এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আজ ঈদ

    Samran
    অন্যান্য | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ | ৩৫৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • siki | 219.64.11.35 | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১০:০৬404133
  • সক্কলকে শুভেচ্ছা।
  • Samran | 59.93.203.49 | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১০:৩৩404144
  • খিদিরপুরের কোরবানির পশুর বাজার এই প্রথম দেখলাম। বিদ্যাসাগর সেতুর যে উড়ালপুলটা হেষ্টিংসএ গিয়ে নেমেছে সেই উড়ালপুলের নিচে বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে বাজার। দিনেরবেলায় লোকজন খুব একটা থাকে না। ব্রীজের তলা আর দুপাশের মাঠমত জায়গাটি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাজার। বেলা যত পড়তে থাকে বাজার তত জমতে থাকে। দিনের কাজ সেরে মানুষ আসে কোরবানির পশু কিনতে। ঈদের আগে গতকাল শেষ বাজার বলে কাল দুপুর থেকেই বাজারে বেশ ভীড়। বেশ কিছু নারীমুখও দেখলাম বাজারে। পরনের কাপড় আর পরার ধরন দেখে মনে হল বিহার বা ইউপির গ্রাম থেকে এসেছে। পশু আগলে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে মনে হল পশু বিক্রি করতেই আসা। কিংবা আরও দূরের কোন গ্রাম থেকে নিজের পোষা প্রাণীটি নিয়ে কলকাতার এই হাটে এসেছে ভাল মূল্য পাওয়া যাবে বলে। কোরবানির পশুর হাটে নারী বিক্রেতা। বেশ নতুন লাগল। হয়ত প্রতিবারেই আসে, আমার চোখে পড়েনি।

    রাস্তায় প্রায় জ্যাম লাগিয়ে দিয়ে কিনে আনা গরু নিয়ে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে, এক একটি গরুর সাথে তিন-চারজন করে মানুষ। রাস্তার নিয়মকানুন জানে না বলে গরুগুলি মাঝে মাঝেই ধার ছেড়ে চলন্ত গাড়ির ফাঁক গলে রাস্তার মাঝে চলে যাচ্ছে দড়ি ধরে রাখা মানুষটির হাত ছাড়িয়ে। যার হাতে দড়ি সে কিছুতেই সামলাতে পারছে না তাগড়া গরুটিকে। গরুর পেছনে সেও ছুটছে রাস্তার মাঝ দিয়ে, চলন্ত গাড়ির ফাঁক গলে গলে। বাধ্য হয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ছে, চলন্ত বাস থেকে মানুষের খিস্তি উড়ে যাচ্ছে গরু আর রশি ধরে থেকে হঠাৎ হওয়া রাখালের উদ্দেশ্যে। ভিড়ে ঠাসা বাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হতে হতে আমি দেখছিলাম গরু হাতে মানুষের শোভাযাত্রা। পেছনে গায়ের পরে যিনি গা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি সমানে কটুক্তি করে যাচ্ছিলেন গরুখোর মানুষগুলোর উদ্দেশ্যে, মুসলমানদের উদ্দেশ্যে। রাস্তার ধারে ধারে লাঠি হাতে দাঁড়ানো পুলিশ, সোমবারের ব্যস্ত রাস্তা আর পরবের আগের দিনকার শেষবেলার ব্যস্ততা সবই যেন বলছে, কাল ঈদ, কোরবানির ঈদ।

    আমি যেখানে থাকি সেখানে ঈদ বলে কিছু বোঝা যায় না। ভোরবেলা থেকেই রোজকার মত শুরু হয়েছে পাশের বাড়ির ঝগড়া। একতলা বাড়িটির ছাদে নাইটি পরা মেয়েটির মোবাইল কানে ঘুরে বেড়ানো, দোতলার সঞ্জীববাবুর স্ত্রী লেখার চিৎকার তার ছেলের উদ্দেশ্যে, বন্দোপাধ্যায়দের বাড়ির সদ্য জন্মানো শিশুকন্যাটির কান্নার শব্দ সবই আর পাঁচটা দিনের মত। ফ্ল্যাটের দরজায় দরজায় একের পর এক কলিংঅবেল, প্রথমে কাগজওয়ালা তারপর দুধওয়ালা তারপর স্যুইপার। চলতেই থাকে একের পর এক... ভোরবেলাকার এই শব্দকল্পে কিছুদিন ধরে শুধু যোগ হয়েছে মিষ্টার বাসুর বাড়ির সিডিতে চলা উচ্চাঙ্গ সগীতের সুর। কিন্তু আজ ঈদ। সেটা জানান দিতে নতুন শব্দ যোগ হয়, এসএমএসের শব্দ। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠান শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার। গান করেন। আমার সাথে আলাপ হয়েছিল দোহার-এর গান শুনতে গিয়ে, সেদিন তিনিও গান করেছিলেন কালিকাপ্রসাদের সাথে। ঈদে, বিজয়ায়, দীপাবলীতে একটি করে বার্তা আসে তাঁর কাছ থেকে। আজও এসেছে, খুব ভোরে। আমি যখন হাল্কা শীতে গুটিসুটি মেরে উঠি উঠি করছিলাম তখনই মেসেজটা আসে। এরপর একের পর এক মেসেজ আসে, কেউ এই কলকাতাঅ থেকে আর কেউ বহু বহু দূর থেকে ঈদ মুবারক জানায়। না: উঠেই পড়ি। আজ ঈদ...
  • siki | 219.64.11.35 | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১০:৩৯404155
  • খুব খারাপ লাগে। বউয়ের আপিস ছুটি, মেয়ের স্কুল ছুটি। আমার ছুটি নাই। কাল এমনিই হাসতে হাসতে একজনকে জিগ্যেস করছিলাম, কাল ছুটি দেবে না কোম্পানি?

    সে পাব্লিকও হাসতে হাসতে জবাব দিল, ভাই য়ে হিন্দুস্তান হ্যায়, পাকিস্তান থোড়ি না হ্যায় ...
  • d | 203.143.184.10 | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১১:০৪404164
  • আরে সামরান সুন্দরী যে! কদ্দিন বাদে ................ লেখো লেখো .....
  • Blank | 203.99.212.224 | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১১:৫৭404165
  • ছুটি ছাটা নেই। সেই সব দু:খু তাই মনে চেপে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ...
  • Blank | 203.99.212.224 | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১২:০২404166
  • আচ্ছা, কেউ কি বলতে পারবে যে আজ কি সব জায়গায় ঈদ? মানে শ্যাম চাচার দেশেও কি আজ ই ঈদ?
  • Binary | 198.169.6.69 | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ১৯:৫৮404167
  • সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা।
  • ranjan roy | 122.168.59.255 | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ২০:১৩404168
  • একটু বিবাদী সুর লাগাচ্ছি। আমার বন্ধু শাকির আলি দুই ঈদেই বাড়িতে বিরিয়ানি রাঁধিয়ে ব্যাপক দাওয়াত দেয়। সেই উপলক্ষে বিলাসপুরের আমার মত অকর্ম্মণ্য তথাকথিত বামেরা ( সমাজবাদী, আম্বেদকরবাদী, সিপিআই, সিপিএম) একত্রিত হই।নিজেদের বিলাসপুরের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক মহলে মাইনরটি স্ট্যাটাস সম্বন্ধে সচেতন হয়ে পরস্পরের পিঠ চাপড়ে, বুশ এবং বাজার অর্থনীতিকে গালি দিয়ে গুষ্ঠিসুখ অনুভব করি আর বিরিয়ানি খেয়ে ঢেঁকুর তুলি।
    কিন্তু আরও কয়েকজন আসেন--- সহকর্মী, অরাজনৈতিক । তাদের মধ্যে কয়েকজন এমন যে সারাবছর শাকিরের তঙ্কÄতালাস করেন না। কেবল দুই ঈদের দিনে বিরিয়ানির জন্যে শাকিরকে মনে করেন। কিন্তু নিজেদের পূজোপার্বণে বা কোন পারিবারিক উৎসবে ওকে বা ওর স্ত্রীকে খেতে ডাকেন না। খারাপ লাগে।
    তবু ঈদের দিনে সবাইকে মুবারকবাদ! সামরান ভাই! আপনার বড় লেখার অপেক্ষায় আছি।
  • AB | 170.35.224.64 | ০৯ ডিসেম্বর ২০০৮ ২১:৩২404169
  • সামরানের লেখা পড়ে আমার মোসুমী ভৌমিকের গান মনে পড়ে গেল....

    অকারণেই হয়ত....

    সক্কাল সক্কাল, কোনো মানে হয়?
  • Sumeru | 119.15.152.2 | ১০ ডিসেম্বর ২০০৮ ০১:০৩404134
  • ছপ্পর ফুড়লে এমন ঈদ পাওয়া যায়। বেশি রাতে শুয়েছি তাই ঘুমোলাম অনেক্ষণ।মোতি ঘুম ভাঙাল, হাতে সেমুই-এর বাটি, মুখ ধুতেই হল, কারণ সে প্রশংসা না শুনে উঠবে না। ঠিক আছে, শুরু হল তার ভেজাল দুধের গল্প। মেলামাইন পাউডার( যা দিয়ে না কি চিনেমাটির জিনিস বানায়) বস্তায় করে এনে, হাত ছুড়ে ছুড়ে দুধ ও সেমুই ক্রমন্বয়ে বানিয়ে ফেলল।বেরোনোর সময় জিজ্ঞাসা করল, দুপুরে খাওয়ার ব্যাপারে, জানালাম, দাওয়াত আছে দুইবেলাই।

    মোতির ছেলে দশ বছরের নয়নের উৎসাহে এক তলার ছাদে গিয়ে দাড়াতে হল। নিচে রাস্তা পরিস্কার দেখা যায়।দশ-বারোটা গরু পা বেঁধে শুইয়ে রাখা হয়েছে। জানলাম একজন হজুল ক্রমান্বয়ে সেগুলো জবাই করবেন। তিনি এলেমদার মানুষ, ঠকাঠক করতে লাগলেন। আমাদের কমেন্টেটর কে পা ধরছে আর কে দড়ি বাঁধছে তাই সবিস্তারে জানিয়ে সুখ পেতে লাগল। আমি ঘরে ঢুকে টিভি চালালাম, ই-টিভিতে একটা রিয়েলিটি শো চলছে, সবাই সবাই কে প্রোপোজ করছে, মন্দ লাগল না, তিনটে মেয়েকে আবিস্কার করলাম যে তাদের আমি চিনি। বেলেল্লাপানা বেশিক্ষণ সহ্য হল না, টিভি বন্ধ করে দিলাম।

    ঘন্টা খানেক বাদে মোতি এল দুই থালা পোলাও বা ফ্রাইডরাইস নিয়ে। পেছন পেছন তার ছেলে, এক হাতে গোমাংস অন্য হাতে সালাড বা কিছু সবজি, হুজুরের মত স্পিডে কাটা।এবারও হুকুম হল সামনে বসে খেতে হবে, বলেই কি করে পোড়া মোবিল থেকে খাওয়ার তেল তৈরি করা যায়, বলতে শুরু করল। মনে হল এই বার বাথরুমে ঢুকে যাওয়াই ভাল। স্নান করে হালকা করে খেয়ে, বাকি সব ফ্রিজে ঢুকিয়ে একটু চ্যাট করলাম। মলির ফোন এল সে নিতে আসছে।

    এল বটে কিন্তু তার সাথে আরো দুইজন। রাবেয়া ( আমার সহকর্মী) ও বৃষ্টি (ভার্সিটি)। তারা অনেক কষ্টে একটা সি এন জি ধরে এনেছে, সেটাতেই যাওয়া হবে মিরপুর। সি এন জি'তে তিনজনই ধরে, তায় আবার আমি জুটেছি। হাফ কোলে, হাফ সিটে করে সব সেটিং করে রওনা দিল গাড়ি। রাস্তাঘাট ফাঁকা। পৌঁছে গেলাম হুস করে। নামার পরে বৃষ্টি বিদায় নিল, সে এমনিই ঘুরতে গেছিল, তার ঘোরা হয়ে গেছে, আর থাকার পারমিশন নেই।
  • siki | 219.64.11.35 | ১০ ডিসেম্বর ২০০৮ ০৯:২৫404135
  • সিএনজি পাওয়া যায় কলকাতায়?
  • b | 203.199.255.98 | ১০ ডিসেম্বর ২০০৮ ১০:১৬404136
  • ওটা বোধহয় ঢাকা মীরপুর।
  • Samran | 117.194.100.4 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২০:৩৫404137
  • গোটা মাস একদিনের জন্যেও কেনাকাটায় না গিয়ে শেষ মুহুর্তে সারাদিন বাজার কলকাতায়। কলিন লেনের শামীম ভাইয়ের দোকানের মাংস, নিউ মার্কেটের কাশ্মীরি হোসেন ভাইয়ের দোকানের জাফরান আর আরো আনুষাঙ্গিক টুকটাক এটা সেটা। প্রচন্ড ভীড়ে ঠেলে এই দোকান ঐ দোকান ঘুরে ঘুরে বাজার। সন্ধেবেলায় বাড়ি ফেরার পথে একে তাকে ফোন, চাঁদ উঠল কী! এপাতায় ওপাতায় খোঁজ। জানা গেল, মসজিদে তারাবীর নামাজ চলছে। তার মানে একটা দিন সময় পাওয়া গেল পথ ভুলে যাওয়া সেলুনে গিয়ে নিজেকে খানিক সেবা দেওয়ার। এক ফাঁকে বন্ধুর সাথে বসে বারিস্তার ডবল এসপ্রেসো। মাথা ধরা তাতেও কমে না যদিও..

    শেষ সন্ধেয় ঈন্ডিয়ান আর্ট কলেজের গেস্ট হাউসে মাহমুদুল হক স্যারের সাথে বসে কথামালা। মাহমুদুল হক ঢাকা ইউনির চারুকলার অধ্যাপক। কোনো এক কারণে আমি তাঁর বিশেষ স্নেহভাজন। আমি ঢাকায় গেলে বা উনি এখানে এলে দেখা একবার বা একাধিকবার হবেই। এই সময়ে উনি এখানে এসেছেন ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে কয়েকদিনের একটা ওয়ার্কশপে। এশার নামাজ আর তসবীহ পরা শেষ করে এসে যোগ দেন হক ভাবী। তিনি আবার ব্ল্যাক লেবেল ছাড়া খান না। ইতিমধ্যে উঠে গিয়ে নামাজ সেরে আসেন স্যারও। বিশাল টেবিল ভর্তি নানা রকমের চিপস ভুজিয়া লবনাক্ত কাজু আর ব্ল্যাক লেবেল। আরাফাতের বিরিয়ানি আর চাপ। হক স্যারের চাঁদ রাতের সেলিব্রেশন। এসেছে লিপি আর মাহবুবও। গ্যালারি আকার প্রকারে মঙ্গলবার থেকে ওদের প্রদর্শনী।

    রাত দশটায় আড্ডা শেষ হয়ে যাবে এটা জাস্ট হতে পারে না। চাঁদরাতের কলকাতা ঘোরার ইচ্ছে চাপা পড়ে ট্যাক্সিওয়ালা ভাইয়ের অনিচ্ছায়। ঠিকানা হিন্দুস্তান পার্ক, লিপি-মাহবুবের অস্থায়ী ডেরায়। সেখানে অপেক্ষায় রাশান ভদকা। শুভ আর আলোকচিত্রী বন্ধু দেব নায়েক তখন নিয়মমাফিক সান্ধ্য আড্ডায় কালো কুকুরের সাথে। রাশান ভদকার টানে শুভ আর দেবও চলে আসে লিপি মাহবুবের ডেরায়। গেস্ট হাউসের রিসেপশনের তাড়ায় আমরা আবার পথে..

    শুনসান রবীন্দ্র সদন। পথশিশু নিশ্চিন্তে ঘুমায় ফুটপাথে। সারাদিনের বিক্রি বাটা সেরে দোকানি তার দোকান, যা কিনা খোলা আকাশের নিচে একখানা টেবিল সেই টেবিলের উপর পলিথিনে পসরা ঢেলে ঘুমে অচেতন পলিথিনে ঢাকা পসরার উপর। দুই পাশে বাপ মাকে নিয়ে বছর খানেকের শিশুটিও হারিয়ে আছে ঘুমের দেশে। হাতটা শুধু মুঠো করে ধরে আছে মায়ের কাপড়ের একটা অংশ। ক্যামেরায় ছবি ওঠে ক্লিক ক্লিক। আমি মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে সদ্য ইন্সটল করা বাংলা ফন্টে দেখি সচলায়তন, ফেসবুক, আর জিমেলের বাজ..

    রাস্তায় খানিক পরে পরেই বাইকে করে হুল্লোড় করে ছেলের দল উদযাপন করে চাঁদরাত। নিঝুম রাতে সাঁই সাঁই ছুটে যায় তাদের মোটর বাইক তিন-চারজন করে সওয়ারি নিয়ে। ফুটপাথে বসে আমি অপেক্ষা করি একটা ট্যাক্সির নিদেনপক্ষে একটা শেয়ারের গাড়ির। লরিগুলো গজগামিনী স্টাইলে এগোয় বিদ্যাসাগর সেতুর দিকে। আমাদেরকে টোল অব্দি পৌঁছে দেওয়ার তাদের কোনো ইচ্ছে নেই। খালি ট্যাক্সিগুলো কথা শোনে না। ওরা এগিয়ে যায় যে যার ইচ্ছে মতো। ফুটপাথের আসন ছেড়ে এগৈ ট্যাক্সি ধরার আশায়। কী ভেবে যেন একজন রাজিও হয়ে যায়। আমি তুলে নেই অপেক্ষারত আরো দুজন মানুষকে। ওরাও বাড়ি যাবে। সকাল হলেই ঈদ..

    সকল বন্ধুকে ঈদের শুভেচ্ছা, ভালবাসা।
    ভালো থাকুন সবাই..
  • M | 59.93.213.224 | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১০ ২২:১৮404138
  • কি দস্যিপনা!!!!!! অ্যাঁ?
  • samran | 117.194.98.101 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১০:১৯404139
  • আবার জিগায়:-)
  • sumeru | 117.194.98.101 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১১:০৬404140
  • প্রচুর খিস্তি দিতে ইচ্ছা করে। আমি যে দেখেছি আমড়ারা ফুল হয়ে ফুটে আছে দূরপাল্লা বাসের জানালায়।অযা: যাহ। সেই আমগাছটির তলায় সক্রেটিসের মত দাঁড়ালে একে একে কাটা পড়ে গরুগুলি চিৎকারে চিৎকারে ত্রিভূবনমালা, ঘোর এক, সাঁজোয়া দুলে ওঠে নিরীক্ষণ, চাঁদমালা, হাঁটু।

    সি এন জি চলে যায় অন্য দাওয়াৎএ। রাস্তায় তখন রক্ত পড়ে থেকে থেকে বুড়িগঙ্গার মত কেবল এক গন্ধ হয়ে ঊঠেছে। আর নিউমার্কেট জুড়ে গুটিকয় কেনা-কাটা। রাস্তা শুন-শান, তিনদিনের ঝাপসা রহস্য।
    এরামের সামনে শুকনো পায়চারি।অসবই বন্ধ পিকক, পিয়াসী।

    চন্দ্রালোকিত জোৎস্নায় কাইক্যাটি।অরহস্যের সূত্রপাত তার মজা জলে।
    সেইসময় নারায়নগঞ্জ উপবন। আশ্রমে আশ্রমে থামি। শান্ত, বট ঝুরি দু-এক কলি গান। প্লাবনে নৌকা বেয়ে অন্যকোন গল্পের নদী দিয়ে যাই, কাজল শাহনেওয়াজ হুইস্কি শিল্পে রত আর জোৎস্না তার দুইপাশে ঝরে পড়ছে যেমত বকুল ফুল হয়ে।

    এগুলি সবই বখরি-ঈদের কথা, আর এক বছর রমজান মাসের শেষের খুশির ঈদ কেটে গেল এডিটিং এ, নির্বান্ধব পুরি।অদ্বারনও বোধহয় ছুটিতে। কাজ-কাজ-কাজ।অসন্ধ্যেবেলা কি করলাম। কোন দাওয়াৎ ছিল কি? বড়জোড় একটা কিছু, একটা শরীর হুসেনদের বাড়ি গেল, স্মির্নফের দিকে কিম্বা পাঠাশালার সেই আমের নির্বান্ধব গাছের তলায় দাঁড়িয়ে দেখতে থাকা আলোকবিন্দুগুলি, সমাপাতনে ঝাপসা বাংলাদেশ ২০০৯।
  • sumeru | 117.194.98.101 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১১:১৯404141
  • @ সামরান,

    ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজ দমদমে। জে এল নেহেরু রোডে গভ: আর্ট কলেজ। গুগুল প্লিজ।
  • samran | 117.194.98.101 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১২:১১404142
  • সব ডেড সেলের কল্যাণে।
  • Nina | 68.36.163.248 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ০০:৩৭404143
  • সামসুম :-)))
  • de | 59.163.30.2 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১০:২৫404145
  • ঈদের বিলম্বিত শুভেচ্ছা সকলকে!
  • samran | 110.227.90.171 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১২:২৫404146
  • দে'কে বলছি,
    শুধু শুভেচ্ছা? তোমরাও তো কিছু লিখতে পারো!
    কারোর কোনো স্মৃতি নেই ঈদ নিয়ে? অভিজ্ঞতা নেই? ভালো মন্দ, মিষ্টি মধুর বা তিক্ত?

    টইটা আমি খুলেছিলাম বটে আর একজন সুহৃদ টইয়ের লিংকটা পাঠালেন, যেন কিছু লিখি এখানে তাই আবার লিখলাম। কিন্তু তাই বলে এটা আমার নিজের পাতা নয় একদমই!

    এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল এখুনি, তার একটি তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে। কিন্তু ধর্ম বা রাজনীতিতে ঢুকতে চান না বলে সেটা নিয়ে কথাও বলতে চান না।

    কিন্তু এমন কেন হবে? সমস্ত পাতায়, সকলে নিজের নিজের নতুন-পুরনো সব স্মৃতি বা অভিজ্ঞতা লেখেন, ঈদ নিয়ে কেন নয়?

    আজ আমি বেশ ঝগড়া করার মুডে আছি:-P
  • pi | 72.83.80.105 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১২:৩৯404147
  • ঈদ মানেই সিমাই :)

  • shrabani | 124.124.244.109 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১২:৫০404148
  • ****
    দুমাস আগে যখন ওঁর ফেয়ারওয়েল হয়েছিল সেদিন আমি অফিসে আসিনি। এর কয়েকমাস আগেই অফিসের রেনোভেশনের পরে সবার বসার জায়গার প্রচুর অদলবদল হয়ে উনি অন্যদিকে চলে যান। তার আগে গত দশ বছর ধরে অফিসে আমরা পড়োশী ছিলাম। আর সেই সুবাদেই ঈদের পরদিন বড় টিফিন বাক্স থেকে যে সেমাই (বা এদিকের উশ্চারণে সেঁওয়ই) বেরোতো তার ভাগ প্রথমে আমি পেতাম। ছোট ছোট করে কাটা খবরের কাগজের টুকরোর প্লেট। নিজে বসে বসে ভাগ করতেন, তারপরে উঠে উঠে গিয়ে সবার সীটে দিয়ে আসতেন। সবার সীটে মানে সবাইকে নয়, বেছে বেছে যারা ওনার লিস্টে ছিল। একটু দুরে যারা বসত, তাদের ফোনে ডেকে পাঠাতেন।
    আহামরি কিছু স্বাদ নয় তবু ভালো লাগত, ঈদের দিন মনে পড়ত কাল রিয়াজ সাহেব সেমাই আনবেন। খুব রাগী লোক, মাঝেসাঝেই ফোনে বা এমনিতে চিৎকার করে উঠতেন, শুনেছিলাম একটা কিডনি বাদ পড়া থেকেই শরীর পুরোপুরি ঠিক থাকেনা, হাই বিপি। নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে লাঞ্চটাইমে সীটেই সিগারেট ধরাতেন। বিরক্ত হয়েছি, সিনিয়র মানুষ কিছু বলতে না পেরে।
    সন্ধ্যের নামাজ পড়তেন আমার আর ওনার সীটের মাঝের খালি জায়গায়। সে সময় অস্বস্তি হত, প্রায়ই উঠে চলে যেতাম পাছে উনি ডিস্টার্বড হন।
    অন্য সীটে চলে গেছেন যখন একটু যেন স্বস্তিই পেয়েছি, কখন রিটায়ার করেছেন খেয়ালই হয়নি। ঈদ মনে করিয়ে দিল মানুষটাকে, অফিসে বসে আজ বড় মিস করছি সেই খবরের কাগজের পাতায় চটচটে সেমাই!
    আশাকরি ভালো আছেন, ভালো কাটিয়েছেন কর্মবিরতির পরের এই প্রথম ঈদ।
  • samran | 117.194.100.58 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৪:১৩404149
  • এই দেখো, শ্রাবণী কত্ত ভল মেয়ে, সঙ্গে সঙ্গে লিখে ফেলল:-)

    এইয়ো শমীক,
    ধারাবাহিক লিখে লিখে ফাটিয়ে দিচ্চ তো ওদিকে। অত সব কাজ-কম্মো সামলেও লেখো বা লিখতে পারো বলে আমার অবশ্য বেশ একটু হিংসেও হয়, আমি পারি না বলে।

    থাকো তো দিল্লির মতো একটা জায়গায়, পুরান দিল্লি-জামা মসজিদের রোজার মাস, সেই এলাকার উৎসব নিয়ে একটু লেখো না। নাকি লিখে ফেলেছ আমি মিস করে গেছি?
  • til | 220.253.188.98 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৪:১৯404150
  • মুসলমান প্রধান গ্রামে আমার বাড়ী। আমাদের ছোটবেলায় আকবর চাচা বা রমতুল্লো (রহমাতুল্লা)ভাই যে আলাদা কেউ তা মনেই হতো না। আমাদের পাড়া শেষ আবার মুসলমানপাড়া শুরু, তারপর আবার। স্কুলেও তাই। হিন্দু মুসলমান যে আলাদা তা শহরে গিয়েই মনে হয় প্রথম।
    ঈদ সত্যি বলতে কি তেমন জাকজমক করে পালিত হতো না; সকলে দরগায় গিয়ে নমাজ পড়তো, সত্যি বলতে কি ঈদ একট sombre অনুষ্ঠানের মতো, আমাদের দুর্গাপূজোর মতো হৈ হুল্লোড়ের scope তাতে কমই। আমার সম্পন্ন গ্রামাবাসী হওয়াতে এবং আমাদের জমিতে অনেকেই কাজ করতেন বলে ঈদের পরে আমার বাবা এক পার্টি (?) দিতেন, খুব সেমুই রান্না হতো আমাদের বাড়ীর উঠোনে। বিশ পঞ্চাশজন চাচা, দাদারা আসতেন। সেটা একধরণের নবান্ন উৎসব ও বটে। ও আর একটা কথা খুব মনে পড়ে, হাটবারের দিন নমাজ রমজান মাসে। কি সুন্দর করে গুছিয়ে সকলে ইফতার করতেন! ইফতারের নিমন্ত্রণের চল তখন ছিল না।
    আজকাল অবশ্য দিন বদলে গেছে, সেবার দেশে গিয়ে দেখলাম ইদগাহে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ, বেশ ভাল লাগলো। ও আর একটা কথা, আমি বরাবরই মুসলমান বন্ধুদের বাড়ীতে খেতে যেতাম , তাদের উৎকৃষ্ট রন্ধনশৈলী, উফ! মনে রাখতে হবে তখন আমাদের বাড়ীতে রান্নাঘরে মূরগী রান্না হতো না, বাবা গোয়ালঘরে উনুন বানিয়ে রাঁধতেন! বাড়ীতে আলাদা কাঁচের গেলাশ থাকতে, ওরা এলে তাতে জল দেয়া হতো।
    এখন দিনকাল অনেক বদলে গেছে; কিছু তো ভালোর দিকে আবার কিছু উলটো। মসজিদের খালি গলার আজান এখন মাইকে হয়। খালি গলার সেই সুরেলা আজান মিস করি।
    তবে যাই বলুন, আমি প্র্যাকটিসিং হিন্দু নই- আবার জন্মালে বাংআলী হিন্দুই হতে চাই- স্রেফ দুর্গাপূজোর জন্যে; চার দিন ধরে এমন হৈ হৈ করার সুযোগ অন্যা কারুর মেলে না, নবরাত্রি ৯ দিনের হলেও বড্ড ধর্মীয় অনুষ্ঠান, গণপতি বিসর্জ্জন আগে এত সমারোহ করে কই হতো? দুর্গাপূজো আস্তে আস্তে বিহার ও উড়িষ্যার জাতীয় উৎসব হয়ে গেছে! আগে বিহারে DP বলে চলতো, শুনি ব্যাঙ্গালোরেও এখন হৈ হৈ কান্ড।
    সাউথে বা বিদেশেও ক্রিসমাস আসছে উৎসব উৎসব ভাব, কিন্তু ক্রিসমাসের দিন সব শুনশান, রাস্তায় একটা লোকজন নেই। একী উৎসবের ধারা! আসলে একমাত্র বাঙালী হিন্দুদের উৎসবেই বেশী হি চৈ, ধর্মের কোন ছিটেফোঁটা নেই, কজনই বা অঞ্জলি দেয়, উপোস করে?
    বিদেশে এসে ঈদের দিন নতুন মানে পেয়েছে, প্রথমত সকলেই প্রতিষ্ঠিত। বেশ কিছু বন্ধুদের বাড়ীতে আমার নিমন্ত্রণ আসে- শুধু সেমুই নয়, চর্বচোষ্য এমনকী সম্পূর্ণ বিজাতীয় ( অবাঙ্গালী) দহিবড়াও। সত্যি বলতে কি আমি ঈদের জন্যে আজকাল অপেক্ষা করে থাকি। Festive মেজাজ সকল মুসলমান বন্ধুদের। তবে আজকাল কট্টর লোকদেরকে এড়িয়ে চলি; আমি নিজে ধার্মিক ব্যাপার সাপারের থেকে তিন মাইল দূরে থাকি। এই নর্থ ইন্ডিয়ান বা শ্রীলঙ্কান হিন্দুদের এত এত স্পেশাল দেবদেবী, অভিষেকম,বরণম, পূজম! উরেব্বাস। ব্যাঙ্গালোরে থাকতে মিডনাইট mass ও অ্যাটেন্ড করেছি, রীতিমত প্রেয়ার চার্চে, তবে ক্যাথিড্রালের অর্গানের আওয়াজ ও বন্ধুর বাড়ী কেকের লোভেই বেশী!
  • de | 59.163.30.2 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৪:২২404151
  • সামরান,
    অনর্গল মনের ভাব যাঁদের কলমের আগায় ভর করে আমি কোনদিনই সে গোত্রের নই -- আমি শুধুই পড়ুয়া, পড়তে ভালোবাসি! ঈদের স্মৃতি সত্যিই তেমন কিছু নেই, আমার আফসোসই হয় সেজন্য। কলকাতার যে অংশে আমার বাস ছিলো, সেখানে জীবনের অনেকগুলো বছর আমার কাছে ঈদ মানে শুধুই আরেকটা ছুটির দিন ছিলো -- বুদ্ধ পূর্নিমা, গুরু নানকের জন্মদিন, মহাবীর জয়ন্তী ইত্যাদীরই মতো। এরপরে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে যখন পড়তে এলাম তখনই প্রথম এই উৎসবকে ঘিরে চারপাশের এক্সাইটমেন্ট আর আনন্দটার কিছুটা অনুভব করতে পারি! ঐ একটা মাসে চারপাশের পরিবেশের পরিবর্তন আর খুব-খুবই সাধারণ মানুষজনের অতি সামান্য উপকরণ আর উপচারের আনন্দ টানতো আমায়। ঐ সময় অনেকদিন এমনি এমনি ঘুরে বেরিয়েছি ওখানে। উৎসবের আবহাওয়া আমার খুব ভালো লাগে। এবার মহারাষ্ট্রে যেমন গনেশ চতুর্থী আর ঈদ একসাথে পড়েছিলো -- চারিদিক দেখে, বিশেষত: ছোট বাচ্চাদের হাসিমুখগুলো দেখতে এতো ভালো লাগছিলো। এমনিই ঘুরতে ভালো লাগে এই সময়।
  • Samik | 121.242.177.19 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৪:৪৬404152
  • সামরান -- না, মিস্‌ করো নি। সত্যিই কিছু লেখা হয় নি। কী আর বলব, আমি আজ পর্যন্ত জামা মসজিদে গিয়ে উঠতে পারি নি। ধারবাহিক যা দেখছো ... সব দেড় বছর আগে লিখে রাখা। গত দেড় বছরে আমি কলম ওঠাই নি। টুকটাক কলাম লেখা ছাড়া।
  • shrabani | 124.124.244.109 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৫:৩৩404153
  • উত্তরপ্রদেশে অনেকেই মনে করেন হিন্দুর থেকে মুসলমানের সংখ্যা বেশী না হলেও সমান সমান। মীরাট রোডের ওপর দিয়ে এসময় গেলে ছোট ছোট কসবাতেও রাস্তার ধারে ঠেলায় সেমাইয়ের বড় গাঁঠি আর খেজুরের স্তুপ। এসময় খেজুরের দাম কেজি দরে কিনলে সস্তাও হয়। রুরকীতে বাড়িতে এসময় খেজুর কেনা হয় অনেকটা। পরে পুজোতে এই খেজুর দিয়ে নানা মিষ্টি, খেজুরের লাড্ডু, কাজু আর খেজুরের বর্ফি।
    দেওবন্দ রুরকীর কাছেই, পীরান কালিয়ারের বিখ্যাত মেলা সাইকেলের দুরত্ব। স্কুলবেলায় তাই ঈদ ছিল খুশীর, চারিদিকে উৎসবময়। কিন্তু আফশোষ যে বাড়ীতে প্রতিবছর নেমন্তন্ন থাকত সেখানে নিরামিষ। হয়ত এদেশীয় অনেককে ডাকতেন বলে ওরা এদিন সন্ধ্যেয় নিরামিষ খাওয়াতেন। খুব দু:খ পেতাম যদিও সেমাইটা দারুন হত।
    **********
    যখন ফরাক্কা গেলাম প্রথম কমাসের জন্য, সেটা রমজানের সময়। নতুন ইউনিট আসছে, জোর কদমে কাজ চলছে। প্রথমে বুঝিনি পরে একদিন কাজের প্রগ্রেস নিয়ে আলোচনায় টের পেলাম যে অধিকাংশ মজদুরেরই রোজা চলছে, তাই বিকেলের পরে ওরা আর কাজ করেনা। অবশ্যই এনিয়ে বেশ বিরক্তি অফিসারদের মধ্যে। তখনও আনকোরা ট্রেনী, পরদিন থেকে সাইটে দেখতাম অবাক হয়ে ঐ রোদ্দুরে গরমে ভারী কাজকর্ম করছে ধর্মপ্রান মানুষগুলো হাসিমুখে, রোজা রেখেও। অবাক লাগত ঐরকম হিউমিড ওয়েদারে জল পর্যন্ত না খেয়ে কি করে কাজ করছে, কোন শক্তিতে!

    দুপুর রোদে সময় হলেই যে যেখানে পারত কাপড় বিছিয়ে নামাজ অদা করত।
    আমাকে দেখলেই ওদের মুখগুলো একটু বেশী হাসি হাসি হয়ে যেত, আমি যে দেশের মেয়ে, বাঙালী। অনেক কথাও বলতে চাইত, দুখদর্দের কথা। খুব ভালো করে শুনিনি কোনোদিন , আসলে মুর্শিদাবাদের ওদিককার ডায়লেক্টের কথা কিচ্ছু বুঝতে পারতাম না।
    এত বছর হয়ে গেল, অনেকদিন ওদিকে যাওয়া হয়নি। লোকগুলোও টেম্পোররী কনট্রাক্টরের লেবার ছিল, এখন নিশ্চয়ই অন্য কোথাও দুরে বা কাছে, কাজের জন্য ঘুরছে। তবু এখনও নিশ্চয়ই সেইরকমই কঠোর নিয়মানুবর্তীতায় রোজা রাখছে। এ পোড়া দেশে ভাবতে ভয় হয় রোজা শেষে ওদের জন্য কতটা খুশী নিয়ে আসে। তবু ওদের জন্য খুশীর ঈদের প্রার্থনা করি প্রতি ঈদে!

    *******************
    বেশীরভাগ লোকেই ভুল করে জুহি ডাকত, তখনও জুহি চাওলার বাজার গরম। ইয়ুহি অক্লান্ত ভাবে তাদের ভুল ভাঙাত বারবার, সে জুহি না ইয়ুহি। বিয়ের পর কোয়ার্টারে গিয়ে নীচে পড়োশী পেলাম ইয়ুহি, মুস্তাক ভাইয়া আর আদিলকে।
    এত ভদ্র আর নম্র মহিলা জীবনে কমই দেখেছি। সেই ব্যস্ততার দিনগুলিতে ছুটি না থাকলে কোনো উৎসবই খেয়াল থাকতনা। পুজো কেটে যেত প্ল্যান্টের ওভার হলিং করে। অধুনা ছত্তিশগড়ের সেই প্রত্যন্ত প্রান্তে, ঈদ বোঝা যেতনা, তাই যখন এমনই এক দিনে বিরিয়ানীর গন্ধে সারা পাড়া ম ম করে উঠল তখন প্রথমে চমকালাম, ব্যাপারখানা কি! আমার কেরালাইট বরের অবশ্য ঈদ ক্রীসমাস ভুল হয়না। ওবাড়ির ফোনে আলোচনা চলে, ওনামের মতই উৎসব, ছুটি।
    তারপর থেকে প্রতি ঈদে ইয়ুহির হাতের বিরিয়ানী আর ঝাল সেমাইয়ের দাওয়াতে আমরা পার্মানেন্ট গেস্ট, যতদিন ওদেশে ছিলাম!
    **************************
    ঈদের সময় সুলেমান আর আলীফার বাড়ির আচ্চাপ্পম, চালের হালুয়া আর সেমাইয়ে আমাদের ফ্রিজ ভরে থাকে বেশ কদিন। আমি গেলে আমার অনারে আরো বেশী বেশী আসে।এছাড়া অন্য কিছু পাঠায় না আমার কট্টর নিরামিশাষী শ্বশুরবাড়িতে। ওদের পরোটা আর কোর্মা, বিরিয়ানীর শুধু গন্ধ শুঁকেই আশ মেটাই। কোনো এক অদ্ভুত অজানা কারণে আমার শাশুড়ী মা বিশ্বাস করেন ওরাও ওনার মত নিরামিষ ই খায়। ওরাও খুব সযতনে প্রিয় আম্মুইমার ধারণা বদলাতে চায়না। পাঁচিলের এধার ওধার বাড়ি যে! ওদের দুই ছানা তো এবাড়ীতেই বড় হল।
    না গেলেও প্রতিবারেই ঈদে কার বাড়ী থেকে কি এল ফিরিস্তি শুনতে পাই ফোনে, আর হাহুতাশ করি।
  • Arup | 79.21.63.222 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৫:৪২404154
  • খুব সুন্দর। খুউব ভালো লাগছে। লিখুন লিখুন। আর দেরীতে হলেও অনেক শুভেচ্ছা রইল খুশীর ঈদ উপলক্ষ্যে।
  • Shibanshu | 59.97.235.18 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১০ ১৫:৫১404156
  • হায়দরাবাদের একটা ব্যাপার আমাকে খুব টানে। সারা দেশে নানা জায়গায় থেকেছি, ঘুরেছি, কিন্তু এখানের মতো জীবনের মূল স্রোতে মুসলিমদের অবস্থান আর কোথাও দেখিনি। হ্যাঁ দিল্লি বা লখনৌকে স্মরণ করেই বলছি। আমার গ্রাম, যা ভারতবর্ষের প্রথম শিল্প শহর, সেখানে শৈশব থেকে দেখেছি মানুষের ধর্ম বা জাতিগত বিভাজন প্রবল ছিলোনা। কিন্তু ১৯৭৯য়ের ধর্মীয় দাঙ্গা সম্পূর্ণ চিত্রটিকে বদলে দিয়েছিলো। মুসলিমরা শহরের কয়েকটি নির্দ্দিষ্ট বসতিতে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেলেন। 'আমরা' আর 'ওরা' সেন্টিমেন্ট দিন কে দিন প্রখরতর হলো আর শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরাই যেন একঘরে হয়ে গেলেন। বাবরি মসজিদের সময় বিভিন্ন শান্তি রক্ষা কর্মসূচীর সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে আবিষ্কার করলাম তথাকথিত উদার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সংখ্যাগুরুরা কেমন নীরবে 'ধর্মচ্যুত' হয়ে পড়েছে। প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ঘোষণা করতে তাদের দ্বিধা হয়নি, যা হয়েছে ভালো হয়েছে। যাক সে কথা...

    সত্যি কথা বলতে কি হায়দরাবাদে আসার আগে রমজান মাস কতো উদ্দীপনার সঙ্গে উদ্‌যাপন করা যায় সে নিয়ে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা ছিলোনা। রায় মশায় যেরকম লিখেছেন রমজান পালনের মাত্রা দুগ্গাপুজোর মাপে হয়না, এককালে আমারও সেরকমই ধারণা ছিলো। কিন্তু এখানে এসে সে ধারণার অবসান হয়েছে। সারা রমজান মাস, বিশেষত শেষ এক সপ্তাহ যেন ফুল্ল কুসুমিত দ্রুমদল শোভীনীং। আমি যে এলাকায় থাকি, সেটি হায়দরাবাদের ( সিকন্দরাবাদ নয়) মোটামুটি কেন্দ্রবিন্দুতে। এখানে মুসলিম বসতি হয়তো সংখ্যাগুরু হবে। পিস্তা হাউস নামের একটি বিখ্যাত হালীম বিপণী এক মাস আগে থেকেই নানা জায়গায় বিশাল ব্যানার লাগিয়ে রমজান আর কতোদিন দূরে তার খবর দিতে থাকে। প্রতিদিনই দিনের কাউন্টডাউন কমতে থাকে আর মানুষ একটু একটু করে মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়। রমজান শুরু হতেই অসংখ্য মসজিদ ও তার সংলগ্ন যে বাজার এলাকা ( তাও অসংখ্য) আছে সেখানে বিকেল থেকে রোজা ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে খাবার দোকানগুলিতে ' ভিড় উমড়তা হুয়া ছা জাতা হ্যাঁয়'।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন