এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • খড়কুটো পাখীর পালক ধূলিকণা হয়ে ওঠা গল্পেরা

    Tim
    অন্যান্য | ২৭ আগস্ট ২০০৭ | ৩৬৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 204.111.134.55 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৭ ১৭:৪১392395
  • এক উইকেন্ডের শুরুতে, ভোররাতের দিকে সুব্রত স্বপ্নাদেশ পেল। সুব্রত কোথায় থাকে, বয়স কত, রাত্রে কি খেয়েছিলো বা বেকার কিনা দয়া করে এইসব অনাবশ্যক বাজে প্রশ্ন করবেন না। বরং গপ্পটা শুনুন। স্বপ্নে ঘোর নীলবর্ণ দীর্ঘদেহী ( পুরুষ কি মহিলা বোঝার মত মনের অবস্থা ছিলোনা তখন সুব্রতর, তাছাড়া সেদিন সে ঘুমোতে যাওয়ার সময় চশমা পরতে ভুলে গিয়েছিলো) একজন এসে বললেন, "" ভ্যান্তারা না করে শিগ্গির বলে ফ্যাল কি চাই।"" থতমত খেয়ে, ঘামে ভিজে সুব্রত বলল..., না, বলবে ভাবল যে, "" একটু ভাববো স্যার?""। কিন্তু সাহসে কুলোলো না। তাই চট করে মাথায় যা এল তাই বলে দিলো সে, "" শান্তি চাই, আনন্দময় জীবন চাই।"" ( বলা বাহুল্য, এইসব ভালো ভালো কথা সে আগেরদিনই এক ধর্মীয় সেমিনারে জনৈক সন্ন্যাসীকে বলতে শুনেছিলো)। সে যাই হোক, ভগবান দেখা গেল খুবই অল্প কথার মানুষ। বর চাওয়ামাত্র সুব্রত মাউসে ক্লিক করার মত একটা শব্দ শুনতে পেল। ওর মনে হল এই আওয়াজকেই পুরোনো দিনের লোকেরা তথাস্তু বলে ভুল করত হয়ত। ফিক করে হেসে, ক্লিক করে চলে গেলেন ভগবান।

    তার পরমুহুর্তেই সুব্রতদের বাড়িটা দুলে উঠল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেওয়ালে টাঙানো ছবিগুলো মেঝেতে ছিটকে পড়ল। বহুদিনের পুরোনো, জরাজীর্ন বাড়িটা দুদ্দার শব্দে ভেঙ্গে পড়তে লাগলো। বাইরে কে যেন চেঁচিয়ে উঠলো, গলা শুনে সুব্রতর মনে হল উল্টো ফুটপাথে যে লোকটা জামাকাপড় ইস্ত্রি করে, সে বোধহয়। এরপর আর কিছু না ভেবে সুব্রত একলাফে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলো। আর তক্ষুনি গোটা বাড়িটা হুড়মুড় করে শতখান হয়ে ভেঙ্গে পড়লো ওর সামনেই। এক লহমায় সবাই মারা পড়লো।
    সেদিন শহরের অন্যপ্রান্তের এক নার্সিংহোমের আইসিইউ তে শুয়ে রাত্রে আবার ঈশ্বরের দেখা পেল সুব্রত। অবাক হয়ে সে দেখল, ঈশ্বরের রং আর আকার দুইই পাল্টে গেছে। হলদেটে রঙের বেঁটেখাটো সেই মানুষটি এসে দাঁড়ানোমাত্রই সুব্রত ফুঁপিয়ে কেঁদেকেটে একসা। গমগমে ব্যারিটোনে ঈশ্বর বললেন, "" কেন, বর চাওয়ার সময় মনে ছিলোনা? এই যে এখন কোন পিছুটান নেই, দায়হীন পালকের মত ভারহীন অবস্থা, এইই তো শান্তি। এইই তো আনন্দময় জীবন।""
    কিন্তু সুব্রত তখনও ফোঁপাচ্ছিলো। তাই দেখে দয়া করে ভগবান বললেন, "" বেশ, একজনকে বাঁচিয়ে দিতে পারি। কাকে চাই বল""।
    ভাবুন দেখি কি মুশকিল! মা-বাবা-ভাই-বোন-বউ-বাচ্চা নিয়ে ভরা পরিবার। আর তার থেকে কিনা একজন? কাকে বাছে? ওদিকে ভগবানের সময় খুব কম। কুইজ মাস্টারের মত একটা স্টপ ওয়াচ চালিয়ে দিয়েছেন, টিক টিক করে বেজে চলেছে সে ঘড়ি।
    অসহায়ভাবে এদিক সেদিক তাকিয়ে সুব্রত আবিষ্কার করল তার দিব্যদৃষ্টি হয়েছে। দূরে-কাছের যেকোন জিনিস সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। ওদের বাড়িটা যেখানে ছিলো সেখানে এখন ধ্বংসস্তুপ। সেই ধ্বংসস্তুপের এখানে ওখানে মৃতদেহ ঘিরে মানুষের ঢল নেমেছে। নানারঙের আলো চমকিয়ে গাড়ি আসছে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে একটা জায়গায় চোখ আটকে গেল সুব্রতর। ফিরোজ নামের ঐ ইস্ত্রিওয়ালার প্রায় তাল পাকিয়ে যাওয়া দেহটা গাড়িতে তোলা হচ্ছে।

    চারদিকে এত রক্ত দেখেই হয়ত সুব্রতর মাথাটা ঘুরে গিয়ে থাকবে। স্টপওয়াচে সময় শেষ হওয়ার ঠিক আগের মুহুর্তে সে চেঁচিয়ে উঠলো, ""ঐ যে, ওকে বাঁচান, এক্ষুনি....""। বলেই অজ্ঞান হয়ে গেল সে। আবার একটা শব্দ হল.... ক্লিক!
    ----
    কানফাটানো প্রচন্ড একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে গেল ফিরোজের। এক লহমায় ব্যাপরটা ধরে ফেলল সে। কান ঘেঁষে একটা কার্নিশ ভেঙ্গে পড়তেই সে আর ঝুঁকি না নিয়ে একছুটে উল্টোদিকের ফুটপাথে উঠে এলো। দিশেহারা হয়ে ভাবছে কি করা উচিত, এমন সময় শুনতে পেল কে যেন গোঙাচ্ছে। আওয়াজটা চাটুজ্জেদের একতলার ঘর থেকে আসছে বলেই মনে হল তার। হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়তে চলা একতলার সেই ঘরে ঢুকে কিভাবে রক্তে ভেসে যাওয়া একটা শরীর ফিরোজ বয়ে আনতে পেরেছিলো কে জানে। তবে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় শহরের অন্যপ্রান্তের আইসিইউতে ভর্তি হলেও, সুব্রতর সেরে উঠতে দেরী হয় নি।
    ---------
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৬ ডিসেম্বর ২০০৭ ১৩:৫৩392396
  • আচমকা দেওয়ালে মাথাটা ঠুকে যেতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘড়ি বলছে রাত দুটো। এতক্ষণ ঘুমিয়েছে ভেবে যারপরনাই আশ্চর্য হল পুলু। আজকেও অঙ্কগুলো শেষ করা হল না। অভিদা এবার ছাল ছাড়িয়ে নেবে। প্ল্যানটা কিন্তু ঠিকঠাকই হয়েছিল তার। সন্ধ্যের দিকে কেমিস্ট্রি, রাতে খাওয়ার পরে বায়োর একটা চ্যাপ্টার একটু ঝালিয়ে নিয়ে অঙ্কগুলো শেষ করে ফেলার কথা। আসলে বায়োলজিটাই যত নষ্টের গোড়া। বইএর শুরুর দিকের গাছগাছালির গল্প পড়তে পড়তেই কখন যেন চোখ টেনে এসেছে। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দিব্যি একটা স্বপ্ন দেখছিল, এখন ঠিক মনে পড়ছে না অবশ্য ওর ঠিক কি ছিলো স্বপ্নে, তবে বেশ খুশির স্বপ্ন সন্দেহ নেই।

    ""নাহ! একটু বাগানে হেঁটে আসি ""- ভেবে হাই তুলে বেরিয়ে এলো পুলু। উঠোনের আলোটা জ্বালাতেই বাইরেটা যেন হেসে উঠে হাতছানি দিলো। বাড়ির চারপাশ ঘিরে বাগান। উঠোন পেরিয়ে সেদিকে পায়ে পায়ে এগোলেই একে একে কাঠগোলাপ, অশোক আর জবাফুলের গাছ। এসবই পুলুর ঠাকুমা প্রমদাসুন্দরীর বড় যত্নের জিনিস। বাড়ির কর্তা বৈকুণ্ঠবাবু মোটেই ফুলগাছ পছন্দ করতেন না। তাঁর আগ্রহ ছিলো ফলের গাছ নিয়ে। সেই সুবাদে এসেছে আম, জাম, জামরুল, পেয়ারা আর পেল্লায় এক নারকেল গাছ। এখন কর্তাগিন্নী কেউ নেই তাই বাগানে আগাছার জঙ্গল হয়েছে। সন্ধ্যের পরেই থেকে থেকে তক্ষক ডাকতে থাকে, সাপখোপ আর ছুঁচোর আড্ডা হয়েছে কোনার দিকে।
    এইসব দেখতে দেখতে পুলু বাগানটা পুরো চক্কর দিয়ে শিউলি গাছটার কাছে এসে দাঁড়ালো। বাকি সবকিছুর মত শিউলিরও সেদিন আর নেই। এখানে সেখানে মাকড়শার জাল, কিজানি কোন পোকায় গায়ে গর্ত করে বাসা বেঁধেছে। তবে ফুল ফোটে এখনও। মাঝরাতের দিকে ফুল ফোটে হয়ত, সকালে দেখা যায় পাতায় পাতায় জমে আছে খসে পড়া ফুল। গাছের নিচেও অবশ্য জমে থাকে কিছু। আগে আগে, যখন প্রমদাসুন্দরী বেঁচে ছিলেন, তখন বাড়ির কচিকাঁচাদের নিয়ে ভোরবেলা ফুল তুলতেন তিনি। পা টিপে টিপে চলতে হত বাগানে, পা দিয়ে ফুল মাড়িয়ে দিলেই বকতেন তিনি। ছুটির সময় পুলু আর ওর পিসতুতো বোন টিংকাই একটা পরিষ্কার সাদা চাদর মেলে ধরত আর ঠাম্মা গাছের সরু গুঁড়িটা ধরে ঝাঁকাতেন। পাতায় জমে থাকা ফুলে ভরে যেত চাদর। টিংকাই একবার ফুল পড়ার সময় হঠাৎ পা চুলকোতে গিয়ে সব ফুল ফেলে দিয়েছিলো, এখন এতদিন পরে সেকথা ভেবে হাসি পেল পুলুর। সত্যি কি বোকা ছিলো টিংকাইটা!

    বাগান চক্কর দেওয়া শেষ হলে রকে এসে বসলো পুলু। এই জায়গাটায় বসলেই কিজানি কেন আকাশের দিকে চোখ চলে যায়। আজ আকাশ একেবারে ঝকঝকে, তার মেঘহীন গায়ে তারাগুলো চুমকির মত করে লাগানো, তাকিয়ে তাকিয়ে ঘাড় ব্যথা হয়ে গেলেও চোখ ফেরানো যায় না। বরং এমন সব উদ্ভট কথা মনে হয়, ভাবলেও অবাক হয় পুলু। অভিদা বলেছে আজেবাজে গপ্পের বই পড়ে পুলুর পড়াশুনোর বারোটা বাজছে। এরকম চললে কোত্থাও অ্যাডমিশান পাবে না। সত্যি বলতে কি, কেমন একটা গাছাড়া ভাব টের পায় পুলু মাঝে মধ্যেই। ইংরেজীর মাষ্টারমশাই সেদিন কিসব বললেন পড়াতে এসে, সেই থেকেই একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। মাষ্টারমশাই বলছিলেন, ""কেন"" শব্দটা খুব বিপজ্জনক। কারণ আমরা অনেক এমন কাজই করি যার কোন যুক্তি নেই। এই যেমন, ধরা যাক, পুলু মন দিয়ে পড়াশুনো করবে। কেন করবে? না ভালো চাকরি পেতে হবে। কেন ভালো চাকরি? না, টাকা হবে, অভাব থাকবে না, সুখে কাটবে জীবন। কিন্তু তাহলে বাপ্পাদার মা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদছিলো কেন? বাপ্পাদা ইঞ্জিনীয়ার, বছর দুই হল ভালো চাকরি পেয়েছে। এইখানে এসে পুলুর যুক্তিস্রোত আটকে যায়। হয়ত বা তথ্যের অভাবে। তবে এটা ঠিকই বলেছেন স্যার, ""কেন"" খুব গোলমেলে কথা।
    তারপরে ধরা যাক, সোনুদের কথা। ওদেরও কত টাকা, নেমপ্লেটে কুকুরের ছবি আঁকা থাকে। কিন্তু সোনু ওর বাবার সাথে কথাই বলেনা, নিজের চোখে দেখেছে পুলু। আরো কত উদাহরণ খুঁজে পায় পুলু হাতের কাছেই। আকাশের গায়ে ফুটে থাকা অজস্র তারা, আর গাছের পাতায় জমে থাকা ফুলের মতই অগুন্তি অখুশি মানুষের মুখ মনে আনাগোনা করে। ভাবতে ভাবতে সময় কেটে যায় অলক্ষে, হাওয়া ঠান্ডা হয়ে আসে......
    ****
    ""কিরে! এখানে ঘুমোচ্ছিস কেন?" শুনে ধরফড়িয়ে উঠে বোকার মত ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে পুলু। কখন সকাল হয়ে গেছে। কাকিমা হাসিহাসি মুখে সামনে দাঁড়িয়ে। চোখেমুখে কৌতুক চলকে পড়ছে। আজ খাওয়ার সময় এই নিয়ে ভয়ানক খ্যাপানো হবে পুলুকে। কোনমতে উঠে পড়ে পড়ার ঘরের দিকে দৌড়োলো পুলু। দুপুরের মধ্যে অঙ্কগুলো শেষ না করলেই নয়।
    ----------
  • Shuchismita | 12.1.219.253 | ১৭ ডিসেম্বর ২০০৭ ২১:৩২392397
  • বা:!
  • Tim | 204.111.134.55 | ১৮ ডিসেম্বর ২০০৭ ১১:৫৩392398
  • বিকেল তিনটে নাগাদ ঝেঁপে বৃষ্টি আসায় নবেন্দু ক্লাবে যাওয়াটা মুলতুবি রাখলো। আজ বাড়ি ফাঁকা। শুভদীপ কলেজ থেকে ফেরেনি। দেবজ্যোতি মাসীর বাড়ি গেছে। আসন্ন বিকেলটা কিভাবে কাটাবে ভেবে অস্থির হয়ে পড়লো নবেন্দু। একবার ভাবলো ডিভিডিতে পুরোনো সিনেমা দেখবে, বা কম্পিউটারে গেমস খেলবে কোনো। আচ্ছা, বই পড়লে কেমন হয়? কিন্তু কিছুতেই খুব একটা আগ্রহ তৈরী হচ্ছে না আজ। নবেন্দু জানে,একেকদিন এরকম হয়। হাতে অঢেল সময়, অথচ কোন কিছুতেই মন বসতে চায় না। অন্যদিন এতক্ষণে তিনমূর্তি একসাথে আড্ডায় বসে যেত। আজ ওদের ফিরতে দেরী হবে জেনেই ক্লাবে যাবে ভেবেছিলো। সেখানে বাপিদা, সুকুমার আর কৌশিকের সাথে কয়েকঘন্টা আড্ডা দেওয়া যাবে। হঠাৎ তেড়ে বৃষ্টি এসে সব প্ল্যান ভেস্তে দিয়েছে।
    ""নাহ, বিকেলটা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে হবে মনে হচ্ছে "" নিজের মনেই বিড়বিড় করলো নবেন্দু। তারপর অলস পায়ে জানলার ধারে গিয়ে বসলো। বৃষ্টিও হচ্ছে বটে একখানা দেখার মত। জানলার কাচে জলের ফোঁটাগুলো ক্রমশই আবছায়া ঘনিয়ে তুলছে। একটু একটু করে পিচঢালা নতুন রাস্তাটা, তার ওপাশের বাড়ি, গাছ মুছে যাচ্ছে। অনেকক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে একসময় বেশ ভালো-ই লাগতে শুরু করলো নবেন্দুর। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে কমছে, কখনো বা এক ঝলক দেখা গেল সামনের লাইটপোস্টের মাথায় একটা কাক বসে.... তারপর হঠাৎই উড়ে গেল ভিজে সপসপে হয়ে।
    বসে বসে এইসবই দেখছিলো নবেন্দু। ওদের তিনজনের ভাগাভাগির এই ফ্ল্যাটবাড়িতে এই প্রথম সে এতটা সময় একা, একেবারে নিজের মুখোমুখি হয়েছে। দেখতে দেখতে তিনমাস হয়ে গেল ওদের এই ভাড়াবাড়িতে। তিনজনের বাড়িই মফস্বলে, তিনজনেরই ফোর্থ সেম চলছে।
    ওদিকে বাইরে বৃষ্টির শব্দ আরো জোরালো হয়েছে। জানলার বাহারি কাচের কারুকাজ বেয়ে ব্যস্ত হয়ে নেমে আসছে জলধারা। কোন কোন জায়গা নতুন করে ঝলমল করে উঠছে, আবার কোন জায়গা একেবারে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে নবেন্দুর মনে হল সে যেন বহু বছরের পুরোনো কোন ডায়রির পাতা ওলটাচ্ছে। কিছু স্মৃতি, কিছু চরিত্র ঝাপসা হয়ে গেছে সেখানে, কোনটা খুব উঙ্কÄল.... আবার কোনটা ক্ষয় পেতে পেতে একেবারেই মুছে যাওয়ার পথে।
    এমন সময় বিদ্যুৎ চমকালো । জানলার ওপর জলের আল্পনা রহস্যের যে আবছা আস্তরণ তৈরী করেছিলো, তা ছিন্ন হল মূহুর্তের জন্য। নবেন্দুর মনে হল, ওটা যেন বিদ্যুৎচমক নয়, হঠাৎ করে মনে পড়ে যাওয়া অনেকদিন আগেকার কোনো ঘটনা। কোন ঘটনা? ভাবতে বসলো নবেন্দু। লেক টাউনে মাসীর বাড়িতে গিয়ে একবার মাঝরাত অবধি আটকে ছিলো .... সেইটা? নাকি আরো আগে, সেই ক্লাস ফাইভে ভিজে ভিজে বাড়ি ফেরার কথা মনে পড়ছে ওর? কে জানে, হয়ত বা এক বৃষ্টির সন্ধ্যায় মাঠ থেকে দেরী করে বাড়ি ফিরে বাবার বকুনি খেয়েছিলো, সেই তিক্ত স্মৃতিই এখন মধুমূহুর্ত রচনা করছে ওর মনে।

    ""কতদিনের কথা সব "" ভেবে অবাক হল নবেন্দু, "" অথচ কিছুই ভুলিনি দেখছি ""।
    এরকম বারবার বাইরে বিদ্যুৎ চমকাতেই থাকলো। ক্রমশ আরো গভীরে তলিয়ে গেল নবেন্দু, অন্ধকার ঘরের সেলুলয়েডে ফুটে উঠতে লাগলো একে একে তার ছোটখাটো সুখদু:খের অভিজ্ঞতা।
    তবে সব ভালো জিনিসেরই শেষ আছে। তাই একসময় হতাশ হয়ে নবেন্দু দেখলো, বৃষ্টি কমে এসেছে। আর বড়জোর আধঘন্টা, তারপরেই একেবারে থেমে যাবে। মনটা তার বড্ড খারাপ হয়ে গেল। এমন সুযোগ তো রোজরোজ আসে না। আরো কত কিছু মনে করার ছিলো! জানলার কাচ পরিষ্কার হয়ে উঠলেই সেইসব স্মৃতি দূরে মিলিয়ে যাবে।
    নবেন্দুর আশঙ্কা সত্যি করে বৃষ্টিটা যখন থেমে গেল তখনও আটটা বাজেনি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লাবে যাওয়ার জন্য উঠে পড়লো সে। এখনও খানিক আড্ডা দেওয়া যাবে।
    বেরোবার আগে আরেকবার জানলার কাচটার দিকে তাকালো নবেন্দু। এখন অবশ্য সেটাকে আর পাঁচটা কাচের টুকরোর মতই লাগছে। অথচ একটু আগেই ওখানে জমে থাকা জলের ফোঁটাগুলো আলোছায়ার ম্যাজিক দেখাচ্ছিলো। জলের আরেক নাম জীবন না? সেই ছোটবেলায় রচনা বইতে প্রায়ই লেখা থাকতো কথাটা। তখন মুখস্থ করে কতবার লিখেছে পরীক্ষায়, অথচ এখন সেই একই কথা কি ভীষন বোকা বোকা লাগলো ওর নিজের কাছেই। কি জানি কি ভেবে, অজান্তেই হেসে ফেলে ত্রস্তপায়ে বৃষ্টিভেজা রাস্তা পেরিয়ে ক্লাবের দিকে এগোলো নবেন্দু।
    -----------
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৩ ডিসেম্বর ২০০৭ ০৬:৫৯392399
  • অনেকদিন আগের কথা। তখন আমি কলকাতার একটা স্কুলে স্বল্পসময়ের জন্য পড়াই। দিনে তিনটে ক্লাস। বিকেলের মধ্যেই ছুটি হয়ে যায়। তাও সবদিন যেতে হয় না। সেরকমই একদিন স্কুল থেকে বেরিয়ে হাঁটছি বাড়ির দিকে। সবে আয়েস করে একটা গোল্ড ফ্লেক ধরিয়েছি, এমন সময় কাছেই কেউ ডাকলো, "" দাদা... আগুনটা একবার...""। ফিরে তাকাতেই, মাঝবয়সী, পাকানো চেহারার একজন এসে লাইটারটা নিয়ে একটু অপ্রস্তুত মত হাসলেন। তারপর নিভে যাওয়া বিড়িটা ধরিয়ে বললেন, "" স্কুল ছুটি হয়ে গেল? ""
    এই ধরনের গায়ে পড়ে আলাপ মাষ্টারমশাইদের কাছে নতুন নয়। কতকটা দায়সারাভাবে বললাম, "" হ্যাঁ... আচ্ছা নমস্কার। ""

    তারপর প্রায় মাস তিনেক কেটে গেছে। ভদ্রলোকের কথা ভুলেই গেছিলাম। অবশ্য মনে থাকার কথাও নয়। রোজ কত কত মানুষের সাথেই তো আমাদের দেখাশোনা, কথা হয়। তাদের কতজনকেই বা আমরা মনে রাখি?
    সে যাহোক, স্কুলে তখন পরীক্ষা শেষ হয়ে ছুটি পড়েছে। দিস্তে দিস্তে খাতা দেখতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছি আর ভাবছি কতদিনে শেষ হবে এই কাজের চাপ। স্কুলেই তখন সবাই একসাথে হয়ে খাতা দেখা হয় সারা দুপুর জুড়ে। মাঝে মাঝে চা সিগারেটের বিরতি। এরকমই একটা ব্রেকে চায়ের দোকানে ঐ ভদ্রলোকের সাথে আবার দেখা হল। হিস্ট্রির কৌশিকও ছিলো আমার সাথে, তার সাথে গল্পে মেতে ওঠায় প্রথমটায় খেয়াল করিনি। ফেরার সময় খেয়াল হল যখন, দেখি এক কোনে বসে নিবিষ্ট মনে কি একটা পড়ছেন উনি। চারদিকে অসংখ্য কথা চালাচালি, চায়ের বাসনের টুংটাং, মালিকের হুঙ্কার, ফাইফরমাস খাটে যারা, সেই গোপাল, বিশু আর মলয়ের চিৎকার করে অর্ডার নেওয়া, কোনোদিকেই ভ্রুক্ষেপ না করে কি পড়ছেন জানার কৌতূহল হল। কিন্তু ইগোতে বাধলো নিজে থেকে আলাপ করতে। তাই কৌতূহল চেপে ফিরে এলাম। ভাগ্য ভালো বলতে হবে, সেদিন ফেরার পথে আবার ওনার সাথে মুখোমুখি দেখা হয়ে গেল। মাঝের কয়েক ঘন্টায় কৌতূহল কমে তো নিই, বরং কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। এবার আর কথা বলতে আটকালো না, "" আপনি আমায় চেনেন? কিকরে জানলেন স্কুলে পড়াই? "" খুবই বোকা বোকা প্রশ্ন, কারণ কাছেই আমাদের স্কুল, আর টিফিনের সময়, বা ছুটির শেষে দলবদ্ধভাবে ক্লান্ত ও গর্বিত চরণে আমরা যখন চায়ের দোকান বা বাড়ির দিকে হাঁটা দি, নিতান্ত মূর্খ না হলে যে কেউ বুঝে ফেলবে আমরা কে। তবু, এছাড়া আলাপ করার আর অন্য উপায় ছিলোনা।
    আমার প্রশ্নের উত্তরে ভদ্রলোক একটু হাসলেন। আবারো লক্ষ করলাম, ওনার হাসিতে, কথা বলার ভঙ্গীতে সদাই কেমন অপ্রস্তুত ভাব। ক্ষয়াটে চেহারা, কোটরগত চোখ আর ময়লা হতে হতে প্রায় ছিঁড়ে আসা পোষাকের সাথে এই হাসি কেমন যেন ভীষন মানানসই। কেমন যেন মনে হয়, এরকমটা না হলেই সে ভারি বিসদৃশ ব্যাপার হত।
    - আপনারা তো রোজই যান এখান দিয়ে। দেখি তো আমি। বললেন তিনি।
    -আপনি কি করেন?
    -এই... ছাত্র পড়াই। অবশ্য এই মূহুর্তে হাতে কোন টিউশানি নেই।... দেখবেন না একটু, যদি কোনো খোঁজটোজ থাকে। আমি অঙ্ক করাই।
    এরপর ওনার নামধাম একটা কাগজে লিখে নিয়ে, কোনো খোঁজ পেলে জানাবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাড়ি চলে এসেছিলাম। বাকি পথটা আসতে আসতে ওঁর কথাই মনে হচ্ছিলো। বাড়ি এসেই অবশ্য হাজারটা কাজের তাগাদায় সব ভুলে গেলাম। হয়ত আর কোনোদিনই মনে পড়তো না, যদি না দিন পনেরো পর উল্টোদিকের ফ্ল্যাটের রজনীবাবু ছেলের জন্য অঙ্কের টিউটর খুঁজে দেওয়ার কথা বলতেন।
    অনেক খুঁজে সেই ঠিকানা লেখা কাগজটা পাওয়া গেল। দক্ষিণ শহরতলির প্রায়ান্ধকার এক এলাকায় ঘন্টাখানেক খুঁজে যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছি, এমন সময় এক সিগারেটের দোকানদার বললো, "" জন্তুস্যারকে খুঁজছেন নাকি? ""
    নাম শুনে নাকচই করে দিচ্ছিলাম। কিন্তু চেহারার বর্ণনা দিতেই মিলে গেল। অত:পর জয়ন্তবাবুর বাড়ি খুঁজে পেতে দেরী হল না। একটা ভয়ানক সরু গলির শেষপ্রান্তে তিনতলা বাড়ির একতলায় পিছনের দিকের একটা ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন উনি। আমাকে দেখেই ভীষন অপ্রস্তুত আর ব্যস্ত হয়ে কোত্থেকে একটা ছেঁড়াখোড়া শতরঞ্চি এনে পেতে দিলেন। ঘরে ইলেক্ট্রিসিটি নেই। বুঝলাম সময়মত টাকা দেওয়ায় কেটে দেওয়া হয়েছে। মেঝেতে একটা কাঠের টুকরোর ওপর মোম জ্বলছিলো। আবছা সেই আলোয় দেখলাম, চারদিকে ডাঁই করা পুরোনো খবরের কাগজ, এক পাশে দুটো শতচ্ছিন্ন বই, কয়েকটা মোমবাতি, দেশলাই আর একটুকরো কালোমত চ্যাটালো অদ্ভুৎ আকৃতির কি একটা। আমার চোখে হাই পাওয়ারের চশমা, অদ্ভুত আকৃতির জিনিসটার দিকে তাকিয়েই আছি দেখে জয়ন্তবাবু বললেন, "" কাছেই একটা প্রাইমারি স্কুল আছে, ওরা এই ভাঙ্গা বোর্ডটা ফেলে দিচ্ছিলো... পড়াশুনোর সুবিধে হয় আর কি।"" তারপরেই সেই অস্বস্তিকর অপ্রস্তুত হাসি।
    জয়ন্তবাবুর অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। দম আটকে আসছিলো পর্বতপ্রমাণ দারিদ্র্য আর ব্যর্থতার চাপে। সেদিন চায়ের দোকানে যে বইটা পড়ছিলেন সেটাও দেখতে পেয়েছিলাম ঐ ঘরেই। একটা গণিত বিষয়ক পুরোনো জার্নাল, বললেন পাড়ার একজন অধ্যাপক পড়তে দিয়েছেন। তড়িঘড়ি নতুন টিউশানির কথা বলে, রজনীবাবুর ফোন নম্বর আর বাসার ঠিকানা দিয়ে একরকম পালিয়েই এসেছিলাম সেদিন।
    জয়ন্তবাবুর অবশ্য নতুন টিউশানিটা করা হয় নি। আমার সাথে দেখা হওয়ার দুদিনের মাথায় ওঁকে অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায়। বাড়িওয়ালা ভাড়ার তাগাদায় গিয়েই ওঁকে মেঝেতে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান। হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম খবর পেয়েই। দেখা হতেই হাসলেন, সেই ম্লান, বিষন্ন হাসি। কোনো কথা বলতে পারিনি। মনে হচ্ছিলো, নিজের পাহাড়প্রমাণ ব্যর্থতার বোঝায়, চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরে যেন উনি সমস্ত সভ্যতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। এরপর মাত্র কয়েক ঘন্টা বেঁচেছিলেন জয়ন্ত বসু নামের ঐ হেরে যাওয়া মানুষটি।
    -----------
  • Tim | 204.111.134.55 | ২৩ ডিসেম্বর ২০০৭ ০৭:১৫392400
  • পড়তে হবে, "".. সময়মত টাকা না দেওয়ায় কেটে দিয়েছে...।""
    এচাড়াও অন্যান্য টাইপোর জন্য দু:খিত।
  • Tim | 204.111.134.55 | ০৩ জানুয়ারি ২০০৮ ০৩:৩২392401
  • অপেক্ষা করতে করতে ক্রমশই অধৈর্য্য হয়ে উঠছিলো সুরজিত। সামনের ফুটপাথে মানুষের ঢেউ বাড়ছে। একে একে খুলে যাচ্ছে বহুতেলের বিভিন্ন ফ্লোরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। আর মিনিট পনেরোর মধ্যেই খুলে যাবে এবিসিটেক। প্রত্যেকদিন ক্লাস শুরুর আগে একটা সিগারেট খেতে খেতে জমিয়ে আড্ডা দেয় যে কয়েকজন অভিন্নহৃ দয় বন্ধু, সুরজিত তাদের অন্যতম। দলের বাকিরা , অর্থাৎ অনির্বান, পলাশ আর রণজয় এখনও এসে পৌঁছায়নি। সুরজিতের বান্ধবী লিপি কাছেই মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে, বৈশাখীর অপেক্ষায়। এই সাতজনকে প্রায় সবসময়ই একসাথে দেখা যায়। আদর করে সবাই বলে, রামধনু। ওদের মধ্যে দুজন শুধু এই শহরের, বাকিরা সব মফস্বলের ছেলেমেয়ে, মেস বা হোস্টেলে থাকে।
    *****
    এস.এমের ক্লাসের প্রায় অর্ধেকটা পার করে ঢুকলো অনির্বান। এটা ডেটা স্ট্রাকচারের ক্লাস। এস এম কিছু বললেন না। কেনই বা বলবেন, অনির্বান ছাত্র হিসেবে বেশ ভালো, আর এরকম দেরি করে আসাও তার স্বভাব নয়। সাতজনের মধ্যে আজ উপস্থিত মাত্র জনা পাঁচ। তাই আজ ছুটির পরের আড্ডাটাও জমলো না।
    *****
    বৈশাখী আজ ওর বয়ফ্রেন্ড সৌভিকের ছবি দেখালো। ওরা দুজনেই অর্থনীতি নিয়ে পড়েছিলো একই কলেজে। এখন সৌভিক বাইরে থাকে। ছুটির পরে জমিয়ে চা খেতে খেতে সবাই মিলে ছবি দেখলো। শান্ত, সৌম্য চেহারার বুদ্ধিদীপ্ত ছেলে সৌভিক। গত কয়েকমাস ধরেই সে ঘড়ি ধরে রাত নটায় ফোন করে, জানালো বৈশাখী।
    এইরকম পরিস্থিতিতে গল্পটা শুরু হয়েছিলো....

    এখন রাত সাড়ে নটা। বৈশাখী যথারীতি ফোনালাপে মশগুল। আপাতত আমাদের হাতে অনেক সময়। এই ফোনটা এনগেজড থাকবে দশটা পর্যন্ত। ততক্ষণ বরং অনির্বানের বাড়ি হয়ে আসা যাক। অনি (এইটাই ওর ডাকনাম) মন দিয়ে পড়াশুনো করার ব্যর্থ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। আপাতত সে রণজয় আর পলাশের সাথে জীবনের গভীরতর তাৎপর্য্য নিয়ে অলোচনায় ব্যস্ত। এরা তিনজন একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে মেস করে থাকে। একসাথে থাকলে পড়াশুনোর সুবিধে হয়, একঘেয়েমিও কাটে। এখন অবশ্য ওরা একটু বিরক্তই হয়ে উঠেছে। একটা কূট তর্কের ফয়সলা হচ্ছে না কিছুতেই।
    তর্কটা চলতে থাকুক, আসুন দেখি সুরজিতের খবর কি। মধ্য কলকাতার একটা জরাজীর্ণ বাড়ির দোতলায় বসে সুরজিত মন দিয়ে একটা প্রোগ্রাম লিখে তার ভুল ধরার চেষ্টা করছে। কাছেই আরেকটা বাড়িতে মেয়েদের হোস্টেল, সেখানে জানলার ধারের চেয়ারে লিপিকে দেখা গেল, সামনের টেবিলে চা, হাতে খবরের কাগজ। সুরজিত আর লিপির টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য খুব সুনাম, ভারি চটপটে দুজনেই।
    দশটা বেজে গেছে অনেকক্ষণ। বৈশাখী গালে হাত দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে। সে কি ভাবছে সে প্রশ্ন অবান্তর, অনুরূপ মানসিক অবস্থায় সাধারণ বা অসাধারণ মানুষ যা ভাবতে পারে, বৈশাখীও তাই ভাবছে।
    ভাবতে ভাবতেই অনেক রাত হয়ে গেল যখন, সৌভিক জানলাটা বন্ধ করে দরজার লকটা চেক করে ঘুমোতে গেল। আজ অনেক অঙ্ক করার কথা ছিলো। কিন্তু সন্ধ্যের পর থেকে একেবারেই পড়া হয়নি। খাতায় অবশ্য অনেক রাফ করার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। সৌভিকের সমস্ত হিসেব মিলিয়ে তবেই উত্তর লেখার অভ্যেস আছে। তার সচরাচর ভুল হয়না।

    ওদিকে সেই যে তর্কটা শুরু হয়েছিলো, সেটা কিন্তু এখনও শেষ হয় নি। ক্লান্ত হয়ে পলাশ ঘুমিয়ে পড়েছে, রণজয়ও আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে আসছে। অনির্বান অবশ্য অক্লান্ত। অনেকক্ষণ লড়ে একসময় রণজয় হার মানবে, এ কথা যখন আমরা বুঝেই গেছি, শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে বরং সময়টাকে আরেকটু এগিয়ে দেওয়া যাক।
    ****
    আজকেও সুরজিত গেটের কাছে দাঁড়িয়ে। লিপি, পলাশ আর রণজয়ও দাঁড়িয়ে কাছেপিঠে। আজ সবার সিনেমা দেখতে যাওয়ার কথা। অনি আর বৈশাখী এলো সবার শেষে। আজকাল মেট্রোতে খুব ভিড় হয়।

    সবাই একজোট হয়ে যখন হলে ঢুকলো, ততক্ষণে ছবি শুরু হয়ে গেছে। সবাই মন দিয়ে দেখছিলো সিনেমাটা। একটি মেয়ে, সে আবার মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছে, ক্রমাগত খুন করে যাচ্ছিলো একের পর এক। সিনেমা শেষ হতেই তুমুল তর্ক শুরু হল। দেখা গেল, সাতজনের মধ্যে মেয়েটির পক্ষে আছে মাত্র দেড়জন।

    সেদিন বাড়ি ফিরে সবাই খুব ভাবছিলো। অনি-রণি-পলাশের তর্কটা তো মেটেই নি, এখন আরো নতুন নতুন প্রশ্ন জাগলো। সুরজিত আর লিপিও আজ মোটেই পড়াশুনোয় মন দিতে পারেনি। চারপাশ থেকে অসংখ্য যদি-কিন্তু-তবে ইত্যাদি গোলমেলে শব্দ এসে ঘিরে ধরেছে ওদের।
    অনেক দূরের একটা বাড়ির সামনেটা বরফে ঢেকে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। ঘড়িতে নটা বাজতেই আলো নিভিয়ে সৌভিক ফোনটা তুলে নিলো।
    বৈশাখী ফোনের পাশেই বসে ছিলো। এইসময়টায় সে রোজই এখানে থাকে। কিন্তু আজ একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটলো। অন্যদিনের মত ফোনটা তুলতে যেতেই কাছেই কোথাও আরেকটা সুরেলা আওয়াজ পেল বৈশাখী। মিষ্টি ঝিমধরা আরেকটা সুর ভেসে আসছে ঘর থেকে। অবশ্য এ আওয়াজ অলৌকিক কিছু নয়। বৈশাখীর নতুন কেনা সেলফোনটা বাজছিলো। গল্পটা শেষ হয় নি।
    ----------------------
  • Tim | 71.62.2.93 | ২৪ মার্চ ২০০৯ ১১:৩৭392402
  • সাতটা বেজেছে কি বাজেনি, সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ শোনা গেল। অবাক হওয়ার কিছু নেই, রোজই হয় এরকম। ডোরাও অবাক হলোনা। শুধু বিরক্তিতে মুখটা ফিরিয়ে উল্টোপানে চললো। রোজ রোজ এই আদিখ্যেতা সহ্য হয়না তার।
    চিত্তপ্রিয় আজকাল আর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। কোনোক্রমে পাশ ফিরতে পারেন এখনও, তবে সেটাও আর কতদিন পারবেন সন্দেহ আছে। দিনের বেশিরভাগ সময়টাই একঘেয়েমির মধ্যে কাটে চিত্তপ্রিয়র। শুধু এই সন্ধের দিকে একটু খুশি হন। এই সময় রোজ কিংশুক আসে।
    **************
    ডোরার আজকাল দমবন্ধ হয়ে আসে এই চারদেওয়ালের মধ্যে। আলো আসে যদিও, বাইরের সমস্তটাই সে দেখতে পায়, ফাঁকফোকর গলে শব্দও ছিটকে আসে তার কানে, তবু, রোজরোজ এই তামাশা তার ভালো লাগে না। খানিকক্ষণ গুম হয়ে থাকে সে এক কোনায়। মুখ ফিরিয়ে থাকলেও সে বোঝে, হাত দশেক দূরেই বেতের মোড়াটায় বসে আছে কিংশুক। আড়চোখে সে যে এদিকে তাকাচ্ছে সেটাও ডোরা টের পায়। দৃষ্টি দিয়ে কেউ তাকে ছুঁলে টের পায় ডোরা, এ নিয়ে তার গর্বের সীমা নেই।
    চোখ বন্ধ করে রাখা যায়, কান বন্ধ করা যায়না। টুকরোটাকরা শব্দ ছিটকে আসে, অনিচ্ছাসঙ্কেÄও শুনে যায় ডোরা।
    - ভাবছিলাম আজ আর তুমি আসবেই না।
    -একটু দেরি হয়ে গেল কি?
    - না না, ঠিক সময়েই এসেছো। আমি ভেবেই রেখেছি। ঐ যে, বাঁদিক থেকে তিন নম্বরটা।
    -আজ থাক মাষ্টারমশাই। আজ একটা কথা বলার ছিলো।
    চিত্তপ্রিয় ঘাড়টা একটু কাৎ করে ভালো করে বোঝার চেষ্টা করেন। কিংশুক ভেবে পায়না কি বলবে। ওর কি এখন প্রণাম করা উচিত?
    অবশ্য চিত্তপ্রিয় খুব তাড়াতাড়ি সামলে নেন নিজেকে। গম্ভীর হয়ে বলেন, "" বলো কি কথা আছে।""
    কিংশুক বলতে শুরু করে। কিন্তু একটানা বলতে পারেনা সে। আলো চলে যায় হঠাৎ। খুঁজে পেতে একটা মোমবাতি জ্বেলে দেয় সে। চিত্তপ্রিয় বিড়বিড় করে গাল পাড়েন অদৃশ্য কাউকে।
    ****************
    মোমের আলো আঁধারিতে ডোরা চঞ্চল হয়। কিন্তু কারুর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। কিংশুকের গলা শোনা যায়। চিত্তপ্রিয়রও। ওরা এখন গভীর আলোচনায় মশগুল। কথায় কথা বাড়ে একসময়। ওরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ডোরাও অস্থির হয়। মোমের ছায়া ছায়া আলোয় ওর বুক কাঁপতে থাকে।
    এরকম চলে কিছুক্ষণ। তারপর চারদিক শান্ত হয়ে আসে। শান্ত পায়ে কিংশুক ফিরে যায়। হয়ত শেষবারের মত।
    **********
    এভাবেই অনেকক্ষণ কেটে যায়। চিত্তপ্রিয় আবছা আলোয় সময় দেখার চেষ্টা করতে থাকেন। তারপর একসময় তাঁর চোখ বুজে আসে।
    *************
    আরো কতক্ষণ পরে কে জানে, প্রচন্ড জোরে একটা শব্দ হয় কোথাও। ঘুম ভেঙ্গে চিত্তপ্রিয় ঘোলাটে দৃষ্টি মেলে দেন। চারিদিকে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার। শুধু পাশের বাড়ির বারান্দার আলোয়, সয়ে আসা চোখে চিত্তপ্রিয় দেখেন, অ্যাকোরিয়াম ভেঙ্গে মেঝেময় কাচ। ডোরাকেও দেখা যায়। জল থইথই মেঝেতে সে তখন মুক্তিযন্ত্রণায় ছটফট করছে।
    ------X---------------
  • d | 117.195.33.131 | ১৮ অক্টোবর ২০০৯ ২১:০৯392403
  • এটাকে ভাসালাম। অনেকদিন অণুগল্প পড়ি না।
  • Tim | 71.62.121.158 | ১৮ অক্টোবর ২০০৯ ২৩:১১392405
  • জন্ম থেকেই আমার দৃষ্টি খুব প্রখর। একটা চোখ হলে কি হবে, অনেকটা দূর অবধি দেখতে পাই আমি। আর অনেক কিছু মনেও থাকে। নয় নয় করেও প্রায় বছর দশেক বয়স হয়ে গেল আমার। এখন যে ঘুপচি অন্ধকার ঘরে নড়বড়ে টেবিলটার ওপর পড়ে আছি, সেটা আমার চার নম্বর আস্তানা।

    বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। দিনের বেলা চোখটা একটু ঝাপসামতন থাকে, তবু বুঝতে পারছিলাম যে বৃষ্টি পড়ছে মুষলধারে। এই ঘরটার তিনদিকে ঘন জঙ্গল, আর একদিকে খানিকটা খোলা জমি। পাশেই সরু, আঁকাবাঁকা একটা পায়ে পায়ে তৈরী হওয়া রাস্তা। আমার পা পড়েনি ওখানে। আমার তো পা-ই নেই।

    এখন বিকেল। আর একটু পরেই সন্ধে নামবে। তখন আমি হয়ত একটু ভালো দেখতে পাবো চারদিকটা। যদিও নতুন করে কিছু দেখার নেই। অবিশ্যি যদি নতুন কেউ আসে তো অন্য কথা।

    অন্ধকার ঘরে চুপ করে বসে থাকলে পুরোনো কথা মনে পড়ে। সেই লোকটা, যার সাথে একসময় বনে বাদাড়ে ঘুরতাম। ওর সাথে থেকে থেকে অনেক গাছগাছড়া চেনা হয়ে গেছিলো আমার। বিষিয়ে ওঠা ঘা'য়ে কি বেটে লাগাতে হবে, কয়েকদিনের জ্বরে কি খাওয়াতে হবে, সব মনে আছে আমার।

    আর মনে পড়ে সেই লম্বামত লোকটার কথা। ওদের বাড়িতে সন্ধের পরে আলো চলে যেত। আমি অবশ্য দেখতে পেতাম। ওরা তিনজন ঐ প্রায়ান্ধকারেই সব কাজ সারতো। মাঝেমধ্যে আমি সাহায্য করতাম। তারপর, বাচ্চাটা ঘুমিয়ে পড়তো। আমি ঘুমোতাম না। দুটো মানুষের পাল্টে যাওয়া আচরণ আমায় ভাবাতো। এখন আর অবাক লাগেনা। কিন্তু প্রথমবার বেশ চমকে গেছিলাম, মনে আছে। সে যাই হোক, ওখানেও অনেকদিন ছিলাম। দিনক্ষণ আমার তেমন মনে থাকেনা। তাই বলতে পারবোনা কবে আমায় বিদেয় করা হলো। মাঝেমধ্যে লোকটা খবরের কাগজ কিনে আনতো। ওর সাথে সাথে আমিও পড়েছি। কিভাবে পড়তে শিখেছিলাম কে জানে! একদিন লোকটা বাড়ি ফিরে খুব কান্নাকাটি করলো। তারপর রাগ করে ফুলের টবটা লাথি মেরে ভাঙলো। বুঝলাম কিছু একটা খারাপ খবর আছে। তার পরের দিনই আমায় তাড়ানো হলো।

    তিন নম্বর জায়গাটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছিলো। সেটা একটা ছোটো একতলা বাড়ি, মাত্র দুটো ঘর। অনেকগুলো ছেলেমেয়ে থাকতো সেখানে। আমি এঘর সেঘর ঘুরতাম ওদের হাত ধরে। একটা ঘরে মেয়েরা ঘুমোতো, অন্যটায় ছেলেগুলো। অবশ্য নিয়মটা খুব কড়া ছিলোনা। আমি নিজেই কতবার এর অন্যথা হতে দেখেছি।ওরা রাত জেগে কথা বলতো, গান গাইতো। বিশেষ করে পূর্ণিমার দিন ওরা কেমন যেন হয়ে যেত। সেসব দিন মারাত্মক হইচই হতো। আসেপাশে কেউ ছিলোনা আর। সেটাও একটা নিরিবিলি আস্তানা ছিলো।

    ওখানেই প্রথম বারুদ দেখি আমি। গুলির আওয়াজে কানে তালা লেগে গেছিলো প্রথমদিন ওখানেই। তারপর অবশ্য অভ্যেস হয়ে গেছিলো। শেষদিন প্রচন্ড গুলিগোলা চলেছিলো। দেখলাম, রক্তে ঘর ভেসে যাচ্ছে। ওরা খুব চেষ্টা করেছিলো পালাবার। যখন বুঝলো সম্ভব নয়, তখন কাঁদলো খুব। আমার তখন সেই লম্বা লোকটার কথা মনে পড়ছিলো। ওদের সবার মধ্যে কি যেন একটা মিল আছে।

    তারপর সেখান থেকেও চলে এলাম। অবশ্যই একা একা আসিনি। আমি তো চলতেই পারিনা, ফালতুর দলে। সেই থেকে এই ঘুপচি ঘরটায় আছি। এখানে মাঝে মাঝে লোকজন আসে, বেশিরভাগই সামনের জমিতে কাজ করার জন্য।ওদের সুবিধের জন্য আমাকে রাখা হয়েছে।

    বাইরে বৃষ্টিটা একটু ধরে আসতেই হুড়মুড় করে দুজন ঢুকে এলো। সাথে একঝলক চেনা গন্ধ। অনেকক্ষণ অন্ধকারে বসে থেকে চোখটা ভালো কাজ করছিলো না। তারপর জোরালো আলোটা জ্বলে উঠতেই দেখলাম ওদের। দুটি ছেলেমেয়ে, অল্পবয়সী। অনেকটা আমার তিন নম্বর বাসার বাসিন্দাদের মত। যদিও জামাকাপড় অন্যরকম। ওরা সেরকম কথা বলছে না। খালি অদ্ভুৎভাবে হাসছে। নিশ্চই কোনো হাসির ব্যাপার ঘটেছে এর আগে, যা আমি জানিনা। আমি জানি এরকম ক্ষেত্রে ওরা কিছুতেই স্পষ্ট করে বলবেনা কি হয়েছে। খালি এ ওর দিকে তাকিয়ে হেসে যাবে। আগে দেখেছি এরকম।

    তাই আবার অন্যমনস্ক হয়ে যাবার ভান করে বাইরের দিকে তাকালাম। যদিও দেখার কিছু নেই। জোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাইরে প্রায় অন্ধকার হয়ে এসেছে এখন। দু একটা জোনাকি জ্বলছে নিভছে সেই অন্ধকারে। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আর একটানা খরখর শব্দে জলের শব্দ।

    ঘরে এতক্ষণ আলো ছিলো। একটা ভাঙা ঘাস কাটার যন্ত্র রাখা আছে অনেকদিন। সেটায় ঠেস দিয়ে ওরা বসেছিলো। এখন ছেলেটা উঠে আলোটা নেভালো। ওর হাতটা আমার গায়ে এসে পড়ায় চমকে উঠলাম। ভেজা ভেজা, ঠান্ডা হাত।

    তারপর অনেকক্ষণ কিছু দেখা যাচ্ছে না। ঘরে বেশ ঘন অন্ধকার। অন্ধকারের অনেক স্তর থাকে। ফিকে, গাঢ়, নানারকম রঙের হতে পারে অন্ধকার। আমি নীল অন্ধকার দেখেছি। ধূসর হতেও দেখেছি কখনও। এখন ঘরের মাঝে অন্ধকার নড়ে নড়ে উঠছে। এই জীবন্ত অন্ধকারও আমার দেখা।

    এইভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেলে আলোটা জ্বালা হলো। আমার কাছে ঘড়ি নেই, তাই বলতে পারবোনা কতক্ষণ। ঘড়ি দেখতে শিখেছিলাম আমার প্রথম আস্তানায়। বুনো লোকটা আমার চোখ দিয়ে ঘড়ি দেখতো। অন্ধকারে।

    এখন আবার ঘরে আলো জ্বলে উঠেছে। চোখটা টনটন করছে আমার। বয়স তো কম হলোনা, এই আচমকা পরিবর্তনে কলকব্জায় টান পড়ে। ওদের দিকে তাকালাম। এখন দুজনেই খুব গম্ভীর। কিন্তু বেশ শান্ত আর সুখী দেখাচ্ছে ওদের। আলোটা জ্বলে উঠতেই ওরা নিজেদের গুছিয়ে নিতে সুরু করেছে। ঘরময় টুকটাক আবর্জনা, সেগুলো জোরালো আলোয় বড়ো উঙ্কÄল হয়ে উঠেছে। তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে ওরা শেষ কিছু কথা বলে নিলো। কিছু বুঝলাম, অনেকটাই বুঝলাম না।
    তারপর আমার দিকে তাকিয়ে, একবার মিষ্টি করে হেসে এগিয়ে এলো মেয়েটা। আমার মুখটা ঘুরিয়ে দিলো দরজার দিকে। তারপর ব্যস্তসমস্ত পায়ে বেরিয়ে গেল। আলোটা জ্বালিয়ে রেখেই গেল ওরা, যদিও সেটা নিয়ম না। এরপর কেউ এলে খুব অসুবিধেয় পড়বে। আমার জীবনীশক্তিরও যে শেষ আছে, সেটা কি ওরা জানেনা?

    ঘন অন্ধকারে মধ্যে ডুবে থাকা ঘুপচি ঘরটায় একা জেগে থাকলাম আমি। রাত শেষ হওয়ার আগেই হয়ত নিভে যাবো, এই আশঙ্কায়।
  • tkn | 122.161.62.25 | ১৯ অক্টোবর ২০০৯ ১১:৩৭392406
  • কাল রাতে কিছু পড়েছিলাম। আজ পড়লাম বাকিটুকু। অদ্ভুত ভালো লেগেছে।
  • 0 | 194.3.18.6 | ২০ অক্টোবর ২০০৯ ১০:২৪392407
  • দু'বার পড়লাম। খুব সুন্দর, অন্যরকম। আগে বলা হয়নি, থ্রেডের বাকি গল্পগুলো আগেই পড়েছিলাম, সব ক'টাই ভালো লেগেছিল।
  • Tim | 71.62.121.158 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৯:২৮392408
  • দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে এগোলে বারিনবাবু ঘুম থেকে ওঠেন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, প্রতিদিন একই সময় ওঠার অভ্যেস তাঁর। মাঝারি সাইজের একটা খাটে, আপাদমস্তক কুটকুটে কম্বলমুড়ি দিয়ে ঘুমোন বারিনবাবু। একটা তেলচিটে বালিশ, একটাই চাদর - সেটার স্থানে-অস্থানে খোঁদলের মত হয়ে গেছে। ঘরের কোনে কুঁজো, দেওয়ালে চল্লিশ পাওয়ারের হলদেটে আলো।

    এই পর্যন্ত পড়ে অলীক আলগোছে একটা হাই তুললো। এদিক-সেদিক তাকালো বারকয়েক। হাতে ধরা ফুলস্কেপ সাদা কাগজের খাতাটার দিকে হতাশ দৃষ্টিতে দেখলো একবার। তারপর আবার পড়তে শুরু করলো .....

    সত্তর নম্বর কে কে নস্কর লেন উত্তর কলকাতায়। কিছু কিছু রাস্তা জন্মলগ্ন থেকেই জানে, সে একটি এঁদো গলি হয়েই রয়ে যাবে চিরকাল। বারিনবাবু এখানেই একটা তিনতলা বাড়ির একতলা দখল করে থাকেন। ভাড়াটাড়া দিতে হয়না। কারণ একটা আছে, তবে তার সাথে এ গল্পের কোনো সম্পর্ক নেই।
    অন্যদিনের মত আজকেও একটু আগে বারিনবাবুর ঘুম ভেঙেছে। ঘুম থেকে উঠে অন্তত ঘন্টাখানেক চুপ করে বিছানায় বসে ঝিমোতে ভারি ভালোবাসেন বারিনবাবু। আজ অবশ্য পঁয়তাল্লিশ মিনিট পরেই উঠে পড়তে হলো। খোকনা এসে গেছে। খোকনা বারিনবাবুর সহকর্মী। খোকনার বয়স আটত্রিশ, বারিনবাবুর থেকে দশবছরের ছোট সে। বয়সের পার্থক্য সঙ্কেÄও ওঁদের দুজনের বোঝাপড়া বেশ ভালো। বারিনবাবু প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত সাড়ে নটা অবধি পয়সা বাজি রেখে তাস খেলেন। খোকনা পার্টটাইম পকেটমার। সন্ধে সাতটা নাগাদ সে এসে তাসের আড্ডায় বসে, এবং বারিনবাবুর হারজিতের হিসেব রাখে ও সময়ে-অসময়ে সুপরামর্শ দেয়। বিনিময়ে সে পায় লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ, দিনপ্রতি দুটো বিড়ি ও আধগেলাস দিশি মদ। জয়ের আনন্দ এবং হারের দু:খ-- দুইই বারিনবাবুকে ঘুন্টুর মদের ঠেকের দিকে টেনে নিয়ে যায়। প্রতি রাতে নিয়ম করে দেড় গেলাস মদ খান বারিনবাবু। তারপর খোকনার সাথে গল্প করেন।

    অলীকের আর ভালো লাগছে না। পার্কটায় এসে ঢুকেছিলো সেই বিকেলবেলা, এখন সন্ধে হয়ে এসেছে। খাতার পাতা থেকে চোখ তুলে চারদিক আলসে দৃষ্টিতে তাকালো সে। শৌভিককে কথা দিয়েছিলো, তাই আজ ওর এই অবস্থা। আচ্ছা, বাকিটা না পড়ে যদি সে খাতা বন্ধ করে ফিরে যায়, তাহলে কি শৌভিক টের পাবে?
    খানিকটা অনিচ্ছে নিয়েও ফের খাতায় চোখ ডোবালো অলীক।

    আজ একটা বিশেষ দিন। খোকনা এসে ডাকতেই বারিনবাবুর মনে পড়লো, আজ তাঁর প্রভঞ্জনগঞ্জ যাওয়ার দিন। প্রভঞ্জনগঞ্জ আসলে একটা কাল্পনিক জায়গা। মাসে একদিন বারিনবাবু নিরুদ্দেশযাত্রা করেন। দুপুরের মধ্যে যেখানে গিয়ে পৌঁছন, সেটাই প্রভঞ্জনগঞ্জ। গত পঁচিশ বছর ধরে বারিনবাবু এরকম বহু জায়গায় গেছেন। কোনো গ্রাম বা শহরের আসল নামই তিনি জানেন না। সব জায়গাই তাঁর কাছে প্রভঞ্জনগঞ্জ।

    হঠাৎ কাছেই কুকুরের ডাক শুনে চমকে তাকালো অলীক। সন্ধের দিকে, গরমটা একটু কমলে অনেকে পার্কে হাঁটতে আসেন। কেউ কেউ সাথে পোষা কুকুর নিয়ে আসেন, কেউ আসেন একা বা বন্ধুবান্ধবের দল পাকিয়ে। অলীকের সামনে দিয়ে একটা সেরকমই দল এখন চলে যাচ্ছে। তবে কুকুরের ডাকটা সেখান থেকে আসেনি। বড়ো দলটার পেছনেই একা একজন মানুষ হেঁটে আসছেন। সাথে একটা ঘেয়ো কুকুর, থেকে থেকে সেই ডেকে উঠছে। বেশ বোঝা যাচ্ছে পথের কুকুরের সাথে অনাবিল সখ্যতা গড়ে উঠেছে ভদ্রলোকের।
    কিন্তু না, আর দেরি করলে চলবেনা অলীকের। রাতের মধ্যেই খাতাটা পড়ে ফেরত দিতে হবে। খাতার জড়িয়েমড়িয়ে থাকা অক্ষরগুলোর ওপর চোখ রাখলো অলীক।

    খোকনাকে সকালের বিড়িটা দিয়ে বিদায় করেই বারিনবাবুর মনে হলো আজ একটু অন্যরকম লাগছে। আসেপাশে তাকিয়ে দেখলেন। কেউ নেই। না থাকারই কথা। রোজ ঘুমের পর সাধারণত একটা মৌতাতে ডুবে থাকে তাঁর সারা শরীর, মনে হয় আবার শুলেই ঘন্টাকয়েক ঘুমিয়ে নিতে পারবেন। অথচ আজ একটা অস্বস্তি হচ্ছে। চাপা অম্বল হলে এরকম হয়, অলক্ষ্যে কেউ নজর রাখলেও এমন হতে পারে। এইদুটোর বাইরেও অনেক কারণে মানুষের অস্বস্তি হয়, তবে বারিনবাবুর এইদুটোর কথাই মনে এলো। একটু হেঁটে দেখলেন, অনেক সময় হাঁটাচলা করলে শরীরে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়। জোরে জোরে শ্বাস নিলেন। তারপর বেরোবার জন্য তৈরী হলেন। বারিনবাবুর দুটো জামা। একটা বাইরে পড়ার, অন্যটা শীতকালে ঘরে পরে থাকেন। একটা প্যান্ট, রং নস্যি। একটা ধুতি, ছিঁড়ে গেলেও পরা যায় এখনও।

    অলীকের চোখ এখনও মাঝে মাঝে পার্কের গেটের দিকে চলে যাচ্ছে। সত্যি বলতে কি, আগের থেকে এখন একটু ঘন ঘনই গেটের দিকে তাকাচ্ছে সে। ঐ জায়গাটায় বিকেল থেকে একটা ফুচকাওলা বসে। এখন, এই এতক্ষণে, সেখানে বেজায় ভিড়। স্কুল-কলেজ ছুটি হয়েছে, অফিসগুলো-ও ছুটি হতে শুরু করেছে। ফুচকার পসরা ঘিরে এখন বেজায় গোলমাল।

    বাড়ি থেকে বেরিয়ে বারিনবাবুর খেয়াল হলো, সেই চাপা অস্বস্তিভাবটা আবার ফিরে এসেছে। এখানে চারিদিকে মেলাই লোক, কিন্তু তাদের কেউ ওঁর ওপর লক্ষ্য রাখছে---এই কথাটা ঠিক বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেনই বা কেউ ওঁকে চোখে চোখে রাখবে? এইসব ভেবে, মন শক্ত করে বাসের দিকে এগোলেন বারিনবাবু। এই বাসটা অনেক দূর যায়। পকেটে একটা আধলাও নেই, এই অবস্থায় বারিনবাবু সেই বাসটায় উঠে বসলেন।

    পার্কের আলোগুলো জ্বলে উঠতে অলীক ঘড়ি দেখলো। সাতটা বেজে গেছে। ইতিউতি চোখ চালিয়ে দেখলো বিকেলের ভ্রমণার্থীরা বেশিরভাগই সরে পড়েছেন। শুধু ঘেয়ো কুকুরসমেত লোকটা অন্য কোণে এখনও বসে আছে। আর কিছু বিচ্ছু ছেলেপুলে আছে, যাদের এখুনি বাড়ি ফেরার তাড়া নেই। কারুর কারুর বাড়িই নেই তো ফেরা। ওরা এখনও সমান উদ্যমে ফুটবল পিটে যাচ্ছে।

    টিকিট না কাটায় কন্ডাক্টর বারিনবাবুকে যেখানে নামিয়ে দিলো, সেইটা ঠিক কোন জনপদ নয়। দূরপাল্লার বাস অনেকক্ষণ চলে তারপর একবার করে থামে। বারিনবাবুকে যেখানে নামতে হলো, সেইটা একটা নির্জন মত মাঠ। রাস্তাটা মাঠের গা ঘেঁষেই চলে গেছে। বাসটা ধুলোয় আকাশ-বাতাস অন্ধকার করে অদৃশ্য হওয়ার পর বারিনবাবু দেখলেন, তাঁর চারপাশে অন্তত মাইলকয়েকের মধ্যে জনপ্রাণী নেই। সামনে যতদূর দেখা যাচ্ছে রাস্তা, আর তার দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত মাঠ। বারিনবাবু হাসার চেষ্টা করলেন। পারলেন না। গলা, ঠোঁট সব শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। এইরকম সময় বারিনবাবুর খুব আনন্দ হয়। একবার ভোররাতে ট্রেন থেকে নেমে যেতে হয়েছিলো এইরকম জনবিহীন আঘাটায়। সেবারও এরকম মনটা খুশি খুশি হয়েছিলো। বারিনবাবু ঠিক করলেন খানিকটা হেঁটে একটা গাছ খুঁজে নিয়ে ছায়ায় বসবেন। এতবড়ো মাঠ, এত লম্বা রাস্তা, একটা গাছ কি আর পাবেন না?

    -আপনি অলীকদা না? কেমন আছেন?
    - তুমি.... তুমি তিথি?
    - ভুল। বলেই ঝরঝরিয়ে হেসে ফেললো সেই সুবেশা তরুণী -- তিথি তো আমার দিদি হয়।
    অলীক মুশকিলে পড়লো। এই মেয়েটিকে সে বেশ ভালোই চেনে, কিন্তু এখন নাম মনে আসছে না।
    - আচ্ছা আচ্ছা বলে দিচ্ছি। আমি অন্বেষা। মনে পড়লো?
    অলীক এবার মনে করতে পারলো। অন্বেষাকে সে উচ্‌চ্‌মাধ্যমিকে অঙ্ক করাতো।
    -আপনি কিছু কাজ করছিলেন বোধয়! আমি এসে বকবক করে সব গুবলেট করে দিলাম?
    - না না। আসলে একটা জিনিস পড়ছিলাম। তা... তুমি কি এই বাড়ি চললে?
    - সেইরকমই ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু এখন প্ল্যান পাল্টে গেছে। আমার এক বন্ধুকে আসতে বলেছি। একটু আড্ডা মারবো।
    - বাহ বেশ।
    এই বলে অলীক তড়িঘড়ি পড়ায় মন দেয়। তার আগে একবার আড়চোখে দেখে নেয় পার্কের উল্টো কোনে সেই ভদ্রলোককে। তিনি এখনও নিস্পন্দ, নিথর। পায়ের কাছে একদলা কালোমত কি একটা পড়ে আছে, সেটা ওঁর সারমেয়সখা ব্যতীত অন্য কেউ নয়- এও বুঝে নেয় অলীক।
    অন্বেষা পার্কের গেটের মুখে গিয়ে দাঁড়ায়।

    অনেকটা পথ হেঁটে বারিনবাবু অবশেষে একটা বুড়ো বটের নিচে এলেন। খুব একটা পাতা নেই গাছটায়, বৈশাখের চড়া রোদ তার ডাল আর পাতা ভেদ করে অনায়াসে আশ্রয়প্রার্থীর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। উপায়ান্তর না দেখে বারিনবাবু সেখানেই বসলেন। বসেই মনটা আবার ভালো হয়ে গেল। চড়া রোদ আর কখনও সখনো এক ঝলক হাওয়া দিচ্ছে--- এমন জায়গায় এলেই তাঁর মন ভালো হয়ে যায়। আরামে চোখ বুঁজে বসে রইলেন তিনি।
    আর তখনই সেই খচখচানিটা ফিরে এলো। এখনও মনে হচ্ছে কে যেন দেখছে তাঁকে আড়াল থেকে। বিরক্ত হয়ে চারদিকে তাকালেন বারিনবাবু। কেউ নেই। নাহ্‌, একেবারে কেউ নেই তা নয়। একটা কুকুর পায়ে পায়ে কখন যেন ওঁর কাছে এসে বসেছে। কাছেপিঠের গ্রামের বেওয়ারিশ কুকুর, হাড় জিরজিরে, লোম উঠে গিয়ে প্রায় কঙ্কালের মত হয়ে গেছে সেটা। অতি সন্তর্পণে, ভীরু চাহনিতে সেটা তাকিয়েছিলো। বারিনবাবুর মায়া হলো। অল্পক্ষণেই কুকুরটা আরো কাছিয়ে এসে ওঁর পায়ের কাছটায় চুপ করে শুয়ে পড়লো। বারিনবাবু বুঝলেন, প্রভঞ্জনগঞ্জ এসে গেছে। আবার চোখ বুঁজে বসলেন তিনি।

    অলীকের এখন পড়তে বেশ কষ্ট হচ্ছে। পার্কটায় আলো অত্যন্ত কম। অন্ধকারে চোখ প্রায় ঝাপসা হয়ে আসছে। রেডিয়াম দেয়া ঘড়ি বলছে, সময় সাড়ে নটা। উল্টোদিকে এখনও সেই ভদ্রলোক আছেন কিনা বোঝা যাচ্ছেনা। বড়ো অন্ধকার। অলীক প্রাণপণে পড়ার চেষ্টা করলো। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। এবার সত্যিই সব ঝাপসা হয়ে এলো অলীকের।
    আর তখনি সে টের পেলো, কি একটা অস্বস্তি ওকে আচ্ছন্ন করে দিচ্ছে তিলে তিলে। কেউ অপলক চোখে যেন ওর কার্য্যক্রম লক্ষ্য করছে। আজ শ্মশ্মানে শৌভিকের তিনদিনের বাসি লাশটা নিয়ে যেতেও ওর এতটুকু অস্বস্তি হয়নি। কিন্তু এখন হচ্ছে।

    এমন সময় পার্কের গেটের কাছ থেকে একটা গোলমালের আওয়াজ শোনা গেল। সচকিত হয়ে শুনলো অলীক---- অন্বেষার উত্তেজিত কণ্ঠ। নিমেষে সেইদিকে দৌড়োলো অলীক।

    প্রভঞ্জনগঞ্জে এখন বিকেল গড়িয়ে গেছে। বারিনবাবু চোখ খুলে দেখলেন চারিদিক ছায়া ছায়া, আকাশ কালো হয়েছে মেঘে। কালবৈশাখী এলো বলে।
    আরো নিশ্চিন্ত হয়ে গাছতলাতেই শুয়ে পড়লেন বারিনবাবু।

    জনবহুল শহরের পার্কেও তখন এলোমেলো হাওয়া দিচ্ছে। শালপাতা, ছেঁড়া কাগজ ইতস্তত উড়ে বেড়াচ্ছে, ঘুরপাক খেয়ে আবার মাটি নিচ্ছে। হাওয়ার তেজ আরো বাড়তেই এক কোণে বসে থাকা মানুষ্টি উঠে পড়লেন। আদর করে কুকুরটাকে ডেকে নিয়ে রওনা দিলেন বাড়ির দিকে।
    ঐ পার্কেরই অন্যপ্রান্তে, আরেকটা বেঞ্চের ওপর হাওয়ার তোড়ে ফরফর করে পাতা উল্টে যাচ্ছিলো একটা খাতার।
  • M | 59.93.243.153 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১২:৫০392409
  • বাহ! এই টইটাও খুব ভালো, আবার দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে।
  • Nina | 66.240.33.47 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৩:৪৮392410
  • Thanks এই টইটা তোলার জন্য---সবকটা গল্প প্রথমবার পড়লাম---খুউব ভাল লাগল। আবার পড়ব। প্রত্যেকটা গল্পে সুন্দর।

  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৫:৩৪392411
  • টিমের গল্প মানেই কুয়াশামাখা ভোর, ফেলে যাওয়া পাখীর পালক, পায়ের তলায় ঝরে থাকা শুকনো বাদামী পাতা - গল্প শেষ হয় - পাতাভাঙার শব্দ ছড়িয়ে পড়তে থাকে - বারবার ফিরে আসে...
  • d | 117.195.33.248 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২০:২২392412
  • এইটা ঠিক অণুগল্প নয় বোধহয়। বড় ভাল। গল্পটায় পাঠকের কল্পনার জন্য অনেকটা জায়গা আছে। সেইটা ভারী ভাল লাগল।

    কিন্তু শেষটা এসে যেন গল্পের গতি একটু শ্লথ হয়ে গেল টিমি। তারপরেই ঝপাং করে শেষ হয়ে গেল। আমি পাঠক হিসেবে একটু যেন কেমন ফস্কেমত গেলাম ওখানটায়। :) আচ্ছা যদি প্রভঞ্জনগঞ্জ (নামটা কি গম্ভীর) আর বারীনবাবু, অণ্বেষা আর গোলমালের আগেই আসতেন ---- তা'লে কেমন হত? কিম্বা আরো দু একটা দৃশ্যকল্প আসত?

    পরে এগুলোকে একজায়গা করে বই বের করার সময় এইটাকে আরেকবার রিরাইট করার কথা ইচ্ছে হলে ভেবে দেখতে পার।
  • Tim | 198.82.18.185 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২২:১৩392413
  • হ্যাঁ এই গল্পটা অণুগল্প না। লিখতে শুরু করার সময় বুঝিনি এত বড়ো হবে। তারপর আরো নানারকম সম্ভাবনা উঁকি দিতে থাকলো যখন, তখন বুঝলাম যে এইটা একটা বড়োগল্প হতে পারতো। একবার ভেবেওছিলাম যে কয়েক পর্বে ভেঙে লেখা যায় কিনা।
    শেষটা ঐরকমই করার কথা ভেবেছিলাম, তাই আর পাল্টাইনি পরে। যদিও অন্যভাবেও করা যেত।
    সব্বাইকে থ্যাংকু পড়ার জন্য।
  • Manish | 117.241.228.137 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৮:৩৬392414
  • Tim কে,

    আপনি ফুটবলের উপর সুন্দর গল্পের একটা টই খুলেছিলেন কিন্তু আমাদের হতাশ করে মাঝপথে বন্ধ করে দিলেন। লেখাটা/টইটা আবার চালু করা যায় না।
  • Tim | 71.62.121.158 | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৯:৩০392416
  • ফ্রিকিক বন্ধ হয় নি। এট্টু সময় করে ওটা আবার লিখবো তো। তাড়াহুড়ো করতে চাইছিনা আর কি। :)
  • ranjan roy | 122.168.222.220 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৮:০২392417
  • অসাধারণ! টিম, সাধ মেটেনি। আরেকখানা হোক।
  • ranjan roy | 122.168.222.220 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:০৬392418
  • ( এই ঘটনা যখন ঘটেছিলো তখন ভারতবর্ষে সেলফোনের সাম্রাজ্য, বিস্তার কেন শুরুই হয় নি। এমনকি পাড়ায় পাড়ায় এস টিডি পিসিও তার কয়েকবছর পর শুরু হয়। তখন অন্য শহরে কারো সাথে কথা বলতে হলে হয় ট্রাংককল বুক করে সারাদিন ফোনের কাছে ঘুর ঘুর করো, নয় কয়েকগুণ বেশি টাকা দিয়ে লাইটনিং কল বুক করো।)
    সন্ধ্যে ছটা বাজে। ব্যাংকের সংলগ্ন বাথরুমে হরিদাস
    পাল আয়েস করে চান করছে। গরমটা জব্বর পড়েছে, মে মাসে ছত্তিসগড়ে যেমনটি হয় আর কি। কিন্তু চানের পর সারাদিনের গায়েলেগে থাকা সেই জামাকাপড় আবার পরতে হবে! যাচ্ছেতাই! এবার থেকে একসেট জামাকাপড় মায় আন্ডারওয়ার নিজের আলমারির ভেতর এককোণে প্যাক করে রাখতে হবে। আবার যদি কখনো দরকার পড়ে!

    কেন পড়বে? সন্ধ্যেয় দশ কিলোমিটার দুরের পাড়ায় বাড়ি ফিরে চান করলেই তো সাফসুতরো জামাকাপড় পরা যায়। বছর দুয়েকের পোস্টিংএ কখনও তো দরকার পড়ে নি। হ্যাঁ, আজকে ছাড়া। আজকের কথা আলাদা। আজ একটা কান্ডই হয়েছে। হরিদাস নিজের মনে হাসে।
    আজকে দুপুরে হরিদাস বাকি স্টাফদের বলে লাঞ্চের সময় রায়পুর স্টেশনে গেছলো। ওদিকে ছোট ছোট দুই বাচ্চামেয়েকে নিয়ে বৌ হাজির, প্ল্যানমাফিক। দু'নম্বর প্ল্যাটফর্মে আমেদাবাদ-হাওড়া এক্সপ্রেস দাঁড়াবে, পাঁচমিনিটের জন্যে। সেই ট্রেনে করে সপরিবারে কোলকাতা যাচ্ছেন হরিদাসপালের শ্বশুরমশাই। মাত্র রিটায়ার করেছেন; খোশমেজাজে নেপাল ঘুরে হিল্লিদিল্লি করে চলেছেন। মেজমেয়ে-মেজজামাইকে খবর পাঠিয়েছেন যদি দুই নাতনীকে নিয়ে রায়পুর স্টেশনে আসে তাহলে একটু চোখের দেখা, কুশল-মঙ্গল বিনিময় হতে পারে।
    যথাসময় ট্রেন এল। কিন্তু বেশ লম্বা ট্রেনের শেষ কোচটি প্ল্যাটফর্মের বাইরে দাঁড়াল। অনেকটা হেঁটে গিয়ে উঁচুতে স্টেপ বেয়ে কোচে ঊঠতে হল। ছোট্ট ভাগনীকে ওর মামা হাসিমুখে কাঁধে করে তুললো।
    এর পর উপহার বিনিময়, " তুই কত রোগা হয়ে গেছিস্‌?" "" তোমরা কেমন আছ''? "" ওমা, কি কান্ড! জামাই ঠিক করে খেতে দেয় না?"" এসব হতে হতে ট্রেন কখন চলতে শুরু করলো কারো ঠিক খেয়াল নেই। শালা চেন টানলো, কিন্তু ট্রেন থামলো না।
    হরিদাস পাল সবাইকে চলতি গাড়ি থেকে নামতে বারণ করে নিজে লাফিয়ে নেমে গেল। কারণ পকেটে আছে ব্যাংকের সিন্দুকের চাবি। নামার আগে বৌকে বল্লো-- কোন চিন্তা নেই। বিলাসপুরে গিয়ে ধীরেসুস্থে নামবে। সন্ধ্যেয় মহানদী এক্সপ্রেস ধরে আটটা নাগাদ রায়পুরে ফিরে আসবে। আমি মেনগেটের সামনে তোমাকে রিসিভ করবো।
    তাই এখন আয়েস করে চন্দন সাবান মেখে চান করা। সামনের সেলুন থেকে শেভিং করে পাউডার লাগিয়ে যথাসময় স্টেশনের জন্যে রওয়ানা হওয়া।
    ট্রেন মাত্র পাঁচ মিনিট লেট। হরিদাস পাল উস্‌খুশ্‌ ভাবটা কাটাতে সিগ্রেট ধরায়। হ্যাঁ, মাইকে শোনা যাচ্ছে ট্রেন একনম্বর প্ল্যাটফর্মে ইন্‌ করেছে। তাড়াতাড়ি সিগ্রেট নিভিয়ে ও মেন গেটের সামনে দাঁড়ায়। যাত্রীরা এক এক করে বেরিয়ে আসছে। টিকিট কলেক্টর চেক করছেন। মালপত্র নিয়ে বেরুনো যাত্রীদের গেটের বাইরে বেশ কজন রিকশাওয়ালা ও অটোচালক ছেঁকে ধরছে। না , এখনো বৌয়ের দেখা নেই।
    হরিদাস নিবিষ্ট মনে যাত্রীদের দেখতে থাকে। একজন অহংকারী চেহারার তরুণ চাকাওয়ালা সুটকেস টেনে আনছে। সঙ্গে কোলের বাচ্চা নিয়ে ব্যতিবস্ত ঘরোয়া বৌ। মাড়োয়ারি টুপিওলা ভদ্রলোকটি দামীধূতির কোঁচা সামলিয়ে টিকিট বের করছেন। দুজন কলেজে পড়া মেয়ে নিঘ্‌ঘাৎ ছুটি কাটাতে এসেছে। লম্বা বিদেশি ট্যুরিষ্ট মেয়েটি কি আমেরিকান? কেন সব লালচেসাদা চামড়া দেখলেই ওর আমেরিকান মনে হয়? ক'বছর আগেও তো রাশিয়ান মনে হত। আরে ,এইসব আজেবাজে খাপছাড়া চিন্তার মাঝে গোটাকয়েক পরিবার যে এগিয়ে গেছে। ছি! ছি! নিজের বৌ-বাচ্চা কে রিসিভ করতে এসে তরুণী মেয়েদের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকা! তুমি শালা একটি আস্ত---! নিজেকেই গাল দেয় ও। না: ওদের মধ্যে ওর বৌ নেই।
    আস্তে আস্তে যে প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা হয়ে আসছে। একটা অজানা ভয় ওকে ঘিরে ধরে। কি হতে পারে? কোন অ্যাকসিডেন্ট? না,না, এসব আলতু-ফালতু কথা একদম ভাবে না। ঐযে এক মহিলা আসছেন দুটো বাচ্চা নিয়ে। কিন্তু, ওদের সঙ্গে গোটা কয়েক লাগেজ। বৌতো ঝাড়া হাত-পা ছিলো। না: ওরা নয়।
    আস্তে আস্তে প্ল্যাটফর্ম ফাঁকা হয়ে গেল। না: কোন যাত্রী বাকি নেই, যারা বসে আছে সব কোন অনাগত ট্রেনের অপেক্ষায়।
    এতক্ষণে রূঢ় বাস্তব ওর বুকে ধাক্কা মারে। ট্রেন চলে গেছে। বৌ-বাচ্চার কোন হদিশ নেই।
    এবার? এবার কি করা? থানায় যাবে? হাসপাতালে? এত তাড়াতাড়ি! না-না, পরে কোন ভুল ধরা পড়লে যাতা রকমের খোরাক হতে হবে। কোন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলবে? ক্ষিদেটাও জব্বর চাগিয়ে উঠেছে। কিছু খেয়ে নিয়ে তারপর ভাবা যাক।
    স্টেশনের কাছে এক মাদ্রাসী রেস্তোরাঁয়
    ধোসা- কফি খেতে খেতে ঠিক করলো যে আজ রাতটা ঘুমোবে। কাল রোব্বার। সকালে অবিনাশের সঙ্গে কথা বলে ভাবনা গুলো গুছিয়ে নিয়ে তারপর পুলিশ-হাসপাতাল করবে।
    ও বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়। একটা ডিসিশনে আসতে পারে মনটা একটু শান্ত হয়েছে। ওর কাছে ডুপ্লিকেট চাবি আছে। ঘর খোলা যাবে।
    দ্বিচক্রযান চালাতে চালাতে হটাৎ ও খেয়াল করলো যে ওর কোন টেনশন হচ্ছে না। কেন? ও কি একটু অস্বাভাবিক?
    অন্যরা হলে--। ও কি খুব সাহসী? তাও নয়। আদ্দেক ব্যাপারে ওতো ভীতুর ডিম।
    তাহলে? মনটা ভার ভার নাহয়ে হালকা লাগছে কেন? যদি ওর বৌ-বাচ্চাকে খুঁজে না পাওয়া যায়? যদি সত্যিই ওরা ওর জীবন থেকে হারিয়ে যায়! এই সম্ভাবনা কি ও ভেবে দেখেনি?
    দেখেছে। ও টের পেল যে অই সম্ভাবনাটাই ওর মনকে হালকা করে দিয়েছে।
    ---বৌ নেই, বাচ্চা নেই, নির্ভার জীবন।গোটা জীবনকে আর একবার নতুন করে শুরু করার অসীম সম্ভাবনা! এই সুযোগ কি সহজে আসে? কজনের জীবনে আসে?
    ওর গলায় গান গুনগুনিয়ে ওঠে--"" যা হারিয়ে যায়, তা আগলে বসে রইবো কত আর--""।
    এবার মোঋহ ঘুরলেই বাড়ি। একি? বাড়ির দরজা হাট করে খোলা! আলো জ্বলছে! ও একটা ঘ্রের থেকে জেগে ওঠে। স্কুটার দাঁড় করাতে করাতে হাসিমুখে বৌ বেরিয়ে আসে।
    --- "" তুমি স্টেশনে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছ না? আরে, মাঝ রাস্তায় ভাটাপাড়া স্টেশনে উল্টো প্ল্যাটফর্মে ভাটাপাড়া-- রায়পুর লোক্যাল একটু লেটে ছাড়ছিল। সবাই মিলে হুড়মুড় করে নামিয়ে দিল। আমিএকঘন্টা আগে বাড়ি পৌঁছে গেছি। তোমার ব্যাংকে ফোন করলাম, ততক্ষণে বোধহয় বন্ধ হয়ে গেছে। নাও, হাত-মুখ ধোও, চা দিচ্ছি। জান, মা বলছিলেন-- কেমনধারা মানুষ তোর বর? বৌ-বাচ্চাকে গাড়িতে রেখে নেমে হেঁটে চলে গেলো, একবার পেছন ফিরে দেখলোও না!""
    হরিদাস পালের ভেতরে একটা বোবা অবুঝ রাগ মাথাচাড়া দিতে থাকে। কেন, তা সে নিজেও জানে না।
  • ranjan roy | 122.168.222.220 | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:০৮392419
  • * মোড়। * ঘোর।
  • hu | 12.34.246.72 | ২৯ ডিসেম্বর ২০১০ ০৩:২৫392420
  • এই টইটা অনেকদিন ঘুমোচ্ছে।
  • Tim | 173.163.204.9 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৩:৫৪392421
  • মাঠের রাস্তাটা ধরতে গিয়ে একটু থমকে গেল তুহিন। ওদিকে যাওয়া উচিত হবে কিনা কে জানে! অনেকদিন, প্রায় বারো বছর পর.... বারো বছর অনেকটা সময়। এক যুগ থমকে আছে পায়ের কাছে, তুহিনের। তুহিন তো কবি নয়, হলে বলতো, ""চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি, চলচ্ছক্তিহীন। ""

    রাস্তাটা খুব লম্বা না, বড়োজোর মিনিট দশেক। খুব বেশি গাছ না থাকা একটা সরু পাকা রাস্তা, খানিকটা বেঁকে গিয়ে একরাশ বাড়িঘরের মধ্যে হারিয়ে গেছে। ওরকম মনে হলেও আসলে রাস্তাটা হারায় না। আরো একপাক ঘুরে গিয়ে নিয়ে যায় স্টেশনের মাঠে। স্টেশনের মাঠ কেন নাম, কেউ জানেনা। অনেক নামই তো অর্থহীন হয়। নইলে মাথাগরম ছেলের নাম তুহিন হয়? বা, হয়ত যেটা যা হতে পারেনি, তার সেরকমই নাম জুটে যায়। নামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা আশাবাদ ব্যর্থ স্বপ্ন আর সযত্নসৃষ্ট গর্ব, হয় সেলাম ঠুকে রাস্তা ছেড়ে দেয়, নয়ত আজীবন ভেংচি কাটে।

    এইসব সাতপাঁচ ভেবে তুহিন পথ চলে। ঐ রাস্তাটাই নিয়েছে সে, যেখানে একটু আগেই থমকে দাঁড়িয়েছিলো। বারো বছর আগে সে যখন এলাকা ছাড়ে, তখনও এই রাস্তাটা যেভাবে মনে ছিলো, আজো তেমনি আছে। সে চোখ বন্ধ করে এই পথে হেঁটে যেতে পারে। এই পথেই তার বাড়ি, ভাবলে এখন হাসি পায় তুহিনের। তার পরিচয়? ""মনে পড়ে, মনেই পড়ে।""

    স্টেশনের মাঠের সেই জৌলুস আর নেই। বছরের বিশেষ কিছু সময় বাদ দিলে এই মাঠ চকচকে ঘাসে ঢাকা থাকতো। মরসুম শুরু হওয়ার মুখে এই মাঠেই ওদের ট্রেনিং হতো। জবরদস্ত সাইডব্যাক হিসেবে তুহিনের তখন এই ছোট শহরে বেশ নাম। বিকেলে ঝাড়া তিন ঘন্টা মাঠে কাটিয়ে যখন বাড়ি আসতো তখন প্রায় সন্ধে। ক্লান্তিতে ভেঙে পড়া শরীরটা কোনমতে উঠোনে টেনে এনে বসে যেত সে। অমনি ঠাকুরঘর থেকে ঘন্টার আওয়াজ আসতো। এই ঘন্টাটা বাজলেই তুহিন প্রার্থনা করে, সেটা তার স্বভাব। আজন্মলালিত সংস্কার তাকে শিখিয়েছে, পুজোর পরে ঈশ্বরের কাছে কিচু চাইতে হয়। তাই সে প্রতিবারই দরকারি অদরকারি বিভিন্ন জিনিস চায়, প্রার্থনায়। কোনোদিন অঙ্কের পাশমার্ক তো কোনোদিন বেস্ট প্লেয়ার প্রাইজ। সময় বিশেষে কোনোটা মঞ্জুর হয়, কোনোটা হয় না। তবে প্রার্থনা থেমে থাকেনা। "" একটি স্রোতে ভাসছে বা কে - পাহাড়চূড়ো?""

    তো, যে কথা হচ্ছিলো। মাঠের ধারে এসে বসে তুহিন। ধুলো ওড়া, অর্ধেকের ওপর ন্যাড়া হয়ে যাওয়া ফ্যাকাসে মাঠ। না জানলে কেউ বিশ্বাসই করবেনা যে এই মাঠটাই ভয়ানক সবুজ ছিলো। এমনকি মোটা ঘাসের জন্য খেলা স্লো হয়ে যেত। কাফ মাসলে টান লাগতো প্রায়ই, ঠিকঠাক স্ট্রেচ না করে নিলে। কিন্তু আজ? এখন মাঠটা আদৌ আর সেরকম নেই। ধুলো আর রূক্ষ জমির ওপরে বল গড়ায়, যেন সংসারে আর কোনো বন্ধনই তার নেই। বার্ধক্য কাকে বলে সেটা এই মাঠ দেখে স্পষ্ট বুঝে নেওয়া যায়। তার কথা আবারো খামোখাই মনে আসায় বিরক্ত হলো তুহিন। ""মনের মধ্যে কার ছবিখান হচ্ছে গুঁড়ো""।

    কতক্ষণ মাঠের ধারে এইভাবে কেটেছে মনেও নেই তুহিনের। তন্ময় হয়ে একের পর এক ওভারল্যাপ, সেন্টার আর ট্যাকলিং সিচুয়েশন মনে করে খুশি হয়ে উঠছিলো সে। এই দীর্ঘ বারো বছর সে কোনো মাঠেই যায়নি, বলে পা ছোঁয়ায়নি। কিন্তু আজ হঠাৎ এসে পড়ায় কেমন অদ্ভুৎভাবে সমস্ত বদলে যাচ্ছে। ছেড়ে দিয়েছিলো সে খেলা, একদিন হঠাৎ করেই। ""ছাড়া তো খুব সহজ, এবং ছাড়া তো খুব সহজ!""

    মাঠের এমাথা ওমাথা আর দেখা যাচ্ছে না। খানিকটা অন্ধকারের জন্য, অনেকটাই তুহিনের স্বল্প দৃষ্টিশক্তির জন্য, সমস্ত এখন ঝাপসা। বছরের এই সময়টা সন্ধের পর হিম পড়ে। অন্ধকার সরিয়ে সরিয়ে দুয়েকটা আলো মাঠে পৌঁছতে চায়, অর্ধেক পথ এসেই হা-ক্লান্ত হয়ে বসে থাকে। তুহিন বসে থাকে, বসেই থাকে। তাকে ঘিরে পতঙ্গের সাড়াশব্দ বাড়ে, তাকে ছুঁয়ে সরে যায় লাজুক সরীসৃপ, তার নাগালেই সময় এসে বসে। সময় ওকে আদর করে, ঢাকতে চায়। "" যেমন একা একলা গাছ শিকড় ঢেকে রাখে""।

    কিন্তু সময়েরও কাজ থাকে। সময় অনুযোগ করে, মৃদু গঞ্জনা দেয়, সমালোচনায় জাগিয়ে তুলতে চেষ্টা করে তুহিনকে। সময়ের অনেক দাম। তাই তুহিন হাতড়ে হাতড়ে অন্ধকারেই লাঠিটা খুঁজে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ফেরার পথেও তার বাড়ি, জানলা, ফুলকাটা গ্রিলের জানলা দেখা যায়। অন্ধকার সেইখানে থাবা বসাতে পারেনি এখনও। বাঁধানো রাস্তাটা ছেড়ে, এবড়ো খেবড়ো মেঠো পথেই হাঁটে তুহিন। সাজানো, বাহারি, আলোকিত বৃত্তের বাইরে পা বাড়িয়েও একবার ফিরে চায় তার জানলার দিকে। ঐখানে, "" অনন্ত কুয়ার জলে চাঁদ পড়ে আছে। ""

    --------------
  • de | 111.119.222.61 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ২০:০৩392422
  • টিম,

    যেন ছবি দেখছি! গালে হাত দিয়ে বসে রইলাম ---
  • shrabani | 124.124.244.110 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৬:০৭392423
  • কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে স্থির দৃষ্টি সুমনার। দুপুরের দিকটায় দোকানে ভীড় কম থাকে, তখন সে হিসেব ঝালিয়ে কাজ এগিয়ে নেয়। তাহলে দোকান বন্ধ হবার পরে বেশীক্ষণ থাকতে হয় না।
    -"এটা না, ঐ কালো সাদা প্রিন্টটা দেখান তো।"
    গলাটা কেমন চেনা চেনা, কথা বলার ধরণটা যেন জানা। ঘাড় ঘোরালেই সব গুলিয়ে যাবে, তাই তাকায়না ওদিকে। আসুক কাউন্টারে পেমেন্ট করতে, তখন দেখা যাবে। তবু হিসেবের ফাঁকে ফাঁকে স্মৃতি হাতড়াতে থাকে। সেলের ছেলেটা এসে দুটো শাড়ি আলতোভাবে ছুঁড়ে দেয় ওর কাউন্টার টপের ওপর।
    -"দিদি, এই দুটো বিল হবে, দশ পার্সেন্ট ছাড়।"
    -"সেকী, লেখা তো আছে টোয়েন্টী পার্সেন্ট ছাড় সব শাড়ীতে। তুমিও তো তখন তাইই বললে।"
    দুজন মহিলা, একজন সুমনারই বয়সী হবে, অন্যজন একটু বড় হবে। প্রথমজনই কথা বলছে, একটূ তেরছা ভাবে দাঁড়িয়ে ছেলেটার মুখোমুখি। সুমনা কাউন্টারের এদিক থেকে মুখটা দেখতে পাচ্ছেনা। দ্বিতীয়জন তার সামনে, চল্লিশের ঘরে বয়স হবে। সিঁথি ফাঁকা, দুধারে কোঁকড়া কালো চুলে দুচারটে রুপোলি রেখা। ভঙ্গীতে একটু রুক্ষভাব যেন, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা।
    -"সব শাড়ীতে নয় দিদি। আপনি ঐ আগের মেরুনটা নিলেন না তো। ওতে বিশ পার্সেন্ট ছিল।"
    -"দেখছিস দিদি,কেমন চালাকি সব দোকানগুলোর। বাইরে দ্যাখো অমুক সেল তমুক সেল লিখে রেখেছে। এদিকে যেই একটা পছন্দ করবি, শুনবি সেটা ছাড়া সবেতে সেল আছে।"
    ছেলেটার বয়স কম, সারাদিন খদ্দের চরিয়ে মেজাজ তিরিক্ষি। সুমনা দেখেছে বয়স্ক সেলসম্যানরা অনেক বেশী ধৈর্য্যসহকারে খদ্দেরদের সঙ্গে ডীল করে।
    -"নিন না ঐ মেরুনটা, ছাড় দিয়ে দেব।"
    সুমনা এসবের মাঝে কথা বলেনা, সে নীরবে সব শুনে দেখে যায়। ঝগড়া মিটলে বিল করা শুরু করবে।
    খুব রেগে কী একটা বলতে যাচ্ছিল মহিলা, তার দিদি ডাকল।
    -"ছাড় তো বনি, নে তাড়াতাড়ি কর। বাসের সময় হয়ে যাচ্ছে। বিলটা করুন।"
    বনি নাম্নী মহিলাটি মুখটা কাউন্টারের দিকে ফেরায়, আর তখনই সুমনার মনে পড়ে যায় কেন গলাটা এত চেনা লাগছিল। এতো বন্দনা, তার সঙ্গে ইলেভেন টুয়েলভে পড়ত। গ্রামের স্কুলে মাধ্যমিক পাস করে সে জেলা স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পড়তে ভর্তি হয়। সেখানেই বন্দনা তার সহপাঠিনী ছিল, অবশ্য বন্ধুত্ব তেমন ছিলনা। এক ক্লাসে পড়ত এই যা। সেও আজ কতকালের কথা, প্রায় বছর ষোল হবে।
    কী করবে ঠিক করতে না পেরে যান্ত্রিক ভাবে বিল করা শুরু করে। বন্দনা ওকে লক্ষ্য করে নি হয়ত, সে একমনে হিসেব করে পার্স থেকে টাকা বার করছে। কিম্বা দেখেও চিনতে পারেনি, তাও হতে পারে।
    মাথা নীচু করে ড্রয়ার থেকে খুচরো বার করতে করতে ঐটুকু সময়ে ফিরে যায় সেই স্কুলের দিনগুলোতে। নীলপাড় শাড়ি, বাস থেকে নেমে কাঠের ভাসাপোল পেরিয়ে নদীর ধারের স্কুল। স্কুলের গেটের সামনের বুড়ো ঘুগনিওয়ালার মুখের বলিরেখাগুলো স্পষ্ট দেখতে পায়।

    ফেরত টাকা আর বিলটা দেয়, বন্দনার দৃষ্টি শাড়ীর প্যাকেটের দিকে, হাতে নিয়ে একবার দেখে নিল ঠিক আছে কিনা। দিদি পৌঁছে গেছে কাঁচের দরজার কাছে, শিরা বার হওয়া রোদজ্বলা হাতের শক্ত মুঠোয় চকচকে ধাতব হাতল।
    সুমনার খুব খুব ইচ্ছে করছে একটু হাত বাড়িয়ে সেই দিন গুলো ছুঁতে। নদীপাড়ে পলি পড়ে ধবধবে মাটির জমি , শান্ত দুপুরের অলস ঝিরঝিরে হাওয়ায় দুলছে দুধারের বট অশুত্থ গাছের পাতা, বেতবন। টিফিনে স্কুলবাড়ির ছাদে উঠে কলার পাতে আমছিলা তেঁতুলমাখা খাওয়া। কত রকমের গল্প, চাপাগলায় চুপিচুপি কখনো বা উচ্চকিত হইচই। ছমছমে রহস্য জড়ানো ভালোলাগায় বয়:সন্ধির সেইসব দিন।
    বন্দনার মুখটা হিসেবী, তবুও সুমনা সাহস করে। কারণ দিদির মত এরও হাত খালি, সিঁথি ফাঁকা, আষ্টেপিষ্ঠে সংসার জড়ানো নেই। এর হাত ধরে ফিরে গেলেও যাওয়া যেতে পারে হয়ত। বয়স তো তারই সমান, বাড়ীর অবস্থাও ভালো ছিল, বিয়ে হয়নি কেন? নাকি...? উঁকিঝুঁকি মারে একঝাঁক প্রশ্নমালা।
    এসব নানান মেয়েলী চিন্তার মাঝেই বলে,
    -"আপনি বন্দনা তো?"
    বলতে হয় তাই বলা, সেতো নিশ্চিত জানে ও বন্দনা!
    যেতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় বন্দনা। এই প্রথম বোধহয় পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায় কাউন্টারে দাঁড়ানো মহিলার দিকে। সত্যিই তো শাড়ীর দোকানে বেশীরভাগই মহিলা খদ্দের, তারা সুমনার মুখের দিকে তাকায় কম। তাদের চোখ থাকে বিলের দিকে, শাড়ীর প্যাকেটের দিকে, টাকা দেবার আগে গোণার দিকে।
    -"হ্যাঁ, কিন্তু আপনি? আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।" স্পষ্ট স্বীকারোক্তি। সুমনা এক অদৃশ্য আয়নায় নিজেকে দেখে নেয়। মুখের অদলবদল হয়েছে নিশ্চয়ই, তবে নিজে টের পায়না। চোখে ক্লান্তিটা চোখে পড়ে। ঘন কালো চুল দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে দুদিকেই কমেছে। মুখে হয়ত সেই বছর সতেরোর লালিত্য আর নেই। তবু না চেনার মত নয়।
    নামটা বলতে গিয়েও বলেনা। এক সেকেন্ডের ধন্দ, সেই বন্দনাই তো!
    -"জেলা স্কুলে পড়তেন তো আপনি? স্কুলের কাছেই আপনাদের বাড়ি ছিল। ক্লাবের মাঠের ধারে পুকুরপারে গোলাপী রঙের একতলা বাড়ি।"
    জেলা শহরের মেয়ে, সচ্ছল অবস্থা, ইলেভেন টুয়েলভে আসা গ্রামের মেয়ের সাথে নতুন করে বন্ধুত্বে স্বভাবতই আগ্রহী ছিলনা ওরা। তবু সম্পর্ক হয়েছিল কারণ ওদের বিভাগে মেয়ে বেশী ছিলনা।
    বিস্ময়ে ভ্রু কুঁচকে আছে, তবু হেসে ফেলে,
    -"এখন আর গোলাপী নয় হলুদ, একতলা নয় দোতলা। আপনি কি জেলার মেয়ে, আমাদের পাড়ার তো নয়, তবে কি ইস্কুলের?"
    খেলাটা একতরফা হচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে, তবু সুমনা খেলে যায়।
    -"খো খো ম্যাচে পড়ে গিয়ে আপনার ডান হাত ভেঙে গিয়েছিল। আপনি সবার সঙ্গে হাফ ইয়ার্লি দিতে পারেননি। পরে একা অফিসঘরে বসে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। আপনাদের বাড়িতে একটা টোপাকুলের গাছ ছিল। যখন মাঠে ছেলেদের ম্যাচ হত তখন সবার ছুটি হয়ে যেত খেলা দেখার জন্য। আপনাদের রকে বসত মেয়েরা, কুলের সময় টোপাকুল পেড়ে তেল ঝালনুন দিয়ে খেতে খেতে খেলা দেখা হত।
    গ্রীষ্মের ছুটিতে বারো ক্লাসে আনন্দবাবু এক্সট্রা ক্লাস নিতেন। আপনাদের বাড়ীর সামনের টিউবয়েলে জল খেতে যেতাম আমরা, ইস্কুলের সামনের কলটায় জল উঠতনা।"
    দিদি দেরী দেখে দরজা থেকে ফিরে এসেছে কি হল জানতে। বন্দনা খুঁটিয়ে দেখে সুমনার দিকে, তাও চিনতে পারেনা। দোকানে আরও খদ্দের এসেছে, পছন্দের পালা চলছে। শেষ হলেই ধেয়ে আসবে কাউন্টারের দিকে। সুমনা কম্পিউটার ভুলে যায়, শোরুম ভুলে যায়। কাঁচের দরজার ওপারে সাজানো সুদৃশ্য মলের ব্যস্ততা তাকে স্পর্শ করেনা। সে অপেক্ষায় থাকে বন্দনার হাতের ছোঁয়ার, যে ছোঁয়াতে আছে সর্ষের তেলে জরানো টোপাকুলের গন্ধ।
    বন্দনা ব্যাগ থেকে রুমাল বার করে মুখ মোছে,দিদি তাড়া দেয়।
    -"সরি, আপনাকে আমার একটুও মনে পড়ছেনা। আপনি যা বলছেন সব ঠিক, তবু কেন যে-----। আপনিই বলে দিন না আপনি কে।"
    সুমনা হাত গুটিয়ে নেয়, আরেকটি খদ্দের আসছে এদিকে। মুখটা আবার রোজের মুখোশে ঢেকে, একটা যন্ত্রের হাসি হেসে বলে,
    -"সরি, আমি সেরকম কেউ না, তাই আপনার মনে নেই। মনে নেইই যখন তখন মনে করানো সহজ হবেনা। সে সময়ও নেই আপনার আমার কারোরই।"
    বন্দনা কি বলবে ভেবে পায়না, দিদি আবার এগিয়েছে দরজার দিকে। সেদিকে পা বাড়াতে গিয়ে কি মনে করে বলে,
    -"আমি এখানে গার্লস স্কুলে বাংলা পড়াই। দেখা হবে।"
    সুমনা আর তাকায় না ওদিকে। পরের জনের বিল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সে জানে আর দেখা হবেনা, কোনোদিনই না। জেলাস্কুলের ক্লাস টুয়েলভের বন্দনার সঙ্গে সুমনার, কখোনো না।
    সে আরও জানল ফিরতে চাইলেও সহজে ফেরা যায় না সবসময়।
    ********************
  • hu | 12.34.246.72 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ১৯:৩৭392424
  • অণুগল্পেরা জেগে উঠেছে আবার। থ্যাঙ্কিউ!
  • Nina | 64.56.33.254 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ ২২:৪৫392425
  • আহা মনটা ভরে গেল--আরও চাই দুজনকেই অনুরোধ করে গেলাম---
  • Tim | 173.163.204.9 | ১৪ এপ্রিল ২০১১ ১০:১০392427
  • সে হেঁটে আসে একা, ধনুকের মত রাস্তাটা তাকে পৌঁছে দেয় বাসস্টপে । বাসস্টপে কেউ নেই কোথাও। সব মোড়েই পানের দোকান থাকে, থাকে সিগারেট, থাকে আগুন। ইতস্তত পড়ে থাকা রাংতা।

    আগুন ঘিরে আড্ডা জমায় মানুষ। আগুনে মাংস ঝলসানো হয়, আগুনে পাক খেয়ে খেয়ে নাচে পোড়া মাংসের গন্ধ। তৃপ্তিতে কেউ শিস দিয়ে ওঠে। চকচকে চোখ তার, পুষ্টি পেয়ে দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হয়েছে।

    তাই তারা ইশারা করে। পরষ্পরকে, ও তাকে।

    দূরত্ব কমে এলে আওয়াজ জোরে শোনা যায়। ফিজিক্স। সুতরাং গলার জোর বাড়ে, কারুকাজও বাড়ে। আলাপ শেষ করে তখন আসর জমাতে শুরু করেছেন ওস্তাদ।

    দূরত্ব আবার বাড়ে। আওয়াজ কমে আসে। আগুন ঘিরে কয়েকটি লোক আবার খাবারের দিকে ফেরে।

    আরো একটা দিন আমার অহমিকাবোধ অক্ষত থেকে যায়। মেয়েটি নিরাপদেই গন্তব্যে পৌঁছবে আজ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন