এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ওলিতিল ঈন্তের্ফেরেে ্রপ্পিঙ্গ লে্তিওন্স

    সলিল বিশ্বাস লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২২ নভেম্বর ২০১১ | ৬০২ বার পঠিত
  • প্রথমেই বলে নিই, আমি মনে করি এবং আমার মত অনেকেই মনে করেন যে পশ্চিমবঙ্গের ২০১১ সালের ৩নং অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স বা পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন (সংশোধনী) অধ্যাদেশ, ২০১১ সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য একটি পদক্ষেপ যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষতি করবে এবং সরকারের উচিত এটিকে প্রত্যাহার করে প্রকৃত গণতান্ত্রিক এবং সাংবিধানিক রীতিনীতি মেনে বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে দলতন্ত্রের অবসান ঘটানো, দল-নির্ধারিত আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা নয়। নাহলে আমরা বর্তমান তিমিরেই থেকে যাব, কড়াই থেকে আগুনে পড়ব। ইতিমধ্যেই বহু শিক্ষাবিদ, শিক্ষা কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত মানুষ, ছাত্ররা, শিক্ষাকর্মীরা, এবং সাধারণভাবে শিক্ষা-অনুরাগী মানুষ এই আদেশকে প্রত্যাহার করার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। আমি সেই সব বিরোধীর কথা বলছি না, যাদের ক্ষমতালোভ, দুর্নীতি ও অবিমৃশ্যকারিতা বামপন্থাকে মসিলিপ্ত করেছে এবং এখন যারা কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করতে করতে ভাল ভাল কথা বলছে। আমি তাঁদের কথা বলছি যাঁরা দীর্ঘদিন শিক্ষাক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেছেন এবং নানা ভাবে নিগৃহীত হয়েও মাথা নামাননি। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বর্তমান সরকারের শুধু আশ্বাসভাজনই নন, তাঁরা সরকার নিয়োজিত উচ্চশিক্ষা বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটিরও সদস্য। আরও অনেক নানা ধরণের সংগঠনের মত শিক্ষক ও বৈজ্ঞানিকদের সংগঠন "টাসাম'(Teachers and scientists against Maldevelopment) দ্বর্থহীন ভাষায় এই অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করেছেন এবং এটিকে প্রত্যাহার করতে অনুরোধ করেছেন। সরকার এই সব কথায় কর্ণপাত করলে ভাল করবেন।

    সারা জীবন শিক্ষকতা এবং শিক্ষা-প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় শিক্ষা জগতের কিছু জিনিস আমার বেশ ভাল জানা আছে, বেশ ভাল করে পরিচিত আছি পূর্ববর্তী সরকারের নিয়ন্ত্রণ আর হস্তক্ষেপ, মধ্যমেধা, নিম্নমেধা এবং মেধাহীনতার পৃষ্ঠপোষণ এবং "অনিলায়ন'-এর সঙ্গে।

    নিয়ন্ত্রণ আর হস্তক্ষেপ আমরা এতদিন দেখে এসেছি প্রতিনিয়ত। সেখানে অবশ্য হস্তক্ষেপ ছিল স্থূল, নীতি নির্ধারণের প্রয়াস ছিল জনতোষণ এবং গা-জোয়ারির এক বিচিত্র ও বলাই বাহুল্য, ভীতিপ্রদ আর চরম ক্ষতিকর সংমিশ্রণ। নতুন সরকার আসার পরে স্বভাবতই অনেকের মনে প্রত্যাশা জেগেছিল অনেক, কিন্তু গত কিছুদিনের ঘটনাক্রম আমাদের চিন্তিত করছে। শিক্ষাক্ষেত্রে উচ্চতম নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে আমাদের কয়েকজন বন্ধু আছেন আশংকার কারণগুলোর প্রতি যাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়নি এমন নয়। কিন্তু মনে হয়েছে তাঁদের কথাকে খুব একটা মূল্য দেওয়া হচ্ছে না। নেপথ্যে কাজ করছে শিক্ষার পণ্যায়নের তাগিদ, যার একমাত্র কাজ হবে বৃহৎ পূঁজির ভৃত্য সৃষ্টি। শিক্ষা-বিষয়ক সাম্প্রতিকতম অধ্যাদেশ বা "অর্ডিন্যান্স' আমাদের মনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করছে।

    যে কোন সময়েই "অর্ডিন্যান্স' বস্তুটির মধ্যেই যে লুকিয়ে থাকে স্বৈরতন্ত্রের বীজ, একথা সংবিধানের যে কোন ছাত্র-ই জানেন। বিশেষ করে যেখানে সে অর্থে কোন আপৎকালীন পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই। বারে বারে সরকারি মহল থেকে শোনা গেছে বিভিন্ন ব্যাপারে "এতদিন গেছে' দলতন্ত্রে, আর দু-চার দিন সময় না পেলে কাজ সম্পন্ন করা কি যায়? তাহলে এর মধ্যে কী এমন ঘটল যে মাননীয় একজন মন্ত্রী মহাশয় তড়িঘড়ি এমন একটি অধ্যাদেশ মন্ত্রীসভায় পেশ করলেন?

    খুব দ্রুততা এবং গোপনীয়তার মধ্যে দিয়ে আদেশনামা তৈরি হয়ে রাজ্যপালের দস্তখত সম্বলিত হয়ে প্রচারিত হয়ে গেল। আমজনতা, যাঁদের আশীর্বাদ ছাড়া মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এক-পাও এগোতে পারতেন না, কিছুই জানলেন না। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যাঁরা তাঁরাও জানলেন না। উচ্চতম কমিটিতে উপবিষ্ট আমাদের বন্ধুরা জানলেন কিনা জানি না। যাঁরা আদেশনামার দ্বারা সর্বাপেক্ষা প্রভাবিত হবেন, তাঁরা জানলেন না। বিচার হইয়া গেল। খবরের কাগজে জানা গেল, ২রা নভেম্বর থেকে বলবৎ হয়েছে আদেশনামা। এতদিনে অধ্যাদেশটি প্রকাশিত হয়েছে। পাঠ করে যা জানে গেছে তাতে পূর্ববর্তী ধারণাগুলি সঠিক বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

    যা জানা গেছে তার অনেক কিছুর মধ্যেই অশনী-সঙ্কেত ধ্বনিত হচ্ছে। বিস্তারিত বলার জন্য অধ্যাদেশটিকে অনুপূঙ্খ বিশ্লেষণ করতে হবে। বিশেষ কথাগুলি বলতে বলতে খানিকটা আলোচনা করা যাক।

    • নির্বাচন নয়, মনোনয়নই হবে সব পরিচালন সমিতি (সিনেট, সিন্ডিকেট, কোর্ট, কাউন্সিল প্রভৃতি) গঠনের প্রধান পদ্ধতি। বর্তমান সরকার নাকি পরিচালন সমিতিতে জনপ্রতিনিধিদের প্রতিনিধিত্ব তুলে দেবেন। যদিও বৃহৎ সংখ্যায় মনোনীত সদস্য দিয়ে সমিতিগুলিকে ভরাট করা হবে। এবং মজার কথা হল, এনারা যদি রাজনৈতিক দলের সদস্য হন, তাহলে আপত্তি থাকবে কিনা সে বিষয়ে অধ্যাদেশ একেবারে চুপ। অথচ বলা হচ্ছে দলতন্ত্রের বদলে "রাজনৈতিক-হস্তক্ষেপমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা সৃষ্টি' হল উদ্দেশ্য।

      নির্বাচন যে একটি বহু পরীক্ষিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এবিষয়ে সন্দেহ বর্তমান সরকারের থাকার কথা নয়। এই একটি ধ্বনি তুলেই তো তাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন। তাহলে নির্বাচনের প্রতি এই অনীহা কেন? কোন দেশি গণতন্ত্র এটা? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। নির্বাচন সব সময় মনোনয়নের চাইতে গণতান্ত্রিক। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে হস্তগত করে দলতন্ত্র তাকে বিকৃত করেছিল ক্ষমতার স্বার্থে। তার মানে এই নয় যে শিশুকে স্নান করানোর পর নোংরা জলের সঙ্গে শিশুটিকেও নর্দমায় নিক্ষেপ করতে হবে। নির্বাচনকে সুস্থ করে না তুলে বর্জন কেন করা হচ্ছে? কী ধরণের ভাবনার প্রতিচ্ছবি এটা? ঘরপোড়াদের একথা মনে আসাই স্বাভাবিক যে নামার আগে জলটা ঠান্ডা না গরম দেখে নেওয়া হচ্ছে এই সিঁদুরে অধ্যাদেশ দিয়ে, আগামী দিনে আরও বড় কোন পদক্ষেপের প্রস্তুতি হিসেবে।

      নির্বাচন যে রিগিং-মুক্ত হতে পারে একথা বর্তমান সরকার আশা করি মানবেন। বিশেষ করে যখন সে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব তাঁদের হাতেই বর্তাবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে বিসর্জন দিয়ে কিছু ব্যক্তির (সে তাঁরা যতই নিরপেক্ষ বা মেধাবী বা শিক্ষাদরদী বা দক্ষ বা সদিচ্ছাসম্পন্ন হোন না কেন) ইচ্ছা আর পছন্দর উপর শিক্ষা-নিয়ন্ত্রকদের নিয়োগ ছেড়ে দিতে আমি অন্তত রাজি নই। যাঁদের হাতে এই ক্ষমতা অর্পিত হতে চলেছে তাঁরা কে কে, তা এখনো সঠিক জানা নেই। আপাতত সবই "চ্যান্সেলর'-এর নামে চালানো হচ্ছে। কিন্তু লঙ্কা এবং রাবণ সম্পর্কে প্রখ্যাত প্রবাদটি ভুলে যাবার এখনো তেমন কারণ ঘটেনি, তাই "ব্যক্তি'-র চাইতে দল নিরপেক্ষ "বহু'-র বিচার ক্ষমতায় আমার আস্থা বেশি থেকেই যাচ্ছে।


    • এখন থেকে উপাচার্যদের নিয়োগ করা হবে মনোনয়নের মাধ্যমে। তাঁকে নিয়োগ করবে সরকার-সৃষ্ট সার্চ কমিটি, যাদের মধ্যে একজন হবেন "চ্যান্সেলর', মানে রাজ্যপালের প্রতিনিধি, একজন থাকবেন ইউজিসি'-র প্রতিনিধি আর একজন থাকবেন সিনেট-এর প্রতিনিধি। এনাদের কেউ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। সহ-উপাচার্যকে নিয়োগ করবেন উপাচার্য, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে।

      সিনেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত নন এমন যাঁরা থাকবেন তাঁদের বেশির ভাগই হবেন সরকারের লোক। রাজ্যপালের প্রতিনিধি কে হবেন তা খোলসা করা নেই। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ব্যাপারটা কী দাঁড়াতে যাচ্ছে। আর, আজকাল কি অ-দলীয় অ-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের শিক্ষামন্ত্রী করা হচ্ছে? ধরে নেওয়া যাক শিক্ষামন্ত্রী কেবল শিক্ষার স্বার্থই মাথায় রাখবেন। কিন্তু "শিক্ষামন্ত্রী' তো আর কেউ আজীবন থাকেন না।


    • উপাচার্য হবেন একজন আদ্যোপান্ত অ-রাজনৈতিক ব্যক্তি। তিনি হবেন সেই মানুষ যিনি জন্মাবধি রাজনীতির ধারেকাছে আসেননি, কোন দলের সঙ্গে যাঁর কস্মিনকালে সম্পর্ক ছিল না এবং থাকবে না। নিয়োগের আগে বা পরে তেমন কিছু জানা গেলে তক্ষুনি তাঁকে অপসারিত হতে হবে। অর্থাৎ, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও বেঁচে থাকলে এরাজ্যের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হতে পারতেন না, অথবা কোনক্রমে হয়ে গেলে তাঁকে ছাঁটাই হতে হত।

      "অ-রাজনৈতিক ব্যক্তি'? সেটা কী বস্তু আমার জানা নেই। আর যাঁরা রাজনৈতিক ভাবনা-চিন্তা রহিত হন, পান্ডিত্য-ফান্ডিত্য থাকলেও, তাঁদের মানুষ হিসেবে খুব মহৎ বলা যায় না বলেই মনে হয়। এই ধরনের মানুষ সব সময়েই কর্তাদের হাতে ক্রীড়নক হন। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ভার এমন মানুষের হাতে দেওয়া কি করে যায় আমি জানি না। অবশ্য, লুকনো উদ্দেশ্য থাকলে স্বতন্ত্র কথা।

      কাউকে যদি বলে দেওয়া হয় যে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, কোন দলের থাকতে পারবেন না, তাহলে তাঁকে তাঁর সংবিধান-প্রদত্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না কি? এমনকি অতীতেও তিনি কোন দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন যদি জানা যায়, তাহলে তখুনি তিনি ছাঁটাই হবেন। এর চাইতে অপমানজনক শর্ত কী হতে পারে?

      কেউ বলতেই পারে, যিনি শর্ত মানবেন তিনি যদি মেনে নেন তাহলে কার কী! একদম ঠিক। তেমন কেউ থাকতে পারেন শুধু না, অনেকেই আছেন। তাঁরা কিন্তু "অ-রাজনৈতিক ব্যক্তি' নন। তাঁদের রাজনীতি বড় সাংঘাতিক!


    • "রাজনৈতিক দল' বস্তুটি কী, সেটা নির্ধারণ করবেন চ্যান্সেলর নিজে। যতদূর জানা আছে, "রাজনৈতিক দল' শব্দ-বন্ধটির অর্থ সংবিধান ও অন্যত্র বেঁধে দেওয়া আছে। কেন তাহলে চ্যান্সেলর অর্থাৎ রাজ্যপালের হাতে এই অতি-সাংবিধানিক অধিকারটি দেওয়া হচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না কি? আর রাজ্যপাল আবার কবে একা কিছু ঠিক করেন, সরকারী অনুমতি ছাড়া?


    • স্বভাবতই, আইন প্রণয়ন করে উপাচার্যকে বরখাস্ত করার ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যে ব্যবস্থা এতদিন ছিল না।

      উপাচার্যকে প্রয়োজনে অপসারণ করার নিয়ম ছিল না, সে নিয়ম এখন করা হবে, এর মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে অসুবিধা নেই। Right to recall অবশ্যই গ্রহনীয়। কিন্তু রাজনৈতিক যোগসূত্রের কারণে কাউকে সরানো হলে প্রবল আপত্তি থাকবে বৈকি।

      আর উপাচার্য ঠিকমত কাজ করছেন কিনা সে বিচার করবে কে? "ঠিকমত' কাজ কথাটার অর্থই বা কী?


    • বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতিগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী ও ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব আর থাকবে না। সুকুমারমতি ছাত্ররা বিপথগামী হয় পরিচালন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে। আর, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনৈতিক দলগুলি তাদের দিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করে নেয়। সুতরাং ছাত্রদের পরিচালন সমিতিতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তাছাড়া, ছাত্ররা লেখাপড়া করবে, বড়দের ব্যাপারে তাদের কী দরকার। এখন থেকে শিক্ষার উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে শুধু মনোনীত শিক্ষাবিদদের, যাঁদের বাছাই করা হবে পাণ্ডিত্য দেখে, রাজনীতি-বিমুখতা দেখে, এবং "নিরপেক্ষতা' দেখে। বাছাই অবশ্যই করবেন সরকারি ব্যক্তিত্বরা বা সরকার গঠিত কমিটিরা যাঁরা "নিরপেক্ষতা'র জন্য সুবিদিত।

      শিক্ষাকর্মীরা বাদ। কি কারণে? বোঝা যাচ্ছে না। ভাবখানা এমন যেন এরা তো পরিচালন ব্যবস্থাতে যুক্ত হওয়ার উপযুক্তই নন। একটা বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ বা স্কুল শিক্ষক, ছাত্র, এবং শিক্ষাকর্মী, তিনজনের মধ্যে একটা সঠিক বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়েই চলতে পারে ? শিক্ষাকর্মীদের কোন বক্তব্য থাকবে না শিক্ষায়তন পরিচালনায়, এটা নিতান্তই একটা আমলাতান্ত্রিক ভাবনার প্রতিফলন। অনেক সমস্যা থাকে, গায়ের জোর ফলানোর চেষ্টা থাকে, কিন্তু যে সব ব্যক্তিরা এগুলো করেন তাঁরা কি সত্যিই শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করেন? এইখানে পরিবর্তন আনা দরকার। শিক্ষাকর্মীর প্রতিনিধিত্ব তুলে দিলে সমস্যার কি কোন সমাধান হবে?

      আর ছাত্র প্রতিনিধিত্ব? এখানেও সেই একই কথা বলব। অনেক সমস্যা থাকে। ভুক্তভোগীরা ভাল করেই জানেন। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে এবং ইউনিয়নের বাইরে। নোংরা রাজনীতি, যাকে বলে "পলিটিকিং', ব্যক্তিগত রেশারেশি, দলীয় রেশারেশি সব থাকে। আমি আবার বলব, এরা সত্যি সত্যি ছাত্রপ্রতিনিধি নয়, এরা প্রায় সব সময় কোন দলের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করে থাকেন।

      লোকে একটা কথা আকছারই বলে, - "ছাত্র ইউনিয়ন বন্ধ করে দাও, ছাত্র ইউনিয়ন দরকার নেই।' এই কথাটার আমি ঘোরতর বিরোধী। অবশ্যই ছাত্র ইউনিয়ন থাকা উচিত। ছাত্ররা রাজনীতি করবে না, এই কথাটা আমি মানি না। কিন্তু সেটা কি রাজনীতি? দলীয় রাজনীতি আর দলের রাজনীতি মনে হয় আলাদা জিনিস। দলীয় রাজনীতি করবে আমি তার বিরোধী, কিন্তু রাজনীতি করবে না কেন? অবশ্যই করবে। আর, যাঁরা বলবেন ছাত্ররা তার উপযুক্ত নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার তারা কিছু জানে না, তাঁদের বলব, কোন জগতে বাস করেন? পৃথিবীর দিকে তাকান। ইতিহাস ভাবুন।


    • এছাড়া, কারা কারা সমিতিগুলির সদস্য হবেন, কী পদ্ধতিতে হবেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শিক্ষকদের প্রান্তিকীকরণ, সমস্ত মনোনয়নে আমলাদের এবং বকলমে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের একছত্র অধিকার প্রভৃতি বিষয় সংক্রান্ত অসাধারণ সব ধারা-উপধারায় অধ্যাদেশটি কন্টকিত। পুরোটাই একটা নতুন আমলাতান্ত্রিক দলবাজী সৃষ্টির ব্যবস্থা।
    এই আদ্যোপান্ত অগণতান্ত্রিক অর্ডিন্যান্সের প্রতিটি ধারা উপধারা নিয়ে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন।

    শেষ করার আগে কিছুদিনের মধ্যে ঘটে যাওয়া কয়েকটা ঘটনার কথা উল্লেখ করা জরুরী।

    মাস দুয়েক আগে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন আলোচনা সভায় একজন বক্তা মার্ক্স এবং এঙ্গেলসের নাম উল্লেখ করেছিলেন। কিছু তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থক "রে রে' করে তেড়ে গিয়ে তাঁর বক্তৃতা পণ্ড করেন। পরবর্তীতে শুনেছি, বিভিন্ন নেতা ও গুণীজন এই কাজের প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার পরিবেশ দূষিত করার অপরাধে এই অর্বাচীন মূর্খদের শাস্তি হয়েছে বলে শুনিনি।

    এই ঘটনার অল্প পরে, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় এক "জনপ্রতিনিধি' উপাচার্যের উপস্থিতিতেই শিক্ষকদের শাসিয়ে গেলেন, কিছু কিছু শিক্ষক-ছাত্র-শিক্ষাকর্মীকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতেই দেবেন না।

    কলেজ পরিচালন সমিতিগুলোতে যেমন বর্তমান স্ট্যাটুট অনুসারেই উপস্থিত থাকেন "জনপ্রতিনিধি' যিনি - ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন - পঠনপাঠন বা বিদ্যায়তন সম্পর্কে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিচ্ছু জানেন না। তাঁর একমাত্র কাজ থাকে ছড়ি ঘোরানো। দলের আদেশ বলবৎ করা। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁরাই নিয়ামক হয়ে থাকেন। এখন তেমন অনেকে পরিচালন সমিতির প্রধান হচ্ছেন। রাজনীতির জগতে তাঁরা দিকপাল হতেই পারেন, কিন্তু, আবারও বলি, আমাকে মার্জনা করবেন, কলেজ চালানোর কাজে দক্ষতা অন্য জিনিস। ওই "জনপ্রতিনিধি' নিজের সীমা ছাড়াবেন না, একথা কেউ বিশ্বাস করবেন? আমি তো করব না।

    আর একটা ভয়ংকর খবর কানে এসেছে। বেশ কিছু স্কুল কলেজ পরিচালন সমিতিগুলির নির্বাচনে ব্যাপক "রিগিং' হচ্ছে। উচ্চতম কমিটিগুলিতে আসীন আমাদের বন্ধুদের কাছে নিবেদন, আপনারা খবর নিন, এগুলো বন্ধ না করলে আজ না হোক কাল আবার সেই বিবরে পতিত হতে হবে। এবারে দায়ী হবে নতুন সরকারের নতুন (অথবা অনেক পুরনো) গা-জোয়ারির চেষ্টা।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২২ নভেম্বর ২০১১ | ৬০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন