এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা

  • কাদামাটির হাফলাইফ

    ইমানুল হক
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ৮৪২ বার পঠিত
  • পর্ব ১-৩ | পর্ব ৪-৬ | পর্ব ৭-৯ | পর্ব ১০-১২ | পর্ব ১৩-১৫ | পর্ব ১৬-১৮ | পর্ব ১৯-২১ | পর্ব ২২-২৪ | পর্ব ২৫-২৭ | পর্ব ২৮-২৯ | পর্ব ৩০-৩১ | পর্ব ৩২-৩৩ | পর্ব ৩৪-৩৫ | পর্ব ৩৬-৩৭ | পর্ব ৩৮-৩৯ | পর্ব ৪০-৪১ | পর্ব ৪২-৪৩ | পর্ব ৪৪-৪৫ | পর্ব ৪৬-৪৭ | পর্ব ৪৮-৪৯ | পর্ব ৫০-৫১ | পর্ব ৫২-৫৩ | পর্ব ৫৪-৫৫ | পর্ব ৫৬-৫৭ | পর্ব ৫৮-৫৯ | পর্ব ৬০-৬১ | পর্ব ৬২-৬৩ | পর্ব ৬৪-৬৫ | পর্ব ৬৬-৬৭ | পর্ব ৬৮-৬৯ | পর্ব ৭০-৭১ | পর্ব ৭২-৭৩ | পর্ব ৭৪-৭৬ | পর্ব ৭৭-৭৮ | পর্ব ৭৯-৮০ | পর্ব ৮১-৮২-৮৩ | পর্ব ৮৪-৮৫ | পর্ব ৮৬-৮৭ | পর্ব ৮৮-৮৯ | পর্ব ৯০-৯২ | পর্ব ৯৩-৯৪ | পর্ব ৯৫-৯৬ | পর্ব ৯৭-৯৮ | পর্ব ৯৯-১০০ | পর্ব ১০১-১০২ | পর্ব ১০৩-১০৪ | পর্ব ১০৫-১০৬ | পর্ব ১০৭-১০৮ | পর্ব ১০৯-১১০ | পর্ব ১১১-১১২ | পর্ব ১১৩-১১৪
    আরে, কাদা না থাকলে মানুষ তো বেঁচেই থাকতে পারতো না। শস্য সব্জি কিছুই কি তেমন মিলত? ফুল ফল অনেক কিছুই? কাদা আর বালির মিশেলেই তো জীবনের যত মার প্যাঁচ।

    পশ্চিমবঙ্গের রাঢ় অঞ্চলের গ্রামজীবনের স্মৃতিচিত্রণ।
    ২৫

    তামিলরা এলেন আমাদের গ্রামে নয় আনুষ্ঠানিকতা মানলে পাশের গ্রামে। কিন্তু আমাদের ছোটোবেলায় ভোটের দিন ছাড়া বাকি দিনগুলোতে এক গ্রামই ভাবা হতো। উদগড়া বলতেন খুব কম মানুষই। বলতেন, দখিনপাড়া। ১৯৭৮ র লোকসংস্কৃতি নিয়ে খুব চর্চা শুরু হল সুধী প্রধানের নেতৃত্বে। উনি সেহারাবাজারে এলেনও লোকসংস্কৃতি উৎসবে। এলেন এবং জয় করলেন। লোক গান লোক কথা লোকসঙ্গীত নিয়ে ধূম পড়ে গেল। আমার আগের দিদি কাটোয়ার লোকসংস্কৃতি গবেষক আয়ুব হোসেনের মেয়ে হয়ে যত রাজ্যের মুসলিম বিয়ের গান সংগ্রহ করতে লাগলো। এগুলো যে সংরক্ষণ ও সংগ্রহের বিষয় এই ধারণাই ছিল না।
    অনেকে জানেন কি না জানি না, একান্ত নিরক্ষর মানুষেরা কী চমৎকার গান সেই মুহূর্তে বেঁধে গেয়ে ফেলতে পারেন। একটি গান মনে আছে, যেটি বর্ধমানের বিধানচন্দ্র রায় ডাক্তার শৈলেন মুখোপাধ্যায়ের প্রেমজ দ্বিতীয় বিবাহ নিয়ে। এক মহিলা ডাক্তার দেখাতে এসে নার্সিংহোমে ভর্তি হোন। সত্তর দশকে। দুজনের দুজনকে ভালো লেগে যায়। থেকে যান তিনি। পরে আমার সঙ্গে আলাপও হয়। খুব ভালো মহিলা।
    তাঁর সম্পর্কে গান:
    ছি ছি হাসিনা
    লজ্জাও হয় না
    মুসলমানের মেয়ে গো।
    ডাক্তার দেখাতে গিয়ে
    ফেললে করে বিয়ে
    কী তোমায় বলি, বলো না।

    এই গান বোঝাচ্ছে হিন্দু মুসলমান বিয়ে মানতে পারছে না মুসলিম নারী মন।

    আবার এই প্রেমকে স্বীকৃতি দিয়ে গানও ছিল--

    হাসিনার হাতে তালের পাখা
    ডাক্তারবাবুর মুখে হাসি গো
    হাসিনা যাচ্ছে পাখি শিকারে
    ডাক্তারবাবুর হাতে বন্দুক গো।

    রকমফেরও ছিল,

    হাসিনা গেছে মন শিকারে
    ডাক্তারের কাছে বন্দুক গো।

    বন্দুক শব্দে হাসির হল্লা উঠতো। তখন বুঝতে পারতাম না, বন্দুকে হাসি কেন হবে, ভয় পাওয়ার কথা তো।

    আরো কিছু শোনা যেতো

    হলুদ মাখা গা তোমার
    হলুদ লেপা বুক
    ওই না ছুঁয়ে দামাদ মিঞা
    পাবে কতই সুখ।
    'দামাদ' মানে জামাই/স্বামী।

    এরপর ফ্যাঁকড়া ধরতো আরেকজন:

    ও জামাই মুখ দেখেছো মুখ
    মেয়েকে যেন দিও না কোন দুখ
    প্রথম রাতেই শিকল তুলে করো না তাড়াহুড়ো
    এতদিন তো ছিলেই ভালো দুজনেই আইবুড়ো।

    এর সঙ্গে শুরু হল লোকগল্প গালাগাল খিস্তির সংগ্রহ। বাবার এক বন্ধু রফিকুল ইসলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ধন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন চক্ষণজাদি স্কুলে। আগে সক্রিয়ভাবে কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। ১৯৭৮ এই ছেড়ে দিয়েছেন। সমর্থক। পি এইচ ডি করলেন বাংলা লোককথার সংগ্রহের ওপর। তাতে আমার বাবা ও বাবাদের যৌথ বন্ধু নজির হোসেনের ভূমিকা ছিল ভালোই। রফিকুল চাচা আমরা বলতাম খোস্তার চাচা-- দু ভাই মোক্তার আর খোস্তার। মোক্তার হোসেন আমার সম্পর্কে মেজো মেসোমশাই। ইংরেজিতে সুপণ্ডিত। পেশায় ইংরেজির শিক্ষক। মুক্তোর মতো হাতের লেখা। আগে কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম সংগঠক। এখন অনুকূল ঠাকুরের প্রিয় শিষ্য। ঋত্বিক। দীক্ষাও দেন। এ-রাজ্য সে-রাজ্য দীক্ষা ও ভাষণ দিয়ে বেড়ান অনুকূল ঠাকুরের সৎসঙ্গ আশ্রমের পক্ষে। আমার বাবা ছিলেন ঈর্ষাশূন্য মানুষ। রফিকুল ইসলাম ডক্টরেট পেয়েছেন না বাবা-- বোঝা গেল না। সবাইকে এই খবর দিয়ে বেড়ালেন। রীতিমতো ভোজসভা বসে গেল। বাবার আরেক বন্ধু নজির হোসেন খুব গুণী ও গোছালো মানুষ। তাঁর হাতের লেখা যেন বিদ্যাসাগরের প্রথম ভাগ। তাঁর একটু কষ্ট হল। প্রথাগত বিদ্যায় ওই চাচা ও বাবা রফিকুল চাচার পথে নেই।
    ওই চাচাও উঠে পড়ে লাগলেন। লোক গান কথা ছড়া গল্প গালাগালির বিপুল সংগ্রহ করলেন। সে-গুলো ছাপার মুখ দেখলো না, এটাই বেদনার। আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু হয় নি। প্রকাশক সমস্যা নয়। সমস্যা অন্য কিছু।
    এ-ছাড়া আরেকটা কাজ শুরু হল উদ্যমে। গ্রাম নাম চর্চা। উদগড়া নাকি আসলে উদয় গড়। উদয় নামে রাজার রাজধানী; সেই কথাও বাতাসে একটু ভাসলো। একটা পুকুরের পাড়ের উঁচু পাড়কে কেল্লা বলে লোকমুখে প্রচার হলো। উৎসাহীরা রাতের আঁধারে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করলো। মাটির তলায় সোনা দানা হীরে জহরত যদি মেলে। একটা মাটির ইটও মিলল না।

    আমাদের বাড়ির সামনে এক নিতান্তই শান্ত শিষ্ট ভদ্রলোক এসে রোজ রাতে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করলেন।
    প্রথম দিন ভাবা হলো চোর ডাকাত এসেছে। এতো রাতে আওয়াজ।
    টর্চ নিয়ে বেরোনো হলো।
    দেখা গেল স- চাচা মাটি খুঁড়ছে কোদাল দিয়ে।
    কী ব্যাপার ভাই? এতো রাতে। বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
    ভাই আমি স্বপ্ন দেখেছি, এখানে নবাবি আমলের মোহর ঘড়া ভর্তি করে মাটির তলায় আছে।
    সেইটা উদ্ধার করছি। পেলে তোমাকেও কিছু দেবো।
    বাবা হাসলেন। মনে কষ্ট না দিয়ে বললেন, ভাই, শুধু শুধু কষ্ট করছে।
    আরে ন্না, তুমি জানো না, তোমাদের পূর্বপুরুষ তো সব খুব ধনী লোক। বর্গীর হাঙ্গামার সময় লুকিয়ে রেখেছিল। যে রেখেছিল, সে হঠাৎ মরে যায়। আমাকে সেদিন স্বপ্ন দেখিয়ে বলল, এনাম তো ভালো মানুষ। পার্টি ফার্টি ক্লাব ফুটবল যাত্রা করে সম্পত্তি উড়িয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। ওকে বললে লাভ নেই। বিশ্বাস করবে না। তাছাড়া দান ধ্যান করে উড়িয়ে দেবে। তুমি পেলে ওর বউকে দেবে তিন ঘড়া। এক ঘড়া ষোলাআনাকে আর তিনঘড়া তুমি নেবে। মোট সাতঘড়া আছে ভাই।
    বলেই সংযোজন:
    ভোরের স্বপ্ন, হেসো নি, মিথ্যা হয় না। পরপর তিনদিন দেখেছি।
    তা খোঁড়াখুঁড়ি করে গর্ত হলো ঢের, লাভ হলো কিছু ভাঙা পোড়ামাটির কলসী। সোনার ঘড়া এলো না।

    কেউ তুলে নিয়েছে ভাই।
    একজনকে বলেছিলাম, তার কাণ্ড হবে, কপাল চাপড়ায় স চাচা।

    গ্রামের নাম শেষ পর্যন্ত সুকুমার সেন মেনে রায় হলো, আউশাড়া উদগড়া এগুলো দ্রাবিড় যুগের গ্রাম। শেষে 'ড়া' থাকলে দ্রাবিড়।
    তো সেই উদগড়ায় এলো তামিল বাহিনী।
    গভীর নলকূপ বসবে।
    বড়ো বড়ো ট্রাক ঢুকতে লাগলো মাটির রাস্তা মাড়িয়ে। কখনো কখনো আটকেও গেল। কিন্তু গ্রামে সার্কাস এলে যেমন হয়, তেমনি মেলা বসে গেল, কোন দোকানপাট ছাড়াই। বড়ো বড়ো লোহার পাইপ নামছে। তারপর একদিন কাজ শুরু হলো। প্রথমে ঘোলা জল তারপর বিচিত্র বর্ণের মাটি। মাটির কতো রঙ আর স্তর তার একটা ধারণা ছিল নলকূপ বসানোর অভিজ্ঞতায়। কিন্তু এ এক অন্য অভিজ্ঞতা।
    তামিলরা আমাদের এক বর্ণ ভাষা বোঝে না। আমরাও। তবু কথা চলতে লাগলো। ছেলেদের উৎসাহ তামিল গাল শেখা।
    পুরুষাঙ্গ নারী অঙ্গ ইত্যাদির সন্ধান। কে কী শিখলো জানি না, তবে তামিলরা বুঝলো একটি বাঁ.. বলতেই হয় প্রতি কথায়।
    এবং বে।
    চল বে।
    ছাড় না বে।

    আর কথাও শিখলো পুরুষাঙ্গের প্রতিশব্দ-- অ্যান্টা।
    এই অ্যান্টা একটি নেতিবাচক শব্দ বোঝাতে যথেষ্ট।
    অ্যান্টা হবে।
    মানে কিছুই হবে না।

    ১০.০৭.২০২১

    ---

    ২৬

    কথায় কথায় লোকে বলে, আমাদের সময় এমন ছিল না। আগে এমন হতো না। এই কথাটা কোন মুখে ব্যবহার হতো জানতে ইচ্ছে করে। আমি তো তরুণ প্রজন্মের ঘরে বন্দি থাকার অপরিসীম ধৈর্য দেখে অবাক। এ-রকম লক ডাউন যদি আসতো ছোটবেলায় আমার জীবনে, আমি পাগল হয়ে যেতাম , নয় মানতাম না। তা সে তা হতো হতো। একদম ছোটবেলার কথা মনে নেই। তবে দেড় বছর বয়স থেকে স্মৃতি মোটামুটি আছে। আমি খুব মায়ের দুধ খেতে ভালোবাসতাম। তা, আমার মা আমার জ্বালায় বুকে নিমপাতা দিয়ে রাখতেন। তবে আমার মুখে নাকি আমুল হরলিক্স খুব জুটেছে। কোটা শেষ। তাই আর বড় হয়ে এক্কেবারে দুধ ছুঁই না। দুধও আমাকে পছন্দ করে না। আমার জন্মের সময় জন্মের দিন খুব ঠান্ডা আর খুব বৃষ্টি ছিল। জন্মের কিছু দিন পর আমার কালা জ্বর হয়। বাঁচার আশা ছিল না। আমার আগের ভাইও বাঁচেন নি। তাই চেষ্টা ছিল খুব বাঁচানোর। তাঁর নাম মিলিয়ে আমার নাম রাখা হয়। সে-বার যে বেঁচে ফিরেছি, তা মা বাবা বাড়ির লোক ছাড়া অবদান দুজন ডাক্তারের। একজন শশধর পান। সেকালের এল এম এফ। অন্যজন হিটু মুন্সি। হিটু মুন্সি সম্পর্কে অনেক লেখার আছে। মজার মানুষ।‌ট্রিপল এম এ। শখের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করতেন।‌ বাবা খাস জমির আন্দোলন করায় ভারি চটা। কিন্তু আমার মাকে নিজের বোনের মতো ভালোবাসতেন। তিনি ও ডাক্তার শশধর পান নাকি সারারাত মাথার কাছে বসে থাকতেন ও জলপটি তাঁরাই দিতেন। লিখতে গিয়ে চোখ জলে ভিজে আসছে। শশধর পান ঘোড়ায় চড়ে আসতেন। মাথায় টম বয়দের মতো টুপি। বড় হয়ে আমিও দেখেছি। তাঁর চেম্বারে অগণিত রোগী।
    আড়াই কিলোমিটার দূরে পলাশনে বাড়ি। বৃষ্টি মাথায় করে রায়নার বিখ্যাত এঁটেল মাটির কাদা পেরিয়ে আসতেন ঘোড়ায় চড়ে। ঘোড়া না পারলেও তিনি পারতেন। তিনদিন নাকি যমে মানুষে টানাটানি চলে। মুসলমানরাও যমই বলতো। আজরাইলের কথা মনে থাকতো বলার সময়।
    খুব রোগা টিঙটিঙে ছিলাম আর জেদি। এবং খেয়ালি। আমি ঘরে বসে থাকতে পারতাম না। হাঁটার ক্ষমতা হতেই এ বাড়ি সে বাড়ি। আমার জন্মের আট মাস পর আমার মামাতো ভাই হয়। মামি আমার দুধ মা-ও ছিলেন। আজম বোধহয় দুধ খেতে পারতো না অসুস্থতার কারণে। তা আজম আমার আবাল্য সঙ্গী। ২০০৯ পর্যন্ত এক থালায় ভাত খেয়েছি। রাজনীতি খুব খারাপ এক অর্থে। ২০০৯ এ একটু ঈষৎ মতপার্থক্য হলো, এক থালায় খাওয়াও বন্ধ হয়ে গেলো। রাজনীতির কারণে কত বন্ধু বিচ্ছেদ হয়ে গেল ফেসবুকেও। গ্রামের একদল লোক জানে, আমি, সিপিএম। আর ফেসবুকে একদল তৃণমূল বলে গাল দেয়। যাক কী আর করা!
    তা আজম বড়মামার প্রথম ছেলে। দেখতে টুকটুকে ফর্সা সুন্দর মুখ। তার খাতির আলাদা। আবার প্রধান শিক্ষকের ছেলে। তার ততো স্বাধীনতা নাই। আমাদের বাড়ি পর্যন্ত তার স্বাধীন যাতায়াত। আজম আর আমি এক বৃষ্টির দিনে নৌকা ভাসিয়েছি, কাগজের নৌকা, অবিরল জলের স্রোত বইছে। দুজনে বারান্দায় খেলছি। তা হয় ছোটদের এই ভাবে এই মারামারি। একটা পেতলের সিলামচি ছিল। সিলামচিকে বলতাম, সিলিপচি। মানে খাওয়ার আগে ও পরে যে পাত্রে হাত ধোওয়া কুলকুচি করে আত্মীয় স্বজন। সেই সিলামচি কার দখলে থাকবে এই নিয়ে টানাটানি। তো আজম, রাগে মেরে দিল মাথায়। রক্ত দেখে, আজম পালাল। আমার মাথায় চিনি টিনি রক্ত থামাল। কাপড় বাঁধা হবে, আমি পালালাম, দেখি গিয়ে, আজমকে মারছে কি না? আজম তো দেখেই ভেবেছে নালিশ করতে এসেছি। আমাকে দেখে মামি বলল, কী হয়েছে রে। কাটল কী করে।
    আমি বললাম, পড়ে গিয়ে।
    ভাব হয়ে গেল।
    সেই আমাদের শেষ ঝগড়া চার বছর বয়সে।

    ---

    ২৭

    তোমার ই পথে পথে বিছায়ে দেব আমার ডালি‌-- এই মনোভাবে আমার গ্রাম পরিভ্রমণ শুরু হল পাঁচ ছ' বছর বয়সে। তার আগে আমার দৌড় ছিল এ-পাড়া সে-পাড়া। 'ডাকঘর' নাটক দেখেছিলাম গ্রামের বিদ্যালয়ে। বড়দা অমল, আমার অকাল প্রয়াতা বলা ভালো পণপ্রথার শিকার হয়ে কার্যত খুন হওয়া, মেজদি সুধা। 'ডাকঘর'-এ আমাদের শিশু মনের কথা আছে। (পরে বুঝেছি এটা একটি রাজনৈতিক নাটক)। যাকে দেখি তার মতো হতে ইচ্ছে করে। আইসক্রিমওয়ালা হতে চাওয়া ছিল জীবনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। গরমের দুপুরে এই ছিল স্বপ্ন। তারপর মাথায় চাপল সন্ন্যাসী হওয়ার ইচ্ছা। বিবেকানন্দ ভর করেছিলেন। চার বছর বয়সে এক প্রখর গ্রীষ্মের দুপুরে 'কপালকুণ্ডলা'র কাপালিকের মতো দেখতে এক সন্ন্যাসী আসে। মা দিদিরা ঘুমোচ্ছ। আমি ঘুমের ভান করতাম। যেই দেখতাম ওরা ঘুমিয়েছে আমি পাশবালিশ চাদর চাপা দিয়ে হাওয়া। গরমের দুপুরে চাদর? এটি নিয়ে বলার কিছু নেই, আমার বাবার স্বভাব ছিল কী গ্রীষ্ম কী শীত আপাদমস্তক মাথা চাপা দিয়ে ঘুমানো। তাঁর ছেলের পক্ষে এটা অস্বাভাবিক কি? দেখতেও খানিকটা বাবার মতো। তবে ওই টিকালো তীক্ষ্ণ শরৎচন্দ্রীয় নাক জোটে নি। রঙও কালো। তাই আমাকে কাল্টা বলে ডাকা হতো। আর অন্য ভাইবোনদের মতো সুন্দর নই, স্কুলের পড়াশোনাতেও আগ্রহ নাই, তাই দুপুরে ও রাতে খাওয়ার সময় হাজিরা ছাড়া আর আমার টিকিটি দেখা না গেলেও কারো কিছু যাবে আসবে না।‌ খালি আমার দাদির ছিল আমার প্রতি অসম্ভব টান। কত খাবার বিশেষ করে আলু পোস্ত জামতলায় ঘরের পিছনে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতেন, মাকে লুকিয়ে, বলতেন, চাপা স্বরে, কাল্টা তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।
    আমার দাদি অর্থাৎ ঠাকুমা বাবার সৎ মা ছিলেন। কিন্তু সে-কথা তাঁর মৃত্যুর আগে বুঝিনি। ছেলে অন্তপ্রাণ। নিজের সন্তান ছিল না। দুই সৎ ছেলে মেয়েই তাঁর সন্তান। আমার পিসি সায়রাবানুর মতো সুন্দরী। পিসিও আমার বাবার সহোদরা নন। কিন্তু ভাই বোনে এতো ভাব আমার আর দ্বিতীয়টি চোখে পড়ে নি। বাবা রেগে গেলে ভয়ঙ্করতম। কিন্তু বোনকে একটি কড়া কথাও বলেন নি।
    আমার মা ও ঠাকুমার সম্পর্ক ছিল খানিকটা ইন্দির ঠাকরুন ও সর্বজয়ার মতো। পুরোপুরি নয়। কারণ ঠাকুমা ছিলেন ধনী। বিরাট সিন্দুকে কিছু সোনাদানা, টাকা ও অন্তত ত্রিশটি মোহর বাবার চোখ এড়িয়ে অবশিষ্ট ছিল। অথবা বাবা চান নি। যদিও সেই মোহর পরে মেলে নি। অন্য একজনের গভ্ভে যায়। পরে বলব সে কথা। আপাতত, সন্ন্যাসীর কথায় ফেরা যাক। সবাই ঘুমোচ্ছে। এদিকে সদর দরজায় সন্ন্যাসী কড়া নাড়ছে। আমাদের শোবার ঘর থেকে সদর দরজা ছিল অন্তত দুশো ফুট দূরে। আমি চাল আলু এনে দিলাম।
    সন্ন্যাসী আমার মাথায় চিমটা দিয়ে আশীর্বাদ করে বললেন, বহুত বড় হবি ব্যাটা। বড়ই তো হতে চাই। দাদার জুতো পরে বলি, দেখো তো বড়ভাই মনে হচ্ছে না!
    অভিভূত আমি বাটি নামিয়ে ছুটলাম সন্ন্যাসীর পিছু পিছু।
    তখন দামোদর নদের ওপর সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এক একটা থাম তৈরি হচ্ছে আর পড়ে যাচ্ছে। চারদিকে কানাঘুষা সাতটা ছেলের রক্ত চায় নদী। নাহলে ব্রিজ হতে দেবে না। ছেলের সন্ধানে গ্রামে গ্রামে নাকি ছেলেধরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাঁধে বিরাট ঝোলা নিয়ে।
    সন্ন্যাসীর কাঁধেও বিরাট ঝোলা ছিল। আমার খুব ইচ্ছে হল, সন্ন্যাসী আমাকে ঝোলায় পুরে নিক। একটু রক্তই তো নেবে। কতবার কত রক্ত বেরিয়েছে। ঝোপেঝাড়ে পড়ে। লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে। ভাবখানা মনে, কত ঘুরতে পারবো সন্ন্যাসীর সঙ্গে।

    সন্ন্যাসী আমাকে কিছু বললেন না। আর কারো ঘরে ভিক্ষাও চাইলেন না। চললেন হেঁটে।
    আমি চলেছি হ্যামলিনের বাঁশির ইঁদুরের মতো।
    গ্রাম ছেড়ে দখিনপাড়ার মাঠে পড়ব এমন সময় একজনের আবির্ভাব।
    সে গিয়েছিল আমার খোঁজে।
    কারণ সকালে আমি আর সে পুকুরের কাদা দিয়ে একটি ধান কল বানিয়ে রোদে শুকাতে দিয়েছি
    তাঁর বয়স আমার থেকে বছর ছয় সাতের বড়। দারুণ বাঁশি বাজাতো। বিকেলে সেই কাদামাটির ধান কলে ধান ভানা হবে, আর সন্ধ্যায় সে নিয়ে যাবে খোটেলের পাড়ে। সেখানে হেলানো তাল গাছে শুয়ে বাঁশি নাকি বাজায় সে। আর সাপরা পুকুরে মাথা তুলে মাথা দোলায় তালে তালে।
    সাপের পাঁচ পা খারাপ কথা। কিন্তু আমাকে কেউ বুঝিয়েছিল, পাঁচ পা ওয়ালা সাপের মাথায় মণি থাকে। সেই মণি পেলেই পুকুরের তলায় লুকানো প্রাসাদ দেখা যাবে।
    কথা ছিল সবাই ঘুমোলে দুজনে বের হবো। সে এসে দেখে আমি নেই। বাকিরা ঘুমোচ্ছে। কোথায় যেতে পারি ভেবে সে খুঁজতে বের হয়েছে।
    দুপুরে গ্রাম মনে হতো নিশুতি রাত।
    বিদ্যুৎ নেই। কিন্তু লোকে দুপুরে অকাতরে ঘুমাতো। তাই কেউ খেয়াল করে নি আমার যাওয়া। বেশি দূর যাই নি, আমার সঙ্গী হাজির। ছোটোবেলা থেকেই আমার বড়োদের সঙ্গে বেশি বন্ধুত্ব।
    সে এসে আমার হাত ধরে টেনে বলল, পাগল নাকি তুই ছেলেধরা লোকটা।
    নিয়ে গিয়ে বেচে দেবে গরমেনের কাছে ( গভর্নমেন্ট)। পুঁতে দেবে তোকে।
    এতক্ষণে আমার রোমান্টিকতা গেল।
    শুনেই পাঁইপাঁই দৌড়।
    সন্ন্যাসী কিন্তু বিকারহীন।
    ফিরেও তাকালেন না, চলে গেলেন।
    ওই রকম মোহ ধরানো সন্ন্যাসী আর দেখি নি।
    পরে 'কপালকুণ্ডলা' ছবি দেখে মনে হলো এই সেই।
    কিন্তু সন্ন্যাসীর দৃষ্টি ভয়ঙ্কর ছিল না। ছিল অতলান্ত দিঘির জলের মতো গভীর।
    আজও সেই চোখ আমি খুঁজে বেড়াই।
    কে আনবে এই আহ্বান।
    যার কোন আহ্বান থাকবে না, অথচ মন্ত্রমুগ্ধের মতো চলে যাবো।
    তবে এটাই শেষ নয়।
    আরেকবার ঘটলো কাঁচরাপাড়া স্টেশনে।
    আমার বয়স তখন পাঁচ। নদিয়ায় মাসির বাড়ি যাচ্ছে আমাদের নিয়ে মা বাবা। তখন তো বাঙালি গ্রামীণ পরিবার দীপুদা হতে শেখে নি। দী-পু-দা মানে দীঘা পুরী দার্জিলিং।
    মামার বাড়ি পিসি মাসির বাড়িই তাদের দীঘা দার্জিলিং।

    ৬.১০.২০২০
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    পর্ব ১-৩ | পর্ব ৪-৬ | পর্ব ৭-৯ | পর্ব ১০-১২ | পর্ব ১৩-১৫ | পর্ব ১৬-১৮ | পর্ব ১৯-২১ | পর্ব ২২-২৪ | পর্ব ২৫-২৭ | পর্ব ২৮-২৯ | পর্ব ৩০-৩১ | পর্ব ৩২-৩৩ | পর্ব ৩৪-৩৫ | পর্ব ৩৬-৩৭ | পর্ব ৩৮-৩৯ | পর্ব ৪০-৪১ | পর্ব ৪২-৪৩ | পর্ব ৪৪-৪৫ | পর্ব ৪৬-৪৭ | পর্ব ৪৮-৪৯ | পর্ব ৫০-৫১ | পর্ব ৫২-৫৩ | পর্ব ৫৪-৫৫ | পর্ব ৫৬-৫৭ | পর্ব ৫৮-৫৯ | পর্ব ৬০-৬১ | পর্ব ৬২-৬৩ | পর্ব ৬৪-৬৫ | পর্ব ৬৬-৬৭ | পর্ব ৬৮-৬৯ | পর্ব ৭০-৭১ | পর্ব ৭২-৭৩ | পর্ব ৭৪-৭৬ | পর্ব ৭৭-৭৮ | পর্ব ৭৯-৮০ | পর্ব ৮১-৮২-৮৩ | পর্ব ৮৪-৮৫ | পর্ব ৮৬-৮৭ | পর্ব ৮৮-৮৯ | পর্ব ৯০-৯২ | পর্ব ৯৩-৯৪ | পর্ব ৯৫-৯৬ | পর্ব ৯৭-৯৮ | পর্ব ৯৯-১০০ | পর্ব ১০১-১০২ | পর্ব ১০৩-১০৪ | পর্ব ১০৫-১০৬ | পর্ব ১০৭-১০৮ | পর্ব ১০৯-১১০ | পর্ব ১১১-১১২ | পর্ব ১১৩-১১৪
  • ধারাবাহিক | ১৯ ডিসেম্বর ২০২০ | ৮৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 2601:84:4600:5410:7475:c72d:3da8:c474 | ০৫ অক্টোবর ২০২১ ১৯:৫৭499137
  • পছন্দের সিরিজ। ভাল লাগছে 
  • বিপ্লব রহমান | ০৬ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৫৮499165
  • এই ধারাবাহিকটি বেশ ভাল। পুরনো দিনের মায়া আছে। 
     
    কিন্তু আরেকটু রয়েসয়ে একেকটি পর্ব দিলে ভাল হয়, আগেও বলেছি বোধহয়
     
     
  • Emanul Haque | ০৬ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪৬499183
  • খেয়াল রাখবো
  • Emanul Haque | ০৬ অক্টোবর ২০২১ ১৬:৪৭499184
  • ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন