এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাঘু বেকার ও আমি অথবা টুয়েলভ্‌ দেজ অফ ডেজার্ট

    kk
    অন্যান্য | ২৩ ডিসেম্বর ২০০৯ | ৩৪০৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 72.83.210.50 | ৩০ ডিসেম্বর ২০০৯ ২০:৫৯423185
  • আরে না না, বাঘুদাতো এখন ঠিক জার্নির মাঝপথে।
  • kk | 76.114.64.110 | ৩০ ডিসেম্বর ২০০৯ ২১:০৭423186
  • তেকোনা, উম্‌ম্‌ম্‌ম, কি ভালো খেতে। :)

    শমীক,এক কালে ছিলাম বটে ভক্ত। মরেছে, ওঁর ছায়া পড়ছে নাকি লেখায়? :(

    মিতাদি,না না, পাই ঠিক বলেছে, এখন তো মাঝপথে। ক্রিসমাসের ১২ দিন তো অফিসিয়ালি ৫ই জানুয়ারী শেষ হয়। :)

    পাই, এক্কেবারে ঠিক। :)
  • Samik | 219.64.11.35 | ৩০ ডিসেম্বর ২০০৯ ২১:১২423187
  • বাঘু নামটা একমাত্র ওঁয়ার লেখাতেই পেয়েছি কিনা। বাঘু মান্না।
  • kk | 76.114.64.110 | ৩০ ডিসেম্বর ২০০৯ ২১:২৬423188
  • যা:, তুমি তো ছোটবেলায় কমিক্স পড়তে, বাজ সায়ারের সেই কুইনি আর পবিত্র চামচের গল্পে পড়োনি দুষ্টু লোকের নাম ছিলো বাঘু?
  • kk | 76.114.64.110 | ০১ জানুয়ারি ২০১০ ০৩:১৫423189
  • সেভেনথ্‌ ডে অফ ডেজার্ট : ঝরা পাতার আপেল পাই।

    এই সময়ে দিন গুলো এত সুন্দর এত সুন্দর যে বোবা হয়ে যেতে হয় ভালোলাগায়। ভিজে ভিজে, মেঘ মেঘ হয়ে থাকে সারাক্ষণ। সুজান র‌্যাড নাক কুঁচকে বললো 'ন্যাস্টি ওয়েদার'। কিন্তু আমি দেখতে পাই অন্য রকম সব। স্মোকি পাহাড়ের বুকে যেখানে কালো মেঘ মাথা রেখে কেঁদেছিলো সেখানে সাদা আইসিক্‌ল জমে আছে। আর পাতারা। কখনো ওরা ঠান্ডা হাওয়ার পিছু পিছু দৌড় দৌড় দৌড়, যেন ছোট্টবেলার গোল্লাছুট খেলছে। কখনো হাত পা মেলে সব শুয়ে পড়ে সারা উঠোন জুড়ে। চুপি চুপি কথা বলে আগুনে ফুট্‌ফাট্‌ আওয়াজ করা কাঠের সঙ্গে। ভারী অদ্ভুত একটা গন্ধ বেরোয় ওদের গা থেকে, কোন কিছুর মতই নয় সেটা। কিম্বা কোনকিছুর মত, হয়তো। অন্য কেউ সেই গন্ধ পায় কিনা জানিনা। বাঘু পেয়েছিলো হয়তো। কারণ ও আমাকে বললো - কিছু করতে ইচ্ছে করে পাতাদের নিয়ে।

    -কি করবি? পাতা দিয়ে কি করা যায়?

    -যায়না কেন? আমি পাই করবো। ঝরা পাতাদের জন্য পাই।

    -কি রকম সে?

    - আপেলের।

    -ও:, অ্যাপ্‌ল পাই তো খুব 'ফল' লাইক, তাইই ঝরাপাতাদের জন্য?

    -আরে না। 'ফল' কেন? অন্য রকম করে ভাবোনা। পাই এর ওপরে যদি ঝরা পাতা বিছিয়ে থাকে।

    -সত্যি ঝরা পাতা?

    - ওপরের ক্রাস্টটাই যেন ঝরা ঝরা পাতা। বিছিয়ে আছে।

    -পারবি তুই? কি করে করবি? গ্রাহাম ক্র্যাকারের ক্রাস্ট হবে না?

    - ধুর, ক্র্যাকার ক্রাস্ট আপেল পাই তে হয় কখনো?

    -তাহলে? ক্রাস্ট তো কিনতে পাওয়া যায়।

    - রামো:, কেনা ক্রাস্ট দিয়ে পাই বানাবো? শোনো, পেস্ট্রী ক্রাস্ট বাড়িতে বানানো একটু ইন্টিমিডেটিং ব্যপার তা সবাই বলে। কিন্তু সবাই কি বলে তা শুনলে চলেনা। এই দিন গুলোকে ন্যাস্টি ওয়েদারও সবাই বলে।

    - কি করে বানাচ্ছিস বল তো?

    - ময়দার মধ্যে এক চামচ করে চিনি আর নুন মেশাই। এতে এবার খুব ঠান্ডা মাখন, আর খুব ঠান্ডা শর্টনিং দিতে হবে। এই দেখো পেস্ট্রী ব্লেন্ডার দিয়ে মিশিয়ে দিলাম। সেই শর্টব্রেডের মত হলো তো?

    - ওমা, তুই মিক্সিং বোলটাও ঠান্ডা করে রেখেছিস?

    -হুঁ, এই সব কিছু ঠান্ডা হওয়াটা খুব জরুরী, পাই বানাবার জন্যে। দেখো এবারে ছ' চামচ বরফ জল দিয়ে ময়দাটা মেখে নেবো। উঁহু হুঁ, বেশি ঠেসোনা, হাতের গরমে গরম না হয়ে যায়। আর বেশি করলে পাই শক্তও হয়ে যাবে।

    - ও। দু ভাগ করছিস কেন পুরোটাকে?

    -দুটো ভাগ প্লাস্টিক র‌্যাপে মুড়ে ফ্রিজে রেখে দেবো এক ঘন্টা। এক ভাগ দিয়ে বটম ক্রাস্ট তৈরী হবে। অন্য ভাগ দিয়ে আপার ক্রাস্ট।

    বাঘু যাইই বলুক, জানেন তো এই পাই ক্রাস্ট বেলা ঝামেলা আছে। দুটো ওয়াক্স পেপারের মাঝখানে ময়দার তাল টা রেখে বেলতে হয়। বেশি গরম হয়ে গেলে আবার বড়ই ন্যাতপেতে হয়ে যায়, ছিঁড়ে যেতে চায়। ও, বলতে ভুলে যাচ্ছিলাম, যতক্ষণ ময়দা মাখা হয়ে ফ্রিজে ঠান্ডা হচ্ছিলো ততক্ষণে পুর বানিয়ে নিতে হয়। আপেল, ব্রাউন শুগার,একটু ময়দা, দারচিনি গুঁড়ো, লেবুর রস, একটু লবঙ্গ গুঁড়ো মিশিয়ে।এবার নিচের ক্রাস্টটা বেশ ১০ ইঞ্চি মত বড় গোল হলে ওকে পাই ডিশে বিছিয়ে দিতে হলো। তার ওপর আপেলের পুর। পুরের ওপরে কয়েক দলা মাখন দিতে হয়।এবার ওপরের ক্রাস্ট দেওয়ার কথা। তো সেই ক্রাস্টই তো আজ আমাদের স্পেশ্যাল।ওপরের ক্রাস্টটাও নিচেরটার মত বেলে নিয়ে পাতা শেপের কুকি কাটার দিয়ে তার থেকে ৮-১০ টা পাতা কেটে নেওয়া হয়েছিলো। শুনতে সহজ লাগছে বটে, কিন্তু ভাই এই কাজটা খুব হাঙ্গামার। বার বার মাখা ময়দাটা ফ্রিজে ঢুকিয়ে ঠান্ডা করতে হয়। কাটা পাতা গুলোও ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখতে হয়। একেক বারে ৩-৪ টের বেশি পাতা হয়না, কাজেই ময়দার বাকি অংশটা আবার তাল পাকিয়ে, আবার ঠান্ডা করে, আবার বেলে, আবার পাতা কাটা। উফ্‌ফ্‌ফ্‌! কিন্তু বাঘু বেকারকে একথা বলতে গেলেই হয়েছে আর কি! সে বলবে 'এটুকু না করতে পারলে সে পেস্ট্রী শেফ হবে কি করে? আরে এটুকুও করবে না? তাহলে পাই বানাবার মানেটাই কি হয়'। তা শেষ অব্দি পুরের ওপরে পাতা গুলো বিছিয়ে যায়, তার ওপরে একটু ক্রীম ব্রাশ দিয়ে মাখিয়ে বেক। মিনিট ২৫ পরেই সুন্দর বাদামী রং ধরে। অনেক সময়ে পাই এর ধারটা বেশি পুড়ে যায়, তখন ফয়েল দিয়ে ঢেকে দেবার কথা। তবে বাঘুর কাছে নীল সিলিকনের পাই শিল্ড আছে। আমরা সেই দিয়েই ধার ঢাকা দিয়েছিলাম।

    আপেল পাই আমি খুব ভালোবাসি সত্যি, আপেল-দারচিনির গন্ধ পেলেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায়। কিন্তু এই পাইটা দেখে কি যে মনকেমন করছিলো কি বলবো! ঠিক যেন ঐ বাইরের সুন্দর, পাগলা, খাম খেয়ালী পাতারা সব বিছিয়ে আছে। অদ্ভুত গন্ধ বেরোয় ওদের গা থেকে, আপেলের না, দারচিনিরও নয়। বেবাক খুশিতে যখন মনটা এক্কেবারে ভর্তি হয়ে যায়, কিম্বা ভালোলাগার চোটে যখন বড্ড মনকেমন করতে থাকে শুধু তখনই এই গন্ধ জন্ম নেয় জানেন তো? চুপিচুপি,ফিসফিসিয়ে মিষ্টি আপেল, সুগন্ধী মশলা আর শুয়ে থাকা পাতাদের মধ্যে, জন্ম নেয়, অদ্ভুত গন্ধটা। এই রকম ভীষণ সুন্দর সময়ে।অনেক ঠান্ডা আর অনেক ওম এর এই রকম ভিজে ভিজে দিনে।
    http://picasaweb.google.com/kris.r.red/7thDayOfDessert#5421468871554197154
  • pi | 128.231.22.89 | ০১ জানুয়ারি ২০১০ ০৩:৩৯423190
  • উফ্‌ফ! আমি যে এত ভালো আমি জানতুম ই না! :)
  • SS | 128.248.169.87 | ০১ জানুয়ারি ২০১০ ০৯:৫৯423191
  • অ্যাঁ, বাঘুর বাড়ি স্মোকির কাছে??

    নক্সভিলে গেছিলাম ছুটি কাটাতে। ২৭ শে ডিসেম্বর ঘুরে এলাম Cades Cove এ। প্রচুর হরিণ দেখলাম আর দেখলাম ওয়াইল্ড টার্কি। Cades Cove যাওয়ার পথে যে ছোট্ট পাহাড়ী নদীটা সঙ্গে যায় তার নাম কী?

    ঝরা পাতার পাই ভারী সুন্দর দেখতে.....
  • I | 59.93.164.3 | ০১ জানুয়ারি ২০১০ ১৩:০৯423192
  • আমাদের গুণকলি। গুণমণিও বলতে পারো।
  • kk | 76.114.64.110 | ০১ জানুয়ারি ২০১০ ২০:২৯423193
  • ঐ নদীটাই তো টেনেসী নদী। যা:,২৭শে থেকেই যে আমিও ছুটিতে বাইরে আছি :(
  • kk | 76.114.64.110 | ০২ জানুয়ারি ২০১০ ০৭:১৪423195
  • এইট্‌থ ডে অফ ডেজার্ট : বয়েল্ড ফ্রুটকেক।

    - বাঘু, ফ্রুটকেক কবে বানাবে বাছা? সামনের বছরেরও ক্রীসমাস এসে চলে গেলে?

    -ফ্রুটকেক? তবে না শুনি ফ্রুটকেকের কোনো কৌলিন্য নেই?

    -কে বলেছে?

    -কেন? দেখোনি লোকে কেমন হতচ্ছেদ্দা করে? এখানে ওখানে লেখা থাকে 'ফ্রেন্ডস ডু নট লেট ফ্রেন্ডস ঈট ফ্রুটকেক'। তারপরে ফ্রুটকেক ছুঁড়ে ছুঁড়ে লোকে কে কদ্দুর পাঠাতে পারে তার কম্পিটিশন করে। দেখলেই নাক শিঁটকায়। দেখোনি?

    - তবে?

    -তবে আর কি? এসব তো সায়েবদের কান্ড! তারা তো এমনকি চিংড়ি মাছের মুন্ডুও খায়না। তা তাদের সাথে আমাদের কি? আহা, ফ্রুটকেক আমাদের শৈশবের বড়দিনের স্মৃতি, যৌবনের কি যেন সেই একটা, বার্ধক্যের.... ইয়ে কি বলে, তা আজই বানানো যাক না।

    - বললেই হয় নাকি? আমি যে শুনেছি তার নাকি ঢের সব প্রিপারেশন লাগে।

    -হ্যাঁ, লাগেই তো। এই যে আমি শুকনো ফল সব তিনদিন ধরে গোল্ড রামে ভিজিয়ে রেখেছি সে কি এমনি এমনি?

    -ওমা, কি শুকনো ফল রে? ঐ যে লাল সবুজ চেরী?

    - ছো, ওগুলি সব রং করা, হাই ফ্রুকটোজ কর্ণসিরাপে ডোবানো। মোটেই কখনো খেওনা। আমি নিয়েছি শুকনো খেজুর, শুকনো ক্যালিফোর্নিয়ান চেরী, কিসমিস, অ্যাপ্রিকট, কারেন্ট আর সিট্রন।

    -সিট্রন কোথা পেলি? বাজারে পাওয়া যায় না তো এমনিতে?

    -আহা, ইন্টারনেটে আজকের দিনে সবই কিনতে পাওয়া যায়। কোনো ব্যাপারই না। আরো কি দিয়েছি দেখো। কমলা লেবু আর লেমনের খোসা পাতলা জিরি জিরি করে কেটে। আর ক্যান্ডিড আদা।

    -তা হ্যাঁ রে, এর নাম বয়েল্ড ফ্রুটকেক কেন?

    -এই যে বলি। এই সব ভেজানো ফল, যাতে ভেজানো সেই লিকুয়িডটা, মাখন, ব্রাউন শুগার, আর আপেল জ্যুস মেশালাম তো? এইবার এটা ফোটাতে হবে উনুনে।

    - আপেল জ্যুস? বা রে। এই তো ফুটতে শুরু হয়েছে।

    -হ্যাঁ, এবার আঁচ কমিয়ে রেখে দিই ৫-৭ মিনিট। তারপরে উনুন থেকে নামিয়ে পনেরো মিনিট ঠান্ডা হতে দাও।

    -ততক্ষণে অন্য জিনিষ গুলো মিশিয়ে নিবি বুঝি?

    -হ্যাঁ, এই যে, ময়দা ... অন্য কেকের থেকে এতে ময়দা কিন্তু কম লাগে জানো তো? আর ডিম, বেকিং সোডা, একটু করে দারচিনি, লবঙ্গ গুঁড়ো, আদা গুঁড়ো, নুন।

    - বারে, ভ্যানিলা লাগবে না?

    -না:, এই দেখো এবার এই ফলের গোলাটা এর মধ্যে ঢেলে দিলাম। মিশে গেলো তো? পেকানের কুচি দিলাম অনেক খানি। এবার বেক করতে হবে। কম আঁচে, প্রায় এক ঘন্টা ধরে।

    - এতক্ষণ? এতক্ষণ কেন?

    -ময়দা কম, বেশি রাইজ করবে না কেক। সব কিছু ঠিকঠাক ডান হতে হবে তো? এই তো দেখোনা বেরিয়েছে।

    -বা:, হয়ে গেলো?

    -আরে দাঁড়াও। আরো তদ্বির করতে হবে। এই বার ঠান্ডা হলে পর এর ওপরে ব্রাশ দিয়ে ব্র্যান্ডি মাখাতে হয়। নিয়ে টাইট কৌটোতে ভরে রাখো ফ্রিজে। দিনে একবার করে বার করে ব্র্যান্ডি বুলিয়ে দিতে হবে। যত দিন যাবে তত দেখবে এর সোয়াদ খুলবে। সব টেস্ট ডেভেলপ করতে টাইম দিতে হয়। এমনি এমনিই হয় না ভালো ফ্রুটকেক। অন্তত তিনদিনের আগে তো খাবেই না।

    তা বাঘু বেকার যতই ওসব বলুক না কেন। আমি সেদিন গভীর রাতেই চুপি চুপি কেটে খেয়েছি এক টুকরো বয়েল্ড ফ্রুটকেক। একদম বাবা মুস্তাফার মত বলতে ইচ্ছে হলো 'উউউউফফফ, কি বলবো ভাই!' শহরতলির এই আমি কোনদিন নাহুমের কেক খাইনি,তার সাথে ওতপ্রত ভাবে জড়িত নিউ-মার্কেটের বড়দিনের জাঁক জমক দেখিনি, কিন্তু আজকের এই ফ্রুটকেক আমার ছোটবেলার যত বড়দিন, সেন্ট অ্যান্টনীর গির্জের চুড়োয় ঝোলানো মস্ত লাল তারা-বাতি, আসানসোলী গরীব বাজারে মেলে বসা লাল নীল ঘন্টা-তারা-বল, সবুজ প্লাস্টিকের ক্রিসমাস ট্রী যেন এক মুহুর্তে মস্ত এক লাল ঝোলা থেকে কোলের ওপর উজাড় করে দিলো। একটা ঘন্টা বাজছিলো কোথাও বাইরে তখন, টিং টিং টিং করে। সবাই শুনতে পায়না। স্লে-বেল। একজন দাড়ি অলা বুড়ো মানুষ ঝোল্লা কোট পরে সরে গেছে এক্ষুণি। আমার জানলা থেকে।
    http://picasaweb.google.com/kris.r.red/8thDayOfDessert#5421847813221522914
  • kk | 76.114.64.110 | ০৩ জানুয়ারি ২০১০ ০৬:২৫423196
  • আমি একটা জঙ্গলে গেছিলাম। সেখানে একলা একটা ঝর্না নিজের মনে এক্কা দোক্কা খেলে পাথরদের সাথে। পাতা ঝরা গাছ, পিছল পাথুরে রাস্তা, শ্যাওলা মুড়ি দিয়ে লাজুক একটা গুহা। আমার খুব মনে হচ্ছিলো এইখানে যেন কাউকে খুঁজে পাবার কথা আমার। বহুদিন থেকেই হয়ে এসেছে যেন এই রকম। জঙ্গলের মধ্যে খুঁজে পেতে হয়। তাকে। কে? কে? মনের মধ্যে মনে আসেনা। চোখ বন্ধ না করে উপায় নেই। এই খানে চোখ কাজ করেনা আর। শুধু নাক, শুধু জিভ। মনে আসে, মনে আসে ..... আদার গন্ধ, আর দারচিনি, আর লজেন্স লজেন্স গন্ধ একটা, জিভ জুড়ে তারাবাজির মত ঝিকোয় মিছরী,সাদা চিনির আইসিং,ক্যান্ডিকেন ...... চমকে চোখ খুলি আমি। মনে পড়ে গেছে, জিঞ্জারব্রেড হাউস। একা একা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে হঠাৎ একটা জিঞ্জারব্রেড হাউস খুঁজে পাওয়া যায়। বহুদিন থেকে এরকমটা হয়ে আসছে,তখন গ্রীম ভাইয়েরা বেঁচে ছিলেন।

    বাঘু খুব খুশি হয়েছিলো। চ্যালেঞ্জিং কাজ খোঁজে ও সব সময়। কিন্তু অত সময় ছিলোনা আমার কাছে। বললাম - স্ক্র্যাচ থেকে করা যাবেনা বাঘু। একটা জিঞ্জারব্রেড হাউস কীট কিনে আনি।

    - কি! কীট দিয়ে করবো? ও তো যে কেউ করতে পারে। ওতে বাহাদুরিটা কি আছে?

    আমরা তো যে কেউই। বাহাদুরি দিয়ে কি হবে আমাদের? জঙ্গলের মধ্যে বাড়িটা খুঁজে পেতে হবে আজই। সময় নেই, সময় কম।

    - তুই অত রাগ করছিস কেন? এতেও তো আইসিং তোকেই বানাতে হবে, পুরোপুরি ডেকোরেটও তোকেই করতে হবে। এই ক্যান্ডি গুলো তুই আলাদা করে কিনতিস, আর এখানে এগুলো দেওয়া আছে। ব্যস এইই তো। আর শুধু জিঞ্জারব্রেড গুলো বেক করা আছে। তা তুই তো আমাদের সেকেন্ড দিনেই করেছিলি জিঞ্জারব্রেড বেক। এখন নয় সময় নেই বলেই এটা নিলি।

    - আর বাড়িটাও যে অ্যাসেম্বল করা আছে। সেটা কিছু না?

    - ওটুকু ছাড় দে না। সাহস করে একা একা একটা জিঞ্জারব্রেড হাউস ডেকোরেট করাও কম কিছু না। আর কম হলেই বা কি? সময়টা ভালো কাটানোই তো উদ্দেশ্য। বলেছি তো আমরা যে কেউ, আমাদের বাহাদুরি চাইনা।

    খুঁজে পেয়েছিলাম আমরা বাড়িটা শেষ অব্দি। বরফ জমা চাল, লাল-নীল-হলদে-সবুজ আলোর মত মিঠাই জ্বলছে। দরজা জানলা তার কি মিষ্টি কি মিষ্টি। বড়দিনের মরশুমে সবুজ রীথ লাগানো, আর আইসিক্‌ল ঝুলে রয়েছে চাল থেকে। বেশি আর কি বলব? জিঞ্জারব্রেড হাউস তো আপনিও খুঁজে পেয়েছেন একদিন না একদিন। কোনো জঙ্গলে। পাইপিং করতে করতে হাত ব্যথা হয়ে যায় ঠিকই, তা খুঁজে পাওয়া কি অত সহজ হয় নাকি ? হলে তো হয়েই যেত!

    http://picasaweb.google.com/kris.r.red/9thDayOfDessert#5421848317270359346

    http://picasaweb.google.com/kris.r.red/9thDayOfDessert#5421848325498087762

  • rimi | 24.42.203.194 | ০৩ জানুয়ারি ২০১০ ০৯:০০423197
  • বলা হয় নি আগে, এই টইটা অসম্ভব ভালো লাগছে আমার। যেমন অসাধারণ লেখা, তেমনি ছবিগুলো। জিঞ্জার্ব্রেড হাউসটা তো খুউব পছন্দ হল আমার।
  • a x | 76.254.114.82 | ০৩ জানুয়ারি ২০১০ ০৯:০৬423198
  • আমি যবে থেকে জিঞ্জারব্রেড হাউস দেখেছি, তবে থেকে ভাবতাম কারা এগুলো কেটে কেটে খেতে পারে! ঐ আইসিকিল ঝোলা থ্যাচড রুফ, ওটা বাঘু বেকার কি অলরেডি উদরস্থ করে ফেলেছে? :-)
  • kk | 76.114.64.110 | ০৩ জানুয়ারি ২০১০ ০৯:২৪423199
  • না বাপ, প্রাণে ধরে আর ভাঙতে পারছি না, তিন ঘন্টা লেগেছে বানাতে যে। থাক যদ্দিন থাকে।
  • kk | 76.114.64.110 | ০৪ জানুয়ারি ২০১০ ০০:০১423200
  • টেন্‌থ্‌ ডে অফ ডেজার্ট : ব্রেড পুডিং।

    আজকাল যখন আমি রাত্রে শুতে যাই, আমার মাথার মধ্যে একটা রাতচরা প্যাঁচা হু: হু করে বলে 'কাল কি? কাল কি?'। যখন আমি সকালে ঘুম থেকে উঠি আমার মাথার মধ্যে একটা ঘুম ভাঙা কার্ডিনাল শিষ দিয়ে বলে 'আজ কি? আজ কি?'। এক ফালি রান্নাঘরে এসে দেখি প্যাঁচা আর কার্ডিনাল খুশি হয়ে বসেছে জানলার চিলতে কার্নিসে। খুশি কেন? উত্তর পায় ওরা। উত্তর? বাঘু বেকার ঠিক করে ফেলেছে, আজ কি। অথবা কাল রাত্রেই ঠিক করে নিয়েছিলো। কাল কি। তো? আজ? আজ ব্রেড পুডিং।

    -বাঘু, ব্রেড পুডিং খুব সিম্পল জিনিষ না?

    -তো কি হয়েছে? সিম্পল খাবার সুস্বাদু করে বানানোটাও একটা ব্যাপার। আর এই মরশুমে ব্রেড পুডিং বললেই কেমন একটা আরাম ছড়িয়ে যায় মনের মধ্যে।

    -বেশ, তা লাগবে কি?

    -এই তো, ছটা পাঁউরুটি। আরে না, অমন অনেক কিছু লেখে বইয়ে -- ব্রিওশে চাই, এগ ব্রেড চাই হেনা তেনা। তুমি দেখোইনা, আমি সেরেফ ব্রাউন ব্রেড দিয়েই করবো।

    -আর?

    - এই যে পাঁউরুটি গুলো ছোট টুকরো করে এই ট্রে তে রাখলাম হ্যাঁ। এই পাঁউরুটি ছিঁড়লেই আমার মনে পড়ে যায় ছোটবেলায় কাককে খাওয়াতাম এমনি করে। আচ্ছা এইবার দু চামচ মাখন গলিয়ে এর ওপরে দিয়ে দাও।
    অন্য বাটিতে এদিকে দু কাপ দুধ, দুটো ডিম,এক চামচ ভ্যানিলা গুলে রেখেছি। দারচিনির গুঁড়ো দিই একটু? আর কিসমিস, আখরোটের কুচি। এগুলো না দিলেও চলে, কিন্তু টেক্সচারের কনট্রাস্ট হবে না তাহলে।

    -না হলেই বা কি?

    -আহা সে ও দুনিয়ায় কিছু না হলেই কিছু যায় আসেনা। একটা কাজ করলে সেটা ভালো করে করবে না?

    - আচ্ছা আচ্ছা। এর পরে?

    -আবার কি? এই বার সবটা ঢেলে দিলাম পাঁউরুটির ওপরে। চামচ দিয়ে একটু ডুবিয়ে দাও টুকরো গুলো। আর দশ মিনিট রেখে দাও। একটু শুষে নিক কাস্টার্ডটা।

    -কাস্টার্ড আবার কোত্থেকে এলো?

    -ওফ, তুমি তো ভারি বোকা দেখতে পাচ্ছি! দুধ ডিমের মিশ্রণকেই কাস্টার্ড বলে তাও জানো না?

    - হেঁ হেঁ, আচ্ছা, এবার দশ মিনিট হয়ে গেছে।

    -এবার ট্রে শুদ্ধু ঢুকিয়ে দিলাম আভেনে। ২০ মিন বেক হোক।

    তা হলও কুড়ি মিনিট বেক। একটা কাঁটা ফুটিয়ে দেখে নিতে হলো মাঝ খানটা চটচট করছে না। এইবার এর ওপরে ভ্যানিলা স্যস বা চকোলেট গানাশ না কি যেন দেবার জন্যে বাঘু পেড়াপেড়ি করছিলো। কিন্তু তার আর সময় ছিলো না। তখন রাত অনেক, এমনিতেই। গরম ব্রেডপুডিং এর ওপরে এক খাবলা করে হুইপ্‌ড্‌ ক্রীম দিয়ে আমরা খেলাম। হ্যাঁ, মনের মধ্যে আরাম ছড়িয়ে যাবে তা গ্যারান্টীড। আর বাকি কেমন কি তা আমি আর বলতে পারিনা, আপনি নিজেই করে খেয়ে দেখুন। ততক্ষণে আমার মাথার মধ্যে সেই রাতচরাটা এসে আবার বলতে শুরু করে দিয়েছে 'কাল কি? কাল কি?'

    http://picasaweb.google.com/kris.r.red/10thDayOfDessert#5422575165201658770
  • vikram | 193.120.76.238 | ০৪ জানুয়ারি ২০১০ ১৮:৪৬423201
  • এই লেখাটা বড়ো ভালো। খাবার দাবার নিয়ে গু চ একটা কাগুজে বের করুক।
  • a x | 143.111.22.23 | ০৪ জানুয়ারি ২০১০ ২১:৪১423202
  • আচ্ছা বাঘু বেকার, তোমার সময় হলে একটু সর্ষেতে ফ্রুট কেকের মাপ জোক গুলান লিখে দেবে? একটা ঠিকঠাক ফ্রুটকেকের অপেক্ষায় কত বড়দিন কেটে গেল :-(
  • pi | 72.83.210.50 | ০৪ জানুয়ারি ২০১০ ২১:৫৪423203
  • আজ কী ? আজ কী ?
  • kk | 76.114.64.110 | ০৫ জানুয়ারি ২০১০ ০১:২৯423204
  • আজকের এপিসোড রাত্রে আপলোড হবে, কারণ ছবি সঙ্গে নেই, ক্যামেরার কার্ডটা আনতে ভুলে গেছি :)।
  • kk | 76.114.64.110 | ০৫ জানুয়ারি ২০১০ ০৭:৫৮423206
  • ইলেভেন্‌থ ডে অফ ডেজার্ট : লেমন-রিকোত্তা বিস্কিট।

    -বিস্কিট? ঐ মাখন মাখন গোল গোল? যেগুলো সসেজ গ্রেভী দিয়ে খেতে হয়?

    -যা:, এ সাদার্ন বিস্কিট নয়।

    -তাহলে? কুড়মুড়ে কুকি? যাকে বাংলায় বিস্কুট বলে?

    -না, ইংলিশ বিস্কিটও নয়।

    -তবে? তবে!

    - এ হলো ইতালিয়ানো। দেখছো না রিকোত্তা চীজ? সাদা বাংলায় কাপকেকের মত হবে।

    - তাই বুঝি? তা ঠিকই তো , কুকি হলো,কেক হলো, পাই হলো, পুডিং হলো, এবার কাপকেক।

    - আর বানানো খুব সোজা। এই যে দেখো মাখন আর চিনি ফেটিয়ে ক্রীমের মত করে নিলাম।এর মধ্যে এবার এক টেবিলচামচ লেমন জ্যুস দিতে হবে। আর দুটো লেবুর খোসা কুরে দিলাম দেখো।

    -বেশ আর?

    -আর রিকোত্তা চীজ, এক কাপ। এবার ময়দা,নুন, বেকিংসোডা একসাথে মিশিয়ে এর মধ্যে দাও।

    - আবার ভ্যানিলাও লাগছে?

    -হুঁউ। ইচ্ছে হলে অ্যাল্মন্ড এক্সট্র্যাক্টও দেওয়া যায়। আর দিলাম এক মুঠো ভত্তি করে বাদাম কুচি।

    -এবার মাফিন ট্রে তে করতে হবে, না?

    -হ্যাঁ, এই যে কাপকেক লাইনার দিয়ে দিয়ে এর ওপর আইসক্রীমের স্কুপ ভত্তি করে গোলা ঢেলে দাও। ওপরে সামান্য একটু চিনি ছড়িয়ে ২০ মিনিট বেক। এই চিনিটা ছড়ালে দেখবে ওপরটা ক্রাঞ্চি হবে।

    বা রে! খুব সোজা তো।

    -দাঁড়াও। এবার ফ্রস্টিং করতে হবে না? লেমন-বাটার ফ্রস্টিং।

    -ও, তার মানে মাখন গলিয়ে লেবুর রস মিশিয়ে......

    -আরে না, আরো সহজ উপায় আছে দেখো। এই নিলাম হুইপিং ক্রীম কেমন তো? এবার আধ প্যাকেট লেমন ফ্লেভারের জেলো ইনস্ট্যান্ট পুডিং মিক্স মিশিয়ে দাও এর মধ্যে। এইবারে খুউবসে ফেটাতে হবে। ইলেক্ট্রিক মিক্সার দিয়ে করাই ভালো, নাহলে হাতটা খুলে বেরিয়ে যাবার প্রভূত সম্ভাবনা আছে। এই যে দেখো, ফেটিয়ে ফেটিয়ে যখন সফট পীক তৈরী হচ্ছে, সুন্দর মোলায়েম ক্রীমি হয়ে গেছে তখনই মিক্সার বন্ধ করে দাও। এর বেশি ফেটিয়ে ফেললে কিন্তু ক্রীম আর থাকবেনা, হয়ে যাবে মাখন। বা:, এইবার ছুরি দিয়ে কাপকেকের ওপরে মাখিয়ে দাও। ব্যস।

    ব্যস! ভারি সহজ এই লেমন-রিকোত্তা বিস্কিট। খাবার পরে ডেজার্ট হিসেবে নয়, বরং খান ব্রেকফাস্টে, গরম গরম। সঙ্গে ঢেলে নিন এক কাপ আর্ল গ্রে চা। ও কি করছেন? দুধ চিনি মেশাবেন না। তাতে তো অর্ধেক স্বাদ চাপা পড়ে যাবে। এই বার এক কামড় দিন দেখি এতে। উম্‌ম্‌ম্‌, লেবুর গন্ধ, হাল্কা লেবু স্বাদ দারুণ রিফ্রেশিং। তার পরের পরতে গরম রিকোত্তার ফ্লেভার জিভময় মোলায়েম ভাবে ছড়িয়ে পড়ে, মধ্যে মধ্যে বাদামের ফালি কুচমুচ করে ওঠে, খুব বেশি মিষ্টি নয়, ভীষণ স্মুদ ...... হেভেনলী!

    http://picasaweb.google.com/kris.r.red/11thDayOfDessert#5423068045265767986
  • kk | 76.114.64.110 | ০৬ জানুয়ারি ২০১০ ০৬:৪৬423207
  • টুয়েলফথ্‌ ডে অফ ডেজার্ট : দ্য ম্যাজিকাল ওয়ান।

    বেলা ফুরিয়ে আসছে। শুধু বেলা নয়। ছুটি ছুটি সপ্তা, হলিডে সীজন, এমনকি আস্ত একটা বছর। শেষ হয়ে যায় সবকিছু বড্ড তাড়াতাড়ি। ভাল্লাগেনা, ভাল্লাগেনা। ঝকমকে গাছ, লাল সোনালী আলো, রেডিও খুললেই সিলভার বেলস্‌..... শেষ হয়ে আসে। ভাল্লাগেনা। বারো দিন আমাদের, খাটনীর দিন, গরম আভেনের দিন,নতুন নতুন সমস্যার দিন, অসহ্য ব্যথা হাতের দিন, হাল্কা পকেটের দিন, বাড়া ওজনের দিন, মিষ্টি মিষ্টি মিষ্টি দিন। শেষ হয়ে আসে। ভাল্লাগেনা।
    শেষের দিনে স্পেশ্যাল কিছু করতে হয়। এ নিয়ে আমাদের মতে মেলেনা অনেকক্ষণ। আমি বলব পেকান পাই, বাঘু বলবে ইয়ুল লগ কেক, আমি বলব থাম্বপ্রিন্ট কুকি, বাঘুকে তখন বলতেই হবে প্রফিটারোল কি ঐ রকম ভয়ানক কঠিন কিছু। ও চায় স্পেশ্যাল এই একজন হোক সামথিং জাস্ট আউট অফ দিস ওয়র্ল্ড।

    -আউট অফ দিস ওয়র্ল্ড?? বা: হয়ে গেছে ভায়া হয়ে গেছে। পেয়েছি,এমন একজন যা এই দুনিয়ার নয়।

    -বলিস কি রে বাঘু! এলিয়েনদের খাবার খেতে হবে নাকি শেষটা?

    -আরে না না না, আজকে হবে ম্যাজিকাল দুনিয়ার ডেজার্ট।

    -তার মানে?

    - ট্রীকল টার্ট। হ্যারি পটার পড়োনি নাকি? মানে এ নয় যে নন-ম্যাজিক দুনিয়ায় ট্রীকল টার্ট হয়না। তবে ম্যাজিকের দুর্গে যখন স্পেশ্যাল করে বলা আছে তখন .....

    - কিন্তু সে বানাবার জিনিষপত্র আছে নাকি আমাদের?

    -না নেই। এতে যা মেইনলি লাগে সেই গোল্ডেন সিরাপ নেই। কিন্তু তাতে কি আছে? উপায় বেরিয়ে যাবে কিছু একটা।

    -গোল্ডেন সিরাপ তো আসলে আখের রসের থেকে তৈরী সিরাপ। কিনতে পাওয়া যায়না ইন্টারনেট থেকে?

    -যায়। কিন্তু এখন আউট অফ স্টক যাচ্ছে। তাছাড়া আজই তো বানাতে হবে আমাদের। এখন কিনলে তো আর এসে পৌঁছোবে না?

    -তাহলে?

    - দাঁড়াও না, বললাম তো কিছু একটা করবো। আগে দেখো টার্টের শেলের জন্য ঠিক পাই এর মত ময়দা মেখে, বেলে একটা ক্রাস্ট বানালাম।

    - হ্যাঁ, এবার পুরটা বানাতে হবে, না?

    -হ্যাঁ, পুর বানাতে গোল্ডেন সিরাপ লাগে। তা আমরা নিই লাইট কর্ণসিরাপ আর লাইট মোলাসেস ২:১ অনুপাতে। কেমন? আমি বরং এই গুড়টাও আদ্ধেক করে তার জায়গায় আদ্ধেক মেপ্‌ল সিরাপ দিয়ে দিই।

    - আর কি লাগবে?

    -এই তো এটা একটা স্যসপ্যানে করে আগুনে বসাও। একটু গরম হলে সিরাপ গুলো খানিকটা পাতলা হয়ে আসবে। তখন দিয়ে দাও লেবুর রস, লেমন জেস্ট, এক চিমটি নুন, আর সাদা ব্রেড-ক্রাম্ব।

    -ব্রেড-ক্রাম্ব!

    - হ্যাঁ, এটাই তো গাঢ় করবে পুরটা। হ্যাঁ হয়েছে। এইবার গরম গরম ঢেলে দিই শেলের ভেতরে। নাও এবার বেক করো,১৫ মিনিট।

    ট্রীক্‌ল টার্ট আমি আগে কোনদিন খাইনি। কি বলবো আপনাকে, এর স্বাদ ঠিক যেন .... ঠিক যেন.... হুম, কোন কিছু যা আগে খেয়েছি তার সাথেই মেলেনা। আমার জিভের ওপরে ম্যাজিকের গুঁড়ো ছড়িয়ে যায়। জানলায় বেগুনী অন্ধকারের মধ্যে এক সারি নীল আলো জ্বলে নেভে-জ্বলে নেভে। ছুটির, মজার, আনন্দের শেষ মুঠির ঝড়তি পড়তি টুকরো-টাকরা কেমন গুলে যায় সবটাতে। বরফের রাতে রান্নাঘরের গরম কোণের মত, চুল্লির আঁচের মত, রোদ্দুরের গন্ধলাগা তাপ্পিকাজের লেপের মত ওম ছড়িয়ে যায়। একটা শেষ জুড়ে। শেষের মন খারাপ কেটে যাচ্ছিলো হয়তো। একটু একটু করে। সেই যে আরামের ঘুম এলে যেমন হয়। হ্যাঁ, কেটে যায় অনেক সময়, শেষটা সব সময়েই মনখারাপের নয়। আর তাছাড়া....ম্যজিকরা তো সত্যিই আছে।
    http://picasaweb.google.com/kris.r.red/12thDayOfDessert#5423418501542144514

    ** এখানে বলা ডেজার্টের রেসিপি গুলো পেয়েছি ফুড-নেটওয়ার্ক, বেটার হোমস অ্যান্ড গার্ডেনের কুকি বুক, অল-রেসিপিজ আর দু একটা কুকিং ক্লাবের থেকে। ছবি গুলো তুলে দিয়েছে বন্ধুবর ধৃতিমান ঘোষ।
  • pi | 128.231.22.89 | ০৬ জানুয়ারি ২০১০ ০৮:১১423208
  • টুয়েলভ দেজ অব ম্যাজিক ! :)
  • de | 59.163.30.3 | ০৬ জানুয়ারি ২০১০ ১৭:১৩423209
  • দাআআআআরুণ!!!! বাঘু বেকারকে একটা অনুরোধ, একটু সহজ একটা ফ্রুটকেকের রেসিপি দাও না বাঘু, লক্ষ্মী সোনা!!
  • P | 109.76.48.253 | ০৬ জানুয়ারি ২০১০ ১৭:২৩423210
  • আহা কি সুস্বাদু লেখা।
    এই বারোটার মধ্যে বেশিরভাগই ডেসার্টই আমি খাই নলেন-গুড়ের-মাখা-সন্দেশের-জন্যে-হুতাশ চেপে চেপে , ভালোবেসে নয়। কিন্তু এ লেখার পড়ে যেন মনে হচ্চে আর একবার স্বাদ নিই মন দিয়ে , শুধু জিভ দিয়ে নয়।
  • vikram | 193.120.76.238 | ০৬ জানুয়ারি ২০১০ ১৮:৩৭423211
  • সবার পেটে কি আর সব সয়। ঘটির পেটে লংকা, ইত্যাদি...
  • Du | 65.124.26.7 | ০৭ জানুয়ারি ২০১০ ০৩:২২423212
  • ঠিক, ম্যাজিক থাকুক বছরভর - খুদে অক্ষরের মায়াতে অটুট।
    যেমন খাবার, তেমনই তার সাজানো ছবি ! আর লেখাগুলো নিয়ে তো আর বলার নেই - রাতবিরেতে এসে বসতাম শুধুই এটা পড়ার জন্য।
  • a x | 143.111.22.23 | ০৭ জানুয়ারি ২০১০ ০৩:৪৪423213
  • বাঘু, এটা বড্ড তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল। তুমি বেকার থেকে এবার একটা একটা করে মিট শেফ, ফিশ শেফ, গ্রীল শেফ, পেস্ট্রি শেফের এরকম সিরিজ নামিয়ে ফেল। কখনও কখনও শর্ট-অর্ডার-কুকও হতে পার :-)
  • mita | 70.179.87.85 | ০৭ জানুয়ারি ২০১০ ০৩:৫৬423214
  • এটা ভালো বলেছো। সত্যি মনে হোলো কির'ম চট করে শেষ হয়ে গ্যালো! তুই periodically এরকম এক একটা নিয়ে করতে পারিস না?
  • kk | 76.114.64.110 | ০৭ জানুয়ারি ২০১০ ০৪:০৬423215
  • বেশি লিখলে আর ভালো লাগবেনা পড়তে দেখবে। :)
  • mita | 70.179.87.85 | ০৭ জানুয়ারি ২০১০ ০৪:০৯423217
  • তোকে সেটা ভাবতে হবে না, এম্নিতেই তুই এতো কম লিখিস! না রে seriously ভেবে দ্যাখ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন