এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • রাগ দরবারীঃ ১২শ পর্ব

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ১৯ মে ২০২১ | ১৮৯৮ বার পঠিত
  • ১০

    ছংগামল বিদ্যালয় ইন্টার কলেজ স্থাপিত হয়েছিল যে উদ্দেশ্য নিয়ে তা’হল ‘দেশের নবীন নাগরিকদের মহান আদর্শের পথনির্দেশ এবং উত্তম শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উত্থান’।

    আপনি যদি চকচকে কাগজে কমলা রঙে ছাপা কলেজের ‘সংবিধান এবং নিয়মাবলী’ পড়েন তাহলে বাস্তব জগতের মলিনতায় আচ্ছন্ন আপনার মন সত্যি সত্যি নির্মল এবং পবিত্র হয়ে যাবে। অবশ্যি ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অধ্যায়টুকু পড়লেও আপনার একই অনুভূতি হয়।

    যেহেতু এই কলেজ রাষ্ট্রহিতের কথা ভেবে তৈরি হয়েছে তাই এখানে আর কিছু হোক না হোক, দলাদলি খুব আছে। তবে দলাদলির আয়তন ও ওজন দেখলে মনে হবে এমন কিছু নয়, কিন্তু যে অল্প সময়ে এটি কলেবরে বেড়েছে তাতে বলা যায় যে হ্যাঁ, কিছু কাজ তো হয়েছে। দু’তিন বছরেই এটি দলাদলির ব্যাপারে আশেপাশের কলেজগুলোকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে। আর কোন কোন বিষয়ে তো অখিল ভারতীয় গালাগালিস্তরের কম্পিটিশন করার যোগ্যতা দেখিয়েছে।

    ম্যানেজিং কমিটিতে বৈদ্যজীর দাপট, কিন্তু এর মধ্যেই রামাধীন ভীখমখেড়ভীজি তাঁর একটি উপদল বানিয়ে নিয়েছেন। এরজন্যে ওনাকে অনেক তপস্যা করতে হয়েছে। বেশকিছু দিন ওঁর দলে একজনই সদস্য ছিল—ভীখমখেড়ভীজি উনি স্বয়ং। পরে একজন দুজন ওঁর দলে চলে গেল। এরপর কড়া মেহনতের ফলে কলেজের কর্মচারিদের মধ্যেও দু’দল তৈরি করা গেছে বটে, কিন্তু এখনও অনেক কাজ বাকি। প্রিন্সিপাল সাহেব বৈদ্যজীর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল, কিন্তু উল্টোদিকে খান্না মাস্টার এখনও রামাধীনের দিকে ততটা হেলে পড়েনি। ছাত্রদের মধ্যেও কোন দলবিশেষের প্রতি নিষ্ঠার ভিত্তিতে স্পষ্ট ভাগাভাগি হয়নি। মাঝেমধ্যে গালাগালি মারপিট হচ্ছে বটে কিন্তু এখনও ওদের ঠিকমত পথ দেখানো যায়নি। এখনও কলেজের কাজকম্ম দলীয় উদ্দেশ্যে নাহয়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগে হচ্ছিল, তাই ছেলেপুলের গুন্ডামির শক্তিও রাষ্ট্রের সার্বজনিক হিতের বদলে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এ’বিষয়েও দলাদলির রাজনীতির অনেক কাজ করার আছে।

    এটা সত্যি যে কলেজে বৈদ্যজীকে ছেড়ে আর কারও দলাদলির বিশেষ অভিজ্ঞতা নেই।অন্যেরা কাঁচা খেলুড়ে, কিন্তু প্রতিভায় কম যায় না।বছরে দু’একবার ওদের প্রতিভার ছটা যখন ঝিকিয়ে ওঠে তখন তার যেইতরঙ্গ শহর অব্দি পৌঁছে যায়। এখানে কখনও কখনও এমন সব দাঁও-প্যাঁচ দেখা যায় যে দলাদলির বড় বড় অভিজ্ঞ খেলুড়েও হতভম্ব হয়ে যায়। গত বছর রামাধীন বৈদ্যজীকে এমনই এক প্যাঁচে ফেলেছিলেন। প্যাঁচ ব্যর্থ হল, কিন্তু তার চর্চা দূরে-দূরান্তরে ছড়িয়ে গেল।খবরের কাগজে এ’নিয়ে লেখা হল। তাতে একজন দলবাজির খেলুড়ে এমন অভিভুত হলে যে শহর থেকে দৌড়ে এসে দুটো দলেরই পি্ঠ চাপড়ে দিলেন। উনি ছিলেন একজন সিনিয়র খেলুড়ে, থাকতেন রাজধানীতেই। ওঁর জীবনের বিগত চল্লিশটি বছর উনি চব্বিশ ঘন্টা দলাদলিতেই মজে থাকতেন।উনি অখিল ভারতীয় স্তরের একজন নেতা এবং প্রতিদিন খবরের কাগজে ওঁর কোন না কোন বিষয়ে বিবৃতি বেরোয়। তাতে থাকে দেশপ্রেম এবং দলাদলির অদ্ভুত খিচুড়ি। উনি একবার কলেজে পায়ের ধূলো দিতেই লোকের ভরসা হল যে এখানে কলেজ বন্ধ হয়ে গেলেও দলাদলি বন্ধ হবে না। কথা হচ্ছে -দলাদলি কেন হল?

    এই প্রশ্ন করা আর বৃষ্টি কেন হয়, সত্যি কথা কেন বলা উচিত, বস্তু কী অথবা ঈশ্বর কী জানতে চাওয়া- একই ব্যাপার। আসলে এটি একটি সামাজিক, মনোবৈজ্ঞানিক এবং প্রায় দার্শনিক প্রশ্ন। এর উত্তর পেতে গেলে আপনাকে আগে দর্শন বুঝতে হবে এবং দর্শন-শাস্ত্র জানার জন্যে আপনাকে প্রথমে হিন্দী সাহিত্যের কবি বা গদ্যলেখক হতে হবে।

    সবাই জানে যে আমাদের কবি এবং গদ্যলেখকেরা আসলে এক একজন দার্শনিক। ওঁরা কবিতা এবং গদ্য লেখেন ফাউ হিসেবে। যেকোন ঘ্যানঘেনে উপন্যাস খুলে পাতা ওল্টালে দেখা যাবে যে নায়ক নায়িকার তপ্ত অধরে অধর রেখে বলছে—না, নিশা না। আমি এটা মানতে পারিনা। এ তোমার একান্ত ব্যক্তিগত সত্য হতে পারে, কিন্তু আমার সত্য নয়’।

    ইতিমধ্যে নিশার ব্লাউজ মাটিতে লুটোচ্ছে।ও অস্ফুট স্বরে বলে, ‘কেন নিক্কু, তোমার সত্য আমার সত্যের থেকে আলাদা কেন’?

    এটাকেই বলে ‘টাচ্‌’। এভাবেই নিশা ও নিক্কু’র হাজার মিটার দৌড় শুরু হয়। এবার নিশার ব্রা খসে গিয়ে মাটিতে লুটোয় এবং নিক্কু’র টাই ও শার্ট হাওয়ায় উড়ে যায়। এভাবে হোঁচট খেয়ে, একে অন্যের উপর হুমড়ি খেয়ে যখন মাঠের অন্য প্রান্তে টাঙানো ফিতেটাকে অবশেষে ‘সত্য’ ভেবে ছুঁয়ে ফেলে, তখন টের পায়—ওটা ‘সত্য’ নয়। ফের যুক্ত হওয়ার শৃংগার, তপ্ত অধর ইত্যাদি। কিছুক্ষণ পরে ওরা মাঠ ছাড়িয়ে জঙ্গলে পৌঁছে যায় এবং পাথরে ও কাঁটায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে নগ্ন শরীরে প্রতিটি ঝোপে খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়। এভাবে নগ্নতা, ঘ্যানঘ্যান, চুম্বন, লেকচার ইত্যাদির ভেতরে ওরা খুঁজে বেড়ায় এক খরগোসকে যার নাম ‘সত্য’।

    এ’জাতীয় ফিলজফি প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাব্য ও কাহিনীতে রয়েছে। এ জন্যেই উপন্যাসটির পাঠক ফিলজফির ঝটকার জন্যে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে ভাবে—হিন্দিসাহিত্যের লেখকটি এতক্ষণ ধরে দুনিয়াভরের কথা বলে গেলেন কিন্তু ফিলজফি কোথায়? ব্যাপারটা কী? ব্যাটা ফ্রড নয়তো?

    এটাও সত্যি যে ‘সত্য’ ‘অস্তিত্ব’ গোছের শব্দ শোনামাত্র আমাদের লেখক চেঁচিয়ে ওঠেন-“ শোন ভাইসকল, এখন গল্পের স্রোতকে এখানে থামিয়ে দিয়ে আমি তোমাদের খানিক ফিলজফি পড়াব, তবে তো বিশ্বাস হবে যে আমি আসলে ফিলজফার, ভাগ্যের ফেরে অল্পবয়েসে কুসঙ্গের প্রভাবে কবিতা লিখতাম।অতএব ভাইয়েরা, এই নাও এক ষোল পাতার ফিলজফির শক্‌।যদি আমার লেখা পড়তে পড়তে তোমাদের ভ্রম হয়ে থাকে যে অন্যদের মত ফিলজফি আমার ধাতে নেই, তাহলে সেটাকে এই নতুন ভ্রম দিয়ে খারিজ কর—‘।

    বৈদ্যজী বেদান্ত দর্শনকে প্রায় সময় আয়ুর্বেদের চ্যাপ্টার বানিয়ে ফেলেন। ওঁর ভাষ্য অনুযায়ী দলাদলি হল পরমাত্মানুভুতির চরমদশারই আরেক নাম। তখন প্রত্যেক ‘ত্বম’ ‘অহম’কে, এবং প্রত্যেক ‘অহম’ সমস্ত ‘ত্বম’কে নিজের চেয়ে উচ্চতর আসনে অধিষ্ঠিত দেখে এবং নিজে সেখানে পৌঁছতে চায়। অর্থাৎ সমস্ত ‘ত্বম’ যত ‘অহম’ আছে তাদের নিজের জায়গায় টেনে নামিয়ে নিজেরা সবাই ‘অহম’ হতে চায়।

    বেদান্ত হল আমাদের ঐতিহ্য, আর যেহেতু দলাদলির তাৎপর্য্য বেদান্তে খুঁজে পাওয়া যায়, তাই দলাদলিও আমাদের শাশ্বত, এবং এই দুয়ে মি্লেই আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। স্বাধীনতার পর আমরা এমন অনেক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য খুঁজে বের করেছি। হাওয়াই জাহাজে চেপে ইউরোপ যাওয়ার সময়েও আমরা যাত্রার প্রোগ্রাম জ্যোতিষীকে দিয়ে বানিয়ে নিই, ফোরেন এক্সচেঞ্জ এবং ইনকাম ট্যাক্সের ঝঞ্ঝাট থেকে বাঁচতে বাবাজীর আশীর্বাদ নিই, স্কচ হুইস্কি খেয়ে ভগন্দর গজিয়ে গেলে চিকিৎসার জন্যে যোগাশ্রমে গিয়ে শ্বাস ফুলিয়ে পেট ভেতরে টেনে আসন করি। এভাবেই বিলিতি শিক্ষার দান গণতন্ত্র আমদানি করি, কিন্তু তার প্রয়োগ করি দিশি ঐতিহ্যের দলাদলি করে। আমাদের ইতিহাসের পাতা উলটে্ দেখুন, যুদ্ধপর্ব হোক কি শান্তিপর্ব, সব অবস্থাতেই দলাদলির ঐতিহ্য জ্বলজ্বল করছে।ইংরেজ রাজত্বের সময় ওদের খেদিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে কিছুদিন ভুলে ছিলাম বটে, স্বাধীন হতেই আরও অনেক ঐতিহ্যের সাথে একেও আমরা মাথায় তুলে নিয়েছি।এখন দলাদলির প্রগতির জন্যে আমরা অনেকগুলো পদ্ধতির সাহায্য নিচ্ছি-- যেমন ‘তুই বেড়াল না মুই বেড়াল’, লাথালাথি, জুতোপেটা, সাহিত্য-শিল্প কোনটাই বাদ পড়েনি। যে দেশ একসময় বেদান্তের জন্ম দিয়েছে আজ তারই এই প্রাপ্তি। সংক্ষেপে এই হল দলাদলির দর্শন, ইতিহাস ও ভূগোল।

    ছংগামল কলেজে দলাদলির জন্যে এই সব আদিকারণ ছাড়াও অন্য একটি কারণ দায়ি। এখানকার লোকেদের ভাবনা হল সবসময় কিছু-না-কিছু হওয়া চাই। দেখুন, এখানে সিনেমা নেই, হোটেল নেই, কফি হাউস নেই, মারপিট, চাকুবাজি, পথদুর্ঘটনা, নিত্যি নতুন ফ্যাশনের মেয়েরা, এগজিবিশন, গরম গরম এবং গালাগালি ভরা সার্বজনিক সভাসমিতি—এসব কিস্যু নেই। লোকজন কোথায় যাবে? কী দেখবে? কী শুনবে? তাই কিছু-না-কিছু হওয়া চাই।

    দিন চারেক আগে কলেজে একটা প্রেমপত্র পাওয়া গেল। একটি ছেলে লিখেছে কোন মেয়েকে। ছেলেটা চালাকি করে এমন ভাবে লিখেছে যে পড়লে মনে হবে আসলে মেয়েটির চিঠিতে লেখা প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। কিন্তু এই চাল কাজে এল না। ছেলেটা বকুনি খেল, মার খেল, কলেজ থেকে বের করে দেয়া হল। তারপর ছেলের বাপ কথা দিল যে ওর ছেলে দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়বে না, এবং আরও কথা দিল যে কলেজের নতুন ব্লক তৈরির জন্যে পঁচিশ হাজার ইঁট দেবে। ব্যস, ছেলেটা ফের ভর্তি হয়ে গেল। যাই ঘটুক, এর প্রভাব কুল্লে চার দিন, তার বেশি নয়। এর আগে একটা ছেলের কাছে দেশি পিস্তল পাওয়া গেছল। তাতে কোন কার্তুজ ছিলনা এবং পিস্তলটা এত ফালতু যে দেশি কামারদের কারিগরি দক্ষতা্র কথা ভেবে চোখে জল এসে যায়। তবু কলেজে পুলিস এল এবং ছেলেটাকে ও ক্লার্ককে ধরে থানায় নিয়ে গেল- যদিও ক্লার্ক হলেন বৈদ্যজীর লোক। লোকজন উত্তেজনায় ছটফট করছিল -কিছু হবে, এবার চার-পাঁচ দিন ধরে কিছু না কিছু ঘটবে।কিন্তু সন্ধ্যে নাগাদ খবর এল যে ওটা পিস্তল না, একটা ছোটমত লোহার টুকরো । আর ক্লার্ককে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়নি, উনি নিজের ইচ্ছেয় বেড়াতে গেছলেন। এবং ছেলেটা গুন্ডামি করছিল না, বরং সুন্দর বাঁশি বাজাচ্ছিল। সন্ধ্যে নাগাদ যেই ছেলেটা বাঁশি বাজাতে বাজাতে এবং ক্লার্ক মশায় বেড়াতে বেড়াতে থানার বাইরে এলেন মানুষজন হতাশ হয়ে ভাবল—তাহলে কিছুই হয়নি। এর পর হাওয়ায় ভেসে এল সেই শাশ্বত প্রশ্ন- এবার কী হবে?

    এই পরিবেশে লোকজনের নজর ছিল প্রিন্সিপাল সাহেব আর বৈদ্যজীর উপর। বৈদ্যজী তো মদনমোহন মালবীয় স্টাইলের পাগড়ি চাপিয়ে নিজের গদিতে গ্যাঁট হয়ে বসেছিলেন। কিন্তু প্রিন্সিপালকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন উনি সরসরিয়ে ল্যাম্পপোস্টের মাথায় চড়ে দুর থেকে কাউকে দেখে চেঁচাচ্ছেন- ‘দেখো, দেখো, ব্যাটার মাথায় কোন শয়তানি বুদ্ধি ঘুরছে’! ওঁর দৃষ্টিতে সন্দেহভরা, আসলে নিজের চেয়ার আঁকড়ে থাকা সবার মনেই ভয় যে কেউ না কেউ এসে ওকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে দেবে। লোকেরা এঁর দুর্বল জায়গাটা ধরে ফেলেছে এবং সেখানে খুঁচিয়ে ওনাকে এবং তার সঙ্গে বৈদ্যজীকে প্যাঁচে ফেলার তাল করছে।এদিকে এরাও মার খাবার ভয়ে আগে থেকেই মারার জন্যে মুখিয়ে রয়েছে।

    ক’দিন আগে খান্না মাস্টারকে কেউ ফুসমন্তর দিয়েছে যে সব কলেজেই প্রিন্সিপালের সঙ্গে একটা ভাইস প্রিন্সিপালেরও পোস্ট থাকে। খান্না পড়াতেন ইতিহাস এবং সব থেকে সিনিয়র। সেই গুমরে একদিন বৈদ্যজীকে গিয়ে বলে এলেন যে ওনাকে ভাইস প্রিন্সিপাল বানিয়ে দেয়া হোক। বৈদ্যজী মাথা নেড়ে সায় দিলেন। বললেন- এ তো বেশ নতুন কথা। নবযুবকদের সবসময় নতুন নতুন চিন্তা করা উচিৎ। আমি সবরকম নতুন আইডিয়াকে উৎসাহ দিই। তবে এটা তো পরিচালক সমিতির এক্তিয়ারে। ওদের আগামী বৈঠকে এই প্রশ্নটি উঠলে আমি সমুচিত বিচার করব, কথা দিলাম। খান্না মাস্টার ভাবেননি যে পরিচালন সমিতির আগামী বৈঠক কখনও হয় না। উনি বার খেয়ে সাততাড়াতাড়ি ভাইস প্রিন্সিপাল পদে নিযুক্তির আবেদন বাবদ একটি দরখাস্ত মুসাবিদা করে প্রিন্সিপালকে ধরিয়ে দিয়ে অনুরোধ করলেন যেন পরিচালক সমিতির আগামী বৈঠকে এটি পেশ করা হয়।

    খান্না মাস্টারের এই কারসাজিতে প্রিন্সিপাল হতভম্ব। বৈদ্যজীকে শুধোলেন- খান্না মাস্টারকে এই দরখাস্তটা লিখতে আপনি পরামর্শ দিয়েছেন?

    এর জবাবে বৈদ্যজী তিনটে শব্দ উচ্চারণ করলেন- ওর বয়েসটা কম।

    প্রিন্সিপাল ইদানীং শিবপালগঞ্জের রাস্তায় যার সঙ্গে দেখা হয় তাকেই ধরে অ্যান্থ্রোপলজি বোঝাতে থাকেন-‘সত্যি, আজকাল লোকজন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে’। খান্না মাস্টারের কারসাজির কথা বোঝাতে গিয়ে উনি হরদম কিছু প্রবাদবাক্যের ব্যবহার করছিলেন; যেমন ‘মুখে রামনাম, বগলে ছুরি’,’ আমার পোষা বেড়াল, আমাকেই খ্যাঁক খ্যাঁক’(যদিও বেড়াল কদাপি খ্যাঁক খ্যাঁক করে না),’পেছন থেকে ছুরি মারা’,’ব্যাঙের সর্দি’ এইসব। একদিন উনি গাঁয়ের চৌমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে রূপকথা বলার ঢঙে শুরু করলেন- একদিন এক ঘোড়ার খুরে নাল লাগানো হচ্ছিল। তাই দেখে কোলাব্যাঙের শখ হল—আমিই বা বাদ যাই কেন!অনেক কাকুতিমিনতির পর নাল লাগানোর লোকটি ব্যাঙের পায়ে একটা নাল ঠুকে দিল। তো ব্যাঙবাবাজি ওখানেই চিতপটাং ! তাই বলছিলাম, নকল করতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ১৯ মে ২০২১ | ১৮৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন