এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • দুই তান্ত্রিক গুরুর গপ্পো

    অর্পিতা ব্যানার্জী লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ২৩ মে ২০১১ | ৮৩৭ বার পঠিত
  • এই পৃথিবীতে দুই তান্ত্রিক গুরু আছে। তাদের নাম হল ধনা আর গণা। তারা তন্ত্রবিদ্যায় খুব পারদর্শী। কী বলছেন? কেমন তাদের তন্ত্রবিদ্যা? বলব, বলব। বলব বলেই তো গপ্পো ফেঁদে বসেছি। কিন্তু তাদের বিদ্যার পরিচয় দেবার আগে তাদের নিজেদের পরিচয়টা আরেকটু খোলসা করে জেনে নিলে বেশ হয়। লোকে বলে ধনা আর গণা হল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুই তান্ত্রিক। তবে তাদের মধ্যে কে কার থেকে বড় তান্ত্রিক তা নিয়ে বেশ তর্ক আছে। এটুকু বলে নিই যে বয়সে গণা ধনার থেকে অনেকটাই বড়।

    গণার বাবা-কাকারাও কিন্তু তান্ত্রিক ছিল, তারা নানা দেশে তাদের বিদ্যার চর্চা করত, যেমন এথেন্স, স্পার্টা, মেসোপটেমিয়া, ভারত (মানে আজকের ভারত যে ভূগোলে সেইখানে) ইত্যাদি প্রভৃতি। গণা তার গুরুজনদের বিদ্যাকে আরো প্রসারিত করে তাদের মুখোজ্জ্বল করেছে। এখন গণা আজ ইউরোপ তো কাল আমেরিকা তো পরশু ভারত, থুড়ি ইন্ডিয়া করে বেড়ায়। গণার এখন খুব ডিমান্ড। পৃথিবীর সব দেশই গণাকে চায়।

    সেদিক থেকে দেখতে গেলে ধনা খুব সেলফ-মেড। যদিও ধনার বাবাও তান্ত্রিক ছিল, তবে তার নাম ছিল বণিক। ধনা তো তার বণিকতান্ত্রিক বাবার শেখানো বিদ্যাকে স্বীকারই করেনি, বরং একটা নিজস্ব তন্ত্রবিদ্যার ঘরাণা তৈরি করেছে। ধনা কিন্তু গণার মত অমন হুট করে ফেমাস হতে পারেনি। অনেক দেশই ধনাকে প্রথমে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। তারপর ধনা এক অসাধারণ বুদ্ধি বের করলো, যার ফলে ধীরে ধীরে, এই ধরুন গত শতকের আশির দশক থেকে ধনারও প্রতিপত্তি বাড়তে লেগেছে। বুদ্ধিটা হল এই, ধনা এক বহুজাতিক, মানে যাকে আমরা বাংলায় মাল্টিন্যাশানাল বলি, তেমনি এক এজেন্সি খুলে বসল। আর যারা বা যেসব দেশগুলো ধনাকে তাদের গুরু মেনেছে, তারা ধনার হয়ে এজেন্টের কাজ শুরু করল। ভাববেন না যে তারা ধনাকে খুব কৃপা করেছে, উলটে ধনাকেই তাদের মোটা টাকা মাইনে, গাড়ি, বাড়ি, ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স এইসব দিতে হয়। এইসব এজেন্টরা যখন দেখল যে ধনা নামের এই তান্ত্রিক গুরু তাদের আর তাদের পরিবার, ছেলে-পুলেদের চীজে-ওয়াইনে রাখার জিম্মা নিয়েছে, তখন তারাও গুরুদক্ষিণা দিতে লাগল। দায়িত্ব সহকারে ধনা তান্ত্রিকের মাহাত্ম্য দেশে দেশে প্রচার করতে লাগল আর ভারি সফলও হল। দেখতে দেখতে ধনা গুরুর বেশ একটা আন্তর্জাতিক খ্যাতি হল।

    হ্যঁ¡ কি যেন জানতে চাইছিলেন শুরুতেই? তাদের তন্ত্রবিদ্যার কথা? বলুন দেখি এমন দুই ভুবন(ডাঙ্গা)-বিখ্যাত তান্ত্রিক গুরুর পরিচয় পেয়ে তাদের বিদ্যা নিয়ে জানার ইচ্ছে আরো বেড়ে গেল না? হবেই তো। এইটাই তো তন্ত্রবিদ্যার মাহাত্ম্য, আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, তাদের প্রতি আকর্ষণটা কিন্তু মনে মনে অস্বীকার করতে পারবেন না। এইবারে তাহলে তাদের বিদ্যার কথা বলি? তার সাথে এদের দুজনের মধ্যের অম্ল-মধুর সম্পর্কটার কথাও বলে নেবো, হ্যঁ¡?

    এই দুই গুরুর তন্ত্রবিদ্যা দুঞ্চরকম। গণা হল ঝানু রাজনীতিজ্ঞ, আর ধনা হল পোক্ত অর্থনীতিবিদ। গণাকে যে দেশ গুরু মানে, সে দেশের রাজনীতি, আইন-কানুন সবকিছু গণার তন্ত্রবিদ্যা অনুযায়ী হতে হয়। সেসব দেশে সবার আগে গণা তান্ত্রিকের একটা পবিত্র মন্দির বানাতে হয়, যাকে আমরা বাংলায় বলি পার্লামেন্ট। গণার তন্ত্র বলে যে দেশের সক্কলে মিলে মতামত দিয়ে সবার সুবিধে মত নানা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে আর সেইমত দেশটা চলবে। আগে অবশ্য গণার তন্ত্র একথা বলত যে দেশের সব নাগরিক গণার মন্দিরে গিয়ে নিজেদের মতামত দেবে আর সেইমত সবকিছু হবে-টবে। কিন্তু সে ব্যাপারটা তেমন জনপ্রিয় হতে পারেনি। তা গণা তান্ত্রিক খুবই বাস্তববাদী। সে যখন দেখল যে দেশগুলোর মধ্যে কিছু লোককে মন্দিরের পুরোহিত করে দিলে তার তন্ত্রবিদ্যার প্রচার অনেক সহজ আর ভালো করে হতে পারে, তখন ওই যারা পুরোহিত হতে চায়, তাদের সাথে রফায় পৌঁছাল। স্থির হল যে গণার মন্দিরে যেসব পুরোহিতরা অধিকার পাবে তারা মতামত দিয়ে দেশের ব্যাপার-স্যাপার সব ঠিক করবে, আর বাকি লোকেরা, মানে সিটিজেনরা (শুধু সিটি-র নয় কিন্তু, গ্রামেরও) বরং কিছুদিন পর পর কারা পুরোহিত হবে সেটা ঠিক করবে। সিটিজেনদের যেমন দুগ্‌?গাপুজো, ঈদ বা এক্সমাস, তেমন ফি-বছর যদি গণা-মন্দিরের পুরোহিত বদলায়, তবে তো ভারি মুশকিল। আরে বাবা পুরোহিতদের পুজো শেষ করার টাইম দিতে হবে না? আর পুজো করার খরচা নেই? সে তো সিটিজেনদেরই দেওয়া কর্তব্য নাকি? নইলে পুরোহিতরা আবার কোত্থেকে পুজোর খরচ যোগাবে? দেশ যে চলে, মানে পুরোহিতরা যে দেশ চালায়, তা তো সিটিজেনদের জন্যেই। তা সিটিজেনরাও বলল (যদিও তাদের বলাটা তেমন ঠাহর করে শোনা যায়নি, তবে পুরোহিতরা বলল যে সিটিজেনরাও একথা বলেছে) যে ঠিক কথা, পুরোহিত নির্বাচনটা বরং চার-পাঁচ বছর পর পর হবে। তাই প্রত্যেক চার-পাঁচ বছরে যারা যারা পুরোহিত হতে চায় তারা সক্কলের পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বোঝায়, জানায়, শেখায় যাতে তন্ত্রপুজোর কঠিন কাজ সম্পর্কে অজ্ঞ সিটিজেনরা ঠিকঠাক লোককে পুরোহিত বাছে। আর মাঝে-সাঝে বোঝানোতে কাজ না হলে একটু চোখ রাঙাতেও হয়, কি আর করা যাবে। যে ব্যারাম লাঠ্যৌষধিতে সারার কথা, কত আর তাতে বাক্যৌষধি ব্যবহার করা যায়? তাছাড়া সিটিজেনরা তো কখনো কখনো এটাও বোঝেনা যে ঐ ওষুধগুলোও তো কিনতে হয় সিটিজেনদের টাকাতেই। তাই তাদের ভালোর জন্যেই পুরোহিত বাছার ব্যাপারটাও অনেকসময় পুরোহিতদেরই দায়িত্ব নিয়ে করাতে হয়। গণা তান্ত্রিক এসব ব্যাপারে খুব লিবারাল। পুরোহিতদের একদম ছাড় দিয়ে দিয়েছে, যাতে তারা যেকোনো উপায়ে তাদের গুরুর মহিমা বজায় রাখতে পারে। ফলে কি হয়েছে, পুরোহিতরা অনেকটা তাদের গণা গুরুর মতই ক্ষমতাবান হয়ে চার-পাঁচ বছরের জন্য নিশ্চিন্ত হয়ে দেশের ব্যাপার-স্যাপার চালায়। আর তাতে করে পুরোহিতদের মান্য করা মানেই গণা গুরুকে মান্য করা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সিটিজেনদের জন্য রামের খড়ম = রাম হয়ে গেছে। আর যার হাতে ঠাকুরপুজো করার ক্ষমতা, সে তো কুলীন হবেই। ঠাকুর কী চায়, মানে গণা গুরুর মাহাত্ম্য কী করে বজায় থাকবে সে ব্যাপারে পুরোহিতদেরই সবসময় নজর রাখতে হয়। খুব কঠিন কাজ, তাই গণা গুরুর তন্ত্র অনুসারে আইন-কানুন, পুলিশ, মিলিটারি, আদালত, জেলখানা এইসব জটিল প্রতিষ্ঠানগুলোকে চালাতে হয়, তার খরচা তো সিটিজেনদেরই দিতে হয়, কারণ গণা তান্ত্রিকের অনুগামী দেশটা আদতে তো ঐ সিটিজেনদের জন্যেই চালাতে হয়, পুরোহিতরা তো নিমিত্ত মাত্র।

    তবে কিনা হাতের পাঁচটা আঙুল তো আর সমান হয় না, তাই মাঝেসাঝেই এখানে ওখানে সিটিজেনরা পুরোহিতদের কাজকর্ম নিয়ে মুখ ভার করে, দল পাকায়, লোক ক্ষেপায়। পুরোহিতদের নামে অপবাদ দেয় যে গণা গুরুর মহিমার নামে পুরোহিতরা সিটিজেনদের থেকে খালি টাকা, জমি, জঙ্গল নিয়ে নিচ্ছে কিন্তু তার বদলে তাদের কথায় কানও দিচ্ছে না আর তাদের কোন কাজও করে দিচ্ছে না। এইসব অবোধ অকৃতজ্ঞের দল গুরুর কৃপাকেও পর্‌যন্ত মনে রাখে না। পুরোহিতদের তাই বাধ্য হয়ে ঐসব জটিল প্রতিষ্ঠানগুলোর সাহায্‌য নিতে হয়। নইলে যে গণা তান্ত্রিকের তন্ত্রবিদ্যা পন্ড হয়ে যাবে!

    এ তো গেল গণা তান্ত্রিকের বিদ্যা আর তার প্রচার প্রক্রিয়া। এবারে চলুন দেখি ধনা তান্ত্রিকের বিদ্যা কী বলে। আগেই বলেছি ধনা হল জম্পেশ অর্থনীতিবিদ। দেশে দেশে তার পান্ডিত্যের কদর। ফি-দিন হার্ভার্ড-এমাইটি-অক্সফোর্ড-এলেসি-তে তার নামসংকীর্তন করা হয়। গণার যেমন আছে পুরোহিতরা, তেমনি ধনার আছে এজেন্টরা। গণা তান্ত্রিকের শিষ্য দেশগুলোতে যেমন পুরোহিতরাই গুরুর জায়গা নেয়, তেমনি ধনা তান্ত্রিকের এজেন্টরাই তাদের গুরুর বাণী প্রচার করে থাকে। তা ধনার তন্ত্রবিদ্যা কী বলে? বলে যে দেশে যেসব জিনিষপত্র বানানো হয় তার জন্যে কাঁচামাল, মূলধন এইসব ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে হবে, জিনিষ বানানো আর বাজারে বেচা হতে হবে মুনাফার জন্যে। বলাই বাহুল্য সে মুনাফা ঐ ব্যক্তিগত সম্পত্তির মালিকেরই হবে। এইভাবে যারই মূলধন আছে, সে জিনিষ তৈরি করা আর বেচার প্রক্রিয়ায় নেমে পড়তে পারবে, আর সবাই মিলে তৈরি হবে এক বাজার। সেই বাজার হবে এক সর্বশক্তিমান সদা-বিরাজমান অ-মানুষিক মেশিন। বাজার উঠবে, নামবে, দৌড়বে, থামবে, শোবে, বসবে, খাবে-দাবে কলকলাবে। আর দেশের সক্কলে সেই বাজারের ভাব-গতিক মত তাদে্‌র জীবন চালাবে। আর যদি তাতে জীবন চালানো দায় হয়ে পড়ে তাহলে মানতে হবে যে জীবন চালানোর যোগ্যতা তার নেই। বাজারকে তার মত চলতে দেওয়াই হল ধনা তান্ত্রিকের পুজো। আর বাজার পৃথিবীর সবথেকে নিরপেক্ষ মেশিন (বোধহয় গণা তান্ত্রিকের ঐ আদালত বলে যে প্রতিষ্ঠানটা, তার চিহ্ন ঐ চোখ-বাঁধা মহিলার থেকেও বেশী নিরপেক্ষ)। ধনা গুরুর তন্ত্র সবাইকে সেটুকুই দেয় যেটুকু তার প্রাপ্য। তাই যে যা পায়না, সে তা পাবার যোগ্য নয় বলেই পায়না। সক্কলে যদি বাজারে তার বানানো জিনিষ বেচে, তাহলে সক্কলেই তো সমান অধিকার পাচ্ছে একটুকরো মুনাফা ফেরত পাবার। তাই ধনা তান্ত্রিকের এই ব্যবস্থা সক্কলের মঙ্গলের জন্যেই ভেবেচিন্তে বানানো। তবে কিনা যতক্ষণ না ধনা তান্ত্রিক তার ঐ বহুজাতিক এজেন্সি খুলল আর তার এজেন্টদের বাজারের মুনাফার ভাগ বাকিদের থেকে একটু বেশী দেবার ব্যবস্থা করল, ততক্ষণ কিন্তু তার বিদ্যার এমন ভুবন(ডাঙ্গা)-ব্যাপী খ্যাতি ছড়ায়নি। যেসব লোকে ধনার তন্ত্রবিদ্যায় দীক্ষিত হবার আগে তার বাবা, মানে বণিকতান্ত্রিকের ভক্ত ছিল, তারা ধনার ঐ তন্ত্রবিদ্যার বই পড়ে গুরু পাল্টানোর জন্যে ঠিক পরিমাণমত ক্ষমতা বা সম্পদের আশ্বাস পাচ্ছিল না। বোধহয় বইয়ের তন্ত্রবিদ্যার সূত্র আর হাতে-কলমে তার ব্যবহার এদুটোর মধ্যের বিস্তর ফারাকটা দেখিয়ে দিল যে বইয়ে যেটা লেখা ছিল সেটা বইয়ের বাইরে বেশীদিন বাঁচতেই পারে না। ধনা গুরুর এজেন্টরা খুব এফিসিয়েন্ট। তারা খুব যত্ন করে নানান দেশে নানান জায়গায় পরিব্রাজকের মত ঘুরে ঘুরে ধনা গুরুর তন্ত্র প্রচার করে চলেছে। তারা এমনি এফিসিয়েন্ট যে বারবার এক কথা তাদের বলতেই হয় না। লোকে, মানে ঐ সিটিজেনরা (বিশেষ করে যারা ভুবনডাঙ্গায় ভাড়া থাকে) ধীরে ধীরে নিজেরাই নিজেদের কাঁধে ধনা গুরুর মহিমা প্রতিষ্ঠার দায় তুলে নিয়েছে। এজেন্টরা আজকাল হাঁ করলে ভুবনডাঙ্গার ভাড়াটেরা বুঝে যায় যে এবারে এজেন্টদের হাঁচার বড় প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।

    তা এই দুই তান্ত্রিক গুরু, এরা কি দুজনে দুজনকে চেনে, জানে? একশোবার! ধনার ঐ এজেন্সি তৈরিতে আর তার মহিমা প্রচারের ব্যাপারে গণাও কত সাহায্‌য করল (শুধু একটা দেশে, ঐ যেটা হল গিয়ে চীন্দেশ, ধনা গুরু একাই তন্ত্রসাধনা করেছে গণা গুরুর তোয়াক্কা না করেই), ধনার এজেন্টরা গণার মহিমাকে কত যুদ্ধে ধ্বংস হওয়া যদুবংশের দেশে টুক করে ঢুকতে দিয়ে দিল, আর আপনি কিনা বলছেন...

    ঐ যে বললাম না যে ধনা গুরুকে অনেক দেশে ঢুকতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল, তখন তো গণা গুরু তার পুরোহিতদের কাছে আবদার করেছিল যে তার পুজোর সাথে সাথে যেন ধনা গুরুর উদ্দেশ্যেও একটু ফুল-ধুপ দেওয়া হয়। আর সিটিজেনদের কাছে যেন এই কথাটাও বলা হয় যে ধনা গুরুর নাম এই বলে খ্যাত হোক যে সে জ্ঞতোমাদেরই লোকঞ্চ। তাতে ধনা গুরুর এজেন্সির খুব সুবিধে হয়েছে। এজেন্টদের বিপদে-আপদে পুরোহিতরা বুক পেতে দিয়েছে। সারা পৃথিবী জুড়ে যত ধনা গুরুর এজেন্ট আছে, তারা দেশ-কালের সীমা পেরিয়ে বিশ্ব-জোড়া ফাঁদ, থুড়ি চাঁদ-এর হাট বসিয়েছে। এই ফাঁকে একটা পিএনপিসিও করে নিই, কিছু মনে করবেন না। কানাঘুঁষোয় শুনে এলাম যে ধনা গুরুর এক নাজায়েজ ছেলে আছে, আর সে বেশ বড়ও হয়ে উঠেছে। ধনা গুরু তো ভারি আপনাভোলা আমুদে মানুষ, জগতের এই আনন্দযজ্ঞে কখন কোথায় তিনি মহিমার সাথে সাথে আরো কিছু বিলিয়ে বসে আছেন তা কি আর গুরুর অত মনে থাকে বলুন? তা সে যাই হোক, কথাটা কিন্তু সত্যি বলেই শুনে এলাম। ধনা গুরুর সেই ছেলের নাম কর্পো। সেও এখন ভুবনডাঙ্গা হাউসিং-এর মাঠে জটলা করছে আরও সব এজেন্টদের ছেলেপুলেদের সাথে। তারা খুব পিওর তন্ত্রবাদী, তাই তারা নানা দেশের বাছাই করা এজেন্ট সন্তানদের নিয়ে বাছাই করা কমিটি করেছে। কো্‌নো কমিটি যাতে সব দেশে সিটিজেনরা কাজের যায়গায় জটলা করে গুরুকে অমান্য না করে সেটা দেখবে, কোনো কমিটি আবার যাতে সব দেশের বানানো জিনিষপত্র এজেন্টদের হিসেবমত ভুবনডাঙ্গার বাজারে কিনতে পাওয়া যায় সেইদিকে নজর রাখবে।

    এখন এই ব্যাপারটা তো আর গণা গুরু আর তার পুরোহিতদের সহযোগিতা ছাড়া দুম করে হতে পারে না। তাই গণা গুরুকেও চুপি চুপি ধনা গুরুর এই নাজায়েজ কান্ডটাকে মেনে নিতে হচ্ছে, জায়েজ আর নাজায়েজ এর ভাগাভাগিটা গণা গুরুর তন্ত্রমতেই হওয়া সত্বেও। আসলে হয়েছে কি, পুরোহিত আর এজেন্ট বিনা তো এই দুই তন্ত্রগুরুর এক-পা নড়ার উপায় নেই, ফলে একটু-আধটু রফা তো করতেই হয়। তা গণা গুরু তার পুরোহিতদের বলে দিয়েছেন ধনা গুরুর এজেন্টদের সাথে সবরকম সহযোগিতা করার জন্যে। তাই তো নানান দেশে পুরোহিতরা ধনা গুরুর এজেন্টদের জন্যে জ্ঞবিশেষঞ্চ মুক্তাঞ্চল বানিয়ে দিচ্ছে, কিছু নেহাত অদরকারি সিটিজেনদের ভাগিয়ে জমিজিরেত, জঙ্গল, খনি, নদীর জল, আর যা যা লাগে তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে, নিজেদের গুরুর বলে দেওয়া জায়েজ আর নাজায়েজ এর ভাগাভাগিটাও মুলতুবী রেখে দিয়েছে, আর গণা তান্ত্রিক যত জটিল প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোকে এইসব এজেন্টদের কাজে নাক না গলানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

    আসলে কি জানেন? তন্ত্রবিদ্যা তো আর রোজকার আহ্নিক করা নয়, এতে অনেক সাধনা, অনেক ত্যাগ লাগে, আর একলা একলা তো করাই যায় না। পুরোহিত আর এজেন্ট ছাড়া সেই তন্ত্রবিদ্যার মাহাত্ম্যকে বাড়িয়ে চলা সম্ভবই নয়। আর আপনি যদি গুরুর মহিমায় সন্দেহ করেন, তবে আগে এই হিসেবটা করতে হবে যে জীবনের কোন কোন ব্যাপারে আপনি-আমিও দুই তান্ত্রিক গুরুর মহিমাকে তুলে ধরায় সাহায্‌য করে বসে আছি। দেখবেন, ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় না হয়ে যায়। এমন ভুবনমোহিনী বিদ্যা বলেই না গুরুর এমনি একমেবাদ্বিতীয়ম অবস্থান।

    সূত্র: স্মিথ, অ্যাডাম(১৭৭৬) – অ্যান এনকোয়ারি ইনটু দ্য নেচার অ্যান্ড কসেস অফ দ্য ওয়েলথ অফ নেশন্স।

    শুম্পিটার, যোসেফ (১৯৪২) – ক্যাপিটালিসম, সোশ্যালিসম অ্যান্ড ডেমোক্রেসি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ২৩ মে ২০১১ | ৮৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন