'হিন্দি' একটি ভাষাবিশেষ নয়। এটি একটি সংস্কৃতি। উত্তর ও মধ্যভারতের বিশাল এলাকা এই সংস্কৃতির অঙ্গ। পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল,জম্মু, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, গুজরাট, মহারাষ্ট্র এর অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত প্রান্তেরই অসংখ্য নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি স্বীকৃত সরকারি ভাষা। কিন্তু যোগাযোগ রক্ষাকারী ভাষা হিসেবে এই সমস্ত জায়গায় হিন্দির কোনও বিকল্প নেই। হিন্দিবলয়ের কেন্দ্র হিসেবে যদি উত্তরপ্রদেশ ও বিহারকে নেওয়া যায় তবে দেখা যাবে এই দুটি রাজ্যেও বহু নিজস্ব ভাষা আছে। বিহারে ভোজপুরি (দুরকম, গঙ্গার উত্তর ও দক্ষিণে), মগহি, মৈথিলি, অঙ্গিকা প্রধান। উত্তরপ্রদেশে ভোজপুরি, অবধি,বুন্দেলখণ্ডি, পহাড়ি ইত্যাদি। একইভাবে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের হিন্দি, হরিয়ানভি, পূর্বি পঞ্জাবি (মনে রাখতে হবে পশ্চিম পঞ্জাব থেকে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের ভাষা আলাদা ছিলো)। ... ...
যে নিরন্তর গণ আন্দোলন এখানে রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি, ইত্যাদি পাপ থেকে মুক্ত রেখেছিল, সেই আন্দোলন – যে চাপেই হোক – স্তিমিত হয়ে পড়ল, তাকে গতিময় রাখার কোনো চিন্তাগত প্রয়াস দেখা গেলনা। বাম নেতৃত্বের তরফে এই বিকাশ বিষয়ে কোনো অনুসন্ধান হয়েছে বলে জানা নেই। হয়তো তাঁরা এই পর্যবেক্ষণের ভার ছেড়ে রেখেছিলেন পেশাদার বুদ্ধিজীবীদের ওপর, বিস্মৃত হয়েছিলেন, বাম রাজনৈতিক দর্শনে বুদ্ধির চর্চাটা সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীদেরই করতে হয়, ঠিকাদার নিয়োগ করে এ কাজ চলে না, এবং বুদ্ধিজীবীদেরও কর্মী হয়ে উঠতে হয়। ফল হয়েছে মারাত্মক, পেশাদার বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন এ-রাজ্যে একটা বিপদ হয়ে দেখা দিতে পারে। ... ...
বিশ্বায়নের আগে আমরা মণিমেলা দেখেছি, বিজ্ঞান জাঠা দেখেছি, এমন কী পাড়ার ক্লাবগুলোর সক্রিয়তা দেখেছি। এখন সেই জায়গায় পোটেনশিয়াল অর্গানাইজাররা অর্কুট-ফেসবুক-টিন্ডার-হোয়াটস অ্যাপ করেন। ফলে সামাজিক পরিসরে সংগঠন ডুবে গেছে, সংঘের আলো উজ্জ্বল হয়েছে। হালে সরস্বতী বিদ্যামন্দির লোকের চোখে টোখে পড়ছে, কিন্তু সক্রিয়তা এক মাত্রায় বহুবছর ধরে থেকেছে। এই দিয়ে ভোটে জেতার সবটা হয়েছে মনে হয় না, কিন্তু কিছুটা হয় নি এমন নিশ্চয়ই নয়। সঙ্ঘারামে নিশ্চিতভাবে সংগঠনের ভিতপুজো হয়েছে। তাহলে বাকি থাকে সংগঠন। একটি সংগঠন ভালো চললে তার ভোট বাড়ে। বিশেষতঃ নতুন খেলতে নামা দল জেতে আর পুরোনো দল হারে ডিফেন্স-মিডফিল্ড-ফরওয়ার্ডের অর্গানাইজেশনের তারতম্য ঘটিয়েই। ... ...
প্রয়োজন নিজেদের শ্রেনী অবস্থান স্পষ্ট করা। এক্ষেত্রে কেরালার উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে সবরিমালা রায়ে যখন গোটা দেশ উত্তাল, এমনকি শিক্ষা ও কৃষ্টির গরিমায় গর্বিত মালয়ালিদের মধ্যে পর্যন্ত যখন আরএসএস সাম্প্রদায়িক বিভেদের বিষ প্রথমবারের মত ঢোকাতে আংশিকভাবে সফল হয়েছে, এমন ঝড়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বে কেরালার পার্টি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে দৃঢ়তার সাথে পালন করেছে। ইতিহাস কম্যুনিস্ট পার্টির এই গৌরবময় ভূমিকা মনে রাখবে। একথা ঠিক যে এবারের নির্বাচনে এলডিএফের ফলাফল খারাপ হয়েছে। কংগ্রেসের নরম হিন্দুত্ব অন্তত আপাতভাবে জয়ী। কিন্তু যদি তলিয়ে ভাবা যায়, এ ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে আপস না করার ফলে বামপন্থীদের যে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি হলো, এমনকি সংসদীয় রাজনীতিতেও তা দীর্ঘমেয়াদি সুফল দেবে। ... ...
এন আর সি এবং নাগরিকত্ব বিলের জোড়াফলাটি অবশ্য খুব সাম্প্রতিক বিষয় ছিল না এবং অনেকদিন ধরেই সেটি বলা হচ্ছিল। এই প্রচারের উগ্র বিভাজন স্বত্ত্বেও সাম্প্রতিককালে বেশ কিছু রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন, বিভিন্ন উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে বিজেপির ধারাবাহিক পরাজয় ঘটছিল। এই সাম্প্রতিক নির্বাচনের পরাজয়গুলি বিরোধীদের মধ্যে আশা তৈরি করছিল এবং তারাও নির্বাচনী অঙ্কের বাস্তবতা মেনে অতীত বৈরিতা ভুলে অনেকটা কাছাকাছি আসছিলেন। এই জোট অনেক জায়গাতে নিজস্ব বৈরিতাকে অতিক্রম করতে পারে নি - যেমন পশ্চিমবঙ্গ বা দিল্লিতে আবার অনেক জায়গাতে পেরেওছে। যেমন কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণভাবে উত্তরপ্রদেশে। তবে প্রাক নির্বাচনী সার্বিক জোট হোক বা না হোক - প্রায় সকল অ এন ডি এ দলই একটি অবিজেপি সরকার তৈরির বিষয়ে একসঙ্গে থাকার, পোস্ট পোল সমঝোতার বার্তা দিয়েছিল। কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ১৯ এ জানুয়ারীর মহাসমাবেশ থেকে এই সমঝোতার বার্তা ক্রমশ উচ্চকিত হয়ে উঠতে থাকে এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের আরো কিছু সমাবেশ বৈঠক যুক্ত কর্মসূচী লাগাতার চলতে থাকে। ... ...
বিভিন্ন সময়-চিহ্নের স্থায়ী ছাপ নিয়ে যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং একক ব্যক্তির একক ভোটাধিকার চালু হলো সেগুলো মূলত সমাজের উপরের স্তরের ক্ষমতা চিহ্ন। এরকম এক ঐতিহাসিকতায় প্রধানত কৃষিসম্পর্কে আবদ্ধ শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে নিয়ে গড়ে ওঠা নতুন ভারতীয় জাতি-রাষ্ট্রে মডার্নিটি বা আধুনিকতা প্রকৃত অর্থে engrafted হয়ে যায়, ঐতিহাসিকভাবে সামাজিক পরিবর্তন ও গতিশীলতার (social and historical dynamics) নিয়মে জন্ম নেয় না। রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যক্তি-সমাজ-কৌম-রাষ্ট্র-নাগরিকতার যে সম্পর্ক নতুন করে রচিত হয় ১৯৪৭ পরবর্তী ভারতবর্ষে তা প্রায়-সম্পূর্ণ ব্রিটিশ রাজনৈতিক সংবিধানের ধারায় তৈরি হওয়া। বিশেষ করে আমরা যদি দুটি বিষয় একবার স্মরণ করে নিতে পারি – (১) ভারতের উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান মুখ স্বয়ং গান্ধী তাঁর নিজের জীবনের ক্ষেত্রে একাধিকবার দুটি passion-এর কথা বলেছেন। প্রথমটি হল ব্রিটিশ সংবিধান (Pax Britannica-ও বটে) এবং দ্বিতীয়টি নার্সিং বা শুশ্রুষা। (২) প্রধানত শিল্প বিপ্লবোত্তর ইউরোপে সমাজ এবং কৌমের ধারণা খসে গেছে প্রায় ৩০০ বছর জুড়ে। নাগরিক ও রাষ্ট্রের মাঝে সরাসরি সম্পর্ক – অধিকার এবং কর্তব্যের বাঁধনে, cash nexus-এর প্রবল উপস্থিতিতে। এখানে মধ্যস্থতাকারী কোন সামাজিক পরিসর নেই, যা আছে তা নাগরিক পরিসর বা সিভিল স্পেস। ডেমোক্রাসির স্বর্ণযুগে কিংবা সামাজিক পরিসরের সবল, জোরালো উপস্থিতির সময় আধুনিকতা নির্মিত নাগরিকতার ভাষ্য ছাড়াও আরও অনেক স্বর, কণ্ঠ, আত্মপ্রকাশ করে – indiscernible থেকে discernible হয়ে ওঠে, invisibility থেকে visibility-র স্তরে উঠে আসে। ... ...
লাশটা বেগুসরাইয়ের ফাগো তাঁতীর, বুড়ো হলেও যার আজাদির তৃষ্ণা মরেনি। বরং পরাধীন সারা জীবনের গ্লানি মোচনের জন্য সে এবার বেছে নিয়েছিল কানহাইয়া কুমারের প্রতি আনুগত্য। সারা নির্বাচন তরুণ নেতার জন্য চষে বেড়িয়েছে গোটা বেগুসরাই। পাগলের মতো গলা মিলিয়েছে আজাদির গানে আর ভোটের দিন সবার আগে আঙুলে দাগ নিয়ে মাতিহানি ভোট কেন্দ্রের বাইরে এসে উল্লাসে ফেটে পড়েছে -- হাম লেকে রহেঙ্গে আজাদি। ঘাতকের চোখ তাকে অনুসরণ করছিল প্রচার পর্ব থেকেই। ফাগু তাঁতীর লিডার বনবার শখ হয়েছে তো খুব - তো দেখ নতিজা। ঘর থেকে তুলে নিয়ে গেল বাহুবলীরা, পারলো তোর কানাহাইয়া তোকে বাঁচাতে ? ঘরে ফিরল কাটাছেঁড়া করা প্রায় নাঙ্গা লাশ। ডুকরে কাঁদতেও ভয় পায় বালবাচ্চা বৌ। ... ...
যতদিন না স্টেট ফান্ডিং চালু হচ্ছে, সিপিএমের এটা একটা অনেক দিনের দাবি, ততদিন ভোটে কোটি কোটি টাকা খরচ না করতে পারলে লড়াই করাই অসম্ভব। বিজেপির হাতে যত টাকা, মায়াবতী, অখিলেশ, চন্দ্রবাবুদের হাতে যত অর্থবল, তৃণমূলের তার সিকি অংশও নেই। সিপিএম নেতা গৌতম দেব অভিযোগ করেছিলেন, ২০১১-র ভোটে তৃণমূলের ফান্ডে চিটফান্ডের টাকা ঢুকেছিল। হয়তো ঢুকেছিল, কিন্তু তা আজও প্রমাণ হয়নি। ২০১৪তেই তৃণমূলের হাতে টাকা যথেষ্ট কম ছিল। বিজেপি তখন থেকেই পশ্চিমবঙ্গ দখলের পরিকল্পনা করে। এবং তারা জানত, মমতাই প্রধান বাধা। দলেরই একজন টাকা দিয়ে নিয়োগ করে এক এজেন্সিকে। যার ফল আমরা দেখেছিলাম, পাঁচ লক্ষ টাকা করে নিচ্ছেন একেক জন নেতা। ... ...
সাত সকালেই চড়া রোদ। গুমোট হয়ে আছে বাতাস। ঘাম মুছে শেষ করা যাচ্ছে না। ক্ষণে ক্ষণে চশমার কাচে জমছে বাষ্প। মাথায় গামছা চাপিয়ে ছাতা ছাড়াই বেরিয়ে পড়েছি। ঘুরছি মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকলের কয়েকটা গ্রামে। কোথায় বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে, কোথায় পাওয়া যাবে নির্মাণ শ্রমিকদের, খোঁজ নিচ্ছি লোকজনের কাছে। এই জেলার নির্মাণ শ্রমিকের বেশিরভাগই পরিযায়ী। কাজ করতে যান ভিন রাজ্যে। মূলত কেরলে। ভিন রাজ্যের যে কোনও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হন এঁরাও। প্রবল বন্যায় কেরল ভেসে গেলে হাহাকার পড়ে যায় মুর্শিদাবাদের ঘরে ঘরে। কখনও বা ঘরে ফেরে শ্রমিকের কফিনবন্দী লাশ। কলকাতায় উড়ালপুল ভাঙলে চাপা পড়েন এই জেলার নির্মাণ শ্রমিকরাই। কোনও পরিসংখ্যান না থাকাই কখনও কখনও খুঁজে পাওয়া যায় না অনেক শ্রমিককে। পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন এভাবেই এগিয়ে চলে। ... ...
ভারতের নির্বাচন চলছে। ৩ দফা হয়ে গেছে আরও ৪ দফা বাকি আছে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না ভারতের নির্বাচন কি পদ্ধতিতে হয়। ভারতের নির্বাচন হয় এফপিটিপি বা ফার্স্ট পাস্ট দা পোস্ট পদ্ধতিতে। অনেকেই ভাবছেন এটা আবার কি বিষয়? সহজ করে বললে এই শব্দটার মানে দাঁড়ায় এই পদ্ধতিতে যে প্রার্থী সবচেয়ে বেশী ভোট পাবেন তাঁকেই জয়ী হিসেবে মান্য করতে হবে ভোটারদের। সে যদি কোনও ভোটার তাঁকে ভোট নাও দেন তাও। এই পদ্ধতিতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ভোট হয়। দেখা গেছে যে যে সব দেশ বিভিন্ন সময়ে ইংরেজদের কলোনি ছিল যেমন কানাডা, সুদান, কেনিয়া , ভারত এবং অন্যান্যরা এখনো এই পদ্ধতিতে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই পদ্ধতিতে অসুবিধা কোথায় এবং এর সঙ্গে ইভিএমের কি সম্পর্ক? ... ...
আদিম এই পেশাটিতে ঠেলে দেবার পেছনে যদিও দারিদ্র, বিশ্বাসঘাতকতা, ঘর বাঁধবার দুস্তর স্বপ্ন, যা মরিয়াও মরে না-- এইগুলি এবং হিউম্যান ট্রাফিকিং প্রায় একশ পার্সেন্ট দায়ী, তবু কাঁচা পয়সার প্রাবল্য একটা বড় ব্যাপার। অনেক মেয়েই সেই লোভ কাটিয়ে উঠতে পারেনা। আর পুনর্বাসনের নামে তার সামনে যেসব প্রকল্প রাখা হয়, সেগুলোর অবস্থা অতি করুণ। দিনে দশ বার ঘন্টা সেলাই মেশিন চালিয়ে বা বিড়ি বেঁধে সে মাসিক যা ইনকাম করবে সোনাগাছিতে একদিনে তার বহুগুণ বেশি করবে। এই খানে ছোট্ট একটি তথ্য। একজন জনপ্রিয় যৌনকর্মী দিনে গড়ে প্রায় কুড়ি জন খদ্দেরের সন্তুষ্টি বিধান করে। এদের প্রায় প্রত্যেকের টাকায় তার আত্মীয় স্বজন প্রতিপালিত হয়। যেন সব লেডি দস্যু রত্নাকরের জীবনকাহিনী। পাপের ভাগ নয়, টাকার ভাগ চাই। ... ...
যেহেতু ২০১৭ সালে মায়ানমারে সেনাবাহিনীর অত্যাচার চরমে উঠেছিল, তাই গত বছরের মাঝামাঝি রিফিউজি ক্যাম্পে শিশু-জন্মের ঢল নেমেছিল। তখনই ইউনাইটেড নেশন জানিয়েছিলেন যে প্রতি দিনে প্রায় ৬০টি করে শিশুর জন্ম হচ্ছে। এই শিশুদের অধিকাংশই জন্মায় সরকারী বা বেসরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সীমানার বাইরে। গ্রাম্য দাই-এর হাতে জন্ম। জন্মের পরে এদের কোন রেজিস্ট্রেসন হয় না। তাই সরকারী ভাবে এরা অদৃশ্য – কোন সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের সুযোগ এদের কাছে আকাশের চাঁদ। উদবাস্তু শিবিরের পানীয় জল, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অবস্থা যেমন, তাতে এই শিশুগুলির সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা কতটা সেটা বেশ চিন্তার। শিশুমৃত্যুর হার বোঝার চেষ্টাও বাতুলতা কারণ সরকারী হিসেবে শিশুগুলি স্রেফ নেই। ... ...
কলেজস্ট্রিটের এক ফুটপাথে থাকেন কয়েকজন টানা রিক্সা চালক। ফুটপাথেই তাঁদের সংসার। ফুটপাথের এক কোণে মাটির তোলা উনুন। ফুটপাথ লাগোয়া বাড়ির প্রবেশ দরজার পাশেই বড় স্টিলের ট্রাঙ্কের মধ্যে তাঁদের যাবতীয় জিনিসপত্র; হাড়িপাতিল থেকে জামাকাপড়। কর্পোরেশনের টাইম কলে স্নান করা, কাপড় কাচা, বাসন ধোয়া। ফুটপাথে দাঁড়িয়েই জামাকাপড় বদলে নেওয়া। ফুটপাথের ওপর টাঙানো দড়িতে শুকোয় তাঁদের পোশাক। পার্ক করা টানা রিক্সায় রোদ এসে পড়েছে। তাতেও শুকোতে দেওয়া কয়েকটা ছোট জামাকাপড়। মহেশ্বরী প্রসাদ (৪৫) এখানেই থাকেন। সাত বছর কলকাতায় আছেন। গ্রামের মানুষদের সঙ্গে সতেরো/আঠেরো বছর বয়সে শহরে আসেন। প্রথমে মুটেগিরি করতেন। একশ কেজি, আশি কেজির বোঝা বইতেন। শেষে টানা রিক্সা চালানোই পেশা হিসেবে নেন। ... ...
নলিনী উপন্যাস জুড়ে এরকম অসংখ্য চরিত্র- মানুষের যন্ত্রণা, হাসি, আনন্দ, দুঃখ, বেদনা, সর্বোপরি মানবীয় দ্বন্দ্ব, স্ব-বিরোধিতা নিয়ে জীবন্ত উঠে আসে। চরিত্রগুলোকে দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়। সাতশো চল্লিশ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি হয়ে ওঠে একটি যাত্রা যেখানে পাঠক হয়ে ওঠেন লোধা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জনসমুদায়গুলির নানান বহুত্বময়তার সঙ্গী। বন-নির্ভরতা থেকে ধীরে ধীরে কৃষি মজুরে পরিণত হওয়া, তার ভিতরকার জটিল রাষ্ট্রীয় ও দলীয় রাজনীতি, পঞ্চায়েত, পুলিশ, পার্টি, কাঠ-ব্যবসা,সব মিলিয়ে যে সমাজ পরিবর্তন তার ফাঁকে ফাঁকে নলিনী আবিষ্কার করেন ঐতিহাসিকতা ... ...
সবাইকে নিঃশব্দে লক্ষ্য করছি। ভাবছি, কে হতে পারেন ‘স্টোরি’র চরিত্র। কে হতে পারেন সেই মেয়ে যাকে নির্বাচন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা যায়। গাছকোমর শাড়ি পরা এক মহিলা বেশ বড় একটা ঝুড়ির কাছে এসে দাঁড়ান। পাশে আরেকটা ছোট ঝুড়ি। হলদে পাড়, লাল-কালো বেবি প্রিন্ট মলিন শাড়ির ওপর কোমরে বাঁধা রঙচটা গোলাপি গামছা। লাল ব্লাউজের হাতার সেলাই অল্প খুলে গেছে। দুহাতে দুই ক্ষয়াটে সোনালী মেটাল চুড়ি। বাঁ হাতের বাজুতে বাঁধা রঙচটা ধাগা। মাথার চুল উল্টে ছোট্ট খোঁপা। অবাধ্য কুচো চুল কপাল ও কানের প্রান্তে ছড়িয়ে। তাঁকেই জিজ্ঞেস করা গেল, “দিদি, ঝুড়ি আপনার?” ... ...
নাগরিক জীবনে লোকগানকে প্রবেশ করাতে পিট সিগারের বিশ্বব্যাপী যে ভূমিকা, অমর পাল বাংলায় সম্ভবত সেই কাজটিই করতে চেয়েছিলেন বললে অত্যুক্তি হয়না। মোট চব্বিশটা বাংলা ছবিতে গান গেয়েছেন। সত্যজিৎ রায় , উৎপল দত্ত , সলিল চৌধুরী, শচীন দেববর্মণ- রা যার গানের গুণগ্রাহী ছিলেন, তাঁর নামে একটি উইকি পেজও নেই। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন: অর্ক দেব ... ...
আকাশের চাঁদ হাতে এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট জেতার সাড়ে চার বছর পর আমরা দাঁড়িয়ে আছি এমন এক সন্ধিক্ষণে যখন কর্মসংস্থানের হার বিগত চার দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন, কৃষিক্ষেত্র বিপর্যস্ত, অসংগঠিত ক্ষেত্র রক্তশুন্য, টাকার মূল্য তলানিতে, চলতি খাতে ঘাটতি ক্রমবর্ধমান, সুদের হার চড়া ব্যাংকিং ক্ষেত্র অপরিশোধিত ঋণের ভারে ন্যুব্জ, কর ব্যবস্থা বেহাল, কর্পোরেট মুনাফার হার নিম্নমুখী, রপ্তানি ক্রমশ কমছে, এবং জিডিপি বৃদ্ধির হার যাবতীয় সংখ্যাতাত্ত্বিক চাতুরির পরেও আগের দশকের তুলনায় কম। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির উপর ভিত্তি করে তৈরি হওয়া প্রত্যাশার বুদবুদ আজ ফেটে গেছে। পড়ে আছে শুধু ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন আর আশাভঙ্গের তিক্ততা। মার্কিন রাজনীতিবিদ মারিও কুমো একবার ... ...
এ ভোটের বর্ণময় উৎসবে কি চাইবো আমি? কিই বা চাইতে পারে আমার মতো এককসত্তাসম্পন্ন, রাজনৈতিক- প্রশাসনিক-সামরিক ক্ষমতাহীন একজন মানুষ? চাইতে পারে “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে”, নিদেন পক্ষে ফ্যানে-ভাতে। চাইতে পারে নদী-অরণ্য-বৃক্ষ-অরণ্যের সন্তানদের হত্যা বন্ধ হোক। আবার প্রায়-মৃত নদীগুলো বেগবান উঠুক। নদী মরে যাচ্ছে বলে খোদ আমেরিকায় ১৫০০-এর বেশি বাঁধ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। কলোরাডোর সহ অনেক ছোট নদী আবার বেগবান হয়ে উঠেছে, হারিয়ে যাওয়া মাছ আর শৈবালেরা ফিরে আসছে ধরিত্রীর বুকে। এই সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর বিস্তর ঢালাও প্রতিশ্রুতির বন্যায় আমরাও একটু-আধটু চাইতে পারি। চাইতে পারি জীবন যাত্রার সুস্থ-স্বাভাবিক সমস্ত ধরনকে রাষ্ট্র এবং এর পরিচালকেরা মমতা নিয়ে স্বীকৃতি দিক। কোন একটি name tag-এ যেন তাদের দাগিয়ে দেওয়া না হয়। হাঙ্গর সদৃশ কর্পোরেটরা নয়, ভারতের অর্থনীতি নির্মিত হোক নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করে। ... ...
ভোটে স্বচ্ছতার দাবি জানিয়ে মমতা আন্দোল শুরু করেছিলেন ১৯৯০ থেকেই। তবে তিনি ক্ষমতায় আসার পর পুরোনো সব রেকর্ড ভেঙে খান খান হয়ে গেল। পশ্চিম বঙ্গে অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে, গুন্ডা এবং বিপুল অর্থ ছাড়া ভোটে লড়াই করা সম্ভব নয়। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে কানে এসেছে, প্রমাণ করা সম্ভব নয়, চলতি ভোটে বিপুল টাকা ছড়িয়েছে এই রাজ্যে আসন বৃদ্ধিতে উৎসাহী একটি দল। সারা দেশে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির বিপরীতে আমরা দেখছি, নতুন এক ঝাঁক তরুণ নেতা উঠে আসছেন। কানাহাইয়া কুমার, উমর খালিদ, শহেলা রশিদ, জিগনেশ, হার্দিক। এরা কেজরিওয়াল পরবরতী প্রজন্ম। এইটুকুই যা আশার আলো। বাকিটা বড়ই অন্ধকার। ... ...
প্রায় জনমানবহীন এক আশ্চর্য নিসর্গকে রঙ-তুলিতে ধরতে চেয়ে গণেশ হালুই বারবার ভুল-বোঝার শিকার হয়েছেন। সমকালীন চিত্রধারার আপাত-দৃশ্যমান সমাজমুখিনতার বিপ্রতীপে তাঁর বিমূর্ত নিসর্গকে ফেলে তাঁর শিল্পকে সমাজবিমুখ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে। মিতবাক, বিনয়ী মানুষটি উত্তর দিতে পারেন নি এই অভিযোগের। নাকি দিতে চাননি? আজ এক আত্মকথনে তিনি যখন বলেন, “এখন আমি একজন ছবি আঁকিয়ে। অনেকের মতে আমার ছবিতে মানুষের কথা নেই। আমি এর উত্তর খুঁজি। নির্ঘাত মৃত্যু থেকে বেঁচে ওঠাতেই মানুষ মৃত্যুর কথা ভোলে এবং এই ভোলার মধ্যেই যে আনন্দের ধারা, তাতেই সেই মৃত্যুর সুর বাজে।” সেও কোনো উচ্চকিত জবাব নয়, এ এক নিভৃত মনোলগ। নিজের সাথে নিজের কথা। ... ...