এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • কল্পবিজ্ঞান :সহস্রাব্দী পার হয়ে

    Milli
    অন্যান্য | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | ৩৪৩১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ অক্টোবর ২০০৭ ০৩:২৯390946
  • আবার আরেক শীত,এইবারে মিশেলের ষষ্ঠ ভিজিট। বসন্তের পরে গ্রীষ্মে আর শরতে এসেছিলো মাইকেলের কাছে। মাইকেল এখন অনেক শান্ত, অনেক সাহসী, অনেক বেশী হাল্কা মন। প্রথম আর দ্বিতীয়বারের কথা মনে পড়ে মিশেলের,ভয়ার্ত আর ভগ্নহৃদয় একটি মানুষ তখন মাইকেল, অতি সামান্য আশা বুঝি মাত্র বেঁচে ছিলো প্রায় নিভে আসা কাঠকুটোর ভেতরে থেকে যাওয়া সামান্য আগুনের মতন,আস্তে আস্তে তাতে নতুন শুকনো কাঠকুটো দিয়ে গেছে মিশেল, এখন আবার মাইকেল মানসিক শক্তি ও সাহস ফিরে পেয়েছে, সেই প্রাচীন গল্প কথার বুড়ো মানুষের এক্সপেরিমেন্ট মনে পড়ে মিশেলের, একজনকে কয়েকদিন কিছুই খেতে না দিয়ে রেখে নানা জ্ঞানের কথা জিগিয়েছিলেন বুড়ো, সে সব জানা থাকলেও কিছুই বলতে পারে নি।এরপর খাইয়ে দাইয়ে চাঙ্গা করে নিয়ে আবার একই প্রশ্ন করতেই সে গড়গড়িয়ে সব বলে দিয়েছিলো।
    শীতস্তব্ধ রাত্রি, মোমবাতি হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে মাইকেল, পিছনে পিছনে উঠছে মিশেল। মাইকেল বলে যাচ্ছে নতুন ওষুধে কতখানি উপকার হয়েছে,কাছের এক শহরের ঘিঞ্জি অঞ্চলে আবার দেখা দিয়েছিলো ঐ কালান্তক রোগ,এই ওষুধ দিয়ে সারিয়ে দেওয়া গেছে,তারপরে অবশ্য সে অঞ্চলকে পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে,পার্শ্ববর্তী নদীশোধনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।মিশেল যেমন করতে বলেছিলো,তেমনি। খুব ভালো কাজ হয়েছে,মৃত্যুসংখ্যা খুব কম।হয়তো এই রোগ থেকে শেষপর্যন্ত রক্ষা পেলো মানুষ।
    মাইকেলের মুখ আনন্দে জ্বলজ্বল করছে, মোমবাতির সোনালী আলোয় ওর মুখকে উদ্ভাসিত লাগছে।মনে হচ্ছে যেন দশ বছর বয়স কমে গেছে মাইকেলের।
    মিশেল কল্পনায় পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলো সেই বহু বছর আগের খামারবাড়ী,প্রায় কিশোর মাইকেল আর মিশেলের কখনো না দেখা আইরিন আনন্দে ফুটতে ফুটতে দৌড়ে দৌড়ে কাজ করছে।
    কথা হতে হতে ওরা পৌঁছে গেছে চিলেকোঠাত্র ঘরে, সেই চেনা চেয়ার টেবিল, পুরানো পুঁথি,রঙীন পাথর, হাড়, চুম্বক...
    মিশেল চেয়ারে বসলেই মাইকেল ও ওর নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে পড়ে, টেনে নেয় পার্চমেন্টের গোছা, কালিতে ডোবায় স্টাইলাস... মিশেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,""বলুন স্বপ্নময়ী দেবী, তারপরে কি হবে?""
    মিশেল বহুবার বারণ করেছে এই সম্বোধনে,তারপরে বুঝেছে বৃথা। মাইকেল এই সম্বোধনেই সবচেয়ে স্বস্তি বোধ করে।তাই এখন আর কিছু বলে না।
    প্রথম যখন এইসব ভবিষ্যৎ ঘটনাবলী লেখার কথা বলেছিলো মিশেল-মাইকেল ভয়ে কুঁচকে উঠেছিলো, ""না না না,কি বলছেন, আমি সামান্য ভিষকমাত্র, প্রফেট হবার স্পর্ধা আমি করি না"-কিন্তু মিশেল নাছোড় হয়ে লেগে ছিলো-মাইকেল বলেছিলো লোকে জানতে পারলে প্রচুর জটিলতা দেখা দেবে, মিশেল বলেছিলো কিছুই জটিলতা দেখা দেবে না, কারণ স্পষ্ট করে কিছুই ওতে থাকবে না, সবই থাকবে অসংখ্য সম্ভাবনার সমষ্টি হয়ে কারণ একমাত্র তাই সত্য। একটিমাত্র বাস্তব বলে কিছু নেই, যা আছে তা হলো সম্ভবনামাত্র।
    মাইকেল হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে বলেছিলো বাস্তবতা বলে কিছু নেই? এই যে যা সব ঘটছে, তা তাহলে কি?
    মিশেল আধঘন্টা ধরে ওকে জটিল সম্ভাবনাতত্ব বহুবিশ্ব তত্ব এইসব বুঝাবার চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়ে বলেছিলো, এসব বুঝতে হবে না মাইকেল,এসো লিখতে শুরু করো।
    তার্পরে একসময় কিকরে যেন শুরু হয়ে গেছিলো লেখা, এখন স্তূপাকার পার্চমেন্ট ভরে সেসব লেখা হয়েই চলেছে, হয়েই চলেছে...
    একসময় থেমে যাবে সব,জানে মিশেল... কিন্তু সেতো প্রথম থেকেই জানে...

  • Milli | 131.95.121.132 | ০৭ অক্টোবর ২০০৭ ০৬:৫৭390947
  • ""সময় আমাদের ঢেকে রাখে
    হাল্কা বৃষ্টির মতন
    অনন্ত ও বেদনাভরা সময়
    লবণের পালক ছুঁয়ে।
    আর তারপর-
    যখন পৃথিবী গ্রহণ করবে আমাদের আলিঙ্গন
    মিশে যাবো আমরা একটি অভিন্ন মৃত্যুতে
    অসীম কালের জন্য-
    একটি অফুরান চুম্বনের মধ্যে...""

    মিশেল কিছুতেই মাইকেলের সামনে অশ্রুপাত করবে না, না,না। অথচ এই লাইনগুলো ঘুরে ঘুরে মনে আসছে, চোখে উষ্ণজলের ছাপিয়ে আসা টের পাচ্ছে মিশেল,চোখের মধ্য দিয়ে ফেরৎ পাঠিয়ে দিচ্ছে সেই নদী।

    মিশেলের অবাক লাগে, সে এমন একটা সময়ে, এখনো এ কবিতা লেখা হতে কয়েকশ বছর বাকী,অথচ মিশেলের সময়ে এ কবিতা সাড়ে তিনশো বছরের পুরানো!
    সেই কবি, আশ্চর্য সেই সময়, সেই দেশ-বিদ্রোহ-বিপ্লব,ঘূর্ণীঝড়ের মতন সেইসব অজস্র অজস্র ভিন্ন ভিন্ন জাতির মানুষেরা....হারিয়ে যাওয়া মানুষের দল, সে আগ্রহী হয়,কিন্তু ওখানে কখনো যেতে চায় না...

    সাড়ে তিন হাত দূরে বসে আছে মাইকেল, অথচ কি বিপুল দূরত্ব আসলে! মাইকেল পার্চমেন্ট উল্টে উল্টে দেখছে লেখাগুলো, মাঝে মাঝে লাইনগুলো পড়ে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাচ্ছে মিশেলের দিকে-মানে জানতে চাইছে।

    আরেকটা কবিতার পালকের মতন ছিন্ন কতগুলো লাইন উড়ে এলো মিশেলের কাছে-
    ""তারাই যথার্থ যাত্রী
    যারা চলে যায়
    কেবল যাবারই জন্য
    হাল্কা মন,বেলুনের মতন
    নিশিত নিয়তি ফেলে
    একবার ফিরে না তাকায়
    কেন তা জানে না
    শুধু চলো চলো বলে অবিরত
    তাদের বাসনা পায় মেঘপুঞ্জে উজ্জল বিন্যাস
    স্বপ্নে হানা দিয়ে যায়
    সৈনিকেরে যেমন কামান।
    অপরিবর্তনীয় দেশ
    মহাশূন্যে ইন্দ্রিয়বিলাস
    যার নাম কখনো জানেনি
    কোনো মানবসন্তান।""
    লাইনগুলো মনে পড়ছে, সঙ্গে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে মিশেল, লিজির উজ্জল সোনালী ছবি মিলিয়ে যাচ্ছে--সঙ্গে এই লাইনগুলো কমলাগোলাপী পালকে মতন ভেসে যাচ্ছে গভীর নীলের মধ্যে, মিশেলের কি হলো আজ?

    কেন এইসব পুরানো শতাব্দীপ্রাচীন কবিতা মনে আসছে মিশেলের? শত শত বছর ধরে কেন আর নতুন কবিতা লেখা হয়নি পৃথিবীতে?
    আড়াইশো বছর আগেই কেন সব থেমে গেছে? মিশেলের সময়ের সব গান আসলে পুরানো বহু পুরানো গানের রিকনস্ট্রাকশন,পুরানো কবিতার থেকে সুর বসিয়ে বানানো।
    সেই ছোট্টোবেলার পাহাড়ী বাড়ীটা মনে পড়ে মিশেলের,সেই সুন্দর চেহারার তরুণী শিক্ষিকা---পরে,বহুকাল পরে মিশেল জেনেছিলো উনি অ্যান্ড্রয়েড, ওনাকে ডিসম্যান্টল করার জন্য যখন নিয়ে যাচ্ছিলো, ঘটনাক্রমে তখন সেইখানে,সেই ওয়ার্কশপে একটা ছোট্টো প্রজেক্ট করছিলো মিশেল ...একটা ধাক্কা লেগেছিলো,কিন্তু ততদিনে মিশেল অনেক বড়ো,ওসব গোপণ করতে শিখে গেছে।
    ঐসবই কি আসলে ছোট্টো ছোট্টো ভাস্কর্য করে গেছে মিশেলের হৃদয়ে? যা নিজের কাছেও স্বীকার করেনি কোনোদিন মিশেল?
  • Milli | 131.95.121.132 | ১৬ অক্টোবর ২০০৭ ২২:১৬390948
  • কোথায় তারা যাচ্ছে? কিসের খোঁজে? ঐ লিজি অ্যাঞ্জি টিমিরা....কিসের সন্ধানে ওভাবে ছুটে যাচ্ছে ঠান্ডা অন্ধকার মহাশূন্য ভেদ করে দীর্ঘ দীর্ঘ শত শত বছরের যাত্রায়?
    আর মিশেল? সে নিজে? কিসের অস্থিরতায় বারে বারে ছুটে আসছে অতীতে? ফিরে যাচ্ছে ভবিষ্যতে? সে কি এই চেয়েছিলো মন থেকে? প্রথম ভ্রমণের সময় যে প্রবল উত্তেজনা, যে তীব্র কাঁপুনির মতন অনুভব ছিলো, তা এতবার আসা যাওয়ার পরে আর নেই, তবু কিছুতেই বুঝতে পারছে না মিশেল কেন ফিরে যাবার সময় প্রতিবার অদ্ভুত এক মোচড় লাগে মনের মধ্যে! ভবিষ্যদুনিয়ার সেই শুদ্ধ নীল আকাশ, সোনালী রোদ্দুর, সবুজ বাগানে পোষা প্রাণীদের খেলা দেখতে দেখতে বারে বারে কেন মন উতলা হয়ে পড়ে সুদূর অতীতের এই একলা মানুষটির জন্য?
    ববের কথা মনে পড়ে, সেও তো পেশা বদল করছে, প্রতিষ্ঠান বদল করছে, সেও কিছু খুঁজছে, কী খুঁজছে-কী কী কী? কী সেই সত্য যা কেউ ধরতে পারছে না? যুক্তি প্রযুক্তি জ্ঞানবিজ্ঞান কিছু দিয়েই পারছে না?
    এক ঝলক আলোর মতন কিযেন ভেসে উঠলো মিশেলের মনের ভিতরের চোখে, মগ্নচন্দ্রা রাত্রির অন্ধকার আকাশে হাজার হাজার তারা,অদ্ভুত এক নদীতীর, রাত্রির ফুলের হাল্কা সৌরভ বাতাসে...
    মাইকেল উৎসুক চোখে মেলে চেয়ে আছে, কি যেন জিগ্গেস করছে, চোখের উপরে হাত বুলিয়ে মিশেল মুছে ফেলে নিজের তন্ময়তা,জানতে চায়, ""আবার বলো মাইকেল, কি জানতে চাও, আগেরবার বুঝতে পারিনি। দু:খিত। আসলে বোধহয় ভাবছিলাম অন্য কিছু।""
    মাইকেল একটু অপ্রস্তুত, তাড়াতাড়ি বলে,""না না, তা কেন, দেবী, বরং আমিই দু:খিত।আপনার ভাবনার মধ্যে ডিস্টার্ব করলাম।""
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৭ অক্টোবর ২০০৭ ০০:২৮390949
  • এইত্তো আবার শুরু হয়েছে!
  • Milli | 131.95.121.132 | ২০ অক্টোবর ২০০৭ ০২:০১390950
  • লেখো মাইকেল লেখো মাইকেল----
    ""পাশে চলতে চলতে মেঘমানুষ জিজ্ঞেস করে,""তোমার কি ভালো লাগে, বাদামী মেয়ে?""
    বাদামী মেয়ে বোঝা নামিয়ে একটু দাঁড়ায়,চুলে পরা লাল ফুলের মঞ্জরীতে হাত বোলায় নরম করে,তারপরে কোমল দৃষ্টি মেলে তাকায় মেঘমানুষের মুখের দিকে, বলে,"" ভালো লাগে তিরতির করে বয়ে যেতে থাকা জলের শব্দ---খুশী-খুশী সবুজ ঘাস আর রোদপোহানো পাথরের পাশ দিয়ে যা বয়ে যায়, ভালো লাগে শরতের উজল দিনে ফড়িং প্রজাপতিদের লীলাময় ওড়াউড়ি দেখতে।""
    মেঘমানুষ হাসে, বলে,""কাউকে কখনো বলেছ এসব?""
    বাদামী মেয়ের উজল চোখে ছায়া পড়ে আসে, সূর্যের উপরে মেঘ এসে পড়লে যেমন আবছায়া পড়ে, তেমন। মাথা নেড়ে বোঝায় বলেনি কাউকে।
    ""কেন?"" মেঘমানুষ জিজ্ঞেস করে।
    বাদামী মেয়ে উত্তর দেয় না, চুপ করে চেয়ে থাকে দূর দিগন্তের দিকে,ঐ দূরে যেখানে আরেকটু পরেই সূর্যাস্তের হোলিখেলা আরম্ভ হবে। অনেকক্ষণ পরে দীর্ঘশ্বাস মুক্ত করে দিয়ে বোঝা তুলে নেয় ফের,চলতে শুরু করে।
    মেঘমানুষ এখনো ওর পাশে পাশে, বলে, "" তুমি কিন্তু বলো নাই গো মেয়ে যে কেন এইসব কথা কাউকে বলো নাই।""
    খুব আস্তে আস্তে বাদামী মেয়ে বলে,""কি হবে এসব বলে?""
    মেঘমানুষ হাসে,""কিছুই হবে না, তবু তো মানুষে মানুষকে বলে অনেক কথাই।""
    বাদামী মেয়ে ঝেঁঝে ওঠে,""না। এই ভালোলাগাগুলিন কখনো কাউকে বলা যাবে না, এগুলোর মর্ম আজ আর কেউ বোঝে না, বুঝতো যারা, তারা কেউ আর বেঁচে নেই। আর মর্ম না বুঝলে কি মানে থাকে এসব কথার? হাসিঠাট্টার বস্তু হয়ে যায়। একঘেয়ে ও বিরক্তির হয়ে যায় সেই শ্রোতার কাছে, যদি এই কথাগুলোর ভিতরের মানে সে হৃদয় দিয়ে বুঝতে না পারে।""
    ""ঠিকই বলেছ মেয়ে।আমি তবু বলেছিলাম,মানুষে শোনে নাই, প্রথমে ঠাট্টা করেছিলো, পরে রেগে গেছিলো, ক্ষেপে গেছিলো, তবু বলেছিলাম। শেষে ওরা সবাই মিলে আমারে মেরে ফেললো। ""
    অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সেই বাদামী মেয়ে, ওর গভীর কালো চোখের তারায় বিস্ময় ও বেদনা টলটল করে, ও তাকিয়ে দেখে মেঘমানুষের সাদা জোব্বা, সাদা লম্বা দাড়ি আর সাদা চুলের দিকে, আর সমুদ্রের ফেনার মতন সাদা ওর হাসির দিকে, ফিসফিস করে বলে,""বুড়া, কারা তোমাকে মেরে ফেললো? ওদের কি বলেছিলে তুমি?""
    সাদা দাড়ি সাদা চুলের হাসিমুখ বুড়া বলে,""ওদের এই তো বলেছিলাম, বলেছিলাম নদীরা তোমার বোন, পাহাড়েরা তোমার ভাই, গাছ ও পশুপাখী তোমার আত্মীয়, এই পৃথিবী তোমাদের মা----ওদের ভালোবেসো, ওদের যত্ন কোরো।ওরা মানলো না, ওরা বললো, না না, আমরা অনেক সোনা চাই, আমরা অনেক হীরামানিক চাই, অল্পে আমাদের সন্তুষ্টি নেই। আমরা পৃথিবীর বুক খুঁড়ে তুলে আনবো সব সোনা, সব হীরা মানিক। বুড়া তোমার কথা আমরা মানিনা, তোমাকে কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ভাসিয়ে দেবো নদীর জলে।"" বুড়া বলতে বলতে তাকায় নীচের নদীর দিকে, তিরতির করে জল বয়ে যাচ্ছে পাথরে পাথরে কথা বলতে বলতে।বাদামী মেয়ে বুড়ার মুখ থেকে চোখ সরায় না,ওর গভীর কালো চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রু ঝরে পড়তে থাকে,সে মোছে না, পশ্চিমের সূর্য সেই অশ্রুতে আবীর রঙ ধরিয়ে দেয়। আকাশের মেঘে মেঘে কমলা গোলাপী লাল রঙ ছড়িয়ে পড়ছে।""
    মাইকেলের কলম খসখস খসখস করে লিখে চলছে শক্ত খসখসে সাদাটে বাদামী পাতায়,মোমবাতির শিখা ঘিরে আলোর মায়া গোলকের মতন আভা, মিশেলের স্বপ্নমগ্ন চোখে ফেনায়িত তরঙ্গমালার মতন ভাসছে ডুবছে ভাসছে ডুবছে সপ্তদ্বীপা পৃথিবী,পলকে পলকে শতাব্দী কেটে যাচ্ছে।
  • Milli | 131.95.121.132 | ২০ অক্টোবর ২০০৭ ০২:৪৬390951
  • বনবিতানের ছায়ায় বাদামী রঙ ঝরাপাতার স্তূপের উপরে বসে আছে মানুষটা---ওর রুক্ষ্ম চুলে ধুলোটে রঙ, ওর ছেঁড়া জোব্বায় দূরবিসর্পী পথের ইতিহাস লেগে আছে ধুলো কাদা কাটাকুটোর নকশা হয়ে। কাঠকুটো জড়ো করে আগুন জ্বালালো সে, ছোট্টো ছোট্টো ফুলকি উড়ে যাচ্ছে....
    আগুনের মাঝখানে সে নামিয়ে দিলো একটা শুকনো ডাল, খয়েরী ঝোলা থেকে বার করে আগুনে দিলো একমুঠো ধূপ, সুগন্ধ উড়ে যাচ্ছে হেমন্তসন্ধ্যার ঘন বাতাসে....
    মানুষটার সোনালী চোখের তারায় আলো জ্বলছে,সে দেখতে পাচ্ছে ঘূর্নীবাতাসে ওড়া অসংখ্য মুখ, হাল্কা নরম কচি মুখ, ঝামাটে হয়ে যাওয়া প্রবীণ মুখ, শিকারী বাজের মতন নিষ্ঠুর মুখ, শিমূলতুলোর মতন কোমল মুখ, মুখের সারি ভেসে যাচ্ছে অন্তহীন-হঠাৎ সে দেখলো কবরখানা, শক্ত বরফে ঢাকা আদিগন্ত বিস্তৃত ভূমি, পুরোটা জুড়ে শুধু কবর আর কবর,যতদূর চোখ যায়... শুধু চ্যাটালো চৌকো চৌকো পাথর, কোথাও কোথাও শুকনো ফুল, অনন্ত মৃত্যুপ্রান্তরে কোথাও কেউ নেই, কেউ না কেউ না... জনপ্রাণী নেই কোথাও,না না, ঐ তো কারা আসছে, তীব্র লাল রঙ ওর চোখ ঝলসে দিলো হঠাৎ,অযুত নিযুত মানুষ হেঁটে আসছে,টকটকে লাল পোষাক ওদের সবার, সে মুখ দেখতে চায়,ওদের মুখ দেখতে চায়, ওরা কারা, ওরা তরুণ না প্রৌঢ় না বৃদ্ধ, ওরা নর না নারী,ওরা বাবা না মা না পুত্র না কন্যা? ওরা কি কারো ভাই কারো বোন? কারুর মুখ সে দেখতে পায় না, শুধু অনন্ত লালরঙ মিছিল চলে তুষারপ্রান্তর জুড়ে, অন্তহীন স্পন্দিত রক্তের মতন...
    জোব্বাপরা লোকটি আগুনে আরো কাঠ দেয়, আরো কাঠ দেয়,তারপরে ঝোলা খেতে বার করে লম্বা হাড়শুদ্ধ এক দীর্ঘ মাংসখন্ড, শক্ত আর শুকনো, সে আস্তে আস্তে আগুনে ঝলসায় সেটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে,ক্ষুধার্তের নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতে থাকে দগ্‌ধ মাংসের রুচিকর ঘ্রাণ....
    সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ়তর এখন, জোনাকিরা জ্বলছে আগুনের ফুলকির মতন,কুলায়প্রত্যাশী পাখিরা কিচিরমিছিরকরে নিচ্ছে রাত্রির আশ্রয়ে ঘুমিয়ে পড়ার আগে...
    মাংসে কামড় বসায় মানুষটা, আরামের একটা শব্দ করে,আগুনের আভায় সে দেখে সোনালী ঈগল ওড়ে রোদ্দুরে....
  • Milli | 131.95.121.132 | ২০ অক্টোবর ২০০৭ ২৩:৫০390952
  • সূর্যনগরীতে ভোর হচ্ছে, সৌধকিরিটিনী নগরী সোনালী আলোয় অভিষিক্তা হচ্ছে,নগরীর সীমার বাইরে, বেশ কিছু দূরে একদল সৈনিক অস্থায়ী শিবির বানিয়ে আছে,মাত্র গত রাত্রে এখানে এসে পৌঁছে ওরা।আর একটুখানি, আর মাত্র একটুখানি.... তাদেরই কয়েকজন সকালে বেরিয়ে এসে তাকিয়ে আছে পুবের দিকে,সূর্যনগরীর আলোয় ধোয়া সৌধমালা দেখে অবাক ও মুগ্‌ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই তরুণ কজন---দীর্ঘ অভিযাত্রায় তাদের পোষাক ছিন্ন ও ধূলিলাঞ্ছিত, জুতার অবস্থা আরো খারাপ, মুখে ক্লান্তি অবসাদ আর স্নানবিহীন দীর্ঘদিনের ধুলাময়লার প্রলেপ। তবু, আজকের এই নিটোল ভোরখানি শিরশিরে হাওয়া আর আলো নিয়ে ওদের ছুঁয়ে যাচ্ছে,মনে পড়িয়ে দিচ্ছে ফেলে আসা স্বদেশ, প্রিয়জনদের...সেখানেও বুঝি ভোর হচ্ছে বা হবে...সেখানেও বুঝি এমন সোনার আলোয় বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে তাঁদের প্রতীক্ষারতা প্রিয়তমারা... ওদের ঘন রঙের স্কার্ট আর হাল্কা রঙের টপের উপরে,মাথায় বাঁধা রেশমী রুমালের উপরে, টলটলে নীল চোখের উপরে বুঝি এমনি করেই পড়েছে পুবের আলো...কবে যুদ্ধজয় করে ফিরবে তাদের প্রিয়েরা,ওরা মাল্যচন্দন নিয়ে সম্বর্ধনা জানাবে বিজয়ী বীরেদের জন্য...
    কিন্তু.... হঠাৎ আলো কমে আসে,হঠাৎ শীত বাড়ে, হঠাৎ সমস্ত নীল আকাশখানি পাঁশুটে বরণ হয়ে যায়, হু হু হু হু শোঁ শোঁ শোঁ করে এসে পড়ে বছরের প্রথম প্রচন্ড তুষারঝঞ্ঝা... সঙ্গে দ্বিতীয় আরেকটি ঝড়ের মতন অবরুদ্ধ সূর্যনগরীর সৈনিকেরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে অগ্রসরশীল এই আগ্রাসী বাহিনীর উপরে...

  • Milli | 131.95.121.132 | ২২ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:০৯390953
  • কত নক্ষত্র জ্বলেছে নতুন, নিভে গেছে আরো কত। পৃথিবীর ঘুমেলা চোখে এসে লেগেছে বহুদূরের পুরাতন কত আলো। তারার মালা দূর থেকে আরো আরো দূরে ছড়ানো মণিদীপের মতন---নক্ষত্রসরণী বেয়ে চলে গেছে কত কত কত দূরে, অনাদ্যন্ত কাল বয়ে যাচ্ছে অতন্দ্র।
    ভেজা বালির তীররেখা পার হয়েই জল-শান্ত নদীটি বয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে,আজ বাতাস খুব শান্ত, আজ আকাশও খুব শান্ত-তারাগুলিও যেন দপদপ করেনা, পাছে এই নিসর্গব্যপ্ত শান্তি ছিঁড়ে যায়!
    মেয়েটি ভেজা বালুর উপরে পা ফেলে ফেলে একদম জলের ধারে এসে দাঁড়ায়,এক পা বাড়িয়ে পায়ের পাতাটি জলে ডোবায়। ঐ ঠান্ডা শান্ত নদীটির গর্ভ কেমন? মাতৃগর্ভের মতন উষ্ণ কোমল আশ্রয় কি মিলবে না সেখানে?
    আস্তে আস্তে বালুকাময় তীরে এলিয়ে বসে পড়ে মেয়েটি, তারার আলো রাত্রির কালোয় মিশে গেছে বিন্দু দুধের মতন...ঐ যে ঐ উপরে জ্বলছে বড়ো লাল তারাটা...ওটাই কি মঙ্গলগ্রহ? এত লাল কেন? সেখানে কি যুদ্ধের দেবতা রাত্রিদিন শুধু লাল রঙের আবীর ছড়ায়?
    শ্মশানভূমিতে গড়াগড়ি যায় হাড়ি,কলসী,শেয়ালেরা ঘুরে ফেরে...তারার আলোয় ওদের চোখ জ্বলে...আজ একটাও চিতা জ্বলছে না...শবহীন শ্মশান আজ...
    মেয়েটি গুন্‌গুন্‌ করে, সে গান গাইতে পারতো এককালে...সে যে কবে,কোন্‌ বিস্মৃত অতীতে...আজ শ্মশানে এসে কেন গান মনে পড়ে?
    শ্মশান ভালোবাসিস বলে/শ্মশান করেছি হৃদি/শ্মশানবাসিনী শ্যামা/নাচবি বলে নিরবধি...
    আস্তে আস্তে গুন্‌ গুন করতে করতে ভুলে যাওয়া সুর ওর গলায় উঠে আসে, দূরে গভীর অন্ধকারে আগুন, ঐ বুঝি একটা চিতা জ্বললো আবার, শব কার? কোনো পুরুষের না নারীর? সে কি বৃদ্ধ হয়েছিলো জরাজীর্ণ হয়েছিলো নাকি তপ্ত যৌবনের দিনে গভীর অভিমানে স্বেচ্ছামরণ বরণ করে চলে গেলো?
    হৃদয় শ্মশান হয়ে গেলে সে জীবনেরই বা মানে কি?
    ""চিতাভস্ম চারিভিতে রেখেছি মা আসিস যদি....""
    সে গান থামিয়ে উঠে দাঁড়ায়, শীতল কালো জল ডাকছে ওকে, একদিন ঐ শীতল নীল অন্ধকার থেকেই কি এসেছিলো সে? চোখ মেলেছিলো আলো আর লোকভরা কোলাহল কলরবে ভরা এই দুনিয়ায়? ভুলে গেছিলো সেই নীলাঞ্জনঘন স্নিগ্‌ধ তারাময় অন্ধকার? সেই অনন্ত বিভাময় বিভাবরী?
    জলের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো সে, সহসা কালো আকাশে তীব্র আলো জ্বেলে পিন্ডাকারে উল্কা জ্বলে উঠলো....
    থেমে গেলো সে, আস্তে আস্তে পিছিয়ে আসতে থাকলো, উল্কার আলোয় সে সহসা অন্ধকার ভেদ করে পথ দেখতে পেয়েছে...
    ঐ জলে না, ঐ ঠান্ডা কালো নদীর গর্ভে না, অনে-এ-এ-এ ক দূরে,তীব্রোঙ্কÄল হিরন্ময় অগ্নি জ্বলে উঠেছে....ঐ আগুনের উজল গর্ভে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে ওকে...
  • Milli | 131.95.121.132 | ২২ অক্টোবর ২০০৭ ০৭:৪৪390954
  • মাইকেলের চোখ বিস্ফারিত,হাত কাঁপছে,তাও লিখে চলেছে খসখস করে যত তাড়াতাড়ি পারে।
    মিশেল থামতে সে বিস্ময়ে বড়ো বড়ো হয়ে যাওয়া চোখ মিশেলের চোখে স্থাপন করে বলে,""এসব কি? এরা কারা? ঐ বুড়ো আর বাদামী মেয়ে,ওরা কারা? ঐ ছেঁড়া জোব্বা পরা মানুষটা জঙ্গলের মধ্যে... সেই বা কে? ঐ সূর্যনগরী কোথায়? শ্মাশানে ঐ মেয়ে কে?""
    মিশেল হাল্কা হাসে, বলে,""ওরা কেউ না মাইকেল,ওরা শুধু বিরাট নাটকের কুশীলবমাত্র।ওদের কখনো নাম থাকে, কখনো নাম থাকে না,ওদের কখনো চেনা যায়, কখনো যায় না। একেই আমরা বলেছি আমাদের ইতিহাস,অনন্ত ঘটনামালা ও তার অনন্ত সম্ভাবনাতরঙ্গকে ছোট্টো ছোট্টো অক্ষরে শব্দে আঁকিবুঁকিতে ধরে রাখার স্পর্ধায়। যা অনন্ত তাকে কেমন করে রেকর্ড করা যাবে? তবু নাকি করা যায়,ওঁরা বলেন পথ সমাকলন,সব কেটেকুটে গিয়ে নাকি থাকে মাত্র কয়েকটা সম্ভাবনাই.... কে জানে সেইসব বেঁচে যাওয়া সম্ভাবনার কোন্‌টায় এসেছি আমি..."",মিশেল হাসতে থাকে,হাত বাড়িয়ে মাইকেলের হাতের উপরে। রাখে,বলে,""মাফ করো মাইকেল,দেখতে ইচ্ছে করছে তুমি সত্যি তুমি নাকি। কিজানি হয়তো দেখছি কোনো ত্রিমাত্রিক ছবি,আসলে তুমি হয়তো নেই।""
    মাইকেল হাসতে চেষ্টা করে,পারে না,আস্তে আস্তে বিড়বিড় করে কিজানি বলে,ওর ত্রাসবিমূঢ় গলার শব্দ থেকে অর্থ বুঝতে পারে না মিশেল।

  • Tim | 128.173.157.36 | ২২ অক্টোবর ২০০৭ ২১:১৬390956
  • দারুণ হচ্ছে গল্পটা।
  • Milli | 131.95.121.132 | ২৩ অক্টোবর ২০০৭ ১৯:৪৬390957
  • অন্ধকার টানেলের মধ্যে হেঁটে যাচ্ছে তিনজন মানুষ---একজন বেশ বয়স্ক, শক্ত কোঁচকানো মুখ, চুলগুলো ধূসর, ফর্মাল পোশাক, আস্তে আস্তে ভারি পায়ে এগোচ্ছেন, ভাবভঙ্গীতেই কর্তৃত্বের ভাব প্রবল, বোঝাই যায় এনার পজিশান খুব হাই। পাশে পাশে তরুণ সহকারী, তার মুখ নরম, চুল বাদামী,হাল্কা টিশার্ট আর সুতো-ওঠা জিন্‌সে সে অনেক ইনফর্মাল।
    তৃতীয় ব্যক্তি মধ্যবয়সী, সে অনভ্যস্ত ও সতর্ক,প্রতি পদক্ষেপেই বোঝা যাচ্ছে সে নতুন অতিথি, এ জায়গা আগে কখনো দেখেনি।বিস্ময় লুকাবার চেষ্টাও অবশ্য সে করছে না।
    সে বিরাট টানেল,অন্ধকার,শুধু এই তিনজন লোক চলার সময় ছাদ ও দেয়ালের আলোগুলো জ্বলে জ্বলে উঠছে সাময়িকভাবে,ওরা টানেলে আরেকটু এগিয়ে গেলেই সেগুলো নিভে গিয়ে অন্য আলোগুলো জ্বলে উঠছে, অদ্ভুত যাদু জগতের মতন লাগছে এদের নি:শব্দ চলা।
    মাটির অনেক গভীরে এই মানবনির্মিত টানেল, মাইলের পর মাইলে খুঁড়ে তৈরী হয়েছে হাজার হাজার মানুষের চেষ্টায়, সত্যকে খুঁজতে গেলে কখনো কখনো পাহাড় সরাতে হয়। নয় কি?
  • Milli | 131.95.121.132 | ২৩ অক্টোবর ২০০৭ ২৩:৩৮390958
  • তুষারাবৃত শীতস্তব্ধ অরণ্য,বেশীরভাগ গাছই পত্রশূন্য,উলঙ্গ তপস্বীর মতন সমাধিস্থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,নরম তুষারে নতুন করে ঢেকে যাচ্ছে। দুপুর থেকেই নতুন করে তুষারপাত শুরু হয়েছে,আকাশ ধূসর,কালচে,একটুও ফাঁকা নেই কোথাও,পুরোটা যেন কম্বলে ঢাকা।
    চিরহরিৎ পাইন গাছেরা দাঁড়িয়ে আছে তুষারের নক্‌শা সর্বাঙ্গে নিয়ে, সূচের মতন সরু পাতার গোছায় গোছায় তুষার।
    কোথাও কোনো শব্দ নেই, প্রাণী নেই, শীতে জঙ্গলের পশুপাখীরা দূরে কোথাও চলে গেছে, পাখীরা পরিযানে, সরীসৃপেরা ও উভচরেরা শীতঘুমে... হয়তো এখনো আছে পাঁশুটে নেকড়েরা... হয়তো দূরে কোথাও জটলা পাকাচ্ছে...
    একদল মানুষ হেঁটে এলো শীতের বনে, পাঁচজন লোকের হাতে অগ্নেয়াস্ত্র, বাকী তিনজনের কোমরে শেকল,হাত পিছমোড়া করে বাঁধা।
    জঙ্গলের মধ্যে গর্ত করা,এখানে আগেই লোক এসেছিলো, সেই গর্ত নরম তুষারে ঢেকে যাচ্ছে, বন্দীদের হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে গর্তের কাছে দাঁড় করানো হলো, অস্ত্রধারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী কর্তৃত্ব ওয়ালা লোকটি অত্যন্ত রুঢ় ভাবে এদের অপরাধের বিবরণ দিয়ে বোঝালো কেন মারা হচ্ছে, এরা মাথা নেড়ে স্বীকার করে নিচ্ছে, এদের ক্লান্ত হতাশ মুখে জীবনের চেয়ে মৃত্যুর আকাংক্ষার রঙই বেশী করে ফুটে উঠেছে।
    নৃশংস নরঘাতক দস্যু শাসক সেজে তাদের জাতির শুভশক্তিকে প্রতিদিন পীড়িত করে চলেছে...এরা শেষ চেষ্টা করেছিলো ঐ দানবকে গুপ্তহত্যার... সফল হয় নি, আজ সকালে এরা ধরা পড়ে গেছে।
    তিনজনে তিনজনের মুখের দিকে তাকালো,সবচেয়ে যার বয়স কম,তাকে বাকী দুজন কপালে চুমো খেলো।দুহাত বাড়িয়ে ছেলেটি ওদের জড়িয়ে ধরলো।
    তারপরেই গুলির শব্দ...দেহ তিনটি গড়িয়ে পড়ে গেলো গর্তে।এইবারে মাটি দিয়ে ঢেকে দিচ্ছে ওদের।
    মাটি মাটি মাটি...পৃথিবী...পৃথিবীর আলিঙ্গন...ধুলা হতে এসেছিল তারা,ধুলাখলা খেলেই বড়ো হয়েছে,ধুলাতেই ফিরে গেলো...ঐ যে অস্ত্রধারীরা ফিরে যাচ্ছে...ওরাও একদিন তো এই মাটিতেই ফিরে যাবে, এই দুই দলের আবার দেখা হবে হয়তো কোনোদিন....

  • Milli | 131.95.121.132 | ২৮ অক্টোবর ২০০৭ ০৬:১৬390959
  • আবারো তুষার, এখানে সাদা হয়ে থাকা মাঠ,আদিগন্ত খোলা,দুই তরুণ দাঁড়িয়ে আছে,শীতের পোশাকে ওদের সর্বাঙ্গ ঢাকা---অদ্ভুত এক বিরাট যন্তর ওদের সঙ্গে,হাল্কা কাপড়,রড এসব দিয়ে তৈরী অদ্ভুতদর্শন জিনিসটা চুপ করে পড়ে আছে তুষারাবৃত মাঠে।পরিচিত কিছুর সঙ্গে তুলনা দিতে গেলে বিরাট দৈত্যাকার কোনো ঘুড়ির সঙ্গেই তুলনা দিতে হয়,কিন্তু তাও নয়,যেন দোতলা ঘুড়ি,সমান্তরাল পাতগুলো হাল্কা হাল্কা রড দিয়ে দিয়ে জোড়া।
    অনেক পথ ট্রেনে নৌকায় আবার ট্রেনে আবার নৌকায় পাড়ি দিয়ে এই অদ্ভুত যন্তর যথাসম্ভব ভাঁজ টাজ করে নিয়ে এখানে এসেছে দুই তরুণ। ভ্রমণক্লান্তি লেগে আছে ওদের চোখেমুখে,কিন্তু উপায় ছিলো না,সব দিক বিবেচনা করে এখানেই সবচয়ে ভালো হবে বলে মনে হয়েছে ওদের।
    এখন আস্তে আস্তে ভাঁজ গুলো খুলছে দুজনে মন দিয়ে,এরা দুই ভাই,বছর চারেকের ছোটো বড়ো।একসঙ্গে কাজ করে ওরা।
    ছোটোভাই দাদার দিকে তাকিয়ে হাসলো,ক্লান্তি সত্বেও উজল লাগলো সে হাসি। কতদিন ধরে এই দিনের স্বপ্ন দেখছে তারা!
    সেই ছোট্টোবেলা যখন বাবা ওদের দিয়েছিলেন একটা খেলনা উড়নযন্ত্র, কাগজ,বাঁশের কঞ্চি,কর্ক এসব দিয়ে বানানো,ওরা ওটা হাতে পাওয়ার পরে সেই যে খেলতে শুরু করেছিলো ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত খেলেছিলো,ভেঙে গেলেও হাল ছাড়ে নি,দুজনে চেষ্টা করে নিজেরাই সারিয়েছিলো ওটাকে....
    সে কবেকার কথা, সেই ছোট্টো খেলনাটা ওদের দিকে তাকিয়ে হাসছে স্মৃতির পরদা সরিয়ে...আরো অনেক দূরে, সেই খেলনার যিনি নির্মাতা,কুয়াশায় মিশে আছে তার দেহ,ঐ মহাসমুদ্রপারে অন্য দেশে অনেক পুবের দিকে...সে চলে গেছিলো,কেউ তাকে বুঝলো না এই অভিমানে.... সে ফিরে আসছে,আগে আগে এই দুই ভাইয়ের বাবা,সাদাসিধে এক যাজক,দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতো...সে আসছে ঐ ছোট্টো খেলনাটা হাতে নিয়ে বাড়ীর দিকে,এই দুইভাই দৌড়ে যাচ্ছে বাবাকে রিসিভ করতে...
    স্বপ্নাচ্ছন্নতা ভেঙে সচল হয়ে ওঠে আবার ওরা,ঠিকঠাক করে খুলে দিতে থাকে,হাওয়া আছে অনেক,সমুদ্রের পরাক্রান্ত হাওয়া....ডানাতে হাওয়া ধরে যাবে,যাবে,যাবেই।

  • Milli | 131.95.121.132 | ২৯ অক্টোবর ২০০৭ ০৪:২৪390960
  • এবারে মরুভূমি,আদিগন্ত বিস্তৃত মরুভূ। কিছু বাদামী বাদামী পাহাড় এলোমেলো ছড়ানো, গাছপালা বলতে বেশীরভাগই ক্যাকটাস জাতীয়,কোনো কোনো ক্যাকটাস এতই বড়ো এতই উঁচু যে দেখলেই ভয় লাগে।
    তীব্র প্রখর গ্রীষ্ম,তাপমাত্রা এমনিতে বেশ উঁচুতে থাকে,তবে কদিন ধরে প্রবল বর্ষণ চলছে, সেইজন্য তাপমাত্রা কিছু কম।
    গাড়ীর পর গাড়ীর সারি চলেছে মরুভূমির পথ দিয়ে,দূরে দূরে কোনো একটি বিন্দুর দিকে চলেছে,তারের পর তার পাতা হয়েছে অনেকদিন ধরে,সাইটে চলে গেছে আসল বস্তু,ঠিকঠাকও স্ক্রু ট্রু এঁটে দেওয়া হয়েছে গ্যাজেটসমূহে, আজকে সকালে আসল পরীক্ষা।
    এখানে একটা ক্যাম্প,আরো তিনটে ক্যাম্প আছে,সব মিলে চারটে,গ্রাউন্ড শূন্যের উত্তরে দক্ষিণে পুবে পশ্চিমে। আকাশ মেঘে ঢাকা,প্রবল বৃষ্টি চলছে, সারারাত ধরে,সকালে বৃষ্টি না থামলে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হবে।
    এই ক্যাম্পে বেশ অনেক লোক, এরাই প্রধান নির্মাতা, কিন্তু এরাও নিশ্চিত নয় আদৌ পরীক্ষা সফল হবে কি হবে না সে নিয়ে।
    রেডিও চলছে, এরা নিজেদের মধ্যেও স্বাভাবিক কথাবার্তা চালাতে চেষ্টা করছে কিন্তু টেনশান ভাঙে না। এরা জানে না কি হবে বিস্ফোরণে, হয়তো বাতাসে আগুন ধরে যাবে, হয়তো দুনিয়া শেষ হয়ে যাবে।হয়তো কিছুই হবে না, বিস্ফোরণই হয়তো হবে না।
    জটলা থেকে একটু দূরে জানালায় মুখ রেখে বাইরের অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে ভেজা অন্ধকারের দিকে চেয়ে আছে এক তরুণ,অন্ধকারে দেখা যায় না পথ, ঐ পথ দিয়েই তো কদিন আগে জিনিসটা নিয়ে গেলো ওরা,পথটাকে ওরা জানে, পথটার নাম মৃত্যুর অভিযাত্রা।
    ওরা যায়,ওরা ফিরে আসে,ওরা কথা বলে,ওরা আরো কত কি করে....ওরা এসবের নাম দেয়, ওরা ওকে কত কথা জিগায়... সে কে? সে এদের সঙ্গে কেন? তার কি এখানে থাকার কথা ছিলো?
    সে তার যে সব ছিলো তাকে নিয়ে গেলো কোন্‌ পথে কে? সে কেন আর দেখতে পেলো না? এইতো মাত্র কদিন আগে,কদিন আগেও ছিলো সে, ও দেখতে গেছিলো, এইতো এখনো তার হাতের মধ্যে ওর হাত দুখানা...ওর নীল চোখ দুটো আস্তে আস্তে কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে আসছে,ও চলে যাচ্ছে... কেন কেন কেন? আমাকে এখানে রেখে কেন তুই কেন তুই কেন তুই একা একা চলে যাচ্ছিস?
    হঠাৎ চমকে ওঠে সে,কে যেন ওর ঘাড়ে টোকা দিয়েছে! পিছনে ফিরে সে অবাক,ওর সহকর্মী আরেক তরুণ,সে ওকে সানস্ক্রীন লোশন অফার করছে,নিজে সে মেখেছে খাবলা খাবলা।সবাইকেই ওরকম দিয়েছে,লোকে আরো ঘাবড়ে গেছে এই শেষরাত্রে সানস্ক্রীন পেয়ে,একেই টেনশানে আধাসেঁকা সব,বাকী আছে শুধু এই একজন। সে জটলার বাইরে জানালার কাছে আলাদা হয়ে ছিলো,ওর ঘটনা জানে বলে কেউ ওকে বিরক্ত করে না,কিন্তু এখন হঠাৎ এই সানস্ক্রীন...
    সে হাত বাড়িয়ে নেয়,হাসে,মুখে মাখতে থাকে।হাজার সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করতে পারবে কি এই এক সূর্যের সানক্রীন?
    অবশ্য তার কিছুই এসে যায় না, তার যে সব ছিলো, সে যে ওকে ফেলে গেলো!

  • Milli | 131.95.121.132 | ৩০ অক্টোবর ২০০৭ ০৪:১৯390961
  • থেমে গেছে যুদ্ধ কবে, কিংবা হয়তো থামেনি, কোথাও না কোথাও চলছেই চলছেই।
    এখানে শান্তি,দুধারে মহাসমুদ্র ঘেরা এই মহাদ্বীপে আপাতত শান্তি। এখানে মঞ্জরিত হয় ডাকহরিণের চোখ।
    ঊদ্ভিদবিদ্যাবিভাগের বাগানে একটা সুন্দর সবুজ গাছ, ওয়াইল্ড বাক-আই। কেন এমন নাম কেজানে, ভাবতো সে মেয়ে আসা যাওয়ার পথে গাছখানা দেখে। মধ্যগ্রীষ্মে মঞ্জরিত হলো গাছখানা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা অনেক ফুল মিলে মিলে একখানা গুচ্ছ। সুন্দর দেখতে। একদিন দুপুরের বৃষ্টির পরে আকাশ পরিষ্কার হয়েছে সবে, বেরিয়েছে সে একটু, বাগানের পাশে এসে থমকে দাঁড়ালো সে, শুভ্র পুষ্পগুচ্ছটি নুয়ে পড়েছে, ডগাটা আবার উঠেছে উপরের দিকে, ফুলের গুচ্ছ মাঝে সবচেয়ে বেশী ঘন, স্থূল, গঠনটি দেখে চমকে উঠললো সে, ঠিক যেন সুন্দর একখানা চোখ। এই দেখেই কি নাম দিয়েছে হরিণের চোখের সঙ্গে মিলিয়ে?

    বিকেল থেকে সারা সন্ধ্যে সে কেবল কাঁদছে, ঘরে ফিরার পথ জুড়ে ঝাপসা সব, যতবার চোখ মোছে, ততবার সব ঝাপসা হয়ে যায় জলে। ফেরার পরেও ঘরে একা একা বসে কেবল কাঁদছে, তীব্র কষ্টের সঙ্গে এক অদ্ভুত অপরূপ শান্তি ঘিরে ধরছে ওকে। কতকাল সে কান্নার আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত ছিল! কতকাল সে কাঁদতে পারেনি। অত বিলাসিতার সুযোগ কোথায় ছিলো সেই দৈত্যপুরীতে?

    জানালার বাইরে বৃষ্টি নামে তপ্ত দীর্ঘ দিন শেষে, কতদিন ঐ শুকনো মাটিতে বৃষ্টি হয় নি! এতদিন পরে প্রথম বৃষ্টি নেমেছে, অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ উঠছে মাটি থেকে। সে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়, চারিদিক থেকে বৃষ্টিস্নাত বনগন্ধ ছুটে আসে, বৃষ্টির শব্দেরা ছুটে আসে। শান্তির অশ্রুতে ভরে আছে ওর দুই চোখ, বুক জুড়িয়ে দিচ্ছে হাওয়া। ""বাণী নাহি তবু কানে কানে/ কি যে শুনি...""

    একদিন যারা হৃদয়ের কাছে ছিলো, তারা আজ কোথায়? ঘুরতে ঘুরতে চলে গেছে দূরে কোথায়..... সেই যে মহাভারতে না অন্য কোথায় বলেছে সংসারে মানুষের সঙ্গে মানুষের দেখা হয় যেন মহাসমুদ্রে দুইখানা কাঠের টুকরোর ঠেকাঠেকি হয়, তেমনি, অতি অস্থায়ী অতি ক্ষণিকের এই মিলন, তবু কেন হৃদয়ে সুখদু:খের ভাষ্কর্য করে যায় কাল? কেন এত প্রিয়জনবিচ্ছেদ ও অপ্রিয়সঙ্গের দু:খ জীবনের পর্বে পর্বে? অথচ এই দু:খদহন না থাকলেও জীবনে কিছুই থাকে না, এই অবিরাম না থামা অশ্রু তো ওর সেই শামুকের খোলা ভেঙে যাবার দু:খই। এই ভেঙে যাওয়ায় এত বেদনা, এত আনন্দ এত শান্তি!

    ঘরে এসে শুয়ে পড়ে ও। ওর মনে পড়ে.... অনেকদিন আগে... সে অসংখ্য রঙীন ঘুড়ি ওড়া এক বিকেলের আকাশ, কোমল হাওয়া বইছে, ঘুড়িতে ঘুড়িতে কাটাকুটি খেলা, মাঝে মাঝেই ভো-ও-ও-কাট্টা করে উঠছে কারা, একদল বাচ্চাছেলে লগি নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছে কাটাঘুড়ি ধরবে বলে। আস্তে আস্তে রোদ পড়ে আসে, ঘুড়ি কমে যায়, যেতে যেতে এখন মাত্র দুইটা ঘুড়ি আকাশে, সন্ধ্যা হয়ে আসছে,দিগন্তের কাছে উজল টিপের মতন সন্ধ্যাতারা ফুটে উঠতেই শাঁখের শব্দ জেগে ওঠে বাড়ীতে বাড়ীতে। প্যাঁচ লেগে শেষ ঘুড়ি দুটোর মধ্যে একটার লখ কেটে যায়, আঁধার আকাশে সাঁঝের বাতাসে সেই ঘুড়ি কোথায় পাড়ি দেয় একা একা, কেউ নেই ওকে ধরার জন্য, সকলেই এতক্ষণে ঘরে ফিরে গেছে।
    আকুল আশ্রুধারা ওর গাল,মুখ,বালিশ সমস্ত ভিজিয়ে দিতে থাকে, সেইসব কিশোর কিশোরীদের ফুলের মতন অমলীন মুখগুলো ভেসে উঠতে থাকে, সব মুখে হাসি, চোখে খুশীর ঝিলিক, ওদের কেউ ধরতে পারেনি, কালের হস্তাবলেপ পড়ার আগেই ওরা ছবি হয়ে গেছে। ওর বন্ধুরা, অকালে বিদায় নেওয়া সেই বন্ধুরা, ওদের বিদায় কি কালের ছেনিহাতুড়ীর চিহ্ন হয়ে ভাস্কর্য করেছিলো বুকে? ঐ অত আবরণের আড়ালে কিছু বুঝতেই সে পারেনি? নির্বিকারে পার হয়ে চলে এসেছে ষোলো থেকে সতেরো, সতেরো থেকে আঠেরো করতে করতে সমস্ত টীন এজ, প্রথম যৌবন….
    এতদিন পরে সেই রুদ্ধনদী মুক্ত করলো দুখানা কথা? সোনর চাবি হয়ে খুলে দিলো দুর্গম দুর্গের দরজা?
  • Milli | 131.95.121.132 | ৩০ অক্টোবর ২০০৭ ০৪:৫০390962
  • এখানে একটা খাঁড়িমতন,সমুদ্রের সঙ্গে যোগ আছে এমন খাঁড়ি,একের পর এক জলজান ভুস ভুস করে ভেসে উঠছে জলের তলা থেকে,শত শত মানুষ জল পার হয়ে তীরের বালিতে উঠছে, এদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, এরা ডুবো-জলপথে এসেছে সবাই, এর সংকেত দিলেই ছত্রীবাহিনী নামবে উপর থেকে।
    প্রথম দল যারা কিনা এখন সমুদ্রতীর থেকে অনেকটা ডাঙার দিকে উঠে গেছে প্রায় বিনা বাধায়, তারা রেডিও কমুনিকেশানের চেষ্টা করছে, ডা হে টি টি, ডা হে টি টি, শুনতে পাচ্ছ? শুনতে পাচ্ছো গুণ্‌গুনি পাখি? শুনতে পাচ্ছ?
    এই প্রথম দলের পরে আরেক দল, এরা এখনো বেলাভূমিতে, এদের মধ্যে নীল চোখের প্রায়-কিশোর একটি ছেলে, ক্লান্ত হাতে অগ্নেয়াস্ত্রখানা ভারী লাগছে ওর, কিন্তু ক্লান্তি ভুলে অবাক হয়ে সে দেখছে চারিপাশ, নীল আকাশ, নীল সমুদ্র, সোনাবালুচর। ছোট্টোবেলার ছবিতে গল্পের বইয়ের মতন,বন্ধুর সঙ্গে একসঙ্গে পড়তো সে, আহা বন্ধুটাও যদি আজকে সঙ্গে থাকতো!
    সেই বা কতক্ষণ থাকবে? ঐ যে পাহাড়, ঐ যে অরণ্য, আড়ালে আড়ালে হয়তো এগিয়ে আসছে তারা, কয়েকটা অব্যর্থলক্ষ্য গুলি, নশ্বর মানবদেহগুলো ছড়িয়ে পড়ে থাকবে বালিতে।
    অথচ পৃথিবীটা কি অপরূপ সুন্দর! জীবন কি মায়াময়! আকাশ আজকে কি নীল,কি নীল, ঐ উপরে সমুদ্রচিলেরা উড়ছে।
    অস্ত্র কাঁধে ঝুলিয়ে ভেতরের পকেট থেকে সে ছবি বার করলো একখানা, ছবিখানার উপরে মুখ নামালো, যদি ফিরে যাই দেখা হবে, যদি না ফিরি....
    ডা হে টি টি, ডা হে টি টি, ডা হে টি টি....শুনতে পাচ্ছ, শুনতে পাচ্ছ গুণগুণে পাখি? শুনতে পাচ্ছ আমায়?
  • Milli | 131.95.121.132 | ৩১ অক্টোবর ২০০৭ ০০:৪৯390963
  • ডার্করুমে চুপ করে বসে আছে সে, একেবারে অবাক অবস্থা,কি করবে কিছুই না বুঝতে পেরে নিজের থুতনি আর গালভরা কাঁচাদাড়ি ধরে টানছে। মস্ত লম্বা দাড়ি আর বাহারে চুল,এগুলো এ ছেলের খুব শখের,তা বোঝা যায়। কামিয়ে ফেললেই ঝামেলা মিটে যায়, কিন্তু সে কামায় না।নিয়মিত যত্ন করে, শ্যাম্পু করে, আঁচড়ায়।
    খুব শীত,বাইরে বেরুলেই একেবারে তুষারে সাদা হয়ে থাকা পথঘাটমাঠ, গাছপালা একেবারে পত্রশূন্য। এই সময়গুলো ঘরের মধ্যে এক্সপেরিমেন্ট করার জন্য রাখে সবাই, বাইরের কাজ বসন্তে গ্রীষ্মে আর শরতের প্রথমেই সেরে ফেলে, এই নভেম্বর-ডিসেম্বরে সব ইন্ডোর কাজ।
    কিন্তু এখন কি হবে? সে যে এক দুনিয়া নাড়া আবিষ্কার করে বসেছে,সেটা নিয়ে কি করবে বুঝতে পারছে না,লোকে তো শুনে বিশ্বাস করবে না,কেউ করে নাকি? প্রমাণ দিতে হবে,প্রমাণ দিতে হবে....কিন্তু কিভাবে? সে জানেই না জিনিসটা নিরাপদ কিনা,সে জানেই না আদৌ জিনিসটা কি, শুধু এর এক অদ্ভুৎ বৈশিষ্ট্য সে লক্ষ্য করেছে...অন্য কেউ এখনো জানে না, গত সপ্তাহান্ত আর এই গোটা হপ্তা জুড়ে সে ল্যাবের মধ্যে...
    চা নিয়ে এসে ঢুকলো ওর স্ত্রী,হাসলো,বললো ""আরে তুমি বাড়ী যাবে না? টানা এতদিন ল্যাবে থাকতে নেই,ভুল দেখতে শুরু করবে। একদিন ছুটি নাও।""
    ছেলেটা ক্লান্ত হেসে বলে,"" আমি একদম বুঝতে পারছি না কি করবো।দাও আগে চা খাই,তারপরে ভেবে দেখি কি রকবো।""
    দুজনে চা খাচ্ছে,ছেলেটা অন্যমনস্কভাবে চেয়ে আছে বৌয়ের হাতের দিকে,আস্তে আস্তে কাপের হাতলধরা হাতখানা উঠে যাচ্ছে ওর মুখের দিকে, দেখতে দেখতে হঠাৎ ছেলেটার মাথায় চিড়িক করে বুদ্ধি খেলে গেলো, বৌয়ের হাতের অনামিকায় ওদের বিয়ের আংটি...
    কাপ নামিয়ে রেখে লাফিয়ে ওঠে ছেলেটা,"" মিঠি মিঠি,তোমার ছবি তুলবো। শুধু তোমার হাতটার। ভয় পেওনা, কাপটা রাখ, হাতটা বাড়িয়ে দাও এই অ্যাপারেটাসটার সামনে...এই যে এই যে এখানে....""
    উত্তেজনায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে ছেলেটার কপালে।
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০১:১৬390964
  • অদ্ভুত এক যান, জমাট শূন্যতার মধ্য দিয়ে নেমে আসছে, নীচে দেখা যাচ্ছে অদ্ভুত এক সমতল, অচেনা অন্য জগৎ। পাউডারের মতন ধূলায় ঢেকে আছে সব। এদিক ওদিক পড়ে আছে ছোটোবড়ো গোল গোল গর্ত। অন্ধকার সব গর্ত,গ্রহাণু সংঘর্ষে এসব গর্ত তৈরী হয়েছে কত কত লক্ষ লক্ষ বছর আগে,এখনো প্রায়ই নতুন গর্ত হয় নতুন কলিশান হলে।এ উপগ্রহের চারপাশে বাতাসের পোশাক নেই, এ শুধু পাথুরে পাথুরে এক উপগ্রহ।
    যান দ্রুত নেমে যাচ্ছে একখানা অন্ধকার গর্তের দিকে, ভেতরে অদ্ভুত পোশাকে আবৃত ছেলেটা লাফিয়ে এসে হ্যান্ডেল আঁকড়ে ধরলো, ক®¾ট্রাল নিজের হাতে নিতে হবে। নইলে ঐ গর্তে পড়ে গেলে উঠে আসা খুব আনলাইকলি। কয়েকটা অনিশ্চিত মুহূর্ত,তারপরেই ম্যানুয়াল ক®¾ট্রাল ওর হাতে এসে গেলো।ওর সঙ্গী ছেলেটা পাশে এসে নার্ভাসভাবে ওর দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করলো,হাসি ফুটলো না।
    বহুদূরে,বহু বহু দূরে, এদের জননীগ্রহে অসংখ্য মানুষ উৎকন্ঠিত হয়ে কাজ করছে মিশন ক®¾ট্রালে,বড্ড দ্রুত বড্ড দ্রুত পাঠানো হয়েছে তাদের,হয়তো আরো একটু সময়ের দরকার ছিলো,টেকনোলজি আরেকটু এগোলে ভালো হতো, কিন্তু ওদের অকালপ্রায়ত নায়ক যে দশক না ফুরাতেই পাঠাতে চাইলো! সে যে শুধু বলে গেলো,তারপরে আর সময় দিলো না, হাজার দিনের নেতৃত্ব শেষে আততায়ীর অব্যর্থলক্ষ্য বুলেট ওকে নিয়ে চলে গেলো চলন্ত গাড়ী থেকে। শুধু রয়ে গেলো প্রতিধ্বনিময় ওর লাইনখানা-এ দশক শেষ হবার আগেই আমরা....আমরা চন্দ্রবিজয় সম্পূর্ণ করবো.... করবো করবো....""

    অন্য দিকে তখন রাত, জোৎস্নাস্নাত সমুদ্রে ভেসে যাচ্ছে প্রমোদতরণী... ""ও চাঁদ, চোখের জলের লাগলো জোয়ার দুখের পারাবারে/হলো কানায় কানায় কানাকানি এই পারে ঐ পারে/ আমার তরী ছিলো চেনার কুলে/বাঁধন যে তার গেলো খুলে/ তারে হাওয়ায় হাওয়ায় নিয়ে গেলো কোন্‌ অচেনার তীরে....""

    নেমে পড়েছে, নেমে পড়েছে,সেই যান নেমে পড়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছে উপগ্রহের অচেনা মাটিতে, মিশন ক®¾ট্রালে লোকেরা সেলিব্রেট করছে।

  • tan | 131.95.121.132 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০৫:১৭390965
  • ঘন কালো অন্ধকার,মেঘাবৃত রাত্রি। এতটাই ঘন অন্ধকার যে ভারী আর জমাট লাগে, সূচ ঢোকালে ফুটো করে দেওয়া যাবে বলে মনে হয়। কিন্তু ফুটো করে কি পাওয়া যাবে, আলো? পাতলা ত্রিপল তো না,ফুটো করলেও আরো আরো আরো অন্ধকার....
    একটা নদী,চরাচর জুড়ে শুয়ে আছে,শান্ত, একদম শান্ত। জমাট অন্ধকারের নীচে তরল অন্ধকারের শান্ত প্রবাহ।
    নদী থেকে সরু খাঁড়ি ঢুকে গেছে স্থলভাগের মধ্যে, সেখানে নৌকায় কয়েকজন মানুষ ফিসফিস করে কিসব কথা বলছে,রেডিও চালিয়ে উৎকর্ণ হয়ে আছে ওরা,আজই মধ্যরাত্রে সম্প্রচার হবে,সংকেতে বলা থাকবে খবর....
    আস্তে আস্তে প্রহর কাটে,তারা নেই,চাঁদনেই,আকাশের মেঘাবৃত অন্ধকারের নীচে অন্ধকারের নদীর উপরে কয়েকটা মানুষ...তাদের মুখ দেখা যায় না, তাদের হাসিকান্নারাগদ্বেষভালোবাসা কিচ্ছু নেই, আছে শুধু অসহ্য উৎকর্ণ প্রতীক্ষা...
    মধ্যরাত্রে গান বেজে উঠলো,""আমি তোমায় যত শুনিয়েছিলেম গান/তার বদলে আমি চাইনি কোনো দান...""
    অন্ধকার ছিঁড়ে আলোর তীর বিদ্ধ করে দিলো এদের চোখ...
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০৫:২৯390967
  • মাইকেলের হাত লিখে চলেছে অক্লান্ত, একের পর এক শব্দ, একের পর এক বাক্য, একের পর এক ছবি।
    মিশেল বলে যাচ্ছে আচ্ছন্ন, মন্ত্রমুগে্‌ধর মতন, যেন কোনো ট্রান্সের মধ্য থেকে বলে যাচ্ছে, সে জানে না আদৌ কেন বলছে, এইসব না-ঘটা ঘটনাবলী মাইকেল লিখে কি করবে?
    সে আগেই বলেছে এসব সে প্রকাশ করতে পারবে না, এসব প্রকাশ করলে ঘোরতর সমস্যায় নিমজ্জিত হবে সে,ভিষক হয়ে যে শান্তিতে সে আছে, কালান্তক মহামারীর প্রতিষেধক আবিষ্কার করে যে সুনাম তার হয়েছে, রহস্যময় ভবিষ্যদ্বক্তা হতে গেলে তার সমস্ত কিছু ছিঁড়ে খুঁড়ে শেষ হয়ে যাবে।
    তবু সে লিখছে, মিশেল বলে যাচ্ছে,সে লিখছে,মিশেল বলে যাচ্ছে...
    পাতায় পাতায় কেটে যাচ্ছে শত শত বছর,ধোঁয়াটে কাঁপা কাঁপা ছবি সব,তবু মানুষের সুখদু:খের অনাদি অনন্ত তরঙ্গের পরিচিত রূপ ফুটে উঠছে স্পষ্ট।
    মিশেল চোখ বন্ধ করলো, সে দেখতে পাচ্ছে ববকে স্পষ্ট, বব টেবিলের উপরে ঝুঁকে পড়ে কাজ করছে...
    ফিরে গিয়ে ওকে একটা জিনিস দেখতে হবে এবারে,ওকে অনুমতি ওরা দেবে না জানে মিশেল,কিন্তু সে দেখবে, সে জানে স্বপ্নের আলোছায়ায় সে দেখেছে অনেকবার....

    সেই ছোট্টোবেলার পাহাড়, সেই পাহাড়চূড়ার বাড়ীখানা, "আকাশবাড়ী" বলে বলতো ওরা সবাই,কত রঙবেরঙের লন্ঠন ঝুলতো সে বাড়ীর পুষ্পিত লতা ঘেরা দোলনাওলা বারান্দায়...
    সেখানে ঐ বৃদ্ধা ওদের গল্প বলতে, ফিনিকফোটা জোছনার গল্প, সেই জোছনায় দুধালো হয়ে ওঠা পাহাড়ের গল্প...
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০৫:৫৪390968
  • আরে! মিলির গল্পটা ট্যান জানলো কিকরে? টেলিপ্যাথি না মিলিট্যান(ট)? :-))))
    জোকস অ্যাপার্ট, গল্পটা ভালো হচ্ছে । চলুক।
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০৬:২০390969
  • মিলিকান ও জানতো।:-))))
  • tan | 131.95.121.132 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০৬:৫৫390970
  • কাউরে কইয়ো না,মিলির কানে তেল দিতে গিয়েই ন্যাড়ার ঐ অয়েল ড্রপ এক্সপেরিমেন্টের আইডিয়া মাথায় খেলে গেছিলো।
    তারপরেই নিজের নাম বদলে মিলিকান করে নিয়ে পরীক্ষে নিরীক্ষেতে লেগে পড়েছিলো। :-))))
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০৭:০১390971
  • ন্যাড়াদাই মিলিকান? কি আশ্চর্য! (মিলির কানে কেন তেল দিচ্ছিলো সেকথা কিন্তু জানতে চাইছি না) ;-)
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০৭:০৪390972
  • যাগ্গে, শিবের গীত এখানেই ফিনিশ। ধান ভানা আবার চালু হোক :-)))
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০৭:৩১390973
  • হু হু হু হু হু হু করে বয়ে যাচ্ছে হাওয়া, দ্রুত কাঁচ উঠিয়ে দিলো সে। ঘন্টায় ষাট সত্তর মাইল দৌড়ায় এসব গাড়ী, হাওয়ার ঝাপ্টা লাগানো খুব অসুবিধার। বিশাল বিশাল চওড়া সব রাস্তায় বিশাল বিশাল সব ট্রাক। অসংখ্য ফুরফুরে গাড়ী তুরতুর করতে করতে লেন পাল্টে ট্রাকগুলোর পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।
    ওর অদ্ভুত একটা কথা মনে হয়, অনেক উপর থেকে এই পথ দেখলে দৌড়ানো পিঁপড়ের মতন লাগবে গাড়ীগুলোকে।
    ঢেউ খেলানো পাহাড়ের মালা,পাহাড়ের সমস্ত গা ঢেকে দিয়ে বড়ো বড়ো সব গাছ।হেমন্তে পর্ণমোচী গাছেদের পাতারা সব লাল,হলদে,বাদামী হয়ে গেছে,অদ্ভুত সৌন্দর্যে ঝলমল করছে সমস্ত চারিধার।আকাশ খুব নীল,হাল্কা পাখা ভাসিয়ে ভেসে আছে চিলেরা।
    রোড ম্যাপ কোলের উপরে খোলা,ডান হাত বাড়িয়ে আলতো করে সে রামধনু রঙ ঝলকানো ডিস্কটি ঢুকিয়ে দিলো চিলতে পথ দিয়ে, এইবারে আলতো করে সুইচ ছুঁয়ে অডিও বুক অন করে দিলো।হাল্কা সুরেলা গলায় স্পস্ট উচ্চারণে গল্প পড়ে শোনাতে লাগলো অদৃশ্য পাঠক। কোমল গলা কখনো বদলে যাছে নারী কন্ঠস্বরে,কখনো পুরুষ কন্ঠে,কখনো অল্প বিষন্ন দার্শনিকের স্বরে....
    অনেক পথ যেতে হবে,অনেক পথ,কয়েকঘন্টা পরে পাশের সীটের সঙ্গীর সঙ্গে জায়গা বদল করবে ও,তখন সঙ্গী চালাবে।
    পথের পাশে পাহাড়, স্তরে স্তরে পাথর,প্রতি স্তরে পৃথিবীর ইতিহাস লেখা, এক এক সময় ধরা পড়ে আছে এক এক স্তরে,এই বিচিত্র সৌন্দর্য ও রহস্যের মধ্য দিয়ে সে ছুটে যাচ্ছে নির্বিকারে,নিরুপায়,নিজের জালে সে নিজে বন্দী।
    এ পথ গেছে কোনখানে গো কোনখানে গো কোনখানে....

    বনশোভার মধ্য দিয়ে রহস্যভরা ঐ যে পথ চলে গেছে,ওর কাছে অধরা,সেই পথের কথা বিষন্ন গলাটি বলে যায় যন্ত্রের মধ্য থেকে....
    সে পথ দিয়ে কে আসে যায় কি জানি/কেমন যে তার বাণী কেমন হাসিখানি/তা কিজানি তা কি জানি....

  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ০৭:৪৬390974
  • মিশেল জানে মাইকেল একদিন না একদিন প্রকাশ করে ফেলবে, মানুষে কতদিন কথা লুকিয়ে রাখতে পারে তার একটা সীমা আছে, এর পরে সে আর পারে না।হয়তো মিশেলের এইসব কথাগুলো অবিকল বলবে না, হয়তো অন্য কোনো রূপে লেখাগুলো ফুটে উঠবে মাইকেলের হাতে... জানে মিশেল, জানে বলেই বলছে, নইলে কেন ই বা সে এত খুঁজে খুঁজে এই ব্যক্তিকেই বেছেছে?
    ফিরে যেতে ইচ্ছে করে না মিশেলের, অথচ উপায় নেই, সময় হয়ে গেছে, এবারে যেতে হবে।
    মাইকেলের ডানহাত নিজের দুহাতে গ্রহণ করে মিশেল বিদায় প্রার্থনা করে,মাইকেল কিছুই বলতে পারে না,দুচোখ মেলে চেয়ে থাকে শুধু,ওর ঠোঁট দুটো কাঁপে অথচ কোনো শব্দ উচ্চারিত হয় না।
    মিশেলের ইচ্ছে করে...থাক থাক,কি ইচ্ছে করে তা শুনলে এই লোক ভয়ে পাঁশুটে হয়ে যাবে,এমনিতেই এত বিমূঢ় হয়ে গেছে....
    মাইকেলের হাতে বিদায় চুম্বন করে মিশেল যাত্রা করে ভবিষ্যতের দুনিয়ায়। শুধু প্রাণপণে সে মনের মধ্যে ধরে রাখতে চায় মাইকেলের এই বিস্ময়বিশাল দুই চোখ,এই দাঁড়িয়ে থাকা,মিশেলের সময়ের দুনিয়ায় কত বিরল হয়ে গেছে বিস্ময়....
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ২৩:১৮390975
  • ্‌্‌্‌্‌্‌্‌্‌
  • Milli | 131.95.121.132 | ০৬ নভেম্বর ২০০৭ ২৩:৩০390976
  • মিশেল একা একা হেঁটে যাচ্ছে বনের মধ্য দিয়ে,সে উড়নযান নেয় নি, ইমপ্ল্যান্টেড চিপ অফ করে রেখেছে, সে এখন সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
    উড়নযান এ করে সে এসেছে হ্রদ পর্যন্ত,তারপরেই সেখানে সেটা থামিয়ে হাঁটতে শুরু করেছে বনের মধ্য দিয়ে।এখন তো আর পথগুলো দরকার হয় না কারুর,সবাই এখান থেকে ওখানে উড়নযানে করে যায়,পথগুলো সব আস্তে আস্তে সবুজে ঢাকা পড়ে গেছে,কিছু ফসল ক্ষেতের অংশ হয়ে গেছে,কিছু বনে ঢাকা পড়ে গেছে, পৃথিবীর বিধ্বস্ত পরিবেশ পুনরুদ্ধারে এইসব উড়নযানগুলোও ছিলো একটা বিরাট পদক্ষেপ।
    আকাশের গায়ে নীল পাহাড়টি দেখা যাচ্ছে দূরে, পাহাড়কে যত দূরে মনে হয় পাহাড় তার চেয়েও অনেক দূরে। তবু আর বেশী কাছে পর্যন্ত উড়ে যেতে ইচ্ছে করেনি মিশেলের,সে ঐ স্বাচ্ছ জলের হ্রদখানির ধারেই যান নামিয়ে চিপ অফ করে সভ্য জগতের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এখন এই আলোছায়া বনভূমির মধ্যে সে একদম একা,রহস্যময় বনস্থলী ও তার সমস্ত পুরাতন লক্ষ লক্ষ যূগের পুরাতন আত্মাদের সঙ্গে সে আস্তে আস্তে এইবার খুঁজে পাবে সংযোগসূত্রটি। যা সে হারিয়ে ফেলেছিলো জন্মমুহূর্তে,ক্রমে ক্রমে ভুলে যেতে যেতে আরো আরো ভুলে যাচ্ছিলো যে একদিন সে এইসবের সঙ্গে যুক্ত ছিলো সমস্ত অস্তিত্ব নিয়ে...গতরাত্রে জ্যোৎস্নাময় স্বপ্নদৃশ্যে সে সেই কথা দেখতে পেয়েছে একাঝলক,সে জানে পথ তার ভুল হবে না,ভুল হবে না,ওকে লক্ষ লক্ষ সুর তাল লয় ছন্দ সমস্ত অতীত ভবিষ্যৎ একাকার করে দেওয়া অদৃশ্য অশ্রুত অস্পর্শনীয় অনুভব সাহস দিচ্ছে।

  • Milli | 131.95.121.132 | ০৭ নভেম্বর ২০০৭ ০১:২০390978
  • বড়ো বড়ো মহীরুহের ঘন সবুজ পাতারা চন্দ্রাতপ তৈরী করে রেখেছে, রোদ্দুরের বাতাসা ঝরে পড়ছে তার ফাঁকফোকড় দিয়ে, হঠাৎ দেখা যায় একটা নদী, কুলকুল করে বয়ে যাচ্ছে আলোছায়া ভেদ করে, পাশের থেকে স্রোতের উপরে ঝুঁকে পড়েছে বড়ো বড়ো ফার্ণের পাতা, পাতার অনুপম সব নকশার উপরে ছিটকে লাগছে কুচোজল, পান্নাহীরামুক্তার মতন ঝিকিয়ে উঠছে সেইসব জলকণা।
    মিশেল মন্ত্রমুগে্‌ধর মতন হাঁটছে,বনের গাছগাছড়া ওকে বাধা দিচ্ছে না,বন্ধুর মতন পথ করে দিচ্ছে...কচি কচি নরম গোল গোল লুচিপাতার মতন পাতাওলা লতা ওর পায়ে জড়িয়ে গেলো, ও নীচু হয়ে আলতো যত্নে খুলে দিচ্ছে সে লতা, আহা ওর যেন লা লাগে ব্যথা।
    বড়ো বড়ো কমলা রঙের ফল ধরে আছে একটা বিরাট গাছে,সে গাছের নীচে এসে বিশ্রাম নিতে বসলো মিশেল,ওর কোলের কাছে ঝরে পড়লো দুখানা ফল, সে একটা তুলে জামায় একটু মুছে নিয়ে মুখের কাছে তুলে কামড় দিলো,অমৃতস্বাদ ফলখন্ড ভরিয়ে দিলো ওর মুখ,মন ও অনুভব...
    ফল চিবোতে চিবোতে মিশেল ভাবছিলো মাত্র গত রাত্রে ঘুমিয়ে পড়ার আগেও কি এই সিদ্ধান্তের কথা সে ভাবতে পেরেছিলো, এরকম সকালে উঠেই জীবন বদলে ফেলা একটা পদক্ষেপ সে নিয়ে বসবে?

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন