এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  • দেবজ্যোতি রায়-এর 'নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ' আর নষ্ট আত্মার নোটবই'

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ২৯ অক্টোবর ২০২২ | ৮৭৫ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
    দেবজ্যোতি রায়-এর  ‘নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ’ আর ‘নষ্ট আত্মার নোটবই’ : মলয় রায়চৌধুরী



    মানুষ ক্রোধ, গ্লানি, দুঃখ, ভয়, স্পৃহা, বিষণ্ণতা, যন্ত্রণা, হতাশা, দুর্যোগ ইত্যাদিতে ছেয়ে থাকার  সময়ে যদি লেখালিখি বা ছবি আঁকাকে তা প্রকাশের মাধ্যম করেন তখন তিনি নিছক সাহিত্য-শিল্প করেন না, ফিকটিশাস ব্যাপার ছকতে পারেন না। তা এমন এক মানসিক রাসায়নিক বিক্রিয়া যা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উদ্ভূত, যেমন পিকাসোর ‘গোয়ের্নিকা’, অ্যালেন গিন্সবার্গের ‘হাউল’, লুই ফার্দিনাঁ সিলিনের ‘জার্নি টু দি এণ্ড অফ দি নাইট’ , মহাশ্বেতা দেবীর ‘হাজার চুরাশির মা’, সালমান রুশডির ‘দ্য সাটানিক ভারসেস’, হুমায়ুন আজাদের ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’, মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ‘বাতাসে বারুদের গন্ধ’, সন্তোষ রাণার ‘রাজনীতির এক জীবন’, বিমল সিংহের ‘লংতরাই’, আরভিঙ হায়ওয়ের ‘ব্ল্যাক বয়েজ অ্যাণ্ড নেটিভ সানস’, রিচার্ড রাইটের ‘ব্ল্যাক বয়’ ইত্যাদি।   সাহিত্য হয়তো সান্ত্বনা দিতে পারে, কিন্তু প্রতিটি পাঠক সান্ত্বনার জন্য পড়েন না।

    দেবজ্যোতির প্রথম বইটা, যদিও প্রকাশক বলেছেন উপন্যাস, তা কিন্তু নয়, ফিকশান নয়। এটিকে বলা যায় বিলডুংসরোমানের একটি উপবর্গ ; ভারতের, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের সমাজে  মিথ্যার পুনরাবৃত্তি,  সমস্ত অশোভনতা, মেলোড্রামা এবং দৃষ্টিভঙ্গির ক্লাস্ট্রোফোবিয়া প্রকাশ্যে আনতে চেয়েছেন দেবজ্যোতি, দেখিয়েছেন ঘৃণা, ভয় এবং হিংস্রতা আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিকে কীভাবে পঙ্গু করেছে এবং  এখনও পুরানো মিথ্যার পুনরাবৃত্তি  অব্যাহত,  খুনোখুনি ও হুমকির শেষ নেই। এই মনোভাবকে প্রকাশ করার জন্য দেবজ্যোতি বাহন করেছেন একটি দ্রুতগামী  বেপরোয়া গদ্যের। তাঁর দ্বিতীয় বইটিতে, ‘নষ্ট আত্মার নোটবই’ আছে তেমনই ছোটো-ছোটো গদ্য, নাটক ও ফিকশান; এবং তাতেও তিনি একজন ক্রুদ্ধ লেখক, যাঁর গদ্যে গড়ে উঠেছে উষ্মার ভাপ। দেবজ্যোতির গদ্যকে, দ্বিতীয় বইটির প্রকাশক বলেছেন ‘ভাষা সন্ত্রাস’ এবং তা লেখকের সচেতন প্রয়াস।

    রাগ হল একটি নেতিবাচক আবেগ—এটাই আমাদের শেখানো হয়েছে এবং আমাদের সংস্কৃতি তা বিশ্বাস করে।  রাগ কি “খারাপ”?  যখন মনে করা হয় যে রাগ প্রায়শই মানসিক বা শারীরিক ব্যথার প্রতিক্রিয়া, এবং বিষণ্নতা, যন্ত্রণা, দুঃখ, ভয় এবং হতাশার মতো সম্ভাব্য গৌণ আবেগগুলোকেও তার আওতায় আনে, তখন রাগ একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া বলে মনে হয়। রাগ, হতাশার বিপরীতে, শক্তিতে পূর্ণ – আপনার নাড়ি দ্রুত হয়, আপনার শরীর উত্তপ্ত হয় এবং আপনি কিছু করতে চান, যেকোনো কিছু করতে। যখন সমস্ত শক্তি ইতিবাচকভাবে পরিচালিত হয়, তখন শুভত্ব জাগ্রত হয়। ক্রোধ একটি লাগামহীন, শৃঙ্খলাহীন  শক্তিমত্তা। এই কারণেই আমরা মোকাবেলা করার,  এবং রাগ পরিচালনা করার বিষয়ে কথা বলি। যদিও রাগের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে, , মূলত দুটি ধরণের : দ্রুত, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, যা আপনাকে চিৎকার করতে বা নিঃশব্দে বদলা নিতে উৎসাহিত করে। কিন্তু যখন  হতাশাজনক শক্তি আপনাকে কাবু করে তখন ফোড়ার মতন,  ব্যথা থেকে জন্ম নেয় গভীর রাগ। উভয় ধরনের রাগ ধ্বংসাত্মক হতে পারে, আবার ইতিবাচক, গঠনমূলক  হতে পারে। লেখা বা আঁকার মাধ্যমে,  মানুষ রাগের কারণগুলোর প্রক্রিয়াকরণ করে। কেউ কেন রাগান্বিত তা একবার জানলে, সে তাকে নিয়ন্ত্রণে আনবে। সে তার প্রতিক্রিয়াগুলো পরীক্ষা করতে পারে এবং প্রকাশভঙ্গী বেছে নিতে পারে। সে রাগ থেকে শিখতে পারে এবং  হতাশা বা ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে পারে। রাগ, এমন একটি আবেগ হয়ে ওঠে যা তাকে জাগিয়ে তোলে এবং  নিজের প্রতি মনোযোগ দিতে বাধ্য করে। এই মনোযোগস্পৃহা থেকে লেখা হয়েছে ‘নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ’।

    লেখালিখি বা আঁকা কি  রাগ প্রকাশ করার একটি উপায় হিসেবে প্রয়োগ করা যেতে পারে? কেনই বা হবে না ! লেখালিখি বা আঁকা এমন একটি পাত্র হতে পারে যেখানে একজন মানুষ তার  কোনও বিশেষ কিংবা সমস্ত আবেগ ঢেলে দিতে পারেন। আবেগগত, আধ্যাত্মিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে একজন লেখক বা চিত্রশিল্পীর পক্ষে সে কে এবং সে কী তা সে নিজে ছাড়া অন্য কারো পক্ষে গড়ে তোলা আক্ষরিক অর্থে অসম্ভব। সর্বোপরি, তার অন্য কোনও আধার-আধেয় নেই। প্রকৃতপক্ষে, তার তরফ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে দমিয়ে দেবার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, সে এই ধরনের একটি মানসিক বিনিয়োগ করতে চায় বা ঘটায়।  কারণ, সম্পূর্ণ কাজটা একই সাথে প্রতিটি পাঠক বা দর্শকের জন্য একটি আয়না, যারা তা পড়েন বা দ্যাখেন, একথা দস্তয়েভস্কি অনেক আগেই বলেছেন। একজন রাগান্বিত পাঠক বা দর্শক পাঠবস্তুতে বা পেইনটিঙে রাগকে ঠিক তার নিজের মাত্রায় আবিষ্কার করে। একজন হতাশাগ্রস্ত পাঠক বা দর্শক তার বিচ্ছিন্নতা এবং দুঃখের সঙ্গে মিল খুঁজে পায়। তবে একথা স্বীকার করতে হবে যে  সমস্ত লেখালিখি বা ছবিআঁকা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নয়। দেবজ্যোতির ‘নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ’ বইটির স্বর বিশেষভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যার দরুন লেখকের মনোভাব ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি সরাসরি পাঠকের মর্মে চালান করা যায়।  এই স্বর সরাসরি শ্রোতা এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কিত। দেবজ্যোতি এই বইতে রাগান্বিত স্বর যে ভাবে প্রয়োগ করেছেন যে টের পাওয়া যায় উনি এই স্বর অর্জনের জন্য  প্রাসঙ্গিক শব্দভাণ্ডারও ব্যবহার করেছেন। 

    দেবজ্যোতি রায় ‘নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ’  আর ‘নষ্ট আত্মার নোটবই’  আমাকে পাঠিয়েছিলেন ২০২০ সালের অক্টোবরে। এক বছরের বেশি হয়ে গেল, বই দুটো সম্পর্কে আমার ভাবনা গোছাতে। প্রথম বইটাকে প্রকাশক কোয়ার্ক পাবলিশার্স বলেছেন ‘শর্ট নভেল’। আগেই বলেছি বইটা তা কিন্তু নয়।  একটি ধারণা, রূপক বা মডেলের সাহায্যে নতুন ধারণা, ছবিপ্রবাহ বা বিশ্বাস প্রকাশ করতে সক্ষম হওয়া দেবজ্যোতি রায়ের নিজের অধিকারে একটি কৃতিত্ব। পুরো বই জুড়ে, লেখকের উষ্মা। তিনি হয় সবে চাপা আবেগে ক্ষতবিক্ষত বা যাপিত জীবন থেকে টেনে এনেছেন এমন বহু অভিজ্ঞতা যা তাঁকে বাধ্য হয়ে সহ্য করতে হয়েছে। লেখক স্পষ্টভাষী, বলপ্রবণ এবং মাঝে মাঝে ভয়ঙ্কর। দেবজ্যোতি রায় তাঁর  জীবন-জ্বর, লাগামহীন প্রতিবাদকে একটি কেন্দ্রীয় সাহিত্য কৌশলে পরিণত করেছেন, একটি কথ্য ভাষা, রাগ এবং উপহাসের ভাষার সাথে পরিশীলিত বাংলা গদ্যকে মুচড়িয়ে নিজেকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন এই বইতে। রাগ প্রবাহিত জলের মতো,  যতক্ষণ কেউ তাকে প্রবাহিত হিসাবে নেয় ততক্ষণ  কিছু ভুল ঘটার সম্ভাবনা কম। ঘৃণা স্থির জলের মতো, সেই রাগ যা কেউ  নিজে অনুভব করার স্বাধীনতায় পেয়েছে, এবং পাঠক বা দর্শককে টেনে এনেছে তাতে। সেই জল যা লেখক বা ছবি-আঁকয়ে এক জায়গায় জড়ো করে ভুলে যাওয়ার জন্য রেখেছিলেন। স্থির জল হয়ে ওঠে নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত, রোগের ডিপো, বিষাক্ত, প্রাণঘাতী এবং এটাই লেখক বা ছবি-আঁকিয়ের ঘৃণা।  

    দ্বিতীয় বইটির ভূমিকায় সাত্ত্বিক নন্দী লিখেছেন, “লেখক (মূলত) তাঁর নিজের জীবনটিকেই লেখেন এবং লেখার ভাষাটি তুলে আনেন সেই জীবন থেকেই।” কথাটা অনেকের বেলায় খাটে, দেবজ্যোতির বেলাতেও খাটে। কিন্তু  নকশাল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকে লেখালিখি করেছেন জোতদারদের ভাষায় ; ভাষা সম্পর্কে তাঁরা চিন্তা করেননি। দেবজ্যোতি রায়ও দুটি বইতে একইরকম গদ্যবিন্যাস প্রয়োগ করেননি। দ্বিতীয় বইটিতে যেহেতু নিজের সম্পর্কে বলছেন না, তাই তাতে রোষাভাসের তাপ তেমন স্ফূলিঙ্গ ছড়ায়নি। একই রকম লেখনশৈলীও উচিত হতো না। কেননা প্রতিটি বিষয়ে একইরকম গদ্য লেখককে খেলো করে দিতে পারে — লেখক নিশ্চয়ই দাবি করেন না যে “আমি সারাটা জীবন দিয়ে বিশেষ ভাষা আবিষ্কার করেছি”।

    প্রথম বইটিতে, আত্মবিনির্মাণের মাধ্যমে, নকশাল আন্দোলনে তাঁর যোগ, আন্দোলনের ও বামপন্হী ভাবধারার ভাঙনে দেবজ্যোতি রায় নিজের ভাঙনকে প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাঁর  সামাজিক জগতকে বিভিন্ন আত্মজৈবনিক সমতলে উদ্ভাসিত অথবা কলঙ্কিত হিসাবে উপস্থাপন করার প্রয়াস করেছেন,  যেখানে বিভিন্ন ঘটনা উল্লম্বভাবে না হয়ে অনুভূমিকভাবে সংযুক্ত হয়ে এগিয়েছে। দেবজ্যোতির গদ্য-শৈলীটি পাঠবস্তু হিসাবে আকর্ষণীয় কারণ এটি  সহজাত মূল্যবোধ এবং গুণাবলীকে ছাপিয়ে গেছে অথচ যা তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন তাকে ধরে রেখেছেন আদ্রেনালিনের রসায়নে এবং তা  দ্রুত সরাসরি উপস্হাপন করার চেষ্টা করেছেন। জ্ঞানতত্বের ব্যাখ্যাকাররা একে বলবেন ‘প্যাশনেট’। হাইডেগার মনে করেন, ভাষাই সার্বভৌম, মানুষ নয়; সত্তা হিসেবে মানুষ ভাষার মধ্যেই প্রকাশিত হয়ে ওঠে। ভাষার ভেতরে মানুষের বিশুদ্ধ প্রকাশ তখনই সম্ভব, যখন মানুষ ভাষার সত্তার ওপর শ্রদ্ধাশীল থাকে এবং সে তখনই প্রকৃতপক্ষে শ্রদ্ধাশীল, যখন সে ভাষার ভেতরে সত্যিকার অর্থে কান পেতে তার অন্তর্গত কথনে আস্থাশীল হয়ে ওঠে। দেবজ্যোতি রায় তাঁর আত্মকথনে আস্হাশীল তো বটেই, সেই সঙ্গে প্রয়োগ করেছেন নিজের যাপিত জীবন থেকে তুলে আনা কান্নার, যন্ত্রণার, ষড়যন্ত্রের, পরাজয়ের, বিশ্বাসঘাতকতা ও ধ্বংসের ছবিগুলো।

    জার্মান কবি হোল্ডারলিন বলেছিলেন, “যদি তোমার মস্তিষ্ক এবং হৃদয় থাকে তাহলে কেবল একবারে একটি বা অন্যটি দেখাও,  তুমি দুটিকেই একসঙ্গে দেখিও না ; একটার  জন্য তুমি কৃতিত্ব পাবে।” আবেগ ও বুদ্ধির মধ্যে এমন বিচ্ছেদ  কার্যকর করতে পেরেছেন দেবজ্যোতি তাঁর ‘নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ’ বইতে। দেবজ্যোতির ক্রোধ খাঁটি, তা নিছক সাহিত্যিকতা নয়, বিদ্বেষ নয়, প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা নয়। পেছন ফিরে  নিজের দৃষ্টিতে, তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে তিনি এমনই একজন মানুষ যাঁর নির্মাণ-স্বভাব সব কিছুর বিপরীতে। নসটালজিয়াকে ছাঁটাই করতে পেরেছেন তিনি। যদিও আধুনিক অবস্থা, ঔপনিবেশিকতা, দাঙ্গা, নকশাল গণহত্যা, বামপন্হীদের পচন, পরিবেশগত ধ্বংস এবং মানুষের শোষণ, এগুলো, আশ্চর্য মনে হলেও, মানুষের স্মৃতির কৃতিত্ব এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি দ্বারা গঠিত —   ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুলের তাত্ত্বিকদের (সবচেয়ে বিশিষ্ট থিওডর অ্যাডর্নো) পরিভাষা যৎসামান্য ধার করেই বলছি,  হতাশা এবং নিন্দাবাদের, দেবজ্যোতি রায়ের ভাঙন-সন্দর্ভ ভিন্ন কিছুর প্রতিনিধিত্ব করে – মানবজাতির মনভোলানো ফাঁদগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে। যদিও অ্যাডর্নো বুর্জোয়া মূল্যবোধ এবং নিয়ম-কানুন নষ্ট হয়ে যাওয়া নিয়ে অনুশোচনা করেছিলেন, দেবজ্যোতির গদ্যপ্রবাহে তেমন কোনও নস্টালজিয়ার উপাদান নজরে পড়েনি। দেবজ্যোতি রায়  লুই ফার্দিনাঁ সেলিনের  অ-আলোচনাযোগ্য, কঠিন এবং দুর্ভেদ্য নিহিলিজমকে এড়িয়ে এক টুকরো অনির্বচনীয় মেঘের সন্ধান করেছেন। প্রত্যাখ্যান করেও করছেন না। অবশ্য ওই অনির্বচনীয় মেঘ যে কোথায় তা আমি চাকুরিজীবনে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েও খুঁজে পাইনি।

    আলালের ঘুরের দুলাল থেকেই বাংলা সাহিত্যের একটি দীর্ঘস্থায়ী ঐতিহ্যের অংশ হওয়ার কারণে লেখকরা সমাজকে নানা উপায়ে খোঁচা মেরেছেন, আক্রমণ করেছেন তাঁদের অপছন্দের ভ্রষ্ট সমাজ ও তার প্রকোপে দূষিত মানবতাকে। তা  একটি মূল সাহিত্যিক কৌশল হিসাবে নানাভাবে প্রয়োগ ও ব্যবহার করা হয়, বাংলা গদ্যের উন্মেষকালের বক্র-ব্যঙ্গ থেকে শুরু করে সুভাষ ঘোষের ‘যুদ্ধে আমার তৃতীয় ফ্রন্ট’,  নবারুণ ভট্টাচার্যের ফ্যাতাড়ুর রোমান্টিক বিদ্রুপ আর সুবিমল মিশ্রের কাট-আপ পদ্ধতি ও হরফ-ব্যঙ্গের ধারার সাথে যা অব্যাহত রয়েছে, যদিও তাঁদের রচনায় পাওয়া যায় নির্মিত সাহিত্যিকতা —- তফাতটা এই যে দেবজ্যোতি রায়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া, আমাদের দেশের গুয়ে চোবানো অধঃপতন উপস্হাপনের প্রয়োজনে, পাঠবস্তুকে আধুনিকতা পরিত্যাগ প্রক্রিয়া হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে ‘নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ’ বইতে। প্রচলিত বুর্জোয়া পাল্প ফিকশান সাহিত্যের বিপরীতে, দেবজ্যোতি রায় তাঁর এই স্মৃতি-বিপর্যয়ে জীবনের উচ্চতর মূল্যবোধ, নৈতিকতা বা উদ্দেশ্যগুলিকে পাঠকদের কেবলমাত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চান না, সেই সঙ্গে জীবনকে চিত্রিত করতে চেয়েছেন যেমনটি তিনি উপলব্ধি করেছেন: সম্পূর্ণ অর্থহীন, প্রহসন হিসাবে, সমস্ত মান-লঙ্ঘন হিসাবে এবং বিপ্লবের হইচইকে একটি কেলেঙ্কারি হিসাবে—চারু মজুমদারের পথ থেকে নানা দিকে চলে যাওয়া ফ্যাঁকড়ার ভুলভুলাইয়াগুলোকে তেড়ে ঝাড় দিয়েছেন। দেবজ্যোতির এই বইটা  পড়ার সময়, বঙ্গসমাজের একজন বিপর্যস্ত নিন্দুকের কল্পনা করা সহজ, একজন বিপ্লব-বিধ্বস্ত, যে কিনা সৃজনশীল লেখক, কবিতাও লিখেছে একসময়ে, হয়তো গভীর রাতে এই বইটি এবং অন্য বইয়ের পাঠবস্তুগুলোকে উন্মাদের ঘোরের মধ্যে লিখে গেছেন। আরও সুনির্দিষ্টভাবে, দেবজ্যোতি যে ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত তার মধ্যে একটি নতুন উপাদান আনতে চেয়েছেন, তা হলো বাক্যের সক্রিয় বল, অর্থাৎ গতিশক্তি।   

     যখন নাকতলায় ছিলুম তখন উনি পাঠিয়েছিলেন কবিতার বই, ‘নষ্ট আত্মার নোটবই’তে কবিতার বই দুটির নাম দেয়া আছে : ‘নির্মম বর্শার গান’ আর ‘স্বর’।  দেবজ্যোতি  একাকী মানুষের ঘা-পূঁজ-আঘাত-চোট-জখম-ফোড়ার চারপাশে বিনয় মজুমদার-বর্ণিত হাত বুলিয়ে বুঝতে ও বোঝাতে চেয়েছেন। তিনি তাঁর সময়ের বঙ্গজীবনের ভয়াবহতা ও অর্থহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে করতে এগিয়েছেন— অথচ, ‘নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ’ বইতে তিনি জীবনানন্দের সেই লাইনগুলো ব্যবহার করেছেন যেগুলোর জন্য উৎপলকুমার বসু বলেছিলেন, ‘জীবনানন্দ কয়েকটি উপাদানকে অবলম্বন করেছিলেন, যেমন মানুষের উদ্যম ও প্রচেষ্টার প্রতি তীব্র অবজ্ঞা’। কিন্তু দেবজ্যোতি বইটার পর্বগুলো যেভাবে ভাগ করেছেন, তাতে স্পষ্ট হয় যে তাঁর ভাবনা ওই উদ্যমহীনতার বিরুদ্ধে, প্রচেষ্টা বানচাল করার বিরুদ্ধে। পর্বগুলো এরকম : ১) শুরুর কথা ; ২) বুকের মধ্যিটাই তো আকাশ ; ৩) আর আমরাও তখন আন্তোনিও জাসিনটোর ‘সেই মানুষ’; ৪) তখন যৌনাঙ্গ দিয়েও অনুভব করেছি আমি ‘বিপ্লব’; ৫) কী অসাধ্য সাধনাই না করেছে ; ৬) কিন্তু দেখ এ-কেমন তাই বলে ফল ভুগতে হচ্ছে ; ৭) অলৌকিক থানার শিং-ওলা বড়বাবু, মেজবাবু ইত্যাদি ; ৮) রঙে-রঙে আকাশকে রাঙিয়ে সেই আগুনের গোলকটাই নেমে যাচ্ছে দেখ নদীর ভিতর ; ৯) আতঙ্কের ঘন হাতছানি পড়াশুনো করতে হবে ; ১০) দু’জন পার্টি কমরেড মাটি কামড়ে পড়ে আছেন ; ১১) কানুদারা হাত ধুয়ে ফেললেন ; ১২) সবচাইতে বড় বিষয় সেসময় পার্টির পুনর্গঠন ; ১৩) দু’জন স্বপ্নদর্শী এল কলকাতায় ছ’জন স্বপ্নদর্শীর কাছে ; ১৪) গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা হল আধিপত্য অক্ষুণ্ণ রাখতে স্বপ্নে পাওয়া অনুপম দৈবাস্ত্র ; ১৫) হাতিদের সঙ্গে জঙ্গলে সারারাত এবং ভোরে ‘ইউরেকা’ ; ১৬) ‘৭৩ থেকে ‘৭৬ এইসব বন্ধুরাই লালন করেছে আমাকে ; ১৭) মাইক্রোফোনের সামনে নিজেকে ; ১৮) সহজ লোকের মত ; ১৯) ভাষা নিয়ে আরো দু’চারটে কথা; ২০) সেই তীব্র বিপ্লবী দার্শনিক ; ২১) অমৃতের পুত্রদের এইসব ; ২২) অমৃতের পুত্রদের এইসব [২] এবং  ২৩) মৃত্যুর সঙ্গে দীর্ঘ রমণ-ক্রিয়া আমার এবং এক নদীর কেচ্ছা।
    দেবজ্যোতি রায়ের অন্য বইটা, ‘নষ্ট আত্মার নোটবই’কে বলা হয়েছে ‘কাউন্টার প্রোজ’, যাতে রয়েছে দুটি ছোটো ফিকশান, একটি নাটক এবং দশটি গদ্য। গদ্যগুলোকে বলা যেতে পারে প্রথম বইটার সম্প্রসার। 

    আমি একটু আগেই ছবি আঁকায় উদাহরণ দিয়েছিলুম পাবলো পিকাসোর গুয়ের্নিকার। পিকাসোও সারা জীবন একই শৈলীতে আটকে থাকেননি। যাই হোক, স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধে গুয়ের্নিকাতে বোমা হামলার প্রতিক্রিয়ায় পিকাসো এটি এঁকেছিলেন। গুয়ের্নিকা একটি শহর ছিল যার কোনও সামরিক মূল্য ছিল না এবং বোমা হামলা ছিল মূলত ফ্যাসিস্টদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ অনুশীলন, এমন একটি প্রশিক্ষণ অনুশীলন যার ফলে শহরের অর্ধেকেরও বেশি ধ্বংস হয়ে যায় এবং জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ আহত বা নিহত হয়।  সেখানে একজন মহিলা তার মৃত সন্তানের জন্য শোক করছেন, একজন মৃত বা মৃত ব্যক্তি একটি ভাঙা তলোয়ারকে আঁকড়ে ধরে আছেন, একটি ঘোড়া ব্যথায় চিৎকার করছে এবং একটি জ্বলন্ত দালানের ভিতরে আটকা পড়েছেন একজন ব্যক্তি। ছবিটি অস্বাভাবিক এবং বিকৃত উপায়ে আঁকা হয়েছে, যা তাদের মধ্যে ব্যথা এবং আতঙ্কের অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে। পিকাসোর একটি একরঙা প্যালেটের পছন্দও চিত্রকলার মধ্যে নাটকীয় তীব্রতা এবং বিষণ্ণ মেজাজ গড়ে তুলেছে। পিকাসো আপাতদৃষ্টিতে গুয়ের্নিকা বোমা হামলার দ্বারা বেশ প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাঁর চিত্রকর্ম এই ধারণাটিকে চ্যালেঞ্জ করে যে যুদ্ধ ব্যাপারটা বীরত্বপূর্ণ এবং মহৎ। দেবজ্যোতি রায়ের ‘নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ’ এর গদ্যপ্রবাহ পিকাসোর পেইনটিঙটির মতনই, অভিজ্ঞতার প্রচুর টুকরো-টাকরায় জোড় দেয়া।

    দেবজ্যোতি রায় কার্যত সকলের প্রতি আক্রমণাত্মক মনোভাব বজায় রেখেচেন। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় না থাকলেও, তিনি  যে-কোনও মানদণ্ডে একজন রহস্যময় মানুষ এবং সেইজন্য তিনি একজন অত্যন্ত আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বও বটে। যদি আমরা লোকেদের গালগল্পের পরিবর্তে তাদের কাজ এবং কৃতিত্বের ভিত্তিতে বিচার করি তবে এই জাতীয় বিশ্লেষণ দেবজ্যোতির ক্ষেত্রে কাজে দেবে, কেননা লিটল ম্যাগাজিনের জগতেও তিনি উপেক্ষিত-অবহেলিত। অবশ্য লেখকের চরিত্র নয়, তার সৃষ্ট কাজকেই আমরা বিচার করব। কোনও সন্দেহ নেই যে তাঁর ‘নরকের থেকে একটুকরো মেঘ’ বইটি বাংলাসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ। কলকাতার সাহিত্য পরিমণ্ডলের বাইরে থাকেন বলে সমাদৃত হবার সুযোগ পায়নি তাঁর লেখালিখি। নয়তো তাঁর বইটাকে চার্লস বুকোস্কির ‘দি পোস্ট অফিস’, টমাস পিনচনের ‘গ্র্যাভিটিজ রেনবো’র সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে নেয়া যেতে পারতো।

    দেবজ্যোতি রায় ‘নরকের থেকে একটুকরো অনির্বচনীয় মেঘ’ বইতে যা করেছেন তা লুই ফার্দিনাঁ সিলিনের প্যারোডি, বিল্ডুংস্রোমান এবং পিকারেস্ক প্রয়োগের সঙ্গে তুলনীয়। নিঃসন্দেহে তা একটি অত্যন্ত উদ্ভাবনী মিশ্রণ – এবং পাঠক প্রথম লাইন থেকে লক্ষ্য করেন যে বইটা তো উপন্যাস নয়, তা সম্পূর্ণ নতুন কিছু। বইটা যেন একটা বিবৃতি, স্বাধীনতার ঘোষণা, ভবিষ্যতের একটা জানালা। বইটার উদ্ভাবনী গদ্যবিন্যাস, সারগ্রাহী শব্দভাঁড়ার, এবং বিশেষ করে, এর উন্মত্ত গতি পাঠকদের ক্ষেপিয়ে তুলবে। কিন্তু বইটার অসংবৃত বিষয়বস্তুর  জন্য তা সংগতিপূর্ণ। বইটা খুব খোলামেলা লেখার একটি নতুন আঙ্গিকের সাক্ষ্য দেয়, একটি কথ্যকে নিশ্চিত করার নিয়মগুলিকে ভেঙে দেয়।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 | 31 | 32 | 33 | 34 | 35 | 36 | 37 | 38 | 39 | 40 | 41 | 42 | 43 | 44 | 45 | 46 | 47 | 48 | 49 | 50 | 51 | 52 | 53 | 54 | 55 | 56 | 58 | 59 | 60 | 61 | 62 | 63 | 64 | 65 | 66 | 67 | 68 | 69 | 70 | 71 | 72 | 73 | 74 | 75 | 76 | 77 | 78 | 79 | 80 | 81 | 82 | 83 | 84 | 85 | 86 | 87 | 88 | 89 | 90 | 91 | 92 | 93
  • বইপত্তর | ২৯ অক্টোবর ২০২২ | ৮৭৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন