এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো

  • যদি ....

    পূর্বা অতন্দ্রিলা লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ০১ জানুয়ারি ২০১১ | ৮৯০ বার পঠিত
  • নাতাশা, বয়েস ১৩, নিউইয়র্ক সিটি, মিডল স্কুল, গ্রেড ৮, সিনিয়র ইয়ার
    -------------------------------------------------
    দিনগুলো বদলে যাচ্ছে। আমি আর ক্লাসের সবচেয়ে ভালো মেয়েটা নই। অন্য কেউ আমার জায়গা নিয়েছে এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। সিক্সথ আর সেভেনথ গ্রেডে আমি ক্লাসের বেস্ট গার্ল ছিলাম। অথচ এখন আর স্কুলে যেতে ভালো লাগে না। আমার কোন বেস্টফ্রেন্ড ছিল না। হয়তো ছিল কয়েকজন, তবে বেস্টফ্রেন্ড কি আর ছিল! আমার চিরকালই বন্ধুর সংখ্যা কম। কিন্তু এইটে উঠে আমার অনেক বন্ধু হল। আমি বোধহয় এত বন্ধু চাই নি।

    আমার ডিপ্রেশনের শুরু সেই ২০০১ এ, আমি তখন ফিফথ গ্রেডে পড়ি। আমার কিছু ভালো লাগত না। রাতে যখন ঘুমোতে যেতাম, গোটা দিনটা যেন আমাকে গিলে খেত। বছরের পর বছর আমার ডিপ্রেশন বাড়তেই লাগল। কোনকিছুই যেন ঠিক চলে না। বা আমিই হয়ত ভাবি যে কিছুই ঠিক নেই। আমাকে সব সময় এত ব্যস্ত থাকতে হত, আমার নিজের জন্য কোন সময় ছিল না। যদি ঘরে বসে থাকতে পারতাম সারাদিন, যদি ঘুমোতে পারতাম! আমি বুঝতে পারছিলাম জীবনটা ক্রমশই আমার হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। স্কুল, টিচার, রিপোর্ট কার্ড, গ্রেড, বন্ধু-বান্ধব, হোমওয়ার্ক, থিয়েটার, সাবওয়ে, ব্যান্ড, পিয়ানো, ড্রয়িং, ইন্টারনেট, নাচ, অডিশন, এক্সারসাইজ, সকার, লেখালেখি, ঘুম ... উফফ ... আরেকদিকে আমার বাবা-মা - তারা কিছুতেই চায় নি আমি একজন অ্যাকট্রেস হই, যেটা আমি হতে চেয়েছিলাম।

    আমি ভেবেছিলাম আমার স্বপ্নগুলো কোনদিন সত্যি হবে না। আমি তাই শেষ পর্‌যন্ত একটাই জিনিস চাইতাম - মৃত্যু। আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। আগে কখনও এমন কথা ভাবি নি। কিন্তু শেষ পর্‌যন্ত আর কোন পথ খোলা রইল না। ঠিক করলাম চানের পর ঘুমের ওষুধ খাব। সেদিন রোববার ছিল। আমি চান করলাম অনেকক্ষণ ধরে। লা' খেলাম। তারপর বাবার ওষুধের বাক্স থেকে অনেকগুলো স্লিপিং পিল চুরি করে নিজের ঘরের দরজা দিলাম অন্যদিনের মতই। রোজ যেমন থাকে তেমনই সেদিনও টেবিলে রাখা ছিল জলের বোতল। আমি একটা একটা করে কুড়িটা স্লিপিং পিলই খেয়ে নিলাম। তারপর কি হল আমি কিছু জানি না।

    ঘুম ভেঙে দেখলাম অনেক লোক। কেউ হাসছে। কেউ কাঁদছে। কেউ শুধুই বসে আছে। তারপর বুঝলাম এটা একটা গ্রেভইয়ার্ড। আমি আমার নিজের কবরের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। আমি মরে গেছি চিরকালের মত। কি করেছি আমি যার জন্য কবর ছাড়া আমার আর কিচ্ছু পড়ে রইল না!

    তিনমাস পর
    ---------
    এই ক'মাস আমি গ্রেভইয়ার্ডেই আছি। লোকজন আসে, দেখে যায়। আমার ক'জন বন্ধু হয়েছে। একটা মেয়ের নাম ভায়োলেট। নামটা আমার পছন্দ। কয়েকজন ছেলেও আছে। তাদের মধ্যে একজনকে আমার বেশ লাগে। তার নাম ইভান। মনে হয় ইভানও আমায় পছন্দ করে। ওর একজনকে একটা চিঠি দেওয়ার ছিল। কিন্তু দিতে পারে নি। তার আগেই ও মরে যায়। আর এখন কিছুতেই এই পৃথিবী ছেড়ে বেরোতে পারছে না, যতক্ষণ না চিঠিটা পৌঁছোচ্ছে ঠিক লোকের কাছে। সত্যি বলতে কি আমি চাইনা চিঠিটা কখনও পৌঁছোক। ইভান চলে যাক!

    মা বসেছিল আমার কবরের পাশে। কাঁদছিল। মা সাথে কিছু গারবেরা এনেছে। আমার কবরে দিল। আমি মায়ের দিকে হেঁটে গেলাম। গারবেরা আমি ভালোবাসি। আগে কেউ কখনও ফুল দেয় নি আমায়। অথচ ফুল পেতে কত ভালো লাগে! এখন আমি মরে গেছি। সবাই আমার জন্য ফুল আনে। কি এসে যায় এখন আর! মা কাঁদছিল - 'কেন তুই এমন করলি? কেন? আমি তোর সব কথা শুনব। তুই যা হতে চাস তাই হবি। বাধা দেব না। কেন করলি এমন?'

    আমি বললাম - 'নাহ, তুমি তা করবে না।'

    দেখলাম বাবা আর বোন আসছে এদিকে। বাবা মায়ের কাঁধ ছুঁলো। বাবার হাতে একটা বই। মলাটে নাম লেখা ''বদলে যায়' - নাতাশা উইলসন'। আমি একটা উপন্যাস লিখেছিলাম। আরো লিখব ভেবেছিলাম, কিন্তু তার আগেই মরার ইচ্ছে হল। বইটা আমার কবরে রেখে ওরা চলে গেল।

    একবছর পর
    ---------
    সেই লোকটা তার চিঠি পেয়ে গেছে। ইভানের তাই ছুটি। ও চলে গেছে। আমিও ওর মত চলে যেতে চাই কোথাও। আজকাল অনেক লোক আসে এখানে। বেশির ভাগই আমার ফ্যান। বই বেরোনোর পর আমার অনেক ফ্যান হয়েছে। বইটা নাকি বেস্টসেলার্স। শুনেছি আমি কিছু পুরস্কারও পেয়েছি। বোন এসেছিল। ও আমার চেয়ে আঠারো মাসের ছোট। তবে আমি ওকে সবসময়েই হিংসে করতাম খুব।

    ও বলছিল - 'আমি তোর সব ডায়েরীগুলো পড়েছি। তোর সব ইচ্ছেগুলো। জানিস, তোর ইচ্ছে এবার পূর্ণ হবে! আমিই পূর্ণ করব। তোর বইটা থেকে একটা সিনেমা বানানো হচ্ছে। আমি সেটাতে মেন ক্যারেক্টার প্লে করছি' - ওর মুখ খুশিতে ঝলমল করছিল।

    সব শেষ। আমি চাইনি আমার গল্প থেকে সিনেমা হোক যদি না আমি তাতে অভিনয় করি। আর ওকে তো চাইই নি।

    ও দুখি মুখ করে বলে যেতে লাগল - 'আমরা তোকে খুব মিস করব। যদি তুই থাকতিস আমাদের মধ্যে! যদি তুই চলে না যেতিস!!'

    সত্যিই সব শেষ। আমি বেশ বুঝতে পারছি আমি কোনদিন পৃথিবী ছেড়ে বেরোতে পারব না। কোন কিছুই তো হচ্ছে না আমার ইচ্ছে মত। এখন একটা কথাই মনে হয়, যদি না মরতাম! এমনভাবে জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি ঝুলে থাকতে হত না তাহলে!

    লেখক: পূর্বা অতন্দ্রিলা (বয়স তেরো) । অনুবাদ : শুচিস্মিতা
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ০১ জানুয়ারি ২০১১ | ৮৯০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন