ভার্চুয়াল ক্লাসরুম বা আপিসঘরে দৃশ্যমানতা কিঞ্চিৎ উচ্চস্তরের, মানে পর্দার ক্যামেরার নজর ব্যক্তির উর্ধাঙ্গটুকুতেই সীমাবদ্ধ। ‘বিলো দ্য বেল্ট’ ইনফরমাল হলে সমস্যা নেই। বাঁকুড়ার গামছার সঙ্গে শার্ট-টাই-ব্লেজার পরে উচ্চপর্যায়ের মিটিং চলছে দেখলে অতএব ভিরমি খাওয়া নিষ্প্রয়োজন। মিটিং-ধারী দাঁত খিচিয়ে বলবেন, "তাতে কোন মহাভারতটা অশুদ্ধ হচ্ছে ,শুনি! আমি তো আর এই পোশাকে সমুদ্রসৈকতে সেলফি তুলতে যাচ্ছিনা।" ক্যামেরা চালু করা যে ক্লাসে জরুরি নয়, তার ড্রেস কোডে আবার রংচটা, ফুটোফাটা ভেন্টিলেটেড গেঞ্জিও নাকি চলতে পারে। তা বলে পরীক্ষার দিনেও? দইয়ের ফোঁটা অবসোলিট হয় হোক, পাটভাঙা জামাটুকু তো অন্তত পরবে! ... ...
p>অনলাইন ক্লাস ইস্কুলের বিকল্প হতে পারবে না কোনওভাবেই - তা প্রথম থেকে জানা ছিল। কিন্তু অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থাকল গত পনেরো ষোলো মাসে - ততটা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবারও বোধহয় কথা ছিল না। বিশেষ করে যত ঘরে স্মার্ট ফোন আছে, ইন্টারনেট ডেটা প্যাক যতটা সস্তা হয়েছে আগের চেয়ে তার হিসাব নিকাশ করলে মনেই হয় যে অনলাইন ক্লাস যতটা সীমাবদ্ধ হয়ে থেকেছে, তার চেয়ে প্রসারিত হতে পারত। কেন অনলাইন ক্লাস আরো খানিকটা প্রসারিত হতে পারল না সেই আলোচনা একটা স্বতন্ত্র বিষয়। সেখানে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেটের ডেটা প্যাক, কানেকশান ও গতির সহজলভ্যতা এসবের প্রশ্ন আছে, ছোটদের মনঃসংযোগের প্রশ্ন আছে, শিক্ষাদপ্তরের পরিকল্পনার খামতি নিয়েও প্রশ্ন যে একেবারেই নেই তাও নয়। কেন এতদিনেও বিভিন্ন শ্রেণির বিষয়ভিত্তিক ক্লাস মেটেরিয়াল এক জায়গায় রাখার একটা ওয়েব সাইট ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ তৈরি করে ফেলা গেল না, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা তাদের সময় সুযোগ মত ঢুকতে পারত আর দেখে নিতে পারত তাদের পাঠ্য বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনও ভিডিও, ছবি, চার্ট, ম্যাপ, গ্রাফ, লেখা ইত্যাদি তা বোঝা দুষ্কর। ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্ন রাখার আর উত্তর পাওয়ার জায়গাও সেখানে রাখা যেতে পারত, ওয়েব পোর্টালটিকে ইন্টার্যাকটিভ করে তোলার অনেক সুযোগ তো প্রযুক্তি করেই দিয়েছে। তবুও সেই সুযোগকে ব্যবহার করে নেবার দিকে শিক্ষা দপ্তর এগোলেন না। এই অতিমারীকে মোকাবিলা করে এই সময়ে শিক্ষাকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটা যে এক একটি বিদ্যালয় ও তার শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিচ্ছিন্ন উদ্যোগের বিষয় নয়, সেই উদ্যোগ যতই আন্তরিক হোক না কেন শেষ পর্যন্ত একটি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ও পরিকাঠামো এই বিপুল সমস্যার মোকাবিলায় জরুরি - তা শিক্ষা দপ্তর বুঝে উঠতে পারেন নি বলেই মনে হয়। এই সমস্ত নানা ধরনের বিষয় ছাড়াও অন ক্লাইস ক্লাস সংক্রান্ত সমস্যাটা অনেকটাই অর্থনৈতিক। ... ...
নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষের দারিদ্র জিনিসটা যেন প্রায় হাইলাইটার দিয়ে চিহ্নিত করা। তার পোশাকআশাক দেখে তৎক্ষণাৎ আপনি বুঝে যাবেন যে মানুষটা গরিব। সেজন্য আপনি মানুষ হিসেবে মোটামুটি ভালো হলে তাঁর প্রতি কিছুটা অতিরিক্ত সহানুভূতিশীলও হবেন। অর্থনৈতিক সংকটের সময় আপনি নিজে এবং বৃহত্তর অর্থে সরকার স্বয়ং চেষ্টা করবে তাঁর পাশে থাকার। ঠিক এই কারণেই প্রকট দারিদ্র অনেকের ক্ষেত্রে একটা ক্যামোফ্লাজও বটে। তিনি হয়তো ততটাও গরিব নন যতটা তিনি দেখাচ্ছেন। অন্যদিকে, নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক তার উল্টো। সে আসলে যতটা গরিব তার তুলনায় নিজেকে তিনি সম্পন্ন দেখাতে চান। দারিদ্র তাঁর কাছে লজ্জার। দরিদ্রনারায়ণ সেবার খিচুড়ির লাইনে তিনি দাঁড়াতে পারেন না। সেজন্য সমস্ত রকম সরকারি এবং বেসরকারি রিলিফ এবং অন্যান্য সুযোগসুবিধা থেকে হামেশাই তিনি হন বঞ্চিত। ... ...
কেন্দ্রীয় সরকারের বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দের হার কমছে। রাজ্যের মতামত অগ্রাহ্য করে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রবর্তনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এই পরিস্থতিতে করোনা মহামারীর প্রেক্ষিতে স্কুল কলেজ বন্ধ করে দিয়ে সরকারবাহাদুর বললেন ‘ইন্ডিয়া পড়ে অনলাইন’। প্রাথমিক শিক্ষার আঙিনায় এই ডিজিটাল শিক্ষা কীভাবে চলছে? কীভাবে সামলানো যাচ্ছে স্কুলছুট হওয়ার সমস্যা, শিশুদের অপুষ্টি ও সর্বাঙ্গীণ বিকাশের অন্তরায়ের জটিলতাগুলি? কেমন করে সেইসকল শিশুর শিক্ষণ চলছে, যাদের অভবাবকদের হাতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ঢালাও সুবিধা নেই? এইসব প্রশ্নের পর্যালোচনা করলেন শিশুশিক্ষকরা, অতিমারীপর্যায়ে তাঁদের কর্মজীবনের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা দিয়ে প্রতীচী (ইন্ডিয়া) ট্রাস্টের প্রকাশিত এই ই-পুস্তিকাটিতে। ... ...
সলিলদা মনে হয় একটা সত্যকে জীবনের ধ্রুব করে নিয়েছিলেন, সেটা হল --- 'শিক্ষা আমার ব্রত'। বাচ্চাদের ইংরাজি শেখাতেন কিন্তু তাদের সঠিক উন্নতির জন্য, বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেন। 'কোমা গাতা মারু' নামে একটি জাহাজ ব্রিটিশ আমলে বজবজের কোন একটা ঘাটে ভেড়ে, সেখানে বিদ্রোহী জাহাজিদের সঙ্গে ব্রিটিশের যুদ্ধ হয়, অনেকে শহিদ হন। তাদের স্মৃতিস্তম্ভ দেখাতে সলিলদা বাচ্চাদের নিয়ে চললেন। রবীন্দ্রনাথের জোঁড়াসাঁকোর বাড়ি দেখাতে একবার বাচ্চাদের নিয়ে গেলেন। আই এস আই তে ডাইনোসরের একটা ফসিল আছে সেটা দেখাতে একবার নিয়ে গেলেন। সর্বত্রই ওঁর বন্ধুবান্ধব ছিলেন, তাঁরা এই সব কাজে সলিলদাকে সাহায্য করতেন। সলিলদা বাচ্চাদের ইংরাজি গান শোনাতেন ইংরাজি সিনেমা দ্যাখাতেন। আবার সুমনের গানও শোনাতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে সলিলদার কোনো দূরত্ব ছিল না। ... ...
প্রাথমিক ভাবে বিভিন্ন বোর্ডের বাংলা সিলেবাসের নির্মিতি অংশ নিয়েই আমার মনে এমন প্রশ্ন জাগে। ধরা যাক, সমার্থক শব্দ পড়াতে গিয়ে জলের প্রতিশব্দ শিখিয়েছি- অপ, সলিল,অম্বু, উদক, তোয়, পয়ঃ, নীর, পানি, ইলা ইত্যাদি। বা কন্যা শব্দের প্রতিশব্দ শেখাতে হয়েছে তনয়া, দুহিতা, আত্মজা, নন্দিনী, মেয়ে, দারিকা, ইত্যাদি। বা পৃথিবীর প্রতিশব্দ শেখাতে গিয়ে শিখিয়েছি- ধরা, ধরণী, বসুধা, ভূ, ধরিত্রী, মেদিনী, ক্ষিতি, জগত ইত্যাদি। এত সমার্থক শব্দ মুখস্থ করিয়ে পড়ুয়াদের লাভ কী! কিন্তু আমরা যারা পড়াই তাদের শেখাতেই হবে। অন্ধের মতো মুখস্থ করা ছাড়া ছোটোদের কাছেও কোন উপায় থাকে না! ... ...
সলিলদা খুঁজে পেলেন অন্য শিক্ষার ধারণা পাওলো ফ্রের-এর লেখায়। প্রয়োগে আমরা। আমার প্রয়োগে থাকার গল্প বলে সলিলদা, সলিলদা দের গল্প বলি। দেবাশিস আমি বেছে নিলাম নিউ আলিপুরের পিছনে সাহাপুরে গরীব পরিচারিকাদের বসতি। পরিচারিকাদের পরিবারের বসতি। সলিলদা আমাদের বোঝালেন কি করতে হবে। আমরা সেই মতো অন্য লেখাপড়ার আন্দোলনের কর্মী হয়ে গেলাম। সপ্তাহের কয়েকটা দিন সন্ধাবেলা আমরা পরিচারিকাদের নিয়ে বসতাম। প্রথামাফিক অ আ ক খ বর্ণমালা শেখাইনি। পাওলো ফ্রের দর্শনে, সলিলদার, সলিলদাদের পরিচালনায় অন্যভাবে শুরু। একটা উদাহরণ দিই। ... ...
এদেশটার নাম ভারত, তাই আশা করি না, কিন্তু অন্য দেশে হলেও হতে পারে, হওয়া উচিত, তাঁর ইতালির বারবিয়ানা স্কুলের ছাত্রদের সম্মিলিত চিঠিভিত্তিক গ্রন্থের অনুবাদ, "আপনাকে বলছি স্যার" বইটির অবশ্যপাঠ। অন্তত শিক্ষকদের শিক্ষাদান করবার আগে এ বই পড়াই উচিত। শিক্ষা যখন পণ্য, আর শিক্ষার্থীরা বাজার নামক দাবাবোর্ডে দিব্যি জ্যান্ত বোড়ে, তখন বিকল্প শিক্ষার ওপর এ বই হয়তো কাউকে অন্য পথের সন্ধান দেবে। আরেকজন সলিল বিশ্বাস তৈরি হবেন যাঁর মনন জুড়ে থাকবে বিকল্প শিক্ষা ভাবনা। ব্রাজিলের নিপীড়িতের শিক্ষাবিদ পাউলো ফ্রেইরি হবেন যাঁর দিগদর্শক। ... ...
শিক্ষকতার চাকরি করি, সেই অবস্থান থেকে লজ্জিতবোধ করলেও, স্বীকার করতে কোনও বাধা নেই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে, বিশেষত কেন্দ্রীয় সংস্থা ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পাঠক্রমকে এত অপ্রাসঙ্গিক ও হাস্যকর আগে মনে হয়নি। চারিদিক যখন বালির প্রাসাদের মতো ভেঙে পড়ছে, তখন দেশের শহরকেন্দ্রিক উচ্চশিক্ষা এমনই আচরণ তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী পাঠক্রমের সঙ্গে তিলমাত্র আপসে না গিয়ে, যেন অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষার অসহয়তাটুকুকে বাদ দিলে বাদবাকি সব একদম স্বাভাবিক আছে; এমনকি উন্নতিও করছে। ... ...
স্বাস্থ্যের জগতে দু’ধরনের নাগরিকত্ব (health citizenship) তৈরি হল। একটি পূর্ণ রাশি ১, আরেকটি ০। আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও এরকম integer দেখা হয় – হয় ০ কিংবা ১। এখানে ভগ্নাংশের কোন জায়গা নেই। যেমনটা আজকের ভারতে এবং বিশ্বে দেখছি আমরা। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল যে স্বাস্থ্যের পরিবর্তে শিক্ষার চোখ দিয়ে দেখলেও আমরা একইরকম অবস্থান দেখতে পাবো। ১৯শ শতাব্দিতে আধুনিক রাষ্ট্র তৈরির শুরু থেকেই রাষ্ট্রের প্রয়োজন ছিল মানুষ যাতে “স্বাভাবিক (normal)” এবং “অস্বাভাবিক (pathological)” এই দ্বৈত বিভাজনের গবাক্ষ দিয়ে দেখতে শেখে, সড়গড় হয়ে ওঠে। কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়োত্তর গবেষণা সবকিছুর মধ্য দিয়ে এ শিক্ষা চারিয়ে যায় প্রতিদিন, প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের বোধের মধ্যে। ... ...
এই শেষ পর্বটিতে আমরা আলোচনা করলাম শিক্ষণ বিষয়ে, মূল্যায়ন নিয়ে এবং শিক্ষক/শিক্ষিকা প্রশিক্ষণ নিয়ে। আমার মনে হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষণ নিয়ে আমাদের ব্যাপকভাবে আলোচনার প্রয়োজন। মূল্যায়ন নিয়ে গভীর চিন্তা জরুরি। নানা ধাপ এবং নানা কৌশল প্রয়োগ করা অত্যাবশ্যক। এতদিন ধরে অবহেলিত হয়ে আসা শিক্ষক/শিক্ষিকা প্রশিক্ষণ নতুন করে পরিকল্পনা করা অবশ্য করণীয়। শিক্ষক/শিক্ষিকার সুবিধার দিকে সম্যক দৃষ্টি দেওয়া দরকার। এই প্রতিবেদনে প্রথম থেকে আমি বলে আসছি যে প্রস্তাবিত জাতীয় শিক্ষানীতিটি ব্রিভান্তিকর, এই নীতি প্রয়োগ সহজ নয় (এর কারণ আমরা আগে ব্যখ্যা করেছি) তবুও এই নীতিতে উল্লেখিত বিষয়গুলি গুরুত্ব সহকারে বিশদে আলোচনা জরুরি। আমাদের উচিৎ অভিজ্ঞ শিক্ষক ও শিক্ষাবিদের সঙ্গে পর্যালোচনা করে কাজ শুরু করা। ... ...
আগের পর্বে বলেছিলাম, বিশিষ্ট শিক্ষকদের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছি এই শিক্ষানীতির ওপর তাঁদের মতামত নিয়ে। কারণ আমার মনে হয়েছে, এই গবেষণামূলক প্রবন্ধটির জন্য একটি অপরিহার্য অঙ্গ হল এই শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন সম্পর্কে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের মতামত জানা। তাঁদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ব্যবহারিক জীবনে এই প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির ভূমিকা তাঁরা সর্বতোভাবে অনুধাবন করতে পারেন। তাঁরা নির্ণয় করতে পারেন যে কীভাবে ও কতটা এই প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি কার্যকর করা যায়। অতএব, আমি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে কলকাতা শহর এবং জেলা থেকে দুজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের কাছে আমার প্রশ্নমালা পাঠিয়েছিলাম। অনেক কর্মব্যস্ততার মধ্যেও যে তাঁরা আমার প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য সময় বার করতে পেরেছেন তার জন্য আমি তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। ... ...
কয়েকটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়নি, ধরা যাক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোভিডের মতো কোনো আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত বিপদের সময় কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে বহাল রাখা যাবে? বন্যা অথবা ঝড় হলে (একটি শহর যেভাবে মোকাবিলা করবে একটি প্র্যত্যন্ত গ্রাম সেভাবে বাস্তবিকভাবেই পারবে না, কোনো দুর্গম অঞ্চলে অবস্থা আরও শোচনীয়) বা এজাতীয় কোনো অস্বাভাবিক ও কঠিন সময়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলির কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত? জুলাই মাসে যখন এই নীতিটি প্রকাশ করা হচ্ছে, তখন কোভিডের সর্বাধিক সীমা ছোঁওয়ার একটা পূর্বাভাষ পাওয়া যাচ্ছে, মাসের পর মাস যেখানে স্কুল বন্ধ, তখন শিক্ষাব্যবস্থায় কী বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করা দরকার, এমতাবস্থায় শিক্ষকরা কীভাবে পড়াবেন এরকম কোনো প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়নি। অনলাইন এবং অফলাইন লার্নিং-এর কী পদ্ধতি এরকম পরিস্থিতিতে কেমনভাবে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে পারে তার কোনো উল্লেখ নেই। ইন্টারনেট না থাকলে শিক্ষা কীভবে বহাল থাকবে? এরকম কোনো বিষয়ই উঠে আসেনি। এই প্রসঙ্গে বলি, আমি আপ্লুত, যে কোভিডের এই আস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে কিছু নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক আজ সফল। এই কঠিন সময়ে, কোনো সাহায্য ব্যতীত, নিজস্ব উদ্যোগে নতুন শিক্ষণকৌশল উদ্ভাবন করে শিশুদের কাছে পৌঁছোতে পেরেছেন। ... ...
করোনা আবহে স্কুল বন্ধ।বাড়িতে বন্দী শিক্ষার্থীরা। নিষেধের বেড়াজালে তাদের প্রাণ হাফিয়ে উঠেছে।বন্ধুর সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করার সুযোগ নেই।আড্ডা, মজা,দুষ্টুমি সব অতীত। কতদিনে শেষ হবে অতিমারির প্রকোপ তা তাদের আজানা।বড়োরাও কোনো দিশা দিতে পারছে না।কোনো পরিকল্পনা করে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না।পড়াশোনা নিয়ে ঘোরতর অনিশ্চয়তা। বেসরকারি স্কুলের সম্পন্ন ছাত্রদের অনলাইনে ক্লাস চলছে। সেখানে অনিচ্ছা থাকলেও "অন "হতে হচ্ছে দিনের মধ্যে একাধিক বার। চলছে পড়াশোনার ঝকমারি। লেখাপড়ার হদ্দ মুদ্দ। সোনার খাঁচায় বন্দি করে ইন্টানেটের ডগা দিয়ে শিশুর মুখে ঢুসে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষা। ... ...
অতিমারি এবং লক ডাউনের আড়ালে, পার্লামেন্টকে এড়িয়ে এই নতুন শিক্ষানীতি পাস করিয়ে নেওয়া হল। আয়তনে বিশাল, বাইরেটা কথার ফুলঝুরিতে উজ্জ্বল এই নীতিকে টুকরো টুকরো করে বোঝার চেষ্টা হয়েছে। দেখা হয়েছে কী ভাবে স্কুল লেভেল থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে দাস বানাবার যন্ত্রে পরিণত করা হয়েছে। এই নীতির শুরুতেই বলা হয়েছে অতি উচ্চ গুণমানসম্পন্ন শিক্ষা দেওয়া হবে নার্সারি থেকে ১২ ক্লাস অব্দি ভারতীয় শিশু, কিশোর-কিশোরীকে। বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে, ফলে তার মনমতো করেই তৈরি হল এই পলিসির আগাপাশতলা। তবে টাকা দেওয়া হবে কিন্তু কেবলমাত্র বিশেষ বিশেষ প্রোগ্রামে। তেমনি একটি প্রিয় প্রোগ্রাম STARS যা আগেই চালু করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ব্যাপারটি কী সেটা অনেকেই জানেন। ... ...
এ রাজ্যের প্রায় সাড়ে ছ’হাজার উচ্চ-মাধ্যমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুলের মধ্যে বৃত্তিমূলক ও কারিগরি বিভাগে পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে মাত্র তেরশো স্কুলে। অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণদের জন্য ‘ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’ তৈরি হয়েছিল যে সব স্কুলে, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষকের অভাবে সেগুলোর অধিকাংশই আজ ধুঁকছে। অনেকগুলো ইতিমধ্যে বন্ধও হয়ে গেছে। এবং এই প্রসঙ্গে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্যটি হল, এ রাজ্যের কোনও স্কুলের ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারেই কোনও স্থায়ী শিক্ষকপদ নেই। পুরো ব্যবস্থাটাই চলছে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে। এই একটা তথ্যই বোধহয় এই বৃত্তিমূলক শিক্ষয়ার প্রতি সরকারের চরম উদাসীনতার বা বিমাতৃসুলভ মনোভাবের যথেষ্ট প্রমাণ হিসেবে গণ্য হতে পারে। ... ...