"একা বেড়ানোর আনন্দে" - সিরিজের পর্ব ৪ - - - বিড় বিড় করে অস্পষ্টভাষী নন্দনবাবা নন্দী মাহাত্ম্য দিয়ে শুরু করে সমুদ্র মন্থনে পাক মেরে বিশ্বরূপ দর্শন ছুঁয়ে কী যে ঘন্ট পাকালেন মাথায় কিছুই ঢুকলো না। মহিলাটি শোনার চেয়ে বাবার বক্তব্য মোবাইলে রেকর্ড করতে ব্যাগ্ৰ। ব্যাটারি ডাউন হয়ে তাও বন্ধ হয়ে গেল। আমি মুখ নীচু করে হাসি চাপি। এক দশক কুয়েতবাসী মহিলা বাবাকে অতক্ষণ বকিয়ে, বাবামৃত আংশিক রেকর্ড করে বাবার ATMএ রাখলেন মাত্র দশটি টাকা! বাবা চকিতে দৃষ্টিপাত করেন আমার দিকে। তারা চলে যেতে আমার দিকে মর্মভেদী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝোপড়ার সামনে খোলা আকাশে দু হাতে ফ্রেমের ভঙ্গি করে বলেন, LCD স্ক্রিন মে ইয়ে ড্রামা ক্যায়সা লাগা? বলি, য্যায়সা অনোখা সওয়াল এ্যাসেহী লা-জবাব জবাব। অস্পষ্টভাষী বাবা হাসেন প্রাণ খুলে। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৩ - - - জানতে চাই, ওখানে যেতে পারি? চুরি ছিনতাই বা বণ্যজন্তুর ভয় নেই তো। কথা বলে বুঝি, প্রায় চার কিমি দুর, শ তিনেক ফুট উঁচু পাহাড়ে ওঠার পথে কিছুটা সিঁড়ি আছে বাকিটা গিরিশিরা ধরে উঠতে হবে। হাঁটায় বা ওঠায় আমার অসুবিধা নেই। লোকজন কেউ যায়না, তাই লুটবেটা কাকে? ফলে চোর ছ্যাঁচোরও নেই। পান্না টাইগার রিজার্ভ থেকে কচিৎ কখনো ডোরাদা বা দিদিমণি হাওয়া খেতে এদিক ওদিক গেলেও এতোটা আসেন না, ভর দুপুরে তো নয়ই। সুতরাং বাস্তবিক বিপদের কোনো ভয় নেই। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি ২য় পর্ব - - - - ২৮৩ বছর ধরে এখানে চলে আসা ইদের নামাজ ১৯৬৫ সালে মধ্যপ্রদেশের তদান্তীন দাপুটে মুখ্যমন্ত্রী পন্ডিত দ্বারকাপ্রসাদ মিশ্রের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়। সরকারী অনুদানে সাঁচী রোডে তৈরী হয় নতুন ঈদগাহ। ২০০২এ ASI মন্দির চত্বরে একটি গুদাম বানিয়ে এখানে পাওয়া মূর্ত্তির ভগ্নাংশ তালাবন্ধ করে রেখে দেয়। কিছু উন্মুক্ত জমিতেও সাজিয়ে রাখা আছে। তার কারুকার্য বেশ উন্নত মানের। এখানে আছে অষ্টম শতকের একটি বাউলী (step well). তার দেওয়ালে খোদিত আছে কৃষ্ণলীলার কিছু দৃশ্য। অনুমান ওই মন্দিরের আগেও এখানে কিছু ছিল। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এই প্রথম পর্বটি এই সিরিজের প্রাককথন। ... ...
মধ্যপ্রদেশ ভৌগোলিক ভাবে ভারতের হৃদয় কিন্তু ওখানকার মানুষের সহৃদয়তার পরিচয়ও আমি বারংবার পেয়েছি ... ... ...
এরপর গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে খাজ্জিয়ারের ফটকের বাইরে ছেড়ে দিলেন। পুরো রাস্তাটা নির্জন থাকলেও এই জায়গাটায় একেবারে গাড়ির এবং মানুষের মেলা বসে গেছে। খাজ্জিয়ার একেবারে প্রাকৃতিক একটা গড়ের মাঠের মত। চারদিক কালাটপ বনাঞ্চলের পাইন দিয়ে ঢাকা। বৃষ্টির জল জমে মাঝখানে একটা ছোট হ্রদ। সেখানে অবশ্য এখন গরমকালে বড় বড় মানুষসমান ঘাসের ঝোপ জন্মেছে। বর্ষাকালের পর আবার জল বাড়বে ঘাসের ঝোপ ঢেকে যাবে। শীতকালে এই উপত্যকা বরফে ঢেকে যায়। কিছু থাকার জায়গাও হয়েছে এখন খাজ্জিয়ারের কাছাকছি। ... ...
একটা বয়স ছিল, যখন ট্রেনে উঠলেই মনে হত, আহা উল্টোদিকের সিটে যদি কোনও সুন্দরী এসে বসে! তখন এসে বসতো পাকা বাচ্চা, কানে ট্রানজিস্টর লাগানো দাদু, এরা। দু’এক বার আমাকে পরিহাস করতে সন্ন্যাসীও এসে বসেছে। তারপর ট্রেনে যাওয়া-আসা বাড়তে লাগলো, আর আমিও বুঝলাম, সুন্দরী মেয়ে আসলে ইয়েতির মতো একটা ব্যাপার। স্লীপার ক্লাসে তাকে খোঁজা বৃথা; তার চেয়ে পিএইচডি করা ভালো। ... ...
আজ একটা বিচিত্র ভ্রমণের গল্প বলবো আপনাদের। প্ল্যান করে তো সবাই ঘুরতে যায়। দুপুরে খেতে বেরিয়ে কখন ঋষিকেশ চলে গেছেন? আমি গেছি। ... ...
নাচ মেরে বুলবুল কি মৌত মিলেগা ... ...
ফেরার গল্প শোনো। ভোরে উঠে ট্যাক্সি করে চিৎপুর স্টেশনে চলে গেলাম আমরা। এখান থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকার উদেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে যাত্রা বেশ আরামদায়ক। সবচেয়ে বড় আরাম হচ্ছে সীমান্তে আমাদের কোন দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না। এই স্টেশনে আমাদের সমস্ত ইমিগ্রেশন, কাস্টমসের কাজ শেষ করে ট্রেনে তুলে দিবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, আবার ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে( ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন! তুমি এখান থেকে রাজশাহীর ট্রেনে উঠতা!) নামার পরে ঢাকার কাস্টমস অফিসাররা বাংলাদেশের অংশের কাজ কাম শেষ করে মুক্তি দিবে আমাদের। সহজ না? ... ...
রনি, কলকাতায় মার খাচ্ছে বাংলা। এটা বলে বুঝানোর মত না। অকারণে মানুষ হিন্দি বলে! কেন বলে নিজেও জানে না। আপদমস্তক বাঙালি, কোন আন্দাজে হিন্দি বলে চলে সবাই? আমরা ঢাকা থাকা কালে হিন্দি শুনলেই মনে করতাম বিহারী কেউ আছে আশেপাশে! প্রথম নেমে যখন হিন্দি শুনলাম একজনের মুখে তখন আমার মনে হল আরে বিহারী না কি! না, বিহারী না। এরা শিক্ষিত, ভদ্র এবং সবাই হিন্দিতে কথা বলতে চায়। রিকশাওয়ালা, উবার চালক, ট্যাক্সই চালকদের দেখে আমার মনে হয়েছে এরা হয় সবাই ভিন্ন প্রদেশ থেকে এসেছে না হয় এদের মানসিক সমস্যা আছে। এই রোগের চিকিৎসা নিয়ে কলকাতা কী ভাবছে আমার জানা নাই। ভাবছে কি না তাও জানা নাই। এদিক থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে এগিয়ে আছে। বাংলা আমাদের এখনও একমাত্র ভাষা। উবার ডাকেন, হেলিকপ্টার ডাকেন, ড্রাইভার আপনাকে আমাদের দেশে বাংলায়ই ডাক দিবে, এইটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই। ... ...
জাতীয় গ্রন্থাগারের প্রধান ফটকেই আমাকে আটকে দেওয়া হল। বললাম, লাইব্রেরীতে কেন যায়? বই দেখব, পড়ব, হাতাব! মছুয়া দারওয়ান বলল, উঁহু, এখানে ওই সব হয় না! ওই সব করতে হলে আগে থেকে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, কবে আমি আসব তা আগে থেকেই ঠিক করে আসতে হবে। আর যদি সদস্য হওন তাহলে বই বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন! তাহলে এখন? তিনি জানালেন, ‘ভিজিট’ দিয়ে আসতে পারবেন! ভিজিট দিয়েই না হয় আসলাম। নাম, ঠিকানা, ডাবল ডোজ টিকা চাইলেন, আমি টিপ্রল ডোজ টিকার কার্ড দেখিয়ে, নাম ধাম দিয়ে ঢুকলাম। ওই ঢুকা পর্যন্তই। ভিতরেও একই কাণ্ড। একজন মহিলা আমাকে নিয়ে রিডিং রুমে নিয়ে গেলেন। বললেন, ওই যে ওইটা রিডিং রুম। আমি কাছে যেতে চাইলে বললেন, উঁহু, কাছে যাওয়া যাবে না। বোঝ? আমি এদিকে একটু উঁকি দিতে চাই, নানা কোন দিকে তাকানো যাবে না! একটা ছবি তুলি? নেহি! অজ্ঞতা আর কী, চলে আসলাম। ... ...
হাঁটতে হাঁটতে হুট করে চোখে পড়ল ধবধবে সাদা এক দালান। দেখেই বুঝা যায় গথিক স্থাপনার এক অনন্য নজির এই দালান। কাছে গেলাম, দেখি সেন্ট পল ক্যাথিড্রাল। অপূর্ব সুন্দর গির্জা। আমার মফস্বল চোখ এত সুন্দর স্থাপনা খুব কমই দেখেছে। রনি, মজার কথা হচ্ছে গির্জায় ঢুকতে টাকা নিলো! কেমন বেশরিয়তি কারবার! মানুষ ঠিকমত ধর্মকর্ম করতে পারবে না? গির্জায় যেতে টাকা নিবে? দশ টাকা দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। সিনেমায় যেমন চার্চ দেখি আমরা তেমন একটা চার্চ। দা ভেঞ্চি কোডের শুটিং করা যাবে চোখ বন্ধ করে। আমি ভিতরে গিয়ে বসলাম। অল্প কিছু মানুষ। নীরবে প্রার্থনা করছে। মনে হল একজনকে জিজ্ঞাস করি যে উনিও দশ টাকা দিয়ে প্রার্থনা করতে আসছেন কি না। কিন্তু তা আর করা হয় নাই। আমি দেখি সারি সারি যে চেয়ার গুলো বসানো তার উপরে মুখোমুখি করে বড় বড় চেয়ারের সারি। দুই পাসেই আছে এমন। এবং সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার হল এখানে এখনও ব্রিটিশ আমলের চিহ্ন ধরে রেখেছে। সমগ্র ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রধান প্রধান শহরের চার্চ প্রধানদের জন্য সংরক্ষিত জায়গা এগুলা। লাহোর, বোম্বে যেমন আছে তেমনই ক্যালকাটার পাসেই লেখা ডাক্কা! প্রতিটার জন্য আলাদা আলাদা পতাকা আছে। দারুণ লাগল দেখে। ... ...
একটা অটোতে আমি। অটো চালক আমাকে দেখেই আর সবার মত বুঝে গেলেন আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। তিনি হেসে জিজ্ঞাস করলেন, বাংলাদেশ থেকে আসছেন? আমি বললাম, জি, দেখেই বুঝে ফেলছেন? তিনি উত্তর দিলেন না, হাসলেন। একটু আগানোর পরে, বাংলাদেশ তো খুব দারুণ করছে এখন। হাসিনা তো দেখায় দিচ্ছে! আর এদিকে দেখুন, সব চোর বাটপার! আমি কেন আল্লাই জানে বললাম, ভাল খারাপ সব দিকেই আছে, আমাদের ওদিকে তো আরও বেশিই আছে। লুটপাট চলে রীতিমত। তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালেন, এরপরে আবার চালাতে লাগলেন। এদিকের থেকে বেশি চোর আর কোথাও আছে? এইটা আপনে বললেই বিশ্বাস করব আমি? আমি বললাম, আরে, কি বলেন, এদিকের খবর আমরা দেখি না? এখানে তো কত পরিষ্কার ব্যবস্থা, জবাবদিহি আছে। কেউ চাইলেই একটা কিছু… তিনি হা হা হা করে হাসা শুরু করে দিলেন। আমি থেমে গেলাম। এবার তিনি আবার শুরু করলেন কোন নেতা কত খাচ্ছে, কোথায় খাচ্ছে, দেশটা যে উজাড় করে নিয়ে নিচ্ছে সব চোরেরা এইটা তিনি নিশ্চিত। কবে মুখ থুবড়ে পড়বে এইটাই এখন দেখার বিষয়। আমিও বলা শুরু করেছিলাম প্রায়। হুট করেই মনে হল অনেক আগে পড়া বেসিক আলীর কমিক স্ট্রিপের একটা পর্বের কথা। ... ...
আমার কলকাতা ঘুরার জন্য আমি একটা ছোটখাটো তালিকা বানিয়েছি। এক নম্বর হচ্ছে ৮ থিয়েটার রোড। মুশকিল হচ্ছে থিয়েটার রোড বলে কোন রোড এখন আর নাই, এখন হচ্ছে শেক্সপিয়ার সরণি। আরও মুশকিল হচ্ছে আমি কেন থিয়েটার রোড যেতে চাই এইটা কেউ জানেও না। ভারতীয় সরকারও না, বাংলাদেশ সরকারও না! কী একটা আশ্চর্য কাণ্ড না? অথচ আমার কাছে কলকাতা এই কারণেই, আট নাম্বার থিয়েটার রোডের জন্যই বিশেষ। আমার কাছে কলকাতা প্রাচীন দালানের জন্য আকর্ষণীয় না, ভিক্টরিরা মেমোরিয়াল না দেখে দেশে ফিরলে বিন্দুমাত্র আফসোস হবে না, যাদুঘরের জন্য না, কম দামে জিনিস পাওয়া যায় এই কারণে না, আমার কাছে কলকাতা বিশেষ কারণ এই পথে এক সময় সুনীল শক্তিরা রাত জেগে শহর পাহারা দিয়েছে। বিশেষ কারণ এইখানে এমন কিছু মনিষীর আগমন ঘটেছিল যারা বাঙালি জাতির দিক পথ পরিবর্তন করে দিয়েছিল। শহর হিসেবে ঢাকার থেকে ঢের নবীন শহর কলকাতা, অথচ বাঙালি জাতির উপরে এর প্রভাব পড়েছে অনেক অনেক বেশি। আর প্রধান কারনই হচ্ছে এই মনিষীরা। আমি একটা টান অনুভব করি কারণ এখানে, এই ১৩৪, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে এক সাধক বাস করতেন, যার জীবন আমাকে অদ্ভুত ভাবে টানে। মনে হয় সব ছেড়ে শিবরাম হয়ে যাই। এই কয়দিনে কতদূর দেখতে পারব জানি না। চেষ্টা করব যতদূর যাওয়া যায় যাওয়ার। ... ...
সামনে দিগন্তজোড়া ক্যানভাসে চলছে রঙে রেখায় ছবি আঁকা। কমলা থেকে লাল হয়ে মেরুণ হয়ে সূর্য টুপ্পুস করে নেমে যায়, ডুব দেয় দিবাঙে। বিশাল উপত্যকা ছড়িয়ে থাকে রূপোলি থেকে নীল হয়ে পার্পল হয়ে যাওয়া দিবাঙের ধারাগুলো বুকে নিয়ে, কমলালেবু গাছেরাও সেজে ওঠে লাল কমলার নানা শেডে, সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে আরো পঁয়তাল্লিশ মিনিট কি একঘন্টা পশ্চিম আকাশ ধরে রাখে রঙের ছোপ। ওখান থেকে নেমে ভেতরের প্রাঙ্গনে এসে দাঁড়াই, খাবারঘরের জানলা দরজা দিয়ে লালে লাল আকাশ আর মাথার উপরে পেট্রোল ব্লু আকাশ ধীরে ধীরে মুছে নেয় মনের উপর লেপ্টে থাকা কালো অন্ধকার। ‘কলুষ কল্মষ বিরোধ বিদ্বেষ হউক নির্মল,হউক নিঃশেষ-‘ সুচিত্রা মিত্রর জোরালো বলিষ্ঠ গলার সাথে মিশে যেতে থাকে আমার গলা। ... ...
নামদাফায় যদিও বিগ ক্যাট প্রজাতির চার রকম প্রাণীর (টাইগার, লেপার্ড, স্নো লেপার্ড, ক্লাউডেড লেপার্ড) সন্ধান পাওয়া যায় তবে এতটা নীচে লোক চলাচলের পথের এত কাছে তারা আসে না, বলা ভাল তাদের আসার দরকার হয় না (ভাগ্যিস!), জঙ্গল এখনো যথেষ্ট ঘন এবং জঙ্গলের অনেকটাই মানুষের, অন্তত শহুরে মানুষের জন্য প্রায় অগম্য স্থান। কিন্তু চোরাই কাঠ পাচারকারিদের উৎপাতে বেমক্কা বন নিধনের ফলে নামদাফার জীববৈচিত্র্য অনেকটাই ঝুঁকির মুখে। আর কতদিন তথাকথিত উন্নয়নের জাঁতাকল ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে নামদাফা বাঁচবে জানি না, এখনো অন্তত অনেকটাই আছে। এমনকি নদীর ওইপারের কোর এরিয়াতে না ঢুকলেও প্রজাপতিই যে কতরকম দেখা যায়, পাখি সেও তো কতরকমই দেখা যায় আর দেখা যায় নানারকম রঙ বেরঙের পোকা। ও হ্যাঁ নামদাফায় কিন্তু প্রচুর অজস্র জোঁক। এখানে পাঁচ রকম বিভিন্ন প্রজাতির জোঁক দেখা যায়। শুকনো আবহাওয়ায় এমনিতে জোঁক কম হলেও ডিসেম্বরেও কিছু জোঁক দিব্বি মানুষের গোড়ালি কিম্বা জুতোমোজা ও জিন্সের ফাঁক গলে পায়ের গোছে ঝুলে পড়েছে। ... ...
দেবান বাংলোটা এমন জায়গায় যেখান থেকে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু সূর্যাস্তের দেড়ঘন্টা পরেও নদী পেরিয়ে জঙ্গলের ওই কোণায় যে দক্ষিণ পশ্চিম আকাশ তার দিগন্তরেখা ঘেঁষা আঁচল টকটকে লাল হয়ে থাকে। গোটা আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে, আমলকি গাছের মাথায় হীরের দুলের মত ঝকঝকে সন্ধ্যাতারা, আস্তে আস্তে একটি দুটি করে রাতের ক্লাসে হাজিরা দিচ্ছে অন্য তারারাও, তবুও দিগন্তের আঁচল তখনো লাল থেকে গাঢ় লাল হয়ে মেরুণ হয়ে আসছে আর সেই রঙটুকু ফোটাতেই যেন অল্প একটু তুঁতেনীল লেগে আছে উপরে। ... ...
নামদাফা টাইগার রিজার্ভ - অভয়ারণ্যের নাম এটাই। ব্যপ্তি মিশমি পাহাড়ের দাফা-বাম রেঞ্জ আর পাটকাই রেঞ্জের মাঝের পুব পশ্চিমে বিস্তৃত প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার এলাকা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ৬৫৬ ফুট (২০০ মিটার) থেকে ধাপে ধাপে বেড়ে প্রায় ১৫০০০ হাজার ফিট (৪৫৭১ মিটার) অবধি উঠেছে। বলা হয় যে এই অঞ্চলের উদ্ভিদসম্পদের পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করতে কমবেশী ৫০ বছর সময় লাগবে, এত বহুল ব্যপ্ত এর উদ্ভিদবৈচিত্র। মিশমি-তিতা বা কপতি-তিতা নামের ভেষজ উদ্ভিদ নামদাফার গহীনেই একমাত্র পাওয়া যায়। স্থানীয় জনজাতির মানুষেরা এই ভেষজ উদ্ভিদ তাঁদের প্রায় সবরকম অসুখ বিসুখেই ব্যবহার করেন। এই উদ্ভিদের রপ্তানী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখানে বলে রাখি ডিব্রুগড়ে নেমে ঈপ্সিতার সাথে কথা বলার সময় ঈপ্সিতা বলেছিল নামদাফায় গিয়ে লোকজনকে জিগ্যেস করতে যে জ্বর টর হয় কিনা। তা,আমি জিগ্যেসও করেছিলাম, শুনলাম না না জ্বর হয় না তো। হলে ঐ লতা পাতা বেটে খেলেই কমে যায়। কী পাতা? শুনলাম জংলী পাতা এই জঙ্গলেই পাওয়া যায়। পাতা মানে তাহলে হয়ত মিশমি-তিতার কথাই বলছিলেন ওঁরা। ‘নামদাফা’ শব্দটা দুটো সিংফো শব্দের মিশ্রণে তৈরী। নাম হল জল আর দাফা মানে উৎস। দুইয়ে মিলে দাফা-বাম হিমবাহে উৎপন্ন নদীকে বোঝানো হয়। নদীর নামটাও ভারী মিষ্টি – নোয়া ডিহিং’ ... ...
সে প্ল্যানটা, কি বলব মশাই, এক্কেবারে লালে লাল। লাল পান্ডা, লাল কাঠবেড়ালি, লাল শিয়াল, লাল খ্যাঁকশিয়াল, লাল লাল প্রজাপতি, তিনরকম গন্ধগোকুল, চার রকম উদবেড়াল, উল্লুক, হনুমান, শম্বর, কয়েক রকম হরিণ আর অনেকরকম পাখি দেখা যাবে শুধু নয়, আদিম অ-মানুষ বা না-মানুষ (non human primate)ও দেখা যাবে বলে লেখা। এতকিছু তো আর আমাদের দেখা দেবে বলে তৈরী হয়ে বসে নেই, কিন্তু এর চার ভাগের একভাগ দেখতে পেলেও ভারী খুশি হয়ে যাব নির্ঘাৎ। অতএব চলো গোছগাছ করি। ওদিকে জানুয়ারী মাসে অফিস যদি নিতান্তই খুলে যায় তার আগে অন্তত দুই এক সপ্তাহ ওয়ার্ক ফ্রম মাউন্টেন করে নেওয়া দরকার, নাকি? ... ...