যাপন_৫
আজকাল সপ্তাহান্তে সৌর প্রায়ই আসে অরিজিতের বাড়ী। ছবিতোলার পাশাপাশি শনিবার বিকেলগুলোর কয়েকঘন্টা ওদের দাম্পত্য যাপন। সারা সপ্তাহ প্রতীক্ষা করে অরিজিত ও। এ এক অলিখিত সংসার।এমনিতেই একা থাকা অরিজিত সারাসপ্তাহে অফিস থাকে বলে সাপ্তাহিকান্তিক ছুটির দিনটা বাজার দোকান রান্নাবান্না করে রাখে। রান্না করতে সবথকে বেশি ভালোবাসে ও।তার চেয়েও বেশি ভালোবাসে যে কোনও কাউকে রান্না করে খাওয়াতে। কিন্তু আজকাল নিজের মত করে নিজের সংসারে রান্নাবান্না করতে আরও বেশি ভাললাগে ওর। কেননা সৌর এসেই তো রান্নাঘরে ঢোকে আর ঢাকা খুলে খুলে গন্ধ শোঁকা শুরু করে। আর তারপরই একচামচ আধচামচ মুখে দেয়। কোনওটা বেশি ভাল লাগলে আরও একটু বাটি করে চায়। এই সময় সৌরর এই অভিব্যাক্তিতে বেশ মজা পায় অরিজিত। ও জানে সৌরটা ভোজন রসিক তবে পেটুক না। সবকিছুই সোনামুখ করে খায় আর বলে আমাদের বাড়িতে এই রান্নাটা এমন হয় বা অমুকের বাড়িতে ওই রান্নাটা ওরকম খেতে ছিল। সারাসপ্তাহ জিম আর ডায়েটের চক্করে কি যে খায় তার ঠিক নেই। তাই ওর এই চিট ডে টা ওর সাথে তারিয়ে তারিয়ে অনুভব করে অরিজিতও, নিত্য নতুন রান্নায় হাতপাকায় নিজের। সে সব রান্নার গিনিপিগ সৌরদীপ। সৌরর পাল্লায় পড়ে কতরকম রান্নাই যে করে,কিন্তু কখনোই বলে না ওটা সৌর র জন্য করেছে তবে বুঝতে পারে সেটা সৌর ভালোই জানে।আবার কখনও কখনও তেমন কিছু না থাকলে শুধু কফির কাপেই চুমুক দেয় সৌর আর আব্দার করে অরিজিতের কাছে এটা সেটা রান্নার। এমনকি কোনও কোনও দিন নিজেই তখন হাতাখুন্তি নিয়ে নেমে পড়ে অরিজিতের রান্নাঘরে। সৌরর চক্করে পড়ে খাস ঘটি হয়েও শুঁটকি রাঁধতেও শিখে গেছে অরিজিতও । শুঁটকি রান্না নিয়ে একটা মজার গল্প আছে। শপিংমলে বাজার করতে গিয়ে শুঁটকির প্যাকেটটা কিনে নিয়ে এসেছিল সৌরই কয়েকমাস আগে অরিজিতের বাড়ীতে। ওরঘটি বাড়ীতেও শুঁটকি ঢোকেনা। কিন্তু ও খেতে ভালবাসে। আর অরিজিতের তো কোনও খাবারেই না নেই। আর তাই সৌরদীপের আব্দারে অরিজিতও ইউটিউব আর বন্ধুদের থেকে জেনে শুুঁটকি রান্নার তোরজোড় করে এক শনিবার সকালে। রান্নাঘরের জানলা দরজা খুলে আর একসজস্ট ফ্যান চালিয়ে নিজের এককামরার ঘরের থেকে রান্নার মেছো গন্ধ তাড়ালেও সকালবেলা যখন ওর ঘটিপাড়ায় শুঁটকি রান্নার গন্ধ যত ছড়ায় তখন আশপাশের বাড়ির লোকজনের নানা মন্তব্য শুনতে পায় রান্নাঘরের পাঁচিল পেরিয়ে। সেদিন বিকালে সৌর এলে শুঁটকি খেতে বসে এ নিয়েই দুজনে হেসে কুটোপাটি হয়।