এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ফিরে দেখা ২০২০ এর কোভিড ১৯ এবং মন্ট্রিয়ালের প্রথম ঢেউ 

    Biswarup Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ মার্চ ২০২২ | ৭৪৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • এটা লিখতে গিয়ে মাথায় এল যে আমরা ২০২২ এ চলে এসেছি, লেখাটা হয়তো ১ বছর আগে লিখলে ভালো হত, যাইহোক গতস্য শোচনা নাস্তি। 

    ২০২০ র শুরুতে কিন্তু আমরা বেশ ছিলাম, চীন থেকে একটা নতুন ছোয়াচে রোগের কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল বটে কিন্তু সেরকম কেউ কেয়ার করে নি  যতক্ষণ না রোগ টা ইউরোপ মহাদেশে এসে পৌছায়। যদ্দুর মনে আছে কানাডার প্রথম কেস টি পাওয়া যায় ফেব্রুয়ারীর শুরুর দিক। আমি তখন একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রযুক্তি সংস্থায় দুর্লভ  রোগের গতি প্রকৃতির মডেলিং নিয়ে কাজ করি, তখনো কানাডার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কোভিডের কালো ছায়া নেমে আসে নি, লোকজন দিব্বি সকালে টিম হর্টনসে কফি খেয়ে ভিড় ঠাসা মন্ট্রিয়াল মেট্রোয় করে কাজে গেছে। 

    মার্চের শুরু থেকে মন্ট্রিয়ালে ১-২ করে কেস আসতে শুরু করেছিল কিন্তু পরিস্থিতি তখনো বেশ স্থিতীশীল, পাবলিক হেলথের কর্ণধার রা কিছু কিছু প্রিভেন্টিভ স্টেপ এর কথা বলছেন কিন্তু সাধারণ লোকজন তখনো ভীত নয়। পরিস্থিতির ৩৬০ ডিগ্রী পরিবর্তন ঘটলো স্প্রীং ব্রেকের সময় (মার্চের মধ্য দিকে), ততদিনে মন্ট্রিয়ালে আগত সব আন্তর্জাতিক যাত্রীকে ১৪ দিন সেল্ফ আইসোলেট করার নির্দেশ চলে এসেছে কিন্তু ভাইরাস ততদিনে সমস্ত বাধানিষেধ পেরিয়ে মন্ট্রিয়ালের সব পাড়ায় পাড়ায় হাজির। 

    এই স্প্রিং ব্রেক টা মন্ট্রিয়ালের কোভিড ১৯ এর টাইমলাইনে খুবই গুরুত্বপুর্ণ একটা ঘটনা। পরবর্তীতে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক রা মন্ট্রিয়ালের প্রথম ধাক্কার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে স্প্রিং ব্রেক থেকে ফেরা ২৪৩ জনকে চিন্হিত করেছেন যাদের থেকে মন্ট্রিয়ালের প্রথম ধাক্কা টার শুরু হয়েছিল (১)

    যাইহোক  কোভিড এর জন্য কিছু জিনিস ত্বরান্বিত হয়েছিল, কিউবেকের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষকদের দীর্ঘদিনের প্রোজেক্ট কিউবেক বায়োব্যাংক বেশ কিছু  মিলিয়ন ডলারের ফান্ডিং পেল, যার মুল উদ্দেশ্য হল মন্ট্রিয়াল ও কিউবেকের সমস্ত হাসপাতালের সমস্ত রোগীদের সমস্ত ডাটার কেন্দ্রীকরণ। পাঠকের মনে হতে পারে যে কাজ টা খুবই সহজ কিন্তু আক্ষরিক অর্থে কাজ টি জটিল এবং অনেক ক্ষেত্রে ১০০% নির্ভুল করা অসম্ভব। সেই কারণ গুলোর মধ্যে দু একটা এই লেখনীর সাথে সামন্জস্যপুর্ণ বলে পরে খুব ছোট করে আমি উল্লেখ করবো কিন্তু বিস্তারিত আলোচনা অন্য পরিসরে করা যাবে। 

    মে মাসের শুরুর দিকে আমি আমার কর্পোরেট চাকরী টা ছেড়ে ম্যাকগিলের লেডী ডেভীস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জেনেটিক এপিডেমিওলজীর অধ্যাপক ডঃ ব্রেন্ট রিচার্ডসের সংগে কুইবেকের বায়ো ব্যাংক এর জন্য কাজ শুরু করি। আমাদের  কাজ ছিলো মন্ট্রিয়ালের জিউইস জেনারেল হাসপাতালের সমস্ত  কোভিড ১৯ রোগীদের ডাটার কেন্দ্রীকরণ এবং বিশ্লেষণ।  

    জিউইশ এবং অন্যান্য মন্ট্রিয়ালের হাসপাতালের ডাটা কেন্দ্রীকরণের মুল সমস্যা হল যে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে বিভিন্ন কোম্পানীর দেওয়া সিস্টেম গুলোর ডাটা ম্যানেজমেন্ট বিভিন্ন রকম আর সেগুলো সবই প্রপ্রায়টরী সল্যুশন। ভেন্ডর কোম্পানীর থেকে ডাটা ফিড আদায় করার মত কঠিন কাজ খুবই কম  আছে হয়তো।স্বাস্থ্যবিষয়ক ডাটা আ্যানলিসিসের ক্ষেত্রে longitudinal data ভীষণ গুরুত্বপুর্ণ। সরল বাংলায় যেটা হল  সময় ক্রম অনুযায়ী পেশেন্ট ডাটার  সংরক্ষণ। যাই হোক এই সব বাধা বিপত্তি,সরকারী লাল ফিতে পেরিয়ে ১  মাসে আমরা ২/৩ টি গুরুত্বপুর্ণ সিস্টেমের ডাটা কেন্দ্রীকরণ করে ফেলেছিলাম। কিন্তু আসল আ্যনালিসিসের সময় বাধা হয়ে দাড়ালো কোভিড, ততদিনে মন্ট্রিয়ালে প্রতিদিন হাজারে হাজারে লোক আক্রান্ত হচ্ছে, হাসপাতাল / আই সি ইউ তে রোগী উপচে পড়ছে। ডঃ রিচার্ডসের মত সিনিয়র অধ্যপক কেও দিনের ১০-১২ ঘন্টা এমারজেন্সিতে কাটাতে হয়েছে যেখানে সেখানে  আ্যনালিসিসের জন্য ডাক্তারবাবুদের সময় বার করা বিলাসিতা বৈকী। তারপরেও ড: রিচার্ডসের গ্রুপ বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ কাজ করে ফেলে, শত অব্যবস্থার মধ্যেও। Desperate times brings desperate measure বলে কথাটি কিন্তু খুব সত্যি  যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নাওয়া খাওয়া ভুলে কোভিড১৯ ভাইরাসের ঠিকুজী কুষ্ঠী বাড় করার পিছনে যেরকম ভাবে কাজ হয়েছে সেটা খুব কাছ থেকে না দেখলে সত্যিই হয়তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। শুধু ডঃ রিচার্ডসের গ্রুপ নয়, সারা বিশ্বের ১০০ জনেরও বেশী গবেষক এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছিল, খুব সামান্য হলেও তাদের প্রচেষ্টার সুফল আমরা সকলেই কিছু না কিছু পেয়েছি।

    এখন যখন আমার কাজের দিনের বেশীর ভাগ সময় কাটে কীভাবে একটি  app এ লোকজনকে বেশী করে এনগেজ করাবো, বেশী খরচ করাবো এসব ভাবতে, তখন মনে হয় এই কোভিড১৯ এর কাজের  সংগে সশরীরে যুক্ত থাকতে পারা আমার কর্ম জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কাজ। আর যখন শুনি যে কোভিড১৯ একটা বড় চক্রান্ত,যাতে সবাই মিলিত তখন মনে হয় মানুষের সমস্ত কর্মোদ্যম, অজানাকে জানার অদম্য ইচ্ছার kryptonite হয়তো মানুষ নিজেই।
     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন