এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দ্য রমস্তনকি গেজেটিয়ার

    পাগলা গণেশ লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৪ জুলাই ২০২৪ | ১৬০ বার পঠিত
  • 1 | 2 | 3 | 4
    রমস্তনকি বসু কে?
     
    আমি রমস্তনকি বসু। জানি এ নাম বাঙালির পক্ষে মানানসই নয়। কিন্তু আমার বাবা রুশ লেখকদের লেখা পড়তে খুব পছন্দ করতেন। সেই ভালোবাসার প্রভাবেই তিনি আমার এই নাম রেখেছিলেন। নিজের নাম পাল্টালে ডকুমেন্ট সব বদলাতে হত, চাকরির টাকা পাওয়ার ঝামেলা হত। তাছাড়া লোকে এমনিতেই তাকে রাগাত, আর সেজন্যই নিজের ছেলের নাম রাশিয়ান রাখলেন। এই নামের কোনো মানে আছে কিনা জানিনা, বাবাও জানেন কিনা জানিনা। হয়তো নেই, শুনতে রাশিয়ান বলেই বাবা রেখেছিলেন। তিনি রাশিয়ান সাহিত্য পড়লেও তা ছিল বাংলা অনুবাদ। তাই রাশিয়ান নামগুলোর সাথে মোটামুটি পরিচয় ছিল। এখন বলতেই পারো, "তাহলে তিনি কেন পড়া নামগুলোর কোনো একটা রাখলেন না?" আমার বাবার বরাবরই আত্মসম্মানজ্ঞান খুব বেশি। তাই যদি কেউ বলে ফেলে, "এই নাম তো ওই উপন্যাস থেকে ধার করা!" তখন তাঁর আত্মসম্মানে খুব লাগতো। তাই তিনি এই নাম রেখেছিলেন।

    বাবার কথা আর বাপের দেওয়া নামের কথা গেল। এবার আমার কথায় আসি। আমার নাম রাশিয়ান হলেও আমি কোনোভাবেই সাহিত্যের রাশিয়ানদের মতো নই। আমি বিপ্লব তো দূরের কথা, কোনোদিন কারো সাথে ঝগড়া পর্যন্ত করিনি। কোনোদিন কাউকে কোনো বড় কথা বলেছি বলে মনে পড়ে না। আমাকে কেউ ভয় খায় না। এমনকি আমাদের মেনি বিড়ালটা পর্যন্ত ঘাড় তুলে দেখে আমি আসছি, রাস্তা ঘিরে ভালো করে শোয়। আমি বরং সবাইকে ভয় করি, ভয় পাই, ভয় খাই। আমি একটা ডায়েরিও লিখি। তাতে শুধু আমার ভয়ের কথা থাকে। আসলে আমার জীবনটাই তো ভয়ের পরাকাষ্ঠা। সেই ডায়েরির অবশ্য গালভরা নাম দিয়েছি, "দ্য রমস্তনকি গেজেটিয়ার।" তাতে আমি আমার সমস্ত অ্যাডভেঞ্চার লিখি। যেমন— "আমি কেমন করে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলাম, কেমন করে জামাকাপড় পরলাম, ব্রাশ করলাম, ব্রেকফাস্ট করলাম, রাস্তা দিয়ে হেঁটে গিয়ে বাস ধরলাম, টিকিট কাটলাম, অফিস গেলাম, ফিরে এলাম।"

    বাড়ি সবার জন্য সবচেয়ে সুরক্ষিত আর শান্তির জায়গা। না, আমি আলাদা নই। আমার জন্য সবচেয়ে সুরক্ষিত আর শান্তির জায়গা বাড়ি। কিন্তু লোকে সেখানে ভয় পায় না। কিন্তু আমি পাই। আর সবাই সেকথা জানে। তাই সবাই আমার সাথে ভয়ের কারবার করে। সবাই আমার উপরে বিরক্ত, বাবা আমার দিকে তাকালেই মুখ ব্যাজার করে নেয়। মা একমাত্র আমার সাথে কথা বলে। কিন্তু যখনই বলে মেজাজ দেখায়। আমার মনে পড়ে না, মা কবে শেষবার আমার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলেছিল। আমি কিন্তু এদের কারো উপরে রাগ করি না। রাগ আসেই না আমার। আমার সব অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে। মনে হয় আমার সব অনুভূতিগুলোকে গলা টিপে খুন করেছে আমার ভয়। পাছে ওই অনুভূতিগুলোর ভুত এসে গলা টিপে ধরে, তাই 'ভয়' নিজেই ভয় পায়। আর সেই বাড়তি ভয় আমার মধ্যে সঞ্চারিত হয় আরো বিবির্ধিত হয়ে।

    একমাত্র যে জিনিসটা করতে আমি ভয় পাই না, বা পেলেও উপভোগ করি তা হলো পড়া। এই একটিমাত্র জিনিস যা আমার বাবা আমাকে দিয়েছেন, যেটার জন্য আমি তাকে সবচেয়ে ভালোবাসি, কৃতজ্ঞতা বোধ করি। কোনোদিন বলিনি তাকে, কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি ভালো তাকেই বাসি। তিনি আমার সাথে এখন কথা বলেন না বটে, কিন্তু আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমায় অনেক গল্প পড়ে শোনাতেন তিনি। নিজেও বলতেন। কখনো বানিয়ে বলতেন, তা সহজেই ধরা যেত। কিন্তু আমি কিছু বলতাম না, পাছে কষ্ট পান। আমার বেলায় কেন তিনি এমনটা ভাবেন না? বলতে গেলে একমাত্র আমার ছোটবেলাটাই সবচেয়ে বেশি উপভোগ্য ছিল। কী সুন্দর ছিল দিনগুলো! সেই স্কুল যাওয়া, পড়াশুনো! আমি স্কুল যেতে ভালোবাসতাম। কারণ, আমার পড়া বুঝতে ও করতে খুব বেশি সময় লাগত না। ক্লাসেই পড়া হয়ে যেত ঘরে এসে আর পড়তে হত না। তাই সবাই আমাকে ভালোবাসতেন। আজকের মতো নয়।

    মা-বাবার স্বাভাবিকভাবেই আমার প্রতি প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। আমি সে প্রত্যাশা পূরণও করে যাচ্ছিলাম ক্রমাগত। কিন্তু আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি, তখন আমার হঠাৎ খুব শরীর খারাপ হলো, স্কারলেট ফিভার। প্রায় মাস ছয়েক আমি বিছানা থেকে উঠতে পারিনি। ইনফেকশন আমার মাথাতেও ছড়ায়। ফলে মাথারও একটু সমস্যা হয়। সেই বছরটা মোটামুটি রেজাল্ট হয়, কিন্তু আমার রোল নম্বর এক থেকে নয়ে নেমে যায়। মা-বাবা হতাশ হলেও কিছু বলেন না। কিন্তু আমার প্রতি তাদের যে ভালোবাসা, গর্ব সেসব আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকে আমি বুঝতে পারি। যেখানে প্রচন্ড ভালোবাসা ছিল, সেখানে আস্তে আস্তে জন্ম নিতে থাকে অনাগ্রহ, অবহেলা আর ঘৃণা। সাথে দিনরাত টিটকিরির বন্যা চলতে থাকে। কিন্তু তারা চিকিৎসায় কোনো অবহেলা করেনি। তাই বছর তিনেক চিকিৎসার পর আমি প্রায় সুস্থ হয়ে উঠি। শুধু হাত-পায়ের উপর নিয়ন্ত্রণ সাধারণ মানুষের মতো ছিল না। খুব যে কম তা নয়, তবে নিজেই বুঝতে পারতাম আমি অন্যদের মতো স্বাভাবিক শক্তিমান নই।কিন্তু সেইসঙ্গে আমি টের পেলাম,আমার অন্যান্য ক্ষমতা মারাত্মক রকমের বেড়ে গেছে।বুদ্ধিমান আমি ছিলাম।কিন্তু এখন মনে হয় আমার বুদ্ধি কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।অনুভূতিও আগের চেয়ে অনেক প্রখর।ঘ্রাণ,শ্রবণ,দৃষ্টি প্রতিটি শক্তি আগের থেকে অনেক বেশি প্রখর।এমনকি মাঝে মাঝে মনে হয় আমায় মানুষের মনের কথাও যেন বুঝতে পারি।এর ফলে আমার জীবনে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    1 | 2 | 3 | 4
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.56.33.28 | ০৪ জুলাই ২০২৪ ১৯:৫৬534158
  • কোনোভাবে এই লেখার সাথে অন্য দুজন লেখকের লেখা জুড়ে গেছে পর্ব হিসেবে। একটু কি ঠিক করে দেওয়া যায়?
    এই লেখাটা  ইন্টারেস্টিং লাগছে। চলুক। পড়ছি।
  • পাগলা গণেশ | ০৪ জুলাই ২০২৪ ২০:৫৫534161
  • আমি ডিলিট করে আবার পোস্ট করে দিচ্ছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন