এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • টেক কেয়ার গুরুদেব

    আফতাব হোসেন লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ মে ২০২৩ | ২০৪ বার পঠিত
  • গ্রামে দুটো মাত্র প্যান্ডেল হত।
    ছোটখাটো। দুটোরই মঞ্চে যারা থাকতেন তাদের জন্যই আপনি গালি খেতেন।

    সিক্সে জানতাম আপনি ঠাকুর। দাঁড়িবালা ঠাকুর। হেব্বি লাগতো স্টাইলটা। চাচা নাখুস ছিল। বলতো সালা কুজাতের লোক, মুসলমানদের মত দাঁড়ি রাখে। ঈমান নাই। তখন থেকেই মনে হয় ধর্মে খড়ি। তখন থেকেই কাফের মনে হয়। আপনিই দায়ী।

    এইটে যখন পামেলা এন্ডারসন হিট। তখন শুনলাম হেব্বি কেচ্ছা নাকি কিসব চিঠিপত্র নিয়ে। সদ্য তখন টেস্টোস্টেরন থেকে প্রজেস্টরনের শুরু। আপনি তখন থেকেই গুরু, দেব নন। দেব মানে মূর্তি মনে হয়। ধর্মে মানা। কাফের আমি তখনও।

    স্কুলের ভেতরের স্টেজটা কংগ্রেসীদের ছিল। রাজীব ভক্ত ভাম প্রধানের পাছা চাটা চাকরির পাশ কোর্সের মুখস্ত বিদ্যার জনক 'গাঁয়ের মাস্টার' প্রথম বার রবিঠাকুর চেনালেন। শোনালেন দেবাশীষ মৌলিক সম্পাদিত রচনা বইয়ের  রবিঠাকুরের রচনা। বুঝলাম আপনি হয়ত তাই। আপনাকে হয়ত মুখস্ত রাখতে হয়। ইলেভেনের দিদিরা কচি বয়ফ্রেন্ডের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে শোনাল 'আলোকের এই ঝর্ণা ধারায়'। সুর তাল ছন্দ দেখে বুঝলাম আপনি সেকেল। মার্কেটে তখন লাকি আলি চলছে। কিউ চলতি হে পবন। তখন মনে হয় উচ্চ মাধ্যমিক। অঙ্কের টিউশনি মাস্টার বললো অন্ধকার ঘরে এ আর রহমান শুনিস। হেব্বি লাগবে। আর গরমে ঘুম না এলে দাঁড়িস্বরের গান। বুঝলাম আপনি বড্ড বোরিং।

    কলেজে যখন পতিবাদী হরমোন শরীরে। দুবেলা অনিলায়ন কে গাল দি। এখনকালের জেগে থাকা বাংলার লেখিকারা তখন চে মধু খাচ্ছেন। ২০ টাকার হাতখরচ থেকে সিগারেট খরচ বাঁচিয়ে ১৫ টাকার রলিক আইসক্রিম হাতে নিয়ে যখন বাংলা অনার্সের প্রেমিকার কাছে শুনি 'দিনগুলো মোর সোনার খাঁচায় রইলো না', বিশ্বাস করুন, ফার্স্ট খিস্তি সেদিন দিয়েছিলাম। লবার কবি বলে। মনে মনে ভেবেছিলাম ভাগ্যিস বাঁ#  সায়েন্সের, নইলে আপনার ন্যাকামিতে মার গাড়ানো কেস হত।

    তারপর বহু দিন। লাইব্রেরিয়ান ছিলেন জহর কাকু। জহুরি মানুষ। চিনিয়েছিলেন মন সবসময় মাথা দিয়ে ছুঁতে নেই। মাঝে মাঝে মন ছুঁতে মন লাগে। ৩৬৩ দিন বিশ্বাস করতাম। দুটো দিন বাদে। বললাম না দুটো প্যান্ডেল হত গ্রামে। নেতা, বাংলা মাস্টার, আর বেশি চাঁদা দেওয়া লোকগুলো শোনাত আপনার কথা। স্টেজে বসে। মুখস্ত। সাথে আবার ডবকা মার্কা নেতা বউদের ঘরগুষ্টির হেঁড়া সুরে সেই 'আলোকের এই ঝর্ণা ধারায়'..

    মারা ডিসগাস্টিং ....

    শান্তিনিকেতন যাবার শখ ছোট থেকে ছিল। ইউনিভার্সিটি হতে হতে আপনাকে অপার বিস্ময়ে ছোঁয়া শুরু করেছি। জানলাম দোল পূর্ণিমায় আপনার শান্তিনিকেতনে নাকি হেব্বি ভিড়। স্বয়ং আপনি নাকি বিরাজ করেন আকাশে বাতাসে। পরে শুনলাম সবাই নাকি বিদেশিদের দোল চটকানো দেখতে যায়। অনেকে নাকি আপনাকে সোনাঝুরির হাটের ফ্যাশনে খুঁজে। কি জানি। যাওয়া হয়নি এখনো।

    মাঝখানে বাওয়াল শুনলাম আপনাকে নিয়ে। আপনার চাঁদ ওঠা নিয়ে। চাঁদের আগে নাকি কোন এক রোদ বাঁ# লাগিয়ে গানের শ্লীলতাহানি করেছিল। বাঙালির সে কি রাগ। তবে আমি বুঝলাম আপনার ইমেজ বড্ড ঠুনকো হয়েছে হয়ত। না হলে বেশ্যাকবির সুরে বিশ্ব কবির কি ছেঁড়া যায়?

    ক্ষমা করবেন গুরুদেব.... বাঙালি আর বাঙালি নাই.. এখন দুটো জাত, একাত্তরের আগের আর একাত্তরের পরের।

    পুরো বাংলা জুড়ে আপনি মাত্র দুদিনের ছুটি। ছটে কিন্তু তিনদিন। 

    আপনাকে আকন্ঠ পান করে যা বুঝেছি তাতে মনে হয় আপনি আপামর বাঙালির কাছে
    বাংলা অনার্স, শান্তিনিকেতন আর গীতাঞ্জলিতেই রয়ে গেছেন।

    তাও আছেন...

    শুনেছি সুনার বঙ্গালে 'টেগোর' বলে মার্কেটে কেউ আসছে, যার বিদ্যুতে নোবেল ঘরছাড়া...
     
    তাই

    টেক কেয়ার গুরুদেব।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে প্রতিক্রিয়া দিন