এরা দুই বোন এবার ঈদে কোন নতুন জামা নিবে না বলে দিল! ওরা দুই বোন ঈদে নতুন জামা নিবে না এই কথা ওদের মুখ থেকে না শুনলে হয়ত আমার জীবনেও বিশ্বাস হত না। কিন্তু আমি শুনলাম এবং বিশ্বাস করলাম। খুব আশ্চর্য হয়েও মনে হল এ কেমন ঈদ এসে হাজির হল? এমন হবে কেন? বাচ্চারা যদি ঈদের আনন্দ না করে তাহলে ঈদের আর থাকল কী? ঈদ এলে তো আর আকাশে ঈদ লেখা ভেসে উঠে না। এই বাচ্চারা যখন নতুন কাপড় পরে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় তখন ঈদ লাগে, ধুপ করে সালাম করে সালামি চায় তখন ঈদ হয়, প্রতি বাড়িতেই খাওয়া দিবে, অত খাওয়া অসম্ভব জেনেও ওরা প্রতি বাড়িতেই যাবে এবং আর খেতে পারব না বলেও খাবে, খেয়ে বের হয়েই আর খাওয়া যাবে না, এখন যেখানে যাব সেখানে কিচ্ছু খাব না, শুধু দেখে করেই চলে আসব! ... ...
ইদের দিন খুব ভয় লাগত আমাদের । আবার সেই "তোদের আর তোরা কি যেন খাস....ওই যে...." এসব মনভাঙা কথা চলে আসত। সমষ্টিতে বাঁচতে চাওয়া দুই শিশু আবার একঘরে হয়ে যেত। হাসাহাসি হবে খাবার নিয়ে, উৎসব নিয়ে। বেজায় লজ্জিত হয়ে কুঁকড়ে বসে থাকতে হত দিন দুয়েক। মা খুব মনোযোগ দিয়ে পাড়ার কাকিমাদের সঙ্গে ভিড়তে চেষ্টা করত। তার জন্য সিঙ্গার কোম্পানীর টকটকে গুড়ো লাল রংটাই মাথায় দিত। মানে সিঁদুর দিলে জাত যাবে। আর লাল রং দিয়ে জাতে ওঠা যাবে। আসলে.... "ও আপনিও সিদুঁর পড়েন?" এই বাঁধ ভাঙা আবেগের মধ্যে এক মুসলমান মহিলাকে ভীষণ করে কাছে টেনে নেওয়া যায়! মায়ের সেই কাছে যাওয়ার টান ছিল। প্রয়োজনও ছিল। নিজের সন্তানদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতেই মা সকলের মাঝে আমাদের মিলিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। মুসলমান মায়ের সিঁদুর দেখে যদি তার ছেলে মেয়েদের খেলা নেয় সবাই,যদি তাদের ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে না দেয় সেটাই তো আসল কথা। ... ...
সত্যি বলতে, তিরিশদিন এমন না খেয়ে থাকলে নাকি গরীবের পেটের জ্বালার খানিক বোঝা যায়- এই যুক্তিখানার বাড়বাড়ন্ত, হালে, বেশ মনোরঞ্জনকারী। গুছিয়ে পরের ভোরের সেহেরির উপকরণের তোড়জোড় আর বিকেল থেকেই হরেক কিসিমের ফল-বাহারি নাস্তা সাজানো উপোসী বাড়ির মহিলাদের, ফুরসৎ নেই আপিস থেকে খানিক আগে ফিরে নামাজ-কোরান পাঠের পর আরামসে মিনিট তিরিশেক, আপনার মতন, গা এলিয়ে নেওয়ার। মশাই, বলুন তো, কোন গরীব মানুষ এমন বিলাসিতায় না খেয়ে থাকে?! ... ...
সরকারিভাবে বাড়ির সকলের টেস্ট হল যেহেতু আমরা সকলেই দাদুর সঙ্গে ছিলাম। রিপোর্টে জানা গেল আমাদের কারও কোভিড পজিটিভ (asymptomatic) , কারও নেগেটিভ, কারও 'inconclusive'..হেলথ ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা হল। আমরা CMOH এর পারমিশন নিয়ে সকলে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। তারপর থেকে যে কোনো প্রয়োজনে পাশে ছিলেন ডাক্তার বন্ধু, দাদা আরও অনেকে। এদিকে আমি ফেসবুকে প্রতিদিন সকলের সেরে ওঠার আপডেট দিতে থাকি। অনেকে তাতে আশ্বস্ত হন। ফেসবুক মারফৎ অনেক পরিচিত - অপরিচিতদের সন্ধান পাই যাঁরা আমাকে সাহায্য করতে থাকেন। খুব কঠিন ছিল দু বছরের বোনপোকে ঘরে আটকে রাখা বা দূরে সরিয়ে রাখা। ওকে আটকানোর জন্য ওর দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। কঠিন ছিল দিদাকে সামলানো। Alzheimer's patient - তাঁকে শুতে বললে সেটা তিনি বুঝতে সময় নেন কমপক্ষে ১৫ মিনিট। কিছুই আর বুঝতে পারেন না। কাউকে চেনেন না। ... ...
বায়ান্নোর রক্তস্নাত ফেব্রুয়ারী মাসের রাত। মায়ের গহন গভীর দুঃখী মুখে বেদনার অশ্রুজল। আনিসুজ্জামান ঘ্রান পেলেন বাংলার পলিমাটির। বর্ণমালা খচিত আলপথের ধারে পথ হারানো মা যেন চিরদিনের আকাশ, বাতাস, বাঁশি নিয়ে ভয়ার্ত, সন্ত্রস্ত। সারাজীবনের জন্যে বুকে গেঁথে ছিল দৃশ্যটি। পরবর্তী জীবনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ঋদ্ধ করে তুলতে তার সমস্ত মেধা, শ্রম, চিন্তাকর্মকে সমিধ করে তুলেছিলেন বিপুল নিষ্ঠা, সন্মান ও ভক্তিতে। ... ...
এমন বিশাল প্রাজ্ঞ একজন মানুষকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে যে মাত্রার পড়াশোনা লাগে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমার সেটা একেবারেই নেই। আত্মীয়তার সূত্রে তিনি পরিচিত হলেও তাঁর কর্মযজ্ঞের বিশাল পরিমণ্ডলের সাথে তেমন পরিচয় ঘটেনি বললেই চলে। তাঁর গবেষণা বাংলা ভাষা- সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে, বাংলা ভাষার চেতনাকে তিনি তুলে ধরেছেন অনেক অগ্রগামী চিন্তা চেতনার মাধ্যমে। তাঁর সমসাময়িক অনেক অধ্যাপককে ছাড়িয়ে তিনি উঁচুতে উঠতে পেরেছিলেন যে একনিষ্ঠতার কারণে, সেই একনিষ্ঠ চিন্তাধারাই বাংলাদেশের সাহিত্যিক পরিমণ্ডলকে সমৃদ্ধ করে রেখেছিল এতকাল। তাঁর অভাব পূরণ হবার নয়। এ ছাড়া বাংলা সাহিত্যে অল্প কজন মুক্ত চিন্তার অধিকারী আছেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। ... ...
এরকম এক সময়ে ফ্যাতাড়ুরা আর অন্তর্ঘাত ঘটাতে পারেনা। এরা নিজেরাই রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া অন্তর্ঘাতের অংশীদার হয়ে যায়। এর হিংসা আর শক্তি প্রদর্শনের extra-judiciary, extra-state হাতিয়ার হয়। এরা “নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে”-র সৌম্যকান্তি পাগল চরিত্রটির মতো দুর্বোধ্য “গ্যাৎচরেৎশালা” উচ্চারণ করেনা। এরা স্পষ্ট ভাষায় হিংসা-ঘৃণা-হিংস্রতা-পেশির ভাষা উচ্চারণ করে। ভাষার চিহ্ন এঁকে দেয় “অপরের” শরীরে। পার্টি এবং রাষ্ট্রের ভেদরেখা মুছে যেতে থাকে। আমাদের বোঝা রাজনীতির চেনা ছকে ঠিক এই গল্পগুলো তৈরি হচ্ছেনা। ঘটনাচক্রে এখানে আক্রান্ত হন বেচারা বিদ্যাসাগর। তিনি এই চলমান ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়ে যান। ... ...
এমন অসংখ্য দৃশ্যের জন্মদিয়ে গেল সাইক্লোন। মত্ত বাতাস টিনের চাল উড়িয়ে ফেলেছে অন্যের বাড়ি। মুড়মুড় করে টালির গুঁড়ো হওয়ার শব্দ, কড়মড় শব্দে গাছ ভাঙার শব্দ আর একরাশ আতঙ্কে প্রহর গুণেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বৃহস্পতিবার, শুক্রবার বিধ্বস্ত এলাকায় গেলে গাছকাটার খটাখট, টিন পেটানোর দমাদম শব্দ আর হাউমাউ কান্নার শব্দ ভেসে আসছিল। বিদ্যুতের খুঁটিগুলো হেলে আছে, কোনটা টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গেছে, চারদিকে ভগ্নস্তূপ আর গুটানো, ছেঁড়া তার। বিপর্যস্ত লোকজনের আশাহীন চোখে একটাই জিজ্ঞাসার ভাষা - "আমাদের কী হবে?" ... ...
'আমপান' আছড়ে পড়ার পরে চব্বিশ ঘন্টারও বেশি সময় কেটে গেছে। সুন্দরবন অঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপের অবস্থা খুবই শোচনীয়। আমরা গুরুচন্ডালির তরফ থেকে সুন্দরবনের কিছু দ্বীপে থাকা বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম। এখানে যেটা বলার সমগ্র সুন্দরবন অঞ্চলেই মোবাইল নেটওয়ার্কের অবস্থা খুবই সমস্যাজনক এবং বিশেষ একটি মাত্র মোবাইল সংযোগকারী সংস্থার পরিষেবা ছাড়া অন্যান্য সংযোগকারী সংস্থাগুলি পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ। সর্বোপরি কোন বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় চালু থাকা মোবাইল ফোনগুলিও ক্রমে সুইচ অফ হয়ে যাচ্ছে। ... ...
অনেকেই এই সমস্ত উদ্যোগগুলো বিগত একমাসেরও বেশি সময় ধরে নিতে নিতে ক্লান্ত। অনেকেই তাঁদের সাধ্যমত আর্থিক সাহায্যও হয়ত ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন। তবু আজ এই 'আমপান'-এর ধ্বংসলীলার পরে এমন একটা অবস্থায় আমরা এসে দাঁড়িয়েছি যে সম্পূর্ণ নতূন উদ্যমে যদি এই ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজে আমরা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে না পারি, বাংলা এই দ্বিমুখী আঘাত সয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে না। ... ...
এখানেই হচ্ছে সেই ম্যাজিকের খেলা। যাকে বলে মনুষ্যবুদ্ধি, যা তার বাঁচার এক ও একমাত্র চাবিকাঠি, তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা। সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে সদ্য-নোবেলজয়ী অধ্যাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দোপাধ্যায় গরীব মানুষকে বলেছেন natural entrepreneur, কেন যে বলেছেন বোঝা যায়, যখন দেখি আড়ত বন্ধ তাও স্থানীয় চাষী, পঞ্চায়েত ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে রোজগার হারানো ছোট মালবাহক গাড়িকে ন্যায্য দরে পরিবহনে রাজি করিয়ে ব্লক অফিস থেকে বিডিও-র শংসাপত্র জোগাড় করে সড়কপথে শহরে আসতে শুরু করছে লকডাউনের তৃতীয় সপ্তাহেই। ... ...
লকডাউনপর্বে রাষ্ট্রের একটা নির্দয়, ভয়ঙ্কর, কুতসিৎ ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছে সোস্যালমিডিয়া। সেটা হল, গরিব মানুষের উপর পুলিশের অত্যাচার ঘটনা। কয়েকশো পুলিশি অত্যাচারের ভিডিও আপলোড হয়েছে এই সময়ে। গরিব মানুষকে লাঠিপেটা করা, রাস্তায় ফেলে পেটানো, তাদের জিনিস ফেলে দেওয়া, গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখানো, এমন অসংখ্য ঘটনা উঠে এসেছে সোস্যাল মিডিয়ায়। দেখে মনে হচ্ছিল ইংরেজ আমলের সেপাইরা কালা আদমি পেটাচ্ছে। ঠিকই, প্রকাশ্যে জাতীয় সড়কের উপর ঘটে যাওয়া এত বড়ো অপরাধের জন্য শাস্তি হল না কারও। কিন্তু খবর চেপে রাখা যায়নি। তাৎক্ষণিক কোনও সমাধান পাওয়া গেল না, কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকবে। আশা করব, কেউ কেউ নিশ্চয়ই ওই সব ভিডিও সংরক্ষণও করছেন। ... ...
আই টি সেল যা করে যাচ্ছে তা ক্ষমার অযোগ্য। একে তো বাবা মহাদেব কা গুসসা বলে ধর্মীয় রঙ চড়াচ্ছে। সঙ্গে আছে চূড়ান্ত অসংবেদনশীল সব মিম। কোনটায় আমপানের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের অংশ হয়ে যাচ্ছে এইরকম দেখানো হচ্ছে, কোনটায় মুখ্যমন্ত্রী ও আমপানকে মিলিয়ে হরেক মজাক। হাসি মশকরা করবার এই কি সময় ! যে বাঙালিরা এতে খুশি হচ্ছে, হাসছে, তারা জানে না পুড়ে মরবার আগে লেলিহান অগ্নিশিখাকে পতঙ্গের বড়ই লোভনীয় মনে হয়। ওদিকে রাজ্যপাল আর ১৮ জন সাংসদ দুপুর গড়িয়ে গেলেও চুপ। মুখে কোনো রা নেই। তবে কি এটাই এ দেশের রাজনীতির প্যাটার্ণ হয়ে গেল যে বিরোধী পক্ষ চূড়ান্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে চূড়ান্ত বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে যাবে ? সংসদে দাঁড়িয়ে বলবে, এই রাজ্য সরকারকে কোনো ত্রাণ দেবার দরকার নেই ? ... ...
অতএব, সঙ্কট অতিক্রম করে নতুন সভ্যতা, নতুন বাসভূমি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে চাইলে বাস্তবের মাটিতে পা রেখে এই পরস্পরের হাতটুকু ধরতে পারার নির্ভরতা বড় প্রয়োজন। আফটার দ্য স্টর্ম - ঝড়ের পরে - আমরা বাঁচব - ঝড়ের নাম কোভিড হোক বা আম্ফান - আমরা বেঁচে থাকব। শুধু হাতটুকু ধরতে পারা - ধরতে শেখা - ভুলে যাওয়া অভ্যেসটা ফের ঝালিয়ে নেওয়া - জরুরী। ... ...
কেন্দ্র হল জমিদার, যাদের কাছে এ রাজ্যের অস্তিত্ব কেবল খাজনা আদায়ের সময়ে, এ বাস্তবতা বহুদিনের। ফলে আজ কেন্দ্রীয় সরকারের মুখে কুলুপ, সর্বভারতীয় মিডিয়ার অভ্রংলিহ নীরবতা, নতুন কিছু নয়। আকাশ থেকে পড়ারও কিছু নেই। এটাই চালু পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকে আমরাও মেনে নিয়েছি এবং স্বীকৃতি দিয়েছি। মেনে নিয়েছি, যে, করের টাকা আসলে কেন্দ্রের প্রাপ্য, রাজ্যের কাজ হল কাকুতি-মিনতি করা। বাবু দুটো কলামুলো দিন না। বাবু কখনও দিয়েছেন, কখনও দেননি। আমরা এই লাথিঝাঁটাকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছি। হিন্দুস্তানকে জাতি, দিল্লির মিডিয়াকে "জাতীয়" মিডিয়া, লুঠকে ন্যায়সঙ্গত এবং হাত কচলানোকে ভবিতব্য মনে করেছি। "বঞ্চনা" নিয়ে খিল্লি করেছি। বলিউড আর ক্রিকেট দেখে নিজেকে মূল ধারার ভারতীয় প্রমাণ করতে চেয়েছি। কিন্তু সবই একতরফা। আমরা দিল্লির অপরাধের ঘটনায় গর্জে ওঠাকে মূল ধারায় ঢোকার উপায় ভেবেছি, দিল্লির স্লোগান আওড়ানোকে "কুল" ভেবেছি, দিল্লির আবহাওয়ার বিপর্যয়কে সারা ভারতের বিপর্যয় ভেবেছি। সবেতেই "জাতীয়" মিডিয়া ধোঁয়া দিয়েছে। কারণ জমিদারের সমস্যা গোটা তালুকের সমস্যা। ... ...
সুন্দরবনের মানুষকে সবসময়ই কোন না কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বাঁচতে হয়। এটাতে আমরা একরকম অভ্যস্ত হয়ে গেছি বলা চলে। এই লেখার শুরুতে বলেছিলাম প্রায় ঘন্টা তিনেক গলা সমান জলে ভেসে থাকার কথা। আয়লার সময়কার এইসব ঘটনা সেভাবে কোন মিডিয়ায় উঠে আসেনি। এবারে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও কিছু সমস্যা। যেমন, পরিযায়ী শ্রমিকেরা সবে কিছুসংখ্যক গ্রামে ফিরেছেন। এই ঝড়ের মোকাবিলা করার মত কোন রসদ তাঁদের কাছে অবশিষ্ট নেই। ... ...
১৮৭৪ সালে বাংলার থেকে শ্রীহট্টকে এবং গোয়ালপাড়া জেলাকে উত্তরবঙ্গ থেকে কেটে আসামের সঙ্গে যে জুড়ে দেওয়া হয়, এই কাটা জোড়ায় জেলাদুটির বাসীন্দাদের মতামতের কোন মূল্যই দেওয়া হয় নি। কেননা রেভিনিউ স্টেট হিসেবে আসাম স্বনির্ভরতা পাবে। অর্থাৎ কাল পর্যন্ত যারা বাংলার অধিবাসী ছিল নেহাৎ-ই প্রশাসনিক কারণে তারা হয়ে গেল আসামের বাসিন্দা। গোয়ালপাড়া ও শ্রীহট্ট জেলার অধিবাসী বলতে প্রায় সবাই তখন বাংলা ভাষাভাষী। সামাজিক বিরোধের বীজ উপ্ত হল এখানেই। বাঙালিরা কোনদিন অসমীয়া ভাষাকে নিজের ভাষা হিসাবে মেনে নিতে পারে নি, আর অসমীয়াভাষীরাও কোনদিন বাঙালীকে ভ্রাতৃপ্রতিম বলে মন থেকে স্বীকার করতে পারেনি। ... ...
তবে ভাইরাসকে নিয়ে সহবাস করা আমাদের ভবিষ্যৎ পরিণতি হতে যাচ্ছে একথা বলার জন্য পণ্ডিত হবার প্রয়োজন নেই। প্রসঙ্গত মনে পড়বে কাম্যুর প্লেগ উপন্যাসের কথা। সে উপন্যাসের মূল চরিত্র ডঃ রু (Rieux) ফ্রান্সের কাল্পনিক ওরান শহরের মহামারি প্লেগের চিকিৎসা করতে গিয়ে বলছেন – “I have no idea what’s awaiting me, or what will happen when this all ends ... For the moment I know this: there are sick people and they need curing.” মানুষ যত্ন চায়, মমতা চায়, সহমর্মিতা চায়। তাই “what will happen” জানা না থাকলেও আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এমনকি ভারত সরকারের করোনা অতিমারির জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজের মাত্র ০.৭৫% (১৫,০০০ কোটি টাকা) স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ হওয়া সত্ত্বেও। ... ...
আমি যেদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম বরিশালের যোগেন মণ্ডলে, বরিশাল কেন রাখলেন? তিনি তো বরিশালে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। জটিল সাহিত্যবোধে, অনেক গভীরতর কথা বলা যেতো, কিন্তু দেবেশ রায় প্রথমেই বললেন তখনকার সময়ে জায়গার নাম দিয়েই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষ চেনানো হতো। যেমন বরিশালের যোগেন মন্ডল, তিস্তাপারের বাঘারু , জলপাইগুড়ির দেবেশ এরকম। এর বেশি কোন কারণ তখন আমার মাথায় ছিলনা। আমার মাথায় ছিল একটা ঘোর, যে ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে আমি দিস্তার পর দিস্তা বরিশালের যোগেন মন্ডল লিখেছি, শুধু প্রাকৃতিক কর্ম ছাড়া লেখা থেকে চোখ সরাইনি। অসুস্থ হয়ে পড়তাম, একটু সুস্থ হয়ে আবার লিখতে বসতাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম ঐরকম একটা জায়গায় যেখানে যোগেন মন্ডল পাড়ি দিচ্ছেন পাকিস্তানে, সেখানে বইটা শেষ করলেন কেন? তাঁর উত্তর ছিল, আমি শুধু ঐটুকুই বলতে চেয়েছি। তার পরের অংশে আমার কোন আগ্রহ বা দায়িত্ব নেই। আমি তো ইতিহাস লিখছি না উপন্যাস লিখছি। ... ...
প্রশ্ন করা যাক, এই সংস্কারে কাদের লাভ, কতখানি লাভ। ভারতে এখনও সত্তর শতাংশ বিদ্যুৎই তাপবিদ্যুৎ। সবচেয়ে বেশি কয়লা খরচ হয় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেই— ২০১৭-১৮ সালের হিসেব বলছে, ভারতে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল মোট ৮৯৬.৩৪ মিলিয়ন টন কয়লা, তার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবহৃত হয়েছিল ৫৭৬.১৯ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ ৬৪.৩% । কাজেই, কয়লাখনি বিক্রি হলে কাদের লাভ, সেই খোঁজ করতে গেলে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার খোঁজ না নিয়ে উপায় নেই। ভারতে সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার নাম আদানি পাওয়ার লিমিটেড— মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২,৪১০ মেগাওয়াট। আছে অনিল অম্বানির রিলায়েন্স পাওয়ার— উৎপাদন ক্ষমতা ছ’হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। সস্তায় কয়লার ব্যবস্থা হলে মন্দ কী? এ ছাড়াও লাভবান হবে টাটা পাওয়ার, জেএসডব্লিউ। প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির জন্যও বিবিধ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটা অনুমান করার জন্য কোনও নম্বর নেই যে দেশের পয়লা নম্বর বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থার মালিকের নামও গৌতম আদানি। ... ...