এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ধর্ম, মৌলবাদ ও আমাদের ভবিষ্যৎ : কিছু যুক্তিবাদী চর্চা

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৮৫৮১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ইসলাম সম্পর্কে আলাদা করে দু-চার কথা

    মৌলবাদ নিয়ে এই ধরনের একটা লেখায় যদি কেউ ঘোষণা করেন যে, এইবার ইসলাম নিয়ে আলাদা করে কিছু বলা হবে, তখন পাঠকের সে নিয়ে একটা প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে। কাজেই, এখানে গোড়াতেই সে ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে বলে রাখা দরকার, না হলে পাঠক হয়ত বিভ্রান্ত ও ক্ষুব্ধ হবেন। সম্ভাব্য প্রত্যাশাটি এই রকম যে, মৌলবাদের স্বরূপ নিয়ে যখন চর্চা হচ্ছে, এবং তার মধ্যেই আলাদা করে ইসলাম নিয়ে চর্চার ঘোষণা হচ্ছে, তখন নিশ্চয়ই দেশে দেশে ইসলামীয় মৌলবাদের উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরণ পাওয়া যাবে এখানে, বিভিন্ন স্থান-কালে তার সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ বিশেষ বৈচিত্র্যের উল্লেখ পাওয়া যাবে, এবং অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে তার মিল ও অমিল এবং তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিষয়ক অনুসন্ধান ও তার ফলাফলও পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এখানে তা করতে পারলে ভালই হত, কিন্তু তার উপায় নেই। সেটা করতে গেলে আগে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মৌলবাদের কার্যকলাপ নিয়ে একটা সুনির্দিষ্ট ও বিস্তারিত আলোচনা সেরে রাখতে হত, তবেই তার প্রেক্ষিতে ইসলামীয় মৌলবাদের বৈশিষ্ট্যগুলো স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারত। দুঃখের বিষয়, সে পরিসর এখানে ছিল না, এখানে তো এতক্ষণ মৌলবাদ নিয়ে শুধু কতকগুলো অতি সাধারণ কথাই বলেছি। বলে রাখা দরকার, এখানে আমি সরাসরি সেইসব নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব না, যদিও যা আসলে বলব তার মধ্যে এ বিষয়ে আমার মতামত ও চিন্তাভাবনারও কিছু ইঙ্গিত হয়ত মিলবে। এখানে আমি মূলত কথা বলব ইসলাম ধর্ম ও সংশ্লিষ্ট মৌলবাদ প্রসঙ্গে আমাদের সমাজের মূলস্রোত ধ্যানধারণা নিয়ে, এবং তার ঠিক-বেঠিক নিয়েও। এ নিয়ে কথা বলব কারণ, আমার ধারণা, ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে যাঁরা ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁদের এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবার কোনও উপায় নেই।
     
    ওপরে বলেছি, যাঁরা ধার্মিক নন বরঞ্চ ‘ধর্ম’ জিনিসটার সমালোচক, তাঁদের মধ্যে ইসলাম নিয়ে দু রকমের ভাবনা বেশ পরিচিত। অনেকে মনে করেন, এই ‘মৌলবাদ’ সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে শুধুই ইসলামের সমস্যা, আর কারুরই নয় --- ধর্মের নামে ফতোয়াবাজি আর মারদাঙ্গা মূলত মুসলমানেরাই করছে। অন্যদের যদি আদৌ কিছু সমস্যা থেকেও থাকে, তো সেটা শুধু ইসলামি জঙ্গিপনার প্রতিক্রিয়া মাত্র। আবার, এ অবস্থানটি অন্য অনেকের দুশ্চিন্তারও কারণ। ইসলামি জঙ্গিপনার বিপদ স্বীকার করেও তাঁরা মনে করেন যে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নির্দোষ ও নিরীহ আম মুসলমানের ঢালাও খলনায়কীকরণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো হচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষ ও হিংস্রতা। প্রথম ভাবনাটি ভুল, কেন তার কিছু ব্যাখ্যা নিচে আছে।
     
    আর ওই দ্বিতীয় প্রকারের যে দুশ্চিন্তা, আমি এবং আমার মত অনেকেই যার শরিক, তার এক প্রতিনিধি-স্থানীয় দৃষ্টান্ত আমার হাতে এসেছে কয়েকদিন আগে, আমার এক তরুণ বন্ধুর সাথে ফেসবুকীয় কথোপকথনে। তিনি কে, সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না, কিন্তু তিনি আমাকে যে সব প্রশ্ন করেছেন তা বোধহয় অতিশয় প্রাসঙ্গিক। এখানে সেগুলো হুবহু উদ্ধৃত করলে হয়ত আমাদের আলোচ্য প্রশ্নগুলোকে সুনির্দিষ্ট আকার দিতে সুবিধে হবে। অবশ্য, এখানে উদ্ধৃত প্রত্যেকটি প্রশ্নগুলোর সুনির্দিষ্ট ও নিষ্পত্তিমূলক উত্তর দেওয়া এ লেখার উদ্দেশ্য ততটা নয়, যতটা হল মূল প্রশ্নগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমস্যাটাকে আরেকটু স্পষ্ট করে তোলা। নিচে রইল সেই তরুণ বন্ধুর দুশ্চিন্তা-জারিত প্রশ্নগুলো।
     
    দাদা,

    একটা বিষয় একটু বিস্তারিত জানতে চাই আপনার কাছে। আপনি যদি সময় করে একটু ডিটেইলসে উত্তর দেন, খুব উপকৃত হই। অনেকদিনই এটা আপনাকে জিজ্ঞেস করব করব ভেবেছি, কিন্তু করা হয়নি, কারণ বিষয়টা একটু সেন্সেটিভ, আর প্রশ্নটা একটু বিস্তারে করতে হবে।

    ছোটবেলা থেকেই (ক্লাস ওয়ান থেকে) আমি দেখে এসছি, আমার পরিমণ্ডলে শুধুমাত্র ধর্মে মুসলিম হওয়ার জন্য মানুষকে সন্দেহের চোখে, বিদ্বেষের চোখে দেখা হয়। ক্রিকেটে পাকিস্তান জিতলে "কীরে, খুব আনন্দ বল!" বলে টন্ট কাটা হয়, কেবল নাম দেখে বাড়িভাড়া দিতে অস্বীকার করা হয়, এমনকি মুসলিম ছাত্র ক্লাসে ভাল রেজাল্ট করলেও "আশ্রম থেকে শেষে মুসলিম ফার্স্ট হবে" এরকম কথা খোদ টিচারের মুখেই শুনেছিআমি ঘটনাক্রমে মুসলিম পরিবারে জন্মাইনি, কিন্তু একদম ছোটবেলা থেকেই আমার মুসলিম বন্ধু বা প্রতিবেশীদের এভাবে সামাজিক হেট ক্যাম্পেনিং এর মুখে পড়াটা ভীষণ দুঃখজনক লাগে। এই খারাপ লাগাটা ক্লাস ওয়ান থেকেই শুরু হয়েছিল, তো তখন তো আমি ধর্ম ভাল না খারাপ, যুক্তিবাদ ভাল না খারাপ, এতকিছু তো বুঝতাম না।

    এখন মুসলিমবিদ্বেষকে যারা জাস্টিফাই করে, তাদের থেকে যে যুক্তিগুলো উঠে আসে, সেগুলো -

    ১) আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?

    ২) "ওরা" (মুসলিমরা) সংখ্যায় বাড়লেই ইসলামিক রাষ্ট্র চায়, সংখ্যায় কমলেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চায়।

    ৩) সব ধর্মে সংস্কার হয়েছে, কিন্তু "ওরা" এখনও মধ্যযুগেই পড়ে আছে।

    ৪) সব ধর্মেই বহুবিবাহ বন্ধ হয়েছে, কিন্তু "ওদের ধর্মে" বহুবিবাহ আজও জায়েজ, ওদের ধর্মে নারীর অবস্থা সবচাইতে খারাপ।

    ৫) "ওরা" নিজেদের বাঙালি মনে করে না, মননে চিন্তনে আরব, ওদের কাছে ধর্মই সব।

    ৬) ধর্মের নামে মানুষ হত্যা "ওদের ধর্মের মত কোন ধর্মই করেনি।"

    ৭) "ওদের" বাড়াবাড়ির জন্যই বিজেপির মত দলের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, হিন্দু মৌলবাদ ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল।

    ইত্যাদি ইত্যাদি। আপাতত এই কটাই মনে পড়ছে।

    এখন আমার প্রশ্ন

    ১) মুসলিমবিদ্বেষীদের এই দাবিগুলো কি তথ্যগতভাবে সত্যি?

    ২) সত্যিই কি ইসলাম আর পাঁচটা ধর্মের থেকে ব্যতিক্রমী ভায়োলেন্ট? এখন তো যুক্তি, তথ্য, পরিসংখ্যানের বিভিন্ন মেথডলজি দিয়ে অনেক বিষয় কম্পারেটিভ স্টাডি করা যায়। "ইসলাম অন্য পাঁচটা ধর্মের থেকে ভায়োলেন্ট" - এই বিষয়টা কি যুক্তি, তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা যায়? মানে আমার প্রশ্ন, দাবিটার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু?

    ৩) ধরে নিলাম, ইসলাম সবচাইতে ভায়োলেন্ট ধর্ম। কিন্তু তাতে করেই কি মুসলিমবিদ্বেষ জায়েজ হয়ে যায়?

    ৪) একজন নাস্তিক হিসাবে মুসলিম সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার হরণ করা হলে তার প্রতিবাদ করা কি অন্যায়?

    ৫) হিন্দু মৌলবাদ কি সত্যিই ইসলামিক মৌলবাদের প্রতিক্রিয়ার ফসল? ইসলামিক মৌলবাদ না থাকলে সত্যিই কি হিন্দু মৌলবাদ বলে কিছু থাকত না?

    ৬) আইসিস বা তালিবানের মত মুসলিম লিগ বা বর্তমানে মিমকে কি মৌলবাদী বলা যায়? নাকি "সাম্প্রদায়িক, কিন্তু মৌলবাদী নয়"-এমনটা বলা উচিত?

    আমার প্রশ্ন করার মূল কারণটা কিন্তু কোনভাবেই ইসলামকে ডিফেন্ড করা বা তার ভয়াবহতাকে লঘু করা নয়। আমিও ধর্মহীন সমাজের স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মত ইসলামের অবসানও আশা করি।

    কিন্তু মধ্যবিত্ত শিক্ষিত স্তরে ইসলামের সমালোচনাটা যেভাবে হয়, তার টোনটা ঠিক যুক্তিবাদের নয়, টোনটা বিদ্বেষের। এখন রিলিজিয়াস ক্রিটিসিজমকে ঢাল করে বুঝে বা না বুঝে অনেক প্রগতিশীল মানুষও বিদ্বেষের টোন ব্যবহার করছেন। এটা খুব আশঙ্কার।

    এখন, এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটাকে আলাদা করে উত্তর দেবার চেষ্টা না করে বরং এ প্রসঙ্গে কতকগুলো সাধারণ কথা ভেবেচিন্তে দেখি। তাতে করে সমাধান না আসুক, অন্তত সমস্যাটার চেহারাটা আরেকটু স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠতে পারে কিনা, দেখা যাক। হতে পারে, ভাবতে গিয়ে হয়ত ওপরের দু-একটা প্রশ্ন শেষতক বাদই পড়ে গেল, বা উল্টোভাবে, যে প্রশ্ন এখানে নেই তেমন কিছু এসে কথার মধ্যে ঢুকে পড়ল।

    প্রথমেই বলা দরকার, অনেকে আধুনিক মৌলবাদী উত্থানকে মুসলমান জঙ্গি উত্থানের সঙ্গে এক করে দেখেন, যা মোটেই সঠিক নয়। বর্তমান পৃথিবীর প্রধান ধর্মীয় ধারাগুলোর সবকটির মধ্যেই মৌলবাদী উত্থান ঘটেছে, বিভিন্ন মাত্রা, ভঙ্গী ও ধরনে। আমেরিকায় খ্রিস্টান মৌলবাদীদের কথা আমরা জানি, জানি ইসরায়েলের ইহুদী মৌলবাদীদের কথা, জানি ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের কথা, এবং জানি এই ভারতেই আশির দশকে তেড়েফুঁড়ে ওঠা শিখ মৌলবাদীদের কথাও --- যাদের হাতে ভারতের এক প্রধানমন্ত্রী নিহত হয়েছিলেন। ‘অহিংসার ধর্ম’ বলে কথিত বৌদ্ধধর্মও এ প্রবণতার বাইরে নয় মোটেই। থাইল্যান্ড, বর্মা ও শ্রীলঙ্কায় বৌদ্ধ ধর্মের তরফেও জঙ্গি প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। আজ অনেকেরই হয়ত আর মনে নেই, দুহাজার এক সালের কুখ্যাত ‘নাইন ইলেভেন’-এর ঘটনার আগে পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় নাশকতার ঘটনা বলে ধরা হত উনিশশো পঁচানব্বই সালের দুটি ঘটনাকে। তার একটি ঘটেছিল আমেরিকার ওকলাহোমা সিটি-র ‘ট্রেড সেন্টার’-এ, যাতে বিস্ফোরক-ভর্তি ট্রাক দিয়ে ওই ভবনটিতে ধাক্কা মেরে প্রায় দেড়শো লোকের প্রাণনাশ করা হয়েছিল, এবং সেটা ঘটিয়েছিল কতিপয় খ্রিস্টান মৌলবাদী। অন্যটি ঘটেছিল জাপানে, যেখানে পাতাল রেলের সুড়ঙ্গে বিষাক্ত সারিন গ্যাসের কৌটো ফাটিয়ে দেওয়া হয়, তাতে বিষাক্ত গ্যাসে সরাসরি যত না মারা যায় তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এবং গুরুতরভাবে জখম হয় সুড়ঙ্গের ভেতরে আতঙ্কগ্রস্তদের দৌড়োদৌড়িতে পদপিষ্ট হয়ে --- এবং সেটা ঘটিয়েছিল কট্টরপন্থী বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র উপগোষ্ঠী। আমরা বৌদ্ধধর্মটা অন্তত অহিংস বলে জানতাম, তাই না? তার দু বছর আগে উনিশশো তিরানব্বই সালে ভারতে সংঘটিত কুখ্যাত ‘বম্বে বিস্ফোরণ’ অবশ্যই একটি বৃহৎ নাশকতা, এবং সেটা ঘটিয়েছিল মুসলমান জঙ্গিরাই। কিন্তু, মুসলমান মৌলবাদীদের বক্তব্য অনুযায়ী, সেটা ছিল তার এক বছর আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রতিক্রিয়া। বলা বাহুল্য, এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনাটিকেও আবার মুসলমানদের অত্যাচারের প্রতিক্রিয়া বলেই দেখানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, সেটা কোনও সাম্প্রতিক ‘অত্যাচার’-এর প্রতিক্রিয়া ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীদের নিজেদের দাবি অনুযায়ীই, এটা নাকি মোগল সম্রাট বাবরের তরফে ঘটে যাওয়া পাঁচশ বছরের পুরোনো এক অন্যায়ের প্রতিকার মাত্র! এবং, এই বাবরি মসজিদের ধ্বংসও আবার এ দেশে ধর্মীয় নাশকতার প্রথম ঘটনা নয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও নয়। এ দেশে আজ পর্যন্ত ধর্মীয় নাশকতার সবচেয়ে বড় ঘটনা বলে যদি কোনও বিশেষ ঘটনাকে ধরতেই হয়, তো সেটা সম্ভবত উনিশশো চুরাশি সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধিকে হত্যা করার ঘটনা। সেটা মুসলমানেরা ঘটায়নি, ঘটিয়েছিল শিখ মৌলবাদীরা।

    ধর্মের সমালোচনা যে আধুনিক পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কাজ, তাতে সন্দেহ নেই। সমালোচনা মানে সব ধর্মেরই সমালোচনা, ইসলামেরও।  কিন্তু, ইসলাম ধর্মের সমালোচনায় একটি ভুল আমরা প্রায়শই করে থাকি। আমরা বলি, ইসলাম ধর্ম (এবং সেইহেতু ওই ধর্মাবলম্বীরাও) তো হিংস্র হবারই কথা, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার উপাদান খুব বেশি আছে। হয়ত সত্যিই আছে, কিন্তু যুক্তিটা তা সত্ত্বেও ভুল, এবং দুটো দিক থেকেই ভুল। কারণ, প্রথমত, সব ধর্মশাস্ত্রেই হিংসার উপাদান কমবেশি আছে। এবং দ্বিতীয়ত, যে ধর্মের শাস্ত্রে হিংসার উপাদান কিছু কম আছে সে ধর্মগোষ্ঠীর মানুষের আচরণে হিংসা কম থাকবেই --- এ প্রত্যাশার ভিত্তিটাও বোধহয় খুব পোক্ত নয়।
     
    হিংস্রতার বর্ণনা ও তার নৈতিক সমর্থন হিন্দু শাস্ত্রগুলোতে কোরানের চেয়ে কিছু কম নেই। কম নেই বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টেও, যদিও, হয়ত বা সত্যিই কিছু কম আছে নিউ টেস্টামেন্টে।  আবার, শাস্ত্রগ্রন্থে হিংস্রতার বর্ণনা কম থাকলেই যে ধার্মিকেরা কিছু কম হিংস্র হবেন, এমন নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। যুদ্ধলিপ্সা, হত্যা এবং হিংস্রতায় যিনি প্রবাদপ্রতিম, সেই চেঙ্গিস খান কিন্তু মোটেই মুসলমান ছিলেন না, 'খান' পদবী দেখে যা-ই মনে হোক।  খ্রিস্টানরা ষোড়শ-সপ্তদশ শতক জুড়ে আমেরিকাতে স্থানীয় অধিবাসীদের বিরুদ্ধে যেভাবে হত্যালীলা চালিয়েছে নিউ টেস্টামেন্টের যাবতীয় ক্ষমার বাণী সত্ত্বেও, তা ইতিহাসে বিরল। মধ্যযুগের শেষে এবং আধুনিক যুগের গোড়ায় 'ক্ষমাশীল' খ্রিস্টানদের ডাইনি পোড়ানোর হিড়িক দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠেন না, এমন কেউই কি আছেন এ যুগে? 'ইসলামিক স্টেট' তার ঘোষিত 'বিধর্মীদের' হত্যা করে হত্যার উদ্দেশ্যেই, বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে, এবং সেটা সারা জগতের লোককে ডেকে দেখানোর জন্যেও বটে। দেখ হে, আমরা কত ভয়ঙ্কর, কত বড় বীর, এই রকম একটা ভাব। কিন্তু মধ্যযুগের খ্রিস্টানরা ডাইনি মারত ভয়ঙ্কর যন্ত্রণা দিয়ে, এবং যন্ত্রণা দেওয়াটাই সেখানে মূল উদ্দেশ্য, যাতে অকথ্য অত্যাচার করে তার মুখ থেকে অন্য আরেক ‘ডাইনি’-র নাম বার করে আনা যায়। এই কাজটির জন্য তারা বিচিত্র ও বীভৎস সব কলা-কৌশল ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করেছিল। কাজেই, বিশেষ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় হিংস্রতার সঙ্গে তার শাস্ত্রীয় অনুমোদনের একটা সহজ সরল সম্পর্ক ধরে নেওয়াটা বোধহয় সব সময় খুব নিরাপদ নয়।

    মুসলমানদের হিংস্রতার মতই আরেকটি বাজে গল্প আছে মুসলমানদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে। মুসলমানদের হুহু করে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং দ্রুত তারা হিন্দুদেরকে ছাপিয়ে গিয়ে গোটা দেশটাকে দখল করে ফেলবে, এই মিথ্যে আতঙ্কটা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির প্রচারের অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু, বহু মানুষই যা সরলমনে বিশ্বাস করেন। এখানে বলে নেওয়া দরকার, মুসলিম জনসংখ্যা যে বাড়ছে এবং তার হার যে হিন্দুদের চেয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বেশিই বটে, এটা কিন্তু মিথ্যে নয়। মিথ্যে হল এই প্রচারটা যে, এইভাবে বাড়তে বাড়তে হিন্দুদের চেয়ে তাদের সংখ্যা নাকি বেশি হয়ে যাবে, এবং তারাই দেশটাকে গ্রাস করে ফেলবে। আসলে ঘটনা হল, সব ধর্মের জনসংখ্যাই বাড়ছে, এবং সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সব দেশেই সংখ্যাগুরুদের চেয়ে সামান্য একটু বেশি হয়, যদি সেখানে সংখ্যালঘু নিধন না চলে, এবং বিশেষত যদি সে সংখ্যালঘুরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া হয়। জনসংখ্যাবৃদ্ধির আসল যোগটা ধর্মের সঙ্গে নয়, অর্থনীতির সঙ্গে। হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যেও গরিবদের জনসংখ্যাবৃদ্ধি যদি আলাদা করে হিসেব করা হয় তো দেখা যাবে যে তা সচ্ছল হিন্দুদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পন্নরা ভাল রোজগার করতে চায়, ভালভাবে থাকতে চায়, এবং সন্তানের জীবনযাপনও যাতে সে রকমই হয়, সে ব্যবস্থা করতে চায়। তারা জানে যে সেটা করতে গেলে সন্তানকে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া দরকার, তার পেছনে ভাল করে যত্ন ও খরচাপাতি করা দরকার, এবং সেটা করার ক্ষমতাও তাদের আছে। ছেলেপুলে বেশি হলে তা সম্ভব নয়, এবং তাতে করে বাচ্চার মায়ের স্বাস্থ্যের বারোটা বাজবে, মা ঘরের বাইরে গিয়ে পেশাগত কাজকর্ম করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে না। ফলে, তারা বেশি সন্তান একদমই চায় না। উল্টোদিকে, গরিবরা এত কথা জানেও না আর তাদের সে ক্ষমতাও নেই। ফলে তারা যত বেশি সম্ভব সন্তান চায়, সেটা মায়ের স্বাস্থ্যহানি ও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে হলেও। গরিবরা জানে তাদের সন্তান দুধেভাতে থাকবে না, এবং শেষপর্যন্ত কোনও শ্রমসাধ্য কাজেই যোগ দেবে যাতে শিক্ষা বা 'স্কিল' সেভাবে লাগে না। ফলে, সন্তানের সংখ্যা বেশি হলে দুরবস্থা আর অযত্নের মধ্যেও হয়ত রোগভোগ মৃত্যু এড়িয়ে কেউ কেউ টিঁকে যাবে, আর পরিশ্রম করে পরিবারের আয় বাড়াতে পারবে, যৎসামান্য হলেও। অথচ এদেরই যখন অর্থনৈতিক উন্নতি হবে, তখন এরা মেয়েদেরকে পড়াশোনা শেখাতে চাইবে, ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে সন্তানকে কেরানি-আমলা-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-উকিল এইসব বানাতে চাইবে, ফলে স্বল্পসংখ্যক সন্তান চাইবে, এবং মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করবে। একটু ভাল করে খোঁজখবর করলেই জানা যাবে, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ঘটছে কিন্তু আসলে ঠিক তাইই, হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের ক্ষেত্রেই। এবং, মুসলমানরা পিছিয়ে আছে বলেই তাদের অগ্রগতিও দ্রুততর। তাদের জন্মহারের বৃদ্ধি কমছে কিছু বেশি দ্রুতলয়ে। এভাবে চললে আর দেড় দুই দশক পরেই হয়ত হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে, এবং মুসলমানদের ভারত দখলের কুৎসিত অশিক্ষিত গল্পতেও তখন আর কেউই পাত্তা দেবে না। ইতিহাসের স্বাভাবিক গতি এই দিকেই।
     
    এখানে 'অগ্রগতি' বলতে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার কমিয়ে আনার কথা বুঝিয়েছি। মুসলমানদের ক্ষেত্রে এই কমিয়ে আনাটা হিন্দুদের চেয়ে বেশি হারে ঘটছে (বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া মানে জনসংখ্যা কমে যাওয়া নয় কিন্তু, এ হার কমতে কমতে শূন্যের নিচে নামলে তবেই জনসংখ্যা কমতে শুরু করবে)। এই কমে আসাটা উন্নয়নের পরোক্ষ সূচক। এভাবে চলতে থাকলে কিছুদিন বাদে যে হিন্দু-মুসলমানের জনসংখ্যাবৃদ্ধির হার সমান হয়ে যাবে তাতে সন্দেহ নেই।  পিছিয়ে আছে বলেই অগ্রগতি বেশি তাড়াতাড়ি হচ্ছে --- এ কথাটা হয়ত অনেককে বিস্মিত করতে পারে, কিন্তু কথাটা বলার কারণ আছে। নিশ্চয়ই জানেন, ভারত চিন ব্রাজিলের মত একটু এগিয়ে থাকা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোর থেকে বেশি। এর কারণ হচ্ছে, একবার উন্নত হয়ে গেলে একই গতিতে আরও আরও উন্নত হতে থাকাটা ক্রমশই আরও বেশি বেশি করে কঠিন হয়ে ওঠে, তাই উন্নয়নের প্রথম দিকে বৃদ্ধির যে গতি থাকে পরের দিকে আর তত গতি থাকে না। মুসলমানদের জনসংখ্যার ক্ষেত্রেও তাইই ঘটছে, এবং আরও ঘটবে (ও দুটোকে খুব নিখুঁতভাবে মেলানোর দরকার নেই, যদিও)।

    আমরা যারা এই বিষয়গুলোকে এইভাবে ভাবার চেষ্টা করি, তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আসে প্রায়শই, ফেসবুকে সে গর্জন রোজই শোনা যায়। এখন, এটা তো সত্যি কথাই যে, পশ্চিমবাংলার যুক্তিবাদীদের লেখালিখিতে, এবং যথারীতি আমার নিজের লেখাতেও, হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনাই বেশি আসে, মুসলমান মৌলবাদের কথা বাস্তবিকই আসে অনেক কম। ঠিক এই অভিযোগটি সেক্যুলারদের প্রতি হিন্দু মৌলবাদীরা করে থাকেন নিয়মিতই (বস্তুত, প্রত্যেক ধর্মের মৌলবাদীরাই তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী বা সমাজের সেক্যুলারদের প্রতি এই একই অভিযোগ করে থাকে)। কিন্তু একটু ভাবলে বুঝবেন, এটাই প্রত্যাশিত ও স্বাভাবিক। এবং, অন্যরকম কিছু হলেই বরং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও অসঙ্গত হত, এমন কি অন্যায়ও হত। কেন, তার একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশের রাষ্ট্র ও সমাজ যে মৌলবাদী হুমকিটির মুখোমুখি, সেটা তো হিন্দু মৌলবাদই, অন্য কোনও মৌলবাদ নয়। শিক্ষা-প্রশাসন-বিচারব্যবস্থার ধর্মীয়করণ, সংবিধানকে পাল্টে দেবার পরিকল্পনা, ভিন-ধর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, ধর্মের জিগির তুলে তার আড়ালে সরকারি সম্পত্তি পাচার --- এ সব তো মুসলমানরা করছে না, হিন্দুত্ববাদীরাই করছে। অতএব, তাদের মুখোশ খোলাটাই এখানে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। মুসলমান জঙ্গিরা নাশকতা ঘটালে তার মোকাবিলার জন্য পুলিশ-মিলিটারি আছে, কিন্তু নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসা মৌলবাদীদের রোখবার দায়িত্ব তো আর পুলিশ-মিলিটারি নেবে না, সেটা সাধারণ ভারতীয় নাগরিকের কাজ। আমি যে দেশে এবং যে ধর্মীয় সমাজের মধ্যে বাস করি, সেখানে যারা অন্ধত্ব ও হিংস্রতা ছড়াচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রকে বিনাশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই তো আমার পক্ষে স্বাভাবিক, তাই না? বাংলাদেশি মুক্তমনারা যদি মুসলমান ধর্ম ছেড়ে হিন্দুদেরকে গালি দিতে থাকতেন, বা বার্ট্র্যান্ড রাসেল যদি 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ ক্রিশ্চান' না লিখে 'হোয়াই আই অ্যাম নট আ হিন্দু' লিখে বসতেন, তাহলে যেমন উদ্ভট অসঙ্গত কাজ হত, এখানে আমরা হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলমান নিয়ে পড়লেও ঠিকই একই ব্যাপার হবে (যদিও বাংলাদেশি মুক্তমনারা ঠিক যা বলেন এবং যেভাবে বলেন, তার অনেক কিছুর সঙ্গেই আমার দ্বিমত আছে, তবে সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক না)। দ্বিতীয়ত, আমরা পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মুক্তমনা যুক্তিবাদী নাস্তিকেরা হিন্দু সমাজে জন্মেছি বলেই সে সমাজ ও তার ধর্ম শাস্ত্র রীতিনীতি আচার বিচার এইসব অনেক বেশি জানি, ফলে সে ব্যাপারে আমাদের সমালোচনা অনেক বেশি নিরেট, নির্ভুল এবং অর্থবহ হয়, যা ভিনধর্মী সমাজে যারা জন্মেছে তারা পারবেনা। ঠিক একই কারণে, মুসলমান সমাজ ও ধর্ম সম্পর্কে মুসলমান সমাজে জন্মানো যুক্তিবাদীদের সমালোচনা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ও ফলপ্রসূ হয়। যদিও, এর মানে মোটেই এই নয় যে এক ধর্মে জন্মানো লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করতেই পারবেনা --- যে কোনও মানুষের যে কোনও ধর্মের সমালোচনা করার অধিকার আছে, এবং করা উচিত। তবে কিনা, নিজের সমাজের অন্ধত্ব অযুক্তি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথমে সোচ্চার হওয়াটা যে কোনও মানুষেরই ‘স্বাভাবিক’ অধিকার, কর্তব্যও বটে।
     
    আচ্ছা, তা সে যা-ই হোক, মোদ্দা কথাটা তাহলে কী দাঁড়াল --- মুসলমানেরা ধর্মান্ধতায় অন্যদের চেয়ে এগিয়ে, না পিছিয়ে? এসব ঠিকঠাক বলতে গেলে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার নির্ভরযোগ্য ফলাফল চাই, না হলে সবটাই চায়ের দোকানের আড্ডা হয়ে যাবে। আপাতত আছে কি সে সব, আমাদের হাতে? সুখের বিষয়, সে সব আছে। এই কিছুদিন মাত্র আগেও সেভাবে ছিল না, কিন্তু এই একুশ শতকে বেশ ভালভাবেই আছে। বেশ কয়েকটি বিখ্যাত সংস্থা এখন মানুষের জীবনের নানা দিক নিয়ে প্রামাণ্য সমীক্ষা করে থাকে, তার মধ্যে ধর্মবিশ্বাসও পড়ে। এইসব সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বড় বড় বিশেষজ্ঞরা নানা গভীর গবেষণাও করে থাকেন, এবং তাতে তেমন চমকপ্রদ কোনও ফলাফল পাওয়া গেলে সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে সে নিয়ে আলোড়ন উঠে যায়। এই রকমই একটি সংস্থা হল ‘উইন গ্যালাপ’। তারা সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এক বিখ্যাত সমীক্ষা চালিয়েছিল ২০১২ সালে, তাতে বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য, ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা, এইসবের হিসেব ছিল। তাতে কি দেখা গেল? নিচে দেখে নিন ২০১২ সালের পৃথিবীজোড়া সমীক্ষার ফলাফল, সুন্দর করে সারণিতে সাজানো। এখানে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, নিজেকে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন অথচ ধার্মিক বলে দাবি করেন না --- এমন মানুষের অনুপাত মুসলমানদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি। কারা কবে সমীক্ষাটি করেছে, এবং তা কোন নথিতে প্রকাশিত, সব তথ্যই পাবেন এখানে।
     
     
    এবার একটি ইসলামীয় দেশকে নিয়ে ভাবা যাক, যেখানে প্রায় সর্বাত্মক মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং ইসলামীয় রাষ্ট্র আছে। ধরুন, ইরান। এই  দেশটা সম্পর্কে আপনি কী জানেন? জানি, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সকলেই একই কথা বলবেন। ছিয়ানব্বই দশমিক পাঁচ শতাংশ (সরকারি সেন্সাসের তথ্য অনুযায়ী) মুসলমান অধ্যুষিত একটি ধর্মান্ধ দেশ, যার মধ্যে আবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা শিয়া মুসলমানদের। কট্টর মৌলবাদীরা সেখানে দেশ চালায়, প্রশ্ন করলেই কোতল হতে হয়, মুক্তচিন্তা কল্পনাতীত। সম্প্রতি সেখানে হুলুস্থুলু ঘটে গিয়েছে, সে সব খবরাখবর আপনারা দেখেছেন। একটি মেয়েকে ইসলাম-সম্মত পোশাক না পরার অপরাধে সেখানে হত্যা করা হয়েছে, তাই নিয়ে প্রবল আন্দোলন হলে রাষ্ট্রের তরফে নেমে এসেছে দমন-পীড়ন, এবং সদ্য-সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপে সারা পৃথিবীর সামনে তার প্রতিবাদ করায় সে দেশের জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়কে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুদণ্ড। এখানে মৌলবাদের দাপটের ছবিটা একদমই স্পষ্ট, আবার গণমানুষের আপত্তিটাও খুব আবছা নয়।

    আসলে, এখানে ধর্মীয় রাষ্ট্রের দোর্দণ্ডপ্রতাপের তলাতেই লুকিয়ে আছে অন্য এক বাস্তবতা। নেদারল্যান্ডের একটি গবেষণা সংস্থা (GAMAAN), ইরানই যাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু, তারা ২০২০ সালে  ইরানে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে। সে সমীক্ষার ফলাফল যদি বিশ্বাস করতে হয়, তো সেখানে সাঁইত্রিশ শতাংশ মত লোক নিজেদের মুসলমান বলে দাবি করেন (শিয়া-সুন্নি মিলিয়ে), যাঁরা কোনও ধর্মীয় পরিচয় দিতে রাজি নন তাঁরা বাইশ শতাংশ, যাঁরা পরিষ্কারভাবে নিজেকে নাস্তিক-অজ্ঞাবাদী-মানবতাবাদী এইসব বলে পরিচয় দেন তাঁরা সব মিলিয়ে প্রায় সতেরো শতাংশ, যাঁরা নিজেকে শুধুই 'স্পিরিচুয়াল' বলেন তাঁরা প্রায় সাত শতাংশ, এবং বাকিরা আরও নানা বিচিত্র ধর্মের মানুষ। নিচের ছবি দুটোয় সমীক্ষার ফলাফল এক নজরে পাওয়া যাবে। হ্যাঁ বন্ধু, একুশ শতকে পৃথিবী বদলাচ্ছে, এবং হয়ত বিশ শতকের চেয়েও দ্রুত গতিতে! এবং, ইসলামীয় দেশগুলো কোনওভাবেই এ প্রবণতার বাইরে নয়। নিচে সে সমীক্ষার ফলাফল দেখুন, চিত্রাকারে।
     
     
    ধর্ম, ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, মৃত্যু-পরবর্তী জীবন, অবতার ইত্যাদি ধ্যানধারণা বিষয়ে ইরান-বাসীদের বিশ্বাস (বা অবিশ্বাস) ঠিক কী রকম, সে চিত্রও উঠে এসেছে সমীক্ষা থেকে। নিচে দেখুন।
     
     
     
    তাহলে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মুসলমানদের ধর্মপ্রীতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশের মধ্যে যেসব জনপ্রিয় ধ্যানধারণা আছে, তার সমর্থন এইসব সমীক্ষার ফলাফল থেকে মিলছে না মোটেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ইঙ্গিত এখান থেকে আমরা পাচ্ছি, সেটা সামগ্রিক বৈশ্বিক প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, নাকি একটা সম্পূর্ণ আলাদা উল্টোপাল্টা কিছু। সেটা বুঝতে গেলে বর্তমান শতকের বিগত কয়েকটি দশকে গোটা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি এক নজরে দেখে নেওয়া দরকার। এমনিতে সেটা একটু মুশকিল, কারণ, তার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংস্থার করা অনেকগুলো সমীক্ষা-কর্ম খুঁটিয়ে দেখে সেগুলোর প্রাসঙ্গিক ফলাফলটুকু বেছে নিয়ে তুলনা করতে হবে। সেইজন্যে, আমি যতটা পেরেছি সেগুলোকে সাজিয়ে একটা মাত্র সারণিতে নিয়ে এসেছি, তাতে পাঠিকের কিছু সুবিধে হবার কথা। সেটা নিচে দিলাম, দেখুন। সারণির কোন সংখ্যাটি কোন সংস্থার করা কবেকার সমীক্ষায় পাওয়া গেছে, সেটা ওখানেই দেওয়া আছে। প্রথম সংখ্যাটি অবশ্য কোনও সংস্থার তরফে দেওয়া নয়। এটি দিয়েছিলেন সমাজতত্ত্ববিদ ফিলিপ জুকারম্যান, তখন পর্যন্ত প্রাপ্য সমস্ত টুকরো টুকরো সমীক্ষার ফলাফল এক জায়গায় করে।
     
     
     
     
    এবার নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে, মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসের গতিপ্রকৃতি অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। আসলে, এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, সব ধর্মগোষ্ঠীর মধ্যেই ধর্মবিশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে আসার যে প্রবণতা রয়েছে, মুসলমানরা কোনও মতেই সে প্রবণতার বাইরে নয় (অবশ্যই, এ হিসেব সামগ্রিক ও বৈশ্বিক, এবং অঞ্চল ও অন্যান্য পরিস্থিতি-ভেদে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য আছে)।

    কেন এই জগৎজোড়া প্রবণতা? আমাদের স্বাভাবিক বুদ্ধি বলবে, সবই যুগের হাওয়া। মানে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গণতন্ত্র-মানবতাবাদ-যুক্তিবাদ এইসবের প্রভাবই এর কারণ। কথাটা সত্যি, কিন্তু সমাজবিদেরা এর চেয়েও বড় কারণ আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা আজ সুপ্রচুর তথ্য-যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, মানব সমাজের উন্নতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক বিপ্রতীপ। দেশের মাথাপিছু আয় বাড়লে, সমাজকল্যাণে সরকার বেশি বেশি খরচা করলে, অর্থনৈতিক অসাম্য কমলে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের হাল ভাল হলে ধর্মের রমরমা কমতে থাকে (এখানে আর বিস্তারে যাব না, যদিও আগে এ নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পরেও করব)। সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়ম মুসলমান সমাজের ওপরে প্রযোজ্য হবে না, এমনটা  ভেবে নেওয়ার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। ইরানে যা ঘটছে, সেটা সমাজ-বিকাশের এই সাধারণ নিয়মের চাপেই। নেটে একটু খোঁজাখুঁজি করলেই দেখতে পাবেন, ইরানের মাথাপিছু উৎপাদন ভারতের প্রায় আটগুণ, বাজেটের শতাংশ হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি খরচ প্রায় সাতগুণ এবং শিক্ষাখাতে তা দেড়গুণেরও বেশি, এবং নারী ও পুরুষ উভয়েরই আয়ু আমাদের থেকে ভাল (গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের দশা শোচনীয়, যদিও)। কাজেই, ইরানে মৌলবাদী রাজনীতি ও প্রশাসনের ওপর কেন গণ-অসন্তোষের চাপ আছে এবং পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে কেন তা ততটা নেই --- এইটা বুঝতে পারা খুব কঠিন না।

    বলা প্রয়োজন, সমাজ-বিকাশজাত এই চাপের খেলা সুস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান উন্নত পশ্চিমী দেশগুলোতেও, বিশেষত এই একুশ শতকে। এই সেদিন পর্যন্ত আমেরিকা আর আয়ার্ল্যান্ডে ধর্মবিশ্বাসের প্রাবল্য ছিল অন্যান্য উন্নত দেশের চেয়ে অনেক বেশি। ধার্মিক সমাজবিদেরা তাই দেখিয়ে বলতেন, অর্থনৈতিক উন্নতি হলেই ধর্মের রমরমা কমবে, এটা হচ্ছে গিয়ে প্রগতিবাদীদের বানানো একটা মিথ্যে কথা। কিন্তু সময় যতই গড়াচ্ছে ততই বিষয়টা জলের মত স্বচ্ছ হয়ে আসছে, এবং আপত্তি তোলবার পরিসর হয়ে আসছে অতিশয় সঙ্কুচিত। মার্কিন সমাজে ধর্মবিশ্বাসের পরিবর্তনটা দেখতে পাবেন এক নজরেই, নিচের লেখচিত্রে। লক্ষ করে দেখুন, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত আমেরিকাতে যখন খ্রিস্টানরা এসে ঠেকেছে ৮৫ শতাংশ থেকে ৬৯-এ, এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা যখন মোটের ওপর একই আছে, তখন ধর্মহীনদের শতকরা অনুপাত গিয়ে ঠেকেছে শূন্য থেকে একুশে (অন্য কিছু সমীক্ষায় এটি প্রায় তিরিশ বলে দেখানো হয়েছে, যদিও)।
     
     
     
    আর, এই শতকের প্রথম দশকে আয়ার্ল্যান্ড-বাসীর ধর্মবিশ্বাসে যা ঘটেছে, সেটা দেখে নিন নিচের সারণিতে। আয়ার্ল্যান্ড হল গোঁড়া ক্যাথোলিক অধ্যুষিত একটি দেশ। একটা উন্নত পশ্চিমী দেশের পক্ষে অবিশ্বাস্যভাবে, এই সেদিন পর্যন্তও এই দেশটিতে গর্ভপাত নিষিদ্ধ ছিল, এবং গর্ভপাতের দরকার পড়লে আইরিশ নারীদেরকে পার্শ্ববর্তী ব্রিটেনে গিয়ে হাজির হতে হত। তারপর উন্নত আধুনিক অর্থনীতির সঙ্গে রক্ষণশীল ধর্ম-সংস্কৃতির দীর্ঘ সংঘর্ষের ফলাফল তখনই সারা বিশ্বের নজরে এল, যখন দু হাজার আঠেরো সালে গর্ভপাত আইনসিদ্ধ হয়ে গেল (আয়ার্ল্যান্ড নিয়ে আমার আলাদা একটি লেখা ‘গুরুচণ্ডালি’-তে পাবেন)।
     
     
    বলা বাহুল্য, মোটের ওপর এই একই ঘটনা ঘটবার কথা মুসলমান-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও, এবং ঘটছেও তাইই। বেশ কয়েকটি ধর্ম-শাসিত রক্ষণশীল দেশে কমছে কঠোর ধর্মীয় বাধানিষেধ, বাড়ছে ধর্মহীনতা, এবং সাধারণ্যে কমছে ধর্মের প্রতি আনুগত্য, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই তা  এখনও স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। বিষয়টাকে যদি খুঁটিয়ে নজর করা হয়, তাহলে এমন অনেক কিছুই হয়ত জানা যাবে, যে ব্যাপারে আমরা আগে সচেতন ছিলাম না। যেমন, ইরান-ইরাক-আফগানিস্তান যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষ থেকে ধর্মীয় রাষ্ট্র হয়ে গেল, এবং যেভাবে তুর্কি দেশটিতে ক্রমেই শক্ত হচ্ছে মৌলবাদের মুঠি আর টলমল করছে ধর্মনিরপেক্ষতার আসন, সে নিয়ে আমরা প্রায়শই দুশ্চিন্তিত হই। ঠিকই করি। কিন্তু, আমরা কখনই খেয়াল করে দেখিনা যে, এই ধরাধামে একান্নটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে একুশটিতে কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ সরকারই চলছে (সে ধর্মনিরপেক্ষতার দশা প্রায়শই আমাদের চেয়ে খুব একটা ভাল নয় যদিও, তবে সেটা তো অন্য চর্চা)। এবং, ধর্মনিরপেক্ষীকরণের প্রক্রিয়া এখনও চালু, সে তালিকায় এই সেদিনও যুক্ত হয়েছে সুদান।

    তবুও প্রশ্ন আসতেই পারে, এবং আসবেও, জানা কথা। ওপরে উদ্ধৃত আমার তরুণ বন্ধুর ভাষায়, সে প্রশ্নটা এ রকম --- “আর কোন ধর্মে আইসিস, তালিবান, বোকোহারামের মত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন আছে?”। সত্যিই তো, প্রশ্ন হতেই পারে। ওপরে ব্যাখ্যা করেছি (এবং পূর্ববর্তী পর্বগুলোতেও), মৌলবাদী উত্থান সব ধর্মেই হয়েছে, শুধু ইসলামে নয়। এবং, জঙ্গি ক্রিয়াকলাপও কম বেশি হয়েছে সব ধর্মের তরফেই। সেই সত্যে ভর করে আমি হয়ত তর্ক করতে পারতাম, অন্যান্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে ইসলামের তফাতটা তাহলে গুণগত নয়, নিছকই পরিমাণগত। এরা কম, ওরা কিছু বেশি, এটুকুই মাত্র। কিন্তু, এ তর্ক শেষতক দাঁড়াবে না। পাথরের নুড়ির সঙ্গে পাথরের টিলার গুণগত পার্থক্যকে স্রেফ পরিমাণের দোহাই দিয়ে নস্যাৎ করাটা বোধহয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইসলামীয় জঙ্গিপনার নিবিড়তা, ঘনত্ব, প্রচণ্ডতা এবং আন্তর্জাতিকতা, এ সবকে নিছক কম-বেশির ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। যদি বলি, মধ্যপ্রাচ্যে একাধিক আধুনিক রাষ্ট্র থেকে খামচে নিয়ে একটা গোটা এবং আনকোরা নতুন ধর্মীয় রাষ্ট্র বানিয়ে তোলা, অনেকগুলো দেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার উল্টে দিয়ে মৌলবাদী রাজত্ব কায়েম করা, প্রায় সবকটি মহাদেশে বড়সড় নাশকতা চালানোর মত সংগঠন তৈরি করতে পারা --- এত সব শুধুই জঙ্গিপনার কম-বেশির ব্যাপার, তার মধ্যে আলাদা করে বলার মত গুরুত্বপূর্ণ গুণগত বৈশিষ্ট্য কিছুই নেই --- তাহলে অবশ্যই বোকামি হবে, বাস্তবকে অস্বীকার করার বোকামি। কাজেই, জঙ্গিপনার এই ভয়ঙ্কর নিবিড়তা আর ব্যাপকতাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে স্বীকার করে নেওয়াই ভাল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে, সেটা মেনে নিলেও আসল সমস্যাটা রয়েই যায়। সব মুসলমানই তো আর মৌলবাদী জঙ্গি নন, তার এক অতি ক্ষুদ্র অংশই কেবল মৌলবাদী জঙ্গি। কাজেই, এই জঙ্গিপনাকে ইসলামীয় মৌলবাদের একটি স্বতন্ত্র গুণগত বৈশিষ্ট্য বলে মেনে নিলেও প্রশ্ন থাকে, ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটির কোনও মৌল উপাদান থেকেই কি এই বৈশিষ্ট্যটি উৎসারিত হচ্ছে, নাকি, মুসলমান অধ্যুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রগুলোর  কোনও বিশেষ ঐতিহাসিক পরিস্থিতিই এ বৈশিষ্ট্যের নির্মাতা?
     
    কেউ কেউ এ প্রশ্নের উত্তর খুব দ্রুত দিয়ে ফেলতে ভালবাসেন। তাঁরা বলেন, এ বৈশিষ্ট্য অবশ্যই ‘ইসলাম’ নামক ধর্মটিরই মৌল উপাদান থেকে নিঃসৃত, কারণ, ইসলামীয় ধর্মশাস্ত্রে হিংসার অনুমোদন আছে। এ যুক্তিটি যে ভুল, সে আলোচনা ওপরে করেছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর তবে কীভাবে খোঁজা যায়? আজকের দিনে বিজ্ঞানে, বিশেষত সমাজবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এ ধরনের প্রশ্নের সমাধানের জন্য যা করা হয় তাকে বলে ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ এক্সপেরিমেন্ট’। সমাজের ওপর তো আর পরীক্ষা চলবে না, অতএব সেখানে দরকার ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণ। অর্থাৎ, পুরোপুরি একই রকম করে তৈরি (বা সংগ্রহ) করে রাখা দুটি ক্ষেত্রের মধ্যে একটিতে একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক উপাদান যোগ করে (বা একটি সুনির্দিষ্ট নির্ধারক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে), এবং অপরটিতে তা না করে, শুধুমাত্র প্রথম ক্ষেত্রটিতে কোনও এক নির্দিষ্ট প্রত্যাশিত ফলাফল এলো কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা, যাতে ওই নির্দিষ্ট উপাদানটির (বা প্রক্রিয়াটির) সঙ্গে ওই ফলাফলটির কার্যকারণ সম্পর্ক সন্দেহাতীতভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়। কোনও ওষুধের কার্যকারিতা প্রমাণের জন্য যেমন একই ধরনের দু দল রুগির মধ্যে একদলকে সে ওষুধ দিয়ে এবং অন্যদলকে তা না দিয়ে পরীক্ষা করা হয় যে দ্বিতীয় দলের তুলনায় প্রথম দলের কিছু বেশি উপকার হল কিনা, এও তেমনি। মনে করুন প্রশ্ন উঠল যে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামের যে মৌলবাদী উত্থান দেখা গেল, ইরাকের খনিজ তেল এবং আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানগত সামরিক গুরুত্ব না থাকলেও কি তা ঘটতে পারত, শুধুমাত্র ইসলামীয় শাস্ত্র, সমাজ ও সংস্কৃতির একান্ত নিজস্ব আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যের কারণেই? এ প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ উত্তর বেরিয়ে আসতে পারে একমাত্র সেই ধরনের পদ্ধতিতেই, অর্থাৎ, ‘কন্ট্রোল্‌ড্‌ অবজার্ভেশন’ বা সুনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। যেখানে ইসলামের প্রবল প্রভাব আছে অথচ কোনও বড়সড় অর্থনৈতিক বা সামরিক লাভালাভের পরিস্থিতি নেই, সে রকম সমস্ত জায়গাতেও কি মৌলবাদী জঙ্গিপনার উদ্ভব ঘটেছে? আবার, যেখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি আছে অথচ ইসলাম নেই, সে রকম কোনও জায়গাতেই কি জঙ্গি আন্দোলনের উদ্ভব ঘটেনি? এই ধরনের অনুসন্ধান হয়ত আমাদেরকে এ ধরনের প্রশ্নের বস্তুনিষ্ঠ উত্তরের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারত। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রসঙ্গে এ রকম গবেষণার কথা আমাদের জানা নেই।
     
    এই যে মুসলমান মৌলবাদের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ইসলামের আভ্যন্তরীণ কারণকে পুরোপুরিই দায়ী করা, ওপরের দুই অনুচ্ছেদে যার কথা বললাম, এর ঠিক উল্টো প্রবণতাটা হচ্ছে এর পেছনে ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ’ (বা আরও সাধারণভাবে ‘পশ্চিমী চক্রান্ত’) বা ওই জাতীয় ইসলাম-বহির্ভূত কোনও কিছুকে পুরোপুরি দায়ী করা (এবং সেইহেতু ইসলামীয় সমাজ ও সংস্কৃতির আভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্যগুলোকে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক বলে সাব্যস্ত করা)। মুসলিম মৌলবাদের উত্থানের পেছনে পাশ্চাত্য শক্তি, বিশেষত আমেরিকার ভুমিকা অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই আলোচনা করা উচিত। কিন্তু, বিশ শতকের পৃথিবীর ইতিহাসের সমস্ত ঘটনাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অঙ্গুলিহেলনে ঘটছে, চোখ বুজে এইটা বলে দিলে আপাতদৃষ্টিতে হয়ত তাকে নিন্দা করা হয়, কিন্তু আসলে শেষ বিচারে তার ক্ষমতাকে অনেকখানি বাড়িয়ে দেখা হয়। আমেরিকা (বা সাধারণভাবে ‘পশ্চিম’) মুসলমান দেশগুলোর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, শুধু এটুকু বললে প্রায় কিছুই বলা হয় না --- আসল প্রশ্ন হচ্ছে তারা তা পারল কী করে --- পৃথিবীর সব জায়গাতেই যে তারা যা চেয়েছে তাইই পেরেছে এমন তো আর নয়। মুসলমান সমাজ ও দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট বিন্যাস ও ঐতিহাসিক পরিস্থিতি, বিকাশের সুনির্দিষ্ট অবস্থা, তাদের সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্তর্দ্বন্দ্ব, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তাদের তরফে নানা মতাদর্শ ও গোষ্ঠী-পরিচিতি নির্মাণের খেলা, এবং কখন ঠিক কোন তাড়নায় তারা কোন বৃহৎ শক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব বা শত্রুতার সম্পর্কে আবদ্ধ হচ্ছে, আর কোন বৃহৎ শক্তিই বা তাদেরকে সামলানো বা ব্যবহার করার জন্য ঠিক কী চাল চালছে --- এই সবের ভাল বিশ্লেষণ ছাড়া বিষয়টা ঠিকভাবে বোঝাই যাবে না। তাছাড়া, এই দেশগুলোতে 'সেক্যুলার' শাসন প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও প্রায়শই শাসকরা স্বৈরাচারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে কেন, এবং, কেনই বা মৌলবাদীরা বারবার তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জনগণের পাশে থাকার ভাণ করতে পারে, এটাও এ প্রসঙ্গে গভীরভাবে বোঝার বিষয়।  

    বলা বাহুল্য, এ সব প্রশ্নে যথার্থ ও যথেষ্ট বিশ্লেষণ এবং নিষ্পত্তিমূলক উত্তর এখনও আসেনি সমাজবিজ্ঞানীদের তরফ থেকে। যতদিন তা না আসে, ততদিন আমরা কী করতে পারি? ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারি, বিষয়টি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যা জানা গেছে সে সব জানার চেষ্টা করতে পারি, যুক্তিসম্মত ও বস্তুনিষ্ঠ চিন্তার অভ্যাস করতে পারি …………… আর কিছু পারি কি?

    হ্যাঁ, পারি বোধহয়। মন থেকে অকারণ সন্দেহ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ এইসব চিহ্নিত করে তা বর্জন করার অনুশীলনটা চালিয়ে যেতে পারি।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ | ৪৮৫৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ২২:২০518637
  • হ্যাঁ গুরুবাবু, এইসব গল্পগুলো আমাদের বাল্য ও কৈশোর সমৃদ্ধ করে রেখেছিল। গল্পের মিনারে পাখি, মা এক নির্ভীক সৈনিক, সোনাঝরা গল্পের ইনকা, আজব দেশের অবাক মেয়ে ইত্যাদি
  • Debasis Bhattacharya | ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৪১518639
  • শৈলেন ঘোষের 'ক্ষুদে যাযাবর ইসতাসি' পড়েছেন কেউ? রেড ইন্ডিয়ান ট্রাইবদের গল্প। পড়ে যা মন খারাপ হয়েছিল, বর্ণনা  করা মুশকিল। অনেক অনেক পরে জেনেছিলাম, তিনি আসলে আমার বাড়ির খুব কাছে থাকেন। এক বন্ধুর সাথে গিয়ে আলাপ করে এসেছিলাম। 
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৫৩518640
  • 'ক্ষুদে যাযাবর ইসতাসি' ছোটোবেলায় পড়িনি, তাই সেই আশ্চর্য স্মৃতিটা নেই যা আছে গল্পের মিনারে পাখি, মা এক নির্ভীক সৈনিক এইসবগুলো নিয়ে। এমনকি 'মান্ডুর রূপমতী' যখন সেই আমলে প্রথম পড়ি, তখন যে অপূর্ব একটা অনুভূতি ছিল, বহুকাল পরে আবার যখন পড়লাম তখন সেইটা আর এল না। কেবল স্মৃতিতে সেইটা রয়েছে।
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৪ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৫৪518641
  • দেবাশিসবাবু, আপনার এই সিরিজটার চতুর্থ পর্বটা কই?
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৫০518642
  • আসবে ভাই, একটু সময় নিচ্ছি। অন্য কতকগুলো বিদঘুটে ঝামেলায় আছি বলে ওটা নিয়ে একদম বসা হচ্ছে না। তবে, অন্য একটা প্রশ্নে বিস্তারিত উত্তর আজ-কালের মধ্যেই দিয়ে দেব। 
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০১:০৫518643
  • আপনি ধীরেসুস্থে পোস্ট করুন। তাড়াহুড়োর দরকার নেই।
    আপনার বিস্তারিত উত্তরের পোস্টটারও অপেক্ষায় রইলাম। আপনার লেখা বা মন্তব্য সবই এত সুলিখিত আর যাচাই বাছাই করা আর মূল্যবান তথ্যসমৃদ্ধ যে এই অনেককিছু শিখতে ও জানতে পারি সবগুলো থেকেই। এই যুগে যখন চতুর্দিকে হোয়ামার্কা অ্যাজেন্ডাধারীরা নিজেদের অ্যাজেন্ডামাফিক নির্মাণ করে চলেছে সবকিছু, বহু লোকে নির্বিচারে সাবস্ক্রাইবও করছে সেসব, সেখানে আপনাদের লেখাগুলোই তবু একটু ভরসার জায়গা। নাহলে এই জমানায় কোনগুলো যে ট্রুথ আর কোনগুলো যে ট্রাম্প সেসব বুঝে ওঠা বেশ শক্ত।
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০১:৫৭518644
  • রাধার কানাই,

    আপনি ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ (ইংরিজিতে ‘ডায়ালেক্টিক্যাল মেটিরিয়ালিজম’, ছোট্ট করে আদরের ডাক ‘ডায়াম্যাট’) নিয়ে আমার অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন। ব্যাপারটা আমার কাছে চিত্তাকর্ষক হলেও, সে নিয়ে কথা বলাটা কিঞ্চিৎ জটিল কাজ, আমার কাছে, নানা বিচিত্র কারণে। আগেভাগে সেগুলো একটু বলে নিলে আমার অবস্থানের মূল্যায়ণ করতে আপনার এবং অন্যদের কিছু সুবিধে হতে পারে।
     
    প্রথমত, আমি দর্শনের বিশেষজ্ঞ নই। দ্বিতীয়ত, ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ নিয়ে যাঁরা উৎসাহের সঙ্গে চর্চা করেন, কথা বলেন এবং ব্যাখ্যা করেন, সাধারণত তাঁরা কমিটেড মার্ক্সবাদী, এবং সেইহেতু এই দার্শনিক তত্ত্বটির গর্বিত সমর্থক --- আমি তা নই। আমি নিজেকে স্রেফ যুক্তিবাদী মনে করি, এবং সেটাই আমার যথেষ্ট পরিচয় বলে মনে করি। অথচ আবার, তৃতীয়ত, যুক্তিবাদ ও নাস্তিকতার রিচার্ড ডকিন্স এবং মাইকেল শেরমার রচিত ধারায় যেভাবে এই দর্শনকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও বিজ্ঞান-বিরোধী বলে সাব্যস্ত করা হয় (ভারত ও বাংলাদেশের যুক্তিবাদীদের এক বড় অংশ এই ধারার অনুসারী), আমি তারও সমর্থক নই।

    ফলত, এ বিষয়ে অবস্থান ব্যাখ্যা করার কাজটা আমার কাছে খুব বেশি সোজা-সাপ্টা হবার কথা না। তবুও, না হয় দেখাই যাক একবার, একটু চেষ্টা করে। এ প্রসঙ্গে আমার অবস্থান বলবার আগে, ব্যাপারটা আমি নিজে ঠিক যেভাবে বুঝি সেইটা বলে নেওয়া জরুরি।
     
    প্রথমেই বলা দরকার, ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ বলতে মার্ক্সবাদীরা একসাথে অনেক কিছু বোঝান, যেগুলো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, কিন্তু ঠিক এক জিনিস না। জগত সম্পর্কিত এক সামগ্রিক বোধ, সমাজকে জানার হাতিয়ার, যুক্তি আর বিজ্ঞানের ভিত্তি --- এইসব নানা ব্যাপার।
     
    প্রথমত, এ হল এক রকমের দর্শন, যার সাহায্যে মার্ক্সবাদীরা গোটা জগতকে একটা সাংঘর্ষিক ও বিকাশমান প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করতে চান, যার মধ্যে সব সময়ই নানা বিপরীতধর্মী প্রবণতার টানাপোড়েন চলেছে, এবং সেই টানাপোড়েনের ফল হিসেবেই জগতের বিকাশের ধারা একটা নির্দিষ্ট অভিমুখ পাচ্ছে। যেমন, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার টানাপোড়েনে জড়বস্তু চলছে, জীবদেহে ক্রমাগত ভাঙা ও গড়ার মধ্য দিয়ে প্রাণপ্রবাহ চলছে, বিভিন্ন শ্রেণির স্বার্থের সংঘাতের মধ্য দিয়ে সমাজ এগিয়ে চলেছে --- এই রকম আর কি।
     
    দ্বিতীয়ত, এ হল এক রকমের অনুসন্ধান-পদ্ধতি, যা দিয়ে মার্ক্সবাদীরা সমাজের গতিপ্রকৃতিকে বোঝবার চেষ্টা করেন। মনে করুন, ইতিহাসবিদরা জানতে পেরেছেন, কোনও এক বিশেষ স্থানে প্রাচীন কালে স্থানীয় ভূপতির বিরুদ্ধে প্রজারা বিদ্রোহ করেছিল, এবং তাঁরা এর কারণ জানতে চান। এখন, যদি ইতিহাসবিদ স্থানীয় কোনও লোককাহিনী বা পুঁথি বা প্রস্তর-লিখনে এমন কাহিনীর সন্ধান পান যে, ওই ভূপতি ওখানকার বাসিন্দাদের স্থানীয় দেবীকে অপমান করেছিলেন, তাহলে তিনি নিশ্চিন্তে সিদ্ধান্তে আসবেন, বিদ্রোহের কারণটি ধর্মীয়। কিন্তু যদি সে ইতিহাসবিদ মার্ক্সবাদী হন, তিনি হয়ত এটুকুতে সন্তুষ্ট হবেন না। তিনি ধর্মীয় প্রণোদনাকে অস্বীকার করবেন না, কিন্তু ভেবে দেখতে চাইবেন, বৃহত্তর কোনও সামাজিক/অর্থনৈতিক কারণে এ বিদ্রোহের ক্ষেত্র অনেক আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকতে পারে কিনা। কে জানে, ওই ভূপতি হয়ত স্থানীয় কৃষক/কারিগরদেরকে ছোট জাত বলে অত্যন্ত ঘৃণা ও অসম্মান করত, তাদের থেকে অত্যন্ত চড়া হারে কর আদায় করত, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টিতে ছাড় দিত না, খুব বেশি বেশি বেগার খাটাত, সে সবে রাজি না হলে পাইক-বরকন্দাজ পাঠিয়ে মারধোর করত। এইসব কারণে হয়ত বা প্রজারা দীর্ঘদিন যাবতই খেপে ছিল, এবং স্থানীয় দেবীকে অসম্মানের ঘটনাটি শুধু বারুদের স্তূপে অগ্নিস্ফূলিঙ্গের মত কাজ করেছে মাত্র। এভাবে দেখলে, ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতটিকেই মনে হবে মূল কারণ, এবং দেবী-অসম্মানের ঘটনাটিকে মনে হবে এক তুচ্ছ উপলক্ষ্য মাত্র। মার্ক্সীয় ইতিহাসবিদ দাবি করবেন, এতে করে কৃষক ও ভূপতির ‘শ্রেণি-সংগ্রাম’ দিয়ে ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করা গেল, তুচ্ছ আকস্মিকতার কবল-মুক্ত হয়ে ইতিহাস এক গভীরতর সামাজিক অর্থ পেল। ইতিহাস-গবেষণায় ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’-এর এ ধরনের প্রয়োগকে তাঁরা নাম দিয়েছেন ‘হিস্টোরিক্যাল মেটিরিয়ালিজম’ (সংক্ষেপে ‘হিস্টোম্যাট’), বা ‘ঐতিহাসিক বস্তুবাদ’।
     
    তৃতীয়ত, ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ হল এক রকমের স্বতন্ত্র যুক্তি-পদ্ধতি এবং বিজ্ঞান-দর্শন, যা দিয়ে মার্ক্সবাদীরা চিরায়ত অ্যারিস্টোটলীয় যুক্তিশাস্ত্রকে প্রতিস্থাপিত করতে চান। এই অর্থে, এটাই হচ্ছে মার্ক্সবাদের দার্শনিক নির্যাস। মার্ক্সীয় টেক্সট-এ এই ব্যাপারটাকে বেশ একটা বৈজ্ঞানিক সূত্রের মত আকারে পাওয়া যায়। সূত্রের সংখ্যা তিন, এবং সেগুলো এই রকম।

    (১) বিপরীতের দ্বন্দ্ব ও সমন্বয়। (২) পরিমাণ থেকে গুণে রূপান্তর, এবং বিপরীত মুখেও। (৩) নেতির নেতিকরণ।

    যাঁরা মার্ক্সবাদ নিয়ে চর্চা করেন তাঁদের কাছে এইসব কথা এবং তার অর্থ সুপরিচিত। (১) নানা বিপরীতমুখী টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে জগত এগিয়ে চলেছে, (২) যে কোনও বস্তুর নিজস্ব গুণের ক্রমাগত হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটতে থাকলে এক সময়ে তার মধ্যে নতুন গুণের আবির্ভাব ঘটে, (৩) এবং এই প্রক্রিয়ায় বস্তুর পুরোনো রূপ ধ্বংস-প্রাপ্ত হয়ে নতুন রূপ নেয়, আবার সেই নতুন রূপও এক সময়ে বিলীন হয়ে গিয়ে আরও নতুন রূপ সৃষ্টি করে।
     
    কিন্তু, ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ সম্পর্কে এইসব প্রাথমিক ব্যাখ্যা বোধহয় অনেকেই জানেন। আসলে, সবাইকে নতুন কিছু জানাতে পারব এ আশার ওপর ভর করে এত কথা বলিনি। বরং, এ সম্পর্কে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবার একটা প্রেক্ষিত এর মধ্যে দিয়ে তৈরি হবে, এই আশাতেই এত সব কথা। এবার ব্যাখ্যাটাই হোক তবে। 
     
    আমি কথা বলতে চাইব মূলত ওই তৃতীয় তথা শেষ অর্থটি নিয়ে। অর্থাৎ, বৈজ্ঞানিক যুক্তির আকারে সাজানো ওই তিনটি সূত্র নিয়ে। এটা নিয়েই কথা বলব, কারণ, এটাকেই মার্ক্সীয় দর্শনের সারাৎসার বলে গণ্য করা হয়। স্বয়ং মার্ক্সের লেখায় দ্বান্দ্বিক বিশ্লেষণ বা পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার কথা পাওয়া গেলেও, কোথাও ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ নামটি পাওয়া যায়না, এবং তার উপরোক্ত দার্শনিক সূত্রগুলোও পাওয়া যায় না। যদ্দুর জানি, ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ কথাটা ওই অর্থে চালু করেছিলেন সোভিয়েত দার্শনিক প্লেখানভ। এবং, ওই তিনটি সূত্র প্রথম পাওয়া যায় ফ্রিডরিখ এঙ্গেলস-এর ‘ডায়ালেক্টিক্স অফ নেচার’ গ্রন্থে। তিনি এগুলো সংগ্রহ করেছিলেন হেগেলের রচনার নানা স্থান থেকে, এবং হেগেল আবার হেরাক্লিটাস ও অন্যান্য প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের থেকে। এখন মার্ক্সীয় দর্শনের সমস্ত টেক্সট-এই এগুলোকে ঠিক এই আকারেই পাওয়া যায়।
     
    প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলোর অর্থ কী?
     
    এর যে অর্থ মার্ক্সবাদীদের কাছে সুপরিচিত এবং মান্য, তা ওপরে বলেছি, খুবই সংক্ষেপে হলেও। কিন্তু, তা কি কঠোর বৈজ্ঞানিক/যৌক্তিক বিশ্লেষণের সামনে দাঁড়াতে পারে? অমার্ক্সীয় চিন্তাবিদেরা সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রশ্ন কিন্তু নিতান্তই দার্শনিক, মার্ক্সবাদের সাধারণ সমালোচনার থেকে চরিত্রে একদমই আলাদা। মার্ক্সবাদের বিরুদ্ধে সাধারণত যে সমস্ত কথা শোনা যায়, সেগুলো আমরা সকলেই মোটামুটি জানি। মার্ক্সীয় অর্থে যে ‘শ্রেণি’-র কথা বলা হয় তার আসলে কোনও অস্তিত্ব নেই, সমাজতন্ত্র আসলে সম্ভব না কারণ তা মানুষের মৌল স্বভাবের বিপরীত, সমাজতন্ত্র মানে শ্রমিকের মুক্তির নাম করে আসলে কম্যুনিস্ট পার্টির একাধিপত্যে হুকুমদারি রাষ্ট্র বানাবার মতলব, ইত্যাদি ইত্যাদি। এ সমালোচনা কিন্তু সেই রকমের সমালোচনা না। 
     
    এ সমালোচনা তবে ঠিক কী ধরনের সমালোচনা, সে কথায় ঢুকতে গেলে আগে ধ্রুপদী  অ্যারিস্টোটলীয় যুক্তিশাস্ত্রের তিনটি মৌল সূত্র হাজির করা দরকার, ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’ যার প্রতিস্পর্ধী হয়ে দাঁড়াবার দাবি করে।
     
    সেগুলো এইরকম।

    (১) যে কোনও কিছুই তার নিজের সঙ্গে সমান। [‘ল অফ আইডেন্টিটি’, বা তাদাত্ম্যের নিয়ম]
     
    (২) যে কোনও কিছু এবং তার অস্বীকৃতি একই সাথে সত্যি হবেনা। [‘ল অফ নন-সেল্‌ফ কনট্রাডিকশন’, বা অস্ববিরোধিতার নিয়ম]

    (৩) যে কোনও কিছু হয় সত্যি নয় অসত্যি --- এর বাইরেও আর কিছু হবেনা। [‘ল অফ দি এক্সক্লুডেড মিড্‌ল্‌’, বা মধ্যপদ নিষেধের নিয়ম]

    এ সব নিয়মের অর্থ কী, এবং তার সঙ্গে ‘দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ’-এর বিরোধটাই বা কোথায়? সেটা এবার দেখা যাক। অ্যারিস্টোটলীয় যুক্তিশাস্ত্রের এই মৌল নিয়মগুলো আজ আমাদের যাবতীয় যুক্তি এবং বিজ্ঞানের ভিত্তিস্বরূপ। এগুলোকে ভিত্তি করে উনিশ শতকে জর্জ বুল যুক্তিকে অঙ্কের মত করে কষে বার করবার যে পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন প্রায় খেলাচ্ছলে, তার ওপরই আজ দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সর্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি। মনে করুন, কোনও সংখ্যা যদি ওপরের এক নম্বর নিয়মটি ভঙ্গ করে, অর্থাৎ সে নিজে নিজের সঙ্গে সমান না হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই গোটা গণিত ও যুক্তিশাস্ত্র ধ্বসে পড়বে, এবং সেইহেতু আমাদের যাবতীয় বিজ্ঞানও।
     
    দ্বিতীয় নিয়মটি হল সত্য ও সত্তার মধ্যে স্ববিরোধিতার নিষেধ। মানে, কোনও একটি বিশেষ ইনিংসে বিরাট কোহলি শূন্য করেছেন এবং শূন্য করেননি --- এ দুটো একই সাথে দাবি করা যাবেনা। যদি এ রকম পরস্পরবিরোধী দাবি আসে, তখন আমরা সন্দেহ করি, দাবিটির মধ্যে গোলমাল আছে। পুলিশের কাছে ধরা পড়া সন্দেহভাজন যদি একবার জেরায় বলে সে মদনপুরের গোবিন্দ ঘোষ এবং আরেকবার বলে সে বাঁশবেড়ের সনাতন পাল, তাহলে পুলিশের সন্দেহ যে ঘনীভূত হয়ে উঠবে, সেটা এই নিয়ম অনুসারেই। না, এ নিয়ম ভঙ্গ হলে যে শুধু ক্রিকেট খেলার বারোটা বাজবে বা স্রেফ পুলিশের হাত এড়িয়ে দু-চারটে অপরাধী পালাবে, ব্যাপার কিন্তু অত অল্প নয়! আসলে, দুটো উল্টো কথা একই সাথে সত্যি বলে মেনে নিলে সত্যের সঙ্গে মিথ্যের তফাতই ঘুচে যায়। আর তখন, যে বিজ্ঞান যে যুক্তি যে দর্শন আমাদেরকে সত্য জানাতে চায়, তাদের দশা কী হবে?
     
    নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন, দুটো পরস্পরবিরোধী কথাকে একই সাথে সত্যি বলে মেনে নিলে এই রকম ভয়ঙ্কর কাণ্ড কেনই বা হবে, আর কীভাবেই বা হবে? সেটা সাঙ্কেতিক যুক্তিবিজ্ঞানের একটা খুব ছোট্ট কিন্তু মজার অঙ্ক কষে দেখানো যায়। নিচে দেখুন।

    (1) P [where P is any statement], 
    (2) ~P
    (3) P --> (PVQ) [where Q is any statement]
    (4) (~P).(PVQ) --> Q
    (5) Hence, Q

    অঙ্ক দেখে ভয় পাবার দরকার নেই, এর অর্থ একদম আটপৌরে ভাষায় বুঝে ফেলা সম্ভব, এবং সে অর্থ একদমই সোজাসাপ্টা। ‘P’ মানে যে কোনও একটা বিবৃতি, যেমন ধরুন, ‘আমার নাম দেবাশিস্‌’। ‘~P’ মানে ‘P’-এর অস্বীকৃতি বা বিপরীত --- এক্ষেত্রে তার অর্থ, ‘আমার নাম দেবাশিস্‌ নয়’ (যুক্তির সঙ্কেতে ‘~’ মানে ‘নয়’, অর্থাৎ অস্বীকৃতি)। অঙ্কের (১) ও (২) নম্বর ধাপে বলে দেওয়া হচ্ছে, এই দুটোই সত্যি। অঙ্ক কষবার আগে যেমন কিছু তথ্য বলে দেওয়া থাকে যার ভিত্তিতে উত্তরটা কষে বার করতে হয়, এটা সেই রকম ব্যাপার। কিন্তু, এ দুটোকে একসাথে সত্যি বলে দেওয়ার ফলটা কি দাঁড়াবে? সেটা এখুনিই দেখতে পাব। (৩) নম্বর ধাপে দেখুন, প্রদত্ত ‘P’ থেকে একটা অতি সহজ সিদ্ধান্তে আসা হচ্ছে, অঙ্কে যেমনটা আমরা করেই থাকি। ‘P’ সত্যি হওয়া মানেই ‘P’ অথবা ‘Q’ সত্যি হওয়া --- এটাই এখানে বলা আছে। ‘Q’ হচ্ছে একটা অন্য যে কোনও বিবৃতি, যতই মিথ্যে বা উদ্ভট হোক না কেন --- ধরুন --- ‘আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী’। সাঙ্কেতিক যুক্তিবিজ্ঞানে ‘V’ চিহ্নটির মানে হচ্ছে ‘অথবা’, ওর উচ্চারণ হচ্ছে ‘ভেল’। ‘পি ভেল কিউ’। 
     
    এবার, বুঝতেই পারছেন, ‘P’ বা ‘আমার নাম দেবাশিস্‌’ যদি সত্যি হয়, তাহলে তো ‘PVQ’ অর্থাৎ (‘আমার নাম দেবাশিস্‌’ অথবা ‘আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী’) এই গোটা কথাটা সত্যি হতেই হবে। আমি যদি কাউকে বলি, ‘আমার নাম দেবাশিস্‌, অথবা তুমি আমাকে এক লক্ষ টাকা দেবে’, তাহলে সে নিশ্চিন্ত থাকবে যে টাকা না দিলেও চলে, কারণ আমার নাম সত্যিই দেবাশিস্‌। যদি ‘অথবা’-র জায়গায় ‘এবং’ লাগিয়ে বলতাম, ‘আমার নাম দেবাশিস্‌, এবং তুমি আমাকে এক লক্ষ টাকা দেবে’, তাহলে কিন্তু তাকে বেশ চিন্তায় পড়তে হত। দুটো আলাদা কথা যদি 'অথবা' দিয়ে যোগ করে দিই, তাহলে যে কোনও একটা সত্যি হলেই গোটাটা সত্যি হবে, ‘অথবা’-র মজাটাই ওই। ‘এবং’ হলে কিন্তু সমস্যা, তখন দুটো কথাই আলাদা করে সত্যি না হলে গোটাটা সত্যি হবেনা। তা সে যাই হোক, এখন মোদ্দা কথাটা হচ্ছে, (৩) নম্বর ধাপে আমরা সিদ্ধান্তে এসে গেলাম, হয় ‘P’ নয়ত ‘Q’ সত্যি হবেই, যদিও ও দুটো বাক্যের মধ্যে আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। এবং, এর পরেই হচ্ছে আসল মজাটা। (২) নম্বরে দেওয়া ছিল, ‘~P’ সত্যি। এর সঙ্গে যদি (৩) নম্বরের সদ্যলব্ধ সিদ্ধান্তকে মেলাই, তার মানে দাঁড়াবে, হয় ‘P’ নয়ত ‘Q’ সত্যি হবেই (৩), এবং ‘P’ সত্যি নয় (২), অতএব ‘Q’-কে তো সত্যি হতেই হবে। অথচ, ‘P’-র সঙ্গে কিন্তু ‘Q’-এর আদৌ কোনও সম্পর্কই নেই!
     
    কী কাণ্ডটা হল, খেয়াল করলেন কি? ‘আমার নাম দেবাশিস্‌’ এবং ‘আমার নাম দেবাশিস্‌ নয়’ --- এই দুটো কথাকে একই সাথে সত্যি বলে ধরে নেবার ফলে ‘প্রমাণ’ হয়ে গেল যে, ‘আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী’! ‘Q’ যেহেতু যে কোনও বিবৃতিই হতে পারে, অতএব, যে কোনও উদ্ভট, অর্থহীন ও হাস্যকর বিবৃতিই এই পথে সত্যি প্রমাণ যেতে বাধা নেই। ‘হলদে সবুজ ওরাং ওটাং’, ‘চাঁদনি রাতে পেতনি নাচে’, ‘পরমব্রহ্ম হল একটি অভিমানী নিদ্রালু অশ্বতর’ --- হাবিজাবি যা খুশি!

    অ্যারিস্টোটল প্রতিষ্ঠিত এবং পরবর্তী দু হাজার বছর ধরে বিকশিত এই ধ্রুপদী যুক্তিশাস্ত্রের এক মস্ত ও মহাপোক্ত কাঠামোর বিরুদ্ধেই দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের বিদ্রোহ। অভিযোগ, ওই তিন সূত্র দিয়ে অঙ্ক ও যুক্তি সহজে কষা যায় বটে, কিন্তু ওতে বস্তু ও প্রক্রিয়াকে একটা স্থাণু চেহারায় বেঁধে ফেলা হয়। এখানে বস্তুকে শুধু তার স্থিতিতে দেখা হয়, গতি ও বিকাশের প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে দেখা হয়না। 
     
    অ্যারিস্টোটলীয় যুক্তিশাস্ত্র একটা ছাগলকে তার নিজস্ব ছাগলীয় বৈশিষ্ট্যসমেত স্রেফ ছাগলই বলবে, কারণ, ‘ছাগল হল গিয়ে ছাগল’, সেটাই তার ‘আইডেন্টিটি’ --- প্রথম সূত্র অনুযায়ী। মার্ক্সবাদী বলবেন, কেন হে, একটা ছাগল যে প্রতিদিনই ছুঁড়ো থেকে ক্রমশ বুড়ো হয়ে মরতে চলেছে, প্রতি মুহূর্তেই একটু একটু করে  পাল্টাচ্ছে, এবং এমন কি গোটা প্রজাতির ‘এসেন্স’-টাও দীর্ঘদিনের প্রেক্ষিতে পাল্টাতে পাল্টাতে নতুন একটা প্রজাতি এসে যাচ্ছে, এতে করে তো প্রতি মুহূর্তেই অ্যারিস্টোটলীয় যুক্তিশাস্ত্র নস্যাৎ হচ্ছে --- চোখে দেখতে পাও না?
     
    তা, সব মানলাম। 
     
    কিন্তু, ধ্রুপদী যুক্তিকে ভেঙে একাকার করলে যদি সত্যি-মিথ্যের তফাত চৌপাট হয়ে যায়, তো তার দায় কে নেবেন? কোনও প্রাজ্ঞ এবং সত্যনিষ্ঠ মার্ক্সবাদী কি সে দায় নিতে রাজি আছেন?

     
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:০০518645
  • @দেবাশিসবাবু, দারুণ লাগল। অনেক ধন্যবাদ।
    এই যে এই অংশটা " দ্বিতীয় নিয়মটি হল সত্য ও সত্তার মধ্যে স্ববিরোধিতার নিষেধ। মানে, কোনও একটি বিশেষ ইনিংসে বিরাট কোহলি শূন্য করেছেন এবং শূন্য করেননি --- এ দুটো একই সাথে দাবি করা যাবেনা। যদি এ রকম পরস্পরবিরোধী দাবি আসে, তখন আমরা সন্দেহ করি, দাবিটির মধ্যে গোলমাল আছে। পুলিশের কাছে ধরা পড়া সন্দেহভাজন যদি একবার জেরায় বলে সে মদনপুরের গোবিন্দ ঘোষ এবং আরেকবার বলে সে বাঁশবেড়ের সনাতন পাল, তাহলে পুলিশের সন্দেহ যে ঘনীভূত হয়ে উঠবে, সেটা এই নিয়ম অনুসারেই। না, এ নিয়ম ভঙ্গ হলে যে শুধু ক্রিকেট খেলার বারোটা বাজবে বা স্রেফ পুলিশের হাত এড়িয়ে দু-চারটে অপরাধী পালাবে, ব্যাপার কিন্তু অত অল্প নয়! আসলে, দুটো উল্টো কথা একই সাথে সত্যি বলে মেনে নিলে সত্যের সঙ্গে মিথ্যের তফাতই ঘুচে যায়। আর তখন, যে বিজ্ঞান যে যুক্তি যে দর্শন আমাদেরকে সত্য জানাতে চায়, তাদের দশা কী হবে? "
    ----এটা নিয়ে কিছু কথা আছে। আমাদের চেনা ম্যাক্রোস্কোপিক জগতে "এটা দরজা ক এর মধ্য দিয়ে গেছে অথবা দরজা খ এর মধ্য দিয়ে গেছে" সত্য হলেও, কোয়ান্টাম এন্টিটিদের ক্ষেত্রে কিন্তু অন্য ব্যাপার হয়। ওটা একইসঙ্গে ক এবং খ দরজা দিয়ে যেতে পারে। এই থেকেই সেই বিখ্যাত শ্রোডিঙ্গার ক্যাটের তুলনা আসে, যে কিনা একইসঙ্গে জীবিত ও মৃত অবস্থায় থাকতে পারে, দুইয়ের সুপারপজিশন হিসেবে।
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১০:৩৩518648
  • ইলেকট্রন একসাথে দুটো দরজা দিয়েই যায় --- এটা কিন্তু 'ঘটনা' নয়, এক রকমের ব্যাখ্যা মাত্র। দ্বিছিদ্র পরীক্ষায় ইলেকট্রন যে আলোর মতই ব্যতিচার-নকশা সৃষ্টি করে --- এটা হচ্ছে ঘটনা, আর আপনি যা বলছেন সেটা তার এক রকমের 'ইন্টারপ্রিটেশন' বা ব্যাখ্যা, যদিও আসলে কিন্তু কোনও ইলেকট্রনকে কেউই কোনও দিন একসাথে দুটো দরজা দিয়ে যেতে দেখেনি। 
     
    গাণিতিক তত্ত্ব যা-ই বলুক, বাস্তবে একটা ইলেকট্রনকে ধরবার জন্য ডিটেক্টর বসালে তাতে একটি ইলেকট্রন একটি বিশেষ সময়ে একটি বিশেষ স্থানেই ধরা পড়বে, কখনওই একসাথে একাধিক জায়গায় তাকে পাওয়া যাবেনা। 
     
    আর, শ্রোয়েডিঙ্গারের বেড়ালও কিন্তু কোনও সত্যিকারের পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল নয়, একটা 'থট এক্সপেরিমেন্ট'। এতে দেখানো হয়েছে, কোয়ান্টাম ধর্মাবলী শুধু ছোট পদার্থকণার ব্যাপার বলে নিশ্চিন্তে বসে থাকার উপায় নেই, কারণ, সেটা বেড়ালের মত কোনও ম্যাক্রোবডি-র ওপরেও চাপিয়ে দেওয়া যায়। 
     
    কাজেই, শ্রোয়েডিঙ্গারের বেড়াল থেকে আপনি কোন সিদ্ধান্তে আসবেন সেটা নির্ভর করছে কোয়ান্টাম ধর্মাবলীকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করছেন তার ওপর।
     
    এবং সর্বোপরি, ধরুন তর্কের খাতিরে মেনেই নিলাম যে, কোয়ান্টাম তত্ত্বে অ্যারিস্টোটলীয় ধ্রুপদী লজিক নস্যাৎ হচ্ছে। তাতে সমগ্র জ্ঞানের জগতে যে ধ্বংসলীলাটা হবে, তার দায় নেবার মত ক্ষমতা কোয়ান্টাম তত্ত্বের আছে কি?
  • অনন্ত | 2409:4060:2e17:bad3:4f13:9142:f4ed:af1b | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১২:৩১518649
  • দেবাশীষ বাবু, আপনার কমেন্টের সম্পর্কে দুটো কথা বলতে চাই। তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ আপনি কিছুটা দিয়েছেন। আমি সরাসরি আপনার দেওয়া দুটো উদাহরণ নিয়ে বলতে চাই। 
    প্রথমত দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ আমাদের বলে 
    A=A under specific constraints;
    এর মানে কখনোই ৪ সমান ৫ হয়ে যায় না। তবে আমাদের বুঝতে হবে সংখ্যা তত্ত্বের জন্ম কিভাবে হলো। মানুষের সমাজে যেকোন বস্তুর উৎপাদনের সাথে তার হিসাব রাখা প্রয়োজন হয়। তাই এখানে ৪ বা ৫ কে নির্দিষ্ট কিছু চিহ্ন হিসাবে না দেখে আপনাকে কোন বস্তুর পরিমাপ হিসাবেই দেখত হবে। এবার ধরুন আমি আপনার শরীরে কোষের সংখ্যা গুনতে বসলাম। জীবিত, মৃত সব কোষ মিলিয়েই সেটাকে একটা সিম্বল দিয়ে রিপ্রেজেন্ট করলাম। আপনি একটা বিশেষ সময় যদি আপনার number of living cells বা number of dead cells এর সংখ্যা গুনতে সক্ষম হন তাহলে সেটার নির্দিষ্ট মান পাবেন। এবার আপনি যদি দেখেন এটা সারা জীবন ধরেই পরিবর্তন হচ্ছে। এবার আপনি যদি বলেন কোন মুহুর্তে সেটা একই আছে তাহলে মুহূর্তের কত ছোটো পরিমাপ নেবেন সেটার ওপর আপনাকে নির্ভর করতে হবে। মানে আপনি যদি এই মুহূর্তে কোন সংখ্যা পান, তার থেকে ০.০০০০০১ মাইক্রো সেকেন্ড পর হুবহু এক সংখ্যা নাও পেতে পারেন, বা পাবেন না। কিন্তু সেটার পরিবর্তন খুব সামান্য হতেই পারে। সেই জন্য দ্বন্দমূলক বস্তুবাদ কখনোই "সব কিছু পরিবর্তনশীল, স্থবির কিছু নাহি" এমন সরল দাবি করে। আবার ঠিক কোন পর্যায়ে আপনার জীবিত কোষ জন্মের হার মৃত কোষের হার এর থেকে কমে যায়? কোন মুহুর্তে? আপনি একটা গর হিসাব দিলেন ৫০ বছর বয়সের পর থেকে। তাহলে কি আমি বলব আপনার ৪৯ বছর ৩৬৪ দিন ২৩ ঘণ্টা ৫৯.৯৯ সেকেন্ড এর পর থেকেই এই পরিবর্তন ঘটল? মানে "হঠাৎ করে" ওই পর্যায় থেকে আপনার জীবিত কোষ উৎপাদনের হার কমে গেল? তার আগে পর্যন্ত বাড়ছিল? সেটা তো বাস্তবে হয় না। নাকি আপনি বলবেন ঠিক ৫০ বছর ০.০০০০০০০০০০০০০০০০১ সেকেন্ড এর সময় থেকেই সেটা পরিবর্তন হলো?( এখানে দশমিক এর পর শূন্য সংখ্যা বাড়াতে পারেন যত ইচ্ছে) দুটোর কোনোটাই নয়। অর্থাৎ আপনাকে সেকেন্ড এর ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র পরিমাপে যেতে হবে কিন্তু "একদম সঠিক" মুহূর্ত নির্ধারণ করা সম্ভব না। কিন্তু সেটার পরেও যদি আপনি বলেন ৫০ বছর পর থেকে, তাহলে সেটাকে সম্পূর্ণ ভুল বলছি না। কারণ ওই সময়ের পর থেকেই আপনার শরীরে একটা গুণগত পরিবর্তন আসবে। সেটাকে কেউ খারিজ করছে না। কিন্তু সেটা একটা অ্যাপ্রক্সিমেশন। এই অ্যাপ্রক্সিমেশন আমাদের বস্তুগত জগতে পরিমাপ করতে অবশ্যই দরকার। কিন্তু একদম পারমাবিক স্তরে গিয়ে আপনি exact point পেতে পারবেন কি? পেলেও সেটা কি আরো higher level approxomation নয়? আবার ৫০ বছর টাও নির্দিষ্ট না। সেটার তার পরিবেশ, পেশা, খাদ্য তালিকা, সামাজিক অবস্থা সব কিছুর ওপরই dependent...
    কোয়ান্টিটি চেঞ্জ টু কোয়ালিটি কথাটা আসবে। ধরুন যতদিন আপনার মৃত কোষ আপনার জীবিত কোষকে সম্পূর্ণ ভাবে ছাড়িয়ে না যায় ততক্ষন আপনি একক বা জীবিত, আপনার মধ্যে কোষের সংখ্যাগত পরিবর্তন যতই হোক। কিন্তু আপনার মৃত্যু ঘটে গেলে আপনাকে শূন্য বা বিলীন ধরা হচ্ছে। কিন্তু মৃত্যু বা কোন সময়ে ঘটে? ব্রেন সেল ডেথ? ঠিক এর কোন পর্যায়ে বা কটা কোষ মারা গেলে সেটাকে সম্পূর্ণ মৃত বলা হয়?
    সেই জন্যেই A=A under certain conditions বললাম। আপনি আজ থেকে ১০০ বছর পর "নিজের সমান" হবেন না।  
     
    দ্বিতীয় আসি বিরাট কোহলির উদাহরণ। A and ~A exists in a system মানেই কখনোই বিরাট কোহলি ০ বা ১০০ একসাথে করবে এরকম কোন কথা বলা নেই। কত রান করলো সেটা একটা চূড়ান্ত হিসাব । কিন্তু আপনি যেভাবে বললেন ব্যাপারটা এত সহজ ও না। ধরুন বিরাট কোহলি ব্যাট করতে যাচ্ছে। তার সর্বোচ্চ কত রান করা সম্ভব সেটার একটা হিসাব কষলেন। সেটা নির্ভর করছে কোন ফরম্যাটে খেলা তার ওপর। আবার বোলার এর নো বলে যদি হিসাব করেন তাহলে সেটা আর পাল্টায়। এবার খেলার আগে থেকে আপনাকে  যদি মাপতে হয় কোন বলার এর নো বল করার probability কত তাহলে আপনি পাবেন শুন্য থেকে এক এর মধ্যে একটা probability score.. আবার সেটাও ডিপেন্ড করে আপনি কি কি ভ্যারিয়েবল যেমন কোন মাঠে সে আগে খেলছে, সেখানে নো বলে কত, তার দৌড়ের স্পিড কত, ইত্যাদির ওপর। তবুও ধরুন একটা approximation করলাম। বিরাট কোহলি একটা বিশেষ ফরম্যাটে এত রান সর্বোচ্চ করতে পারে। আর সর্বনিম্ন তো শূন্য। এবার যদি আপনি বিশেষ মুহূর্ত থেকে সম্ভাব্য স্কোরের probability মাপা শুরু করেন
    P(run =0), P(run =1),  P(run =2), ......,
    P(run =100), তাহলে নির্দিষ্ট probability score গুলোর জন্যে একটা ভ্যালু পাবেন। মানে খেলার একদম শুরুতেই এগুলোর নির্দিষ্ট মান থাকবে। তার মানে কি বিরাট কোহলি এক খেলায় চূড়ান্ত হারে বিভিন্ন রান করবে? সেটা নয়। আবার এখানে দেখার মত বিষয় হলো আপনি কি কি ভ্যারিয়েবল ধরে আপনি probability function গুলো ডিজাইন করছেন। সম্ভাব্য কি কি হতে পারে? 
    F= Format of game
    S_prev=score in previous match
    P= pitch condition
    H= humidity
    S= sunlight
    Ch= chasing or batting first (binary variable)
    ...ইত্যাদি, সরল থেকে অতি জটিল প্রবাবিলিটি ফাংশন আপনি বানাতে পারেন। আর তাতে ফলাফল হুবহু এক হবে না। এবার ধরুন আপনি একটা মাপ নিয়ে এগোলেন। এবার যতক্ষণ খেলা চলছে, খেলার দিনের ইত্যাদি variable গুলো কেমন ভাবে আছে তার ওপর সেদিনের চূড়ান্ত স্কোর দাঁড়াল। আরো অনেক জটিল varibale থাকতে পারে যেমন মেন্টাল স্টেট (যদিও সেসব কি দিয়ে মাপবেন সেটা আপনাকে ঠিক করতে হবে)। সুতরাং সে চূড়ান্ত হিসাবে একটা স্কোর করছে। সেটা ওই গুণগত মান। কিন্তু যতক্ষন সে এই স্কোর চূড়ান্ত ভাব করছে (করে আউট হোক বা নট আউট থাকুক) ততক্ষন বিভিন্ন স্কোর করার probability বিভিন্ন থাকতে পারে। কোন কোনটা শূন্য ও। 
     
    অর্থাৎ আপনি শুরুতে দ্বন্দ্ব মূলক বস্তুবাদ কে পরিবর্তনশীল বলেও আপনি দুটো কেসেই ঘটনার চূড়ান্ত পরিমাপ দিয়ে সেটা খারিজ করতে গেছেন। ইনার ডাইনামিক্স নিয়ে আপনি একটা লাইন ও লেখেননি। ফার্স্ট অর্ডার লজিক কি ইনার ডাইনামিক্স বোঝাতে পারে? তাহলে অঙ্কের জগতে ক্যালকুলাস, probability, fuzzy logic এসব কি করছে?
     
     
     
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৪:৩৪518654
  • অনন্ত,
     
    বিরাট কোহলি বা অন্য যে কোনও ব্যাটসম্যান ক্রিজে ব্যাট করতে আসার পর থেকে আউট/ডিক্লেয়ার/আহত/ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি পর্যন্ত যত রান করেন সেটাকেই ওই ইনিংসে তাঁর রান বলে ধরা হয়। সেটা একটি বিশেষ সংখ্যাই, এবং সেটা জানতে ক্যালকুলাস প্রবাবিলিটি ফাজি লজিক এইসব লাগেনা। এবং, একটি বিশেষ সংখ্যা সব সময়েই নিজের সঙ্গে সমান এবং অন্য যে কোনও সংখ্যার সঙ্গে অসমান। অকারণে বেচারা ক্রিকেটপ্রেমীদেরকে ভয় দেখাবেন না। 
  • অনন্ত | 2409:4060:2e17:bad3:4f13:9142:f4ed:af1b | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:১১518657
  • আপনার চিন্তা শক্তির সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। উপদেশ দেবো আরেকটু পড়াশোনা করুন। "ভূত নেই, ভগবান নেই" এর বাইরেও বিজ্ঞান বা যুক্তিবাদ বিস্তৃত। আর সেগুলো যথেষ্ট জটিল।
     
    এবার আসি স্পেসিফিক ইভেন্টে। আজকের বেটিং অ্যাপ গুলো বিভিন্ন অ্যানালাইসিস দিয়ে চলছে সেটা খেয়াল করেছেন? মানে সেটা ভালো না খারাপ এই সব মোরাল তর্কে যাচ্ছি না। ড্রিম ইলেভেন হোক বা অন্য কিছু এগুলো কিভাবে কাজ করছে? পুরোটাই তো probability ভিত্তিক। তার পর সেই মতে কে ভালো প্রেডিক্ট করতে পারছে সেই পুরস্কার এর কাছাকাছি যাচ্ছে। তাহলে বিরাট কোহলি তো খেলায় যা রান করছে সেটা চূড়ান্ত কিন্তু বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ভাবে প্রেডিক্ট করছে কিভাবে? আর বিরাট কোহলির রান করাটাই বা কত গুলো ফ্যাক্টর বা অঙ্কের ভাষায় ভ্যারিয়েবল এর ওপর দাঁড়িয়ে? সেগুলো থ্রু আউট দ্যা গেম স্ট্যাটিক না ডায়নামিক? সেটা তো রিয়েলিটির অংশ। এবার অনেক কথা উঠতে পারে যে এতে ক্ষণিক লাভ হলেও বেটিং কেন বৃহৎ ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির জন্ম দেয়। সেসব এখন থাক। আপনাকে এটাই বললাম যে কোন ঘটনার inner dynamics বুঝতে গেলে ফরমাল লজিক পুরপুরি সক্ষম নয়। Nature is constantly evolving... আর এমন যুক্তিবাদী খুবই বিরল যে probability function নিয়ে কথা আলোচনায় আসতে এরকম হাস্যকর কথা বলে যে "ওগুলো দিয়ে ভয় দেখবেন না" 
     
    পরিশেষে বলব মার্কসবাদ বিরোধিতা করতে হলে আরেকটি সলিড যুক্তি নিয়ে আসুন। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। 
  • অনন্ত | 2409:4060:2e17:bad3:4f13:9142:f4ed:af1b | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:১৬518658
  • আর আমি আমার আগের কমেন্টে কোথাও বলিনি এক সংখ্যা অন্যের থেকে আলাদা হয়। সেসব হাস্যকর কথা কেউ দাবি করেনি। বরং স্বন্দ মূলক বস্তুবাদের এত কাঁচা কংক্লিউশন যে একজন যুক্তিবাদী টানতে পারে সেটা দেখেই অবাক লাগলো। প্রথমেই প্রাকৃতিক ভাবে একটা বিশেষ বস্তুর কিভাবে পরিমাণগত থেকে গুণগত মান পরিবর্তিত হয় সেটা বলেছি। কোষ দিয়ে উদাহরণ দিয়েছি। আরো অনেক জটিল প্রসেস কে গনিরের সূত্র দিয়েই এটা বোঝাতে পারি। কিন্তু আপনাদের হয়তো "ভূত নেই ভগবান নেই" এর বাইরে বিজ্ঞান, অর্থনীতি আর রাজনীতির অতি জটিল জিনিস আছে সেগুলো বোঝা দুঃসাধ্য, আপনাদের চিন্তার শক্তির সীমাবদ্ধতার জন্যে। 
  • অনন্ত | 2409:4060:2e17:bad3:4f13:9142:f4ed:af1b | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:১৮518659
  • আর আমি আমার আগের কমেন্টে কোথাও বলিনি এক সংখ্যা অন্যের থেকে আলাদা হয়। সেসব হাস্যকর কথা কেউ দাবি করেনি। বরং  দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের এত কাঁচা কংক্লিউশন যে একজন যুক্তিবাদী টানতে পারে সেটা দেখেই অবাক লাগলো। প্রথমেই প্রাকৃতিক ভাবে একটা বিশেষ বস্তুর কিভাবে পরিমাণগত থেকে গুণগত মান পরিবর্তন হয় সেটা বলেছি। কোষ দিয়ে উদাহরণ দিয়েছি। আরো অনেক জটিল প্রসেসকে গনিরের সূত্র দিয়েই এটা বোঝাতে পারি। কিন্তু আপনাদের কাছে হয়তো "ভূত নেই ভগবান নেই" এর বাইরে বিজ্ঞান, অর্থনীতি আর রাজনীতির অতি জটিল জিনিস আছে বোঝা দুঃসাধ্য, মূলত আপনাদের চিন্তার শক্তির সীমাবদ্ধতার জন্যে। 
  • অনন্ত | 2409:4060:2e17:bad3:4f13:9142:f4ed:af1b | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৫:২৭518660
  • আর আমি আমার আগের কমেন্টে কোথাও বলিনি এক সংখ্যা অন্যের থেকে আলাদা হয়। সেসব হাস্যকর কথা কেউ দাবি করেনি। বরং স্বন্দ মূলক বস্তুবাদের এত কাঁচা কংক্লিউশন যে একজন যুক্তিবাদী টানতে পারে সেটা দেখেই অবাক লাগলো। প্রথমেই প্রাকৃতিক ভাবে একটা বিশেষ বস্তুর কিভাবে পরিমাণগত থেকে গুণগত মান পরিবর্তিত হয় সেটা বলেছি। কোষ দিয়ে উদাহরণ দিয়েছি। আরো অনেক জটিল প্রসেস কে গনিতের সূত্র দিয়েই এটা বোঝাতে পারি। কিন্তু আপনাদের হয়তো "ভূত নেই ভগবান নেই" এর বাইরে বিজ্ঞান, অর্থনীতি আর রাজনীতির অতি জটিল জিনিস যা আছে সেগুলো বোঝা দুঃসাধ্য, আপনাদের চিন্তার শক্তির সীমাবদ্ধতার জন্যে। 
     
    *এডিট করা যায়না, আর আমি তাড়াতাড়ি টাইপ করি। তাই বারবার লিখতে হলো। 
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:০৭518670
  • স্বন্দমূলক বস্তুবাদ সম্পর্কে এত পাকা কংক্লিউশন আগে কোথাও পাইনি, এখানে দেখে একটা পুরোনো গল্প মনে পড়ল। 
     
    এক প্রত্যুৎপন্নমতি বালককে তার পিতাঠাকুর একটি অঙ্ক কষতে দিয়েছিলেন, অঙ্কটা এইরকম --- একটি হনুকে যদি দুটি কলা দেওয়া হয়, তবে পাঁচটি হনুর জন্য কয়টি কলা লাগবে?
     
    বালক প্রবলবেগে অঙ্ক কষতে কষতে খাতা শেষ করে, বিছানা ছাড়িয়ে, মেঝে ছাড়িয়ে, শেষে উঠোনে গিয়ে পৌঁছল। অঙ্ক যখন উঠোনের মাঝ অবধি গিয়ে পৌঁছেছে, তখন পিতাঠাকুর ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, এই সামান্য জিনিস কষে বার করবার জন্যে আর কতক্ষণ সময় নিবি রে হতভাগা?
     
    পুত্র শশব্যস্ত হয়ে বলল, এই মেরে এনেছি গো বাবাঠাকুর, শুধু সামান্য একটা তথ্যের জন্য ইনার ডিনামিক্স-টা কষতে পাচ্ছি না, এট্টু বলে দেবেন?
     
    পিতা রোষকষায়িত লোচনে বললেন, এর জন্য আবার কী তথ্য লাগেরে অকালকুষ্মাণ্ড!
     
    পুত্র মাথা চুলকুতে চুলকুতে বলল, এঁজ্ঞে, কলাগুলো পাকা কলা ছেলো, না ক্যাঁচকলা ছেলো?
     
    অনন্তবাবু, আপনি এখানে যা লিখেছেন তা অত্যন্ত উচ্চমার্গের, আমি তো আর ওসব বুঝব না! তবে, একটা পুরোনো মজার গল্প যে মনে পড়ালেন, তার জন্য এই মূ্র্খের তরফে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম নেবেন!
  • আধুনিকতার খোঁজে | 42.110.137.236 | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৪৩518676
  • অনন্ত 
    একটি হনুকে যদি দুটি কলা দেওয়া হয়, তবে পাঁচটি হনুর জন্য কয়টি কলা লাগবে?
    এ কী  অনন্ত আপনি এই সামান্য হিসেবটাও বোঝেননি! আমিও তাই, না হলে কেন মাথায় কোশ্নো আসে, পিতাঠাকুর তো কদাপি বলেন নি ""একটি কলাখেকো হনুকে যদি দুটি কলা দেওয়া হয়, তবে পাঁচটি কলাখেকো হনুর জন্য কয়টি কলা লাগবে?"" তাহলে এবার পাঁচটি হনুর মধ্যে যদি একটির কলায় বীতরাগ থাকে তাহলে হিসেবটা একটু অন্য হয়ে যাবে, কিন্তু সেটাও কি সহজ সরল নন-ডাইলেক্টিকাল পিতাঠাকুরকে মাথায় রাখতে হবে? আজব আবদার! সব বাঙালি যেমন মাছ খায় তেমনি সব হনুই কলা খায়। সাফ কথা। ডাইলেক্টিক্স দুষ্পাচ্য কিছু না মশাই অতি অতি সরল ব্যাপার! হেগেল/মার্ক্স ইত্যাদি প্রত্যুৎপন্নমতি এঁচোড়ে পাকাদের কে যে  দিস্তে দিস্তে কাগজ নিয়ে বসিয়ে ছিল কে জানে!  
     
     
  • Debasis Bhattacharya | ১৫ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৩৮518685
  • আজ্ঞে, তা যা বলেছেন। হনুদের ইচ্ছে অনিচ্ছে সবই তাঁর লীলে। বেচারা যুক্তির কি আর সেখেনে পৌঁছোবার আস্পদ্দা হতে পারে, না হওয়া উচিত?
  • &/ | 107.77.232.220 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৩৫518697
  • লীলাকদলী খেতেন একজন হনুমতী, চিলিম্পা । খুবই লীলা সহকারে।   মনে পড়ছে ? :)
  • Debasis Bhattacharya | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৪০518698
  • শট মেমোরি, সবিস্তারে বলেন!
  • &/ | 107.77.232.220 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৪৭518700
  • পরশুরাম রচিত বিখ্যাত গল্প 'হনুমানের স্বপ্ন' :)
  • আধুনিকতার খোঁজে | 122.162.151.35 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৫৭518701
  • আচ্ছা হনুমান পাকা কলা খায় দেখেছি। কাঁচকলা খায় কি না জানি না। খায় না বলেই জানি। অন্তত ছেলেবেলার ''হনুমান তুই কাঁচকলা খা'' এই সূত্রে। সে ক্ষেত্রে ছেলেটির মাথায় হয়তো ঘুরছিলো হনুতে আদৌ কাঁচকলা খাবে কি না। হনু রিজেক্ট করে দিলে কী হবে! যুক্তিবাদী বাপঠাকুরের মাথায় হয়তো তা আসেনি। কলার আবার কাঁচা পাকা কী? রিজেক্ট করলেও ব্যাটা হনুকে কলা খেতেই হবে। অংকের স্বার্থে। সে কাঁচা পাকা যাই হোক। আর ছেলেটি হিসেবে টিসেব করে দশটি কলা নিয়ে গেলো। এখন কাঁটালি কলা এক হনু খায় দুটি আবার আরেকটি খায় তিনটি। দুটি করে দিলেই তো হবেনা। খিদেটাও খেয়াল রাখতে হবে। আলফাটা হয়তো কেড়েকুড়ে দশটাই খেয়ে নিলো। বাকিগুলোর জন্য তাহলে আরো লাগবে। সিঙ্গাপুরি না কাঁটালি তার ওপরে আবার পেট ভরার ব্যাপারটা ডিপেন্ড করবে। আবার চারটি লক্ষীটির মতো দুটি করেই খেলো। আরেকটা সদ্য প্রেমে ঘা খাওয়া। বেচারা মুখেই তুললো না। দুটো পড়ে থাকলো বাপঠাকুরের কাছে ফেরত যাওয়ার জন্য।মানে লাগলো আটটি। আবার ছেলেটির জায়গায় আমি হলে ফেরত যেত না। আমার উদরে যেত। মানে কলা সেই দশটি। হনুমান একটা বেড়ে গেলো। সবই লীলে - কী বলেন?  
  • আধুনিকতার খোঁজে | 122.162.151.35 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০১:০৬518702
  • অবশ্য হনুদের পাকস্থলীর মাপ সব এক করে দিয়ে জেলখানার ভিতরে লাঠির বাড়ি দিয়ে একদম মাপে পংক্তিভোজনে অভ্যেস করালে অংক মিলে যাবেএকদম পাক্কা। পাঁচটার জন্য দশটা। ইঊনিভার্সাল হোমোজিনিটি। 
  • Debasis Bhattacharya | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০১:১৭518703
  • &/,
     
    পরশুরাম সবই পড়েছি, কিন্তু বহুকাল আগে, ডিটেল মনে নেই। আপনি বলুন, আমার ধারণা সকলেরই ভাল লাগবে। 
  • &/ | 107.77.232.220 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০১:২০518704
  • পঞ্চাশ জন লোককে নেমন্তন্ন করলে কতটা খাবারের আয়োজন করতে হবে সে কী আর হিসেব করা হয় না? সবাই কি আর সব খায় ? তবে সবাই  মিলে হরে দরে সাবাড় করে  দেয় 
  • Debasis Bhattacharya | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০১:২২518705
  • আধুনিকতার খোঁজে,
     
    একমত হয়ে গেলে আবার তক্কো কীসের? বরং ওর সমর্থনে  কিছু যোগ করতে পারি। মনে করুন, এক হনু প্রথমেই থাবড়া মেরে সব কলা কেড়ে নিয়ে পালালো, তখন কি আর দশটায় কুলোবে? তখন দাঁত খিঁচুনির ভয়ে অ্যারিস্টটল সায়েব দৌড়োবেন, এবং হনুদ্বন্দ্ব ব্যাখ্যায় দ্বন্দ্বতত্ত্ব অপরিহার্য হয়ে পড়বে। 
  • &/ | 107.77.232.220 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০১:২৩518706
  • কিছু বেঁচেও যায় অনেকসময়, সেগুলো পরেরদিন বাড়ির লোকেরা সাবড়ে দেয় 
  • Debasis Bhattacharya | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০১:২৬518707
  • হ্যাঁ, বিয়েবাড়ির বাসি লুচি আর বোঁদের জবাব নেই!
  • আধুনিকতার খোঁজে | 122.162.151.35 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০২:০৪518711
  • থাবড়ার ভয়ে দৌড়ে পালানো কাছাখোলা অ্যারিস্টটল সায়েবের জন্য বাসি লুচি আর বোঁদে বরাদ্দ থাকলো। স্বান্তনা পুরস্কার। 
  • &/ | 107.77.232.220 | ১৬ এপ্রিল ২০২৩ ০২:০৯518712
  • হৃষ্টপটলবাবু  লুচি খেতেন না মনে হয়। তবে ঠেলায় পড়লে খেতেও পারেন। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন