দীর্ঘ এক সপ্তাহ বাড়িতে থাকার পর আজ অফিসে গেলাম। শরীর এখনও বেশ খানিকটা দূর্বল। কোভিড হয়নি যতদূর সম্ভব। তবে যে জ্বরটা হয়েছিল। ভয়ঙ্কর হয়েছিল। এক এক করে বাড়ির সবাইকে আক্রমণ করে, দু-দিন বিছানা সাপটা করে উনি আপাতত বিদায় নিয়েছেন।
অফিসে পৌঁছালাম বটে, তবে আমাকে মালিক পরামর্শ দিলেন এখনও এক সপ্তাহ বাড়িতে থাকার। অগত্যা তল্পিতল্পা গুটিয়ে আবার ফিরে এলাম। বাসে উঠলাম এলগিন মোড় থেকে। রাজাবাজার - শিয়ালদহ মিনি। ভিড় সেরকম ছিলনা। আমি একেবারে শেষের সিটে গিয়ে জানালার ধারে বসলাম। আমার সামনের সিটে দুজন ছেলে বসেছিল। তারপর তাদের কথাবার্তায় বুঝলাম তারা দুজন একটা সমকামী কাপল। আর সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে লুকোচুরির কোন ব্যাপার নজরে পড়ল না। দেখে একেবারে বোঝার উপায় নেই, তবে কথাবার্তা একটু অন্যরকম। বুঝলাম, তাদের এই সমকামীতা নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই। দুজন দুজনের সাথে খুব খুশী।
হাজরা থেকে দুটো ছেলে উঠল। মুখে মাস্ক ছাড়া। একজনের চুল ডিপ বাদামী আর একজনের সামনেটা সবুজ বাকিটা লাল। আমার পাশে বসল দুজন। মুখে গুটখা ভর্তি। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে বললাম " ভাই, মাস্ক কোথায়?"
দুজনে কোন উত্তর না দিয়ে মোবাইল ঘাঁটতে লাগল। আসলে আগে একবার দুবার বলে যদি রিপ্লাই না পেতাম চুপ করে যেতাম। আজ আর চুপ করে থাকার ইচ্ছা হলনা। আবার বেশ জোরে বললাম " ও ভাই, মাস্ক কাহা হ্যায় আপলোগোকা?"
একজন আমার দিকে তাকাল। এমন ভাবে তাকাল যেন এক্ষুনি আমাকে কাঁচাই লবন ছাড়া গিলে নেবে। আর একজন উত্তর দিল " ঘরমে"...
আমি বললাম " মাস্কটা কি ঘরে রাখার জন্য? দেখছ না চারিদিকে কি অবস্থা?"
ওদের মধ্যে একজন উত্তর দিল " আপ কভি দেখেহে মোমিনপুরকে ল্যাড়কা লোগোকো মাস্ক প্যাহেনতে হুয়ে?" মনে পড়ল আমার। সত্যি আমি দেখিনি। মোমিনপুরের লোকেদের মাস্ক পড়তে। আমার সামনে যে দুজন বসেছিল তাদের মধ্যে একজন বলল " তো মোমিনপুরকে লোগোকো করোনা নেহি হোগা?" ওদের মধ্যে একটি ছেলে উত্তর দিল " অ্যাবে তুমলোগ ছক্কা হো। ইসলিয়ে ইতনা ডরতে হো। হমলোগ মরদ হ্যায়। ডরতে নেহি।"
বুঝলাম এদের বুঝিয়ে লাভ নেই। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে আমার সামনে বসা ছেলেদুটোই নিজেদের সিট থেকে উঠে ওই তথাকথিত পুরুষ মানুষ দুটোকে বাসের বাইরে ফেলল। দেখে মনটা ভালো হয়ে গেল। এখন যা পরিস্থিতি এই রকম প্রতিবাদ সবাইকে করতে হবে। তা না হলে, এই তথাকথিত পুরুষ নারীরা মানুষদের বাঁচতে দেবেনা।