এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বরদাচরণ-নজরুল–সুভাষ

    Surajit Dasgupta লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৮ নভেম্বর ২০২৩ | ৩৭১ বার পঠিত
  • ভগবানজী বহুবার বলেছেন তাঁর সাথে কবি নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠতার কথা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে নেতাজীর ঘনিষ্ঠতার কথা আমরা অনেকেই জানি কিন্তু নজরুলের সাথে ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে খুব বেশী কিছু জানা যায় না। আসলে এখানেও সেই আধ্যাত্মিকতা, যাকে আমরা খুব একটা মানতে চাই না। সেই কারণেই বোধহয় বহুল প্রচারিত নয় এই কাহিনী। নেতাজী এবং নজরুলের ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়েছিল যোগীরাজ বরদাচরণ মজুমদারের মাধ্যমে। প্রথমে এই বরদাচরণ সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া ভালো।

    বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালির অন্তর্গত সাঁওতা গ্রামের এক নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ সন্তান রামচরণ দেবশর্মা (মজুমদার) মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার কাঞ্চনতলা গ্রামের অধিবাসি রামলোচন দেবশর্মার একমাত্র কন‍্যা রুদ্রাণী দেবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। রামলোচনের কোনো পুত্র সন্তান না থাকায় তাঁর ইচ্ছেয় রামচরণ শ্বশুরবাড়িতেই বসবাস করতে থাকেন। রামচরণ ও রুদ্রাণীদেবীর তিন পুত্র সন্তান–দক্ষিণাচরণ, বামাচরণ ও রমাচরণ। শৈশবেই মারা যান রমাচরণ। দক্ষিণাচরণের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের পাহাড়পুর গ্রামের মথুরানাথ চৌধুরীর (দেবশর্মা) কন‍্যা মাতঙ্গিনী দেবীর বিয়ে হয়। উত্তরকালে এই দম্পতির ঘরেই একদিন ঘটনাটা ঘটলো। তারিখ, ১২৯৩ বঙ্গাব্দের ১৬ শ্রাবণ, শনিবার। রাত তখন অনেক গভীর। বাইরে অঝোরে ঝরছে শ্রাবণধারা। মুর্শিদদাবাদ জেলার কাঞ্চনতলা গ্রামে এক জননী তার সদ‍্যজাত সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন কখন। ঘরের ভেতরে রেড়ির তেলের টিমটিমে আলো। আর সূতিকা ঘরের দরজায় জ্বলছে ধুনি। হঠাৎ কচি শিশুর হাত-পা নড়ে ওঠায় ঘুম ভেঙে গেল জননীর। কিন্তু এ কি! সারা ঘর জুড়ে তখন অনির্বাণ জ‍্যোতির ছটা! আলোয় ঝলমল করছে ঘর। সদ‍্যজাত শিশুও তখন চেয়ে রয়েছে চোখ মেলে। ভীতা জননী দরজার বাইরে ধুনুচির দিকে তাকালেন। কিন্তু না, সেটা তো জ্বলেনি! তবে কি হলো? তাড়াতাড়ি দরজার বাইরে শায়িতা শাশুড়িকে চিৎকার করে ডেকে তুললেন। অমনি সে আলো হারিয়ে গেল কোথায়! সব শুনে শাশুড়ি ঠাকরুণ বললেন, আমিও দেখেছি বৌমা। তুমি ভয় করো না। সত‍্যদ্রষ্টা মহাপুরুষের বাণী এতদিনে ফললো। তারপর ইষ্ট দেবতার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে বৌমাকে বললেন, এ এক মহাপ্রতিশ্রুতিময় জাতক। এ ছেলেকে যত্নে মানুষ করো বৌমা।

    উত্তরকালে এই শিশুটিই হয়েছিলেন যোগীরাজ বরদাচরণ। পুরো নাম, বরদাচরণ মজুমদার (দেবশর্মণ)। পেশায় ছিলেন স্কুল শিক্ষক। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের বি.এ। বরদাচরণ প্রথমে মুর্শিদাবাদের নিমতিতা গ্রামের গৌরসুন্দর দ্বারিকানাথ উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং পরে প্রধান শিক্ষক হোন। এখানে টানা পাঁচ বছর কাটানোর পর লালগোলার মহারাজা যোগীন্দ্রনারায়ণের আগ্রহে নিযুক্ত হোন লালগোলা হাইস্কুলে। এই লালগোলাই হয়ে ওঠে বরদাচরণের ঈশ্বর সাধনার তীর্থক্ষেত্র। ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন যোগীরাজ বরদাচরণ। প্রচার নয়, খ‍্যাতি নয়, অর্থ নয়— যোগশক্তিকে অর্ঘ‍্যরূপে ব‍্যবহার করে তিনি আত্মনিবেদিত হলেন আর্ত মানবের সেবায়। ঋষি অরবিন্দ, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম, লালবাগের বিখ্যাত সঙ্গীত সাধক ওস্তাদ কাদের মিঞা প্রভৃতি বিদগ্ধ ব‍্যক্তিদের সঙ্গে বরদাচরণের ছিল গভীর আত্মিক যোগ। এখানে আমরা শুধু নজরুলকে নিয়েই আলোচনা করবো। যোগীবর বরদাচরণের হৃদয়ের একটা বড়ো অংশ জুড়ে ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম, যোগীবরের প্রাণপ্রতীম “কাজী ভায়া"।

    নজরুলের সঙ্গে বরদাচরণের প্রথম সাক্ষাৎটি হয় মুর্শিদাবাদের নিমতিতা গ্রামের এক বিয়ের আসরে। সেখানে নজরুল ছিলেন বরযাত্রী, আর বরদাচরণ ছিলেন কন্যাপক্ষের অতিথি। সেদিনের সেই প্রথম দেখা হওয়ার দিনটি সম্পর্কে নজরুল লিখছেন, “নিমতিতা গ্রামের এক বিবাহ সভায় সকলেই বর দেখিতেছে, আর আমার ক্ষুধাতুর আঁখি দেখিতেছে আমার প্রলয়সুন্দর সারথিকে। সেই বিবাহ-সভায় আমার বধূরূপিনী আত্মা তাহার চিরজীবনের সাথীকে বরণ করিল। অন্তপুরে মুহুর্মুহু শঙ্খ-ধ্বনি, উলু-ধ্বনি হইতেছে, স্রক-চন্দনের শুচি সুরভি ভাসিয়া আসিতেছে, নহবতে সানাই বাজিতেছে—এমনি শুভক্ষণে—আনন্দ বাসরে আমার সেই ধ‍্যানের দেবতাকে পাইলাম।” যোগীবর বরদাচরণের সান্নিধ্যে নজরুল পেয়েছিলেন শাশ্বত শান্তিপথের দিশা। এ প্রসঙ্গে নজরুল লিখছেন, “তাঁহারই চরণতলে বসিয়া যিনি আমার চিরকালের ধ‍্যেয় তাঁহার জ‍্যোতি-রূপ দেখিলাম। তিনি আমার হাতে দিলেন যে অনির্বাণ দীপ-শিখা, হাতে লইয়া আজ বার বৎসর ধরিয়া পথ চলিতেছি— আর অগ্রে চলিতেছেন তিনি পার্থসারথিরূপে। আজ আমার বলিতে দ্বিধা নাই, তাঁহারই পথে চলিয়া আজ আমি আমাকে চিনিয়াছি।” তাই গুরু বরদাচরণের দেওয়া বীজমন্ত্রে উদ্বুদ্ধ নজরুলের শ্রদ্ধাবনত নিবেদন, “আমার যাহা কিছু শক্তির প্রকাশ হইয়াছে— কাব‍্যে, সঙ্গীতে, অধ‍্যাত্ম জীবনে তাহার মূল যিনি, আমি যাঁহার শক্তি প্রকাশের আধার মাত্র, তাঁহাকে জানাইবার আজ আদেশ হইয়াছে বলিয়াই জানাইলাম। লোকে, শ্রীরামচন্দ্রকেই দেখে, তাঁহার পশ্চাতে যে ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠ, যাঁহার সাধনার ফল শ্রীরামচন্দ্র, তাঁহার কথা কয়জন ভাবে?”

    কাব‍্যচর্চায় দিন কাটছিল কবির। হঠাৎ ছন্দপতন। অকালে মারা গেল কবির বড় আদরের সন্তান বুলবুল। স্বভাব-চঞ্চল, চির দুরন্ত কবি স্তব্ধ হয়ে গেলেন। ব‍্যাকুল হয়ে ছুটলেন মুর্শিদাবাদের লালগোলায় গুরু বরদাচরণের কাছে। ব‍্যথিত পিতাকে অত্যন্ত স্নেহের সঙ্গে যোগীবর বললেন, ছেলেকে দেখার খুবই ইচ্ছে? বলেই শিষ্যকে দিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিশ্রুতি, বললেন, বেশ, দেখতে তুমি পাবে। কিন্তু দেখো, কোনো কথা তাকে বোলো না। এর একমাস পেরোয়নি। একদিন কবি তাঁর উপাসনা ঘরে বসে একমনে গুরুপ্রদত্ত বীজমন্ত্র জপ করছেন। হঠাৎ তাঁর তন্ময়তা ভেঙে গেল। চোখ মেলে অবাক হয়ে দেখলেন, তাঁর আদরের ছোট্ট বুলবুল ছোট দুটি টলোমলো পায়ে ঘরে ঢুকলো। তার জামাকাপড় খেলনা ভর্তি আলমারিটি খুলে নেড়েচেড়ে দেখল। তারপর আলমারি বন্ধ করে শোকাহত পিতার দিকে চেয়ে একটা মৃদু পরিচিত হাসি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। এরপর একদিন সকালে গুরু বরদাচরণের পায়ে এসে লুটিয়ে পড়লেন নজরুল। ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে প্রায় রুদ্ধকণ্ঠে বললেন, আপনার কৃপায় ছেলের দেখা আমি পেয়েছি। আমার মন এখন শান্ত। গুরু বরদাচরণ কলকাতায় এলে নজরুল প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাঁর কাছে আসতেন। আলাপ-আলোচনা শেষে যোগীবর শুনতে চাইতেন তাঁর প্রিয় গান, “শ্মশানে জাগিছে শ‍্যামা।” ১৯৪০ সালের প্রথমদিকে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ডাক্তারের পরামর্শে তাঁকে কলকাতায় আনা হলো। মাসাধিক কাটিয়ে আবার ফিরে গেলেন লালগোলায়।

    কিন্তু সে বছর অক্টোবরের শেষে ফের অসুস্থ হয়ে পড়লেন তিনি। আবার কলকাতায় আনা হলো তাঁকে। এবার ব‍্যাকুল শিষ্যদের সামনে যোগীবর বললেন, আজ থেকে বাইশটা দিন যদি এই দেহখানাকে ধরে রাখতে পারো, তবে আরও কিছুদিন তোমাদের মাঝে থাকবো। শুরু হলো সেই প্রচেষ্টা। খবর পেয়ে ছুটে এলেন যোগীবরের প্রাণপ্রতীম “কাজী ভায়া”— কাজী নজরুল ইসলাম। ঘরে ঢুকেই নজরুল বসলেন গুরুর শয্যাপাশে। যোগীবর দু’ চোখ ভরে দেখলেন তাঁর প্রিয় শিষ্যকে, নজরুলের দু’ চোখ বেয়ে তখন অশ্রুর বন‍্যা। কিছুটা শান্ত হবার পর সহসা নজরুল যোগীরাজের সামনে মাটির ওপর বসে তাঁর পা দু’ খানি সামনের দিকে প্রসারিত করে শুরু করলেন এক যোগ-মুদ্রা। সেইসঙ্গে চলতে লাগলো তাঁর “হুঁ মা” মন্ত্রোচ্চারণ। প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা ধরে চললো বিরামহীন এই যোগ প্রক্রিয়া। সে রাতটা পেরিয়ে গেল। একুশতম দিনে সব শেষে গুরুর আদেশ হলো, কাজী ভায়া, এবার শেষ গান “শ্মশানে জাগিছে শ‍্যামা…।” কবি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। আকুল কান্নায় ভেঙে পড়লেন। শেষে ধরা গলায় বললেন, দাদা, স্বধামের কথা কি সত্যিই মনে পড়েছে? আমাদের কি সত্যিই ছেড়ে যাবেন? সস্নেহে উত্তর দিলেন যোগীরাজ, বললেন, কাজী ভায়া, শিক্ষা দিতে তো কার্পণ্য করিনি। তবে এ দুর্বলতা কেন? নজরুল বললেন, দাদা, সব বুঝি, কিন্তু স্নায়ুগুলো যে ছিঁড়ে যাচ্ছে! তবুও আসন্ন বিচ্ছেদে ব‍্যথিত হৃদয়ে সব যন্ত্রণাকে চেপে গেয়ে উঠলেন গুরুর প্রিয় গানখানি, “শ্মশানে জাগিছে শ‍্যামা।” … একুশতম দিন পেরিয়ে গেল। পরদিন বাংলা ১৩৪৭ সালের ১ লা অগ্রহায়ণ চির অনন্তের পথে যাত্রা করলেন যোগীরাজ বরদাচরণ।

    ইংরেজি ১৯১৬ সালের এক শরতের সকালে বীরভূমের তারাক্ষেত্র তারাপীঠে এসেছিলেন। এরপর ১৯১৬ থেকে ১৯৩৮ পর্যন্ত ১২ বছর সময়কালের মধ্যে তিনি বহুবার তারাপীঠে এসেছেন। তারাপীঠে নজরুল পরিচিত ছিলেন “তারাক্ষ‍্যাপা” নামে। এর আগে আরও দুই সাধক “তারাক্ষ‍্যাপা” বলে পরিচিত হয়েছিলেন, একজন ব্রহ্মচারী তারানাথ এবং অন্যজন বসিরহাটের মণি গোঁসাই। তারাপীঠ শ্মশানে বসে ধ‍্যানমগ্ন থাকতেন মাতৃসাধক নজরুল। কখনো বা কুম্ভক যোগে তারা মায়ের উপাসনা করতেন। বীরভূমের বক্রেশ্বরে এক অঘোরপন্থী সাধকের সঙ্গেও নজরুলের পরিচয় ছিল। মাতৃসাধক নজরুল কখনও দক্ষিণেশ্বর, কখনও আদ‍্যাপীঠ, কখনও তারাপীঠ আবার কখনও বীরভূমের ফুল্লরা মহাপীঠে গিয়েও জপ, ধ‍্যান ও তন্ত্র সাধনা করতেন।

    একবার ফুল্লরাপীঠের নাটমন্দিরে রুদ্রাক্ষ মালা হাতে কুম্ভকরত নজরুলকে মাটি থেকে প্রায় ৭/৮ ফুট উঁচুতে শূন্যে স্থির হয়ে থাকতে দেখেছিলেন সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়। তারাশঙ্করের জন্মভিটে লাভপুরের কাছেই ফুল্লরা। বিস্মিত হয়ে তারাশঙ্কর দেখতে লাগলেন এই দৃশ্য। কিছুক্ষণ পর সাধক নজরুলের দেহ ধীরে ধীরে মাটিতে নেমে এলো। পরবর্তীকালে তারাশঙ্কর অনেককে এই ঘটনার কথা বলেছিলেন। গুরু বরদাচরণের কাছে দীক্ষা নেবার পরেই নজরুলের জীবনে এই আধ‍্যাত্মিক পরিবর্তন আসে।

    নজরুল একসময় থাকতেন উত্তর কলকাতার হরি ঘোষ স্ট্রিটের একটি দোতলা বাড়িতে। সেই বাড়ির এক তলায় তিনি তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু ভাস্কর গোষ্ঠ পালকে দিয়ে একটি সুন্দর কালীমূর্তি তৈরি করান। প্রায় সারা রাত ধরে রাশি রাশি জবা ফুল দিয়ে তিনি এই মা কালীর পুজো করতেন। কখনও বা ১০৮ রুদ্রাক্ষ মালা জপতে জপতে সমাধিস্থ হয়ে যেতেন তিনি। এই মাতৃসাধন পর্বে নজরুল অজস্র ভক্তিগীতি লেখেন। এই সময় দিনে মাত্র একবার আহার করতেন। আর তাঁর কলমের ডগা দিয়ে ঝরতে লাগলো ভক্তিগীতির ঝর্ণাধারা। শ‍্যামা সঙ্গীত, বৈষ্ণবীয় ভাবের সঙ্গীত, বাউল, কীর্তন, স্বদেশ প্রেম প্রভৃতি বহু বিষয়ের ওপর প্রচুর গান রচনা করলেন তিনি।

    “বিষের বাঁশি”-তে “অগ্নিবীণা”-র ঝংকার তুলে যিনি বলেছিলেন, ”আমি বিধির বিধান ভাঙিয়াছি, আমি এমনই শক্তিমান” সেই চির বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামই লিখলেন, “বল রে জবা বল/ কোন্ সাধনায় পেলি রে তুই শ‍্যামামায়ের চরণতল।” না, এখানেই শেষ নয়। আবার বিদ্রোহী কবির কলম থেকে ঝরে পড়লো দরদী মনের শ‍্যামা সঙ্গীত, “শ‍্যামামায়ের চরণতলে দেখে যা আলোর নাচন”, “শ্মশানে জাগিছে শ‍্যামা…।” শুধু শ‍্যামাকে নিয়েই নয়, শ‍্যামকে নিয়েও লিখলেন, “ওরে নীল যমুনার জল / বল্ রে মোরে বল্ / আমার কৃষ্ণ কোথায় বল্ ..।” একই ব্রহ্মশক্তির বিভিন্ন রূপের অনবদ্য ব‍্যাখ‍্যা করে নজরুল লিখলেন “দেবীস্তুতি।” উচ্চস্তরের মাতৃসাধক ছাড়া তা অসম্ভব। সব শেষে বলা যায়, বাংলার অধ‍্যাত্ম সঙ্গীতের ক্ষেত্রে মাতৃসাধক কবি নজরুল খ্রিস্টিয় অষ্টাদশ শতাব্দীর সিদ্ধ মাতৃসাধক ও মাতৃসঙ্গীতের স্রষ্টা সাধক রামপ্রসাদ এবং সাধক কমলাকান্তের সার্থক উত্তরসূরী।

    ‘ভক্তিগীতি মাধুরী’ নামে নজরুলের ৫০১টি ভজন, কীর্তন, শ্যামাসঙ্গীত এবং ইসলামি গানের নির্বাচিত সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল বহু বছর আগে। করুণা প্রকাশনীর বই। সেই বইটির ভূমিকা হিসেবে নজরুলের যে লেখাটি আছে সেটা পড়ে জানা যায়, নজরুল একজন হিন্দু গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। তাঁর নাম বরদাচরণ মজুমদার। নজরুল লিখছেন, ‘তিনি (বরদাচরণ মজুমদার) এই গ্রন্থ-গীতার উদগাতা’। অর্থাৎ এই যে ভজন, কীর্তন, শ্যামাসঙ্গীত এবং ইসলামি গানের সংকলন, তাকে তিনি বলছেন ‘গীতা’। এবং বরদাচরণের ভাবনায় এই বইয়ের প্রকাশ। সম্ভবত নজরুল ভেবেছিলেন ভজন, কীর্তন আর ইসলামি গানের সুরে, কথায় রচিত হবে নতুন এক সংস্কৃতির ধর্মগ্রন্থ।

    নজরুলের ‘পথহারার পথ ও দ্বাদশ বাণী বইয়ের প্রথম সংস্করণের ভূমিকা লিখেছিলেন স্বয়ং নজরুল। পরে তা  ব্যবহার করা হয় ‘ভক্তিগীতি মাধুরী’ সংকলনের ভূমিকা হিসেবে। ‘পথহারার পথ ও দ্বাদশ বাণী’-র আধুনিক যে সংস্করণ পরবর্তীতে পাওয়া যায়, তাতে নজরুলের ভূমিকাটি নেই। সেখানে ভূমিকা লিখেছেন প্রশান্ত চক্রবর্তী নামে এক ভক্ত। তবে উল্লেখ আছে যে এই বইয়ের প্রথম সংস্করণের ভূমিকা লিখেছিলেন ‘বিদ্রোহী কবি’।

    প্রশান্ত চক্রবর্তীর সেই ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘…বরদাচরণের হৃদয়ের একটা বৃহৎ অংশ জুড়ে যে মানুষটি বিরাজমান ছিলেন তিনি হলেন বাঙালির চির-বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। যোগীবরের প্রাণপ্রতিম ‘কাজী ভায়া’। …তাই বরদাচরণের ‘পথহারার পথ’ গ্রন্থের প্রথম সংস্করণের ভূমিকায় কাজী লিখেছিলেন, ‘তাঁহারই চরণতলে বসিয়া, যিনি আমার চিরকালের ধ্যেয়, তাঁহার জ্যোতিরূপ দেখিলাম। তিনি আমার হাতে দিলেন যে অনির্বাণ দীপশিখা, তাহা হাতে লইয়া আজ বারো বৎসর ধরিয়া পথ চলিতেছি- আর অগ্রে চলিতেছেন তিনি পার্থ-সারথী রূপে। … তাঁহারই পথে চলিয়া আমি নিজেকে চিনিয়াছি। …আমার যাহা কিছু শক্তির প্রকাশ হইয়াছে- কাব্যে, সঙ্গীতে, আধ্যাত্মজীবনে তাহার মূল যিনি, আমি যাহার শক্তি প্রকাশের আধার মাত্র, তাঁহাকে জানাইবার আজ আদেশ হইয়াছে বলিয়াই জানাইলাম। লোকে শ্রীরামচন্দ্রকেই দেখে, তাঁহার পশ্চাতে যে ব্রহ্মর্ষি বশিষ্ঠ, যাহার সাধনার ফল শ্রীরামচন্দ্র, তাঁহার কথা কয়জন ভাবে’।

    এই বরদাচরণ মজুমদারের কাছেই আধাত্মিকতার মাধ্যমে নেতাজীর সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে কবি নজরুলের। এছাড়াও দুজনেই একসাথে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, একই সভায় উপস্থিত থেকেছেন একসাথে। বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে একসাথে জেল খেটেছেন। নজরুল কবি হয়ে ওঠার আগে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছেন আর সুভাষচন্দ্র নেতাজী হয়ে ওঠার পরে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছেন। দুজনেরই হাতে একদিকে যেমন বন্ধুক বা অস্ত্র উঠেছে তেমনি কলমও উঠেছে। নেতাজীর অনুরোধে নজরুল "কান্ডারী হুঁশিয়ার" কবিতাটা লিখেছিলেন। নেতাজী এবং নজরুল দুজনেই উচ্চকোটির যোগীপুরুষ ছিলেন। প্রায় বলতে গেলে একে অপরের পরিপূরক ছিলেন। নজরুলের বিদ্রোহী সত্তাকে যেমন নেতাজী সন্মান করতেন এবং কাজে লাগিয়েছেন নজরুলের কবিতা, দেশবাসীর মন এবং শরীরের রক্ত চনমনে করে তোলার জন্য। তেমনি নজরুলও নেতাজীকে শ্রদ্ধা, সন্মান করতেন অতি প্রকটভাবে এবং দেশের একজন মহান বিপ্লবী বলে স্বীকার করতেন। নেতাজী এবং কবি নজরুল সম্পর্কে কিছু বিশিষ্ঠ ব্যক্তিদের উক্তি নীচে দেওয়া হলঃ

    বিপ্লবী অমলেন্দু দাশগুপ্ত প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলেছেন, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে যখন সুভাষচন্দ্র মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, সে সময়ে ১২ই এবং ১৩ই জুন পরপর দুদিন যোগী বরদাচরণের কাছে গিয়েছিলেন (লক্ষণীয় এঁর কাছে কবি নজরুল ইসলামও গিয়েছিলেন)। বরদাচরণ এ বিষয়ে লিখেছেন, “আজ তাঁকে (সুভাষচন্দ্র) যোগের বিশেষ প্রক্রিয়া (ক্রিয়াযোগ) বলে দিলাম, ধ্যানে বসিয়ে ছিলাম, অনেকক্ষণ ধ্যানস্থ ছিলেন।” (তথ্যসূত্র: ‘সুভাষচন্দ্রের দৃষ্টিতে ধর্ম’, শ্যামাপ্রসাদ বসু)

    সেকালে বাংলার যৌবনের রূপ একটিমাত্র রূপ; সে রূপ বিদ্রোহী রূপ, বিপ্লবী রূপ, সেই ১৯২২ সাল, ২৩ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত, বাংলার এই যৌবন সম্পর্কে যখনই মনে মনে ধারণা করতে চেয়েছি – তখনই মনে পড়েছে একসঙ্গে দুটি নাম – প্রথম নাম নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর এবং তাঁর ছায়ার মতো দেখতে পেতাম আরও একজনকে, তিনি কাজী নজরুল ইসলাম। —তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (তথ্যসূত্র: ‘শতকথায় নজরুল’, কল্যাণী কাজী সম্পাদিত)

    ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার এলবার্ট হলে দুপুর দুটোয় মহা সমারোহে নজরুলকে কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে জাতীয় সংবর্ধনা জানানো হয়। উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন ‘কল্লোল’ ও ‘সওগাত’-এর দুই সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাশ ও মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। এঁরা দুজনে ছিলেন সংবর্ধনা-সমিতির যুগ্ম-সম্পাদক। এছাড়া ছিলেন আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ, হাবীবুল্লাহ বাহার প্রমুখ। অভ্যর্থনা-সমিতির সভাপতি ছিলেন এস ওয়াজেদ আলী। অনুষ্ঠানে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় সভাপতি ও নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু প্রধান অতিথি ছিলেন। দুপুর দুটোয় ফুল-শোভিত মোটর গাড়িতে করে কবিকে সভাস্থলে আনা হয়। কবি সভাকক্ষে প্রবেশ করলে সকলে জয়ধ্বনি দিয়ে তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা ও সম্মান জ্ঞাপন করেন। শিল্পী উমাপদ ভট্টাচার্য ‘চল্ চল্ চল্’ গানটি উদ্বোধনী সংগীত হিসেবে পরিবেশন করেন। নজরুল সংবর্ধনা-সমিতির সদস্যবৃন্দের পক্ষে প্রদত্ত অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন এস ওয়াজেদ আলী। পরে অভিনন্দনপত্রটি একটি রূপোর কাসকেটে ভরে সোনার দোয়াত ও কলমসহ কবির হাতে তুলে দেওয়া হয়। সভায় অভিনন্দন জানিয়ে বক্তৃতা করেন রায়বাহাদুর জলধর সেন।
    সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্রে নজরুলের গান গাওয়া হবে, কারাগারেও আমরা তাঁর গান গাইব।’ সংবর্ধনা সভায় নজরুল সকলের অনুরোধে টলমল টলমল পদভরে / বীরদল চলে সমরে’ এবং সুভাষচন্দ্র বসুর অনুরোধে দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু  গান গেয়ে শোনান। নজরুলের অনন্য প্রতিভাষণ সকলকে মুগ্ধ করে। (তথ্যসূত্র: ‘নজরুল তারিখ অভিধান’, মাহবুবুল হক)

    স্বাধীন দেশে জীবনের সাথে সাহিত্যের স্পষ্ট সম্বন্ধ আছে। আমাদের দেশে তা নেই। নজরুলকে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। নজরুল জীবনের নানা দিক থেকে উপকরণ সংগ্রহ করেছেন, তার মধ্যে একটা আমি উল্লেখ করব। কবি নজরুল যুদ্ধের ঘটনা নিয়ে কবিতা লিখেছেন। কবি নিজে বন্দুক ঘাড়ে করে যুদ্ধ করেছিলেন, কাজেই নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সব কথা লিখেছেন তিনি। আমাদের দেশে ঐরূপ ঘটনা খুব কম, অন্য স্বাধীন দেশে খুব বেশি। এতেই বুঝা যায় যে, নজরুল জীয়ন্ত মানুষ। —নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু (তথ্যসূত্র: ‘নজরুল স্মৃতি’, বিশ্বনাথ দে সম্পাদিত)
    আমরা আগামী সংগ্রামে কবি নজরুলের সঙ্গীত কণ্ঠে ধারণ করিয়া শ্রীমান সুভাষের মতো তরুণ নেতাদের অনুসরণ করিব। ফরাসী বিপ্লবের সময়কার কথা একখানি বইতে সেদিন পড়িতেছিলাম। তাহাতে লেখা দেখিলাম, সে সময় প্রত্যেক মানুষ অতি মানুষে পরিণত হইয়াছিল। আমার বিশ্বাস, নজরুল ইসলামের কবিতা পাঠে আমাদের ভাবী বংশধরেরা এক-একটি অতি-মানুষে পরিণত হইবে। — আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় (তথ্যসূত্র: ‘সমকালে নজরুল ইসলাম’, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম)

    নজরুলের আধ্যাত্মিক চেহারা আমরা মানতে চাই না, এক্ষেত্রে হয়তো জাতপাতের বিষয় চলে আসে। নজরুল একজন মুসলিম হয়ে হিন্দু আধ্যাত্মিক জগতের একজন উচ্চকোটির মানুষ ছিলেন, এটা হয়তো আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়। তেমনি নেতাজীর ক্ষেত্রেও তাঁকে আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ বলে মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হয়। ফৈজাবাদের রামভবন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবকিছুই দেখিয়ে দিয়েছে, সরকারীভাবে না হলেও সবাই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন, তবুও সরকারের লাইন থেকে আমরা অন্য লাইনে যেতে পারছি না এখনও। এটাও সেই গোয়েবেলসীয় প্রোপাগান্ডা, মিথ্যার বেসাতীরা এত মিথ্যা ছড়িয়েছেন বিগত দশকগুলো ধরে যে মানুষের কাছে মিথ্যাগুলোই সত্যি বলে মনের মণিকোঠায় ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। আর নজরুলের ক্ষেত্রে যেটা দুই ধর্মের মানুষের কাছে এক উদাহরন হতে পারতো, সাম্প্রদায়িক মেলবন্ধনের কাজ করতে পারতো, ধর্মের ব্যাবসায়ীরা ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে তা হতে দেয়নি।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :/ | 37.235.49.61 | ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৪৫526223
  • এ তো আশ্চৰ্য খপর মশাই। সুভাষ বোস যোগসাধনায় এতদূর এগিয়েছিলেন জান্তুম না!!
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৬:২৭526237
  • ওরে বাবা, বলেন কী? উচ্চকোটির যোগীপুরুষও ছিলেন নেতাজী?
  • Amit | 163.116.203.21 | ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:২৯526240
  • নেতাজি এতো বড়ো যোগী সিদ্ধপুরুষ ছিলেন রে ভাই তো তাহলে যখন মনিপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ খাবি খাচ্ছিলো তখন তিনি তো যোগবলেই শত্রুদের একে মিনিটে ভস্ম করে দিতে পারতেন। 
     
    নাকি যোগের ফুয়েল অতটা জমা হয়নি তখন ও ? 
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩১526242
  • তার উপরে যোগসর্পের হাঁড়িগুলো .... সোজা কথা তো নয়....
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন