এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • ঘটি-র কিস্‌সা

    Argha Bagchi লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৫ এপ্রিল ২০২৪ | ৩০১ বার পঠিত
  • বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের উৎস অন্য যেকোনো ভাষার মতোই বৈচিত্র্যে ভরা। এখনো পর্যন্ত এই ভাষার অধিকাংশ শব্দেরই সঠিক উৎসসূত্র নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। এযাবৎ প্রকাশিত অভিধানগুলিতে শব্দের উৎস বা ব্যুৎপত্তি যেটুকু পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই সংস্কৃত তৎসম বা তদ্ভব, অথবা চেনা-পরিচিত বিদেশি শব্দের সূত্র। কিন্তু তথাকথিত দেশী বা বাংলা প্রয়োগ বলে যে কথ্য শব্দগুলিকে আলাদা করে রাখা হয়েছে, তাদের নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার কাজ যথেষ্ট পরিমাণে হয়নি। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বহু ভাষাবিদ বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেছেন, যদিও কোন একক গ্রন্থের দুই মলাটের পরিসরে সেগুলি যথাযথ বিশ্লেষণ সহকারে পাওয়া যায় না। এরকমই একটি শব্দের মূল অণ্বেষনের উদ্দেশ্যে বর্তমান নিবন্ধের অবতারণা।
     
    আলোচ্য শব্দটি হল ‘ঘটি’। জল রাখার বাসন হিসেবে নয়, জাতিগত অর্থে ‘ঘটি’ শব্দের উৎস কী হতে পারে, আমরা সে বিষয়ে অনুসন্ধান করব। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারব, প্রচলিত ‘বাঙাল’ শব্দের বিপরীত অর্থে ‘ঘটি’ শব্দের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে অর্বাচীন, যদিও শব্দটির কথ্য ব্যবহার যথেষ্ট প্রাচীন।
     
    বাংলায় ঘটি শব্দের অর্থবৈচিত্র্য বহুল পরিমাণ। প্রথমত, ঘটের মত ধাতুনির্মিত ছোট জলপাত্র বিশেষ, ঘটিবাটি। দ্বিতীয়ত সময়নির্ধারক শব্দ, আড়াই দণ্ডে এক ঘটিকা। তৃতীয়ত, কালনির্ণায়ক যন্ত্রবিশেষ, ঘটিকাযন্ত্র বা ঘড়ি। এবং, চতুর্থত জাতিনির্ণায়ক শব্দ, এপার বাংলা বা পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ আঞ্চলিক অধিবাসী, যারা বাঙাল নয়, ঘটি। এই চতুর্থ অর্থে ঘটি শব্দের কোন ভুক্তি প্রাচীন বা অন্তত ভারতের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরবর্তী অভিধানে পাওয়া যায় না, যদিও অন্যান্য অর্থগুলি সহজে প্রাপ্য। কিন্তু বাঙাল শব্দটি আঞ্চলিক অধিবাসী বা তাদের বৈশিষ্ট্য বোঝাতে অভিধানে সে সময়েও পাওয়া যায়। বৃহত্তর দেশটি (পলিটিকাল নেশন অর্থে নয়) যেহেতু বাংলা, এবং তার ভাষা বাংলা, অধিবাসীরা বাঙালি নামে পরিচিত, সুতরাং তার একটা বিশেষ অঞ্চলের লোকেদের বাঙ্গাল বা বাঙাল বলাটা হয়ত স্বাভাবিক প্রবণতার পরিচায়ক (আমি বাঙ্গাল, আমার বাটী যশোহর – মধুসূদন) [বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, ২য় সং, বাংলা একাডেমী, ঢাকা ]। কিন্তু এর জবাবে যখন ঘটি শব্দের প্রয়োগ শুরু হল, ততদিনে বাংলার রাজনৈতিক জীবনে অনেক পালাবদল ঘটে গেছে, ঘৃণার ইতিহাস মানুষের মুখের ভাষাকে অনেকটাই বদলে ফেলেছে। ফলে, পুরনো অভিধানে ঘটি শব্দের ব্যবহার বাঙালের প্রতিশব্দ হিসেবে জায়গা না পেলেও আধুনিক অভিধানে সে অর্থের অন্তর্ভুক্তি সম্ভব হয়েছে। দৈনন্দিন সামাজিক ব্যবহারেও মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল দলের খেলায় আজও ঘটি-বাঙাল তরজা উল্লেখের দাবিদার, অথচ স্বাধীনতার আশেপাশের সময়েও বাঙাল না হলে সে ঘটি, এরকম কদর্থে ঘটি শব্দের প্রয়োগ যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ছিল না, অভিধানে সে শব্দ না পাওয়ার ইঙ্গিত থেকে এই অনুমান করা সঙ্গত। সামাজিক ইতিহাসের দিকে ভালো করে নজর করলে দেখা যাবে, যে সময় থেকে ইংরাজি ‘রিফিউজি’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘বাঙাল’, মোটামুটি সেই সময় থেকেই হয়ত বাঙাল শব্দের বিপ্রতীপে ঘটি শব্দটির ব্যবহার প্রাধাণ্য পেতে শুরু করে।
     
    কিন্তু ঘটি-ই কেন? কেন কাঙাল বা অনুরূপ ধ্বন্যাত্মক শব্দ নয়? তাহলে কি আঞ্চলিক পরিচিতির জন্য এইরকম কোন শব্দ আগে থেকেই ব্যবহারের মধ্যে ছিল? সেটাই স্বাভাবিক অনুমান। বাংলার ইতিহাসের দিকে তাকালে যে যে আঞ্চলিক শব্দের চল দেখা যায়, তাদের মধ্যে কয়েকটি হল, রাঢ়ী, বারেন্দ্রী, সমতটী; কিংবা কলকাতাইয়া, ঢাকাইয়া, চাটগাঁইয়া, মেদিনীপুরিয়া ইত্যাদি। একটু খেয়াল করলে বোঝা যায়, এই অন্যান্য শব্দগুলোর সবকটিই ভৌগোলিক বা আঞ্চলিক (নগরকেন্দ্রিক) বিভাজন। কিন্তু ঘটি বা বাঙাল শব্দদুটি সেভাবে সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক ভেদ স্পষ্ট করে না। বরং বলা চলে, উভয়েই আপেক্ষিক একটা ধারণা দেয়। নদীয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানের অধিবাসীরাই তাদের পূর্বদিকের লোককে বাঙাল বলে অভিহিত করে থাকে। ফলে, নদীয়ার লোকের কাছে যশোর বা সিলেটের লোক বাঙাল, আবার যশোরের লোকের কাছে ঢাকার লোক, ঢাকার লোকের কাছে চট্টগ্রামের লোক একইভাবে বাঙাল নামে অভিহিত। কিন্তু আমরা যদি আরেকটু নিবিড়ভাবে বাংলার ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখব এই সমগ্র অঞ্চলটাই কিন্তু বঙ্গ বলে সর্বদা পরিচিত ছিল না। বিভিন্ন যে নামে এই জনপদের বিভিন্ন অংশ পরিচিত ছিল, তার মধ্যে আমাদের আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় নামটি হল গৌড়। বঙ্গ জনপদের অধিবাসী যদি বাঙ্গাল বা বাঙ্গালি হয়, তবে গৌড় জনপদের অধিবাসীরা হল গৌড়ীয় বা গৌড়বাসী। এই গৌড় জনপদের জন্ম হয়েছিল শশাঙ্কের হাতে, খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে। তার সাতশ বছর পরে চতুর্দশ-পঞ্চদশ শতাব্দীতেও গৌড় বা গৌড়ীয় পরিচিতি ছিল সমান সম্মানজনক, চৈতন্যদেব ও সমকালীন গৌড়ীয় বৈষ্ণব সাহিত্য তার প্রমাণ। আরও পরে ঊনবিংশ শতকে রামমোহন রায়, বাংলার রেনেসাঁর পথিকৃৎ, প্রথম বাংলা ব্যাকরণ বই রচনা করেন, যার নাম ‘গৌড়ীয় বাংলা ব্যাকরণ’। সুতরাং কলকাতা ও নদীয়ার আশেপাশের লোকেদের আঞ্চলিক পরিচিতি গৌড়ী বা গৌড়ীয় হওয়া স্বাভাবিক। এবং এই প্রাচীনতার কারণেই, শব্দদুটি এখন আর সরাসরি আঞ্চলিক ভেদ স্পষ্ট করে না, বরং আপেক্ষিক অবস্থানগত ভেদ প্রকট করে।
     
    গৌড়ীয় ইতিহাস প্রসঙ্গে দীনেশচন্দ্র সেন তাঁর ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’ গ্রন্থে [ প্রথম ভাগ (ইংরেজ প্রভাবের পূর্ব্ব পর্য্যন্ত), ষষ্ঠ অধ্যায়  ] জানিয়েছেন, “মুসলমান বিজয়ের কয়েক শতাব্দী পূর্ব্বে ও পরে বিন্ধ্যপর্ব্বতের উত্তর-বর্ত্তী ও প্রাক্‌জ্যোতিষপুরের পশ্চিম-স্থিত বৃহৎ ভূভাগ সারস্বত, কান্যকুব্জ, গৌড়, মিথিলা ও উৎকল এই পঞ্চভাগে বিভক্ত ছিল; এই পঞ্চ বিভাগের সাধারণ নাম ছিল, ‘পঞ্চগৌড়’। এই নাম গৌড়দেশেরই প্রভাব-ব্যঞ্জক, বস্তুতঃ গৌড়দেশ অতি প্রাচীন রাজ্য। (উক্ত পৃষ্ঠার পাদটীকায় পুনশ্চ পাই – ) … উক্ত সময়ে (অর্থাৎ টলেমি-র সময়ে) এই দেশ করতোয়া ও গঙ্গা দ্বারা বিভক্ত হইয়া পশ্চিমাংশ গৌড় ও পূর্ব্বাংশ বঙ্গদেশ বলিয়া খ্যাত ছিল।“ অন্যত্র [ বৃহৎ বঙ্গ, দীনেশচন্দ্র সেন, গৌড়ীয় রীতি, ভাষার ক্রমবর্দ্ধনশীল জটিলতা, পৃঃ ২৯৪ ] আলোচনাপ্রসঙ্গে তিনি বলেছেন যে সংস্কৃত চর্চায় উল্লেখযোগ্য দুটি রীতি ছিল বৈদর্ভী রীতি এবং গৌড়ীয় রীতি। গৌড়ীয় রীতির সংস্কৃত তুলনামূলকভাবে কঠিন ছিল, কেননা এই অঞ্চলেই তিনটি বিশ্ববিশ্রুত শিক্ষাকেন্দ্র (নালন্দা, বিক্রমশীলা ও ওদন্তপুর) প্রতিষ্ঠিত ছিল, যেখানে দেশবিদেশের পণ্ডিত ছাত্রেরা ভিড় করে আসতেন। সুতরাং পণ্ডিতেরা একটু কঠিন ভাষায়ই কথা বলতেন এবং সেই কঠিন রীতিই গৌড়ীয় রীতি নামে সমগ্র ভারতবর্ষে পরিচিত হয়েছিল। আমাদের ধারণা, গৌড়ের মানুষজন যথেষ্ট গর্বের সাথেই নিজেদেরকে ‘গৌড়ীয়’ নামে পরিচয় দিতেন। সংস্কৃত উচ্চারণরীতি অনুযায়ী সেটা শুনতে হত অনেকটা, গৌড়ী। পণ্ডিতদের অনুসরণে সাধারণ লোকেরাও, যারা সংস্কৃত শিক্ষার ধারেকাছেও ছিল না, নিজেদেরকে গৌডী বা গোডী বলে সম্বোধন করতে গর্ব অনুভব করত। প্রসঙ্গত, দেবনাগরী হরফে ‘ড’ এবং ‘ড়’-এর আলাদা হরফ ছিল না, শব্দের মধ্যে অবস্থান থেকে উচ্চারণ নির্ণয় করার চল ছিল, ফলে অল্পশিক্ষিত লোকের পাঠে ‘ড়’-এর ‘ড’-এ রূপান্তর অসম্ভব নয়। উচ্চারণের এই পরিবর্তন তাদের জিভের ও কানের জড়তার জন্য যেমন দায়ী, তেমনই তাদের আঞ্চলিক উচ্চারণবৈশিষ্ট্যও দায়ী। কেননা, আজও কলকাতা ও নদীয়া অঞ্চলের উপভাষায় দেড়টা হয়ে যায় ডেড্ডা, এবং শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে শুধু জিভের টানে এখানকার আদি বাসিন্দারা নিজের অজান্তেই এমন উচ্চারণ করে থাকেন। এই প্রাকৃত গোডী থেকেই কালক্রমে বাংলা ঘটি উচ্চারণের জন্ম বলে আমরা অনুমান করতে পারি।
     
    এ প্রসঙ্গে আমরা আরো কিছু শব্দের উচ্চারণের বিবর্তন উদাহরণ হিসেবে আলোচনা করতে পারি। যদি দেখা যায়, একই রকম উচ্চারণের পরিবর্তন অন্যান্য ক্ষেত্রেও পণ্ডিতেরা আগে আলোচনা করেছেন, তাহলে আমাদের অনুমান অনুমোদনের দিকে অগ্রসর হতে পারে। আমরা এর আগেই উল্লেখ করেছি, সময় নির্ণয়ের যন্ত্রের নাম ঘটিকাযন্ত্র, এই ঘটিকা থেকেই কালক্রমে আমরা এখন ব্যবহার করি যে যন্ত্র, তার নাম হয়েছে ‘ঘড়ি’। সুতরাং ঘটি থেকে ঘড়ি সিদ্ধ, যেমন বাটিকা / বাটী / বাড়ি। বিপরীতক্রমে গৌড়ী/গোড়ী/গোডী/ঘটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আবার গৃহ / ঘর, বা গ্রীবা / ঘাড়, ইত্যাদি শব্দযুগলের উদাহরণ থেকেও গৌড়ী / ঘটি রূপান্তর সম্বন্ধে অনুমান করা সম্ভব। এমন আরও উদাহরণ পাওয়া যেতে পারে।
     
    আমাদের অনুমানের স্বপক্ষে অন্তত একটি মীমাংসক সূত্র আমরা হাতে পেয়েছি। স্কটল্যান্ডের ফিজিশিয়ান স্যার ডেভিড প্রেন (Sir David Prain, ১৮৫৭ – ১৯৪৪) বহুদিন ভারতে ছিলেন, তার অনেকটা সময় তিনি ক্যালকাটা বোটানিক্যাল গার্ডেনে কাজ করেছেন, আর দার্জিলিং-এ সিঙ্কোনা চাষ করেছেন। সমগ্র বাংলা ও তার সংলগ্ন এলাকার গাছগাছালি নিয়ে দুই ভলিউমে তাঁর বৃহদাকার গ্রন্থ ‘বেঙ্গল প্ল্যান্টস’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৩ সালে [ Bengal Plants, Vol 2 by David Prain; Published in Calcutta, 1903 by N W & Co.; Page 981, Entry 1966 ],  কলকাতা থেকেই। সেই বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের ৯৮১ পৃষ্ঠায় আমরা একটা এন্ট্রি পাচ্ছি, ১৯৬৬ নম্বরে, “FICUS HETEROPHYLLA ... Tirhut; N Bengal; E Bengal. ... Beng. Gaori-sheora, ghoti-sheora” অর্থাৎ এটা এক বিশেষ প্রজাতির শ্যাওড়া গাছ, উত্তরবঙ্গে পাওয়া গেছে, যার স্থানীয় নাম গাওরি (গৌড়ী) শ্যাওড়া বা ঘটি-শ্যাওড়া। বাংলা উচ্চারণের রোমান প্রতিবর্ণীকরণে গৌড়ী হয়ে গেছে গাওরি বা গওরি, কেননা ইংরাজিতে ‘r’ দিয়ে ‘র’ বা ‘ড়’ দুটোই বোঝানো হয়। সুতরাং, অন্তত একটা জোরালো প্রমাণ আমাদের হাতে এলো, যেখানে গৌড়ী ও ঘটি দুটি রূপই স্পষ্টভাবে উল্লিখিত, এবং একই অর্থবহ। প্রেন যেহেতু তাঁর গাছপালার নাম সরাসরি মুখের ভাষা থেকে সংগ্রহ করেছেন, তাই বলা যায়, দুটি শব্দরূপই সে সময়ে সেই অঞ্চলে প্রচলিত ছিল, পরষ্পর পরিবর্তী প্রতিশব্দ হিসেবে।
     
    সুতরাং, আমাদের সিদ্ধান্ত – 
    (১) সমগ্র বাংলার পশ্চিম অংশের (পশ্চিমবঙ্গ নয়) অঞ্চলের অধিবাসী বোঝাতে যে ‘ঘটি’ শব্দ ব্যবহৃত হয়, তার মূল উৎস হল ‘গৌড়ীয়’।
    (২) শব্দটি অশিক্ষিত জনগণের দ্বারা কথ্যরূপে অপভ্রংশ হিসেবে ব্যবহৃত হত, ফলে কোনো ক্লাসিক সাহিত্যে বা পুরনো অভিধানে এই অর্থে শব্দটির কোনো প্রয়োগ পাওয়া যায় না।
    (৩) পরবর্তীকালে পলিটিক্যাল কারণে বাঙাল শব্দের অর্থ পরিবর্তিত হয়ে রিফিউজি বোঝাতে শুরু করলে তার বিপ্রতীপে ‘ঘটি’ শব্দের ব্যাপক সামাজিক প্রয়োগ শুরু হয়, ফলে প্রথমে সাহিত্যে এবং পরে অভিধানেও বর্তমান অর্থে ‘ঘটি’ শব্দের প্রয়োগ পাওয়া যেতে শুরু করে।
    (৪) একদা শব্দটি সম্মানজনক বিশেষণ হিসেবে প্রযুক্ত হলেও অধুনা শব্দটির অর্থের অপকর্ষ ঘটেছে, ফলে অধিকাংশ শিক্ষিত ব্যক্তিই সাধারণত শব্দটির কদর্থ প্রয়োগ সতর্কভাবে এড়িয়ে চলেন।
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অসিতবরণ বিশ্বাস | 2401:4900:1228:db6c:1:2:1a51:7d02 | ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৪530266
  • অনুমান স্বাপেক্ষ বিষয়। নির্দিষ্ট ভাবে কিছু প্রমাণ হল না। 
    লেখাটি পড়তে ভালো লাগলো।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ২২:১৪530268
  • অসিতবরণ বিশ্বাস | 2401:4900:1228:db6c:1:2:1a51:7d02 | ০৫ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৪
    সহমত
  • অরিন | 115.189.97.156 | ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:৪৬530276
  • গৌড়ীয় শব্দের অপভ্রংশ ঘটি?
    গৌড়জন == ঘটি?
    পদ্মানদী কি তবে ঘটি/বাঙালের সীমারেখা নয়?
  • Argha Bagchi | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:১৫530339
  • @ অসিতবরণ বিশ্বাস - একদম ঠিক বলেছেন, বিষয়টি অনুমান-সা-পেক্ষ। সেজন্যেই এটি হাইপোথিসিস, বা বলা ভাল, প্রস্তাবনা। ভাষাজগতে নির্দিষ্টভাবে কিছু প্রমাণ করা দুষ্কর, যদি না লিখিত কোন সাক্ষ্য পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে যে শব্দটা নিয়ে চর্চা হয়েছে সেটি একটি দেশী শব্দ হিসেবে অভিধানভূক্ত, আবার সকল প্রকাশিত লেখাপত্তর খুঁজেও এর কোন প্রাচীন প্রয়োগ (আলোচিত অর্থের হিসেবে) পাওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং, শব্দটার এই বিশেষ অর্থে ব্যবহার কথ্য হওয়াই যুক্তিসঙ্গত। সেভাবেই আলোচনাটি এগিয়েছে। তবে অন্তত একটা লিখিত প্রমাণ পাওয়া গেছে সেটাও তুচ্ছ নয় অনুসিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে। অবশ্য নির্দিষ্টভাবে কিছু প্রমাণ বলতে কেউ যদি বোঝেন গবেষণাপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলমোহর তাহলে বলতেই হয়, এ লেখা সে পথের নয়। নয় বলেই এই খেরোর খাতায় সে বসার সুযোগ পেয়েছে।
  • Argha Bagchi | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫৬530341
  • অরিন - পদ্মানদী ঘটি/বাঙালের সীমারেখা এটা অবশ্যই একটা মত, তবে এটাই একমাত্র মত নয়। এর সাথে সময়কালের সীমারেখার যেমন বিভেদ আছে,তেমনই সামাজিকভাবে শব্দটিকে বাঙালের বিপরীত শব্দ হিসেবে ব্যবহারের সাথেও এর আরেকরকম যোগ আছে। শুরু থেকে বরাবরই এর অর্থ এরকম ছিল না,পরে সেটা জুড়েছে,  রাজনৈতিক অনুষঙ্গে। তবে পদ্মার হে-পার আর ঐ-পার ধরলে কিন্তু যশোর-খুলনা-বরিশাল-কুষ্টিয়া-রাজসাহীর লোককে আর বাঙাল বলা যায় না। আবার তাদের ঘটিই বা বলি কি করে! 
  • Arindam Basu | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৫530348
  • @অর্ঘ্যবাবু, কালকুমার মজুমদার বলতেন বটে, বাঙালিদের হিস্ট্রি হয়ত আছে, জিওগ্রাফি নেই । 
    আমার কেন যেন ধারণা ছিল, ঘটি কথাটা মূলত উত্তর কলকাতার পশ্চিমবঙ্গীয় বাঙালিদের সম্বন্ধে বলা হত, এদের নামেই তালপুকুর এদিকে ঘটি ডোবে না। 
  • Arindam Basu | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৬530349
  • বাঙালিদের না, বাঙালিদের হবে ।
  • Argha Bagchi | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২৬530353
  • Arindam Basu - কমলকুমার মজুমদারের কথাটা মাথায় থাকল। তবে আপনার এই ধারণাটা কেবল একা আপনার নয়, এক সময়ের সমাজে এভাবেও ঘটি শব্দটির ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিভিন্ন নাম, পদবী ইত্যাদি নিয়ে আমাদের মজা করার প্রবৃত্তি বাঙালী সমাজে অতি প্রাচীন। ঈশ্বর গুপ্ত-র সময়েই সে ঐতিহ্য থেমে যায়নি,তার পরেও চলেছে। এমনকি পদবী নিয়ে সুকান্তও মজার ছড়া লিখেছেন, এ ছাড়াও শনিবারের চিঠি ইত্যাদি তো ছিলই। আবার, প্রবাদে-প্রবচনে স্থাননাম, পদবী ইত্যাদিকে হেয় করার অনেক উদাহরণ পাওয়া যায়। খেয়াল করলে দেখবেন,তালপুকুরে ঘটি ডোবে না একটি প্রবচন, যার সাথে উত্তর কলকাতার আদিনিবাসী বাঙালীদের জুড়ে দেওয়া হয় তাদের আর্থিক অবনতির দিকে ইঙ্গিত করতে, এবং ঘটির অনুষঙ্গে সেটাও ঘটি শব্দের ইতিহাস সন্ধানে একটা সূত্র হিসেবে কাজ করে,কারো কারো লেখায়। কিন্তু, ঘটি শব্দের এই ব্যাখ্যা আরোপিত বলেই মনে হয়,কেননা এর সমর্থনে অন্য কোন সামাজিক প্রথা বা লিখিত/কথিত প্রমাণ চোখে পড়ে না, কিছু বিক্ষিপ্ত ব্যক্তিগত মতামত ছাড়া।
  • পাপাঙ্গুল | ০৮ এপ্রিল ২০২৪ ০১:০০530362
  • এই ঘটি কথাটা কোনোদিন বাড়িতে শুনিনি। বড়রা সবাই নিজেদের রাঢ়ী বলতেন। আমার ধারণা দেশভাগের পর ঘটকরা বিয়ে দেবার সুবিধার জন্য এই শব্দটা চালু করেছিল। 
     
     
    Arindam Basu | ০৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৫৫  -  সহমত
  • Argha Bagchi | ১০ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৫৬530421
  • পাপাঙ্গুল - আপনি যা বলেছেন সেটাও একটা সম্ভাবনা হতে পারে। কিন্তু সেটা হচ্ছে শব্দটার একটা বিশেষ অর্থে প্রয়োগ, দুই নতুন দেশের বাসিন্দাদের সহজে চেনানোর জন্য। সেটা ঘটকদের মাধ্যমেও হয়ে থাকতে পারে, আবার অন্যভাবেও হতে পারে। তবে খেয়াল করলে দেখবেন, এই প্রবন্ধটার মধ্যে দুটো আলাদা ব্যাপারের খোঁজ করা হয়েছে। এক, পশ্চিমের অধিবাসী হিসেবে 'ঘটি' শব্দের প্রয়োগ, আর দুই, 'ঘটি' শব্দের অর্থের অবনতি ও সামাজিকভাবে এড়িয়ে চলা। সিদ্ধান্তগুলির শেষ বাক্য (৪ নম্বর) সেই কথারই ইঙ্গিত করছে। আপনি সেজন্যেই বাড়িতে রাঢ়ী শব্দটা শুনলেও ঘটি শব্দটা শোনেননি, শিক্ষিত বাঙালীরা (উভয় বঙ্গেরই) সচেতনভাবে এই প্রয়োগ এড়িয়ে চলতেন। কিন্তু 'বাঙাল' শব্দটা সুকুমার রায়ও ব্যবহার করেছেন তাঁর লেখায়,হাস্যরস সৃষ্টির উদ্দেশ্যে (লক্ষ্মণের শক্তিশেল)। তিনি দেশভাগের আগের লোক, তার উপরে ওপার বাংলার থেকে আসা তাঁর পরিবার। তিনিও কিন্তু ঘটি শব্দটা ব্যবহার করেননি। এড়ানোর জন্য নয়; আসলে তাঁর সময়ে ঘটি শব্দটার প্রয়োগ বাঙাল শব্দের অনুষঙ্গে ব্যবহৃত হত না। তবে ঘটি শব্দটা যে ১৯০৩ সালেই (তাঁর মৃত্যুর ২০ বছর আগে) প্রচলিত ছিল, গৌড়ীয় অর্থে, তার লিখিত প্রমাণও প্রবন্ধে দেওয়া হয়েছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন