অনুবাদ ... ...
১৯৭৪। এপিডিআর থেকে মিছিল করে এসেছি এসপ্ল্যানেড ইস্টে, রাজনৈতিক বন্দিমুক্তির দাবিতে। মনে আছে, হাওড়ার ছেলে, বনবিহারীবাবুদের গ্রুপে ছিল সঞ্জীবদা, একটা বাসের মাথায় চড়ে বক্তৃতা করছিল। আমি আর জয় কৌটো ঝাঁকিয়ে পয়সা তুলছিলাম। সেদিন ওখানে ওয়েবকিউটার জমায়েতও ছিল। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম মনোভাবাপন্ন মাস্টারমশাইরা ওঁদের নানান দাবি দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। আমিই প্রথম দেখি আমাদের কলেজের সলিলদা (ইংরাজি পড়াতেন) আর হিতেনদা (বাংলা পড়াতেন) দাঁড়িয়ে আছেন। সদ্য কৈশোরের অ্যাডভেঞ্চার পোকা নেচে উঠল। জয়কে বললাম - চল যাই। ওঁরা সেই আমলে দশ টাকা দিয়েছিলেন। আর সলিলদা বলেছিলেন কলেজে দেখা করতে। ... ...
সাংবাদিক রোজিনা নিশ্চয়ই বীরের বেশে বেরিয়ে এসে আবারো নির্ভিকভাবে ঝড় তুলবেন কি-বোর্ডে, একের পর এক চোখা সব প্রতিবেদনে উন্মোচন করবেন দুর্নীতিবাজদের মাস্কের আড়ালের কুৎসিত মুখ। পেশাগত কারণে দেশজুড়ে তিনি যেমন অনেক সহকর্মী-শুভানুধ্যায়ী ও পাঠককে বন্ধু হিসেবে পাশে পাচ্ছেন, তেমনি শত্রুও তো কম তৈরি করেননি। এ ঘটনায় রাষ্ট্র যেন “ঝিকে মেরে বৌকে শিক্ষা” দেওয়ার পন্থাই নিল, যে গণমাধ্যম আসলে গণতন্ত্রেরই নাকি পঞ্চম স্তম্ভ! নতুন করে আবারো মনে পড়ছে, সম্প্রতি পুলিশ হেফাজতে নিহত লেখক মুশতাক আহমেদের কথা। ব্যাঙ্গচিত্র আঁকার অভিযোগে কিছুদিন আগেই কার্টুনিস্ট কিশোর অপহরণ, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন হওয়ার কথা। তারও কিছুদিন আগে নির্যাতনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে লেখক মুশতাক কারাবন্দী অবস্থায় মারা যান। ফেসবুকে লেখালেখির দায়ে তাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, হৃদরোগে মারা গেছেন তিনি। জামিনে মুক্ত কার্টুনিস্ট সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তিনি যখন ডিবি পুলিশের রিমান্ডে ছিলেন, সেখানে রিমান্ডের আসামি লেখক মুশতাকের সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। তখন সম্পূর্ণ উলঙ্গ মুশতাকের সারা শরীর ছিল মলমূত্র মাখানো। সে অবস্থাতেই সুযোগ বুঝে তিনি একফাঁকে কার্টুনিষ্ট কিশোরের কাছে এসে বলেছিলেন, “ভয় পাস ক্যান বেটা? আমরা কী অন্যায় কিছু করেছি?” ... ...
কমল অর্চনার চুলের মুঠি ধরে তাঁকে চেয়ার থেকে টেনে তোলে এবং তাঁর মাথা দেওয়ালের দিকে ছুড়ে দেয়। দেওয়ালে মাথা ধাক্কা লাগার ঠিক আগে চুল ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে নিজের দিকে নিয়ে আসে। এই পদ্ধতিতে অত্যাচার চলে ১৫-২০ মিনিট ধরে। অর্চনা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। তাঁর মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। সারা শরীরে অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছিল তখন অর্চনার। তাঁকে চেয়ারে বসতে বলা হল। কিছুক্ষণ পর আদিত্যকে রুণু নির্দেশ দিল অর্চনার চুল ধরে ঝুলিয়ে রাখতে। আদিত্য ঝাঁপিয়ে পড়ে অর্চনার চুল এত জোরে টানে যে তাঁর মাথার কিছু চুল ছিঁড়ে যায়। ... ...
ছংগামল বিদ্যালয় ইন্টার কলেজ স্থাপিত হয়েছিল যে উদ্দেশ্য নিয়ে তা’হল ‘দেশের নবীন নাগরিকদের মহান আদর্শের পথনির্দেশ এবং উত্তম শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের উত্থান’। আপনি যদি চকচকে কাগজে কমলা রঙে ছাপা কলেজের ‘সংবিধান এবং নিয়মাবলী’ পড়েন তাহলে বাস্তব জগতের মলিনতায় আচ্ছন্ন আপনার মন সত্যি সত্যি নির্মল এবং পবিত্র হয়ে যাবে। অবশ্যি ভারতের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অধ্যায়টুকু পড়লেও আপনার একই অনুভূতি হয়। ... ...
আমি ভয় করবনা ভয় করব না/দুবেলা মরার আগে মরব না ভাই মরবনা..." আশা করছি ভালভাবেই এই কোভিডযাপনের নিভৃতবাসের বাকী কটা দিন কাটিয়ে উঠব। উঠবই... ... ...
সদ্য পরাজিত বাম বিধায়কের দলের প্রতি সমালোচনা সবটাই কি যথার্থ? ... ...
- 'দ' য়ের হইল মাথায় ব্যথা। দাদু শ্লেটে চক পেনসিল দিয়ে একটা বড় করে 'দ' আঁকলেন। -- চন্দ্র আইলেন দেখতে। এবার দ'য়ের পাশে একটা চন্দ্রবিন্দু আঁকা হল। -- তাইন দিলেন বাইশ টাকা। দাদু দয়ের পেটের নীচে বিচ্ছিরি করে ২২ লিখলেন। ... ...
মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বাংলা হারাল প্রমিথিউসের মশালধারী দুই আলোকযাত্রীকে। একজন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক স্মরজিৎ জানা ও অন্যজন মরণোত্তর দেহ ও অঙ্গদান আন্দোলনের পথিকৃৎ ব্রজ রায়। ... ...
বাবার কথা মনে পড়লেই একটা গন্ধ নাকে আসে অবিকল ... সদ্য জ্বালানো উইলস ফ্লেকের গন্ধ, আমি চিনি ... আবছা একটা ছবি ভেসে ওঠে - বাইরের পেশেন্ট দেখার ঘরের কাঠের চেয়ার, জানলার ঠিক ধারেই, বাবা মুখের সামনে লাইব্রেরী থেকে আনা একটা বই ধরে আছেন ... মুখ দেখা যাচ্ছে না, শুধু রেক্সিনের বাঁধাইয়ের আড়াল থেকে এক-একটা রিং উড়ে উড়ে জানলা দিয়ে বেরিয়ে মেঘ হয়ে যাচ্ছে ... ... ...
সুচিত্রা সেনকে নিয়ে আমারো বেশ আগ্রহ আছে। তাঁর সিনেমা আমার ঠাকুরদা শেষবেলায় দেখেছেন। বলেছিলেন, বাহ, এই মাইয়াডা দেখি অভিনয় জানে! তাঁকে বাবাও পছন্দ করতেন। আমার ভাতিজা ভাগ্নেভাগ্নিনীরাও করে। সমগ্র বাঙালিরই প্রিয় প্রিয় নায়িকা সুচিত্রা সেন। আমি এই সুচিত্রা সেনকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছি। যা হয় আরকি। আমি যেহেতু কোনো পত্র পত্রিকায়, বলা যায়, লিখি না। এক বৈঠকে লিখি না। ইচ্ছে হলে লিখি। ইচ্ছে হলে লিখি না। একটু একটু করে লিখি। শব্দ সংখ্যার ধারধারিনা। তাই গল্প বড়ো হয়ে যায়। গোপনে বলি আপনাকে, আমার ঠাকুরদা সুচিত্রা সেনকে কিডন্যাপ করেছিলেন। এটা সত্যি মনে করে মজা পাই। আরেকটা কথা। আমার গল্পের অনেক চরিত্র বাস্তব। আবার আমার পরিচিতিদের নামধামও অবলীলায় বসিয়ে দেই গল্পে। অনেকে এজন্য গোস্যা করেন। অনেকে খুশি হন। সে যাই হোক না কেনো যারা পড়বেন এটাকে গল্প হিসেবেই পড়বেন। এই গল্পের রবি ঠাকুরও একবার চরিত্র হয়ে এসেছেন। সুচিত্রার জন্য না এসে পারেননি। সুচিত্রা সেন বলে কথা। ... ...
শিল্পী সুলতানের কথা আমার বলার অধিকার আছে? আমি জানি না। উনার কিংবদন্তী কাজ গুলো সম্পর্কে তো খুব অল্প জানি। এদিক সেদিকে কিছু কাজ দেখার সুযোগ হয়েছে। যা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা আমাকে করে ছিল। ক্ষেতে খামারে কাজ করছে কিন্তু একেকজনের কী পেশিবহুল শরীর একেকজনের। সুলতান লেখককে ব্যাখ্যা করেছে কেন তার চরিত্ররা এমন দারুণ স্বাস্থ্যের অধিকারী। তিনি বলছেন বাঙালিকে দুর্বল ভাবার কোন সুযোগ নাই। যারা প্রতি বছর ঝড় বন্যার সাথে যুদ্ধ করে ক্ষেতে খামারে কাজ করে টিকে আছে তারা কীভাবে দুর্বল হয়? তিনি এই খেটে খাওয়া মানুষদের ভিতরের শক্তির ছবি এঁকেছেন! তখন প্রশ্ন আসছে উনার আগের ছবিতে কেন এমন চরিত্র আঁকেন নাই? তখন কি তিনি তেমন ভাবতেন না? সুলতান জবাব দিয়েছেন তখনো তিনি তেমনই ভাবতেন। কিন্তু আঁকেন নাই। কেন? কারণ হচ্ছে তখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি! মুক্তিযুদ্ধের পরে উনি যা এঁকেছেন সব জায়গায়ই এমন পেশিবহুল মানুষের আনাগোনা। উনার কথা হচ্ছে পরাধীন একটা জাতিকে এমন শক্তসমর্থ করে আঁকলে তা বিশ্বাস যোগ্য হত না। কী দারুণ না! ... ...
এই গাঁয়ে ‘কানা’ বোলে তো পন্ডিত রাধেলাল। ওর একটা চোখ অন্যটির চেয়ে ছোট, তাই ‘গঁজহা’র দল ওকে কানা বলে ডাকে। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য হল- এক হিসেবে আমাদের সবকিছুই প্রাচীন ঐতিহ্য — কেউ বাইরে, মানে অন্য রাজ্যে, যাবে তো কথায় কথায় বিয়ে করে নেবে। অর্জুনের সঙ্গে চিত্রাংগদা আদি উপাখ্যানে তাই হয়েছিল। ভারতবর্ষের প্রবর্তক রাজা ভরতের পিতা দুষ্যন্তের সঙ্গেও তাই। যারা আজকাল ত্রিনিদাদ কি টোবাগো, বর্মা কি ব্যাংকক যাচ্ছে তাদের সঙ্গেও ঠিক ওইসব হচ্ছিল। এমনকি আমেরিকা বা ইউরোপে গেলেও একই হাল। সেই হাল হল পন্ডিত রাধেলালের। ... ...
কমল নিজের ডান হাত দিয়ে লতিকা গুহর বাঁ গালে ভয়ংকর জোরে চড় মারতে শুরু করে। এতটাই নির্মমভাবে কমল চড় মারছিল যে অর্চনার মনে হয়েছিল লতিকার চোখ কোটর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসবে। বেশ কিছুক্ষণ চড় মারার পর লতিকাকে চেয়ারে বসানো হয়। অর্চনা দেখেন, লতিকার গাল ভয়াবহ রকম ফুলে গিয়েছে এবং তাতে স্পষ্ট আঙুলের দাগ। ... ...
পশ্চিমবঙ্গের সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের মসনদ ধর্মান্ধ হিংস্র মৌলবাদী শক্তির হাতে চলে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনায় আতঙ্কিত ছিলেন এ রাজ্যের গণতন্ত্র-প্রিয় মানুষ। ফলপ্রকাশের পর যখন দেখা গেল যে তা ঘটেনি, তখন তাঁরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও, উঠে এসেছে এক অস্বস্তিকর প্রশ্ন। এ রাজ্যের পূর্বতন ক্ষমতাসীন বাম শক্তি, বিশেষত তার বড় শরিক সিপিএম, কি মৌলবাদী শক্তিকে গোপনে সাহায্য করেছে? অর্থাৎ, তাদেরকে ক্ষমতা থেকে যারা হঠিয়েছে, সেই তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি ক্রোধ ও প্রতিহিংসা বশত তাদের কর্মী ও সমর্থকেরা কি বিজেপি-কে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনতে চেষ্টা করেছিলেন? নির্বাচনের আগে থেকেই এ হেন সম্ভাবনার কথা হাওয়ায় ভাসছিল কোনও কোনও মহলে, এবং নির্বাচনের পর তার ‘প্রমাণ’ মিলেছে বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনী ফলাফল থেকে সত্যিই এমন ইঙ্গিত মেলে কি? সেটাই আজ আমরা এখানে পর্যালোচনা করে দেখব। ... ...
আমাদের সেই পঞ্চাশের দশকে অক্ষর পরিচয় হতেই ধারাপাত নামের একটা লম্বাটে পাতলা বই খুলে এইসব শুভংকরের আর্যা আর কড়া-গন্ডা-পণ জোরে জোরে দুলে দুলে মুখস্থ করতে হত। "কুড়োবা কুড়োবা কুড়োবা লিজ্জে, / কাঠায় কুড়োবা কাঠায় লিজ্জে। / কাঠায় কাঠায় ধূল পরিমাণ, / বিশগন্ডা হয় কাঠার সমান।" ... ...
তথাকথিত ক্যুইয়ার কমিউনিটিতে বেশ কয়েকজন ছেলে মেয়ে আমার আছে। অদ্ভুত একটা মাতৃত্বের অনুভুতিতে সত্যিই তাদের জন্য অপত্যস্নেহের এতটুকু ঘাটতি নেই। Happy Mother's Day ... ...