এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কল্পবিজ্ঞান :সহস্রাব্দী পার হয়ে

    Milli
    অন্যান্য | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ৩৪৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Milli | 131.95.121.132 | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৫:৩২390922
  • চিলেকোঠা ঘরে একইরকম একটা নীল রঙের মোমবাতি জ্বলছিলো,শুধু জ্‌জ্‌জ্‌জ্‌জ্‌ শব্দ করে উড়ে বেড়ানো সেই পোকাটা নেই,এখন ঘোর শীত। গত গ্রীষ্মের শেষ প্রথম যখন এসেছিলো মিশেল, তখন অমন একটা পোকা উড়ে বেড়াচ্ছিলো মোমবাতির শিখাটা ঘিরে।
    তা ছাড়া অন্যসব একই আছে এই ঘরে-টেবিল,টেবিলের উপরে নানা আকৃতির রঙীন পাথর,মুদ্রা,পুরানো পুঁথি,হাড়,আরো কত চেনা অচেনা জিনিস এলোমেলোভাবে ছড়ানো।
    মিশেল খুব আশ্বস্ত করা হাসি হাসে মাইকেলের দিকে তাকিয়ে,কিন্তু মাইকেল রীতিমতন কাঁপছে।শীতে বা ভয়ে বা উত্তেজনায়। মিশেল আবার হাসে,কিন্তু মাইকেলের মুখে সে হাসির প্রতিবিম্ব পড়ে না।ত্রস্ত চোখে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাইকেল।

  • Milli | 131.95.121.132 | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৫:৫৪390933
  • বেশ কিছুক্ষণ মনের মধ্যে শব্দগুলো নাড়াচাড়া করে বাক্যগুলো সাজিয়ে নেয় মিশেল। পুরানো ভাষা আয়ত্ব করা খুব কঠিন,যদিও অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে পুরানো ভাষাটা শেখার চেষ্টা করেছে মিশেল,তবু। আয়নার সামনে বহুবার প্র্যাকটিস করেছে দৈনন্দিন কথাবার্তা,কিন্তু চেক করবে কার সঙ্গে? সেখানে তো এ ভাষা বলার মতন কেউ নেই।
    গত গ্রীষ্মে প্রথমবার এসে মাইকেলকে নানাভাবে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করতে করতেই তো কেটে গেছিলো প্রায় পুরো সময়। তারপরে আবার আসবে বলে চলে গেছিলো।তাছাড়া আর কিই বা করতে পারতো মিশেল?
    আস্তে আস্তে মাইকেলের দিকে এগিয়ে গেলো মিশেল, মাইকেল অপলকে চেয়ে আছে,দাঁড়িয়ে আছে শক্ত পাথরের মূর্তির মতন,মিশেলের মনে হলো লোকটা বুঝি নি:শ্বাসও নিচ্ছে না।
    মাইকেলের হাত দুখানা অস্বাভাবিক ঠান্ডা,নিজের উষ্ণ হাতের উপরে সেই ঠান্ডা হাত দুটো নিয়ে ভাঙা ভাঙা বাক্যে মিশেল ওকে বলে,""আচ্ছা, এত ভয়... এত ভয় পাচ্ছ কেন? এত ভয় পাবার...এত ভয় পাবার কি আছে? আমি ...আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে চাই না...আমি তোমার বন্ধু বন্ধু বন্ধু।""
    মাইকেলে শুকনো ফাঁটা ঠোঁটের ওপরে জিভ বুলিয়ে নিয়ে অত্যন্ত কাঁপা গলায় বলে,""আমি...আমি জানি।আমি ভয় পাই না।শুধু আপনাকে দেখলে অন্য একটা কথা...অন্য একটা কথা মনে হয়।""
    ""কি কথা মনে হয়?"" মিশেলের গলায় আগ্রহ।
    ""সে কথা থাক।""মাইকেলের স্বর ভাঙা ভাঙা,ডুবে যাওয়া।
    ""বলতে ইচ্ছে না হলে...বলতে না চাইলে বোলো না।কিন্তু...কিন্তু আমার শুনতে ইচ্ছে ছিলো।"" মিশেল চাইছে যথাসম্ভব আশ্বস্ত করতে।
    মাইকেল খুব আস্তে প্রায় ফিসফিসিয়ে বলে,""আপনাকে দেখলে...আপনাকে দেখলেই আইরিনকে মনে পড়ে।আইরিন চলে গেলো,আমি নিজে ডাক্তার,কিন্তু আমি ওকে বাঁচাতে পারলাম না।আমি চেষ্টা করেছিলাম,কিন্তু আমি এতই হতভাগ্য...""মাইকেলের স্বর পুরো ডুবে গেলো,কান্না গোপণের আর কোনো চেষ্টা এখন সে করছে না।
  • Milli | 131.95.121.132 | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২১:৫২390944
  • মিশেল যতটা সম্ভব সান্ত্বনা দিতে চায়, ""মাইকেল, মাইকেল, সেটা ছিলো মহামারী, প্লেগ। তোমার কিই বা করার ছিলো ঐ ঝড়ের মুখে? হাজারে হাজারে মানুষ সেসময়....তুমি তবু তোমার যথাসাধ্য করেছিলে। কেন শুধু শুধু নিজেকে দোষ দিচ্ছ? ""
    মাইকেল সান্ত্বনা পায় কিনা বোঝা যায় না, সে বলে,""ঝড়ের মুখে আমার সব ভেসে গেলো। আইরিন চলে গেলো, ওর সঙ্গে চলে গেলো আমার... আমাদের অনাগত সন্তান।""
    মিশেল মাইকেলের হাতের উপরে আঙুল বোলাতে বোলাতে কিছু বলবে ভাবে, কিন্তু কথা খুঁজে পায় না। ঠিক ঠিক শব্দগুলো মনে পড়ে না,নাকি আসলে এসব সময়ে কি বলতে হবে সেটাই জানে না সে, মিশেল বুঝতে পারে না। এরকম পরিস্থিতি আগে কখনো হয় নি মিশেলের, সে যে সময়ে আর সমাজ ব্যবস্থায় থাকে,সেখানে সব অন্যরকম। মুহূর্তের ভগ্নাংশের জন্য মিশেলের মনের মধ্যে ঝলকে উঠলো রবার্টের মুখ, কত অন্যরকম! বব কি কোনোদিন মিশেলের সামনে এরকম করে কথা কয়েছে? মিশেল নিজের মনের ভিতরেই মনকে ধমক দেয়, সেখানে সবকিছু অন্যরকম, নিখুঁত জেনেটিক হিসেব মিলিয়ে তৈরী মানুষ, সমস্ত উৎকৃষ্ট গুণকে বাড়িয়ে তোলা মানুষ, তাদের বেড়ে ওঠা যুক্তিনিষ্ঠ পরিমন্ডলে, শিক্ষায়...সেখানে এরকম প্রাচীন যুগের দুর্বলতা থাকবে কেন?
    মিশেল নিজেও তো সেইভাবেই তৈরী,সেইভাবেই বড়ো হয়ে ওঠা,কিন্তু কেন ওর তবে এরকম লাগছে এখন? এটা ওর কাছে কাজমাত্র ছিলো,ইতিহাসের প্রোজেক্ট শুধু, অনেকের মধ্য থেকে সিলেক্টেড হয়েছিলো সে,বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়ে, ট্রেনিং পিরিওডেও খুব নিঁখুত পারফর্ম্যান্স ছিলো,কেউ কোথাও খুঁত পায় নি বলেই তো ওকে এখানে আসার অনুমতি শেষ পর্যন্ত দিয়েছে টেম্পোরাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশান--সেলিব্রেশানের দিনটাও মনে পড়ছে-বব সেদিন সঙ্গে ছিলো পার্টিতে...
  • Milli | 131.95.121.132 | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২২:১৮390955
  • নিজের মুখের উপরে একবার হাত বুলিয়ে হঠাৎ জেগে ওঠা স্মৃতিকে মুছে দিলো মিশেল, বললো, ""মাইকেল, এসো আমরা বসি। তোমার কথা অনেক শুনতে ইচ্ছে হয়। তোমার সেই দেশভ্রমণের কথা,তোমার সেই পুরানো চার্চ,সেই বুড়োমানুষটা, যে কিনা তোমাকে সব শেখালো হাতে ধরে...বলবে মাইকেল? ""
    মাইকেল জামার ঢোলা হাতায় মুখচোখ মুছে সুস্থির হয়ে নিয়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে, ""আসুন, দয়া করে বসুন।""
    মিশেল বসে পড়ে চেয়ারে, চেয়ারে পুরানো দিনের গন্ধ, সমস্ত ঘরটাতেই তাই।
    বন্ধ জানালার বাইরে পুরানো পৃথিবী ছড়িয়ে আছে যতদূর দুচোখ যায়,ঐ পথ দিয়েই তো একটু আগে হেঁটে এসেছিলো মিশেল। এইখানেই ভেসে উঠতে পারতো ইচ্ছে করলে, কিন্তু তাতে মাইকেল আরো অনেক বেশী ভয় পেতো।
    ঐটুকু পথ হেঁটে আসতে আসতে সর্বাঙ্গ শিরশির করছিলো মিশেলের, একই জায়গায় সব কত অন্যরকম এখন,বাড়ীঘর অন্যরকম,গাড়ীগুলো অন্যরকম,গাছপালাদের রোপণ করা হয়েছে অন্যভাবে...শুধু ঐ রাত্রির আকাশের তারাগুলি শুধু একই আছে।
    মাইকেলও বসে পড়েছে উল্টোদিকের চেয়ারে, অন্যমনস্কভাবে একটা রঙীন পাথর তুলে হাতে নেয়। হয়তো ভাবছে ওর সেই ভবঘুরে সময়ের কথা।

  • Milli | 131.95.121.132 | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৭:৪৪390966
  • মাইকেল আস্তে আস্তে বলতে শুরু করলো ওর ভবঘুরে জীবনের গল্প, জীবনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও সবচেয়ে কঠিন সময় সেটা তার। দিনের পর দিন,অনাহারে অর্ধাহারে পথ চলা,দিনের শেষে কোনোদিন আশ্রয় জোটে,কোনোদিন গাছতলা সার। তবু এক অদম্য অস্থিরতা ওকে ছুটিয়ে নিয়ে চলতো গ্রাম থেকে গ্রামান্তর,শহর থেকে অন্য শহর,এক চার্চ থেকে অন্য চার্চ,এক অ্যাপোথেকারি থেকে অন্য খান, এক জ্ঞানী ভিষকের কাছ থেকে অন্যজনের কাছে। ওর মেডিকেল স্কুলের সঙ্গীসাথীরা যারা নির্দিষ্ট সময়েই ঠিকঠাক পাশ্‌টাশ করে বেরিয়ে চিকিৎসা-ব্যবসা খুলে বসেছিলো প্রচলিত পদ্ধতিতে,তারা ওর সে অদ্ভুত অস্থির জীবনের মানে বুঝতে পারতো না, ঐ জীবনকে ওরা পছন্দও করতো না। কিন্তু মাইকেলের কিছুই করার ছিলো না,ওকে যেতেই হচ্ছিলো, ভিতর থেকে কিছু একটা ওকে ঠেলে নিয়ে চলছিলো, যখনি ও কোথাও থিতু হতে চাইতো, হয়তো সুযোগও পেয়ে যেতো,হয়তো বৃদ্ধ প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক ওকে পরবর্তী উত্তরধিকারী নির্বাচিত করতে চাইতেন নিজের কাজে,কিন্তু মাইকেল থাকতে পারতো না। শেষ মুহূর্তে দুর্বলতা ছিন্ন করে বেরিয়ে পড়তো পথে, চরৈবেতি চরৈবেতি।
    ছেলেবেলা থেকে যে নিষ্ঠুর কালোমৃত্যুর থাবার মধ্যে বারে বারে মানুষকে অসহায় হয়ে মরতে দেখেছে সে,মহামারী তাকে বারে বারে রেহাই দিয়ে গেছে,কেন? মাইকেল জানে না, শুধু জানে ওকে কিছু একটা করতে হবে,কিছু একটা করতে হবেই। কিভাবে করবে সে জানে না,শুধু অন্ধ অসহায় ক্রোধ ও ছটফটানি দেশ দেশান্তরে ওকে ছুটিয়ে নিয়ে বেড়ায়।
    এই ঘূর্নী হাওয়ার মতন ঘুরবার দিনগুলোর মধ্যে দুটো সময় ওর কাছে খুব স্মরণীয়। একটা হলো বৃদ্ধ ভিষক অ্যারনের কাছে কিছুদিন শিক্ষানবিশী করা,বুড়োমানুষটার কথা বলতে বলতে শ্রদ্ধায় কোমল হয়ে আসে মাইকেলের মুখ,উনিই ওকে প্রায়ুঅ হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন ভেষ্‌জবিদ্যার অন্ধিসন্ধি,শিখিয়েছিলেন কিকরে চিন্তা করতে হয় নতুন পথে,মৃত্যুবেষ্টিত এই দুনিয়ায় কিকরে ভালোবাসতে হয় জীবনকে।
  • Milli | 131.95.121.132 | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৮:১৬390977
  • মগ্ন হয়ে শুনছিলো মিশেল গালে হাত রেখে, ওর চোখ মেলা ছিলো মাইকেলের মুখের উপরে অপলক,যেন সামান্য চোখের ফোকাস নড়ে গেলেই ঘটনামালা ছিঁড়ে এলোমেলো হয়ে যাবে,টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো মালাছেঁড়া মুক্তোদানার মতন টর টর টর শব্দ করতে করতে মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বুঝি হারিয়ে যাবে। আচ্ছন্নের মতন চুপ করে শুনছিলো মিশেল।
    অ্যারনের কথা বলতে বলতে যখন মাইকেলের মুখ আলো ছলছল হয়ে এলো,জীবনের প্রতি ভালোবাসা শেখার কথা বলতে বলতে যখন মাইকেল মুখ তুলে মিশেলের চোখে চোখ রাখলো,তখন আর থাকতে না পেরে ফিসফিস করে মিশেল বললো,""তবে? এসব কথা তো তোমায় তোমার স্যর আগেই বলেছেন,তুমি নিজেও সব জানো।তবে তুমি কেন মোহগ্রস্তের মতন এত দু:খ পাও?""
    মাইকেল নীরবে হাসলো, বললো,""জেনেও দু:খ পাই,মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার ঋণশোধ বোধহয়।""
    হঠাৎ অদ্ভুত শীতে কেঁপে ওঠে মিশেল,বাইরের শীত না, বন্ধ জানালা এই ঘরে উজল মোমবাতির শিখার পাশে শীত নেই।কিন্তু এ অন্য শীত,ভয়ের শীত।
    মানবজীবনের ঋণশোধের তো করা হয় নি মিশেলের, সে এখনো আউটসাইডার মাত্র।কত উন্নত প্রযুক্তির ও প্রসারিত জ্ঞানবিজ্ঞানের দূর ভবিষ্যৎকালে তার ঘরবাড়ী, আপনজন, কাজকর্ম সব। কিন্তু সত্যি কি কিছুই আছে তার? মোহগ্রস্ত হওয়া জ্ঞানসংগ্রহের পথে অন্তরায়, সে জানে, সে যুক্তির কড়াপাকে আঁট করে বাঁধা পথে চলেছে এতদিন, কিন্তু কি বলছে এই প্রাচীন মানুষটা? মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার ঋণশোধ দু:খদহনে?
  • Milli | 131.95.121.132 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৭:৪০390984
  • ্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌
  • Milli | 131.95.121.132 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৭:৫১390985
  • টাইমপোর্টের রিসিভিং কমপ্লেক্সের মাঝখানে ঘোরানো বেগুনী-নীল স্পাইরালের মধ্যবিন্দুতে ঝলকানো আলো, নিজস্ব সময়ের সিঁড়িতে পা রেখে সবসময়েই পিছনে ঘুরে একবার দেখে মিশেল।ঐ আলোটুকু থেকে যায়, আসা-যাওয়ার পথটা কোনোদিন বুঝতে পারে নি মিশেল,ঘন ঘুমের আবরণে সেপথ ঢাকা।এসে পৌঁছে গেলে তৃষ্ণায় গলা কাঠ হয়ে যায়,অথচ জলপান করার উপায় নেই।
    ঘোরালো প্যাঁচালো সর্পিল সিঁড়িগুলো পার হয়ে বিরাট কোয়ার‌্যান্টাইন।স্নিগ্‌ধ আকাশী রঙের দেয়াল এসব ঘরে,জানালাগুলো পান্নার মতন উজল সবুজ,ছয়কোণা চেহারার,দরজাগুলো উপবৃত্তাকার,হাল্কা সবুজ রঙের।সমস্ত ঘর অপূর্ব আলোয় ধোয়া।পুরোটা বন্ধ,কিন্তু বোঝা যায় না।কল্পবাস্তব এখানে এত উচ্চতায় পৌঁছেছে যে বন্ধ ঘরের মধ্য থেকেও মনে হচ্ছে যেন সে আছে শরতের স্নিগ্‌ধ নদীতীরে, আবার কিছু পরেই সেটা বদলে হয়ে যাচ্ছে সমুদ্রবেলা, আকাশে উড়ছে সীগাল,সে আকাশ ইন্দ্রনীলমণির মতন ঝলমলে নীল।
  • Milli | 131.95.121.132 | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৮:১৮390986
  • তিন থেকে চারদিন কোয়ার‌্যান্টাইনে থাকতে হয় মিশেলকে, এসময় বেশ অনেক মেডিকেল টেস্ট হয়, বেশীরভাগই মিশেলের অলক্ষ্যেই হয়ে যায় নানাধরনের দৃশ্যমান অদৃশ্য সেন্সরের দ্বারা,কিছু টেস্ট এসে করেন মানুষ বা রোবট ডাক্তারেরা।একদম শেষে মনোবিদ এসে পরীক্ষা করে সব "ওকে" বলে দিলেই তারপরে মিশেল কোয়ার‌্যানটাইন থেকে ছাড়া পায়।
    রবার্ট রিসিভ করতে আসে ওকে,কপালের উপরে এসে পড়া ওর এলোমেলো বাদামী চুলগুলো একইরকম ভাবে হাওয়ায় ওড়ে,আঙুল দিয়ে সামলাতে সামলাতে অপ্রস্তুত হাসে, মিশেলের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলে,"সুপ্রভাত, মিশেল।তোমার নিজের সময়ে স্বাগত।" মিশেলও বলে,"সুপ্রভাত,বব",যদিও কালযাত্রার ঐ বিপুল তরঙ্গে প্রভাতই বা কি সন্ধ্যাই বা কি মধ্যরাতই বা কি?

  • Milli | 131.95.121.132 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৩:০৪390923
  • ববের উড়নযানটা ছোট্টো কিন্তু খুব আরামদায়ক। সীটে এলিয়ে বসে আলতো হাসে মিশেল, চালকের আসনে বসে বব নব ঘুরিয়ে চালু করে উড়নগাড়ী,মসৃণভাবে উপরে ওঠে যায় যান,গন্তব্য উত্তরদিকে, সেখানে টেম্পোরাল-অ্যাডমিন এর আপিসে কিছু কাজ সেরেই বাড়ী।
    মিশেলের চোখেমুখে হাল্কা অবসাদ,অথচ কোয়ার‌্যান্টাইনে খুব আরামেই থাকার ব্যবস্থা,মনেও হয় না কনফাইনমেন্ট, এত ভালো সব ভার্চুয়াল এনটারটেইনমেন্ট এর ব্যবস্থা, খাবার দাবার আর পানীয়ও ভালো দেয়-তবু এই কোয়ার‌্যানটাইন থেকে বেরিয়ে সময়টা দ্রুত বাড়ী ফেরার জন্য মনকেমন করে মিশেলের,সেই ব্যালকনির বাগানে ছোট্টো ছোট্টো টবে গাছগুলো, ছাদের লতাপাতাওলা জালের ঘরের ছোট্টো ছোট্টো পাখিরা...এমনকি ছয়কোণা বিশাল টবে লালনীল মাছগুলো...
    বাড়ীর বাগানে পোষা প্রাণীরা...
    বব আর মিশেল এখনো অনুমতি পায় নি সন্তান দত্তক নেবার,আরেকটু প্রতিষ্ঠিত হয়ে নিয়ে অনুমতি চাইবে। মিশেলের মনে হয় ওরা নিশ্চয় অনুমতি পেয়ে যাবে, আর অনুমতি পেয়ে গেলে কয়েক মাসের মধ্যেই দত্তক সন্তান পাওয়ার কথা। মিশেলের ইচ্ছে মেয়ে দত্তক নেয়,ববের ইচ্ছে মেয়ে...দেখা যাক, সে অনেক দূরের ব্যাপার।
    মাঝে মাঝে ইতিহাসের লাইব্রেরীতে বসে ক্রিস্টাল লিংকে পুরানো ঘটনাবলীর রিকনস্ট্রাকশন দেখতে দেখতে মিশেল ভাবতো পুরানো সেইসব সময়ে যখন কিনা মানুষের প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সন্তান জন্মাতো...কি বিপদ আর অনিশ্চয়তায় ভরা ছিলো মনুষ্যজন্ম...
    এখন তো সব জেনেটিক ইন্সটিটিউটে, হিসেব মিলিয়ে তৈরী নিঁখুত মানুষ,সুস্থ সবল নীরোগ শিশুরা প্রস্ফুটিত হয় জেস্টেশান চেম্বারের নিরাপদ আশ্রয়ে...
    আচ্ছন্নতা ভেঙে যায় মিশেলের, এসে গেছে টেম্পোরাল অ্যাডমিন অফিস,বব আস্তে আস্তে নামাচ্ছে উড়নযান।

  • Milli | 131.95.120.97 | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২২:৪৩390924
  • টেম্পোরাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশানে লাগলো প্রায় ঘন্টাখানেক, কৃস্ট্যাল-ডকুমেন্ট সব জমা নিয়ে দেখেটেখে সব "ওকে" করতেই এতটা সময় লাগলো। মিশেল ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছিলো ওর নির্দিষ্ট আসনে,খুব আরামদায়ক চেয়ার,মৃদু তরঙ্গ প্রবাহিত হচ্ছে শরীরের মধ্য দিয়ে,মন ভালো করে দিচ্ছে। মিশেল ওর প্রিয় অতি স্নিগ্‌ধ সুরের গান ও তারসঙ্গে সঠিক ম্যাচ করা বাজনা ও শুনতে পাচ্ছিলো। ওদের তথ্যাবলীতে মিশেল সম্পর্কিত ফাইলে এই প্রিয় গানের লিস্ট রয়েছে।
    কাছেই আরেকটি আসনে ববও অপেক্ষা করছিলো, মিশেলকে রিসিভ করে নিয়ে যেতে যেদিন আসে, সেদিন পুরোসময়ের ছুটি পায় বব।
    সুদৃশ্য গোল জানালার বাইরে ছড়িয়ে আছে সুন্দর সবুজ পৃথিবী, ধোঁয়া ধুলাহীন নীল আকাশ,সেই আকাশে ঝলমলে সূর্য,নি:শব্দ দ্রুতগতি উড়নযানেরা উড়ছে বাতাসে,সুক্ষ্ম তড়িচ্চুম্বক তরঙ্গ দ্বারা ওদের গতিপথ নিয়ন্ত্রিত।
    ক্যালেন্ডারে ২৩২১ সাল।
    উড়নযানগুলোর দিকে চেয়ে হঠাৎ ইতিহাস-গবেষক মিশেলের মনের মধ্যে ভেসে ওঠে পুরানো একটা সময়। সে সময় শক্তিসমস্যা ছিলো মারাত্মক,সমস্ত ফসিল ফুয়েল শেষ হয়ে আসছিলো,ওদের ভান্ডার তো সীমিত,সেই নিয়ে লাগাতার লড়াই চলছিলো দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে, এদিকে ক্রমশ দূষিত হয়ে পড়ছিলো পৃথিবীর বাতাস-জল-মাটি।
    মানুষ একসময় সফল হলো নিউক্লীয় সংযোজন কে কাজে লাগাতে, একই প্রক্রিয়া যার দ্বারা সূর্যকেন্দ্রে শক্তি তৈরী হয়।অথচ পৃথিবীতে কিছুতেই এটাকে নিয়ন্ত্রিত আকারে আয়ত্ত করা যাচ্ছিলো না। অবশেষে একসময়-আজ থেকে তিনশো বছর আগে... মানুষ পেরে গেলো সেটা,ফিউশন টেমড হয়ে গেলো---চিরকালের মতন শক্তিসমস্যা ঘুচে গেলো,পলুশন ঘুচে গেলো-শক্তির বিপুল মহাসমুদ্র এসে গেলো মানুষের আয়ত্তে।গত কয়েক শতকের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে বেশী ইম্প্যাক্টওলা আবিষ্কার বোধহয় সেটাই।

  • Milli | 131.95.121.132 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০১:১৪390925
  • টেম্প-অ্যাডমিন থেকে বেরিয়ে ফের উড়নযানে উঠে বসতেই বব জিগালো,""সোজা বাড়ী তো? নাকি কোনো খাবারের দোকানে থামবো?""
    মিশেলের কিন্তু একটুও থামতে ইচ্ছে করছে না কোথাও, কতক্ষণে বাড়ীতে পৌঁছবে সেই অপেক্ষায় অধীর। কিন্তু ববের হয়তো কোনো খাবারের দোকানে থামার ইচ্ছা, ও ববের দিকে চেয়ে বললো,তুমি কি কোথাও খেতে চাও? কি দরকার এখন? বাড়ীতে গেলে নিজেরাই কিছু তৈরী করে নেওয়া যেতো-ডিনারে নাহয় বেরুবো দুজনে!
    বব মাথা নেড়ে সায় দেয়, ""সেই ভালো।সোজা বাড়ী।সল আর নিফি ও তোমায় মিস করছে।""
    সল আর নিফি-দুখানা পোষা খরগোস,বাগানে থাকে।ওদের কথা মনে হতেই মনটা কোমল হয়ে এলো মিশেলের।

  • Milli | 131.95.121.132 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৩:৩৩390926
  • বাড়ীতে পৌঁছে ভালো করে কুসুম কুসুম গরম জলে নেয়ে হাল্কারঙের নরম পোষাক পরে নিতেই মনটার অবসাদ অনেকখানি ঘুচে গেলো মিশেলের।ওদিকে বব ততক্ষণে ওদের রোবট অম্‌বটের সাহায্যে তৈরী করে ফেলেছে ভালো শক্তিবর্ধক পানীয় আর কুড়মুড় ভাজা কাহাইফ্রিল, লোক্যালোরি কর্ণমিল, চাট্টি প্লেন রিসিয়ুম আর মিডি ক্যালোরি কুরিয়াম তো আছেই।
    অম্বট বাগানে ফোল্ডিং টেবিল নিয়ে পেতে আম্ব্রেলা আর চেয়ার অন করতেই, বিশাল ফুলের পাপড়ির মতন মাথার উপরে ছাতা খুলে গেলো,টেবিলের চারপাশে চাট্টি চেয়ার বেরিয়ে এলো, সুগন্ধি হাওয়া আর গানের সুরও চালু হয়ে গেলো।
    মিশেল বব সেখানে গিয়ে মুখোমুখি দুটি চেয়ারে বসতেই অমবট টেবিলে খাবারদাবার সাজিয়ে দিয়ে চলে গেলো। অমবট চলে যেতেই বাগানের ফুলগাছের ঝোপের পেছন থেকে গুটি গুটি সল আর নিফি এসে মিশেলের কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো।ঝুঁকে পড়ে ওদের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মিশেল খানিকক্ষণ অদের সঙ্গে কথা কইলো,তারপরে ওদের খেতে দিলো,তারপরে নিজে ফর্ক তুলে খেতে শুরু করলো।
    এতক্ষণ বব শুধু পানীয়ে চুমুক দিচ্ছিলো,মিশেল খাওয়া শুরু করতে বব ও শুরু করলো খেতে।
  • Milli | 131.95.121.132 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৫:২১390927
  • নীরবে খাচ্ছিলো দুজন,মাঝে মাঝে ঠোঁট মুছছিলো মসৃণ নরম ওমেগা-পলিমারের এর ন্যাপকিনে। এগুলো একদম নতুন প্রোডাক্ট,ব্যবহার করতেও যেমন সুবিধে,রিসাইকল এর ক্ষেত্রেও তেমন ভালো।পুরানো জিটা পলিমারের জিনিসও এখনো কেউ কেউ ব্যবহার করে,তবে এগুলোই বেশী জনপ্রিয়। ওমেগাক্রন গোষ্ঠী সমস্ত ধরনের নতুন পলিমারের ক্ষেত্রে প্রায় একচ্ছত্র-পোশাক থেকে আরম্ভ করে পর্দা বেডকভার সমস্ত ধরনের টিসু তো এদেরই সাপ্লাই, এমনই এই যে ফোল্ডিং টেবিলচেয়ার ছাতা প্লেট কাপ ফর্ক নাইফ সবই এদের তৈরী।
    আস্তে আস্তে কুড়মুড়ে কাহাইফ্রিলে কামড় দিয়ে দিয়ে কারিউম খাচ্ছিলো মিশেল, বব একবার ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বললো "মিশেল,প্রত্যেকবার ট্রিপের পরেই তুমি বেশ বদলে যাও।প্রথম কয়েক ঘন্টা এত কম কথা বলো!"
    মিশেল হাসে,বলে,""সত্যি? তোমার তাই মনে হয়? আসলে তা কিন্তু নয়।একটা খুব অন্যরকম অভিজ্ঞতা তো! হয়তো ধাতস্থ হতে খানিকটা সময় লাগে।""
    বব হাসে,""তাই? কিন্তু গল্প বলতে হবে। খাবার পরেই বলবে তো? এবারে কেমন দেখলে মাইকেলকে? ""
    ""বলবো বব।আজ তো তোমার পুরোদিনের ছুটি,আস্তে আস্তে বলবো।মাইকেল ভালোই আছে,কিন্তু এখনো ভীষণ আড়ষ্ট। আমাকে রিয়েল মনেই করতে পারে না।ভাবে আমি ওর স্বপ্ন বা কল্পনা।"" কথা শেষ না করেই জোরে হাসে মিশেল।
    বব বলে,""তোমাকে স্বপ্ন ভাবে? ওয়েল...একদিক দিয়ে তো ঠিকই। ভেবে দ্যাখো।তুমি ওর সময়ে তো আসলে নেই। আমার মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে মিশেল,তুমি ঐ লোককেই কেন বাছলে তোমার প্রজেক্টের জন্য? ""
    প্রশ্নটা শুনে মিশেল খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে আস্তে আস্তে বলে,""কেন বাছলাম? কেজানে! কেন জানি চরিত্রটা খুব আকর্ষণ করলো,ইতিহাসের অন্য বিখ্যাত চরিত্রদের মতন নয়, একটা কেমন রহস্যাবরণ ওর চারপাশে জড়ানো... একটা অচেনা সময়...ওর সম্পর্কে পরবর্তীকালে আমরা যা জেনেছি তাতে পরিষ্কার করে কিছুই বোঝা যায় না,মানুষটাকে কিছুতেই ধরাছোঁয়া যায় না,তাই হয়তো...তবু এরকম চরিত্র তো আরো ছিলো...তাদের কাছে তো যাবার কথা ভাবিনি...কিজানি বব,কেন এঁকে ঠিক করলাম,বলতে পারিনা..."" মিশেলের চোখজোড়া আচ্ছন্ন হয়ে এসেছে,বব ওকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনে,""আরে,খাওয়া বন্ধ করে দিলে কেন? খাও।খাওয়ার পরে গল্প বোলো।""

  • Tim | 204.111.134.55 | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৫:৪৪390928
  • এটা যেন শেষ হয়, ট্যান।
  • Milli | 131.95.121.132 | ০১ অক্টোবর ২০০৭ ০৪:০২390929
  • খাওয়ার পরে ঘরে এসে বিশ্রাম। মিশেল ববকে বলে যায় মাইকেলের ওখানে পৌঁছানো, ত্রাসবিমূঢ় মাইকেলকে যথাসাধ্য সাহস ও আশ্বাস দিয়ে মোটামুটি কাজ চলার মতন অবস্থা তৈরী করা, চিলেকোঠা ঘরে যেখানে ও রাতের বেলা কাজ করে সেখানে বসে ওর সঙ্গে গল্প করা, ওর জীবনের গল্প শোনা-আস্তে আস্তে সব বলে যায় মিশেল। বলতে বলতে অনুভব করে সেসময়ের পৃথিবীর আশ্চর্য অনুভবটা কিছুতেই কথায় বলতে পারছে না। হয়তো সম্ভবই নয়। যেমন সম্ভব হয়নি এই সময়ের কথা মাইকেলকে বোঝানো, মিশেল বলে গেছে,মাইকেল শুনে গেছে অবাক হয়ে, মেনে নিয়েছে স্বপ্নাচ্ছন্নের মতন-কিন্তু বিশ্বাস করেছে বলে মনে হয় না।
    গল্প শুনে বব খুশী,খানিকক্ষণ পরে বব চলে গেলো ওর কাজের ঘরে কিছু কাজকর্ম করতে।
    ক্রিস্টাল লিংক চালিয়ে দিয়ে থ্রী ডি টিভিতে মিশেল দেখতে লাগলো খবর,প্লেনিকন কোম্পানীর আন্তর্গ্রহ যাত্রী পরিষেবায় কি একটা গন্ডগোল হয়েছে,সে নিয়ে খবরে দেখাচ্ছে। আবার! মিশেল একটু বিরক্ত।
    এই কোম্পানী পৃথিবীর কাছাকাছি গ্রহ উপগ্রহের উপনিবেশে-এই যেমন চাঁদ, মঙ্গল, কয়েকটা অ্যাস্টরেয়েড, বৃহস্পতির কয়েকটা বড়োসড়ো উপগ্রহ-এইসবে যেসব উপনিবেশগুলো আছে, সেখানে নিয়মিত যাত্রী আনা নেওয়া করে।এদের প্রতি নানা অভিযোগ সবসময়েই যাত্রীরা করে থাকে,হয় যাত্রাপথে খাবার ভালো দেয় না,নয়তো মালপত্র ঠিকমতো দেয় না,হারিয়ে ফেলে,এসব নিয়ে প্রায় সারাবছরই কিছু না কিছু লেগে থাকে।
    অথচ লোকের উপায় খুব একটা নেই, আরেকটা কোম্পানীর লিমিটেড পরিষেবা আছে বটে, সে কোম্পানীর ইন্টার প্ল্যানেটারি ফ্লাইটে টিকিটের দাম অনেক বেশী।

    এ খবর দেখতে দেখতে চ্যানেল ঘুরিয়ে অন্যটায় চলে গেলো,নেপচুনের উপনিবেশে লো টেম্পারেচার ল্যাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা আবিষ্কার হয়েছে কদিন আগে,সেই নিয়ে উত্তেজক ডকু দেখাচ্ছে।

    হাল্কা সুরে ফোন বেজে ওঠে মিশেলের লকেটে,তুলে সে অবাক।লিজি কথা বলতে চায়! কতকাল ওর সঙ্গে কথা হয় নি,সেই যে ও যখন ইউরেনাসের ল্যাবে চলে গেলো, তিনবছর আগে, সেই শেষ দেখা।

  • Milli | 131.95.121.132 | ০১ অক্টোবর ২০০৭ ২০:৪৯390930
  • ভিশন বাটন অন করতেই লিজির ত্রিমাত্রিক ছবি ফুটে উঠলো মিশেলের সামনে,সোনালীরুপালী আলোর ঘেরের মধ্যে মিশেল,এইসব অপ্টিকাল ইলুশন কিছু থাকলেও চেহারা মোটামুটি ঠিকই আসে থ্রী ডি প্রোজেকশানে। লিজি একইরকম আছে দেখতে, ছোটো করে ছাঁটা চুল,ছটফটে নীল চোখে দুষ্টুমী-মিশেলের সামনে ভিসুয়ালাইজ করেই হেসে বললো,""হ্যাঁরে মিশেল,খুব তো একাল ওকাল ঘুরে বেড়াচ্ছিস,আমার সঙ্গে একবার কন্ট্যাক্ট করার কথা তিনবছরে একবারও মনে পড়লো না?""
    মিশেল লিজিকে জানে সেই স্কুলের দিনগুলো থেকে, ও এরকমই,সমসময় ছটফটে। তবে খুব চটপটেও বটে। সকলেই জানতো প্রথম সুযোগেই ও দূরবর্তী কোনো গ্রহের ল্যাবে চলে যাবে।তাই গেছেও।
    মিশেল হাসে,বলে,""তুই ব্যস্ত ল্যাবে।গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা। এর মধ্যে বিরক্ত করবো? তাই কন্ট্যাক্ট করিনি।""
    ""ওরে মেয়ে! কি কায়দা করা কথা!""লিজি গলা ছেড়ে হাসে।
    মিশেল এবারে পাল্টা চাল দেয়,""লিজি,আমিও তো বলতে পারি,তুই কেন কন্ট্যাক্ট করিস নি?""
    ""হ্যাঁ,আমারও তো করা হয় নি।শোধবোধ।এবারে বল,কেমন ঘুরলি।""
    দুই বন্ধু গভীর আলাপে জমে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। ঘুরে ঘুরে মিশে কুশে আসতে থাকে লিজির ল্যাবের গল্প, মিশেলের ইতিহাস গবেষণার কাজে অতীতযাত্রা, অতীতের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা-শীঘ্রই আবার যেতে হবে ওকে,সেকথা,লিজির সামনের অ্যাসাইনমেন্ট পড়েছে প্লুটোতে,এটা অল্প কদিনের।তারপরে সেখানে থেকে ওর যাত্রা শুরু আরো দূরের দিকে, অনেক দূরে,অন্য নক্ষত্রের গ্রহজগতের দিকে।তার আগে হাইবারনেশনের দীর্ঘ ট্রেনিং।
    ওদের এত কথা জমেছে এত কথা জমেছে,দীর্ঘ আলাপেও কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।বব একবার এ ঘরে আসতে গিয়েও দরজা থেকে ফিরে গেলো।বিকেলের স্ন্যাকস এর সময়ও এদিকে হয়ে গেছে।

  • Milli | 131.95.121.132 | ০২ অক্টোবর ২০০৭ ০০:৩৪390931
  • হাল্কা নীল চোখের এক কিশোর প্রদীপ্ত চোখ মেলে চেয়ে আছে মিশেলের দিকে-ওর সোনালী আভা লাগা লম্বা বাদামী চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে কপালে,ঘাড়ে,কাঁধে।মস্ত বড়ো নীল জোব্বা ধরনের পোষাক ওর,হাতে পুরানো এক পুঁথি,ও কি যেন বলছে মিশেলকে,মিশেল কিচ্ছু বুঝছে না,সমস্তটা জলের মধ্যে ডুবে থাকা কোনো ছবির মতন কাঁপছে।
    মিশেলের হাতে নীল মোমবাতি,অন্যহাতে ফুলের সাঝি,বনের মধ্যে ওরা দুজন-দূরে গাছের মাথাগুলোর মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে এক গীর্জের চূড়া----
    অন্ধকার হয়ে আসছে,মিশেলের খুব শীত করছে খুব ভয় করছে, মোমবাতিটা জ্বালাতে গিয়ে মিশেলের মস্ত ঝোলা নীল ঘাঘড়ায় আগুন লেগে দাউ দাউ করে পুরোটা জ্বলে উঠলো। সমস্ত চারিদিক আলো,ছেলেটা এগিয়ে এসে ওকে ধরতেই ওর বইটা প্রথমে ধরে উঠলো,তারপরে ওর কাপড়ে আগুন লেগে গেলো। মিশেলের চোখের সামনে কাগজের মতন পুড়ে যাচ্ছে সেই নীলচোখ কিশোর,তবু চোখে মেলে চেয়ে আছে একইভাবে।
    আর্তচিৎকার করে জেগে উঠলো মিশেল-গভীর রাত্রির নৈ:শব্দ চারিদিকে। পাশে বব গভীর নিদ্রামগ্ন।
    অনেকক্ষণ উঠে বসে রইলো মিশেল চুপ করে,তারপরে নেমে গিয়ে জল খেয়ে এলো।
    ঘুম আর হবে না,বাকী রাত্রিটা জেগেই কাটাতে হবে।
    কাউকে কি জানানো উচিত? মনোবিদেরা কিছু ধরতে পারে নি, যন্ত্রপাতিতেও কিছু ধরা পড়ে নি, ওর গোপন কথা গোপনই হয়ে আছে সময়ের ভাঁজে।
    শুধু এই...এই স্বপ্ন... এই মধ্যরাত্রির অসহায় জেগে বসে থাকা...
    কিন্তু কি করবে মিশেল? ওর কি করার ছিলো? যা করেছে তা ওকে করতেই হতো।
    আজ না হোক কোনো না কোনোদিন ধরা পড়তেই হবে...সেদিন... এই যান্ত্রিক দুনিয়ায় এসবের কোনো ক্ষমা নেই, ক্ষমা ব্যাপারটাই অজানা... হয় "ওকে" অথবা "নট ওকে", এর মাঝখানে আর কিছু নেই।
    জানে মিশেল। জানে। সব জেনেশুনেই করেছে।
    ববের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে কোমল হয়ে আসে মিশেলের মুখ,এই এত কাছের মানুষটার সঙ্গেও কি বিরাট দূরত্ব তার! আর ঐ লিজি,টিমি,অ্যাঞ্জি-ওরা যারা নির্বিকারে চলে যায় শত শত বছরের অভিযানে-দীর্ঘ নিদ্রায় বরফশীতল হয়ে জমে থেকে,যারা জেগে উঠবে অন্য সময়ে,দূর ভবিষ্যতে-ফিরে এসে দেখবে সব বদলে গেছে---ওদের সঙ্গে ওর আরো কত লক্ষ আলোকবর্ষের অলঙ্ঘ্যনীয় দূরত্ব!
    দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিশেল, যা করেছে সে ঠিকই করেছে,ওর মনে কোনো দ্বিধা নেই।
  • Milli | 131.95.121.132 | ০২ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:০৭390932
  • ্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌
  • Milli | 131.95.121.132 | ০২ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:২৫390934
  • এইবারে মাইকেল অনেক সচ্ছন্দ। শীতশেষে নতুন বসন্ত এখন,চারিদিক অনেক বেশী ঝলমলে ও উজ্বল।এপ্রিল-অর্থাৎ কিনা উন্মোচনের সময়। সমস্ত মাঠ ভরে গেছে ক্ষুদে ক্ষুদে ঘাসফুলে-সাদা, হলদে, বেগুনী, নীল, গোলাপী, আরো কত রকমের যে রঙ ওদের।
    হয়তো এই নতুন বসন্তের সানন্দ অনুভূতিই মাইকেলকে এবারে অনেক আশ্বস্ত ও সাহসী করে তুলেছে।
    ফুলেকিশলয়ে মঞ্জরিত উদ্যানভূমির মধ্যে মিশেল আর মাইকেল বসে কথা বলছে,ঝলমলে দিনের বেলা।খানিকটা দূরেই মাইকেলের সেই বিখ্যাত গোলাপঝাড়। নিজের হাতে যত্ন করে মাইকেল। এই গোলাপের থেকেই সে তৈরী করেছে ওষুধ,নিষ্ঠুর অসুখের থেকে মানুষের পরিত্রাণের পথ দেখিয়েছে এই ওষুধ।
    সে খুব কৃতজ্ঞ মিশেলের কাছে-মুখেও বলছে বারে বারে, কিন্তু মিশেল ওকে থামায়,বলে ""না না মাইকেল, এভাবে বোলো না, ভেষজবিদ্যার পারদর্শিতা তোমার নিজের, আমি এটুকু ইঙ্গিত না দিলেও তুমি ঠিকই তৈরী করতে পারতে।""
    ""না,আপনি জানেন না, ভবিষ্যদুনিয়ার স্বপ্নময়ী দেবী,আপনি না এলে কিছুতেই... কোনোদিনই এ সম্ভব হতো না। আমি অর্ধমৃতের মতন ভগ্নহৃদয় হয়ে ছিলাম,আমি সে ভাঙা মন নিয়ে কোনোদিন এ পথ দেখতে পেতাম না। আপনি এলেন, অন্ধকারে আলো জ্বলে উঠলো, আমি পথ দেখতে পেলাম।""
    মিশেল অপ্রস্তুত,সামলাতে চেষ্টা করে বলে,""আমি স্বপ্নময়ী দেবী না মাইকেল, আমি মানুষ,কিকরে বোঝাবো সত্যিই সময় পাড়ি দিয়ে এসেছি,বোঝাতে চেষ্টা করলেও পারবো না,আমি নিজেই জানি না ভালো করে সে প্রকৌশল,আমি ইতিহাসের ছাত্রী,বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডিটেলে জানিনা আমি,তাই তোমাকে বোঝাবার চেষ্টা করতে যাবো না। কিন্তু বিশ্বাস করো মাইকেল, আমি দেবী নই, মানুষ-আমি স্বপ্ন নই-বাস্তব।""
    মাইকেল ঘাড় হেলিয়ে সায় দেয়,""বিশ্বাস করি। আপনি যা বলেন সবই আমি বিশ্বাস করি। না বিশ্বাস করে পারি না।""
    মিশেল হেসে ফেলে,বলে,""চলো তাহলে তোমার গোলাপঝাড়ের কাছে গিয়ে বসি। তুমি আগেরবার আমাকে অ্যারনের কথা বলেছিলে, সেটা তোমার ভ্রমণজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাটির কথা এবারে বলবে না আমায়?
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৩ অক্টোবর ২০০৭ ০১:২৭390935
  • গোলাপঝাড়ের কাছে সুপত্রল ওক গাছের ছায়ায় ফুলফোটা ঘাসের উপরে গুছিয়ে বসলো মাইকেল আর মিশেল।
    মিশেল হাসে, বলে ""এইবারে বলো।""
    মাইকেল সম্মতি জানায়,""বলছি।""
    তারপরে চুপ করে চেয়ে থাকে পুবের আকাশের দিকে, ঐদিকে যেখানে নীল পাহাড়ের চূড়া জেগে আছে নীল আকাশের গায়ে,সেদিকে তাকিয়ে হয়তো মনে করে সেইসব মুহূর্তগুলো-ওর জীবনের মধুরতম স্মৃতি,অপরূপ করুণায় ভরা সেইসব পলাতক মুহূর্তগুলোকে স্মৃতির ফুলবনে ধরে রেখেছিলো হয়তো সে,তারপরে এসেছে বিচ্ছেদের দীর্ঘ শীত, পাতা ঝরে গেছে,ফুল মরে গেছে, মৃত্যুর শ্বেতবস্ত্রের মতন সাদা কঠিন তুষারে ঢেকে গেছে মাটি---সেই বিচ্ছেদের সেই দীর্ঘ আঁধার ও শীত শেষ হয়ে এসেছে বসন্ত আবার... নতুন জীবন...একঝাঁক লাল পাখী চির্প চির্প করতে করতে উড়ে গেলো ওদের মাথার উপর দিয়ে...মাইকেল শুরু করলো বলতে।
    ""বৃদ্ধ অ্যারনের মৃত্যুর পর তখন আমি আবার পথে বেরিয়ে পড়েছি।আবার সেই অনিশ্চয়তা,ক্লান্তি,কষ্ট।কোনোদিন ক্ষুধাতৃষ্ণা মেটাবার জন্য খাবার ও পানীয় জোটে,কোনোদিন জোটে না। আশ্রয় ও কখনো জোটে,কখনো জোটে না। এইবারে কেন জানিনা সেগুলোকে আর তত অসুবিধা মনে হচ্ছিলো না, বৃদ্ধ অ্যারন অদ্ভুৎ সঞ্জীবনী মন্ত্রের মতন শিক্ষা দিয়েছিলেন আমায়।""
    বলতে বলতে গাঢ় হয়ে আসে মাইকেলের গলা।একটু থেমে থেকে আবার বলতে শুরু করে সে।
    ""একদিন...তখন গ্রীষ্মকাল, সেদিন দুপুরবেলা এসে পৌঁছেছি এক গাঁয়ে। আগের রাত থেকে কিছু খাওয়া জোটে নি, রাত্রে পথের ধারে গাছতলায় একটু ঘুমিয়ে নিয়েছিলাম। এলোঝেলো ভিখিরীমার্কা অবস্থা, ভিক্ষুকের নেই দস্যুর ভয়। ঝোলাখানিতে ছেঁড়া কটি পুঁথি, কিছু শেকড়বাকড়পাতা আর কটি জামাকাপড় ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। সেই দুপুরে...ঐটুকু ভারও বইতে ওপারিনা, তৃষ্ণায় গলা কাঠ,খিদেয় সব অন্ধকার... একজায়গায় দেখি একটা বড়ো কুয়ো,গ্রামের সকলে জল নিতে আসে, সেরকম বড়ো ইঁদারা ধরনের কুয়ো। সেখানে গিয়ে উঁকি দিয়ে হতাশ হলাম,জল অনেক নীচে, বালতি দড়িও নেই,হয়তো সবাই যার যার দড়িবালতি এনে জল তুলে নিয়ে যায়। কি আর করি, বোঝা নামিয়ে এলিয়ে পড়লাম,তারপরে আর কিছু মনে নেই।
    জ্ঞান ফিরলো চোখে মুখে জলের ছিটায়, চোখ মেলে প্রথমে বুঝতেই পারিনা কোথায় আছি, তারপরে দেখি একটা মেয়ে,প্রায় কিশোরী,ওর ভরা বালতি থেকে অঞ্জলি অঞ্জলি জল তুলে ঝাপটা দিচ্ছে আমার মুখে। ""
    জ্ঞান ফিরতে দেখে মেয়েটার মুখে হাসি,বলে,""তুমি কে?""
    আমি কথা কইতে পারিনা,ইঙ্গিতে জল খাবো বোঝাই, সে আমার মুখে জল দেয়।
    জল খাওয়ানো হলে আবার জিগায়,""তুমি কে? এই কুয়োর পাড়ে পড়ে আছো কেন এমন? তোমার কি খিদে পেয়েছে? আহা,তোমার মুখ ছাইয়ের মতন ফ্যাকাশে গেছে, নিশ্চয় তোমার খিদে পেয়েছে। এই নাও,আমি কতগুলি ফল রেখেছি"" বলতে বলতে কোচড় থেকে দুটো ন্যাসপাতি বার করে আমাকে দিলো।

  • angana | 131.95.121.132 | ০৩ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:০০390936
  • মাইকেল এই পর্যন্ত বলে চুপ করে থাকে খানিকক্ষণ,দীর্ঘ গ্রীষ্মের শেষে প্রথম বৃষ্টিপাতের মতন মধুর সেই প্রথম দেখার মুহূর্ত মনে করে আচ্ছন্ন হয়ে গেছে বুঝি সে। মিশেল বোঝে,সে কিছু জিগায় না, ওকে চুপ করে থাকতে দেয়,নীল পাহাড়ের দিকে চেয়ে চুপ করে আছে মাইকেল,ওর নীল চোখ বেয়ে অবশে জল গড়িয়ে পড়ে। জামার ঢোলা হাতায় তাড়াতাড়ি মুছে নিয়ে বলে,""কতকাল আগের কথা,তবু মনে হয় এই তো সেদিন! তখন আমার অল্প বয়েস, আইরিনের বয়স আরো অল্প। পৃথিবী একরকমই ছিলো, কিন্তু আমাদের চোখ ছিলো নতুন,তাই অত সুন্দর দেখতাম দুনিয়া।""
    আস্তে আস্তে বাতাসের মতন কোমল গলায় মিশেল শুধায়, ""তারপরে কি হলো মাইকেল?""
    তারপরে আইরিন আমাকে নিয়ে গেলো ওদের বাড়ী, ওদের মস্ত খামারবাড়ী, সেখানে প্রচুর লোকে কাজ করছিলো। আমাকে ওর বাবা কাজ দিলেন, আগে কদিন ভালো করে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করলেন, ভালো থাকার জায়গা দিলেন, দুদিনেই ক্লান্তি দুর্বলতা ঘুচে গেলো,তারপরে কাজে লাগলাম।""
    ক্রমে ওরা জানতে পারলো আমি চিকিৎসক, তখন খামারের কাজ আর করতে হতো না, চিকিৎসালয় খুলে বসলাম। একবছরের কিছু বেশী ওখানে ছিলাম। পরের বছর ফসল তোলার সময় আইরিনের সঙ্গে বিয়ে হলো, তারপর সে গাঁ ছেড়ে নিজের গাঁয়ে ফিরে এলাম দুজনে।
    এখানেও চিকিৎসাপত্র শুরু করলাম,ভালোই চলছিলো, কিন্তু চিরশত্রু সেই মহামারী ফের ফিরে এলো...
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৩ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:২০390937
  • মাইকেলের স্বরে ক্রোধ ও কান্না মিশে যায়, নিষ্ঠুর সেই মহামারী যা মাবাপের বুক থেকে সন্তান, সন্তানের কাছ থেকে মাবাপকে কেড়ে নেয়-চিকিৎসক হয়েও সে কিছু করতে পারে না যথাসাধ্য চেষ্টা সত্বেও-সেই অসহায় ক্রোধ ও ক্ষোভ মিশে যায় স্বজনহারানোর শোকাশ্রুর সঙ্গে।
    মিশেল ওর হাতে হাত রেখে সান্ত্বনা দেয়,""আর বলতে হবে না মাইকেল,আর বলতে হবে না, এবারে অন্য কথা বলো। বলো তোমার তৈরী ওষুধ কিরকম কাজ করছে।""
    মাইকেল আস্তে আস্তে শান্ত হয়,শরতের মেঘ যেমন বর্ষায় সমস্ত জলভার নামিয়ে দিয়ে শুভ্র তুলার মতন হাল্কা হয়ে যায়, অনেক শ্রুপাতের শেষে তেমন হাল্কা মনে হয় মাইকেলকে দেখে, সে নতুন ওষুধের ম্যাজিকের মতন ক্রিয়ার কথা বলতে বলতে আনন্দ লুকিয়ে রাখতে পারে না।

  • Milli | 131.95.121.132 | ০৩ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:৩৭390938
  • মিশেলকে এইবারে সবচেয়ে সাংঘাতিক কথাটা বলতে হবে, মিশেল অবাক হয়ে অনুভব করলো ভেতরে ভেতরে সে কাঁপছে। অদ্ভুত শিহরণে কাঁটা দিয়ে উঠছে ওর সারা গা, ঘাড়ের কাছটায় কেমন শিরশির করছে।
    এই সেই মুহূর্ত যখন জেনেশুনে ভেঙে ফেলতে হবে আইন, আগেরবার শুধুমাত্র একটু আভাস দিয়ে গেছিলো, সেটাকে ঠিক আইন ভাঙা বলে না,হয়তো স্লিপ অব টাং বলে সেটাকে চালিয়ে দেওয়া যেতো..কিন্তু এইবারে ওকে পুরোটা যেতে হবে...মিশেল জানে না মাইকেল কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে,কিন্তু ওর কি হবে ফিরে গিয়ে সেটা মিশেল জানে। হয়তো এইবারই নয়,হয়তো অন্য কোনো বারে...
    মিশেলের মনের মধ্যে ভেসে ওঠে কাজে মগ্ন বব,মনে পড়ে সোনালী আলোর মধ্যে লিজির ত্রিমাত্রিক ছবি,আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে,মনে পড়ে নি:শব্দ উড়নযানগুলি...মনে পড়ে কাঁধ অবধি কালো চুল এলোমেলো ছড়িয়ে পড়ে আছে, দাঁড়িয়ে আছে সেই কালো চোখ তরুণী,মিশেলের থেকে তিনশো বছর আগের দুনিয়ায় যে জন্মেছিলো, ওর জানালার বাইরে ধোঁয়া ধুলোভরা দূষিত পৃথিবী, সে মেয়েটা চেয়ে আছে দেওয়ালে ঝোলানো একটা আশ্চর্য ছবির দিকে, অপরূপ নীল পৃথিবী,মহাকাশ থেকে তোলা ছবি-সেই প্রথম ওরা অমন ছবি পেয়েছিলো...মেয়েটার চোখ থেকে ধারা বেয়ে জল পড়ছে-সে মুছবার চেষ্টাও করছে না....
    মিশেল জানে, ওকে বলতেই হবে, ওকে করতেই হবে, ওকে ভাঙতেই হবে আইন। যন্ত্রের দুনিয়া যদি শুধু যন্ত্রেরই হয়, যদি সঞ্জীবনী মন্ত্র তাতে না থাকে,তবে কি মানে থাকে সেসবের?

  • Milli | 131.95.121.132 | ০৩ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:৪০390939
  • ্‌্‌্‌্‌
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৩ অক্টোবর ২০০৭ ০৮:০৫390940
  • এবারেও সেই ঘুমকনকনে পথ, ঝলকানো আলো, নীল বেগুনী স্পাইরাল, ঘোরালো প্যাঁচালো চলমান সিড়িমালা, তিনদিনের কোয়ার‌্যান্টাইন, অজস্র পরীক্ষা... অবশেষে বব, টেম্প-অ্যাডমিন,চেকিং এর শেষে বাড়ী...সব একরকমই আছে। মিশেল ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে উঠছে একাল ওকালের খেয়াপারাপারে।
    প্রথম দুই ট্রিপের পরে বব যেমন উৎসুক থাকতো গল্প শুনতে, এবারে আর ততটা নয়, হয়তো একঘেয়ে লাগতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। মিশেলও তেমন আগ্রহ দেখায় না বলার,বরং ববের সাম্প্রতিক কাজ নিয়ে প্রশ্ন করে। বব এমনিতে কাজ করতো হাই এনার্জী রিসার্চে, এখন নাকি টেম্পোরাল অ্যাডমিন ওকে অনেক বেশী ভালো অফার দিয়ে যোগ দিতে বলছে। বব ভাবছে যোগ দেবে।
    মিশেল উৎফুল্ল হয়ে ওকে কনগ্রাচুলেট করে,বলে,""তোমার যদি মনে হয় কাজটা তোমার ভালো লাগবে,তাহলে সে অফার ছেড়ো না।""
    খাবার পরে বিশ্রামের সময় বব নরম গলায় কেন জানি প্রশ্ন করে,"" মিশেল,তিনশো বছর আগে যারা নিউক্লিয়ার ফিউশন টেমড করেছিলো, যাদের জন্য বিধ্বস্ত পৃথিবী পুনরায় সুস্থ হলো, সেই তাদের জন্য তোমার আগ্রহ ছিলো অনেক বেশী।এতই অদ্ভুত জায়গা থেকে ওরা উঠে এসেছিলো,অনেকটা রাইটদের মতন,যারা চারশো বছর আগে প্রথম প্লেন বানিয়েছিলো,তাদের মতন-কেউ ভাবে নি অমন অবস্থা থেকে কেউ আদৌ কিছু করতে পারে অমন স্কেলে,ওদের দেখার জন্য তোমার উৎসাহ ছিলো প্রচন্ড,তোমার ঘরে আজো ওদের পোস্টার--তুমি ওদের কাছে যেতে চাইলে না কেন তোমার প্রোজেক্টের জন্য? ""
    মিশেল চুপ করে ভাবে, আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় পোস্টার গুলোর দিকে,হাল্কা চেহারার সেই কালোচোখ তরুণী যার কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুল এলোমেলো ছড়ানো আর অপেক্ষাকৃত ভারী চেহারার বাদামী চোখ শ্বেতাঙ্গ তরুণ আর এক হাসিমুখ প্রাচ্যদেশীয় বৃদ্ধ,মুখের কোঁচকানো চামড়ার মধ্য থেকে হাসি আরো স্নেহময় লাগছে।
    আস্তে আস্তে ছবির সামনে গিয়ে ছবিতে হাত বোলায় মিশেল-এগুলো পরবর্তীকালে রিকনস্ট্রাকটেড ছবি-আস্তে আস্তে আপনমেন কথা বলার মতন মিশেল বলে,""এঁদের আমি বুঝতে পারি,এঁদের আমি ছুঁতে পারি,এদের মানুষ চেহারা আমার অচেনা থাকে না,তাই এঁদের কাছে আর যেতে চাইলাম না। যদি এ প্রজেক্ট আজ থেকে সাত আট কিংবা দশ বছর আগে করতে হতো,কোনো সন্দেহ নেই, আমি এদের কাছেই যেতে চাইতাম....""

  • Milli | 131.95.121.132 | ০৪ অক্টোবর ২০০৭ ২২:৫৯390941
  • বব হাসে, বলে,""দশ বছরে বদলে গেছো বুঝি অনেক?""
    মিশেল হাসে, বলে,""কিংবা ধরো, ঐ ওরা" বলে চলে যায় অন্যদেয়ালে, সেখানে উজ্জল কমলা পোষাক পরা একদল হাসিখুশী তরুণ তরুণীর দল-ওদের স্বচ্ছ হেলমেটগুলো ঘাড়ের দিকে হেলানো, যাত্রারম্ভের আগে বিদায় জানাচ্ছে বন্ধুদের,একটু পরেই হেলমেটগুলো টেনে এঁটে দিয়ে ওরা উঠে পড়বে মহাকাশযানে-ওদের ব্যাকগ্রাউন্ডে দেখা যাচ্ছে আকাশের দিকে উঁচিয়ে আছে রকেটের মাথা-কীরকম ছুঁচালো লম্বা হতো সেই আদ্যিকালের যানগুলো, কি প্রিমিটিভ উপায় ছিলো ওগুলো মহাশূন্যে তোলার-তবু মানুষে সমস্ত রিস্ক নিয়ে হাসিমুখে গেছে, বারে বারে...
    এই দলের কেউই আর ফিরতে পারে নি, পুরো মিশনের শেষে যখন নেমে আসছিলো,তখন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব।
    ছবির দলের মধ্যে ডার্ক কমপ্লেক্‌শান,ঘনকালো চুল আর চকচকে কালো চোখের হাসিমুখের এক তরুণীর ছবিতে হাত রাখে মিশেল-""ওর সঙ্গেও দেখা করতে চাইতাম তো।সেসময় প্রোজেক্ট নিলে হয়তো এঁকেও বাছতে পারতাম। হয়তো জিগেস করতে চাইতাম ওর কেমন লাগতো প্রত্যেকবার যাবার সময়। ও লিখেছিলো স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে যোগাযোগকারী পথ আছে, সেপথ খুঁজেও পাওয়া যায়, যদি কেউ খুব হৃদয় দিয়ে খোঁজে।""
    বব হাসে, বলে,""পুরানো যুগে মানুষের কত সব অদ্ভুত বিশ্বাস ছিলো,তাই না? আজকালের দিনে কেউ ভাবতে পারে এসব?""
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৫ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:০৭390942
  • আড়চোখে একবার ববের দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো মিশেল। কেন ভেতরে ভেতরে কাঁপুনি লাগছে ওর?
    স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝখানের সরু তারের উপরে সার্কাসের খেলোয়াড়ের মতন নিজেকে ব্যালেন্স করছে মিশেল, নীচে অতল খাদ, দুই পাহাড়ে তারের দুই প্রান্ত। সে একটুখানি মাত্র এগিয়েছে এক পাহাড়ের দিক থেকে, এখনো বিপুল পথ সামনে,তার দুলছে, মিশেল দুদিকে দুহাত ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে ব্যালেন্স করছে। দেখা যায় না ওপার, কুয়াশায় আচ্ছন্ন।
    ববের কথায় সম্বিৎ ফিরলো,কি যেন জিগাচ্ছিলো বব।আহ, মিশেল শুনতেই পায় নি।
    বব মিশেলের কাঁধে হাত রেখে নাড়ায়,""কি হলো মিশেল? কিছু ভাবছো?""
    ""অ্যাঁ? না না তেমন কিছু না। এই যে সময়ভ্রমণ, অতীতযাত্রা----জেট ল্যাগের মতন একটা কিছু হয় হয়তো। ফিরে এসে কিছুদিন ঠিকমতন নিজেকে ন্যস্ত করতে পারিনা পরিচিত জীবনে।"" কথা শেষ করে ক্লান্ত হাসে মিশেল।
    বব ব্যস্ত হয়ে বলে,""সরি,আমি বুঝতে পারিনি, তুমি ঘুমাও।""রেশমী কম্বল গায়ের উপরে ছড়িয়ে দিয়ে আলো কমিয়ে মৃদু ঘুমপাড়ানি সুরের সঙ্গীত চালিয়ে দিয়ে ঘর থেকে চলে গেলো বব।
    বহুদূরের ছোটোবেলা মনে পড়ে মিশেলের, ওর পালকপালিকা পিতামাতাকে মনে পড়ে, দশ বছর ওদের সঙ্গে ছিলো সে,কত সব সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছে সে ওদের সঙ্গে... মা ছিলেন সঙ্গীতশিক্ষিকা,গিটার শেখাতেন,নিজেও মাঝে মাঝে পারফর্ম করতেন স্টেজে...অসাধারণ কোমল শান্ত সমাহিত সেই মগ্ন মুখখানা মনে পড়ে...তারের উপরে সুন্দর আঙুলগুলো খেলছে কি গ্রেসফুল...
    বাবা ছিলেন জার্নালিস্ট, বেশীরভাগ সময়েই দূরে দূরে থাকতেন নানা অ্যাসাইনমেন্টে...
    মিশেলের আঠেরো বছর বয়স হবার পরেই সমাজের নিয়মে সেই সম্পর্ক ছিন্ন করতে হলো-স্বাধীন হয়ে সে নিজস্ব জীবনে চলে এলো... কোথায় আজকে মা মার্থা? কোথায় বাবা জর্জ? আর কোনো খোঁজখবরও রাখা চলে না--এইরকমই নিয়ম---এমন নিয়ম কেন? মিশেল জানে এ প্রশ্ন করলেই নানা তথ্য যুক্তি চার্ট পরিসংখ্যান ইত্যাদি দেখিয়ে বুঝিয়ে দেবেন মনোবিদ কাউন্সেলার। একদম প্রথমে,স্বাধীন থাকার প্রথম বছর সে এই প্রশ্ন করেছিলো,তখন ওঁর জন্য ঠিক করে দেওয়া স্পেশাল মনোবিদ ওকে ঠিক এইরকমই উত্তর দিয়েছিলেন। মিশেল তারপর থেকে আর এসব প্রশ্ন করেনি, শুধু ওর মনে পড়তো বিদায়ের সময়ের শেষ দেখা মার্থা মায়ের সেই মুখ-অদ্ভুত গভীর টলটলে দুখানা চোখ মেলে চেয়ে ছিলো মিশেলের দিকে।কিছু কি বলতে চেয়েছিলো মা? কেজানে! কয়েক বছর পরে অনুমতি পেলে যখন মিশেল আর বব সন্তান আনবে... তার আঠেরো বছর পরে ছেড়ে দেবার সময় কি মিশেলও অমন করে চেয়ে থাকবে?
    মিশেল টের পেলো অবশ অশ্রুধারা ওর গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে বালিশে,ভিজে যাচ্ছে বালিশ। কী বোকা সে! কেন এমন করছে?
    অথঅহ খুব ভালো লাগছে ওর, খুব ভালো লাগছে, বেদনার সঙ্গে অপরূপ আনন্দ-মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে যেন একটা পর্দা ছিঁড়ে যাচ্ছে, একটা দেয়াল ভেঙে যাচ্ছে- সে জন্ম নিচ্ছে আরো আরো স্পষ্টতর এক জগতে...
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৫ অক্টোবর ২০০৭ ২২:০০390943
  • ওর মনে পড়ে যায় আরো আগে,আট বছর বয়স হবার ও আগে,তখনো মার্থা আর জর্জ ওকে দত্তক নেয় নি, তখন ও থাকতো পাহাড়ের কোলে এক অদ্ভুত জায়গায়, আরো অনেক ছেলেমেয়ে থাকতো সেখানে, বাগানে ঘেরা একটা সুন্দর বাড়ী ছিলো,চারপাশ ঘিরে বাগান,পাহাড়ী ফুলের গাছ,শনশন হাওয়া আসতো সরল বনের ভিতর দিয়ে...
    এক খুব বৃদ্ধার কথা মনে পড়ে, সে ওদের গল্প বলতো সন্ধ্যাবেলা বারান্দায়...অজস্র মানবাকার অ্যান্ড্রয়েড রোবট ছিলো নানাধরনের কাজের জন্য,কেউ রান্না করতো,কেউ বাগান দেখাশুনা করতো,কেউ ঘরদোর গোছাতো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতো... এইসব কাজের রোবটেরা কেউ একটাও কথা কইতো না, নিঁখুত ভাবে কাজ করে যেতো শুধু... অন্য অ্যান্ড্রয়েড রোবট,সকালবেলার ক্লাসে যে ওদের পড়াতো, সুন্দর ঝলমলে চেহারার দিদিমণি ওদের, সে কথা কইতো,গান গাইতো,সুন্দর করে পড়াতো ওদের...সে যে মানুষ নয়, রোবট,বহুদিন বুঝতেই পারেনি মিশেল...
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ অক্টোবর ২০০৭ ০৩:০২390945
  • ্‌্‌্‌্‌্‌
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন