এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • যৎকিঞ্চিত ...(২৫ তম পর্ব)

    Rana Alam লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৫ জুন ২০১৪ | ৯৪২ বার পঠিত
  • ( আমার ভাগ্নে,অরণি’র জন্য আজকের পর্ব টা থাকলো)

    আমার নিজের বিদ্যে বুদ্ধি নিয়ে শুধু আপনাদের নয়,আমারো বিস্তর সন্দেহ আছে।আমার বিদগ্ধ মাস্টার মশাইএরা অবশ্যি এ সত্য আগেই জানতেন।তাই,তারা সারাজীবন ‘গাধা-গোরু’ ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করে গেছেন।আর ক্যানোই বা করবেন না,পরীক্ষার খাতা পত্তরে আমি যেসব নমুনা লিখে আসতুম,তা থেকে আর কিইবা ভালো ধারণা করা যায়।সেই যে পিতা-পুত্রের বয়সের অঙ্ক ছিল।পুত্রের বয়স বেরোলো পঞ্চাশ আর পিতার বয়স পঁচিশ।স্যার কান পাকড়ে কি করে পুত্রের বয়স পিতার বয়সের ডবল হয় তা জানতে চাইছিলেন।আমি বললুম,
    ‘ তা আমি কি করে জানবো।অন্যের বাড়ির ব্যাপারে নাক গলানো আমার স্বভাব নয়’।

    তারপরে সেই যে তেল মাখা বাঁশে বাঁদরের ওঠার অঙ্ক।গাছ থাকতে বাঁদরটা বাঁশেই যে ক্যানো উঠতে গেল,তা নিয়েই আমার প্রতিবাদ ছিল।তার উপরে ব্যাটা মিনিটে দুফুট ওঠে তো তিন ফুট নামে,তাহলে কুড়ি ফুট লম্বা বাঁশের ডগায় সে কতক্ষণে উঠবে,তাই ছিল প্রশ্ন।তা ব্যাটা কিছুতেই বাঁশের ডগায় ওঠেনা,নিশ্চয় বাঙালি বাঁদর।কিছুতেই ব্যাটাকে বাঁশের ডগায় ওঠাতে না পেরে শেষ অব্দি লিখলাম,
    ‘বারংবার চেষ্টাতে অকৃতকার্য হওয়ার দরূণ বাঁদরটি ক্লান্ত হইয়া অবসর গ্রহণ করিয়াছে।নূতন বাঁদর সরবরাহ না করা অব্দি অঙ্কটি সমাপ্ত করা যাইতেছেনা’।
    তা স্যার মাথায় গোটা কতক গাট্টা মেরে বুঝিয়ে দিলেন যে নতুন বাঁদরের দরকার নেই।আমিই অনায়াসে বাঁদরটাকে রিপ্লেস করতে পারি।

    এর অনেক পরে একদিন সায়ন্তিকাদের বাড়িতে বসে ইস্কুল লাইফের গপ্পো করছিলুম।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললুম,
    ‘জানো,ইস্কুলে পড়ার সময় আমি আস্ত গাধা ছিলুম’।
    সায়ন্তিকা’র বাবা পেপারে ক্রিকেটের খবর পড়ছিলেন।পেপার টা নামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চশমার ফাঁক দিয়ে বললেন,
    ‘আহা,ছিলে ক্যানো বলছ? পাস্ট টেন্স ক্যানো হবে?এত ঘটমান বর্তমান’।
    সায়ন্তিকা’র মা হাসি চেপে রান্না ঘরের দিকে এগোলেন।আমার হেব্বি রাগ হল।বললাম,
    ‘ঠিক ধরেছেন কাকু।জানেনই তো,রতনে রতন চেনে’।
    শেষ অব্দি বলার দরকার ছিল না,ঐ টুকুতেই ওনার মুখ বাংলার পাঁচ হয়ে গেলো।হেব্বি শান্তি পেলুম।

    তখন সায়ন্তিকা কে প্রোপোজ করে ফেলেছি।কিন্তু কেস পুরো সলভ হয় নি।সায়ন্তিকা তার ভুরু তুলে জানালো,
    ‘দ্যাখো,আমি হ্যাঁ করেছি।কিন্তু এখানেই শেষ নয়।এরপরে আমার বাবা’কে রাজি করাতে হবে’।
    আমি খাবি খেলাম।তোতলা জিভে বললাম,
    ‘ইয়ে,মানে আমি তো তোমার সাথে প্রেম করতে চাই।তোমার বাবা’র সাথে নয়’।
    ‘ধ্যাত।আরে আমার সাথে প্রেম করতে হলে আমার পিতৃদেব এর সম্মতি চাই।তিনি বেঁকে বসলে সবই যাবে’।
    ‘তোমার বাবা’র নাম কি পৃথ্বীরাজ কাপুর?’,আমার ভয়ার্ত জিজ্ঞাসা।
    সায়ন্তিকা খুব কড়া চোখে তাকালো।বুঝলাম যে সায়ন্তিকা’কে পেতে হলে আগে ওর বাবা’কে ইমপ্রেস করতে হবে।

    কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে পাগল হওয়ার যোগাড় হল। পিন্টুর ঠেকের অনারারি প্রেসিডেন্ট,খান তিরিশেক ব্যর্থ প্রেমের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রেমিক জয়দীপ দা,ওরফে ‘ভগবান’( ঠেকের চ্যাংড়া’রা এই নামকরণ করেছে।কারণ জয়দীপ দা কোনো বিষয়ে মত দেওয়ার সময় বলেন যে এটা জয়দীপ বিশ্বাস বলছে,অতএব তা অভ্রান্ত।আর ভগবান ছাড়া অভ্রান্ত আর কেইবা হতে পারে), প্রসাদের কাছ থেকে ফ্লেকের কাউন্টারে টান মেরে বলল,
    ‘সায়ন্তিকা’র বাবা পছন্দ করে এমন কোনো কাজ করতে হবে।তাহলেই হবে’।
    আমি জিগালুম, ‘কি রকম?’
    ‘আমার যে সাতাশ নম্বর প্রেমিকা ছিল,তার বাবা খুব বিদেশি সিনেমার ফ্যান ছিল।তাকে পটাবার জন্য একদিন নিউ ওয়েভ সিনেমা নিয়ে পাক্কা দুপাতার একটা লেকচার ঝেড়ে দিলুম।বাপ টা পুরো কাত।লেকচার টা অবশ্যি লাইব্রেরির বই থেকে মুখস্থ করা’।
    ‘তাপ্পর কি হল?’, আমার ব্যকুল জিজ্ঞাসা।মাধ্যমিকে অঙ্ক পরীক্ষার লাস্ট মিনিট সাজেশন নিয়ে লোকে যেমন আকুল থাকে,তেমন।
    ‘সাতদিন নন্দন আর রয়ালে ঘোরার পর মেয়েটা কেটে পড়লো’,ধোঁয়া ছেড়ে জানালো জয়দীপ দা।
    ‘ক্ক্যানো? মেয়েটাকে ফরাসী সিনেমার থিওরি বোঝাওনি?’
    ‘ধুস।মেয়েটার পছন্দ ছিল হেভিওয়েট বক্সিং।আর এদিকে আমি ক্রনিক আমাশা’র পেশেন্ট।আর মেলানো গেলো না।পেটে ঘুঁষি খেলে যদি পটি পায়,সেই ভয়ে আর প্রেমটা এগোলো না।সাকুল্যে চারদিনের রেস্তোরার বিল আর দুদিন সিনেমা মিলে সত্তর টাকা সাতাশি পয়সা লস’।জয়দীপ দা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল।
    সাধে কি কবি বলেছেন( অবশ্যি কবি ঠিক কি বলেছেন তা আমার জানা নেই।তবে পরমাণু বোমা থেকে আরশোলা সব বিষয়েই কবিদের বক্তব্য থাকে) যে প্রেমের পথে কত বাধা।কত শত্তুর।আমাশা সারাবার ওষুধ কি নিদেনপক্ষে একটা পোর্টেবেল টয়লেট থাকলে জয়দীপ দা’কে আর বাকি তিনটে প্রেম করতে হত না।রেস্তোরার কত বিল বেঁচে যেত।ইত্যাদি সাধু চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ছিলুম,তখনই জয়দীপ দা আপ্তবাক্যটি ছাড়লো,
    ‘মোদ্দা কথা,এটা জয়দীপ বিশ্বাস বলছে যে মেয়েকে পটাতে হলে তার বাপকে আগে পটাও।ঘোড়া ডিঙ্গিয়ে ঘাস খাওয়া চলবেনা বাপু’।

    কিন্তু কি করে পটাই?খান কতক বলিউডের সিনেমা দেখে ফেললুম।দেখলাম হিরোইনের ভিলেন বাবা’রা মাঝে মধ্যেই এমন বিপদে পড়ে,যে হিরোর সাহায্য ছাড়া উদ্ধার পাওয়ার উপায় থাকেনা।যেমন নায়িকার বাবার হয়ত হাসপাতালে রক্ত দরকার,একশো মাইল দূর থেকে নায়ক ছুটে আসবে,তার আসার আগে অব্দি কোনো ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে ওই গ্রুপের রক্ত পাওয়া যাবেনা।নায়িকার বাবা ততক্ষণ খাবি খাবেন( চপ-কাটলেটও খেতে পারতেন,কিন্তু খাবেন না),যেই নায়ক এসে রক্ত দেবে অম্নি তিনি তড়াক করে লাফিয়ে উঠে নায়ককে বুকে জড়িয়ে ধরবেন।আর পরের সিনেই মেয়ের সাথে প্রেমে মত দিয়ে দেবেন।
    কিংবা নায়িকার বাবা’কে খান কতক গুন্ডা ঘিরে এসে ধরেছে।প্রাণ কিংবা মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেবে।এমন সময় দেওয়াল ভেঙ্গে নায়কের এন্ট্রি (এরা কি দরজা দিয়ে ঢুকতে পারেনা?)।টপাটপ মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে গুন্ডাগুলো জানালা কি ছাদ ভেদ করে উড়ে যাবে।আর নায়িকার বাবা বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে নায়কের হাতে নায়িকাকে তুলে দেবেন।

    কিন্তু আমি চাইলেই তো আর সায়ন্তিকা’র বাবা হাসপাতালে যাচ্ছেন না।আমাকে সাহায্য করার জন্য তিনি হাসপাতালে যাবেন,এমন ভরসা আমার নেই।অন্যকে যেচে বাঁশ দেওয়ার জন্য লোকে তৈরী আছে কিন্তু অন্যের জন্য হাসপাতালে যাওয়ার মত মহৎ হৃদয় লোক কি আর আছে?
    আর গুন্ডারা ঘিরে ধরলে আমি নিশ্চিত সায়ন্তিকা’র বাবা মানিব্যাগের চেয়ে প্রাণটাই দিতে চাইবেন।তাছাড়া গুন্ডারা আমার হাতে মার খাবে কিনা সেটাও লাখ টাকার কোশ্চেন।আমি তাদের মারতে চাইলেও তারা যে অসহযোগ আন্দোলনে বিশ্বাসী নয়,এমন কথা কেউ বলেনি।

    তাহলে উপায়? শুনেছি সায়ন্তিকা’র বাবা সাঁতার কাটা খুব পছন্দ করেন।কিন্তু আমি সাঁতার মোটেও পছন্দ করিনা।মানে,আমার সাঁতার জানার দরকার পড়েনি।কারণ,আমি জলে নামলেই তো আমার আয়তন আর ওজনে সব জল উপচে পড়বে।
    সায়ন্তিকা শুনে বলল,
    ‘মোটেই না।যত ফ্যাট বেশি থাকবে বিজ্ঞান মেনে তার ক্ষেত্রে প্লবতা তত বেশী কাজ করবে’।
    আমি দেঁতো হাসি হেসে বললাম,
    ‘আমি তো সাহিত্যের ছাত্র। ওসব বিজ্ঞান আমার ক্ষেত্রে খাটবেনা’।

    শেষে সায়ন্তিকা বলল যে সায়ন্তিকা’র বাবা ‘জিনিয়াস’ বা প্রতিভাবান মানুষদের খুব পছন্দ করেন।সেদিন নাকি উস্তাদ রেজা আলি খানের গলায় গান শুনতে শুনতে ভাব বিভোর হয়ে পড়েছিলেন।
    তাহলে উপায় হচ্ছে নিজেকে প্রতিভাবান প্রমাণ করা।কিন্তু কি করে করবো? সায়ন্তিকা বলছিল ওর বাবা নাকি বলেন যে প্রত্যেকটা প্রতিভাবান মানুষের মধ্যে পাগলামি থাকে।রাইট।তাহলে আমার মধ্যেও পাগলামি আনতে হবে।তাহলেই সায়ন্তিকা’র বাবা বুঝতে পারবেন যে আমি প্রতিভাবান আর অম্নি সায়ন্তিকা’র সাথে আমার সম্পর্ক মেনে নেবেন।

    পাগলামি কি করে করবো তা বোঝার জন্য রাস্তাঘাটে স্বীকৃত পাগলদের স্টাডি করতে লাগলাম। আমাদের পাড়ার পাগলটা দুহাত চোঙার মত করে ধরে পলিটিক্যাল ভাষণ দেয়।কিন্তু সায়ন্তিকা’দের বাড়ির সামনে ওরকম ভাষণ দিলে ওর বাবা আমাকে লাঠি নিয়ে তাড়া করবেন।
    স্কোয়ার ফিল্ডের ধারের পাগলটা কোমরে বাঁধা দড়িতে একটা কুকুর নিয়ে ঘোরে আর মাঝে মধ্যে ট্রাফিক কন্ট্রোলের চেষ্টা করে।সেরকম করাটাও খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে হল না।
    আমার জানের দোস্ত প্রলয় শেষ অব্দি উপায় বাতলালো।ব্যাটা ইকনমিক্স এর বাইরে কিছু জানে বলে অ্যাদ্দিন আমার ধারণা ছিল না।হতভাগা বলল,
    ‘আরে পুরো পাগল হতে কে বলেছে? চোখে মুখে,পোশাক আশাকে পাগল পাগল ভাব নিয়ে আয়,তাহলেই সায়ন্তিকা’র বাবা বুঝে যাবেন যে তোর মধ্যে পাগলামি আছে।আর পাগলামি ইকোয়ালস টু প্রতিভাবান’।
    আনন্দে প্রলয়কে একটা ক্যাডবেরি সিল্ক খাওয়াতে যাচ্ছিলুম,মাসের তেইশ তারিখ বলে থেমে গেলুম।

    আমি এমনিতেই চুল আঁচড়াই কালেভদ্রে।এর পিছনে একটি করুণ ইতিহাস আছে।বয়সকালে যখন মাথায় শৌখিন টেরি বাগানোর চেষ্টা করছি,তখন স্বভাবতই বেরোনোর আগে আয়নার সামনে খানিক সময় কাটতো। রোজ বেরোনোর সময় আমার মাতৃদেবী নিয়ম করে জিজ্ঞেস করতেন,
    ‘আজ,কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস?’
    এই টর্চারে দুত্তোর বলে চুল আঁচাড়ানোই ছেড়ে দিয়েছিলাম।এতদিন পরে আজ তা কাজে এলো।আর লোকে বলে আমাকে নাকি এমনিতেই হাফ পাগল দেখতে।আয়রণ করা ধপধপে কাচা জামা কাপড় কোনোদিনই পরিনা,তাহলে বাকি রইল শুধু পাগল পাগল ভাব আনা।এবং তা সায়ন্তিকা’র বাবা’কে দেখিয়ে করতে হবে।জটিল কাজ।কিন্তু রাণা ,লেগে থাকো,তোমারই হবে।

    সায়ন্তিকা’র বাবা বিকেল বেলায় অফিস থেকে ফিরছেন।আমি পাড়ার মোড়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলুম।সায়ন্তিকা’র বাবা কাছে আসতেই ফুচকা’ রাখার পাতাটা কচমচিয়ে চিবোতে লাগলুম।ফুচকাওলা তো বটেই,সায়ন্তিকা’র বাবাও আমার দিকে ক্যামন অবাক দৃষ্টিতে তাকাতে তাকাতে চলে গেলেন।উনি চোখের আড়াল হতেই চিবোনো শাল পাতাটা মুখ থেকে ফেল্লুম।ওয়াক ত্থুঃ।কি বিচ্ছিরি খেতে।কিন্তু কি করি প্রেম করতে গেলে শাল পাতা কি দরকারে ভিক্টোরিয়াটাও খেতে হতে পারে।

    সেদিন সন্ধেবেলা সায়ন্তিকার বাবা যখন বাজারে যাচ্ছেন,তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে জোর গলায় গাইতে শুরু করলাম ( নোট- আমার গলায় গান = চ্যাচাঁনি),
    ‘হারেরেরেরেরে...আমায় ছেড়ে দেরে রেরে...’
    আশে পাশের লোকেরা অবাক হয়ে তাকাচ্ছিল।সায়ন্তিকা’র বাবাও খানিক হাঁ করে চেয়ে রইলেন,তক্ষুণি বাজারের ষাঁড় ভোলা তিরিক্ষে মূর্তিতে তেড়ে এলো,তাই রণে ভঙ্গ দিলুম।ফেরার সময় দেখছি সায়ন্তিকা’র বাবা আমাকে দেখেই খানিক জোরে হেঁটে এগিয়ে গেলেন।বুঝলাম যে আমার পাগলামি ওনার চোখে পড়েছে।কেল্লা ফতে।এবার উনি নিশ্চয় বুঝে যাবেন যে আমি প্রতিভাবান।

    সে রাতটা আনন্দে প্রায় জেগেই রইলুম।গোটা রাতটা কল্পনা করে কাটালুম যে সায়ন্তিকা’র বাবা কাল সকালেই আমার বাড়ির দরজায় এসে হাজির হয়ে বলবেন,
    ‘দাদা,আপনার ছেলে হেব্বি প্রতিভাবান।ওকে আমার বাড়ির জামাই করতে চাই’।

    কিন্তু সকাল সাতটা যখন নটায় দাঁড়ালো তখন আর থাকতে না পেরে সায়ন্তিকা’র বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

    সায়ন্তিকা’র মা বেশ ভয়ে ভয়ে দরজা খুললেন তারপরেই একদিকে সরে গেলেন।বেশ আত্মপ্রসাদ লাভ হল।অ্যাদ্দিনে তাহলে আমার গুরুত্ব বোঝা গেছে।যখন গুরুত্ব বোঝাই গেছে তখন আর পাগলামি দেখানোর দরকার নেই।বসার ঘরে ঢুকলাম।সায়ন্তিকার বাবা বসেছিলেন।আমাকে দখে বললেন,
    ‘এসো বাবা।এতক্ষণ,তোমার কথাই ভাবছিলাম’।

    আমার কথাই ভাবছিলেন??? এত মেঘ না চাইতে জল।প্রলয় তোকে আসমা’তে বিরিয়ানি খাওয়াবো।মনে মনে বললুম।বাইরে থার্টি টু অল আউট করে জিজ্ঞেস করলাম,
    ‘আচ্ছা।তাই? তা কি ভাবছিলেন?’

    ‘এই যে তোমার সমস্যাটা এবার মিটিয়ে ফেলা যাক।এভাবে আর কদ্দিন ঝুলে থাকবে? তাছাড়া যতদিন যাবে,সমস্যাটা বড় হবে’।সায়ন্তিকার বাবা বললেন।

    সমস্যা মিটিয়ে ফেলা???? মানে ত সায়ন্তিকা’র সাথে আমার সম্পর্ক মেনে নেওয়া।উরিব্বাস।দুটো সিনেই এত কাজ হবে ভাবি নি তো।জিজ্ঞেস করলুম,
    ‘তা সমাধান টা কি ভেবেছেন?’

    গলা খাঁকরে উত্তর দিলেন সায়ন্তিকা’র বাবা,
    ‘আমার এক ডাক্তার বন্ধু আছে কাঁকে’তে।রাঁচি থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে হাসপাতাল টা।তোমার প্রথম প্রথম পাগলামি’র লক্ষণ দেখা দিয়েছে।গিয়ে দিন দশেক থেকে এসো।এক্কেবারে সেরে যাবে’।

    দেখতে দেখতে সায়ন্তিকা’র সাথে অনেক দিন সুখে দুঃখে কাটিয়ে দিলাম।বাকি জীবনটাও এভাবেই কেটে যাক,এটাই আকাঙ্খা।কিছুদিন আগের কথা,আমার একটি আকাডেমিক উত্তরণের ঘটনা কে নিয়ে আমার এক পরিচিত সোস্যাল সাইটে একটি তীর্যক মন্তব্য করেন যা আমাকে অত্যন্ত আহত করেছিল।সেই মন্তব্যে প্রছন্নভাবে আমার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল যা আমার কাছে খুব অপমানজনক ছিল।তবে সুহৃদ রা পাশে ছিলেন।তারাই প্রতিবাদ করেন।

    সেদিন বিকেলে গঙ্গার ধারে বসে আছি আমি আর সায়ন্তিকা।অনভিপ্রেত কুতর্কে জড়িয়ে মনটা স্বভাবতই খারাপ।নরম রোদ্দুর তখন ছুঁয়ে যাচ্ছে আমাদের।অনেক অযাচিত ঝড়-ঝাপটা সামলাতে হয়েছে আমাদের দুজনকে।সব মনে পড়ে যাচ্ছিল।কোথাও থেকে একটা লুকোনো মন খারাপ এসে ঘিরে বসছিল।সায়ন্তিকা’র দিকে তাকালাম।চোখের কোণটা চিকচিক করছিল।
    সায়ন্তিকা তার গভীর চোখ তুলে আমার দিকে তাকালো।সে চোখে আশ্রয়ের নিশ্চিন্ত আশ্বাস।লাজুক হেসে আমার হাতটা ধরলো।

    আকাশ টা তক্ষুণি মাটিতে নেমে এলো।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৫ জুন ২০১৪ | ৯৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Abhijit Das | 79.141.164.129 (*) | ১৫ জুন ২০১৪ ০৯:৪৬73394
  • ভালো লাগল রানা দা , আর শশ্বুর মশায় এখ্ন ভালো আছেন তো ?
  • tm | 127.226.193.152 (*) | ০৬ জুলাই ২০১৪ ১০:৫০73395
  • accha rana da, apnar shwashur moshay er kono facebook account nei to?????
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন