এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • সৌমিত্র - এবং উৎপল ও উত্তম

    ন্যাড়া লেখকের গ্রাহক হোন
    অন্যান্য | ০২ এপ্রিল ২০১৯ | ১৩৬৫২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ন্যাড়া | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৫১382899
  • বিষয়টি হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয় দক্ষতা। কে অস্বীকার করতে পারেন যে সৌমিত্র, বিশেষত: বাংলা ছবিতে, অনেক স্মরণযোগ্য ও অসামান্য অভিনয় করেছেন? কিছু চরিত্রের অভিনয় আমার দেখা অন্যতম সেরা চরিত্রের অভিনয়ের মধ্যেই পড়বে। কিন্তু ভারতীয় অভিনয়ের পরিপ্রেক্ষিতে যে কারনে আমি সৌমিত্রকে অভিনেতা হিসেবে নাসিরুদ্দীন, উৎপল দত্ত, রবি ঘোষ বা উত্তমকুমারেরও সঙ্গে তুলনায় আনতে পারিনা, তা হল অভিনয়ের রেঞ্জ। প্রত্যেক অভিনেতার একটা কম্ফর্ট জোন থাকে। যেখানে অল্প আয়াসে অভিনেতা সেই জোনের চরিত্রায়ন সহজে করতে পারেন। যেহেতু অধিকাংশ অভিনেতাই - যাদের কথা বললাম - মধ্যবিত্ত/উচ্চ-মধ্যবিত্ত শিক্ষিত সমাজ থেকে আসেন, এনাদের পক্ষে সেই সমাজের চরিত্র অভিনয় করা তাদের পক্ষে সোজা। যে অভিনেতা বিশ্বাসযোগ্যভাবে এই বাধাটা ভাঙতে পারেন, তাঁরাই ভালো বা খুব ভাল থেকে মহৎ অভিনেতায় উত্তীর্ণ হয়ে যান। এছাড়াও এনারা যে সিনেমার জগতে অভিনয় করেন সেখানে দিনের পর দিন এনাদের রদ্দি থেকে রদ্দিতম স্ক্রিপ্টে কাজ করতে হয়। অথচ পেশাদার অভিনেতা হিসেবে এনাদের দায়িত্ব থাকে সেই অবিশ্বাস্য চরিত্রকেও দর্শকদের কাছে যথাযোগ্য আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য করে তোলা। আর এই দুই জায়গাতেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ভাল বা খুব ভাল-তেই আটকে থাকেন। মহৎ অভিনেতা হয়ে ওঠেন না।
    ধরা যাক উৎপল দত্ত। সত্যজিতের পরিচালনাতেই উৎপল দত্তকে দেখি জন-অরণ্যে বিশুদার ভূমিকায়, দেখি জয়-বাবা-ফেলুনাথে মগনলালের ভূমিকায়, দেখি হীরক-রাজার-দেশেতে হীরকরাজের ভুমিকায়, দেখি আগন্তুকে মনমোহন মিত্রর ভূমিকায়। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতে সবকটি চরিত্র ভিন্ন। কোনটার সঙ্গে কোনটার মিল নেই। প্রত্যেকটির বাচনভঙ্গি আলাদা। রসিক বিশুদা কথা বলেন বাঙাল-মেশান কলকাত্তাইয়া ডায়লেক্টে, মগনলাল বলেন অশিক্ষিত ও ভাঙা-বাংলা মেশান হিন্দিতে, হীরকরাজ বলেন স্টাইলাইজড গ্রাম্য বাংলায়, মনমোহন বলেন শহুরে সফিস্টিকেটেড বাংলায়। প্রতিটি চরিত্রের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ভিন্ন, প্রতিটি চরিত্রের থ্রো ভিন্ন, হাতের ব্যবহার ভিন্ন, চোখের ব্যবহার ভিন্ন, প্রপসের ব্যবহার ভিন্ন। কিন্তু এর কোন চরিত্রেই আমরা উৎপল দত্তকে দেখতে পাইনা। চরিত্রগুলিকেই দেখতে পাই। মগনলালকে দেখলে কখনই মনে পড়বে এই অভিনেতাই পশ্চিমি ধ্রুপদী সঙ্গীতে পরিশীলিত; বিশুদাকে দেখলে মনে পড়বে না এই লোকটা বাংলাভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শক্তিশালী নাট্যকার ও নাট্য-পরিচালক; হীরকরাজকে দেখে মনে পড়বে না ইনিই বামপন্থী - কখনও বা অতি-বামপন্থী - রাজনৈতিক চিন্তার সমব্যথী, স্তালিনকে নিয়ে প্রবন্ধ লেখেন। অর্থাৎ ব্যাক্তি-অভিনেতা একেবারে পুঁছে ফেলে চরিত্র হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এ কথা কি সৌমিত্র সম্বন্ধে বলা যায়?

    উৎপল দত্ত তো চরিত্রাভিনেতা। কিন্তু বাঙালির একমেবাদ্বিতীয়ম উত্তমকুমারের রেঞ্জটা দেখা যাক। যে কম্ফর্ট জোনের কথা বলছি, উত্তমের ক্ষেত্রে সেটি ছিল শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙালি। ইন্টেলেকচুয়াল নয় কিন্তু। এখানে তো উত্তম ফাটিয়েছেনই। কিন্তু এর বাইরে যেখানে উত্তম "খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন" করছেন বা যদুবংশ করছেন - সেখানে কিন্তু নিজের কম্ফর্ট জোন থেকে শুধু যে বেরিয়ে আসছেন তাই নয়, বেরিয়ে এসে অসম্ভব বিশ্বাসযোগ্য একটা রূপ দিচ্ছেন চরিত্রগুলোকে। সত্যজিতের নায়ক ও ব্যোমকেশ - দুইই কিন্তু সেই কম্ফর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসা। নায়কের অভিনয় তো বাঙলা ছবির প্রথম পাঁচটি অভিনয়ের মধ্যেই পড়ে যাবে।

    ওই একই সত্যজিতের ছবিতে সৌমিত্র - অপুর সংসারে অপু, পোস্টমাস্টারে অমূল্য, চারুলতায় অমল, কাপুরুষে অমিতাভ, অভিযানে নরসিং, অশনি সংকেতে গঙ্গাচরণ, সোনার কেল্লা আর জয়-বাবা-ফেলুনাথে ফেলু মিত্তির, হীরক-রাজার-দেশেতে পন্ডিতমশাই, ঘরে-বাইরেতে সন্দীপ, গণশত্রুতে ড: গুপ্ত, শাখা-প্রশাখাতে প্রশান্ত। (কিছু মিস করে যেতে পারি। স্মৃতি থেকে লেখা)। এই চরিত্রগুলো মধ্যে একমাত্র অভিযানের নরসিং আর অশনি সংকেতের গঙ্গাচরণ ছাড়ার আর সবাই শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। অপু, অমূল্য, অমল তো তৎকালীন সৌমিত্রই - খালি সময়টা বছর কুড়ি-তিরিশ-আশি পেছোন। শাখা-প্রশাখার চরিত্রটির আর্থ-সামাজিক অবস্থান এক হলেও সেখানে চরিত্রটি চ্যালেঞ্জিং।

    এই তিনটি ব্যতিক্রমী চরিত্রেই কিন্তু সৌমিত্র ফাটাতে পারেননা। তিনটি চরিত্রতেই সৌমিত্রর অসাধারণ হোমওয়ার্কের ছাপ দেখা যায়। গঙ্গাচরণের বা নরসিংহের বডি ল্যাঙ্গুয়েজে ব্যক্তি সৌমিত্র থেকে বেরিয়ে এসে নতুন বডি পশ্চারের ছাপ স্পষ্ট। যেমন স্পষ্ট শাখা-প্রশাখার অব্যবস্থচিত্ত প্রশান্ত চরিত্রায়নের প্রস্তুতি।

    এখানে অমিয়নাথ সান্যালের 'স্মৃতি অতলে' থেকে একটু উদ্ধৃত করব। (আগ্রাওয়ালে মালকাজানের গানের প্রসঙ্গে) "তখনকার গান শুনে আমার ও শ্যামলালের মনে হয়েছিল, লতাটি তৈরী লক্লকে যতদূর হতে হয় হয়েছে গায়কীর গুণে, বাকি আছে ফুল ফোটার চমকদারি। যাকে গানের চমক্ বলে, সেটার ঘাটতি ছিল, আমরা বুঝেছিলাম। চমক্ জিনিসটা অনুভব করা যায়, কিন্তু বলে বুঝান যায় না।'

    যে কোন পারফর্মিং আর্টেই এই 'চমক্'-এর জায়গা আছে। টেকনিকালি সব ঠিক, কিন্তু হৃদয় ছুঁচ্ছে না। এরকম পারফরমেন্সই তো বেশি দেখি বা শুনি আজকাল। নরসিং, গঙ্গাচরণ বা প্রশান্তর অভিনয়ও আমার কাছে তেমনি লাগে। সৌমিত্র যেমন একেবারে হুবহু অপু, ফেলু বা অশোক গুপ্ত হয়ে যেতে পারেন, ঠিক সেরকম কিন্তু গঙ্গাচরণ হয়ে উঠতে পারেন না।

    এটা আমি শুধু সত্যজিতের ছবির প্রসঙ্গে বললাম। কিন্তু আমার এই উপলব্ধি বজায় থাকে অন্য পরিচালকের ছবিতেও। 'অসুখে' সৌমিত্র যেমন অসামান্য মধ্যবিত্ত অসহায় বাবা হয়ে ওঠেন ঝিন্দের বন্দীতে তেমন সহজে ময়ূরবাহন হয়ে ওঠেন না। আমার দেখা ছবির মধ্যে "কোনি" ছবির খিদদা চরিত্রে সৌমিত্র নিজেকে ভেঙে ফেলেছিলেন।

    এই শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত, চিন্তাশীল বাঙালী - এটাকেই আমি সৌমিত্রর কম্ফর্ট জোন বলে মনে করি। এই জোনে সৌমিত্র রাজা। এর বাইরে সৌমিত্রকে কখনই স্বচ্ছন্দ মনে হয়নি। অথচ একজন ব্যতিক্রমী অভিনেতা ক্রমাগত নিজেকে ভাঙতে থাকেন। নিজের কম্ফর্ট জোনকে প্রসারিত করতে থাকেন ক্রমাগত। কী নাটক, কী সিনেমা। এইখানে অভিনেতা সৌমিত্রর খামতি।

    এছাড়াও প্রথমদিকের কমার্শিয়াল ছবিতে সৌমিত্রর কমিটমেন্টের অভাব ছিল। আমাদের মনে পড়বে তা নিয়ে সত্যজিতের কাছে ভর্ৎসিতও হয়েছিলেন সৌমিত্র। নিজেই জানিয়েছেন সে কথা। পরবর্তীতে সেই দুর্বলতা কাটিয়েও ওঠেন। কিন্তু সেখানেও নিজের গন্ডির বাইরে স্বাচ্ছন্দ্য দেখাতে পারেননি তিনি। উৎপল দত্ত যেমন সহজে অমানুষ থেকে গোলমাল থেকে অন্যায় অবিচার পর্যন্ত আদ্যন্ত কমার্শিয়াল ছবিতে আপদমস্তক অবিশ্বাস্য চরিত্রে অবলীলায় অভিনয় করে যান, দর্শক-পরিচালকের আকাঙ্খার অভিনেতা হয়ে ওঠেন, সৌমিত্র কি কখনও নিজের সেরকম জায়গা করতে তৈরি করতে পারলেন?
    অথচ সৌমিত্রর সামনে জমি চষা ছিল। যে সময়ে উত্তমকুম্ব্মার চরিত্রাভিনয়ের দিকে যাবার কথা - সৌমিত্ররও - সে সময়েই উত্তমকিমারের মৃত্যু হল। সুযোগ ছিল ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যালদের চরিত্রগুলো নিজের করে নেওয়ার। নাটকেও শম্ভু মিত্র, অজিতেশ আর পরে উৎপল দত্তর অনুপস্তিতির সুযোগও ছিল ওনার সামনে। সে সুযোগের - ছবি ও নাটকে - সদ্ব্যবহার করতে পারলেন না সৌমিত্র। এটা সমালোচনা নয়। এটা আক্ষেপ। এ আক্ষেপ নিয়েই আমাদের মতন আধা-প্রৌঢ়দের বাকি জীবন কাটাতে হবে বাংলা সিরিয়ালি অভিনয় দেখে।
  • de | 4512.139.9001212.172 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১১:২৫382910
  • একদম একমত - আমি বলেও থাকি আমার চারিপাশে -

    নিজেকে ভাঙতে না পারলে অল টাইম গ্রেট অভিনেতা হওয়া যায় না। সৌমিত্রকে আমার অত্যন্ত স্টিরিওটাইপ মনে হয়েছে, বার বার। খলনায়ক হিসেবে একেবারেই ফেলিওর।

    অভিনেতা হিসেবে উত্তম বেশী মার্ক্স পাবেন - বহু লেয়ারের চরিত্র করেছেন - ন্যাড়াবাবু যেগুলো লিখলেন তা ছাড়া আমার খুব প্রিয় একটা উত্তম-চরিত্র "বাঘবন্দী খেলা" তে।

    ইদানীংকালে ঋত্বিক বা ঋদ্ধির ফ্লেক্সিবিলিটি ভালো লাগে -
  • S | 458912.167.34.76 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১১:৪৪382921
  • মগনলাল অশিক্ষিত ছিলোনা। উৎপল দত্তের অ্যাকসেন্ট ঠিক ছিলোনা। অনেকটা মাড়োয়ারি অ্যাকসেন্টে কথা বলেছিলেন। ঐ অ্যাকসেন্টে ইউপির কোনো জায়্গার লোক কথা বলেনা।

    উত্তমকুমার বাজে অভিনেতা ছিলেন।
  • lcm | 900900.0.0189.158 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১১:৫৭382932
  • সৌমিত্র ডাইরেক্টর্‌স অ্যাক্টর, তাই ঐ সত্যজিৎ-এর ১৪টা সিনেমাই সই -- চেহারাটাও ঠিক অ্যাভেরেজ বাঙালির মতন নয়, রোমান্টিক হিরো-ও নয়, এদিকে অভিনয় একমাত্র জীবিকা - হরনাথ চক্রবর্তী থেকে স্বপন সাহা সবই করতে হয় --
  • Tathagata Chattaraj | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১২:০২382943
  • একটি জীব্ন বা আতন্ক সিনেমা দুটির কথা দেখ্লাম না। টিকটিকি বা লিয়র নাট্ক নিয়ে কোন ক্থা হল না। আর এক্জনকে ছোট ন করে কি আরেকজনকে ভালো বলা হয় না?
  • sm | 2345.110.344512.112 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৩৭382954
  • উত্তম কুমার যদি বাজে অভিনেতা হয়,তাহলে বাংলা ও হিন্দি সিনেমায় ভালো অভিনেতা কয়েক জনের নাম শুনি।যাঁরা,নায়ক থেকে ভিলেন,কমেডিয়ান সবরকম চরিত্রে ও বিভিন্ন শেড এর অভিনয় করেছেন।
  • S | 458912.167.34.76 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১২:৫০382963
  • এনিওয়ান বাট উত্তমকুমার।
  • sm | 2345.110.344512.112 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:০১382964
  • দেব,তাপস পাল চলবে?
  • S | 458912.167.34.76 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:০৪382965
  • দেব, তাপস পালের থেকে বেটার অভিনেতা উত্তমকুমার। এটা আমিও মানছি।
  • sm | 2345.110.893412.90 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১৩:৫৮382900
  • এখনো তিন চার জনের নাম করতে পারলেন না,উত্তম কুমার এর চেয়ে বেটার।
  • | 453412.159.896712.72 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:০৮382901
  • অ্যাঃ উ-কু'র ঐ কজলপরা চোখ তুলে
    হয় 'অঁ'
    নয় 'আঁ'
    অথবা 'আসসা'
    শুনলেই কেমন একটা ইয়াকি লাগে।

    ন্যাড়াদা যে কি কন!
  • এলেবেলে | 230123.142.0189.3 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১৮:৩৮382902
  • কলেজ লাইফে আমরা কতিপয় এঁচোড়ে পাকা উত্তমকুমারকে উত্তম কুমড়ো বলতাম এবং এতদিন পরেও তাই বলি। সৌমিত্র এলেন অথচ বাক্সবদল এল না, বসন্ত বিলাপ এল না, সাত পাকে বাঁধা এল না, এমন কি আকাশকুসুমও এল না । যে সত্যজিতের ছবির কথা এতবার এল তিনি ফেলুর চরিত্রে চেয়েছিলেন - বরুণ চন্দের হাইট, ধৃতিমানের কণ্ঠ, শুভেন্দুর মুখশ্রী এবং সৌমিত্রের অভিনয়। বলা বাহুল্য, তিনি সৌমিত্র ছাড়া বাকি তিনজনকেই অন্য সিনেমায় ব্যবহার করেছেন।
  • PT | 340123.110.234523.7 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:০৮382903
  • সংসার সীমান্তে?
  • এলেবেলে | 230123.142.0189.3 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:১৯382904
  • যে ছবি ঋত্বিক ঢ্যাঙা মানকের হিরোকে নিয়ে করতে চেয়েছিলেন তা না হওয়ায় উক্ত ছবিটি আমি না দেখার সিদ্ধান্ত নিই। তাই লিস্টে নেই।
  • pi | 785612.51.4512.76 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ১৯:৪৭382906
  • ঝিন্দের বন্দীর ময়ূরবাহন, একটি জীবনে হরিচরণ কম্ফোর্ট জোনের মধ্যে?

    বরং পরের দিকে ঐ কিছু না দেখা মাস্টামশায়ের মত
    সাদা ধুতি পান্জাবি পরিহিত নিম্নমধ্যবিত্ত সত আদর্শবাদী নীতি মূল্যবোধের পরাকাষ্ঠা টানাপোড়েনের জেরবার আগের প্রজন্মের শেষ খড়কুটো এবং অতি অবশ্যই প্রচুর জ্ঞানদা টাইপ চরিত্রে অনেক বেশি টাইপকাস্ট হয়েছেন।

    আর তিন ভুবনের পারেও আঁতেল মধ্যবিত্ত খোপে পড়বে?

    ডিঃ নায়কবাবুকেও আমি ভালই পছন্দ করি।
  • এলেবেলে | 230123.142.0189.3 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৪২382907
  • এটা এখানে দেওয়া উচিত হবে কি হবে না - এই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে শেষে দিয়েই ফেললাম। বিষয় যখন সৌমিত্র, ফেবুতে নিজের টাইমলাইনে সৌমিত্রের জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানিয়ে লিখেছিলাম।

    ‘অপরাজিত’-র অপু হতে চেয়েছিলেন আপনি। একটু বড় মনে হওয়ায় সত্যজিৎ বাদ দিয়েছিলেন আপনাকে, যদিও পরে আপনাকে প্রয়োজন হতে পারে বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। ‘অপুর সংসার’ যখন মুক্তি পেল তখন আপনি মাত্র চব্বিশ পার করেছেন। তারপর ইতিহাস। মাঝের ৬৩ সালটা বাদ দিলে ১৯৬০ থেকে ৬৫তে ওঁর পরিচালনায় পরপর পাঁচটা ছবিতে আপনি, পরবর্তী বছরগুলোতে আরও আটটায়। ফেলিনির যেমন মাস্ত্রোইয়ানি, সত্যজিতের তেমনই আপনি।

    শুধু কি তাই? তপন সিংহের ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর সময় আপনি পঁচিশ, আর মাত্র ছাব্বিশে ‘ঝিন্দের বন্দী’-তে আপনি টক্কর নিচ্ছেন পাক্কা এগারো বছর আগে কেরিয়ার শুরু করা উত্তমকুমারের সঙ্গে। ওই উত্তমকুমারেরই সাথে ছাব্বিশটা সিনেমা করে ফেলা সুচিত্রা সেন জীবনে প্রথমবার আপনার নায়িকা হচ্ছেন ‘সাত পাকে বাঁধা’-য় এবং আপনার অভিনয়ের সাবলীলতা তাতে বিন্দুমাত্র কমছেনা। এরপর মৃণাল সেনের ‘আকাশ কুসুম’-এ আপনি আর অপর্ণা ফাটিয়ে দিচ্ছেন, তৈরি হচ্ছে নতুন এক জুটি। টিপিক্যাল ভ্যাদভেদে রোম্যান্স দেখতে অভ্যস্ত সিনেমাপিপাসু বাঙালি এতদিনে বুঝতে পারছে বুদ্ধিদীপ্ত, ম্যানারিজম বর্জিত এবং পরিশীলিত উচ্চারণসমৃদ্ধ আন্ডারঅ্যাক্টিং-এর অপার মহিমা।

    আপনি সচেতনভাবেই ম্যাটিনি আইডল হতে চাননি, তাই শত ব্যস্ততার ফাঁকেও ঠিক সময় বের করে নিয়েছেন ‘এক্ষণ’-এর মত উচ্চমানের পত্রিকা সম্পাদনায়। পাশাপাশি জীবনভর লিখেছেন অজস্র কবিতা, গদ্য, প্রবন্ধ। একজন সফল নট, নাট্যকার এবং নাট্য পরিচালক হিসেবে ‘সিরিয়াস’ নাট্যচর্চায় আজীবন ব্যাপৃত থেকেছেন। হিন্দি সিনেমার মায়াবী আহ্বান আপনি অবলীলায় অবহেলা করেছেন, ঠিক যেমন অনায়াসে প্রত্যাখ্যান করেছেন পদ্মশ্রী খেতাব।

    আজীবন আপনার সম্পর্কে অসম্ভব দুর্বল এক সামান্য বাঙালি আপনাকে জন্মদিনে অশেষ শ্রদ্ধা জানায়।
  • S | 458912.167.34.76 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২১:০৫382908
  • উত্তমকুমার বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগে বিচরণ করেছেন। চারিদিকে বিশ্ববরেণ্য সব পরিচালক। দারুন সব স্ক্রিপ্ট রাইটার। পার্শচরিত্রে অসাধারণ সব সহ-অভিনেতা/ত্রী। প্রচুর ফ্যান ফলোয়িং। এতদসত্ত্বেও তেমন কোনো ক্যাটালগ তৈরী করতে পারেননি। কেউ উনার দশটা ছবি তুলে বলতে পারবেনা যে এগুলোতে উনার অসাধারণ অভিনয়। আছে দুয়েকটা, সে আমিও স্বীকার করছি। কিন্তু বেশিরভাগই সেই থোড় বরি খাড়া ইত্যাদি।

    উনাকে বাঙালী মনে রেখেছে রোমান্টিক নায়ক বলে। কিন্তু উনিতো সেগুলো অভিনয় করেননি।
  • pi | 785612.51.7856.73 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২১:০৯382909
  • অভিনয় করেননি তো কী করেছেন? সত্যি সত্যি রোমান্স?
  • S | 458912.167.34.76 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২১:১৯382911
  • সেগুলোকেই ক্যামেরা বন্দী করে দেখিয়ে দিয়েছে।
  • | 2345.108.343423.206 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২১:২৩382912
  • হা হা হা হা এটা এপিক
  • S | 458912.167.34.76 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৪০382913
  • উনার সঙ্গে সবথেকে বেশি অভিনয় করেছেন (যেগুলো লোকে মনেও রেখেছে সবথেকে বেশি) যে তিনজন অভিনেত্রী (নাম করছি না), তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই উনার ব্যক্তিগত জীবনে অন্যরকম সম্পক্ক ছিলো (অন্যভাবেও লিখতে পারতাম)।
  • এলেবেলে | 230123.142.0189.3 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২২:১০382915
  • এর আগেও লিখেছিলাম নায়ক ছিল উত্তমের কেরিয়ারের ৯৯তম সিনেমা। সে ছবির অভিনয়ের জন্য নাকি সত্যজিৎ বিস্তর প্রশংসাও করেছিলেন। তো তাঁকে আর নিলেন না কেন (চিড়িয়াখানা বাদ রেখে)? ঋত্বিক-মৃণালই বা পাত্তা দিলেন না কেন?
  • S | 2390012.156.561223.1 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:০১382916
  • চিড়িয়াখানা তো সত্যজিত রায় নাকি শুধু ফিনিসিং দিয়েছিলেন।

    নায়কের কথা আর কি বলবো? সাপোর্টিং রোলের সবাই দারুন করেছিলেন। কিন্তু ঐ সিনেমাটা রায়বাবু না বানালেই পারতেন।
  • sm | 2345.110.014512.40 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:৩১382917
  • এ দেখি ,সাত দিন না চান করা ঝোলা দাড়ি আঁতেল।ভালো দিচ্ছে তো!
  • এলেবেলে | 230123.142.0189.3 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:৩৪382918
  • নায়ক নিয়ে রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা অসম্ভব ভালো রিভিউ আছে। নিয্যস সেটি এসেম পড়েননি!
  • S | 2390012.156.561223.1 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:৪৩382919
  • হুম। উত্তম কুমারের ফ্যানরা সবাই চান করে গলায় মালা দিয়ে চন্দনের টিপ পড়ে গঙ্গাজল ছিটিয়ে সিনেমা দেখতে যেতো। আর ফিরে এসে ভজন গাইতো।

    আরো লিখবো?
  • sm | 2345.110.014512.40 | ০২ এপ্রিল ২০১৯ ২৩:৫২382920
  • ওটা পড়ে কি বিরাট লাভ হবে?এই যেমন আপনি লিখলেন,উত্তমকে মৃনাল, ঋত্বিক রা নেয় নি কেন?
    ঋত্বিক তো বেনুদিকে হাতে পায়ে ধরেছিল,উত্তম কে রাজি করাতে, ওঁর ছবির লিড রোলের জন্য।
    আর,মৃনাল কে উত্তম পাত্তা দিতো না বোধ হয়।
    ওই ইন্ডাস্ট্রিতে গুণী পরিচালকের অভাব ছিলো না।লোকজন উত্তম কে নেবার জন্য হাত কচলাতে থাকতো।
    সুতরাং উল্টো লিখলেই ফ্লিপ সাইড ধরা যায় না।
  • ( | 457812.254.013412.199 | ০৩ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০382922
  • ঘাড়ে পাউডারটা বাদ গেল।
    যাগ-গে, ন্যাড়ার একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য হয় টইটি শুরু করার জন্য। ভোটের আলোচনা শুনতে শুনতে, আরেট্টু হলেই, কানে ন্যাবা হয়ে যাচ্ছিল
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন