এই আধ্যাত্মিকতা এদেশের মানুষের নিজস্ব জীবনবোধ, ভারতের জাতীয়তাও এই চেতনাই। কাউল-সেন দম্পতির উদাহরণ এইজন্য প্রাসঙ্গিক ছিল এই লেখায়। গান্ধীজি মানুষকে মানুষের সমাজকে রাজনীতির থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। গান্ধীজি বিভিন্ন আন্দোলন যখন উঠিয়ে নিয়েছেন, সেইসব পদক্ষেপ নিয়ে কংগ্রেস ও অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মীরা ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু, দেশবাসীর বিরাট অংশের কাছে তারপরও গান্ধীজির জনপ্রিয়তা হ্রাস হয় নি। এবং আমরা দেখতে পাই, অসহযোগ থেকে আইন অমান্য, সবকটি ক্ষেত্রেই আন্দোলন তুলে নেওয়ার কারণ রাজনৈতিক নয়, সামাজিক। রাষ্ট্রনীতি রূপায়ণের থেকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন সমাজের ক্ষমতায়নকে, সাম্যের লক্ষ্যে সমাজসংস্কারকেও। ... ...
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ? তাঁকে দেখাবো আমার কাঁচা প্রেমের কবিতা ? যার মাত্র সতেরো বছর বয়েসে লেখা কবিতা ‘ একটি চিঠি ‘ সাগরময় ঘোষ দেশ পত্রিকায় ছেপেছিলেন ? যিনি লিখেছেন , ‘ আমার যৌবনে তুমি স্পর্ধা এনে দিলে / তোমার দুচোখে তবু ভীরুতার হিম’। এই তো সেদিন চৌঠা এপ্রিল, শুক্রবার ওভারটুন হলে কৃত্তিবাসের সভায় যাকে প্রথম চাক্ষুষ করে এসেছি! তেত্রিশ বছরের দুঃখ উজাড় করে বলে গেলেন মাঝি নাদের আলী , আগমনী গাওয়া বোস্টুমি তাদের কথা রাখে নি। সুনীলদার সামনে বসে এই প্রথম তাঁর আবৃত্তি শোনা । তারপরে কত পূর্ণিমা অমাবস্যা কেটে গেলো কিন্তু সেদিন শোনা ‘ কেউ কথা রাখে নি ‘ মনে থেকে গেছে সারা জীবন। কোন কবি পারেন সে গীতি শোনাতে। তার রেশটুকু আজও থেকে গেছে। হাতের কাছে বইটা পেয়েও সোনালি দুঃখ আর পড়িনি । ত্রিস্তান ইসোলদে নামক হলিউডি ছবিটি দেখা দেয় বছর পনেরো আগে , দেখি নি। এক আশ্বিনের বিকেলে বীরভূমের গ্রামের দিগন্ত বিস্তৃত মাঠের মুখোমুখি বসে দু চোখ ভিজিয়ে দেওয়া পাওয়া ও হারানো ভালোবাসার যে রাগিণী শুনেছিলাম সেটি বাজে মাত্র একবার। ... ...
সমীর রায়চৌধুরী সম্পর্কে দুচার-কথা ... ...
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে কিছু কথা মনে এসে গেল। ... ...
লাঞ্চ নাগাদ ২৯৫/৫, সেমুর নার্স আউট । সাত নম্বরে ব্যাট করতে এলেন গারফিল্ড সেন্ট অবারন সোবারস। জীবনে সেই একদিনই তাঁর ব্যাটিং চাক্ষুষ করেছি । একি লাবণ্য প্রাণে ! অফের বল টেনে স্বচ্ছন্দে লেগে ঘোরালেন ,একি লাবণ্য প্রাণে ! অফের বল টেনে স্বচ্ছন্দে লেগে ঘোরালেন , ব্যাটিং নয় এ যেন একটা উচ্চকিত হাসি, দূরে গঙ্গায় জাহাজের ভেঁপু বাজলো তিনি খেলে গেলেন এই ছায়া আলোকের আকুল কল্পনে , এই শীত মধ্যাহ্নের মর্মরিত ইডেনে ! এগারোটি বাউনডারি সহ সোয়া ঘণ্টায় ৭০ রান ! পরের দিন নতুন কায়ায় আবির্ভূত - কখনো স্পিন কখনো মিডিয়াম পেস । একটা শিখতে জীবন কেটে যায় আর ইনি পারেন না এমন কিছু নেই! একই অঙ্গে এতো রূপ ?‘ ... ...
“ ঘোড়ার পেছনে কখনও নিজের টাকা নিয়ে ছুটো না । ব্যাঙ্কারদের সেটা কখনও করা উচিত নয় । কিন্তু মনে রেখো - ঘোড়া হলো ব্যাঙ্কারদের বিজনেস পার্টনার । লোকে আমাদের কাছ থেকে ধার নিয়ে ঘোড়ার পেছনে পয়সা লাগাবে। সে ঘোড়া জিতলে লাভের টাকা আবার আমাদেরই সেভিংস ব্যাঙ্কে জমা দেবে “ আমি বললাম, “ আর যদি হারে ?” মুখে সেই অনবদ্য হাসি “ তখন তারা আমাদের পায়ে পড়বে আরও টাকা ধার নেওয়ার জন্যে ! ঘোড়া জিতলে আমাদের ব্যাঙ্কে পয়সা জমা করবে , হারলে ধার নেবে! “ ... ...
১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম উন্মুক্ত নির্বাচনে নেলসন ম্যানডেলার অধিনায়কত্বে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় কিন্তু সংবিধান সংশোধনের জন্য জরুরি দুই তৃতীয়াংশ নয় । তাই গঠিত হয়েছিল গভর্নমেন্ট অফ ন্যাশনাল ইউনিটি , যার আফ্রিকানার নেতা দে ক্লেরক এবার সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিরোধী দলে বসার সিদ্ধান্ত নিলেন ইচ্ছের বিরুদ্ধে রাজপাট কালো মানুষদের হাতে তুলে দিয়েছেন কিন্তু বাইরে থেকে কাঠি দেবার সুযোগ ছাড়বেন কেন ?এই মহা অনিশ্চয়তার ভেতরেই আমাদের কাজ - তবে সব সময় আশা করেছি খদ্দেরের কাছ থেকে তার আদেশপত্র পাওয়া আর সেই প্রতিশ্রুত টাকা তাঁকে পৌঁছে দেওয়া অবধি বাজারটা , দুনিয়াটা যেন ঠিকঠাক চলে প্রভু ! আচানক কোথাও যেন লঙ্কাকাণ্ড না হয় , লগ্নিকারক যেন সেই বাহানায় হাত গুটিয়ে না ফেলে ! আমাদের ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন হলো ডিল চলাকালীন ওই বাজারি টালমাটাল ( মারকেট আপহিভাল )- যেটা ব্যাঙ্কের বিদেশি মুদ্রার কারবারিদের ( ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রেডার ) কাছে একান্ত কাম্য । তাঁদের দৈনন্দিন প্রার্থনা হলো -এলোমেলো করে দে মা লুটে পুটে খাই । বাজারের স্থিতাবস্থায় নাফা কম, অনিশ্চয়তায় লোকসানের আশঙ্কা থাকে গণ্ডার মারার প্রলোভন বিশাল। আমাদের কি হবে ? পালাবার পথ আছে ? আমাকে একদা এক শুভানুধ্যায়ী বলেছিলেন যদি কখনো দেখো একজন গুলিভরা বন্দুক তার মাথায় ঠেকিয়ে বসে আছে, তাকে সাহায্য করার কোন প্রয়োজন নেই, ট্রিগারটা সে নিজেই টিপতে পারবে। ... ...
সেদিন খুব ভোর ভোর সৌমিত্র হাজির হলেন উত্তমকুমারের বাড়ি। সেখান থেকে দুজনে গড়ের মাঠে যাবেন উত্তমকুমারের গাড়িতে করে। এমনটাই চলছিল বেশ কয়েকদিন। এমনিতে উত্তমকুমার আর সৌমিত্র দুইজনাই একদম সাহেবী টাইম মেনটেন করতে ভালোবাসেন। সৌমিত্র পৌঁছালে দুজনে এককাপ করে চা খেয়েই বেড়িয়ে যেতেন গাড়ি নিয়ে। অন্যদিনের মত বাড়ি ঢুকেই সৌমিত্র হাঁক দিলেন, “বৌদি, চা দাও”। কিন্তু সেদিন আশেপাশে উত্তমকুমারকে দেখা গেল না। বরং বাড়ির ভিতর থেকে দাদার আওয়াজ ভেসে এল, “পুলু, তুই খানিক বসে চা খা – আমি আসছি”। ... ...
দিনে দিনে ক্রমশ: অসামাজিক হয়ে যাচ্ছি বলে নিজের আত্মচেতনা সজাগ হচ্ছে এই বলে যে কিছুটা অন্তত এফর্ট দেওয়া দরকার আমার তরফে যাতে করে একদম বিচ্ছিন্ন না হয়ে যাই - তা এফর্ট দিচ্ছি আজকাল। আর সেই এফর্টের আগে-পরে যা হচ্ছে সেগুলো ডকুমেন্টেড করে রাখাই এই লেখার উদ্দেশ্যে ... ...
খুব স্পষ্ট না হলেও কাঁটাকলের অর্থনীতি বিভাগে আমরা ছিলাম দুটো দলে বিভক্ত – একদিকে আমার মতন পাতি বাংলা স্কুল, অনামধন্য কলেজ থেকে আসা বৃহৎ ছাত্র সমষ্টি , অন্যদিকে ইন্দ্রজিৎ দেবের মতন কয়েকজন ক্যালকাটা বয়েজ স্কুল, সেন্ট জেভিয়ারস , প্রেসিডেন্সি কলেজের, আলাদা পেডিগ্রির কিছু উজ্জ্বল তারকা; তারা নিজেদের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলে, জুতো পরে ক্লাসে আসে । সিঁথি বরানগরের বিদ্যেয় ইংরেজি বাক্য আমার মুখ থেকে বেরোয় না। কুণ্ঠিত ভীত সন্ত্রস্ত মনে তাদের দূর থেকে দেখি। হাঁদুর জন্যে ঠনঠনের বাড়ি থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে খাবার আসতো প্রতিদিন সাড়ে বারোটা একটার মধ্যে । ব্রাঞ্চে যোগ দেওয়ার প্রথম দিনেই হাঁদু জিজ্ঞেস করেছিল ‘ হ্যাঁরে দুপুরে কি খাবি ? ‘ আমার মায়ের পক্ষে সে রকম কোন ব্যবস্থা করা কঠিন ছিল । জানালাম রাস্তায় কিছু একটা খেয়ে নেবো। পরের দিন হাঁদু বললে ‘ আয় আমার সঙ্গে বসে খাবি । মা বলে দিয়েছে আজ থেকে তোর জন্যেও খাবার আসবে রোজ ‘। হাঁদুর কাছে এটা দুপুরের খাবার , ‘লাঞ্চ ‘ নয় ! হাঁদু আর তনুশ্রী পুরী যাবে দু সপ্তাহের ছুটিতে। শুক্রবার অফিসে এসেই বললে ‘ যাক বাবা, দু সপ্তাহ এস পি সেনের মুখ দেখতে হবে না ‘ । তার পরেই চিন্তায় পড়ে গেল “ আরে, তোর খাওয়ার কি হবে ?’ অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললাম ‘হাঁদু, ওটা আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব ‘ । বিকেল বেলা হাঁদু বললে, ‘ শোন, মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে , সোমবার থেকে তোর জন্যে খাবার আসবে , বুঝলি ? ‘ যে টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে আসে সে বসে থাকবে তোর খাওয়া হয়ে গেলে বাড়ি নিয়ে যাবে এমন মানুষও হয় ? ... ...
হ্যারি বেলাফন্টেদের কাছে সময় হার মানে...সবসময়!! ..আর জিতে যায় ক্লান্ত ক্লান্তিহীন মানুষের নিয়ত ভেসে চলার গান!! ... ...
সেদিনের অনুষ্ঠানে শচীন দেব গান গাইতে উঠলেন। রবি বাবুর ততক্ষণে চলে যাবার কথা, আর শচীন দেব সরাসরি গ্রীন রুম থেকে এলেন বলে তিনি আর খেয়াল করেন নি শ্রোতাদের মধ্যে রবি ঠাকুর বসে আছেন। গান শুরু হল – শচীন দেব সেদিন গাইলেন ঠুমরি। সেই কি গাইলেন – পুরো অনুষ্ঠান শেষ হলে শচীন দেব পেয়েছিলেন গোল্ড মেডেল। রবি বাবু খুব মন দিয়ে গান শুনছিলেন – মজে গিয়েছিলেন, একসময় জিজ্ঞেস করলেন, " হ্যাঁরে, দিনু, ছেলেটা কে রে? ভারী সুন্দর গাইছে তো।" ... ...
এই ধরুণ যেমন আমরা সবাই জানি নায়ক সিনেমায় উত্তমকুমারকে হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনের খন্যান স্টেশনে চা-খেতে নামিয়ে মাষ্টার স্ট্রোক দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনদিন ভেবে দেখেছেন কি এত স্টেশন থাকতে খন্যান কেন? এখনকার খন্যান স্টেশন আর সেই ১৯৬৫-৬৬ সালের খন্যান স্টেশনের মধ্যে যদিও অনেক পার্থক্য, কিন্তু তখনো খন্যান স্টেশনের একদিকে ছিল তালান্ডু আর অন্যদিকে পান্ডুয়া। তাহলে খন্যান কেন? ... ...
অনতিদূরে দেখতে পেলাম, মিন্টু ভাইয়ের বাইক। গ্রামের একটি স্কুলের একুশ না, বরং ঐ বাইকটি আমায় আগ্রহী করে তুলল। তো সেই ভাঙ্গাচোরা স্কুলে গিয়ে যা ভেবেছিলাম, তা-ই দেখতে পেলাম- কোন শহীদ মিনার নাই। সাজসজ্জা নাই। মঞ্চ নাই। মনে মনে একটু হাসলামও। শহরের সেই বক্র হাসি, যা একান্ত স্বভাবজাত ও চিরাচরিত। ... ...
ম্যাডান স্ট্রীট নামের উৎস সন্ধানের অলস কৌতূহল মেটাতে গিয়ে ক্ষণিকের আলাপ হোলো অমায়িক গুলনার ম্যামের সাথে …. ফাউ হিসেবে জানা গেল কিছু কথা ... ...
কলেজ স্ট্রিট এলাকার সাড়ে চার দশকের নানা আখ্যান ও স্মৃতি বিষয়ক রচনা ... ...
মামা শুধু গল্প বলত এমন না। মামা গল্প বলার সময় তা পরিবেশন করত। চোখ, মুখ, হাত পা, কণ্ঠস্বর সব মিলিয়ে গল্প বলত মামা। ক্লাইম্যাক্সে যাওয়ার আগে থামত চোদ্দবার, আরও কয়েক দিক থেকে গল্পটা বুঝাত, পরিস্থিতিটা বর্ণনা করতেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি পরিষ্কার না হচ্ছেন যে আমরা পুরোপুরি বুঝছি কী পরিস্থিতি ছিল সেই সময়, অন্ধকার কত গাঢ় ছিল, বাতাস কেমন ছিল, উনার ঠিক কত সামনে ঘন কালো পাহাড়ের মত কী জানি একটা দাঁড়িয়ে আছে, ওইটা দেখে উনি তাৎক্ষনিক কী চিন্তা করলেন, তারপর কী করলেন ইত্যাদি ইত্যাদি তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্ণনা করে, হাত নেড়ে, গলার স্বর উঠিয়ে নামিয়ে আমাদেরকে পরিষ্কার বুঝিয়ে দেওয়ার পরে তিনি যেতেন পরের ধাপে। এরপরে কী হইল শোনো...! ... ...
কলেজ স্ট্রিট নিয়ে সাড়ে চার দশকের অভিজ্ঞতা ... ...