এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • এক টুকরো ভালোবাসা আর দায়িত্ব

    Rajkumar Mahato লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ | ৬৯৫ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • শহরটার প্রতিদিন আলাদা রূপ আবিষ্কার করি আমি। বড্ড রঙ পালটায় আমার তিলোত্তমা। সে কখনও খুব কাঁদে, আবার কখনও মন খুলে হাসে। যেমন বিচ্ছেদ করে, তেমনি আবার প্রাণ দিয়ে ভালোওবাসে। তাই হয়ত আমার শহরের অনেক রূপ। একভাবে তাকে বর্ণনা করা বড় কঠিন কাজ।

    কাল বড়দিন ছিল। আমাকে ফ্যাক্টরি ভিসিট করতে হয়েছিল শিয়ালদহ। পাঁচটা বছর কাটিয়ে এসেছি ওখানে। একটা টান তো আছেই। কাজেই বড়দিনে ওখানে যেতে পেরে খুব ভালই লাগলো।

    কাজ শেষ করে ৬ঃ২৫-এর বজবজ লোকাল ধরলাম শিয়ালদহ থেকে। লকডাউনের পর এই প্রথম ট্রেনে উঠলাম। সেই পোঁ আর ঝিক ঝিক বড্ড ভালো লাগে আমার। শুনে কানটা জুড়িয়ে গেল। ট্রেন ছুটল আমি নড়তে থাকলাম। গেটের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আমার অভ্যাস। হ্যাঁ জানি, খারাপ অভ্যাস। কিন্তু খুব ভালো লাগে। নড়তে নড়তে হাওয়া খেতে খেতে চলন্ত শহরটাকে দেখতে।

    পার্ক সার্কাস থেকে একটা কম বয়সের যুগল উঠল ট্রেনে। আমার সামনেই দাঁড়াল তারা। সম্ভবত মেয়েটি কোন একটা বিষয় নিয়ে অভিমান করেছে। ছেলেটি মানানোর চেষ্টা করছে। মেয়েটি হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছেলেটি একেবারে মেয়েটির সামনে তার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে। ট্রেনের দুলুনিতে মাঝে মাঝে ছেলেটির ঠোঁট মেয়েটির কপালে গিয়ে ঠেকছে আর মেয়েটি ততবারই ছেলেটিকে দূরে সরিয়ে আশেপাশের মানুষগুলোকে একবার করে দেখে নিচ্ছে। আর ছেলেটি মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে।

    তারপরেই দেখলাম ছেলেটি বলছে, "আরে এত রাগ ভালো না কখন থেকে তেল দিচ্ছি। আমি পরের স্টেশনে নেমে যাব বলে দিলাম।"

    মেয়েটি মুখটা ঘুরিয়েই বলল, "ভয় দেখাচ্ছিস কাকে? অত ভয় পাই না। যা নেমে যা। আমার কিছু যায় আসে না। স্বার্থপর একটা।"

    এইভাবে ছোট ছোট কথা কাটাকাটি হতে হতে ট্রেনটা বালিগঞ্জ এলো। ছেলেটি নেমে গেল। মেয়েটি চুপ। একই ভাবে দাঁড়িয়ে।

    ট্রেনটা এগোনোর জন্য যেই হুইসেল দিয়েছে। মেয়েটি নড়েচড়ে উঠল। গেট থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখল। নামার চেষ্টা করল কিন্তু ট্রেন তখন অলরেডি ছুটতে শুরু করেছে। তাই সে নামতে পারল না। পুনরায় নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল মেয়েটি।

    ফোন করল ছেলেটিকে। ওপার থেকে ফোনটা ধরতেই মেয়েটি বেশ চেঁচিয়েই বলল, " ,এই তোর দায়িত্ব? একা ফেলে চলে গেলি! লজ্জা করে না।"

    জানিনা ছেলেটা কি বলল। মেয়েটির চোখে জল দেখলাম। ট্রেন ছুটছে সামনের দিকে। আর আমি সুন্দর মিষ্টি একটা প্রেমের সিনেমা দেখছি মনে হচ্ছে। তবে আমি জানি এই সিনেমার ক্লাইম্যাক্সটা কি হতে পারে। কারণ এই সিনেমা প্রায় সবার সাথে একবার না একবার হয়েছে।

    ট্রেনটা লেক গার্ডেন্স এলো। মেয়েটি একই ভাবে দাঁড়িয়ে। দু মিনিট দাঁড়িয়ে আবার ট্রেনের হুইসেল শুনে মেয়েটি একটু নড়ে উঠল। ফোনের দিকটা দেখল। না, ফোন আসছে না। ট্রেন ছুটল, মেয়েটি বিবর্ণ মুখে, একরাশ হতাশা যুক্ত আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে তখনও। টালিগঞ্জ পেড়িয়ে গেল। মেয়েটি একই ভাবে দাঁড়িয়ে। বুঝলাম আসলেই তার বুকের ভেতরটা ঢিপ ঢিপ করছে।

    ট্রেন ছুটছে। হঠাৎ দেখলাম পেছন দিক থেকে ছেলেটি এসে হাজির। মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে। মেয়েটি আর কিছু না দেখে শুনে। দুম দাম করে ছেলেটির বুকে তিন চারটে চাপড় মেরে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "বাজে শয়তান। কুকুর। ছাগোল। ভেড়া।" ছেলেটিও হাসতে হাসতে তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল, "তুইতো বললি নেমে যেতে!"

    মেয়েটির চোখ থেকে জল বেড়িয়েই যাচ্ছে। তাদের আশেপাশের মানুষের কোন তোয়াক্কা নেই। সমাজের তোয়াক্কা দূরে। দুজন দুজনার ঝগড়া ভালবাসা প্রাণ ভরে উপভোগ করছে। আর আমি জানতাম ছেলেরা সহজে দায়িত্ব ভোলে না। নিজের সেই সময়কার কথা মনে করে হেসে উঠলাম। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক কাকু বললেন, "দেশটা উচ্ছন্যে গেল। এরা নাকি দেশের ভবিষ্যৎ!" হেসে বললাম, "হ্যাঁ, কাকু এরাই দেশের ভবিষ্যৎ। কারণ এরা এই ভীরু সমাজের তোয়াক্কা করে না। আপন গতিতে হেঁটে চলে আপন মনে বেঁচে চলে।"

    © রাজকুমার মাহাতো
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন