এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • খড়কুটো পাখীর পালক ধূলিকণা হয়ে ওঠা গল্পেরা

    Tim
    অন্যান্য | ২৭ আগস্ট ২০০৭ | ৩৬৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৭ আগস্ট ২০০৭ ০২:১৯392371
  • গভীর রাতে বিনায়কের ফোন বাজতে থাকে... সুরের মুর্ছনায় কেঁপে কেঁপে ওঠে নিস্তরঙ্গ ঘুমঘোর। জড়ানো গলায় ফোনটা ধরে বিনায়ক, সবার আদরের বনি। প্রথমে কোন আওয়াজই শোনা যায়না, তারপর ভেসে আসে আবছা স্বর, "" বনি, আমি কিংশুক বলছি...।"" অবাক আর কিছুটা বিরক্ত হয়ে শুনতে থাকে বনি। ধীরে ধীরে তার ঘুম ছুটে যায়, বিরক্তি কেটে গিয়ে চোখে আঁধার ঘনায়, মুখেও তার ছায়া পড়ে। ফোনটা শেষ হলেই সে ল্যাপটপ অন করে। তড়িঘড়ি বুক করে ফেলে পরের দিনের এয়ার টিকিট। উত্তরের এক ছোট্ট শহরের হাসপাতাল থেকে কিংশুকের ফোন এসে সব এলোমেলো করে দিয়েছে। অ্যাকসিডেন্ট। দুর্ঘটনা তো ঘটেই।
    এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে বসে ভাবছিলো বনি। মাত্র এক বছর। এক বছরেই কি নিবিড় বন্ধুত্বে বাঁধা পড়ে গেছে সে আর শুকু। শুকু, কিংশুকের ডাকনাম।
    বড় বড় কাচের দেয়ালের ওপাশে প্লেন ওঠানামা করে, স্পিকারে ঘোষিকার দৃপ্তমধুর স্বর ভেসে আসে, অন্যান্য যাত্রীদের কথোপকথন বাড়ে কমে, মিলিয়ে যায়, বনি বসে ভেবে চলে। চারপাশের শব্দমালা তাকে ছুঁতে পারেনা, নানাদিক থেকে ছুটে আসা আলোকণা তার চোখে কোন সাড়া জাগায় না। অবশ মনে সে ভাবতে থাকে প্রিয় বন্ধুর কথা। কবে আলাপ হয়েছিলো যেন?--ভাবতে চেষ্টা করে বনি, গতবছর জানুয়ারীতে কি? তাই হবে। দেখতে দেখতে একবছর হয়ে গেল।
    ভাবনা ছিন্ন করে কাছেই স্পিকারে কি যেন জানানো হল, বনি খেয়াল করলো না। একটা মৃদু কোলাহলে চটক ভেঙ্গে সে ইহজগতে ফিরে এলো। পাশের ভদ্রলোককে জিগ্যেস করে জানা গেল, প্লেন দেরিতে ছাড়বে, এয়ারপোর্টে একটা ফোন এসেছে, বক্তব্য: বিস্ফোরক রাখা আছে কোন একটি প্লেনে। হতাশ হয়ে আবার চোখ বুজে ভাবনার অতলে তলিয়ে যায় বনি। কে যেন বলেছিল, সব মানুষের একটা করে নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক থাকে? অন্য একজন মানুষের সাথে সেই কম্পাংক মিলে গেলে তারা জন্মের মত বন্ধু হয়। বনি আর শুকুকে দেখলে যে কেউ একথা বিশ্বাস করবে। সত্যি বলতে কি, অনেকেই ভাবে ওরা ছোটবেলার বন্ধু, তারা ভাবতেই পারেনা মাত্র এক বছরে দুজন এমন করে মিশে যেতে পারে।
    আবার একটা হইচই এর শব্দে ঘোর কেটে বনি দেখল, চেক-ইন শুরু হচ্ছে। দ্রুতপায়ে এগোল সে। তারপর একসময় সমস্ত মিটে গিয়ে ছোট্ট ডোমেস্টিক আকাশযানের জানলার ধারে বসে পড়লো। ধুপধাপ আওয়াজে যাত্রীরা এসে উঠছে প্লেনে। ওভারহেড লকারে জিনিস রাখার শব্দ, হালকা পারফিউমের দমবন্ধকরা সুবাস আর যাত্রীদের কথা মিলে অদ্ভুৎ পরিবেশ তৈরী করেছে। বেশ কয়েকটা ইন্দ্রিয় প্রাণপণ সজাগ থেকে শুষে নিচ্ছে ঐ শব্দগন্ধদৃশ্য। বিরক্তিতে জানলা দিয়ে বাইরে তাকায় বনি। বহুদূর অবধি রানওয়ে, ছোট বড় প্লেন আর বেশ কিছু কর্মী নিয়ে অতি পরিচিত একঘেয়ে দৃশ্য ফুটে ওঠে। চোখ বন্ধ করে ফেলে সে। এখন শুকু কেমন আছে?- অবস্থা ক্রিটিকাল কি? এইসব প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসে তার মনে।
    টুংটাং শব্দে চমকে তাকায় বনি, এক বিমানসেবিকা সামনে ঠান্ডা পানীয় নিয়ে দাঁড়িয়ে। পানীয়ের ক্যানে চুমুক দিতে দিতেই কখন একসময় প্লেনের চাকা মাটিতে নেমে আসে। রুক্ষ রাস্তা দিয়ে কর্কশ শব্দ তুলে ছুটে চলে বিমান। স্পষ্ট দেখা যায় টার্মিনালগুলোর নম্বর। তারপর অন্যমনস্কভাবেই একসময় যখন সমস্ত ঝামেলা মিটিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে এসে ট্যাক্সিতে ওঠে বনি, তখন সূর্য লাল টুকটুকে হয়ে অস্ত যাবার অপেক্ষায়। পড়ন্ত বেলার সোনালী সূর্যচ্ছটা এসে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, নিভে যাওয়ার আগে শেষবারের মত জানিয়ে যায়, কি অসীম শক্তি আর আশার উৎস সে। চোখেমুখে সেই আশার গন্ধ মেখে বসে থাকে বনি, খোলা ফ্রি-ওয়ে দিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে গাড়ি তার।
    হাসপাতালটা শহরের একপ্রান্তে, যদিও সেখানে পৌঁছাতে অসুবিধে হয় না কোন। রিসেপশানে বলতেই বনিকে নিয়ে যাওয়া হয় সেই বিশেষ ঘরটির কাছে, একফালি কাচের আড়াল থেকে শুকুর ব্যান্ডেজ জড়ানো শরীরটা কোনমতে দেখা যায়। মাথা ছাড়া প্রায় সর্বত্রই ছোটবড় চোট লেগেছে। যন্ত্রণা কমানোর জন্যে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।
    বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঘরের বাইরে একটা চেয়ার এনে বসলো বনি। এখান থেকে শুকুর বেডটা দেখা যায় কাচের জানলা দিয়ে। শুকুও জেগে থাকলে দেখতে পেত বনিকে, কিন্তু সে এখন স্বপ্নরাজ্যে। কেজানে, হয়ত বা বনির কথাই ভাবছে? ফোনে তো তাই বলেছিলো সে, তোকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে রে, আসবি একবার?
    তাই, অপেক্ষা করতে থাকে বনি। রাত গভীর হয়, এয়ার কন্ডিশনড হাসপাতালের সুসজ্জিত করিডোরে মানুষের আনাগোনা কমে আসে। এখন কান পাতলেও আর শোনা যাচ্ছেনা সামান্যতম শব্দ। শেষরাতের অঘোর ঘুম সোনার কাঠি বুলিয়ে দিয়েছে সকলের চোখে। শুধু কাচের দেয়ালের ওপাশের দুটো চোখ নিষ্পলক চেয়ে আছে বন্ধ দুটো চোখের দিকে। আর কিছুক্ষণ পরেই একে একে তারাগুলো মুছে গিয়ে সূর্য উঠবে, ততক্ষণ শুধুই অপেক্ষা। সূর্যের আরেক নামই যে..... মিত্র!
    -----------------------

  • Tim | 204.111.134.55 | ২৭ আগস্ট ২০০৭ ১০:৪১392382
  • পবিত্র তীর্থস্থানের কাছে ছোট জনপদ হরিহরপুর। তীর্থযাত্রীদের রাতের আশ্রয়, আহারের জন্য বিখ্যাত এই জনপদ। প্রতিদিন লক্ষ লোকের কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে হরিহরপুর, কেউ চায় আহার , কেউবা এসে জোটে আশ্রয়ের খোঁজে। অনেকে আবার তীর্থ সেরে ফেরার পথে কাটিয়ে যায় দুটো দিন, শুধুই শান্তি আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য। হরিহরপুর সত্যি-ই বড় সুন্দর, উচ্ছল পাহাড়ি নদী আর দিগন্তপ্রসারী পর্বতমালা নিয়ে একটুকরো ছবির মত। যেন চিত্রকর আঁকা শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছেন কাছেই, ফিরে এসে খুলে নেবেন নদীপাহাড়সমেত গোটা ক্যানভাসটাই।
    আমাদের অবশ্য প্রাকৃতিক শোভা দেখার কোন সময় ছিলোনা। একটা রাত কোনমতে কাটিয়ে আবার ভোরেই চলতে হবে চড়াই বেয়ে। পরশুর মধ্যে লোহিতেশ্বর পাহাড়চূড়ায় ওঠার কথা আমাদের, অন্তত সেইরকমই পরিকল্পনা করা হয়েছিলো কলকাতা ছাড়ার আগে। আমাদের পরিচয় ও লোহিতেশ্বর যাওয়ার উদ্দেশ্য এই কাহিনীতে অপ্রাসঙ্গিক, তাই সেসব উহ্যই থাক।
    সারাদিনের পথশ্রমে সবাই ক্লান্ত ছিলাম, তাই খাবার এসে পৌঁছোবার আগেই সবারই চোখ লেগে এসেছিলো বোধহয়। তন্দ্রা ছুটলো দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজে। সাথে অস্ফুট স্বরে ডাকাডাকির শব্দও ছিলো। দরজা খোলার পর রাতের খাবার নিয়ে একটা অল্পবয়সী ছেলে ঘরে এসে ঢুকলো। বড়ই ক্লান্ত ছিলাম, ভালো করে তাকিয়েও দেখলাম না। তবে, খাবারটা রেখেই সে পকেট থেকে যখন আমার পার্সটা বের করলো, তখন আর অতটা উদাসীন থাকা গেলনা। কি সর্বনাশ! ওর মধ্যে যে ফেরার টিকিটগুলো-ও আছে! লাজুক হেসে ছেলেটি জানালো, সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় নিশ্চই পকেট থেকে পড়ে গেছে, এরপর থেকে যেন সাবধানে রাখি।
    আমার ততক্ষণে ঘুম ছুটে গেছে। খাবার পড়ে রইলো, আমি বাইরের বারান্দায় বসে ওর সাথে গল্প জুড়লাম। একটা খটকাও ছিলো, হাজার হোক, শহুরে মানুষ তো, ভাবছিলাম, পার্সটা যে আমারই, সেটা ও নি:সন্দেহে বুঝলো কি করে? তখন আরো লজ্জা পেয়ে ছেলেটি জানালো, এ আর এমন কি শক্ত, ভেতরে তো কার্ডে নাম আর ছবি দুই-ই আছে!
    এতক্ষণে নাম জিগ্যেস করার সুযোগ হল, চেহারাটাও ভালো করে দেখলাম এবার। লখীন্দরের চেহারা আর পাঁচটা পাহাড়ি ছেলের থেকে আলাদা নয়, তবে চোখের দৃষ্টি বুদ্ধিদীপ্ত, পরনে একটা পুরোনো হাফশার্ট আর রংচটা ফুলপ্যান্ট। বেশিরভাগ পাহাড়ি ছেলের মতই সরল, হাসিখুশি।
    আমার সহযাত্রীরা ততক্ষণে কোনমতে খেয়ে নিয়ে আবার ঘুমের দেশে। আর দেরী না করে আমিও খেতে উঠলাম, তবে লখীন্দরকে বলে দিলাম বাকি কাজ সেরে যেন চলে আসে আবার, কথা আছে।
    পাহাড়ে রাত নেমে এলে চারদিক শ্মশ্মানের মত নিস্তব্ধ হয়ে যায়। অল্প শীতেও বাইরে বসে থাকতে বেশ লাগছিলো। অনেক নিচ থেকে ভেসে আসা নদীর শব্দ, উপরে লক্ষ কোটি জোনাকীর মত তারা চেয়ে আছে, অনেকক্ষন পরপর হঠাৎ ছোটখাটো আওয়াজ এইসব নিয়ে কতক্ষণ কাটলো কে জানে। তারপর একসময় পায়ের শব্দে তাকিয়ে দেখি লখীন্দর উপস্থিত।
    সেই অপূর্ব রাতে বাইরের বারান্দায় বসে দুই আপাত-সমবয়স্ক যুবকের গল্পগাছা শুরু হল। আপাত, কারণ মানসিক বয়স আমার অনেক বেশি। বেঁচে থাকার জন্য যতটা কৌশলী হতে হয়, আমরা, সভ্য, শিক্ষিত মানুষেরা তার চেয়ে ঢের বেশি কৌশলী। আর এই ছেলে তো এখনও সেই মধ্যযুগেই পড়ে। সমবয়স্ক বললেই হল! সে যাহোক, একথা সেকথার পর লখীন্দর তার নিজের কাহিনী শুরু করলো :
    হরিহরপুর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে লখীন্দরের গ্রাম সরযুনগর। বাবা-মা-দুই ভাই আর এক বোন নিয়ে একরকম ছোট পরিবারই বলা চলে। লখীন্দরই সবথেকে বড়ো। বারোক্লাশের পরীক্ষাটাও লখীন্দর ভালোভাবে পাশ করায় তার বাড়িতে সবাই চিন্তা করছিলো, এবার কি হবে? তখন সে নিজেই পড়াশুনো ছেড়ে দোকানে কাজ নেয়। আপাতত ছোট ভাইবোন যতদিন খুশি যেন পড়তে পারে, সেটাই লখীন্দরের ধ্যানজ্ঞান। কিন্তু এই সামান্য আয়ে চলবে কিকরে? তাই, .... গল্পের এইখানে এসে তার গলার আওয়াজ অন্যরকম হয়ে যায়। স্পষ্ট টের পাই কান্নাটাকে শাসন করে কথা বলছে সে। এবং, অবশেষে, যা ভয় ছিলো তাই করে সে। আব্দার জানিয়ে বসে একটা চাকরী দেওয়ার। অনেকেই নাকি কথা দিয়ে, ঠিকানা, ফোন নম্বর দিয়ে চলে যায়, কিন্তু দিনের পর দিন কেটে গেলেও কোন খবর আসেনা। পাছে আমার কোন ভুল ধারণা হয়, তাই সে জানায় যে তার কোন বাছবিচার নেই, যেকোন কাজ করতে পারবে। আমার মাথা নিচু হয়ে আসে, কোনমতে বলি, ভগবানকে ডাকো লখীন্দর, আমি তোমার কাজে লাগবো না। লখীন্দর ফিরে যায় অবিশ্বাসী দৃষ্টি নিয়ে। সত্যি-ই তো, আমরা ইচ্ছে করলে পারবোনা, এ আবার হয় নাকি? ওদের চোখে আমরা যে ঈশ্বর! লখীন্দরের মুখে জমে থাকা অবিশ্বাস কেমন যেন চেনা চেনা ঠেকে। ভাবি, কোথায় দেখেছি এ দৃষ্টি? অনেকক্ষণ পরে হঠাৎ করে মনে পড়ে, আরে, এতো রোজ দেখি আয়নায়! যখনই শতসহস্র বাসনার কোন একটা ব্যর্থ হয়, এই দৃষ্টিতেই তো তাকাই মন্দিরের বিগ্রহপানে। কুয়াশা কেটে যায়। অসীম ক্ষমতাশালী ঈশ্বরের ব্যর্থতায় সান্ত্বনা খুঁজে নিয়ে গা এলিয়ে দি বিছানায়। রাত আর বেশি বাকি নেই।
    -----------------------------
  • d | 192.85.47.2 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ১৪:২৭392393
  • দেখি তো আবার লিখলে আবার ঘাঁটে কিনা? :)
  • d | 192.85.47.2 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ১৪:২৮392404
  • না: ঘাঁটল না।
  • d | 192.85.47.2 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ১৪:২৯392415
  • বুঝেছি বুঝেছি দ্বিতীয় পোস্টে ঘাঁটছে। :))
    কালকেও টিমের প্রথম পোস্টে ঠিক ছিল। দ্বিতীয়টা লিখতেই ঘেঁটে গেছিল। আজও তাই।
    :))
  • Arijit | 128.240.233.197 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ১৪:৩৭392426
  • কি বাগই নামিয়েছ মামু...
  • r | 61.95.167.91 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ১৪:৪৮392431
  • ঠিক হবে?
  • Arpan | 193.134.170.35 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ১৪:৫১392432
  • ব্রম্‌হা জানেন।
  • tan | 131.95.121.132 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ২০:৪০392433
  • টেস্ট করে দেখি তো!
  • tan | 131.95.121.132 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ২০:৪১392372
  • মুহূর্তের মধ্যে সব ঘেঁটে অক্ষভমভড়,ঢ়তশ,ক্ষ,ঢ হয়ে গেলো।:-(((
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৮ আগস্ট ২০০৭ ২১:০০392373
  • এই একটার জন্য সব ঘেঁটে যাচ্ছে। এই টইটা প্লিজ সরিয়ে দাও ঈশানদা।
  • tan | 131.95.121.132 | ২৯ আগস্ট ২০০৭ ০১:৫৩392374
  • এটা কি সারাই করে ফেলেছে ঈশান?
  • tan | 131.95.121.132 | ২৯ আগস্ট ২০০৭ ০১:৫৪392375
  • করেছে!!!! সারাই করেছে!!!!
    এখন আর অক্ষভমভড় আসে নি!
  • Blank | 65.82.130.9 | ২৯ আগস্ট ২০০৭ ০২:০৬392376
  • নিজের নাম দেখতে চাইছি
  • Ishan | 130.36.62.141 | ২৯ আগস্ট ২০০৭ ০২:১১392377
  • সব কমা আর ফুটকি উড়িয়ে দিয়েছি, খুশি?
  • Arijit | 77.98.196.117 | ২৯ আগস্ট ২০০৭ ০২:১২392378
  • বাঁচা গেলো!!!
  • Blank | 65.82.130.9 | ২৯ আগস্ট ২০০৭ ০২:১৮392379
  • যাক
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৯ আগস্ট ২০০৭ ০৫:৩২392380
  • কমা আর ফুটকি গুরুর জন্য বড়ই গুরুপাক। :-)))
    থ্যাংকু মামু।
  • d | 192.85.47.1 | ২৯ আগস্ট ২০০৭ ১৪:৩১392381
  • হ্যাঁ: ওসব কমা ফুটকির জঞ্জাল বিদেয় করাই ভাল। :))
  • Tim | 204.111.134.55 | ০১ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১৩:৩৭392383
  • রায়পাড়ার ভেতর দিয়ে যে পিচরাস্তাটা বিশুর কেরোসিন তেলের দোকানের পাশ দিয়ে বেঁকে সটান রাইট সাহেবের মাঠের দিকে চলে গেছে, তার ধারের অগুন্তি লাইটপোস্টের একটায় যত্ন করে জাল বুনছিলো সিজার। দিনকাল বড়ই খারাপ। সেই পরশুদিন থেকে একরকম উপোস চলছে। ""কি যে হল জায়গাটার?"" মনে মনে বিড়বিড় করছিলো সে,"" আগে ছোটোখাটো জিনিস হেলায় বিলিয়ে দিতাম... আর এখন.."" গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিপুণভাবে বোনা জালটার দিকে তাকিয়ে ভাবে থাকে সিজার। লাইটপোস্টের আলো মেখে ঝকমক করছে জালটা--হীরের কণার মত দু এক ফোঁটা জল জমে আছে এখানে ওখানে, আলতো বাতাসে অল্প কাঁপছে-- দেখে মুগ্‌ধ হয় সিজার, নিজের শিল্পদক্ষতার তারিফ না করে পারেনা মনে মনে। কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন সৃষ্টিসুখ আর জাগতিক স্বাচ্ছন্দ্য হাত ধরাধরি করে চলে না বেশিরভাগ সময়। তাই সিজারের প্রতিভার কদর নেই।
    এখন রাত ন' টা। বাচ্চুর চায়ের দোকানে সান্ধ্য মজলিশ প্রায় শেষেরদিকে। আড্ডাটা শুরু হলেই কৃত্তিকা শোরগোলের ভয়ে এলাকাটা ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এ প্রায় রোজকার কথা। বেচারী এতক্ষণে পূর্বোক্ত লাইটপোস্টের নীচে এসে হাঁপাচ্ছে। সিজারের একসময় এই কৃত্তিকার প্রতি কিঞ্চিৎ দুর্বলতা ছিলো, সত্যি বলতে কি, এই এতদিন পরেও.... সে যাকগে। সমাজের বাধা ছিলো যে! তাই মানে মানে দুজনেই থেমে গেছে নিরাপদ দূরত্বে।
    অপাঙ্গে একবার সিজারকে দেখে নিয়ে আবার চলতে শুরু করে কৃত্তিকা, আড্ডাটা এতক্ষণে নিশ্চই থেমে গেছে। এবার ফেরার পালা। তারও সময় ভাল যাচ্ছেনা। বাপ-ঠাকুর্দার আমলের জমি, তাতে আর আগের মত প্রাণ নেই। শুকনো, রসকষহীন ঐ জমি এখন আর কিছুই দিতে পারেনা, তাই বাধ্য হয়ে উঞ্ছবৃত্তি করতে হয় আজকাল।
    আলমগীর যখন শেষ বোঝাটা পিঠে নিল, তখনই হঠাৎ পাড়া অন্ধকার। ""এই নিয়ে আজ চারবার হল"" বিরক্তির চরমে পৌঁছে ভাবছিলো সে "" এভাবে কাজ করা যায়?"" আলমগীরের দিন শুরু হয়ে যায় রাত থাকতেই। মাঝে দুপুরে কয়েকটা দানা মুখে দিয়েছিলো, তারপর থেকে আবার হাড়ভাঙ্গা খাটুনি চলছে অবিরাম। সিজার বা কৃত্তিকার মত আলমগীরেরও চিত্তে সুখ নেই। সারাদিন ভূতের খাটুনির পরেও আধপেটাই থাকতে হয়। অথচ আগে কি দিনটাই না ছিলো! নিজে খেয়ে, অন্যকে খাইয়ে তারপরেও কিছু জমে যেত ভবিষ্যতের জন্য। আরো একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা যায়... আলমগীর চুপ করে পথ চলে।

    এরা তিনজনেই বোধহয় মনে মনে কিছু চেয়েছিলো। এভাবে তিলে তিলে বেঁচে থাকতে চায়নি হয়ত। কারণ এরপরেই একটা সুন্দর মিষ্টি গাড়ি এসে ঢুকলো ঐ পাড়ায়। প্রথমেই কৃত্তিকার লম্বা, হিলহিলে শরীরটা লেপ্টে গেল সেই গাড়িটার চাকায়। অতগুলো পা নিয়েও সে বেচারী তখনও মাত্র অর্ধেক পথই যেতে পেরেছিলো। এরপর গাড়িটা একটা বাঁক নিতেই আলমগীর চাপা পড়লো। তার লাল, ডুমো ডুমো আণবিক দেহ রাস্তায় মিশিয়ে গাড়িটা ছুটে চলল সেই লাইটপোস্টের দিকে। সিজার তখনো পোস্টের গায়েই দাঁড়িয়ে ছিলো। পলকেই তার প্রতিসম চেহারা একটা জীবন্ত রহস্যের মত দ্বিমাত্রিক হয়ে সেঁটে গেল পোস্টে। গাড়িটারও কিছু ক্ষতি হয়েছিলো, অনেক মানুষ হইচই করেছিলো গাড়িটাকে ঘিরে ধরে... লাইটপোস্টটা বেঁকে গিয়েছে যে!
    এইসব কিছুর থেকে একটু ওপরে, লাইটপোস্টের গায়ে সিজারের ফাঁকা জালটা তখনও অক্ষত ছিলো। সূক্ষ্য কারিকাজের মত ঝুলে ছিলো ওটা- যেন যত্ন করে বোনা মসলিন অনাদরে ফেলে গেছে কেউ।
    -----------
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১০:৪৭392384
  • ফুলের সাজিটা নিয়ে ঊনসত্তর বছরের ক্ষণপ্রভা ধীর পদক্ষেপে বাগানে এসে দাঁড়ালেন। সবে ভোর হয়েছে। বছরের এই সময়টা আকাশের দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়, পুজো এল বলে। আর কদিন পরেই মন্ডপ আলো করে আসবেন দেবী।
    সমস্ত বাগানটা কাল বিকেলেও শুকনো পাতায় ঢেকে ছিলো। হেঁটে গেলেই শব্দের ঝংকার উঠত, পায়ের নিচে গুঁড়ো হওয়া কাঠকুটো, মৃত পাতার আর্তচিৎকার। এখন কোন শব্দ নেই। সারারাত ধরে শিশিরেরা এসে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে ওদের।
    প্রভা (পাড়ায় এইনামেই সবাই চেনে তাঁকে) ভিজে ঘাসে রোজ এরকম একা হাঁটেন। ছোটবেলায় শেখানো হয়েছিলো, এতে নাকি চোখ ভাল থাকে। একলা হাঁটতে অবশ্য শেখানো হয়নি। তবে ভোরের এই সময়টা একা থাকতেই বেশ লাগে ওঁর।
    সে যাই হোক, শিশিরের জন্য কিনা কে জানে, এই এত বয়সেও প্রভার চোখ বেশ সতেজ। তাই এই অন্যমনস্ক অবস্থাতেও চট করে দেখে ফেললেন রঘুকে। রঘুনাথ, ওরফে রঘু এতক্ষণ বাগানের এক দুর্গম অঞ্চলে বসে মশার কামড় খাচ্ছিলো। কলাগাছের আড়ালে তাকে একা পেয়ে মশকবাহিনী এতদিনকার সমস্ত হিসেব মিটিয়ে নিয়েছে। অন্তত গত এক সপ্তাহে রঘু যত মশা মেরেছে, তাদের সবার হয়ে মধুর প্রতিশোধ নেওয়া গেছে। তো, মিনিট দশেক এই অত্যাচার সহ্য করার পর রঘু আর থাকতে না পেরে একছুটে পাঁচিলে উঠতে যাচ্ছিলো, ঠিক এমন সময় প্রভা তাকে দেখলেন। রঘুও অবশ্য প্রভাঠাকুমাকে দেখেছিলো, তাই আর এক পাও সরল না সে। চোরের নাম প্রকাশ হলে বৃহত্তর আদালতে অনেক বেশি শাস্তি পেতে হয়----এই উপলব্ধি ধরা পড়া সব চোরেরই হয়েছে, তা সে বয়সে যত ছোটই হোক না কেন। এক্ষেত্রে বৃহত্তর আদালত রঘুর বাবা শিবনাথ সামন্ত, চক্‌পাড়ার মোড়ে যাঁর চায়ের দোকান এতক্ষণে অগুন্তি মানুষের ব্যস্ত আলাপে জমে উঠেছে। শিবনাথ তাঁর নামের প্রতি চিরকালই সুবিচার করে এসেছেন, অন্তত ঠান্ডা মাথার লোক বলে তাঁর তেমন সুনাম নেই। গত সপ্তাহেই ক্লাস টেস্টে অঙ্কে পঁচিশে এগারো পাওয়ায় রঘুর পিঠে একটা স্কেল ভাঙ্গা হয়েছে। সুতরাং, রঘু যে ""আদালতের"" বাইরে ব্যাপারটা মিটিয়ে ফেলতে চাইবে, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
    প্রভা এসেই রঘুর জামার পকেট থেকে চারটে দলা পাকানো জবা বের করলেন। এরপর অসামান্য তৎপরতায় প্যান্টের পকেট সার্চ করে একমুঠো শিউলি পাওয়া গেল। ""এই নিয়ে এক হপ্তায় তিনদিন হল। বল এবার তোকে নিয়ে কি করব""- প্রায় আলেকজান্দারের ঢঙে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন প্রভা। কিন্তু দিন পাল্টেছে। ""পুরু"" তাই বুক ঠুকে জবাব দিতে পারলো না। বরং বারবার তার বাবার মুখ আর নতুন কেনা স্কেলটার (এটা আবার আগেরটার চেয়ে মোটা) কথা মনে পড়তে লাগলো। উত্তর না পেয়ে অধৈর্য হলেন প্রভা। ফুলগুলো কেড়ে নিয়ে ঠাস করে এক চড় সহযোগে দৈববাণীর মত জানিয়ে দিলেন, "" আজকেই তোর বাবাকে বলব সব""। রঘু চলে গেল সদর দরজা দিয়েই।
    তড়িঘড়ি ফুল তুলে সাজি ভরে প্রভা স্নান সেরে পুজোয় বসলেন। কাঠের সিংহাসনের থরে থরে বিগ্রহে জলসিঞ্চন হল, পুরোন পোষাক ছাড়িয়ে নতুন সাজে সেজে হাসি হাসি মুখে দেবদেবীরা অপলক চোখে তাকিয়ে রইলেন ভক্তের দিকে। এবার ফুল দেওয়ার পালা। কিন্তু আজ প্রভার কিছুতেই ফুল পছন্দ হচ্ছে না কেন? পুষ্পাঞ্জলি হল হল দায়সারা করে। পুজোশেষের প্রণামেও মনোযোগের ঘাটতি হল। আর তার মধ্যেই প্রভার মনে পড়ল, অনেকদিন আগে দক্ষিনেশ্বরে একজন পুজোর সময় বিষয় নিয়ে ভেবে চড় খেয়েছিলেন।
    পুজোর পর চা খেয়ে একটু পাড়ার খবর নেওয়ার অভ্যেস প্রভার। আজকেও বেরোলেন, তবে কেমন যেন চোরের মত। সাবধানে রাস্তায় নেমে চারদিক দেখে নিয়ে পথ চলছিলেন তিনি। বাড়িতে সবাই হইচই করে স্কুল-কলেজ-অফিসের তোড়জোর শুরু করে দিয়েছে। ""তারা কি কিছু টের পেল?"" ভেবে আরো একবার চারদিকটা দেখে নিলেন প্রভা। কারুর যাতে সন্দেহ না হয়, তাই রোজকার নিয়মেই মসজিদের দিকটা টহল দিয়ে কাঠপোল পেরিয়ে একসময় চকবাজারের মোড় এল। সামনেই শিবনাথের দোকান। এখন সকালবেলার জমায়েত অনেক হালকা হয়ে গেছে। যে দু-চারজন আছে, তাদের মূল লক্ষ্য খবরের কাগজ।
    প্রভা ঘামছিলেন। এতটা পথ হাঁটার জন্যই হয়ত। পায়ে পায়ে এগোলেন তিনি শিবনাথের দোকানের দিকে, "" কিরে শিবু, খবর সব ভাল তো?"" এতক্ষণে একটু ফুরসত পেয়ে শিবনাথ সবে জিরোচ্ছিলেন। অন্যদিনের মতই বেরিয়ে এলেন তিনি, "" ঐ একরকম চলছে জেঠিমা। আপনাদের বাড়ির সব ভাল তো?"" এরকম আলাপ প্রায় রোজই হয়। আজকেও এইসব তুচ্ছ কথাবার্তার শেষে প্রভা বিদায় নিলেন। তারপর দু-পা গিয়েই কি যেন হঠাৎ মনে পড়ে গেল। ফিরে এলেন তিনি। একটু কিন্তু কিন্তু করে, আঁচলের গিঁট খুলে কি একটা শিবনাথের হাতে গুঁজে দিয়ে বললেন, "" কথায় কথায় ভুলেই গেছিলাম। এটা দিয়ে পুজোয় ছেলেটাকে কিছু কিনে দিস। আসি রে আজ, অনেক দেরী হল।"" অবাক শিবনাথ জবাবে কিছু একটা বললেন, কিন্তু প্রভার ভয়ানক তাড়া ছিলো।
