এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষেঃ কাশ্মীর

    Tim
    অন্যান্য | ৩০ জুলাই ২০১৮ | ৪০০৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Shuchismita | 89900.228.0167.253 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০১:১১377139
  • কাশ্মীরের কথা লিখতে বসলে শুরু করতে হবে রজতদাকে দিয়ে। কিছুদিন আগে মিঠুনের এক কলিগ বিয়ের নেমতন্নে ভারতে এসেছিলেন। রজতদা শেষ মুহুর্তের নোটিসে নিজের একটা ট্রিপ ক্যানসেল করে ব্যক্তিগত তত্বাবধানে আমাদের বন্ধুদের সুন্দরবন ঘুরিয়ে দিয়েছিল। বন্ধুরা ফিরে এসে রজতদার ভূয়সী প্রশংসার সাথে জানালেন আবার ভারতে আসলে তাঁরা রজতদার সাথে কাশ্মীর ঘুরবেন। ব্যাস, আমাদের মাথাতেও কাশ্মীরের পোকা নড়ে উঠল।

    গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ী আসার পরিকল্পনা ছিলই। আর এবারে কিছুটা বাধ্য হয়েই দেড়মাসের ছুটিতে আসতে হচ্ছিল, তাই কোথাও ঘুরে আসার জন্য যথেষ্ট সময়ও হাতে ছিল। মিঠুনের বইয়ের জন্য কাশ্মীর নিয়ে কিছু পড়াশোনা হয়েছে গত দুবছরে। অতএব কাশ্মীরের কথা মনে এল খুব স্বাভাবিকভাবেই। অন্য কোথাও যেতে হলে নিজেরাই পড়াশোনা করে বেরিয়ে পড়তাম। কিন্তু জায়গার নাম যেহেতু কাশ্মীর, আর পরিস্থিতি কতখানি উত্তপ্ত তা নিয়ে সম্যক ধারনাও যথেষ্ট, তাই রজতদার পরামর্শ নেব ঠিক করলাম। অর্কুটের একটা গ্রুপে রজতদার সাথে আলাপ সম্ভবত ২০০৯এ। ফোনে কথা হল এই প্রথম। আর দেখলাম, এই লোকটা দূর থেকে যা ভাবতাম তার চেয়েও বেশি পাগল। আমাদের ঘোরাঘুরির জন্য ঠিক এইরকম একজন পরামর্শদাতাই আমাদের দরকার ছিল।

    হাতে সময় ছিল প্রায় দুসপ্তাহ। ইচ্ছে ছিল সময় নিয়ে ঘুরে দেখার। রজতদার সাথে অজস্র হোয়াট্স অ্যাপ করে, নিজেরা নেট খুঁজে খুঁজে প্রচুর মানুষের কাশ্মীর ঘোরার বিবরণ পড়ে মোটামুটি যা প্ল্যান দাঁড়াল তা এই রকমঃ

    দিন ১ঃ প্লেনে করে কলকাতা-শ্রীনগর। রাতে থাকা ডাল লেকের হাউজবোটে। এই হাউজবোটটা আমিই হোতেল্স।োম থেকে বুক করেছিলাম। প্লেন পৌঁছেছিল দুপুর একটা নাগাদ। মে মাসে সাতটার আগে সন্ধ্যে নামে না। হাউজবোটটা ছিল ৯নং ঘাটে শঙ্করাচার্য মন্দিরের সামনেই। আমরা একটা অটো নিয়ে মন্দির ঘুরে আসার পরেও দেখলাম হাতে বেশ কিছু সময় আছে। তখন ডাল লেকের বিখ্যাত শিকারা রাইডটাও নিয়ে নেওয়া গেল।

    দিন ২ঃ শ্রীনগর - সোনমার্গ। আমাদের কার্গিল পর্যন্ত যাওয়ার প্ল্যান ছিল বলে তিনদিনের জন্য গাড়ী রিজার্ভ করেছিলাম। এই বুকিং করে দিয়েছে রজতদা। সোনমার্গের অসাধারণ হোটেলও রজতদার সৌজন্যে। নিজেদের ঘর থেকেই থাজিওয়াস গ্লেসিয়ার দেখতে পাচ্ছিলাম আমরা।

    দিন ৩ঃ সোনমার্গ - দ্রাস - কার্গিল। কার্গিলের হোটেলও রজতদার ব্যবস্থাপনা। হোটেলের ঘরের লাগোয়া ছাদ। ছাদ থেকে দেখা যায় সুরু নদী।

    দিন ৪ঃ ভোর বেলা কার্গিল থেকে টুক করে বেরিয়ে কার্চেকর গ্রামে সপ্তম শতাব্দীর মৈত্রেয় বুদ্ধমূর্তি দেখে এলাম। বামিয়ানের মূর্তিগুলো ভেঙে ফেলার পর এইরকম পাহাড়ের গায়ে খোদাই উঁচু বুদ্ধমুর্তি পৃথিবীতে আর তিনটে আছে। তিনটেই লাদাখ অঞ্চলে। কার্চেকর থেকে ফেরার পথে হুন্ডারমান গ্রাম। এই গ্রাম লাইন অফ কন্ট্রোলের আগে শেষ গ্রাম। '৬১র যুদ্ধের আগে পাকিস্তানে ছিল। তারপর কার্গিল-শ্রীনগর।

    দিন ৫-৭ঃ শ্রীনগর। হোটেল বুকিং আমি করেছিলাম। দু রাত লাল চওক। দু রাত নিগিন লেকের হাউজবোট। ঘোরাঘুরি শ্রীনগর শহরের মধ্যে অটো নিয়ে। হরি পর্বত ফোর্ট ও মুঘল গার্ডেনগুলো। উপরন্তু শ্রীনগরের পুরোনো মসজিদগুলো সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছিলাম নেট ঘেঁটে। শেষদিনে হাউজবোটের হামিদভাইয়ের পরামর্শমত নারানাগ। এখানে অষ্টম শতকের একটা হিন্দু মন্দির আছে। তার সাথে গঙ্গাবাল লেকের বেসক্যাম্প পর্যন্ত ট্রেক।

    দিন ৮-১১ঃ আরু ভ্যালি। যাওয়ার পথে অবন্তীপুরা এবং অনন্তনাগে অষ্টম শতাব্দীর হিন্দু মন্দির। আরুতে থাকা রজতদার ব্যবস্থাপনায়। এখানেও রজতদার খাতিরে ফ্রি আপগ্রেড মিলে গেল এমন একটা ঘরে যেখানে জানলার পর্দা সরালেই বরফে ঢাকা পাহাড়চুড়ো আর রাত্তিরবেলা আরুর নিকশ কালো আকাশের সৌজন্যে কোটি কোটি তারা ঢুকে পড়ে ঘরের ভেতরেই। আরুতে রোজই ছোটখাটো ট্রেক। লিডারওয়াত এর মধ্যেই বড়। যাওয়া-আসা মিলিয়ে ২৪ কিমি।

    দিন ১২ঃ আরু ভ্যালি - অচাবল - কোকেরনাগ - ভেরিনাগ। রাতে ভেরিনাগে যKট্ডর লজে থাকা। এই জায়গাগুলো মূলত মুঘল গার্ডেনের জন্য বিখ্যাত। ভেরিনাগে ঝিলমের উৎস।

    দিন ১৩ঃ ভেরিনাগ - জম্মু। এখানে আমরা লোকাল বাস নিয়েছিলাম। রাতে জম্মু থেকে ট্রেন।

    ইতিমধ্যে বকরওয়াল গোষ্ঠীর একটা নবছরের মেয়েকে অপহরণ করে জম্মুর মন্দিরে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেই ধর্ষকদের মুক্তির দাবীতে খোদ আইনরক্ষকদের নির্লজ্জ দাবীও দেখেছে সারা দেশ। কাশ্মীর ইউনিভার্সিটির এক প্রফেসরসহ হিজবুল মুজাহিদিনের একজন বড়সড় নেতার এনকাউন্টার করেছে ইন্ডিয়ান আর্মি। সেই সংঘর্ষে সিভিলিয়ানের মৃত্যু ও লাঞ্ছনার ভিডিও ভাইরাল। উপরন্তু কাশ্মীর ট্যুরিজমের এতদিনের ইতিহাসে যা হয়নি, মিলিট্যান্ট ও আর্মির সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ট্যুরিস্টের মৃত্যু - সেটাও ঘটে গেল আমরা যাওয়ার আগের সপ্তাহেই। ট্যুর ক্যানসেল করার প্রশ্ন ওঠেনা অবশ্যই, মা-বাবাদের কপালে ভাঁজ দেখেই বেরিয়ে পড়লাম। ভোডাফোনের পোস্টপেইড নেওয়া ছিল। আর ছিল মুশকিল আসান রজতদা। বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে ভোডাফোন কাজ করেনা। সেসব জায়গায় রজতদা তার চেনা লোকেদের মাধ্যমে ফোন করিয়ে বাড়িতে খবর দিইয়েছে।

    বোঝাই যাচ্ছে তেরদিনের লম্বা ট্রিপের বিশদ বর্ণনা একবারে লেখা সম্ভব হবে না। এত আশ্চর্য সব জায়গা দেখেছি, এত মানুষের সাথে কথা হয়েছে যে সব কিছু আদৌ কোনদিন লিখে ফেলা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। আজ শুরু করা রইল। এর পর আসবে অল্প অল্প করে।

    শেষ করার আগে কটা ছবি দিয়ে যাই। প্রতিদিনের বিশদ বিবরণ আরো ছবিসহ আসবে পরের পোস্টে।
  • Shuchismita | 89900.228.0167.253 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০১:১২377150
  • দিন ১ঃ শ্রীনগর

    স্পাইস জেটের ফ্লাইট শ্রীনগর পৌঁছল একটা নাগাদ। আমাদের বুকিং ছিল ডাল লেকের একটা হাউজবোটে। কাশ্মীরে গেলে হাউজবোটে থাকতেই হবে এমনটা মাথায় ছিল, তবে হাউজবোট সম্পর্কে খুব একটা পরিস্কার ধারনা ছিল না। ডাল লেকের হাউজবোট গুলো যেহেতু ঘাটে বাঁধা থাকে, তাই ভেবেছিলাম রাস্তা থেকেই পেছনের দরজা দিয়ে হাউজবোটে উঠে পড়া যাবে। এসে দেখলাম ব্যাপরটা তা নয়। ঘাট থেকে শিকারা নিয়ে হাউজবোটে যেতে হয়। এই সার্ভিসটা যদিও হাউজবোটের তরফে ফ্রি এবং দিনে যতবার খুশি যাওয়াআসা করা যায়, তাও মনটা একটু দমে গেল। লেকের মধ্যে এক জায়গায় বাঁধা পড়ে গেলে ইচ্ছেমত ঘুরে বেড়াতে পারব কি? উপরন্তু হাউজবোটটা পেয়েছিলামও খুব সস্তায়। জায়গাটা যদি পছন্দ না হয় মেন রোডের সাথে সংযোগ রহিত অবস্থায় অন্য বন্দোবস্ত করবই বা কিভাবে! চিন্তা হচ্ছিল ঠিক ডিসিশন নিয়েছি কিনা। সব আশঙ্কাই অমূলক প্রমাণিত হল। শিকারায় সুটকেস চাপিয়ে দুজনে চেপে বসতেই মন ভালো হয়ে গেল। ডাল লেকের জল খুব পরিস্কার নয়। কিন্তু প্রায় চারদিকে ঘেরা পাহাড়, মেঘলা দিনে পাহাড়ের মাথায় ধোঁয়া জমে আছে, বক শিকার ধরছে লেকের জলে, জলের ওপরেই মুদির দোকান, শিকারা চালিয়ে ক্রেতা আসছে সেইসব দোকানে, ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে ফিরছে শিকারা চড়ে - এমনটা আগে দেখিনি। হাউজবোটটা আমাদের দিব্যি পছন্দ হল। সামনের কাঠের ব্যালকনিতে গোলাপ লতা উঠেছে। অনেকগুলো সোফায় সাজানো লিভিংরুম, জনাদশেক লোক খাওয়ার মত ডাইনিং রুম পেরিয়ে মূল থাকার জায়গাটা শুরু হয়েছে। আর কোন লোক ছিল না। তাই একদম শেষের বড় ঘরটি আমরা পেলাম। ঘরে অলংকরনের একটু প্রাবল্য ছিল যা আমাদের কিঞ্চিৎ চড়াদাগের ঠেকল, কিন্তু ব্যবস্থা খারাপ নয় একবারেই। বাথরুমটি রীতিমত বড়। ঘরের জানলা দিয়ে লেক দেখা যায়, কিন্তু তখন আমাদের বেরোনোর তাড়া। হাউজবোটের মকবুলভাই আধঘন্টার মধ্যে ভাত, চিকেন কারি বানিয়ে দিলেন। ঝটিতি লাঞ্চ সেরে শিকারা নিয়ে আবার আমরা ঘাটে, বুলেভার্ড রোডে।

    ম্যাপে আগেই দেখা ছিল শঙ্করাচার্য মন্দির আমাদের ঘাটের কাছে। হরি পর্বত ফোর্ট আর শঙ্করাচার্য মন্দির - এই দুটো জায়গা হল শ্রীনগরের বার্ডস আই ভিউ পাওয়ার জন্য আদর্শ। মন্দিরটা সপ্তম শতাব্দীর তৈরী। মন্দিরের ভেতরে ক্যামেরা নিয়ে ঢুকতে দেবে না জানতাম। ক্যামেরায় না হোক, নিজের চোখে পাহাড়ের ওপর থেকে শ্রীনগর শহরটা কেমন দেখায় সেই লোভে অটোকে হাত দেখালাম। প্রথম অটো গন্তব্য শুনেই "নেহি" বলে বেরিয়ে গেল। কিছু সঙ্কোচ নিয়েই দ্বিতীয় অটোকে দাঁড় করালাম। এই ভদ্রলোক বললেন, "বিলকুল যাউঙ্গা, কিঁউ নেহি যাউঙ্গা, ট্যুরিস্টকো যিধার যানা হ্যায়, উধার তো যানা হি পড়েগা।" এত কথা শুনে থতমত খেয়ে আমরা "আচ্ছা আচ্ছা, ঠিক হ্যায়, আপ চলিয়ে" বলে চেপে বসলাম অটোয়। শ্রীনগরের অটোগুলো হাওয়া আটকানোর জন্য মোটা পর্দা দিয়ে প্যাসেঞ্জার সিটের দুদিকে ঢাকা। সেদিন খুব বেশি ঠান্ডা ছিল না বলে আমরা একদিকে পর্দা তুলে দিয়ে বসলাম। অটো ড্রাইভারের নাম আলতাফ ভাই। বুলেভার্ড রোড থেকে পাহাড়ের ওপর রাস্তা উঠে গেছে। শঙ্করাচার্য মন্দির কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত। পাহাড়ে ওঠার মুখেই সিকিউরিটি চেকপোস্ট। আমরা গাড়ী থেকে নেমে হেঁটে চেকপোস্ট পেরিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম অটোর লাইসেন্স প্লেটের নম্বর টুকে রাখা হল। আলতাফভাই পোস্ট পেরিয়ে এসে আমাদের তুলে নিলেন। ট্রিপ অ্যাডভাইসরে পড়েছিলাম ক্যামেরা, মোবাইল ফোন জমা করার কিঅস্ক আছে। ওখানে গিয়ে দেখলাম সেটা বন্ধ। পনেরো মিনিটের চেনাজানায় অটো ড্রাইভারের কাছে ক্যামেরা আর ফোন রেখে যেতে অস্বস্তি লাগছিল। আলতাফভাই আর কিঅস্কএর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সিকিউরিটি ভদ্রলোক দুজনেই সেটা আঁচ করে বললেন, কোন চিন্তা নেই, এখানে সবাই এভাবেই রাখে, তোমরা যাও। আরো একপ্রস্থ সিকিউরিটি হল ছেলে ও মেয়েদের আলাদা ভাবে। তারপর আন্দাজ আড়াইশো সিঁড়ি ভাঙতে হল। বেশ চড়াই। মন্দিরটা ছোট। আকারে ধরা যাক, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সবচেয়ে উঁচু অংশটুকু অর্থাৎ রেখ-দেউলটি আছে শুধু, সামনের জগমোহন, নাটমন্দির ইত্যাদি কিছু নেই। খাড়াই, অপ্রশস্ত সিঁড়ি। মেক্সিকোতে শুনেছিলাম মন্দিরের সিঁড়ি সরু আর খাড়াই করা হত যাতে মন্দির থেকে নামার সময়েও ভগবানের দিকে পিঠ না ফেরানো যায়। এখানেও আমাদের সেভাবেই পাশ ফিরে ধীরে ধীরে ওঠা-নামা করতে হচ্ছিল সিঁড়ি দিয়ে। সবচেয়ে ওপরের ধাপ থেকে শ্রীনগর শহরের রূপ সত্যিই অপূর্ব। ক্যামেরায় ধরা গেল না যদিও। ফেরার সময় আলতাফ ভাই ফোন নাম্বার দিয়ে দিলেন। সোনমার্গ-কার্গিল হয়ে শ্রীনগরে আবার যখন আসব আলতাফ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করব ঠিক করে রাখলাম।

    পৌনে ছটা নাগাদ হাউজবোটে ফিরে খেয়াল হল দিনের আলো আরো অনেকক্ষণ থাকবে। চাইলে একটা শিকারা রাইড নেওয়া যেতে পারে। সারাদিন মেঘলা কাটার পর তখন সবে মাত্র একটু রোদ উঠেছে। অবশ্য হাউজবোটে যাওয়া-আসার সূত্রে বেশ কয়েকবার শিকারা চড়া হয়ে গেছে আমাদের। তবুও ইচ্ছে হল শিকারায় চড়ে সূর্যাস্ত দেখব, ফ্লোটিং মার্কেট দেখব ইত্যাদি। শিকারা ডাল লেকের ট্যুরিস্টি এলাকায় ঢোকা মাত্র অজস্র ব্যাপারী আমাদের ছেঁকে ধরল। কেউ কাশ্মিরী পোষাকে ছবি তুলে দিতে চায়, কেউ জাফরান বিক্রি করতে চায়, কেউ হ্যান্ডিক্রাফ্ট বিক্রি করতে চায়। আমাদের সামনেই বিয়েবাড়ি। উপহার দেওয়ার জন্য একখানি আখরোট কাঠের ফোল্ডিং ট্রে কিনলাম। তারপর মিঠুনের চোখ গেল এক শিককাবাব বিক্রেতার শিকারার দিকে। আমরা ঘাড় ঘোরাতেই তিনি সঙ্কেত পেলেন। শিকারার মধ্যেই আগুন জ্বালিয়ে কাবাব বানিয়ে দিলেন। শেষ বিকেলের সোনা ঝলমল ডাল লেকে সেই কাবাবের স্বাদের কোন তুলনা হয়না। ফ্লোটিং মার্কেটে জলের ওপরেই দোকানে শাল বিক্রি হচ্ছে, কার্পেট বিক্রি হচ্ছে, পেপার ম্যাশে বিক্রি হচ্ছে। আমরা একটা পেপার ম্যাশে দোকানে ঘুরে এলাম। সেদিন দেখাটাই উদ্দেশ্য ছিল, কেনা নয়। ট্যুরিস্ট খুবই সামান্য। বুঝতে পারছিলাম ব্যবসায়ীদের অবস্থা বেশ খারাপ যাচ্ছে। আবার সেটাই সুযোগ করে দিচ্ছিল মানুষ দেখার। সবার হাতেই অঢেল সময়। যেখানেই যাই লোকে বসে গল্প করে, যত্ন নিয়ে দেখায়। ডাল লেকের অলিগলিতে শিকারা চড়ে শুধু ট্যুরিস্ট তো ঘোরে না, সাধারণ মানুষও ঘোরে। মফস্বলের রাস্তায় যেমন সাইকেল চলে তেমনই।

    শ্রীনগরের পুরোনো মসজিদগুলো ঘোরার জন্য একজন ভালো গাইডের সন্ধান করছিলাম আমরা। ট্রিপ অ্যাডভাইসর পড়ে জেনেছিলাম আবদুল জানদারী নামে এক ভদ্রলোক এই কাজ করেন। কিন্তু তাঁর সাথে যোগাযোগ কিছুতেই হয়ে উঠছিল না। হাউজবোটে ফিরে আরো একবার তাঁকে ফোন করার ব্যর্থ চেষ্টা হল। তারপর আমাদের চিফ অ্যাডভাইসর রজতদার ওপর জানদারীর সাথে যোগাযোগ করার দায়িত্ব দিয়ে সেদিনের মত ব্রেক কষা হল।
  • পুপে | 237812.56.90034.187 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০২:২৪377161
  • এই কিস্তি বাসী। নতুন কিস্তি চাই।
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫২377165
  • আমি মাঝে মাঝে একটু করে যখন যেমন সময় পাবো লিখবো। আমরা অতীতে রাজনৈতিকভাবে অস্থির, অল্পস্বল্প বিপদের সম্ভাবনা আছে এরকম জায়গায় এক আধবার গেছি। সেই জায়গাগুলো ভারতের বাইরে হওয়ায়, এবং বাড়ির লোকেদের পরিকল্পনার অংশ করতে না হওয়ায় বাধা আসেনি। এবার কাশ্মীর পরিকল্পনায় তার ব্যতিক্রম হলো। একটা সময় রজত নিজেও বারণ করেছিলো যেতে, আমাদের মন সায় দেয়নি। পরে অবশ্য রজতও খুবই উৎসাহ দিয়েছে এবং গোটা ট্রিপে খুব দায়িত্ব নিয়ে খোঁজ রেখেছে আমাদের।

    প্রথমে কাঠুয়ার ন্যক্কারজনক ঘটনা ও তার ঘাতপ্রতিঘাত, এবং পরে যাত্রীবাহী বাসে পাথর লেগে পর্যটক মারা যাওয়ায় বাড়ির লোকজন খুবই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় বেশ খানিক জেদ করেই যাওয়া।

    কাশ্মীর নিয়ে বইয়ের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে যখন, হাতে এসেছিলো "ইন্সটিটিউট অফ কাশ্মীর স্টাডিজ" এর ফিল্ড রিপোর্ট। ইচ্ছা থাকলেও তাই সেখানকার কিছু কথা লেখা যায়নি বইতে। এছাড়াও স্থানীয় জীবন সম্পর্কে আগ্রহ ছিলো, আগ্রহ ছিলো বইয়ের পাতার বাইরে যে কাশ্মীর পড়ে রয়েছে সেইটা জানার। মানুষের সাথে কথা বলার আগ্রহ তৈরী হয়েছিলো। তুরস্ক, জর্ডন, মেক্সিকো/মেহিকো বা কাজাখস্তানে আমাদের সমস্যা ছিলো ভাষা। সেদিক থেকে কাশ্মীরে প্রথম আমরা খানিক সুবিধে পেলাম, অন্তত হিন্দি ও উর্দূ বুঝতে পারবো, অন্তত মনের ভাব প্রকাশের জন্য ন্যূনতম যতটা দরকার হয়।

    শ্রীনগরের ফ্লাইট কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে যায়। দিল্লিতে স্পাইসজেটের ফ্লাইট দাঁড়ায়না বেশিক্ষণ, শ্রীনগরের যাত্রীরা বসেই থাকেন। দু দফায় তল্লাশি করে নিশ্চিন্ত হয়ে তবে উড়ান। কাজেই শ্রীনগর আসার অনেক আগেই আন্দাজ করা যাচ্ছিলো সতর্কতার। নেমে অবশ্য বিস্ময় কিছু কম হলোনা, বইয়ের অক্ষর, সংখ্যা এসব ম্লান সেই অনুভূতির কাছে।

    শ্রীনগর এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে এলেই মনে হয় হঠাৎ করে কোন রেলস্টেশনের গেটে চলে এসেছি। অজস্র মানুষ, যাঁদের বেশিরভাগই ট্যাক্সিচালক যাঁরা যাত্রীদের নিতে এসেছেন। সেই ভিড়ের মধ্যেই ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পুলিশ, সেনা ও আধাসেনা দলের লোকজন। ডাল লেকের দিকে যেতে যেতে দেখলাম প্রতি দশ গজ অন্তর সশস্ত্র প্রহরা। কোথাও কোথাও বাঙ্কার, জাল থেকে এ কে ৪৭ এর নল বেরিয়ে আছে। এইসব সশস্ত্র প্রহরীর কারো কারো মুখ ঢাকা।

    এর মধ্যেই অন্য দৃশ্যপটও চোখে পড়ছিলো। স্কুল, সরকারি বেসরকারি দুইই, কলেজ, দোকানপাট বিশেষতঃ খাবারের দোকান যেখানে কাশ্মীরী মেজবান পাওয়া যায় বলে লেখা আছে। পথচারী অনাগ্রহী ও কৌতূহলী মুখ। মাঝে মাঝেই পানায় ঢাকা ডোবা। একজায়গায় দেখা গেল জনা তিন পুলিশ এক বৃদ্ধকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এরপর একটা গোলচৌকি বেড় দিয়ে ডাঁয়ে ফিরে আবার একইরকম দৃশ্যপটের মধ্যে দিয়ে কিছুক্ষণ গিয়েই হঠাৎ বাঁদিকে ডাল লেক দেখা গেল। খুব ভিড় ছিলোনা, তবে পর্যটকেরা ইতিউতি বেড়াচ্চ্ছেন, নানা পসরা নিয়ে ফেরিওয়ালা ঘুরে ঘুরে দর হাঁকছে। তারপর হুচি যেরকম লিখেছে, সবুজ পানাভরা জলাশয়ে চিরে শিকারা পৌঁছে দিলো জলের মধ্যে পেতে রাখা ঘরে। সেখানে প্রচুর হাউজবোট, জল একরকম খালি। মেঘ কেটে রোদ উঠেছে অল্প আর সামান্য বরফঢাকা কিছু পাহাড় উঁকি দিচ্ছে। আরো পরে কিছু শিকারা নামবে। দুপুরের রোদ পড়ে এলে।

    এয়ারপোর্ট থেকে ঘর অবধি পৌঁছনোর মধ্যেই বুঝতে পারা যাচ্ছিলো কাশ্মীর অন্যরকম অভিজ্ঞতার জন্ম দেবে। এক পরতে চাপা অস্থিরতা তো অন্য পরতে আপাতস্বাভাবিক জনজীবন, এক পরতে অনাস্বাদিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও অন্য পরতে দীর্ঘদিন ধরে তিল তিল করে ধ্বংস হতে থাকা স্বাভাবিকতা -সব মিলেমিশে ভিড় করে আসবে, চোখ কান খোলা রাখলেই টের পাওয়া যাবে এই যা দেখছি এর বাইরেও আছে অন্য কাশ্মীর, আরো গভীর, আরো দূর্গম, আরো দূর্বোধ্য।
  • QR | 3423.240.342323.241 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫৪377166
  • দুর্গম, দুর্বোধ্য
    দুঃ + গম
    দুঃ + বোধ্য
    হ্র্স্ব-উ, যদ্দুর জানি
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৫:৪৭377167
  • ঠিক ঠিক। আজকাল কেমন সব গুলিয়ে যায়। ধন্যবাদ।
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩৯377168
  • দ্বিতীয় দিনের কথা যেমন যেমন মনে আছে লিখে রাখছি। খুব সকালে বেরোনোর কথা ছিলো। সেদিন থেকে তিনদিনের সোনমার্গ-কার্গিল যাত্রা শুরু হবে। শ্রীনগরের এক এক অঞ্চল আচমকাই তখন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাই আক্ষরিক অর্থেই কাকভোরে বেরিয়ে শিকারা নিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম, সঙ্গে ব্যাগপত্তর। অত সকালে কোন খাবারের দোকান খোলেনি, শুনশান রাস্তায় কেবল কয়েকজন শিকারাওয়ালা, আর একজন স্থানীয় ফেরিওলা উলের টুপি-স্কার্ফ নিয়ে ঘুরছেন। উল্টোদিকে একটা চায়ের দোকান খুলবো খুলবো করছে, জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল চা করে দেবেন দরকার হলে, বাকি সব দেরি হবে। চায়ের সাথে গল্প হলো দোকানের মালিকের সাথে। দোকানের একটা অংশ আলাদা করে ঘিরে দেওয়া, দেখলাম লেখা আছে ফ্রেঞ্চ কাফে। মালিকের ছেলে একদা ফ্রান্সে থাকতো, যে কোম্পানিতে চাকরি করতো সেটা উঠে যাওয়ায় সরকার থেকে সময় দেওয়া হয় অন্য কিছু শিখে নিতে। ছেলেটি বেকারির কোর্স করে দেশে ফিরে এসেছে। সেই থেকে এই কাফে। আমাদের খাবার জুটবেনা বুঝে বন্ধ দোকান খুলে ভদ্রলোক কেক বিক্রি করলেন। অতি উপাদেয় কেক, আমর জমিয়ে রাখলাম পথে খাবো বলে।

    এইসব হতে হতে রিয়াজ এসে গেছে গাড়ি নিয়ে। রিয়াজ মীর। ছিপছিপে স্মার্ট চেহারা, লম্বা, গালে নিপুণ করে ছাঁটা দাড়ি আর ঝকঝকে হাসির ছেলেটিকে দেখেই ভালো লেগে গেল। তার সাথে মনটা ভালো হয়ে গেল এই কথা ভেবে যে গাড়িতে বকবক করার লোকের অভাব হবেনা। অবশ্য সেই প্রফুল্লতা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। গাড়ির সামনের কাচে, বাঁদিকে, সাদাকালোয় পোস্টার আঁটা, সেখানে আসিফার ছবি আর নিচে লেখা "জাস্টিস ফর আসিফা"। পরবর্তী তিনদিন তো বটেই সম্ভবত বাকি ট্যুর জুড়েই আমরা যেখানেই গেলাম, যা দেখলাম, যা শুনলাম ও বললাম, সেসবের ওপর দীর্ঘস্থায়ী ছায়া হয়ে থাকলো আসিফার মুখ। আমি জিগ্যেস করিনি কে এঁটেছে এই ছবি, তবে সে যেই হোক আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ রইলাম। নিসর্গ এমন শ্বাসরোধকারী সুন্দর হলে মানুষের ক্থা ভুলে যাওয়া সম্ভব। আসিফার ছবি আমাদের সেই বিস্মৃতি থেকে রেহাই দিয়েছে।

    হজরতবাল দরগার পাশ দিয়ে গাড়ি ছুটে চললো। মাঝে মাঝেই মেষপালকের দল। মূলত বকরওয়াল এরা, একের পর এক পাহাড় ডিঙিয়ে ডেরা পাল্টে পাল্টে ভেড়া, খচ্চর আর পাহাড়াদার কুকুর নিয়ে উপত্যকায় ঘুরে বেড়াবে। এদের সাথে আরো অনেকবার দেখা হবে, অল্পবিস্তর কথাবার্তাও হবে। পরে বিস্তারিত বলবো যথাসময়।

    সেদিন আমরা সোনমার্গ যাওয়ার পথে সিন্ধ নদীর ওপর একটা নড়বড়ে ব্রিজ পেরোলাম, তারপর শুরু হলো শ্রীনগর-লে হাইওয়ে। সিন্ধ মিশেছে ঝিলমে। আবার ঝিলম মিশেছে সিন্ধুনদে। খরস্রোতা সেই নদীর ধারে দাঁড়িয়ে এইসব সাতপাঁচ ভেবে রোমাঞ্চ হলো।

    সোনমার্গ পৌঁছে গেলাম বেলাবেলি, দশটার আসেপাশে। রজত একটা চমৎকার হোটেল দেখে দিয়েছিলো, যার জানলায় বসলেই থাজিওয়াস হিমবাহ দেখা যায়। সময় নষ্ট না করে আমরা রওনা দিলাম। তখনও শ্রীনগর থেকে ডে ট্রিপের পর্যটকদল এসে পৌঁছয়নি, রাস্তাঘাট খালি। শুধু মাঝে মাঝেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে। বাকি দিনটা কেটে গেল থাজিওয়াস ট্রেকে, অবশ্য রজতের পরামর্শে আমরা সঙ্গে দুটো ঘোড়া রেখেছিলাম, বহুদিন পাহাড়ে হাঁটাহাঁটির অভ্যেস নেই বলে। ঘোড়ায় তেমন চড়তে না হলেও, বাড়তি পাওনা হলো ঘোড়ার মালিক ফৈয়াজ আহমেদের সঙ্গে পথচলা ও কথোপকথন। তার বাড়ি ঢের নিচে, শ্রীনগর-লে হাইওয়ের ওপর কঙ্গনে। সেখান থেকে রোজ সকালে পায়ে হেঁটে সোনমার্গ আসেন। সঙ্গে দুটি ঘোড়া, তারা নাকি জুটি। বাড়িতে ছেলেমেয়ে আছে, ছেলেটি স্কুলে যায়, মনে হয় বললেন ক্লাস এইটে পড়ে বা এরকম কিছু।

    কথা বলতে বলতে হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম হিমবাহ অবধি। বরফ তখনও গলেনি বলে তেমন কেউ যাচ্ছেনা ওখানে। সবাই যেখানে যাবে সেই জায়গাটা একটা পাহাড়ের ঢাল, বরফ জমে স্লাইড করার জন্য উপযুক্ত হয়েছে। বহুলোক ইতিমধ্যেই সেখানে গড়াগড়ি স্লেজ ইত্যাদি করে ফেলায় জায়গাটা কালচে। যাই হোক, সেইসব দিকে না গিয়ে আমরা চললাম নদীর উৎস্র দিকে, যতটা যাওয়া যায়। ফৈয়াজ ও তাঁর ঘোড়া পথ দেখিয়ে চললো। এক্সময় পৌঁছেও গেলাম। জমাট বরফ থেকে গলে প্রথমে সরু স্রোত, সেখান থেকে অজস্র ধারা শাখাপ্রশাখায় মিশে তৈরী করছে নদী। কোথা থেকে যে ঠিক শুরু হচ্ছে বোঝার উপায় নেই। কোথায় হিমবাহের শেষ আর নদীর শুরু সেটা ঋতুতে ঋতুতে একও না, যা স্বাভাবিক। ফৈয়াজ বললেন, আর কিছুদিন পরেই মেষপালকের দল এসে পড়বে, তখন এইসব জায়গায় অস্থায়ী ডেরা দেখতে পাওয়া যাবে। পায়ের নিচে বরফ ভঙ্গুর, মাঝে মাঝেই পিছলে যেতে যেতে ফেরার পথ ধরলাম। ফেরার পথে তুষারকেলির সেই জায়্গায় এসে দেখি সেখানে অনেক মানুষ তখন, পর্যটকের মূলস্রোত এসে পড়েছে। বরফে বরফে ছবির পোজ আর হুল্লোড় দেখে বোঝার উপায় নেই জনহীন উপত্যকা আর নদী নিয়ে হিমবাহ কেমন দেখতে লাগে।

    হোটেলের কাছে ফিরে আসা মাত্রই সেদিনের মত দৌড়োদৌড়ি শেষ হলো। তখনও অবশ্য বিকেল। এরপর সোনমার্গ আবার খালি হয়ে যেতে থাকলো এবং সূর্যাস্ত হলো একসময়। অনেকদিন পর কমলা হয়ে আসা বরফঢাকা হিমালয় দেখে যারপরনাই আহ্লাদিত হলাম।
  • hu | 8967.62.124523.216 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৭:৪৭377169
  • একটু ভুল হয়েছে। ফৈয়জ আহমেদ কঙ্গন থেকে আসেন শেয়ারড গাড়িতে। ঘোড়াদুটো সোনমার্গেই থাকে। মেয়েটা হাইস্কুল শেষ করেছে। কলেজে পড়ার ইচ্ছা আছে।
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৭:৫৭377170
  • এডিট করার তো উপায় নাই, ঠিক আছে, এটা ফুটনোট হিসেবে থাক। আপাতত বিরতি।
  • সিকি | ৩০ জুলাই ২০১৮ ০৮:২৫377140
  • পড়ছি। এখন শ্রীসেন্নাইতে। এখানে বসে কাশ্মীরের স্বাদ নিচ্ছি।
  • গবু | 2345.110.564512.251 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ১৫:২০377141
  • "বিশেষতঃ খাবারের দোকান যেখানে কাশ্মীরী মেজবান" - ওয়াজওয়ান নয়?

    ভালো লাগছে, চলুক।
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ১৫:৩৩377142
  • একদমই ওয়াজওয়ান। গুরুতর ভুল।
  • I | 7845.15.89900.63 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ১৮:১৫377143
  • দিব্য লাগছে।চলুক।
  • I | 7845.15.23900.177 | ৩০ জুলাই ২০১৮ ২২:০৮377144
  • হ্যাঁ।মেজবান মানে তো হোস্ট।পড়েই খটকা লাগছিলি।
  • গবু | 2345.110.894512.203 | ৩১ জুলাই ২০১৮ ০০:৩৩377145
  • মেহমান - অতিথি
    মেজবান - host, কিন্তু বাংলা? নিমন্ত্রনকর্তা বলে পাচ্ছি, ছোটখাটো কিছু নেই?
  • সিকি | ৩১ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩৭377146
  • আমন্ত্রক।
  • গবু | 2345.110.125612.59 | ৩১ জুলাই ২০১৮ ০৮:২২377147
  • ধন্যবাদ সিকিবাবু।

    মূল লেখার অপেক্ষায়।
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ৩১ জুলাই ২০১৮ ১০:৩৬377148
  • তৃতীয় দিনে, কথা ছিলো কার্গিল যাওয়ার। পথে দ্রাস পড়বে, আর কার্গিল যুদ্ধের "গৌরবময়" ইতিহাস নিয়ে ওয়ার মিউজিয়াম।

    কিন্তু সেসব অনেক পরের কথা। সোনমার্গ থেকে রওনা দিয়েই পথে পড়বে জোজি লা। এখন, পার্বত্য পাস সম্পর্কে অল্পস্বল্প জানা ছিলো। রজত বলে দিয়েছিলো, কপাল যদি খারাপ হয় আর্মি কনভয়ের সামনে পড়ে যেতে পারো। সেক্ষেত্রে জোজি লা কতক্ষণে পেরোনো যাবে কিচ্ছু বলা যায়না। ৪-৬ ঘন্টা লাগতে পারে।

    হোটেলে ফিরে গিয়ে পরেরদিনের কর্মসূচী আলোচনা করতে করতে বেরিয়ে পড়লো, জোজি লা সকাল নটার আগে খোলে না। রিয়াজ বললো সেতো মুশকিলের কথা। আমাদের সেদিন কার্গিল পৌঁছে কার্চেখরের বুদ্ধমূর্তী দেখতে যাওয়ার কথা। কথা আসলে ছিলোনা শুরুতে, কিন্তু আমাদের একটা মরিয়া চেষ্টা করার ইচ্ছে ছিলো। রিয়াজ বলেছিলো তোমরা যদি ফেরার দিন এটা করতে চাও তাহলে শ্রীনগর ঢুকতে অনেক দেরি হতে পারে, সেক্ষেত্রে কার্ফিউ চালু হয়ে গেলে নানাবিধ আশঙ্কা আছে। শ্রীনগরে তখন প্রায়দিনই সন্ধ্যের দিকে কার্ফিউ থাকছে। শোনা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদী জোজি লা টানেল উদ্বোধন করতে আসবেন ঠিক দুদিন পরেই। অতএব, মুশকিল।

    রিয়াজ বললো, এক কাজ করা যাক। চেকপোস্টে যে অফিসার আছে তার কাছ থেকেই জেনে আসা যাক কখন রাস্তা খুলবে। আমরাও গেলাম ওর সাথেই, গাড়িতে দু তিন মিনিটের পথ। অফিসার প্রথমে বললেন এগারোটায় খুলবে রাস্তা। তারপর বললেন নটায় খুলে দেবো, তার আগে হবেনা, ওদিক থেকে কনভয় আসবে। নটা মানেও অনেকটাই দেরি, আমরা ভোর পাঁচটায় বেরোবো ভেবেছিলাম। ফেরার পথে রিয়াজ বললো, আমরা সাতটা নাগাদই এসে যাব। দয়া হলে রাস্তা খুলেও দিতে পারে।

    পরের দিন কথামত সাতটাতেই বেরোলাম। গিয়ে তো আমাদের চক্ষুস্থির। অন্তত মাইলদুয়েক লম্বা গাড়ির লাইন পড়ে গেছে। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে জানা গেল জোজি লার রাস্তায় ধ্বস নেমেছে রাতে। ভোররাত থেকে মিলিটারি কনভয় আটকে সেখানে। সেই কনভয় পাস করবে। তারপর আমাদের ছাড়া হবে। অন্তত সাড়ে এগারোটা থেকে বারোটা তো বাজবেই। তবে কিছু নিশ্চিত বলা অসম্ভব।

    আমরা গাড়ি থেকে বেরিয়ে পাহাড়ের ঢালে বেড়াতে শুরু করলাম। অল্পক্ষণের মধ্যেই গুজ্জর-বকরওয়াল রাখালেরা শ'য়ে শ'য়ে ভেড়া, বেশ কিছু খচ্চর নিয়ে এসে পৌঁছলো। অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পর দেখলাম একঘন্টা হয়েছে। দু মাইলের লাইন ততক্ষণে লম্বা হতে হতে শেষ দেখা যায়না। তার পাশেই আরেকদল জেদি ড্রাইভার দ্বিতীয় আরেকটা লাইন করতে গিয়ে দ্বিমুখী গাড়ি চলার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

    তাদের পেছনে আর্মি জিপ, বিআরও'র ট্রাক, আরো দুটো আর্মির জিপ, এবং দুটো শক্তিমান। একটায় এলেমজি তাক করে জওয়ান। তাদের পেছনে একটা পেলোডার। দুটো গাড়ি চলতে পারে এরকম রাস্তায় এইসব হয়ে, সে এক দেখার মত ব্যাপার। নাহোক একটু বন্ননা দি। বামদিক ক্রমে আসিতেছে, কেমন? একেবারে ডাইনে নদী। তারও ডানদিকে খাড়া পাহাড়। বাঁয়ে তাকান। নদীর এদিকে একফালি উঁচু জমি। তার এদিকে ঐ দুগাড়ি সমান রাস্তা। তার পর একটা ছোট পাঁচিলের মত খাড়া জমি হয়ে একটুকরো উজ্জ্বল সবুজ মনোরম উপত্যকা। সেইখানেই পশুরা চরছে, মেষপালকেরা বসে গজল্লা করছে, আর পালের জন্তুকে চোখে চোখে রাখছে। এই তপোবনের বাঁদিকেই আবার পাহাড়। দূরে থাজিওয়াস মাঝে মাঝে রোদ পড়ে ঝলকাচ্ছে, মাঝে মাঝেই আবার মেঘে ঢাকা। বৃষ্টিও পড়ছে হঠাৎ কয়েক মিনিট।

    ইতিমধ্যে দ্বিতীয় অবৈধ লাইনের গাড়িগুলোকে নদীর পাড়ের দিকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে, দুটো গাড়ি নামতে না নামতেই দশটা এসে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছে, জেকে পুলিশ আর আর্মি স্কাউট উইসিল বাজিয়ে তর্জন করছে, হ্যাঁ হ্যাঁ সরছি সরছি বলে জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে গল্প জুড়ে দিচ্ছে গাড়ির চালক। আর একটু পরেই এইসব লাইনটাইন বেঁকেচুরে ঘেঁটে যাবে। আর তখন আমরা পাহাড়ের ঢালে দাঁড়িয়ে ইতস্তত হিসি করতে থাকা পর্য্যটক, গাড়িচালক ও মেষপালকের দঙ্গল আর দিগন্তবিস্তৃত বিশৃঙ্খলা দেখতে দেখতে উদাস হয়ে মুজতবা আলিকে স্মরণ করবো।
  • সিকি | ৩১ জুলাই ২০১৮ ১১:২৮377149
  • আহা, জোজিলা। তিনবার ডিঙিয়েছি, তারমধ্যে একবার এই সিচুয়েশন পেয়েছিলাম। পুউরো মাখন হয়ে যায় জ্যামে।
  • শঙ্খ | 2345.110.015612.216 | ৩১ জুলাই ২০১৮ ১৩:৫৯377151
  • পড়ছি
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ০১ আগস্ট ২০১৮ ০৮:৫৫377152
  • কীভাবে জট কেটেছিলো মনে নেই, মানে দেখিনি আর কি। মানুষ দেখছিলাম, শুধু তো বেড়াতে আসা লোক না, কর্মসূত্রে বহু মানুষ চলেছেন ঐ পথে। এক একটা ইনোভায় ঠাসাঠাসি করে লোক, কোনমতে বসেছে। দূরদেশ থেকে সম্ভবত ঠিকাদারি শ্রমিক হিসেবেও অনেকে এসেছেন, পুরুষ ও মহিলা দুইই আছে তাঁদের মধ্যে। আবার স্থানীয় অনেক মানুষ ঐভাবেই চলেছেন, কেউ দ্রাস কেউ কার্গিল কেউ বা আরো এগিয়ে এক এক জনপদ অবধি যাবেন। এঁদের সবারই অভ্যেস আছে সময়ের হিসেব না থাকা এই চলায়। দীর্ঘ রাস্তায় কোন শৌচাগার নেই, রাস্তার পাশেই তাই বসে যেতে হচ্ছে। কেউ কেউ আরেকটু সরে গিয়ে নদীর ধারে কোন আড়াল খুঁজলেন। নদীর ধারে তখন মেলা বসেছে। যেসব গাড়িকে জোর করে আর্মির লোক নদীর পাশে সরিয়ে দিয়েছিলো তারা সেখানে আগুন টাগুন জ্বেলে তখন চা করছে। একটা দল দেখলাম, জামাকাপড়ে বোঝা গেল ট্যুরিস্ট, তার মধ্যে মালটাল খেয়ে খানিক হইচইও জুড়েছে।

    এইসব করতে করতেই সাড়ে এগারোটা নাগাদ মনে হতে লাগলো এবার কিছু একটা হবে। তারপর দেখা গেল উল্টোদিকের আটকে থাকা গাড়িরা আসছে একে একে। সে কি লম্বা লাইন। অন্তত শ'খানেক ট্রাক, এছাড়াও অন্য গাড়ি, পুলিশ জিপ, মিলিটারির নানারকম গাড়ি এইসব মিলিয়ে সে এক এলাহি ব্যাপার। অনতিবিলম্বে সেই লাইন থেমে গেল, জ্যাম। রিয়াজ নেমে গিয়ে মাঝে দেখিয়ে এলো একটা ট্রাকের টায়ারে পাথর আটকে আছে, সর্দারজি ট্রাকের জানলা দিয়ে মুখ বের করে ধন্যবাদ দিলেন। এইসব করতে আরো মিনিট চল্লিশ কেটে গিয়ে একসময় দেখি আমাদের গাড়ি এগোচ্ছে। একসময় চেকপোস্ট পেরিয়ে গেল আর অমনি সমস্ত গাড়ি পরিত্রাহী স্পিডে ছুটতে শুরু করলো। এদিকে রাস্তা সরু হতে হতে এখন একটা গাড়িই যেতে পারে এরকম। ওর মধ্যে দিয়েই হেলেটেলে ওভারটেক হচ্ছে। রাস্তা না ছাড়লে হঙ্ক করে চোদ্দ পুরুষের নাম ভুলিয়ে দিচ্ছে। রিয়াজও মাঝে মাঝেই ওভারটেক করছিলো। শঙ্কিতচিত্তে জানলা দিয়ে ডানদিকে (ওদিকেই খাদ) তাকিয়ে দেখি আস্তে আস্তে পাহাড়ের রূপ বদলে যাচ্ছে। ক্রমশ রুক্ষ হয়ে উঠছে চারপাশ, উচ্চতা বেড়ে গিয়ে নিচে সাপের মত রাস্তাগুলো খালি দেখা যায়, চতুর্দিকে কোন বাড়িঘরের চিহ্ন নেই। তারপর রাস্তা একসময় হয়ে গেল গর্তে ভরা, দুপাশে ইতস্তত বরফের চাঙড় শুরু হয়ে অল্পক্ষণের মধ্যেই মজবুত বরফের দেওয়াল শুরু হয়ে গেল। গাড়ি তখন মেরেকেটে পাঁচ কিলোমিতার প্রতি ঘন্টা চলছে, তাও এঁকেবেঁকে, রাস্তার বিশাল গর্তে জমে থাকা বরফ ও জল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টায়। জায়গায় জায়গায় সেই বরফে কাদা মিশে কালচে হয়েছে, কোথাও সামান্য লালচে।

    জনহীন সেই রাস্তায়, বাঁদিকের বরফের দেওয়ালে এক জায়গায় বড়ো বড়ো করে লেখা "আজাদি"। শ্রীনগরে এর আগে আজাদির স্লোগান বা ওয়ানির নাম লেখা দেওয়াল দেখেছিলাম। কিন্তু জোজি লার উচ্চতায়, ঐ ধ্বস নামা, ভঙ্গুর রাস্তায় তার তাৎপর্য্যই আলাদা বলে মনে হলো। এতই চমকে গেছিলাম যে ক্যামেরার কথা, বা শুচিস্মিতাকে ডেকে দেখানোর কথা মনে হতে হতে অত আস্তে চলেও আমরা ঐ জায়গা পেরিয়ে গেছি।
  • সিকি | ০৬ আগস্ট ২০১৮ ০৭:৫২377153
  • তার পর?
  • | 453412.159.896712.72 | ০৬ আগস্ট ২০১৮ ০৯:৪০377154
  • তারপর? তারপর??
  • সিকি | ২৭ আগস্ট ২০১৮ ২১:০৯377155
  • ও তিমিহুচি, এটা আর এগোবে না?
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ২৭ আগস্ট ২০১৮ ২১:২২377156
  • আরে হ্যা এটা লিখবো ভেবে আর তালেগোলে হয়নি। তোলার জন্যে থ্যান্কু।
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ৩০ আগস্ট ২০১৮ ০৭:২১377157
  • জোজি লা পেরিয়েই একটা জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট, নাম জিরো পয়েন্ট। রাস্তা খোলা থাকলে পর্য্যটকদের ভিড় থাকে, বরফ দেখার জন্য, বা বরফকেলি করার জন্য। রিয়াজও ভেবেছিলো আমরা ওখানে অনেকক্ষণ থাকবো। কিন্তু আমরা একবার নেমেই আবার ফিরে এলাম। আবার চলা শুরু হলো। জিরো পয়েন্টের পর থেকে রাস্তা বেশ জনশূন্য। শুধু যারা কার্গিল বা লে অবধি যাবেন তাঁরাই এগোবেন, বাকিরা ফিরবেন সোনমার্গ বা শ্রীনগরের দিকে। রিয়াজের উপোস ছিলোনা সেদিন, তাই সে প্রস্তাব দিলো চা খাওয়া হবে কিনা। এর মধ্যেই মাঝে মাঝে বৃষ্টি ও বরফ পড়ছে, রাস্তায় খানাখন্দ প্রবল এবং তাতে জল জমেছে বা কাদারঙের বরফ।

    আরো খানিক এগিয়ে বাঁদিকে হঠাৎ দেখি একটা টিনের চালাঘর মত, ওপরে দেখা কাফে গুমরি। রিয়াজ বললো ভারতীয় সেনা পরিচালিত কাফেটেরিয়া। চারদিকে তাকিয়ে দেখি একটা ছোটখাটো সেনা ছাউনি। পাশের পাহাড়ে শহীদ বেদি ও তেরঙ্গা। ছাউনি পেরোলেই পাহাড়ের ঢাল উঁচু হতে হতে দেওয়ালের মত হয়ে গেছে।

    কাফেতে একজন সেনা অফিসার দাঁড়িয়ে ছিলেন। বেশ হাসিখুশি মিশুকে মানুষ, খুব সহৃদয়। ওনার কাছেই আমরা চায়ের কথা বললাম। পুরোনো সিনেমাহলের টিকিট কাউন্টারের মত একটা খুপরি দিয়ে সেকথা উনি রান্নাঘরে চালান করে দিয়ে আমাদের সাথে গল্পে মজে গেলেন। দেখালেন কোথায় কোথায় পাহাড়ের ওপরে বাঙ্কার করে মেশিনগান বসানো আছে। পাহাড় পেরিয়ে কিছুটা গেলেই এল ও সি। সেই পাহাড়ে এক এক শিফটে কয়েকদিন করে ডিউটি জওয়ানদের। নিচ থেকে খাবার ও জল পৌঁছে দেবে হেলিকপ্টার, যদি সম্ভব হয়, নয়ত স্থানীয় রাখালরা কেউ সেই দায়িত্ব পাবে। কথা বলতে বলতেই চা ও কাহ্‌ওয়া এলো। প্রায় সাথে সাথেই আরেকটা গাড়ি। নেমে তাঁরা এদিকে আসামাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার খুব শশব্যস্ত হয়ে তাঁদের খাতির করতে লাগলেন। চেয়ার টেনে এনে মুছেটুছে বসালেন। দেখলাম এক পঞ্জাবি পরিবার। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, সাদা দাড়ি ও পাগড়ি। সঙ্গে সম্ভবত স্ত্রী ও ছেলে। তাদের অর্ডার নিয়ে, সব ব্যবস্থা করে আমাদের কাছে ফিরে এসে (আমরা চা নিয়ে কাউন্টারের কাছে দাঁড়িয়েই ছিলাম, চায়ের দোকানে যেরকম চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে খুঁটিতে হেলান দিয়ে আড্ডা হয় সেরকম) হেসে ফিসফিস করে বললেন, "নেভির বড়ো অফিসার ছিলেন, রিটায়ার্ড "।

    কাশ্মীরে যতবার কোন সেনা বা আধাসামরিক জওয়ানের সাথে আলাপ হয়েছে, একটা প্রশ্ন কিছুক্ষণ পরেই করেছি। জিগ্যেস করেছি, "ভালো লাগে এখানে"? আর উত্তরও একটাই পেয়েছি। "ডিউটি হ্যায়"।

    গুমরি কাফে পেছনে ফেলে রেখে আবার চলা শুরু হলো। কখনও অল্প নিচে কখনও অনেক নিচে নদীর জল, হঠাত হঠাত এক চিলতে জনপদ এইরকম রিয়াজের ফোন মারফত জনপ্রিয় পুরনো হিন্দি গান (তার মধ্যে নব্বই ও ছিলো), এসব করতে করতেই আরো এগিয়ে এসে গেল দ্রাস। ততক্ষণে দুপুর গড়িয়ে গেছে। বেশ খিদে পেতে শুরু করেছে। রিয়াজের ইচ্ছে ছিলো আমাদের ওয়ার মিউজিয়ামের কাছে একেবারে নিয়ে গিয়ে চা ও স্ন্যাক্স খাওয়ায়। কিন্তু আমরা দ্রাসে নামতে চাইলাম।

    দ্রাস ছোট শহর, উচ্চতা প্রায় এগারো হাজার ফুট। যেখানে আমাদের গাড়িটা দাঁড়িয়েছিলো সেখানেই একটা থানা। কোনমতে দুটো গাড়ি যেতে পারে এরকম চওড়া একটা রাস্তার দুপাশে দোকানপাট। এরকমই একটা দোকানে মনে হলো চা পাওয়া যাবে। তেরপলের পর্দা দেওয়া চা ও তেলেভাজার দোকান, চালায় যে তার বয়স তেরো কি চোদ্দ হবে। তার সাথে স্কুলের পোষাক পরা একই বয়সের একজন এসে গল্প করছিলো, আর কেউ নেই। এমন সময় মূর্তিমান উপদ্রবের মত আমরা দুজন গিয়ে ঢুকলাম। ঠাসাঠাসি কয়েকটা বেঁকে যাওয়া বেঞ্চ ও টেবিল। জরাজীর্ণ দেওয়াল, তেলচিটে। আর একরাশ বাসনকোশনের মধ্যে দুই কিশোর দূর্বোধ্য ভাষায় আড্ডা দিতে দিতে তেলেভাজা চাপালো। চাপালো মানে সকালের ভাজাগুলো গরম করতে দিলো। এই করতে করতেই আরেকজন খদ্দের এলেন। চোখে কালো চশমা, মাথায় উলের টুপি, গায়ে পুরোনো দীর্ণ কোট এবং থুতনিতে নূরসমেত বছর পঁয়ষট্টির একজন স্থানীয় ভদ্রলোক। তিনি আসামাত্রই আমাদের কথাবার্তা জমে গেল। প্রথমেই তিনি নিজের সম্পর্কে বললেন। জানা গেল ডাক্তার ছিলেন, যীবনের বেশির্ভাগ সময় নানা জায়গায় চাকরি করে শেষে অবসরের পর দ্রাসে ফিরে থিতু হয়েছেন। ছেলেদুটিও আমাদের সঙ্গে যোগ দিলো, কারণ তেলেভাজা হয়ে গেছে, আর ভদ্রলোক ওদের ধমক দিয়ে বলেছেন একি চা ছাড়া তেলেভাজা কেউ খেতে পারে? তাই চায়ের জল গরম হতে হতে (ঐ উচ্চতায় জল গরম মানেই অঢেল আড্ডার সময়) জানা হয়ে গেল কিশোরদুটির কথা। দুজনেই ছাত্র, এগারো ক্লাশের। এইভাবে কটি স্কুল আছে, কলেজে যেতে হলে কোথায় জেতে হয় ইত্যাদি রুটিন গল্পসল্প সেরে আমরা উঠলাম। বাইরে বেরিয়েই দেখি সারসার বাচ্চারা বাড়ি ফিরছে। বোঝা গেল কাছেই একটা স্কুল ছিলো, সেটা এখন ছুটি হলো। সেইসব কলরবরত বাচ্চারা ভিনগ্রহের দুটি প্রাণী দেখে খুবই উত্তেজিত, আমরাও তাদের নিরাশ না করে যথাসম্ভব হাতটাত নেড়ে রিয়াজের উদ্দেশ্যে ফিরলাম। এর মধ্যে অবশ্য মেঘ কেটে গিয়েছে, গোটা পাঁচেক শক্তিমান ট্রাক সেনা নিয়ে কার্গিলের দিকে চলে গেছে। ঐ সরু রাস্তায় সেই বিশাল গাড়ি এতই আস্তে চলতে বাধ্য হয় যে চলন্ত গাড়ি থেকে নেমে এসে জওয়ান ছোটখাটো খরিদারি করে আবার গাড়িতে গিয়ে উঠতে পারে।

    দ্রাস মনে থেকে গেল খুব। ধাতব চকচকে মসজিদের ঠিকরানো রোদ নিয়ে, পথের পাশে তোবরানো গালের ঝাপসা চশমার বুড়োবুড়ি নিয়ে, বরফির মত কালো চশমাপরা সেই মানুষটি এবং রাস্তার ধারে লেপ বুনতে থাকা ধুনুরিদের নিক্ষিপ্ত তুলোদের নিয়ে। যেন বরফের দেশে মেকি তুষারের আয়োজন।
  • সিকি | 894512.168.0145.123 | ৩০ আগস্ট ২০১৮ ০৯:০২377158
  • বাঃ। দু লাইন লিখি এখানে?

    সেনাবাহিনির জওয়ানদের ব্যবহারে তফাত ঘটে যায় এই জোজি-লা পেরোলেই। শ্রীনগর, সোনমার্গ -
    এসব জায়গাতে দেখেছি মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেল থেকে হাত সরাতেই সামনের জওয়ানটির হাতের আঙুল ট্রিগারে চলে যাচ্ছে। আমি (বা অন্য কোনও বাইকার) হয় তো স্রেফ হাত ওয়েভ করতে চেয়েছিলাম। এরা সাধারণত ট্র্যাভেলার বা ট্যুরিস্টদের সাথে কোনওরকমের ইন্টার‌্যাকশনে যায় না।

    জোজি-লা পেরোলেই গল্পটা আলাদা। ওখানে হাত নাড়লে উত্তরে হাসিমুখে হাত নাড়বেন জওয়ান। এগিয়ে এসে গল্প করলে গল্পে যোগ দেবেন। চা খাওয়াবেন। তেমন পছন্দ হয়ে গেলে নিজেদের র‌্যাশন থেকে আখরোট বা চকলেটের প্যাকেট তুলে দেবেন আপনার হাতে। জোজি-লার এই পারে আর্মি সাধারণ মানুষের সাথে একেবারে মিলেমিশে থাকে। সাধারণ মানুষও আর্মির কাছ থেকে প্রচুর প্রচুর উপকার পায়। স্কুল, শীতের ছাউনি, পরিবহণ, চিকিৎসা - সমস্ত আর্মি করে এখানকার সাধারণ মানুষের জন্য। এই শিফটটা ঘটেছে কারগিল যুদ্ধের পরে। জোজি-লার পর থেকেই লাদাখ রিজিয়নের শুরু। আগে আর্মি কাশ্মীর ভ্যালি আর লাদাখ রিজিয়নের মধ্যে কোনও তফাৎ করত না। সাধারণ মানুষের সাথে খুব একটা মিশত না। সেই কমিউনিকেশন গ্যাপ কাজে লাগিয়েই পাকিস্তান থেকে ইনফিলট্রেশন ঘটেছিল ১৯৯৯ সালে। দ্রাসের ম্যাক্সিমাম লোকই পশুপালক। এরা দূর দূর পর্যন্ত ভেড়া গরু চরাতে যায়। আর লোকেশনওয়াইজ, দ্রাস থেকে ঠিক আড়াই কিলোমিটার বাঁ দিকে (লাদাখের দিকে মুখ করে দাঁড়ালে) পাকিস্তানের বর্ডার। এরা জানাতে চেয়েছিল অচেনা লোকজনের আসার কথা। আর্মি পাত্তা দেয় নি।

    গুমরি চেকপোস্টে নিজেদের নাম, ড্রাইভিং লাইসেন্স নাম্বার ইত্যাদি এন্ট্রি করিয়ে দ্রাসের দিকে এগোতে হয়। দ্রাস, নাকি পৃথিবীর সেকেন্ড কোল্ডেস্ট জনবসতি। শীতে এখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ষাট ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। ঠাণ্ডাটা যে এখানে বেশি, সেটা বোঝা যায়। দ্রাস পেরিয়ে কারগিল পৌঁছলে ঠাণ্ডা কমে যায়।
  • সিকি | 894512.168.0145.123 | ৩০ আগস্ট ২০১৮ ০৯:২৪377159
  • আর এই যে লোকগুলো, কালোকুলো, মাথায় হলুদ হেলমেট লাগানো, চোখে শস্তার রোদচশমা পরে পাহাড়ে বরফের মাঝখানে বেলচা চালায়, জেসিবি চালিয়ে বরফ সরায়, পিচ গলিয়ে রাস্তা মেরামত করে - জোজি-লায়, চাংলায়, খারদুংলায়, কিংবা তুর্তুকে?

    এরা ব্রো-র ভাড়া করা লেবার। ব্রো, মানে, বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন। পাহাড়ের রাস্তা মেরামতের দায়িত্বে থাকে যারা। এরা আসে বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, অসম, এমনকি দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ বা নদীয়া নামের আড়ালে, আসে ওপার বাংলা থেকেও।

    দলে দলে আসে। আর্মির ট্রাকে করে এদের জোজি-লা পার করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ওপরে। জীবনে পাহাড় দ্যাখে নি, বরফ দ্যাখে নি, অক্লাইমেটাইজেশন কী জিনিস জানে না, তাদের নিয়ে গিয়ে কাজ করানো হয়। মানুষের বেসিক অধিকার বলতে যা যা বুঝি আমরা, তার খুব কমই জোটে এদের। অন্যের ফেলে দেওয়া ছেঁড়া গামবুট, অন্যের দান করা গগলস, এইসব নিয়ে কাজ করতে হয়।

    শৌচের জায়গা নেই, ঐ টিনফিন দিয়ে একটা ঘেরা জায়গা। একটা কি দুটো বালতি। নিজেদের জল নিজেদেরই গরম করে নিতে হয়। আর রাতে থাকার জন্য? একটা তাঁবু, তাতেই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে ঠেসেঠুসে শোয়া, তাতে ঠাণ্ডা কম লাগে। পুরুষনারী একসাথে।

    এই জীবনযাপনের ফলে, এদের জীবনের মূল্যবোধ নৈতিকতা, আমাদের শহুরে ধ্যানধারণার থেকে অনেক অনেক আলাদা। অপরিচিত পুরুষনারীর মধ্যে যৌনসম্পর্ক এবং সেই সম্পর্কজাত শিশুর জন্ম, এইসব তাঁবুতে খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়, এবং তাই নিয়ে কোনও রকমের ছুঁৎমার্গ থাকে না। শিশুর বাবা কে, তাই নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। দিগন্তবিস্তৃত সাদা বরফের মাঝে গড়ে ওঠে এদের আড়ালহীন ম্যাট্রিয়ার্কিয়াল কমিউনিটি।

    এরা এভাবেই বাঁচে। বছরের পর বছর।
  • Tim | 89900.228.0167.253 | ৩০ আগস্ট ২০১৮ ১১:৪৭377160
  • হ্যাঁ বি আর ও এবং তাদের কর্মকান্ড। অন্য রাজ্য থেকে আসা এই শ্রমিকদের নিয়ে কাশ্মীরের লোকেদের মধ্যে অসন্তোষ আছে, এটাও দেখলাম।

    সিকি, ইচ্ছে হলেই লিখিস। আমি মাঝে মাঝে এটা এগিয়ে নিয়ে যাবো।
  • hu | 3478.58.89.187 | ৩০ আগস্ট ২০১৮ ১২:০৪377162
  • টিমের লেখা এবং সিকির সংযোজন ভালো লাগল
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন