এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • স্বাস্থ্য, অধিকার (শেষ কিস্তি)

    ডা. পুণ্যব্রত গুণ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ | ১১৬৩ বার পঠিত
  • আগের পর্বের পর

    পত্র-পত্রিকা

    স্বাস্থ্য আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বেশ কয়েকটা পত্র-পত্রিকা।

    • MFC Bulletin, Issues in Medical Ethics, Radical Journal of Health, Doctors’ Dialogue, ইত্যাদি প্রধানত তাত্ত্বিক আলোচনার মাধ্যম।
    • Drug, Disease, Doctor, BODHI, Rational Drug Bulletin মূলত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যুক্তিসঙ্গত চিকিৎসার রীতি-নীতিতে অভ্যস্ত করানোর লক্ষ্যে প্রকাশিত।
    • Health for the Millions, Health Action, অসুখ বিসুখ, সোসাল ফার্মাকোলজি বুলেটিন, স্বাস্থ্যের বৃত্তে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে প্রকাশিত।


    গণসংগঠনের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য আন্দোলন

    এই ধারায় উল্লেখ করার মত ছত্তিশগড় মাইন্স শ্রমিক সংঘ ও ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা পরিচালিত শহীদ হাসপাতাল আন্দোলন, ইন্দো-জাপান স্টীল ওয়ার্কার্স’ ইউনিয়ন পরিচালিত বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল, কানোরিয়া জুট সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়নে উদ্যোগে গড়ে ওঠা শ্রমিক-কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্যোগে গঠিত শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ। ঘটনাচক্রে কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্বে এই সব কটা আন্দোলনেই যুক্ত থেকেছি আমি।

    কমরেড শংকর গুহ নিয়োগীর নেতৃত্বে ছত্তিশগড়ের শ্রমিক-স্বাস্থ্য আন্দোলন


    ১৯৭৭-এ দল্লী-রাজহরার ঠিকাদারী লোহাখনি-শ্রমিকদের ইউনিয়ন ছত্তিশগড় মাইন্স শ্রমিক সংঘকে নিয়োগী কেবল শ্রমিকের বেতন-বৃদ্ধি, বোনাস, চার্জশিটের জবাব লেখায় সীমিত রাখেন নি। শ্রমিক-জীবনের প্রত্যেকটা বিষয় স্থান পেয়েছিল ইউনিয়নের কর্মসূচীতে। ইউনিয়নের ১৭ টা বিভাগের অন্যতম ছিল স্বাস্থ্য বিভাগ।

    ১৯৭৯-এ ইউনিয়ন উপাধ্যক্ষা কুসুম বাই স্থানীয় ভিলাই স্টীল প্ল্যান্ট হাসপাতালে ডাক্তার ও সেবিকাদের অবহেলায় প্রসবের সময়ে প্রাণ হারান। নেত্রীর মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নিজেদের প্রসূতি হাসপাতাল গড়ার শপথ নেন।

    ’৮০-র দশকের শুরুতে এক সফল শরাব-বন্দী আন্দোলন চালায় ইউনিয়ন।

    ‘স্বাস্থ্য কে লিয়ে সংঘর্ষ করো’ আন্দোলন আরম্ভ হয় ১৯৮১-র ১৫ই আগস্ট। ততদিনে ডা বিনায়ক সেন ও ডা আশীষ কুমার কুন্ডু আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। ডা পবিত্র গুহ যোগ দেন মাস চারেক বাদে। আন্দোলনের প্রথম রূপ ছিল সাফাই আন্দোলন—শ্রমিকরা খনি-ম্যানেজমেন্টকে বাধ্য করে শ্রমিক বস্তি পরিষ্কার রাখার বন্দোবস্ত করতে।

    ১৯৮২-র ২৬শে জানুয়ারী শহীদ ডিস্পেন্সারীর কাজ আরম্ভ হয়। ১৯৮৩-৩রা জুন ১৯৭৭-এর শহীদদের স্মৃতিতে গড়ে তোলা হয় শহীদ হাসপাতাল।

    শহীদ হাসপাতাল ‘মেহনতকশোঁ কে লিয়ে মেহনতকশোঁ কা আপনা কার্যক্রম’ অর্থাৎ মেহনতী মানুষের জন্য মেহনতী মানুষের নিজস্ব কর্মসূচী।
     

    • শ্রমিকদের অর্থে ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হয় এই প্রতিষ্ঠান।
    • খনি শ্রমিকরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এখানে কর্মরত।
    • শ্রমজীবী পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এই হাসপাতালের কর্মী।
    • হাসপাতাল পরিচালনায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের।


    যুক্তিসঙ্গত ওষুধ ব্যবহার আন্দোলনের তাত্ত্বিক কথাগুলোর প্রথম বড় মাপের প্রয়োগ ঘটে এ হাসপাতালে—
     

    •  টনিক, কাশির সিরাপ, এনজাইম, ইত্যাদি অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ওষুধের ব্যবহার নেই।
    • অযৌক্তিক Fixed Dose Combination-এর ব্যবহার নেই।
    • যেখানে ওষুধ ছাড়া কাজ চলে সেখানে ঘরোয়া ব্যবস্থাগুলোকে উৎসাহ দেওয়া হয়—কাশিতে গরম জলের ভাপ, ডায়রিয়ায় ঘরোয়া নুন-চিনির শরবৎ, জ্বর কমাতে জল দিয়ে মোছা….।

    শহীদ হাসপাতাল জনশিক্ষার এক মাধ্যম রূপেও কাজ করে। যার উদ্দেশ্য—

    • রোগের আর্থ-সামাজিক কারণ সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা।
    • রোগ-প্রতিরোধ ও রোগ-চিকিৎসার জ্ঞানে মানুষের ক্ষমতায়ন করা।


    দেওয়াল পত্রিকা ‘স্বাস্থ্য সংগবারী, দ্বিমাসিক পুস্তিকা ‘লোক স্বাস্থ্য শিক্ষামালা’ এবং মোহল্লা-গ্রামে প্রচার—স্লাইড শো, পোস্টার প্রদর্শনী, ম্যাজিক শো, ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাস্থ্য-শিক্ষার কাজ চলত।

    জনসচেতনতা থেকে কী ভাবে জন-আন্দোলন গড়ে ওঠে তার অভিনব নিদর্শন পাওয়া যায় এখানে—শুরু থেকে শহীদ হাসপাতালের প্রচারের বর্ষামুখ ছিল ডায়রিয়ায় মৃত্যুর বিরুদ্ধে। এই প্রচারে জনসাধারণ ডায়রিয়া-প্রতিরোধে যথাযথ পানীয় জলের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন হন। ছত্তিশগড় মাইন্স শ্রমিক সংঘ ও ছত্তিশগড় মুক্তি মোর্চা এই সচেতন মানুষদের নিয়ে পানীয় জলের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে তোলে তার চাপে ১৯৮৯-এ স্থানীয় প্রশাসন ও ভিলাই স্টীল প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষ দল্লী-রাজহরা ও তার আশেপাশের গ্রামগুলোতে ১৭৯টা নলকূপ বসাতে বাধ্য হয়।

    স্বাস্থ্যের সঙ্গে আর্থ-সামাজিক অবস্থার সম্পর্ক কত ঘনিষ্ঠ তা বোঝা যায় শহীদ হাসপাতালের আরেকটা অভিজ্ঞতা থেকে। শহীদ হাসপাতাল শুরুর ৬ বছর পর ১৯৮৯-এ দল্লী-রাজহরার সরকারী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র শ্রমিক-বস্তিগুলোতে এক সমীক্ষা চালায়, তাতে দেখা যায় পোলিও-র সংখ্যা শূন্য। কারণ কেবল টীকাকরণ কর্মসূচী নয়। কারণ—ইউনিয়নের আন্দোলনের ফলে মজুরী বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, বাসস্থানের উন্নয়ন, পানীয় জলের ব্যবস্থা,বয়স্ক-শিক্ষাকর্মসূচীর ফলে বাবা-মাদের সচেতনতা।

    শহীদ হাসপাতালের উপস্থিতির চাপে স্থানীয় ভিলাই স্টীল প্ল্যান্ট হাসপাতাল নিজের পরিষেবার উন্নয়ন ঘটাতে বাধ্য হয়, দল্লী-রাজহরায় একটা এবং ডোন্ডী-লোহারা বিধানসভা ক্ষেত্রে সাতটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র খুলতে বাধ্য হয় সরকার।

    সংঘর্ষ ও নির্মাণের রাজনীতিঃ

    শংকর গুহ নিয়োগী এক নতুন সমাজের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছিলেন—

    স্বপ্নের সমাজ
    যেখানে সবাই পানীয় জল পাবে,
    যেখানে সব খেতে সেচের ব্যবস্থা থাকবে,
    যেখানে সব কর্মক্ষম হাত কাজ পাবে,
    যেখানে কৃষক ঊৎপাদনের ন্যায্য দাম পাবে,
    যেখানে সব গ্রামে হাসপাতাল থাকবে,
    যেখানে সব শিশুর জন্য স্কুল হবে,
    যেখানে সবাই পাবে বাস্তু জমি আর ঘর,
    যেখানে দারিদ্র্য, শোষণ আর পুঁজিবাদ থাকবে না।

    সেই স্বপ্নের সমাজের ছোট্ট একটা টুকরো সাকার শহীদ হাসপাতালে। সমাজের শ্রেণী-বিভাজন অনুযায়ী যে ক্ষমতার সিঁড়ি দেখা যায় যে কোন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে তা নেই এখানে। ডাক্তার থেকে সাফাই কর্মী সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন নীতিগত ও প্রশাসনিক সব বিষয়ে। এর অনুপ্রেরণায় নতুন নতুন মানুষ নতুন সমাজের স্বপ্নের প্রতি আকৃষ্ট হন।

    বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল

    শহীদ হাসপাতালের অনুপ্রেরণায় ১৯৮৩-তে পথ চলা শুরু ইন্দো- জাপান স্টীল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ও পিপলস’ হেলথ সার্ভিস এসোশিয়েসনের। খামারপাড়ার শ্রমিক-বস্তিতে প্রাথমিক স্কুলে চলে ক্লিনিক, স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রয়াস, সার্জিকাল ক্যাম্প।



    ১৯৯৪-এর ১লা মার্চ বেলুড় মঠের কাছে জি টি রোডের ওপর শ্রমজীবী হাসপাতালের শুরু। নানা প্রতিকূলতা জয় করে বেড়ে উঠেছে এ হাসপাতাল। অত্যন্ত কম খরচে শল্য চিকিৎসার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
     

    সম্প্রতি শ্রীরামপুরের কাছে বেলুমিল্কি গ্রামে শ্রমজীবী হাসপাতালের বিশাল ভবন তৈরী হয়েছে। কিন্তু প্রধান সমস্যা চিকিৎসকের। এছাড়া বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের একটা বড় দুর্বলতা যুক্তিসঙ্গত চিকিৎসার প্রতি যথাযথ দায়বদ্ধতার অভাব।

    শ্রমিক-কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্র


    কানোরিয়া জুট সংগ্রামী শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে যাত্রা শুরু ১৯৯৫-এর ২০শে মার্চ।

    এলাকার কৃষিজীবী ও অসংগঠিত শ্রমজীবী মানুষের জন্য সংগঠিত শ্রমিকদের এ ছিল এক উপহার। চেঙ্গাইলের এক পরিত্যক্ত মুরগীর চালায় চলে প্রথম ৮ বছর। বিস্তীর্ণ এলাকার গরীব মানুষের আশা-ভরসার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

    ২০০২-এর পরের আট বছরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে তিনতলা ভবন। এখন ১৯জন ডাক্তার, ১জন ফিজিওথেরাপিস্ট, ১ জন অপ্টোমেট্রিস্ট, ১ জন সাইকোলজিস্ট, ১ জন স্পেশাল এডুকেটর, ২৭ জন অন্যান্য কর্মী। এক্স-রে, ইসিজি, প্যাথোলজি, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হয় বাজারের কম খরচে। আছে কম খরচে যুক্তিসঙ্গত ওষুধের দোকান।


    সংগঠকরা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে গড়ে তুলেছেন এক মডেল হিসেবে, যে মডেল প্রমাণ করে খুব কম খরচে আধুনিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভবপর। যদি রোগীদের পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস নেওয়া, সযত্ন শারীরিক পরীক্ষা করা হয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষার যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার এবং ওষুধের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার করা হয়।

    শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ

    শ্রমিক-কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এ সংগঠন গড়ে তোলেন ১৯৯৯-এ। মেহনতী মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষার আন্দোলনে যুক্ত ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংগঠন হিসেবে এ পরিচিতি পেয়েছে। এরা ডা নর্মান বেথুন, দ্বারকানাথ কোটনিস, বিজয় বসু, পূর্ণেন্দু ঘোষের পদাঙ্ক অনুসরণ করায় প্রয়াসী।


    চিকিৎসাব্যবস্থার ব্যাপক ব্যবসায়ীকরণের স্রোতের বিরুদ্ধে এ সংগঠন প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, কম খরচে বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিপূর্ণ আধুনিক চিকিৎসা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। শ্রমিক-কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্র, চেঙ্গাইল; বাউড়িয়া শ্রমিক-কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্র; বাইনান শ্রমিক-কৃষক মৈত্রী স্বাস্থ্য কেন্দ্র; মদন মুখার্জী স্মৃতি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র, বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া এবং সুন্দরবন সীমান্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা, জেমসপুর, গোসাবায় চালানো ক্লিনিকগুলোতে এই প্রমাণ করার কাজ চলে।

    এ সংগঠন বিশ্বাস করে, যতই রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচী, জনস্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচী নেওয়া হোক না কেন, জনতার স্বাস্থ্যের অবস্থার সামান্যতম পরিবর্তনও হতে পারে না, যদি না স্বাস্থ্য কর্মসূচী খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, সংস্কৃতির আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত থাকে।

    তাই এ সংগঠন শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য আন্দোলনগুলোর পাশে থাকার চেষ্টা করে—

    সিঙ্গুর জমিরক্ষার আন্দোলনে, নন্দীগ্রাম ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধে নন্দীগ্রাম গণহত্যাবিরোধী প্রচার মঞ্চ, নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য উদ্যোগ গড়ে তুলে, লালগড় আন্দোলনে, পস্কো-বিরোধী আন্দোলনে……

    জনসাধারণকে রোগের আর্থসানাজিক কারণ সম্পর্কে জানানো এবং চিকিৎসা বিষয়টাকে ধোঁয়াশামুক্ত করে তাঁদের হাতে চিকিৎসার সহজ প্রযুক্তিগুলো তুলে দেওয়া এ সংগঠনের লক্ষ্য। নিজস্ব প্রকাশনা, অসুখ-বিসুখ পত্রিকা প্রকাশনায় অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্যের বৃত্তে পত্রিকা প্রকাশনায় অংশগ্রহণ, গণ আন্দোলনের কর্মীদের স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে তৈরী করার কর্মসূচী চলে এই লক্ষ্যে।

    এ সংগঠন বিশ্বাস করে, দেশী-বিদেশী, সরকারী-বেসরকারী ফান্ডিং এজেন্সির অনুদানের ওপর নির্ভরতা নয়, জনতার উদ্যোগে তাঁদের সামর্থ্যের ওপর দাঁড়িয়ে গড়ে ওঠা স্বনির্ভর  কর্মসূচীই আসলে জনমুখী হতে পারে।

    এ সংগঠন নিজের কর্মসূচীগুলোর রূপায়ণে চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মী এবং রোগীদের মধ্যে এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়, যেমনটা হবে শোষণহীন নতুন সমাজে।

    অন্যান্য জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ

    সরবেড়িয়ার সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল, কামারহাটির জনসেবা ক্লিনিক, পুরুলিয়ার বান্দোয়ানে ভালোপাহাড় স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকে আমাদের হাসপাতাল, পশ্চিম মেদিনীপুরের কুসুমাশুলি গ্রামে প্রেমসেবা হাসপাতাল আরও কিছু জনমুখী স্বাস্থ্য কর্মসূচী, কোনটার ওপর বেলুড় শ্রমজীবীর প্রভাব, কোনটার ওপর শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগের।

    কিন্তু হাজার জনস্বাস্থ্য কর্মসূচী দেশের সমস্ত নাগরিকের স্বাস্থ্যরক্ষা করতে পারে না। দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। যেমন নিয়েছিল/ নিয়েছে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো। এখনও যেমন নিচ্ছে ব্রিটেন, কানাডার মত দেশ।

    স্বাস্থ্যের অধিকারের লড়াইকে এগিয়ে নিতে জনমুখী স্বাস্থ্য কর্মসূচীগুলোর পারস্পরিক আদান-প্রদান চাই। এক আন্দোলন থেকে অন্য আন্দোলনের শিক্ষা নেওয়া চাই। স্বাস্থ্য আন্দোলনকে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনের অঙ্গ করে তোলা চাই।

    চিকিৎসা ব্যবস্থার সামাজিকীকরণ চাই, যেমন বলেছিলেন ডা নর্মান বেথুন—

    • দেশের ডাক ও তার, সৈন্য ও নৌবাহিনীর, বিচার ও শিক্ষা বিভাগের মতো জনস্বাস্থ্যরক্ষার দায়িত্বও সরকারের।
    • সরকারকেই এর জন্য সমস্ত ব্যয় বহন করতে হবে।
    • সকলের জন্য সমান চিকিৎসার সুযোগ করে দিতে হবে। কে কত রোজগার করে তা না দেখে প্রত্যেকের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনমতো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দান ও দাক্ষিণ্যের পাট তুলে দিয়ে ন্যায়-বিচারকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। দয়া-দাক্ষিণ্য দাতাকে ছোট করে আর গ্রহীতার চরিত্রকে করে কলঙ্কিত।
    • স্বাস্থ্যরক্ষার কাজে যারা নিযুক্ত তাদের জন্য সরকারী তহবিল থেকে বেতন ও পেনশন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
    • স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে একটা স্বায়ত্বশাসিত গণতান্ত্রিক চিকিৎসা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।


    স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও চিকিৎসাব্যবস্থার সামাজিকীকরণের জন্য সংগ্রাম ছাড়া পথ নেই।
     


    (১৩ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ ফ্রেন্ডস অফ ডেমোক্র্যাসি আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্যের ঈষৎ বিস্তৃত রূপ)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ | ১১৬৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই মতামত দিন