ড ও ইতালী। তাছাড়া জার্মানী ও সুইজারল্যাণ্ডও আছে কাছাকাছি। রুটি ব্যাপারটা কিন্তু আরও সেনসেটিভ - আমার ইউরোপীয়ান বন্ধুদের দেখেছি একেবারে পাশের দেশেতে গিয়েও রুটি সংক্রান্ত অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে। চীজ্‌ যেই দেশগুলি ভালো বানায় তারাই আবার ঐতিহাসিক ভাবে রুটির কারিগরও ছিল। রুটি ও চীজের তুল্যমূল্য আলোচনা অন্য কোন এক পর্বে।

    আমাদের বাঙালীদের মধ্যে আবার জমাট বাধাঁ ছানাকে পনীর বলে চালানোর এক টেণ্ডেন্সী আছে। ছানার সঠিক কোন ইংরাজী প্রতিশব্দ নেই - ইংল্যাণ্ডে ‘কটেজ চীজ’ বলে এক জিনিস পাওয়া যায় যা প্রায় ছানার কাছাকাছি। তবে ওই - এরা সব এক ফ্যামেলীর হলেও প্রত্যেকে স্বতন্ত্র। আমরা অনেক সময় ছানাকে cash বলি। অন্ততঃ আমাদের ছোটবেলায় যে ট্রেনে করে আমরা স্কুলে যেতাম তার নাম ছিল cash train। বর্ধমানে ১০টা নাগাদ ছেড়ে আমাদের স্টেশনে আসত সাড়ে দশটা নাগাদ। তা সেই ক্যাস গাড়ির প্রেডিক্টেবল ব্যাপার একটাই ছিল - উহা প্রতিদিনই লেট করত। শক্তিগড় থেকে অন্ততঃ পাণ্ডুয়া পর্যন্ত ওই ট্রেনের ভেণ্ডার কম্পার্টমেণ্টে দেদার ছানা উঠত। ছানা এক জটিল জিনিস - ছানাকে কেন্দ্র করে যে সমাজব্যবস্থা ঘূর্ণায়মান তা যেমনই চমকপ্রদ আবার অনেক সময় তেমনই বিভ্রান্তিকর। আমাদের বাঙলা সাহিত্যে শুধুমাত্র ‘গোয়ালা’ উল্লেখ করেই আমরা খালাস। অমল ও দইওয়ালা - ব্যাস, এর বাইরে বিশেষ কিছু নেই! আমরা কৃষ্ণকে বাঙালী বানিয়ে, আয়ান ঘোষকে তার মামা টাইপের সম্পর্কভুক্ত করেছি - অথচ কৃষ্ণ ব্যবহৃত প্রোডাক্টগুলি সেই ননী ও মাখনেই রেখে দিয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে খুব কম ‘ঘোষের’ বাচ্ছাই ননী বা মাখন নিয়ে কারবার করে, তাদের মূলত কারবার ‘ছানা’ নিয়ে।
    ছানা একান্তই বাঙালী বস্তু - এবং ছানাজাত বাই-প্রোডাক্টরা ততোধিক বাঙালীত্বে ভরপুর। আজকাল হলদিরাম, ঝুনঝুনওয়ালারা এসে মার্কেটে ক্ষীরের মিষ্টিতে ভরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাই দিয়ে বাঙালী আত্মাকে স্পর্শ করতে চাওয়া ঘোল খেয়ে দুধের স্বাদ মেটানোর মত।

    সৌভাগ্যবশতঃ আমাদের মেমারী স্টেশনবাজারে এখনও ক্ষীরের মিষ্টির প্রাদুভার্ব খুব বেশী একটা ঘটে নি - আমরা এখনও আদি, অকৃত্রিম ছানার মিষ্টি খেয়েই মানুষ হচ্ছি। এক কিলো ছানা তৈরী করতে তিন থেকে চার কিলো মত দুধ লাগে। ছানা দুইপ্রকার - জলছানা ও জাঁকছানা। ক্যাসট্রেন বড়বাজারের ছানাপট্টিতে যে ছানা উগড়ে দিত তা ছিল জলছানা। অর্থাৎ বাঁশের টুকরীতে সাদা কাপড়ে বাঁধা ছানা জলে ডোবানো অবস্থায় আনা হত। ছানা পট্টিতে সেই ছানার জল বাড় করা হত। এক কিলো জল ছানা থেকে জাঁকছানা বেরোত ৬৫০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম। এই জল বেরনো ব্যাপারটা ইনফিনিটি সিরিজের মত কাল্পনিক ও দার্শনিক। কেমন ভাবে জল বার করা হবে - কত ওজন চাপানো হবে সেই কাপড়ে বাঁধা ছানার উপর - কতক্ষণ রাখা হবে এইসব। আসলে অলিখিত নিয়মানুসারে কোন এক সময় জল নিষ্পেশন থামানো হত এবং মিউচ্যুয়াল আন্ডারস্ট্যাণ্ডিংয়ে ৭০০ গ্রাম করে কিলোতে জাঁকছানা দাঁড়ালেই ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই সাধারাণত খুশী জ্ঞাপন করত।

    মেমারী স্টেশনবাজারের খুব কাছেই এক ছানা পট্টী ছিল। তাই মেমারীর মিষ্টির দোকানগুলি প্রায়শঃই এ-গ্রেড ছানা নিয়ে কারবার করত। তাছাড়া অনেক মিষ্টির দোকানে ডাইরেক্ট গোয়ালারা মাল ডেলীভারী দিত। আমাদের দিকে এই দোকানে ডেলিভারী দেওয়া গোয়ালারা আসত ‘উত্তরের’ দিক থেকে। উত্তর অর্থে দামোদর নদীর রেফারেন্সে উত্তর বলেই আমার মনে হত।একটু আনস্মার্ট টাইপের হলেই আমরা বলতাম ‘উত্তরের’ ভূত। অবশ্য পৃথিবী গোলাকার তাই আনস্মার্ট আমাদের দেখে খোদ কোলকাতার লোকেরা কি বলত আমরা জানতাম না। যাইহোক উত্তরের গোয়ালারা মালডাঙ্গা, মালম্বা ইত্যাদি লাইনের বাসের ছাতের মাথায় ছানা চাপিয়ে নিয়ে আসত মেমারিতে। এখানেও সেই শ্রেণীবিভাগ - ট্রেনে আসা গোয়ালাদের মার্কেট ভ্যালু, বাসে করে আসা গোয়ালাদের থেকে বেশি ছিল। আর তা ছাড়া ছানা এ্যাপ্রোচটাও একটু আলাদা। ট্রেনের ভেণ্ডারে বাঁশের টুকরীগুলো বসানো থাকত মেঝেতে, কিন্তু সেই একইভাবে তো আর বাসের মাথায় করে ছানা আনা যায় না! তাই বাসের মাথায় ছানা আসত টিনের ক্যানে করে - অনেকটা দুধের ক্যানের মত যেগুলি আপনারা সাধারনত রাস্তাঘাটে দেখে থাকেন।

    ছানা ডেলিভারী হয়ে যাবার পর গোয়ালারা তাদের খালি ক্যানবা বালতি করে মাঝে মাঝে নিয়ে যেত তাদের তরকারী, স্টেশনারী বাজার বা গরুর খাবার। যেদিন যেমন গিন্নির কাছ থেকে ফরমাশ আসত আর কি! আমাদের দিকে চালু কথা ছিল এই যে গোয়ালাদের নাকি ৮০ বছর না হলে বুদ্ধি হয় না। এই প্রবাদের উৎস আমি জানি না - আর এই খাবার গল্পের সাথে তার খুব একটা যোগও নেই।

    এবার আসা যাক ছানা থেকে মিষ্টি তৈরীর ব্যাপারটায়। ক্ল্যাসিক্যাল মিষ্টীর দোকানে ভিয়েন হবে রাতের বেলায়। তাই আজও দিনের বেলায় দোকানে মিষ্টি তৈরীকে আমি T-20 খেলার সমগোত্রীয় বলেই মনে করি। পাবলিক খাচ্ছে (লিটারলী!), তাই মাল তৈরী হচ্ছে দিনের বেলায় - এর মধ্যে কোথায় যেন একটা আভিজাত্যের অভাব থেকে যায়। আর তা ছাড়া মিষ্টির জগতে আজকাল এক হৃদয় বিদারী ঘটনায় প্রচলন হয়েছে - তা হল ‘সুগার ফ্রী’ মিষ্টি! এই জাতীয় জিনিস আমদানিকে ‘সমাজসংস্কারক’ ইত্যাদি আখ্যা দেওয়া যেতে পারে - কিন্তু আদতে এই সব ব্যাপার প্রকৃত মিষ্টি ঐতিহ্যের বুকে ছুরি বসানোর চেষ্টার মত। অবশ্য আপনি অন্য ভাবেও নিতে পারেন যে - কতখানি মিষ্টি ভালোবাসলে সুগার ফ্রী মিষ্টি নিয়েও ভাবা যায়! রক্তে সুগার জমেছে? - তা মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দে, - কিন্তু সেটা বাঙালী পারে না, বা চায় না। নিকোটিন চুইংগামের মত, অ্যালকোহল ফ্রী বিয়ারের মত আমরা আমদানি করেছি সুগার ফ্রী মিষ্টি। আর তা ছাড়া মিষ্টি ঐতিহ্য এত ঠুনকো নয় - আজকালকার স্বাস্থ্য, বিউটি, কোলষ্টেরল সংক্রান্ত বহুজাতিক সংস্থার মুখে ছাই দিয়ে ২০০ মিটার অন্তর অন্তর আজও মিষ্টির দোকান বহাল তবিয়তে রমরমিয়ে চলছে।

    ক্ল্যাসিক্যাল বাঙালী মিষ্টি কি? দীনেশ সেন কি বাঙালীর ইতিহাসে আলাদা করে এই বিষয়ে কিছু লিখে গেছেন? জানি না - তবে আমার কাছে আর পাঁচটা বাঙালীর মতই রসগোল্লা, সন্দেশ এই সব ঠাঁই পাবে। রসগোল্লা কে সি দাশ বা নবীন ময়রা যেই আবিষ্কার করে থাকুন, শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অনেকদিন হল হস্তান্তরিত হয়েছে। আদি, অকৃত্রিম, আভিজাত্যে ভরপুর রসগোল্লা খেতে হলে আপনাকে যেতে হবে বর্ধমান জেলার জামালপুর টাউনে - তারকেশ্বরের কাছাকাছি। আমি বর্ধমানের ছেলে বলে আপনি ভাবতেই পারেন যে আমি হয়ত টেনে খেলাচ্ছি - কিন্তু জামালপুরের রসগোল্লা খেলে আর একবার বুঝতে পারতেন চিরন্তন সত্য বলে এই কলিযুগেও কিছু জিনিস হয়। ওই রসগোল্লা তেমনি এক জিনিস - আপনি অনেক কিছু স্ট্যাটিসটিক্স আনতে পারেন, কিন্তু বাকি জায়গার রসগোল্লা ওই রোনাল্ড হয়েই থেকে যাবে। রোনাল্ড (আর তর্কপ্রিয় ফুটবল লাভাররা) নিজেও জানবে সে বড়জোর সেকেন্ড বেষ্ট - জামালপুরের রসগোল্লা হল গিয়ে মেসি।

    মিষ্টির দোকান পর্যালোচনা করে আমি দেখেছি যে দোকানের পরিচ্ছন্নতার সাথে মিষ্টির স্বাদের একটা ইনভার্সলি প্রপরশোনাল সম্পর্ক আছে। দোকান নোংরা হলেই যে মিষ্টি ভালো হবে এমন নয়, তবে ভালো মিষ্টির দোকান প্রায়শঃই নোংরা হয়। অবশ্য এইখানে ক্লীয়ার করে রাখা দরকার যে দোকান বলতে আমি মিষ্টি তৈরীর জায়গা সমেত মিষ্টির শোকেসের কথা বলছি। আজকালকার ফ্যাশন অনুযায়ী শুধু মিষ্টির শোকেস দেখা যায় - প্রোডাক্ট তৈরী হচ্ছে চোখের আড়ালে! এটা আমার বিলকুল না পসন্দ। যে মিষ্টির দোকানগুলি ‘ফ্লাইং’ কাষ্টমারের উপর নির্ভর করে চলে (যেমন স্টেশন, বাসস্ট্যাণ্ড এদের পাশের দোকানগুলি) তাদের বেশীর ভাগেরই রসগোল্লা ইঁটের মত। রসগোল্লার অন্দরমহলে সুজির পুর বা ছানার সাথে ভেজাল বস্তু মিশিয়ে সেই রসগোল্লা তৈরী হত। আসল রসগোল্লা হতে হবে স্পঞ্জের মত, অর্থাৎ রসগোল্লাটিকে নিংড়ে রসমুক্ত করে তা পুনরায় রসে ফেললে সেটি পুনরায় টইটম্বুর গোলাকার হত আবার। এখনতো বিদেশে বসে হ্লদিরামের টিঞ্জাত রসগোল্লা খেয়ে দুইচোখ জলে ভারে ওঠে - সেই অশ্রু একইসাথে আনন্দের ও দুঃখের। আনন্দ এই জন্য যে বিদেশে বসেও রসগোল্লা পাচ্ছি (এবং বিদেশীরাও কিনছে), আর দুঃখ প্রবল হয় প্রিজারভেটিভে আক্রান্ত রসগোল্লার কুন্ঠির স্বাদ পেয়ে।

    কমলাভোগও আমাদের দিকে বেশ জনপ্রিয় ছিল - প্রথমদিকে প্রকৃত কমলার খোসা নিসৃত খুশবু তাতে মিশে থাকলেও পরেরদিকে সুগন্ধের জন্য পুরোপুরি ক্যামিক্যালের উপর নির্ভর করতে হত। আজকালকার যুগে এক অবলুপ্তপ্রায় মিষ্টির নাম লেডিগিনি। আমাদের মেমারী স্টেশন বাজারে অন্ততঃ লেডিগিনি আর পাওয়া যায় না। লেডিগিনি প্রসঙ্গে আমার পদাকাকার বলা একটা গল্পের কথা এই ফাঁকে বলে নিই - লেডিগিনি নামকরণ নাকি আসলে এসেছে লেডী ক্যানিং থেকে। লর্ড ক্যানিং-এর পত্নী নাকি কোন এক সময় ভারতে এসে জিলীপি খেয়ে খুবই ইমপ্রেসড হয়েছিলেন। এ্যাতো ভালোলেগেছিল যে তিনি ইংল্যাণ্ড থেকে কারিগর আনলেন জিলিপী তৈরী শিখে নেবার জন্য। তো লর্ড ক্যানিং-এর সময় শেষ হলে সব একসাথে জাহাজে করে বিদেশ ফিরলেন। আমার পদাকাকার মত অনুযায়ী সেই সমুদ্রযাত্রাকালীন জাহাজের দুলুনি এক কেলেঙ্কারী সৃষ্টি করেছিল - দোলার চোটে ইংরাজ কারিগর শুধু জিলিপীর রেসিপিটাতেই ভুল করে ফেলে নি - জিলিপীর প্যাঁচ দেবার পদ্ধতিটাও পুরোপুরি ভুলে যায়। জিলিপী তৈরীর সময় কারিগর সাধারণত উবু হয়ে (অর্থাৎ দেশীয় স্টাইলে হাগতে বসার মত) বসে আর হাতটা কড়াইয়ের উপর প্যাঁচ খাওয়ায়। তা সেই ইংরাজ কারিগরেরা ব্যাপারটা উলটো করে ফেলে - অর্থাৎ কড়াইয়ের উপর তাদের হাত স্থির থাকে আর পিছনটা নাড়াতে থাকে। এর ফলে যে বিচিত্র জিনিস জন্মায় তাই নাকি লেডিগিনি নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে পরবর্তীকালে। কিন্তু বিদেশে থেকে লেডিগিনি ভারতে আবার কি ভাবে ফিরে এল সে প্রসঙ্গে পদাকাকা নীরব (তবে আমার মনে হয় এই ব্যাপারে প্রথমযুগের আই।পি।এস অফিসারেরা এবং রবীন্দ্রনাথই দায়ী থাকলেও থাকলে পারেন)।

    লেডিগিনি ফ্যামিলির দুই একটা জিনিস অবশ্য আজও অবলুপ্ত হয় নি, যেমন ছানার জিলিপী, পান্তুয়া। আর ল্যাংচা তো বহাল তবিয়তে রমরমিয়ে ব্যাবসা করছে। অনেকে গোলাপজামুন ও পান্তুয়া এক শ্রেণীভুক্ত করে ফেলেন - এটা তো বিলকুল না-ইনসাফি। আমার মনে হয় সব মিষ্টিরই বিজ্ঞানসম্মত নাম থাকা উচিত যাতে প্রত্যেকে তাদের নিজস্বতা বজায় রাখতে পারে। যেমন রসগোল্লা - ফ্যাবুলস্‌ রসগোল্লোস্‌, পান্তুয়ার - ব্ল্যাকিস পান্তিস্‌, ল্যাংচা - শক্তিগড়স্‌ স্পেশালোসো ইত্যাদি। অবাঙালী অনুষ্ঠান বাড়িতে ব্যুফে সিষ্টেমে গোলাপজামুন খেয়ে যাঁরা ওকে পান্তুয়ার প্রথিস্থাপক ভাবছেন, তাঁরা আসলেই এক মহান ইল্যুশনের মধ্যে বাস করছেন। সত্যিকারের পান্তুয়া খেতে হলে আপনাকে শুঁড়ে কালনায় বোকা ময়রার দোকানে। বোকা ময়রার পান্তুয়া স্বর্গীয় বললে কম বলা হয় - ওই পান্তুয়া প্রচণ্ডভাবে সামাজিকও - বহু ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগিয়েছে, বহু রাগ ভাঙিয়েছে, বহু ইমপ্রবেবল বিয়ের রিস্তা আগে বাড়িয়েছে বোকা ময়রার এক হাড়িঁ পান্তুয়া।

    ল্যাংচা প্রসঙ্গে আমার কিছু স্বীকারোক্তি আছে - বহুকাল আগে বর্ধমানের শক্তিগড় রেলষ্টেশনের কাছ থেকে জি।টি। রোডটা সরে দূর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের সাথে জুড়ে যাবার সময় আমি ষ্টেশন সংলগ্ন ল্যাংচা ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু এখন যা দেখলাম তা প্রায় অবিশাস্য - সেই ল্যাংচা ব্যাবসা দূর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সার সার দোকান - ল্যাংচা মহল, ল্যাংচা কুঠী, ল্যাংচা ঘর, ল্যাংচা ভাণ্ডার, ল্যাংচা নিকেতেন ইত্যাদি ইত্যাদি এবং এদের প্রত্যেকের সাথে যুক্ত করুন তাদের আদি ভার্সেন গুলি - অর্থৎ আদি ল্যাংচা মহল ইত্যাদি... এই বার দেশে গিয়ে একদিন গেলাম শক্তিগড়ে ল্যাংচা খেতে - সৌরভ গাঙ্গুলির সার্টিফিকেট লাগানো এক দোকানে ঢুকলাম। অর্ডিনারী ৫ টাকা ও ক্ষীরের ল্যাংচা ১০ টাকা। খাবার পর বুঝলুম শক্তিগড় এখন নামেই কাটছে - ওর থেকে আমাদের মেমারী স্টেশন বাজারের ল্যাংচা অনেক ভালো। আর তা ছাড়া শক্তিগড়ের সবচেয়ে বড় ল্যাংচার দোকানের ম্যানেজার হচ্ছে আমাদের গ্রামেরই ছেলে, আমাদের ছোটবেলার ক্রিকেট টিমের মেম্বার। ফলে কারিগর সংক্রান্ত আমাদের কাছে অনেক তথ্য থাকে যা ওই পথ দিয়ে শান্তিনিকেতনগামী কলকাতাবাসী পাবলিকদের থাকে না। এই ফাঁকে সেই সব পাবলিকদের আরো কিছু টিপস দিয়ে রাখি - আপনারা শান্তিনিকেতন থেকে গাড়ী করে ফিরবেন ভালো কথা - শক্তিগড়ে ল্যাংচা কিনবেন ভালো সেও আপনার অভিরুচী - কিন্তু প্লীজ্‌ বর্ধমান শহরে এঁদোমেদো দোকান থেকে সীতাভোগ, মিহিদানা কিনবেন না। বর্ধমান শহরে গড়পড়তা মিষ্টির দোকানের রেপুটেশন বর্ধমানের মেহেদীবাগানের ডাক্তারদের মতই - জালি মালে ভর্তি। যদি সীতাভোগ বর্ধমান থেকে কিনতেই হয় তাহলে একটু কষ্ট করে তেঁতুলতলা বাজারে গিয়ে গণেশের দোকান থেকে কিনবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করে দিই - গণেশের দোকানটিও ক্ল্যাসিক্যাল ময়রার দোকানের ঐতিহ্য মেনে অপরিচ্ছন্ন!

    যদি দূর্গাপুর হাইওয়ে দিয়ে যাবার সময় আপনাদের কারো শক্তিগরের ল্যাঙচা খাবার শখ হয়, তাহলে একটু কষ্ট করে হরি ঘোষের দোকানটি খুঁজে নেবেন। ওই দোকানটি পরে হাইওয়ে থেকে যে রাস্তাটি ভেঙে শক্তিগড় স্টেশনের দিকে চলে গেছে, তার পাশে। সেই ল্যাঙচা খেয়ে আমাকে একটু আওয়াজ দেবেন।

    রসগোল্লা তৈরীতে প্রতি তিন কিলো জাঁক ছানা প্রতি প্রায় এক কিলো চিনি লাগে। আর এক কিলো ছানা থেকে রসগোল্লা তৈরী হতে পারে প্রায় ৬০ থেকে ৮০টি, অবশ্যই সাইজ অনুযায়ী। আমাদের ছোটবেলায় রসগোল্লা ওজন করে বিক্রী করা হত - তখন পাবলিক রসের রকমফের নিয়ে দোকানদারের সাথে ফ্রেণ্ডলী বচসা বাঁধাত। কোন এক কারণ বশতঃ কি ভাবে যে মেমারী অঞ্চলে ঠিক হল এক কিলো রসগোল্লা মানে সাকুল্যে ২২টি হবে তা এখনও আমার কাছে রহস্যের বিষয়। স্বভাবতঃই পাবলিক তখন রসগোল্লার সাইজ নিয়ে ঈষৎ আন-ফ্রেণ্ডলী টিপ্পনী কাটত ময়রাকে। যাইহোক সমাজ বিবর্তনের সাথে সাথে এখন পিস্‌ প্রতি মালের দামই ধরা হচ্ছে যদি না প্রোডাক্ট তরল, আধাতরল, জেলী জাতিয় বা গুঁড়া না হয়। এখনও সীতাভোগ, মাখা সন্দেশ, মিহিদানা, বোঁদে কিলো হিসাবেই বিক্রী হয়। তবে প্ল্যাষ্টিকের প্যাকেটের আমদানির সাথে সাথে মিষ্টি বহন ব্যবস্থা অত্যন্ত সুখপ্রদ হয়ে এলেও তার চার্মটা হারাতে লাগল। এটা নিশ্চয়ই পাঠকবৃন্দ মানবেন যে, যে এফেক্ট মাটির হাড়িঁ ভর্তি রসগোল্লা আনতে পারে, সেটা পলিপ্যাকের গর্ভস্থ্য ইলাস্টিক বন্দিত রসগোল্লা আনতে পারে না।

    বিশেষ করে আমাদের গ্রাম্য জীবনে এর একটা প্রভাব ছিল ডাইরেক্ট। আগে মাটির হাঁড়ি হাতে করে কুটুম্ববাড়ি আনাই রীতি ছিল - ফলে আমাদের ছেলে ছোকরাদের নজরে থাকত গ্রামে আত্মীয় স্বজনদের গতিবিধি। ধরুণ ক্রিকেট খেলছি মাঠে, দেখলাম কেউ একজন মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করছে। হাঁড়ির সাইজ বড় হলে, আমরা একটু এফর্ট দেবার জন্য প্রস্তুত হতাম। কাছে গিয়ে চট করে একটা প্রণাম, ব্যক্তির বয়স অনুযায়ী মেসোমশাই বা জামাইবাবু বা দাদু বলে সম্বোধন - কেমন আছেন? দিন, দিন হাতের জিনিসগুলো, এতটা আবার কেন কষ্ট করে বইবেন, আমি সাইকেলে চট করে পৌঁছে দিয়ে আসছি বাড়িতে। তখনকার দিনে আমাদের সবারই প্রায় যৌথ পরিবার - এ্যাতো দিদি, জামাইবাবু, মাসি-মেসো, ভাইপো-ভাগনী যে সবার নাম তো দূরের কথা, মুখ পর্যন্ত মনে রাখা সম্ভব হত না। এখানে একটা সাইকোলজিক্যাল এফেক্ট কাজ করত, এই আপ্যায়নে মানুষ খুবই পুলকিত হতএবং এক্সপেক্টেড মনে করত। আর দেখেছি সাইকোলজিক্যাল কারণেই এই সব ক্ষেত্রে প্রায় সবাই হাতের মিষ্টির হাঁড়িটাই বয়ে দেবার জন্য বলতেন, অন্য হাতের ব্যাগটা নয়। ফলে সেই হাঁড়ি হাত থেকে নিয়ে সাইকেলে করে একচক্কর মেরে অন্য রাস্তা দিয়ে আবার খেলার মাঠে। বলাই বাহুল্য সেই আত্মীয় মিষ্টির হাঁড়ি বা তার রেফেরেন্স কোনটাই পেতেন না বাড়ি পৌঁছে। এইভাবে আমরা অনেক সদ্‌ব্যবহার করেছি সুসম্পর্কের। কিন্তু আজকালকার আমাদের জুনিয়রেরা সেই সুযোগটা আর পায় না - সব মিষ্টিই পলিপ্যাকস্থ হয়ে হাতের ব্যাগের ভিতর - হাতে কোন নিশানা নেই, ফলে শিকার ঠিক করা মুশকিল হত।

    আগের এক পর্বে লিখেছিলাম যে মিষ্টির দোকানে গেঁজে যাওয়া রস থেকে একপ্রকার অতি উপাদেয় চাটনী বানানো হত যা দিয়ে সিঙাড়া খাওয়া এক অবিষ্মরণীয় অভিজ্ঞতা ছিল। তাহলে বাড়িতে মিষ্টির রস উদবৃত্ত থাকলে কি হত? মডার্ণ গৃহিনীদের কথা বলতে পারব না, তবে আমাদের মা-কাকিমারা পরাতপক্ষে সেই জিনিস ফেলতেন না। আমরাও শেষ পাতে একটু চাটনী পেতাম - সিজিন অনুযায়ী আম, আমড়া বা আনারসের। কত মিষ্টির গল্পই তো বাকি থেকে যাচ্ছে - আমার মামার বিখ্যাত মিষ্টির দোকানের গল্প পরেরবার।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ জুলাই ২০১৫ | ২৯০৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • AS | 125.187.43.181 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৩:২৮69082
  • হ্যা আমদের ছোটবেলায় আমাদের লাইনে ও একটা ট্রেন ছিল ক্যাশ ট্রেন বলে দুপুরের দিকে ছিলো ট্রেন টা ত খ্ন(এই লেখাটা প্ড়ার আগে পয্`্র্ন্ত জানতাম) ওতে টাকাপয়্সা যায় এখ্ন মনে হছে ওটা হয়্ত ছানা বাহী ট্রেন ই হবে। লেখাটা পড়তে খুব ই ভালো লাগলো। আরো লিখুন
  • শিবাংশু | 127.248.165.179 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৭69083
  • এ লেখাটি প্রায় ক্ল্যাসিক পর্যায়ের হয়েছে। জীয়ো...
  • kk | 182.56.21.120 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৪:৪৮69084
  • ওঃ, এই ভদ্রলোক এত ভালো লেখেন না!!
  • I | 192.66.30.32 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৫:২৩69085
  • আমার মিষ্টির প্রতি এমন তীব্র বিবমিষা যে লেখাটা বেশীক্ষণ পড়তে পারলাম না। শান্তিনিকেতন যাওয়ার পথে শক্তিগড়ের ল্যাংচা খাওয়াই নি বলে গিন্নি আজো দুখের রাত ও নিখিল ধরার বঞ্ছনাকালে দুকথা না শুনিয়ে ছাড়েন না। দুঃখিত সুকান্তবাবু, আপনার লেখার প্রতি সুবিচার করতে পারলাম না । কিন্তু আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, গিন্নি এসবের সমঝদার মানুষ, তিনি নিশ্চয় সুদেআসলে উসুল করে দোয়াদরুদ ভরে দেবেন। আপনার জীবন মধুময় হয়ে উঠুক, ছানাপোনায় ভরে উঠুক । লীলুপিসির অমর উক্তি প্যারাফ্রেজ করবার লোভ থেকে বিরত থাকলাম। যাই,আজ আবার চাট্টি সসেজ ও মাশরুমভাজাযোগ আছে, খিচুড়িসঙ্গতে।
  • a x | 138.249.1.202 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৫:২৫69086
  • পান্তুয়ার সাথে লেডিকেনির তফাৎ ও ছানাবড়ার সাথে পান্তুয়ার তফাৎ এবং তাদের আর্থনৈতিক ও সামাজিক হায়ারার্কিয়াল তুলনামূলক অবস্থান নিয়ে একটা লেখা চাই।
  • a x | 138.249.1.202 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৫:২৬69087
  • সরি সরি লেডিকেনি আবার কি! লেডিগিনি লেডিগিনি! আর ভুল হবেনা!
  • san | 113.245.15.185 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৫:৩৪69088
  • গণেশের মিহিদানা কমন পড়েছে :-)
    সুস্বাদু লেখা !
  • | 183.17.193.253 (*) | ১৬ জুলাই ২০১৫ ০৬:১১69089
  • চমৎকার। তবে মিষ্টান্ন নিয়ে অত চিন্তার কারণ নেই, 'ল্যাংচা হাব' এলো বলেঃ)
  • dd | 116.51.129.102 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:০২69092
  • বাঃ বাঃ বাঃ।

    এই সিরীজটা মারকাটারি ভালো হচ্ছে।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:১৩69093
  • না, ক্যাশ ট্রেনে ক্যাশ-ই (টিকিট বিক্রির টাকা) যায়/যেত। কিন্তু গার্ড/ড্রাইভার/স্টেশনমাস্টারের তালমিল ঠিক না হলে প্রতিটা স্টেশনেই এক দু মিনিট লেট করে। সেজন্যে জেনেরাল লোকজন না চাপার-ই চেষ্টা করে।

    টাইপোলজিটা অনেকটা এরকম।

    পান্তুয়া ঃ গোলক।
    লেডিকেনিঃ গোলক।
    পান্তুয়া আর লেডিকেনির মধ্যে একটা তফাৎ আছে, সেটা এখনও বুঝে পাই নি। আর ছানার জিলিপি, তোতাপুলি ইত্যাদি ওরই একটু রকমফের।
    ল্যাংচাঃ চোং।
    কালোজামঃ গোলক, কড়া করে ভাজা।
    ছানাবড়াঃ ঐ, আরো কড়া করে ভাজা।

    সব ছানা বেসড। আর গুলাব জামুন (এঃ বড্ড মিষ্টি!!) ক্ষীর।
  • Ishan | 183.17.193.253 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:৩০69094
  • আহা খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একমাত্র লেখা যা আমাকে টানল। আপনারা হয়তো জানেন না, আমি গুলাবজামুন মিক্স দিয়ে দুর্ধর্ষ পান্তুয়া (হ্যাঁ, গুলাবজামুন নয়, পান্তুয়া), বানাই। রেসিপি ক্লাসিফায়েড।
  • সুকি | 168.161.176.18 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৩69095
  • ইয়ে একটা মনস্তাত্বিক ভুল হয়ে গ্যাছে মনে হচ্ছে - লেডি ক্যানিং থেকে লেডিকিনি-র গল্প করলুম, কিন্তু লিখতে গিয়ে বার বার লেডিগিনি লিখেছি! এটা কি কপি-পেষ্টের ফল?

    এই ভুলের জন্য আমি কি দুঃখ প্রকাশ করব নাকি নিজেকে ডিফেন্ড করব আমাদের দিকে রাঢ বাংলায় লেডিগিনি অপভ্রাংশে ব্যবহার হত বলে - সেই নিয়ে ভাবছি!
  • সিকি | 192.69.212.235 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৪:০৪69096
  • ক্যাশট্রেন - আমরা বলি/বলতাম ক্যাশগাড়ি, ওটার সঙ্গে ছানার আপাতভাবে কোনও সম্পর্ক নেই। ছানা যায় ভোরের দিকের ট্রেনগুলোতে। ছটা কুড়ির ব্যান্ডেল লোকাল, ছটা পঞ্চান্নর বর্ধমান লোকাল - এইগুলো ছানার গন্ধের জন্যে বিখ্যাত। ক্যাশগাড়িতে সত্যিই ক্যাশ যায়। প্রতিটা স্টেশনে ক্যাশের বাক্স নামাতে নামাতে যায় বলে ওগুলো লেট করে। ক্যাশগাড়ি হলে আমরা অ্যাভয়েড করার চেষ্টা করতাম।
  • byaang | 132.171.100.228 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৪:০৭69098
  • এই সুকির লেখা পড়তে এত ভালো লাগে যে কী বলব। একবার পড়তে শুরু করলে শেষ না হওয়া অব্দি এক মুহুর্তের জন্যও অন্য উইন্ডোয় চোখ রাখা যায় না। আর এই খাওয়ার সিরিজটা দুর্দান্ত ভালো হচ্ছে।
  • Abhyu | 118.85.88.75 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৪:০৭69097
  • আমি তো ভেবেছি তোমাদের ওখানে লেডিগিনি উচ্চারণ করে তাই ইচ্ছে করেই লিখেছ :)
  • byaang | 132.171.100.228 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৪:১৭69099
  • একদিন লামার সাথে কথা বলতে বলতে সুকির লেখার প্রশংসা করেছি, ওমা অম্নি শুনতে হল "হ্যাঁ হ্যাঁ , ও তো আমাদের বিক্কলেজের, ওর লেখা তো ভালো লাগবেই।" যেন সুকির ভালো লেখার যাবতীয় কৃতিত্ব ঐ কলেজের, সুকির নিজের নয়! অদ্ভুত!
  • সুকি | 168.161.176.18 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৪:৩৬69100
  • অভ্যু,
    আরে আমি তো ওই জন্যি ঘাবড়ে গেলাম - আমাদের দিকে অনেকেই তো মানে হয় লেডিগেনি বলে! তবে অনেক দিন হল আমি দোকান থেকে গিয়ে লেডিকেনি কিনি নি - কেবল মাত্র একটি দোকান ছাড়া আমাদের দিকে আর কেউ আজকাল লেডিকেনি বানায় ও না! তাই মনস্তত্বিক দিক থেকে অবচেতন মন আমাকে লেডিগেনি লিখিয়ে নিচ্ছিল - কিন্তু এত গুনীজনের মাঝে নিজেকে চাষা হিসাবে দেখাতেও খারাপ লাগে - তাই একটু রিট্রিভ মোডে আছি আর কি!
  • সুকি | 168.161.176.18 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৪:৪৩69101
  • সিকি,
    তুমি কি সিওর যে সকালের দিকে তুমি নিয়মিত ছানা নিয়ে যেতে দেখছ? ছানার গন্ধ থাকতে পারে কামরায়, কিন্তু সকালের ছটা পঞ্চান্নর বর্ধমান লোকালের করে ছানা যাচ্ছে, ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে! কাটোয়া লাইন থেকে কেউ যেতে পারে কিনা বলতে পারব না, তবে বর্ধমান মেন লাইনে (অন্তত বর্ধমান থেকে পাণ্ডুয়া অবধি) কেউ সকাল ১০ টার আগে ছানা নিয়ে উঠতে না, এটা গ্যারান্টি। আমাদের দিকে ফার্ষ্ট যে ট্রেনে ছানা উঠত সেটা বর্ধমান থেকে ছাড়ত ৯.৫৮ - এর পর, ১১/২২, ১২/২৪, ১.৪০, এবং শেষ ৩.২০ এর ট্রেনে ছানা যেত। আর বর্ধমান মেন লোকালে সবচেয়ে বেশি ছানা উঠে মেমারি এবং তারপর নিমো তে।
  • সিকি | 192.69.212.235 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৫:০৭69102
  • এই রে - আমি যতটুকু যাতায়াত করেছি ঐ লাইনে - ঐ সকালের দিকের ট্রেনগুলোতেই ছানা, মাছ ইত্যাদি যেতে দেখেছি। বেলার ট্রেনে কখনও ছানা দেখি নি।
  • সিকি | 192.69.212.235 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৫:১০69103
  • লেডিকেনি জিনিসটা সম্ভবত এখন আর পাওয়া যায় না।ভাজা মিষ্টির এত ভ্যারিয়েশন এসে গেছে বাজারে - সর্বোপরি আমবাঙালি এখন এত বেশি "গুলাবজামুন" অনুরক্ত হয়ে পড়েছে, দোকানে আজকাল বেশি ডিসপ্লেতে থাকে ঐ গুলাবজামুনই। ল্যাংচা আর পান্তুয়া তাও থাকে, কিন্তু লেডিকেনি খেয়াল করি নি। অনেক ছোটবেলায় নিয়মিত লেডিকেনি খেতাম মনে আছে।

    হায় হায়, প্রাণটা কেমন ল্যাংচা-পান্তুয়া-ছানাজ্জিলিপি লাগি আঁকুপাঁকু করে উঠল। কবে খাবো, কবে খাবো।
  • | 24.99.117.31 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৫:৩৩69104
  • লেখাটা এখনও পড়ি নি, রসিয়ে রসিয়ে পড়ব পরে। কিন্তু ছানার গাড়ী নিয়ে সুকিকে সেকেন্ড করলাম। ছানারা দুপুরের দিকেই যায়, ফলে দেড়টা নাগাদ হাওড়া স্টেশানের ২,৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষের দিকটা পুরো ছানার জলে জলাক্কার হয়ে থাকে। দুপুরের কোন একটা ট্রেনে যেন তারকেশ্বরের দিক থেকে প্রচুর ফুলও যায়। সেইসব গাঁটরি গাঁটরি ফুল আবার ৬ নম্বর বাসে চেপে লেক মার্কেটে যায়।
    খুউব সকালে ট্রেনে চেপে চোলাই যায়। এই ধর সোয়া পাঁচটা বা তারও আগে যেসব ট্রেন কোন্নগরের ঢোকে।
  • S | 139.115.2.75 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৫:৪৫69105
  • সুকান্ত বাবু এইটা পুরো ক্যটালগ লেভেলের লেখা। পুরো আর্কাইভাল পিস। আপনি পুরো দোকান ধরে ধরে লিখেছেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    "যে এফেক্ট মাটির হাড়িঁ ভর্তি রসগোল্লা আনতে পারে" - যাস্ট এইটুকু পড়েই যে কত এফেক্ট আমার মনে প্রানে জিহ্বাতে হলো।
  • শিবাংশু | 127.248.128.51 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৬:০৯69106
  • আমি মনশ্চক্ষে দেখতে পাচ্ছি চিত্রগুপ্ত ডাগদারকে রৌরব নরকে পান্তুয়ার বিশাল কড়াইয়ের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছে আর ডাগদার সুকি'র কাছে প্রার্থনা করছে যেন সে চিত্রগুপ্ত'কে বলে কয়ে শাস্তির টার্মটা একটু কমিয়ে দেয়।

    বাঙাল বহু কিছুই 'নয়', তা বলে বাঙালিও নয়, এটা জেনে কষ্ট পেলুম( নিজে আধা বাঙাল তো)...
  • b | 135.20.82.164 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৬:৩৫69107
  • সুকি, অসুবিধা নেই। বেলা ডেড্ডার সময় লেডিগিনি আমিও খেয়েছি।

    সিকি, লেডিকেনি আর পান্তুয়ার তফাৎ কিই শুধু ঘনফলে?
  • সুমিতা সরকার | 122.79.38.164 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৭:০৫69108
  • কোথ্থেকে যে একটা ঘন্টা ভোঁ হয়ে গেল লেখাটা পড়তে পড়তে বুঝতেই পারলুম না! আচ্ছা, এত মিষ্টির কথাই যখন উঠলো তখন ছোট্টবেলা থেকে আমার ভীষণ প্রিয় কালোজাম মিষ্টির কথাও একটু শুনতে ইচ্ছে করছে।
  • de | 24.139.119.174 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৭:০৯69109
  • সুইট বেঙ্গলে চিত্রকুট বলে একটা মিষ্টি পাওয়া যায় - সেটাও ওই একই গোত্রের-


    হাইওয়ের পাশের দোকানেই ল্যাংচা খেয়েছিলাম শক্তিগড়ে, শান্তিনিকেতন যাবার পথে - আমার কিন্তু খুব ভালো লেগেছিলো - দোকানের নাম মনে নেই। ওখানকার সব দোকানেই দেখলাম টলিউডের শিল্পীদের ছবি টানানো -

    সুকির এই সিরিজটা দূর্দান্ত হচ্ছে -
  • সুকি | 168.161.176.18 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৮:১১69110
  • এই রে শিবাংশুদা, আমি কি বাঙালরা বাঙালি বলে কোথাও দাবি করে ফেলেছি নাকি? কোথায় যে কি লিখি নিজেরই মনে থাকে না!

    বাকি যাঁরা পড়ছেন তাঁদেরো ধন্যবাদ।

    ঈশান, পান্তুয়ার রেসিপিটা শেয়ার করে ফেল। সবার আশীর্বাদে রেসিপি আরো বেটার হবে।

    ব্যাঙ, বি ই কলেজের দাদা/দিদিরা তাদের জুনিয়ারদের বড়ই ভালোবাসে। তাই লামাদা ভালোবেসে ওমন বলেছে আর কি! আমি তো কোন ছাড় - বিনয় মজুমদার, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, নারায়ণ স্যান্যাল এরাও ভালো লিখতেন বি ই কলেজের ছাত্র বলেই।
  • সুকি | 168.161.176.18 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৮:১৬69111
  • ধুর, আগের লেখায় ওটা "বাঙালরা বাঙালি নয় বলে কোথাও দাবি করে ফেলেছি নাকি?" হবে ।

    আর একটা প্রশ্ন, যাঁরা বলছেন যে ক্যাশ গাড়ি লেট করে ক্যাশ নামতে নামতে যায় বলে - তাঁরা কবে শেষ দেখেছেন ক্যাশ নামা, খুব জানতে ইচ্ছা করে।
  • Abhyu | 118.85.88.75 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৮:২১69112
  • ক্যাশ গাড়ি লেট করে বলে ওতে চড়তে নেই - এটা আমিও শুনেছি কিন্তু কোনোদিন ক্যাশ ট্র্যানজাকশন হতে দেখি নি।
  • | 11.39.13.232 (*) | ১৭ জুলাই ২০১৫ ০৮:২৯69113
  • হ্হ্টির রস না গেঁজে গেলে তাই দিহে জিবেগজা এলোঝেলো ইত্যাদি তৈরী হত। গাঁজলে চাটনি।

    ক্যাশগাড়ীতে মস্ত বাক্স গার্ডের কামরায় উঠতে দেখেছি ১৯৯৮তে। ওর পেছনে একটা শýআওড়াফুলি আসত আমি সেটই ধরতাম।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন