এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প: অন্তর্বাহী

    Tim
    অন্যান্য | ১৭ জুলাই ২০০৯ | ৩৬৮৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Tim | 71.62.2.93 | ১৭ জুলাই ২০০৯ ১২:২৬415939


  • বিকেলের দিকে আপিস থেকে বেরোতেই মনটা ভালো হয়ে গেল। আকাশ কালো করে আসছে, অবশেষে হয়ত কলকাতা বৃষ্টির মুখ দেখবে। সন্ধে হতে এখনও বেশ দেরী, যদিও এর মধ্যেই শহরের আনাচে কানাচে ছায়া নেমেছে। রাস্তার আলো একটা একটা করে জ্বলে উঠছে, দোকানগুলোও আলোঝলমল, অল্প অল্প ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে .... এত ভালোভালো জিনিস একসাথে বহুদিন দেখিনি। তাই হয়ত অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম। খেয়াল হতে দেখি, বাড়ির স্টপেজ পেরিয়ে আরো বেশ কিছুটা এগিয়ে এসেছি। তাড়াহুড়ো করে যখন নামলাম, ততক্ষণে দ্বিতীয় স্টপেজটাও পেরিয়ে গেছে।

    নেমে দেখি চারদিক গাঢ় অন্ধকার। আলো বলতে উল্টোদিকে একটা ছোটো ধোপাখানার টিমটিমে বাতি। তাও উনুনের ধোঁয়ায় প্রায় অস্পষ্ট। ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। একবার মনে হলো দোকানটায় দাঁড়িয়েই নি কিছুক্ষণ। কিন্তু ভরসা হলো না। এরকম ঝিরঝিরে বৃষ্টি সারারাত চলতে পারে। লাভের মধ্যে হয়ত পাওয়ার চলে গিয়ে রাস্তা চলা ভার হবে। অন্যদিন হলে রিক্সা নেওয়া যেত, আজ সে উপায়ও নেই। কি আর করি, ছাতাটা খুলে মনে মনে নিজের মুন্ডপাত করতে করতে বাড়ির পথে এগোলাম। অন্তত আধঘন্টার পথ, তবে রাস্তায় আলো থাকলে যেতে অসুবিধে হবেনা।

    সরু রাস্তাটা এঁকেবেঁকে এগিয়েছে অনেকদূর। এই পথে সাইকেল আর রিক্সা চলে, আর চলে বাইক। রাস্তাটার একপাশে একতলা-দোতলা বাড়ি, বেশিরভাগই এখনও অসম্পূর্ণ। অন্যদিকে মাঠ, পরিত্যক্ত জমি, ছোটোখাটো পুকুর-- সোজা কথায় প্রোমোটারদের জন্য ফেলে রাখা প্রাকৃতিক টোপ। এই জায়গাটা আমি খানিকটা চিনি, কাছেই একটা মসজিদ আছে, নাম ভাঙ্গা মসজিদ। দাঙ্গার সময় মসজিদটার একটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো, সেই থেকে এই নাম। এখন অবশ্য দেখে সেসব বোঝার উপায় নেই। নিয়মিত সংস্কার হয় ভাঙ্গা মসজিদের, ফি বছর রং করা হয়--যে উন্মত্ততা একদিন লাখো লাখো মানুষকে প্ররোচিত করেছিলো, তার চিহ্নমাত্র কোথাও পাওয়া যায় না আর।

    এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই হাঁটছিলাম। বৃষ্টির নিজস্ব কিছু শব্দ আছে। এমনি শুকনো খটখটে দিনে সেসব আওয়াজ শোনা যায়না। জীব ও জড়জগতের যোগসাজসে তৈরী সে কনসার্ট বহুমুখী প্রতিক্রিয়া আনতে পারে মানবমনে। বাড়ির নিরাপদ আশ্রয়ে বসে শুনলে যা কাব্যপ্রতিভার স্ফুরণ ঘটায়, সেই জিনিসই অন্ধকার নির্জন স্বল্প পরিচিত পথে আশংকার জাল বুনে দেয়।

    রাস্তা ভুল হওয়ার তেমন সুযোগ ছিলোনা। তাই নিশ্চিন্তে পথ চলছিলাম। আন্দাজে মনে হলো প্রায় অর্ধেক রাস্তা এসেছি। সামনেই ডানদিকে একটা পুকুর, সম্ভবত ক্লাবের মাঠের লাগোয়া পুকুরটা। বাঁদিকে একটা ছিমছাম দোতলা বাড়ি, অন্ধকারে ঝুপসি মত হয়ে আছে। এই বাড়িটাও পুরো তৈরী হয়নি বলেই মনে হয়, কারণ রাস্তার পাশে স্তুপীকৃত বালি রাখা বলে মনে হলো। বাড়িটা পেরিয়েছি কি পেরোইনি, কাছেই একটা অদ্ভুৎ শব্দ পেলাম। বাড়িটার দিক থেকেই আসছিলো শব্দটা। অনিয়মিত, ক্লান্ত, গোঙানির মত একটা আওয়াজ। কি করা উচিত বুঝতে না পেরে এদিক সেদিক দেখছি, কান পেতে আছি আবার শব্দটা শুনলেই বাড়িটায় ঢোকার চেষ্টা করবো, এমন সময় কাছেই একটা লাইটপোস্টে শর্ট সার্কিট মত হয়ে এক ঝলক আগুন জ্বলে উঠলো। মাত্র দু-তিন সেকেন্ড। তার মধ্যেই দেখলাম পুকুরের দিক থেকে কেউ একজন এদিকেই আসছে। খালি তিনটে জিনিস দেখতে পেয়েছিলাম। লোকটার পরনে বর্ষাতি, মাথায় টুপি ছিলো, যদিও সেটা খুব ভালো ঠাহর হয়নি। তবেহাতে যেটা চকচক করছিলো সেটা যে আগ্নেয়াস্ত্র তাতে কোনো সন্দেহই ছিলোনা। আর সেইজন্যই একবিন্দুও না ভেবে বাড়ির দিকে ছুটলাম।

    বাড়ি ফিরেই লোকাল থানায় ফোন করেছিলাম। যদিও বোঝাই যাচ্ছিলো অত রাতে ঐ দুর্যোগে কেউ যাবেনা খোঁজ নিতে। ব্যাপারটা নিয়ে পরেরদিন খোঁজ নেবো ঠিক করে রাখলাম। কে বলতে পারে, হয়ত এর থেকে মণিদা একটা দুর্ধর্ষ কিছু আবিষ্কার করে বসবে!

    ঘুমোবার ঠিক আগে, অন্ধকার ঘরে একটা অদ্ভুৎ অনুভূতি হলো। মনে হলো কেউ যেন অদৃশ্য ইশারায় আমাকে জুড়ে দিচ্ছে কোনো ঘটনাপ্রবাহে। তখনও জানতাম না সকালে আমার জন্য কি অপেক্ষা করে আছে।
  • intellidiot | 220.225.245.130 | ১৭ জুলাই ২০০৯ ১২:৫৯415950
  • বা: বা: :-)
  • MiA | 125.22.97.34 | ১৭ জুলাই ২০০৯ ১৭:০২415961
  • শুরুর দিকের পান্ডব গোয়েন্দা গোগ্রাসে পড়ার বিকেলগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে।
    চালিয়ে খেলুন।
  • arjo | 168.26.215.13 | ১৭ জুলাই ২০০৯ ১৭:৪২415972
  • টিমবাবু একটু হাত চালিয়ে লিখ। সকাল তো হয়ে গেল।
  • dd | 122.167.24.74 | ১৭ জুলাই ২০০৯ ২২:০৪415983
  • না না না টিম্ভাই। এইসবের মধ্যেই যাইও না।

    তুমি ফটগ্রাফিতে থাকবা, রহস্য উপন্যাস লিখবা, তো আমার লগে লগে পদ্দ লিখবো ক্যাডায়?

    আমার এই কাঁচা বয়স, একা একা পদ্দো লিখতে ভয় করে।
  • ranjan roy | 122.168.77.182 | ১৭ জুলাই ২০০৯ ২২:২৪415994
  • শুরুটা দারুণ।
    অ্যাই ডিডি! এইসব কথা? এডগার অ্যালান পো কি কবিতা ল্যাখেন নাই?
    বাছা টিম, ডিডির কথা শুইন্যোনা। শুক্ক্রবারের সইন্ধ্যা। মাত্র রামের বোতল খুলসে।
  • dd | 122.167.24.74 | ১৭ জুলাই ২০০৯ ২২:৪৭416005
  • আর আর কিসু জানে না।
    দুই ঘন্টা আগে খুল্লাম, চাইর ঘন্টা পরে ছিপি আঁটবো।

  • Hukomukho | 198.184.5.252 | ১৭ জুলাই ২০০৯ ২৩:৪৪416016
  • হেব্বি হচ্চে কাকা। চালিয়ে যাও। অপেক্ষা করছি পরের পার্ট এর জন্য।
  • Tim | 71.62.2.93 | ১৮ জুলাই ২০০৯ ১০:৩২416017


  • ঘুম ভাঙলো খুব সকালে। বলা ভালো, জোর করে ভাঙানো হলো। একেকটা দিন এমন হয়, আর উঠেই বোঝা যায় দিনটা খুব ভালো যাবেনা। এবারেও বুঝলাম। ঘুমচোখে কোনক্রমে বেরোতেই তিনজোড়া উৎসুক চোখের সামনে পড়লাম। লোকাল থানা থেকে এসেছেন ওঁরা, খুব দরকারী কিছু প্রশ্ন আছে আমার সাথে। মণিদাকে ফোন করা গেল না, ঝড়ের বেগে আমাকে নিয়ে রওনা হয়ে গেলেন ওঁরা।

    থানার পরিবেশ আমার ভালো লাগেনা কোনদিন। ভয়ও করেনা, কারণ মণিদার দৌলতে মাঝেমধ্যেই থানাপুলিশ করতে হয়েছে। তবু একটা তিক্ততা ছেয়ে থাকে, হয়ত জয়ির সাথে একজন অফিসারের অসভ্যতা মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি এখনও। পুলিশের সামনে আমাদের অসহায়তাও কাঁটার মত খচখচ করে সেই থেকে। যে কোন কারণেই হোক, খুবই বিরক্ত হয়ে তদন্তকারী অফিসারের মুখোমুখি হলাম। দু একটা মামুলি প্রশ্ন করে আমার নামধাম জেনে নিয়ে ভদ্রলোক আসল কথায় এলেন।

    -আপনি কাল কটা নাগাদ বাড়ি ফিরেছেন?
    - সাড়ে দশটা নাগাদ।
    - রোজই ঐ সময় ফেরেন?
    - প্রায়। ঘন্টাখানেক এদিক-ওদিক হয়।
    - অফিস ছুটি হয় কখন?
    -ছটা।
    - হেঁটে বাড়ি ফেরেন নাকি?
    - ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই বেরিয়ে পড়ি, সেকথা তো বলিনি।
    -অ। তাও, প্রায় সাড়ে চারঘন্টা.....
    - আপনার উদ্দেশ্যটা কি বলুন তো! এইসব প্রশ্ন করার মানে কি?
    - বেশ সোজাসুজিই বলি। আপনি কাল বাস থেকে বাড়ির সামনে না নেমে ভাঙা মসজিদ স্টপেজে নেমেছিলেন কেন?
    - অন্যমনস্ক ছিলাম, খেয়াল ছিলোনা।
    - নাম লেখা কলমটাও কি বে-খেয়ালেই রাস্তায় ফেলে এসেছিলেন?
    অফিসার ( এতক্ষণে ওঁর নামও জেনে ফেলেছি, মি: সোম) একটা ফাউন্টেন পেন টেবিলের ওপর রাখলেন। আমারই পেন, গায়ে আমার নাম জ্বলজ্বল করছে। কাল দুর্যোগের মধ্যে নির্ঘাৎ পকেট থেকে পড়ে গেছে। আবারও অন্যমনস্ক হয়ে গেছিলাম মনে হয়। হুঁশ ফিরলো মি: সোমের কথায় :

    - মি: দত্ত, আপনি হয় ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না, অথবা জেনেও না জানার ভান করছেন। কাল যে আপনি ভাঙা মসজিদ স্টপেজে নেমেছিলেন সেকথা আপনার বাড়ির লোকেরাই কবুল করেছে। আপনার নাম লেখা পেনও আমরা পেয়েছি। আপনি বাড়ি ফিরে কাল থানায় ফোন করে একজন সন্দেহজনক ব্যক্তির বিবরণ দেন এবং কাছের একটি বাড়ি থেকে অস্ফুট আর্তনাদের কথাও জানান। ঠিক কিনা?
    - আজ্ঞে হ্যাঁ। সেরকমই দেখেছিলাম।
    অনেকক্ষণ কথা বলে মি: সোম একটু হাঁফিয়ে গিয়েছিলেন। একঢোক জল খেয়ে বললেন,
    - আজ সকালে আমরা ঐ এলাকারই একটা বাড়ি থেকে ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পেয়েছি। আর সেই বাড়ির সামনেই আপনার কলমখানা পড়েছিলো মি: দত্ত। এখন আপনি যদি আমাদের সমস্ত খুলে না বলেন তো আমাদের প্রথম সন্দেহ আপনার ওপরেই বর্তাবে, এইটা ভালো করে বুঝে নিন। এখন বাড়ি যান। ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। আমরা আপনার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছি। হয়ত আপনি সত্যি কথাই বলছেন। কিন্তু আমাদের হাতে আর কোনো তথ্য না আসা পর্যন্ত আমরা আপনাকে নির্দোষ ভাবতে পারছিনা। আচ্ছা, নমস্কার।

    বেশ বুঝতে পারছিলাম সমস্ত এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মণিদাকে এখন দরকার। এক্ষুনি ওর সাথে কথা না বললেই নয়। ক্লান্ত, হতভম্ব শরীরটাকে কোনমতে টেনে নিয়ে চললাম বাড়ির দিকে। ততক্ষণে চারদিকে বেশ চড়া রোদ উঠে গেছে। শুধু আমার চোখেই অন্ধকার।
  • Blank | 203.99.212.224 | ১৮ জুলাই ২০০৯ ১৬:০৮415940
  • তাপ্পর কি হলো !!!!!
  • PB | 59.177.172.111 | ১৮ জুলাই ২০০৯ ১৭:৪৪415941
  • অনেকদিন পর মণিদা আসছেন - আমাদের উৎসুকতা বুঝতে পারছেন নিশ্চয়। প্লীজ তাড়াতাড়ি ............

  • pi | 72.83.196.134 | ১৮ জুলাই ২০০৯ ২০:৩০415942
  • কথা হলো ?
    মণিদার সাথে ?
  • Tim | 71.62.2.93 | ১৯ জুলাই ২০০৯ ১০:২১415943


  • বাড়ি ফিরেই মণিদার সাথে কথা বলে নিয়েছিলাম। পিকুকেও একটা ফোন করে নেওয়া হলো। ঠিক হলো সেদিন বিকেলে আমি আর পিকু মণিদার ওখানে যাবো। মণিদাকে ফোনটা করে অনেকটাই হালকা লাগছিলো। এর আগেও অনেক তদন্তের কাজে মণিদার সাথে ঘুরেছি, তবে এভাবে সমস্যায় পড়তে হয়নি কখনও। সকালের জিজ্ঞাসাবাদের ওঅর রীতিমত অসুস্থ লাগছিলো। প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নেওয়ার পর কিন্তু অতটা অসহায় লাগছিলো না।

    একেক সময় এরকম হয়। হয়ত আপনি সমস্যাসলিলে হাবুডুবু খাচ্ছেন, একগাছা খড়কুটো হাতের নাগালে এলেও বর্তে যান, কিন্তু তাও পাচ্ছেন না, মনের জোর প্রায় তলানিতে ঠেকেছে--- এমন সময় খুবই অকিঞ্চিৎকর কোনো কথোপকথন আপনাকে বদলে দিতে পারে। একটা ফোনকল, কয়েক মিনিট রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে নৈর্ব্যক্তিক বাক্যালাপ বা কফিশপের তুচ্ছ কোনো কথা বিনিময় কখনও সখনও কোটি টাকার চিকিৎসাকেও হার মানাতে পারে। আমার ক্ষেত্রেও এমনই হয়েছিলো। বিকেলে যে পিকুর সাথে মণিদার ঘরের চৌকাঠ ডিঙ্গিয়ে ঢুকলো, সে মোটেই সকালের অনুপম দত্ত নয়।

    অনেকদিন পরে মণিদার বাড়িতে এলাম আমরা। বেশ কাজের চাপ এখন মণিদার। আজকাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেস ছাড়া মণিদা নেয় না। অবশ্য ব্যতিক্রম আছে। কিছু ক্রাইম অভিনবত্বের দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মানবিকতার খাতিরেই বেশি মনোযোগ দাবি করে। হালেই মণিদা এরকম দুটো কেস সামলেছে। আমার গল্পটা শুনেও মণিদা তেমন উৎসাহ পেল বলে মনে হলো না। তবে অন্তত একবার অকুস্থলটা না দেখে বাতিলও করে দিলো না। খুব বেশি সময় ছিলোনা। মি: সোমের মোবাইল নম্বর আমার কাছে ছিলো। আমরা তড়িঘড়ি পরেরদিন সকালেই একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে ফেললাম।

    যে বাড়ি থেকে মৃতদেহ পাওয়া গেছিলো, সেটা আমি খুব ভালো চিনতে পারলাম না। এরও উল্টোদিকে একটা ডোবামত আছে বটে, কিন্তু বাড়িটা সেই রাতে যেরকম ভয়াবহ লাগছিলো, আজ একেবারেই সেরকম লাগলো না। দিনের আলোর জন্য হতে পারে। মি: সোম জানালেন পায়ের ছাপ কিছুই পাওয়া যায়নি বৃষ্টির জন্য। একমাত্র আমার নামলেখা কলম ছাড়া বাড়ির বাইরে কিছুই পাননি ওঁরা।

    বাড়ির ভেতরটা বেশ সাজানো। যিনি খুন হয়েছেন, তাঁর নামটা সদর দরজার নেমপ্লেটেই লেখা ছিলো -- সুশান্ত ভাদুড়ি। সরকারী চাকরি করতেন। বয়স সাতচল্লিশ। স্ত্রী মারা গেছেন গতবছর। একমাত্র ছেলে দেবরাজ, ইঞ্জিনিয়ার; থাকে আসানসোল। মি: সোম বললেন, ছেলের সাথে তেমন বনিবনা ছিলোনা সুশান্তবাবুর।
  • Tim | 71.62.2.93 | ১৯ জুলাই ২০০৯ ১০:২৩415944


  • দোতলার যে ঘরে খুনটা হয়, সেখানেই রোজ সুশান্তবাবু ঘুমোন। ঘরে সামান্য ধস্তাধস্তির চিহ্ন আছে। একরাশ কাগজ, সেগুলো হয়ত টেবিলেই রাখা ছিলো, ঘরময় ছড়ানো। একটা হাফহাতা পাঞ্জাবি ছিঁড়ে পড়ে আছে একপাশে। বাকিসব জিনিস গোছানো। মণিদা চারপাশ দেখতে দেখতেই মি: সোমের সাথে কথা বলছিলো। এবার একটু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ ঘরের একটা বিশেষ দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো :

    - এটা কি মাস রে?

    একটু অবাকই হলাম। তারিখ ভুলে যায় অনেকে, কিন্তু মণিদার মত কেউ চলতি মাসের নাম্ভুলে যাবে, এটা একটু কেমন লাগছিলো। অবশ্য পরক্ষণেই ভুল ভাঙ্গলো মি: সোমের গলা শুনে।

    - আগস্ট। আপনি কি ক্যালেন্ডারটার কথা বলছেন?
    - আগস্টের ২০ তারিখেও মে মাসের পাতাটা ঝুলছে দেখে একটু অদ্ভুৎ লাগছে আর কি!
    - আরে মশাই এরকম তো হামেশাই হয়। আমার বাড়ির ক্যালেন্ডারের পাতাও তো আমি দুমাসে একবার পাল্টাই। তো?
    এর উত্তরে মণিদা অন্যমনস্কভাবে একটা ""হুঁ "" বলে চুপ করে গেল। অনেকক্ষণ থেকেই দেখছিলাম মি: সোমের হাতে একটা খাম। এবার সেটা মণিদার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, "" এখানে আমাদের ফটোগ্রাফারের তোলা মৃতদেহের ছবি আছে। আপনার দরকার লাগতে পারে বলে এনেছি। আপনি যদি চান তাহলে ডেডবডি দেখাবার বন্দোবস্ত করে দিতে পারি। ""

    আমি আর পিকু বেশ চুপচাপ হয়ে গেছি দেখে ফেরার পথে মণিদাই বেশি কথা বললো। মি: সোম মণিদার নাম শুনেছেন বলে আমার বাড়তি সুবিধে হচ্ছিলো সেকথা বলা বাহুল্য। মাত্র একদিনের মধ্যেই দেখলাম আমার ওপর থেকে সন্দেহটা ওঁদের ফিকে হয়ে গেছে অনেকটাই। আমিই খুন করে বাড়ি ফিরে থানায় ফোন করেছি, এটা আর যাই হোক খুব স্বাভাবিক না।

    আমরা মণিদার বাড়িতেই ফিরে এলাম আবার। সেখানেই মণিদা সিল করা প্যাকেটটা খুললো। ছবির মোড়কটা টেবিলে উপুর করতেই আমি আর পিকু হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। আর প্রায় সাথে সাথেই ছিটকে সরেও এলাম। একঝলক প্রথম ছবিটা দেখেই আমাদের মাথা ঘুরে গেছিলো। মণিদা গম্ভীরভাবে ছবিগুলো শাফ্‌ল করে যাচ্ছিলো। পরে একটু সাহস করে আমরাও একে একে ছবিগুলো দেখে ফেললাম। এমন নৃশংসভাবে যে কেউ কাউকে খুন করতে পারে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। সিনেমার পর্দায় এ জিনিস দেখেচি, এখন বাস্তবে দেখলাম

    সুশান্তবাবুর মৃতদেহে অজস্র ব্লেডজাতীয় ধারালো অস্ত্রের ক্ষত, চামড়া চিরে ফালা করা হয়ে অসংখ্য জায়গায়। দুহাত আর পায়ের নখ উপড়ে নেওয়া। মুখ দেখে চেনার উপায় নেই।

    আমার খালি মনে হচ্ছিলো, যে সুশান্তবাবুর এই হাল করেছে, তাকে আমি কয়েকশো গজ দূর থেকে সেদিন দেখেছি। ভিতুর মত পালিয়ে না গেলে হয়ত মানুষটা বেঁচে যেতেন। অথবা, কে বলতে পারে, আজ মণিদার হাতে একজনের জায়গায় হয়ত দুজনের মৃতদেহের ছবি আসতো।

    রাত অনেক হয়েছিলো। বেশ কাহিল লাগছিলো। পরেরদিনের জন্য যাবতীয় আলোচনা মুলতুবি রেখে আমরা বাড়ির পথ ধরলাম।
  • arjo | 168.26.215.13 | ২০ জুলাই ২০০৯ ২০:১৪415945
  • টিম বাবু ভোর হল?
  • Tim | 71.62.2.93 | ২২ জুলাই ২০০৯ ০৯:৩৭415946


  • পরেরদিন কিসের যেন একটা ছুটি ছিলো। বেলা এগারোটা নাগাদ মণিদার বাড়ি গেলাম। বলতে ভুলে গেছি, ইতিমধ্যে বার দুয়েক পুলিশ থেকে ফোন করেছিলো। মণিদার পরিচিত বলেই হয়ত আমাকে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছেনা। অপরাধের সাথে জড়িত থাকতে পারে যারা, তাদের সাথে এত অমায়িক ও ভদ্র ব্যবহার আমাদের দেশের পুলিশ করেনা।

    মণিদা ওর লাইব্রেরিতেই ছিলো। যথারীতি সামনে খোলা কয়েকটা পরষ্পরের সাথে সম্পর্করহিত বই। সবকটারই স্বাস্থ্য বেশ ভালো। একটা নোট নেওয়ার খাতা উপুর করা, পাশেই রাখা একটা সাদামাটা পেন। খাতাময় অন্তত দুরকম কালি আর পেনসিলে হিজিবিজি কাটা হয়েছে। কয়েকটা চিহ্ন চিনতে পারলাম, কিছু গ্রীক আর রোমান অক্ষর, কয়েকটা পরিবর্তিত গাণিতিক চিহ্ন আর বিভিন্ন যতিচিহ্ন বারবার লেখা হয়েছে।

    মণিদা কিছু একটা ভাবছিলো, আমাকে দেখেও দেখলো না। আমিও নি:শব্দে চা শেষ করে বইয়ের তাকগুলো ভালো করে দেখছিলাম। কতক্ষণ কেটেছে কে জানে, চমক ভাঙ্গলো মণিদার প্রশ্নে :

    - সুশান্তবাবুর ঘরের কি কি জিনিস খুঁটিয়ে দেখেছিলি?

    একটু থতমত খেয়ে বললাম যে যথাসাধ্য দেখার চেষ্টা করেছি।

    - আমি সেদিন ক্যালেন্ডারের কথাটা জিগ্যেস করেছিলাম, মনে আছে?

    -হ্যাঁ। আচ্ছা, ওটা কি সত্যিই খুব ইম্পর্ট্যান্ট না এমনিই তোমার চোখে পড়েছিলো বলে জিগ্যেস করেছিলে?

    - বলছি। তার আগে বল ,আর কিছু চোখে পড়েনি তোর?

    - না তো!
    - ক্যালেন্ডারটা ওখানে ছিলোই না। অন্য দেওয়াল থেকে সরিয়ে ওখানে টাঙ্গানো হয়েছে। বল দেখি কেন কেউ এরকম করবে?

    - জায়গাটা ঢাকার জন্য?

    উত্তরে মণিদা হাসলো, "" আরে এ তো প্রায় সব শিশুপাঠ্য গোয়েন্দা গল্পেই আছে। মৌলিক কিছু বল! ""
    ভৌতিক সিনেমার বুদ্ধি খাটিয়ে বললাম, "" কোনো বিশেষ তারিখ ইন্ডিকেট করার জন্য?""

    বেটার! তবে সেটা এখনি জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। ক্যালেন্ডারের পাতাটা খেয়াল করেছিস?
    - অল্প মনে আছে। একটু অন্যরকম ছিলো। সাদা-কালো, কতগুলো অক্ষর এলোমেলো করে ছড়ানো।
    - গুড।
    - তুমি কি সুশান্তবাবুর মৃতদেহটা দেখতে যাচ্ছো?
    - হ্যাঁ, ভাবছি আজ বিকেলের দিকে যাবো। তুইও আসতে পারিস।
    - নাহ্‌ ,আমার জন্য ছবিই যথেষ্ট। কিন্তু তুমি বললে না তো কেন ক্যালেন্ডারটা খুব দরকারী ক্লু।
    - ক্লু ঠিক নয়। বরং একটা কমিউনিকেশন বলতে পারিস। খুনীর তরফ থেকে না মরণাপন্ন সুশান্তবাবুর তরফ থেকে বলা যাচ্ছে না। ক্যালেন্ডারটা অন্য ঘরের দেওয়াল থেকে এনে ঐ ঘরে লটকে দেওয়া হয়েছিলো। পাশের ঘরের দেওয়ালে একটা অর্ধবৃত্তাকার দাগ দেখে অন্তত তাই মনে হয়। একজন মৃত্যুপথযাত্রীর পক্ষে ঠান্ডা মাথায় এসব করা সম্ভব না, বিশেষত: মারাত্মক আহত অবস্থায়।

    এরপর এমন একটা ভাব করে মণিদা সিগারেট ধরালো, যেন সব কিছুই জলের মত পরিষ্কার। আমি মূর্তিমান প্রশ্নচিহ্ন হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে বোধহয় খেয়াল হলো ওর।

    - ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে একটা মেসেজ পাঠানো হয়েছে আমাদের। সেটা ডিকোড করার মধ্যেই অনেক কিছু নির্ভর করছে। অবিশ্যি সেটা বাদেও কাজ এগিয়ে রাখা যায়। আমি দুদিক থেকেই ভাবছি। দুটো বিন্দু বৃত্তাকারে চলছে। কোথাও একটা এসে তারা মিলবে।

    মণিদার কথার অধিকাংশই বুঝলাম না। ওকে আপাতত রেহাই দিয়ে একটু হাওয়া খেয়ে আসবো ভাবছি, এমন সময় ফোনটা তারস্বরে বেজে উঠলো।
  • rokeyaa | 203.110.246.230 | ২২ জুলাই ২০০৯ ১৪:৪৬415947
  • ফোন তো এতক্ষণ ধরে বাজে না! কেটে যাবে তো!
  • Samik | 219.64.11.35 | ২২ জুলাই ২০০৯ ১৭:৪৮415948
  • ফোনটা বোধ হয় ডেড। ফল্‌স রিং দিচ্ছে।
  • Tim | 71.62.2.93 | ২৪ জুলাই ২০০৯ ১২:১৪415949


  • "" বিষ্ণুপদ চ্যাটার্জি একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। বয়স আন্দাজ পঁয়ষট্টি, ছিপছিপে ফর্সা চেহারা। কর্মসূত্রে বেশ কয়েকবছর দেশের বাইরে ছিলেন। স্ত্রী বছর তিনেক ভুগে মারা গেছেন। সেও প্রায় দশ বছর হতে চললো। বিষ্ণুবাবুর ছেলেমেয়ে নেই।""

    গাড়িতে উঠে বসতে না বসতেই মণিদা আমাকে তথ্যসমুদ্রে ভাসিয়ে দিলো। দিয়ে বললো, "" এর থেকে ভদ্রলোকের সম্পর্কে কি বুঝলি বল। ""

    আমরা একটা ট্যাক্সি নিয়ে শহরতলির দিকে ছুটছি। একটু আগে মি: সোম ফোন করে মণিদাকে ডেকেছেন। ফোনের কথোপকথনের একটা দিক শুনতে পাচ্ছিলাম, অবিশ্যি সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই "" আচ্ছা"" , "" বেশ"" বা ""হুঁ"" ইত্যাদিতে থেমে যাচ্ছিলো। ফোন ছাড়ার পর মণিদা গুম হয়ে মিনিট পাঁচেক বসেছিলো। তারপর হঠাৎই খুব তৎপর হয়ে উঠেছে। পিকু বলেছিলো একটু অপেক্ষা করলে ও আমাদের সাথে আসতে পারবে, মণিদা রাজি হয়নি।

    বেশ খানিক মাথা-টাথা চুলকে আমি বললাম, "" বিষ্ণুপদবাবু শান্তিপ্রিয় লোক। নিয়ম মেনে চলেন। অবসর নেওয়ার পরে নির্ঘাৎ বেশিরভাগ সময়টা কাটে লাইব্রেরিতে। খুব কম মেশেন মানুষের সাথে। দু-একজন পুরোনো বন্ধুর সাথে সন্ধের দিকে কথাবার্তা বলেন হয়ত। ..... ""
    আমার কথা শেষ হওয়ার আগে থেকেই মণিদার ঘাড় নাড়ার বহর দেখে হতাশ হয়ে চুপ করে গেলাম। অত:পর আমার ভাইভা শুরু হলো :
    - তুই জানতেই চাইলি না ভদ্রলোক কি পড়াতেন। তোর কি মনে হয়না সেটা খুব দরকারি একটা তথ্য হতে পারতো?
    - আমি ধরেই নিয়েছিলাম উনি বিজ্ঞানী, বাইরের ইউনিভার্সিটিগুলোতে তো বেশিরভাগই সায়েন্সের লোকজন যায়।
    - বেশ, তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নি, তবু, তুই এটাও জানতে চাসনি ভদ্রলোকের স্ত্রী কি অসুখে ভুগে মারা গেছিলেন। এনি কমেন্টস?
    - অসুখে মারা গেছেন, তাই ভাবলাম.......

    - আমি এই চিন্তার পথটাকেই আরেকটু জটিল করতে বলছি। সবসময় যা হওয়ার কথা তাই যদি ভাবিস তাহলে কোনোদিনই রহস্যের থৈ পাবিনা। মনে রাখিস, মানুষ খুনের মত অপরাধ সংঘটিত হওয়ার জন্য কোথাও না কোথাও একটু অস্বাভাবিকত্ব থেকেই থাকে। হয় পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে ওঠে, নয় চরিত্ররা স্বাভাবিকের সীমা ছাড়িয়ে বেরিয়ে আসতে চায়। উদাহরণ দিই। ধরা যাক, বিষ্ণুপদবাবু স্ত্রীর মৃত্যুর পরে অসম্ভব একা হয়ে গেলেন। দীর্ঘদিনের একাকীত্বে ওঁর মানসিক বিকৃতি ঘটলো। একজন মানসিক বিকারগ্রস্ত মানুষ অনেককিছুই করতে পারে, বেশিরভাগ সময়ই সেসব কাজ দেখেই অন্যরা তাকে চিনে ফেলে। কিন্তু, কখনও কখনও এই পরিবর্তন বা বিকৃতিগুলো একটা সাট্‌ল হয়, যে খুব খুঁটিয়ে লক্ষ না করলে বোঝা অসম্ভব।

    - অর্থাৎ বলতে চাইছো বিষ্ণুপদবাবুর পক্ষে মানুষ খুন করে ফেলাও সম্ভব, তাই তো?

    - আলবাৎ! খুন জখম রাহাজানি থেকে শুরু করে বিকৃত যৌন নির্যাতন সবই সম্ভব।

    - হুম। তা, আমরা কি বিষ্ণুপদবাবুর বাড়িতেই যাচ্ছি ?
    - অ্যাঁ, কার বাড়ি?
    বলে মণিদা বেজায় হাসতে শুরু করলো। মিনিট খানেক হেসে, পরম অনুকম্পাভরে বললো,
    "" বিষ্ণুপদবাবু বলে কেউ নেই। সমস্ত ব্যাপারটাই বানানো, তোকে একটু পরীক্ষা করছিলাম। ""

    গাড়িটা ততক্ষণে একটা বেশ বড়ো বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনতলা বাড়ি, সামনে একফালি ছোট্ট বাগান। মণিদা ট্যাক্সির চালক সিদ্ধার্থবাবুকে অপেক্ষা করতে বলে আমার দিকে ফিরলো,
    "" এই বাড়িতে অন্বেষা বসু থাকেন। সরি, থাকতেন। খুব সম্ভবত, কাল রাত দুটো থেকে ভোর ছটার মধ্যে কেউ ওঁকে হত্যা করে। একটু আগে মি: সোম ফোন করে এই খবরটাই দিলেন। আমরা এখন বাড়িটা ভালো করে দেখতে আর লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছি।""

    কিছু বলার মত অবস্থা ছিলোনা। কিছু বলার কথাও নয়। তখনও কল্পনা আর বাস্তবের ঠোকাঠুকির রেশ মাথায় ঘুরছে।
    সামনেই ২১/ সি বীরেন সাহা লেন, অর্থাৎ আমাদের গন্তব্যস্থল। লোহার কারুকাজ করা ভারি দরজাটা ঠেলে বাগানের মধ্যে দিয়ে সরু রাস্তা ধরে মণিদার পিছু পিছু অন্বেষা বসুর বাড়ির দিকে এগিয়ে চললাম। চারদিক বড্ড বেশি শান্ত, কেমন একটা অস্বস্তিকর লাগছিলো ছায়াছায়া বাগান আর অতবড় বাড়িটা। সে নৈ:শব্দ্য কি ঝড়ের পূর্বলক্ষণ? ভাবতেই অস্বস্তিটা বহুগুণ বেড়ে গেল।
  • arjo | 168.26.215.13 | ২৪ জুলাই ২০০৯ ১৮:২০415951
  • ২০ মানে ২০ জন? নয়ডা, ইংলিশ রিভিয়েরা সব মিলেমিশে যাচ্ছে? ইন্টারেস্টিং।
  • ranjan roy | 122.168.29.221 | ২৭ জুলাই ২০০৯ ২১:৩৬415952
  • বাবু টিম,
    তিনদিন কাইট্যা গেল। অন্বেষা বসুর বডি আছে? না কি শ্রাদ্ধ শান্তি হয়েগেছে?
  • hukomukho | 198.184.5.252 | ৩০ জুলাই ২০০৯ ১৯:২৯415953
  • যা: বাব্বা, সবাই তো খোরাক সমুহে ব্যস্ত দেখছি , এদিকের কি হল ? এরপর তো নিয়মভঙ্গ অবধি হয়ে যাবে। অ টিমবাবু , বলি বাড়ি আছেন ??
  • Blank | 170.153.65.102 | ৩০ জুলাই ২০০৯ ১৯:৩৩415954
  • টিমকে উল্লাট ঠ্যাঙাবো ....
  • Tim | 198.82.167.98 | ৩০ জুলাই ২০০৯ ১৯:৩৯415955
  • বড্ডো দেরী হয়ে যাচ্ছে জানি, আন্তরিক দু:খিত। আশা করছি আগামী কয়েকদিনে বেশ খানিকটা লেখা হবে।

  • rokeyaa | 203.110.243.22 | ৩০ জুলাই ২০০৯ ১৯:৪৫415956
  • কে বলে সন্ত্রাস দিয়ে কোনো মহৎ কাজ হয় না!
  • Tim | 71.62.2.93 | ৩১ জুলাই ২০০৯ ১০:৪৫415957


  • মণিদার থেকে অন্বেষা বসু সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনেছিলাম। সেগুলো এইবেলা জানিয়ে রাখি। অন্বেষা বসু একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন। বয়স ছত্রিশ, কোনো অসুখ ছিলোনা, একটু আধটু ডিপ্রেশনে ভুগলেও কোনোদিন আত্মহত্যার চেষ্টা করেননি। বিয়ে হয়েছিলো উত্তর কলকাতার বাসিন্দা জনৈক চিকিৎসকের সাথে, বছর দুই পরে যদিও ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপরেই অন্বেষা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির একটা বড়ো অংশ বিক্রি করে বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নী করেন। একটা বাদে সবকটা ব্যবসাই লাভের মুখ দেখেছিলো। ব্যর্থতা আসে একটি আধুনিক স্কুল বানাতে গিয়ে। সম্পূর্ণ বিদেশী ধাঁচে আবাসিক স্কুল চালু করতে চেয়েছিলেন অন্বেষা। সরকারী ও বেসরকারী বিরোধীতায় ব্যাপারটা বিগড়ে যায়। প্রতিশ্রুত সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই অন্বেষা স্কুলটি চালাতে চাইলে অভিভাবকরা বেঁকে বসেন। ফলে অন্বেষা'র নিজের নামের স্কুল আর দিনের আলো দেখেনি। বাড়িটা পরে জনৈক প্রোমোটার জলের দরে কিনে নেন। সাফল্য-ব্যর্থতা বাদে বাকি যা তথ্য পাওয়া গেল সেগুলো তেমন কাজের না। অত:পর আমরা বাড়ির লোকদের একে একে ডাকলাম। কথাবার্তা যা বলার মণিদাই বললো। মি: সোম আগেই একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। বাড়িতে সর্বক্ষণের পরিচারক থাকতো একজন, নাম রোহিত। নেপালের ছেলে, বয়স চব্বিশ-পঁচিশ হবে, প্রায় ছ'বছর আছে এই বাড়িতে। একজন রান্না করার লোকের সন্ধান পাওয়া গেল, সেও ঐ বাড়িতেই বাস করে আসছে প্রায় দু বছর। পাচকটি উত্তর চব্বিশ পরগণার লোক, কলকাতার একটি পাইস হোটেলে চাকরি করতো। হোটেলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখানে কাজ নেয়। এর বয়স দেখে বোঝার উপায় নেই, চল্লিশও হতে পারে, পঞ্চাশও হতে পারে। এঁর নাম বিশ্বরূপ। এছাড়া শুধু থাকতো অন্বেষার ড্রাইভার, নাম কমল। গত পাঁচ বছর সেই অন্বেষার সুমোটা চালিয়ে আসছে। কমল খুবই মিতভাষী যুবক। ড্রাইভারির কাজ করার আগে সে একটি কোম্পানীতে ছোটোখাটো সেল্‌সের কাজ করতো। এই তিনজনই জানালো তাদের সমস্ত সুযোগ সুবিধার দিকে অন্বেষার তীক্ষ্ণ নজর ছিলো। কোনোদিন দুর্ব্যবহার সইতে হয়নি এবং আর্থিক দিক থেকেই খুব একটা অভিযোগ ছিলোনা কারুর। যদিও তিনজনের থেকেই অন্তত একটা করে সন্দেহজনক কথা শোনা গেল। রোহিত জানালো মাসখানেক আগে কমল মাইনে বাড়াবার আর্জি জানায় ও প্রত্যাখ্যাত হয়। বিশ্বরূপবাবু জানালেন রোহিত নাকি একদিন লাইব্রেরির তালা খোলা রেখে সিনেমা গেছিলো, এবং এই নিয়ে অন্বেষা সবার সামনেই রোহিতকে তিরষ্কার করেন। কমলকে নাকি একদিন অন্বেষা নিজেই বলেছিলেন বিশ্বরূপের কথা। বিশ্বরূপ নাকি গোপনে কিছু একটা ঘোঁট পাকাচ্ছে বলে অন্বেষার সন্দেহ ছিলো।
    এই সব দেখেশুনে আমার এমনিতেই সমস্ত গুলিয়ে যাচ্ছিলো। আরো বিরক্ত লাগছিলো একটা জিনিস ভেবে। আমরা এখনও আগের খুনেরই কিনারা করতে পারিনি। তার মধ্যে আবার নতুন কেসে মণিদাকে ডাকা হচ্ছে কেন? আমার ওপর পুলিশের সন্দেহ খানিকটা কমে গেছিলো, কিন্তু একেবারে নিরপরাধ সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছিলাম না।

    অবশ্য তখনও অন্বেষা বসুর মৃতদেহ দেখার দুর্ভাগ্য হয়নি আমার। দেখে অনেকগুলো ভুল ধারণার অবসান হলো। প্রথমত:, মৃতদেহ দেখেই আন্দাজ করা যাচ্ছিলো যে আগের খুনের সাথে স্পষ্ট সাদৃশ্য আছে। সেই একইভাবে যন্ত্রণা দিয়ে তিলে তিলে মারা হয়েছে। সুশান্তবাবুর ঘরটা ভালোভাবে লক্ষ করিনি বলে আফশোস ছিলো, এইবার আর ভুল করলাম না। সমস্ত খুঁটিয়ে দেখেও অবশ্য কোনো বিশেষ চিহ্ন পাওয়া গেল না। তবে মণিদাকে বেশ রিল্যাক্সড লাগছিলো। সমস্ত যত্ন করে জেনে নিয়ে ও মি: সোমকে জিগ্যেস করলো,
    - এই ঘরের কিছু জিনিস কি আপনারা সরিয়েছেন?
    - নাহ্‌। যা দেখছেন, এইই সব।
    - বেশ। আচ্ছা, আমি এখন আসি। পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট হাতে এলেই আমাকে একটা ফোন করবেন প্লিজ।
    - শিওর।
    মণিদার সাথে গুটিগুটি বেরিয়ে এলাম মৃত্যুপুরী থেকে। আরো একটা দমবন্ধকরা পরিবেশ, আরো একটা ঘনিয়ে আসা চক্রান্তের হাতছানি...... এবং.... আরো একবার অন্ধকারে থেকে যাওয়া। বাইরেও তখন অন্ধকার ঘনিয়েছে। গাঢ় অন্ধকারে গা ডুবিয়ে ঝুপসি হয়ে আছে অন্বেষা বসুর বাড়ি - ""অন্বেষণ""।
  • Tim | 71.62.2.93 | ০২ আগস্ট ২০০৯ ১১:৫৪415958


  • পিকুর কদিন কাজের চাপ ছিলো খুব। অনেকদিন ভালো করে ওর সাথে আড্ডা দেওয়া হয়নি বলে সেদিন ওর বাড়ি গেছিলাম। সন্ধের দিকে এখন মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়, তখন বোঝাই যায়না সারাদিন গরমে লোকে ছটফট করেছে। পিকুদের বাড়িটা বেশ ছোটখাটো। একতলা বাড়ি, ছাদে একটা ছোটোমত ঘর আছে, সেখানে পিকু ইচ্ছে হলে এক আধদিন রাতে ঘুমোয়। বা, বলা ভালো, জেগে থাকে। রাত জেগে বই পড়া বা তারা দেখা বা আজগুবি চিন্তা করা বা অন্য কিছু, কাকিমার ভাষায় "" যত অপকর্মের"" কারখানা ঐ চিলেকোঠার ঘর।
    আমরা অনেকক্ষণ গুলতানি করেও কিছুতেই কোনো ক্লু পেলাম না। পুলিশও ঐদুটো খুন দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে। কোনো ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেই, পায়ের ছাপ বা অন্য কোনোরকম ক্লু পাওয়া যায়নি ঘটনাস্থল থেকে। ভৃত্যস্থানীয় কাউকে প্রাথমিক সন্দেহভাজনদের তালিকায় রাখা হয়েছিলো, কিন্তু জানাই ছিলো যে এত নিখুঁত প্ল্যানিং ওদের পক্ষে সম্ভব নয়। খুবই পাকামাথার কাজ সন্দেহ নেই। এই তদন্তে পিকু এখনও খুব একটা ইনভলভ্‌ড হতে পারেনি বলে ওর মনটা খারাপ ছিলো। কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রাত আটটা নাগাদ মণিদা ফোন করে আমাদের ডাকলো।
    ************************
    মণিদার ওখানে পৌঁছতে পৌঁছতে বেশ রাত হলো। প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ ট্যাক্সি থেকে নেমে দেখলাম রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা হয়ে গেছে। সন্ধের দিকে এদিকেও এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে, রাস্তার পাশের হাইড্রেনটা ভরা বর্ষার নদীর আকৃতি নিয়েছে। মণিদাদের বাড়ির গলিটায় ঢোকার মুখে রাস্তাটা একটু সরু হয়ে বাঁক নিয়েছে। কর্পোরেশনের আলো এমনিতেই মিটমিট করে জ্বলে, তায় আসেপাশের বাড়িগুলোর দরজাজানলা বন্ধ, গলিটা বেশ অন্ধকার মতই ছিলো। মানে যতটা অন্ধকার হলে পথ চলতে অসুবিধে হয়না ততটাই। গলিটার মাঝামাঝি উল্টোদিক থেকে একটা লোক আসতে দেখা গেল। আবছা আলোয় একমুহূর্ত দেখে মনে হলো , লোকটার হাঁটার ধরণটা অদ্ভুৎ। কিন্তু পরক্ষণেই ভুল ভাঙ্গলো --- এ আসলে ভয়ানক মাতাল হয়ে আছে। টানা দু-তিন গজও সে সরলরেখায় চলছিলো না, অনর্গল ভুল বকতে বকতে পথ হাঁটছিলো। আমাদের সামনে এসে তো একটা কেলেঙ্কারি করলো। টলতে টলতে একবার হাতজোড় করে নমস্কার করার চেষ্টা করতে যেতেই আরো টাল খেয়ে সোজা ড্রেনের দিকে চলে গেল। পিকুই লোকটার কাছাকাছি ছিলো, সে এক ঝটকায় ধরে ফেলায় লোকটা পড়ে গেল না। অত:পর জড়ানো গলায় তার ধন্যবাদ দেওয়ার পালা শুরু হলো। অনেক কষ্টে তাকে আবার বড়ো রাস্তার নিরাপদ ও আলোকিত এলাকায় ছেড়ে দিয়ে তবে আমরা মুক্তি পেলাম। ওখান থেকে কপাল ভালো থাকলে এখনও রিক্সা পাওয়া যাবে।

    এইসব করে রাত এগারোটায় মণিদার বাড়ি পৌঁছানো গেল। মণিদা যথারীতি স্টাডিতে, একটা গাবদা বই আর সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বসেছে। আমরা যেতেই অবশ্য বই বন্ধ করে সোজা হয়ে বসলো। গলাটা একটু পরিষ্কার করে নিয়ে বলতে শুরু করলো :

    - আজ একটা বিশেষ কারণে তোদের এখানে ডাকলাম। বিকেলের দিকে মি: সোম আর আমি পোস্টমর্টেম রিপোর্টটা নিয়ে বসেছিলাম। রিপোর্টে যা পাওয়া গেছে সেসব আমাদের অনুমানকেই সত্যি প্রমাণিত করে। সে কথায় পরে আসছি। কিন্তু তার থেকেও চাঞ্চল্যকর একটা ব্যাপার ঘটেছে। অন্বেষার মৃতদেহ থেকে একটা মেটালিক মিনিয়েচার পাওয়া গেছে।

    আমরা রূদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছি, মণিদা কথা বন্ধ করে উঠে গিয়ে টেবিলের ওপর রাখা একটা ছোটো কাচের বাক্স আনলো। তারপর সেখান থেকে খুবই ছোটো, এক সেন্টিমিটার মত একটা হলদেটে ধাতব মূর্তি বের করে সাবধানে হাতের তেলোয় রেখে আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিলো। ভালো করে দেখলাম, একটা লম্বা, কারুকাজ করা রডের মত অংশকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে দুটো সাপ উঠেছে। তারা যেখানে মুখোমুখি, সেখান থেকে দুটো ডানার মত বেরিয়েছে ঐ রডটা থেকে। মণিদা একটা খটোমটো নাম বললো, কাডুসিয়াস না কি যেন। আর বললো, খুন করার আগে অন্বেষাকে এই বস্তুটা গিলতে বাধ্য করা হয়েছিলো। কেন? জিগ্যেস করে স্পষ্ট উত্তর এলো না। মণিদা বললো,

    - অনেককিছুই হতে পারে। এটা আরো একটা সাংকেতিক মেসেজ হলে, এর মানেও খুঁজে বের করতে হবে। এর সবথেকে সহজ মানে হলো "" আরোগ্য""। ও, জিগ্যেস করতে ভুলে গেছি, অন্বেষা বসুর বাড়ির নাম লেখা ফলকটা দেখেছিলি?

    - হ্যাঁ। কেন?
    - কিছু অস্বাভাবিক চোখে পড়েনি?
    - কি যেন একটা অন্যরকম মনে হচ্ছিলো, কিন্তু কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না।
    মণিদা মুচকি হাসলো এবার। সেই স্বভাবসিদ্ধ করুণামিশ্রিত হাসি। তারপর বললো :
    - নামটার বাংলা লেখাটা ঠিকই আছে। ইংরেজি হরফগুলো খুব স্টাইলিশ ছিলো। কাল গিয়ে আর একবার নিজেরাই দেখে আসিস। এখন বললে মজাটা মাটি হয়ে যাবে।

    কিন্তু আমরা কিছুতেই ছাড়লাম না। অনেক রাত হয়েছে, আরো একটা রাত এইসব আগডুম বাগডূম ভেবে জেগে থাকতে চাইনা। তখন মণিদা জানালো, ইংরেজি বানান হলেও হরফটা ছিলো গ্রীক। এই যেমন এ'র জায়গায় আলফা.... ইত্যাদি ইত্যাদি।
    আমরা অবাক হয়ে ভাবছি এতে মজার কি আছে, এমন সময় মণিদা বললো :

    - একটু খুঁটিয়ে দেখলে খেয়াল হবে, আলফা আর ওমেগা, এইদুটো অক্ষর কে যেন লালকালিতে আন্ডারলাইন করে রেখেছে।
  • arjo | 24.42.203.194 | ০৫ আগস্ট ২০০৯ ০৬:৫৩415959
  • এট্টু হাত চালিয়ে লিখলে হয় না?
  • Tim | 71.62.2.93 | ০৫ আগস্ট ২০০৯ ০৮:৩৫415960


  • আলফা আর ওমেগা ( কি যে এর মানে তা মণিদাই জানে) নিয়ে মজার কিছু ভেবে পেলাম না, তবে ঐ আন্ডারলাইন করার ব্যাপারটা একটু গোলমেলে লাগলো। অবশ্যি সেতো ইস্কুলফেরতা যেকোনো বিচ্ছু ছেলের কাজও হতে পারে। এরকম যে হয়না তা তো নয়, আর আমরাই এরকম অনেক করেছি। মণিদাকে অনেক বলেও আর কিছু কথা বের করা গেল না। আমরাও বাড়ির পথ ধরলাম। পিকু ফেরার পথে একটু অন্যমনস্ক ছিলো। বারকয়েক আমার বকবকানির বদলে হুঁ-হাঁ করে তারপর একসময় হঠাৎ চুপ মেরে গেল। খেয়াল হওয়ায় আমিও চুপ করে গেলাম। এবারের তদন্তটা যে অন্যগুলোর থেকে আলাদা সেটা বেশ বুঝতে পারছিলাম। অবশ্য মণিদা বলে, সব কেসেরই নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, তবু এবারেরটা যেন একটু বেশিই আলাদা।

    এইসব ভাবতে ভাবতে বেশ খানিকটা হেঁটে এসেছি, এমনসময় দেখি একটা পানের দোকান তখনও খোলা আছে। এত রাতে কে পান কিনবে ভাবতে না ভাবতেই পিকু বললো, "" চল পান খাওয়া যাক। ""
    পান কেনার সময় খুচরো কম পড়ায় আমি পকেট হাতড়ালাম। আর তখনই হাতে একটা বাড়তি কাগজ ঠেকলো। বের করে দেখি একটা ভিজিটিং কার্ড। তাতে লেখা আছে :

    Dr. R. N Banerjee, MD
    psychiatrist
    203 Sarakarbari lane, kol -15
    Ph: 2311-3211

    আমরা কার্ডটা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম মনে হয়। পানের দোকানের ঝাঁপ ফেলার শব্দে সম্বিৎ ফিরলো। পিকু কার্ডটা আমার থেকে নিয়ে দেখতে যেতেই দেখলাম উলটোদিকেও কিসব লেখা আছে। ছোঁ মেরে ওর হাত থেকে নিয়ে দেখি লালকালিতে বড়ো বড়ো করে আলফা আর ওমেগা লেখা। পাশে একটা স্মাইলি। রাস্তা থেকেই মণিদার মোবাইলে ফোন করা হলো। এত রাতে আর ওদের বাড়ি গিয়ে হুজ্জুতি করার মানে হয়না। মণিদা সব শুনে একটা হাই তুলে বললো, "" ঘাবড়াস নে। কাল সন্ধের পর আপিস থেকে এখানে চলে আসিস। কথা হবে। এখন বাড়ি গিয়ে ঘুমো দুজনেই। সামনে ধকল আছে। ""
    আমরাও তাই চাইছিলাম। একটা ধুন্ধুমার কিছু না হলেই নয়। একজন অলক্ষে থেকে ক্রমাগত আমাদের নিয়ে মজা করে যাচ্ছে এটা আর কতদিন সহ্য হয়?
    বাড়ি ফিরে ঠান্ডা মাথায় আবার ঐ মাতালটার চেহারা মনে করার চেষ্টা করলাম। কিছুই মনে পড়লো না। অত অন্ধকার ছিলো যে দেখার কথাও নয় খুঁটিয়ে। অথচ সে দিব্যি আমাদের দেখতে পেয়েছে। পকেটমাসের ক্ষিপ্রতায় উল্টো হাতসাফাই করে মেসেজ রেখে গেছে। লোকটার এলেম আছে মানতেই হবে।
    ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি। বাড়ি ফিরে পিকু ড: ব্যানার্জিকে একটা ফোন করেছিলো। খুবই ব্যস্ত ডাক্তার সন্দেহ নেই। আগামী একমাসের মধ্যে কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাচ্ছিলো না। তারপর মণিদার নাম শুনে আর তদন্তের ব্যাপারে সাহায্য দরকার জেনে একটু সময় বের করে কথা বলবেন বলেছেন। আগামীকাল রাত আটটা দশে দেখা হবে, মাত্র পনেরো মিনিট সময়। পিকু বলছিলো, খুনী যদি ড: ব্যানার্জির পেশেন্ট হয় তাহলে তো সহজেই পেশেন্ট লিস্ট স্ক্যান করে এক আধজন গোলমেলে লোক পাওয়া যাবে। ডাক্তারবাবু কিছুটা আন্দাজ করতে পারলে ব্যাপারটা খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজার মত কঠিন তো নাও হতে পারে।

    আমার মন অবশ্য অন্য কথা বলছিলো। যে নিজে সেধে এসে ঠাট্টা করে যায় তাকে আর যাই হোক এতটা বোকা ভাবতে পারছিলাম না। অবশ্য ঠাট্টা না সতর্কবাণী তাই বা জানছে কে?
  • arjo | 168.26.215.13 | ০৬ আগস্ট ২০০৯ ১৮:১৬415962
  • মানে কি A to Z.? সবাইকে মেরে ফেলবে নাকি?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন