এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প: অন্তর্বাহী

    Tim
    অন্যান্য | ১৭ জুলাই ২০০৯ | ৩৬৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Samik | 219.64.11.35 | ০৬ আগস্ট ২০০৯ ১৮:৪৫415963
  • ওমেগা তো OZ কী করে হবে?
  • d | 117.195.32.47 | ০৬ আগস্ট ২০০৯ ২০:১৩415964
  • বে থে ................ সত্যি মাইরী!
    ওমেগা O হতে যাবে কেন। ওমিক্রনকে বরং O বলা যায়। ওমেগা গ্রীক বর্ণমালার শেষ বর্ণ।
  • Samik | 219.64.11.35 | ০৬ আগস্ট ২০০৯ ২১:০৩415965
  • ছরি। ছরিয়েছি। ওমিক্রনই বটে।
  • T | 203.101.108.91 | ০৭ আগস্ট ২০০৯ ১৩:০৭415966
  • কিন্তু "অন্বেষণ"-এ ওমেগা এলো কি করে? নকি আমি বুঝতে ভুল করছি?
  • Sags | 203.201.225.35 | ০৭ আগস্ট ২০০৯ ১৬:১৬415967
  • ধুরছাই। আমার ধারাবাহিক গল্প কোনো কালেই ভালো লাগেনা। বড্ড ধৈর্য লাগে। একেবারে শেষ করে দেবো সেটাই ভালো।
  • Tim | 71.62.2.93 | ০৮ আগস্ট ২০০৯ ১১:৩৬415968
  • T
    ব এর জায়গায় ইংরেজিতে w লেখা যায় তো। সেটাকেই ছোটোহাতের ওমেগার মত করে লেখা ছিলো।
  • Tim | 71.62.2.93 | ০৮ আগস্ট ২০০৯ ১২:৩০415969
  • ১০

    পরদিন কাঁটায় কাঁটায় আটটা বেজে দশ মিনিটে ড: ব্যানার্জির সাথে দেখা হলো। মণিদারও আসার কথা ছিলো, কিন্তু শেষ মুহূর্তে মি: সোমের একটা ফোন আমাদের সব প্ল্যান পাল্টে দিলো। আমাদের সাথে মণিদার বদলে এসেছে এক টুকরো কাগজ, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের একটা তালিকা। মণিদা এলে অন্তত যে জিনিসগুলো জানতে চাইতো সেইগুলো লিখে নিয়ে এসেছি। এবার আমাদের হাতযশ আর ডাক্তারবাবুর ইচ্ছে।
    সুসজ্জিত চেম্বারে বসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ডাক্তারবাবু এলেন। ড: ব্যানার্জি অত্যন্ত সুপুরুষ। হাইট কম করে পাঁচ নয় হবে, বয়স পঞ্চাশের কোঠায়, অসম্ভব ফর্সা। এসেই অসম্ভব ধারালো দৃষ্টিতে আমাদের একবার মেপে নিলেন। পরিচয়পর্ব সংক্ষেপে সেরে নিয়ে আমরা কাজের কথায় এলাম। শুরুটা ডাক্তাববাবুই করলেন। ওঁর মোলায়েম গলা বিশাল ঘরটার আনাচে কানাচে খেলতে লাগলো।
    - দেখুন, কাগজ পড়ার খুব একটা সময় আমি পাইনা। তাও যতটুকু শুনেছি, তাতে একমাত্র খুনের ধরণ ছাড়া সেরকম কোনো মিল তো চোখে পড়ছে না। আর, আপনারাই তো বলছেন, মোটিভ এখনো ক্লিয়ার নয়। তাহলে এই দুটো খুনকে কিভাবে রিলেট করছেন? মানে, আমার প্রশ্ন হলো, এগুলো বিচ্ছিন্ন নয় কেন?
    - সত্যি বলতে কি, এই বিষয়ে আমরাও খুব বিশদে জানি না। মণিদার একটা নিজস্ব ক্যালকুলেশান বলছে এইদুটো খুনের কারিগর একই লোক। ধরে নিন, ছোটোখাটো কিছু সাংকেতিক চিহ্ন থেকে এই ধারণা হয়েছে।
    -বুঝলাম। বেশ, এবার আপনাদের যা জানার আছে আগে সেগুলো জেনে নিন। তারপর সময় হলে অন্য কথা হবে।
    - আপনি বরাবরই এখানে রুগী দেখেন?
    - (কিঞ্চিৎ বিস্মিত হয়ে) হ্যাঁ। গত প্রায় বিশ বছর আমি এখানেই বসি। তার আগে অন্য জায়গায় ঘর ভাড়া নেওয়া ছিলো।
    - আপনার চিকিৎসার ফেইলিওর রেট কিরকম?
    - ( একটু বিব্রত) তা, প্রায় টোয়েন্টি-এইট্টি মত। যদিও সেটাও ফ্লাকচুয়েট করে।
    - গত ছ-মাসের মধ্যে এরকম কতবার হয়েছে মনে করতে পারবেন?
    - সব মনে থাকেনা। তবে তার রেকর্ড আছে। আমাকে ফাইল দেখতে হবে তার জন্য। আন্দাজে খানিকটা বলতে পারি। ব্যতিক্রমী কেসগুলো তো মনে থাকেই। এই মুহূর্তে সেরকম জনা দশেকের কথা মনে পড়ছে। তবে আমি শিওর, নোটস ঘাঁটলে আরো বেশি পাওয়া যাবে।
    - এদের মধ্যে কাউকে আপনার বিপজ্জনক মনে হয়েছিলো সেই সময়?
    - না। অন্তত মানুষ খুন করে ফেলার মত মনে হয়নি। তবে আমার ভুলও হতে পারে।
    - গত এক মাসের মধ্যে কোনো ক্রনিক রোগীকে আপনি ফিট সার্টিফিকেট দিয়েছেন?
    - হ্যাঁ, দুজনের কথা তো এখনই মনে পড়ছে।
    - আপাতত আর কোনো প্রশ্ন নেই। তবে ঐ সাকসেস আর ফেইলিওরের রেকর্ডগুলো পাওয়া যাবে?
    - দেখুন, আমি আপনাদের কোনো অফিশিয়াল ডকুমেন্ট দিতে পারবোনা। কিন্তু নাম ঠিকানা দিতে পারি। মৌখিকভাবে ওঁদের সম্পর্কে খানিক ধারণা দিতে পারি। তার বেশি কিছু করতে গেলে আমাকে আমার নিজের তৈরী এথিকাল লিমিট ক্রস করতে হয়। সে আমি পারব না।

    আমাদের অবশ্য এরকম কোনো দাবীও ছিলোনা। অত:পর ড: ব্যানার্জি আমাদের ওঁর অ্যাসিস্টেন্টের সাথে আলাপ করিয়ে দিলেন। আমাদেরই বয়সী প্রায় ছেলেটি, নাম অর্ণব। আমরা তিনজনে বসে একটা প্রাথমিক লিস্ট বানাবার পর ড: ব্যানার্জিকে একবার দেখানো হলো। রুগী দেখার ফাঁকেই তিনি মিনিট খানেক চোখ বুলিয়ে কয়েকজনের নাম আলাদা করে মার্ক করে দিলেন। দুজন সুস্থ হয়ে যাওয়াকেও ধরলে সব মিলিয়ে আমাদের হাতে রইলো পনেরোজনের কনট্যাক্ট। খড়ের গাদায় ছুঁচ খোঁজা না হলেও, খুব সহজ কাজ নয়। আর, যদি এমন হয় যে খুনী এই লিস্টের অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে, তাহলে তো চিত্তির। এমনকি আরেকটা সম্ভাবনা, যাকে আম্রা ওয়ার্স্ট কেস ভাবতেই পারি, এমনও হতে পারে খুনী আদৌ ড: ব্যানার্জির রোগীই নয়। সেক্ষেত্রে কিভাবে কাজ এগোবে ভাবতে গিয়ে মাথা গুলিয়ে গেল। অবশ্য এত ভাবা আমাদের কাজ না। মণিদা আশাকরি এর থেকেই যথেষ্ট তথ্য পেয়ে যাবে। আপাতত মণিদার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই।
  • Tim | 71.62.2.93 | ১০ আগস্ট ২০০৯ ০০:৩৬415970
  • ১১

    অত:পর শুরু হলো খোঁজ নেওয়া। লিস্ট মিলিয়ে সবার সাথে একে একে কথা বলতে হবে, সম্ভব হলে দেখা করতে হবে। এবং ব্যাপারটার জন্য দুদিনের বেশি নেওয়া যাবেনা। আমি আর পিকু দুজনেই আপিসে ছুটির দরখাস্ত দিলাম, আর উত্তরের অপেক্ষা না করেই কাজে নেমে গেলাম। মণিদা মি: সোমের সাথে উদয়াস্ত খাটছে। এর মাঝে একবারই ওর সাথে দেখা হয়েছিলো, বলেছে এই কেসটা নিয়ে ও খুবই হতাশ। মোটেই আনন্দ পাচ্ছেনা কাজটা করে, নেহাৎ আমি ঝামেলায় জড়িয়ে যাবো তাই করছে। এসব শুনে আমার আরোই বাজে লাগছে।

    সে যাই হোক, কাজের কথায় আসি। প্রথমদিন সাতজনকে টার্গেট করা হলো। তিনজন কলকাতারই লোক। একজন দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার। বাকি তিনটে ফোনের মাধ্যমে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে, কারণ তাদের মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে, আর নির্দিষ্ট ঠিকানা দেওয়া নেই। সবারই ফোন নম্বর ছিলো। একে একে ফোন করা শুরু হলো। যা হলো সংক্ষেপে বলছি। দক্ষিণ কলকাতার দুজন ( ডিটেইলস দেওয়া মানা) এবং শহরতলির একজনের সাথে সহজেই দেখা হলো। একজনের বাড়ির লোক অবশ্য আপত্তি করছিলেন, তবে অনেক বলার পর নিমরাজি হন। ওঁদের দেখে ও কথা বলে মনে হলোনা ওঁরা কোনরকম অপরাধের সাথে যুক্ত থাকতে পারেন। তারপরেই আমরা ছুটলাম দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার দিকে। অনেকক্ষণের পথ, পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল। বুদ্ধি করে গাড়িতে যেতে যেতেই আমরা ফোনকলগুলো সেরে নিলাম। দুজনের সাথে কথা হলো, স্বাভাবিকভাবেই কথা বললেন। তিননম্বর ফোনকলের উত্তরে জানা গেল সার্ভিস টার্মিনেট করে গেছে। তার অল্পক্ষণের মধ্যেই আমরা গন্তব্যস্থলে পৌঁছে গেলাম।

    এইখানে জায়গাটার একটু বর্ণনা দি। গাড়িটা যেখানে এসে থামলো সেটা বেশ ফাঁকামত একটা জায়গা। যদিও আসার সময় কাছেই একটা ছোটো বাজার দেখে এলাম। কিন্তু ঠিক এই জায়গাটা একটু ফাঁকা। চারদিকে জঙ্গল হয়ে আছে। তবে যাঁর সাথে দেখা করতে এসেছি, তার বসতবাটির অংশটা পরিষ্কার। এক টুকরো বাগান করা আছে, সেখানে তরিতরকারির গাছই বেশি। মাটি খুব অসমান, হয়ত একসময় পুরোটাই চাষের জমি ছিলো। কলিং বেলের ব্যাপার নেই। সবাই হয়ত দরজায় ধাক্কা দিয়েই ডাকে। আমাদের যদিও সেসবের দরকার পড়লো না। গাড়ির আওয়াজেই হোক বা অন্য কিছু, উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে সামনেই পেলাম। ভদ্রলোকের নাম, ধরে নেওয়া যাক মি: রায়। রায়বাবু অবসরপ্রাপ্ত নাবিক। দীর্ঘদিন চাকরি করে তিন বছর আগে অবসর নিয়েছেন। ড: ব্যানার্জির কাছে তারও কিছু আগে থেকে ওঁর যাতায়াত। দীর্ঘ সমুদ্রবাসের জন্য সম্ভবত ওঁর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছিলো তখন। তারপর থেকে প্রায়ই যেতেন। যতনা রুটিন চেক আপের খাতিরে, তার চেয়েও বেশি বন্ধুত্বের তাগিদে। ডাক্তারবাবুর সাথে খুব বন্ধুত্বের সম্পর্ক ওঁর। এবং এমনকি এও বললেন, ডাক্তারবাবু অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও ওঁর সাথে করে থাকেন।

    আমাদের কেসটা সম্পর্কে অবশ্য তেমন কৌতূহলী লাগলোনা মি: রায়কে। তবে যথাসাধ্য তথ্য দিলেন আমাদের। আর জানালেন অস্বাভাবিক কিছু মনে পড়লে বলবেন।
    মোটের ওপর একটা দিন প্রায় বৃথাই গেল। যদিও কলকাতার দমবন্ধ করা পরিবেশের বাইরে কিছুটা ভালো সময় কাটলো আমাদের।

    তবে সব ভালো জিনিসই ক্ষণস্থায়ী হয়। বাড়ি ফিরে শুনলাম ড: ব্যানার্জির সেক্রেটারি অর্ণব ফোন করেছিলো। আমাদের সমস্তরকম খোঁজখবর বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন ড: ব্যানার্জি। অতএব পরেরদিনের সমস্ত পরিকল্পনা বাতিল করা হলো। মণিদা যদিও সব শুনে বললো, অসুবিধে নেই। কাল এখানে চলে আয়। কাজ আছে।
  • Sags | 203.201.225.35 | ১০ আগস্ট ২০০৯ ১৫:৫৫415971
  • ভাই Tim একটু চটপট করে লেখো।
  • baps | 203.199.41.181 | ১০ আগস্ট ২০০৯ ১৬:২৫415973
  • এক্ষণে একখান কম্পি করলে কেমন হয়? খুনি কে টাইপের। তাপ্পর দেখা যাবে টিম ভাই এর মতে খুনি কে!
  • Tim | 198.82.19.239 | ১০ আগস্ট ২০০৯ ২১:৩৫415974
  • ইশে্‌পশাল লুটিস:
    সোসনের বিরতিতে আবার লেখা হবে। এট্টু ম্যানেজ করে লিবেন।
    সোসন সম্পক্কিত সমস্ত তথ্য গুরুতেই। :)
  • ranjan roy | 122.168.204.42 | ১৪ আগস্ট ২০০৯ ১৫:৪৬415975
  • টিম,
    আমি জানি, খুনটা আমি করিনি। কিন্তু এবার করবো। বুঝতেই পারছো কাকে।
    ১৪,১৫,১৬-- তিনটে দিন ছুটি। এর মধ্যে তিনটে চ্যাপ্টার না পেলে----।
  • Tim | 71.62.121.158 | ১৫ আগস্ট ২০০৯ ১৪:৩৯415976
  • ১২

    পরেরদিন সকালে উঠেই মণিদার বাড়ি ছুটলাম। পিকুও হাজির হলো কিছুক্ষণের মধ্যেই। তদন্তের চক্করে আমাদের দুজনেরই আপিস মাথায় উঠেছে। তবে মণিদার নামটাম হয়ে আমাদের একটা সুবিধে হয়েছে। চট করে আপিস কামাই করা যায়। পরে যদিও ওভারটাইম করে মেকাপ দিয়ে দিই দুজনেই, তবু, এটা একটা মস্ত সুবিধে।

    মণিদাকে সেদিন বেশ গম্ভীর দেখলাম। আমাদের দুটো প্রশ্ন শুনতেই পেলো না। চায়ের কাপ হাতে ধরে তন্ময় হয়ে কি ভাবছিলো। এইভাবে প্রায় মিনিট পনেরো স্থাণুবৎ বসে থেকে তারপর স্বাভাবিক হলো।
    - তোরা চুপচাপ বসে আছিস যে?
    উত্তরে আমরা মুখ চাওয়া-চায়ি করে হাসলাম। বোঝাই গেল মণিদা আমাদের কথা শুনতে পায়নি।
    - তোমার কাজ কিছু এগোলো?
    - একেবারে কিছু হয়নি বলবোনা। আবার অনেকদূর এগিয়েছি তাও নয়। ভাবতে হচ্ছে রে। আগে তোদের বলেছিলাম যে কেসটা নিছক সাদামাঠা। সেকথা আমি ফিরিয়ে নিচ্ছি।
    - কি কাজ আছে বলেছিলে?
    - হ্যাঁ, বলছি। আপাতত আমাদের হাতে যা ক্লু আছে সেটা অপরাধের মোটিভ সম্পর্কে একতা হালকা ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু অপরাধী এখনও অন্ধকারেই রয়ে গেছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত সেগুলো হাতে আসছে ততক্ষণ আমাদের একটাই কাজ। চোখকান খোলা রেখে চলা, আর কিছু লোকের ওপর বিশেষ নজর রাখা। মি: সোম ইতিমধ্যেই ড: ব্যানার্জীর বাড়ির সামনে সাদা পোষাকের পুলিশ মোতায়েন করেছেন। তোদের মধ্যে একজন মি: রায়ের ওপর নজর রাখবি। ভদ্রলোক কোথায় যান, কতক্ষণ বাড়িতে থাকেন, কে কে দেখা করতে আসে সমস্ত নোট করবি।স্থানীয় লোকজন চেনাশুনো থাকলে ওঁর সম্পর্কে খোঁজ নিবি। পিকুর কাজ হলো ইন্টারনেট ঘেঁটে রিলিজিয়াস কোর্সের একটা লিস্টি বানানো। এই কাজটা করতে খুব বেশি হলে ঘন্টা তিনেক লাগবে। তারপর তোকে আমি কয়েকজনের নাম ও ঠিকানা দেবো। তাদের সাথে ফোনে বা সাক্ষাতে কথা বলবি। আমরা এখনই বেরিয়ে পড়বো। রাতে এখানে মিট করছি। তারপর পরের স্টেপ। কোনো প্রশ্ন থাকলে চট করে জিগ্যেস করে ফ্যাল!
    আমাদের কোনো প্রশ্ন ছিলোনা। কাজগুলো নেহাতই মামুলি। সুতরাং আধ ঘন্টার মধ্যেই তিনজন বেরিয়ে পড়লাম। পিকু বাড়ির কম্পিউটারেই প্রাথমিক কাজটা করবে।
    ********************
    রাত দশটা বাজার একটু পরে আমি ফিরলাম। মণিদা ফিরেছে, যদিও পিকুর দেখা নেই। আমি সংক্ষেপে বলে নিলাম যা জেনেছি। ভদ্রলোকের এমনিতে এলাকায় যথেষ্ট সুনাম, একমাত্র অভিযোগ পাড়ায় বেশি মেশেন না। কালেভদ্রে বাড়িতে লোক আসে, সবথেকে বেশিবার আসে কালনা থেকে এক তুতো ভাই - তাও মাসে একবার। ঐ এলাকায় আমাদের আপিসের একজন থাকেন, উনিই বললেন।

    আমার রিপোর্টিং শেষ হয়ে আরো বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেল, তবু পিকু ফিরলোনা। দোতলা থেকে জেঠিমা বারবার খোঁজ নিচ্ছেন, ভাবছি এবার একটা ফোন করে দেখবো কিনা--- এমন সময় আমার ফোনটাই বেজে উঠলো। পিকুর ফোন। ওর ফিরতে আরো একঘন্টা লাগবে।
    ফোনে পিকুর গলাটা বেশ অন্যরকম শোনালো। খুব ক্লান্ত, প্রায় ঘুমে জড়িয়ে আসছে। সিগনালের সমস্যা ভেবে মণিদাকে সেকথা আর বললাম না।

    অবশেষে প্রায় দেড়ঘন্টা পরে পিকু এলো। উস্কোখুস্কো চুল, চোখ লাল, পা টলছে। মণিদা দেখেই এক মুহূর্ত কি ভাবলো। তারপর ওষুধের বাক্স ঘেঁটে একটা ট্যাবলেট বের করে গিলিয়ে দিলো ওকে। আমাদের সমস্ত প্ল্যান পাল্টে গেল।
    - পিকুকে কেউ হাইলি ইনটক্সিকেট করেছে। আর কয়েকঘন্টা দেরী হলে বাড়াবাড়ি হতে পারতো।

    আমাদের আর কিছু করার ছিলো না। পিকুর পকেট হাতড়ে একটা চিরকূট বেরোলো। সেখানে সেই দুটো গ্রীক লেটার, আর একটা শব্দ, WASIM; তার পাশে আবার একটা কিউব আঁকা--- অনেকটা পাজলের মত ছককাটা কিউব।

    মণিদা দেখলাম কাগজটা হাতে নিয়েই বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠলো। অবশ্য কঠিন ধাঁধা দেখলে ও চিরকালই খুশি হয়, তাই সেটা নিয়ে মাথা ঘামালাম না।
    সেই রাতে আর বাড়ি ফেরা হলো না। মণিদাই বারণ করলো। একটা জিনিস পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিলো। আমাদের গতিবিধি খুব কাছ থেকে নজর রাখছে কেউ। দিনের বেলাতেই যে পিকুর এই হাল করেছে, রাতের অন্ধকারে সে আমাকে অনায়াসে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দিতে পারবে।
    সিদ্ধান্তটা খুব দামী ছিলো।পরে জেনেছিলাম, সেইরাতে বেরোলে আর বাড়ি ফিরতে হত না।
  • Tim | 71.62.121.158 | ১৬ আগস্ট ২০০৯ ০৬:৪৩415977
  • ১৩

    পরদিন সকালে পিকুর গল্পটা বিস্তারিত শোনা গেল। মণিদার বাড়ি থেকে ফিরেই ও নেট ঘেঁটে সমস্ত তথ্য জোগাড় করে নেয়। যতটা সময় লাগার কথা তার থেকে আগেই কাজটা সেরে সমস্ত ডকুমেন্টের প্রিন্ট নিয়ে যখন ও বাড়ি থেকে বেরোয় তখনও দুপুর। বেরিয়ে একে একে দুজন ভদ্রলোকের সাথে দেখা করে সন্ধে নাগাদ এন্টালির কাছে পৌঁছয়। সেখানে একটা ঘড়ি সারাই এর দোকানের সামনে ওর সাঁড়ানোর কথা ছিলো। জায়গাটা এমনিতে বেশ জমজমাট, তায় আপিসফেরতা মানুষের ভিড়, তাই পিকু একট সরে একটা বাড়ির সামনের একফালি রোয়াকে বসেছিলো। বেশ অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পরে ভদ্রলোক আসেন। দেরী হওয়ার জন্য ক্ষমা চেয়ে পিকুকে চা অফার করেন। আসেপাশে বহুক্ষণ থেকেই কিছু ফ্লাইং চা-ওয়ালা ঘুরঘুর করছিলো, তাদের একজনের থেকেই চা কিনে আনেন ঐ ভদ্রলোক। চা খেয়ে ওঁরা আবার সেই রোয়াকটায় বসে কথা শুরু করে। কিন্তু পিকুর মাথায় একটা অস্বস্তি শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। এরপর আর কিছু মনে নেই ওর।

    গত প্রায় তিনদিন ধরে আমার মনে অসংখ্য প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। পিকুর গল্প শেষ হতেই মণিদাকে চেপে ধরলাম। প্রায় বিদ্রোহী মোডে।
    -আমার অনেক প্রশ্ন আছে। তার মধ্যে কয়েকটা না জানলেই নয়।
    -বেশ। শুনি।
    - পিকু কাদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো?
    - ওঁরা সুশান্ত আর অন্বেষা'র কলিগ। উঝতেই পারছিস সবাই না। বাছাবাছা কয়েকজন।
    - ওঁরা কি সন্দেহভাজন?
    - এখনও নয়।
    -রিলিজিয়াস কোর্সের ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি কেন?
    - সেটা এখনও বলার সময় আসেনি। এখনও অনুমানের স্তরে আছে।
    - মি: রায়কে কি সন্দেহ করার কারণ আছে? কাল কিন্তু উনি সারাদিন বাড়িতেই ছিলেন।
    - পিকুর ওপর অ্যাটাকটা তো উনি অন্য লোক লাগিয়েও করে থাকতে পারেন। আর সেটা করলেই ওঁর ডিফেন্সটা বেশ স্ট্রং হয়, তাই না?
    -আর ড: ব্যানার্জি?
    - ড: ব্যানার্জি নিজেই খুন করবেন, আবার নিজেই এসে নাম লেখা ভিজিটিং কার্ডের উল্টোপিঠে হুমকি দিয়ে যাবেন, এটা ঠিক মানতে অসুবিধে হচ্ছে। আর কিছু?
    - আলফা আর গামা......
    আমার কথাটা শেষ হলোনা, প্রচন্ড জোরে ডোরবেলটা বেজে উঠলো। দরজা খুলে দেখি মি: সোম।
    - সরি মণিবাবু। খবর দেওয়ার সময় ছিলোনা।
    - কোনো খারাপ খবর ?
    - ইয়েস স্যার।
    মণিদাকে চিন্তিত দেখালো ।
    - ইউ মিন অ্যানাদার ভিক্টিম?
    - বেলেঘাটা। আজ সকালের দিকে। ব্রুটালি মার্ডার্ড। আপনাকে নিয়ে যেতে এলাম। অসুবিধে নেই তো?
    দশ মিনিটের মধ্যে আমরা রওনা দিলাম বেলেঘাটার দিকে।
    **********************
    তিন নম্বর খুন। বেলেঘাটার একটা তিনতলা বাড়ির একতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন অর্কপ্রভ রক্ষিত। বয়স ঊনত্রিশ। সিঙ্গল। আজ বেলার দিকে বাড়িওয়ালা কি একটা কাজে ডাকতে এসে সাড়া না পেয়ে ঘাবড়ে যান। সদর দরজা খোলাই ছিলো। বাথটাবে অর্কপ্রভর লাশ পাওয়া যায়। আমরা গিয়ে দেখলাম, মৃতদেহ জলে ভাসছে, গায়ে একটা সুতো পর্যন্ত নেই। বাথরুমের দেওয়ালে লালকালিতে যথারীতি কিছু গ্রীক অক্ষর লেখা বড়ো হরফে। আমরা যেতেই একজন সাব ইন্সপেক্টর এসে মি: সোমের হাতে একটা খাম দিয়ে গেল। খুলে দেখা গেল মৃতদেহের ফোটোগ্রাফ। গোটা আটেক ছবি ছিলো। তার মধ্যে একটা মণিদা আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিলো। অর্কপ্রভর ঘাড়ের ফোটো, সেখানে খুনি সিগনেচার রেখে গেছে। ছবিটা দেখেই বুকটা ধ্বক করে উঠলো। পিকুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম একেবারে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। অর্কপ্রভ'র ঘাড়ে খুব যত্ন করে আঁকা একটা আরোগ্য চিহ্ন, যা আমরা আগে দেখেছি। আর তার নিচে ছোট্ট করে লেখা যে শব্দটা তাও আমরা সদ্য চিনেছি.....WASIM!
  • tagada | 121.241.218.132 | ২১ আগস্ট ২০০৯ ১৮:৫৫415978
  • মণি দাকেও কি ফুলু তে ধরল?
  • Tim | 198.82.21.214 | ২২ আগস্ট ২০০৯ ০৩:৪৭415979
  • মণিদাকে না, আমার কম্পুটারে ধরেছেলো। এখন আর নেই। কম্পুটার না, ফুলু। এবার লেখা হবে। :)
  • ranjan roy | 122.168.218.43 | ২৩ আগস্ট ২০০৯ ২৩:৩৯415980
  • হাট্টিমাটিম টিম,
    তোমার লেখা পাড়ছে ডিম।
    ডিমে দিচ্ছ তা',
    কই? লেখা ফুটছে না!

    মণিদারও ফ্লু,
    তাই হারিয়ে ফেলছে ক্লু।
    লেখা ছাপবে কবে?
    যখন আরেকটা খুন হবে?

    খিস্তি দিতে যাবো,
    তখন মনেপড়লো- মাগো,
    একা টিমকে কেন কোশি,
    আমিও তো দোষী।
    যখন আমার এলো পালা,
    আমি শালার শালা,
    খুব করেছি নখরা,
    হল সবাই ""বকরা''।

    তাই টিমকে করি মাপ,
    আর খাপ খুলোনা বাপ!
  • Tim | 71.62.121.158 | ২৪ আগস্ট ২০০৯ ০৪:৩৯415981
  • মাইরি বলছি, নেক্সটবার (যদি সেরম কিছু থাকে) সবটা অফলাইন লিখে পোস্ট করবো। ;-)
  • Tim | 71.62.121.158 | ২৪ আগস্ট ২০০৯ ০৫:৪২415982
  • ১৪

    তিননম্বর খুনটা হওয়ার পরে আমাদের বিস্তর ঝামেলায় পড়তে হলো। মি: সোম ওপরওয়ালার কাছে বেমক্কা ঝাড় খেলেন। খবরের কাগজে মণিদা এবং পুলিশ ডিপার্টমেন্টের নামে যাচ্ছেতাই লেখা হলো। মি: সোম এমনিতে বেশ ঠান্ডামাথার লোক, কিন্তু এরপরে আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। পুলিশ বেশ কিছু লোককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে হেনস্থা করলো। বলা বাহুল্য, এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিলো না। আমাদের অবস্থা তো কহতব্য নয়। আমরা যে মণিদার কোনো কাজেই আসছি না সেটা ভেবে খুবই খারাপ লাগছিলো।

    এতকিছুর মধ্যেও কিন্তু মণিদা খুব শান্ত ছিলো। রোজই সকালের দিকে বেরিয়ে পড়তো। একাই, কারণ মি: সোম ক্রমাগত নিজের জালেই জড়িয়ে পড়ছিলেন। আমরা যেতে সাহস পেতাম না, কিজানি মণিদার হয়ত সুবিধের থেকে অসুবিধেই হবে আমরা থাকলে। এইভাবে তিনদিন কাটলো। আমরা তখন আবার অফিস যেতে শুরু করেছি। চতুর্থ দিন, সেটা ছিলো শনিবার- বাড়ি ফিরেই মণিদার ফোন পেলাম। পরেরদিন সকালে বেরোতে হবে। মণিদা ফোনে একটা ঠিকানা দিলো। এবং আরো কিছু নির্দেশ দিয়ে বললো ভালো করে ঘুমিয়ে নিতে। কথা শেষ হওয়ামাত্রই ফোনটা কেটে দিলো মণিদা। অনেক প্রশ্ন জমছিলো, কিছুই জিজ্ঞাসা করা হলো না। আমি ফোনটা রাখামাত্রই সেটা আবার বাজতে শুরু করলো। পিকুর ফোন। জানতে পারলাম ওকেও একই কথা বলে ফোন রেখে দিয়েছে মণিদা।

    পরেরদিন যথাসময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি নিলাম। মণিদা যে ঠিকানাটা দিয়েছিলো সেটা শহরতলির দিকে। সেদিন সকাল থেকেই খুব গুমোট। কড়া রোদে চোখ ঝলসে যাচ্ছে, আকাশে একবিন্দু মেঘের দেখা নেই। প্রায় আধঘন্টা চলার পর গাড়িটা প্রকান্ড একটা ওভারব্রিজ পেরিয়ে ডাইনে বাঁক নিয়ে মিনিট তিনেক চলেই একটা সরু গলিতে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে পড়লো। বুঝলাম এখান থেকে পদব্রজেই বাকিটা যেতে হবে। খুবই সরু গলি , গাড়িটা না ঢুকে ভালোই করেছে মনে হলো। উপাশে দোতলা-তিনতলা বাড়িগুলো গায়ে গায়ে লেগে একটা নিশ্ছিদ্র দেওয়াল রচনা করেছে। দিনের বেলাতেও সেখানে আলোর যাতায়াত খুব কম। আমার বেশ ভালোই লাগছিলো। গরমে ছটফট করতে থাকা বিশ্বচরাচরের মধ্যে একটুকরো মরুদ্যান।

    বেশ খানিকটা গিয়ে একটা বেশ পুরোনোমত বাড়ির গায়ে আমার উদ্দিষ্ট ঠিকানাটা দেখতে পেলাম। খুবই খারাপ অবস্থা বাড়িটার, নেমপ্লেট প্রায় আবছা হয়ে গেছে, একেকটা অংশ শ্যাওলায় সবুজ হয়ে আছে- ছাদের একটা রেলিং ভাঙ্গা, সব মিলিয়ে বেশ একটা ছন্নছাড়া চেহারা। আমার কাজ ছিলো বাড়ির বাইরে বসে চারদিক লক্ষ রাখা, দুপুর বারোটা অবধি। তারপর কি করতে হবে মণিদা কিছু বলেনি --- আমি ভেবে রেখেছি বাড়ি ফিরে মণিদাকে ফোন করবো। পিকুরও একই কাজ করার কথা কিন্তু তাকে কোথাও দেখতে পেলাম না। ভুলে গেছে কিনা ভাবতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়লো পিকুকে খুনী সাবধান করেছিলো চিরকুট দিয়ে। ওর কোনো বিপদ হলো না তো? মণিদা সবদিক সামলে কেসটা সলভ করতে পারবে তো? বাড়িটার দরজার উল্টোদিকের একটা ইঁট বের করা রোয়াকে বসে এইসব ভাবছিলাম। এইভাবে একই জায়গায় বসে বসে আবোলতাবোল ভেবে একসময় প্রায় ঘুমিয়ে পড়েছি, এমন সময় একটা বাইকের আওয়াজ শোনা গেল গলির মুখে। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার কি লুকিয়ে নজর রাখার কথা? সাতপাঁচ ভেবে শেষে বাড়ির মরচে পড়া দরজাটা ঠেলে ঢুকে গেলাম। ঢুকেই একফালি কংক্রিটে বাঁধানো পথ। সেটা একেবারে বাড়ির দরজায় শেষ হয়েছে। ওদিকে তখন বাইকের আওয়াজটা এগিয়ে আসছে খুব দ্রুত। ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে সেই দরজায় ধাক্কা দিতে যেতেই সেটা হাট করে খুলে গেল। কোনমতে ঢুকে দরজাটা আবার ভেজিয়ে দিয়েই বুঝলাম ভুল হয়ে গেছে। এত নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে অনেকদিন থাকিনি। চোখের সামনে হাত এনেও দেখা যাচ্ছিলো না।
    প্রায় মিনিটপাঁচেক কাটার পরে চোখটা সয়ে এলো। দেখলাম আমার সোজাসুজি একতা সিঁড়ি উঠে গেছে। সিঁড়ির ডানদিকে একটা দরজা, সেটা তালাবন্ধ। বাঁদিকে কোনাকুনি একটা দুটো কাঠের বাক্স রাখা। কোনক্রমে সেই বাক্সর আড়ালে গিয়ে বসতে না বসতেই দরজাটা খুলে একরাশ আলো এনে দিলো। আমি দুটো বাক্সর আড়ালে বসে ছিলাম। তার মধ্যে একটা একটু তেরছাভাবে রাখা বলে দেওয়ালের সাথে একটু ফাঁক তৈরী করেছিলো। সেখানে দিয়ে দেখা যাচ্ছিলো একজোড়া কালো জুতোপরা পা, আর ছাইরঙের প্যান্টের খানিকটা। আগন্তুক বাড়িতে ঢুকেই থমকে দাঁড়ালো, তারপর দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে একটা সেলফোন বের করে সেই আলোয় সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেল। আমার মনে হলো সে আমাকে গলির মুখ থেকে দেখতে পেয়েছে, তাই তক্ষুনি বেরোলাম না। হিসেবমত আমার তখন বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিত। কিন্তু নাটকের আরো খানিকটা না দেখে কিছুতেই বেরোবো না ঠিক করলাম।
  • Tim | 71.62.121.158 | ২৪ আগস্ট ২০০৯ ০৮:০৭415984
  • ১৫

    সময় বড়ো অদ্ভুৎ জিনিস। ঘটনাপ্রবাহ, মনের গতিপ্রকৃতি, আবহাওয়া বা অন্য নানা অনুষঙ্গ মিলে তার রূপ বদলায়। কাঠের বাক্সের আড়ালে বসে আমি ঠায় হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছি, মিনিটের কাঁটাও যেন থেমে গিয়ে আমার দিকে চেয়ে রইলো। ঠিক করেছিলাম দশ মিনিটের মধ্যে কোনো সাড়াশব্দ না পেলে এগিয়ে দেখবো ওপরে কি চলছে, কিন্তু সময়ের যেন হেলদোল নেই।
    তবে সব অপেক্ষারই শেষ আছে। একসময় দশমিনিটও পূর্ণ হলো। কান পেতে ভালো করে শোনার চেষ্টা করলাম কোনো শব্দ পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু সত্যিই কোনো শব্দ পাওয়া গেল না। চারদিকে পিনপতন স্তব্ধতা।

    সিঁড়ি দিয়ে সন্তর্পণে উঠে দেখি একটা বিশাল হলঘরের মত, তার একদিকে গ্রিল দেওয়া দুটো জানলা, অন্যদিকে পরপর খানতিনেক দরজা। তার মধ্যে দুটো বন্ধ, অন্যটা আধখোলা। যেন কেউ বন্ধ করতে ভুলে গেছে। পা টিপে টিপে সেই ঘরের কাছে যেতেই একটা আবছা আওয়াজ শুনতে পাওয়া গেল। অস্ফুট গোঙানির মত আওয়াজ, কিন্তু খুব অস্পষ্ট। কান খাড়া করে না শুনলে পাওয়া মুশকিল। আওয়াজটা কেন জানি চেনা লাগছিলো। দরজাটা দিয়ে উঁকি মেরে দেখলাম- ভেতরে কোনো আলো নেই বলে প্রথমটা কিছুই ঠাহর হলো না। তারপর চোখ সয়ে এলে দেখতে পেলাম। একটা প্রায় খালি ঘর। শুধু একপাশে একটা স্টিলের আলমারি রাখা আছে। এরকম একটা খালি ঘর থেকে অস্ফুট গোঙানির শব্দ আসছে কেন ভেবে পেলাম না। ততক্ষণে আমার মাথা গুলিয়ে যেতে শুরু করেছে। খুব তাড়াতাড়ি ভাবতে হচ্ছিলো। অন্যদুটো ঘরের বাইরে থেকে কান পেতে দেখলাম- সেগুলো থেকে কোনো শব্দ আসছে না। যে লোকটি একটু আগে এখানে এলো, সেই বা কোথায় গেল ভেবে পেলাম না। তখন আবার প্রথম ঘরটার মধ্যে ঢুকলাম। ঢুকে একটু হাঁটাচলা করতেই গোঙানির শব্দটা বেড়ে গেল। পরিষ্কার বুঝতে পারলাম একটা বিশেষ দিক থেকে আসছে সেটা। কেমন যেন সন্দেহ হলো, আওয়াজটা আলমারির দিক থেকে আসছে। পায়ে পায়ে এগিয়ে আলমারিটার গায়ে একটা টোকা দিতেই ভেতরে কি যেন একটা ধড়মড় করে উঠলো। আর গোঙানিটা স্পষ্ট শোনা যেতে লাগলো। স্পষ্ট বোঝা গেল ভেতরে কাউকে আটকে রাখা হয়েছে। আমার মাথা তখন একেবারেই কাজ করছে না। ভাবছি বেরিয়ে পাবলিক বুথ থেকে মণিদাকে ফোন করবো কিনা, এমন সময় সিঁড়িতে অনেকগুলো পায়ের আওয়াজ শোনা গেল, আর আমাকে যুগপৎ অবাক আর আনন্দিত করে হাজির হলো মণিদ , মি: সোম আর জনাতিনেক কনস্টেবল। মি: সোম পকেট থেকে একটা চাবি বের করে আলমারিটা খুলতেই পিছমোড়া করে বাঁধা, রক্তাপ্লুত পিকুর শরীরটা আছড়ে পড়লো আমাদের ওপর।

    পিকুকে অ্যাম্বুলেন্স মারফত হাসপাতালে পাঠিয়ে আমরা যখন সবাই মিলে মণিদার বাড়ি রওনা হলাম তখন বিকেল হয়ে গেছে। প্রায়ান্ধকার সেই বাড়ি আর সরু কানাগলিটা ছেড়ে বেরোতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এই রাজপথের ভিড়, গাড়ির আওয়াজ আর ধুলোধোঁয়া ভরা সন্ধেটাকে বড্ড ভালো লাগলো কেন যেন।

    মণিদাকে বেশি কিছু বলতে হলোনা। মি: সোমের গাড়িতে ফিরতে ফিরতেই জেনে গেলাম ঠিক কি হয়েছিলো। বাড়িটার মাত্র একটা দিনই আমি দেখেছি। অন্যদিকে আরো একটা দরজা আছে, যেটা দিয়ে একটা ঘোরানো সিঁড়ি বেয়ে সোজা ছাদে উঠে যাওয়া যায়। পিকু সেই প্রবেশপথের কাছে কোথাও বসে আমারই মত গোয়েন্দাগিরি করছিলো।

    ছাইরঙা প্যান্ট আর কালোজুতো পরা আগন্তুক আমাকে সত্যিই দেখতে পেয়েছিলো, কিন্তু ভেতরে ঢুকে কাউকে না পেয়ে সে খিড়কিদরজার দিকে যায় এবং পিকুকে আবিষ্কার করে। পিকুকে মাথায় ভারি কিছু দিয়ে মারা হয়েছে, তারপর তাকে বেঁধে আলমারিতে রেখে দেওয়া হয়। মণিদা বললো অন্তত দুজন লোক লেগেছিলো এই কাজটা করতে। একজন তক্ষুনি বেরিয়ে যায়, অন্যজন এখানেই ছিলো কিছুক্ষণ আগে অবধিও। পরে তাকে সেলফোন মারফৎ কেউ ইনফর্ম করায় সেও পালানোর চেষ্টা করে।
    আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মণিদাকে সেটা বলায় হাসলো ও।
    - তোদের আজকে অনেক ধকল গেছে। সমস্তটা এখন শুনতে চাসনা। আর আমাদের কাজ এখনও পুরো শেষ হয়নি। আপাতত জেনে রাখ, পালের গোদা এসকেপ করেছে, তবে বেশিদিনের জন্য না। খুব ঘন করে জাল পাতা আছে, আজ বা কাল সে ধরা পড়বেই। তার চ্যালাকেই তুই দেখেছিস, ছাইরঙা প্যান্ট আর কালো শ্যু পরে ঢুকতে।
    -কতজন লোক আছে দলে?
    - মনে হয় এই দুজনই। কালকের মধ্যেই বাকি কাজটা মিটে গেলে রাতের দিকে তোদের নিয়ে আমি আর সোম বসবো। তখন গল্পটা পুরো শুনে নিস। আর এমনিতেও এখন তোকে পৌঁছে দিয়ে আমাদের হাসপাতালে যেতে হবে। অনেক কাজ।
    - পিকুর চোটটা.....
    - ক্রিটিকাল কিছু না। মাথা ফাটলে বেশ খানিকটা ব্লিডিং হয়ই। চিন্তা করিস না। বাড়ি গিয়ে ভালো করে ঘুমো।

    আমার অবশ্য সত্যিই বেশ ক্লান্ত লাগছিলো। কোনমতে বাড়ি ফিরে সারাদিনের ঘটনাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
  • aishik | 122.166.22.73 | ২৫ আগস্ট ২০০৯ ১৫:০৭415985
  • ও টিম্‌দা, তাপ্পর কি হোলো?
  • tagada | 121.241.218.132 | ২৬ আগস্ট ২০০৯ ০৯:৩০415986
  • ভোর হল দোর খোল টিম বাবু ওঠো রে
  • Tim | 71.62.121.158 | ২৬ আগস্ট ২০০৯ ১১:১৮415987
  • এই সপ্তাহান্তে শেষ হবে। শিওর। :)
  • Blank | 59.93.201.24 | ২৭ আগস্ট ২০০৯ ০১:০৭415988
  • টিমকে অল্প আঁচে সেঁকে বারবিকিউ সস মাখানো যায় কিনা ভাবছি
  • Tim | 198.82.26.75 | ২৭ আগস্ট ২০০৯ ০১:১০415989
  • ল্যাংক বড়ো হয়ে হানিব্‌ল লেক্টর হবে এ আমি পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
  • Tim | 198.82.26.75 | ২৭ আগস্ট ২০০৯ ০১:১১415990
  • হেহে ব্ল্যাংক। :)
  • Shuchismita | 98.228.118.141 | ৩০ আগস্ট ২০০৯ ০২:১০415991
  • বলি এটা কি শেষ হবে না? খালি কাব্যি করলেই চলবে?
  • Tim | 71.62.121.158 | ৩০ আগস্ট ২০০৯ ০৮:৪৭415992
  • ১৬

    পরের দিন খুনী ধরা পড়বে, এইরকম একটা আশা ছিলো আমার। মণিদার হিসেব যে নিখুঁত হয় সেটা আগে অনেকবার দেখেছি। এবারেও ঘটনাপ্রবাহ মোটামুটি সেদিকেই এগোচ্ছিলো। কিন্তু তা হলো না। বরং আরো দুদিন বেজায় দৌড়োদৌড়ি করে একরাশ ঝামেলা পেরিয়ে তিনদিনের দিন কাজ মিটলো। কিভাবে কি ঘটেছিলো সেকথায় পরে আসছি। আপাতত বলে রাখি পিকু আহত হওয়ার আগেই একাধিক হত্যাকান্ডের খলনায়কের পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়, শুধু কিছু ছোটোখাটো প্রমাণ দরকার ছিলো, যাতে জালটা মজবুত হয়।

    তাই আমাদের ফাঁকি দিয়ে মূল কারিগর যখন চম্পট দিলো তখনও মণিদা বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি। তার পেছনে একাধিক গোয়েন্দা ছিনে জোঁকের মত লেগে থাকবে, এয়ারপোর্ট বা রেলস্টেশনে তার আধ হাতের মধ্যেই ঘোরাফেরা করবে অন্তত পাঁচজনের সশস্ত্র একটা দল, অবশ্যই ছদ্মবেশে। এত কান্ড করার উদ্দেশ্য অনেকগুলো, তার একটা, অবশ্যই অপরাধীর মূল ঘাঁটিতে পৌঁছনো। পুলিশ অনেক খোঁজ করেও সেটা জানতে পারেনি।

    হিসেবটা ঠিকই ছিলো। শহরের পথে ঘন্টাকয়েক কাটিয়ে পরেরদিন সকালে শহর ছাড়ে সে। সকাল সাড়ে নটার ফ্লাইট তাকে নিয়ে যায় নীল সমুদ্রঘেরা এক শহরে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে একটা চমৎকার কাজ করে সে। আশৈশব চেনাজানা এই শহরের গলিঘুঁজিতে একদিনের জন্য হারিয়ে যায় সেই লোক, যাকে এক মুহূর্তের জন্যও চোখের আড়াল করেনি পুলিশ। তবে সেটা একদিনের জন্যই, তার পরেই আবার তাকে খুঁজে নেয় গোয়েন্দারা। নিজের বাড়িতেই ফিরে যায় সে, যেমনটা আন্দাজ করা হয়েছিলো।

    তদন্তের শেষপর্যায়ের কাজের জন্য গোয়া যেতে হতে পারে, এটা মণিদাই বলেছিলো। আমিও চাইলে যেতে পারি, এটা শুনেই আর দ্বিধা করিনি। চাকরি থাক বা না থাক, এরকম একটা তদন্ত শেষ হবে, তাও আবার অতদূরে, আর আমরা কলকাতায় বসে ধুলো খাবো, এটা কি হতে দেওয়া যায়? আমরা মানে আমি আর পিকু। পিকু এইট্টি পার্সেন্ট ফিট। মণিদার আপত্তি সঙ্কেÄও, অতএব আমরা দুজনেই জুড়ে গেলাম স্পেশাল ইনভেস্টিগেটিং টিমের সাথে।

    দেশের বিখ্যাত এই সমুদ্রশহরে সেই আমার প্রথম যাওয়া। বিস্তারিত বিবরণ নিÖপ্রয়োজন, এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে, এতদিন ধরে নাজেহাল হওয়ার পরে আমাদের মধ্যে যে মনমরা ভাবটা জমে উঠছিলো, সমুদ্রের টাটকা বাতাস আর ঢেউ ভাঙার শব্দে সেটা একপলকে উধাও হলো। অবশ্য সময় বেশি ছিলো না। পৌঁছে মাত্র মিনিট পনেরো সময় নিলাম আমরা তৈরী হতে। সাতজনের দলটাকে দুভাগে ভেঙে দেওয়া হয়েছিলো। আমি, পিকু, মণিদা আর মি: সোম ছিলাম সমুদ্রের কাছে একটা হোটেলে। যেন চারজনের একটা দল, ঘুরতে এসেছি। অন্য তিনজন ছিলো একটু ভেতরের দিকে। আমরা একটা সুমো বোঝাই করে ছুটছিলাম শহরের জনবহূল অংশের দিকে। পথেই অপেক্ষমান তিনজনকে তুলে নেওয়া হলো।

    শহর ছাড়িয়ে এগোলো আমাদের গাড়ি। প্রায় ঘন্টা দেড়েক চলে যেখানে এসে থামলাম সেটা একটা বিশাল ঘেরা জমি। পুরোটাই উঁচু পাঁচিলে ঘেরা। বাঁধানো রাস্তা চলে গেছে জমিটার মাঝ বরাবর। রাস্তার শেষে মাথা তুলে আছে একটা মানানসই বাড়ি, অবশ্য বাড়ি না বলে তাকে অট্টালিকা বললেই ভালো হয়। গাড়িটা এক মুহূর্ত গেটের কাছে থমকে দাঁড়াতেই আমাদের অবাক করে গেটটা খুলে যেতে শুরু করলো। গেট পেরিয়ে যখন গাড়িটা প্রায় ভেতরে ঢুকে পড়েছে, তখন দুটো জিনিস খেয়াল করলাম। একজন রোগা ক্ষয়াটে চেহারার লোক অতি কষ্টে টেনে গেটটা খুলছিলো, ঘন কালো গায়ের রং, একটা কালচে সবুজ রঙের ফতুয়া পরনে। অন্ধকারে প্রায় দেখাই যাচ্ছিলোনা যে তার ডানপাটা কাঠের।
    অন্য জিনিসটা হলো, একটা নেমপ্লেট। সেখানে সোনালী অক্ষরে লেখা একটাই নাম : ড: আলবার্তো ডি সুজা।
  • Tim | 71.62.121.158 | ৩০ আগস্ট ২০০৯ ০৯:২৩415993
  • ১৭

    ড: ডিসুজা কে পাওয়া গেল দোতলার একটা ঘরে। পরম নিশ্চিন্তে একটা বাইবেল খুলে বসেছিলেন। বয়স পঞ্চাশের কোঠায়, যদিও খুবই শক্ত চেহারা। সাদা শার্ট আর ক্রিম ট্রাউজার পরনে, চোখে রিমলেস চশমা। চুল বেশিরভাগ পাকা, অথচ শরীরে বার্ধক্যের অন্য চিহ্নগুলো বড়ো ফিকে। চট করে না দেখলে বোঝা যায়না।

    মি: সোম বেশি কথা না বলে সোজা ওয়ারেন্ট বের করলেন। ডিসুজার মুখেচোখে তখনও অসীম কৌতুক। এরপর উনি কিছু একটা বলে উঠতেই ঘরটা গমগম করে উঠলো। অমন গম্ভীর কন্ঠস্বর আগে কমই শুনেছি। এত পরিষ্কার বাংলা বলতেও শুনিনি অনেকদিন।

    - মি: সোম, আপনারা অনেক দূর থেকে এসেছেন। একটু চা দিতে বলি? আমার এখন একটা ওষুধ খাওয়ার কথা। তার আগে আমি একটু চা খাই।
    মি: সোমের বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিলোনা, কিন্তু মণিদা সাগ্রহে সমর্থন করলো। অতএব আমরা চায়ের টেবিল ঘিরে বসলাম। গুনে দেখলাম, সব মিলিয়ে আমরা নজন বসেছি ঐ ঘরে। চা খেতে খেতে কথা এগোতে লাগলো।

    - মি: সেন, কাজ শেষ হলো?
    - এখনও পুরোটা তো শেষ হয়নি মি: ডিসুজা। তবে শেষ হতে বাকিও বেশি নেই।
    - আপনি নিশ্চিত?
    - বেশ তো। আপনিই বলুন কিছু বাকি আছে কিনা।
    উত্তরে ডিসুজা কিছু বললেন না। সোজাসুজি তাকালেন পিকুর দিকে।
    - বেবি, তোমার চোট এখন কেমন আছে?
    পিকু অন্যদিকে তাকালো। একটু সময় নিয়ে বললো ""ভালো""।
    - মি: সেন, বেবিকে বলেছেন সেদিন কেন ওকে ওখানে রাখা হয়েছিলো?
    মণিদার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোয়াল শক্ত। ডিসুজার দিকে সেও স্থির দৃষ্টিতে তাকালো এবার।
    - আপনিই বলে দিন না।
    ডিসুজা বাচ্চা ছেলের মত হাসলেন খানিকক্ষণ।
    - সে তো বলবোই। এমন একটা মজার জিনিস বেবিরা না শুনলে কষ্ট পাবে। তোমরা দুজনেই শুনে রাখো হে ছোকরা, তোমাদের গডফাদার সেনবাবু তোমাদের টোপ হিসাবে রেখেছিলো ঐ বাড়িতে। নট ফর ইনভেস্টিগেটিং, বুঝলে খোকারা। তোমরা দুজন মরে গিয়েও যদি আমি ধরা পড়তাম, তাতেও সেনের কোনো ক্ষতি হতোনা। কি মি: সেন, ঠিক তো?
    ঘরে পিনপতন স্তব্ধতা। মণিদার মাথা নিচু। আমি তখনও ভাবছি কি বলবো, বা আদৌ কিছু বলবো কিনা, এমন সময় পিকুর গলা শোনা গেল।
    -ড: ডিসুজা, আপনার মত আধখানা ক্রিমিনালকে ধরার জন্য আমার মত কয়েকজন লোক মারা গেলেও কোনো ক্ষতি নেই। আমার মত পাঁচজন বেঁচে থেকেও সমাজের ততটা উপকার করতে পারবে না, যতটা ক্ষতি আপনার মত একজন করতে পারে।
    পিকুর উত্তরে ডিসুজা রেগে যাবার বদলে খুশি হয়ে উঠলেন। কিছু বললেন না, তবে হাসলেন। স্মিত হাসি। তাঁর বিচক্ষণ সৌম্য চেহারায় সেই হাসি বড় মানানসই। এমন একটা মুখোশের আড়ালে একজন জঘন্য হত্যাকারী লুকিয়ে আছে ভাবতে কষ্ট হয়।

    ডিসুজার বায়নাক্কার তোয়াক্কা না করেই এবার তাকে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তোলা হলো। আগে থেকেই খবর দেওয়া ছিলো লোকাল থানায়। একটা মজবুত ভ্যানে ডিসুজাকে তুলে নিয়ে যাওয়া মাত্রই শেষ হলো বহুদিন ধরে চলা এক আতঙ্কের। হাতে রইলো মণিদার প্রতিশ্রুতি, কলকাতা ফেরার পথেই সমস্ত গল্পটা শোনানোর।
  • Tim | 71.62.121.158 | ৩১ আগস্ট ২০০৯ ১২:১৩415995
  • ১৮

    স্থান, শহরতলির সেই বাড়ি, যেখানে পিকুকে আহত অবস্থায় আলমারির মধ্যে পাওয়া যায়। সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা। আমরা মোট সাতজন আছি এই ঘরে। মণিদা, পিকু, আমি আর মি: সোম বাদে আছেন ড: ডিসুজা, তার সাগরেদ আর ড: ব্যানার্জি। ডিসুজার সাগরেদের নাম জানা গেছে, তপন সরকার। ঘরের বাইরে সশস্ত্র পুলিশ আছে, বাইরে ভ্যানে আরো কয়েকজন -- সুতরাং কোনোরকম গোলমাল হবেনা বলেই মনে হয়। আনন্দমিশ্রিত উত্তেজনায় আমাদের বুক কাঁপছে, আরেকটু পরেই জানা যাবে এই অদ্ভুৎ পর্যাবৃত্ত খুনগুলোর কারণ। কে করেছে আমরা জেনেই গেছি, তাতে আগ্রহ কমে তো নি, বরং বেড়ে গেছে। ডিসুজার মত একজন সৌম্যদর্শন মানুষ কেনই বা এমনটা করলেন সেটা জানার আগ্রহ। আরো অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আজ সন্ধ্যায়।

    মণিদা ঘরের এক কোনে বসে একমনে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছিলো। আজ দুপুর থেকেই দেখছি মাঝে মাঝেই অন্যমনস্ক ও। আর কিছুক্ষণ পরেই ওকে অনেক বকতে হবে, অথচ মনে হচ্ছে যেন ওর তেমন আগ্রহ নেই। আমরা আপাতত মি: রায়ের অপেক্ষায়। উনি এলে আলোচনা শুরু হবে।

    আরো আধঘন্টা পার করে মি: রায় এলেন। আজ তাঁর চেহারা একেবারেই আলাদা। সেই হাসিখুশি মানুষটা আর সেরকম নেই, একটু কুণ্ঠিতভাবে এসে বসলেন। একবার হাসার চেষ্টা করলেন, পারলেন না। আমি ঘরের সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। তপন আর ডিসুজা নির্বিকার, চোখাচোখি হতে ডিসুজা তো হাসলেনও। ড: ব্যানার্জি একবার অস্ফুটে কি একটা বলে ঘাড় নাড়লেন। মি: সোমের দিকে চেয়ে একটা ইশারা করে মণিদা কথা শুরু করলো।

    - আপনারা সবাই জানেন আমরা এখানে কেন জড়ো হয়েছি। গত দুমাসের মধ্যে কলকাতা শহর ও শহরতলি অঞ্চলে তিনটি নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটেছে। খানিকটা কাকতালীয়ভাবেই জড়িয়ে পড়ে আমি কেসটা হাতে নিই ও মি: সোমের সাথে কাজ শুরু করি। তদন্ত যতই এগোতে থাকে ততই আমরা নি:সন্দেহ হতে থাকি যে এগুলো সিগনেচার ক্রাইম-- কেউ একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে এই কাজ করছে। এমনকি আমাদের এরকমও মনে হয় যে অপরাধী নিজেকে একেবারে লুকিয়ে ফেলতে চায়না, বরং কোনো না কোনোভাবে মেসেজ রেখে সে তার উদ্দেশ্য কমিউনিকেট করতে চাইছে। তিন নম্বর খুনটার সময় স্পষ্ট বোঝাই যায় যে এটা একটা চ্যালেঞ্জের মত হয়ে উঠেছে তার কাছে। খুনগুলো করার সময় সে এতই নিখুঁতভাবে প্রমাণ লোপাট করেছে যে আমরা অকুস্থল তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কিছু পাইনি। পরষ্পরের সাথে সম্পর্করহিত তিনটে খুন, যেগুলোর মোটিভ অত্যন্ত রহস্যময়, আর তার থেকেও রহস্যময় অপরাধীর এই আচরণ, আমাদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। আমরা অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মত বিভিন্নরকম কম্বিনেশন ধরে এগোতে থাকি। কখনও সামান্য আলোর দিশা দেখা যায়, কখনও বা মনে হয় এই লোককে ধরা অসম্ভব। যে কোনোসময় আরেকটা খুনের খবর আসতে পারে, এই দুর্ভাবনা নিয়ে আমরা কাজ এগোতে থাকি।

    অনেকটা একটানা বলে মণিদা সিগারেটে টান দেয় বার দুয়েক। ঘরভর্তি লোক উত্তেজনায় থমথম করছে। মণিদা সবার দিকে একবার দেখে নিয়ে বলতে থাকে.......
    - তারপর একসময় সম্পূর্ণ অভাবিতভাবে তিনটে ক্লু আমাদের হাতে আসে। প্রথমত, একটা নতুন যোগসূত্র আবিষ্কৃত হয়, খুন হওয়া তিনজনের সাথে ডিসুজাসাহেবের পরিচয়ের রহস্যটা খানিকটা পরিষ্কার হয়। ড: ডিসুজা, আপনি কিছু বলবেন?

    - আমার শুধু একটা কথাই বলার আছে মি: সেন। আমার সাথে ওদের পরিচয় পূর্বনির্ধারিতই ছিলো। আপনি এসব বিশ্বাস করেন না, কিন্তু আমি মানি। আপনি মিছেই আমাকে এইসব কারণে আটক করেছেন। গত দুদিন ধরে আমি প্রবল মানসিক কষ্টে ভুগছি। আমার কিছু একটা হয়ে গেলে আপনি কিন্তু ছাড় পাবেন না।

    মণিদা হাসলো। তাচ্ছিল্যের হাসি। তারপর নিভে আসা সিগারেটে একটা টান দিয়ে আবার কথা শুরু করলো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন