গত পঞ্চায়েৎ নির্বাচনে স্বৈরাচারী কাজকর্মের চূড়ায় পৌঁছে গেছিলো শাসকদল হিসাবে তৃণমূল। বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েৎ-এর কদর্য ভাবনায় বিরোধীদের মনোনয়ন না দিতে দেওয়া থেকে বিরোধী সন্দেহে মানুষকে ভোট দিতে না দেওয়া, ছাপ্পাভোট, বুথ দখল এইসব কাজের ফলে সাধারণ মানুষের মনে ক্ষোভ জমে উঠেছিলো। সেই সাথে আমফান ত্রান ও তার আগেকার নানান দুর্নীতি তো ছিলোই। কাজেই প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া ছিলোই তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু পাশাপাশি অন্য অনেক কাজের ফলে গ্রামীণ মানুষের কাছে তৃণমূলের গ্রহনযোগ্যতাও ছিলো সন্দেহাতীত। সেগুলো নিয়ে পরে আলোচনা করবো। ... ...
Commonwealth War Graves Commission নামে একটা সংস্থা আছে। এরা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ব্রিটিশ যত সৈন্য নিহত হয়েছে তাদের প্রতি সম্মান জানানোর কাজ করে। বিভিন্ন জায়গায় যত কবর আছে যুদ্ধের সব গুলোর যত্ন নেওয়া, ইতিহাস তুলে রাখা এবং তাদের যেন কখনোই মানুষ ভুলে না যায় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে এদের কাজ। CWGC একটা ওয়েব সাইট আছে, তাতে তারা বলছে পুরো দুনিয়ায় ২৩ হাজার স্থানে ওয়ার সিমেট্রি আছে আর তাতে শায়িত আছে ১.৭ মিলিয়ন নর নারী সৈনিক। এই সংস্থা ১৯১৭ সালে Imperial War Graves Commission নামে যাত্রা শুরু করে, ১৯৬৫ সালে নাম পরিবর্তন করে Commonwealth War Graves Commission হয়। কিন্তু কাজ একই আছে, এই দীর্ঘ দিন ধরে তারা নিজেদের বীরদের সম্মান দিয়ে আসছে। ... ...
যে ছেলেটা কলেজে পড়ার সময় ভালবাসত বেপরোয়াভাবে নৌকো বাইতে, এবং তা করতে গিয়ে প্রায়শই নৌকোটির বারোটা বাজিয়ে বিস্তর বদনাম কিনত, সে বা অন্য কেউই বোধহয় কখনও ভাবেনি যে, তার জীবনের শেষ দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে সে শুধু নিশ্চুপে বসে মহাবিশ্বের সাথে কথা বলবে মনে মনে । ছেলেটা মানে স্টিফেন উইলিয়াম হকিং, অসাড় দেহ আর অসীম মেধা নিয়ে মহাবিশ্বের দুর্বোধ্যতার সাথে সাপলুডো খেলে যাওয়া সেই অবিশ্বাস্য বিজ্ঞানী । গণিত দিয়ে বিশ্বকে বাঁধতে চাওয়াটা তাঁর বরাবরেরই, কিন্তু ক্রমেই শুকিয়ে এসেছে স্নায়ু আর পেশি, শিকেয় উঠেছে নিজের হাতে অ ... ...
ভারত কি প্রথম মহামারীতে আক্রান্ত হল? অতীতে কি ভারতে মহামারী হয় নি? অর্থিনীতির কর্মকাণ্ড কি শুধুই অর্থকেন্দ্রিক? দেশের এই ধরণের বিপর্যয়ে সাধারণ মানুষের ভূমিকা কি? কতদিন ধরে চলবে এই অর্থনৈতিক মন্দা?- অর্থনৈতিক দিক থেকে নানা সমস্যার পসরা নিয়ে আমার দুই পয়সা। ... ...
পাউরুটি আমি ভালবাসি। না বেসে থাকা যায়? যার অমন নরম তুলতুলে গা! কিন্তু মুশকিল হল পাউরুটি আমায় মোটে পছন্দ করে না। টিভিতে দেখায় না, বড় ডাইনিং টেবিলে বসে পাউরুটি, মাখন, ডিম আর ফলের রস (থুড়ি, ব্রেড, বাটার, এগ, ফ্রুট জুস) সহযোগে জলখাবার (থুড়ি ব্রেকফাস্ট) খাচ্ছে, আর তারপরই অফিস যাচ্ছে পেল্লাই গাড়ি করে, অমনটা আমারও খুব শখ। তাহলেই মনে হয় যেন স্পোকেন ইংলিশটা শিখে যাব। আটার রুটি আর আলু-কুমড়োর ছেঁচকি খেয়ে বেরোলে মুখ দিয়ে 'নরঃ নরৌ নরাঃ' ছাড়া আর কিছু বেরোবে কেন? ... ...
বাহাদুর বেড়াল ও Korky the cat. ... ...
আজ থেকে বত্তিরিশ বছর আগে রঞ্জনদার লেখা পড়ি প্রথম। দেশ পত্রিকায় 'বাঙালির বাঙালোর' নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। বুদ্ধিতে আর উইটে ভরপুর এক অতি স্বাদু, মুচমুচে, আরবান লেখা। ভাল লেখা পড়লে কেটে রাখতাম। এ লেখাও সংগ্রহ করেছিলাম। আজও আছে। লেখকের নাম ছাড়া আর কিছুই উদ্ধার করা যায়নি। দেশ পত্রিকার আপিসে গেলে হয়ত পাওয়া যেত। তার বছর কয়েক পরে দেশে ছাড়লাম। ... ...
“The struggle of man against power is the struggle of memory against forgetting” Milan Kunderaআজ থেকে ৩৭ বছর পূর্বে ১৩ই মে ১৯৭৯ মরিচঝাঁপি অপারেশনের "ফাইনাল অ্যাসল্ট" শুরু হয় এবং ১৬ই মে ১৯৭৯ পশ্চিমবঙ্গ সরকার গর্বের সাথে ঘোষণা করেন -অবশেষে মরিচঝাঁপি উদ্বাস্তু শূন্য । বিদেশী শক্তির দালাল ,ভারতের পবিত্র অখণ্ডতা ভঙ্গকারী এই সব হতচ্ছাড়া জবরদখল কারীদের উচ্ছেদের অবশেষে কোন বিজয় উৎসব অথবা পাচতারা হোটেলে পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল কিনা অজানা । তবে এই বিষয়টি এতোই ক্ষুদ্র ... ...
যে লেখকের কলমের ভরকেন্দ্র হল মনস্হিতির বোধ ও উপলব্ধির, একাকীত্বের খুল্লমখুল্লা জবানবন্দি, তাঁর সামনে দাঁড়াতে অস্বস্তি হয়। প্রচলিত জনপ্রিয় সাহিত্যের ফিল-গুড ব্যাপারটা হারিয়ে যায় দুম করে, কারণ এতটা সততা তীব্র ও অসহনীয়। কিভাবে মলয় রায়চৌধুরী তাঁর লেখায় আত্মপ্রক্ষেপণ ঘটিয়েও নিরপেক্ষ হয়ে যান, সামাজিক ঘটনার দ্রষ্টা হন, নির্মম সমালোচনায় শাণিত ইস্পাত হয়ে ওঠেন, তাঁর নিজের এই বাছাই সঙ্কলনটি পড়লে টের পাওয়া যায় । কিভাবে মলয় রায়চৌধুরী তাঁর লেখায় আত্মপ্রক্ষেপণ ঘটিয়েও নিরপেক্ষ হয়ে যান, সামাজিক ঘটনার দ্রষ্টা হন, ... ...
প্রথমটি বেশ রমরমিয়ে হানা দিয়েছে আমার দেশে। প্রথম দুদিনেই দুজন করে মৃত। এদেরই ধরা পড়েছিল, ফলে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ফেটাল। মারা যাবার আগে আরো কতোজন যে সংক্রামিত হয়েছে কে জানে ! ঘিঞ্জি শহর, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সচেতনতা ও পরিকাঠামোর অভাবে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে বিপুল সংখ্যায় এই মহামারীর শিকার হব আমরা। দ্বিতীয়টি, মানে দাঙ্গা এই উপমহাদেশেরই অন্যতম বৈশিষ্ট্য , একেবারে হাতে গরম হালে দেখিয়ে দিয়েছে আমার দেশবাসী। মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন ছাড়িয়েছে, তবু এখনো দিল্লির নালানর্দমা থেকে এমন গলিত শব উদ্ধার হচ্ছে যে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া তাদের পরিচয় বোঝা যাবে না, হিন্দু মুসলমান তো পরের কথা। ... ...
আমাদের ইতিহাস পাঠ অনেকাংশেই ক্ষমতার ইতিহাস - এবং ক্ষমতাবানের ইতিহাস। ক্ষমতাহীন যে সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাঁদের নিয়ে চর্চার অভ্যেস, ইতিহাসবিদদের মধ্যেও, তেমন পুরোনো নয় - জনপ্রিয় ইতিহাসের ডিসকোর্সে সে বয়ান ঢুকতে বহু দেরী। ক্ষমতাবানের শাসনের চিহ্ন হিসেবে - যুগে যুগে শাসকের ক্ষমতার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে - রয়ে গিয়েছে অজস্র স্থাপত্য। এবং আমাদের ইতিহাস লিখনপ্রক্রিয়ায় সে স্থাপত্যের গুরুত্ব অনিবার্য। তারই সাথে সাথে নব্য শাসক পুরাতনের ক্ষমতার চিহ্ন মুছে ফেলতে গিয়ে ধ্বংস করেছেন পুরাতন স্থাপত্য - পুরাতনকে গড়েপিটে করে নিয়েছেন নতুন - এবং সেই নব্যরীতি নতুন ক্ষমতার প্রতি মানুষের সম্ভ্রম নতুন করে আকর্ষণ করেছে - এ নজির প্রত্যেক দেশে প্রতি যুগেই অঢেল। ... ...
(ভূমিকাঃ এইটা অনেকদিন আগের লেখা - আসলে লেখা নয়, এসব বন্ধুদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য বানানো একটা মিউজিয়াম, বছর কুড়ি-পঁচিশ আগের উত্তর কলকাতার একটা ইস্কুলের গল্প - গুরু-তে দেবো ভাবিনি, কিন্তু কাল রাত্তিরে কী করে যেন অনেক পুরোনো একটা টই চোখে পড়লো, সে-ও এই এক-ই স্কুলের আরো পুরোনো গল্প, তবে সেসব আখ্যান ভয়ের, লজ্জার, এবং ভয়ানক কষ্টের - পড়ে মনে হলো এই অন্ধকার ক্লাসরুমে দু-একটা ঘুলঘুলি হলে মন্দ হয় না, তাই ... )বরানগরের আসল নাম কি এবং কোত্থেকে এসেছে এই নিয়ে তর্কের শ্যাষ নাই, মাঝে মাঝে ফেসবুকে দেখ ... ...
কৌশিক মজুমদার লিখিত তোপসের নোটবুক বইটির আলোচনা। ... ...
উত্তরপ্রদেশের এক স্কুলে কার্লা হার্প এবং প্রিয়াঙ্কা পান্ডে একটি বিশেষ সমীক্ষা করেন। সমীক্ষার জন্য গৃহিত স্থিতিমাপ গুলো ছিল ভিন্ন রকমের। বিশেষ এক শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বুদ্ধ্যঙ্ক পরিমাপ করা হয়। পরিমাপের আগে কাউকেই মনে করিয়ে দেওয়া হয় নি কে ব্রাহ্মণ, কে অব্রাহ্মণ বা কে অন্ত্যজ। দেখা যায় জাত ও গোত্রধর্ম নির্বিশেষে সবার বুদ্ধ্যঙ্ক প্রায় সমমানের। অন্ততঃ পরিসংখ্যানগত কোন তফাৎ নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ে ঐ ছাত্রছাত্রীদের বার বার মনে করানো হয় তাদের জাতি ও গোত্রধর্ম পরিচিতি। আবার বুদ্ধ্যঙ্ক পরিমাপ করতে গিয়ে দেখা যায় অন্ত্যজদের গড় বুদ্ধ্যঙ্ক অনেকটা নীচে নেমে গেছে। এই সমীক্ষা থেকে যেটা উঠে আসছে যে আর্থসামাজিক বৈষম্যের পাশাপাশি ব্যক্তির দক্ষতার ঘাটতির ক্ষেত্রে অন্যতম বড় প্যারামিটার হল জাতি বৈষম্য এবং তদুপরি ব্যক্তির জাতিগত মনোসামাজিক অবস্থান। ... ...
আচ্ছা, এই হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দেওয়াতে ক'টা কথা মনে হল। মোদীজির সবই মাস্টারস্ট্রোক, তাই তেনার অসীম ক্ষেমতায় মেরা দিমাগ কি বাত্তি জ্বল হি গ্যয়া। ... ...
আমাদের একান্নবর্তী পরিবারের পুজো বলে ঠাকুর দালানে পুজোর কাজে সাহায্য করার লোকের অভাব হয় না। পিসিমণি বা বড় দিদিরা ঠাকুর দালানে বসে ফল কাটা কুটি করে – আর ওপাশে কম বয়েসীরা ফুল ইত্যাদি দিয়ে মালা গাঁথে, চন্দন বাঁটে বা বেল গাছের ডাল থেকে সুন্দর করে নরম দেখে তিনটি করে বেলাপাতা গুলি সাজিতে সাজিয়ে রাখে। চন্দন দুই প্রকারেরই থাকে – শ্বেত এবং রক্ত চন্দন। আর বলাই বাহুল্য ঠাকুরের জিনিসে যারা হাত দেবে তাদের অবশ্যই স্নান করে কাচা জামা কাপড় পরে আসতে হবে। হাসি, ঠাট্টা, গল্প করতে করতে কাজ হয়। ছোট বেলায় এই দালানে খুব একটা বসে থাকার সময় থাকত না এই সময় – কিন্তু বড় হয়ে বিদেশ থেকে ফিরে গেলে এমন সময়টাই খুব সদব্যবহার করা যেত সবার সাথে ক্যাচ-আপ করার জন্য। ... ...
যেভাবে লাট্টুটি প্রাচীন ভারসাম্য স্বকীয় ঘূর্ণনে রেখেছে তা পাখির আকাশে সন্তরণের তুল্য নিয়মানুগ। একটি দ্রুত বক্রচাপ, সময়ের একান্ত প্রতিস্থাপক। তেমনই অটুট শঙ্খের প্রাকার, দুরূহ জ্যামিতি, যেখানে জীবন ছিলো একদিন। কী প্রবল বাহিরের ঢেউ, পারাবার শান্ত, অন্তর্লীন! তুমিও প্রবাহে আছো জন্মাবধি, টের পাও নি কখনো? এই সেই বীজের ভেতরে ঘুম-জন্ম, কখনো চুরমার হয়ে মাটির ওপরে দুই হাত মেলে দেবে অনায়াস। ... ...
দিনা বরাবরই জে’র খুব প্রিয়। অনেক পরে, একদিন এই দিনা জে’র চোখে চোখ রেখে বলবে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে চায়। দিনাকে জে তাঁর বোনের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন, সে সম্পূর্ণ মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু তার পছন্দের মানুষটি ধর্মে পার্সি, নাম নেভিল ওয়াদিয়া। জে ক্ষুব্ধ হবেন, আর ইতিহাস ঘরের ইজিচেয়ারে বসে দোল খাবে আর মুচকি হাসবে। দিনার মা কে? সেটা কি সত্যিই ভুলে গেলেন নাকি জে? বার্ধক্যের ভ্রম না নিয়তি এড়িয়ে যাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা? ... ...