    হনহনিয়ে চকবাজার এলাকা পেরিয়ে তবেই গতি কমালেন প্রভা। এখন আর তাঁর একটুও ভয় করছিলো না। আবার ভোরবেলার মতই পুজো পুজো গন্ধ টের পাওয়া যাচ্ছে। আকাশ ঝকঝকে নীল, এতক্ষণে ভাল করে দেখা গেল। সাহাপাড়ার মাঠে বাঁশের কাঠামো জেগে উঠছে, এটাও আগে চোখে পড়েনি ভেবে আশ্চর্যই হলেন তিনি। উৎসবের আয়োজনে কোন ত্রুটি নেই দেখে বেশ আনন্দ হল তাঁর। আনমনে হাঁটতে হাঁটতে কখন হঠাৎ পথ ফুরোলো, পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরে এলেন ক্ষণপ্রভা। ততক্ষণে তাঁর মনের ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। পুজো এল।
    --------------x------------------------
  • ac | 79.67.80.195 | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২১:০৮392385
  • ভালো লাগলো। শেষ গল্পটা বড়ো ভালো লাগলো টিম।
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ০৭:২৮392386
  • ac
    ধন্যযোগ। কেউ পড়ছে জানলে ভালো লাগে।
  • Shn | 203.123.181.130 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ১১:৫২392387
  • টিম, বড্ড ভালো লাগল এই শেষ গল্পটা। পুজো ভালো কাটুক।
  • d | 61.17.13.132 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২১:৪৯392388
  • আমার অবশ্য ৩#টা বেশী ভাল লেগেছে।
  • Tim | 128.173.157.36 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২২:০৪392389
  • থ্যাংকু Shn, দ
    আচ্ছা, অন্য কোথাও প্রকাশিত (অনলাইন পত্রিকা না) গল্প এখানে তুলে দিলে কি সমস্যা হবে? নাহলে পুরোনো দুটো গপ্প দিতুম।
  • d | 61.17.13.132 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২২:১৭392390
  • সেই পত্রিকাদের অসুবিধে না হলে গুরুদেরই কি আর চন্ডালদেরই বা কি। তাঁরা আপত্তি না করলেই হল। তবে আমার মতে কোথায়, কবে প্রকাশিত, সেটার উল্লেখ থাকাটা বোধহয় ভাল।
  • Tim | 128.173.157.36 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৭ ২২:৩০392391
  • হুম। আগে তবে তাঁদের জিগাই, তাপ্পর।
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৮ অক্টোবর ২০০৭ ১৪:২৪392392
  • খবরের কাগজটা ভাঁজ করে টেবিলের ওপর রেখে উঠে পড়লেন পরমার্থ। রোদ পড়ে এসেছে অনেকক্ষণ। চারদিক ছায়াময়। বারান্দায় এসে দাঁড়ালে দেখা যেত, দুটো একটা করে আলো জ্বলে উঠছে এখানে ওখানে। উঁচু উঁচু বহুতলময় এক পাড়ায় পরমার্থর বাস। এই ফ্ল্যাটটা রিটায়ার করার পরে কেনা, মাত্রই বছর দশেক আগের কথা। ছোট একটা ডাইনিং স্পেস, একটুকরো রান্নাঘর, লাগোয়া বাথ আর হাত দুয়েক বারান্দা বাদ দিলে পড়ে থাকে একটা ঘর। কেনার সময় সুমিত্রা বলেছিল, "" আমরা দুটো মাত্র প্রাণী, কিহবে বড়ো ফ্ল্যাটে? বরং আরো বেশি করে ফাঁকা ফাঁকা লাগবে ""। সেই ঘরে এখন সুমিত্রা চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়ে। বারান্দার দিকে যেতে যেতে এক ঝলক দেখে গেলেন পরমার্থ। সুমি ঘুমোচ্ছে কি? হয়ত বা। ব্যাথাটা এখন কমেছে তাহলে। খানিকটা নিশ্চিন্ত হয়ে বারান্দায় চলে এলেন পরমার্থ।
    তিনতলার বারান্দা থেকে বাড়ির সামনেটা দেখতে বেশ লাগে। একফালি রাস্তা চলে গেছে সামনে দিয়ে। ঐ রাস্তা এঁকে বেঁকে সমস্ত পাড়াটা ঘুরে বড়ো রাস্তায় মিশেছে। তাই সবার যাতায়াত এই রাস্তা ধরেই। আজকেও রাস্তায় অনেক লোক। বেশিরভাগই অল্পবয়সীর দল। ঝলমলে বিচিত্র পোষাকে সেজে, দল বেঁধে চলেছে সবাই বড়ো রাস্তার দিকে। তাদের হাতের মোবাইল থেকে আলো ঠিকরে ছড়িয়ে যাচ্ছে এখানে সেখানে।
    এটা উৎসবের সময়। হাওয়ায় কেমন একটা মাদকতার স্পর্শ টের পাওয়া যায়। এই কখনও গুমোট, কখনও ঝোড়ো হাওয়া খুব চেনা চেনা লাগে পরমার্থর। মফস্বলের যে পুজোয় ফি বছর ঝড়ের বেগে চারটে দিন কেটে যেত, সেখানেও এরকম হত। তখন কায়দা করে উৎসব বলার চল হয়নি। সবাই বলত দুগ্গাপুজো। এলাকায় একটাই পুজো হত। বিরাট মাঠে সবাই মিলে চারটে দিন জমিয়ে আড্ডা দিত। খাওয়ার ব্যবস্থাও সেখানে। তারপর সব চুকেবুকে গেলে উদ্বৃত্ত অর্থে জলসা। সেও আরেক মহোৎসব। যেবার সুমিত্রার সাথে আলাপ হল, সেটাও তো একটা পুজোতেই। ওরা তখন ফার্স্ট ইয়ারে কি? আবছা হয়ে আসা স্মৃতি হাতড়ে হিসেব মেলানোর চেষ্টা করেন পরমার্থ। আজকাল অনেক কথাই মনে পড়ে না। যেমন কিছুতেই মনে পড়ছে না, কোন বছরের পুজোতে ঠাকুমা মারা গেলেন, বা সেই যেবার মিলনদার দোকানের সামনে একটা পকেটমার ধরা পড়ল, সেটার কথা। তবে একবছরের কথা বেশ মনে আছে এখনও। সেবার....

    ডোরবেল বাজল। দরজা খুলতেই মিতুদি ঢুকে এলেন, "" শুনলাম সুমি-টার নাকি ব্যাথা আবার বেড়েছে। আজ সকালে হাঁটতে যাই নি। এই বিকেলে বৈশাখী বলল..... কই সে? "" খবরাখবর নিয়ে ওপরে নিজের ফ্ল্যাটে চলে গেলেন মিত্রা, সকলের প্রিয় মিতুদি। পরমার্থদের একটা ছোট দল মতন আছে। জনা দশেক মিলে সকালে বিকেলে হাঁটতে যান কাছের একটা পার্কে। আগে আগে সুমিত্রাও যেতেন। সেও বছর দুয়েক হয়ে গেল। এখন বিছানাই একমাত্র আশ্রয় তাঁর।

    কলিং বেল আর কথার আওয়াজে বোধহয় ঘুম ভেঙ্গে গেছিলো সুমিত্রার। পরমার্থ যদিও খুব নিচুস্বরেই কথা বলছিলেন, তবু ঘুম ভাঙ্গল। সুমিত্রার ঘুম চিরকালই খুব হালকা। এক চিলতে আলো বা আধফোটা আওয়াজেও সে ঘুম ভেঙ্গে যেতে দেখেছেন পরমার্থ। তাই ভেতরের ঘর থেকে সুমিত্রার ক্ষীণ কণ্ঠস্বর পেয়ে তিনি একটুও অবাক হলেন না, "" তুমি কি বারান্দায় ? একবার সোহিনীদের ফোন করে খবর নিয়ো। পাপাইয়ের পরশুদিন থেকে খুব জ্বর। "" পরমার্থ ফোন নম্বরের ডাইরি আর কর্ডলেস সেটটা নিয়ে বসলেন আবার টেবিলে। আরো কয়েকজনের খবর নিতে হবে। এতক্ষণ খেয়াল ছিলোনা।

    একে একে রোজকার সমস্ত কাজ মিটলে পরে পরমার্থ আবার বারান্দায় এলেন। রাত ঘন হয়ে আসতেই সামনের রাস্তা জনহীন হয়ে যায়। অস্ফুট ঝিঁঝিঁর ডাক ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। দূরে কোথাও টিভি সিরিয়াল শেষ হল বোধহয়। আরো অনেক প্রহর পার করে, একে একে ঘরপানে ফিরবে সবাই। তখন আবার কলকাকলিতে ভরে উঠবে এই পথ। ততক্ষণ পরমার্থর কোন কাজ নেই। বারান্দার আধো আবছায়ায় বসে, অতীতচারণে ডুবে যান তিনি। স্মৃতিপথে এলোমেলো হেঁটে যান পরমার্থ সেন।
    -----------------------
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৩ নভেম্বর ২০০৭ ০৮:৩৬392394
  • এটি এক সদাশয়, পন্ডিত ও বহুভাষাবিদ ব্যাঙের কাহিনী। আজ থেকে অনেকদিন আগে তিনি এই গোলচে গ্রহের এক ছোট্ট দেশে ততোধিক ছোট এক শহরে বাস করতেন। আমরা যারা এরোপ্লেনের জানলা দিয়ে অনেক নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শহর, নদী, রাস্তা দেখে মুগ্‌ধ হয়েছি, বা যারা মোটেই মুগ্‌ধ হইনি, বা যারা তাকিয়েও দেখিনি, আমরা সবাই জানি, উঁচু থেকে দেখতে মসৃণ আর পরিপাটি লাগলেও আসলে এইসবকিছু অজস্র খুঁতে ভরা। কোথাও বর্ষার জমা জলে মশার লার্ভা বিলি কেটে কেটে চলেফিরে বেড়ায়, কোন ফাটলে বাসা বাঁধে সরীসৃপ, কোথাও বা স্তুপ হয়ে থাকে জঞ্জালেরা। অবাক হওয়ার কিছু নেই, সিন্দুক ভর্তি মোহর বা আলমারী ভর্তি বন্দুক না থাকলে কেই বা এইসব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামায়।
    তো, আমাদের কাহিনীর নায়ক, সেই পন্ডিত ব্যাঙটি, ধরে নেওয়া যাক নাম তার মঙ্ক, সেই ছোট শহরের একমাত্র বিমানঘাঁটিতে রানওয়ের পাশের এক বিশাল ফাটলে সপরিবারে থাকতেন। বন্ধুবান্ধব, ছেলেপুলেনাতিনাতনী নিয়ে মঙ্কের বিশাল পরিবার। অবসরে তারা রানওয়ের জমা জলে ছপাছপ ব্যাংবল খেলে, আর জংলাঘাসের ফাঁকে লুকিয়ে থাকা ফড়িং বা অন্য পোকামাকড় ধরে খায়। এইভাবেই বেশ চলছিলো তাদের জীবন, অলস ছন্দে। কিন্তু একদিন সকালে মঙ্কের সত্যদর্শন হল। কি করে হল সেটা ভাল জানা যায় না। কেউ বলে স্বপ্ন পেয়েছিলেন আগের রাতে, কেউ বলে ধ্যানে জেনেছিলেন, আর গুটিকয় সাহসী বলে.... সেকথা থাক।
    মোদ্দা কথা, ব্যাঙসমাজের মাথা হিসেবে মঙ্ক ঘোষণা করলেন, ""এখন থেকে শুধু খেয়ে-শুয়ে-খেলে সময় কাটানো চলবে না। সবাইকে পড়াশুনো করে শিক্ষিত, সভ্য হতে হবে। সামনেই জ্ঞানসমুদ্র, তার পিছনেই পড়ে আছে অযুতনিযুত কর্মক্ষেত্র... অতএব ভাইসব..."" ইত্যাদি। সেইমত সবাই মিলে পড়াশুনো শুরু হল। মঙ্ক আগেই মানুষের ভাষা জানতেন, তিনি-ই সবাইকে শিখিয়ে পড়িয়ে দস্তুরমত স্বাক্ষর করে তুললেন। অল্পদিনেই ব্যাঙেদের নিজস্ব লিপি তৈরী হল। তারপর একদিন চালু হয়ে গেল ব্যাঙেদের নিজস্ব সংবাদপত্র, নাম দেওয়া হল ""ভেকবার্তা""। নিত্যনতুন আবিষ্কারে সমৃদ্ধ হতে লাগল ব্যাঙসমাজ, আর সকলে একবাক্যে স্বীকার করে নিল এইসবই মঙ্কের জন্য সম্ভব হয়েছে। যাই হোক, দিন কাটতে লাগল ঝড়ের মত।
    ....
    নভেম্বর মাস। শীতের নরম রোদে গা এলিয়ে মঙ্ক হালকা শ্যাওলা দেওয়া পানীয় ভেকাকোলায় চুমুক দিতে দিতে কাগজ পড়ছিলেন। ভেকবার্তায় আজ উল্লেখযোগ্য কিছু নেই। শুধু এয়ারপোর্টের পশ্চিম কোণে একটা শুঁড়হীন হাতি শুয়ে থাকতে দেখা গেছে, এইটাই যা নতুন খবর। অবশ্য মঙ্ক একটা মানুষদের কাগজও পড়ে থাকেন। সেখানে রোজকার মতই দারুণ সব ছবি আর খবর বেরিয়েছে। তারমধ্যে একটা ছবিতে এরোপ্লেন দেখে উৎসুক হলেন মঙ্ক। দেখা গেল সেটা একটা বিজ্ঞপ্তি। তার সারমর্ম: ""...অতএব ঘোষণা করা হচ্ছে, আগামী একমাস বিমানযাত্রার সমস্ত টিকিট এক তৃতীয়াংশ মূল্যে পাওয়া যাবে। শীঘ্র নিজের নিজের এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করুন....""।
    খবর পড়ে তো মঙ্কের মন আনন্দে নেচে উঠল। এখন তাঁর অগাধ অবসর। উন্নয়নের যাবতীয় দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের হাতে সঁপে দিয়ে তিনি নিশ্চিন্ত । এই সুযোগে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা আত্মীয়দের সাথে দেখা করে নেওয়া যাবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। তক্ষুনি এজেন্ট মি: টোডের সাথে দেখা করে টিকিট জোগাড় হয়ে গেল। ঠিক হল, তিনদিন পরে যাত্রা হবে শুরু।
    দেখতে দেখতে যাত্রার দিন চলে এল। অনুচরদের কর্তব্য বুঝিয়ে, দরকারমত উপদেশ দিয়ে, মঙ্ক আর তার গিন্নী রওনা দিলেন। প্লেন কোথা থেকে ছাড়ে সেটা মঙ্কের জানাই ছিলো। উত্তরে দুশো লাফ গিয়ে একটা হলদে দাগ ধরে পুবে তিনশো লাফ । তাহলেই কয়েকটা কাচের ঘর দেখা যাবে। তারপর একটু সাবধানে এগিয়ে চাকা বাঁচিয়ে সিঁড়ি অবধি পৌঁছে জলদি প্লেনে উঠে পড়তে হবে।
    প্লেনে চড়া মঙ্কের এই প্রথম না। সেই যেবারে জংলা ঘাসবনের ডগা অবধি জল জমে গেছিলো বৃষ্টিতে, সেইবার তিনি ঠাকুর্দার শ্রাদ্ধে গিয়েছিলেন প্লেনে চড়ে। সে যাই হোক, এবারেও নির্বিঘ্নে দুজনে চুপিচুপি প্লেনে গিয়ে উঠলেন। মানুষেরা কিনা খুব সভ্য, তাই তাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ জ্ঞান নেই। সাপ-ব্যাঙ-প্যাঁচা, যাই হোক না কেন, সবার জন্য সমান নিয়ম। নিজেদের নির্দিষ্ট সিটে বসে ভাল করে চারিদিক দেখতে লাগলেন মঙ্ক। ভ্রমণ শেষে তাঁকে জব্বর একখানা বই লিখতে হবে, সব পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখে রাখা চাই। চারপাশে তখন তুমুল হট্টগোল চলছে। সবাই ভালো সিট চায়, জিনিস রাখার জায়গা চায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই বোঝা গেল, বিমান কোম্পানীর ভুলে যতগুলো সিট, তার চেয়ে বেশী টিকিট বিক্রি হয়েছে। অত:পর আরো গোলমাল শুরু হল। ঘন ঘন স্পীকারে সুললিত কণ্ঠে আবেদন জানানো চলল, দয়া করে কেউ নেমে গিয়ে অন্যদের যাত্রার সুবিধে করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু কে শোনে কার কথা! মঙ্কের পেছনের সিটে বসেছিলেন বিখ্যাত নেতা পিং পং। তাঁর অনুচরেরা সবাইকে শাসাতে লাগল, শিগ্গির প্লেন থেকে নেমে না গেলে পরে পস্তাতে হবে। অমনি পাশ থেকে আরেকদল, তাঁদের নেতার নাম সুবর্ণ জয়ন্তী, উঠে ততোধিক হম্বিতম্বি শুরু করল। তারপর একে একে বোয়াল ইসা, অরেঞ্জ জুস প্রমুখ অন্যান্য নেতারাও আত্মপ্রকাশ করলেন, দেখা গেল সবার দলেই কয়েকজন করে লোক আছে। তখন একটা কুরুক্ষেত্র বেধে গেল। যে যাকে সামনে পেল আক্রমণ করল। অল্পক্ষণের মধ্যেই সুবর্ণ জয়ন্তীর দলের একজন লোক মঙ্কগিন্নীকে টপ করে তুলে সজোরে দরজার বাইরে ছুঁড়ে দিলো। মঙ্কের তখন মাথার ঠিক নেই। এমন হট্টগোল তিনি জন্মে দেখেন নি। তড়িঘড়ি কোনমতে প্রাণ হাতে করে দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলেন তিনি। একছুটে গিন্নীর কাছে পৌঁছে দেখলেন, ছোট্ট দেহটা নিশ্চল শুয়ে আছে ঘাসের মধ্যে। বেচারার শরীরটা ঠুকে গিয়েছিলো একটা পাথরে, ঐ যে , পাশেই পড়ে আছে সেই পাথরটাও। নিকষ কালো একটা সাধারণ পাথর, কে জানত ওর মধ্যে এমন অলৌকিক শক্তি জমা হয়ে আছে?
    এতক্ষণে মঙ্কের বেশ রাগ হল। একছুটে তিনি চললেন প্লেনের দিকে, এক্ষুনি এর বিহিত চাই। রানওয়ের দিকে ফিরতেই সেখানে আরো কিসব যেন পড়ে থাকতে দেখা গেল। কাছে গিয়ে দেখা গেল, নানান জীবজন্তুর শবদেহে ভরে আছে প্লেনের চারিপাশ। মানুষের দেহও আছে। তাদের দেখেই চিনলেন মঙ্ক, এনারা কেউ দল পাকিয়ে মারামারি করছিলেন না, নিতান্তই ছাপোষা মানুষ। এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা কানে তালা লাগানো আওয়াজ করে প্লেনটা চলতে শুরু করল। মঙ্ক প্লেনের খুব কাছেই ছিলেন। আচমকা প্লেনটা চলতে শুরু করায় হতবুদ্ধির মত দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা চাকা তাঁকে পিচঢালা রানওয়েতে লেপ্টে দিয়ে চলে গেল।
    ....
    দুদিন পরে ভেকবার্তায় মহাসমারোহে মঙ্ক ও তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ ছাপা হল। অনেকদিন ধরে এই দুটি মৃত্যুর ময়নাতদন্ত এবং শোক এয়ারপোর্ট সংলগ্ন ব্যাঙসমাজকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো। কিন্তু যেহেতু তারা পুরোপুরি সভ্য হয়নি তখনও, তাই এই সামান্য দুর্ঘটনার জন্য তারা মানুষকেই দায়ী করে। এবং এরপর থেকে মানুষের দেখানো সভ্যতার পথ তারা বর্জন করে। সেই থেকে ব্যাঙেদের সাথে আমাদের কিছু মূলগত পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে। ওরা আমাদের মত সভ্য হতে পারেনি।
    ------------------
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন