এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বাকিটা সবাই জানে...

    ফরিদা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৭৪৩ বার পঠিত
  • এক ছিল রাণী, তার মালখানায় মাল ছিল, ঘেউখানায় ভুকুল ছিল। তার শিক্ষামন্ত্রী ছিল ব্যর্থ। রাণীমাকে তার ভাইপোরা দিদি বলে ডাকতো।

    রাণী একদিন খেয়াল করলেন তার অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও কিছু স্কুল কলেজে পড়াশোনা হচ্ছে। রাণী দেখলেন বিপদ – কত চেষ্টা করে জেলায় জেলায় প্রচুর চেষ্টায় ডকে তুলে দিলেন লাখ লাখ কলেজ আর তারই নাকের ডগায় এ হেন বিষফোঁড়া? অ্যাঁ - লোকে বলবে কি? তার অকুতোভয় সৈনিক আরাষণ্ড – জলের জগ নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন প্রতিবাদী শিক্ষিকার দিকে। তার প্রিয় যুব সেনাপতি বঙ্কুদেশ একা অসীমসাহসে মাত্র পঞ্চাশ সহযোদ্ধা নিয়ে শতবর্ষ পুরনো ল্যাবোরটরির যন্ত্রপাতি কুশলতার সঙ্গে ধুলো করে দিয়েছেন।

    আর তার নিজের খাসতালুকে বিশ্ববিদ্যালয়? পড়াশুনো? মামার বাড়ির আবদার? খবরদার...।

    রাণী দুঃখে থাকেন, তেলা মাথায় তেল দিতে এলে কুপরিবহণ মন্ত্রী বদনের বদনায় লাথ মারেন। বদন হাসপাতালে।

    দুঃখ কি তার একটা? ওদিকে এক কর্মবীর বাঙালি ব্যবসায়ী, মারো দাঁ কোম্পানি বানিয়ে করে খাচ্ছিল, মাস গেলে মোটা টাকা আসত , সইল না। তারা মাসোহারা বন্ধ করেছে, শুধু তাই নয় – পরশ্রীকাতর কিছু লোক তার পিছনে পড়েছে। আরে বাবা, না হয় সে লোকের থেকে টাকা নিয়েই তো দেবে নাকি? নোট তো আর ছাপেনি। আর দিয়েছে কাকে – রাণীকে আর তার সাঙ্গোপাঙ্গোকে – এরাই তো দেখবে যাতে দেশে আর কোনো গরীব না থাকে – সবাই যেন ভোট ফুরোলেই ফুরিয়ে যায়। আর গরীবের কথা তো টাটকা বলে কিছু হয় না – বাসী হলে তাও বা মুখে দেওয়া যায়।

    যাক সে কথা, রাণী কিছু কবিতা লিখলেন – সবাই কত কিনল বাহবা দিল – নোবেল ওলা রা দেখলই না। রাণী ছবি আঁকলেন – কত লোক কাড়াকাড়ি মারামারি করে ওজন করে টাকা দিয়ে কিনে নিল – তাই নিয়েও কথা চলছে।

    রাণীর মন খারাপের কারণ কি একটা?

    কিন্তু একদিন একটা উপায় হল।

    সেদিন রাণী ঘাসফুলের গোড়ায় সার টার দিচ্ছিলেন। বলতে নেই শত্তুরের মুখে ছাই দিয়ে সেই ফুল এখন মহীরুহ। তখন রাণীর চটির ফিতে ছিঁড়ে গেল হঠাৎ। রাণী নিচু হয়ে চটি তুলতে গেলেন দেখলেন কী যেন একটা কিলবিল করছে পায়ের কাছে। পিছিয়ে গেলেন তিনি – এ কী? সাপ নাকি? নাকি ম্যাও?
    তখন হঠাৎ শুনলেন সেই কিলবিলে প্রাণীটা কিচকিচ করে বল্ল – আমি ছবিজিত। আমাকে দয়া করুন।

    রাণী বললেন – ওখানে কি করছ?
    ছবি – আমি ওখানেই থাকি
    রাণী – কেন?
    ছবি – আজ্ঞে কাজকামে জুত নাই, শরীলে বল নাই, পেটে তেমন বিদ্যা নাই, চুরিতেও বুদ্ধি নাই – লোকে বল্ল কেন্নো হয়ে রাণীর পায়ে ঘুরলে হিল্লে হবে। তাই এক বছর ধরে ছিচরণে পড়ে আছি।
    রাণী – কি কাণ্ড – খাও কি?
    ছবি – আজ্ঞে, পায়ের ধুলো –
    রাণী – আহা বাছা রে – চাকরি করবি?
    ছবি – যা কাজ বলবেন। আপনার চটি পালিশের কাজ হলে তো খুব ভালো।
    রাণী – আরে তা নয় তার জন্য অন্য লোক আছে, তুই , তুই বরং, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হবি?
    ছবি – শিশি? আলমারিতে থাকতে হবে?
    রাণী – ওই হল – আসবি যাবি চেয়ারে বসবি, পয়সাও পাবি
    ছবি – কিন্তু্‌, আমি, মানে...।
    রাণী – মানে কি? শিগগির বল
    ছবি – আমি বসব বা দাঁড়াবো কি করে – আমার তো শিরদাঁড়া নেই।
    রাণী – সে আমি জানি – সে আমি দেখেই বুঝেছি, সেইজন্যই তো চাকরি দিলাম তোকে। এই দেখছিস এত বড় ঘাসফুল – সোজা দাঁড়িয়ে আছে – কি করে বল? বল
    ছবি – আমি কি ওসব জানি, জানলে তো লোকে শিক্ষিত বলবে
    রাণী – কাঠি, কাঠি দিয়েই সিধে থাকে সব। মারোদাঁ থেকে ভাইপো - সবাই এই কাঠিতেই সোজা। তোকেও দেব, কদিনে দেখবি দু পায়ে গটগট করে হাঁটবি। কিন্তু আমার সামনে এলেই কাঠি কিন্তু দড়ি হয়ে নেতিয়ে যাবে, মনে রাখিস।

    ছবিজিত তো হাতে চাঁদ পেল। মিনমিন করে বল্ল – কিন্তু সেখানে গিয়ে কাজটা কি?
    রাণী – কাজ করার হলে কি তোকে রাখি – কিছু করবি না, তাহলেই হবে। কাজ করলেই চাকরি নট কিন্তু।

    ছবিজিত পরের দিন থেকেই বহাল – আসে, চেয়ারে বসে, চা খায়, বাড়ি যায়। পেন্সিলে মাঝে মাঝে ঘাসফুল আঁকে। কাটাকুটি খেলে নিজে নিজে। যেদিন জেতে খুব খুশি হয়, আর হেরে গেলে দুঃখে এক ঘন্টা চা খায় খায় না।

    এইসব দিব্যি চলছিল। একদিন পর পর তিন দান হেরে গিয়ে মেজাজ খারাপ। কদিন আগেই এক উটকো উৎপাত গেছে, ছেলেপিলে কে কাকে কী যেন করেছে, একে ওকে বলে সে আপদ বিদায় করেছে সে। আবার কদিন পরে বেয়ারা ফের এসে বল্ল ছাত্ররা দেখা করতে এসেছে।

    ছবিজিত রেগে কাঁই। মামার বাড়ি, আমার কাজ নাই বুঝি? দিন রাত ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে হবে? ইল্লি আর কি। আমার শালা মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল অবস্থা, নিজের কাছে নিজেই কাটাকুটি খেলায় হারছি - শেষবার তো কাটা নিয়েও হেরেছি – এখন উনি এলেন – ছাত্তররা দেখা করতে এসেছে – কি করব – তোপ ফেলব নাকি?

    আবার খেলায় ডুবে গেল সে। আবার হারছে। চা পর্যন্ত খাচ্ছে না। চুল খাড়া – গোঁফগুলো ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে।

    রাত হল। ছবিজিত বল্ল - নাঃ বাড়ি যাই। মাত্র এক বছরের চেষ্টায় কাটাকুটি খেলাটা রপ্ত হয়েছে বলে ভেবেছিল আবার সব হাতের বাইরে যেতে চলেছে।

    আরে বাইরে ষাঁড়ের মতো চেঁচায় কে? গভীর মনোযোগে সে কাটাকুটি খেলছিল বলে শুনতে পায় নি, উঁকি মেরে দেখে তাজ্জব ব্যাপার।

    গভীর রাত হয়ে গেছে আর ছেলেপিলেদের যেন বাড়ি ঘর দোর বলে আর কিছু নেই দরজা জুড়ে বসে ছেলেপিলে গান গায়...

    গান... ছবিজিতের কাঠি শিরদাঁড়াতেও ভয়ের স্রোত খেলে গেল। সে ঠিক জানে – ফার্স্টবুকে পড়েছিল – গান মানে বন্দুক...। কাঁপতে কাঁপতে ফোন করল সে নগরপালকে…….
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ | ৭৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • a | 132.172.244.217 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৭72446
  • খুব রুচিহীন লাগল। ভদ্রলোক বিক্কলেজে ভালৈ কাজ করে গেছিলেন।
  • jhiki | 121.94.79.128 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৫72447
  • একথাটা বিক্কলেজের অনেক বর্তমান বা সদ্য প্রাক্তন ছাত্রদেরও ফেবুতে লিখতে দেখছি। তাদের দাবী মূলতঃ অ চ -র জন্যই বি ই কলেজে শান্তি ফিরে এসেছে (এগুলো আমার দার্বী নই,আমি এব্যাপারে কোন দাবীদাওয়া নেই)।
  • jhiki | 121.94.79.128 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৫৬72448
  • #দাবী
    #নয়
  • sch | 233.223.131.253 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:০৩72449
  • ভালো লাগলো ফরিদা। নির্মেদ লেখা। বি ই কলেজের জিনিস অনেক সময় যাদবপুরে চলে না - দুটো তো এক জায়গা নয়। তাই। তাতে খারাপ ভালোর প্রশ্ন নেই - চলে না এইটুকুই
  • ফরিদা | 11.39.27.79 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫২72450
  • sch,থ্যান্কু।
    a, লেখাটায় ছাত্ররা আর অফিস বেয়াড়া ছড়া কোনো মানুষ চরিত্রই রাখিনি। এরা ছাড়া "ভদ্রলোক" বলে কেউ নেই তো লেখাতে। জীবজন্তুর গল্প অনেকের "রুচিহীন" লাগে। আমি নিরুপায়।
  • তথাগত | 121.93.191.66 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৬72451
  • ভাল লাগল ফরিদা। অ চ বি ই কলেজে কী করেছেন সে প্রশ্ন এখানে অবান্তর। হাজারটা ভাল কাজও একটা নক্কারজনক কাজের অজুহাত হতে পারেনা। তাছাড়া শিক্ষাবিদ বা গবেষক হিসেবে তো অ চ’র কোন নামডাক আছে বলে জানিনা। হাজার সার্চ করেও ওনার হাতে গোনা কয়েকটা গবেষণাপত্রই খুঁজে পেলাম। অপরদিকে বি ই কলেজের ডিরেক্টর অজয় রায় কিন্তু গবেষণা ক্ষেত্রে বেশ নামডাকওয়ালা ব্যক্তি। তাই ভাবি, নিতান্ত দলদাস না হলে অ চ’র মত অপোগন্ড উপাচার্য হয় কি করে? এ তো অনিলায়নকেও হার মানায়।
  • ন্যাড়া | 172.233.205.42 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:১২72452
  • লাস্ট লাইনে এসে ফাটিয়ে দিয়েছ। গল্পের কী বাঁধুনি মাইরি!
  • de | 190.149.51.69 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:৩১72453
  • ফাটাফাটি! ফরিদা!
  • ন্যাড়া | 172.233.205.42 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:৩৪72454
  • বাদশাহী আংটিতে সিরিজটা যেন কী ছিল -

    joker মানে সঙ, song মানে গান, gun মানে কামান, come on মানে আইস, I saw মানে আমি দেখিয়াছিলাম ইত্যাদি। কিন্তু joker দিয়ে কি শুরু হত?
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:৩৯72455
  • ওটা ছিল বোধহয়, Horn মানে শিং, Sing মানে গান....
    বনবিহারীবাবু
  • d | 144.159.168.104 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৫:৪১72456
  • জোকার ছিল না মনে হয়।
    steal মানে হরণ, horn মানে শিং, sing মানে গান, gun মানে কামান। Come On আইস , I saw আমি দেখিয়াছিলাম।
  • blank | 122.79.39.93 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:১৭72457
  • দারুন
  • ন্যাড়া | 172.233.205.42 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৬:২৫72458
  • ঠিক, ঠিক।
  • janoik beings | 213.110.247.221 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৭:১৪72459
  • বি ই কলেজে উনার জন্য শান্তি ফিরেছে?

    অন্য কারোর সাথে গুলিয়েছেন আপনারা।
  • T | 24.139.128.15 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৯:১৬72460
  • ইনি বিইকলেজে শান্তি ফিরিয়েছেন! ইনি বিই কলেজের কোন প্রশাসনিক পদে ছিলেন নাকি? যাঁরা জানেন একটু যদি বলে দেন।
  • sch | 192.71.182.106 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:০২72461
  • 2009 এর মার্চ থেকে অজয় রায় বি ই কলেজের ভিসি হিসেবে আছেন। বিভিন্ন এক্স বি ই কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের থেকে খবর নিয়ে যা জানতাম পারলাম তাতে শুনলাম অশান্তি থেকে শান্তিতে ফেরানো এনার আমলেই হয়েছে। অভিজিত বি ই কলেজের ভি সি কোনোদিনই ছিলেন না।

    পারলে অজয় রায়ের Cv টা একটু দেখে নেবেন
    "Bachelor’s degree from Bengal Engineering College, Shibpur, followed by M.Tech and Ph.D from Electronics and Electrical Communication Engineering Department of IIT Kharagpur. He joined IIT Kharagpur as a Faculty in 1980."

    তা সে যাকগে - যদি স্টুডেন্ট শাসনের জন্য ভি সি লাগে তাহলে তো কলকাতা পুলিশের গাণ্ডু দমন শাখার কোনো কমিশনারকেই ভি শি করে দেওয়া যেত।
  • sch | 192.71.182.106 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:০৩72462
  • ও; সরি ওটা গুণ্ডা দমন শাখা হবে
  • cb | 70.241.211.18 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১০:৪০72463
  • ধ্যাৎ এটা কিন্তু ইচ্ছে করে মাইরি :P
  • Pubদা | 85.115.164.180 (*) | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১২:২৯72445
  • ফেবুতেও পড়লাম । দারুন :)
  • E না C | 212.142.71.88 (*) | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১১:৪৩72464
  • বেসু এবং শান্তি ফেরানো ইত্যাদি নিয়ে লেখা হচ্ছে। মৌন থাকলে সম্মতি জানানো হয়। আমি দু বছর বেসুর একটি প্রশাসনিক পদে ছিলাম। কিছুটা মানিয়ে নিতে না পারায়, কিছুটা অনোন্যপায় হয়ে, কিছূটা শিক্ষকতার টানে অধ্যাপনায় ফিরে আসি।
    যে সময়টার কথা হচ্ছে (২০০৪-২০০৮) তখন উপাচার্য ছিলেন নিখিন রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। এনার কাজ কর্ম দখলে বোঝা যেত কেন রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন "অতএব যাদের উচিত ছিল জেলের দারোগা বা ড্রিল সার্জেণ্ট্‌ বা ভূতের ওঝা হওয়া তাদের কোনোমতেই উচিত হয় না ছাত্রদিগকে মানুষ করিবার ভার লওয়া।" এই ভদ্রলোক পঠন পাঠন গবেষণার কিচ্ছু বুঝতেন না। বেসুতে আসার আগে তিনি ছিলেন CESC র GM (HRD)। তিনি জানতেন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলেক তল্পিবাহক হতে পারলেই কেল্লা ফতে। ছাত্ররা সব মেনে নেয় কিন্তু পক্ষপাতিত্ব মানতে চায় না। একদল বুঝে গেল ‘আমাদের সাতখুন মাফ’, অন্যদল বুঝল ‘এই ভিসির কাছে সুবিচারের আশা নেই’। অতএব ঝামেলা বাড়তেই থাকলো। একজন ছাত্রর মৃত্যু হল। কিন্তু ভিসির হেলদোল নেই। ছাত্রমৃত্যর পর সব ছাত্র অনুশোচনায় এক হল। যখন সবাই এক হয়ে কাজ করতে চাইল ভিসি ছাত্রসংসদের নির্বাচন বন্ধ করে দিলেন। ছাত্ররা ছয় জন শিক্ষকের কাছে সাত বস্তা হকি ষ্টিক লাঠি ইত্যাদি জমা দিল। ভিসি ছাত্র সংসদ অচল করে নিজের কোটারি গড়তে উদ্যোগী হলেন।
    পরবর্তী বছরে ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রদের নিয়ে, এবং পি জি ছাত্রদের সহায়তায় একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠণ আবার তাদের ইউনিট গঠন করল। পুনঃ পুনঃ ছাত্র সংঘর্ষে পঠন পাঠন ক্ষতিগ্রস্ত হল। কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে রুপান্তর স্থগিত হয়ে গেল। ক্যাম্পাসে স্থায়ী পুলিস ক্যাম্প বসানো হল। ছাত্রদের ক্যাম্পাসের বাইরে পেটানো হল। ক্যাম্পাস থেকে ছাপ্পান্ন জন ছাত্রকে একরাত্রে অ্যারেস্ট করা হল। আমি এবং আমার সহকর্মী ড: অমিত রায়চৌধুরী থানায় গেলাম বেল নিতে। ছাত্রদের নন-বেলেবেল চার্জ দিয়ে হাজতে পোরা হল। ২০০৮ সালে ছাত্র নির্বাচন হল এবং ছাত্র সংগঠনটির ভরাডুবি হল।
    ২০০৮ এ ভিসির মেয়াদ সমাপ্ত হলে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশে নিখিল ব্যানার্জীকে ছ’মাস এক্সটেনশন দেওয়া হল। ইতোমধ্যে নন্দীগ্রাম ঘটে গেছে, কি হয় কি হয় ভাব। ২০০৯ এর পয়লা মার্চ প্রফ অজয় রায় ভি সি হলেন। ভিসির দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হল। ভিসি হস্টেলে, মাঠে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠাণে ছাত্রদের পাশে। সব ছাত্রদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হল সংহতি। রাজ্যে ঘটে গেল লোকসভা নির্বাচন এবং বাতাসে পরিবর্তনের গন্ধ। বাইরে থেকে ছাত্রদের উপর ছড়ি ঘোরানো কমে এল। ফিরে এল শান্তি।
    অভিজিত চক্রবর্তী আমার সহকর্মী। একদিন ছাত্রবিবাদের সময় ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ভিতর পুলিশ ঢুকে আসে এবং নাক গলাতে চায়। শিক্ষক শিক্ষিকারা বাধা দেন। পুলিশ উপাচার্যর নির্দেশ নিয়ে ভেতরে ঢোকে এবং ইন্টারোগেশন ক্যাম্প বসায়। শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাত্রদের সঙ্গে থাকেন শেষ অবধি। সেদিন অধ্যাপক চক্রবর্তীও ছাত্রদের সাথে ছিলেন। এছাড়া কখনও ওনাকে দেখেছি বলে মনে পরছে না। উনি একজন পশুপ্রেমী মানুষ। এব্যাপারে শিবপুর ক্যাম্পাসে ওনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

    রবীন্দ্রনাথ দিয়েই শেষ করি “ছাত্রদের ভার তাঁরাই লইবার অধিকারী যাঁরা নিজের চেয়ে বয়সে অল্প, জ্ঞানে অপ্রবীণ ও ক্ষমতায় দুর্বলকেও সহজেই শ্রদ্ধা করিতে পারেন; যাঁরা জানেন, শক্তস্য ভূষণং ক্ষমা; যাঁরা ছাত্রকেও মিত্র বলিয়া গ্রহণ করিতে কুণ্ঠিত হন না”।

    "ছাত্রেরা গড়িয়া উঠিতেছে; ভাবের আলোকে, রসের বর্ষণে তাদের প্রাণকোরকের গোপন মর্মস্থলে বিকাশবেদনা কাজ করিতেছে। প্রকাশ তাদের মধ্যে থামিয়া যায় নাই; তাদের মধ্যে পরিপূর্ণতার ব্যঞ্জনা। সেইজন্যই, সৎগুরু ইহাদিগকে শ্রদ্ধা করেন, প্রেমের সহিত কাছে আহ্বান করেন, ক্ষমার সহিত ইহাদের অপরাধ মার্জনা করেন এবং ধৈর্যের সহিত ইহাদের চিত্তবৃত্তিকে ঊর্ধ্বের দিকে উদ্‌ঘাটন করিতে থাকেন। ইহাদের মধ্যে পূর্ণমনুষ্যত্বের মহিমা প্রভাতের অরুণরেখার মতো অসীম সম্ভাব্যতার গৌরবে উজ্জ্বল; সেই গৌরবের দীপ্তি যাদের চোখে পড়ে না, যারা নিজের বিদ্যা পদ বা জাতির অভিমানে ইহাদিগকে পদে পদে অবজ্ঞা করিতে উদ্যত, তারা গুরুপদের অযোগ্য। ছাত্রদিগকে যারা স্বভাবতই শ্রদ্ধা করিতে না পারে ছাত্রদের নিকট হইতে ভক্তি তারা সহজে পাইতে পারিবে না। কাজেই ভক্তি জোর করিয়া আদায় করিবার জন্য তারাই রাজদরবারে কড়া আইন ও চাপরাশওয়ালা পেয়াদার দরবার করিয়া থাকে।"
  • E না C | 212.142.71.88 (*) | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ১২:৫০72465
  • Prof Sukata Das has posted something similar in a different thread
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন