এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • ভোটের গরম (২)

    ইন্দ্রনীল ঘোষদস্তিদার লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ০৯ মে ২০০৯ | ১৪৪৪ বার পঠিত
  • ভোট ক্যাম্বিস ১

    বাবা বলল : আমাদের সময় কী আর এত খুন-জখম, গুলি-গোলা, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছিল? বড়জোর ভোটের দিন দুদলে খুব কথা কাটাকাটি হল, চড়-থাপ্পড় -ঘুষি চলল; তারপর ভোট শেষ হতেই আবার একই চায়ের দোকানে বসে চা-ফা খেলাম, গল্পগাছা করলাম ...

    বাবাকে ধরেছিলাম, পুরনো আমলের ভোটের গল্প শুনব বলে। ডেডলাইন পেরিয়ে যাচ্ছে, ভোটের গরম-এর দুনম্বর কিস্তি জমা দিতে হবে, এদিকে মাথায় কিচ্ছু খেলছে না। ভাবলাম ভোটের সেকাল-একাল নিয়ে কিছু লিখি। বাবাকেই ধরলাম, হাতের কাছে আছে। নইলে আবার বাড়ি-বাড়ি ছুটবো নাকি? একটু কট্টর সিপিএম মত আছে , বায়াসড গল্প বলবে। তা সেসব রবাট দিয়ে ঘষে ঠিক করে নিলেই হল !

    কিন্তু বাবা একদম বোর করে ছেড়ে দিল। গল্প বলল তো ঘন্টা, খালি আমাদের সময় অমুক হত, তমুক হত ... ; মাঝখান থেকে একালের ভোট চলে এল, আর একটু ঝগড়ামত হয়ে গেল। আমিও দুচ্ছাই বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে পড়লাম; অবশ্য খাওয়াও শেষ হয়ে গিয়েছিল।

    না:, অন্য কোথাও খুঁজতে যেতে হবে। বইপত্তর হাঁটকাতে হবে। মুশকিল হচ্ছে, লাও তো বটে, কিন্তু আনে কে ! আমি তো আর রঙ্গন কিম্বা বোধি নই, যে চাইলেই কাঁড়ি কাঁড়ি বই আলমারি ঝেড়ে-পুঁছে বের করে ফেলব ! এদিকে সেসব আবার রসের লেখাও হতে হবে, নইলে চাঁড়াল ছোঁড়া-ছুঁড়ীরা পড়বে না।

    হুতোমের কালে ভোট ছিল না, থাকলে নিয্যস দু-চাট্টে চাটিম চাটিম খোলায়- গরম বুলি ছাড়তেন। কালপেঁচার কালে রীতিমত ছিল; কিন্তু হুতোমের শিষ্য বলে জাহির কল্লেই কী আর হুতোম হওয়া যায়? ছাতি চাই, ছাতি ! কত কী নিয়েই তো লিখলেন কালপেঁচা ,-মেয়েদের খোঁপা, ধর্মের ষাঁড়, রূপ দেখানো, মায় নাইট ক্লাব- কিন্তু ভোট নিয়ে ? নৈব নৈব চ। কদাচ না। এক ছত্তরও না।

    পরশুরাম রম্য রচনা-র ধার খুব একটা মাড়ান নি, তবে তাঁর একখানা গল্পে অন্তত: ভোট এসে উঁকি দিয়ে গেছে। সেই যে, বকুলালের ভোটবাঞ্ছা ! "দক্ষিণরায়' গল্প ! নব্যধনী বকুবাবুকে একরাত্তিরে স্বপ্নে বঙ্গমাতা দেখা দিয়ে বল্লেন- হ্যা রে, বকু ! কচ্ছিস কি? দেশের কাজ না করে অমন সুখে-শান্তিতে পায়ের ওপর পা তুলে কাল কাটাচ্ছিস? এখন, দেশের কাজ করা মানে যে কাউন্সিলে ঢোকা, সে আর কে না জানে ! বকুর কিনা মোটা মাথা, বঙ্গমাতাকেই তাই গজাল মেরে ঢোকাতে হল। বকু ঠিক করলেন, কলকাতায় সুবিধা হবে না, সাউথ সুন্দরবন কনস্টিট্যুয়েন্সি থেকে ভোটে দাঁড়ালেন। তারপরেরটা পরশুরামের মুখ থেকেই শুনুন :
    " ...... তারপর হঠাৎ একদিন খবর এল যে বকুলালের পুরনো শত্রু রামজাদুবাবু রাতারাতি খদ্দরের সুট বানিয়ে বক্তৃতা দিতে শুরু করেছেন। তিনিও ঐ সোঁদরবন থেকে দাঁড়াবেন। বকুবাবুর দ্বিগুণ রোখ চেপে গেল-তিনি টেরিটিবাজার থেকে একটি তিন নম্বরের টিকি কিনে ফেললেন, দেউড়িতে গোটা-দুই ষাঁড় বাঁধলেন, আর বাড়ির রেলিংএর ওপর ঘুঁটে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন।
    খবরের কাগজে নানারকম কেচ্ছা বার হ'তে লাগল। বকুলাল দত্ত-সেটাকে কে চেনে? চোদ্দ বছর আগে কার কাছে চাকরি করত? সে চাকরি গেল কেন? কেরানীর অত পয়সা কি করে হ'ল ? হে দেশবাসিগণ, বকুলাল অত সোডাওআটার (বানান অক্ষত) কেনে কেন? কিসের সঙ্গে মিশিয়ে খায়? বকুলাল কালো, কিন্তু তার ছোটছেলে ফরসা হল কেন? সাবধান বকুলাল, তুমি শ্রীযুক্ত রামজাদুর সঙ্গে পাল্লা দিতে যেও না, তা হ'লে আরো অনেক কথা ফাঁস ক'রে দেব। বকুবাবুও পাল্‌টা জবাব ছাপতে লাগলেন , কিন্তু তত জুতসই হল না, কারণ তাঁর তরফে তেমন জোরালো সাহিত্যিক-গুণ্ডা ছিল না।
    বকুবাবু ক্রমে বুঝলেন যে তিনি হটে যাচ্ছেন, ভোটাররা সব বেঁকে দাঁড়াচ্ছে। ... '

    তারপর কেমন করে বকুবাবুর সঙ্গে পলিটিকাল পরিব্রাজক শ্রীরামগিধড় শর্মার দেখা হল, কিভাবে বকু ব্যাঘ্রপার্টিতে জয়েন করলেন, করেই বা কী হল সেসব অন্য গল্প। আর সেসব কথা লোকে জানেও।
    শুধু বকুবাবুর রাজনৈতিক মতামতটা একবার মনে করিয়ে দিই; রামগিধড় যখন জিগ্গেস করলেন বকু স্বরাজী, না অরাজী, না নিমরাজী, না গররাজী, তখন বকু যা বলেছিলেন, তা বাঙ্গালী সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে রেখেছে-তিনি কোনটাই নন, তবে দরকার হলে সবটাতেই রাজী আছেন।

    পরশুরাম ছেড়ে যাবার আগে জোড়হাত কপালে ঠেকিয়ে বাবা দক্ষিণরায়ের মন্তরপাঠ করে যাওয়া জরুরী; ছেলেপুলে নিয়ে ঘর করি, কী থেকে কী হয়, কে বলতে পারে ! কী দরকার মশাই, অত রিস্ক নেওয়ার, বাঙ্গালী হয়ে যখন জন্মেছি ! সবাই আমার সঙ্গে হাতজোড় করে বলুন :

    " .... প্রভুর সেবায় হয় জীবহিংসা নিত্য,
    পহরে পহরে তাঁর জ্ব'লে ওঠে পিত্ত।
    বড় বড় জন্তু প্রভু খান অতি জলদি,
    হিংসার কারনে তাঁর বর্ণ হৈল হলদি।
    ছাগল শুয়ার গরু হিন্দু মুছলমান,
    প্রভুর উদরে যাঞা সকলে সমান।
    পরম পণ্ডিত তেঁহ ভেদজ্ঞান নাঞি,
    সকল জীবের প্রতি প্রভুর যে খাঁঞি।
    দোহাই দক্ষিণরায়, এই কর বাপা-
    অন্তিমে না পাঞি যেন চরণের থাপা।'

    যমদত্তের আবার অত ভয়ডর ছিল না, রাখঢাক করেন নি, ভোটের কথা সবিস্তারেই লিখেছেন। ১৯৫১ সালের ডায়েরী শুনুন : " .... এ -ত গেল একালের ভোট, বেশি দিন নয় ত্রিশ বছর আগেকার এক ভোটযুদ্ধের কথা আপনাদের কিছু বলিব।' স্যার সুরেন বাঁড়ুজ্যের উল্টোদিকে দাঁড়িয়েছেন ডা: বিধানচন্দ্র রায়, রাজনীতিতে তখন সবে নভিস-মাত্র। এইবার শুনুন বাকীটা :

    " .... সুখচর কালীতলার বাঁধান নাট-মন্দিরে বিকেল পাঁচটায় মিটিং হইবে। বিপিনচন্দ্র পাল প্রভৃতি বক্তৃতা করিবেন। স্টেশনে হ্যান্ডবিল বিলি হইতেছে, আমরা সুরেন্দ্রবাবুর দল প্রমাদ গুণিলাম- এই উহাদের প্রথম মিটিং। এটি নির্বিবাদে হইতে দিলে বড়ই ক্ষতি হইবে। তখন এখনকার মত টেলিফোনের সুযোগ ছিল না, কোনমতে থানা থেকে সুরেন্দ্রবাবুর বাড়ীতে ফোন করিলাম, শুনিলাম যে তিনি মন্ত্রিত্ব করিতে কলিকাতায় গিয়াছেন। আমাদের দলের বেচা খুড়োর সঙ্গে পরামর্শ করিলাম। বেচা খুড়ো বলিলেন যে ভয় নাই- তুমি বাবা একখানি ব্লু নোট (অর্থাৎ একশো টাকার নোট) বাহির কর। আমি নিজে দায়িত্বে রাজি হইলাম .. বেচা খুড়ো কালীবাড়ীর অন্যতম সেবায়েত দীননাথ গাঙ্গুলী মহাশয়কে বলিলেন যে আজ কালীপূজার ভাসান-নাট মন্ডপে চন্ডীর গান দিলে কিরকম হয়?

    .... তাহার পরে বেলা সাড়ে তিনটা চারটা আন্দাজ বেচা খুড়ো চারখানি ট্যাক্সি করিয়া চন্ডীর গান আনিলেন। আসরের মধ্যে মিটিংয়ের জন্য আনা সতরঞ্চি তাহাই পাতিয়া গানের দলকে বেহালা বাজাইতে হুকুম দিলেন বেচা খুড়ো। বেহালা বাজিতেছে "মগধে শ্রীকানাই' সুরে পাখোয়াজ বাজিতেছে -"হুড় মুড় দুড় দুড় মার শালাকে ধর শালাকে' সুরে। .. দেখিতে দেখিতে মেয়েরা আসিতে লাগিল, নাট মন্দির লোকজনে ভাসিয়া গেল। বিপক্ষ দল আসিয়া দেখিল যে নাট মন্দিরে আর মিটিং করা চলিবে না। তখন তাহারা চারিদিকে বোমা ফাটাইতে লাগিল। বোমার আওয়াজে কানে তালা লাগিয়া গেল। চন্ডীর গান কেহ শুনিতে পাইল না। কিন্তু গান চলিতে লাগিল। রাত্রি আটটায় গান থামিল, ফার্স্ট রাউন্ডে আমাদের জিত হইল।

    বিপক্ষ দলও কম নহেন। তাঁহারা সেই দিনই অর্থাৎ সেই রাত্রিতেই অন্যত্র মিটিং করিবার ব্যবস্থা করিলেন। গ্রামে এক বাঁধা তাঁবু ফেলিয়া "সহ রপীন' এর ছবি দেখাইবার জন্য লোক আসিয়াছিল। তাঁহার তাঁবু এক রাত্রির জন্য ভাড়া করিয়া তাঁবুর পার্শ্বের কানাত খুলিয়া দিলেন। এসিটেলিনের গ্যাসের আলোয় সন্ধ্যা সাতটার সময় বিপিনবাবুর বক্তৃতা আরম্ভ হইল। .... আমি আমাদের দলের পালের গোদা বলিয়া ডাক পড়িল-উহাদের এই মিটিং ভন্ডুল করিতে হইবে। আমার নাকি "কংস রাজার বদ পরামর্শে ' মাথা সাফ। গিয়া দেখি জন কুড়ি লোক বক্তৃতা শুনিতেছে-ছোট্ট তাঁবু। তাঁবুর পার্শ্বে একটা পগার, পগারের পার্শ্বে শরৎ চাটুজ্যের জমি। শরৎবাবু আমাদের দলের লোক। তাড়াতাড়ি টীটাগড়ে গিয়া গুন্ডার সর্দার শান্তি সিংহ , পদারক, আতাই প্রভৃতির শরণাপন্ন হইলাম। তাহারা মারামারি করিতে পারে এমন জন কুড়ি লোক দিল, প্রত্যেকের হাতে জগঝম্প, যাহাতে তাহাদের স্ফূর্তি বাড়ে তজ্জন্য শনিচারীপাসীর দোকানের এক এক ভাঁড় তাড়ি তাহাদের প্রত্যেককেই খাওয়াইলাম। খাওয়াইয়া তাহাদের আনিলাম শরৎবাবুর সেই জমিতে ও তাহাদের জগঝম্পশুদ্ধ গান আরম্ভ করিতে বলিলাম। তাহারা রাসভবিনিন্দিত কন্ঠে আরম্ভ করিল-রাম লচমন ভাইয়া হা-হো-হো। সেই শব্দে বিপিনবাবুর কথা ভাসিয়া গেল।

    ...... এই ঘটনার কয়েকদিন পরে টীটাগড়ে নির্বাচনী মিটিং হইবে। আপোষে বন্দোবস্ত হইয়াছে, যে, উহারা আগে ৫টা থেকে ৬টা অবধি বক্তৃতা করিবেন । পরে আমরা বক্তৃতা করিব। .... ডাক্তারবাবুর দল বন্দোবস্ত করিয়াছে যে, যেই আমাদের বক্তারা বক্তৃতা আরম্ভ করিবে, অমনি টীটাগড়ের ভাড়াটে গুন্ডারা সেম সেম বলিয়া চীৎকার করিবে। বাঙালীর মিটিং ৫টায় আরম্ভ না হইয়া ৫টার ঢের পরে আরম্ভ হইল। তাহার পর বিপিনবাবু যেমন বক্তৃতা আরম্ভ করিয়াছেন ঘড়িতে ৬টা বাজিল। আর জনার্দনের পূর্ববন্দোবস্ত মতন গুন্ডারা শ্যাম শ্যাম বলিয়া চীৎকার আরম্ভ করিল। তাড়াতাড়ি উহারা ছুটিয়া আসিয়া বলিল এখন শ্যাম ! শ্যাম ! চীৎকার থামাও। তাহারা বলিল কাঁহে বাবু, বেলা ছয় বাজেলেসে শ্যাম দেনা হোগা, হামলোগ শ্যাম দেতা হ্যায়। তখন তাঁহারা বলিলেন যে ঐরূপ করিলে পয়সা পাইবে না। ইহাতে তাহারা ক্ষেপিয়া গিয়া বলিল কেন? শ্যাম দিলে পয়সা পাইব; শ্যাম দিয়াছি; ঠিক সময়ে শ্যাম দিয়াছি। পয়সা জোর করিয়া লইব। শ্যাম দেকারা পয়সা লোগা। গোলমালে বিপিনবাবুর মত বক্তাও সুবিধা করিয়া উঠিতে পারিলেন না। ...

    ..... তাহার পর এক জায়গায় স্বরাজীরা মিটিং করিবে বলিয়া ঢেঁড়া দিল। আমরা সেখানকার মেথরদের জমাদার সোনাইকে টাকা দিয়া ব্যবস্থা করিলাম যে মাঠময় বিষ্ঠা ছড়াইয়া দিবে। সোনাই তাহাই করিল- স্বরাজীরা কোনও মিটিং করিতে পারিল না বটে, কিন্তু সেখানকার লোকে আমাদের উপর চটিয়া গেল। এইরূপে যতদিন যাইতে লাগিল লোকে আমাদের বিরুদ্ধে যাইতে লাগিল। ...

    ..... দুই দিন ধরিয়া ভোট হয়। প্রথম দিনের ভোট ২টা অবধি চলিবার পর নিউএম্পায়ার নামক সান্ধ্য কাগজে আমরা রিপোর্ট ছাপাইলাম ভারতবর্ষের পিতামহ বৃদ্ধ জয়লাভ করিতেছেন। কিন্তু রিপোর্ট ছাপাইলে কি হইবে? আমাদের দলে ঘুণ ধরিয়াছে-অনেকেই বিশ্বাসঘাতকতা করিলেন। দ্বিতীয়দিনে আমাদের পরাজয় শোচনীয়ভাবে হইল- আমাদের গাড়ীতে আসিয়া , আমাদের জল খাবার চা খাইয়া অনেকে ডাক্তারবাবুকে ভোট দিল। ৭৭০০ ভোট ডাক্তারবাবু পাইলেন, আর আমরা পাইলাম ২২০০ ভোট। ....

    ...... ভোট যুদ্ধে খরচ কম হয় নাই। ... আমরা সুরেন্দ্রবাবুর পুত্র ভবশঙ্করের মুখে শুনিয়াছি যে সুরেন্দ্রবাবুর তরফে ৭০,০০০ টাকা খরচ হইয়াছে। আর স্বরাজ্য পার্টির ডাক্তারবাবুর খরচ ৬০,০০০ টাকা। ...

    এই ভোটযুদ্ধের ফলে গ্রামে গ্রামে যে দলাদলি আরম্ভ হইয়াছিল তাহার জের এখনও মিটে নাই। নানা আকারে, নানা প্রকারে অন্য নাম লইয়া এখনও সেই দলাদলি চলিতেছে। সাধে কি লোকে বলে যেখানে বাঙালী সেইখানেই মা-কালী আর দলাদলি।'

    দাদাঠাকুরের ভোটের গান তো শুনেছেন সবাই, সে আর নতুন করে কী শোনাবো ! সন্দেহ করি, শিব্রাম ভোটের কিছু অ্যাকাউন্ট রেখে গেছেন দৈনিক কাগজ-পত্তরে, রসিকজন তার খবর রাখবেন। সুনন্দ জার্নাল লেখার সময় যে খুব রসবোধের পরিচয় দিয়েছেন, তা বলবো না, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ওঁর থেকে অনেক ভালো লিখতে পারতেন। এই যেমন ভবিষ্যত নির্বাচনের জন্য ওঁর (অর্থাৎ কিনা সুনন্দ'র) দেওয়া প্রেসক্রিপশন, তেমন আহামরি কিছু নয়, তবু ডকুমেন্টেশনের স্বার্থে দিয়ে রাখলাম : " ভবিষ্যতে যাঁরা কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হবেন; তাঁদের ফাঁপা কণ্ঠবাদনে প্রোসেশনের চিৎকারে অথবা প্রচারপত্রের চটকে আমরা আর ভুলবো না। এইসব ভদ্রমহোদয়রা হাফপ্যান্ট পরে এবং বালতি হাতে নিয়ে এক একটি করে আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনের গর্তে নেমে যাবেন । অন্তত একমাস ধরে তাঁরা নিয়মিত কাদা তুলবেন এবং প্রতি ওয়ার্ডে যিনি যত বেশী কাদা তুলতে পারবেন, তিনি নির্বাচিত বলে ঘোষিত হবেন।

    এতে দু'দিক থেকে লাভ হবে। প্রথমত, ড্রেনের কাদা তুলতে তুলতে মুখে কাদা ছিটোবার সময় মিলবে না; দ্বিতীয়ত, কলকাতার ড্রেনগুলো সাফ হয়ে যাবে। জীবনকে আর একটু সুসহ করার পক্ষে আশা করি, এ প্রস্তাবে আপনারা সবাই একমত হবেন। (৩/৪/১৯৬৫)'

    অশোক মিত্র মহাশয়ের রসবোধ সম্বন্ধে কারো দো-রায় নেহি হ্যায়। এই ছ্যাবলা রসিকতা শুনলে উনি ক্যাপিটালের সবক'টি ভল্যুম একসঙ্গে ছুঁড়ে মারতেন। ভোট, মিছিল ও কবিতা নিয়ে রঙ্গরস উনি একদম পছন্দ করেন না,আমরাও করিনা। শুধু মিত্তির মশায়ের একটি নিমসরস (আক্ষরিক অর্থে) ভোটবেত্তান্ত -ফ্রম ঘোড়ার মুখ (আক্ষরিক অর্থে নয়) শুনিয়ে এবারের মত ওঁকে রেহাই দেব। সে ছিল সেই পুরনো কলকাতার বৌবাজার কেন্দ্রের ইলেকশন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছেন কম্যুনিস্ট পার্টির মহ: ইসমাইল।

    " .... ভোটগণনা হয়েছিল জাদুঘরের দালানে , সারাদিন ধ'রেই বিধানবাবু পিছিয়ে , ইসমাইল সাহেব এগিয়ে, জনগণের বাঁধভাঙা জয়োল্লাস। ভোট গোণা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। নির্বাচনে -কর্তব্যরত সরকারী কর্মচারীদের পোস্টাল ব্যালটের গণনা শুধু বাকি, এমন মুহূর্তে , জনপরিবাদ, কলকাতা-নতুন দিল্লির সংগোপনতম-সুউচ্চতম মহলে টেলিফোনে সাংকেতিক তারবিনিময়ে কী শলাপরামর্শ হল, হঠাৎ জাদুঘরের দালানে আলো নিভে গেল, নিÖপ্রদীপ, যা তখনকার সময়ে অকল্পনীয় -অভাবনীয়। খানিক বাদে যখন আলো ফিরে এল, পোস্টাল ভোটের কাগজপত্রগুলি যেন একটু বেশী গোছানো, একটু অন্যরকম; বিধানবাবু পাঁচশো ভোটে জিতে বেরিয়ে গেলেন, পুলিশ ব্যারাকের যে-সব পোস্টাল ভোট তাঁকে জিতিয়ে দিল, সেগুলি আসল না জাল তা এখন একমাত্র ঐতিহাসিক গবেষণারই আকর হতে পারে।

    ... জটিলতার ধার ধারতেন না পশ্চিম বাংলার রূপকার, দুর্গাপুরের চুষিকাঠি (মাশুল সমীকরণ নীতিতে রাজী হওয়ার বদলে-লেখক) হাতে পেয়ে দারুণ খুশি। কয়েক বছর বাদে খোদ মার্কিন দেশে গিয়ে প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে পর্যন্ত একই আর্জি জানিয়ে এলেন : "আপনারা পশ্চিমের দেশগুলি পশ্চিমবাংলার জন্য কিছু করছেন না, বুঝতে পারছেন না কী ভীষণ বিপদ, ঐ যে কী একটা দ্বীপ, হ্যাঁ, কিউবা, সেই কিউবার মতই আমার ওয়েস্ট বেঙ্গলেও হুড়মুড় করে কমিউনিস্টরা এসে যাবে। এই তো দেখুন না, একটা আপকাϾট্র ট্রাম কন্ডাক্টর আর-একটু হলে ভোটে আমাকে পর্যন্ত হারিয়ে দিচ্ছিল।' বিমূঢ় জন কেনেডি, পাশে উপবিষ্ট সহকারীকে ফিশফিশ করে তাঁর প্রশ্ন : আপকাϾট্র ট্রাম কন্ডাক্টর বস্তুটি কী?'

    ছোটবেলা থেকেই তো ভোটের মধ্যে বড় হয়েছি; মাছ যেমন করে জলের মধ্যে বাস করে, তেমনি আমরা বাস করেছি ভোটের অন্তহীন ঢেউয়ের মধ্যে। এবং আমাদের মুখের সামনে নেচে বেড়িয়েছে শুধু কেঁচো-পিঁপড়ে-আটা'র টোপ-ই নয়( যাকে লোকে "প্রতিশ্রুতি' বলে ডাকে), বেশ কিছু রঙীন-বেরঙীন জলজ শ্যাওলাও, যার নাম ভোটের শ্লোগান। ভোট ক্যাম্বিস।

    এই অবধি লিখেই মনে পড়ে গেলো আমার সবচেয়ে পছন্দের স্লোগান, সবচেয়ে প্রথম পড়া বলেই হয়তো, সামনের বাড়ির দেওয়ালে লিখিত এবং কালের ছোঁয়ায় ঈষৎ ম্লান; তখনো প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের বয়স দেড় কি দুই, বর্ষা আর রৌদ্রতাপ, সময়ের হাত, জরুরী অবস্থার রক্ত ধুয়ে তুলছে, দুই বাম এক সরকারের শরিক হলেও বিচ্ছেদের কাঁটাওলা সেই শ্লোগান কিন্তু তখনো রয়ে গেছে : দিল্লী থেকে এলো গাই, সঙ্গে বাছুর সি পি আই।

    আর ছিল জেদী রক্তধারার মত নকশালবাড়ির কিছু শ্লোগান তখনো, এখানে-সেখানে, ইতস্তত:, ভোট বয়কটের, জেল-ভাঙার; খবরের কাগজে কালি দিয়ে লেখা। রং-চটা , চুন -ওঠা দেয়ালে মাওয়ের মুখ, স্টেনসিলে আঁকা, আর চীনের চেয়ারম্যানকে নিজেদের চেয়ারম্যান বলে ডাকার রাগী শপথ। অথবা -তোমার বাড়ি-আমার বাড়ি/ নকশালবাড়ি-খড়িবাড়ি।

    কংগ্রেসী শ্লোগান কোনোকালেই তেমন ইনোভেটিভ ছিল না, এখন লিখতে বসে একখানার বেশী মনেও পড়ছে না : চীনের কাস্তে-হাতুড়ি/পাকিস্তানের তারা/ এর পরেও কী বলতে হবে/ দেশের শত্রু কারা? আর ছিল সেই কুচ্ছিতমত শ্লোগান, যা পড়লে সেই ছোটবেলায়, বামপন্থী বাড়িতে বড় হওয়া কিশোরের পা থেকে মাথা অবধি জ্বলে উঠত : মাকু হঠাও, দেশ বাঁচাও। আর ছিল এশিয়ার মুক্তিসূর্য ইন্দিরা গান্ধী জিন্দাবাদ। তখনো আনন্দবাজারের বানান বাঁচাও কমিটি তৈরী হয় নি, ইন্দিরার পেছনে তখনো স্বচ্ছন্দে, লজ্জিত না হয়েই গান্ধী লেখা যেত। এই কথা লেখার সঙ্গে সঙ্গেই মনে পড়ে গেল, সেকালে একটি ইপটা প্রযোজিত পথ-নাটিকা খুব চলত, তাতে কিন্তু জওহরলাল-কন্যাকে দিব্য ইঁদিরা গাধী বলে ডাকা গিয়েছিল। বামপন্থী সৌজন্য ! আরো মনে আসে, সেসময়ের দেওয়ালে-দেওয়ালে আঁকা ইন্দিরার রোমশ কালো হাত (প্রতীকী বললাম বাপু, পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের জমানা), ধারালো নখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত, সঙ্গে স্বৈরতন্ত্রী মহিলাকে অজস্র রাজনীতিসম্মত গালাগাল। স্বৈরতন্ত্র কথাটা সেবারই প্রথম শিখলাম। আর জানলাম, বামফ্রন্ট সরকারকে চোখের মণির মত রক্ষা করতে হবে।

    বামপন্থীরা কিছু খটোমটো শ্লোগান লিখত কিন্তু, যাই বলুন না কেন। দেওয়াল জুড়ে সাম্রাজ্যবাদ-মুৎসুদ্দি পুঁজি-নয়া গণতন্ত্র-ওসবের মানে বুঝত নাকি হাটুরে লোকজন? পুঁজিবাদ আর পেটি-বুর্জোয়া যদিও গা-সওয়া হয়ে উঠেছিল তদ্দিনে। তারপর তো রাজীব-জমানা এল, বোফর্স মামলা এল পিছু-পিছু, সঙ্গে নিয়ে এলো দেশজোড়া সেই বিখ্যাত শ্লোগান : অলিগলি মে শোর হ্যায়/রাজীব গান্ধী চোর হ্যায়। আর শুনলাম-তখত বদল দো , তাজ বদল দো/বেইমানোঁ কা রাজ বদল দো। সিপিআইএম এল করতে গিয়ে আবার নতুন শ্লোগান শিখলাম-লালকিলা পর লাল নিশান/মাঙ্গ রহে হ্যায় হিন্দুস্তান। সিপিএম যেই শোনালো -বিষবৃক্ষের দুইটি মূল/ বিজেপি আর তৃণমূল, দিদি বললেন, চুপচাপ/ফুলে ছাপ। ভাবখানা এমন, কথা কম, কাজ বেশী।

    তারপর একসময় আস্তে আস্তে সব ভুলে যেতে শুরু করলাম। সেই যে মাকোন্দোর ভোলা-রোগ এল। ভুলে যাওয়া থেকে বাঁচতে সবকিছুর গায়ে নামের লেবেল সেঁটে রাখা জরুরী হল। যে, এ তৃণমূল, এ বিজেপি, এ সিপিএম, ও কংগ্রেস। এ মালিকপক্ষ , ও শ্রমিক, সে কৃষক। নইলে কাউকেই আর আলাদা করে চেনা যাবে না।

    ভোট ক্যাম্বিস ২

    তা ঠিক করলাম এবারের ভোট ক্যাম্বিস সরেজমিন দেখতে বেরোব। খুব একটা বাড়তি খাটাখাটনি করব না, অ্যাপোলো হয়ে মেট্রোপলিটান যাওয়ার পথের দুধারে গণতন্ত্রের যেসব নতুন নতুন দেবালয় গজিয়ে উঠেছে, অর্থাৎ কিনা ভোটের ব্যানার-ফেস্টুন-হোর্ডিং-দেওয়াল লিখন- সেসব দেখতে দেখতে যাবো। নোট নেবো , দরকার হলে নেমে ছবি তুলবো। সস্তায় সাংবাদিকতা। টিভি চ্যানেলের দু-চার কথা তো আগেরবার হলো, খবরের কাগজ নিয়ে কথা বলে লাভ নেই, নেটের দৌলতে ওসব সবাই পড়তে পান, এখন কবির কথামত রাস্তাই একমাত্র রাস্তা।

    এমনিতে কমিশন আর মিডিয়ার দাপটে এবারে দেওয়াল লিখন কিছু কম। এখন হল ফ্লেক্স প্রিন্টিংয়ের জমানা, আর খরচাও তেমন বেশী নয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, ভোট চুকে গেলে পর পয়সা না দিলেও চলে যায়-কার ঘাড়ে ক'টা মাথা, ভোটবাবুদের কাছ থেকে বাকিবকেয়া আদায় করবে!-দু:খ করছিলেন কলকাতা জুড়ে প্রিন্টাররা।

    জয়ত্তারা, আমাদের যাত্রা হল শুরু।

    সোদপুর ব্রীজের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় রেলস্টেশনের সামনে অনেক উঁচুতে কংগ্রেসের বিশাল ব্যানার প্রথমেই আপনার চোখে পড়বে। সোনিয়াজীর হাস্যোজ্জ্বল ঘোমটা-টানা মুখ, হাত নাড়ছেন আমার -আপনার উদ্দেশ্যে, মনমোহনজীও আছেন, কিছুটা খাটো হয়ে। বেশ। ভালো কথা। কিন্তু নীচে-র লেখাটার যে মানে বোঝা গেল না, সেটা মোটেই ভালো কথা নয়। আমার পক্ষে, সম্ভবত: কংগ্রেসের পক্ষেও। একতা আর সদ্ভাবনা তো বুঝলাম, সুরক্ষাও বোঝা গেল, কিন্তু "ভীত-শান্তি'? এমন কোনো শব্দ কী শুনেছি এই বেঁটেখাটো বাঙালী জীবনে? ইহা কী বাংলা ভাষা? কে বলবে রে আমা-আ-য়?

    আর একটু এগোলেই ব্যানার্জী বুকহাউসের ওপরে ততোধিক বড় "আমরা করবো জয়, নিশ্চয়'। এমত প্রত্যয় কার? না, অমিতাভ নন্দী মশায়ের। ঐ যে ছবি । এই এক সংযোজন এবারের বঙ্গ ভোটের রঙ্গশালায়। ছবিতে ছবিতে ছয়লাপ। বাম-ডান নির্বিশেষে। রোগা-মোটা-বেঁটে-টেকো নির্বিশেষে। কাট আউট কালচারের দিকে একধাপ এগোনো গেল তাহলে।

    বিটি রোড এসে পৌঁছেছি। ডানহাতেই পেট্রোল পাম্প, পাম্পের ঠিক মুখেই কবির বাণী। কবি কে, এই প্রশ্ন করে কোন বাতুল? সে কী বাঙ্গালী না জিবেগজা? রণে -বনে জলে-জঙ্গলে-কমোটে ও ভোটে কে আর আমাদিগের রক্ষক? সত্যি , গুরুদেব না থাকলে এই ন্যালাভোলা জাতির যে কী দশা হত !

    তো, বিটি রোডের ধারে কবি বলেছেন "অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো/ সেই তো তোমার আলো'। বলছেন, এইটে ভোটের শ্লোগান নয়? অরাজনৈতিক সব কথাবার্তা? হায় নাবালক, তুমি কী জানোনা , এই জবাকুসুমসঙ্কাশ কাশ্যপেয়মহাদ্যুতি সূর্যের তলায় দীনদুনিয়ার সকল কিছুই রাজনৈতিক, সে ফুচকা হোক কী শালপাতা কিম্বা শালবনী! আর কী বলছ? পড়ে বোঝা যাচ্ছে না, এ কাদের শ্লোগান? ঐ ত মজা ! এটাই এবারের ভোটের স্পেশাল গুগলি। কী দুসরা; কী ক্যারম বল। যে , পড়ে কিছুতেই বোঝা যাবে না, যদি না তুমি দুলালের আসল তালমিছরির লেবেল ও সীল দেখে নাও। আরো উদাহরণ দেবো। এ তো সবে কলির দুপুর !

    না, তোমায় বেশীক্ষণ সাসপেন্সে রেখে লাভ নেই। ও আলো আসলে সল্টলেকের ইন্দিরাভবন হতে উৎসারিত জ্যোতি। সত্যি, বৃদ্ধ না থাকলে এই দু:সময়ে বুদ্ধ-র যে কী দশা হত !

    কথা হচ্ছিল গুরুদেব ও বাঙালী জাতিকে নিয়ে। গুরুদেব, বস্তুত: এক কামধেনু। তাঁর বাঁট থেকে সিপিএম-তৃণমূল নির্বিশেষে সকল বাঙালীর বাচ্চার জন্য দুগ্ধধারা ঝরে অনিবার (যদিও এটা কিঞ্চিৎ একচোখোমি হল, বিশেষত: যখন সিপিএম-ই ওঁকে বিশ্বকবি করেছে)।

    উদাহরণ চাই? এই দেখুন, ডানলপের মোড়ে "মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। মানুষের পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো'-সিপিএম, সঙ্গে আবার ছবিতে-জ্যোতিবাবু । (পাপ মনে প্রশ্ন এল- মানুষের প্রতি বিশ্বাসে কী সম্প্রতি চিড় ধরেছে, কমরেড?) চিড়িয়ার মোড়ের মাথাতে "এলো ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে / নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে / এলো মানুষ-ধরার দল'-তৃণমূলী ব্যানার, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গে নন্দীগ্রামের ছবি ফ্রী। চিড়িয়া মোড়েই আর একটু এগোলে "তুমি কী কেবলি ছবি/ শুধু পটে লিখা?' প্রশ্ন তৃণমূলের, "তুমি' এক্ষেত্রে প: বঙ্গের শিল্পায়ণ, ঐ যে কারখানার ছবি দেওয়া আছে। সঙ্গে অসাধারণ ছন্দোময় বাণী, না, গুরুদেবের না, স্বরচিত(মাঝে মাঝে মৌলিক হতে কী সাধ জাগে না? ) :
    "শিল্পায়ণ হয় না আকাশে, বুঝল সিপিএম ৩২ বছর পর
    কোটি বেকারের প্রশ্নের ওর নেই কোনো উত্তর'।

    জাতীয় কংগ্রেসই বা পিছিয়ে থাকে কেন, সত্তরে গুরুদেব-ব্যান করার মত ঐতিহাসিক ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে কংগ্রেস এখন সদা "গুরুমুখী'; বনহুগলীতে "তোরা সব জয়ধ্বনি কর / ঐ নূতনের কেতন' ইত্যাদি, সঙ্গে গুরু রাহুল ও গুরুমা সোনিয়া।

    আমরা এসে পৌঁছেছি রথতলার মোড়ে, ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সামনে সিটুর প্ল্যাকার্ড : দিদির ছবিসহ প্যারডি-তুমি না থাকলে রাজ্যটা এত অস্থির হত না/ তুমি না থাকলে শিল্প আসত , বেকারী থাকত না। পাশেই ঢেঁকি খেলার দৃশ্য, পাত্রপাত্রী প্রণব (শিল্পীর স্বাধীনতাসহ) ও মমতা ; একবার প্রণব ওপরে উঠছেন, একবার মমতা-শেষ দৃশ্যে উভয়েই কুপোকাত, ঢেঁকি ভেঙে চৌচির; নীচে ক্যাপশন : চড়কের মেলার নতুন আকর্ষণ- মহাজোট, সঙ্গে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ: দেখবেন , যেন ভেঙ্গে না যায়। তারি পাশে সহাস্যে করমর্দনরত বুশ ও মনমোহন, সিটু ওঁর মনের কথাটি বলছেন : জাহান্নমে যাক ভারতবর্ষ, অটুট থাকুক আমাদের সম্পর্ক। আছে মোমবাতির বলয়ের মধ্যে ভুখা মানুষের ছবি (আমলাশোল?) আর সিটুর প্রশ্ন: কোথায় সুশীল? এদের মোমবাতি কী পেটের জ্বালা মেটাতে পারে?

    সিঁথির মোড়; অর্থাৎ সেলিমদা'র রাজ্যপাটে এসে পৌঁছেছি। সেলিম প্রচারকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন, "বাজার'-এ রটনা। প্রচারের শুরুই হয়েছিল ওঁর "জয় হো' দিয়ে , সেকথা আজ ইতিহাস। নাম না বলতে চাওয়া সিপিএম নেতারাও নাকি সমালোচনা করেছেন প্রচারের এই স্টাইলকে। সেলিমের তাতে বয়ে গেছে, বেশ সোজা-সাপটা ভাষায় লেখা ওঁর ব্যানার-হোর্ডিংগুলি, মুখ্যুসুখ্যু মানুষও সহজে বুঝতে পারে; ব্যানারগুলি বেশ টেকি,ঝকঝকে, পেশাদারী ছাপ সর্বত্র। একার হাতে সিপিএম-এর প্রচারের লিংগো বদলে দিচ্ছেন মহ: সেলিম।

    যেমন কিনা সিঁথির মোড়ে : "দয়া-মায়া-মমতা কিছুই নেই। আছে শুধু ক্ষমতার লোভ। বলি অসহায় মানুষ।' সঙ্গে পোড়া-খাবলানো-খিমচানো মানুষের ছবি। "কেবল বড়লোক আর শেয়ার বাজারের কথা না, সাধারণ মানুষের কথা ভাববে এমন সরকার চাই দিল্লীতে'-বেঙ্গল কেমিক্যাল, সাথে বিমূর্ত শিল্প। "এখান দিয়েই যাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো, আমাদের স্বপ্নের ট্রেন। তৃণমূল বলছে, হতে দেবে না। আপনি কী এদের ভোট দেবেন?-বেঙ্গল কেমিক্যাল। রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রীটে সাদা-কালোয় এক মাঝবয়সী মহিলার ছবি। বক্তব্য-বস্তিতে থাকি। আমার ছেলে কম্পিউটার শিখছে। আমার স্বপ্ন সফল হতে চলেছে। কিম্বা এক যুবক-"আমি নারুলা ইনস্টিটিউটের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র। সেক্টর ফাইভ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে'। উল্টোডাঙ্গার মোড়ে এক মহিলা হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে জাল টানছেন-ইতিহাসের দিকে, নয়াচরের দিকে। সৌজন্য মহ: সেলিম।

    "কলকাতার উত্তর" সেলিম যদি "জয় হো" তো সুদীপ তবে "লড়বো, গড়বো, জিতবো রে"-সিঁথির মোড়ে (অবশ্য জানি না এই আতান্তরের দিনে সে ব্যানার এখনো টাঙানো আছে কিনা)। টালা ব্রীজের ওপারে আবার সুদীপ, এবারে ছবিতে-গল্প। ন্যানোর চাকার তলায় পিষ্ট বাংলা। গৌরীবাড়ির মুখে আবারো ন্যানো কমিকসের ছড়া-ছবি: বেকার ছেলে সিঁড়ির ধাপে মাথায় হাত দিয়ে শুকনোমুখে বসে আছে আর ক্ষুব্ধ সিপিএম বলছে-

    বাংলা থেকে ন্যানো গেলো
    দিদির কিবা এসে গেলো
    বেকার ছেলে বেকার থাকুক
    চাষীর ছেলে চাষী
    ভুল বুঝিয়ে ভোট বাড়ুক
    তাতেই দিদি খুশী।

    উল্টোডাঙ্গা মেন রোড ধরতেই সেলিমদার বড়সড় হোর্ডিং, নাকে নথ পরা নেকড়ে-টেকড়ের ছবিসহ :

    মাওবাদীদের সাথে তৃণমূল
    তৃণমূলের সাথে কংগ্রেস
    এদের সাথে সিদ্দিকুল্লা
    মিছিলে হাঁটবে আনন্দমার্গী
    ভরসা দেবে মিডিয়া
    মোমবাতি-জ্বালানো সুশীলরা
    বাঁকুড়াতে ঝাড়খন্ডী
    দার্জিলিং-য়ে বিমল গুরুং
    5-স্টারে মাঝরাতে সাহেবরা ..

    হিসেব কষে দেখলাম, এলটিটিই, ক্লু ক্লুক্স ক্ল্যান, আল কায়দা ও আইআরএ-ই যা বাদ পড়েছে।

    এইবারে ধাঁধা। দুসরার কথা বলেছিলাম; এটি একটি তিসরা। দেখি , এর রহস্যভেদ করতে পারেন নাকি। তিনটে শ্লোগান দেবো, কোনটা কোন দলের ঠিকঠাক মেলাতে হবে।দেখি, কে কত বড় মাতব্বর হয়েছেন।
    ১। বিশৃঙ্খলা, হিংসা আর ধ্বংসের মহাজোট বনাম আপনার-আমার উন্নয়ন
    ২। এদেশে স্লামডগরা স্লামডগই থেকে যায়। আর মিলিয়নেয়াররা হয়ে যায় বিলিয়নেয়ার। আপনি কি এই উন্নয়ন চান?
    ৩। দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব বঙ্গে

    কী? ভাবছেন, এ আর এমন কী, প্রথমটা সিপিএম, পরেরটা মমতা, আর তিন নম্বরটা যে কারোর হতে পারে! ভুল, বন্ধু , ভুল। প্রথমটা যে সিপিএম সে তো বেথে পর্যন্ত বলে দেবে; কিন্তু দু নম্বর? আবার সিপিএম। আজ্ঞে হ্যাঁ; এই উন্নয়ন-ঐ উন্নয়ন, উন্নয়ন কী,কেন, সে কি খাদ্যবস্তু না কুন্তলীন-দেলখোশ, এইসব প্রশ্ন নিয়ে মাথা খারাপ করবেন না। আগেই বলেছি, এটা একটা ধাঁধা।

    আর তিন নম্বরটা আমার নির্দোষ রসিকতা। ওটি একটি খাবারের দোকানের বোর্ড, তেলেঙ্গাবাগান অঞ্চলের। মাইকেলের সঙ্গে ওর কী সম্পর্কে, সে রহস্যভেদ করতে পারিনি। হয়তো বেকার মাইকেল ওখানে খেতে আসতেন। যদিও দেখে ততটা পুরনো মনে হল না।

    তেলেঙ্গাবাগান যখন এসেই গেল, ঝুলি থেকে একটি প্যারডি বের করি। সুদীপ বন্দ্যো'র ছবিসহ (ভালো এঁকেছে কিন্তু) ফ্লেক্সপ্রিন্টেড প্যারডিখানি এইরূপ : ( যদ্দৃষ্টম)
    শুনতে পেলুম পোস্তা গিয়ে
    সুদীপ নাকি মস্ত ইয়ে?
    সুদীপটাকেই প্রার্থী পেলে?
    জানতে চাও, সে কেমন ছেলে?
    মন্দ নয় সে, পাত্র ভাল।
    দল যদিও, হ্যা, বদলালো !
    রাজনীতি তার? বলছি মশাই
    ধন্য ছেলের অধ্যবসায়।
    টাটার দেওয়া টংকা গুনে,
    আজকে দিল্লি কালকে পুনে
    উনিশটিবার বিধানসভায়,
    টাটাবাবুর কারখানা চায়।
    মানুষ তো নয়, মগজটা তার
    ধান্দাবাজির প্রবল জোয়ার !
    সুদীপটা আজ কেবল ভোগে,
    মন্ত্রী হবার স্বপ্নরোগে !
    কিন্তু সুদীপ উচ্চঘর ....
    আদবানীদের বংশধর।
    এইতো এবার প্রার্থী পেলে,
    এমন কি আর মন্দ ছেলে?

    কিন্তু এরপরই বিপত্তি ! কবির ভাষায় যাকে বলে বিষম বিপদপাত। উল্টোডাঙ্গা মেন রোডকে ওয়ান -ওয়ে করে দিল। চারিদিকে কাতারে কাতারে পুলিশ। গাড়ি ঘুরিয়ে সে কোন গলিতে ঢুকিয়ে দিল। বিপ্লবী বারীন ঘোষ সরণী। সেখানে পাশাপাশি বড়জোর পৌনে একখানা বাস ঢুকতে পারে। জ্যাম, ঘাম, মেজাজ খাট্টা আর তৃণমূলের ব্যানার। দক্ষিণে মমতা, উত্তরে সুদীপ/অন্ধকার বাংলায় জ্বালাবে প্রদীপ। সঙ্গে সত্যি সত্যি প্রদীপের ছবি। কিন্তু কে জানত, আর একটু এগোলে আরো এক বিপন্ন (কেননা গাড়ি কেঁচোর স্পীডে চলছে) বিস্ময় আমার জন্য বসে ছিল দেওয়ালের গায়ে একটা ছোট পোস্টার হয়ে : ভালোর জন্য পরিবর্তন সবাই চায়। তাবলে সিপিএম-এর বদলে তৃণমূল? সর্বনাশ হয়ে যাবে-সুশীল স্বজন সমাজ।

    আমার মনে হয়, এটি একটি, পরশুরামের ভাষায় যাকে বলে "অবদান'; এবং এটি বারীন ঘোষ সরণীর নিজস্ব, মৌলিক। কেননা কলকাতার আর কোথাও এই সুশীল স্বজন সমাজের ন্যাজের ডগাটুকুও আমি দেখতে পাই নি। কাগজেও না, টিভিতেও না।

    কি উপায়ে যে সেই গলির গলি তস্য গলি থেকে আমরা উৎসারিত হলাম আলোর মধ্যে, অর্থাৎ বাইপাসে, তা এখন আর মনে নেই। চেনাজানা বাঙ্গালীর মধ্যে একমাত্র একজনের এরকম অভিজ্ঞতা হয়েছিল বলে মনে করি, তিনি সৈয়দ মুজতবা আলি।
    যাক গে, সকল মেঘেই রূপালী রেখা, সব ইসবগুলেই কোষ্ঠসাফ। যেমন বারীন ঘোষে স্বজন সমাজ। আর বেঙ্গল কেমিক্যালের মোড়ে যে খাসা একখানা শ্লোগান দেখতে পেলে, তার কথা তো বললে না? সেই " কেন্দ্রের পাতে বাটার চিকেন/রাজ্যের হাতে বাটি/এই গল্পটা বদলে দিতেই / চলো বামদিকে হাঁটি' !

    এছাড়াও রয়েছে ইংরেজী শ্লোগান, যেমন কিনা : choose the right maska , সঙ্গে বাটার -লালায়িত বালক-বালিকা, নীচে আবেদন - Vote for Amul (B) । হায়াতের মোড়ে অসাধারণ কার্টুন, দিদি (পেছন ফিরে) পায়রা-ওড়ানোর ভঙ্গিতে উড়িয়ে দিচ্ছেন রাজ্যের প্রাণপাখী, অর্থাৎ কিনা ন্যানোপক্ষীটি; বলছেন -যা: , চলে যা । আর সুদূর গুজরাটের সারঁদ থেকে(সৌজন্য আনন্দবাজার) কিনা কে জানে, লুব্ধ মোদীসাহাব ছিপ ঘুরিয়ে তুলে নিচ্ছেন তাকে , যেন সুশীল (সরি, শিষ্ট-শান্ত) মৎস্যখানি (কী বিবর্তন!); আর কবি বলছেন-"প: বঙ্গের ন্যানো/ গুজরাটে কেন? মানুষ এর জবাব দেবে'। না, কবি না, পথের পাঁচালী।

    এরপর তো ঝক্কাস বাইপাস,লঁজেরির অ্যাড, আমরা পাথর বের করি গো-ওখার্ট(ছোটবেলার "হাইড্রোসি-ই-ল কাটা-ও' ধ্বনি এখনো কানে বাজে, আমাদের ক্যান্টিনদিনের ঠাট্টা, গরমের দগ্ধ দুপুরে অভাবী ডাক্তার যা বলে নাকি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে) ইত্যাদি। এরি মাঝে লাফিং সিগন্যাল, না মানলে ফাইন-মীরাক্কেল। আসল মীর এখন, আশা করি জানেন,- নাম বদলে ঝন্টুদা- চব্বিশ ঘন্টা চ্যানেলে , ঘন্টা নয়, মমতার ব্যাণ্ড বাজাচ্ছেন। বাইপাসের বাঁপাশের জমি আবার পড়েছে বারাসাত লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে, সেখানে প্রার্থী ফ : ব:-এর সুদিন চট্ট্যো ও দিদির কাকলিদিদি। চিংড়িহাঁটা পেরোতেই এক ছোট্ট ব্যানার, ভালো করে খেয়াল না করলে নজর এড়িয়ে যেতে পারে :

    সিংহ ধ্যান সিংহ জ্ঞান সিংহ চিন্তামণি
    সিংহ বিনা আমরা যেন মণিহারা ফণী।

    তবে সেরা ভোটের ছড়া অবশ্যই সেলিমের কেন্দ্রে, চিড়িয়া মোড়ে-

    যেদিন মানুষ চেয়েছে বদল, কাগজ লেখেনি কোনো
    তেভাগার সুরে, হাতুড়ির গানে বদল এসেছে জেনো।

    তেভাগা থেকে নন্দীগ্রাম। সেই ট্রাডিশন সমানে চলছে।

    লাশের ভোট। লাশক্যাম্বিস। একদিকে তাপসী মালিক তো অন্যদিকে ঝর্ণা মান্ডি। এদিকে খেজুরি, ওদিকে নন্দীগ্রাম। ধর্ম ও জিরাফ। মাঝখানে এক বোকাহাবা মুমূর্ষু গাধা। গাধাটাকে জল দাও, মরে যাবে। মরে গেলে আপদ যাবে, আমাদের বুথে ভোট দেবে ভুতে।

    না, গাধা হাতজোড় করে আর দক্ষিণরায়ের দয়া চাইছে না; বলছে না-অন্তিমে না পাঞি যেন চরণের থাপা। শুধু মরণান্তিক দু:খে মুচকি হেসে গাধা গাইছে তার রাসভরাগিণীতে গান-কোনদিকে যাই, একটা পাগল আর একটা তো পাষণ্ড।

    আর তার গান ছাপিয়ে এদিক-ওদিক-দশদিক ভরে উঠছে ঝিংকাচিকা বাজনা, ভোটের বাজনা। নাচের বাজনা। নাচছেন গণতন্ত্র। মেরি পিকনিক আজ পিগমির।

    আমাদের এই তীর্থে আজ উৎসব
    আমাদের এই তীর্থে ঘোর উৎসব
    আমাদের এই তীর্থে শেষ উৎসব।।

    মে ১০, ২০০৯
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ০৯ মে ২০০৯ | ১৪৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন