এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • 'বীর' সাভারকর ঃ একটি মূল্যায়নের প্রয়াস

    রঞ্জন
    অন্যান্য | ২৮ অক্টোবর ২০১৯ | ২৩৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • রঞ্জন | 236712.158.565612.211 | ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩৯388256
  • [এলেবেলের 'মসৃণ' লেখার চিমটি টুকু মুচকি হেসে ইগনোর করছি। কিন্তু দ্বিতীয় অংশের কথা শিরোধার্য করে এই টই খুললাম।]

    প্রথমেই একটা কথা বলি । কিছুদিন হল গুছিয়ে পড়াশোনা করে লেখার ক্ষমতা কমে গেছে। হঠাৎ ক্লান্ত বোধ করছি, বয়েস সত্তর ছুঁই ছুঁই।
    তাই এই বিষয়ে আমি কিছু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ধরতাই দিয়ে দম নিচ্ছি। যোগ্য লোকজন তথ্য এবং যুক্তি দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আমি প্রেক্ষিত বাদ দিয়ে সাদা-কালো আলোচনার পক্ষে নই । তাই নিচের পথ ধরলাম।
    ফের একটা ট্রুথ/ফলস খেলা যাক ।
    ১ সাভারকর লন্ডনে মদনলালা ধিঙড়ার সাহেব মারার পেছনে মস্তিষ্ক ছিলেন ।
    ২ সাভারকর ভারতীয়দের মধ্যে প্রথম ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহকে প্রথম 'ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম' বোলে বই লেখেন। তখন উনি লন্ডনে ।
    ৩ লন্ডনে কার্ল মার্ক্স এর এক দশক আগেই সিপাহী বিদ্রোহকে স্বাধীনতা সংগ্রাম আখ্যা দিয়ে বই লিখেছেন।
    ৪ সাভারকর ওই লেখা পড়েন নি ।
    ৫ ওই বইয়ে সাভারকর হিন্দু-মুসলিম ইউনিটির পক্সে কথা বলেন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে দুই সম্প্রদায়ের মানুষের অবদানের কথা বলেন।
    ৬ সাভারকর ম্যাজিস্ট্রেট হত্যার মামলায় অভিযুক্ত হয়ে জাহাজে বন্দী অবস্থায় ইংল্যান্ড যাবার সময় ফ্রান্সের উপকূলে পোর্টহোল দিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তীরে উঠে ফরাসী সিকিউরিটির হাতে বন্দী হন। তখন তাঁকে যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি দিয়ে কালাপানি পাঠানো হয় ।
    ৭ সেখানে তাঁর আগেই তাঁর বড়দা জেল খাটছিলেন।
    ৮ সেখানে বন্দীদের প্রতি অত্যাচার এবং রেগুলেশন অনুযায়ী খাবারদাবার ও অন্যান্য সুবিধে না দেবার বিরুদ্ধে কয়েকবার সমবেত অনশন ধর্মঘট হয় । উনি তাতে অংশ নেন নি । অন্যদেরও বলেছেন --এ তে কোন লাভ হবে না।
    ৯ ১৪ বছর আন্দামান জেলে থাকার সময় উনি প্রায় আটবার ক্ষমাভিক্ষা করে আবেদন করেন।
    ১০ বিখ্যাত স্বাধীনতা সংরামী ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী ( ত্রৈলোক্য মহারাজ) তাঁর 'থার্টি ইয়ারস ইন জেল' বইয়ে অভিযোগ করেছেন যে সাভারকর এঁকে এবং আরও অনেককে অনশনের জন্যে উসকে দিয়ে নিজে বিরত থাকেন।
    ১১ উনি ছাড়া অ্যার একজন মুচলেকা দিয়েছিলেন -- মুরারিপুকুর বোমা মামলার বারীন ঘোষ।
    ১২ উনি আবেদন পত্রে বৃটিশ সাম্রাজ্যের আজীবন সেবা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং ' দিনের শেষে প্রডিগাল সন যদি ভুল বুঝে ঘরে ফেরে তবে পিতামাতার স্নেহচ্ছায়া ছাড়া কোথায় যাবে ' বলেছিলেন।
    ১৩ এই সময় উনি হিন্দু মুসলমান দুটো জাত --এই তত্ত্বের প্রবক্তা হন জিন্না পরে এই দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতেই ১৯৩৯ এ ভারত পাকিস্তান ভাগ করার ওকালতি করেন ।
    ১৪ ওঁর মতে মুসলমান ও ক্রিশ্চান যতই মনেপ্রাণে দেশভক্ত হোক তবু ওদের বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ ওদের জন্মভূমি ভারত হলেও পূণ্যভূমি মধ্যপ্রাচ্য । কাজেই এদের আনুগত্য প্রশ্নাতীত হতে পারে না ।
    ১৫ উনি 'সিক্স গ্লোরিয়াস ডিকেডস ' বই লিখে তাতে শিবাজীর সেনা দ্বারা বন্দী মুসলমান নারীদের সসম্মানে মুক্তি দেওয়ার বিরোধিতা করেছিলেন এবং যদি বদলা নেওয়ার জন্যে -- যৌন আবেগে নয় , ধর্মীয় কারণে-- ওদের ধর্ষণ করা অনুচিত নয় বলেছেন।
    ১৬ উনি মারাঠি ব্রাহ্মণ হয়েও মাছমাংস খেতেন।
    ১৭ উনি গরুকে গোমাতা বলে পূজো করার বিরোধী চিলেন এবং অবস্থ্যাবিশেষে বীফ খাওয়া অন্যায় মনে করতেন না ।
    ১৮ উনি জাতপাতের বিরোধী ছিলেন এবং নিজে এমন মন্দির নির্মাণ করেছিলেন যাতে সবজাতের অবাধ প্রবেশাধিকার ছিল।
    ১৯ উনি ছাড়াপাবার পর ইংরেজ বিরোধী ভূমিকা ছেড়ে মুসলমান বিরোধী হয়ে উঠলেন এবং আজীবন তাই রইলেন।
    ২০ একটি মামলায় জিন্না ওঁর কেস লড়েছিলেন।
    ২১ উনি অ্যার এস এস নিয়ে উপহাস করেছিলেন এবং হিন্দু মহাসভা গড়ে তোলেন। যার পরবর্তী নেতা হন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি।
    ২২ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্যাটেলের মতে আইনের চোখে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে গান্ধীহত্যা মামলা থেকে সাভারকর ছাড়া পেলেও এর নৈতিক দায়িত্ব থেকে মুক্ত হবেন না ।
    ২৩ উনি জ্যোতিষে বিশ্বাস করতেন না ।
    ২৪ উনি নাস্তিক ছিলেন ।
  • aranya | 236712.158.2367.150 | ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪৩388267
  • রঞ্জন-দা, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে গেলে তো সাভারকার নিয়ে দস্তুরমত পড়াশুনো থাকতে হবে, তা কজনের আছে? আমার তো নেই
  • রঞ্জন | 236712.158.565612.211 | ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪৭388278
  • @অরণ্য,

    সাভারকরের লেখা দুটো ইংরেজি বই ( হিন্দুত্ব; সিক্স গ্লোরিয়াস ডিকেডস) এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ডেপুটি এডিটর পুরন্দরের লেখা সাভারকরের লেটেস্ট প্রামাণ্য জীবনী ( তিনটেই আমাজনে পাওয়া যাচ্ছে) আপাততঃ যথেষ্ট।
    একেকজন একেক পয়েন্ট নিয়ে হাত লাগাতে পারেন।
  • রঞ্জন | 236712.158.565612.211 | ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৫০388289
  • আমি ত বলছি এটা সাদাকালো নয় ধূসর রঙের খেলা। যার যা মনে হয় বলুন না -- কেউ না কেউ প্রামাণিক তথ্য (পক্ষে /বিপক্ষে ) তুলে ধরবেন।
  • Atoz | 237812.69.4545.147 | ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৪388292
  • আরো দুটো খুলে ফেলুন। রামমোহন আর বিদ্যাসাগরের নির্মোহ ব। ইদানীং ফেবু টেবু তে শুনছি তাঁরা নাকি ব্রিটিশের দালাল ছিলেন !!!! সতীদাহ নাকি উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেছিলেন বিন তুঘলক। রামমোহন ফোহন সব বকোয়াস। বিধবাবিবাহ, মহিলাগণের শিক্ষা এসব নাকি এনতারসে চলছিলই, বিদ্যাসাগর কিসুই করেন নি।
    এগুলো কিন্তু চাড্ডি রা না, আর একটা দল রীতিমতন সিরিয়াসভাবে প্রচার করে চলেছে।
  • এলেবেলে | 236712.158.455612.210 | ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ১০:১৯388293
  • @রঞ্জনবাবু, সকাল সকাল বড্ড লজ্জায় ফেলে দিলেন। চিমটি-টিমটি কাটিনি, নিখাদ শ্রদ্ধা থেকেই 'মসৃণ' শব্দটা ব্যাভার করেছিলাম। আপনি, কল্লোলবাবু এবং শিবাংশুবাবু (গুরুতে এই তিনজনকেই 'বাবু' বলি আমি)-র লেখা হোক কিংবা মন্তব্য --- সুযোগ থাকলেই পড়ার চেষ্টা করি। 'নিটোল' শব্দটাও ওই কারণেই। সাভারকরের ওপর কিছু লেখাপত্তর সংগ্রহে আছে। কিন্তু এই টই আরেকটু গড়াক, তারপর দেখা যাবে।

    @আতোজ, রামু-বিদু জুটিও নিস্তার পাবেন না! তবে আপাতত দেরি আছে।
  • Atoz | 237812.69.4545.143 | ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:৫৭388294
  • হ্যাঁ, হ্যাঁ, রামমোহন আর বিদ্যাসাগরকে নিয়ে লিখুন তো দেখি বেশ ভা আ আ লো করে । বোঝা যাবে, বেশ ভালো করে বোঝা যাবে (লেখকদের চেনা যাবে আরকি, রামমোহন আর বিদ্যাসাগরকে তো আমরা জানিই কমবেশি, এখন এই "সোনার ছেলে" লেখকদের চিনে নেওয়াটাই যা দরকার )
  • রঞ্জন | 236712.158.455612.162 | ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৬:৪৬388295
  • ১,২,৩, ৪,৫
    --

    ১৯০৬ সালের মাঝামাঝি সাভারকর লন্ডনে গ্রে'স ইন এ ব্যারিস্টারি পড়তে এলেন। পুণের এই গরীব পরিবারের ছেলেটির তখন বয়েস ২৩; পুণের ফার্গুসন কলেজে আইন পড়ার সময় ছাত্র আন্দোলন করে শাস্তি পেয়েছেন।
    শ্যামজী কৃষ্ণবর্মা , বিশিষ্ট ভারতীয় বিপ্লবী, তখন লন্ডনে ইন্ডিয়া হাউস বলে একটি হোস্টেল খুলে ভারতীয় ছাত্রদের নামমাত্র খরচায় থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা করতেন । বৃত্তিও দিতেন। উনি ইন্ডিয়ান সোসিওলজিস্ট বলে একটি র‍্যাডিক্যাল পত্রিকাও প্রকাশ করতেন। ওখানে মাদাম ভিকাজী কামা , বিপিন চন্দ্র পাল এঁর বন্ধু ছিলেন ।
    তিলকের রেকমেন্ডেশনে সাভারকর ঠাঁই পেলেন। সেখানে যোগাযোগ হোল বীরেন চট্টো ( সরোজিনী নাইডু এবং পরবর্তী কালের কমিউনিস্ট এম পি এবং কবি হারীন্দ্রনাথা চট্টোর ছোট ভাই ), বিপিন পালের ছেলে নিরঞ্জন এদের সঙ্গে।
    ইন্ডিয়া হাউসের কার্যকলাপ নিয়ে লন্ডন টাইমস সমালোচনা করল এবং গোয়েন্দারা নজর রাখতে লাগল। মদন লাল ধিংরাও ইঞ্জিনিয়রিং পড়তে গেছেন। বাপট, হোরিলাল এবং হেমচন্দ্র দাস বোমা তৈরির রাশিয়ান ম্যানুয়ালের ইংরেজি অনুবাদের কয়েক কপি নিয়ে ভারতে ফিরে গেলেন। পরে আলিপুর বোমার মামলায় (১৯০৯) হোরিলাল ও হেমচন্দ্র অভিযুক্ত হলেন। বাপট আন্ডারগ্রাউন্ড রইলেন।
    ১০ মে ১৯০৮ সালে সিপাহী বিদ্রোহের শহীদদের ৫০ বছর স্মরণ অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়া হাউস জমজমাট। মেয়েরা বন্দে মাতরম গাইলেন। সাভারকর তাঁর কবিতা ' ওহ মারটিয়ার্স' পড়লেন।
    সেই বছর সাভারকর মারাঠিতে গারিবলদির আত্মজীবনী এবং সিপাহী বিদ্রোহের ইতিহাস লিখে ফেললেন। পরের বইটি ইংরেজিতে 'দ্য ফার্স্ট ওয়ার অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স' নামে অনূদিত হোল। মারাঠি বই দুটো গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে ভারতে বেশ কিছু কপি পৌঁছে গেল।
    এই বইয়ে সাভারকর স্বাধীনতার জন্যে হিন্দু-মুসলমানের সংযুক্ত আন্দোলনের প্রশংসা করেছিলেন। পরবর্তী কালের সমাজবাদী নেতা অরুণা আসফ আলি এই বইটি পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।
    এর জন্যে সাভারকর ইন্ডিয়া হাউস লাইব্রেরিতে পড়াশুনো করেছিলেন।
    কার্ল মার্ক্সও তাঁর লেখাটি লন্ডন প্রবাসের সময় একই লাইব্রেরিতে বসে পড়াশুনোর ভিত্তিতে লিখেছিলেন। যদিও প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে । সাভারকর কি এই লেখাটির সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না?
    এ নিয়ে কোন তথ্য নেই , যদিও সেসময় সাভারকরের ওঠাবসা বেশ ক'জন বৃটিশ লেবার ও সোসালিস্ট নেতাদের সঙ্গে।
    ইতিমধ্যে ইন্ডিয়া হাউসের ম্যানেজমেন্ট সাভারকরের হাতে, আইন পাশ করেছেন । উনি কৃষ্ণবর্মা, ভিকাজি কামা এবং বিপিন পালের মতই হোম রুলের দাবির পক্ষে এবং নবোদিত কংগ্রেসের নরমপন্থার বিপক্ষে বক্তব্য রাখছেন।
    এমন সময় পুণেতে বিপ্লবী কবিতা প্রকাশনের অপরাধে ওঁর বড়দা এবং পরিবারের কর্তা বাবারাও সাভারকরের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা হোল। এর ঠিক ২৩ দিন পরে মদনলাল ধিঙড়া বৃটিশ প্রশাসক মর্লি'র এডিকং উইলিকে হত্যা করলেন।
    পুলিশ ইন্ডিয়া হাউসে তালা ঝোলালো। সাভারকর বিপিএন পালের আশ্রয়ে গেলেন। গান্ধী তখন লন্ডনে , এই হত্যাকে কাপুরুষতা বোলে নিন্দা করলেন। সাভারকর ধিংড়ার সমর্থনে বক্তৃতা দিলেন এবং লিখলেন। পুলিশ পেছনে লাগল, তদন্ত করল, স্পষ্ট প্রমাণ পেল না । কিন্তু এর ফলে সাভারকর গ্রে ইন কোর্ট্বে আইন প্র্যাকটিস করার লাইসেন্স পেলেন না ।
  • এলেবেলে | 236712.158.895612.20 | ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১১:১১388296
  • @রঞ্জনবাবু, অরুন্ধতী রায় কিন্তু বলেছেন সাভারকর মার্ক্স-এর সিপাহি বিদ্রোহ নিয়ে লেখা তখনও অবধি পড়েননি। ১৯০৯ অবধি সাভারকরের কাজকর্ম প্রশংসনীয়, এমনটা বলা যেতেই পারে।

    @আতোজ, অনেক "সোনার ছেলে" লেখক রামু-বিদুকে নিয়ে লিখেছেন ও গবেষণা করেছেন। সেসব পড়া থাকলে 'জানিই কমবেশি'-তে ধাক্কা লাগতে পারে। এখানেই এবড়োখেবড়ো নামে কোন এক উটকো ভদ্রলোক গান্ধীর আদ্যশ্রাদ্ধ করছেন দেখছি, মহাত্মার ইমেজ তো গেল প্রায়।অথচ আশ্চর্য গুরুর 'জানিই কমবেশি'-রা কোনও হেলদোল দেখাচ্ছেন না। একবার ঝুঁটি ধরে নেড়ে দিয়ে আসবেন নাকি ওই উটকো ভদ্রলোকটিকে? আপনি গেলে আমিও যাব ওখানে, কথা দিলাম।
  • রঞ্জন | 236712.158.565612.25 | ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১২:২৭388257
  • ৬, ৭, ৮।
    সাভারকরের কোন মামলায় কত বছর জেল হয়েছিল? কালাপানি কতদিন? সত্যি সত্যি ক্ষমাভিক্ষা করেছিলেন?

    -- এগুলো এখন ওয়েল ডকুমেন্টেড। ভারতীয় এবং বৃটিশ সবরকম।

    কিছু ঘটনাঃ
    ক) ১৯০৮ সালে সাভারকর ভারতে কুড়িটি ব্রাউনিং পিস্তল লন্ডন থেকে ইন্ডিয়া হাউসের রাঁধুনি চতুর্ভূজ আমিনের মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়েছিলেন।
    খ) নভেম্বর ১৯০৯ এ আমেদাবাদ শহরে ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর উপর দুটো বোমা ছোঁড়া হয়, একটাও ফাটেনি। কিন্তু ২১ ডিসেম্বরে নাসিক শহরে কলেক্টর এবং ম্যাজিস্ট্রেট জ্যাকসনকে একটি থিয়েটার হলে অনন্ত কানহারে গুলি করে মারে। জ্যাকসন সংস্কৃত ও মারাঠি ভাষায় সুপন্ডিত ছিলেন এবং মারাঠিতেই কথা বলতেন। উনিই সাভারকরের দাদা বাবুরাওকে রাষ্টরদ্রোহের কবিতা ছাপার অপরাধে আজীবন কারাবাসের শাস্তি দেন অথচ জনৈক ইংরেজকে প্রমাণাভাবে একজন ভারতীয়কে গুলি করে মারার অভিযোগ থেকে খালাস করে দেন।
    গ) সন্দেহ করা হয় যে এর পিছনে আসল মাথা হচ্ছে লন্ডনে বসে বদলা নিতে কলকাঠি নাড়া ছোটভাই বিনায়ক দামোদর সাভারকর। আমিন রাজসাক্ষী হোল , অভিযুক্তদের কাছ থেকে পাওয়া একটি পিস্তল সেই কুড়িটির একটি বলে প্রমাণিত হোল। সবাই বলল এখান থেকে সরে যাও, তাই সাভারকর প্যারিসে গিয়ে মাদাম কামার আশ্রয়ে থেকে 'মদন'স তলওয়ার' নামে ( নামটি বীরেন চট্টোর দেওয়া) ওঁর পত্রিকায় লিখতে থাকেন। সেখানে রাশিয়া, ইজিপ্ট এবং তুরস্কের বিপ্লবীদের সঙ্গে ওঁর মোলাকাত হতে থাকে। হঠাৎ উনি প্যারিসের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে সবাইকে অবাক করে লন্ডনে ফিরে গেলেন এবং ১৩ মার্চ ১৯১০ তারিখে ভিক্টোরিয়া রেল স্টেশনে নামামাত্র গ্রেফতার হলেন।
    মনে হয় পুলিশকে কেউ গোপনে খবর দিয়েছিল।
    ঘ) কেন ধরা পড়বেন জেনেও উনি কারও কথা (বিশেষ করে মাদাম কামা এবং বীরেন চট্টোর) না শুনে লন্ডন ফিরে গেলেন?
    এ নিয়ে অনেকগুলো থিওরি প্রচলিত।
    যেমন দলকে উজ্জীবিত করতে বা নিজের সাহস প্রমাণ করতে, কারণ দলের মধ্যে কথা উঠছিল যে উনি সবাইকে ফিল্ডে অ্যাকশনে এগিয়ে দেন , কিন্তু নিজে নিরাপদে পেছনে থাকেন।
    তবে আর একটা ইন্টারেস্টিং থিওরি বৃটিশ প্রেসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে । তাহল উনি মার্গারেট লরেন্স নামে এক ইংরেজ মহিলার প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁর গোপন আমন্ত্রণে দেখা করতে গিয়ে পুলিশের ফাঁদে বন্দী হন।
    কৃষ্ণবর্মা প্রেসে চিঠি লিখে জানিয়েদেন যে এটা -- পুলিশের দ্বারা প্রেমিকার বকলমে পাঠানো জাল চিঠি পেয়ে উনি ধরা পড়েন---গুজব মাত্র ।
    ( আমার মনে পড়ে সমারসেট মম'এর দ্বিতীয় ভল্যুমে অ্যাশেন্ডেন সিরিজের ওই গল্পটি যাতে চন্দ্র নামের পাগড়ি পরা ভারতীয় বিপ্লবীকে বৃটিশ পুলিশ প্রেমিকার চিঠি পাঠিয়ে বন্দী করে ।)
  • রঞ্জন | 236712.158.565612.25 | ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১২:৩০388258
  • @ এলেবেলে,
    আমি সহমত । নইলে ওঁর সমকালীন এবং বন্ধুস্থানীয় তথা পরবর্তী কমিউনিস্ট বীরেন চট্ট বা হারীন্দ্রনাথ চট্টোর লেখায়, আত্মজীবনীতে এর উল্লেখ থাকত।
  • রঞ্জন | 236712.158.895612.170 | ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৯:৪৫388259
  • উপরের সাক্ষ্য, পিস্তল, চতুর্ভুজের বয়ান এবং সাভারকরের ট্রাংক থেকে বাজেয়াপ্ত করা সিপাহী বিদ্রোহের উপর বই, 'হাউ টু অরাগানাইজ রেভোলুশন' বিষয়ক লেখাপত্তর এবং লন্ডনে নিষিদ্ধ ইস্তেহার --এসব দেখে ১২/০৫/১৯১০ এ বৃটিশ ম্যাজিস্ট্রেট রায় দিলেন যে এই বন্দীর ভারতে ফিউজিটিভ অফেন্ডার্স অ্যাক্ট ১৮৮১ অনুযায়ী বিচার হওয়া উচিত। আপীল এবং হেবিয়াস কর্পাসের রিট ব্যর্থ হোল। ২১/০৬/১৯১০ তারিখে কোর্ট অফ আপীল আগের রায় বহাল রাখল।
    ইতিমধ্যে বৃটিশ রাজ একটি অর্ডিনান্সের মাধ্যমে সাভারকরের ভারতে বিচারের জন্যে এক তিন সদস্যীয় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করল যাতে জুরি থাকবে না এবং যার রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না ।
    বন্ধুরা ( যেমন কৃষ্ণবর্মা, মাদাম কামা, আইয়ার এবং বীরেন চট্টো) ডিফেন্সের জন্যে ফান্ড সংগ্রহে নেমে পড়লেন। পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী বীরেন চট্টোপাধ্যায় রিস্ক নিয়ে প্যারিস থেকে লন্ডন এসে চোদ্দোবার ব্রিক্সটন জেলে সাভারকরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। লন্ডনে ভারত পাঠানোর বিরুদ্ধে বৃটিশ কোর্টে সেকন্ড আপীল ঢিমেতেতালায় চলল ।
    নাসিকে জ্যাকসন হত্যার সময় সাভারকর লন্ডনে ছিলেন । তাই লন্ডনে বিচার হলে অধিকতম শাস্তি হবে দু থেকে তিনবছর। সরকার চাইল পুণেতে সাক্ষী এবং কাগজপত্র যোগাড় করতে যাতে দ্যাখা যাবে সাভারকর অনেক আগে থেকেই ভারতে সশস্ত্র পন্থায় বৃটিশ শাসন উচ্ছেদের প্রচার করছিলেন।
    আপীল খারিজ হোল এবং ১ জুলাই ১৯১০ তারিখে মুম্বাইগামী এস এস মোরিয়া জাহাজে একটি চারবার্থের কেবিনে হাতকড়া লাগানো সাভারকরকে তোলা হোল । সঙ্গী স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ইন্সপেক্টর এডওয়ার্ড পার্কার এবং মুম্বাই পুলিসের ডিএসপি সি আই ডি ও দুজন কন্সটেবল।
    জাহাজ ৭ জুলাই সকাল ১০টায় ফ্রান্সের মার্সাই বন্দরে নোঙর ফেলল।
    ৮ জুলাই সকাল সাড়ে ছ'টায় সাভারকর পায়খানায় যাবার অনুমতি চাওয়ায়
    পার্কার নিজে গিয়ে ক্লোজেট চেক করে এসে হাতকড়ি খুলিয়ে ভেতরে যাবার অনুমতি দিলেন। তারপর পাশের ক্লোজেটে নিজে গিয়ে তিন ইঞ্চি ফাঁকের মধ্যে উঁকি দিয়ে দেখলেন যে সাভারকরেরটি বন্ধই আছে । উনি বাঈরে দুজন হেড কন্সটেবলকে সতর্ক পাহারায় থাকতে বোলে নিজের বাংকে ফিরে গেলেন। ওরা দরজার নিচের থেকে উঁকি মেরে দেখল যে বন্দীর চপ্পল দুটো ছেড়ে রাখা , মানে ও কাজকম্ম সারছে।
    খানিকক্ষণ পরে অমর সিং দরজার উপরে মাথা গলিয়ে দেখল ছোট্ট পোর্ট হোলের মাঝখান দিয়ে সাভারকরের আদ্দেক শরীর গলে গেছে। ওর চিৎকারে বাকিরা এসে দরজা ভেঙে যখন ঢুকল তখন সাভারকর পুরো গলে গিয়ে সমুদ্রের জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। ওরা প্রহরীদের সতর্ক করল। একজন গার্ড জলে সাঁতরানো সাভারকরকে দেখে গুলি চালাল।
    পুলিশের বিবরণ অনুযায়ী প্রায় ১২ ফুট সাঁতরে উনি জেটিতে উঠে দৌড়ুতে লাগলেন। এরাও চোর ! চোর ! ধর! ধর! চিৎকার করে তাড়া করল।
    ২০০ গজ দৌড়ে সাভারকর হাঁপিয়ে পড়লেন এবং ভারতীয় পুলিশ ও একজন ফ্রেঞ্চ ন্যাভাল সিকিউরিটি গার্ড ওঁকে চেপে ধরল।
    সাভারকর ফ্রেঞ্চ পুলিশকে বললেন -তুমি আমাকে গ্রেফতার করে তোমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পেশ কর।
    ও ইংরেজি জানত না । কাজেই বন্দী সাভারকরকে আবার ওই 'মোরিয়া' জাহাজে তোলা হোল।
  • রঞ্জন | 236712.158.455612.162 | ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ২০:৫০388260
  • সাভারকরের মুক্ত হওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় একটা আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন সামনে এল।
    হারীন্দ্রনাথ চট্টো জানিয়েছেন যে প্যারিসে মাদাম কামা এবং বীরেন চট্টো এই প্রশ্নটি তুললেন। কামা কার্ল মার্ক্সের নাতি জাঁ লঙ্গে যিনি ফ্রান্সের প্রভাবশালী সোশ্যালিস্ট তরুণ নেতা এবং কলামনিস্টকে অনুরোধ করলেন সাভারকরের মুক্তির দাবিতে প্রচার আন্দোলন শুরু করতে । জাঁ লঙ্গে ল্যুমানিতের কলামনিস্ট ছিলেন । প্যারিসের ডেইলি মেইল পত্রিকায় ছাপা ছোট খবরটিকে ভিত্তি করে উনি সাভারকরের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন।
    মার্সাই বন্দরে সাভারকরকে কে বন্দী করল?
    বৃটিশ বা ভারতীয় পুলিশ? ওদের ফ্রান্সের জমিতে কাউকে গ্রেফতারের অধিকার কে দিয়েছে ? এ ত আন্তর্জাতিক আইনের উল্লংঘন!
    তবে কি ফ্রেঞ্চ নাভাল পুলিশ? তাহলে সে কি করে বন্দীকে বৃটিশ পুলিশের হাতে সমর্পণ করল? বিশেষ করে বন্দী যখন ফ্রেঞ্চ ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে সারেন্ডার করতে চাইছে?
    লঙ্গে ল্যুমানিতে পত্রিকায় একগাদা কড়া প্রবন্ধ লিখলেন। ফলে ফ্রান্স, ব্রিটেন এবং ভারতের মধ্যে আইনি ক্যাচাল শুরু হোল।
    মার্সাইয়ের সোশ্যালিস্ট মেয়র জাঁ জেরে এবং তাঁর ডেপুটি কাঁদেন্যা বললেন বৃটিশ পুলিশ সাভারকরকে 'চোর ' বোলে ফরাসী পুলিশকে মিসগাইড করেছে। কাজেই এই প্রত্যর্পণ বে আইনী। সাভারকরের রাজনৈতিক আশ্রয়ের অধিকার নায্য।
    ফ্রান্স মিডিয়া --ল্যুমানিতে , লিব্রে প্যারোল , সান্ধ্য টেম্প তথা জুর্নাল দ্য দেবাত-- বিদেশমন্ত্রীর উপর চাপ দিতে লাগল সাভারকরকে ফিরিয়ে আনতে।
    বৃটিশ মিডিয়া-- অবজার্ভার ও টাইমস --বলল একজন খুনি ও রাষ্ট্রদ্রোহীকে নিয়ে ফ্রেঞ্চ সরকারের আতুপুতু করার দরকার নেই । বন্দী ত বৃটিশ কাস্টডিতেই ছিল ।
    আমেরিকার সাঁ লুই পোস্ট ডেস্প্যাচ লিখল বৃটিশ সরকার ত আগেও অনেককে আশ্রয় দিয়েছে । চিনের বিপ্লবী সুন ইয়াত সেন ইংল্যান্ডের মাটিতে আশ্রয় পেয়েছিলেন। চিন সরকারের শত অনুরোধেও ব্রিটিশ কান দেয় নি । এবার অন্যরকম কেন ?
    বৃটিশ শাসকদের মধ্যেও মতদ্বৈধ ছিল।
    লিবারেল লর্ড মোর্লি ( ভারতের সেক্রেটারি অফ স্টেট) সাভারকরের বিচার লন্ডনের বদলে মুম্বাই হওয়ার প্রস্তাবে প্রশ্ন তোলায় মুম্বাইয়ের গভর্নর লর্ড সিডেনহ্যাম লিখলেন-- আপনি কিছুই জানেন না । সাভারকর ওয়জ ওয়ান অফ দ্য মোস্ট ডেঞ্জারাস মেন দ্যাট ইন্ডিয়া হ্যাজ প্রডিউসড'।
    স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এবং ইন্ডিয়া অফিস সাভারকরকে ফ্রেঞ্চ সরকারকে ফেরত দেওয়ার প্রস্তাবে রাজি নয় । উল্টোদিকে হোম সেক্রেটারি উইন্সটন চার্চিল বলছেন-- ইংল্যান্ডের আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার ভাবমূর্তি যেন একটা অপরাধীর ভেগে যাওয়ার পেটি ঝামেলায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয় । ফেরত দিয়ে দাও।
    বৃটেনে বামপন্থীরা জোট বেঁধে সাভারকরের পক্ষে দাঁড়িয়ে 'রিলীজ সাভারকর কমিটি' বানিয়ে প্রচার অভিযানে নাবলেন। ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান লিখল ফ্রান্সের মাটিতে পা রাখা মাত্র সাভারকর বৃটিশ আইনের ক্ষেত্রাধিকার থেকে মুক্ত ধরা উচিত। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাসির মুখপত্র 'জাস্টিস' পত্রিকা ভারতের কলোনিয়াল নাগপাশ থেকে মুক্তির প্রয়াসকে সমর্থন জানাল।
    শেষে ফ্রেঞ্চ সরকার এ নিয়ে মধ্যস্থতা চেয়ে দি হেগ এ আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনালে গেল। বৃটিশ রাজি হোল , কিন্তু চাল দিল যে মুম্বাই কোর্টে সাভারকর মামলার শুনানি শুরু হয়েছে , সেটা স্থগিত হবে না ।
    এ নিইয়ে ভারতের বাম এবং র‍্যাডিক্যালদের তথা ইংল্যান্ডের লিবারেলদের আপত্তিতে কান না দিয়ে তিন জজের ট্রাইব্যুনাল বিচার শুরু করল। মাদাম কামা ডিফেন্সের জন্যে পাঠালেন তিলকের পরিচিত জোসেফ ব্যাপটিস্টাকে।
    মুখ্য প্রসিকিউটর ছিলেন এম জার্ডিন , ক্রিকেটে বডিলাইন বোলিঙয়ের জন্যে কুখ্যাত ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন ডগলাস জার্ডিনের বাবা।
    বিচার শেষ হোল অস্বাভাবিক দ্রুততায়। জার্ডিন আদালতকে জানালেন যে এই সাভারকরই হচ্ছে লন্ডনে ভারতীয় র‍্যাডিক্যালদের মাথা।
    প্রথম মামলার-- রাষ্ট্রদ্রোহিতার ( বিভিন্ন বক্তৃতা এবং লেখার ভিত্তিতে)-- বেরোল ২৩ ডিসেম্বর ১৯১০ । যাবজ্জীবন কারাবাস এবং স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ। তখন এর মানে ছিল ২৫ বছর।
    জ্যাকসন হত্যা মামলার রায় বেরোল ৩০ জানুয়ারি। ১৯১১। একই রায় --আজীবন কারাবাস, মানে ২৫ বছর সশ্রম জেল।
    কিন্তু দুটো শাস্তি একসঙ্গে (কনকারেন্টলি) চলবে না ; হবে একের পরে এক ( কঞ্জিকিউটিভলি)। ফলে মোট কারাবাস ৫০ বছর, ওদিকে সাভারকর তখন ২৮ বছরের যুবক এবং ভারতীয়দের গড় আয়ু তখন ছিল ৪০ এর কম।
    কিন্তু হেগ আন্তর্জাতিক আদালতের রায় না আসা পর্য্যন্ত সাজা মুলতুবি থাকবে।
    ( থক গয়া হুঁ, ফির কল রাত কো।)
  • Atoz | 237812.69.4545.151 | ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৩৯388261
  • এলেবেলে, সেই "সোনার ছেলে" কে নাহয় এখানে নিয়ে আসুন। ওখানের লেখাগুলোই নাহয় কপিপেস্ট করে উনি দিয়ে দিন। তারপরে দেখুন কী হয়। ঃ-)
    হ্যাঁ, ভালো কথা, "গবেষণা" করে "বিবেকানন্দের বক্তৃতা বিষয়ে কিছু বেরোয় নি কোনো কাগজে ", সেই যে ক্লেইম করেছিলেন রাজাগোপাল না কে, সেই সমর্থনে লিখছিলেন আপনারা, সবই তো ফর্দাফাঁই। লোকে তো আর্কাইভ উজার করে লিংক দিল। এখন তো আর দেখি কোনো উচ্চবাচ্য করছেন না?
  • Atoz | 237812.69.4545.147 | ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০১:০১388262
  • গান্ধীরটা না, ওটা তো পাশের টইয়ে আছেই। ফেবু থেকে পাখিবাবুদের আনুন, তেনারা তো শুনি ইয়া ইয়া সব নির্মোহ ব করছেন রামমোহন বিদ্যাসাগর ইত্যাদিদের। ফেবু তে সব তো জোয়ারে আসে, ভাটায় চলে যায়, সাইটে আনুন ওদের। এখানে নারদ নারদ লাগলে জিনিসগুলো থেকে যাবে। ফলে পরবর্তীকালে বুঝতে সুবিধা হবে। ঃ-)
  • এলেবেলে | 236712.158.455612.30 | ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৩৩388263
  • আতোজ, সামান্য ভুল হচ্ছে। " "গবেষণা" করে "বিবেকানন্দের বক্তৃতা বিষয়ে কিছু বেরোয় নি কোনো কাগজে ", সেই যে ক্লেইম করেছিলেন রাজাগোপাল না কে, সেই সমর্থনে লিখছিলেন আপনারা" ব্যাপারটা আদৌ সেই রকম ছিল না। রাজাগোপালবাবু বলেছিলেন শিকাগো হেরাল্ড বা নিউইয়র্ক হেরাল্ডে তেমন সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। বিবেকানন্দ আলাসিঙ্গাকে লিখেছিলেন, বক্তৃতার পরের দিন আমেরিকার স ম স্ত বিখ্যাত কাগজে সেই নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। তো তার লিংক আর্কাইভ উজার করেও পাওয়া যায়নি আর কি! আর হ্যাঁ, কথামৃতর জোচ্চুরি নিয়েও এখানে কেউ কিচ্ছুটি বলেননি!!

    রামু-বিদুকে নিয়ে লিখতে গেলে পাখিবাবুদেরই আনতে হবে কেন? এলেবেলে লিখলে হবে না? সে সেপ্টেম্বরে গুরুতেই লিখবে বিদুকে নিয়ে। আর বোঝেনই তো ইফ বিদু কামস, ক্যান রামু বি ফার বিহাইন্ড? সুতরাং বিদুর কিছু পরে তিনিও আসবেন। আপনাকে আগাম জানালাম। ফেবুতে কারা জোয়ার আনছেন, কেনই বা তা ভাটায় চলে যাচ্ছে তা অবিশ্যি জানি না কারণ ফেবুতে আজকাল শুধু গুরুর বইয়ের গ্রুপটিতে ছাড়া আমি কোনও গ্রুপেই নেই। সেই কারণে 'এখানে নারদ নারদ লাগলে'ও তার জন্য পাখিবাবুদের লাগবে না। তাঁরা যদি আসতে চান সেটা তাঁদের ব্যাপার।

    গান্ধী নিয়ে যদি পাশের টইটায় আপনি দু'পয়সা দেন, তাহলে প্রবল উৎসাহে এলেবেলে আপনার পিছু নেবে। জাতির জনককে নিয়ে চ্যাংরামো? সহ্য হয়? নেহাত 'জানিই কমবেশি' বলতে পারছি না বলে ওদিকে মানে ওই টইটায় ঘেঁষছি না।
  • Atoz | 237812.69.4545.147 | ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৩৭388264
  • রাজাগোপালবাবু নিজেই তো শুনলাম বলেছেন তিনি ভুল সংশোধন করে বিবৃতি দেবেন!!!!! আর্কাইভ থেকে যে গোছা গোছা লিংকগুলো এল, সেগুলো তাহলে কিসুই নয় বলছেন? (অমনি আবার কোত্থেকে কথামৃত !!! ঃ-) আগে এই খবরকাগজ সামলান মশাই! ঃ-) )
  • Atoz | 237812.69.4545.147 | ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪১388265
  • আরে পাখিবাবুর জোশ কি আর অন্যে দিতে পারে, বলুন? ওঁকেই দরকার। আহা, সেই গানটা---"ঐ নীল পাখিটাকে পাখিটাকে ---" মহায়, সে এক বেহেস্ত হামীনস্ত ব্যাপার! ঃ-)
  • Atoz | 237812.69.4545.147 | ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪৬388266
  • গান্ধীর টইতে সার্কাস দেখি তো গিয়ে। কয়েকজন চার্চিলবাদী বৃটিশকে যদি আনতে পারতেন, আরো চমৎকার হত। গলা খুলে তেনারা আরো ভালো করে ধুয়ে দিতেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে ক্রমাগত টু ওয়ে ট্রানস্লেশনের দরকার হত।
  • রঞ্জন | 124512.101.780112.71 | ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ২১:১২388268
  • ৭,৮,৯,১০,১১,১২।

    সাভারকরের কারাবাস।
    ============
    উপরের রায় বেরোনোর এক পক্ষকাল পরে দি হেগ এ পার্মানেন্ট কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন এ সাভারকর প্রত্যর্পণ মামলা শুনানি শুরু হোল এবং মাত্র ১০ দিনের মধ্যে রায় বেরোল।
    পাঁচ সদস্যীয় ট্রাইবুনালে রাশিয়া বা জার্মানির কেউ ছিলেন না। ছিলেন বেলজিয়ামের প্রাক্তন প্রাইম মিনিস্টার, নরওয়ে এবং নেদারল্যান্ডের দুই প্রাক্তন মিনিস্টার, ইংল্যান্ডের প্রাক্তন এটর্নি জেনারেল, এবং ফ্রান্সের এক বিশিষ্ট আইনি পরামর্শদাতা।
    রায়ে স্বীকার করা হোল যে ফ্রান্সের মাটিতে (মার্সাই) ফরাসী পুলিশ অফিসার যে সাভারকরকে বন্দী করে বৃটিশ পুলিশের হাতে সঁপে দিলেন তাতে আন্তর্জাতিক আইন স্পষ্টতঃ লঙ্ঘিত হয়েছে। কিন্তু এর ফলে আদৌ বৃটিশ সরকারের উপর বন্দীকে ফ্রান্স সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব বর্তায় না । কারণ ভুল ত বৃটিশ সরকারের লোক করেনি , বিদেশি সরকারের প্রতিনিধি করেছে। এই রায়ের তীব্র সমালোচনা করল ইউরোপের উদারনৈতিক ধারার প্রতিনিধিরা। ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলের লেবার এম পি কড়া করে ম্যাঞ্চেশটার গার্ডিয়ানে চিঠি লিখলেন। সবার মোটামুটি কথা হোল ফ্রান্স বৃটেনের কাছে মাথা বিকিয়ে দিইয়েছে এবং ইংল্যান্ডও তার চিরাচরিত উদারনীতি থেকে এখানে সরে এসেছে।
    সাভারকর রায় বেরোনোর সময় সেন্ট্রাল মুম্বাইয়ের ডোংগরি জেলে ছিলেন । এবার আন্দামানে যেতে হবে। তার আগে বড় শালা এবং স্ত্রী যমুনা দ্যাখা করোতে এলেন। পাঁচ বছর আগে যমুনা এসেছিলেন মুম্বাই বন্দরে বিদায় দিতে। আশা ছিল ফিরে আসবে এক সফল ব্যারিস্টার। তার জায়গায় দেখলেন হাতে পায়ে ডান্ডাবেড়ি স্বামীকে, যে যাচ্ছে কালাপানি , ৫০ বছরের জন্যে , তাহলে এই বোধ হয় শেষ দেখা ।
    এস এস মহারাজা ছাড়ল মাদ্রাজ বন্দর থেকে । লোয়ার ডেকে গাদাগাদি করে কালাপানির সাজাপ্রাপ্ত বন্দীরা। কেউ খুনি, কেউ আরও কিছু। তিরিশজনের জায়গায় গাদাগাদি করে পঞ্চাশ জন। গন্তব্য পোর্ট ব্লেয়ার বন্দর , তারপর সেলুলার জেল।
    এই জেলের খুপরিগুলোর কথা সবাই জানে । আগে এতে থাকত সিপাহীবিদ্রোহের বন্দীরা, এখন ৫০ বছর পরে অন্যেরা। জেলর ডেভিড ব্যারি আগেই বোলে দেন যে জেলের চারদেয়ালের মধ্যে ওঁর মর্জিই আইন। বৃটিশ আইনে রাজনৈতিক ও অন্যান্য বন্দীদের জন্যে যে ব্যবস্থা বা সুবিধে গুলো স্বীকৃত তার কিছুই এখানে খাটবে না। এবং তার চেলাচামুন্ডারা ( জমাদার, ওয়ার্ডার, পেটি অফিসার) ---যারা নিজেরাই দীর্ঘমেয়াদি জেল খাটছে-- তাদের ব্যবহার অত্যাচারের পর্যায়বাচী।
    বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, উপেন্দ্রনাথের বিবরণ এবং ত্রৈলোক্য মহারাজের স্মৃতিচারণে এর বিস্তৃত বিবরণ আছে ।
    সাভারকরকে আলাদা করে একটা ১৪ বাই ৮ ফুটের সেলে রাখা হোল। পাহারায় তিনজন-- দুই বালুচ মুসলিম এবং একজন পাঠান। তাঁর চানের ব্যবস্থার সময়েও ওই পাহারা।
    রোজ খাটতে হবে সকাল ৬টা থেকে ১০টা, এবং দুপুরের খাওয়ার পরে বিকেল ৫টা পর্য্যন্ত। কাজ নারকোলের ছোবড়া মুগুর দিয়ে পিটিয়ে বিকেলের মধ্যে অন্ততঃ ১ থেকে ৩ পাউন্ডের মত জাজিম গোছের বানানো।
  • রঞ্জন | 236712.158.455612.162 | ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ২৩:৪২388269
  • রোজ গোটা কুড়ি নারকোলের ছোবড়া পেটানো? সাভারকর আপত্তি করায় শুনতে হোল যে তোমার কপাল ভাল যে অন্যদের চেয়ে একটু কম টার্গেট দেওয়া হয়েছে।

    এরপর ১৬ আগস্ট ১৯১১ তারিখে সাভারকরের কপালে জুটল নেংটি পরে তেলঘানিতে সর্ষে পিষে তেল বের করার কাজ। বারীন ঘোষ এবং উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোর মতে এই কাজটা যেন কুস্তি করার মত, অমানুষিক পরিশ্রম । তায় অপর্যাপ্ত খাবার (লপ্সি) এবং কথায় কথায় অশ্রাব্য গালাগাল ও টার্গেট পুরো হয় নি অজুহাতে পেটানো চাবকানো। রাজবন্দীদের কাগজ/কলম / বই কিছুই দেওয়া হত না । নিজেদের মধ্যে কথা বলা বারণ। বড়ভাই বাবারাও এক বছর আগে থেকেই সেলুলার জেলে আছেন কিন্তু দ্যাখা করা কথা বলা যাচ্ছে না ।
    সাভারকর ডিসেম্বর ২০১৩ এবং ১৭ জানুয়ারি ২০১৪ ও ৮ জুন, ২০১৪ তে বেঁকে বসলেন -- কোন কাজ করবেন না ।
    ফল হল ক্রমশঃ নানারকম শাস্তি-- একমাস সলিটারি কনফাইনমেন্ট, এক সপতাহ হাতকড়ি, তারপর ডান্ডা বেড়ি পরিয়ে দেয়ালে হাত তুলে পা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে থাকা, এইসব। এরপরে উনি দড়ি পাকানোর কাজ করতে রাজি হলেন।
    এই পরিবেশে উল্লাসকর দত্ত পাগল হয়ে গেলেন, ইন্দুভুষণ রায় আত্মহত্যা করলেন।
    এবার রাজবন্দীদের প্রতিবাদ শুরু হোল। দাবি জেলের অন্যান্য বন্দীদের সমান সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। কাগজ-কলম-বইপত্র-পত্রিকা দিতে হবে। হালকা কাজ, ক্লার্কের কাজ দিতে হবে।
    দুজন বন্দী-- স্বরাজ পত্রিকার সম্পাদক লাধারাম এবং সতের বছরের ননীগোপাল রায়-- ভুখ হরতালে বসলেন। অন্যেরা কাজ বন্ধ করল।
    বিনায়ক সাভারকরের বড়দা বাবুরাও প্রথম দিন থেকেই হরতালে যোগ দিয়ে অত্যাচার সহ্য করলেন। কিন্তু সাভারকর যোগ দিলেন না ।
    সাভারকর তাঁর 'মাই ট্রান্সপোরটেশন ফর লাইফ' বইয়ে লিখেছেন যে ভুখ হরতাল তাঁর পছন্দ নয় । এটা লড়াইয়ের জন্যে ফালতু। ননীগোপাল রায়ের অবস্থা খারাপ হলে তাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে হরতাল ভাঙালেন ও বল্লেনঃ
    " ডু নট ডাই উইথ এ ফেমিনিন স্টাবর্ননেস; ইফ ইউ মাস্ট ডাই, ডাই ফাইটিং"।
    তাঁর জীবনীকার বৈভব পুরন্দরের মতে বক্তব্যটি আজকের চোখে অবশ্যই পলিটিক্যালি ইনকরেক্ট মনে হবে।
    এরপরে যতবার হরতাল হোল বা যখন লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ভাই পরমানন্দ এবং আশুতোষ লাহিড়ী জেলার ব্যারিকে তুলে আছাড় দিলেন ( পরে তিরিশ ঘা' করে বেত খেলেন), কর্তৃপক্ষ মনে করল এর পেছনে সাভারকরের মাথা কাজ করছে।
    ত্রৈলোক্য মহারাজের 'থার্টি ইয়ার্স ইন জেল' এ পাচ্ছি সাভারকর আমাদের ক'জনকে হরতাল করতে ওসাকালো, কিন্তু নিজে টুক সরে গেল।
    সাভারকর সেলের দেয়ালে নখ দিয়ে কবিতা লিখে মুখস্থ করে ঘষে মুছে দিতেন। এভাবে লেখা হোল 'বেড়ি', 'কোঠরি' এবং 'কমলা'। আবার ১৯১৩ সালে নোবেল প্রাইজ পাওয়ায় রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশে একটি কবিতাও লেখা হোল।
    ওঁর একটি দেশাত্মবোধক কবিতায় হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর সুর দিয়েছেন এবং লতা, আশা ও উষা কোরাসে গেয়েছেন।
  • অর্জুন | 236712.158.676712.216 | ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১১388270
  • মোহনদাস গান্ধী ও বি আর আম্বেদকরের সঙ্গে প্যারালালি যে নামটা উঠে আসে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে তাঁর নাম হল বিনায়ক দামোদর সাভারকর। তাঁর দুই সমসাময়িকের মতই বা কিছুটা বেশী বিতর্কিত সাভারকর।

    'নূতন আলোকে' ঐতিহাসিক সব চরিত্রকে দেখার যে প্রচলন শুরু হয়েছে তা সম্প্রতি সাভারকরকে নিয়েও চলছে।

    আজ যে 'হিন্দুত্ব' রাজনীতির প্রাবল্য, সেই রাজনীতির জনক বিনায়ক সাভারকর।

    ১৯২৩ এ রত্নগিরির জেলে বসে তিনি ইংরেজিতে লিখেছিলেন 'এসেনশিলাস অব হিন্দুত্ব'। সাম্প্রতিক ঐতিহাসিক'রা মনে করেন গান্ধীর পলিটিক্যাল ডিসকোর্সের সেটা ছিল কাউন্টার আর্গুমেন্ট। ইন্টারেস্টিংলি সাভারকরের 'হিন্দুত্ব' রাজনীতির সঙ্গে সনাতন হিন্দুধর্ম বা ধর্মীয় গোঁড়ামোর সম্পর্ক নেই। তাঁর কাছে 'হিন্দুত্ব' ছিল একটা জাতির সাংস্কৃতিক অস্মিতা।

    ব্যক্তিগত জীবনে বিনায়ক সাভারকর ছিলেন নাস্তিক এবং সংস্কারমুক্ত। হিন্দু ধর্মের সংস্কার, ব্রাহ্মণ্যবাদ ও জাতপাতের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। বর্ণাশ্রম ও ধর্মীয় সংস্কার যে হিন্দুধর্মকে বিভক্ত করে দিয়েছে এবং অনেক ক্ষতি করেছে তা বারবার বলেছেন। রত্নগিরিতে থাকবার সময় তিনি দলিতদের জন্যে পতিতপাবন মন্দিরের দ্বার খুলে দেন এবং ছোঁয়াছুঁয়ি ও নানারকম সংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। তাঁর উপস্থিতিতে বেশ কিছু অসবর্ণ বিবাহও হয়।

    ১৯২৩ এই সাভারকরের রাজনৈতিক জীবন শুরু নয়। এর পূর্বাপর হিসেবে দেখতে গেলে এর শুরু বিংশ শতকের সূচনা থেকে যখন তিনি পুনের বিখ্যাত ফার্গুসন কলেজের ছাত্র। কার্জনের বাংলা ভাগ নিয়ে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় তিনি বিদেশী বস্ত্র পোড়ানোর ডাক দিয়েছিলেন।

    ভারতের প্রথম গুপ্ত সমিতি 'অভিনব সমিতি' সাভারকর প্রতিষ্ঠা করেন। এই গুপ্ত সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিদেশে বসবাসকারী অনেক ভারতীয় ছাত্র ও বিপ্লবী।

    সাভারকরের প্রথম বই 'The History of the War of Indian Independence' পড়ে প্রভাবিত হয়েছিলেন রাসবিহারী বসু, সুভাষচন্দ্র বসু, ভগত সিং। শোনা যায় ভগত সিং তাঁর দলে যুবক রিক্রুট করার সময় জিজ্ঞেস করতেন সেই যুবক সাভারকরের বইটি পড়েছে কিনা!

    সুভাষচন্দ্র আই এন এর সোলজারের অধিকাংশই বলতেন তাঁরা সাভারকরের বই পড়ে খুব ইন্সস্পায়ার্ড হয়েছিল। অনেকেই ছিলেন যারা বলেছিলেন I joined the INA only on the advice of Savarkar।

    তার প্রদর্শিত হিন্দুত্ব রাজনীতি পরবর্তীকালে কোনদিকে মোড় নিল সে আলোচনা উঠে আসা অবশ্যাম্ভাবি কিন্তু ব্রিটিশের ট্রেটর, গান্ধী বিরোধী বলে যে ব্যক্তিটি পরবর্তীকালে সুপ্রসিদ্ধ হয়ে রইলেন তাঁকে সে সব তকমা থেকে মুক্ত করে নূতন করে চর্চা হলে ব্যক্তিটি ও তাঁর রাজনীতি অনেক সুস্পষ্ট হবে।

    সাভারকর ও গান্ধীর প্রথম সাক্ষাৎকার হয়েছিল ১৯০৬ এ লন্ডন শহরে। প্রথম দেখাটা বেশ মজার, ঐতিহাসিক ও ইন্টারেস্টিং। সাভারকর সেদিন প্রন রান্না করেছিলেন এবং নিরামিষাশী গান্ধীজীতে এক টেবিলে খেতে বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। গান্ধী রীতিমত শঙ্কিত হয়ে এক সঙ্গে খেতে অস্বীকার করেন। সাভারকরও ছেড়ে দেবার পাত্র নন, তিন হুল ফোটানো মন্তব্য করেছিলেন 'আমাদের সঙ্গে যদি খেতেই না পারেন তাহলে আর আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন কি ভাবে? এত সেদ্ধ মাছ খাচ্ছি, আমরা তো ব্রিটিশদের চিবিয়ে খেতে চাই।'

    প্রথম সাক্ষাতের মত সারাজীবন দুজন, দুজনকে টক্কর দিয়ে গেছেন। ইতিহাস এমনই যে গান্ধীঘাতক নাথুরাম গডসে ছিলেন সাভারকরের protégé। গান্ধীহত্যা মামলায় প্রায় বছর খানেক জেলবাসও হয় তাঁর।

    শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এখন অনেকেই মনে করেন স্বাধীনোত্তর ভারত গান্ধীর নয়, সাভারকরের পথেই চলেছে। সাভারকর মনে করতেন পুঁজিবাদী শিল্পই ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ, গান্ধীর গ্রামীণ সংস্কার নয়।
  • রঞ্জন | 236712.158.565612.241 | ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০৭:৫১388271
  • সাভারকরের 'মার্জনা ভিক্ষা'
    ===================
    সাভারকর কি সত্যিই বৃটিশ সরকারের কাছে 'মার্জনা ভিক্ষা' করে চিঠি লিখেছিলেন? লিখলে কতবার? এবং তাতে কি যেকোন মূল্যে মুক্তি চেয়েছিলেন? এমনকি আজীবন বৃটিশ সাম্রাজ্যের সেবা করার এবং বিশ্বস্ত থাকার শর্তে ?
    সমর্থকরা এই অধ্যায়টি এড়িয়ে যেতে চান বা অস্বীকার করেন। যেমন মারাঠি পত্রিকা 'লোকসত্তা'র ২৭ মে, ২০১৮ সংখ্যায় দাবি করা হয়েছে যে উনি আদৌ কোন পিটিশন পাঠান নঈ। বা , পাঠালেও তাতে 'মার্জনা ভিক্ষা' করেন নি ।
    বিরোধীরা বলেন -- সাভারকর নিজে এ নিয়ে কোথাও কিছু বলেন নি বা লেখেন নি । বরং আজীবন ব্যাপারটা চেপেচুপে রেখেছেন।
    আমরা দেখাব যে দু'পক্ষই ভুল। সমস্ত দলিল ( বৃটিশ এবং ভারতীয়) আজ উপলব্ধ। এবং সাভারকর নিজে তাঁর এই 'এবাউট টার্ন' কে ডিফেন্ড করে সেসময় গুচ্ছের লেখা লিখেছেন, উকিলের মেধা দিয়ে এই স্ট্যান্ডকে থিওরাইজ করেছেন। কতদূর সফল হয়েছেন বা আদৌ হয়েছেন কি না তা বিতর্কের বিষয়।
    কতবার লিখেছিলেন ? সাতবার।

    প্রথমবার সেলুলার জেলে আসার দুমাসের মাথায়--৩০ অগাস্ট, ১৯১১, নির্জন কারাবাসের শাস্তির মাথায়। চারদিনে খারিজ হোল পিটিশন।
    তারপর।২৯ অক্টোবর, ১৮১২; নভেম্বর ১৯১৩, সেপ্টেম্বর ১৯১৪। তারপর ১৯১৫ এবং ১৯১৭। শেষ দুটোতে আগের আগুনখেকো বিপ্লবী সাভারকর ওকালত করছেন হোমরুলের পক্ষে । তখন মন্টেগু -চেমসফোর্ড সংবিধান রিফর্মের কথা চলছে যা এলো ১৯১৯এ। সাভারকর লিখছেন কোন দেশপ্রেমিকই ভাল সংবিধানের আওতায় কাজ করার সুযোগ পেলে সহিংস পথে বিপ্লবের কথা ভাববে না । এও বললেন যে আজ যখন ইংল্যান্ড ও আমেরিকার মত প্রগতিশীল এবং নমনীয় (ইল্যাস্টিক) সংবিধান রয়েছে তখন বিপ্লবের কথা বলা 'অপরাধ' (!)।
    তাহলে দশবছর আগে গোখলে গান্ধী এরা কি দোষ করেছিলেন?
    লক্ষণীয়, সাভারকর ১৯১২ থেকে ১৯১৪ পর্য্যন্ত কাজ করতে অস্বীকার করা এবং নিষিদ্ধ কাগজপত্র রাখার অপরাধে আটবার শাস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু পরের পাঁচবছর তাঁর আচার-আচরণ ছিল ' ভেরি গুড'।
    কন্সটিট্যুশনাল রিফর্মের মাথায় অনেক রাজবন্দীকে মুচলেকা লিখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হোল 'রয়্যাল অ্যামনেস্টি' বলে । একই রকম মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেন বারীন ঘোষ, হেমচন্দ্র দাস এবং ভাই পরমানন্দ। কিন্তু ' ম্মন্টেগু-চেমস্ফোর্ড রিফর্মের পর সাংবিধানিক পথেই থাকবেন' আশ্বাসন সত্ত্বেও সরকার সাভারকর ভাইদের বিশ্বাস করতে পারছিল না । তাঁরা সম্রাজ্ঞীর মার্জনা পেলেন না ।
    সাভারকরের শেষ পিটিশনের তারিখ ৩০ মার্চ, ১৯২০ যাতে উনি ছাড়া পাওয়ার পর সরকার যতদিন বলবে ততদিন কোন রাজনৈতিক কাজকর্মে যুক্ত হবেন না, একটি এলাকার বাঈরে পা রাখবেন না এবং থানায় হাজিরা দেবেন -- এই মর্মে মুচলেকা দিতে রাজি বোলে জানালেন।
    সাভারকর নিজের কারাবাসের অভিজ্ঞতার বর্ণনায় লিখছেন যে উনি তখন জেলের মধ্যে অন্য বন্দীদের গোঁড়ামি ছেড়ে মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে এসে দেশের কাজ করোতে বোঝাচ্ছেন। শিবাজী এবং কৃষ্ণের উদাহরণ দিচ্ছেন। অনেকে মানছে না । কিন্তু জেলের ভেতরে জীবন নষ্ট করে কি লাভ ? এই ছিল ওঁর যুক্তি।
    গান্ধীজি মে ১৯২০ এর ইয়ং ইন্ডিয়ায় লিখলেনঃ এতলোককে আম মাফি দেওয়া হোল, শুধু এই দুই ভাই বাদ! ওরা ত বিপ্লবের পথ ছেড়ে রিফর্ম অ্যাক্টের হিসেবে কাজ করবে বলে কথা দিয়েছে । ওদের অবিশ্বাস করার কি দরকার? বর্তমানে ভারতে সহিংস পথের অনুগামী নেই বলা যায় ।
    লেবার এম পি ওয়েজউডের ডেইলি হেরাল্ডের প্রবন্ধে আন্দামান জেলের ভেতরের অবস্থা তুলে ধরা হোল। ওঁর ভাষায় সেলুলার জেল একটি নরক। পাবলিক ওপিনিয়ন বিচলিত। শান্তিনিকেতন থেকে সি এফ এন্ড্রুজ বোম্বে ক্রনিকল পত্রিকায় এ নিয়ে লিখলেন যাতে বোম্বে গভর্নর জর্জ লয়েড সাভারকর ভাইদের ছেড়ে দেন। বৃটিশ রাজ এপ্রিল ১৯২১ এ বোম্বে গভর্নরকে একমাসের মধ্যে আগের সিদ্ধান্তের রিভিউ করতে বলল।
    অবশেষে , মে ১৯২১এ দুই সাভারকর ভাইকে আন্দামান থেকে ভারতের জেলে নিয়ে আসা হল। বড়দা বাবারাও সেপ্টেম্বর ১৯২২এ নিঃশর্ত মুক্তি পেলেন। তাঁর 'সিডিশন' বলতে ছিল কিছু জ্বালাময়ী কবিতা। তাতেই তিনি ১৫ বছর কালাপানি এবং একবছর ভারতের জেলে রইলেন।
    জ্যাকসন হত্যা এবং পিস্তল সরবরাহের দায়ে অভিযুক্ত বিনায়ক সেলুলারে রইলেন ১০ বছর। ভগ্ন স্বাস্থ্য মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত বিনায়ক সাভারকর জেল থেকে ছাড়া পেলেন ৬ জানুয়ারি, ১৯২৪। কিন্তু নিঃশর্ত নয় । সরকার জুড়ে দিল আরও দুটি ।
    এক, ওঁকে স্বীকার করতে হবে যে ' হি হ্যাড এ ফেয়ার ট্রায়াল অ্যান্ড এ জাস্ট সেন্টেন্স' এবং দুই, ওঁকে সহিংস পদ্ধতির নিন্দা করে বিবৃতি দিতে হবে।
    সাভারকর দুটি শর্তই মেনে নিয়ে মুচলেকা লিখে দিলেন। সরকার বলল পাঁচবছর উনি রত্নগিরি জেলার বাঈরে যেতে পারবেন না । সাভারকর মেনে নিয়ে স্ত্রী-পুত্রকন্যা নিয়ে সংসার করতে এবং ভগ্নস্বাস্থ্য উদ্ধারে মগ্ন রইলেন।
    তাহলে লন্ডনে গ্রেফতারির দিন থেকে ধরলে ওঁর কারাবাস হোল প্রায় ১৪ বছর।
    জনগণমনে বিতর্কের ঝড় বয়ে গেল। সাভারকর নিজের বন্দীজীবনের স্মৃতি ও মুচলেকার সাফাই নিয়ে কেশরী এবং মারাঠি সাপ্তাহিক 'শ্রদ্ধানন্দে' লিখতে লাগলেন। ওদিকে কেশরী , ইন্দুপ্রকাশ এবং অন্যান্য মারাঠি দৈনিকে বেরোল ওঁর মুচলেকার শর্তাবলি।
  • অর্জুন | 237812.69.563412.223 | ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ০৯:৫০388272
  • @রঞ্জন-দা, দারুণ লাগছে ইতিহাসটা পড়তে। চিরাচরিত কংগ্রেসের সো- কল্ড নেগোশিয়েটেড আন্দোলন আর গান্ধী, নেহেরু, নেতাজীর বাইরে প্রথমদফার সশস্ত্র সংগ্রামের অধ্যায়টা অগোচরে রয়ে গেছে।

    আপনার Date:29 Oct 2019 -- 06:46 AM লেখায় 'সেখানে যোগাযোগ হোল বীরেন চট্টো ( সরোজিনী নাইডু এবং পরবর্তী কালের কমিউনিস্ট এম পি এবং কবি হারীন্দ্রনাথা চট্টোর ছোট ভাই '

    বীরেন্দ্রনাথ চ্যাটো সরোজিনী নাইডু'র ছোটভাই কিন্তু হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বড়দাদা। অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও বরদাসুন্দরীর প্রথম সন্তান সরোজিনী ও দ্বিতীয় বীরেন্দ্রনাথ।

    হারীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ১৯৫২'য় বিজয়য়াড়া নির্বাচন কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে জয়যুক্ত হয়ে লোকসভার সাংসদ হন, সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেননি। তাঁর প্রার্থীপদ সমর্থন করেছিলেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি।
  • রঞ্জন | 124512.101.780112.173 | ৩১ অক্টোবর ২০১৯ ২০:২৯388274
  • অর্জুন ও এলেবেলে,
    অনেক ধন্যবাদ। আমি হড়বড়িয়ে আলোচনার জন্যে একটা প্রাথমিক কাঠামো তৈরির চেষ্টা করছি। মাটি লাগানোয় অনেক ত্রুটি থাকবে। আপনাদের এই সাহায্য এবং ভুল ধরিয়ে দেওয়া লেখাটাকে সঠিক প্রেক্ষিতে রাখতে সাহায্য করবে।
  • রঞ্জন | 236712.158.676712.22 | ০২ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:৫২388275
  • [ এখানে আলোচনা সংক্ষেপে সারতে আমি শুধু 'বেয়ার এসেনশিয়াল' বিন্দুগুলো নিয়ে কথা বলব। যেমন, সাভারকরের মুচলেকার প্রেক্ষিত, 'হিন্দুত্ব', সাভারকর-ভগত সিং, সাভারকর -গান্ধী; এবং গান্ধীহত্যা প্রসংগ ও জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে আরো উগ্র জিঙ্গো ন্যাশনালিস্ট চেহারা।]

    সাভারকরের কালাপানিবাসের কালে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে।
    ১৯০৭ সালের সুরাত কংগ্রেসে নরমপ্নথীরা দলে ভারি হয়ে চরমপন্থীদের খেদিয়ে দেয় । ফলে কংগ্রেস তাৎকালিকভাবে দুর্বল হয়ে যায় । ১৯১৫ সালে গদর পার্টির বাঈরে থেকে অস্ত্র আনিয়ে বিপ্লব করার প্রচেষ্টা গোড়াতেই ব্যর্থ হয় । সাভারকরের পিস্তলের মাধ্যমে ব্যক্তিহত্যা করে ইংরেজ তাড়ানোর স্বপ্নেরও সেই দশা। বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ ঋষি অরবিন্দ হয়ে পন্ডিচেরি চলে গেছেন। লাজপত রায় আমেরিকায়।
    দেশের জনমানস, তরুণেরা আবার সাংবিধানিক এবং সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে জনমত মোবিলাইজ করে হোমরুল আদি সংস্কারের পক্ষে ঝুঁকছে।
    তিলক ব্রহ্মদেশের মান্দালয়ে ৬ বছর সশ্রম কারাদন্ড ভোগ করে ১৯১৪ সালের ১৬ই জুন বেরিয়ে এসে চরমপন্থীদের কংরেসে ফিরিয়ে নেবার চেষ্টা করতে থাকেন। সঙ্গে ৬৬ বছরের থিওজফিসট অ্যানি বেশান্ত। নরমপন্থীদের আস্থা অর্জন করতে তিলক হিংসার পথ নিয়ে তাঁর বিবমিষা জানিয়ে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে বললেন যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এতদিন যে সহিংস ঘটনা ঘটেছে তা আমাদের রাজনৈতিক প্রগতিকে পিছিয়ে দিয়েছে ।
    কিন্তু খুব একটা লাভ হোল না ।
    কয়েকবছরের আধাখ্যাঁচড়া ফল দেখে এঁরা আইরিশ হোমরুল লীগের অনুকরণে ভারতে হোমরুল লীগ স্থাপন করেন, কিন্তু তাতেও কাজের এলাকা ভাগ করতে হোল। কারণ তিলকের চেহারা বেশান্তের চ্যালাদের পছন্দ নয় এবং উল্টোদিকেও একই অবস্থা; যদিও দুই নেতার মধ্যে কোন সমস্যা নেই ।
    তিলক স্বরাজ্য, ভাষাভিত্তিক রাজ্যগঠনের দাবি ও মাতৃভাষায় শিক্ষা দেবার পক্ষে মহারাষ্ট্র জুড়ে ঘুরে ঘুরে বক্তৃতা দিতে লাগলেন।
    অস্পৃশ্যতা দুরীকরণ বিষয়ক সম্মেলনে বললেন,' যে ঈশ্বর অস্পৃশ্যতাকে আস্কারা দেন , তাঁকে আমি ঈশ্বর বলে মানি না '।
    ২০১৬ সালে তিলকের বিরুদ্ধে আবার মামলা শুরু হোল। তাঁর থেকে ৬০,০০০/- সিকিউরিটি চাওয়া হল আগামী একবছরের জন্যে রাজনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করে গুড বয় থাকার শর্ত হিসেবে। তিলকের মামলা লড়লেন ব্যারিস্টার মহম্মদ আলি জিন্নার নেতৃত্বে এক টিম। তাঁরা সেশন'স কোর্টে হারলেও হাইকোর্টে জিতলেন। ব্যস, গান্ধী ইয়ং ইন্ডিয়ায় লিখলেন যে এটা হোম রুল বা স্বরাজ আন্দোলনের বিরাট জয়।
    যে সিডিশন অ্যাক্টে আজকাল আর্বান নক্সালদের জেলে ভরা হচ্ছে তিলক হচ্ছেন তার প্রথম আসামী। এবার তিলক প্রকাশ্য সভায় বলতে লাগলেন যে প্রমাণিত হল হোম রুলের দাবি রাষ্ট্রদ্রোহ নয় । ১৯১৭ সালের মধ্যে উনি ১৪,০০০ সদস্য সংগ্রহ করলেন।
    সরকার এবার জুন ২০১৭তে অ্যানি বেশান্ত ও তাঁর দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেল। স্যার সুব্রামনিয়া আইয়ার নাইটহুড পরিত্যাগ করলেন। তিন নরমপন্থী নেতা মালবীয়, জিন্না ও সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি হোমরুল লীগের সদস্যপদ গ্রহণ করলেন। তিলকের চাপে কংগ্রেস কমিটি হোমরুলের দাবিতে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের পথ নেওয়ার কথা বিবেচনা করোতে লাগল। গান্ধীও রাজি।
    ব্রিটেন এ সরকার নীতিগত ভাবে হোমরুলের দাবি নিয়ে বিচার করার আশ্বাসন দিল। এটা সত্যিই আর 'সিডিশাস' রইল না । অ্যানি বেশান্ত সেপ্টেম্বর, ১৯১৭তে ছাড়া পেলেন এবং ডিসেম্বর মাসে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অখিল ভারতীয় সভাপতি নির্বাচিত হলেন।
    কিন্তু ১৯১৮ থেকে হোমরুল আন্দোলন ঠান্ডা হয়ে গেল।
    সরকার যে প্যাকেজ দিচ্ছিল তা তিলক এবং বেশান্তের পছন্দ হোল না , কিন্তু নরমপন্থীরা তাতে খুশি হয়ে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন। বেশান্ত এবং তিলক এবার কি ভাবে আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়া যায় তা দেখাতে ব্যর্থ হলেন। এই দিশাহারা অবস্থায় নেতৃত্বে উঠে এলেন মহাত্মা গান্ধী। দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনের পর ভারতে কৃষক ও শ্রমিকদের ক্রমশঃ চম্পারণ, আমেদাবাদ এবং খেড়ায় নেতৃত্ব দেওয়ায় ( যার বর্ণনা আমরা এবড়োখেবড়ো'র গান্ধী বিষয়ক টইয়ে পেয়েছি) যাঁর বেশ নাম হয়েছে।
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ। নতুন প্রজন্ম দিশা চাইছে।
    মার্চ ১৯১৯শে গান্ধী তাঁর রাউলাট অ্যাক্ট বিরোধী সত্যাগ্রহের ডাক দিয়ে ব্যাপক হোম রুল সমর্থক এবং জনতার বড় অংশকে মবিলাইজ করলেন ।
  • রঞ্জন | 236712.158.786712.181 | ০২ নভেম্বর ২০১৯ ২০:৩৩388276
  • সাভারকরের মাফিনামা বিতর্ক
    ==================
    সাভারকরের মাফিনামার শর্তগুলো প্রকাশ্যে আসায় অনেক হোমরুলের সমর্থক ক্ষুণ্ণ হলেন-- একজন খ্যাতনামা দেশপ্রেমিক চাপের মাথায় এমন সব শর্ত মেনে নিলেন!
    রত্নাগিরি জেলার বাঈরে যাওয়া পাঁচবছরের জন্যে নিষিদ্ধ, কিন্তু সাভারকর ঘরে বসে ( তখন স্ত্রীও সঙ্গে থাকছেন) কেশরী এবং শ্রদ্ধানন্দ ( বোম্বে থেকে ছোটভাই ডাক্তার নারায়ণ সাভারকরের সম্পাদিত মারাঠি পত্রিকা) পত্রিকায় সিরিয়ালি নিজের ১৪ বছর কালাপানির অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করছেন। এসব একটি বইয়ের আকারে মে, ১৯২৭ এ প্রকাশিত হয় । তাতে মাফিনামার ডিফেন্সও রয়েছে।
    কিন্তু প্রখ্যাত রাজনৈতিক কর্মী এবং কানপুরের দৈনিক প্রতাপ পত্রিকার সম্পাদক গণেশ শংকর বিদ্যার্থী শ্রদ্ধানন্দ পত্রিকায় খোলাচিঠি লিখে অভিযোগ করলেন যাঁরা দেশের জন্যে শহীদ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তাঁরা কীকরে মার্জনা চেয়ে চিঠি লিখলেন? ' হোয়াই ডিডন্ট দে এমব্রেস ডেথ ইন প্রিজন'?
    বিশেষ করে সাভারকর যে লিখেছিলেন 'যদি পথভ্রষ্ট সন্তান (প্রডিগাল সন) নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে তাহলে পিতার আশ্রয়লাভের করুণা থেকে নিশ্চয় বঞ্চিত হবে না !' -- এটা সবাইকে ঘা দিয়েছিল।
    সভারকরের জবাব বেরোল যার সারমর্ম হচ্ছে যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক দেশপ্রেমিক ঘর ছেড়ে হোমের আগুনে নিজেকে আহুতি দিতে বেরিয়েছিল। তারা লড়ল, অমানুষিক অত্যাচার সহ্য করে প্রায় মৃত্যুমুখে পৌঁছে গেল। তারপর তারা যদি ভবিষ্যৎ লড়াইয়ের জন্যে প্রাণ বাঁচাতে শত্রুর শর্ত মেনে সাময়িক ভাবে যুদ্ধের ময়দান থেকে সরে আসে ? এমনটি শিবাজি আগ্রা দুর্গে বন্দী অবস্থায় তাই করেন নি? ঔরংজেবের শর্ত মেনে জান বাঁচিয়ে আবার যুদ্ধের ময়দানে ফিরে যান নি ? যখন তিনি আফজল খাঁর সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়েছিলেন তখন হাতে লুকনো ছিল বাঘনখ।
    ১৯২৮ সালে কাকোরি সরকারি ফান্ড লুঠের মামলায় রামপরসাদ বিসমিল এবং আরও তিনজনের ফাঁসি হয় , শচীন সান্যাল এবং আরও কয়েকজনের কালাপানি হয় । বিসমিল, শচীন সান্যাল এবং আরও দুয়েকজন প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন, মঞ্জুর হয় নি ।
    উনি বারীন ঘোষ , হেমচন্দ্রের মাফিনামা দিয়ে বেরিয়ে আসার উল্লেখ করেন। এবং গণেশ শংকর নিজে একটি আদালত অবমাননার কেসে জেলের সম্ভাবনায় আদালতে ভুল স্বীকার করেছিলেন --সেসব তুলে ধরেন। আরও বলেন লড়াই না করে জেলে পচে মরার বীরত্বে ওঁর বিশ্বাস নেই । তার চেয়ে যেভাবে হোক বেরিয়ে এস, তারপরে আবার লড়াই কর।
    ঠিক আছে , তর্কের খাতিরে এসব যদি সাময়িক রণকৌশল বোলে ধরে নিই তবু প্রশ্ন ওঠে।
    ওঁর উদাহরণের সবাই--- শ্রীকৃষ্ণ , শিবাজী, ওঁর গুরু তিলক এমনকি গান্ধী নেহেরু-- ছাড়া পাবার পরে আবার লড়াইয়ের ময়দানে ফিরে এসেছেন-- নিজের নিজের মতাদর্শ অনুযায়ী লড়াই করেছেন, দুশমনকে আঘাত হেনেছেন। কিন্তু সাভারকর?
    ভারতে এসে বাকি জীবন একবারও বৃটিশকে উচ্ছেদ করোতে অস্ত্রধরা দূর কি বাত, শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনেও সামিল হন নি । বৃটিশ সংবিধানের মধ্যেই দেশের উন্নতির সম্ভাবনা দেখেছেন। তাহলে লন্ডন প্রবাসের দিনগুলোয় গান্ধী-গোখলে ইত্যাদি কন্সটিট্যুশনালিস্টদের বিরোধ , সমালোচনা এবং তাচ্ছিল্যের ফল কি হোল? গান্ধীরা বরং এগিয়ে গেছেন। জেলে যাচ্ছেন কালাকানুনের প্রতিবাদে; মাস মোবিলাইজেশন করছেন, সত্যাগ্রহ শুরু করছেন। সাভারকর পিছিয়ে গেছেন তিরিশ বছর বা আরও বেশি। কারণ তাঁর শত্রু বদলে গেছে। খুঁজে পেয়েছেন তাঁর আসল শত্রু--মুসলমান।
  • রঞ্জন | 237812.69.453412.44 | ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ২০:২৪388277
  • সাভারকরের 'হিন্দুত্ব' অবধারণা এবং আজকের সংঘ পরিবারের এজেন্ডা
    ========================================
    ওঁর হিব্দুত্ব কিন্তু শুধু ধার্মিক হিন্দুত্ব নয় । বরং সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক হিন্দুত্ব। ধর্ম, বিশেষ করে বৈদিক ধর্ম পালন এসেছে ভারতের 'মোনোলিথিক (সাভারকরের মতে) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংগ ' হিসেবে।
    ওঁর কল্পনার অখন্ড হিন্দুস্থান সিন্ধুনদের দু'পাশ থেকে কাশ্মীর হয়ে কন্যাকুমারিকা পর্য্যন্ত বিস্তৃত ।
    ওঁর মতে হিন্দু একটি সাংস্কৃতিক জাতি, যাদের শিরায় শিরায় বইছে একই শুদ্ধ রক্তধারা , যারা জন্মসূত্রে এই ঐতিহ্যের জন্যে গর্বিত।
    ওঁর হিন্দুত্ব আইন করে এফিডেভিট করে নাগরিকত্ব পাওয়া নয় । তার জন্যে ভারতে জন্মাতে হবে। কেন?
    কারণ যদি 'পিতৃভূমি' এবং 'পূণ্যভুমি' এক না হয় তাহলে মানুষের মনে টানাপোড়েন থাকবে এবং তার আনুগত্য বিভক্ত হবে ।
    ক) উনি মনে করেন 'হিন্দু' একটি প্রাকৃত শব্দ, সংস্কৃত নয় , তাই বেদে উল্লেখ নেই । কিন্তু এটি প্রাচীন শব্দ । মধ্যপ্রাচ্যের জিভে 'স' কে 'হ' উচ্চারণ করা হত । তাই 'সপ্তসিন্ধু' জেন্দাবেস্তায় ' হপ্তসিন্ধু' বোলে উল্লিখিত । তাই সিন্ধুর এপারে সবাই হিন্দু। তাই ভারতে জন্মানো হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন সবাই রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক হিন্দু। কারণ তাদের জন্মভূমি (পিতৃভূমি) এবং 'পুণ্যভূমি ' হিন্দুস্তান। একই কারণে কোন ক্রিশ্চান বা মুসলমান হিন্দুস্থানের নাগরিক বা সাংস্কৃতিক -রাজনৈতিক হিন্দু হতে পারে না । কারণ তার জন্মভূমি যদি ভারত হয়ও , এবং সে যদি দেশপ্রেমিক হয়ও তার পূণ্যভূমি আলাদা (আরব ও প্যালেস্তাইন)। ফলে সেইসব দেশের সঙ্গে যুদ্ধ হলে বা স্বার্থের সংঘাত হলে ' কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট' কাজ করবে।(!)
    অতএব সাভারকরের ভারতবর্ষে মুসলিম/ক্রিশ্চানদের স্থান নেই ।
    এবার দেখুন, কেন আজকাল কথায় কথায় সেকুলার বা লিবেরালদের পাকিস্তান চলে যেতে বলা হয় এবং কেন ক্ষমতাসীন দল নাগরিক রেজিস্টার এবং ছলেবলে কৌশলে মুসলিম বিতাড়নের ধুয়ো তুলেছে।
    এখানে আমার দুটি প্রশ্নঃ
    ১ সমস্ত ইউরোপীয় নেশন স্টেট বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের (যাঁরা জন্মসূত্রে নাগরিক) ত পিতৃভূমি এবং পুণ্যভূমি আলাদা। তাবলে এতদিন ধরে তাঁদের আনুগত্য কি দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে? ইতিহাসের সাক্ষ্য কি বলে ?
    ২ সিন্ধু এখন পাকিস্তানের প্রদেশ তাহলে কি আমাদের বর্তমান নাগরিকদের সাভারকরের অখন্ড হিন্দুরাষ্ট্র গড়তে সেটা নিয়ে নিতে হবে? আমরা 'জনগণমন' গানে সিন্ধু শব্দটা বাদ দিইনি; কেন ?
    কিন্তু ইউটিউবে বন্দেমাতরম শুনে দেখুন 'সপ্তকোটি কন্ঠ কলকল নিনাদ করালে' বদলে ' কোটি কোটি কন্ঠ কলকল নিনাদ করালে, কোটি কোটি ভুজৈ ধৃতখরকরবালে' করা হয়েছে।
    আসলে আনন্দমঠে বঙ্কিম এখানে দেশ বলতে অবিভক্ত বঙ্গকেই বুঝিয়েছেন, গোটা ভারতকে নয় ।
    খ) সাভারকর জাতিপ্রথা হিন্দুসমাজের এবং দেশের ক্ষতি করেছে বোলে মনে করেন। উনি অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে। একটা মন্দির বানালেন যাতে সব জাতের লোক ঢুকতে পারবে। একবার মুসলমানের ছোঁয়া লেগে গেলে আমরা বহু হিন্দু পুরুষ এবং বিশেষ করে নারীদের সমাজের বাঈরে করে দিয়ে মুসলমান সমাজের সংখ্যা বাড়িয়েছি মাত্র । উনি তাই রিকনভার্সনের ড্যাক দিলেন। বর্তমান সংঘ পরিবার শুরু করেছে ঘর -ওয়াপ্সি আন্দোলন।
    গ) সাভারকরের মতে বৌদ্ধধর্মের অহিংসা নীতি ভারতকে দুর্বল করে মুসলিম আগ্রাসনকে সহজ করে দিইয়েছে। সিন্ধু আক্রমণের প্রসঙ্গে উনি বৌদ্ধদের বিশ্বাসঘাতক বলতে দ্বিধা করেন নি । উনি খুশি, বৌদ্ধধর্মের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ভারতে প্রায় বিলুপ্ত এবং স্বয়ং বুদ্ধদেব হিন্দু দশাবতারের একজন হয়ে শোভা পাচ্ছেন।
    ঘ) ওঁর মতে হিন্দুদেরও দাঁতের বদলে দাঁত চোখের বদলে চোখ মেনে চলা উচিত ছিল। 'ক্ষমা বীরস্য ভূষণম' জাতীয় ফালতু স্তোকবাক্যে না ভুলে পরাজিত আত্মসমর্পণকারী মুসলিনদের হত্যা করা উচিত ছিল। এবং 'ওরা' যেমন পরাজিত হিন্দুদের বৌ-মেয়েদের লুটে নেয়, ধর্ষণ করে , বিয়ে করে বা রক্ষিতা বানায় আমাদেরও তাই করা উচিত ছিল । তাহলে আজ এত মুসলমান হত না ।'
    'শিবাজী যখন বিজাপুরের সুলতানের পরিবারের মেয়েদের সসম্মানে ফেরত দিলেন তখন কি সেই সিন্ধুবিজয়ের দিন থেকে অগণিত লুন্ঠিত ধর্ষিত হিন্দুমেয়েদের কান্না তাঁর কানে প্রবেশ করে নি ? হিন্দুসমাজ 'অহিংসা' , শত্রুকে সম্মান , সহিষ্ণুতা --এসব কে গুণ মনে করে নিজের পায়ে কুড়ুল মেরেছে। সাপ দেখলে মেরে ফেলা উচিত , স্ত্রী-পুরুষ বিচার করা উচিত নয় ।
    রামায়ণে রামচন্দ্র তাড়কা রাক্ষসীকে বধ করেছিলেন। লক্ষ্মণ শূর্পনখার নাক কেটে ভাগিয়ে দিয়েছিলেন। তাহলে?
    --- ভারতরত্নের যোগ্য নায়ক বটে!
  • | 236712.158.565612.115 | ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ২০:২৭388279
  • রঞ্জনদা, তথ্য নির্ভর হয়েছে টই টা। রিজনেবলি কনসাইজ ও হয়েছে। থ্যাংক্স। এবার একটু বিবলিওগ্রাফি অ্যানোটেট কইরা দ্যান।

  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল প্রতিক্রিয়া দিন